আমি যে এলাকায় জীবনের প্রথম একুশ বৎসর কাটিয়েছি সেখানে মোট লোকসংখ্যা ছ’হাজার হবে কিনা সন্দেহ। কিন্তু সে এলাকায় মসজিদের সংখ্যা ছয়টি। এই মসজিদগুলো জামে মসজিদ (যেখানে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজ পড়ানো হয়)। এর বাইরে সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আর ফ্যাক্টরীগুলোতেও নামাজের জায়গা আছে। এলাকাটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা ছাড়া বড় সংখ্যায় হিন্দুরা, আট-দশটি রোমান ক্যাথলিক পরিবার আর একটি বৌদ্ধ পরিবার বাস করে। অধিবাসীদের মধ্যে অমুসলিম এবং নারীদের বাদ দিলে মসজিদে যাবার উপযুক্ত পুরুষের সংখ্যা কোনভাবেই আড়াই হাজারের বেশী হবে না। এই সংখ্যাটিকে হিসেবের সুবিধার্থে দুই হাজার চারশত ধরলে শুধুমাত্র জামে মসজিদ পিছু মুসল্লীর সংখ্যা দাঁড়ায় চারশত। এই চারশতের সবাই যে নিয়মিত নামাজ পড়েন তাও না। নিয়মিত জুম্মার নামাজ পড়েন তাও না। সেখানে ভোরে ফজরের ওয়াক্তে মসজিদে গেলে দশজন মুসল্লীরও দেখা মেলে না। তবু এই মসজিদগুলো আছে এবং দেশে আরো নতুন নতুন মসজিদ প্রতি নিয়ত হচ্ছে। মসজিদের এই চিত্র যে শুধু আমাদের এলাকায় তা কিন্তু নয়, গোটা বাংলাদেশেই চিত্রটি কম-বেশি এই প্রকার। ঢাকা নাকি মসজিদের শহর, আমিতো সারা বাংলাদেশকেই সেই অর্থে মসজিদের দেশ হিসেবেই দেখতে পাই।
আপনি কাছে বা দূরে বাসে বা গাড়িতে গেলে অবধারিতভাবে অন্ততঃ একজন মানুষের দেখা পাবেন যিনি মসজিদের উন্নয়নের জন্য দান সংগ্রহ করছেন। রাস্তার পাশে বা জনসমাগম হয় এমন অধিকাংশ জায়গায় মসজিদের জন্য দান সংগ্রহের জন্য রাখা দানবাক্স দেখতে পাবেন। আর জুম্মা বা তারাবী বা ঈদের নামাজ পড়তে গেলে তো রীতিমত দান সংগ্রহের হিড়িক পড়তে দেখা যায়। খুব প্রাসঙ্গিকভাবেই দুটি প্রশ্ন এসে যায়, এক, এতগুলো মসজিদের দরকার আছে কিনা। দুই, মসজিদের জন্য এত দান সংগ্রহের দরকার আছে কিনা।
প্রাপ্তবয়ষ্ক মুসলিম নর-নারীর জন্য প্রতিদিন পাঁচ বার (ওয়াক্ত) নামাজ (সালাত) পড়া বাধ্যতামূলক। তবে এই নামাজ যে মসজিদেই পড়তে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তাই চলন্ত গাড়িতেও নামাজ পড়া যায়, সময় (ওয়াক্ত) হলেই নামাজ পড়তে হবে। কিন্তু এর মানে এই না যে মসজিদের প্রয়োজন নেই, বরং মসজিদে এবং জামাতে (দলবদ্ধভাবে) নামাজ পড়ার ব্যাপারে ইসলামে জোর দেয়া হয়েছে। তবে তার মানে এও নয় যে বাড়ি বাড়ি মসজিদ বানাতে হবে। মসজিদ যদি “আবাদ” না থাকে, অর্থাৎ সেখানে যদি উক্ত এলাকার লোকজন নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় না করেন এবং আর যে সব কর্মের জন্য মসজিদ নির্ধারিত স্থান সে সব যথাযথভাবে পালন না করেন তা হলে উক্ত এলাকার সবাই গুনাহগার হবেন। বাংলাদেশে মসজিদগুলোর একটা বড় অংশ সেই অর্থে “আবাদ” নয়। তারপরও দরকার থাকুক বা না থাকুক বাংলাদেশে নিয়তই নতুন নতুন মসজিদ বানানো হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর একাংশ কিভাবে হয় তা দেখা যাক।
১৯৮০ সালে আমাদের এলাকায় মসজিদ ছিল দুইটি। এর মধ্যে একটির অবস্থা ভালো থাকলেও দ্বিতীয়টির অবস্থা ছিল করুণ। দ্বিতীয় মসজিদটি জনৈক উঠতি ধনী খলিফা (দর্জি) সাহেবের ইচ্ছায় তাঁর বাড়ির আঙ্গিনায় হওয়ায় এলাকার লোকজন তাতে দান-ধ্যান করতে অনাগ্রহী ছিলেন। এখনো ঐ মসজিদের বিশেষ উন্নয়ন হয়নি। ভালো অবস্থার মসজিদটি এলাকার একপ্রান্তে হওয়ায় এলাকার মাঝামাঝি সুবিধাজনক স্থানে আরেকটি মসজিদের কথা সবাই ভাবছিলেন। এর উদ্যোগ হিসেবে মাঝামাঝি একটা খালি বাসায় তারাবীর নামাজ পড়াও শুরু হয়ে গেল। কিন্তু যে জায়গাটিকে সবাই মসজিদের জন্য পছন্দ করেছিলেন তাঁর মালিক জায়গা ছাড়তে নারাজ। এমন অবস্থায় ঐ জায়গার কাছেই আরেক জমির মালিক মসজিদের জন্য জায়গা দেবার কথা জানালেন। এ কথা শুনে প্রথম জমির মালিকও তাঁর জায়গা মসজিদের জন্য দেবার ঘোষনা দিলেন। ব্যাস! এলাকার লোকজন দুই ভাগ হয়ে গেলেন। ফলে ১৯৮১ সালে তিনশ’ মিটার দুরত্বের মধ্যে আমরা দুটি নতুন মসজিদ পেয়ে গেলাম। এখন মোট মসজিদের সংখ্যা হল চার। এর বছর চারেকের মধ্যে স্থানীয় এক শিল্পপতির বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। তখন ঐ শিল্পপতি তাঁর বাবাকে শুধু তার ফ্যাক্টরীর পাশেই কবর দিলেন না, বরং কবরের পাশে একটা মসজিদও বানালেন। অনেকটা নজরুলের “মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই”-এর শিল্পপতি সংস্করন “আমার কবরের পাশেই একটা মসজিদ বানাইও ভাই”। অবশ্য এই মসজিদের দশাও প্রায় পূর্বোক্ত “খলিফা মসজিদ”-এর মত হল। শুধু শিল্পপতির টাকা-পয়সা খলিফা সাহেবের চেয়ে বেশি হওয়ায় এই মসজিদে একটা লম্বা মিনার বানানো হল। সুতরাং ১৯৮৫ সালের মধ্যে আমাদের মসজিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচে (একটাতে মিনারসহ)। দেশের অবস্থা যখন খারাপ হতে লাগল, উত্তরে মঙ্গা দেখা দিল, তখন দলে দলে লোক কাজের খোঁজে বড় শহরগুলোতে ভীড় জমালো। আমাদের এলাকাও এর বাইরে থাকলো না। ফলে এলাকায় নতুন নতুন বস্তি গড়ে উঠল। এলাকার বৃহত্তর বস্তিটির মানুষদের মধ্যে এক সময় মূল এলাকার মসজিদগুলোতে নিজেদের ব্রাত্য মনে হল। পাঁচটি মসজিদের কোনটির কমিটি বা আচার-অনুষ্ঠানে তাঁদের সম্মানজনক অবস্থান না হওয়ায় তাঁরা নিজেরাই নিজেদের জন্য আরেকটি মসজিদ গড়ার ঘোষণা দিলেন। ফলাফল ১৯৯০ সালের মধ্যে আমাদের এলাকায় মসজিদের সংখ্যা বেড়ে ছয় হয়ে গেল।
রেষারেষি, দলাদলি, নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি-সম্পদ জাহির বা নিজেদের মান-মর্যাদা বাড়ানোর জন্য এমন নতুন নতুন মসজিদ গড়ার উদাহরণ সারা দেশ জুড়ে আছে। এমন কি জায়গা দখল বা রাস্তা ঠেকানোর জন্য রাতারাতি মসজিদ গড়ে তোলার গল্পও হর-হামেশা পত্রিকায় দেখা যায়। পার্থিব সম্পদ-ক্ষমতা-মর্যাদা জাহির করার জন্য বা দখলের জন্য গড়া এই সব মসজিদকে “আল্লাহর ঘর”-এর মর্যাদা দেয়া কতটুকু যৌক্তিক?
দ্বিতীয় প্রশ্নটাতে আসা যাক। দেশের অধিকাংশ মসজিদের নিয়মিত আয় নেই অথচ সেখানে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম ইত্যাদি পদে লোক নিয়ো দিতে হয়। দেশের সব মসজিদ বাইতুল মোকাররম বা বাইতুল ফালাহ নয়, তাই এঁদের জন্য কোন বেতন স্কেল অনুসরণ করা হয় না। বস্তুতঃ এঁরা মাস শেষে যা পান (অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিয়মিত) তা মুষ্টিভিক্ষার সাথে তুলনীয়। এঁদেরকে মানবেতর বেতনে রেখে তাঁদের পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে তাতে কতটুকু ফায়দা হয়? মসজিদের এই অনিয়মিত আয় থেকেও হয়তো তাঁদের মোটামুটি বেতন দেয়া যেত কিন্তু তা হতে পারে না মসজিদের অনিঃশেষ উন্নয়ন কর্ম-কাণ্ডের জন্য। লক্ষ্য করলে দেখবেন আমাদের মসজিদগুলো চিরজীবনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও এগুলো নির্মানে কোন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই। ফলে কয়েক বৎসর পর পরই এগুলোতে সম্প্রসারনের কাজ করতে হয়। আবার নতুন কোন মসজিদ কমিটি গঠিত হলে সেই কমিটি তাঁদের শাসনামলে কিছু কীর্তি স্থাপনের চেষ্টা করেন। ফলে এক কমিটি মসজিদ জুড়ে টাইলস লাগালে পরের কমিটি সেগুলো তুলে ইটালিয়ান মার্বেল লাগানোর চেষ্টা করেন। এক কমিটি সরু মিনার করলে আরেক কমিটি তা ভেঙে বড় মিনার করেন। এক কমিটি গম্বুজ বানালে আরেক কমিটি তা ভেঙে আরেকটি নতুন তলা যোগ করেন। মহৎ কীর্তি স্থাপনের এই অবিরাম প্রচেষ্টার ফলে মসজিদের ফাণ্ডে অনটন লেগেই থাকে। ফলে মসজিদের উন্নয়নের জন্য চাঁদা বা দান চাওয়ার আর শেষ হয় না। মসজিদগুলোও স্থায়ী কোন চেহারা পায় না। যেমন, বিপুল ব্যয়ে নির্মিত সুন্দর স্থাপত্যকলার নিদর্শন গোলাপ শাহ মসজিদ ভেঙে এখন বহুতল মসজিদ বানানো হচ্ছে। হিসেব করলে অবাক হয়ে দেখবেন যে দশ বৎসর কালে এক একটা মসজিদের এই অদূরদর্শী উন্নয়ন কাজের ব্যয় বিপুল পরিমান। অথচ তার একাংশ দিয়েই অমন মসজিদ বানানো সম্ভব ছিল। আর এই অপচয়ের একটা বড় অংশ আসে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কষ্টার্জিত আয় থেকে। পরকালে সুখের লোভ দেখিয়ে বা ইহকালে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দরিদ্র মানুষের যথাসর্বস্বে ভাগ বসিয়ে মসজিদে পার্শিয়ান কার্পেট, ইটালিয়ান মার্বেল বা এয়ার কুলার লাগানো কতটুকু ইসলামসম্মত তাও ভেবে দেখার বিষয়।
মসজিদের জন্য একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় বিনামূল্যে বিদ্যুত সরবরাহ করার ব্যবস্থা থাকলেও বেশির ভাগ মসজিদের বিদ্যুত ব্যবহারের মাত্রা তার চেয়ে বেশি। খারাপ ব্যাপার হচ্ছে কিছু মসজিদ কমিটি এই অতিরিক্ত মাত্রার বিদ্যুত বিল পরিশোধে অনাগ্রহী। বকেয়া বিদ্যুত বিলের জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিধান থাকলেও মসজিদের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অধিকাংশ বিদ্যুতকর্মী অপারগ বা অনাগ্রহী। ফলে দেশে প্রতি বৎসর মসজিদগুলোর জন্য বিপুল পরিমান বিদ্যুত বিনিপয়সায় সরবরাহ করতে হচ্ছে। ইসলাম অপচয়কে সমর্থন না করলেও মসজিদের দোহাই দিয়ে দেশে বিদ্যুতের অপচয় চলছে। একই কথা মহানগর এলাকার মসজিদগুলোর পানির বিলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ইদানিংকালে মসজিদগুলোতে নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে নূরানী/হাফেজিয়া/এবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপণ করা। শোনা যায় আশির দশকে রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থার আর কিছু সাহায্য সংস্থার অর্থায়ণে নাকি এসব মাদ্রাসা তৈরি হয়েছে। কথাটি সত্য হলে আজকের এই “জেএমবি” ধরণের সমস্যার নাটের গুরুদের চিনতে কষ্ট হয়না। এসব মাদ্রাসায় দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের (মূলতঃ ছেলেদের) ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। কোথাও কোথাও এতিমদের রাখাও হয়। এদের জন্য বা এসব মাদ্রাসার জন্যও নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা না থাকায় এসব মাদ্রাসা মূলতঃ মসজিদের ফাণ্ডের উপরই নির্ভর করে। ফলে মসজিদের কর্ম-কাণ্ড চালানোর জন্য বাজেট আরো ঘাটতির মুখে পড়ে যায়। নিদারুন অর্থ সংকটে পড়া এসব মসজিদ-মাদ্রাসা তাই সহজেই মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোর লক্ষ্যে পরিনত হতে পারে। এই লক্ষ্য মানে আক্রমণ করা নয়, বরং ঐসব মসজিদ-মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে তাদের সংগঠিত হওয়া। এই বিষবৃক্ষের ফল পাকিস্তানে ইতোমধ্যেই ফলতে শুরু করেছে। এব্যাপারে আমরা যদি এখনই সতর্ক না হই তাহলে অচিরেই আমরা এমন এক ভয়াবহ সমস্যার মুখোমুখি হব যা না পারা যাবে গিলতে, না পারা যাবে উগড়াতে।
ইসলাম ধর্মানুসারীরা তাঁদের ধর্ম-কর্মের অংশ হিসেবে যত খুশি মসজিদ বানান বা সাজান তাতে কারো কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই বানানো-সাজানোর আঁচ যখন মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবার গায়ে লাগে তখন তা ভাবতে হবে বৈকি। অমন আঁচ বানানো কতটুকু ইসলামসম্মত তাও ভাবতে হবে।
মন্তব্য
দখলবাজির ক্ষেত্রেও মসজিদ এক প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে। কোন খালি স্থান দখল করতে হবে বানিয়ে ফেল এক মসজিদ অমনি জনমত পক্ষে চলে আসবে।
স্পর্শকাতর বিষয় হলেও মসজিদ সংক্রান্ত একটা নীতিমালা প্রনয়ন করা উচিৎ সরকারের এবং তা খুব দ্রুত। নইলে ভবিষ্যতে আসলেই খবর আছে।
পোস্টে আপনাকে জাঝা !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কীর্তি। দখলবাজিতে মসজিদের অপব্যবহারের কথা আমি পোস্টেই বলেছি। গত আওয়ামী লীগ আমলে সায়দাবাদে বাসস্ট্যাণ্ড দখল করার জন্য এরকম একটা মসজিদ বানানো হয়েছিল "বঙ্গবন্ধু-হুজুর সায়দাবাদী জামে মসজিদ" নামে। নামের ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।
সরকারের একটা নীতিমালা থাকাতো অবশ্যই দরকার। তবে সেটা মানবে ক'জন তাই হচ্ছে প্রশ্ন। এই দেখুন না মসজিদের বিদ্যুত বিল সংক্রান্ত বিধানটি কি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পোস্টে সহমত
মসজিদ নির্মানসংক্রান্ত কঠোর নীতিমালা দরকার ... নাইলে মসজিদ মাজারের মতোই ধর্মব্যবসার একটা হাতিয়ার হয়ে উঠবে (ইনফ্যাক্ট অলরেডী উঠেছে)
বিশেষ করে:
১। যত্রতত্র ইচ্ছামতো কওমী মাদ্রাসা চালু করে দেয়ার যে লাগামছাড়া কালচার চালু হয়েছে এটাকে সরকারী নীতিমালার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সহায়তায় মনিটর/কন্ট্রোল করা উচিত
২। মসজিদ যারা তৈরী করে তারা ঈমাম/মুয়াজ্জিন/খাদেম-- এদেরকে বেতন ঠিকভাবে দিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সরকারী নীতিমালা/নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরী ... প্রয়োজনে ঈমাম/মুয়াজ্জিনদের দিয়ে প্রোডাকটিভ কিছু কাজ করিয়ে নিতে পারে। আমাদের কলোনীর মসজিদে দেখতাম যে ঈমাম/মুয়াজ্জিন (আমরা বলতাম ওস্তাদজী) উনারা কলোনীর বাচ্চাদের দিনে দু'তিন শিফটে আরবী পড়া শেখাতেন। কিন্তু সমস্যা হলো এর বিনিময়ে উনারা কিছু নিতেননা, তবে উনাদের তিন বেলার খাবার কলোনীর লোকজন পর্যায়ক্রমে সরবরাহ করতেন। দেখা যেত তিন চার মাসে একবার একবাসা থেকে হুজুরের একদিনের খাবার সরবরাহ করলেই হয়। আর ছিলো শুক্রবারে মসজিদের জন্য সবার দান, যেটা থেকে মসজিদের উন্নয়ন, ঈমাম/মুয়াজ্জিনদের বেতন ও অন্যান্য কাভার করা হতো । এখন ভাবলে বুঝি এতে ঈমাম/মুয়াজ্জিনদের ঠকানো হতো, কারণ দেখুন একবাসার তিন ছেলেমেয়ের জন্য হুজুর রেখে আরবী পড়াতে হলে হুজুরকে কত বেতন দিতে হতো, প্লাস প্রতিদিনই হুজুরকে একবেলা খাওয়ানো বা নাস্তা করানো -- এসব করতে হতো। উচিত ছিলো ছাত্রপ্রতি উনাদের জন্য একটা ফি বরাদ্দ করা যেটা ছাত্রের বাবা-মা দেবেন। তাতে উনাদের বেতনের একটা ভালো ব্যবস্থা হতো।
৩। বিদ্যুত/পানি -- এসব ইউটিলিটির ব্যাপারটা খুবই সেনসিটিভ। এটা আসলে শুরু থেকেই ফ্রি করে দেয়া উচিত হয়নি।
মসজিদ নিয়ে পাবলিক সেন্টিমেন্টঘটিত যে প্র্যাকটিকাল সমস্যা তা হলো, এগুলো ভাঙা বা কমানো যাবেনা। কোন সরকার এর ধারেকাছেও কোন উদ্যোগ নেবেনা। এখন একটা সমাধান হতে পারে যে, এই বিশাল সংখ্যক মসজিদ গুলোকে কম হোক বেশী হোক, কোনপ্রকার উৎপাদনশীল খাতের সাথে জড়িত করা। সেটা নিয়ে ব্রেইনস্টর্মিং চললে একটা উপায় আসলেও আসতে পারে।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
০। মসজিদ নিয়ে অর্থ আর ক্ষমতার ব্যবসা শুরু হয়ে গেছে অনেক আগেই। মাজার আর কয়টা আছে বলুন, মসজিদ তো আছে লাখে লাখে।
১। শুধু কওমী মাদ্রাসা কেন, যে কোন ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপণের ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর বিধান থাকা ও তার প্রয়োগ থাকা জরুরী। আমাদের চারপাশে গজিয়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলো আর তাদের মত কিণ্ডারগার্টেনগুলো কোন মহৎ কর্মটি করছে? এখানেই বা নীতিমালা কোথায়? দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে উদাসীন, অজ্ঞ এমন অবিমৃষ্যকারী জাতি দুনিয়াতে কয়টি আছে?
২। দেশের সব মসজিদ কমিটিরই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন দিতে কলিজা পোড়ায়। বিনা পয়সায় বাচ্চাকে আরবী পড়ানোর কালচার সেখান থেকেই এসেছে। এক্ষেত্রে আমাদের কোন বিবেক-বুদ্ধি কাজ করে না। এদেশে বিনা পয়সায় ইংরেজী বা অন্য কোন ভাষা শেখায় এমন কোন শিক্ষক পাওয়া যাবে? লক্ষ্য করলে দেখবেন এদেশে প্রচলিত কৌতুকের একটা বড় অংশ মোল্লা-মৌলভীদের নোলা নিয়ে। কারো কারো জন্য হয়তো ব্যাপারগুলো সত্য, কিন্তু এর পেছনে কী নির্মম রসিকতা কাজ করছে! চাল কেনার পয়সা দেব না, বেতন দেব না অথচ তার নোলার সমালোচনা করব! দাওয়াত পেলে মোল্লা-মুনশীর পেট হয়তো ভরে কিন্তু ঘরে তার বৌ-বাচ্চা কী খাবে?
৩। ইউটিলিটি বিল না দিলে সরকার মসজিদ কমিটির সব সদস্যকে আলাদা আলাদা জরিমানার নোটিশ ধরিয়ে দিয়ে মামলা করে দিক, তখন সব সোজা হয়ে যাবে।
৪। সম্রাট আওরঙ্গজেব নাকি মাজার ভেঙ্গে তার সংখ্যা নিয়ন্ত্রনের একটা ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। মসজিদের ক্ষেত্রে অমন কিছু যে করা যাবে না তা পাগলেও জানে। তবে নতুন মসজিদ স্থাপণের ক্ষেত্রে পথটাকে কঠিন করা যায়। ইসলামের ধর্মগুরুরা এব্যাপারে এগিয়ে না এলে এই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালু করা যাবে না। এক্ষেত্রে মার্জার বা অ্যাকুইজিশনের কোন পথ আছে কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মসজিদগুলোতে পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়ার সময় ছাড়া ঐ ফ্লোর স্পেসটুকুকে ডে স্কুল অথবা করিগরি শিক্ষা কেন্দ্র বা অন্যকোন ভাবে আরও ফলদায়ক কাজে লাগানো যায়না?এখানে যেমন চার্চগুলো অনেক জায়গাতেই দেখেছি ডে স্কুল, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র এমনকি হোমলেস দের জন্য রান্নাবান্না করার ব্যবস্থা এরকম অনেক কিছুই করে। মানে বলতে চাইছিলাম, মাদ্রাসা বানিয়ে জঙ্গী না বানাতে চাইলেও হয়তো এমন অনেক কিছুই করা সম্ভব যা মসজিদ সেন্টিমেন্টের সঙ্গে যায়, বা তার বিপক্ষে না যায়, এমনকি টোকাইদের লেখাপড়াও শেখানো যেতে পারে ফাঁকে ফাঁকে।
জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা
খাগড়াছড়িতে এমনটা আছে, মসজিদভিত্তিক শিক্ষাপ্রকল্প, কিন্তু সেখানে যা শেখানো হয়, তা আশঙ্কাজনক রকমের ধর্মীয় গোঁড়ামিঘেঁষা।
হাঁটুপানির জলদস্যু
জামাতীরা কিন্তু মসজিদ ভিত্তিক সমাজ বলে একটা কনসেপ্টের কথা বলে। তবে আপনি যে সব প্রস্তাবের কথা বলেছেন সে সব করতে গেলে জামাতীদের পক্ষে তাদের কনসেপ্টটা বাস্তবায়ণ সহজ হয়ে যাবে। এই বিপদের কথা হিমু এরমধ্যেই বলেছেন।
তবে মসজিদে কিন্তু এখন রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া সবই হয়। তাবলিগী হুজুরেরা এসব করেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখাটি খুবই ভাল লাগলো। আমরা আমেরিকায় ঈদের অনুষ্ঠান করি চার্চে। এদের ওদের ধর্ম-ধ্বংস হয় না। কিন্তু কিন্তু বাংলাদেশে এমন কিছু বললে ক্ষুর নিয়ে তাড়া করবে সবাই।
মসজিদ বিষয়ক সবকিছুই সংস্কার/সংশোধন করা উচিত। দুঃখজনক হল, ভোট হারাবার ভয়ে কেউ এই কাজটুকু করবেন না। আপনার এই বোধ তাই ব্লগের এক কোণায়ই আটকে থাকবে।
এই বোধ যে ব্লগের কোনায় আটকে থাকবে সে সত্য আমি জানি। এ তো মসজিদ-ধর্ম এসব নিয়ে লেখা, এ সব লোকে কম ঘাঁটায়। যে সব বিষয় নিয়ে লোকে মুখে ফেনা তোলে সে সব নিয়েও লিখে দেখেছি, তাও ব্লগের কোনায় আটকে থাকে। এমন কি পড়ে দেখারও দরকার বোধ করে না। আপনারা যে সময় করে পড়েছেন, কষ্ট করে মন্তব্য করেছেন তাতেই আমি ধন্য।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কোথায় যেন পড়েছিলাম, রেফারেন্সটা ঠিক মনে করতে পারছি না, এরকম বোধহয় একটা নিয়ম আছে যে এক মসজিদের আজানের শব্দ যত দূর পর্যন্ত যাবে, সেই এলাকার ভেতরে আরেকটি মসজিদ তৈরী করা যাবে না। এখন অবশ্য প্রযুক্তির কল্যানে মক্কার আজানও ঢাকায় বসে শোনা যায়। সম্ভবত: এটা সেই স্থানে/কালে প্রযোজ্য যেখানে শুধু মুখে আজান দেয়া হ্য়/হতো, সীমানাটা নির্ভর করতো গলার জোরের উপর। নিয়মটা সত্যি হলেও ইসলামের ধারক-বাহকেরা এটার আধুনিক কোন ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না বা চাইবেন না।
আজানের শব্দ শোনা যাওয়া সংক্রান্ত আপনার জানাটি সঠিক। আমি ইচ্ছে করে বিষয়টি পোস্টে এড়িয়ে গেছি। কারন এখন আর বিধানটির কার্যকারিতা নেই। বিধানটি কোরান নির্ভর ছিল না, তাই তার কার্যকারিতা perpetual নয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সাহসী লেখা। সুন্দর লেখা। যুক্তিবাদী লেখা। আরো কমেন্ট আশা করছি।
তবে মসজিদ বা মাদ্রাস বিষয়ক এই ধরনের নতুন কোনো নীতিমালা সহসাই হবে এমন আশা করি না। এই সরকারের আমলে তো নয়ই। আওয়ামী লীগের এমনিতেই হিন্দুঘেঁষা দুর্নাম আছে। আর এই ধরনের লেখা পড়ে মানুষরা সহসাই সচেতন হয়ে উঠবে, এরকম আশা তো করিই না। সব বিষয়েই সবাই যুক্তিবাদী, কিন্তু এসব প্রসঙ্গ তুললে পাশে বসে থাকা পরিচিত লোকটিই ফোঁস করে ওঠে। তখন তাকে অচেনা লাগতে থাকে।
---------------------------------------------
আমাকে ছুঁয়ো না শিশু... এই ফুল-পাখি-গান সবই মিথ্যা!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
শুধু আওয়ামী লীগ কেন, কোন লীগ/দলই এ সব নিয়ে ঘাঁটানোর মত বোকামী করবে না। আর এমন সব লেখা পড়ে বা কথা শুনে মানুষ সচেতন হয়ে উঠবে এমন দুরাশা করি না। আমাদের দ্বিমুখী চরিত্রের ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ যথার্থ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমৎকার বিষয়ের অবতারনা এবং সুকৌশলে স্পর্শকাতর বিষয়টা ট্যাকল করার জন্য আপনাকে জাঝা। এই সকল বিষয়ে কেউ কথা বলবে না। কেননা কথা বলতে গেলেই বিশেষ একটি মহলের কু নজরে পড়ে যেতে হয়। দুঃখের কথা হচ্ছে সেই বিশেষ মহল আকারে ছোট হলে কি হবে ভীষণ শক্তিশালী!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
একটু দ্বিমত পোষন করি, মহলটি মোটেও ছোট নয়। মহলটি বরং বেশ বড় ও বিস্তৃত। মৃদুল তার মন্তব্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মহলটি আমাদের মত আপাত যুক্তিবাদী অনেকের মনের ভেতর পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই ভুতের কিলের মত তার কিল জানা-অজানা জায়গা থেকে এসে পিঠে পড়ে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একই গ্রামে আপন দুই ভাই আলাদা দুই মসজিদে যায় এবং সেই দুই মসজিদের ভেতরে প্রচ্ছন্ন রাজনীতিও আছে - এটা আমার নিজের চোখে দেখা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
পান্ডুদা, আমার ব্যাক্তিগত অভজার্বেশন হলো, অল্প বয়সে যেনো তেনো প্রকারে টাকা কামিয়ে, বুড়া বয়সে ভয় পায় আর সংসারের প্রয়োজনও কমে আসে প্লাস সমাজে প্রতিপত্তি মানে সামাজিক স্বীকৃতি লাভের একমাত্র সহজিয়া উপায় হলো এলাকায় একখান মসজিদ তৈরী করে ফেলা। আর বাকী সব প্রকৃতির নিয়মেই আবর্তিত হতে থাকবে।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। কিন্তু স্বগ লাভের উপায় কি এত সহজ? এব্যাপারে ধর্ম কী বলে? ধর্মগুরুদের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়ে লাভ নেই। তাদের বড় অংশ পার্থিব লাভালাভের সাথে হিসেব নিকেশ করে যে উত্তর দেবে তাতে ধনীদের জন্য এমন কিছু মেড-ইজি ধরণের সমাধান থেকেই যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন