সাম্প্রতিককালের বহুল আলোচিত বিষয় “টিপাইমুখ বাঁধ” নিয়ে আলোচনা হলেই আমাদের দেখি পররাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা, সরকারের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় চলে আসে। সেখানে মোটের ওপর প্রায় সবাই একমত হন যে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীন দেশের উপযুক্ত নয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটঃ http://www.mofa.gov.bd/-এ আমরা দেশের পররাষ্টনীতি একুনে যা পাই তা নিম্নরূপঃ
The Foreign Policy of Bangladesh emanates from the following provisions of the Bangladesh Constitution:
1. The State shall base its international relations on the principles of respect for national sovereignty and equality, non-interference in the internal affairs of other countries, peaceful settlements of international disputes, and respect for international law and the principles enunciated in the United Nations Charter, and on the basis of those principles shall-
a) Strive for the renunciation of the use of force in international relations and for general and complete disarmament;
b) Uphold the right of every people freely to determine and build up its own social, economic and political system by ways and means of its own free choice; and
c) Support oppressed peoples throughout the world waging a just struggle against imperialism colonialism or racialism.
2. The State shall endeavor to consolidate, preserve and strengthen fraternal relations among Muslim countries based on Islamic solidarity.
Last Updated (Tuesday, 24 March 2009)
দেখা যাচ্ছে আকারে ছোট ও গা বাঁচানো ধরণের হলেও আমাদের পররাষ্টনীতিটি মোটামুটি ঠিকই আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে আসলে নীতির প্রয়োগে। আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় তথা সরকার এই নীতির আলোকে আচরণ করার কথা থাকলেও বাস্তবে আমরা দেখতে পাই একেক জন একেক সুরে কথা বলেন। দল-মত নির্বিশেষে আমরা এই নীতি মানতে বাধ্য হলেও আমাদের আচরণ এই নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ফারাক্কা ইস্যু, পুশ ইন, বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, ছিটমহল সমস্যা, ট্রানজিট, এশিয়ান হাইওয়ে, দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য, সীমান্তে চোরাচালান, সমূদ্রসীমা, টিপাইমুখ বাঁধ ইত্যাদি ভারত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সরকার, সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলসমূহ, সুশীল সমাজ, বিশেষজ্ঞগণ কেউই একমত নন। স্বাধীনতার পর এইসব বিষয়ের প্রায় প্রত্যেকটিতে আমাদের স্বার্থ আশানুরূপভাবে রক্ষিত হয়নি। এই ব্যাপারে সরকারকে দোষারোপ করা সহজ এবং আমরা ক্ষোভে বেশিরভাগ সময়েই সরকারকে দোষারোপ করার চেষ্টা করি। এমনকি এক সরকার তার পূর্ববর্তী এক বা একাধিক সরকারকেও দোষারোপ করার চেষ্টা করে।
সরকার বহিরাগত বা ভূঁইফোঁড় কোন কিছু নয়। দেশের নাগরিকদের মধ্য থেকেই সরকার গঠিত হয়। তাই সরকারের আচরণের সাথে দেশের সাধারণ নাগরিকদের আচরণের মিল থাকাই স্বাভাবিক। তাই সরকারের আচরণ বিশ্লেষন করার আগে দেশের নাগরিকদের সাধারণ আচরণ বিশ্লেষন করা উচিত।
একটু লক্ষ্য করলেই আমরা দেখতে পাই, আমাদের ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে লক্ষ ও পরিকল্পনাগুলো সুদূরপ্রসারী হয় না। সেগুলো নগদ যা পাও হাত পেতে নাও ধরণের হয় বলে, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত লাভালাভ জড়িত হয়ে যায় বলে পরিণামে দেশের লোকজনকে ভুগতে হয়। তা বৈদেশিক ব্যাপারেই হোক আর পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেই হোক। নিকট অতীতেও কোন বিশেষ দেশের বিশেষ পণ্যকে সুবিধা দিতে, কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থকে রক্ষার্থে সরকারকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থের পরিপন্থী নীতি গ্রহন করতে আমরা দেখেছি। ব্যক্তি বা গোষ্ঠির লাভের কাছে জাতির স্বার্থ এ’ভাবে মার খেয়ে গেছে। এখনো তার ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছে না।
ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষায় জাতির ক্ষতি করার প্রবনতার বাইরে আমাদের মধ্যে অন্যদেশ বা তাদের নাগরিকদের নিয়ে আমাদের বৃহদাংশ মানুষের মধ্যে এক ধরণের হীনমন্যতা আছে, তা আমরা স্বীকার করি বা না করি। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে তবে তা ব্যাপক নয়। আমাদের সাধারণ প্রবনতা হচ্ছে “আমরা ওদের সাথে কোন কিছুতে পারবোনা”, “বিদেশের সব কিছু ভাল” ইত্যাদি ইত্যাদি, যদিও বেশিরভাগ সময়ে এই কথাগুলোর কোন যৌক্তিক ভিত্তিই থাকেনা।
কুয়েতে একবার অত্যন্ত অন্যায়ভাবে তিনজন নিরপরাধ বাংলাদেশী শ্রমিককে ধর্ষনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল - তাদের কাছ থেকে “ব্লাড মানি” নেবার পরও। অথচ কুয়েতের দুর্দিনে বাংলাদেশের সহযোগিতা দৃষ্টান্তমূলক। কুয়েত সরকারকে জোর করে বললে আমাদের বাকি শ্রমিকদের ফেরত পাঠিয়ে দেবে এই ভয়ে আমাদের সরকার কুয়েত সরকারের সাথে কঠোর হয়নি। অথচ একই ধরণের ঘটনায় ফিলিপাইন সরকার আমিরাতের সাথে কঠোর হয়ে নিজের নাগরিকের জীবন রক্ষা করতে পেরেছিল। আমিরাত কিন্তু ফিলিপিনো শ্রমিকদের দলে দলে দেশে ফেরত পাঠাতে পারেনি।
বিদেশে আমাদের শ্রমিকদের সাথে অমানবিক আচরণ করা একটা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। অত্যন্ত শংকার সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছি নিয়মিতভাবে আমাদের শ্রমিকরা লাশ হয়ে দেশে ফিরছেন। আমাদের সরকার এ’সব ব্যাপারে আজ পর্যন্ত বিদেশী কোন কোম্পানী বা ঐ দেশের সরকারের কাছে এ’ব্যাপারে কোন কৈফিয়ত দাবী করেনি। আসলে এই কৈফিয়ত দাবী করার মেরুদণ্ডই আমাদের নেই। আচ্ছা, সরকার নাহয় না করলো, আমাদের মানবাধিকার সংস্থাগুলো, সামাজিক সংগঠনগুলোতো এ’ব্যাপারে সোচ্চার হতে পারত। আন্তর্জাতিক ফোরামে তদন্ত ও বিচার দাবী করতে পারতো, কিন্ত তারা এ’সব কিছুই করেনা। কারণ, আমাদের মানসিকতাই নতজানু।
দেশের বাজেট যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন সেখানে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা ২%-এর বেশি নয়। তারপরও বাইরে আমাদের পরিচয় দেবার চেষ্টা করা হয় “ভিখিরিদের দেশ” হিসাবে। মধ্যপ্রাচ্যের অশিক্ষিতদের বাদ দিলেও অন্য দুনিয়ায় আমাদের পরিচিয় খুব সম্মানজনক নয়। এ’কথা সবার জানা প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের একটা অংশ ঐ দেশেই ফেরত যায় কনসালটেন্সী ইত্যাদি ফি’র নামে, কিছু যায় যন্ত্রপাতি ইত্যাদির নামে, একটা বড় অংশ স্থানীয় এজেন্টরা মেরে খায়। আর যাদের জন্য সাহায্য তাদের কপালে মোটামুটি ঢুঁ ঢুঁ। এই সত্য জেনেও আমরা এই লুটেরাদের উৎপাত বন্ধ করতে পারিনা, পাছে বড় ভাইরা রাগ করেন।
দেশ থেকে শিশুদের ধরে বিদেশে নিয়ে গিয়ে উটের জকি বানানো হয়, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো হয় - আমাদের সরকার ঐ সমস্ত দেশকে কিছুই বলতে পারেনা। দেশের বাকি মানুষও ক্ষীনকন্ঠ। স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা বঙ্গোপসাগরে পারমাণবিক বর্জ্য ফেলে যায়। পরিণতি একই প্রকার থাকে। অপরিক্ষিত ঔষধ, ভ্যাকসিন সাহায্যের নামে এনে আমাদের দেশের মানুষকে গিনিপিগ বানানো হয়। সরকার তখন আবার তার সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে।
“কোন পণ্য বিদেশী হলেই তা ভাল” - আমাদের এই প্রবনতা প্রমাণ করার জন্য যে কোন বাজারে যাওয়াই যথেষ্ঠ। ক্রেতা, বিক্রেতা, সরবরাহকারী সবার মধ্যেই এই আচরণ দেখতে পাবেন। ব্যক্তি আচরণের এই হীন প্রবনতা আমাদের আরো কী কী ভাবে ক্ষতি করে তা পরে আরো বলব। আজকের পোস্ট শেষ করবো শুধু আর একটা প্রসঙ্গ বলে।
আমাদের দেশে পত্রিকা খুললে, নেতাদের বক্তৃতা শুনলে আপনি চারদিকে কেবল দালালদের দেখতে পাবেন। সেখানে আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, চীন, সৌদি আরবের দালালে পরিপূর্ণ। এককালে ইরাক বা লিবিয়ার মত অগুরুত্বপূর্ণ দেশের দালালও পাওয়া যেত। আজকাল ইসরায়েলের দালালও মিলছে। কিন্তু পনের/ষোল কোটি লোকের দেশে বাংলাদেশের দালাল কয়জন আছেন? কতজন বুকে হাত দিয়ে ঘোষনা করেন যে, “আমি বাংলাদেশের দালাল”!
মন্তব্য
এটাই প্রশ্ন! আমাদের শিরদাড়া কবে সোজা হবে, জানিনা!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
প্রশ্নের তীব্রতায় !
এই যে একজন বাংলাদেশের দালাল, ইঁট রেখে গেলাম লাইনে।
- ভাইরে, কঠিন যায়গায় হাত দিছেন।
কোয়ালিটির ব্যপারে বলতে পারি। একেবারে গরম জিলাপির মতো। কালকেই বড় একটা শহরের খুব নামী একটা কাপড়ের দোকানে ঢুকেছি, জামা কাপড় হাতড়ে দেখছি। হঠাৎ একটা জিনিষ বেশ পছন্দ হওয়ায় হাতে তুলে নিলে খুঁটে দেখি লেখা 'মেইড ইন বাংলাদেশ'। আশে পাশে আরও বেশ কিছু প্রকার জিনিষে দেখলাম একই কথা লেখা। প্রোডাক্টগুলো দেখতে ভালো, কোয়ালিটি, ডিজাইন সবই মনকাড়া। কিন্তু তারপরেও আমাদের দেশে আমরা মুখে থাকি, 'আহা বিদেশী জিন্স? বিদেশী টি-শার্ট? বিদেশি আণ্ডারওয়্যার?'
বাংলাদেশের তৈরী কিছু জিনিষ জার্মানীর একটা বড় শপিং মলে শোভা পাচ্ছে, বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে, আর আমরাই কিনা গাঁয়ের গরু গাঁয়ের ঘাস খাই না!
এতে অবশ্য উৎপাদকদেরও খানিকটা দোষ খুঁজে পাই। জিঞ্জিরা খুব বিখ্যাত। ওখানে নাকি রোবোকপের কলকব্জাও পাওয়া যায়, তৈরী হয়। কিন্তু এই জিঞ্জিরা এতোগুলো জিনিয়াস মানুষকে ধারণ করেও বিদেশে তো দূরের কথা নিজের দেশের মানুষেরই আস্থা অর্জন করতে পারলো না এখনো। কেনো? কারণ খুব সোজা, 'নীতি নাই।' লোক ঠকানো। ছোট বেলা থেকেই ভাবছি, তারা তাদের প্রতিভাটা লোক ঠকানোতে ব্যবহার না করে যদি আসলেই কিছু 'ইউনিক' চিন্তা আর উদ্ভাবনে ব্যয় করে তাহলে আমাদের কি নানান পদের জিনিষপাতি তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চায়না- এসব দেশ থেকে আনতে হয়! (এগুলো যে আমাদের এখানেই সম্ভব তা তো আমাদের সচল এনকিদু ইতোমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছেন)।
পররাস্ট্রনীতির আসলে কোনো দোষ নাই। দীর্ঘ প্রায় দুইশ বছর সাহেবদের সামনে, তাদের দালাল এ দেশীয় জমিদারদের সামনে হাত কচলাতে কচলাতে, কুঁজো হতে হতে আমাদের স্বভাব বিবর্তিত হয়ে গেছে। এখনো আমরা কুঁজো হয়ে মিনমিন করেই চলেছি, হাত কচলে চলেছি। আমার তো মনে হয় ভারতের পিনাকী তো পিনাকী, যদি ভূটানের কোনো সরকারী আমলাও থিম্ফুতে বসে বাংলাদেশকে হুমকী দেয়, আমাদের পররাস্ট্রমন্ত্রনালয় একটি মিষ্টি হেসে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দেবে একটু কচলিয়ে সন্তুষ্ট করে দেবার জন্য।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অনেক কিছু লিখতে চেয়েচিলাম, কিন্তু ধুগোদা এক্কেবারে ঝাইড়া দিসে, এখানের বাজারের ৫০% কাপড় "মেড ইন বাংলাদেশ", অথচ ঢাকায় বেস আমরা ফাকতা উড়াই। আমাদের আসলেও মেরুদন্ডের জোর কম।
খাড়াইলাম লাইনে, দালাল হবার
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
একমত।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
মানবাধিকার? সেটাও দলীয়কৃত। পোষা কলমজীবিরা তাদের পোষককে ক্ষমতায় দেখলে তাদের কলমের কালি শুকিয়ে যায়।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
লাশ আসছে তো কি হইছে?
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমান, মন্দায় বড় বড় দেশ নাকানি চুবানি খেলেও আমাদের রেমিটেন্স কমেনি।
সিদ্ধান্ত...ইহা নির্দেশ করে যে আমাদের সরকার শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য সবকিছুই করছে...
বাস্তব অবস্থা কি সেটা আমরা সবাই জানি। দেশ নিয়ে ভাবাবাবি ছেড়ে দেয়াই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনার লেখায় মন্তব্য করতে গেলে ব্যাপক পড়াশোনা করতে হয় - তাই দেরী হল। তাও ঠিকমত সবকিছু পড়ে শেষ করতে পারলাম না। কিছু বলার আগে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জেনে নিতে চাচ্ছিলাম। ইণ্টারনেটে এ ব্যাপারে প্রচুর জিনিস আছে। তবে সামান্য কিছু পড়েই আগে থেকে হয়ে যাওয়া একটা ধারণার সপক্ষে প্রচুর যুক্তি মিললো। ভারতের পররাষ্ট্রনীতির একটা অংশ দেখুন আর বোল্ডাক্ষরের অংশগুলো খেয়াল করুন:
The guiding principles of India’s Foreign Policy have been
founded on Panchsheel, pragmatism and pursuit of national
interest. In a period of rapid and continuing change, foreign
policy must be capable of responding optimally to new
challenges and opportunities. It has to be an integral part of
the larger effort of building the nation’s capabilities through
economic development, strengthening social fabric and wellbeing
of the people and protecting India’s sovereignty and
territorial integrity. India’s foreign policy is a forward-looking
engagement with the rest of the world, based on a rigorous,
realistic and contemporary assessment of the bilateral,
regional and global geo-political and economic milieu (সূত্র: Indian Foreign Policy Report 2004-05)
আমাদের নীতিতে এই শক্তিশালী শব্দগুলোর ধারে কাছেও কিছু আছে? আকারে ছোট ও গা বাঁচানো নীতিটাকে আমি মোটামুটি ঠিকই আছে বলেও মেনে নিতে পারি না। প্রয়োগের সমস্যা তো আছেই, কিন্তু আমাদের নীতি প্রথমত: লেখা হয়েছে কিছু মেরুদণ্ডহীন অলস অর্থলোভী অবিবেচক দুর্নীতিবাজ আর অযোগ্য রাজনীতিবিদদের দিয়ে। যে নীতিতে দেশের স্বার্থ রক্ষা করার, দেশের মানুষকে বাঁচানোর, দেশের সীমানা ঠিক রাখার ব্যাপারে একটাও সরাসরি কথা বলা নেই সেই নীতির প্রয়োগ হলেই বা কি হবে?
সবচেয়ে মেজাজ খারাপ হলো এই লাইনটা দেখে... Strive for the renunciation of the use of force in international relations and for general and complete disarmament. এই লাইনটার পরে বাংলাদেশের স্বার্থ আর সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার ব্যাপারে একটা কড়া আর অপোষহীন ধরনের একটা লাইন থাকার দরকার ছিলো। সেটা না থাকাতে আমাদের পুতু-পুতু মনোভাব আমরা আমাদের প্রকাশিত নীতির মাধ্যমেই স্বীকার করে নিচ্ছি। নীতিগতভাবেই আমরা হার মেনে নিচ্ছি, আমাদের ভাঙ্গা মেরুদণ্ডটা প্রতিবেশী দেশগুলোকে ভালো করে চিহ্নিত করে দেখিয়ে দিচ্ছি।
দেশের নাগরিকদের সাধারণ আচরণ পরিবর্তনে সরকার আর নেতারাই সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। আমাদের মন্ত্রী মিষ্টি মিষ্টি হেসে মীটিংএ বসে পিনাকের ঝাড়ি শুনবেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ক্যাণ্টনমেণ্টে গিয়ে সামরিক অফিসারদের গালাগালি খাবেন - আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাদের অনুসরন করে বড় হতে বলবো?
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নতজানু - এই বিশেষনটা বোঝার বয়স হবার পর থেকেই শুনছি। আমাদের নতজানু হবার নানাবিধ কারন আছে। আমেরিকার প্রতি, ভারতের প্রতি, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি, বিজাতীয় যে কোন বস্তুর প্রতি আমাদের নতজানু হবার ঐতিহাসিক নজীর আছে। কিন্তু বই পুস্তকে আমরা বীরপ্রসু জাতি, বাঙালীর বীরত্ব কিংবদন্তীতূল্য। এতদ অঞ্চলে আদিকাল থেকেই যত বিদ্রোহ হয়েছে তার বেশীরভাগের উৎপত্তিস্থল এই বঙ্গদেশ। এই দুটো পরস্পর বিরোধী নজীর আমাকে বিভ্রান্ত করে আমাদের জাতীয় চরিত্র বোঝার ক্ষেত্রে। আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি সম্ভবত সেই জাতীয় বিভ্রান্তির একটা ফসল। আমরা নতজানু চক্র থেকে বেরুতে পারছি না।
নতজানু চক্র কী? আমরা জানি আমরা কতটা দুর্বল, আমরা জানি আমরা কতটা দরিদ্র। আমরা জানি আমাদের বাঁচার উপায় নেই বিদেশী সাহায্য ছাড়া। আমরা জানি আমাদের উপায় নেই বিদেশী শক্তিকে অগ্রাহ্য করার। আমাদের এই জানাগুলো আমাদের সর্বনাশ করে। আমরা যদি আমাদের এহেন দুর্বলতাগুলো নিয়ে আরেকটু কম সচেতন থাকতাম, আরেকটু কম ভাবতাম, তাহলে আমাদের বিদেশভীতি বা নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এতটা প্রকট হতো না। আমাদের ভেতরের শক্তিগুলো নিয়ে যতটা আলোচনা হওয়া উচিত ততটা হয় না। আমাদের কিছু আছে সেটার চেয়ে আমাদের কী নেই সেটার উপরেই বেশী জোর দেয়া হয় বরাবর। এটা প্রধান কারন আমাদের মাঝে বলিষ্ট নেতৃত্বের অভাব। কাজে না হোক কালজয়ী বক্তৃতায় জাগিয়ে তুলতে পারে তেমন নেতৃত্ব নেই আমাদের বহুবছর। যেমনটি ছিল শেখ মুজিবের। বাংলাদেশে এই একজন নেতা সমগ্র জাতিকে একত্রিত করেছিল তার ক্যারিশমাটিক বক্তৃতায়। এখন বলতে ইচ্ছে হয়, কাজে না হোক কথায় বড় হোক আমাদের ছেলে।
চিরহীনমন্যতায় আক্রান্ত নেতৃত্ব নিয়ে আর কতকাল ধুকে ধুকে মরবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ও সরকার!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নতুন মন্তব্য করুন