পাণ্ডবের চীন দর্শন-১২

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: সোম, ১২/০৪/২০১০ - ৪:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চীনের খরা, চীনের দুর্যোগ

চীনে যাবার সময় দিশা সাধারণত চা আর চকোলেট আনতে বলে। চীনের চায়ের হাজারোটা প্রকরণের মধ্যে খুব কমই আছে যা আমাদের স্বাদের সাথে যায়। চীনা চায়ের মধ্যে আমার পছন্দ হাঙবাইজু বা চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চা। এটার স্বাদ হালকা, গরম পানিতে ভেজালে এক সেন্টিমিটারের চেয়ে কম ব্যাসের চন্দ্রমল্লিকা ফুলগুলো ফুলে ওঠে। দিশা আবার কড়া চা পছন্দ করে। তাই ওর জন্য কিনি শৌ প...চীনের খরা, চীনের দুর্যোগ

[justify]চীনে যাবার সময় দিশা সাধারণত চা আর চকোলেট আনতে বলে। চীনের চায়ের হাজারোটা প্রকরণের মধ্যে খুব কমই আছে যা আমাদের স্বাদের সাথে যায়। চীনা চায়ের মধ্যে আমার পছন্দ হাঙবাইজু বা চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চা। এটার স্বাদ হালকা, গরম পানিতে ভেজালে এক সেন্টিমিটারের চেয়ে কম ব্যাসের চন্দ্রমল্লিকা ফুলগুলো ফুলে ওঠে। দিশা আবার কড়া চা পছন্দ করে। তাই ওর জন্য কিনি শৌ পু’য়ের চা। এই চা দেখতে কালো ট্যাবলেটের মত। গরম পানিতে দিলে গাঢ় রঙ হয়। ছোট সাইজের একটা ট্যাবলেটে অনায়াসে এক মগ চা হয়ে যায়। চীনারা আবার এক পাতিতে দুই-তিন বার গরম পানি ঢেলে চা খায়। তিন বার পানি যোগ করলেও শৌ পু’য়ের চায়ের রঙ বিশেষ ফিকে হয়না। ইন্দোচীনের দেশগুলোতে পু’য়ের চায়ের ব্যাপক চাষ হলেও চীনে মূলতঃ ইউনান প্রদেশে এই চায়ের চাষ হয়। ইউনানের পু’য়ের চা আসলেই ভালো চা। ঢাকা থেকে ইউনানের রাজধানী কুনমিঙে যাবার সরাসরি ফ্লাইট চালু হবার পর থেকে চীনে পৌঁছানোর সময় যেমন কমেছে তেমন ভালো পু’য়ের চা পাবার সুযোগও বেড়েছে। অন্য প্রদেশে যা পাওয়া যায় তা হয় তেমন ভালোনা অথবা দাম অনেক বেশি।

২০১০ সালের মার্চে চীনে গিয়ে শুনি ইউনান, কুইচৌ, কুয়াঙশি, সিচুয়ান, চঙচিঙ, হেনান, Shanxi আর Shaanxi প্রদেশ ভয়াবহ খরায় আক্রান্ত। অর্থাৎ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিম, মধ্য ও মধ্য-উত্তর চীন খরার কবলে পড়েছে। খরা শুরু হয়েছে ২০০৯-এর অগাস্টে, ২০১০-এর মে’র আগে তা শেষ হবার সম্ভাবনা নেই। ভয়াবহ পানি সঙ্কটে পড়েছে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ। অনেকেই আছেন যারা গত ছয় মাসেও স্নান করার সুযোগ পাননি। সরকার কমদামে খাবার পানি সরবরাহের চেষ্টা করছে - প্রতি এক হাজার লিটার বাংলাদেশী টাকায় ২৮ টাকা করে। কিন্তু ট্রাক ভাড়া করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সে পানি পৌঁছাতে পৌছাতে দাম পড়ে যায় প্রতি হাজার লিটার ১,৬২০ টাকা করে। পাহাড়ের বা গ্রামের মানুষদের পক্ষে এই দামে পানি কেনা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

খাবার পানি, ব্যবহারের পানির সঙ্কটের বাইরে খরা পীড়িত মানুষ অবধারিতভাবে মুখোমুখি হয়েছে ক্ষুধার। ক্ষেতের গত মৌসুমের ফসল মার খাওয়ায় কৃষকের ঘরে নিজের উৎপাদিত খাদ্যশস্য বা সব্জী নেই, খাবার কেনার মত পর্যাপ্ত অর্থও নেই। ইউনানের গ্রামের কৃষকদের অনেকেরই খাবার হচ্ছে ইউয়াঙ্গ-কাও নামের তিত্‌কুটে স্বাদের এক রকমের ঘাস, যা আসলে গরু-ভেড়ার খাবার। এক-আধজনের কাছে অল্পস্বল্প বাঁধাকপি বা লেটুস পাতার মত সব্জী আছে। কারো কারো ক্ষেতে কিছু সব্জী হয়তো আছে তবে সেটা তার এই মৌসুমের উৎপাদন। ওইটুকু খেয়ে ফেললে মৌসুম শেষে বেচার মত তার কাছে কিছুই থাকবেনা। তাই খাবার আর পানির ভাবনার সাথে এই এলাকার মানুষের বড় ভাবনা চলতি মৌসুমের ফসল মার খাওয়া। পানির অভাবে চা, কফি, ফল, রাবার আর ফুলের উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক হয়ে যাবে। এক পু’য়ের চায়ের উৎপাদনই কমে যাবে দুই-তৃতীয়াংশ। খরার ধকলটা আংশিক টের পেলাম চা কিনতে গিয়ে। দেখি ভালো চায়ের দাম এর মধ্যেই তিনগুণ হয়ে গেছে। চা কোম্পানীগুলো আগামী বছর চলার জন্য যথেষ্ঠ চা পাবেননা এই আশংকায় এর মধ্যেই চায়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকারী সাহায্যে খরা কবলিত জনপদের মানুষ বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে ঠিকই কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থার বিপর্যয় কাটাতে অনেকটা সময় লেগে যাবে।

খরার মত দীর্ঘ মেয়াদী প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে দুর্গত এলাকায় নিয়মিত পানিয় জল সরবরাহ, অতি সঙ্কটপূর্ণ অঞ্চল থেকে মানুষ সরিয়ে আনা, সেচের জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ ইত্যাদি ব্যাপারে সরকারী ব্যবস্থা এখনো যথেষ্ঠ নয়। বস্তুতঃ ১৮৭৬-১৮৭৯ সালের ভয়াবহ খরার পর চীনে এই খরাটাই সবচে’ বিস্তৃত ও ভয়াবহ। তাই চীনের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতাটি নতুনই বলা যায়। অনেক ব্যাপারেই চীনা সরকার ভূমিকা প্রশংসনীয়, গৃহীত সিদ্ধান্তও বেশ দ্রুত বাস্তবায়িত হয়। এই খরার ক্ষেত্রে মোকাবেলা করার জন্য চীনা সরকার কী কী পদক্ষেপ নেয় সেটা লক্ষ করার বিষয় - চীনাদের জন্যতো বটেই আমাদের জন্যও।

এখন পর্যন্ত খরাতে যা ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে; অথবা এই ব্যাপারে যা যা করা হয়েছে বা হচ্ছে সেটা নিয়ে চীনের মিডিয়াগুলোতে খবর, প্রতিবেদন দেখেছি পড়েছি। কিন্তু যা দেখিনি বা পড়িনি তা হচ্ছে খরা নিয়ে রাজনীতি। খরা কবলিত মানুষকে সাহায্যের নামে নেতা-নেত্রীদের নষ্টামীও দেখতে হয়নি। খরা নেই এমন এলাকার মানুষদের দেখেছি সাহায্যের হাত বাড়াতে। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশুরা পর্যন্ত সহযোগিতা করতে নেমেছে। কিন্তু খরার জন্য ত্রান বা অর্থ যোগাড় করে লোপাট করার কথা শুনিনি।

একটা বিশাল আকারের দেশে যেখানে দুনিয়ার সবচে’ বেশি মানুষ থাকে আর যে দেশটার বড় অংশই দুর্গম সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ মানবিক সাহায্য না-ই পৌঁছাতে পারে। অথবা সাহায্য পৌঁছাতে দেরি হতেই পারে। কিন্তু আমাকে ভাবিয়েছে অন্য ব্যাপার। প্রযুক্তিতে চীন যতই উন্নতি করুক তার বিশাল অংশের মানুষ এখনো পুরোপুরি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় খরা কবলিত এলাকার ভূপৃষ্ঠস্থ পানির উৎসগুলোর বেশিরভাগ শুকিয়ে গেছে। নদীবিহীন পাহাড়ী এলাকাগুলোর অবস্থা বেশ সঙ্কটজনক। দেশের বিশাল অঞ্চল জুড়ে প্রকৃতির উপর এই নির্ভরতা সে অঞ্চলে যথাযথ উন্নয়ন না হওয়াকে নির্দেশ করে। তাছাড়া খরাক্রান্ত প্রদেশগুলোর প্রায় সবগুলোই দরিদ্র প্রদেশ বলে পরিচিত। এই দারিদ্রের কারণ যে সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় এদের নাম নিচের দিকে থাকা সেটা বোধগম্য। আবার এই অঞ্চলগুলো হানদের তুলনায় অন্য নৃ গোষ্ঠীর মানুষ বেশি না হলেও তাঁরা সংখ্যায় অনেক বড় এই ব্যাপারটাও ভাবনার।

দক্ষিণ-পূর্বের ঝেঝিয়াঙ আর ফুজিয়ান প্রদেশ প্রায়ই তাইফুন, ঝড় আর ভারী বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে। একবার পূর্ব চীন সাগরের কাছের শহর ওয়েনলিঙ ছাড়ার দু’দিন পরেই টেলিভিশনে দেখি সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে গোটা ওয়েনলিঙের লণ্ডভণ্ড অবস্থা। দু’দিন আগেই যে রাস্তা-সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি করে গেছি সেখানে কল্‌কল্‌ করে পানি ছুটছে। ছোট ব্রীজ, কালভার্টগুলো ভেঙে গেছে, গাছ উপড়ে পড়েছে। কিন্তু এক মাসও লাগেনি সবকিছু আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। চীনে দুর্যোগ পরবর্তী কালে পূনর্গঠন বা পূনর্নির্মাণের কাজ হয় অসম্ভব দ্রুততায়। সেখানে আমাদের দেশে সাইক্লোনের তিন বছর পরও রাস্তা-ব্রীজের করুণ হাল দেখেছি।

বস্তুতঃ চীনে যে হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা বা রেলপথ তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে, হাজার হাজার ছোট-বড় ব্রীজ হচ্ছে সেগুলো নিয়ে সরকার বা জনগণের কোন উচ্ছ্বাস নেই, রাজনীতি নেই। সড়ক-সেতুর নামকরণ নিয়েও কোন নোংরামী নেই। বাইশ মাইল লম্বা হাঙচৌ উপসাগরীয় সেতু (পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম) তৈরি হয়েছে মাত্র চার বছরে। আর তার নামকরণ বা উদ্ধোধন নিয়ে একটা দিনও নষ্ট করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের ছাড়পত্র পাওয়ামাত্র জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য তা উন্মূক্ত করে দেয়া হয়েছে। সেতুটির নামও রাখা হয়েছে যে উপসাগরের উপর দিয়ে তা গেছে তার নামে - মাও, চৌ এন লাই বা দেঙ-এর নামে নয়।

চীন প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবন দেশ। খরা, জলোচ্ছ্বাস, সামুদ্রিক ঝড়, বন্যা, তুষারপাত, তুষার ঝড়, মরু ঝড়, ভুমিকম্প সবই সেখানে হয়, এবং তা পরিমাণে যথেষ্ঠ বেশি। এইসব দুর্যোগে প্রাণহানী বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক। তবু চীন সাহসের সাথে এগুলো মোকাবেলা করে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে যেখানে সম্ভব সেখানে স্থায়ী সমাধাণের পথ খুঁজে বের করছে বা ভালো দুর্যোগ ব্যবস্থাপণার আয়োজন করছে। এই কারণে সাহায্যের জন্য যখন তখন বাইরের দুনিয়ার কাছে হাত পাতছেনা।

দক্ষিণ চীনে বন্যা মোটামুটি নিয়মিত ব্যাপার। কিন্তু বন্যার কারণে ফসল মার খেয়ে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়না। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের বন্যায় সহজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীনা প্রকৌশলীদের বাঁধ রক্ষা করতে বা প্লাবনের পানি ঠেকাতে দেখেছি। এ’সব ব্যাপারে চীনের কাছ থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে।

২০০৮-এর চীনা নববর্ষের সময় ভারী তুষারপাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষতঃ রেল যোগাযোগ ব্যাহত হয়। ফলে উত্তর, মধ্য আর পশ্চিমাঞ্চলের দরিদ্র এলাকা থেকে পূর্বের আর দক্ষিণের শিল্পাঞ্চলে আগত শ্রমিক-কর্মীদের বাড়ি ফেরার ট্রেনের জন্য ষ্টেশনে অপেক্ষা করতে হয় কয়েকদিন ধরে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডাতেও লাখ লাখ চীনা শ্রমিক-কর্মী অপেক্ষাকৃত শান্তভাবে অপেক্ষা করেন। এ’ধরনের পরিস্থিতিতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিলেও ভারী তুষারপাতে রাস্তাগুলোকে চলাচলের উপযুক্ত রাখা বা ট্রেন যোগাযোগ অব্যাহত রাখার জন্য চীনের ব্যবস্থা যথেষ্ঠ নয়।

বেশিরভাগ সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হলে, বড় ধরণের মানবিক বিপর্যয় রোধ করা যায় - ক্ষতির পরিমাণও কমিয়ে আনা যায়। দুর্যোগ পূর্ববর্তীকালে সঠিক পুর্বাভাসের ব্যবস্থা আর দুর্যোগ পরবর্তীকালে দ্রুত সাহায্য পৌঁছানো ও পূনর্গঠন দুর্যোগের ক্ষতি হ্রাস করে। চীন এই ব্যাপারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাই দুর্যোগপ্রবণ দেশ হলেও বাংলাদেশের সাথে চীনের এইখানে একটা বড় ফারাক তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু দুর্যোগকালীন একটা বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে চীনের মানুষের বেশ মিল আছে। তা হচ্ছে, দুর্যোগে দুস্থ মানুষের সহায়তায় শ্রেণী-অবস্থা নির্বিশেষে মানুষের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসা। এই সব দুর্যোগে বাংলাদেশের মত চীনেও দুস্থ মানুষের উপর দুর্বৃত্তদের থাবা বসানোর কথা শোনা যায়না। আর বার বার দুর্যোগে বিপর্যস্ত চীনারা বাংলাদেশের বন্যাপ্রবণ বা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মতই প্রতিবার ঘুরে দাঁড়ায়, সাহসভরে সুন্দর আগামীর জন্য আগামীর জন্য আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে।


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পুরো বিশ্লেষণটাই আমার কাছে দরকারি মনে হয়েছে। কিন্তু আমি ঠিক নিশ্চিত নই যেসব জায়গায় চীনের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করেছেন সেসব জায়গায় আদৌ তুলনা চলে কি না

বিশেষত সামর্থ এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এটা শুধু পর্যবেক্ষণ স্যার। চীনের যা দেখেছি, শুনেছি তার সাথে আমার দেশের যা কিছু প্রাসঙ্গিক তার কথা বলার চেষ্টা করেছি কেবল। সেখানে সম্ভাব্যতা-অসম্ভাব্যতা বিচারের চেষ্টা করিনি। আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো জানি। তবে অন্যের ভালো ব্যাপারগুলো জানলে সেগুলো থেকে আমাদেরও শুভবুদ্ধির উদয় হতে পারে। অন্যের খারাপ ব্যাপারগুলো যেন আমাদের চর্চায় না আসে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

চা নিয়ে শুরু করেছিলেন, মনে করলাম চা নিয়ে মন্তব্য করব...।

গত সপ্তাহে একটা বিষয়ের উপর পড়াশুনা করতে হচ্ছিল – বার বার চীনের কথা চলে আসছিল। অন্য চীন – ক্যাপিটালিজমের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা গ্রোথ আর দ্রুত ‘বাজারের’ কেন্দ্র হয়ে উঠা চীনের কথা। আপনি অন্য দিকটাতে দৃষ্টি দিলেন।

রাজনীতির নোংরামী আপাত দৃষ্টিতে নেই, তবে এই অসম উন্নয়নের ফলে দুর্নীতি অবস্থা কী তা হয়ত হলফ করে বলা যাবে না। অথবা এই উন্নয়নের ইম্পেক্টই বা কী হবে? চীনে কিন্তু মিডিয়াকে ‘ব্যাপাক ভাবে’ কন্ট্রোল করা হয়। দু’বছর আগে অবসরে যাওয়া এক ‘সফল’চাইনিজ সিঙ্গাপুরিয়ানের সাথে ইন্টারেস্টিং কিছু কথা হয়েছিল সিঙ্গাপুরের উন্নয়নের ব্যাপারে। তাঁর কথার গুরুত্ব অবশ্যই ছিল, যুক্তরাজ্যে পড়াশুনা করা সেই ভদ্রলোক একটা খুব নাম করা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের এশিয়া রিজিওনের প্রধান ছিলেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী সিঙ্গাপুরের উন্নয়নের প্রধান কারণ তখন ‘ইন্টারনেট’ ছিল না। ইনফোরমেশন ‘কন্ট্রোল’ করা যেত। তার ভবিষ্যত বাণী ছিল চীনের 'উন্নয়ন হবে' কারণ ইনফোরমেশন ‘কন্ট্রোল’ করা যায়। এবং লোকজন অনুগত। উন্নয়নের জন্য কিছু 'ক্ষুদ্র লোকজনের বলির পাঁঠা' হতে হয়। আর বিস্তারিত লেখলাম না। প্রাথমিক ভাবে আমার তাঁকে পারভার্ট মনে হয়েছিল... তার পর তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন।

মাঝে মাঝে মনে হয় দীর্ঘ একধরণের শাসনের ফলে চীনের (এবং ফারইস্টের) জনগন কি বেশি অনুগত হয়ে গেছে (conformity)? ডেইলি স্টারে জাপানের দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে এই রিপোর্টটা দেখুন। চিলিং। আমাদের দেশে এদিকে গেলে তো মিডিয়া ভীষণ চ্যাচামেচি করত...।

অযথা প্যাচাল করলাম। লেখা ভাল লেগেছে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

উন্নয়নের জন্য কিছু 'ক্ষুদ্র লোকজনের বলির পাঁঠা' হতে হয়।

এই সত্যি কথাগুলো সবাই এড়িয়ে যায়। কথাটার বিস্তারিত বিশ্লেষণ দাবি করছি। আলাদা পোস্টে।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

দীর্ঘ একধরণের শাসনের ফলে চীনের (এবং ফারইস্টের) জনগন কি বেশি অনুগত হয়ে গেছে

এই কথাটা আগে কোথাও দেখেছি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিস্তারিত মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ দাদা।

আপনার মন্তব্য পড়ে স্বতন্ত্র একটা পোস্ট লেখার তাগিদ অনুভব করছি। শেষ করতে পারলে শীঘ্রই পোস্টাবো।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

পাণ্ডব দা - অফটপিক একটা প্রশ্ন আছে, মাইন্ড না করলে জিগাই - চিনা ট্রেইনে কখনো চড়েছেন? এই ভিডিওর মতন সত্যি কি অবস্থা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চীনা ট্রেনে চড়েছি। মাটির উপরে, মাটির নিচে দুটোতেই। বিলাসবহুল ক্লাস, জনতা ক্লাস দুটোতেই। আপনার দেয়া লিঙ্কের ভিডিও দেখতে পারলামনা শম্বুক গতির ইন্টারনেটের জন্য। তাই সত্যি কী অবস্থা আপনি বোঝাতে চেয়েছেন তা বুঝতে পারিনি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

উন্নয়নের জোয়ার বয়ে দেয়ার জন্য গিনিপিগ জনগোষ্ঠীর ভূমিকা নিয়ে আমি দ্বন্দ্বে আছি।চীনদেশের (ই-কারের ঠেলায় চীনকে অনেক চিন করছেন। এই বানান দেখতে অস্বস্তি লাগে। ) লোকের মনোজগৎ নিয়ে আপনার ধারণা জানতে চাই।

আপনার লেখা সুপাঠ্য। বেশি বেশি লিখুন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উন্নয়নের জোয়ারের জন্য জনগোষ্ঠীর একাংশকে বলি দেবার ব্যাপারে আমার অবস্থান পরে বলার আশা রাখি। প্রশ্নটা যেহেতু নৈষাদদার মন্তব্যে এসেছে তাই সেখানেই বলব।

চীনকে "চিন" বানানোটা আমারও পছন্দ নয়। তবে যারা লেখেন তাদের সাথে তর্ক করতে ইচ্ছে করছেনা।

মূলতঃ চীনের মানুষ নিয়েই বা তাদের জীবনের নানা দিক নিয়ে লেখার চেষ্টা করি। আফসোস্‌ হয় যে ম্যান্ডারিন ভাষাটা জানিনা। জানলে চীনের সাধারণ মানুষের আরো কাছে পৌঁছাতে পারতাম।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নাশতারান এর ছবি

বাংলা একাডেমী বানান-অভিধান অনুযায়ীঃ

চিন=চিহ্ন, নিদর্শন, পরিচিতি
চীন=পূর্ব এশিয়ার দেশবিশেষ

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

পুতুল এর ছবি

লেখা খুব ভাল লাগছে। আগে জানতাম আপনি প্রবন্ধ বিশারদ, তারপর মনে করতাম চীনা বিশেষজ্ঞ, একখ দেখি চা বিশেষজ্ঞ! ঘটনা কী? চা সম্পর্কে এতো কিছু জানতাম না।

এখানে চীনাদের একটা অভিযোগের সামনে দাঁড় করানো হয়- "মানবতা"। কথাটা শুনতে শুনতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। তিব্বত নিয়েও অনেক কৈতুহল। এই সব ব্যপারে চীনের জনগন কী ভাবে? আশা করি একদিন আলোচনা করবেন।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বস্‌, আমি কোন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নই। যা দেখি, যা বুঝি তাই আপনাদের জানানোর চেষ্টা করি। চীনের চা নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণা বা হাজার হাজার পৃষ্ঠা লেখা সম্ভব। এই ব্যাপারে আমার জানা শূন্যের কোঠায়।

মানবতা সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো সামনে হয়তো আলোচনায় আসবে। তিব্বত বা শিঝ্যাঙ যাইনি তাই সেখানকার কথা বলতে পারবোনা। এ'নিয়ে অন্য এলাকার মানুষের মনোভাব খুব ভালো করে আমার জানা নেই। তবে কিছু সাধারণ মনোভাব আছে যেগুলো প্রাসঙ্গিক হলে পরে বলবো।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমরা সবই জানি, দেখি, শুধু শিখিনা। বিদেশের পোষাকটাই শুধু নকল করতে পারি আমরা, নিজের সংস্কৃতিকে বিকিয়ে দিয়ে হলেও। ভালো জিনিসটা নিতে আমরা বড়ই কৃপণ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঠিক, একদম ঠিক।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাসনীম এর ছবি

আপনার এই সিরিজটা পড়ছি আর ভালো লাগছে। আমাদের দেশের সাথে চীনের মানুষের মিল আছে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় দুনিয়ার সব দেশেরই সাধারন মানুষের মধ্যে মিল আছে বেশ, তারপর কেউ এগিয়ে যায় আর কেউ পিছিয়ে যায় মূলত নেতাদের কারণে।


কিন্তু দুর্যোগকালীন একটা বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে চীনের মানুষের বেশ মিল আছে। তা হচ্ছে, দুর্যোগে দুস্থ মানুষের সহায়তায় শ্রেণী-অবস্থা নির্বিশেষে মানুষের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসা। এই সব দুর্যোগে বাংলাদেশের মত চীনেও দুস্থ মানুষের উপর দুর্বৃত্তদের থাবা বসানোর কথা শোনা যায়না।

চীনে শুনেছি দুর্নীতির শাস্তি খুবই কড়া। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চীনে দুর্নীতি কেমন? ওদের রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাজনীতি নিয়েও লেখা দিয়েন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দেশে দেশে সাধারণ মানুষদের মধ্যে মিল যেমন অনেক অমিলও কিন্তু অনেক। তাই এগিয়ে বা পিছিয়ে যাবার ঘটনা ঘটে। নেতাদের কৃতিত্ব আছে, তবে সেটাই সব নয়।

চীনে দুর্নীতির শাস্তি বেশ কড়া - এ'কথা সত্য। তবে দুর্নীতি আছে, এবং তা খুব কমনা। চীনের রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে লেখা দেয়া সম্ভবনা। কারণ, সেটার প্রায় পুরোটাই আমার অভিজ্ঞতার বাইরে। রাজনীতি নিয়েও খুব কম বলতে পারবো। কারণ একই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বর্ষা এর ছবি

পান্ডবদা,
চীনাদের সাথে আমাদের কি আসলেই মিল আছে? চারিত্রিক দিক দিয়ে আমি কোনো মিল খুঁজে পাইনা। ওদের আর আমাদের জনসংখ্যা বাহুল্য জনিত সমস্যা হয়তো এক রকম। ভৌগলিক দিক দিয়ে মিল থাকায় হয়তো সামাজিক আর পরিবার গঠণের ক্ষেত্রে আমাদের দুইদেশের মিল পাওয়া যায়। পারিবারিক বন্ধন, যৌথ পরিবার, প্রেম, বিয়ে এই টাইপ ব্যাপারে হয়তো মিল আছে কিন্তু কাজের প্রতি নিষ্ঠা আর ওয়ার্ক এথিক্‌স এর ব্যাপারে ওরা অতিমানবীয়। আমরা বাঙ্গালীরা ঐ পর্যায়ে মনে হয় না কখনো পৌছাবো। রিপিটেটিভ কাজ দিনের পর দিন এরা কিভাবে যে করে!!! সব দেশে কোম্পানির প্রিয় ওয়ার্কার হলো চাইনিজ।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. চীনাদের সাথে আমাদের অনেক বিষয়ে মিল, অনেক বিষয়ে অমিল আছে। তবে দুই জন দুই মেরুর বাসিন্দা নয়। বরং বেশিরভাগ বিষয়ে বেশ কাছাকাছি। আলাদা করার মত কিছু প্রকট বৈশিষ্ট্য আছে, তবে সেটা শেষ কথা নয়।

২. চীনের শ্রমিকদের যে বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন সেটা সত্য এবং গোটা দুনিয়ায় ব্যতিক্রম। এটা নিয়ে গল্পও আছে। প্রাসঙ্গিক হলে ভবিষ্যতে তা বলার আশা রাখি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আবু রেজা এর ছবি

চীনের এমন বিবরণ আগে পড়ি নি।
প্রণাম হে চৈনিক পরিব্রাজক! প্রণাম!!
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হায় হায় বস্‌! আপনি কি এই দ্বাদশ পর্বের আগের কোন পর্বই পড়েননি!!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

এরকম একটা লেখায় আলোচ্য জায়গাগুলো পয়েণ্ট করে একটা ম্যাপ আর দুয়েকটা ছবির অভাব বোধ করি খুব।

আচ্ছা, চীনা ভাষায় চীনের নাম কি? চায়না নিশ্চয়ই নয়। আমি যতদূর জানি ওরা দেশটাকে 'চিন' বলে সম্বোধন করে কোন কোন ক্ষেত্রে। ইচ্ছে করে হ্রস্ব-ইকার দিয়ে লিখলাম, কারণ চীনাদের মুখে যখন 'চিন' শব্দটা শুনি, ওটাকে 'চিন'ই শোনা যায়, 'চীন' নয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কথা বলার সময় ম্যাপের অভাবটা আমিও বোধ করি। তবে বর্ণনার সাথে সঙ্গতি রাখতে গেলে ম্যাপগুলোতে একটু কারিকুরি করার দরকার হয়। আমার আবার সেই এলেম নেই। আর আমিতো আপনার মত না যে ক্যামেরা চালাতে জানি। তাই ছবি নেই।

চীনা ভাষায় তাদের দেশের নাম "Zhōngguó"। বাংলায় এর উচ্চারণ "চঙগৌ" বা "চঙগুয়া"র মত। আমার মুখে ঠিকভাবে আসেনা। ওদের কেউ "চিন" বলেন সম্ভবতঃ আমাদের মত বিদেশীদের বোঝার সুবিধার্থে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

এই সিরিজটা যতবার পড়ি, ততবারই আমার প্রতিবেশিনী ঈ-র দেহচ্ছবি ভেসে ওঠে মনে। আহ, চীন বড়ই কুদরতের দেশ। হোক খরা।

সিরিজ চলমান থাকুক।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

সাবিহ ওমর এর ছবি

হায় চৈনিকা, হায়! ইয়ে, মানে...

বর্ষা এর ছবি

আবারো বলছি কেইস খারাপ। তবে ভাতৃবঁধু হিসেবে তারা বেশ চমৎকার, তাই সমস্যা নেই। কেইস খারাপ বলছি কারণ- 'হায় চৈনিকা, হায়! ইয়ে, মানে... '
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হে ভ্রাতা! আপনার কবিতায় আমার মন্তব্য পড়ুন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার এই পাক-পবিত্র সিরিজ পড়ে আপনার মনে চৈনিকা প্রতিবেশিনীকে নিয়ে কু-চিন্তা আসে! নাউজুবিল্লাহ্‌। আপনি দেখি আমাকেও সেই পাপের ভাগী করে ফেলছেন!!

আশা করি চীনের খরা কেটে যাবে মে মাসেই। এই সিরিজের খরা কাটবে কিনা জানিনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বাউলিয়ানা এর ছবি

চীনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং তা থেকে বাঁচবার জন্য চীনাদের সংগ্রামের বিশ্লেষনটা দারুন লাগল পান্ডবদা।

লেখা যথারীতি মুগ্ধ করেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরূদ্ধে আমাদের সংগ্রামের গল্পও কিন্তু কম চমকপ্রদ নয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নাশতারান এর ছবি

চীন দর্শনের সব পর্বই খুঁজে খুঁজে পড়েছি। সবখানে মন্তব্য করি নি। জ্ঞানগম্যির অভাবের কারণে। আপনার গদ্যশৈলী দারুণ। এটা জানা কথা। তাও বলতে ইচ্ছে হলো।

চীনে দুর্যোগোত্তর পুণরুদ্ধার কার্যক্রমে বড় বাধা এর আয়তন আর দুর্গমতা। আমাদের দেশে এর কোনটিই নেই। এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোও চীনের মতো দুর্গম নয় নিশ্চয়ই। তবুও বাংলাদেশ আর চীনের দুর্যোগব্যবস্থাপনায় বিস্তর ফারাকের কারণ কী? দুর্নীতি নাকি সরকারের উদাসীনতা?



টাইপোঃ উদ্ধোধন > উদ্বোধন, পৌছাতে > পৌঁছাতে, যথেষ্ঠ > যথেষ্ট
ঈ-কার > ই-কারঃ
সব্জী > সবজি, কোম্পানী > কোম্পানি, সরকারী > সরকারি (সরকারীকরণে আবার ঈ-কার ),
মেয়াদী > মেয়াদি, নষ্টামী > নষ্টামি, পাহাড়ী > পাহাড়ি, ব্রীজ > ব্রিজ (বিদেশি বলে ই-কার ),
নোংরামী > নোংরামি, প্রাণহানী > প্রাণহানি

ন > ণঃ প্রবন > প্রবণ, পূনর্গঠন, পূনর্নির্মাণ > পুনর্গঠন, পুনর্নির্মাণ
ণ > নঃ সমাধাণ > সমাধান, ব্যবস্থাপণা > ব্যবস্থাপনা, ধরণ > ধরন, ঠাণ্ডা > ঠান্ডা
উ-কার > ঊ-কারঃ ভুমিকম্প > ভূমিকম্প
ঊ-কার > উ-কারঃ উন্মূক্ত > উন্মুক্ত

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

হিমু এর ছবি

সম্ভবত মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা।

বাংলাদেশে যে কোনো দুর্যোগেও দুর্গতদের সংখ্যা অনেক বড়। চীনে জনসংখ্যা অনেক, কিন্তু জনঘনত্ব বাংলাদেশের চেয়ে কম। বাংলাদেশে কয়েক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে লক্ষ লক্ষ লোক বাস করে। তাদের কাছে ত্রাণসেবা পৌঁছানোর জন্যে প্রয়োজনীয় জনশক্তি সরকারের নাই। কোনো দুর্যোগেই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ একা কিছু করতে পারবে না, সামরিক আর আধা সামরিক বাহিনীকে ডাক দিতে হবে, স্বেচ্ছাসেবকদের এগিয়ে আসতে হবে।

আমি এ কারণেই উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে শিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করি। শিশুরা যাতে স্কুলে শেখে, বন্যা জলোচ্ছ্বাস ঘূর্ণিঝড়ের সময় কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে। ড্রিল আর লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পারফরম্যান্স যাচাই করা হবে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সফল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য কতগুলো বিষয় জরুরীঃ

১। অবকাঠামোগত উন্নয়নঃ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে দ্রুত মানুষ সরানো, দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ, দ্রুত পুনর্গঠণ ইত্যাদি কাজ করা যায়। দুর্গত কেন্দ্র থাকলে সেখানে আশ্রয় নেয়া সম্ভব হয়। চিকিৎসা সুবিধা থাকলে আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়।

২। প্রশাসনিক উন্নয়নঃ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামো থাকলে এবং দুর্যোগকালীন সময়ে প্রশাসনের অন্যান্য যন্ত্র তার সাথে কীভাবে সমন্বয় সাধণ করবে সে ব্যাপারে স্থায়ী দিকনির্দেশনা থাকলে অহেতুক প্রশাসনিক জটিলতা এড়ানো যায়।

৩। জনসচেতনতাঃ দুর্যোগ বিষয়ক জ্ঞান থাকা ও তার যথাযথ ব্যবহারের বিকল্প নেই। প্রতিটি এলাকাতে ঐ এলাকাতে সম্ভাব্য দুর্যোগসমূহের ব্যাপারে সবার জ্ঞান ও তার প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। এতে অনেক দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচা যাবে, ক্ষয়-ক্ষতিও হ্রাস পাবে।

৪। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারঃ যেসব ক্ষেত্রে precautionary ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব সেখানে সেগুলোর ব্যবস্থা নেয়া। যেমন, যেখানে বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, ভূমিক্ষয় রোধ ইত্যাদি করা প্রয়োজন সেখানে সেই পদক্ষেপ নেয়া। উদ্ধার কার্যক্রম ও পুনর্গঠণ কার্যক্রমে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করে ও সময় বাঁচায়।

উদাসীনতার দুই প্রকার ব্যাখ্যা আছে - একটি অজ্ঞতাপ্রসূত, অন্যটি দুর্নীতিপ্রসূত। বাংলাদেশে উভয় প্রকার ব্যাখ্যাই বিদ্যমান আছে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। মন্তব্য করার জন্য ঐ বিষয়ে পাঠকের জ্ঞানগম্যি থাকলে লেখকের উপকার হয়। কিন্তু জ্ঞানগম্যি থাকাটা জরুরী নয়। পড়ে যেমন বোধ হল বা যা মনে পড়ল সেটা বললেও লেখকের উপকার হয়।

২। চীনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে হিমুর আলোচনায় যোগ দেবার চেষ্টা করছি।

৩। বানান ভুল সংশোধনের এই প্রক্রিয়াটি আমার খুব ভালো লাগে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাখ্যাটা মনে হয় দরকার। কোন কোন বানানের ক্ষেত্রে "সংসদ অভিধান" বা "বাংলা একাডেমী অভিধান" বলেছে এই ব্যাখ্যা আমার কাছে যথেষ্ট মনে হয় না কারণ, এই অভিধানগুলো আসমানী কিতাব নয় এবং এখানেও ক্রমাগত সংশোধনী চলছে, গবেষণা চলছে। সুতরাং এই পর্যায়ে আমরাও যদি আলোচনা করার চেষ্টা করি তাতে অভিধানের ভুল বা আমাদের ভুল জানা থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে।

আমার লেখার বানান ভুলগুলো সবই টাইপো নয়। কিছু অজ্ঞতা এবং কিছু ভিন্নমতও আছে। আমি বরং ভিন্নমতগুলোর কথা বলি। এগুলো নিয়ে আলোচনা হলে আমিতো বটেই অন্যদেরও উপকার হবে।

০১। "সব্জী" ভুল কেন?
০২। বিদেশী শব্দ হলেই হ্রস্ব-ই কার দেয়ার আইন আমার কাছে ভ্রান্ত ধারণা বলে মনে হয়। এব্যাপারে বাংলা বানান উচ্চারণ-অনুগ হওয়া বা প্রতিবর্ণীকরণ হওয়া উচিত। ইংরেজী i-এর বদলে হ্রস্ব-ই কার এবং y-এর বদলে দীর্ঘ-ঈ কার যৌক্তিক। সেই বিবেচনায় আমি company-কে কোম্পানী লিখি।
০৩। "সহযোগী" ও "সহযোগিতা" ঠিক হলে "সরকারী" ও সরকারিকরণ" ভুল কেন?
০৪। "মেয়াদী", "নষ্টামী" ও "পাহাড়ী"-তে দীর্ঘ-ঈ কার ভুল কেন?
০৫। "প্রাণবিনাশী" শুদ্ধ হলে "প্রাণহানী" ভুল কেন?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নাশতারান এর ছবি

অভিধানগুলোকে ধ্রুবসত্যজ্ঞান করে অপরিবর্তনীয় ভাবার কারণ নেই এবং এখানে ক্রমাগত সংশোধনী চলছে, গবেষণা চলছে সেটাও ঠিক। বাংলা একাডেমীর বানান রীতিও এই সংশোধনী ও গবেষণার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ারই অংশ। কোন নিয়মনীতিই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। তবে যেখানে কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত কোন নিয়মই নেই সেখানে মানুষ কোন নীতি অনুসরণ করবে?

দীর্ঘকাল যাবৎ বাংলা বানান সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুশাসন অনুযায়ী চলে আসছিলো। উনিশ শতকের গোড়ায় বাংলা গদ্যরীতিতে তদ্ভব, দেশি, বিদেশি শব্দের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন থেকে ক্রমান্বয়ে অ-তৎসম শব্দের বানান বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে আরম্ভ করে।

বাংলা বানানের সমতা আনার জন্য বাংলা একাডেমী যথাসম্ভব বিকল্প বর্জন করে বাংলাদেশে সম-ধরনের বানান প্রচলন করতে চেয়েছে।
যেমনঃ তীর (কূল, তট অর্থে, তৎসম), তির (বাণ, শর অর্থে, ফারসি)।

যেসব তৎসম শব্দে ঈ-কার ও ই-কার দুই-ই স্বীকৃত সেখানে শুধুমাত্র ই-কার রাখা হয়েছে। বানান সরলীকরণের লক্ষ্যে। যেমনঃ বড়শি, বড়শী।

অতৎসম ও বিদেশি শব্দে, যেখানে সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণের বাধ্যবাধকতা নেই সেখানে ই-কার রাখা হয়েছে। একই কারণে যথাসম্ভব যুক্তাক্ষরও পরিহার করা হয়েছে।

০১। সব্জীঃ সবজী শব্দটি ফারসি, ব্জ কে অনাবশ্যক যুক্তাক্ষর থেকে মুক্তি দিতে একে ভেঙ্গে বজ করা হয়েছে, ঈ-কারের বাধ্যবাধকতা না থাকায় ই-কার দিয়ে লেখা হয়েছে।

০২। বাংলা বানান উচ্চারণ-অনুগ হওয়া বা প্রতিবর্ণীকরণ হওয়া উচিত সত্যি। কিন্তু চাইলেই আমি “বারণ (সং. [√বৃ+ণিচ+অন])”কে “বারন” লিখতে পারি না। যদিও উচ্চারণ একই। বিদেশি শব্দের বানানকে উচ্চারণ-অনুগ করতে DIM কে ডিম আর DEEP কে ডীপ লেখা উচিত। DADDY’র উচ্চারণ ড্যাডি (হ্রস্ব), LADY’র উচ্চারণ লেইডী (দীর্ঘ)। দুটোতেই Y। প্রতিবর্ণীকরণ করতে গেলে উচ্চারণ-অনুগ হচ্ছে না। এই ঝামেলা এড়াতেই সম্ভবত বিদেশি শব্দে ই-কার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

০৩। সহযোগী-সহযোগিতা, সরকারী-সরকারিকরণঃ সহযোগ তৎসম, যার বিশেষণ সহযোগীতা, বিশেষ্য সহযোগিতা। সরকার ফারসি, একে বিশেষণ করতে ঈ-কার প্রয়োগ নিয়মবদ্ধ নয়, তাই ই-কার। কিন্তু করণ আবার তৎসম। তাই এর সাথে জুড়তে সংস্কৃত নিয়ম।Smiley

০৪। মেয়াদী, নষ্টামী, পাহাড়ীঃ মেয়াদ আরবি, পাহাড় হিন্দি। তাই ই-কার দিয়ে লেখা হচ্ছে। নষ্টামি শব্দটি নিজেই তৎসম।

০৫। প্রাণবিনাশী, প্রাণহানীঃ বিনাশী, হানি দুইই তৎসম। “হানী” বানানটি ভুল।

(সূত্রঃ বাংলা একাডেমী বানান অভিধান, সংসদ বাঙ্গালা অভিধান )

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চমৎকার আলোচনা, ধন্যবাদ।

যেখানে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন নিয়ম নেই সেখানে বানানের ক্ষেত্রে convention মানা উচিত। আর convention খুঁজে পাবার জন্য প্রতিষ্ঠিত বা নির্ভরযোগ্য লেখকদের লেখাকে অনুসরণ করা যায়। এতে কিছুটা গোলমালের সম্ভাবনা আছে, তবে তাতেও জনপ্রিয় ধারাটি বের হয়ে আসবে - একটু সময় লাগবে আরকি।

প্রতিষ্ঠিত বা বিস্তারিত বাংলা ব্যাকরণ না থাকার সমস্যা হচ্ছে এখানে যুক্তি, ব্যাখ্যা বা কারণগুলো একই সময়ে স্থির থাকেনা। আরো সমস্যা হচ্ছে অন্য ভাষা থেকে absorbed শব্দ আর অন্য ভাষার শব্দ তাদের মর্যাদা কী হবে তা নিয়ে সংশয়। এবং সবচে’ বড় সমস্যা হচ্ছে সংস্কৃত ও তৎসম শব্দের মর্যাদা।

তৎসম শব্দ মূলতঃ সংস্কৃত শব্দ কিন্তু বাংলায় ব্যবহৃত বলে তাকে বাংলা শব্দই বলা উচিত। কবি-সাহিত্যিকরা তাঁদের সৃষ্টিকর্মে (বিশেষতঃ আগে) আকছার সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করেছেন বাংলা শব্দের প্রতিশব্দ হিসাবে। সেক্ষেত্রে বাক্যের অর্থ সাধারণ পাঠকের মনে অস্পষ্টতা সৃষ্টি না করলে এবং অন্যরাও সেটি ব্যবহার করা শুরু করলে শব্দটি absorbed হয়েছে বলে ধরা যেতে পারে।

তৎসম, তদ্ভব, অর্ধ-তৎসম, দেশী, বিদেশী এই প্রকার উৎপত্তি অনুসারে শব্দকে বিভাজন করলে এবং তাদের জন্য স্বতন্ত্র বানানরীতি চালু করলে তা অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করে, এবং তাই করছে। সকল প্রকার absorbed শব্দকে বাংলা শব্দ ধরে তাদের জন্য uniform বানানরীতি করলে এই জটিলতা এড়ানো যায়।

তীর (তির- বাণ অর্থে), সব্জী (সবজি), মেয়াদী (মেয়াদি), পাহাড়ী (পাহাড়ি) এগুলোর মধ্যে দ্ব্যর্থতা দূরের জন্য “তির”- বাণ অর্থে মেনে নেয়া যায়, যদিও “তীর”-বাণ অর্থে বহুল ব্যবহৃত। বাকিগুলোতে দীর্ঘ ঈ-কার ব্যবহারের convention আছে। তাই, উৎপত্তিগতভাবে বিদেশী বলেই এ’সকল শব্দে হ্রস্ব ই-কার ব্যবহার করতে হবে এই convention-এ আমার আপত্তি আছে।

বিদেশী শব্দ যা absorbed হয়নি সেখানে উচ্চারণ-অনুগ হওয়াটা প্রাথমিক শর্ত হওয়া উচিত। যেখানে সেটা সম্ভব নয় সেখানে প্রতিবর্ণীকরণ হতে হবে। তাই, “Daddy”-র উচ্চারণ “ড্যাডি” (হ্রস্ব), “Lady”-র উচ্চারণ “লেইডী” (দীর্ঘ) হবে প্রাথমিক শর্ত হিসাবে। আবার উচ্চারণ-অনুগ হওয়া সম্ভব নয় বলে “Tzipi Livni”-র নাম “ৎযিপি লিভ্‌নি” লেখা যেতে পারে। এতে ঝামেলা হবার কথা না।

দীর্ঘ ঈ বর্ণটিকে কি বিলুপ্ত করা হয়েছে? উত্তর হচ্ছে - না। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ ঈ-কারকে সুযোগ পেলেই হ্রস্ব ই-কার করে দেয়া হবে, এতে জটিলতা হ্রাস পাবে - এমন ধারণা ভুল। অপ্রয়োজনীয় বর্ণ যেমন, দীর্ঘ ঋ, হ্রস্ব ৯, দীর্ঘ ৯, অন্তস্থ ব বাদ দেয়া ঠিক আছে। যুক্ত স্বরবর্ণ বাদ দিয়ে (যেমন, ঔ, ঐ) যুক্ত স্বরচিহ্ন (যেমন, ঔ-কার, ঐ-কার) মেনে নেবার চেষ্টা চলতে পারে। বাংলা ভাষার উচ্চারণে আছে কিন্তু বর্ণ নেই (যেমন, অ-তে য-ফলা দিলে যে উচ্চারণ হয় তার কাছাকাছি বা ইংরেজী a-এর উচ্চারণ যা হওয়া উচিত সেই বর্ণটি) এমন নতুন বর্ণ যোগ করা যেতে পারে।

সহযোগী-সহযোগিতা, সরকারী-সরকারিকরণঃ সহযোগ তৎসম, যার বিশেষণ সহযোগীতা, বিশেষ্য সহযোগিতা। সরকার ফারসি, একে বিশেষণ করতে ঈ-কার প্রয়োগ নিয়মবদ্ধ নয়, তাই ই-কার। কিন্তু করণ আবার তৎসম। তাই এর সাথে জুড়তে সংস্কৃত নিয়ম।

শব্দের পিতৃ-মাতৃ পরিচয় ধরে অহেতুক টানাটানি করে বাংলা একাডেমী এই জটিলতা তৈরি করেছে। সকল প্রকার absorbed শব্দকে বাংলা শব্দ ধরলে এই জটিলতা তৈরি হতনা।

আলোচনার এই অংশে কিছু আমার ব্যক্তিগত মতামত চলে এসেছে। সেই মতামতগুলো যে সর্বাংশে শুদ্ধ তা হয়তো নয়। সেখানে ভুল চোখে পড়লে আলোচনা করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ রইল।




তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্পর্শ এর ছবি

আলোচনা ভালো লাগলো। তবে কোনটা কোন মাত্রায় 'absorbed ' হয়েছে সেটা 'কোয়ান্টিটিভলি' বের করা বেশ মুশকিল হয়ে যাবে। তাই উৎপত্তি হিসেবে ধরলে অন্তত নিয়মগুলো, ততোটা সরল না হলেও, স্পষ্ট থাকে।

অভিধানকে বেদবাক্য হিসেবে না নেওয়ার বিষয়ে আপনার অভিমতের সাথে আমি একমত। বিবর্তনের সুযোগ তো রাখতেই হবে। এটা সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত। আপনার এই মন্তব্যের মূলভাব বুঝতে পেরেছি বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু এটা 'টেকনিক্যাল' বিষয় সেহেতু মন্তব্যটা আরো বেশি 'রিজিড' হলে ভালো লাগতো। বিশেষ করে 'feasibility' র দৃষ্টিকোন থেকে আপনি তাকাননি, সেটা বোঝা গেছে।

বুনোহাঁসকে তার গোছানো-সুন্দর মন্তব্যের জন্য ডিটো চলুক । অনেক কিছু শিখলাম। এবং বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মিললো।

শুভেচ্ছা সবাইকে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্পর্শ, বাংলায় বহুল ব্যবহৃত যে বিদেশী শব্দটার ভালো এবং বহুল প্রচলিত বাংলা নেই সেটাকে 'absorbed' বলা যায়। ব্যাপারটা কিন্তু কঠিন নয়, মুখস্থ রাখারও দরকার নেই। লেখক নিজের লেখা পুনঃপাঠ করতে গেলেই এটা ধরে ফেলতে পারবেন। নতুন কিছু কিছু শব্দ আবার সময়ের সাথে সাথে 'absorbed' হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে, উৎপত্তি বিচার করতে গেলে সবসময় মাথায় রাখতে হবে এটা দেশী ওটা বিদেশী সেটা সংস্কৃত ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে, বহুল ব্যবহৃত বিদেশী শব্দের বেলায় লেখকের ভুলের হার বাড়বে - যেটা আমরা হরহামেশা করি বা দেখি।

Technical বিষয়ে rigid মন্তব্য করার জন্য যতটুকু authority থাকা দরকার ততটুকু আমার নেই। কারণ বোধগম্য - আমার সেই জ্ঞান নেই বলে। তাই প্রস্তাব আর সংশয় প্রকাশের মধ্যে আমাকে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়।

"এটা হবে" - এই পরামর্শ থাকাটা যেমন জরুরী আবার "এটা কেন হবে" বা "ওটা হওয়াটা যৌক্তিক কিনা" এই প্রশ্নগুলো থাকা, আলোচনা করাটাও জরুরী। বানান সংশোধনের ক্ষেত্রে বুনোহাঁস ভিন্ন strategy নিয়েছেন - সেটা হয়তো যৌক্তিক কারণসাপেক্ষে, তবে তাতে এমন আলোচনার সুযোগটা বন্ধ হয়ে গেছে।

আলোচনায় অংশ নেয়া সবাইকে ধন্যবাদ।




তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

চীনের রাজনীতির চেয়ে এই পথেঘাটের মানুষের কথাই পড়তে ভাল লাগছে বেশি।রাজনীতির গল্প তো সেই একই, পেপারে যা আসে, টিভি তে যা দেখায়।

রোদে-জলে-গাঁথা মানুষ আর এই নিঠুর-দরদী প্রকৃতির হাসিকান্নাই টানে বেশি। আর এই হাসিকান্না কে নিয়ন্ত্রণ তো করছেই রাজনীতি পেছন থেকে, থাকুক সে পেছনেই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বড় বড় মানুষদের কথা আর তাদের নিয়ে গল্প করার জন্য নানা মিডিয়া আছে। নিম্নবর্গের মানুষদের নিয়ে লেখার জন্য নানা রকম গবেষণাপত্র আছে। তাহলে আমজনতার জন্য কী থাকল? আমজনতার কথা আমরাই না হয় বলার চেষ্টা করি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

চিন যেভাবে বাঁধ বানিয়ে বন্যা আর খরা নিয়ন্ত্রণ করেছে সেটা পৃথিবীতে ব্যতিক্রমী উদাহরণ। পাশাপাশি হল্যান্ড আর জাপানের উদাহরণ দেখলে মনে হয় দেশগুলো এত ছোটো তাই কয়েক দশকের সদিচ্ছাই দেশগুলোর উন্নতির জন্য যথেষ্ট ছিল। বড় দেশের সুবিধা যেমন বেশী অসুবিধাও তেমনই বেশী ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অনেকদিন পর আপনার দেখা মিল্‌ল। আপনাকে আজকাল এ'দিকে দেখা যায়না কেন?

চীন বলুন, জাপান বলুন আর নেদারল্যান্ডস বলুন সরকারের সদিচ্ছা, জনগণের সহযোগিতা, সঠিক পরিকল্পনা আর দক্ষ ব্যবস্থাপনার মেলবন্ধন না হলে কোন ফুলই ঠিকভাবে ফুটবেনা। তাতে দেশ ছোট হোক আর বড়ই হোক।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মামুন হক এর ছবি

পাণ্ডবদা উদ্বাস্তুজীবনে চীনে ছিলাম একটানা নয় মাস। কত কথা, কত স্মৃতি, কত কষ্ট। অনেক কিছুই এতদিন ভুলে যেতে চেষ্টা করেছি। এখন মনে হচ্ছে কোন স্মৃতিই ফেলনা না। আপনার মতো করে লিখতে জানলে লিখেই ফেলতাম হয়তো।
এই সিরিজটা দিনকে দিন আমার প্রিয় সিরিজগুলোর লিস্টে জায়গা করে নিচ্ছে।
পরের পর্বের সাগ্রহ প্রতীক্ষায় রইলাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটানা ন-য়-মা-স চীনে ছিলেন! আপনাকেতো ধৈর্যশক্তির নোবেল প্রাইজ দেয়া উচিত। কোথায় কোথায় ছিলেন?

আপনি দেশে থাকলে আপনার সাথে চীন নিয়ে যৌথ একটা সিরিজ করার কথা ভাবা যেত।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মামুন হক এর ছবি

মূলত পূব দিকেই ছিলাম। শেনঝেন, গুয়াং ঝৌ, শেন্টাও, শিয়ামেন, হাংঝৌ হয়ে সাংহাই পর্যন্ত। ভিসা ফুরিয়ে গেলে হংকং বা ম্যাকাও থেকে রিনিউ করে আসতাম। আর কোথাও যাবার জায়গা ছিলনা বলে এতদিন ছিলামরে ভাই। যদিও চারদিক ঘুরিফিরে দেখার সুযোগ হয়নি। বেইজিং যাইনি কোনদিন, চীনের প্রাচীরও দেখিনি। তবে মানুষ দেখেছি বিস্তর।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই জায়গাগুলোর সবই আমার ঘোরা এক শান্তাও ছাড়া। চীনের প্রাচীর দেখার চেয়ে চীনের মানুষ দেখা জরুরী। সেটা যখন দেখেছেন তাহলে ঐ ভবঘুরে জীবন নিয়েই আপনার বিশাল বিশাল ভলিউম লিখতে পারার কথা। যেখানে আমি শর্ট ট্রিপগুলো দিয়েই এই সিরিজ চালাচ্ছি।

আপনার জীবনটাইতো একটা মহাকাব্যিক উপন্যাস। লেখা শুরু করে দিন। মার্কোপোলোর বর্ণনার চাইতে তা কোন অংশে কম হবার কথা না। ক্যারি অন ম্যান।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।