০৭. আপনি ভাল নেই
আপনি বাসে, রিক্শায় বা হেঁটে শহরের জনাকীর্ণ কোন রাস্তা বা মোড় পার হতে গেলেই দেখবেন কিছু মানুষ আপনার দিকে ছোট ছোট লিফ্লেট ছুঁড়ে মারছেন। লিফ্লেটগুলো না পড়েও আপনি জানেন সেগুলো নানা প্রকার কুদরতী দাওয়াইয়ের। সেখানে বর্ণিত রোগ, ওষুধ আর তার ফলাফলের বিবরণ পড়লে আপনার গা গুলিয়ে উঠবে। এভাবে নানা প্রকার হেকিমি/ইউনানী, কবিরাজী/আয়ুর্বেদিয় আর হোমিওপ্যাথি ওষুধ-ডাক্তার-ক ...০৭. আপনি ভাল নেই
আপনি বাসে, রিক্শায় বা হেঁটে শহরের জনাকীর্ণ কোন রাস্তা বা মোড় পার হতে গেলেই দেখবেন কিছু মানুষ আপনার দিকে ছোট ছোট লিফ্লেট ছুঁড়ে মারছেন। লিফ্লেটগুলো না পড়েও আপনি জানেন সেগুলো নানা প্রকার কুদরতী দাওয়াইয়ের। সেখানে বর্ণিত রোগ, ওষুধ আর তার ফলাফলের বিবরণ পড়লে আপনার গা গুলিয়ে উঠবে। এভাবে নানা প্রকার হেকিমি/ইউনানী, কবিরাজী/আয়ুর্বেদিয় আর হোমিওপ্যাথি ওষুধ-ডাক্তার-ক্লিনিকের বিজ্ঞাপন আমাদের রাস্তা-ঘাটে চলে। দেশে সব ধরণের মিডিয়া/প্রচারমাধ্যমে ওষুধের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ থাকলেও এই ওষুধগুলোর বিজ্ঞাপন চলে প্রায় সব উপায়েই। পেপার-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, রাস্তা-ঘাটে পোস্টার আর স্টিকার, বড় বড় হোর্ডিং, লিফ্লেট, বুকলেট কী নেই! শরীর রোগা বা মোটা করা, মেদ-ভুঁড়ি কমানো, টাক মাথায় চুল গজানো, নারী-পুরুষের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গের আকার-আকৃতি পরিবর্তন, ক্ষমতাবৃদ্ধি এমন সব ব্যাপার থেকে শুরু করে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হাঁপানী প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ের নিশ্চয়তা থাকে সেখানে। বিজ্ঞাপনগুলোর ভাষা এমন যে আপনার পূর্ব ধারণা না থাকলে অথবা আপনি যথেষ্ঠ আলোকপ্রাপ্ত না হলে প্রথমেই আপনি বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেন এই ভেবে যে আপনিও ঐসব রোগের এক বা একাধিকটিতে আক্রান্ত। আবার ঐসমস্ত রোগের কোনটি সত্যি সত্যি আপনার থেকে থাকলে ভাববেন যে এটাই রোগমুক্তির সঠিক উপায়।
এই প্রতিযোগিতায় পীর/ফকির/দরবেশ/সাধু/সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে তান্ত্রিক/জ্যোতিষি কেউ বাদ নেই। শারিরীক রোগ-বালাই থেকে শুরু করে আপনার ভাগ্য ফেরাতে বা দুর্ভাগ্যের অবসান ঘটাতে এরা গ্যারান্টি দেন। আজকাল স্যাটেলাইট টিভিতে পর্যন্ত কবচ/তাবিজ/মাদুলীর বিজ্ঞাপন চলে ঘন্টার পর ঘন্টা। মানুষের দুর্বলতা ও ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ধর্মব্যবসায়ীরা নিদান দেন হতাশা থেকে মুক্তির, মনের অমিল দূর করার, সৌভাগ্য আনয়নের, দুরারোগ্য রোগ থেকে বিনা চিকিৎসায় মুক্তির। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন এসব বোঝারও কেউ নেই, দেখারও যেন কেউ নেই।
বাংলাদেশে আপনি যদি চিকিৎসক হিসাবে কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিষ্ট্রেশনপ্রাপ্ত হতে হবে। এই রেজিষ্ট্রেশন পেতে হলে আপনার নূন্যতম এমবিবিএস (সাধারণ চিকিৎসার জন্য) বা বিডিএস (দন্ত চিকিৎসার জন্য) বা সমমানের ডিগ্রী থাকতে হবে। সমমানের ডিগ্রীগুলো বলতে মূলতঃ অন্য দেশ থেকে অর্জিত একই ধরণের কারিকুলাম অনুসরণ করে প্রাপ্ত ডিগ্রীগুলোকে বোঝায়। এর বাইরে বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির উপর প্রাপ্ত ডিএইচএমএস বা এইচএমবি, পল্লী চিকিৎসক হিসাবে প্রাপ্ত এলএমএফ, আয়ুর্বেদের উপর প্রাপ্ত ডিএএমএস বা এমবিবিএস(এ), ইউনানীর উপর প্রাপ্ত ডিইউএমএস বা এমবিবিএস(ইউ), গ্রামের ধাত্রীদের জন্য প্রদত্ত মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমার কোনটাকেই বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন দেয়না। বিএমডিসি কর্তৃক স্বীকৃত ৪৪টি মেডিক্যাল কলেজ ও ১১টি ডেন্টাল কলেজের মধ্যে এইসব ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা প্রদানের কোন প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। সরকার বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারেও বিএমডিসি কর্তৃক স্বীকৃত ডিগ্রী ছাড়া কেউ আবেদন করতে পারেন না। অথচ অস্বীকৃত ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা নিয়ে সারা দেশজুড়ে লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার বা বিএমডিসি বা বিএমএ কখনো এর বিরূদ্ধে কোন কথা বলেছে বা এগুলো বন্ধ করার কোন উদ্যোগ নিয়েছে বলে শুনিনি। কখনো কেউ প্রতারণার অভিযোগ আনলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরূদ্ধে কেবল আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, কিন্তু গোটা সিস্টেম বিনা বাধায় আগের মতই চলেছে।
একই ধরণের কথা খাটে এইসব তথাকথিত চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য উৎপাদিত ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে। স্বপ্নে প্রাপ্ত বা কুদরতী ওষুধ উৎপাদন বা আমদানীর ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত ছিল, দৃশ্যতঃ ঔষধ প্রশাসন বা আমদানী নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সে দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনি। ফলে এসব ওষুধ উৎপাদন, আমদানী, বিপণন, বিজ্ঞাপন সবই গণহারে চলছে। পয়সার লোভে পড়ে মিডিয়াগুলো এসব চিকিৎসা ও ওষুধের বিজ্ঞাপন চালিয়ে যাচ্ছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ও বিজ্ঞাপন প্রচারের এই অনিয়মে দৃশ্যতঃ নির্বিকার। অবৈধ ও ভেজাল ওষুধের কারখানা বা স্টকের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে পুলিশী তৎপরতা দেখা যায়, কিন্তু এসব ওষুধ বানানো, বিক্রি বা এগুলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়না।
একটা খুব সাধারণ হিসাব হচ্ছে এমবিবিএস ডাক্তারেরা মোটা ফি দাবী করেন, এলোপ্যাথী ওষুধের দাম বেশি তাই দরিদ্র লোকজন চিকিৎসার জন্য বিকল্প পথে হাঁটেন। সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও ডাক্তারদের অনুপস্থিতি, ওষুধের অপ্রাপ্যতা অথবা ধারে কাছে সরকারী হাসপাতাল না থাকাও মানুষকে বিকল্প চিকিৎসার পথে ঠেলে দেয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে সরকার ও জনগণের অসামর্থ্য, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিদ্যমান অনিয়ম ও দুর্নীতি বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থাকে এক ধরণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ফলে অচিকিৎসা, কুচিকিৎসায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সেসব ক্ষেত্রে তারা ঠিক চিকিৎসাটা পাচ্ছেননা এবং তাদের কষ্টার্জিত অর্থ প্রতারকদের পকেটে যাচ্ছে।
আমি হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা আয়ুর্বেদীয় বা ইউনানী চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ২১৪ বছর ধরে চলে আসা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উড়িয়ে দিচ্ছিনা। কিন্তু দেশে যারা এই শাস্ত্রগুলোর চর্চা করেন তাদের বেশির ভাগ জনেরই এই বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই। অধিকাংশ জন ‘মেটেরিয়া মেডিকা’ পড়ে হোমিওপ্যাথ, পূর্বসূরী বা গুরুর কাছ থেকে শোনা জ্ঞান থেকে আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী চিকিৎসা করে থাকেন। কেউ কেউ এর সাথে স্বপ্নেপ্রাপ্ত ওষুধও দিয়ে থাকেন। যে সব প্রতিষ্ঠান এই বিষয়গুলোতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দেয় তাদের বড় অংশের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বস্তুতঃ এই তিনটি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সরকার স্বীকারও করেনা আবার অস্বীকারও করেনা। এই জন্য সরকারী তিব্বিয়া কলেজ, সরকারী হোমিওপ্যাথ কলেজ বা সরকারী আয়ুর্বেদ কলেজ থাকলেও এসব কলেজের স্নাতকদের সরকার ডাক্তার হিসাবে কোন নিয়োগ দেয়না। এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান দুরাচারদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে।
হোমিওপ্যাথি, কবিরাজী, হেকিমী চিকিৎসার কথা ছাড়ুন, স্বীকৃত এলোপ্যাথ চিকিৎসা ব্যবস্থায় কী ঘটে? আমরা জানি সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা বা এই ধরণের ডায়াগনোসিস জরুরী। কিন্তু আপনার শারিরীক কমপ্লেইনের উপর ভিত্তি করে ডাক্তার সাহেব আপনাকে যে যে পরীক্ষা-নীরিক্ষাগুলো করতে দেন তার কতগুলো করা জরুরী? হিসাব অনুযায়ী সবগুলোই জরুরী হবার কথা। বাস্তবে কিন্তু অমনটা হয় না। আমরা শুনতে পাই প্যাথলজিক্যাল ল্যাব বা ডায়াগনোসিস সেন্টারগুলোর সাথে যোগসাজশে কোন কোন ডাক্তার সাহেব দরকারী পরীক্ষার সাথে কিছু অদরকারী পরীক্ষার নির্দেশও নাকি দিয়ে থাকেন। যোগসাজশের এসব অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন। পরীক্ষা দরকারী নাকি অদরকারী ছিল সেটা প্রমাণ করা আরো কঠিন। তবে এখানে যে দুর্নীতি আছে সেটা বোধগম্য, কিছু অসৎ মানুষের অন্যের পকেট কাটার ব্যাপার যে আছে সেটাও বোধগম্য।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমার মায়ের জিভে-গলায় একবার ক্ষত হলে একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে উনাকে নিয়ে যাই। ডাক্তার সাহেব দেখলাম সব রোগীকেই অডিওগ্রাম করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এমনকি জিভ-গলার সমস্যা নিয়ে আসা আমার মাকেও - যদিও তাঁর কানে শোনা সংক্রান্ত কোন সমস্যা হয়নি। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে তাঁর সহকারী চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করলাম অডিওগ্রাম না করলে চলবে কিনা। তিনি বললেন যে আমরা চাইলে করাতে পারি। আমি আরও জানতে চাইলাম উনাদের ওখানে কী, কী পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা আছে। তিনি জানালেন শুধু অডিওগ্রাম করার ব্যবস্থা আছে। এর পর মনে হয় কোন মন্তব্য করার দরকার নেই।
আমরা জানি প্যাথলজিক্যাল/ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলোর মধ্যে ভালো-খারাপ আছে, কম দামী - বেশি দামী আছে। আবার মোটামুটিভাবে এও জানি এক ল্যাবের রিপোর্টের সাথে আরেক ল্যাবের রিপোর্টে হরহামেশাই অমিল হয়, এমনকি উল্টোটাও হয়। ল্যাবগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ করেন কারা? কারা পরীক্ষাগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দেন? এই প্রশ্নগুলোর স্পষ্ট উত্তর নেই। যেহেতু স্পষ্ট উত্তর নেই তাই বলা যায় এখানে মান নিয়ন্ত্রণ বা মূল্য নির্ধারণ হচ্ছেনা। এখানে পকেট কাটার সুযোগ অবারিত। ডাক্তার সাহেবের নির্দেশিত এক বা একাধিক ল্যাবের কোনটিতে পরীক্ষা না করিয়ে অন্য কোন ল্যাবে পরীক্ষা করালে সেই রিপোর্ট তিনি সচরাচর মানতে চান না, বা তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এতে ল্যাবগুলোর সাথে ডাক্তার সাহেবদের একটা সম্পর্কের সুতো পাওয়া যায়। এমনসব ভাবে কিছু কিছু ল্যাবের ব্যবসা রমরমা হয়। একটা ছোট ল্যাব হিসাবে যাত্রা শুরু করে কয়েক বছরে বিশাল হাসপাতালের বা গ্রুপ অভ কোম্পানীজের মালিক হবার গল্প এই দেশের মানুষ শুনেছে, দেখেছে।
নিজের বয়স বাড়তে থাকায় অনেক দিন থেকে একটা Thorough Check-up করার প্রয়োজন অনুভব করছিলাম। মাঝখানে একবার পেটের দায়ে ব্যাংকক গেলে সুযোগ পেয়ে চেক্আপের জন্য সেখানকার এক হাসপাতালের প্যাকেজ অফার নেই। হাসপাতালটির লিফ্ট দিয়ে ওঠার সময় খেয়াল করলাম আমাদের বাসে-রিক্শায় দেয়া লিফলেটের “রোগীর প্রতি প্রাইভেট প্রশ্ন - উত্তর চাই” ঢঙের বিশাল এক রঙিন পোস্টার সাঁটানো। পরে খেয়াল করলাম হাসপাতালের ভেতর চিকিৎসাপ্রার্থী আর রোগীর এটেন্ডেন্টদের যেখানে যেখানে অপেক্ষা করতে হয় সেখানে সেখানেই এই প্রশ্নমালা সাঁটানো আছে। পোস্টারে জিজ্ঞেস করা প্রশ্নের বেশির ভাগের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে আপনাকে ভাইটালাইফ-ধরণের একটা নামের প্রোগ্রামে অংশ নিতে বলা হয়েছে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত এই পোস্টের পাঠকদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে ওখানে দেয়া বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হবে। যেমন, আপনার কি খাবার রুচি কমে গেছে? আপনার কি ক্লান্ত ক্লান্ত লাগে? আপনি কি কোন কাজে উৎসাহ পান না? আপনার কি অফিস করতে বিরক্ত লাগে? আপনার কি সহজে ঘুম আসেনা? ইত্যাদি ইত্যাদি। এই পোস্টারের ফাঁদে পড়ে আপনি যদি সেই প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করেন তাহলে দেখবেন আপনি একটা ব্ল্যাকহোলের ভিতরে ঢুকেছেন। প্রোগ্রামের এক একটা ধাপ পার হবেন আর নতুন নতুন সব সমস্যা ও সমাধানের কথা শুনবেন। এর শেষ নেই। আর এই চিকিৎসার প্রতিটা ধাপে আপনাকে নিংড়ে টাকা নিয়ে নেবে। ভাগ্যিস আমার বিশেষ টাকা-পয়সা ছিলনা আর আমি ব্যাপারটাতে উৎসাহিতও ছিলামনা তাই রক্ষা পেয়েছিলাম। দেশে আজকাল অনেক বড় বড় হাসপাতাল গড়ে উঠেছে - এটা ভালো ব্যাপার। তবে এই হাসপাতালগুলোর কোন কোনটাতে দেখবেন এই ধরণের প্রোগ্রাম চালু হয়ে গেছে।
সরকারী হাসপাতালগুলোর বাইরে দেখবেন দালাল ও প্রতারকচক্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা থাকে। এরপরও সরকারী হাসপাতালে দালাল আর প্রতারকদের দৌরাত্বের শেষ নেই। আরো বেশি আছে খোদ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের দুর্নীতি। এতে রোগীর প্রকৃত চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। স্বীকৃত বেসরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থায় মূল্য নির্ধারণের কোন নীতিমালা না থাকায় একই চিকিৎসার (বিশেষতঃ শল্যচিকিৎসার) জন্য এক এক ক্লিনিকে এক এক প্রকারের বিল হয়। আর এগুলোর ফারাকও বিশাল। অসুস্থ্য মানুষ বিপদে পড়ে ভালো চিকিৎসার আশায় এসব জায়গায় গিয়ে ঠিক চিকিৎসা পেলেও আর্থিক ক্ষতির সন্মূখীন হন।
আমার কী হয়েছে? আমার কী ধরণের ও কী কী চিকিৎসা দরকার? এখন আমার কী চিকিৎসা করা হচ্ছে? আমার জন্য দরকারী চিকিৎসার সম্ভাব্য ব্যয় কত হতে পারে? এই প্রশ্নগুলো করার ও উত্তর পাবার অধিকার আমাদের সবার আছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই যে, আমাদের দেশের চিকিৎসকগণ ও হাসপাতালগুলোর কাছে এই প্রশ্নগুলো করলে অনেক সময়ই প্রচণ্ড দুর্ব্যবহারের সন্মূখীন হতে হয়। রোগী ও তাঁর এটেন্ডেন্টকে ধমক দিয়ে কথা বলা, দুর্ব্যবহার করা অত্যন্ত সাধারণ একটা বিষয়। আমি নিজে রোগী হিসাবে এবং রোগীর এটেন্ডেন্ট হিসাবে বহুবার সরকারী-বেসরকারী উভয় প্রকার হাসপাতালে এমন দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছি। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেয়ে, দুর্ব্যবহার পেয়ে স্থানীয় চিকিৎসক ও চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা দেখিয়ে অনেকে ঘটি-বাটি বিক্রি করে হলেও দেশের বাইরে চিৎকিসা করাতে যান। এতে রোগীর কষ্ট বাড়ে, পকেট খালি হয়, দেশেরও বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না দেবার ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও দুর্নীতিও লুকিয়ে আছে। এতে রোগীকে নিজের অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে রেখে, ভয় দেখিয়ে অদরকারী চিকিৎসা করে টাকা আদায় করা যায়।
স্বীকৃত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণতঃ একই জেনেরিক নামের ওষুধ বিভিন্ন বাণিজ্যিক নামে বাজারজাত করে থাকেন। এতে একই ওষুধ বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন দামে বাজারে আসে। এই দামের হেরফের মাঝে মাঝে কয়েকশ গুণ হয়ে থাকে। জেনেরিক নামে ওষুধ বাজারজাতকরণের নিয়ম থাকলে এবং জেনেরিক নাম অনুযায়ী সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেবার মত ব্যাপার থাকলে এই অব্যবস্থার কিছুটা লাঘব হত। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ণয় চিকিৎসকের হাতে রেখে সেই অনুযায়ী ওষুধ প্রেসক্রাইব করার ব্যবস্থাটি ফার্মাসিস্টদের হাতে থাকলে ব্যাপরটিতে আরো নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হবে। আমদানীকৃত ওষুধগুলো জাতীয় ওষুধনীতি মেনে প্রস্তুত কিনা এবং সেগুলো আমাদের দেশে বাজারজাতকরণের উপযুক্ত কিনা সেই সংক্রান্ত ছাড়পত্র প্রদানের ব্যাপারটিকে জোরদার করা দরকার। এতে অদরকারী, অপরীক্ষিত, পরীক্ষামূলক ও ক্ষতিকর ওষুধের বাজারজাতকরণ বন্ধ করা সম্ভব হবে।
একজন ভালো, আন্তরিক ও পরিশ্রমী চিকিৎসকের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা অপরিসীম। এই শ্রদ্ধা খুব কম পেশার মানুষ পেয়ে থাকেন। বিদ্যমান ব্যবস্থায় চিকিৎসা পদ্ধতির কয়েকটি অংশ, চিকিৎসকদের একটা অংশের স্বীকৃতি, যোগ্যতা ইত্যাদি প্রশ্নসাপেক্ষ বলে গোটা চিকিৎসাব্যবস্থাটিতে পকেট কাটার বড় বড় রাস্তা খুলে গেছে। চিকিৎসার মত সার্বজনীন ও আবশ্যকীয় একটা ব্যাপার অসৎ লোকদের ব্যবসার অন্যতম টার্গেট হবে সেটা স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে পিরামিড তত্ত্বের নিচের ভাগে অবস্থান করা মানুষদের ঠকানো ও সেখান থেকে ব্যবসা করাটা প্রতিষ্ঠিত। এই দুরাচারদের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিএমডিসি, বিএমএ, রাজনৈতিক দলসমূহ, সামাজিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে, মিডিয়াগুলোকেও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। জাতীয় ওষুধ নীতির যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। নয়তো মানুষের জান-মাল নিয়ে করা এই পকেট কাটার বাণিজ্য চলতেই থাকবে।
মন্তব্য
ভালো এগুচ্ছে সিরিজ।
আপনার থাইল্যান্ড কাহিনী আর সাইফের আমেরিকার কাহিনী তো অনেকটা একই। আমেরিকাতেও নাকি ইন্সুরেন্স ব্রোকারেরা ওত পেতে বসে থাকে?
এদিক থেকে কানাডায় ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এখানে মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স সরকার বহন করে। আপনি বিদেশী ছাত্র হলেও পূর্ণ ইন্সুরেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। কোন ফাঁকিঝুকির বিষয় নাই। সরকারী খরচে ডাক্তারের সাথে ভিজিট, হাসপাতালের এমারজেন্সি, কিংবা এমারজেন্সি এ্যম্ব্যুলেন্স (৯-১-১) সবই পাওয়া যায়। তবে বছর দুই/তিন আগে ৯-১-১ এম্ব্যুলেন্সের জন্য বাড়তি ৫০ ডলার নিজের পকেট থেকে দিতে হবে। অর্থাৎ মোট খরচ (২৫০ডলার)-এর ২০০ ডলার পর্যন্ত কাভার্ড।
কিছু কিছু সমস্যাও আছে, বিশেষ করে স্পেশালিস্ট ডাক্তারের দেখা পাওয়া খুবই কঠিন (অনেক লম্বা কিউ থাকে)। কানাডার মেডিক্যাল সিস্টেম নিয়ে লিখতে হবে দেখছি।
কানাডার মেডিক্যাল সিস্টেম নিয়ে লিখে ফেলুন। এতে আমাদের সিস্টেমের গলদগুলো বোঝা যাবে, কী করা উচিত তা বোঝা যাবে, আবার আমাদের সিস্টেমের ভালো দিকগুলোও জানা যাবে।
মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স থাকাটা জরুরী ব্যাপার। তবে ইন্স্যুরেন্সের ব্যাপারে আমার পর্যবেক্ষণে ভিন্ন কিছুও আছে। ইন্স্যুরেন্স নিয়ে লিখলে তখন বলা যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এখানে কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় প্লাসিবো এফেক্ট কাজে আসে। অন্তত নোসিবো এফেক্ট থেকে মানুষকে দূরে রাখে।
আজকে সকালে চুল কাটতে গিয়েছিলাম। যিনি চুল কাটছিলেন তিনি একেবারে খুব মনোযোগ দিয়ে আমাকে বুঝাচ্ছিলেন যে কেন দুই মাসে দুই বার তার দোকানে হারবাল ট্রিটমেন্ট না করলে আমার সব চুল ভবিষ্যতে পড়ে যাবে (আমার নাকি একটা হরমোন কম, জোরে চুল আচড়ালে চুল পড়ে যায়! তো যেই গতিতে আমার চুল বাড়ে, সে অনুপাতে একটু কমলে খারাপ না বরং।)। আমি বললাম: "ঠিক আছে করাবো ভাই, ডাক্তার তো দেখাই আগে।" সে গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে: "আরে ভাই ডাক্তার আমাদের কাছে আসে!" বলতে ইচ্ছা করছিলো যে টাক হয়ে গেলে অসুবিধাই বা কি। আর কিছু বলিনি।
ধানমন্ডিতে দেশের শীর্ষ চর্মচিকিৎসক, নাম বললাম না, উনি আমাকে ঠিক চল্লিশ সেকেন্ডে ট্রিটমেন্ট দিয়েছিলেন, আগের জিনিস না দেখেই। আমি খুবই বিরক্ত হয়েছিলাম। পরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তার জাকারিয়ার সাথে কাজ করে রোগ সারাই। ওনারা যেই চিকিৎসা দিয়েছেন সেটা ইন্টারনেট ১০ মিনিট 'সেবোরহয়িক ডারমাটাইটিস'-এর জন্য ঘাঁটলে পাওয়া যায়। ডাক্তার জাকারিয়া প্রথমে মেনে নিতে চাননি, পরে আমি তাঁকে প্রমাণ দিয়েছি।
ইন্টারনেটের ব্যাপারে ডাক্তারদের যে বিশাল ক্ষোভ আছে, তার আংশিক বাস্তবসম্মত হল বেশিরভাগই মিসপ্লেসড মনে হয় আমার। শেষ অসুখ সারাতে পারার পর থেকে আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী এ ব্যাপারে।
হয়তো ইন্টারনেটে প্রচুর কমন রোগের তথ্য বাংলায় দেয়া যেতে পারে?
সমাধানটা যদি আমরা এভাবে ভাবি তাহলে কেমন হয়?
ধরুন, আমার অসুখটা এমন যে সেখানে দুয়েক দিন পরে চিকিৎসা শুরু করলে বিশেষ ক্ষতি হবেনা। তখন আমি প্রথমে এমন একজন ডাক্তারের কাছে গেলাম যিনি "চল্লিশ সেকেণ্ডে সব বুঝে ফেলার মত ধন্বন্তরী" নন্, বরং একজন সাধারণ ডাক্তার, যিনি রোগীর কথা শুনে, পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে নিদান দেন। এমন ডাক্তারের কাছ থেকে নিদান পেয়ে আমি একটু ইন্টারনেট ঘাঁটলাম। যদি ঘেঁটে এই জানতে পারি যে ডাক্তার সাহেব আমাকে যা নিদান দিয়েছেন সেটা ঠিক আছে তাহলে "জয় মা" বলে তাঁর কথা অনুযায়ী চলতে ও ওষুধ খেতে লেগে গেলাম। আর যদি ইন্টারনেট ঘাঁটার ফল ভিন্ন রকম হয় তাহলে আরেকজন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। ইন্টারনেট ঘেঁটে নিজেই নিজের চিকিৎসা করার চেষ্টা একটা বিপদজনক ব্যাপার। আংশিক জানার প্রয়োগ পরিণামে ভয়ঙ্কর ফল আনতে পারে।
আর চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমার হাতে যদি যথেষ্ট সময় না থাকে, মানে ব্যাপারটা যদি খুবই জরুরী হয় তখনও কিন্তু আমাকে সেই ডাক্তারের কাছেই যেতে হবে।
তবে ইন্টারনেটে বাংলায় প্রচুর তথ্য দেয়ার প্রস্তাবটা জরুরী বিষয়। স্বাস্থ্যসচেতনতা আমাদেরকে অনেক রোগের হাত থেকে বাঁচাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমতকার বিশ্লেষন পান্ডবদা।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। আচ্ছা, এই কলেজগুলোর স্নাতকরা কি বি.সি.এস এ অংশ নিতে পারে? তা নাহলে কেন এই সিষ্টেমকে মেইন ষ্ট্রিমের সাথে মার্জ করা হচ্ছে না?
ঔষধ বিপননকারী এবং এ্যলোপ্যাথ চিকিতসকদের মাঝে তৈরী হওয়া অদৃশ্য চক্র থেকে সাধারন মানুষের বাঁচার বোধহয় কোন উপায় নেই।
না, আয়ুর্বেদ, ইউনানী ও হোমিওপ্যাথির স্নাতকরা বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে আবেদন করতে পারেন না। এই ব্যাপারে কী করা উচিত সেটা নিয়ে উভয় পক্ষকে একসাথে বসতে হবে। উভয় পক্ষকে তাদের গোঁ ছেড়ে যুক্তি দিয়ে, মানুষের কল্যানের কথা বিবেচনা করে সমাধান খুঁজতে হবে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে উড়িয়ে দিলে কোনদিনই এর সমাধান হবেনা।
ওষুধ বিপণনকারী আর ডাক্তারের মধ্যকার যোগাযোগটা দরকারী নয়। ওষুধ বিপণনকারী আর ফার্মাসিস্টের মধ্যে যোগাযোগটা দরকারী। মেডিক্যাল কলেজই ডাক্তারকে শিখিয়ে দিয়েছে কোন রোগের জন্য কোন ধরণের ওষুধ লাগবে। তার জন্য ওষুধ কোম্পানীর সাহায্য দরকার নেই। ডাক্তারদেরকে নতুন ওষুধ আবিষ্কার সম্পর্কে জানানোর ব্যবস্থা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান করতে পারে - সেটা দুষনীয় নয়। তবে যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে গোপন ট্রানজেকশনের ব্যবস্থা থাকলে বুঝতে হবে সেটা অবৈধ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হুম বুঝলাম।
শুধু রোগীর সেবাদানের বিনিময়ে করা আয় দিয়ে একজন ডাক্তারের সামাজিক ষ্ট্যাটাস বজায় রাখা কতটুকু কষ্টসাধ্য তা ভাবছি
এজন্য ডাক্তারদের পারিতোষক উচ্চ হওয়া দরকার। দিনে দেড়-দুই শিফ্ট ডিউটি করা ডাক্তারকে মাসে দশ হাজার টাকা বেতন দিলে তাঁর কাছ থেকে ভালো কোন আউটপুট আশা করা যায়না। কাজ হবে পরিশ্রমসাপেক্ষ, মন-মগজ খাটানোর, ঝুঁকিপূর্ণ আর পারিশ্রমিক হবে কম তাতো হয়না। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে এই সেক্টরে দুর্নীতি বাড়বে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মাইকেল মুরের সিকোতে দেখেছিলাম, যুক্তরাজ্যের কিছু হাসপাতালে টাকা জমা নেওয়ার কাউন্টার নেই, কিন্তু টাকা দেওয়ার কাউন্টার আছে। রোগীর ট্যাক্সিভাড়া পরিশোধ করে দেওয়ার জন্যে। এছাড়াও ওখানের সরকারী ডাক্তারদের সচ্ছলতার ব্যাপারটাও বেশ ভালো ভাবে এসেছিলও।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
চীনের ভেষজ চিকিৎসকেরা নাকি রোগী সুস্থ থাকলে টাকা নেয়, কারণ তারা বিশ্বাস করে তাদের কাজ হচ্ছে রোগীকে সুস্থ রাখা।
অমন কথা শুনিনি। তবে অমন ব্যবস্থা থাকলে সবাই কেবল নানা অসুখ-বিসুখে ভুগতো। কে চায় "আমি সুস্থ্য" এই কথা বলে নিজের পকেট হাল্কা করতে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- আচ্ছা, টিকাটুলীতে যে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথ মেডিক্যাল কলেজ আছে, সেটা কাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়? যদি সরকারী হয় তাহলে এই কলেজকে এবং এই কলেজ থেকে পাস করে বের হওয়া ডাক্তারদের গ্রহণ করে নিতে সরকার পিছিয়ে কেনো?
ওষুধের বিজ্ঞাপন বন্ধ কেনো, বলতে পারেন আমাদের দেশে? এখানে দেখি টিভিতে নানা ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ- প্রভৃতির বিজ্ঞাপন হয়, সিজন মোতাবেক। শেষে অবশ্য বলা থাকে "আপনার নিকটস্থ 'অ্যাপোথেকে'-তে যোগাযোগ করুন"।
ডাক্তারদের রোগ নির্ণয় আর ফার্মাসিস্টদের ঔষধ প্রেসক্রাইব করার ব্যাপারটা কি এমন যে একজন ডাক্তার রোগ নির্ণয় করে কেবল রোগের কারণ, ধরণ উল্লেখ করে কোন পথ্য না দিয়েই যে রিপোর্ট দিবেন, সেটা নিয়ে একজন রোগী নিকটস্থ 'অ্যাপোথেকে' বা ফার্মেসিতে যোগাযোগ করবেন, এমন কিছু!
- হুম, এটা একটা ভালো বুদ্ধি, অন্তত আমাদের দেশের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের সাপেক্ষে। কিন্তু এই পদ্ধতির কোথায় জানি একটা 'কিন্তু' আছে, যদিও আমি খোলাসা করতে পারছি না!
রোগীদের সাথে আমাদের দেশে ডাক্তারদের ব্যবহার নিয়ে কিছু বলতে চেয়েছিলাম। এক সম্ভাব্য ডাক্তার কোমরে গামছা পেচিয়ে আমাকে হাতে মুগুর নিয়ে তেড়ে এসেছিলেন। আমি ভয়ে চুপসে গিয়ে বলেছি, ইয়ে মানে আমাদের দেশের ডাক্তারদের মতো ভালো মানুষই হয় না!
কিন্তু, আমি মনে করি আমাদের দেশের সব ডাক্তারকে রোগী বানিয়ে হলেও কমপক্ষে এক মাসের জন্য নানা দেশের ডাক্তারের কাছে আসা-যাওয়া করানো দরকার। তাইলে অন্তত তাঁরা রোগীদের সাথে একজন ডাক্তারের ব্যবহার কীরূপ হওয়া উচিৎ, এটা সচক্ষে, সরেজমিনে দেখতে পারবেন। এটা করতে পারলে আমাদের দেশের ডাক্তারেরা রোগী ঢুকলে চেয়ারে বসে থেকেই "নাম কী" বলে গম্ভীরভাবে হুঙ্কার দিতে পারবেন না।
আরে এই হুঙ্কার শুনেই তো রোগীর অন্তরাত্মা কেঁপে যাওয়ার কথা। কোনোদিন হয়তো দেখা যাবে খবরে প্রকাশ, "ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকেই রোগীর হার্টফেইল!"
আমার যিনি ডাক্তার, ড. আইশ। আমি যতোবারই গিয়েছি, তাঁর চেম্বারের দরোজা পর্যন্ত তিনি এগিয়ে এসেছেন হাসিমুখে চেয়ার থেকে উঠে। হ্যান্ডশেক করে নাম ধরে ডেকে কুশল জিজ্ঞেস করে আমাকে বসার জন্য চেয়ার দেখিয়ে তারপর নিজের হাতে দরোজা বন্ধ করে নিজের চেয়ারে বসে সবিনয়ে জিজ্ঞেস করেছেন/করেন প্রতিবারই, "কী করতে পারি আপনার জন্য, বলুন!"
এই যে একটা (আপাত) আন্তরিক সম্পর্ক একজন রোগী আর ডাক্তারের মধ্যে, এটা মেকশিউর করা গেলেই তো মরা রোগী চক্ষু মেইলা তাকাবে। আমাদের দেশের ডাক্তারদের মতো হুঙ্কার দিয়ে নিজের মহানতা(!) জাহীর করলে ক্যামনে হবে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কলেজটি সরকারী, তবে সরকারী ডাক্তার নিয়োগের নীতিমালায় হোমিওপ্যাথ নিয়োগের কোন ব্যবস্থা নেই।
ডাক্তার আর রোগীর মাঝখানে ফার্মাসিস্টকে বসালে কয়েকটা ব্যাপার ঘটে। এক, এতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া আপনি কেবল ওটিসি ড্রাগ কিনতে পারবেন, অন্য কোন ওষুধ নয়। নিয়মটা এখনো থাকলেও মাঝখানে কেউ নেই বলে ওষুধের দোকানদারকে দুটো পয়সা বেশি দিলেই যা খুশি তাই কিনতে পারা যায়। দুই, ডাক্তারকে কনভিন্স করে নির্দিষ্ট ব্রান্ডের ওষুধ কেনার ব্যাপারে রোগীর ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা যাবেনা। তবে এখানে যে "কিন্তু" নেই তা নয়। ব্যবস্থা জটিল বা খবরদারী বাড়ালে দুধে মাছ পাওয়া যাওয়ার গল্পতো আমাদের দেশেরই। তবু আমি খবরদারীটা বাড়ানোর পক্ষে।
আমাদের দেশে রোগীদের সাথে কিছু ডাক্তারের এমন ব্যবহারের কারণটা আরেকটা মন্তব্যের উত্তরে খোঁজার চেষ্টা করেছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একজন তরুণ চিকিৎসক হিসেবে এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না।
০১. এমবিবিএস ডাক্তারদের ব্যাপারে আপনার প্রথম অভিযোগটি স্বীকার করে নিচ্ছি। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা প্রায়শই দেয়া হচ্ছে। তবে সবাই তা করেন না, খুব অল্প ক্ষেত্রেই আপনার মায়ের মত পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক একটি টেস্ট করতে দেয়া হয়। কিন্তু প্রায় সবাই এই অভিযোগটি করছেন, প্রশ্ন হচ্ছে কেন? আমাদের স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিওর অনুয়ায়ী যেকোন রোগীকে রুটিন কিছু টেস্ট (CBC, Chest X-Ray, Urine R/E, S. Creatinine, SGPT) করতে দেয়া উচিৎ এবং সাধারণত করতে দেয়া হয়। এর সাথে যুক্ত হয় আপনার স্পেসিফিক অভিযোগ সংক্রান্ত আরও কিফু পরীক্ষা। লিস্টটি কিন্তু অনেক লম্বা হয়ে গেল। আপনার এটি পছন্দ হবেনা। কিন্তু আসলেই এগুলোর প্রয়োজনীয়তা আছে কি? অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে, এই মুহুর্তে একটি দিচ্ছি। গত ডিসেম্বরে আমার এক বান্ধবী চর্মরোগ এর জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক তাকে ঔষধের পাশাপাশি ঐ পরীক্ষাগুলো করতে দেন। পরীক্ষার রিপোর্টে একটিতে (S. Creatinine) আশংকাজনক অস্বাভাবিকত্ব দেখা যাওয়ায় তিনি আমার বান্ধবীকে কিডনী স্পেশালিস্ট এর কাছে পাঠান এবং তিনি দেখে জানান যে রোগীর একটি কিডনী প্রতিস্থাপন অতীব জরুরী। আমাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থায় আস্থা রাখতে না পেরে তারা ও সিঙ্গাপুর এ যান এবং তাকে সেখানকার চিকিৎসকরাও একই মতামত দিলে সেই মতামতে আস্থা রেখে তিনি একটি কিডনী প্রতিস্থাপন করে দেশে ফিরে আসেন। এক্ষেত্রে ঐ রুটিন পরীক্ষাগুলোই (যা আপাত দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয়) কিন্তু তার জীবন বাঁচালো।
০২. ল্যাবের পরীক্ষাগুলোর মূল্যের প্রসঙ্গে বলি। বাংলাদেশের একমাত্র রেফারেন্স ল্যাব আইসিডিডিআরবি কিন্তু কাউকে কমিশন দেয়না। তারপরও তাদের পরীক্ষার খরচ কিন্তু কম নয় অন্যদের তুলনায়। তাহলে কি তারাও পকেট কাটছে? উত্তর হলো "না"। এই পরীক্ষাগুলো সঠিক প্রসিডিওর এ করতে গেলে ওইরকম খরচই পড়বে। এখানেই মানের প্রশ্ন। প্রায় কোন ল্যাবই সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেনা। আর সেখানেই তারা গ্রুপ অব কোম্পানীজ খোলার টাকা পেয়ে যাচ্ছে। আর কমিশনের কথা বলছেন? ওটা সবাই দেয়। ঢাকা শহরের সব বড় ল্যাবে সব বড় চিকিৎসকের নামে আইডি খোলা আছে। আপনি যে ল্যাবেই করেন তারা ওটা পেয়ে যাবেন। তাই শুধু কমিশনের জন্য আপনাকে স্পেসিফিক কোন ল্যাবে পাঠানোর দরকার নেই। বরং অনেকক্ষেত্রেই স্পেসেফিক পরীক্ষার জন্য বিশেষ জায়গায় পাঠনো হয় একটু ভালো রিপোর্টের আশায়। কারণ সনোগ্রাফির মতো কিছু পরীক্ষার রিপোর্ট যথাযথ না পেলে সঠিক রোগ নির্ণয় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমন বহুবার হয়েছে যে আমি পেটে হাত দিয়ে মাস পাচ্ছি আর সনোগ্রাফির রিপোর্ট বলছে নরমাল! বাধ্য হয়ে ঐ একই পরীক্ষা আবার হুমায়রা ম্যাডাম কে দিয়ে করিয়ে আনতে বলা হয়। তিনি ঠিকই কিছু একটা পেয়ে যান। আমি কিন্তু সরকারী হাসপাতাল এর চিকিৎসক হিসেবে দায়বদ্ধতার কারণে তাকে শুরুতে কারও কাছে পাঠাইনি এবং এতে তার ভোগান্তি কমেনি বরং বেড়েছে।
০৩. আপনার দুর্ব্যাবহারের অভিযোগটিও স্বীকার করে নিচ্ছি। কারণ কি? আমি তো চিকিৎসক হবার আগে আপনার সমাজেরই একজন ছিলাম। এমবিবিএস ডিগ্রীটাই কি আমাকে দুর্বিনীত বানিয়ে দিল?
সময়াভাবে আলোচনাটা শেষ করতে পারলাম না। নাইট করতে যাই এখন। বাকী কথা কাল বাসায় ফিরে বলবো।
ধন্যবাদ।
নবীন পাঠক
shahriarsajib@gmail.com
আমি নিজে ডাক্তার নই। কিন্তু আপনার বক্তব্যঃ
মন্তব্যের জবাবের জন্য ধন্যবাদ।
রুটিন টেস্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ তা আমি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। পুরোটা পড়লে আশা করি বুঝতে পারবেন।
দ্বিতীয় ব্যাপরটার জবাব আমি দিব। একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি।
নবীন পাঠক
shahriarsajib@gmail.com
০১. আমার অভিযোগটি কিন্তু সব ডাক্তারের বিরূদ্ধে নয়। অল্প কিছু সংখ্যক ডাক্তার এমনটা করে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে এর কারণ ডাক্তারের জানায় ঘাটতি, আর কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি। তবে রোগীর দেয়া বিভ্রান্তিমূলক স্টেটমেন্ট শুনে ডাক্তার যদি প্রকৃত রোগ নির্ণয়ের জন্য নানা রকমের পরীক্ষার কথা বলেন তবে তার দায় ডাক্তারের নয়।
০২. এখানে আপনি কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য দিলেন। এক, ল্যাবগুলোর সাথে ডাক্তারদের যোগসাজশ থাকাটা একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। দুই, এই যোগসাজশটা এমন একটা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে চলে গেছে যেখানে যে কোন ল্যাবে টেস্ট করালে তার কমিশন ডাক্তারের কাছে চলে যাবে। তিন, ল্যাবগুলো ডাক্তারদের হাতে রাখতে যতটা তৎপর, পরীক্ষার মান বাড়াতে ততটাই উদাসীন। রোগীর পেটে হাত দিয়ে যেখানে মাস বোঝা যাচ্ছে, সেখানে ইউএসজি করে কিছুই পাওয়া যায়না কীভাবে? অবশ্য ল্যাবগুলোর নিজেদের লাভের ভাগের একাংশ ডাক্তারদের দিয়ে দিতে হলে এমনটাতো হবেই।
০৩. আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম। তবে এক্ষেত্রে আমার পর্যবেক্ষণের কথা কিছুটা বলি।
মেডিক্যালের কারিকুলামে যে বিষয়গুলো পড়ানো হয়না তার অন্যতম হচ্ছে পাবলিক ডিলিং। আরো পড়ানো হয়না হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, পেশেন্ট এন্ড অ্যাটেন্ডেন্ট সাইকোলজি এমন আরো কিছু দরকারী বিষয়। অথচ ডাক্তারদের কাজই হচ্ছে মানুষকে নিয়ে, তাও আবার অসুস্থ্য মানুষ। ফলে একজন শিক্ষার্থী মেডিক্যালের পড়া শেষ করে যখন ডাক্তার হন তখন তাঁদের কেউ কেউ ভুলে যান যে তাঁর মাথায় যে জ্ঞানটা আছে সেটা রোগী বা অ্যাটেন্ডেন্টের মাথায় নেই। তাই তাঁরা সহজে রোগের কারণ ও প্রতিকারের ব্যপারটা ধরতে পারবেন না। তবে তাঁরা বিষয়টা জানেন না বলেই যে চোখ বুঁজে ডাক্তারের কথা মেনে নেবেন তা নয়। বিষয়টা রোগীর নিজের শরীর সম্পর্কিত বলে তিনি প্রশ্ন করার এবং সে সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা পাবার অধিকার রাখেন। এই বিষয়টা ডাক্তারদের কেউ কেউ মানতে চান না বা মনে রাখেন না। ডাক্তার-রোগীর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব বিষয়টাকে আরো খারাপ করেছে।
আমাদের দেশের ডাক্তারদের হাসপাতালে কাজ করার সময় চিকিৎসক, প্রশাসক, ব্যবস্থাপক, আমলা, এমনকি নার্সিং-এর কাজও করতে হয় (রাজনীতি করার কথা বাদ দিলাম। এতগুলো ভিন্ন ভিন্ন ধরণের কাজ একসাথে করতে গিয়ে কোনটাই আর সঠিকভাবে করা হয়ে ওঠেনা। এই বিষয়গুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা প্রফেশনাল হিসাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ থাকলে আমরা হাসপাতালে এমন ডাক্তারের দেখা পেতাম যিনি কেবল চিকিৎসাই করেন। তখন তাঁদের ব্যবহার নিশ্চয়ই পার্থক্যপূর্ণ হতো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ পান্ডবদা। আপনারাই যে আসলে লেখক আর আমরা যে কেবলই পাঠক, তা আবারও প্রমাণিত। আমাদের সমস্যাগুলো আপনি আমার চেয়ে ভালো বিশ্লেষণ করলেন।
০১.
০২. ল্যাবগুলোর ব্যাপারে আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি। WHO এর নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপদ রক্ত পরিচালন নিশ্চিত করতে রক্তের পাঁচটি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক (HBsAg, Anti HCV, MP, HIV, VDRL)। এই বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং করার জন্য সন্ধানী নেয় ২০০ টাকা, রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক নেয় ৫০০ টাকা, ইউনাইটেড হাসপাতাল নেয় ১০০০ টাকা, আর ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল নেয় ২৭০০ টাকা। এই পরীক্ষাগুলো ২ উপায়ে করা যায়: ELISA মেশিনে এবং স্ট্রিপ পদ্ধতিতে। স্ট্রিপ ব্যাবহার করলে প্রায় ১৫২ টাকার মত খরচ হয়। মেশিনে করলে কেউ যদি একসাথে ৬০ টি স্যাম্পল নিয়ে করে তাহলে রিএজেন্টের খরচ স্যাম্পল প্রতি ২৮২ টাকার মত পড়ে। কিন্তু কম স্যাম্পল হলে খরচ বেড়ে যায়, কারণ রিএজেন্ট একই পরিমাণে দিতে হয়। একমাত্র সন্ধানী ছাড়া আর সবাই দাবী করে যে তারা মেশিনে করে কিন্তু ভিতরের খবর হচ্ছে সবাই স্ট্রিপ ব্যাবহার করে কারণ একসাথে এত স্যাম্পল কেউই পায়না। এই পরীক্ষার জন্য তো কাউকে কমিশন দিতে হয়না, তাহলে এত বৈচিত্র কেন? উত্তরটা সম্ভবত আমাদের দেশের ব্যাবসায়ী সম্প্রদায় ছাড়া আর কেউ দিতে পারবেনা।
বলতে চাচ্ছি যে, শুধুমাত্র চিকিৎসকেরা কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করে দিলেই এই সমস্যার সমাধান হবেনা। আমাদের বণিক মহোদয়দের এবং তাদের নজরদারী করার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহৎ রাজনীতিবিদদের বোধোদয় না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে নিস্তার নেই।
০৩. আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে অনেকটাই সহমত। তবে Patient Counseling আমাদের ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণের অন্যতম প্রধান জায়গা জুড়ে আছে। ঐ বিষয়ে সিদ্ধহস্ত না হয়ে সরকারী মেডিকেল থেকে কেউ পাস করতে পারেনা। বেসরকারী গুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাচ্ছিনা।
ছয় বছর পড়া এবং প্রশিক্ষণের পর আপনি যখন তরুণ চিকিৎসক হিসেবে অনেক স্বপ্ন নিয়ে পেশাগত জীবনে পা রাখবেন, তখন আপনি কি দেখবেন? স্কুল-কলেজে আপনার অনেক পেছনের সারিতে অবস্থানকারীরা গাড়ী হাকিয়ে বেড়াচ্ছে, আর আপনি? স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর জন্য সরকারী হাসপাতাল এ অবৈতনিক প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে সপ্তাহে গড়ে ৮০ ঘন্টা ডিউটি করছেন, আর পেট চালানোর জন্য সপ্তাহে একদিন ক্লিনিকে খেপ মারছেন মাসে ৭/৮ হাজার টাকার বিনিময়ে। এতো গেল অর্থনৈতিক হতাশা।
আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ২৬ টি শয্যা, যেখানে প্রতি এ্যাডমিসন ডে তে গড়ে ৭০-৮০ জন ভর্তি হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যায় আরও প্রায় সমসংখ্যক মানুষ। এতজন নতুন রোগীর প্রাথমিক অসুবিধার কথা শুনতেই যখন আপনার গলদঘর্ম অবস্থা, তখন আপনাকে এই নিয়েও জবাবদিহি করতে হবে যে রোগী কেন ফ্লোরে! ওষুধ কেন সাপ্লাই নাই! আপনাকে একজন রোগীর লোক ডাকাডাকি করলে হাতের সব কাজ ফেলে তার কাছেই যেতে হবে, কারণ তার কাছে তার রোগীর সমস্যাই একমাত্র বিবেচ্য। তখন হয়তো আপনি আরেকজন রোগীর কথা শুনছেন, কিন্তু সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়! আর রোগী কিংবা তার কোন আত্মীয় রাজনীতিবিদ হলে তো পোয়াবারো। তুই তোকারি থেকে মারধর কোনটাই বাদ যায়না। দিনরাত কলুর বলদের মতো খটাখাটনির পর দিন শেষে ক্যান্টিন এ খেতে বসলে যখন পয়সার হিসেব করতে হয় তখন জীবন বড়ই অর্থহীন মনে হয়। এই কঠিন সময় পার করতে করতে মনুষ্যত্ব কখন যে মরে যায় টের পাওয়া বড় দায়।
তরুণ চিকিৎসকদের দুঃখের কথা লিখতে গেলে রাত পার হয়ে যাবে। তাই এই বিষয়ের ইতি টানছি।
ডাক্তারদের সময় দেয়া নিয়ে বলি। আমাদের একটা প্রবণতা হচ্ছে ডায়রিয়া হলেও আমরা প্রফেসরদের না দেখালে শান্তি পাইনা। ফলশ্রুতি প্রফেসরদের চেম্বারে উপচে পড়া ভিড়, আর তরুণদের মাছি মারা। মবিন খান স্যার এর চেম্বারে প্রতি সন্ধ্যায় প্রায় ১৫০ জন রোগী ভিড় করেন। তারা গড়ে ১ থেকে ১.৫ মিনিট সময় পান, বের হয়ে গালি দেন এবং পরবর্তীতে রোগাক্রান্ত হলে আবারও তার কাছেই ভিড় জমান।
একই বিষয়ের আরেকজন মাহমুদ হাসান স্যার। তিনি প্রতি সন্ধ্যায় নতুন রোগী দেখেন ৬-৮ জন। রোগীপ্রতি কমপক্ষে ২৫-৩০ মিনিট সময় দেন। ফলশ্রুতিতে তার এ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইলে ৬ মাসের সিরিয়াল দেখা যায় এবং সেক্ষেত্রেও তার প্রাপ্য গালি! শালার একটা রোগী দেখতে এত সময় লাগে কেন? আমার রোগী তো ৬ মাস বাঁচবোনা। যাবেন কোথায়? সময় দিলেও জ্বালা, না দিলেও জ্বালা। আমার কথা বিশ্বাস না হলে যেকোন দিন এই দুজনের চেম্বারের সামনে থেকে ঘুরে আসতে পারেন, দুজনই ধানমন্ডিতে বসেন।
পান্ডবদা আপনার বিশ্লেষণ চমৎকার হয়েছে। তবে আসলে কি চিকিৎসকেরা আর দশটা মানুষের মতই মানুষ। তাদের ভুলত্রুটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু আমাদের দেশে একজন চিকিৎসক আদর্শ অবস্থার প্রায় ১০০ গুণ বেশী কাজের চাপ মাথায় নিয়ে ঘোরেন (প্রতি ৩২১০ জনের জন্য একজন), তাই আমরা তাদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হতে পারি। নিজেরা সচেতন হয়ে তাদের কাজের চাপ কমাতে পারি, পারি আরেকটু ধৈর্যশীল হতে। তরুণ বয়সে যিনি গাঁধার খাটুনি খেটে বিনিময়ে গালি এবং নেতাদের মার খেয়েছেন, পরিণত বয়সে তার মতিভ্রম হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক নয়। তাই আমাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে আমরা সবাই এই পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারি।
তবে জবাবদিহিতা অবশ্যই বাড়ানো উচিৎ। রোগীর প্রতি অবহেলা কখনোই কাম্য নয়।
- খাইছে, এতো দেখি মারাত্মক কাহিল অবস্থা! চিকিৎসকদের কষ্টের কথা শুনে আসলেই খারাপ লাগছে, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন।
এতো কষ্টের পথ ছেড়ে দিন বস। কী দরকার শুধু শুধু এতো কষ্ট স্বীকার করার!
তারচেয়ে বরং অপেক্ষাকৃত কম কষ্ট করে দুই বছরে এমবিএ ডিগ্রিটা শেষ করে ফেলুন। তারপর মাল্টিন্যাশাল কোম্পানিতে যোগ দিন। ইনশাল্লা আপনিও গাড়ি হাঁকাতে পারবেন অচিরেই, বিশ্বাস রাখুন। কী, ছাড়বেন এতো কষ্টের চিকিৎসকের পথ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছেড়ে দেয়ার চেষ্টায় আছি ধূগোদা। তবে পালিয়ে যাচ্ছিনা। স্বাস্থ্য অর্থনীতি নামক নতুন একটা বিষয়ে পড়ালেখা করছি। দেশের স্বাস্থ্য খাতে বর্তমানে যে নৈরাজ্য চলছে, যার শিকার রোগী এবং চিকিৎসক দুজনই, তা দূর করতে কাজ করার ইচ্ছা রাখি। বর্তমানে আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ যথেষ্ঠ নয় (জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ, যা কমপক্ষে ৩ শতাংশ হওয়া উচিৎ)। কিন্তু যা আছে তাও দক্ষতার সাথে, প্রয়োজনের ভিত্তিতে বন্টন করা হচ্ছেনা। তাই আমরা এই বিষয় গুলোতে কাজ করতে চাই, যেন স্বাস্থ্যখাতে কিছুটা শৃংখলা আনার মাধ্যমে রোগী ও চিকিৎসক দুজনেরই ভাগ্যোন্নয়ন করা যায়।
নবীন পাঠক
shahriarsajib@gmail.com
আমার যেসব বন্ধু এমবিবিএস পাশ করেছিলেন (বছর তের আগে), তাঁদের খুব কমজনই আজ চিকিৎসকের পেশায় আছেন। কেউ হেল্থ ইকনোমিক্স, কেউ পপুলেশন সায়েন্স, কেউ পাবলিক হেল্থ, কেউ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার্স করে অন্য সব পেশায় চলে গেছেন। তাঁরা যে পেশাগুলোতে গেছেন সেগুলোতে তাঁরা আরো আগে যেতে পারতেন। যদি পরিণতিটা আগে আঁচ করতে পারতেন তবে হয়তো তাই যেতেন। এখন গেছেন স্বপ্নভঙ্গ নিয়ে।
স্বাস্থ্য আর শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নিয়ে বাজেটে বছরের পর বছর অসত্য ভাষণ চলে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের শারিরীক অবস্থা ও স্বাস্থ্যসচেতনতার কথা বিবেচনা করলে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ পাঁচ শতাংশ বা তারও বেশি হওয়া দরকার। কিন্তু তাতো হবার নয়। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেখিয়ে তার বড় অংশ যেমন বিশেষ বিশেষ খাতে ব্যয় করা হয়, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেও বরাদ্দকৃত বাড়তি অংশটুকু তেমন বিশেষ খাতে ব্যয়িত হয়ে যেতে পারে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
-
আপনার সাথে দেখা হলে ফার্মগেটের চৌরঙ্গীর নিচতলা থেকে আপনাকে এক গ্লাস লাচ্ছি কিনে খাওয়াবো। খাওয়ানোর কারণটাও তখনই বলবো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লাচ্ছির অপেক্ষায় রইলাম। আওয়াজ তুলবেন, বান্দা হাজির হইয়া যামু।
নবীন পাঠক
shahriarsajib@gmail.com
সচলায়তনে লেখক আছেন অনেক, তবে আমি লেখক হবার চেষ্টায় আছি মাত্র। ইচ্ছে থাকলে, চেষ্টা করলে আপনিও লেখক হতে পারবেন।
চিকিৎসাব্যবস্থার সমস্যা আপনার বা আমার নয় - এটি সকলের জন্য সমস্যা। আমরা সবাই একটু দরদ দিয়ে দেখার চেষ্টা করলে এর স্বরূপ বুঝতে পারবো।
০১. চিকিৎসার পুরনো রেকর্ড রাখা, সামারী তৈরি করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া এগুলো স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সচেতনতার অংশ। শিক্ষা কার্যক্রমে এগুলো থাকতে হবে, এগুলো নিয়ে প্রচারণাও থাকতে হবে।
০২. চিকিৎসার ব্যাপারটি যেহেতু আর দশটা ব্যবসার মত না, তাই এখানে সরকার ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে। কমিশনের প্রস্তাবটা ল্যাব মালিকদের কাছ থেকেই ডাক্তারদের কাছে যায়। এখানে ডাক্তারদের একতরফা দোষ দেবার সুযোগ নেই।
০৩. শুধু Patient Counseling শিক্ষণ যথেষ্ট নয়। আনুসঙ্গিক মানবিক শিক্ষাগুলোও জরুরী। শিক্ষাক্রমে এই বিষয়গুলো না রেখে ডাক্তারদের একতরফা দোষারোপ করাটা যৌক্তিক হবেনা। দেশে চিকিৎসা বিষয়ক যাবতীয় আলোচনায় সবচে' কম উচ্চারিত বিষয় হচ্ছে মেডিক্যাল কলেজের কারিকুলাম।
০৪. ডাক্তারদের উপর দেয়া এই বাড়তি চাপগুলোর কথা আমি কিছু বলেছি। আপনার অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ বলে আপনার কাছ থেকে এই বিষয়ক লেখা বা সিরিজ কিন্তু আমাদের পাওনা হয়ে গেল।
০৫. স্বচ্ছতা আর জবাবদিহীতা সব সেক্টরেই থাকতে হবে। নয়তো মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়া যাবেনা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চার নম্বর পয়েন্টে পূর্ণ সহমত
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
ধন্যবাদ পান্ডবদা এবং বন্ধু সিমন। ব্যাস্ততার যে বর্ণনা দিলাম তাতে বুঝতেই পারছেন সময় কত বড় সমস্যা। তারপরও যেটুকু সময় পাই, তা আপনাদের লেখা পড়তে পড়তেই ফুরিয়ে যায়। তারপরও ইচ্ছা আছে, চেষ্টা করবো কিছু লেখার।
নবীন পাঠক
shahriarsajib@gmail.com
ডাক্তারদের দোষ দেয়া যায়, রোগী বা সাথের লোকের দোষ কম? "বাঁচলে আল্লাহ বাঁচাইছে, মরলে ডাক্তার মারছে" মানসিকতার লোক সংখ্যায় কম না।
সেটাই। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরী। সেই সাথে ডাক্তারদের নিজের জন্যও ইনস্যুরেন্স থাকা দরকার। কারণ ভুল চিকিৎসা করে রোগীর ক্ষতি হলে তখন সেই ক্ষতিপূরণ দেয়া যাবে।
ঠিক চিকিৎসা করে বাঁচালে কি ক্ষতিপূরণের সমমানের টাকা পুরস্কার পাওয়া যাবে?
দশ হাজারি বেতনের ডাক্তারকে একটা ভুলের জন্য লাখের ঘরে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে?
নিজে ডাক্তার নই(আধা ইঞ্জিনিয়ার), তবে আমার ধারণা চিকিৎসা জিনিসটা পুরাপুরি বাই দ্যা বুক জিনিস না। সুতরাং ভুল হবে, ঠিক হবে। একই ডাক্তার বারবার ভুল করলে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায়, যেমন লাইসেন্স কেড়ে নেয়া, বা এই ধরণের কিছু। কিন্তু জরিমানার ব্যাপারটা লজিকাল না। চিকিৎসা করতাছে যে, সে রোবট না, মানুষ।
জ্বী। বিদেশে সেরকমই হয় বলে জানি, সেই আলোকে বলা। ডাক্তারী একটা পেশা। সেখানে ভুল হতে পারে, তবে নেগলেক্ট যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করা দরকার। অপারেশন করতে গিয়ে পেটের মধ্যে ছুরি রেখে দেয়া কোন ভুল নয়, এটা বেখেয়াল। এর জন্য অবশ্যই শাস্তি বা জরিমানা দিতে হবে। আবার রোগী মরলেই ডাক্তারের দোষ সেটাও যাতে বন্ধ হয় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমাদের দেশে কোথাও কোন জবাবদিহিতা নেই, সেখানে শুধু ডাক্তারদের ধরো আর গালিগালাজ করো এই নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। এটি করা গেলে ডাক্তাররা যেমন আরো সচেতন হবেন (আসলে এ ধরনের বেখেয়াল ডাক্তার হয়তো হাতে গোনা যাবে), তেমনি কোন কারণে ভুল হয়ে গেলে তার অর্থনৈতিক দিকটারও একটা সুরাহা করা সহজ হবে।
আমরাতো "গালিভার ট্রাভেলস"-এর কাহিনীতে বাস করিনা যেখানে দায়িত্ব পালন করলে পুরস্কার আর দায়িত্বে অবহেলার জন্য শাস্তি দেয়া হবে। এখানে দায়িত্ব পালন করলে পারিতোষক আর দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তি মিলে। তা আপনি ডাক্তার হোন, ইঞ্জিনিয়ার হোন, আমলা হোন আর যাই হোন।
ডাক্তাররা যেহেতু সরাসরি মানুষের জীবন নিয়ে কাজ করেন তাই তাঁদের পারিতোষকটা মোটা রকমের হওয়া উচিত। একই সাথে তাঁদের অবহেলার ব্যাপারে কঠোর হওয়াটাও জরুরী। লাইসেন্স স্থগিত করা, বাধ্যতামূলক ট্রেনিং-এ পাঠানো, সাময়িক বরখাস্ত ইত্যাদির সীমা যদি পার হয়ে যায় তাহলে কারাদণ্ডের পরিবর্তে অর্থদণ্ড যৌক্তিক। এতে কাজে সতর্কতা বাড়বে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- ভুল চিকিৎসার দায়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলার এই খবরটা প্রাসঙ্গিক। পড়ে থাকবেন অনেকেই হয়তো। চিকিৎসকেরা জামিনও পেয়ে গেছেন ইতোমধ্যে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
রোগী বা তাঁর অ্যাটেন্ডেন্ট ডাক্তারের যৌক্তিক পরামর্শ না শোনাটা অপরাধ। এর জন্য ডাক্তারকে দায়ী করার কোন উপায় নেই। মৃত্যু বলুন আর ভুল চিকিৎসা বলুন সেখানে যথাযথ তদন্তের ব্যবস্থাটা থাকা জরুরী। তদন্তে ডাক্তারের গাফিলতী প্রমাণিত হলে সেজন্য শাস্তির বিধানটাও থাকা দরকার। কারণ, এখানে মানুষের জীবন জড়িত। আর ডাক্তারের অজ্ঞতা থাকলে তাকে প্রাকটিস থেকে সাময়িকভাবে বিরত রেখে ঐ বিষয়ে বাধ্যতামূলক ট্রেনিং-এ পাঠানো উচিত।
তদন্ত যে এখন হয়না তা নয়। তবে সেখানে কোন ডাক্তারের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে বলে শুনিনি। গোষ্ঠীচিন্তা যখন বিবেক ও শুভবোধকে গ্রাস করে তখন এমনই হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সিরিজ ভাল হচ্ছে।
ডাক্তার নিয়ে আর নাই বলি।
তবে রাস্থাঘাটের হেকিমি/ইউনানী, কবিরাজী/আয়ুর্বেদিয় প্রচার নিয়ে আমি একেবারে মুগ্ধ। একসময় প্রিন্ট মিডিয়াতেও এদের দাপট ছিল (ডাক্তার ছায়েব, ছালাম নিবেন)। সুস্থ মানুষজনকে রোগী বানিয়ে যুগযুগ ধরে যে ব্যবসা করে যাচ্ছে, মুগ্ধ করার মত ব্যাপার। ফিলিপ কটলার সাহেব তার বইতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত – গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য নয়, পণ্যের চাহিদা কিভাবে তৈরী করা যায়।
দুঃখজনক ভাবে, ‘ব্লু-পিল’ কিংবা ‘সাদা ত্বকই সাফল্যের চাবিকাঠি’ প্রডাক্টগুলিকে আমি এই ধরণের পণ্যেরই ‘সফিসটিকেটেড ভার্সন’ মনে করি।
দাদা, প্রথমে পণ্যটা কিন্তু কিছু গ্রাহকের চাহিদামাফিক আবিষ্কৃত হয়েছিল। তারপর গ্রাহকের সম্ভাব্য রিঅ্যাকশান অনুযায়ী পণ্যের মার্কেটিং প্ল্যানটা করা হয়েছিল। গ্রাহকের যে এমন বেহাল দশা হবে সেটা বোধহয় কেউ ভাবেনি। পরে একই ধারার পণ্যগুলো নিজেই নিজের বাজার তৈরি করেছে। বাজীকরণের ওষুধগুলোতো সেই বৈদিক যুগ থেকেই এই কাণ্ড করে আসছে।
ব্লু পিলতো ঝাড়েবংশে ঐ কুদরতী হালুয়া। নাম-ধাম-চেহারা একটু পাল্টেছে কেবল। টার্গেট কাস্টোমার কিন্তু একই গ্রুপ, হয়তো আরেকটু বিস্তৃত।
রঙ ফর্সা করার ক্রীম নিয়ে কিছু বলতেও বিবমিষা হয়। সারা দুনিয়াজোড়া মিডিয়াগুলোতে এর বিজ্ঞাপন দেখে আমি ক্ষুদ্ধ, ক্রুদ্ধ, হতাশ। সমাজপ্রগতির ভণ্ড ধারক-বাহকরা পরোক্ষভাবে এইসব কোম্পানীর নুন খায় বলে এই ব্যাপারে নির্বিকার থাকে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একই টেস্টের ফলাফল দুই জায়গায় দুই রকম আসা খুবই বিভ্রান্তিকর... আমার নানুর এ ধরনের ফলাফল আসায় পরিবারকে কী ধরণের হ্যাপা পোহাতে হয়েছিলো, তা কহতব্য নয়...
_________________________________________
সেরিওজা
কথা ছিল যে প্যারামেডিক নমুনা পরীক্ষা করে কী কী পাওয়া গেল সেটা শুধু নোট করে রাখবেন। সেই নোট দেখে বিশেষজ্ঞ এসে রিপোর্টটা লিখবেন। নমুনা পরীক্ষাতে কোন অস্বাভাবিক কিছু নজরে পড়লে খোদ বিশেষজ্ঞ সেটি দেখবেন এবং সেই অনুযায়ী রিপোর্ট লিখবেন। দরকার পড়লে আবার নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। বাস্তবে যে সব সময় বা সব ল্যাবেই অমন হয় তাতো আর না, তাই রোগীর দেহে কোন পরিবর্তন না ঘটা সত্ত্বেও দুই ল্যাবের রিপোর্ট দুই রকম হয়।
শুনেছি পয়সা বাঁচাতে কিছু ল্যাব আছে যারা কোন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেননা। তারা কেবল বিশেষজ্ঞের নামের সীল মারেন। এতে বিশেষজ্ঞ কিছু কমিশন পান। কেউ কেউ নাকি ভুয়া সীলও মারেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ডাক্তার সাহেবরা যেমন এত সুন্দর লেখা পড়ার পর মন্তব্য না করে পারেন নি তেমনি মিডিয়ার শিক্ষার্থী হিসেবে আমারও কিছু বলার খায়েশ জন্মেছে। প্রথমে মিডিয়া বলতে আমি যা বুঝি তা স্পষ্ট করা দরকার। তথ্য প্রচারের যাবতীয় মাধ্যম হোক তা লিফলেট ব্যানার, টিভি রেডিও, সেমিনার মিটিং আর হালের ইন্টারনেট সবই মিডিয়া। তবে কোনটা ব্রডকাস্ট আর কোনো টা ন্যারোকাস্ট। তো বিজ্ঞাপন প্রচার প্রচারণার সবচেয়ে সুযোগ্য হাতিয়ার হচ্ছে এ মিডিয়া। বিভিন্ন সময় আইন করে একে যেমন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে তেমন একে স্বাধীনতা দিতেও আইন করা লেগেছে। যা হোক এ বক্তব্য প্রদান এ মন্তব্যের লক্ষ নয়। কথা হচ্ছে কেন ওষুধের বিজ্ঞাপন দেওয়া আমাদের মিডিয়াতে নিষিদ্ধ। যুক্তিবাদীরা দুটি কারণ তুলে ধরেছেন- এক. ওষুধের বিজ্ঞাপন দিলে তার বিজ্ঞাপন ব্যয় ওষুধের দাম বাড়াবে, দুই. বিজ্ঞাপন জনমনে আবার ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করতে পারে।
এক নম্বরের যুক্তির ফাকটা বলি আগে। টিভি রেডিও পত্রিকা ইত্যাদিতে আমাদের ওষুধ কোম্পানি বিজ্ঞাপন দিতে না পারা তারা ইন্টার পার্সোনাল কমিউনিকেশন কৌশল ব্যবহার করে। তারা ডাক্তারদের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করে নিজ নিজ ওষুধের গুণ কীর্ত্তণ করেন। এ জন্য তাদের রয়েছে বিশাল মার্কেটিং বাহিনী। যাদের মাসিক বেতনও খুব কম নয়। এখানে থাকে ফিল্ড ফোর্স, মার্কেট রিসার্চ টিম, ট্রেনিং টিম, মনিটরিং টিম এবং এরকম আরো অনেক অনেক লোক। আমি বলছি না মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দেবার সুযোগ পেলেই তাদের এ লোকবল থাকত না, তবে বিজ্ঞাপনের ব্যয়টা তারা এ চ্যানেল দিয়ে করে। ডাক্তারদের জন্য উপহার, ফ্রি অপ্রয়োজনীয় স্যাম্পল ওষুধ, ডাক্তারদের জন্য নানা সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি পারপাসে তারা বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ টা করছে। এ টাকা তারা ওষুধ থেকেই তোলে। আর তাছাড়া ওষুধের মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ ড্রাগ এডমিনেস্ট্রেশন কাজ করে। তাহলে টাকা পয়সা বিষয়ক যুক্তি খুব একটা অকাট্য নয়। দুই নম্বরে ছিল বিজ্ঞাপনের জন্য ভুল বোঝাবুঝি। সে যুক্তিতে আমাদের দেশে নিডো মাইলো হরলিক্স এনার্জি ড্রিঙক এ সব কিছুর সঙ্গে সঙ্গে ফেয়ারনেস ক্রিম সাবান শ্যাম্পু বিল্ডার্স ইত্যাদি সব কিছুরই বিজ্ঞাপন বন্ধ করা জরুরি হয়ে দাড়াবে। তা হলে আসলে কার স্বার্থে মিডিয়াতে ওষুধের বিজ্ঞাপন বন্ধ থাকবে বোধগম্য নয়।
ডাক্তারির একটা দিক নিয়ে একজন এখানে আলাপ তুলেছেন ইন্টারনেট দিয়ে চিকিৎসা বিষয়ক সচেতনতা (এমন কি চিকিৎসা পর্যন্ত)। ইন্টারনেট অবশ্যই সচেতনতার জন্য ভাল কাজ করতে পারে তবে চিকিৎসার গুরু দায়িত্ব টা বোধ হয় চিকিৎসকের হাতে থাকাই ভাল। ইদানিং অনেক ফোন কোম্পানি টেলি চিকিৎসা দিচ্ছে এটা অবশ্যই আশার কথা। টিভিতে স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠানও বেশ সচেতনতা তৈরি করছে।
তবে পুরো লেখাটাই খুব ভাল লাগল। এটাকে ঠিক পকেট কাটা না বলে সামাজিক দীক্ষায়ন প্রকৌশলের জালিয়াতি বললে ব্যাপারটা আরো পরিস্কার হত। এ বিষয়ে হযতো আরো অনেক আলাপ করা যেতে পারে তবে সে বিষয়ে আগে আমার নিজেকে গোছানোর জন্য একটু সময় দরকার।
আচ্ছা, একটা বেসিক প্রশ্ন। ডাক্তারদের কাছে ওষুধের মার্কেটিং করা কি জরুরী?
উপরে পান্ডবদা যেমন বলেছেন,
তাহলেতো এম.আর (মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ)-দের মাধ্যমে খরচ করা লাখ লাখ টাকার অংশ ওষুধের দামের উপর বর্তায় না।
একটু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে মনে হয়। এমআরদের চাকুরী যাবেনা, তাঁদের মাধ্যমে ব্যয়িত ইনসেনটিভ প্রোগ্রামও একেবারে বন্ধ হয়ে যাবেনা। এমআরদের টার্গেট তখন ডাক্তাররা নন্ ফার্মাসিস্টরা হবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বিস্তারিত মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার নামটা জানতে পারলে পাঠকরা আরো খুশি হতেন।
সে যুক্তিতে আমাদের দেশে নিডো মাইলো হরলিক্স এনার্জি ড্রিঙক এ সব কিছুর সঙ্গে সঙ্গে ফেয়ারনেস ক্রিম সাবান শ্যাম্পু বিল্ডার্স ইত্যাদি সব কিছুরই বিজ্ঞাপন বন্ধ করা জরুরি হয়ে দাড়াবে
দাঁড়াবে আবার কী? এখনই বন্ধ করা উচিত। যে বিজ্ঞাপন বলে এই জিনিষ এক গ্লাস খেলে তিন কেজি চাল, দুই ডজন কলা, তিন ডজন লেবুর সমান পুষ্টি পাওয়া যায়; অথবা বলে এই জিনিষ খেলে লম্বা, শক্তিশালী আর বুদ্ধিমান হওয়া যায় সেই বিজ্ঞাপন কোন যুক্তিতে কোন দেশে চলতে পারেনা।
তা হলে আসলে কার স্বার্থে মিডিয়াতে ওষুধের বিজ্ঞাপন বন্ধ থাকবে বোধগম্য নয়
আপনার আমার মত আম-জনতার স্বার্থে বন্ধ থাকবে। আমরা যারা ওষুধ কোম্পানি, পত্রিকা, টিভি বা এফএম রেডিও চ্যানেলের মালিক না তাদের স্বার্থে বন্ধ থাকবে।
এটাকে ঠিক পকেট কাটা না বলে সামাজিক দীক্ষায়ন প্রকৌশলের জালিয়াতি বললে ব্যাপারটা আরো পরিস্কার হত
যে নামেই ডাকুন, বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলোতে যে ফাঁক ও ফাঁকিগুলো আছে যেগুলোতে দিন শেষে জনগণের পকেট হালকা করার ব্যাপার আছে সেগুলো নিয়ে বলার জন্যই এই সিরিজ। আগের পর্বগুলো পড়লে ব্যাপারটা আপনার কাছে আরো স্পষ্ট হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ডাক্তার, উকিল, পুলিশ এই তিনজন থেকে আমাকে রক্ষা করো প্রভু! বাকীদের আমি সামলাবো।
প্রিয় একটা প্রার্থনা!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সামলানোর ক্ষমতা থাকলে প্রভু সব বিপদ থেকেই রক্ষা করবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমিই ভালো, ক্লাস সিক্সের পর থেকে আর ডাক্তার দেখাই নাই। ঔষধও খাই না। এখনো বেঁচে বর্তে আছি
দেখা যাক কতদিন চালাতে পারি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
- বেশিদিন আর নাই! আপনে অতিসত্বর আমার কাছ থেকে পানি পড়া নেয়া শুরু করেন। আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমেও পানিপড়া দেই। আর লোকাল ব্রাঞ্চ থেকেও আমার পড়াপানি কালেক্ট করতে পারবেন।
বাংলাদেশে একমাত্র (অফিসিয়াল) যোগাযোগের ঠিকানা
ঢাকা শাখার ইঞ্চার্জ
মেসার্স ধুগো ইন্টারন্যাশনাল
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নজরুল, আপনি অনতি বিলম্বে thorough check-up করান। এই শহরে বাস করে, এই শহরে বাতাস নাকে টেনে, পানি পান করে, খাবার খেয়ে গত পঁচিশ (+/-) বছর ধরে কেউ নিরবচ্ছিন্ন সুস্থ্য থাকতে পারেনা। কোন ক্লিনিকে যেতে না চাইলে পরবর্তী সচলাড্ডায় ওডিনকে বলুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমৎকার লিখেছেন! তবে আমেরিকার চিকিৎসা নিয়ে একটু ঝাল ঝেড়ে নেই এই সুযোগে। আমি চাকুরী পাবার পর ডেন্টাল ইন্সুরেন্স পেলাম একটা মাসে ২ টাকা দিতে হয় ইন্সুরেন্সে। ফ্রিতে দাঁত পরিষ্কার করে দেয় বছরে দুবার। ফ্রি যেহেতু গেলাম ডাক্তারের কাছে। তারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করল যে দাঁতে নাকি ক্যাভিটি আছে সেটাতে পেরিডন্টিকস কার্যক্রম না চালালে দাঁত ধ্বংস হয়ে যাবে। রাজি হলাম। চারটা ডেন্টাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট, সুই দিয়ে খোঁচাখুঁচি শেষে কি লাভ হয়েছে জানিনা তবে আমার পকেট থেকে শ তিনেক ডলার বেরিয়ে গেছে। এখন আফটার এফেক্ট হিসেবে প্রতি তিনমাস পর পর দাঁত পরিষ্কারের জন্য যেতে হয়।
আরেকবার আমাকে বোঝালো আমার দাঁতের মাঝখানে যে ফাঁকা আছে সেটা ঠিক করছি না কেন? আমার তো মনে হল তাই তো এটা তো ঠিক করা প্রয়োজন। গেলাম অর্থোডন্টিকসের কাছে। এখন পুরো মুখ জুড়ে ব্রেইসেস নিয়ে বসে আছি। পকেট আমার তিন হাজার ডলার হালকা।
তারপর শীতকাল আসল। ঢাকা থেকে নিয়ে আসা ইনহেলার শেষ। খুব হালকা শ্বাসকষ্ট আছে আমার। ভাবলাম ডাক্তার দেখাই। এক অ্যলারজিস্ট ডাক্তার দেখালাম! সে হাজারও সমস্যা বের করল। বলল প্রতি সপ্তাহে ইঞ্জেকশন নিতে হবে, কন্টিনিউয়াস ইনহেলার নিতে হবে - ব্লা ব্লা ব্লা। প্রতি সপ্তাহে তাই আমার পকেট ক্রমাগত হাল্কা হয়। আরও হাল্কা হয়, আরও...
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
মুর্শেদ, আপনার অভিজ্ঞতার কথা পড়ে আমারই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাবার যোগাড়! আর আপনি সোজা আছেন কী করে!!
এরচেয়ে দুই মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসুন। আপনার দাঁতের, শ্বাসের সব সমস্যার সত্যি সত্যি ভালো চিকিৎসা হবে। সেই চিকিৎসার খরচ, দেশে যাতায়তের খরচ, দেশে দুই মাস থাকার খরচ সব মিলিয়েও আপনি যা ব্যয় করেছেন ও করছেন তার সমান হবেনা। এতে আপনার চিকিৎসাও হবে মাঝে দুই মাস প্রিয় মানুষগুলোর কাছেও থাকতে পারবেন।
****************
যেসব রাষ্ট্র নাগরিকদের চিকিৎসা সুবিধা দেয়, সেসব রাষ্ট্রের দেয়া এই সুবিধার সীমা আসলে কতটুকু? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশের যে চিত্র মুর্শেদ তুলে ধরলেন তাতে সেখানে 'সবার জন্য স্বাস্থ্য'র ব্যাপারটা কতটুকু নিশ্চিত হয়?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এইটা একটা সেই রকম সিরিজ!
ব্যাপক
_________________________________________
ৎ
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমার ডাক্তার লাগে না। কদাচিৎ "অসহনীয় মাথাব্যথা" হলে আমি নিজেই দুটো প্যারাসিটামল খেয়ে নিই।
কি মাঝি, ডরাইলা?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
"অসহনীয় মাথাব্যথা"র কথা শুনলেই হাবিব মহাজনের কথা মনে পড়ে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ডাক্তারের ক্ষেত্রে আমার পদ্ধতিটা খুবই ভালো
আমি কোনোদিনও কোনো ডাক্তারের নাম মুখস্থ করি না কিংবা কাউকে খুঁজেও যাই না
সরাসরি অনেকগুলা সাইনবোর্ডওয়ালা ডাক্তারখানার রিসিপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করি ওমুক সমস্যায় কোন ডাক্তার দেখাব? সেই ডাক্তার কি এখানে আছেন?
যদি থাকেন তাহলে তার চেম্বারের সামনে গিয়ে যদি দেখি আমার সিরিয়াল তিন নম্বরের বেশি তা হলে ওই ডাক্তার বাদ
আমার প্রথম পলিসি হলো ব্যস্ত ডাক্তার বাদ দেয়া
তারপর ডাক্তার যখন জিজ্ঞেস করে কী করেন? (টেস্ট লেখার আগে সব ডাক্তারই জিজ্ঞেস করে) আমি সোজা উত্তর দেই বেকার
এতে ডাক্তার টেস্ট যেমন কম দেয় তেমনি ওষুধও দেয় কম
আমার এই পলিসিটা খুবই ভালো কাজ করে । আমার ডাক্তাররা এতই কম ব্যস্ত যে আমাকে রাস্তাঘাটে দেখলে চিনে ফেলে আর জিজ্ঞেস করে সমস্যা কমেছে কি না
কয়েকজন ডাক্তার পরে ব্যস্ত হয়ে পড়ার পর আমি তাদের বদলে ফেলেছি
০২
আমার পলিসি যে সর্বোচ্চ সঠিক তার প্রমাণ হচ্ছে কোনোবারই ৫-৭ সাত বছরের কম সময়ে আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না
এই লীলেনীয় পদ্ধতিতে ডাক্তার বা রোগের হাত থেকে কতটুকু বাঁচা যাবে আমার সন্দেহ আছে। কম ব্যস্ত ডাক্তার মানেই আপনার সব কথা শুনবেন, অথবা আপনি বেকার তাই কম পরীক্ষা আর কম ওষুধ দেবেন এগুলো ভ্রান্ত ধারণা। হাত-পা ভাঙলে বা অ্যাপেন্ডিকস্ অপারেশন দরকার হলে এই পদ্ধতিতে আগালে মরতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্রফেসর মার্কা ডাক্তারদের ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
পান্ডব দা, সিরিজটা অসাধারণ হচ্ছে। চলুক।
তবে আমি আপনার চীন[i] সিরিজের একান্ত ভক্ত।
রেজওয়ান২২
নতুন মন্তব্য করুন