১.
মধুমালা-মদনকুমারের আখ্যানটি আমরা বাংলাদেশের অধিকাংশ জায়গায় শুনতে পাই। বিশেষত কবি জসীম উদ্ দীন এটির নাট্যরূপ দেবার পর রেডিওতে ও মঞ্চে জনপ্রিয় নাটক ও যাত্রাপালা হিসাবে এটি এতবার প্রচারিত ও অভিনীত হয়েছে যে বাংলাদেশের সবখানেই এই আখ্যানটি লোকের মনে ঠাঁই করে নিয়েছে। জসীম উদ্দীন মূল আখ্যানটির একাংশ নাট্যরূপ দিয়েছেন। সেখানে কাহিনীটিকে তিনি তড়িঘড়ি করে সংক্ষেপিত করেছেন সম্ভবত এর মঞ্চায়ণের সুবিধার কথা ভেবে। এতে মূল আখ্যানটি চাপা পড়ে গিয়ে জসীম উদ্দীনের দেয় রূপটিই স্থায়ী হতে চলেছে। তাছাড়া জসীম উদ্দীন তাঁর পছন্দমত চরিত্রকে গুরুত্ব দেয়ায় ও জনপ্রিয় ধারার সংলাপ সংযোজন করায় আখ্যানটির মূলরূপকে বোঝা পাঠক-দর্শক-শ্রোতার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। মধুমালা-মদনকুমারের আখ্যানটির মূল বর্ণনা আমি প্রথমে বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজনের কাছে শুনেছি, তারপর রেডিওতে নাটক শুনেছি, আরো বহু পরে জসীম উদ্দীনের বইটি পড়ার সুযোগ পেয়েছি। রেডিওর নাটক আর জসীম উদ্দীনের বই অভিন্ন বলে এই আলোচনায় তার যে অংশগুলো লোকমুখে শোনা গল্পের সাথে মিলবে আমি সেটুকুই গ্রহন করবো। বাকি বিস্তারিত বর্ণনার জন্য আমি লোকমুখে শোনা গল্পকেই ঠিক ধরবো। লোক কাহিনী নিয়ে আলোচনায় এটি হয়তো সঠিক পদ্ধতি নয়, কিন্তু এ’মুহূর্তে তার কোন বিকল্প আমার হাতে নেই। কারো কাছ থেকে মূল আখ্যানটির লিখিত রূপ পেলে আমি আমার ব্যাখ্যাতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে দ্বিধা করবোনা।
২.
আলোচনার শুরুতে আখ্যানটি সংক্ষিপ্ত আকারে বলে নিচ্ছিঃ
উজানী নগর রাজ্যের অধিপতি রাজা দণ্ডধর নিঃসন্তান। আঁটকুড়ে রাজার মুখদর্শন করলে দিন খারাপ কাটবে এই ভয়ে সবাই সকাল বেলায় রাজার মুখদর্শন এড়িয়ে চলতেন। একদিন এক ঝাড়ুদারের কাছ থেকে এই সত্য জানতে পেরে রাজা “পুত্রলাভের নিশ্চিত ভবিষ্যতবানী না শোনা পর্যন্ত অনশন” শুরু করেন। এক জ্যোতিষ গণনা করে রাজাকে জানান রাজা পুত্রলাভ করবেন ঠিকই কিন্তু জন্মের পর ষোল বছর পর্যন্ত সেই সন্তান সূর্যালোক দেখলে উন্মাদ হয়ে যাবে। রাজা গর্ভবতী রানিকে মাটির নিচে মহল বানিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন।
যথাসময়ে রানি মদনকুমারের জন্ম দেন এবং তাকে নিয়ে মাটির নিচের অন্ধকারে দিন কাটাতে থাকেন। ষোল বছর পূর্ণ হবার ঠিক একদিন আগে রানি ও তার সহচরীর ভুলের সুযোগে মদনকুমার বাইরে বেরিয়ে যায় এবং সূর্যালোক দেখে জ্যোতিষের ভবিষ্যতবানী অনুযায়ী উন্মাদ হয়ে পড়ে। উন্মাদ হলেও রাজপুত্র বিধায় রাজা-রানি’র আশ্রয়-প্রশ্রয় সবই সে পায়।
মদনকুমার শিকারে বনে গিয়ে রাতে যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন আকাশ পথে উড়ে যাওয়া কালপরী ও নিদ্রাপরী তাকে দেখতে পায়। পরীদের একজন মদনকুমারকে পৃথিবীর সবচে’ সুন্দর মানুষ বলে দাবী করলে অন্য জন তা অস্বীকার করে কাঞ্চন নগরের রাজা মধুকরের কন্যা মধুমালাকে পৃথিবীর সবচে’ সুন্দর মানুষ বলে দাবী করে। পরীরা তাদের এই তর্ক নিষ্পত্তির জন্য মদনকুমারকে খাটসুদ্ধ উড়িয়ে মধুমালার কাছে নিয়ে যায়। উভয়কে পাশাপাশি দেখে পরীরা সৌন্দর্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়। সে’সময় পরীরা মধুমালা আর মদনকুমারের ঘুম ভাঙালে তারা পরস্পরকে দেখে পরস্পরের রূপে মুগ্ধ হয়। তারা নিজেদের মধ্যে আঙটি ও মালা বদল করে। পরীরা এবার দু’জনকেই ঘুম পাড়িয়ে তাদের খাট বদলে দিয়ে মদনকুমারকে আবার বনে রেখে আসে।
ঘুম থেকে জেগে মদনকুমার ও মধুমালা প্রত্যকেই প্রথমে ভাবে যে সে স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বদলে যাওয়া আঙটি, গলার হার ও খাট দেখে বুঝতে পারে ঘটনাটি স্বপ্ন নয়। এরপর দু’জনেই তাদের অভিভাবকদের কাছে একে অন্যকে লাভ করার বাসনা জানায়। অভিভাবকরা গোটা ব্যাপারটিকে স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করলে তারা বদলে যাওয়া আঙটি, মালা ও খাটের প্রমাণ হাজির করে। মধুমালা নারী বলে তাকে ঘরে রুদ্ধ করে রাখা গেলেও উন্মাদ মদনকুমারকে আটকে রাখা সম্ভব হয়না। সে সপ্তডিঙা সাজিয়ে মধুমালাকে পাবার জন্য অজানা চম্পক নগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
নদী বা সমূদ্রযাত্রায় ঝড়ে সপ্তডিঙা ডুবে গেলে মদনকুমার ভাসতে ভাসতে এক রাজ্যে এসে উপস্থিত হয়। উক্ত রাজ্যের রাজা মদনকুমারের পরিচয় পেয়ে বুঝতে পারে সে তারই নৃপতির একমাত্র পুত্র। রাজা মদনকুমারের আগমনের উদ্দেশ্য জানতে পেরে ছলনা করে তার কন্যা ষোলকলাকে মধুমালা হিসাবে তার কাছে পরিচয় দেয়। মদনকুমার ষোলকলাকে মধুমালা ভেবে বিয়ে করে। কিন্তু বাসর ঘরে ষোলকলার মুখদর্শন করে বোঝে যে তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। পরদিন মদনকুমার ষোলকলাকে পরিত্যাগ করে আবারও মধুমালার সন্ধানে বের হয়। কিন্তু যাবার আগে ফিরতি পথে ষোলকলাকে আবার সাক্ষাত করার ও তাকে গ্রহন করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
এরপর মদনকুমার একই প্রকার দুর্ঘটনায় আরেক রাজ্যে এসে উপস্থিত হয়। আবারো ষোলকলা পর্বের পুনরাবৃত্তি ঘটে। এই দফার পাত্রীর নাম পঞ্চকলা। অবশ্য পঞ্চকলার নাম মদনকুমার ষোলকলার কাছ থেকে শুনেছিল। এবং পঞ্চকলার পিতার সোনার চৌকিতে চেপে যে মধুমালার দেশে যাওয়া যায় সেটিও জেনেছিল। মদনকুমার পঞ্চকলাকে বাসরপ্রভাতে পরিত্যাগ করলেও তার সহায়তায় তার পিতার কাছ থেকে সোনার চৌকি লাভ করে। এবারও মদনকুমার ফিরতি পথে পঞ্চকলাকে আবার সাক্ষাত করার ও তাকে গ্রহন করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
অচিরেই মদনকুমার কাঞ্চন নগরে উপস্থিত হয়, মধুমালাকে বিয়ে করে ও তারা একত্রে উজানী নগরে ফেরার পথ ধরে। ফিরতি পথে পূর্বপ্রতিশ্রুতি মোতাবেক মদনকুমার পঞ্চকলা ও ষোলকলাকেও তাদের সাথে নিয়ে নেয়।
এই পর্যায়ে এসে গল্পের বর্ণনা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকার শোনা যায়। জসীম উদ্দীন তাঁর রচনাতে পঞ্চকলা পর্ব উহ্য রেখে মদনকুমারকে মধুমালার কাছে পৌঁছানোতেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। তাই আখ্যানের শেষাংশ নিয়ে তাঁর ভাষ্য জানার উপায় নেই।
আমার শোনা এক বর্ণনায় ফিরতি পথে ষোলকলা ও পঞ্চকলা ষড়যন্ত্র করে মধুমালাকে জাহাজ থেকে সাগরে ফেলে দেয়। মধুমালাকে উদ্ধার করতে মদনকুমারও সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে দু’জনেই ভাসতে ভাসতে ডাঙায় ও সেখান থেকে উজানী নগরে পৌঁছায়; কিন্তু সামূদ্রিক ঝড়ে জাহাজ ডুবে ষোলকলা-পঞ্চকলা উভয়ের সলিলসমাধি ঘটে। আমার শোনা অন্য আরেক বর্ণনায় মদনকুমার তার তিন স্ত্রীকে নিয়ে নির্বিঘ্নে উজানী নগরে প্রত্যাবর্তন করে।
৩.
মধুমালা-মদনকুমার আখ্যানের মূল কুশীলব যাদের নাম আমরা জানতে পাই তারা হচ্ছে, রাজা দণ্ডধর, রাজা মধুকর, ষোলকলা, পঞ্চকলা, মধুমালা ও মদনকুমার। এছাড়া কালপরী, নিদ্রাপরী নামের দুই পরীর দেখা পাই, বাকি চরিত্ররা আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। আখ্যানটিতে মূল টার্নিঙটি কালপরী ও নিদ্রাপরী ঘটিয়েছে। কালপরী সময়ের গতিতে পরিভ্রমণের প্রতীক, আর নিদ্রাপরী যে কাউকে যে কোন সময়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে সক্ষম। বস্তুত উপকথার প্রায় সব পরীই সময় পরিভ্রমণ, ঘুম পাড়ানো, স্বপ্ন দেখানো এসবে দক্ষ। এই পরীদ্বয় তাই নতুন কোন মাত্রা নিয়ে আসেনা, এই অঞ্চলের লোককথাগুলোর স্বাভাবিক ধারাকেই ধারণ করে।
উজানী নগরের রাজা দণ্ডধরের নাম থেকে ধারণা করা যায় সে ন্যায়পরায়ণ ও কঠোর শাসক হবে। কিন্তু আখ্যানে আমরা তার সেই পরিচয়ের বিস্তারিত বর্ণনা পাই না। তার বদলে আমরা তাকে কার্যত নপুংসক, পুত্রকাতর, দৈবনির্ভর ও স্নেহান্ধ হিসাবে দেখতে পাই। এক্ষেত্রে তার নামকরণ কানা ছেলের নাম পদ্মলোচনের মত হয়ে গেছে। কাহিনীতে দীর্ঘদিনের নিঃসন্তান রাজা বস্তুত কোন হোম-যজ্ঞ-নৈবেদ্য নিবেদন করা ছাড়া অথবা জড়ি-বুটি-মোদক ব্যবহার করা ছাড়া এক অখ্যাত জ্যোতিষের গণনা অনুযায়ী হঠাৎ করে পুত্রলাভ করে। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের মানুষ এরচেয়েও অভিনব কায়দায় পতিত সামরিক স্বৈরাচার এরশাদকে পিতা হতে দেখেছে। আসলে এভাবে পিতা হওয়ার ব্যাপারটি এ’দেশে পুরনো একটি ব্যাপার। নিয়োগপ্রথার মাধ্যমে ক্ষেত্রজ সন্তানলাভের বিষয়টি এক সময় প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাই রাজা দণ্ডধরের পুত্রলাভের বিষয়টি অমন কিছু হবার সম্ভাবনাই বেশি। রানির গর্ভধারণকাল, সন্তানের জন্মকাল ইত্যাদি নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন উঠতে না পারে সেজন্য গর্ভবতী রানিকে মাটির নিচের মহলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সম্ভবত মদনকুমারের বায়োলজিক্যাল পিতার ও তাদের বংশের আরো অনেকের উন্মাদ রোগ ছিল। বংশগত উন্মাদগ্রস্থতা মদনকুমারের মধ্যেও দেখা দিতে পারে এমন আশংকায় তাকে জন্মের পর থেকে নির্জনে রাখা হয়। সম্ভবত গোপনে দীর্ঘ দিন ধরে তার চিকিৎসা চললেও তার বয়ঃপ্রাপ্তির সাথে সাথে উন্মাদগ্রস্থতার লক্ষণ ফুটে উঠলে “আলো দেখে মদনকুমার পাগল হয়ে গেছে” ধরনের কথা ছড়ানো হয়। আখ্যানে দণ্ডধরের উপস্থিতি মদনকুমারের সমূদ্রযাত্রার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়। বস্তুত এরপর তার উপস্থিতির কোন প্রয়োজন বা অবকাশ ছিলনা।
কাঞ্চন নগরের রাজা মধুকরের নাম ব্যবহৃত হয় কেবল মধুমালার পরিচয় বর্ণনাকালে। এছাড়া কোথাও তার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়না। মধুকর নামের জন্য তাকে মূলত রিরিংসাগ্রস্থ একজন মানুষ বলে মনে হয়। এমন ধারণা করার কারণ, পিতার নাম ধারণ করা কন্যা মধুমালাকে আমরা মূলত প্রেমগ্রস্থ অথবা কামগ্রস্থ অবস্থায় দেখতে পাই। মধুমালাকে মদনকুমারের জন্য অপেক্ষা করা, হতাশা ব্যক্ত করা, রোদন করা ছাড়া তার আর কোন কর্ম করতে দেখা যায় না। তার এই বিরহব্যাথার প্রকাশ যক্ষের জন্য যক্ষ্মিণীর বিরহ প্রকাশের মতো সাবলাইম নয়। তার প্রকাশ সশব্দ, তীব্র ও উন্মাদের ন্যায়। সেখানে প্রার্থনা নেই, হাহাকার আছে। সেখানে নিবেদন নেই, আক্ষেপ আছে। তার সখীকুল তাকে সেবা করার ও শান্ত করার জন্য সদা ব্যস্ত থাকে। তার এই দহনের প্রকাশভঙ্গীতে সেটাকে প্রেমগ্রস্থতার চেয়ে কামগ্রস্থতা বেশি বলে মনে হয়। মধুমালা যে মধু ধারণ করে সেটা নিতান্তই কামের মধু - প্রেমের মধু নয়। মধুমালার একটি মাত্র দক্ষতার কথা আমরা ষোলকলা ও পঞ্চকলার কাছ থেকে জানতে পাই। সেটি হচ্ছে ‘মধুমালা শাড়ি’তে তার নক্শা আঁকা। শাড়িটি তার নক্শার জন্য দেশে-বিদেশে সমাদৃত বলে মধুমালাকে উঁচু মানের কারুকার বলে ধরা যায়। কিন্তু এই আখ্যানে তার প্রেমোন্মত্ততা তার শিল্পী পরিচয়কে ঢেকে দেয়।
মধুমালার আরাধ্য মদনকুমারের নাম তার চরিত্রকে নির্দেশ করে। রাজা দণ্ডধরের ক্ষেত্রজ সন্তান মদনকুমার শুধু উন্মাদই নয়, সে তার দয়িতা মধুমালার ন্যায় কামোন্মাদও বটে। এ’জন্য সে পূর্ব যাচাই ছাড়াই একে একে ষোলকলা ও পঞ্চকলাকে বিয়ে করে। মধুমালাকে পাবার আশায় তাদেরকে সাময়িকভাবে ত্যাগ করলেও তাদেরকে ভোগের আশা সে ছাড়েনা। আদতে সে বহুবল্লভ, তাই ষোলকলা ও পঞ্চকলাকে পুনর্মিলনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মধুমালার সন্ধানে বের হয়; এবং ফিরতি পথে তিন স্ত্রীকে নিয়েই দেশে ফেরার চেষ্টা করে। সুতরাং মধুমালার প্রতি তার আকর্ষণ বিশুদ্ধ প্রেমসঞ্জাত হবার বদলে কামসঞ্জাত হবার সম্ভাবনাই বেশি। কোন কাজেই মদনকুমারকে আমরা বিবেচক ও হৃদয়বান হিসাবে দেখতে পাইনা। অসময়ে শিকারে যাবার জন্য তার তীব্র জেদ, রাতে বনে অবস্থানের জন্য অহেতুক জেদ, সমূদ্রে ঝড়ের মধ্যে সঙ্গীসাথী কারো জীবনের তোয়াক্কা না করে বার বার জাহাজ চালানোর নির্দেশ দিয়ে জাহাজডুবির শিকার হওয়া সবই তার অবিবেচক, স্বার্থপর ও উন্মাদ মনের পরিচায়ক।
আখ্যানটির ট্রাজিক দু’টি চরিত্র হচ্ছে ষোলকলা ও পঞ্চকলা। উভয়ের নাম অর্থপূর্ণ ও তা তাদের অর্জিত জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। বাৎসায়ণ তাঁর কামসূত্রে চৌষট্টিটি কলা (প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিল্পকলা) শেখার কথা বলেছেন। চৌষট্টিটি বিদ্যা একজন মানুষের জীবনে শেখা দুরূহ বলে কেউ প্রধান ষোলটি কলা শিখে থাকলে তাকে সুশিক্ষিত বলা যায়। সেই অর্থে ষোলকলা একজন বিদূষী নারী। আবার আমরা জানি, অমাবস্যা থেকে শুরু করে চন্দ্রকলা একে একে পূর্ণ হতে হতে ষোড়শ কলাতে অপরূপ রূপ ধারণ করে। সেই অর্থে ষোলকলা পূর্ণচন্দ্রের মতো রূপসী, পূর্ণযৌবনা, সুঠামদেহী এক নারী। ষোলকলা এই দুই প্রকার ব্যাখ্যার যে কোন এক প্রকারের হতে পারে। প্রথম প্রকারের হলে পরে সে গুণ বিচারে মধুমালাকে অতিক্রম করে যায়। দ্বিতীয় প্রকারের হলে সে মধুমালার চেয়ে অধিক সুন্দরী হবার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাই মদনকুমার মধুমালার আশায় ষোলকলাকে ত্যাগ করলেও তার রূপ-গুণের লোভ ছাড়তে পারেনা; তাই ফিরতি পথে তাকে আবার গ্রহন করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
পঞ্চকলার নাম থেকে সে পাঁচটি বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতার অধিকারী বলে ধারণা করা যায়। বৈষ্ণব ধর্মে পঞ্চকলা বলতে দৈনিক অবশ্য পালনীয় পাঁচটি কর্মকে বোঝায়। সেগুলো হচ্ছে, অভিগমন (প্রাতঃকালীন প্রার্থনা), উপাদান (ফুল, ফল ও পূজার উপাচার সংগ্রহ), ইহ্য-নিত্য (মর্ধ্যাহ্নপূর্ব প্রার্থনা), স্বাধ্যয় (ধর্ম্মপুস্তক পাঠ) ও যোগ (নৈশকালীন প্রার্থনা ও আহারের পরের ধ্যানসহ শরীরচর্চা)। এই কর্মগুলোর নিয়মিত ও মনোযোগী চর্চার দরুন কোন নারী যদি “পঞ্চকলা” উপাধী পায় তাহলে বুঝতে হবে সেই নারী ধার্মিক, গৃহকর্মে পটু, শিক্ষিতা ও সুদেহী। পঞ্চকলা এই দুই প্রকার ব্যাখ্যার যে কোন এক প্রকারের হতে পারে। উভয় প্রকারেই সে শিক্ষাগুণে বা সংসার-ধর্মগুণে মধুমালাকে অতিক্রম করে যায়। এক্ষেত্রেও মদনকুমার মধুমালার আশায় পঞ্চকলাকে ত্যাগ করলেও তার কাছে ফেরার ও তাকে গ্রহন করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
একই ধরনের কাহিনী ও পরিণতির জন্য ষোলকলা ও পঞ্চকলার মতো দু’টি চরিত্র আনার প্রয়োজনীয়তাটি তাদের রূপমাধুর্য ও গুণপনার মধ্যে নিহিত। একই সাথে মধুমালার সাথে তাদের রূপগত-গুণগত পার্থক্য এবং মদনকুমারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে স্পষ্ট করে।
এদেশে প্রচলিত আখ্যানগুলোতে মানবীয় গুণাবলী, দুঃখ, বিরহ, ত্যাগ, বীরত্ব, সাহস, ধর্ম, দানশীলতা ইত্যাদি মুখ্য হলেও মধুমালা-মদনকুমারের আখ্যানটি বড্ড বেশি শরীরি। এদেশীয় ঘরাণায় সেটিকে একটু ঘুরিয়ে প্রকাশ করা হলেও সেখানে প্রথম রিপুর দোর্দন্ড প্রতাপ টের পাওয়া যায়। সেদিক বিবেচনায় অর্থাৎ রস বিচারে এই আখ্যানটি এই অঞ্চলের একটি ব্যতিক্রমী আখ্যান।
৪.
উজানী নগর জায়গাটি কোথায় আখ্যানটিতে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তবে সেটি বাংলার উজান অঞ্চল অর্থাৎ উত্তর বা উত্তর-পূর্বাংশের কোন স্থান হতে পারে। যোগাযোগের জন্য সপ্তডিঙা ব্যবহার করায় উজানী নগরের অবস্থান বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও বৃহত্তর সিলেটের চেয়ে উত্তরে বা পূর্বে হতে পারেনা। একইভাবে তা বৃহত্তর রাজশাহী, মালদহ বা মুর্শিদাবাদের উত্তরে বা পশ্চিমে হতে পারেনা।
ষোলকলাদের রাজ্যটি উজানী নগরের শাসনভূক্ত হওয়ায় সেটির দূরত্ব বেশি হবার কথা নয়। তবে সামূদ্রিক ঝড়ে জাহাজডুবির পরবর্তীতে তাদের রাজ্যে পৌঁছানো হয় বলে সেই রাজ্যটি উপকূলবর্তী অঞ্চল অথবা দ্বীপ হতে পারে। সুতরাং ষোলকলা বৃহত্তর চন্দ্রদ্বীপ অথবা হরিকেলের কন্যা হতে পারে। ষোলকলার বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ ও জ্ঞানের বহুমাত্রিকতা বাইরের দুনিয়ার সাথে তাদের রাজ্যের নিয়মিত যোগাযোগকে নির্দেশ করে। সময়ের বিবেচনায় এই যোগাযোগ কেবল একটি সমূদ্র বন্দরের ক্ষেত্রে সম্ভব।
পঞ্চকলাদের রাজ্যটি সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা না গেলেও সমূদ্র বা নদী পথে যোগাযোগ, জাহাজডুবিতে সেখানে পৌঁছানো, পঞ্চকলার বিদ্যাশিক্ষা ইত্যাদি থেকে সেটিকেও সমূদ্রোপকূলীয় অঞ্চল বলে মনে হয়। কিন্তু তা দ্বীপ নয়। কারণ, পঞ্চকলাদের রাজ্য থেকে মধুমালাদের রাজ্য কাঞ্চন নগরে পৌঁছাতে জলপথ ব্যবহার করা হয় না; সোনার চৌকিরূপী রথ বা পালকি ব্যবহার করা হয়। কাঞ্চন নগরকে তাই উপকূল থেকে ভেতরের দিকে মূলভূখণ্ডের অংশ বলে মনে হয়।
স্থানগুলোর দূরত্ব খুব বেশি না হলে উপরের বিশ্লেষণ থেকে মদনকুমারকে বৃহত্তর কুমিল্লা-নোয়াখালী-ফরিদপুরের; ষোলকলাকে হাতিয়া বা সন্দ্বীপের; পঞ্চকলাকে চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ডের ও মধুমালাকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাঞ্চন নগরের মানুষ বলে মনে হয়। তবে এই আখ্যানটির শ্রুতি বাংলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কম পাওয়া যায় বলে স্থান নিয়ে এই সিদ্ধান্তটিকে প্রায় অভ্রান্ত বলার উপায় নেই। অবশ্য আসিয়ান দেশগুলোতে রামায়নের আখ্যানের সুগভীর বিস্তৃতি দেখে বোঝা সম্ভব নয় যে এর উৎপত্তি সেখান থেকে বহু দূরে - যেখানে সমূদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হয়।
অমন বিবেচনায় উজানী নগর পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র বা মেঘনার উজানের যে কোনো এলাকা হতে পারে। একই ভাবে কাঞ্চন নগর হতে পারে খওয়াই নোই, খওয়াই ইয়েই ও মেকং নদীর সঙ্গমস্থল থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুড়ি অঞ্চল। সেক্ষেত্রে ষোলকলার দেশ দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও পঞ্চকলার দেশ দক্ষিণ বার্মা হয়। থাইল্যান্ড বা শ্যামদেশের সাথে এদেশের যোগাযোগ ও বাণিজ্য সুপ্রাচীন কাল থেকেই বিদ্যমান। সুতরাং বাংলার একটি কাহিনীর বিস্তৃতি থাইল্যান্ড পর্যন্ত ঘটতে পারে। ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের জন্য বাঙালী রূপবান ও শ্যামসুন্দরী পরস্পরের রূপে মুগ্ধ হতে পারে। থাই ভাষা সংস্কৃত, পালি ও খেমর ভাষাজাত বলে মধুমালা ও মদনকুমারের মধ্যে ভাষাগত ব্যবধান কম হবার কথা। তাছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে একটু একটু করে মধ্যবর্তী পথগুলো অতিক্রম করতে হয়েছে বলে মদনকুমারের কাছে ষোলকলা, পঞ্চকলা বা মধুমালার ভাষার দুর্বোধ্যতা কম মনে হবার কথা (উজানের বাংলা > দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাংলা > দক্ষিণ বার্মার ভাষা > পশ্চিম থাইল্যান্ডের ভাষা)।
একটি বিশেষ তথ্য আমাদেরকে কাঞ্চন নগর জায়গাটি কোথায় সে সম্পর্কে ভিন্ন ভাবে ভাবায়। আমরা জানি, মধুমালার দেশে অত্যন্ত উন্নতমানের শাড়ি বানানো হয় এবং মধুমালা তাতে সুন্দর নক্শা আঁকে। এখান থেকে মনে করা যায় কাঞ্চন নগর জায়গাটি দক্ষিণ ভারতের কাঞ্চিপুরম হতে পারে। কাঞ্চিপুরম তাদের উৎপাদিত “কাঞ্জিভরম” শাড়ির জন্য আজো বিখ্যাত। সেক্ষেত্রে ষোলকলার দেশ বরিশাল বা চন্দ্রদ্বীপ; এবং পঞ্চকলার দেশ দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন নগরী, চোলা রাজবংশের রাজধানী থাঞ্জাভূর হতে পারে। সংশ্লিষ্ট জনপদগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ইতিহাস, জনপদগুলোতে স্থাপত্য, প্রযুক্তিসহ অন্যান্য জ্ঞানের চর্চা, শিল্পের বিকাশ ইত্যাদি বিবেচনায় স্থান সম্পর্কে এই ব্যাখ্যাটিকেই সঠিকের কাছাকাছি ধরা যেতে পারে।
৫.
মধুমালা-মদনকুমারের আখ্যানটি কোন্ সময় কালের? ঘটনা ও পাত্র-পাত্রীদের বর্ণনা থেকে সেটিকে এদেশে মুসলিম শাসনামলের পূর্বের বলে মনে হয়। তবে বাণিজ্যের বিস্তৃতি, যানবাহন প্রযুক্তি ও ইমারত নির্মান কৌশলের কথা থেকে বোঝা যায় কাহিনীটি পুরাকালের নয়। এদেশে মুসলিম শাসনামল শুরু হয়েছে ১২০৬ খ্রীষ্টাব্দ থেকে। সুতরাং আখ্যানটি ত্রয়োদশ শতকের আগের হবার কথা। দক্ষিণ ভারতে চোলা রাজবংশ খ্রীষ্ট পূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে ১২৭৯ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত ছিল। তখন কখনো কখনো থাঞ্জাভূর তাদের রাজধানী ছিল। থাঞ্জাভূরের সমৃদ্ধিও এই সময় কালের মধ্যে হয়েছে। কিন্তু এই সময় কালটি প্রায় ষোল শতাব্দী বিস্তৃত বলে এখান থেকে আখ্যানটির সময় কাল নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। চোলাদের কাছে পরাজিত হবার আগে চতুর্থ থেকে নবম শতক পর্যন্ত কাঞ্চিপুরম পল্লব রাজবংশের রাজধানী ছিল। এই সময় কালটিও কমপক্ষে পাঁচশত বছর। চতুর্থ শতাব্দী বা তার পরের দুই-তিনশ’ বছরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন খুব উল্লেখযোগ্য নয় বলে আমরা আখ্যানটির সময় কাল নবম শতক বলে ধরতে পারি। সেই হিসাবে মধুমালা-মদনকুমারের কাহিনী কমপক্ষে এক হাজার বছরের পুরনো।
৬.
এই আখ্যানে আমরা দুই বার দুই জন ভিন্ন নারীকে মদনকুমারের কাছে মধুমালা বলে চালানোর চেষ্টা দেখতে পাই। বাস্তব জীবনে নানা ক্ষেত্রে এমন অপচেষ্টা আমরা হরহামেশা দেখতে পাই। তার কয়েকটা উদাহরণ দেয়া যাক।
আমার এক শিক্ষক বহু আগে আমাকে বলেছিলেন, “যদি তুমি পিএইচডি ডিগ্রীধারী কোন ব্যক্তির কাছে কোন লেখা চাও, তাহলে সে সর্বতোভাবে চেষ্টা করবে তার পিএইচডি থিসিসটি বা তার অংশবিশেষ বা সেটার উপর নির্ভর করা অগভীর কোনো লেখা তোমাকে গছিয়ে দিতে”। পরবর্তী জীবনে মহাজনদের কাছ থেকে লেখা আদায় করতে, কোনো বিষয়ে তাদের বিশ্লেষণ জানতে গিয়ে বা কোনো বিষয়ে তাদের পরামর্শ নিতে বহুবার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের মন্তব্যর সত্যতা পেয়েছি। মহাজনেরা বার বার ঐ সমস্ত কাজে গরুর রচনায় গরুকে জল পান করানোর জন্য ঠেলে-ধাক্কিয়ে নদীর কূলে নিয়ে গেছেন।
জটিল কোনো কাজের জন্য যখন কোনো বিশেষজ্ঞ নিয়োগের দরকার হয়, তখন প্রায় দেখা যায় মূল বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন সব বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা নিজেদেরকে ঐ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলে দাবী করে কাজটি আদায় করার চেষ্টা করেন। সরকারী কমিটি, বিশেষতঃ ক্রয়, নির্মাণ বা ব্যয় সংক্রান্ত কমিটিগুলোতে এমন ষোলকলা-পঞ্চকলাদের দেখা হরহামেশা মেলে।
কর্ম জীবনে আমি নানা ধরণের যন্ত্রপাতি আমদানীর সাথে জড়িত আছি। এসব যন্ত্রপাতি আমদানী কালে দেখা যায় বৈদেশিক নির্মাতাদের প্রায় সবাই তাদের প্রস্তুতকৃত জিনিসটিই আমাদের জন্য ঠিকঠাক বলে রায় দেন। আমরা আমাদের প্রয়োজনটি বুঝিয়ে বলে, তাদের পণ্যটির কেন অগ্রহনযোগ্য তা ব্যাখ্যা করলে তারা বিরক্ত হয়। তখন আমরা যে ভুল জিনিস চাইছি এটা বোঝাতে তারা উঠে পড়ে লাগে। বিক্রেতাদের এই মনোভাবের সাথে আমরা বেশ পরিচিত। দোকানে গেলে দোকানদারেরা আমাদের দরকারী জিনিসের বদলে যেটাতে তাদের বেশি লাভ থাকে অমন জিনিস আমাদেরকে গছিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। এটি তাদের স্বাভাবিক প্রবনতা। একে আমরা “মধুমালা সিনড্রোম” বলতে পারি।
মধুমালা সিনড্রোমের সবচে’ করুণ প্রয়োগ হচ্ছে ঘটক বা অভিভাবক কর্তৃক তাদের সুবিধামতো বা তাদের পছন্দমতো সঙ্গী/সঙ্গীনি গছিয়ে দেয়া; এবং তাকেই আপনার জন্য সবচে’ সঠিক জন বলে ব্যাখ্যা-প্রমাণ হাজির করা। জীবনের এই পর্যায়টিতে মধুমালা সিনড্রোমের শিকার যেন হতে না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থেকে নিজের রুচি, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করা উচিত। সমাজের ও জীবনের অন্য ক্ষেত্রেও নিজের মেধা-অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগালে ষোলকলা-পঞ্চকলাদের অভিভাবকদের হাত থেকে বাঁচা যাবে। জীবন সম্পর্কে এমন গুঢ় শিক্ষা থাকার জন্যই মধুমালা-মদনকুমারের আখ্যান চিরায়ত হতে পেরেছে।
মন্তব্য
পড়লাম এবং বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ পান্ডবদা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ, রাতঃস্মরণীয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আলোচনার জন্য কুইন্টালখানেক গুড় রইল। আর মধুমালা সিন্ড্রোমের কথায় বলি, আমার আম্রিকিয় বন্ধুরা অনেকেই জীবনে মহিলাবন্ধুর অভাবে দুঃখে কালাতিপাত করে, আর নিজের সেই অভাবে আমি বিচলিত হই না দেখে আক্ষেপ করে, 'তোমার আর চিন্তা কী, তুমি তো যেই বাড়ি যাবে তোমার বাপমা টপ করে একটা মেয়ে জোগাড় করে দেবেন!'
আপনি কি গোনাগুন্তির কারবারের সাথে সাথে গুড়ের আড়ত চালান নাকি? প্রায় সবাইকে গুড় বিলিয়ে বেড়ান! তা গুড় বিলান সেটা ভালো কাজ, কেবল গুড় না লাগালেই চলবে।
ইয়ার-দোস্তদের কথায় যদি ভেবে থাকেন বাবা-মা আপনার জন্য কনে জোগাড় করে দেবেন তাহলে সে আশায় গুড়ে বালি। পুত্রের জন্য সুন্দরী, শিক্ষিতা, সুশীলা, গৃহকর্মে নিপুণা, রন্ধনে পটিয়সী, মৃদুভাষী, আধুনিক মনের কনে জোগাড় করার চেয়ে কোলকাতা থেকে খালি পায়ে হেঁটে এভারেস্টের চুড়ায় ওঠা সোজা। আগামী বার বাড়ি ফিরে একবার বলেই দেখুন না এমন পাত্রীর কথা! তখন কত কী মধুর বাক্য যে শুনবেন তা ভাবতেই আমার মন ভালো হয়ে যাচ্ছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কিন্তু ইয়ে, আপনি আজকাল সব কমেন্টেই কেবল আমাকে বিয়ে নিয়ে ভয় দেখিয়ে বেড়ান... ব্যাপার্কি?
ভয় দেখাই না রে ভাই, সত্য কথাটা ইনিয়ে বিনিয়ে না বলে সোজাসুজি বলার চেষ্টা করি। নয়তো পরে যদি অনুযোগ করেন, আমরা বয়োজ্যেষ্ঠরা বা অভিজ্ঞরা সময় থাকতে আপনাদের হুঁশিয়ার করিনি কেন!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লোকগাথা নিয়ে এত সুচারু বিশ্লেষণ মুগ্ধ করল। মূলত কাহিনীটি ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডের গল্প মনে হল। কিন্তু, মধুমালা-মদনকুমারের দেখা হওয়ার যুক্তিশীল কোন ব্যাখ্যা কি আছে? পরী ছাড়া? আর মদনকুমার উন্মাদ হলে এত জাহাজযাত্রা, তিনজন স্ত্রী কে আলাদা করে মনে রাখা, এসব কিকরে সম্ভব হল? মানে মদনকুমারের কেন উন্মাদ হওয়া দরকার কাহিনীতে সেটা বুঝিনাই।
১. ওয়ান-নাইট স্ট্যান্ড মানে যদি অ্যারাবিয়ান নাইটসের মত কিনা বোঝায় তাহলে তার উত্তর "হ্যাঁ" হবার সম্ভাবনা বেশি। এদেশের সাথে আরবদের বাণিজ্য যোগাযোগ দেড় হাজার বছরের চেয়েও বেশি। সুতরাং আরবদের কাছ থেকে এই কনসেপ্টটা আমদানী হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার অ্যারাবিয়ান নাইটসে আরবরা উত্তর আফ্রিকা, তুরস্ক, মধ্য এশিয়া, চীন, আফগানিস্থান, ইরান সব জায়গা থেকে কাহিনী ধার করেছে। সুতরাং এই কনসেপ্টটা যদি এখান থেকে আরবে চালান হয়ে থাকে তাহলেও অবাক হবার কিছু নেই।
২. এদেশের লোককথার কনটেক্সটে ভুত-প্রেত, রাক্ষস-খোক্কস, জ্বীন-পরী অলৌকিক কিছু নয় - বরং লৌকিক। লাতিন সাহিত্যে হরহামেশা জীবত ও মৃতকে যেভাবে আমরা একই স্টেটে একই স্ট্যাটাসে পাশাপাশি দেখতে পাই অনেকটা সেই রকম। কোন বিশেষ কো-ইনসিডেন্স বা সাধারণের বোধের অগম্য কিছু হলে সেটাকে জ্বীন-পরীর কারবার বলে আজও ব্যাখ্যা দেয়া হয়।
আমরা আমাদের কল্পনাকে প্রসারিত করলে এমনটা দেখতে পারি যে, মদনকুমার কোনো শিল্পীর আঁকা নারীর ছবি দেখে মুগ্ধ হলে শিল্পীর কাছে ছবির নারীর সন্ধান জানতে চায়। বেচারা শিল্পী উন্মাদ রাজকুমারের রোষ থেকে বাঁচার জন্য বহু দূর দেশের এক রাজকন্যার নাম বলে দেয় যার নাম তার শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত। মদনকুমার হয়তো তাতেই মধুমালাকে পাবার জন্য উন্মত্ত হয়ে ওঠে। মধুমালা হয়তো মদনকুমারের নামই শোনেনি, তাকে ভালোবাসা দূরে থাক। সমূদ্র পাড়ি দিয়ে হেলেনকে অপহরণের মতো গল্পকে সুশীল রূপ দেবার জন্য হয়তো গল্পকার পরীকে আমদানী করে মধুমালাকেও মদনকুমারের প্রেমে ডুবিয়েছে।
৩. মদনকুমার হচ্ছে সেয়ানা পাগল। সে শুধু নিজের লাভটা বোঝে। নিজের লাভের জন্য সঙ্গীসাথীদের বাঘে খাক বা সাতখানা জাহাজ ডুবে কয়েকশ' লোক মরুক বা বাসরপ্রভাতে বউকে ফেলে চলে যাক - তার কিছু যায় আসে না। এমন সেয়ানা পাগল রাজপুত্র-জমিদারপুত্র এদেশে ভুরি ভুরি ছিল। এদের শিকল দিয়ে বাঁধতে হতোনা, তবে সেটা করলেই ঠিক হতো।
মদনকুমার উন্মাদ হবার পিছনে দুটি যুক্তি আছেঃ
(ক) মদনকুমার নীচ ঔরসজাত ক্ষেত্রজ সন্তান। "রক্তের বিশুদ্ধতা নষ্ট হওয়াতে জন্মানো সন্তান উন্মাদ হয়েছে" বর্ণাশ্রয়ী সমাজে এমনটা বোঝানো দরকার ছিল।
(খ) মদনকুমার উজানের লোক। আর উজানের লোকদের সমূদ্র যাত্রায় আগ্রহ বা সেটা করার সাহস সব সময়ই কম ছিল। নিস্তরঙ্গ জীবন রেখে উজানের কেউ জীবনসংশয়ী সমূদ্র যাত্রায় গেলে তাকে উন্মাদ হিসাবেই চিহ্নিত করা হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার লেখা পড়ে বিস্মিত ও মুগ্ধ হলাম। লোক-কাহিনীর বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে। সেই সাথে মনে একটা আফসোস হচ্ছে। বাংলার এইসব লোক-কাহিনীর অনেকগুলোই পড়া হয় নাই। জসীম উদ্ দীন (অভ্র দিয়ে নামের বানান লিখতে পারছি না) পুনর্পাঠে আগ্রহী হলাম।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ ফাহিম। আফসোস করার কিছু নেই। ইন্টারনেটে একটু ঘাঁটাঘাটি করলেই বাংলার অনেক লোক কাহিনী পড়তে পাবেন। যদি দেশে থাকেন তাহলে একদিন সময় করে বাংলা বাজার, প্যারী দাস রোড এগুলো একটু চক্কর দিন তাহলেই লোক কাহিনীর ভাণ্ডার পেয়ে যাবেন। জসীম উদ্দীনের সব বই পাবেন "পলাশ প্রকাশনী"তে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ ভাইয়া। দেশে আসলে অবশ্যই যাবো।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
মুগ্ধ করার মত বিশ্লেষণ।
লেখাটা পড়তে পড়তে এই লোকের কথা মনে হচ্ছিল, দেখা গেল আপনিও মিস করেন নি।
এটা শুধু বৈদেশিক নয় দেশি নির্মাতাদেরও থাকতে পারে। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে যারা কাজ করেন এক পর্যায়ের তারা টানেল ভিশনের শিকার হন, নিজেদের মাল ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে পারেন না।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ এমিল ভাই।
এরশাদকে কী করে ভুলি বলুন? আমরা বড় হলামই তো এই হারামজাদার আমলে।
টানেল ভিশন আসলে যে কোন পেশার, যে কোন দেশের মানুষেরই হতে পারে। বিদেশীদের কথাটা বলেছিলাম ওদের কাছ থেকে নিয়মিত এই রকম কথা শুনতে হয় বলে। কর্পোরেট দুনিয়ায় টানেল ভিশন ইচ্ছাকৃত ভাবে তৈরি করা হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মদনকুমার মনে হয় 'জাতে উম্মাদ, তালে একদম ঠিকঠাক' নইলে হিসেবে তো কোথাও একটুও ভুল করতে দেখিনা!
অনেক আগে, পিচ্চিবেলায় 'হীরামন' নামের একটা অনুষ্ঠানে এর নাট্যরূপ দেখেছিলাম। তখন রূপকথা মনে হলেও এখন আপনার অবাক করা বিশ্লেষণ পড়ে খুব বেশিই বাস্তব ঘেষা মনে হচ্ছে। খুব ভালো লাগলো লেখাটা।
-আয়নামতি
ধন্যবাদ আয়নামতি। মদনকুমারের ব্যাপারে আপনার বিশ্লেষণ সঠিক। লোক কাহিনীগুলো আকাশ থেকে পড়ে না। সাধারণ মানুষের জানা-অভিজ্ঞতা-দেখা গল্পগুলোতে কিছুটা রঙ, কিছুটা রস মিশিয়ে সেগুলো তৈরি হয়। লোকের মুখে মুখে ফিরে সেগুলোর রূপ একটু একটু বদলায় মাত্র, তবু তাতে তার ভূমিসংলগ্নতা দূর হয়না। এ কারণেই রূপকথার গল্পগুলোকে আপনার কাছে বাস্তব ঘেঁষা মনে হচ্ছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে।
অটঃ আমাদের উজান গাঁ মনে হয় উজান নগরের বাসিন্দা
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ।
অটঃ বস্, তার স্বভাব-চরিত্র কি মদনকুমারের মতো?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সুবিন্যস্ত রচনা। বিশ্লেষণ অনুপুঙ্খ হয়েছে সন্দেহ নেই। ভাবছি, সাহিত্যমূল্য বিচারে যুক্তির ব্লেড কতটুকু জরুরী। উপাখ্যান ও উপাখ্যানসঞ্জাত সাহিত্য যে এক নয় তা আমরা বহু পূর্বেই মাইকেল রচিত মেঘনাদবধ কাব্যে প্রত্যক্ষ করেছি। সেখানে দেখেছি দুরাত্মা রাবণের চরিত্র কিভাবে নবরূপে মহিমান্বিত হলো। অথবা যদি কালিদাসের মেঘদূতের আলোচনায় আসি তবে দেখবো, বাল্মীকিবিধৌত হয়েও সেটি নতুন অভিজ্ঞানে অভিসঞ্জিত। সেখানে হয়তো মহাকাব্যের লক্ষণ নেই, নেই নবরসের অবতারণা। কিন্তু দেখুন, আদিরস ও করুণরসের কী বহুবর্ণ সন্নিপাত সেখানে। আবার যদি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তবে পুরো কাব্যটিকে তো এক মধুসঞ্চারিত ভ্রমণকাহিনী বলেই মনে হয় আমার। সেখানে যক্ষের বিরহের আড়ালে কবির কাছে ভুস্বর্গের চিত্ররচনার প্রয়াসই মুখ্য হয়ে উঠে। কাব্যটির গড়ন যেন পিরামিডের মতো, পাদদেশে ভৌগলিক বিবরণ, মধ্যভাগে অলকা আর চূড়ায় অধিষ্ঠিত এক নারীমূর্তি। মধুবালা উপাখ্যান কোন কবি কখন লিখেছেন তা জানিনা। জসীম উদদীনের এই কাব্যপ্রচেষ্টাও কতটুকু অভিলাষী ছিল তাও জানি না। কে জানে, হয়তো কখনো কোন মহান কবি মধুমালা-মদন কুমারের উপাখ্যানে মৃতসঞ্জীবনী সুধাসঞ্চার ঘটাবেন।
ভিন্নমত। সময় ও কালচেতনা কবিমাত্রেরই মূল চালিকাশক্তি। এই দুই পরীর অবতারণা কবির জন্য যুগপৎ ভবিষ্যত ও অতীত বিহারী হবার বাহন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারতো, এখানেই হতে পারতো নতুন মাত্রার সংযোজন। যেমন হয়েছে কালিদাসে, মেঘ সেখানে সময়ের স্ত্রোত বয়ে নিয়ে গেছে। আমরা দেখেছি পূর্বমেঘ ও উত্তরমেঘের প্রতীকী ও কুশলী অবতারণা।
সবশেষে বলি, রচনাটিতে ষষ্ঠপাণ্ডবের কাছ থেকে অনুপুঙ্খ ব্যবচ্ছেদ নয় বরং শৈল্পিক সম্ভাবনার বিশ্লেষণ আশা করেছিলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
১. পরীর ব্যাপারে উপরে আনন্দীকে একটা ব্যাখ্যা দিয়েছি, সেটা একটু দেখবেন। পরী লোককথার লৌকিক উপাদান - অসাধারণ বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। দূরত্বের সীমাকে সঙ্কোচন করে পরী সময় বাঁচায়, কাহিনীকে টান টান করে, উত্তেজনা বাড়ায়। এই আখ্যানে অতীত ভ্রমণ বা ভবিষ্যত ভ্রমণ জরুরী ছিলো না। তাই পরীরা মধুমালা-মদনকুমারের ব্রিফ এনকাউন্টারেই তাদের কর্ম সীমাবদ্ধ রেখেছে। বিপদ্গ্রস্থ মদনকুমারকে বা বিরহকাতর মধুমালাকে তারা কোন দর্শন দেয় না বা সহায়তা করে না। লোককথাকে পুনর্লিখন করা যায়, পুনর্নির্মাণ নয়। তাই কী হতে পারতো আমাদের সে কথা বলার উপায় নেই। লোককথা ভিত্তিক সাহিত্য হলে সেটা ভিন্ন কথা। জসীম উদ্দীন মূল ফ্রেমের সীমার মধ্যে থেকে কিছুটা স্বাধীনতা নিয়েছেন, কিন্তু ফ্রেম ভাঙেননি। মূল আখ্যানের ফ্রেম ভাঙা সাহিত্য নিয়ে বিতর্ক বা আলোচনা হতে পারে, তবে সেটা কোনো ভাবেই মূল আখ্যানকে ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হতে পারে না। মাইকেল বা কালিদাসের রচনা তাই উৎস নির্বিচারে বিশুদ্ধ সাহিত্য, ধর্মপুস্তক নয়। ধর্মপুস্তকের বর্ণনার ব্যাখ্যা তার ফ্রেমের মধ্যেই হবে।
২. এই রচনা কোন উপায়ে বা কোন বিচারে জসীম উদ্দীনের রচনার সমালোচনা বা বিশ্লেষণ নয়। মধুমালা আখ্যানের প্রতিষ্ঠিত বা প্রমিত ভাষ্যের লিখিত রূপ নেই বলে লোকমুখে শোনা আখ্যানের সাহিত্যমূল্য বিচার করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকার বর্ণনা, বিভিন্ন সুরের কাব্য-গান শুনলে তার গুণ-রস বিচার সম্ভব নয়। ব্যক্তি বিশেষের বর্ণিত আখ্যানকে মান ধরে সেটাকে কাঁটা-ছেঁড়া হয়তো করা যেতো, তবে আমার উদ্দেশ্য সেটা নয়। যুক্তি, তথ্য ও ইতিহাসের আমদানী করার উদ্দেশ্য লোককথার আড়ালে সম্ভাব্য কী কী সত্য থাকতে পারে সেটা অনুসন্ধান করা। এক কালে সাধারণ মানুষের কাহিনী লেখা নিষিদ্ধ ছিল। তখন সকল প্রেম-বিরহের গাঁথা রাধা-কৃষ্ণকে ঘিরে হতো। বলা হতো, "কানু বিনা গীত নাই"। সেই আমলের সাহিত্যকে এই ভাবে বিশ্লেষণ না করলে সে সময়ের সাধারণ মানুষের ইতিহাস ও রচয়িতাদের মনের কথাটা জানা যাবে না। রাজা-রাজড়াদের বা তাদের টাকাখোর ঐতিহাসিকদের লেখা মিথ্যা ইতিহাসের বইয়ে যে সত্যগুলো থাকেনা, সৎ আখ্যানগুলো বিশ্লেষণ করলে সেই সত্যগুলোকে পাওয়া যেতে পারে। নিম্নবর্গের মানুষের ইতিহাসও এভাবে খোঁজা যাবে।
৩. মধ্য বা প্রাচীন যুগের বাংলা সাহিত্যের শিল্পগুণ কতটুকু ছিল, সাহিত্যমূল্যই বা কতটুকু সেটা নিয়ে অ্যাকাডেমিক আলোচনা হতে পারে। অ্যাকাডেমিক বিচারে সেটা গুরুত্বপূর্ণও বটে। আমার আগ্রহটা ভিন্ন জায়গায়। আমি একটি আখ্যানে আসলে কী কী তথ্য দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে, এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের সাথে কীভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে, তাদের আশা-আকাঙ্খা-স্বপ্নগুলো কীভাবে পরস্পরের সাথে মিশছে, বিভিন্ন অঞ্চলের আখ্যানগুলোর মিল-অমিল এসব ব্যাপারে জানতে-বুঝতে আগ্রহী। আমার আগ্রহ ও প্রচেষ্টা আপনার আকাঙ্খার সাথে মেলেনি দেখে দুঃখিত। আমি অ্যাকাডেমিশিয়ান নই, সাহিত্যের লোক তো নই-ই। আমার কাছ থেকে সাহিত্য আশা করবেন না। ক্ষমা করবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বিশ্লেষণে মুগ্ধ
মধুমালা সিনড্রোমের বিশেষত্বই হচ্ছে তা কাণ্ডজ্ঞান লোপ করে দেয়! আমাদের এলাকায় একটা কথা প্রচলিত আছে, সেটার ভাষা সুবিধার না বলে দিতে পারছিনা এখানে। কিন্তু তার মানে অনেকটা এরকম, "রক্তে যখন মাত্রাতিরিক্ত টেস্টেটেরোন/প্রজেস্টেরোন দৌড়ায় তখন বিচার-বিবেচনা/রুচি/প্রজ্ঞা/অভিজ্ঞতা শিকেয় তুলে রাখার মতো যথেষ্ট যুক্তিও গজিয়ে যায় মাথায়। যৌনতা ছাড়া অন্য কিছুই আর তার চোখে পড়েনা!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ রতন। মদনকুমারের প্রয়াসের পুরোটাই প্রেমতাড়িত বা কামতাড়িত না বোধহয়। এটা নিয়ে আরেকটু ভাবার চেষ্টা করবো। সময়কাল আর স্থানকে আরো নির্দিষ্ট করতে পারলে সুবিধা হতো। আপাতত যা তথ্য/অনুমান পেয়েছি সেগুলো দিয়েই চেষ্টা চালাবো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমৎকার বিশ্লেষণ।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন