ইউপিন - একটি প্রস্তাব

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৯/০৬/২০১১ - ১২:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশে প্রতি বছর জুন মাসের শুরুর দিকে জাতীয় বাজেট ঘোষিত হয়। বাজেট বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী আগামী এক বছরে দেশ কোন খাত থেকে কতো টাকায় আয় করবে আর সেই আয় কোথায় কী হিসাবে ব্যয় করা হবে সেটা আমাদেরকে জানান। সাথে সাথে গত বছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কী ছিল এবং সেটা কতটুকু আদায় হয়েছে সে’কথাও আমাদেরকে জানান।

বাজেট আসন্ন হলে সাধারণ জনমনে যে চিন্তাটা কাজ করে সেগুলো হচ্ছে, এবারের বাজেটে -

১. কোন কোন জিনিসের উপর কর বাড়লো - অর্থাৎ কোন কোন জিনিসের দাম বাড়বে।
১.১ কোন কোন জিনিসের উপর আগে কর ছিলোনা কিন্তু এখন কর বসবে - অর্থাৎ কোন কোন জিনিসের দাম প্রথম বারের মতো বাড়বে।

২. কোন কোন জিনিসের উপর কর কমলো - অর্থাৎ কোন কোন জিনিসের দাম কমবে।
২.১ কোন কোন জিনিসের উপর আগে কর ছিল কিন্তু এখন কর প্রত্যাহার করা হবে - অর্থাৎ কোন কোন জিনিসের দাম প্রথম বারের মতো কমবে।

৩. মূল্য সংযোজন কর (মূসক)-এর মাত্রা কোন পর্যায়ে কী হলো - অর্থাৎ কোন কোন পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়বে বা কমবে।

৪. আয়করের সীমা কী হবে - অর্থাৎ আমার আয়কর কী বাড়লো না কমলো; অথবা আমি তো আগে আয়কর দিতাম না এখন কি আমাকে আয়কর দিতে হবে?

রাষ্ট্র নিজে চাকুরী বা ব্যবসা করে না। রাষ্ট্রকে তাই তার নাগরিকদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর বিভিন্ন প্রকার শুল্ক ও কর আদায় করে তার সাংবাৎসরিক ব্যয় ও উন্নয়ন কার্যক্রম চালাতে হয়। এর বাইরে বিদেশ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা, বিদেশ থেকে ঋণ, দেশিয় ব্যাংক থেকে ঋণ - এগুলোও সরকারের আয়ের উৎস। সরকার সাধারণত নিম্নলিখিত খাতগুলো থেকে রাজস্ব আয় করে থাকেঃ

(ক) আমদানী পর্যায়ে রাজস্বঃ আমদানীকৃত পণ্যের মূল্যের উপর আমদানী শুল্ক, সম্পূরক কর, রেগুলেটরী কর, আমদানী পর্যায়ে মূসক, আগাম আয়কর ইত্যাদি।

(খ) রফতানী পর্যায়ে রাজস্বঃ রফতানীকৃত পণ্যের মূল্যের উপর ধার্যকৃত শুল্ক ও করসমূহ।

(গ) স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক): স্থানীয় ভাবে উৎপাদন, সেবা প্রদান বা সংযোজিত পণ্যের মূল্যের উপর মূল্য সংযোজন কর।

(ঘ) আয়করঃ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়ের উপর প্রদত্ত কর।

(ঙ) অন্যান্য করঃ ভূমিকর, পৌরকর প্রভৃতি।

উন্নয়নের স্বার্থে ও প্রয়োজনীয় ব্যয় যথাযথভাবে নির্বাহ করার জন্য রাষ্ট্র নূন্যপক্ষে বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা করে। অধিকতর উন্নয়ন চাইলে বা অধিকতর ব্যয় করতে চাইলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করা হয় অর্থাৎ হয় করের হার বৃদ্ধি অথবা করের সীমা বাড়ানো হয়, অথবা উভয়টিই করা হয়। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক, জনকল্যানমূলক রাষ্ট্রে চাইলেই করের হার বা সীমা বাড়ানো যায় না। করের হার বা করের সীমা বাড়ালে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে জনদুর্ভোগ বাড়ে। এতে জনগণ সরকারের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়। ফলে, সামনে নির্বাচন থাকলে সরকার করের হার কমাতে বা করের সীমা ছোট করতে চেষ্টা করে। কিন্তু এতে রাষ্ট্রের আয় কমে যায়, ফলে উন্নয়নের গতি হ্রাস পায় ও ব্যয় সংকোচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। আবার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় দেখিয়ে উদ্বৃত্ত বাজেট তৈরি করলে বড় ধরনের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া যায় হয়তো, কিন্তু প্রকৃত রাজস্ব আয় সেই অনুযায়ী না হলে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো মার খায়। অথবা জনগণের উপর করের বোঝা বেড়ে গিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে।

দেখা যাচ্ছে, করের সীমা বাড়ানো বা কমানো, অথবা করের হার কমানো বা বাড়ানো উভয় ক্ষেত্রেই সুবিধা-অসুবিধা আছে। করের হার বা করের সীমা হ্রাস-বৃদ্ধি একটি বাস্তবতা। এটিকে মেনে নিলেও আরেকটি উপায় আছে যাতে বাংলাদেশে করের হার বা করের সীমা না কমিয়ে বা না বাড়িয়েও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে - সেটি হচ্ছে কর আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। কোন কোন বছরে সরকার ইচ্ছেকৃত ভাবে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কম দেখিয়ে আদায় অধিক দেখাতে পারে। অর্থাৎ কর আদায়ের দক্ষতা বেড়েছে এমনটা দেখাতে পারে। এর পিছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে, সরকারী সংস্থাগুলোর উচ্চপদস্থদের উচ্চাকাঙ্খা থাকে। এধরনের অসদুদ্দেশ্য ছাড়া বিদ্যমান ব্যবস্থাতে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এই দক্ষতা অর্জন সম্ভব যেটা এখানে আলোচনা করা হবে।

বাংলাদেশের গত দশ বছরের বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার সাথে প্রকৃত রাজস্ব আয়ের তুলনাটা এখানে দেখতে পাবেন। এতে দেখা যাচ্ছে, ২০০৭-২০০৮ অর্থবছর ছাড়া আর সব বছরে প্রকৃত রাজস্ব আয় ঘোষিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে। তাছাড়া যে বছরে প্রকৃত রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে কার্যত সে বছরে ঘোষিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আন্ডারস্টেটেড ছিল। সেটি বোঝা যায় ঐ বছরের রাজস্ব আয়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে। বাংলাদেশে রাজস্ব আয় যতোটা হয় প্রকৃত পক্ষে আয় তার চেয়ে বহুগুণ হওয়া উচিত। কর আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধির অনেক উপায় থাকলেও এই আলোচনায় একটি মাত্র উপায়ের কথা আলোচনা করা হবে। এই উপায়টি অবলম্বন করলে শুধুমাত্র কর আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধিই নয়, আরো অনেকগুলো ক্ষেত্রেও ব্যাপক সুফল পাওয়া যাবে। এই পদ্ধতিটিকে আমরা বলতে পারি Unique Personal Identification Number বা UPIN (ইউপিন)।

বর্তমানে বাংলাদেশে একজন মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ডেবিট কার্ড নম্বর, টিন, বিন, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ভোটার সনাক্তকরণ নম্বর, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, বিভিন্ন অপারেটরের কাছ থেকে নেয়া মোবাইল নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর এক নয় - প্রত্যেকটিই স্বতন্ত্র। এই বিভিন্নতার ফলে এই সব ক্ষেত্রগুলোর প্রত্যেকটিতে নানা ধরনের ম্যানিপুলেশন সম্ভব হচ্ছে। যেমন, এক ব্যক্তির পক্ষে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা টিন থাকতে পারে। অথচ এই নম্বরগুলো অভিন্ন হলে একজন মানুষকে যেমন এই ক্ষেত্রগুলোর প্রত্যেকটার জন্য আলাদা আলাদা নম্বর মনে রাখার ও বার বার নিবন্ধনের দরকার হয় না, তেমন এটি নিয়ে ম্যানিপুলেশনের সুযোগও কমে যায়। এতে একটি নতুন জায়গায় (যেমন কোন একটা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে) নিবন্ধন করতে গেলে শুধু নিবন্ধন ফি দেয়াটাই যথেষ্ট হবে, অন্য কোন তথ্য জানানোর বা ফর্ম পূরণের দরকার হবে না। এমনকি এই নম্বরটি দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে একটি করে ইমেইল অ্যাকাউন্টও দেয়া সম্ভব। এই ব্যবস্থায় ভ্যারিফিকেশন-অথেনটিকেশন ইত্যাদির জন্য স্বাক্ষরের পরিবর্তে আঙুলের ছাপ নিতে পারলে অনেক জটিলতা ও দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে।

ইউপিন পদ্ধতি চালু করার জন্য একটা ন্যাশনাল ডাটাবেস থাকতে হবে। সেখানে সবার ডিএনএ সিকোয়েন্সিং ম্যাপ থাকতে হবে - যার ভিত্তিতে ইউপিন নির্ধারণ করা হবে। সবাইকে ইউপিন সম্বলিত জাতীয় পরিচয়পত্র (National Identity Card) দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সব জায়গায় সেই কার্ড পাঞ্চ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে, অপটিক্যাল রিডার দিয়ে আঙুলের ছাপ সনাক্তকরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ন্যাশনাল ডাটাবেসে সবার ডশিয়ে’ থাকতে হবে। যা বিভিন্ন স্থানে কার্ড পাঞ্চের মাধ্যমে নিয়মিত আপটুডেট থাকবে। এমনকি এই ব্যবস্থায় নগদ টাকা লেন-দেনের হারও অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। ভ্রমণে, বেতন গ্রহন ও উত্তোলন, পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদিকেও এই ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে। এতে জীবনযাত্রার অনেক জটিলতা, বিপদের ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা হ্রাস পাবে।

সরকারী সংস্থাগুলোর কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তির অনুমতি সাপেক্ষে আবার কোথাও কোথাও (যেখানে রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের নিরাপত্তা জড়িত) ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার ডশিয়ে’ অ্যাকসেসের ক্ষমতা থাকতে হবে। বেসরকারী সংস্থারা সরকারী সংস্থার মাধ্যমে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির ডশিয়ে’র প্রয়োজনীয় অংশটুকু অ্যাকসেস করতে পারবে। উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যাক।

ধরা যাক, আমি একটি কোম্পানীর কোন পদে চাকুরীর জন্য মনোনীত হয়েছি। সেক্ষেত্রে ঐ কোম্পানী আমার অনুমতি সাপেক্ষে ন্যাশনাল ডাটাবেস থেকে আমার ব্যক্তিগত তথ্য, অ্যাকাডেমিক রেকর্ড, ক্রাইম রেকর্ড ও কাজের অভিজ্ঞতা যাচাই করে নিতে পারে। এখন আমি যদি কোনো দুষ্কর্ম করে ঐ কোম্পানী থেকে পালিয়ে যাই তাহলে তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে পুলিশ আমার অনুমতি ছাড়াই আমি এই পর্যন্ত কোথায় কোথায় গেছি, কী কী করেছি তার বিস্তারিত জেনে নিতে পারে। তাতে পুলিশের পক্ষে আমাকে খুঁজে বের করা সহজ হবে।

রাজস্ব আদায়ে দক্ষতার প্রসঙ্গে ফেরা যাক। দেখা যাক ইউপিন এই ক্ষেত্রে কীভাবে দক্ষতা বাড়াতে পারে।

(ক) আমদানী পর্যায়ে রাজস্বঃ আমদানীকৃত পণ্য চালান খালাস করার সময় আমদানীকারক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের (যেহেতু আইনের চোখে প্রতিষ্ঠানকে স্বতন্ত্র সত্ত্বা হিসাবে ধরা হয়) ইউপিন কার্ড পাঞ্চ করলে আমদানীকারকের হিসাবে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব লেখা হয়ে যাবে যা তৎক্ষনাৎ বা নির্দিষ্ট সময়ান্তে পরিশোধ করা যাবে। তাছাড়া আমদানীকারকের সম্ভাব্য আয়ের হিসাবও এখান থেকে করা যাবে।

(খ) রফতানী পর্যায়ে রাজস্বঃ পণ্য রফতানী করার ইউপিন কার্ড পাঞ্চ করলে রফতানীকারকের হিসাবে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব লেখা হয়ে যাবে যা তৎক্ষনাৎ বা নির্দিষ্ট সময়ান্তে পরিশোধ করা যাবে। তাছাড়া এখান থেকে আমদানীকারকের সম্ভাব্য আয়ের হিসাবও করা যাবে।

(গ) স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক): স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত বা সংযোজিত পণ্য বাজারজাত বা রফতানী করার কালে ইউপিন কার্ড পাঞ্চ করলে উৎপাদনকারীর (ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান) হিসাবে প্রাপ্য ভ্যাট লেখা হয়ে যাবে। ভ্যাট অফিস ক্লিয়ারেন্স দিলেই কেবল পণ্য বাজারজাত বা রফতানী করা যাবে। সেবা প্রদানকারী বা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ভোক্তা তার কর্তৃক গৃহীত সেবার বা পণ্যের মূল্য পরিশোধকালে তার ইউপিন কার্ড পাঞ্চ করলে মূল্য পরিশোধের সাথে সাথে মূসকও পরিশোধ হয়ে যাবে। ভোক্তা নগদে মূল্য পরিশোধ করলেও স্বীয় ব্যয়ের হিসাব সমন্বয়ের জন্য তাকে গৃহীত পণ্য/সেবার[justify]

ইনভয়েস সংরক্ষণ করতে হবে। ফলে ঐসব ইনভয়েসের বিপরীতে বছরান্তে তাকে মূসক পরিশোধ করতে হবে। এই ব্যবস্থাটি নিশ্ছিদ্র নয়, তবে বিদ্যমান ব্যবস্থার চেয়ে দক্ষ হবে। এখান থেকে উৎপাদক বা বিপণনকারীর সম্ভাব্য আয়ও হিসাব করা যাবে।[/justify]

(ঘ) আয়করঃ চাকুরীরত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার অ্যাকাউন্টে বেতন জমা হওয়ামাত্র উৎসে কর কর্তিত হবে। বেতন নগদে গৃহীত হলে তার ব্যয়ের সাথে সমন্বয়ের জন্য তার আয়কর হিসাবে বেতনের পরিমাণ উল্লেখ থাকতে হবে। ফলে বছরান্তে হলেও তার ব্যয়ের সাথে সমন্বয় করে তাকে আয়কর পরিশোধ করতে হবে। ব্যবসায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তার আমদানী বা রফতানী বা স্থানীয় পর্যায়ের শুল্ক, কর ও মূসকের সাথে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয় এবং ব্যয়ের হিসাব সমন্বয় করে বছরান্তে আয়কর পরিশোধ করতে হবে। এই ব্যবস্থাটি নিশ্ছিদ্র নয়, তবে বিদ্যমান ব্যবস্থার চেয়ে দক্ষ হবে।

(ঙ) অন্যান্য করঃ ইউপিন কার্ড ব্যতীত ভূমিকর, পৌরকর জাতীয় বিবিধ কর গ্রহন না করলে এই কর সংশ্লিষ্ট সম্পদ ও আয়ের হিসাব আপনাআপনি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে যুক্ত হয়ে যাবে।

এভাবে করের হার ও সীমা না বাড়িয়ে কর আদায়ের দক্ষতা বাড়িয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব।

ইউপিন কোনো নতুন ধারণা নয়। অনেক দেশেই পিন বা সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর প্রচলিত আছে। এই ধারণাগুলোকে আরেকটু বৃহৎ পরিসরে জনপ্রতি একটি মাত্র নম্বরে সমন্বয় করলে বিষয়টি আরো সরল হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “রক্তকরবী” নাটকে আমরা দেখি সোনার খনির শ্রমিকদের নামের বদলে সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন, ফাগুলাল হচ্ছে ৪৭ফ আর বিশু ৬৯ঙ। ইউপিন মানুষকে রক্তকরবীর মতো “দশ-পঁচিশের ছক্‌” বানায় না, বরং রাষ্ট্রের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে একইপ্রকার পরিচয় প্রদান করে। শুধু তাই না এই ব্যবস্থা রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সরকারের নজরদারীতে আনে বলে অপরাধপ্রবনতা ও দুর্নীতি হ্রাস করবে। বস্তুতঃ দুর্নীতি হ্রাস পেলে দেশের রাজস্ব আয় এমনিতেই বৃদ্ধি পাবে।


মন্তব্য

নূর এর ছবি

আমার মনের কথাটি বলে দিয়েছেন।
একই ভাবে ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট ডেটাবেজ ও থাকা দরকার। সব চাকুরী প্রার্থীর তথ্য থাকবে সেখানে। যাতে কোনো চাকুরীতে সহজে আবেদন করা যাবে। আর থাকবে ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা। এই জাতীয় ব্যবস্থা ছাড়া কোনো দেশই উন্নতি করতে পারবে বলে মনে হয় না। আপনার কথাটাই অন্যভাবে বললাম আর কি। তবে আমাদের ক্ষেত্রে বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে হয় রাষ্ট্র চালায় দুবৃত্তরা অথবা রাষ্ট্র দুবৃত্তদের বেশি ভালোবাসে। সেই জন্য এইসব সিষ্টেম আসবে অনেক ধীরে। এবং সেটা আনতে বিপুল টাকা অপচয় করা হবে ওই দুবৃত্তদের ক্ষুধা মেটাতে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ নূর। আমি যে ডাটাবেসের কথা বলেছি সেটা হলে আলাদা করে আর ন্যাশনাল এপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের আর দরকার পড়েনা। চাকুরী প্রার্থীরা তাদের চাকুরী ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত অংশটুকু পাবলিক করে দিলেই কাজটা হয়ে যাবে। আমার প্রস্তাবের ইমপ্লিমেন্টেশন নিয়ে আলাদা করে মন্তব্য করছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

guest_writer এর ছবি

প্রস্তাবটা ভালো ও সময়োপযোগী ।কিন্তু যে দেশে কোন রাজনৈতিক সরকারের আমলে ছবিসহ ভোটার তালিকার নামে কোটি টাকা নষ্ট করা হয় (আমার বিশ্বাস করি এখন যে জাতীয় পরিচয়পত্র আমরা পেয়েছি তার পুরো কৃতিত্বই তত্তাবধায়ক সরকারের, কোন রাজনৈতিক সরকারের আমলে এতোটা যত্ন নিয়ে মোটামুটি নির্ভুলভাবেও এটা করা সম্ভব হতোনা) সে দেশে আমরাকি আদৌ এমন কিছু আশা করতে পারি। যেখানে আমাদের মন্ত্রী আমলা থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত মোটামুটি সবাই কর ফাঁকির সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ সেখানে বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা পড়াবে কে?

নির্ঝরা শ্রাবণ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ নির্ঝরা শ্রাবণ। আমার প্রস্তাবের ইমপ্লিমেন্টেশন নিয়ে আলাদা করে মন্তব্য করছি।

জলপাই সরকারের দেয়া জাতীয় পরিচয়পত্রটি মোটামুটি নির্ভুল বলা একটা তামাশা মাত্র। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বা আপনার পরিচিত যে কারো জাতীয় পরিচয়পত্রটি হাতে নিলে এর সত্যতা পাবেন। নাম, বাবা-মায়ের নাম, ঠিকানা কী ভুল নেই সেখানে! সেখানে এক একজনের যে ছবি দেয়া আছে সেটা দিয়ে মানুষটিকে সনাক্ত করা অসম্ভব। আমার পরিচয়পত্রে আমার ছবি দেখে খোদ আমার মা ও আমার স্ত্রীও চিনতে পারেননি। এই পরিচয়পত্রটি নিয়ে যথেষ্ট নাটক করা হলেও এটি কিন্তু ২০০৮ সালে ভোট দিতে এটি কোনো কাজে লাগেনি। উন্মূক্ত টেন্ডারবিহীন এই প্রকল্পটিতে জলপাই সরকার কতো টাকা খরচ করেছে সেটা কিন্তু আমাদের জানানো হয়নি। নতুন ভোটার তালিকা তৈরিতে তারা কতো টাকা খরচ করেছে সেটাও তারা প্রকাশ করেনি। সেই ভোটার তালিকাটা নির্ভুল এমনটা বলাও প্রশ্নসাপেক্ষ। রাজনৈতিক সরকারকে দোষ দেয়া খুব সোজা। কিন্তু তাদেরকে পাঁচ বছর পর পর জনগণের কৃপা ভিক্ষা করতে হয়। তাই নূন্যতম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা তাদের থাকে। জলপাইদের কারো কাছে কৈফিয়ত দিতে হয় না, জনগণের কৃপা ভিক্ষা করতে হয় না। তাই নূন্যতম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা তাদের নেই। জলপাইরা রাজনৈতিক সরকারের চেয়ে উৎকৃষ্টতর হলে পাকিস্তান দেশটা সোনার দেশ হতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফরিদ এর ছবি

গুড ড্রীমস, কয়েকটি কারণে
১। দেশে টপ ৫% ধনীরা কখনোই চাইবেনা তারা যা ট্যাক্স দেয় তার চেয়ে বেশী দিক। দেশের মোটামুটি সব বর্তমান, প্রাক্তন ও আপকামিং সাংদ এই দলে পড়েন।
২। এই ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কম্পোনেন্ট স্বয়ংক্রিয় হতে হবে। লোডশেডিং এর ডিজিটাল সিস্টেমে মুশকিল।
৩। সরকারি অনেক প্রকল্পের মতই এর ব্যাবহার ওয়েলফেয়ার স্টেট এর চেয়ে বিগ ব্রাদার স্টেট সুলভ হবার আশঙ্কাই বেশী
৪। প্রচন্ড ব্যায়বহুল হবে সকল স্তরে ইমপ্লিমেন্ট করতে।

এই ধরণের প্রকল্প মাঝারি বা নিম্ন আয়ের ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কার্যকর হয়েছে এরকম এক-দুটি উদাহরণ দিলে যুক্তিযুক্ত হত।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ ফরিদ। স্বপ্ন আর পরিকল্পনাতে মৌলিক পার্থক্য আছে সেটা আপনার জানা থাকার কথা। স্বপ্নে কোন প্রস্তাব থাকে না, পরিকল্পনাতে থাকে। ইউপিন - একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব। যে কোন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রচুর বাধা থাকে। সে সমস্ত বাধা থাকলেই যে তা প্ল্যান থেকে ড্রিম হয়ে যাবে তা কিন্তু না। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বর্তমানের অনেক বড় বড় বাধাকে অচিরেই দূর করে ফেলতে পারে। মোবাইল ফোনের আবির্ভাবের পর এর সামগ্রিক ইম্প্যাক্ট বিবেচনা করলে আমার কথার সত্যতা বুঝতে পারবেন।

এই ধরণের প্রকল্প মাঝারি বা নিম্ন আয়ের ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কার্যকর হয়েছে এরকম এক-দুটি উদাহরণ দিলে যুক্তিযুক্ত হত।

তা কেন? কেন আমরা কোন ক্ষেত্রে পাইওনিয়র হতে পারবো না? অন্য কোন দেশে কোন প্রকল্প কার্যকর হলেই সেটা বাংলাদেশেও কার্যকর হবে এমনটা সব সময় সত্য নাও হতে পারে, এবং ভাইস-ভার্সা।

আমার প্রস্তাবের ইমপ্লিমেন্টেশন নিয়ে আলাদা করে মন্তব্য করছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বাজেটের মাস শুরু হবার পর থেকে এরকম ধাঁচের একটা লেখা মাথায় ঘুরছিল। গুছিয়ে আনতে পারছিলাম না। আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটা গুছিয়ে নামানোর জন্য। দেঁতো হাসি

ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া মানুষের স্বভাবধর্ম। বাংলাদেশের জন্য সেটা আরেকটু বেশী। এদেশে আয়ের তুলনায় ধনীরা কম ট্যাক্স দেয়। গরীব মানুষ বেশী ট্যাক্স দেয়। কারণ গরীব মানুষ অপ্রত্যক্ষ করের আওতায় থাকে, যা ফাঁকি দেয়া অসম্ভব। ধনীরা প্রত্যক্ষ কর বেশী দেয়ার কথা থাকলেও তারা যথাসাধ্য আয়কর ফাকি দেয় এবং এটা ফাঁকি দেয়া সহজ। কারণ এদেশের মূল সমস্যা -বেড়ায় ক্ষেত খায়।

ইউপিন ধারণাটির সাথে আমি একমত। কিন্তু ওই রকম সিস্টেম বাংলাদেশে কখনোই দাড়াতে পারবে না। যদি সত্যিকারের সংসদীয় গনতন্ত্র থাকতো, যদি রাজনীতিবিদেরা ব্যবসায় অথবা ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে না থাকতো, তাহলে এরকম যে কোন সুস্থ পদ্ধতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যেত। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বড় কর ফাকিবাজ, আবার তারাই নির্বাচিত হয়েছে সংসদে। তারাই সরকার নিয়ন্ত্রন করে। এরকম ইউপিন জাতীয় কিছু করা হলে সব রুই কাতলা জালে আটকা পড়বে। সুতরাং এটা কেউ হতে দেবে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও পারবেন না।

বিগত জোট সরকারের শেষ বাজেটে অর্থমন্ত্রী কালো টাকার বিরুদ্ধে হুংকার দিয়ে দুদিন বাদে বাজেটে কালো টাকা সাদার করার ঘোষনা দেন। সরকার থেকে নেমে যাবার পর অর্থমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজেদের কালোটাকা সাদা করেন। সবারই নিজ নিজ দুর্বলতা আছে আয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে।

তবু আমি ধারণাটির পক্ষে বলবো। কিন্তু এই গ্রহে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের মতো সেরকম মহাশক্তিমান কোন বাঙালী জন্মগ্রহহন করেনি এখনো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিষয়টা নিয়ে আপনার সাথে আমার এক দফা কথা তো "পকেট কাটার অর্থনীতি" সিরিজে হয়েছে। তখনই বুঝেছি আপনার মাথায়ও সমতুল পরিকল্পনা আছে।

ট্যাক্স প্রদান করলে আল্টিমেটলি জনগণ কী সুবিধা পায় বা তার কী উপকার হয় সরকার তা কখনোই জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেনি। সুতরাং ট্যাক্স প্রদানকে সাধারণ মানুষ (ধনী-গরীব নির্বিশেষে) যদি তার পকেট কাটা মনে করে তাহলে তাকে কতটুকু দোষ দেয়া যায়?

আমার প্রস্তাবের ইমপ্লিমেন্টেশন নিয়ে আলাদা করে মন্তব্য করছি। আমার পরিকল্পনাতে সহমত জানানোর জন্য ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফরিদ এর ছবি

এই লিঙ্কটি দেখুন
http://goo.gl/fEjKO

যদিও নিজের স্বার্থেই বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লিঙ্কটির জন্য ধন্যবাদ ফরিদ। আমার ভালো লেগেছে যে সাব্বির এমন একটি প্রস্তাব এনেছে। ওর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হলে এটি নিয়ে কথা বলবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

দরকারি পোস্ট সন্দেহ নেই। সামাজিক নিরাপত্তা ও চিকিতসার ক্ষেত্রে একটি দেশের কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিন্তু এক ধাক্কায় শারিরীক তথ্যভিত্তিক ইউপিন ধারনার সবচাইতে বড় পিছুটান হবে সরকার/সুশীল সমাজ, এর খরচ ও দেশের আইন। পরিচয়ের গোপনীয়তার ঘোলাপানিতে যারা মাছশিকার করে, তারা এর বিরোধীতা করবে, এটা আগেই বলা হয়েছে। এই দলে সরকারি/সুশীলদের সনং্খ্য়া বেশী হবে। সামরিক/পুলিশ বাহিনীর কোন অফিসারকে আপনি এই দলে নাম লেখাতে পারবেন না, অনেক কারনে, কিন্তু আমাদের দেশে এদের পরিচয়টা জানাই সবচাইতে বেশী প্রয়োজন। এরাই দেশের আইন ব্যাবহার করে এই ধরনের জাতীয় প্রকল্প ঠেকিয়ে দেবে।

টাকার কথায় আসি। পশ্চিমে আর গেলাম না। প্রতিবেশী ভারত 'আধার' বা ইউ আই ডি প্রকল্পের প্রাক্কালিত খরচা ধরা হচ্ছে, পনের হাজার কোটি রুপি। যদি বাংলাদেশ একই ধরনের খরচে এই কাজ করতে পারে (রুপি=টাকা ধরলাম), তাহলে এখানে খরচ হতে পারে প্রায় আড়আই হাজার কোটি লাগবে, যেটা দিয়ে আরেকটি পদ্মা সেতু, দশটা গিগাওয়াট আকারের পাওয়ার প্লান্ট হতে পারে।

মেধা ও যোগ্য নেতৃত্বএর অভাবেও আমাদের দেশে এধরনের একটি প্রকল্পএর হাতে বদনা ধরিয়ে দিতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ, খাম্বা, সঔরশক্তির মত এটাকেও দুইয়ে নেবে আমাদের এখনকার নেতারা। ভারতের উদাহরন আবার দেই। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর আহবানে ইন্ফোসিসের নীলেকানি প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে। একটা বিষয় নিশ্চিত, পুকুরচুরি করলেও নীলেকানি অন্তত কলা-মূলোর লোভে দুই নম্বরি করবেনা। ভাবছি, যদি দেশে এরকম একটা প্রকল্প সামনে এসেই যায়, তার নেতৃত্বএ কাদের নাম শোনার সম্ভাবনা আছে?

রাজস্ব আদায় দক্ষতা নিয়ে আপনি যে সমস্যআগুলোর কথা বললেন, এর অনেকগুলোই কিন্তু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন করে রহিত করা সম্ভব। আমাদের বাজেটে আমরা জানতে পারিনা, কোন এলাকা বা খাতের রাজস্ব লক্ষমাত্রা কত, আর সেই খাত বা এলাকা তাদের এই রাজস্ব দিয়ে প্রতিদানে কি পেল। আবার আমাদের কেন্দ্রীয় রাজস্ব ব্যয় বেশী, এর একটি অনেক বড় কারন, আমাদের রজস্ব ব্যয় মোটেই নাগরিক কেন্দ্রিক নয়, এটা রাজনীতি কেন্দ্রিক। দেশের অনেক টাকাই যায় পরের নির্বাচনের ভোট কিনতে, গত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি মেটাতে নয়।

সুতরাং যদি আগে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ও রাজস্ব আদায়কে অন্যভাবে সাজানো যায়, এবং নাগরিকদের আন্চলিক ভাবেই রাজস্ব ও সুবিধার ভারসাম্য় দেয়া যায়, তাহলে প্রথমে রাজস্ব আয় বাড়বে। একি সাথে আন্চলিক আকারের ইউপিন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ফলে যেসব বাধাগুলোর কথা আগে বলেছি, সেগুলো সহজে পেরুনো যাবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমার ভাবনা ও প্রতিক্রিয়ার জন্য আমার করা স্বতন্ত্র মন্তব্য দ্রষ্টব্য।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উল্লম্ফনজনিত ঘ্যাঁচাং।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

guest_writer এর ছবি

আপনার প্রস্তাবটি ভালো, এতে কোন সন্দেহ নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এই সিস্টেম আছে। কিন্তু দুর্নীতি কমানোর জন্য আপনার প্রস্তাবটি যৌক্তিক এবং প্রয়োজনীয় হলেও বাংলাদেশের জন্য এটা অনেক উচ্চ বিলাসী পরিকল্পনা। তারপর এইরকম ভিন্নধর্মী ভাবনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।

দীপাবলি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ দীপাবলি। বাংলাদেশের জন্য পরিকল্পনাটি দরকারী, খুব উচ্চাভিলাষী কিছু নয়। তবে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদের কাছ থেকে বাধা আসবে সেটা সত্য। তবে সেটা ভেবে হাত গুটিয়ে বসে থাকাটাও কাজের কথা না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সচল জাহিদ এর ছবি

প্রয়োজনীয় পোষ্ট। ব্যবহারিক দিক চিন্তা করে কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করতে চাই। এখানে কয়েকটি বিষয় জড়িতঃ এক, আইডেন্টিটি বা পরিচয়; দুই, ট্যাক্সেশন ; তিন, সেবা খাতের ( ব্যাঙ্কিং, ফোন, মোবাইল) একাউন্ট নাম্বার। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রের কিছু বিশেষত্ত আছে আছে কিছু গোপনীয়তা। যেমন, আইডেন্টিটি কার্ড ( পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা জাতীয় পরিচয় পত্র ) একজন মানুষের নাম, পরিচয়, জন্মতারিখ, বিশেষ পরিচয়সূচক চিহ্ন এগুলো সংরক্ষণ করে যা অন্যের জানা ব্যাক্তি গোপনীয়তার পরিপন্থী। ট্যাক্সেশন নাম্বার একজন মানুষের আয় ব্যায়ের তথ্য সংরক্ষণ করে এবং সেবাখাতের একাউন্টও অনেক গোপনীয় ব্যাক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে। এখন এই সব নাম্বারগুলিকে যদি একটি নাম্বার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয় তাতে সমস্যা হচ্ছেঃ

ক) সব তথ্য সবার কাছে ( মানে যারা এই নাম্বার ভেরিফিকেশনে কাজ করবে )উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। তার মানে আমি যদি ইউপিন নিয়ে একটি নতুন জিপি মোবাইল নাম্বার নিয়ে যায় সেই মোবাইল কোম্পানী আমার যাবতীয় তথ্য জেনে যাচ্ছের যার অনেক কিছুই তার জানার দরকার নেই। এটা ব্যক্তি গোপনীয়তার পরিপন্থী।

খ) শুধু তথ্য জানাটাই ভয়াবহ নয়, সব আইডেন্টিটি একটি নাম্বার দিয়ে প্রতিস্থাপন করলে যদি সেটা ফ্রডিং হয় সেক্ষেত্রে ভয়াবহতা অনে বাড়বে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নূর এর ছবি

জাহিদ ভাই,
সবাইকে সব তথ্যে প্রবেশাধিকার না দিলেই তো হলো। যেমন, ফোন কোম্পানীকে নাম ঠিকানা এইটুকু। আয়-ট্যাক্স এই সব তাদের জানার দরকার নাই। ক্ষুদ্র পরিসরে (আমার ইউনিতে) দেখেছি আমার সব তথ্যে সব অফিসের সমান এক্সেস নাই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

(ক) নাম্বার এক হলেই কিন্তু সব তথ্য উন্মূক্ত হয়ে পড়ছে না। সেটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সেটা কিন্তু বলেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তি তার নিজের সম্পর্কে যতটুকু তথ্য দিতে ইচ্ছুক ততটুকুই কিন্তু ব্যাংক বা মোবাইল কোম্পানী বা চাকুরীদাতা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জানতে পারছে।

(খ) ভেরিফিকেশন ও অথেনটিকেশনের ব্যবস্থাটি আঙুলের ছাপ মেলানোর গেটওয়ে পার হয়ে যেতে হবে। সুতরাং ফ্রড করাটা খুব সহজ কিছু হবে না। নিঃসন্দেহে আমার প্রস্তাবটি ফুলপ্রুফ নয়। এটি মডিফিকেশনের অনেক সুযোগ আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্বাধীন এর ছবি

চমৎকার লেখা। পোষ্টের সাথে সহমত। একটি ইউনিক নম্বরের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেইজের বিকল্প নেই। এই বিষয়টি নিয়ে আমারো লেখার ইচ্ছে ছিল। আপনার লেখা আসায় এ যাত্রা বেঁচে গেলাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি লিখেছি বলে এই বিষয়ে তুমি লিখতে পারবেনা এমন কোনো কথা নেই। সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ নিয়ে তোমার ভাবনা জানতে ইচ্ছুক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আয়নামতি1 এর ছবি

চলুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ আয়নামতি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দ্রোহী এর ছবি

আমাদের জীবদ্দশায় না হলেও আমাদের সন্তানেরা নিশ্চয়ই পাবে। দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হতাশ হন কেনো! প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অনেক বাধাকেই অপসারিত করতে পারে। আপনার সন্তান বড় হবার আগেই এমন কিছু নূন্যতম পর্যায়ে হলেও হতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সার্বিক বিবেচনায় কেন্দ্রিয় তথ্যভাণ্ডার বা সেন্ট্রাল ডাটাবেইসের গুরুত্বের কথা এই পোস্টের পাঠকমাত্র জানেন ও মানেন। সুতরাং সেটা নিয়ে আর কথা বলছিনা।

এটা সবাই জানেন এই ধরনের প্রকল্প কাদের কাদের স্বার্থের বিপক্ষে যাবে ও কারা এটি ঠেকিয়ে দেবার চেষ্টা করবে। তবে শুরুতেই সবগুলো বিষয়কে একসাথে না এনে শক্তিমানদের বিবেচনায় “less harmful” বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করা যেতে পারে। পরে সুযোগ-সুবিধা বুঝে আস্তে আস্তে বাকি বিষয়গুলোকে যোগ করা যেতে পারে।

দুর্দান্তের করা ভারতের উদাহরণটি প্রকল্পটির ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটি বাস্তব চিত্র। জনসংখ্যা হিসাবে ভারতের যা খরচ আমাদের খরচ হবে তার সাত ভাগের এক ভাগ। তাছাড়া ভারতের ব্যবহৃত পদ্ধতি ও প্রযুক্তির বদলে অন্য পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এটি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। এই ব্যাপারে একটা ভাবনা শেয়ার করছি। তথ্য রিসিভিং এন্ডে যারা থাকবেন তারা মোবাইল ফোনের মতো একটা ছোট মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন যেটা দিয়ে বিদ্যুৎ থাকা না থাকার ঝামেলা ছাড়াই কার্ড পাঞ্চ, আঙুলের ছাপ নেয়া ও সেন্ট্রাল ডাটাবেইসের সাথে যোগাযোগের কাজ করতে পারে। ডিভাইসটি বানানো খুব কঠিন কিছু হবার কথা না।

সেন্ট্রাল ডাটাবেইস তৈরি করা ও সংরক্ষণ করাটা বেশ কঠিন কাজ সেটা দুর্দান্ত এবং ফরিদ বলেছেন। আমিও স্বীকার করি কাজটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। চার-পাঁচ বছরের জন্য একটা প্রকল্প হাতে নিলে, একটা জেলার জন্য একটা করে দক্ষ টিমকে কাজে লাগালে ডাটা বেইসটা তৈরি করা যাবে। এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরেকটা “ডিজিটাল বাংলাদেশ” বা আরেকটা “খাম্বা লিঃ” যে দেখতে পাবো না তা নয়। অমনটা হতেই পারে। কিন্তু এসব ভেবে সরকারের সব উন্নয়ন পরিকল্পনাই কি আমরা স্থগিত করে দেবো? প্রথম প্রথম কিছু দুর্নীতি হবেই (আমরা আবার কোন বিষয়ে যেনো নিয়মিত ফার্স্ট-সেকেন্ড হই), তবে একসময় সেটা নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে।

আপডেটের কাজটা কার্ড পাঞ্চের সাথে সাথে পরিবর্তিত হবে। কেউ মারা গিয়ে থাকলে তার ডেথ সার্টিফিকেট তোলার সময় বা তার ওয়ারিশানরা তার সম্পত্তি ভাগ করার সময়ই তার অ্যাকাউন্টের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী ভাবে সরকারের থাতে চলে যাবে।

দুর্দান্তের করা বিকেন্দ্রীকরণের ধারণার সাথে আমি প্রায় সহমত। ষোল-সতের কোটি লোকের দেশ একটি কেন্দ্রীয় সরকার দিয়ে চালানোটাই উচিত না। এতে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে না। যে অঞ্চল জিডিপিতে বেশি অবদান রাখছে রাজনৈতিক কারণে তারা সেখানে কম উন্নয়ন পাবে এটা ন্যায়ানুগ হতে পারে না। এতে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ে। তাই শুধু রাজস্ব আদায় নয় সার্বিক বিবেচনায় বিকেন্দ্রীকরণের মতটিকেই আমি সমর্থন করি।

দুর্দান্তের করা আঞ্চলিক পর্যায়ে ইউপিন বাস্তবায়নের ধারণাটিকে সমর্থন করি। পাইলট প্রকল্প হিসাবে একটি জেলাতেও যদি এটি চালু করা যায় তবে সবাই এতে আগ্রহী হবে। এতে যে জনমত তৈরি হবে সেটির চাপ রাজনৈতিক সরকার বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন_কেউ এর ছবি

আপনার প্রস্তাবগুলো ভাল। তবে সমস্যা হল আই.টি রোলআউট করতে গেলেই কিছু লোকের রুটি রুজিতে আঘাত পড়ে। যারা সবসময় বাধা দেয়। যতদূর জানি ইলেকশন কমিশন তাদের ন্যাশনাল আই.ডি ডাটাবেসে অনেককে এক্সেস দিবে কিছুদিনের ভিতর। মোবাইল অপারেটররা অনেকদিন ধরেই এটা চাচ্ছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।