প্রতি বুধবারে কেশবপুরের হাটে
শ্রাবণ মাসের আটাশ তারিখ থেকে নয়ন মুন্সী প্রবল জ্বরে পড়ে। নয়নের জ্বর নিয়ে তার বাবা-মা বিশেষ কিছু ভাবেননি। তাদের ধারণা ছিলো, এটা সাধারণ জ্বর - তিন/চার দিনেই সেরে যাবে। নয়নকে নিয়ে যা কিছু দুশ্চিন্তা করার বরাবরের মতো সেটা তার দাদী করেন। প্রতিবেলা ভাত রান্না হলে তিনিই ছেলে-বউয়ের কাছ থেকে ভাতের মাড় এনে তাতে নুন-হলুদ-মরিচ মিশিয়ে নয়নকে খাওয়ান। নিমের পাতার রস গরম করে খাওয়ান। গায়ে কাঁথাটা টেনে দেন। জ্বর বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে মাথায় জলপট্টি দেন। ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লে পাতলা গামছা দিয়ে গা মুছিয়ে দেন। নয়নও জ্বরের ঘোরে যা কিছু আবদার সেটা দাদীর কাছেই করে। দাদী তাকে প্রতিশ্রুতি দেন - জ্বর সারলে আমড়া দিয়ে মৌরলা মাছের ঝোল আর কুঁচো চিংড়ি মাছ দিয়ে কলার মোচা রেঁধে খাওয়াবেন। ভাদ্র মাসের পাঁচ তারিখ থেকে নয়নের আর কোনো জ্বর থাকে না, শুধু শরীর দুর্বল বলে মাথাটা ঘোরে আরে নিঃশ্বাস নিতে একটু কষ্ট হয়।
দাদী তাঁর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আমড়া দিয়ে মৌরলা মাছের ঝোল আর কুঁচো চিংড়ি মাছ দিয়ে কলার মোচা ঠিকই রেঁধে আনেন। তবে অভাবের সংসারে এটুকু যোগাড় করতেই তাঁর কয়েকটা দিন লেগে যায়। এটা নিয়ে ছেলে-বউয়ের কথাও একটু শুনতে হয়েছে, কিন্তু এসব কিছু তিনি গায়ে মাখেননি। এর জন্য বউকে তিনি কোন দোষও দেন না। চারদিকে এতো অভাব থাকলে সেখানে কেউ এমন বায়না করলে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। মৌরলার ঝোল দিয়ে ভাত মেখে গ্রাস তুলতে নয়নের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেটা দেখে দাদীও তাঁর পরিশ্রম সার্থক হয়েছে মনে করে আনন্দিত হন। ভাত খেতে খেতে হঠাৎ নয়ন বলে উঠে,
- জ্বরটার লেইগা এই বুধবার কেশবপুরের হাটে যাইতে পারলাম না। আর মাস পয়লা যাইতে না পারায় ব্যাতনটাও পাইলাম না।
- কিয়ের হাটের কথা কস্? কিয়ের ব্যাতন?
- ক্যান কেশবপুরের হাট? তুমি জানো না আমি হাটের তশিলদারের মুন্সীর কাম করি?
- এইগুলি কী আজব কথা কস্! কেশবপুরের হাট তোর দাদার জন্মেরও বহুত বছর আগে বন্ধ হইয়া গেছে। আর তুই হেই দিনের পোলা, তুই ঐ হাট দেখবি ক্যামনে?
নয়ন বুঝতে পারে যুক্তি দিয়ে দাদীকে হাটের ব্যাপারটা বোঝানো সম্ভব নয়। তাই সে নিরবে ভাত খেতে থাকে। প্রসঙ্গটা ধামাচাপা দেবার জন্য কলার মোচার ঘন্টটার প্রশংসা করতে থাকে। দাদীও অসুস্থতার কথা ভেবে নয়নকে আর না ঘাঁটিয়ে তাকে আরেকটু ভাত নেবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন।
দাদী জানেন নয়নের মাথায় কিঞ্চিত গোলমাল আছে, তবে নয়নকে ঠিক পাগল বলা যায় না। স্থানীয় ভাষায় একে বলে “তারছিঁড়া”। লোকজন মাঝে মাঝে নয়নকে ক্ষ্যাপায় বা তাকে নিয়ে নিষ্ঠুর রসিকতা করার চেষ্টাও করে; তবে দাদী সামনে থাকলে সেটা করা সম্ভব হয় না। নয়ন নিজেও জানে তার এই স্বল্পমাত্রার অপ্রকৃতিস্থতার জন্য তার আর লেখাপড়া হবে না। স্থানীয় স্কুলটা একটু দূরে হওয়ায় এই গ্রামের ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার শুরুটা মসজিদের বারান্দার মক্তবে, হুজুরের কাছে হয়। হুজুর শুধু আলিফ-বা-তা-ছা বা কায়েদা-আমপাড়া ইত্যাদি পড়ান না; সাথে অ-আ-ক-খ বা ১-২-৩-৪ বা নিজের নাম-বাবার নাম- বাড়ির ঠিকানা এসবও শেখান। এই হুজুরের কাছেই নয়ন প্রথম জানতে পারে তার নামের বানানে মুন্শি লিখতে হবে দন্ত ন-য়ে দন্ত্য-স যুক্ত দীর্ঘ-ঈ কার দিয়ে। অথচ তাদের গ্রামেরই কবীর মুন্শী’র নামে মুন্শি লিখতে হবে দন্ত ন-য়ে হসন্ত তালব্য-শ দীর্ঘ-ঈ কার দিয়ে। বানানের এই পার্থক্যের কারণ কী জানতে চাইলে হুজুর এক আজব ইতিহাস জানান। তিনি জানান যে, কবীরদের পরিবার ইরান থেকে আগত মুন্শী পরিবার - আলেম পরিবার। তাই তার নামের মুন্শী পদবীটা ফারসী। অন্য দিকে নয়নদের পরিবার স্থানীয় এবং বেশ কয়েক পুরুষ আগে নাকি হিন্দু ও পেশায় মুন্সী (নকল লেখক) ছিলো। তাই তার নামের মুন্সী পদবীটা বাংলা ও এমন বানানের হবে।
হুজুরের ব্যাখ্যায় পূর্ব-পুরুষ হিন্দু হয়ে যাওয়ায় নয়ন কিছু মনে করে না, যদিও মক্তবের সাবেক সহপাঠীদের কেউ কেউ তাকে মাঝে-মধ্যে “আধা-মালাউন” বা আরো অশ্লীল কিছু বলে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে। নয়ন এসব গায়ে মাখে না। কিন্তু তার চিন্তায় পূর্ব-পুরুষের পেশার কথাটা স্থায়ী হয়ে যায়। নয়নের বাবা দুলাল সাহা’র ধানের চাতালে হিসাব রাখার কাজ করেন। ধানের মৌসুম শেষ হয়ে গেলে দুলাল সাহারই আড়তে পাট, ডাল, গম, চিনি বা লবনের হিসাব রাখেন। সেই অর্থে নয়নের বাবা তাঁর পূর্ব-পুরুষের পেশায়ই আছেন এটা ভাবতে নয়নের ভালো লাগে। আরো বড় হলে সে নিজেও অন্য কোথাও এমন লেখা-পড়ার কাজ করবে বলেই আশা রাখে। কিন্তু ক্লাস ফাইভ পাশ না করেও কোনো চাকুরী পাওয়া সম্ভব কিনা সেটা নয়ন জানে না। সে বিশ্বাস করে লেখা-পড়া সে ভালোই জানে, আর পড়তে তার ভালোই লাগে। কেবল পরীক্ষা দিতে বসলে প্রশ্নপত্রে “শব্দার্থ লিখ”, “বাক্য রচনা কর”, “শূণ্যস্থান পূরণ কর”, “সংক্ষেপে উত্তর দাও” এমন কিছু দেখলে তার আর মাথা ঠিক থাকেনা। এগুলো দিয়ে স্যারেরা যে কী বোঝাতে চান নয়ন সেটাই বুঝতে পারে না। তাই পরীক্ষার খাতায় সে আর কিছু লিখতে পারে না, পরীক্ষায় পাশ করাও আর হয়ে ওঠে না। কয়েক বছর এমন দড়ি টানাটানির পর বাবা যখন ঘোষণা দিলেন, “এই পাগল পোলারে দিয়া আর পড়া-শুনা কিছু অইবো না। এর কপালে বিক্কা কইরা খাওন ল্যাখা আছে”। তখন প্রকারান্তরে নয়ন খুশীই হয় যে তাকে আর কষ্ট করে স্কুলে যেতে হবে না বা ঐসব মাথায় তালগোল পাকানো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না।
পরের মঙ্গলবার আসতে দেখা গেলো নয়ন কোত্থেকে গাছের শুকনো ডাল এনে ছুরি দিয়ে কুঁদে মশাল বানাচ্ছে। দাদী দেখে জিজ্ঞেস করেন,
- কী বানাস্?
- মোশাল।
- মোশাল দিয়া কী করবি?
- বা-রে কাইল কেশবপুরের হাটে যাইতে হইবো না?
- কী কইলি! আবার হেই কেশবপুরের হাটের কথা কস্! তরে না কইসি ঐ হাট আর নাইক্কা।
নয়ন দাদীর প্রশ্নের উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করে না। সে আপনমনে মশালটা বানাতে থাকে। জীবনে কখনো কাঠের মশাল না দেখা নয়ন অমন নিখুঁত করে মশাল কীভাবে বানাচ্ছে সেটা ভেবে একটু অবাক হলেও দাদী আর কথা না বাড়িয়ে নিজের কাজে চলে যান।
নয়নদের বাড়িতে দুটি ঘর। বড় ঘরটিতে নয়নের বাবা-মা আর ছোট বোনটা থাকে। ধান-চাল-আলু-পেঁয়াজ বা বাড়ির অন্য সব সামগ্রী - যেমন একমাত্র খাটটা ঐ ঘরেই থাকে। অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরটা রান্নাঘর লাগোয়া। সেখানে মেঝেতে মাদুর পেতে নয়ন আর তার দাদী ঘুমায়। এই ঘরে আসবাবপত্র নেই বললেই চলে, জিনিসপত্রও বিশেষ কিছু নেই। পরদিন রাত দশটার দিকে নয়ন দাদীর একটা সাদা শাড়ি ধুতির মতো করে পরে, গায়ে খদ্দরের একটা চাদর প্যাঁচিয়ে সেজেগুজে মশালটা জ্বালিয়ে ঘর থেকে বের হবার উদ্যোগ করতেই দাদী পথ আটকান,
- এগুলি কী পিন্ছস? আর এতো রাইতে কই যাস?
- ক্যান তোমারে কইসি না! কেশবপুরের হাটে যাই। ঐ হাটে যাইতে গেলে ধুতি-চাদর পিন্দাইতো যাইতে হইবো। আমার তো লুঙি ছাড়া কোনো ধুতি নাই, হের লাইগা তোমার শাড়ি ধুতির মতন পিন্ছি।
- আবারও কেশবপুরের হাটের কতা কস্! তরে না কইসি ঐ হাট নাইক্কা।
- দাদী তুমি কতা বাড়াইও না তো! চিল্লাচিল্লি করলে আব্বায় উইঠা যাইবো। শেষে আমার কামে যাওয়া অইবো না। তুমি অহন গুমাও। আমি কাম সাইরা তাত্তারি চইলা আমুনে।
কী ভেবে যেনো দাদী আর কথা বাড়ান না, ঘরের ঝাঁপ টেনে ঘুমাতে চলে যান। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন নয়ন বিছানায়ই আছে, পরনে লুঙি, অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
পরদিন দাদী একবার নয়নকে জিজ্ঞেস করেন,
- এতো রাইতে কি হাট বসে?
- দাদী যে কী কও! আমগো এইহানে রাইত হইলে কী হইবো কেশবপুরে তো তহন দোফোর। সন্ধ্যা অওনের আগেই ত হাট শেষ।
- কেশবপুরে যুদি দোফোরই অয়, তাইলে তুই মোশাল দিয়া কী করস্।
- বা-রে! কেশবপুরের পৌঁছানের আগে রাস্তা-গাট তো আন্ধাইর, তয় মোশাল লাগবো না? আবার ফিরা আহনের কালেও তো আমাগো এই হানে বিয়ান রাইত। হের লেইগাই মোশাল নেই।
দাদী কেশবপুরের ব্যাপারটা বোঝার জন্য মশাল প্রসঙ্গ পালটে অন্য প্রশ্ন করেন,
- তুই হাটে কী করস্?
- তোমারে আগে কইসিনা আমি হাটের তশিলদারের মুন্সী। তশিলদার মোশাই দোকানদারগো কাছ থেইকা খাজনা আদায় করেন, আর আমি খাজনার হিসাব খাতাত লিখ্যা রাখি।
এরপর নয়ন তার দাদীকে ব্যাখ্যা করে কীভাবে খাজনার হিসাব লিখতে হয়, কী কী পণ্যের দোকান সেই হাটে আছে, সেখানকার ধনী কারা দরিদ্র কারা, কী কী খাবার সেখানে মেলে কিন্তু নয়নের কাছে কোনো পয়সা না থাকায় সে কিছুই কিনতে পারে না। খাজনার হিসাবের কথা বলতে নয়ন দাদীকে মাটিতে আঁক কেটে দেখায় কীভাবে বাম দিক থেকে ডানদিকে কোনাকুনি দাগ কেটে একটা ফোঁটা দিলে এক আনা লেখা হয়, দুই-তিন-চার আনা কীভাবে লেখে, কীভাবে মাত্রাছাড়া “দ” লিখে ডান পাশে ফোঁটা দিলে বারো আনা লেখা হয়। নয়নের এই বিদ্যায় দাদী একটু অবাক হন। কারণ, তিনি জানেন আনা’র দিন অনেক আগেই গেছে, তাই আজকালের মক্তব বা স্কুলে আনা’র হিসাব শেখানো বা লেখানো হবার কথা না। তবু সন্দেহ হয়, হয়তো কোনো প্রাচীনপন্থী শিক্ষক নয়নকে এই অপ্রয়োজনীয় বিদ্যা শিখিয়েছেন। দাদী এসব নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেন না। ভাবেন, নাতীর মাথা একটু গরম হয়েছে তাই রাত-বিরেতে মাঠে-ঘাটে হাঁটাহাটি করে আর হাবিজাবি সব ভেবে নেয়। নাতীর সাথে এসব নিয়ে তর্ক করার চাইতে কবিরাজের কাছ থেকে মাথা ঠাণ্ডা রাখার তেল যোগাড় করাটাকেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। একই সাথে ভাবেন হাটে যাবার ব্যাপারটা নয়নের বাবা-মায়ের কাছ থেকে চেপে যাওয়াই ভালো। নয়তো নয়নের বাবা হয়তো খামাখাই নয়নকে খুব পেটাবেন বা রাতে বেঁধে রাখতে বলবেন। নয়ন যেহেতু নিজের বা অন্য কারো ক্ষতি করছে না তাই তিনি চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে করলেন।
পরের বুধবার রাতে নয়ন আবার মশাল নিয়ে বেরুতে গেলে দাদী আবার বাধা দেন। বাবাকে বলে দেবার ভয়ও দেখান। নয়ন দাদীকে কাকুতি-মিনতি করে। তাকে বোঝায় সপ্তাহের হাটবারে না গেলে তার চাকুরীটা থাকবে না। আর মাসের প্রথম বুধবারে না গেলে আগের মাসের বেতনটা মিলবেনা। দাদী এই পাগলের সাথে আর কথা বাড়ানোটাকে সমীচিন মনে না করায় তাকে আর নিরস্ত করেন না, কেবল অন্ধকারে সাবধানে পথ চলার উপদেশ দেন।
এভাবে প্রতি বুধবার রাতে নয়ন কেশবপুরের হাটে যেতে থাকে, আবার ভোররাতেই বাড়ি ফিরে আসতে থাকে। দাদীও এক সময় নয়নের এই রুটিনে অভ্যস্থ হয়ে যান, এটা নিয়ে আর হৈচৈ করেন না। এক বুধবার রাতে নয়ন ঘর থেকে বের হতে দাদী তার পিছু নেন। কিন্তু নয়ন এমন হন্ হন্ করে হাটে যে দাদী তার নাগাল পান না। রাস্তা ছেড়ে নয়ন খোলা মাঠে নেমে পড়লে দাদী রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করেন সে কোনদিকে যায়। কিন্তু খোলা মাঠে মশালের শিখা হাঁটার তালে নাচতে নাচতে এগুতে এগুতে হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যায়। মশালটা কি নিভে গেলো, নাকি কোনো বড় গাছ বা খড়ের গাদার আড়ালে চলে গেলো সেটা আর বোঝা যায় না।
আশ্বিন মাসের ছয় তারিখ ছিলো বুধবার। পাঁচ তারিখ, মঙ্গলবার সকাল থেকেই নয়নের আবার উথাল-পাথাল জ্বর আসে। তাই পরদিন রাতে তার আর কেশবপুরের হাটে যাওয়া হয় না। শুক্রবার সকালেই নয়নের জ্বর সেরে যায়। জ্বর সারতে নয়নের আর আফসোসের সীমা থাকে না। মাসের প্রথম বুধবার হাটে না গেলে যে আগের মাসের বেতন মিলবে না! দাদী তাকে সান্ত্বনা দেন যে, পরের বুধবার হাটে গেলেই তো সে বেতন পাবে। নয়ন অস্থির হয়ে তার দাদীকে বোঝায়,
- দাদী তুমি জানো না। মায়ের পয়লা বুধবার না গেলেই আগের মাসের ব্যাতন মাইর। আর মাসের মইদ্যে কোনো বুধবার না গেলে ঐ হাপ্তার ব্যাতন কাটা।
দাদী কথা না বাড়িয়ে সান্ত্বনা দেন,
- আইচ্ছা যা! এই মাস বাদ। সামনের মাসে ঠিকঅই ব্যাতন পাবি।
নয়নের দাদীর কথা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু প্রতি বুধবার রাতে নয়ন কেশবপুরের হাটে যেতে পারলেও কীকরে কীকরে যেনো মাসের প্রথম বুধবার আসার আগেই তার গা কাঁপিয়ে জ্বর চলে আসে, যা মোটামুটি তিন-চার দিন চলে। ফলে কোনো মাসেরই পয়লা বুধবার নয়নের হাটে যাওয়া হয় না, আর বেতনও সে পায় না।
প্রায় প্রতি রাতেই নয়ন শুয়ে দাদীকে কেশবপুর হাটের গল্প করে। গল্প শুনতে শুনতে দাদীর হাটের লোকগুলোর নাম, তাদের চেহারা-চরিত্র মুখস্থ হয়ে যায়। একটা ব্যাপার দাদী লক্ষ্য করেন যে নয়ন কেশবপুর হাট থেকে কিছুই নিয়ে আসে না। সে কথা জিজ্ঞেস করলে নয়নের সরল উত্তর,
- আমার কাছে তো কোনো ট্যাকা-পয়সা নাই, তয় আমি কিছু আনুম ক্যাম্নে? চুরি তো আর করতে পারি না!
দাদী কি আর তাকে চুরির পরামর্শ দিতে পারেন! তাই কেশবপুরের হাট থেকে নয়নের আর কিছু কেনা বা আনা হয় না। এরপর দাদীর আবারও কৌতুহলী প্রশ্ন,
- অ্যাতোক্ষণ হাটে কাম করস্, তোরে কিছু খাইতে দেয় না?
- তশিলদার মোশাই আমারে কিছু খাইতে দেয় না সইত্য, তয় আমার খাওনের একটা ব্যবস্তা আছে।
- কী ব্যবস্তা?
- দুদ দিয়া জিলাফি খাওনের ব্যবস্তা।
কেশবপুরের হাটের একদিকে কতগুলো দোকান আছে। সেগুলোকে দোকান না বলে দোকানঘর বলাই ভালো। ছোট ছোট ছনের-বেড়ার দোচালা ঘর। ঘরগুলোতে কোনো জানালা নেই, সামনের দরজাও বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। দরজা খোলা থাকলে দেখা যায় তার সামনে একজন করে মহিলা দাঁড়ানো। নয়ন ঠিক বুঝে উঠতে পারে না দোকানগুলো কিসের। ঐ দোকানঘরগুলোর কাছেই একটা মিষ্টির দোকান আছে। ‘তশিলদার মোশাই’ নয়নকে মিষ্টির দোকানটিতে বসিয়ে রেখে ঐসব দোকানঘরগুলোতে আদায়ে যান। যাবার আগে দোকানের মালিক যদু ঘোষকে হেঁকে বলেন নয়নকে যেনো একপো’ দুধ আর একপো’ জিলিপী খেতে দেয়া হয়। একইসাথে হুঁশিয়ার করে দিয়ে যান তিনি না ফেরা পর্যন্ত নয়ন যেনো কোথাও না যায়। এই ব্যবস্থাতে নয়নের কোনো আপত্তি নেই, কারণ এই সময়টুকুতে কোনো কাজ না করে দুধ-জিলিপী খেতে খেতে হাটের মানুষদের দেখা যায়, মিষ্টির দোকানের ক্রেতাদের গল্প শোনা যায়। যদু ঘোষের অবশ্য এই ব্যবস্থাটা পছন্দ নয়। তার অপছন্দের কথাটা গাঁইগুই করে একবার তহশিলদারকে বলার চেষ্টা করলে তহশিলদার সোজা বলে দেন,
- ঘোষের পো, খাওয়াও তো পোলাডারে দুই প’সার দুদ-জিলাফি। আর হেতেই আপত্তি? এমনে আদায় করলে তো তোমার খাজনা দুই/তিন আনার থেইকা কম অয় না। (* চার পয়সা = এক আনা, ষোল আনা = এক টাকা)
এমন বক্তব্যে যদু ঘোষের বলার কিছু থাকেনা। তবে সে নয়নকে ঠকানোর চেষ্টা কম করে না। আস্ত মচ্মচে জিলিপীর বদলে প্রায়ই ভাঙা-গুঁড়ো জিলিপী খেতে দেয়। একদিন একপো’ দুধের মধ্যেই অর্ধেক জল মিশিয়ে দিয়েছিলো। যদু ঘোষের চোখ রাঙানোকে উপেক্ষা করে সে’কথা নয়ন তহশিলদারকে ঠিকই জানিয়ে দিয়েছিলো। ফলে, ঐদিন ঘোষের পো’কে এক হাঁড়ি দই আর এক হাঁড়ি ক্ষীরমোহন জরিমানা করা হয়। বলাই বাহুল্য, জরিমানার কিছুই নয়নের ভোগে আসে না; পুরোটাই তহশিলদারের বাড়ি চলে যায়। সেই থেকে যদু ঘোষ আর কোনো বেগড়বাই করার চেষ্টা করেনি।
নয়নকে যদু ঘোষের দোকানে বসিয়ে ঐ দোকানঘরগুলো থেকে আদায় সেরে তহশিলদারের ফিরতে প্রায় ঘন্টাখানেক লাগে। এই কয়েকটা মাত্র দোকানের আদায় সারতে এতো সময় লাগার কথা না। কিন্তু তহশিলদারের ভয়ে তার আর প্রশ্নটা করা হয়ে ওঠে না। আদায় ফেরত তহশিলদার গামছায় মুখ মুছতে মুছতে বলেন,
- ল্যাখ, “অস্থায়ী বারাঙ্গণা পল্লী” নগদ আদায় চাইর আনা।
এই “অস্থায়ী বারাঙ্গণা পল্লী” শব্দটার মানে নয়ন জানে না, সেটা কাউকে জিজ্ঞেস করার সাহসও তার হয়নি। একদিন দুধ-জিলিপী শেষ হবার পর তার শব্দটার মানে জানার ইচ্ছে হলো। যদু ঘোষের চোখ এড়িয়ে সে দোকানঘরগুলোর কাছে পৌঁছে যায়। সবচে’ কাছে দোকানঘরটাতে উঁকি মারতেই পেছন থেকে এক খাণ্ডারণী চেহারার মহিলা তার চাদর টেনে ধরে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
- ঐ গোলামের পুত! এইহানে কী করস্? তুই ঐ বুইড়া খাডাশটার মুন্সী না? যা ভাগ্ কইলাম! ভাগ!
ভয় পেয়ে নয়ন সেখান থেকে দৌড়ে যদু ঘোষের দোকানে চলে আসে। “অস্থায়ী বারাঙ্গণা পল্লী” সংক্রান্ত ব্যাপারে আর কোন উৎসাহ না দেখানোকেই সে নিরাপদ মনে করে। দাদীর কাছে গল্প করার সময় সে ঐ দোকানঘরগুলো সংক্রান্ত সব কথাই চেপে যায়। এছাড়া আরো একটা ব্যাপার আছে যা সে দাদীর কাছে চেপে গেছে।
কেশবপুর হাটের যে দিকটাতে নদী সেদিকে প্রায় নদীর পাড় ঘেঁষে মূল হাট থেকে সামান্য দূরে গরু-ছাগলের হাট। গরু-ছাগল জায়গা নষ্ট করে বলে মূল হাটের বাইরে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া ছাড়া ঘোড়া আর গাধাও বিকিকিনি হয়। গরুর হাট ছাড়িয়ে একটু আগালে একটা খোলা জায়গায় একটা অদ্ভূত হাট আছে। সেখানে গরু-ছাগলের মতো মানুষ বিকিকিনি হয়। নানা বয়সী মানুষের পায়ে বা গলায় শিকল পরিয়ে সারি ধরে দাঁড়িয়ে রাখা হয়। তাদের বিক্রেতাগুলোর চেহারা ভয়ঙ্কর সব ডাকাত বা খুনীদের মতো। তাদের হাতে হিস্হিস্ করে ওঠে চাবুক। তাদের প্রায় সবার কোমরে লম্বা ছুরি বা তলোয়ার। সবগুলো বিক্রেতা দলের সাথেই চার-পাঁচ জন করে লাঠিয়াল থাকে। কোনো কোনো লাঠিয়ালের হাতে সড়্কি-ঢাল, তলোয়ার বা সরু লম্বা রামদা’। ক্রেতা যারা আসে তাদের চেহারা বা দলবল বিক্রেতাদের মতই দেখতে। ঐ হাটে আদায়ের কালে নয়ন খুব ভয়ে ভয়ে থাকে। কখন কে তাকে ক্যাঁক করে ধরে গলায় শিকল পরিয়ে দেবে কে জানে! সে জড়োসরো হয়ে তহশিলদারের পিছনে খাতা হাতে ছোটে। সামনে-পিছনে বিক্রেতারা মানুষের দাম হাঁকে দশ টাকা-পনেরো টাকা-বিশ টাকা।
প্রতি সপ্তাহের হাটেই নতুন নতুন মানুষ ওঠে বিক্রির জন্য। কেউ কেউ বিক্রি না হলে পর পর দুই/তিন হাটে তাকে ওঠানো হয়। তবে একটা মানুষকে নয়ন দেখছে সে যতোদিন ধরে হাটে আসছে ততোদিন ধরে আনা হচ্ছে, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না। মানুষটা একটা মেয়ে - বয়সে নয়নের সমান বা তারচেয়ে একটু কম হবে। যদু ঘোষের দোকানে দীর্ঘদিন ধরে দুধ জ্বাল দেয়ায় দুধের উপর হলুদাভ রঙের যে সর জমেছে মেয়েটার গায়ের রঙ অমন সাদা। তার চোখগুলো গাঢ় নীল। মানুষের চোখের রঙ যে নীল হয় সে কথা নয়নের জানাই ছিলো না। আর চুলগুলো আগুনের মতো লাল্চে-সোনালী। তার পরনে লম্বা ঘাগ্ড়ার মতো জামা। তাকে দেখলে মানুষ বলে মনে হয় না - মনে হয় পরী বা অপ্সরা। স্থানীয় ভাষা সে বলতে বা বুঝতে পারে বলে মনে হয় না। তার চোখে-মুখে হয় ভয় নয় ঘৃণা খেলা করে। নয়ন যতোক্ষণ পারে ততোক্ষণ তাকে আশ মিটিয়ে দেখে। বস্তুতঃ এই মেয়েটা আছে বলেই সে প্রতি সপ্তাহে বাবার বকুনি বা পিটুনি, অথবা দাদীর কৈফিয়তের তোয়াক্কা না করে সে হাটে আসে। নয়তো দুধ-জিলাপী’র প্রতি তার লোভ এতো নয় যে সেটার লোভে তহশিলদারের মুন্সীগিরি করবে। মাসে পাঁচসিকা বেতনের গুরুত্ব কতটুকু সেটাও তার কাছে স্পষ্ট নয়। কারণ, আজ পর্যন্ত সে কোনো বেতনই পায় নি। মেয়েটার দাম নাকি হাঁকা হয়েছে হাজার টাকা। অতো টাকা হাটুরে কারো কাছে নেই বলে মেয়েটা বিক্রি হয় নি। বিক্রেতা আশা করে বসে আছে একদিন কোনো এক রাজা এসে মেয়েটাকে কিনে নিয়ে যাবে, তাতে তার এতো দিনের খাটানো বিপুল টাকা সুদে-মূলে ফেরত আসবে। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি রাতগুলোতে স্বপ্নে নয়ন শুধু ঐ মেয়েটাকেই দেখে - তার সাথে নানা কথা বলে, নদীর পাড়ে বেড়ায়। মেয়েটা কিন্তু তাকে কিছুই বলে না, শুধু হাসে। তা মেয়েটা নয়নকে কিছু বলবে কী করে! সে তো আর নয়নদের ভাষা জানে না।
নয়ন দাদীকে এই মানুষ বিক্রির হাট বা মেয়েটার কথা কিছুই বলেনি। সে জানে এসব কথা দাদী জানলে সাথে সাথে বাবাকে বলে দেবে। তাতে তার হাটে আসাটাই বন্ধ হয়ে যাবে। মেয়েটাকে নিয়ে নয়নের একটা মহাপরিকল্পনা আছে। সে যদি মাসের প্রথম বুধবারগুলিতে হাটে যেতে পারে তাহলেই বেতনের পাঁচটা সিকি পাওয়া যায়। তার তো কোনো ব্যক্তিগত খরচ নেই, তাই মাসের পুরো পাঁচ সিকিই তার জমে যাবে। এভাবে টাকা জমালে একদিন নিশ্চয়ই এক হাজার টাকা হয়ে যাবে। তখন তো মেয়েটাকে কিনে নিতে আর বাধা থাকবে না। পাঁচ সিকি করে জমালে কতো মাসে বা কতো বছরে এক হাজার টাকা হবে সেই হিসাব নয়নের জ্ঞানে কুলায় না। তবে সে জানে তাকে আরো অনেক দিন ধৈর্য্য ধরতে হবে। জ্বরের ব্যাপারটা তাকে পিছিয়ে দিচ্ছে, তবু হাল ছাড়লে চলবে না। মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলে বাবা-মা-দাদীর কী প্রতিক্রিয়া হবে নয়ন সেটা ভাবতে পারে না। তবে এতো সুন্দর একটা মেয়েকে দেখলে তারা সবাই নিশ্চয়ই হতবাক হয়ে যাবে। সবাই বুঝবে নয়ন শুধু একটা বোকা বা অকর্মণ্য ছেলে না! নয়নের একটাই কামনা, তার এক হাজার টাকা জমার আগে কেউ যেনো মেয়েটাকে কিনে নিয়ে না যায়।
এভাবে মাসে চারটা বা পাঁচটা করে বুধবার আসে। প্রতি বুধবার রাতেই নয়ন কেশবপুরের হাটে যায়, শুধু মাসের প্রথম বুধবারগুলো ছাড়া। নাছোড়বান্দা জ্বরটা ঘুরে ফিরে মাস পয়লা বুধবারের ঠিক আগেই আসে। নয়নের তাই আর বেতন পাওয়া হয়ে ওঠে না। তবে ভাবনার কিছু নেই, কেশবপুরের হাটের কারো কাছেই আজ পর্যন্ত হাজার টাকা হয়নি, কবে হবে তারও ঠিক নেই। সুতরাং নয়নের হাজার টাকা হলে একদিন সে ঠিকই মেয়েটাকে কিনে বাড়ি আনতে পারবে।
মন্তব্য
কি ভাল লাগল গল্পটা! আহা যাদের কেশবপুরের হাট নেই তারা ভারী বেচারী
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ধন্যবাদ। খোদ আমারই যাবার মতো কেশবপুরের হাট নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখায়
লাইকাইলাম, ভুটাইলাম, মন্তব্যাইলাম ................. আর কিছু নাই যে!
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আর কিছু করার দরকার নেই। পড়েছেন যে তাতেই কৃতজ্ঞ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সিরাম হইছে!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ। কিন্তু আপনি যে বিস্তারিত মন্তব্য করেছিলেন সেটা কোথায় গেলো? মুছে দিলেন নাকি?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমরা তো আর সচল নই, মডু পেরিয়ে আসতে হয়। বানান ভুল ছিল, আর গোটা ছয়েক শব্দ ও একটি পুরো বাক্য জুড়ে দিয়ে মন্তব্যে আরেকটু নুনের ছিটে দিলাম। মডুর দ্বারে অপেক্ষারত, দেখা যাক দোরগোড়ার দারোয়ান কেমন আচরণ করে!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অদ্ভুত!
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খুব ভাল লাগল।
ধন্যবাদ। আপনার গল্প মিস্ করি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অদ্ভুত সুন্দর! ঘোর লাগানো সুন্দর!
১৩ টা হয়েছে। আর গোটা সাতেক হলেই চমৎকার ছোটগল্পের বই হয়ে যাবে এবারের মেলায়! আমিও নয়নের মতো অপেক্ষা করছি আরো সাতটা গল্পের। প্রতিমাসে তিনটে করে হলে দুমাসে। অথবা দুটো করে হলেও তিনমাসে হয়ে যাবে। নভেম্বরের আগে হলেই তো হয়!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ঠিক। আগামীবার মেলায় আসতেই পারে 'গল্প-প্রচেষ্টা' সংকলন...
এই গল্পটা দারুণ লেগেছে। খুবই সুন্দর।... নাহ, বেশি ভালো লেগেছে।
আমিও বলি, ঠিক। "গল্প প্রচেষ্টা" সংকলন হয়তো আগামী কোনো এক বইমেলাতে আসতেও পারে। ওসব না হলে হয়তো ই-বুকই বানিয়ে ফেলবো।
তোমার কী অবস্থা? গল্প লেখা কি ছেড়ে দিতে চাইছো নাকি?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ।
তেরোটা থেকে চার/পাঁচটা বাদ যাবে - ওগুলো ভবিষ্যতে "উপন্যাস প্রচেষ্টা"-য় যুক্ত হবে। সামনের কয়েকটার হালও একই হবে। তাহলে নেট গল্প দাঁড়ালো আটটা। তোমার হিসাবে তাহলে আরো বারোটা দরকার হবে। যদি আগামী বারো মাসেও বারোটা গল্প লিখতে পারি, তাহলেও আমি সন্তুষ্ট। বই টার্গেটে নেই, সেটার দরকারও নেই। গল্প লিখে যেতে পারাটা আমার কাছে বড় ব্যাপার। পাঠকের কাছে সেটার গ্রহনযোগ্যতাও বেশ বড় ব্যাপার।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্রতিবারই আপনি কোনো না কোনোভাবে পিছলে যান
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
দারুণ!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ হয়েছে পাণ্ডব'দা।
অলস সময়
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মাথা ঘুরানোর মতো কী হলো?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমার ঘোর কাটতেছে না
ধন্যবাদ। ঘোর না কাটলে আগামীকাল বুধবার রাতে নয়ন মুন্সীর সাথে কেশবপুরের হাটে যান।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সিমপ্লি অসাধারন।।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পূর্বের করা মন্তব্যে মন ভরছিল না তাই ফিরে আসতেই হলো আবার।
গল্পটিকে অনেকটুকুই প্রতীকাশ্রয়ী বলে মনে হলো। নয়ন চরিত্রটি অনেকটা সত্যজিতের 'সোনার কেল্লা'-এর জাতিস্মর মুকুল ও রবীন্দ্রনাথের 'ক্ষুধিত পাষাণে'-এর মেহের আলীর ব্লেন্ডিং হিশেবে কল্পনা করে নিতে পারছি, কিছুটা ভ্রমে, কিছুটা ইএসপিতে, কিছুটা ভিন্নজগতের ফিকশনে। কখনো সে একান্তই নিজস্ব লোকায়িত ইতিহাসের কথা বলছে, কখনো বহুযুগের নিপীড়ন ও বঞ্চনার কথা, কখনো সোনালী আকাশ-কুসুম স্বপ্নের কথা। তবে মেহের আলীর, 'তফাৎ যাও' নেই। কারণ 'ক্ষুধিত পাষাণে' প্রাসাদের খাঁজে খাঁজে চাপা পড়া বেদনার বাণী গল্পের শেষাবধি ঘুরে ঘুরে ফিরেছে, ফুরিয়ে যায় নি। এই গল্পের শেষ হয়েছে আশা ও স্বপ্নের ভেতর দিয়ে। হোক না তা আকাশ-কুসুম, তবুতো তা পাওয়ার ভ্রম হয়েও আশাজাগানিয়া।
প্রকৃত প্রস্তাবে গল্পকারে কাজ এমনই তো হওয়া উচিত, তিনি দুঃখদিনের ইতি রচয়িতা নন, শুধু স্বপ্নের বীজ বুনে যাওয়া নির্মোহ কৃষক।
নামকরণ তিয়াশ মিটাতে পারলো না।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
১. বিস্তারিত মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
২. নয়ন মুন্সী মুকুল নয়; তার মেহের আলী হবার প্রশ্নই ওঠে না। লিখিত ইতিহাস নিম্নবর্গের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লেখা নয়। লোকায়ত ইতিহাসে mythical বা magic উপাদান থাকলেও সেখানেই নিম্নবর্গের মানুষের context থেকে অনেক কিছু দেখা হয়। রূপ পালটানো অথচ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা নিপীড়ন আর বঞ্চনার শিকার মানুষগুলোর ইতিহাসে মৌলিক পরিবর্তন কম হয়, তাই লোকায়ত ইতিহাসের ভিত্তিতে তাদের গল্পে টাইম মেশিন ছাড়াই সময়ের সামনে-পেছনে যাতায়ত একটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
৩. যে দায় থেকে গল্প লেখার চেষ্টা করি সেটা নিজেকে, নিজের বোধ-বিশ্বাসকে প্রকাশের দায় থেকে। সামাজিক দায় পালনের উপযুক্ত এখনো হইনি। তাই লেখার মধ্যে সচেতনভাবে কোন ভাবনার বীজ বুনি না। যা কিছু হয় তার পুরোটাই স্বতঃস্ফূর্ত।
৪. নামকরণের সীমাবদ্ধতার অভিযোগ মাথা পেতে নিলাম। পরে চেষ্টা করবো একটা উপযুক্ত নাম দেবার।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গায়ের রঙের যে বর্ণনা দিলেন - (গুড়)
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আমি কিছু বলি নাই। গায়ের রঙ নয়নের মতো "তারছিঁড়া" মানুষের কাছে যা মনে হয়েছে সেটাই বললাম।
এক কালে এই দেশে জমজমাট দাস ব্যবসা ছিলো। পারস্য বা মধ্য এশিয় বণিকদের এখানকার বাজারে বাণিজ্যের দরুণ তাদের অন্যসব পণ্যের পাশাপাশি সেসব দেশের কিছু দাসও এ'দেশে আসতো। বর্ণবৈচিত্র্য বা মুখশ্রী-দেহশ্রী'র বৈচিত্র্যের কারণে তাদের মূল্যমানটা ভিন্ন প্রকারের হতো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মুগ্ধ
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অদ্ভুত লাগল এই গল্পটা!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শুধু এ গল্পটা নিয়েই একটা বই হতে পারে কিন্তু ভাইয়া! কিন্তু আপনার ভাব গতিকে মনে হচ্ছে আপনি বইয়ের পক্ষে নন এমন একটা গল্প নেটে না আসা মানুষেরা পড়তে পারবেন না ভেবে সত্যিই আফসোস হচ্ছে। বই বের হলে কত মানুষ এই অসাধারণ গল্পটা পড়তে পারবেন হিসেবটা কষেন জলদি আপনার প্রত্যেকটা লেখাতে নতুন কিছু পাই। আজকেরটা অন্য গুলোকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে যেন! আমি নিজে ঘোরলাগা মানুষ বলেই কিনা জানিনা গল্পটা আমার কাছে কতটাই যে ভালো লেগেছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা! এতকথা বলছি সে কারণে....
খুব ছোট্ট একটা সংশোধন লাগতো দেখবেন দয়া করে, " দাদী তুমি জানো না। মায়ের(মাসের) পয়লা না গেলেই আগের মাসের ব্যাতন মাইর।"
সমীচীন/সমীচিন দুটোই কী শুদ্ধ? আমি জানি সমীচীন' আপনার লেখায় আরো যাদু খেলে যাক। অনেক শুভকামনা।
১. শুধু এই গল্প নিয়ে বই মানে উপন্যাস হতে পারে না। একে আরো বেশি টানতে গেলেই ঝুলে যাবে।
২. আমি বইয়ের বিপক্ষে না, তবে সময়/বিষয় বেঁধে কিছু লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। শুধু এই কারণে সচলের ই-বুকগুলোতে আমার লেখা হয় না। যথেষ্ট পরিমাণ গল্প লেখা হলে আর তখন ট্যাঁকে টাকা থাকলে বই অবশ্যই বের করবো। কারণ, কোনো প্রকাশক নিজের পয়সায় তো আর বইটা বের করবেন না। আর প্রকাশিত বইগুলো তো আবার আমাকেই কিনে আপনাদেরকে উপহার দিতে হবে।
৩. আপনার সংশোধনীটা সঠিক। পরে সম্পাদনা করে দেবো।
৪. "সমীচীন" শুদ্ধ হবার কথা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কী বলবো ! এক কথায়- দুর্দান্ত !!
আচ্ছা, একটা তথ্য আরেকবার রিভিউ করবেন কি ?
'চার পয়সা = এক আনা।' চার পয়সার জায়গায় কি ছয় পয়সা হবে না ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ দাদা।
এক সময়ে চৌষট্টি পয়সায় এক টাকা ছিলো। তখন চার পয়সা/পাই = এক আনা আর ষোল আনা = এক টাকা ছিলো। ডেসিমেল পদ্ধতি আসার পর যখন ১০০ পয়সায় এক টাকা'র হিসেব করা শুরু হলো তখনই গোলমালটা লাগলো। সেক্ষেত্রে ষোল আনায় একটাকা হতে গেলে সোয়া ছয় পয়সায় এক আনা হতে হয়। হিসেবের সুবিধার্থে কিছু দিন ছয় পয়সায় এক আনা আর পঁচিশ পয়সায় চার আনা বলা হলো। তারপর এক সময় জটিলতা এড়াতে আনা'কে বিদায় দেয়া হলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মারাত্মক হইছে। আরো পড়তে মন চায়।ছোটবেলার মফস্মল শহরের বা উপজেলার কথা মনে পড়ে যায়। লেখক কে ধইন্যবাদ (সাধুবাদ)...।
পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ। কিন্তু গল্পটাতো মজার না!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ। দুর্দান্তিস।
নতুন মন্তব্য করুন