গল্প প্রচেষ্টা-১৬

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: শনি, ১২/১১/২০১১ - ৪:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গাওয়াল

ঢাকা’র উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে আগত বাসগুলো গুলিস্তানের যে জায়গাটাতে আসলে হেলপার “অই গুলিস্তান, হলের সামনে” বলে হাঁক দেয় সেখানে ঠিক পাতাল সড়কে ঢোকার মুখটাতে বশির টুকরী নিয়ে বসে। সে কুলী বা মিন্‌তি নয়, তাই তার টুকরী খালি থাকে না - ফলে ভরা থাকে, মূলত দেশী ফল। তাই বলে সে কলা, ডাব, পেঁপের মত বারোমাস্যা ফল বেচে না। বশির একটু আলাদা রকমের ফল বেচে।

তা আলাদাটা কী রকম? পুরানা পল্টনের মোড় থেকে নবাবপুর রোডে ঢোকার মুখ পর্যন্ত পল্টন-গুলিস্তান-নবাবপুর রোড বা পল্টন-গোলাপ শাহ্‌-বংশাল রোডের দু’পাশে কম করে হলেও শ’পাঁচেক ফল বিক্রেতা আছে। এদের অর্ধেক জন সারা বছর ধরে আপেল-কমলা-আঙুর-মুসাম্বী ধরনের আমদানী করা ফল বেচে। বাকি অর্ধেক জন দেশী মৌসুমী ফল বেচে। আমের মৌসুম আসলো তো সবাই আম বেচে। জাম বা কাঁঠাল উঠলো তো সবাই জাম বা কাঁঠাল বেচে। রমজান মাস আসলো তো সবাই খেজুর-খোরমা বেচে। মৌসুমে বিশেষ কোন ফল না থাকলে এরা কলা, পেঁপে, আনারস এমন সব ফল বেচে। বশির দ্বিতীয় দলের মানুষ হলেও সে সবার সাথে মিলিয়ে একই রকম ফল আনে না। যখন গাছে জাম সবে দানা বাঁধতে শুরু করেছে তখন বশির কোত্থেকে যেন রসালো পাকা জাম এনে বেচতে থাকে। বাজারে যখন জাম ওঠে, তখন সে হয়তো তালের শাঁস বেচে। আবার বাজারে যখন জামের আঁটিটাও পাওয়া যাবে না, তখন আবার সে কোথা থেকে যেন জাম এনে বেচবে। সব সময়ই যে সে আর্লি ভ্যারাইটি বা লেট ভ্যারাইটির ফল বেচে তাও না, তবে পার্থক্যটা ঠিকই বজায় রাখে। চার-পাঁচ জন হয়তো বশিরের মতোই পানিফল বেচছে, কিন্তু দেখা গেলো সেখানেও পার্থক্য আছে। সবার পানিফল কালচে সবুজ রঙের হলে বশিরেরটা হবে গাঢ় মেরুন রঙের। আবার রঙে পার্থক্য করতে না পারলে দেখা যাবে বশিরের পানিফল কালচে সবুজ হলেও তার দু’পাশে শিং উঁচানো দুটো শক্ত কাঁটা আছে। মানে এটা আসলে পানিফল না, সিঙারা!

এমন সব আনকমন ফল বশির কোথা থেকে পায়? একবার একজন ক্রেতা অমন প্রশ্ন করলে বশিরের নির্বিকার উত্তর, “বাজার থিক্কা কিনছি”। এরপর আর কোনো কথা চলে না। সদুত্তর পাওয়া যাবে না বুঝে ক্রেতাও তাই কথা বাড়ান না। বশির তার বেচা-বিক্রি শুরু করে সকাল সাতটা থেকে। সূর্য তখন হকি স্টেডিয়ামের গ্যালারীর পেছনে থাকে। গ্যালারীর ছায়ায় বশির তার নির্ধারিত জায়গায় বসে পড়ে। বেলা বাড়তে থাকলে সূর্যের তেজ বাড়লেও জায়গাটাতে রোদ পড়তে পড়তে শেষ দুপুর হয়ে যায়। বশির অবশ্য অতক্ষণ থাকে না। মাঝ দুপুরের মধ্যেই তার বেচা-বিক্রি শেষ হয়ে যায়। পাশের কেউ যদি তাকে জিজ্ঞেস করে, “অত কম মাল আনস্‌ ক্যা? আরেট্টু বেশি আনলেইত সারাদিন ব্যাচতে পারতি”। তাহলে বিরক্ত বশির উত্তর দেয়, “আমার তগ মতন এত্ত লালচ্‌ নাই। আমার এট্টুতেই চলব”। প্রশ্নকর্তাদের মধ্যে যারা বশিরকে ভালোভাবে চেনেন তারা জানেন বশিরের চাহিদা তাদের চেয়ে কমই। বশিরের ঘরে তার মা ছাড়া আর কেউ নেই। তার কোন বাজে নেশা নেই। চায়ের দোকানে চা খেয়ে, বিড়ি ফুঁকে, আড্ডা দিয়ে টাকা খরচ করার মানুষ সে নয়। জামা-জুতা, মোবাইল ফোন এ’সবেও সে বাড়তি টাকা নষ্ট করে না। আবার সে যে গোপনে টাকা জমাচ্ছে বা কোথাও টাকা খাটাচ্ছে এমনটাও নয়। তার যা পুঁজি তাতে তার ব্যবসার মূলধন টিকিয়ে রাখার পর সামান্যই আয় হয়। তাতে মা-ছেলের থাকা-খাওয়া-পরনের কাপড়-যাতায়ত-ঔষধপত্র এ’সব চলে যায়। বশির এখনো বিয়ে করেনি, বিয়ে নিয়ে তার কোন ভাবনাও নেই। তার মাও এই ব্যাপারে কিছু বলেন না। কারণ, তিনি জানেন বশিরের যা আয় তাতে আরেকটা মানুষের খরচ যোগানো দুষ্কর। তাছাড়া ছেলের বউ আসলে সে তাকে এই ঘরে ঠাঁই দেবে কিনা সেটাও ভাববার বিষয়। কী দরকার ঝামেলা বাড়ানোর! ছেলে নিজ থেকে কোথাও বিয়ে করে বসলে সেটা তো ঠেকানো যাবে না - সেটা যদি কখনো হয় তো হলো। নিজে আগ বাড়িয়ে ঝামেলা না বাঁধানোটাই ভালো।

টাকা-পয়সার ব্যাপারে বশিরের লালচ্‌ কম কথাটা সত্যি, তবে সারাদিন ধরে বেচা-বিক্রি না করার কারণ সেটা নয়। বশিরের আসলে দিনের আলো সহ্য হয় না। সে অ্যালবিনো নয়, তবু রোদটা তার চোখে বড্ড লাগে। তাই দুপুরের পর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সে ঘুমায়। মাঝরাতের পর খেয়ে-দেয়ে টুকরী হাতে বের হয়। পছন্দ মতো সওদা করে ফল বোঝাই টুকরী নিয়ে সকাল ছয়টা-সাড়ে ছয়টার মধ্যেই গুলিস্তান পৌঁছে যায়। সারারাত কাজ করে সারাদিন যদি ঘুমানো যেতো তাহলে তার জন্য ভালো হতো। কিন্তু সেটা তো হবার নয়। মাঝরাতে বা শেষরাতে তার ফল কিনবে কে? ফল বেচা বাদ দিলে ঠাটারিবাজার, বাদামতলী, শ্যামবাজারে সারারাত করার মতো অনেক কাজ আছে। রাত এগারোটা থেকে চাল-ডাল-তেল-মশলা-সবজী-ফল বোঝাই ট্রাকগুলো এই বাজারগুলোতে ঢোকা শুরু করে। তখন মাল নামানো, মাল বাছাই, ঠেলাগাড়ি ঠেলা, ভ্যান চালানো, মাপামাপি করা, হিসেব রাখা, রাস্তা পরিষ্কার করা, খাবার বিক্রি করা - কত রকমের কাজই না আছে! এইসব কাজ শেষ হতে হতে সুর্য উঠে যায়। কিন্তু বশির সেগুলোর কোনটাই করবে না, অন্য কোনো কাজও করবেনা - শুধু ফল বিক্রি করবে। বশির হচ্ছে নাসির গাওয়ালের ছেলে, ফল বিক্রির বাইরে অন্য কিছু করা তার কাছে পৈত্রিক পেশাকে অপমান করার শামিল। এমন একটা সময় ছিল যখন এই দেশের শহরে-গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মৌসুমী ফল ফেরি করার একমাত্র দায়িত্ব ছিল গাওয়ালদের উপর। আজ দেশজুড়ে হাট-বাজার হয়ে গেছে, মোড়ে-মোড়ে দোকান-পাট হয়ে গেছে; তাই বলে কি গাওয়ালরা ফলবেচা রেখে অন্য কাজ করবে? এটা অন্য কেউ করতে পারে, কিন্তু নাসির গাওয়ালের ছেলে হয়ে বশির কখনো করবে না।

নাসির গাওয়াল যখন মারা যান বশিরের বয়স তখন বছর চৌদ্দ-পনের হবে। নাসির গাওয়ালের বয়স যে বেশি হয়ে গিয়েছিল তাও না। তার পেটের কোথায় যেন ক্যান্সার হয়েছিল। পেটব্যথা তার আগে থেকেই ছিল, ভাবতেন সেটা বুঝি অম্বলের জন্য। সেজন্য সাথে সবসময় কাগজের পোঁটলায় খাবার সোডা রাখতেন। সোডা তো আর ক্যান্সার ঠেকাতে পারে না, তাই শেষকালে মাসখানেক ভুগে নাসির গাওয়াল মারা গেলেন। ঐ মাসখানেকের চিকিৎসাতেই বশিরের মায়ের সহায়-সম্পদ বলতে যা সামান্য কিছু ছিল তার সবই চলে যায়। লুৎফর রহমান লেনের একটা বাড়িতে বশিররা ভাড়া থাকে। বাড়িওয়ালা প্রথমে মাস ছয়েক করুণা করে বাড়িভাড়ার জন্য তাগাদা দেয়নি। পরে নিরুপায় হয়ে ভাড়া চাইতে বশিরের মা কোন কাকুতি-মিনতি করেননি, এক সপ্তাহের সময় নিয়ে পুরো ছয়মাসের ভাড়াই তিনি মিটিয়ে দিয়েছিলেন। আসলে বশিরের বাবা মারা যাবার সপ্তাহখানেক পর থেকেই বশিরের মা নবাবপুরের নিগার হোটেলে মশলা বাটা, তরকারী কুটা, স্টাফদের কাপড় ধোয়ার কাজ নিয়েছিলেন। শুরুতে বেতন কম থাকলেও মাস দুয়েক পর থেকে মালিক বেতন বাড়িয়ে যেটুকু দিত তাতে মা-ছেলের কোনরকমে চলে যেত। বাবা বেঁচে থাকতে বশির সুরিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলেও বাবা মারা যাবার পর আর ওমুখো হবার চেষ্টা করেনি। পড়াশোনাতে তার আগ্রহ ছিল কম। তাছাড়া দিনের আলোতে ক্লাস করতে, পড়াশোনা করতে তার অসুবিধাও হতো। তার সমস্যার কথা একবার সে ক্লাশের শিক্ষককে জানিয়েছিল। সব শুনে শিক্ষক বেচারা বিরাট বিপদে পড়ে গেলেন। রাতকানা রোগ ঠেকানোর জন্য লাল শাক, কচু শাক, মলা মাছ আর ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাবার কথা তিনি ট্রেনিং-এর সময় শুনেছিলেন। কিন্তু দিনকানা রোগের জন্য কী কী খেতে হবে সেটা তো ট্রেনিং-এ কিছু বলে নাই! তাই একটু আমতা আমতা করে তিনি বললেন, “বেশি কইরা লাল শাক, কচু শাক আর মলন্দি মাছ খাবি। হেতে দিনকানা, রাইতকানা সব রোগঐ ভালা হইয়া যাইব”। কোন কিছু কম খাওয়া-বেশি খাওয়ার সুযোগ তো বশিরের ছিলনা; মা যা কিছু জোগাড় করে রাঁধবে সেটাই তাকে খেতে হবে। তবু সে মরিয়া হয়ে বলেছিল, “মা, সারে কইসে বেশি কইরা লাল হাগ, কছু হাগ আর মলন্দি মাছ খাইতে। তাইলে আমার চউখ ভালা অইয়া যাইব”। মা অক্ষমতার বিরক্তিতে হাত নাড়িয়ে বলেছিলেন, “হ, তর মাস্টরে ডাক্তর অইয়া বইসে। হাগ খাইয়া চউখ ভালা করবো”! বশির তাই তার এই শারিরীক অক্ষমতাকে নিয়তি বলে ধরে নিয়েছিল।

দিনে কম দেখতে পেলে বা রোদ সহ্য করতে না পারলে কী হবে বশির কিন্তু অন্ধকারে ভালো দেখতে পায়। শুধু ভালো না, বেশ ভালো দেখতে পায়। অন্ধকারে রাস্তায় কী কী পড়ে আছে সেটা দেখা, সাইনবোর্ডে কী লেখা আছে সেটা পড়া এগুলো বশিরের জন্য কোন ব্যাপারই না - সবকিছু কেবল একটু লালচে দেখায়। ছোটবেলাতেই বশিরের মা লক্ষ করেছিলেন যে তার ছেলের চোখের তারা অন্ধকারে জ্বলে। বশির একটু বড় হতে তিনিও বুঝতে পেরেছিলেন যে, বশির অন্ধকারে দেখতে পায়। ব্যাপারটাকে তিনি ব্যতিক্রমী কিন্তু স্রষ্টার লীলা ভেবে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছিলেন। দিনের বেলা চলাচলে অসুবিধাটাকেও তিনি সেই লীলার অংশ বলেই মেনে নিয়েছিলেন। অন্ধকারে চোখের তারা জ্বলা বা অন্ধকারে দেখতে পাওয়ার মতো গোপন কথা বড়দের কাছে গোপন করা গেলেও খেলার সাথীদের কাছে গোপন করা যায়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছে বশিরের নাম হয়ে যায় ‘বিলাই বশির’। কিছুদিনের মধ্যেই মহল্লার ছেলেরা আবিষ্কার করলো বশিরকে নিয়ে ‘টিলো এসপ্রেস’ বা ‘চোর পলান্তি’ ধরনের লুকোচুরি খেলা সম্ভব না। কারণ, কেউ অন্ধকার কোনে লুকিয়ে থাকলেও বশির তাকে ঠিক ঠিক সনাক্ত করে ফেলতো। বশিরের এই বিশেষ ক্ষমতাকে তারা খুব স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহন করেছিল। কারো নাক খাড়া, কারো নাক বোঁচা; কারো চোখ কালো, কালো চোখ বাদামীর মতো কেউ কেউ অন্ধকারেও দেখতে পাবে এমনটাকে তারা ঠিক বলে ধরে নিয়েছিল।

বাবা মারা যাবার পর পড়াশোনা যখন শিকেয় উঠলো তখন বছর দুয়েক ঘরে বসে থাকা, মহল্লার ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করার পর বশির জীবিকা হিসেবে পৈত্রিক পেশা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিল। সিদ্ধান্ত নেবার পর সে দুটো বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি হল। এক, ব্যবসায়ের প্রাথমিক মূলধন বলে তার কাছে কিছু নেই। মায়ের কাছে টাকা নেই, তাই তার কাছে টাকা চাইলে তিনি ফল বেচার বদলে মিন্‌তিগিরি করতে বলবেন। দুই, দিনের আলোতে পাড়ায়-মহল্লায় হেঁটে হেঁটে তার পক্ষে ফল ফেরি করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ফেরি করার সময় বাবা সুর করে ফলভেদে নানা রকম যেসব ছড়া বলতেন সেগুলো তার জানা নেই। দু’একটা কেবল মনে আছে,

“কালা কালা কালাজাম!
কই গেলিরে পোলাপান!
মা’র আচলথে পয়সা আন!”

“পানির ফল!
খাইলে হবে শরীলে বল!
না খাইলে দুর্বল!”

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সমস্যা দূর করার জন্য বশির ঠিক করলো বাদামতলীর ফলের আড়তের আশপাশ থেকে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে ফেলে দেয়া ফল জোগাড় করবে। তারপর মালিটোলার ভেতরের দিকের একটা ছায়াচ্ছন্ন গলিতে বসে বেচবে। বাদামতলীতে গিয়ে দেখা গেলো ফল কুড়ানোর জন্য আরো বহু জন আছে - যাদের সাথে কুলিয়ে ওঠা যাবে না। তাছাড়া ফেলে দেয়া ফলের বেশির ভাগ আধপঁচা। সেগুলো কেটে বিক্রি করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু এই শহরে কাটা ফল বিক্রি করা কঠিন। পেঁপে, আনারস, আমড়া, কামরাঙা, বাতাবীলেবু ছাড়া অন্য কোন ফল কাটা অবস্থায় বিক্রি হয় না। তাও আবার ঐসব ফল ক্রেতার চোখের সামনে কাটতে হয়। আগেভাগে কেটে নিয়ে আসলে পঁচা সন্দেহে কেউ সেগুলো খাবে না। যেহেতু ফল ফেরি করা ছাড়া বশির অন্য কোন কাজ করবে না, তাই একদিন বাদামতলীর ফলের আড়তে সারাদিন বসে সে উপায় ভাবতে থাকে। রাত গভীর হতে ফল বোঝাই ট্রাকগুলো যখন মতি মিয়ার আল্লাহ্‌র দান ফ্রুট স্টোরের সামনে ফল নামাতে শুরু করলো তখন সে একটা উপায় দেখতে পেল। ট্রাক থেকে ফল নামানোর সময় প্রায়ই দুয়েকটা ফল গড়িয়ে ট্রাকে নিচে বা ড্রেনে পড়ে যায়। আধো অন্ধকারে সেগুলো অন্য কেউ দেখতে না পেলেও বশির স্পষ্ট দেখতে পায়। একটা পলিথিনের ব্যাগে সে ফল জমাতে শুরু করে। ব্যাপারটা শুরুতে কেউ পাত্তা না দিলেও যখন তার ব্যাগ ভরে উঠলো তখন মতি মিয়ার ছেলে “অই চোর! চোর! ধর! ধর!” বলে চ্যালা কাঠ নিয়ে তাকে মারতে ছুটে আসে। বশির এক দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে পালিয়ে আসে। বুঝতে পারে এভাবে ফল জোগাড় করা যাবে না। বিকল্প উপায় কী হতে পারে সেটা পরে ভাববে ভেবে পরদিন সকাল থেকে সে টুকরীতে করে মালিটোলার এক গলিতে ফল বেচা শুরু করে। প্রথম দিনের বিক্রির টাকা নিয়ে রাতে সে আবার বাদামতলীর আড়তে যায়। আজকের পরিকল্পনা যা টাকা পাওয়া গেছে সেটা দিয়ে কিছু ফল কিনে বাকিটা কুড়িয়ে জোগাড় করা। বাদামতলীতে আল্লাহ্‌র দান ফ্রুট স্টোরের কাছে যেতেই মতি মিয়ার ছেলে তাকে পাকড়াও করে। “হালার পুত চোরা! আইজ তর একদিন কি আমার একদিন!” বলে তাকে মারতে উদ্যত হয়। বহু কষ্টে বশির তার পকেটের টাকাগুলো জরিমানা হিসেবে দিয়ে হাটুরে মার থেকে নিষ্কৃতি পায়।

জরিমানা দিয়ে নিঃস্ব বশির বোঝে তার পরিকল্পনা মাঠে মারা গেলো। মন খারাপ করে টুকরী হাতে সে ওয়াইজঘাটের দিকে হাঁটতে শুরু করে। এমন সময় ঝুম বৃষ্টি নামে। বশির নির্বিকার ভাবে বৃষ্টির মধ্যেই হাঁটতে থাকে। নবাব আহসানউল্লাহ্‌র বাড়ির কাছে পৌঁছানোর আগে হাতের বাঁ দিকে যে বিশাল ডাস্টবিনটা পরে সেটার কাছে আসতে বশির কিছু একটা ভেবে বা কিছু একটা দেখে ডাস্টবিনটার পিছন দিকে, যে দিকে বুড়িগঙ্গা নদী, সেদিকে এগিয়ে যায়। নদীর পাড়ে পৌঁছাতে আধো অন্ধকারে দেখা গেলো পাড় ভর্তি মানুষ, সবার হাতে টুকরী, বস্তা, ঝুড়ি, ব্যাগ এমন একটা কিছু আছে। একটা বিশেষ ব্যাপার লক্ষ করতে বশির স্বস্তিবোধ করে - মানুষগুলো সবার চোখই অন্ধকারে জ্বলছে। ভীড়ের মধ্য থেকে সাধারণ দর্শন একজন প্রৌঢ় তার দিকে এগিয়ে এসে সস্নেহে তার হাত ধরে জিজ্ঞেস করেন,
- কী কিনবা?
- ফল কিনমু, দেশী ফল।
- পাইবা, ট্যাকা কত আনছ?
- ট্যাকা নাই, মতি মিয়ার পোলায় কাইড়া রাখছে।
- অসুবিধা নাই, বাকিতেও পাইবা। কাইল দিনে ফল বেইচা রাইতে আইয়া দাম শুধ করবা।
- আইচ্ছা, তয় ফল পামু কই?
- আছে। ফল, তরকারী, মাছ, সবজী সবই আছে। নদীর ঐ পাড়ে অনেক দূর হাঁইটা গেলে কমরগঞ্জের হাট। ঐখানে আমি কইলে তোমারে বাকীতে ফল দিবো। ইকটু খাড়াও, গুদারা আইলে আমরা পাড় হমু। আইজকা তোমার পয়লা দিন, গুদারা ভাড়াটা আমি দিয়া দিমুনে।
কিছুক্ষণ পর একটা বড় কোষা নৌকা এলে লোকটার হাত ধরে অন্য অনেকের সাথে বশিরও তাতে চড়ে বসে।

পরদিন সকালে বশিরকে গুলিস্তানে এক টুকরী অসময়ের ডেউয়া ফল নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেলো। বশিরকে গুলিস্তানে ফল বিক্রি করতে দেখে তার পরিচিতরা একটু অবাক হলো। কারণ তাদের মতে, পুরনো ঢাকার লোক নিতান্ত নিরুপায় না হলে কাজের জন্য নতুন ঢাকায় যায় না। আর গুলিস্তান হচ্ছে পুরনো ঢাকা-নতুন ঢাকার সীমানা নির্ধারক। গুলিস্তানের সীমানা পার হয়ে যারা কাজ করে, তাদের খুব কমজনই পুরনো ঢাকায় ফেরত আসতে চায়। আর ফেরত আসলেও মনে মনে তারা নতুন ঢাকার মানুষ হয়ে ওঠে। তাই বশিরের গুলিস্তানের ওপারে কাজ করতে যাওয়াটাকে তারা একটু ভ্রূকুটির সাথে দেখে। গুলিস্তানের মতো ভেজালের জায়গা, যেখানে হকারদের কাছ থেকে ‘তোলা’ নিয়ে নিয়মিত মারামারি-খুনোখুনি হয় সেই জায়গায় তার বসা নিয়ে কেউ কেউ শঙ্কিত হয়ে তাকে মালিটোলায় বসার পরামর্শও দেয়। কিন্তু বশির মালিটোলায় বা পুরান ঢাকার অন্য কোথাও বসার পরামর্শকে কোন পাত্তাই দেয়না।

বশির টুকরীভর্তি ফল কেনার টাকা কোথায় পেলো বা নিয়মিত এই অসময়ের ফল কোথা থেকে পায় এ’সব প্রশ্ন তার পরিচিতদের মধ্যে কেউ না করলেও কারো কারো মনে ঠিকই একটু খটকা লাগে। অমন একজন বশিরের ছোটবেলার সাথী মুন্না। মুন্না একদিন সরাসরি প্রশ্ন করে বসে,
- কারবারের ট্যাকা পাইলি কই?
- হেইটা জাইন্যা তর কী কাম?
- না, জিগাই আর কি! কারবার শুরু করনের আগে ত কইসিলি ট্যাকা নাই দেইখা কারবার শুরু করতে পারতাসছ্‌ না।
- যেমনেই হউক ট্যাকা জোগাড় অইসে।
- চুরি করসছ্‌ নি? তুই ত হালায় আবার বিলাই চউক্ষা। রাইতে কই দাও মারছিলি?
- ফালতু কথা কবি না। আমারে কোনদিন চুরি করতে দেখসছ্‌? হেই ছোড কালেই নান্নু চোরায় আমারে হ্যার শাগরিদ বানাইতে চাইছিল - অই নাই। আর অহনে চুরি করুম?
- থাউকগা, ট্যাকার কতা থো। এইসব আকাইল্যা ফল পাছ্‌ কই?
- বাজারঅ গিয়া দ্যাখ, ঠিকঅই পাবি।
বশিরের উত্তরে মুন্না সন্তুষ্ট হবার ভাব দেখালেও সে বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়।

মুন্না পরিচিত অনেককেই জিজ্ঞেস করে সে বশিরকে ফল কিনতে টাকা ধার দিয়েছে কিনা। কিন্তু কাউকেই পাওয়া যায় না যে সে বশিরকে টাকা ধার দিয়েছে। বস্তুত বশির কারো কাছে ধার চেয়েছে এমনটাও কেউ বলে না। সুতরাং টাকার বিষয়টা অমীমাংসিত থেকে যায়। অকালের ফলের বিষয়টা তদন্ত করতে মুন্না একদিন মাঝরাতে তার পিছু নেয়। নবাববাড়ির উল্টোদিকে ডাস্টবিনের পেছনে বশির নামতে দেখে তার পিছু পিছু নেমে সে যা দেখতে পায় তাতে আতঙ্কে তার হাত-পা জমে যাবার দশা হয়। এক দৌড়ে সে হাঁপাতে হাঁপাতে লুৎফর রহমান লেনে ফিরে আসে। মুন্না কী দেখে ভয় পেয়েছিল সে’কথা সে কাউকে বলতে পারেনি। বললে কেউ বিশ্বাস করা দূরে থাক, তার মস্তিষ্কের সুস্থ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতো। কেউ কেউ হয়তো তার ফেন্সিডিলে আসক্তির প্রসঙ্গটাও তুলতো। তাই শেষ পর্যন্ত অকালের ফলের বিষয়টাও অমীমাংসীত থেকে যায়।

এরপর কীভাবে যেন এমন কথা চাউর হয়ে যায় যে, বশির কোহ্‌ক্বাফ (পরীস্থান) থেকে এসব অকালের ফল আনে। আবার কেউ কেউ বলে, বশীরকে এসব ফলের যোগান দেয় খোদ নাসির গাওয়াল। মহল্লার যারা ফল বিক্রি করে তারাও সায় দেয় যে, বাদামতলী বা অন্য কোন বাজারে এই ফলগুলো সহজলভ্য নয়। একজন মৃত ব্যক্তি কী করে ফল জোগাড় করে, আবার সেই ফল কী করে তার ছেলেকে পৌঁছে দেয় এমন যৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর গল্পকারীর কাছ থেকে পাওয়া যায় না। তাছাড়া প্রতিদিন বিনি পয়সায় ফল এনে বিক্রি করলে এতদিনে বশিরের ধনী মানুষ হয়ে যাবার কথা। বাস্তবে তা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে গল্পকারীরা বলে, নাসির গাওয়াল তার ছেলের কাছে পয়সার বিনিময়েই ফল বিক্রি করে। বাদামতলীতে কুলীর কাজ করে এমন কেউ কেউ এই ব্যাপারে সাক্ষ্যও দেয়। লোকে তাদের এসব কথা বিশ্বাস করে না, আবার অবিশ্বাস করেও উঠতে পারে না। অকালের ফল জোগাড় করাটা একসময় তাদের কাছে এটাকে ‘বিলাই চউখ’ হবার মতো স্বাভাবিক বলে মনে হয়।

বাদামতলী থেকে ফল কিনে বাসায় বা গুলিস্তানে আসতে সারা রাত লাগার কথা না। তাহলে বশির সারারাত কোথায় থাকে? সারারাত বাইরে থাকা নিয়ে মা অনুযোগ করলে বশিরের উত্তর সে অনেক দূর থেকে এসব ফল আনে। সেই ‘অনেক দূর’টা কোথায় সে প্রশ্নের উত্তর বশীর মা’কে দেয় না। ছেলে মন্দ কিছু করছে ভেবে মা-ও চুপ করে যান। এবং বশির যথারীতি প্রতিদিন সকালে গুলিস্তানের মোড়ে অকালের ফলের টুকরী নিয়ে বসতে থাকে।

মুন্না বা বাদামতলীর কোন কুলী যদি সাহস করে বশিরের পিছু নিতে পারতো তাহলে তারা দেখতে পেতো বশির ডাস্টবিনের আড়ালে দাঁড়ানো একজন মানুষের হাত ধরে নদীর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তারপর একটা গুদারা করে নদী পার হয়ে তারা হাঁটতে থাকে। তার হাত ধরে থাকা মানুষটা স্বয়ং নাসির গাওয়াল নাকি অন্য কেউ সেটা যেমন কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না; তেমন নদীর ওপাড়ের পথটা কমরগঞ্জের হাটে গেছে, নাকি কোহ্‌ক্বাফে গেছে অথবা অন্য কোথাও সেটাও কেউ বলতে পারবে না।

মানুষটা যে-ই হোক, আর পথটা যেখানেই যাক সূর্য ওঠার কিছু আগে বশীর ঠিকই বুড়িগঙ্গার উত্তর পাড়ে ঢাকায় ফিরে আসে। তখন তার মাথায় টুকরী, আর টুকরী ভর্তি অকালের ফল। তাকে পা চালিয়ে হাঁটতে হয় - যেন সকাল সাতটার আগেই সে গুলিস্তানের মোড়ে তার নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে বসতে পারে।


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভাল লাগছে পান্ডব্দা

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণF এর ছবি

পান্ডবদা ভয় ভয় লাগতেছে

গল্পে (গুড়)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। ভয়ের কিছু নেই, কিছু ব্যতিক্রম আমাদের চারপাশেই আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণF এর ছবি

ব্যতিক্রমের কথা আরো শুনতে চাই পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

আশফাক আহমেদ এর ছবি

অদ্ভূত সুন্দর

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

এক কথায় অসাধারণ! সামান্য কিছু সম্পাদনা করে নিলে (যেমন প্রথম দুটো লাইন) এই লেখাটি অন্যতম সেরা একটি গল্পের অভিধা পেতে পারে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। অনেক পরে যখন মাথা থেকে এই গল্পটা দূর হয়ে যাবে তখন একদিন এটা সম্পাদনা করতে বসবো। তখন নিশ্চয়ই দরকারী সারাইগুলো করা যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুমার এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে।অনন্য একটা গল্প।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। প্রশংসাটা একটু বেশিই হয়ে গেল।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ! শেষ দুটো লাইনের জন্যই তো পুরো গল্পটা! দারুণ!

(কেন জানিনা, আপনার এই লেখাটা পড়তে গিয়ে কোথাও কোথাও আটকেছি! ঘুম থেকে উঠেই পড়ছিলাম বলে কিনা কে জানে!)

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শেষাংশ নিয়ে বরং আমার অতৃপ্তি আছে। পরে যখন সম্পাদনা করার সুযোগ হবে তখন আটকে যাবার বিষয়গুলোকে পরিমার্জন করে নেবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

ভিন্ন ধরনের দারুণ। তবে শেষটা অন্য রকম আশা করেছিলাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শেষাংশ নিয়ে আমার অতৃপ্তির কথা উপরে বলেছি। তবে পরিণতি অন্য কিছু করার পরিকল্পনা নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

অন্যরকম একটা গল্প পড়লাম, খুব সুন্দর বুনন আর বর্ণনা। চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার মতো যারা কাহিনীতে দুর্বল তারা বর্ণনার ভারে কাটতে চায়। বর্ণনা পাঠককে ভারাক্রান্ত না করলেই আমি খুশি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মৃত্যুময় ঈষৎ(অফ্লাইন) এর ছবি

উঁহু মোটেই কাহিনি দুর্বল নয়; বুনন অন্যান্য গল্পের মতো এটিরও বলিষ্ঠ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

থাক, তোমার সাথে এখানে আর তর্ক জুড়লাম না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাপস শর্মা এর ছবি

গুরু জাস্ট ফাটাফাটি। একেবারেই ভিন্ন স্বাদের গল্প। দুইবার পড়লাম। আসলে পড়তে পড়তে খেয়ালই হলনা গল্পটা শেষ হয়ে গেছে। চরম চলুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার কাছে কিছু জিজ্ঞাস্য ছিল। সময় করে পরে জানাবো। আপনার মেইল অ্যাড্ড্রেসটা ফেসবুকে জানিয়ে দেবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাপস শর্মা এর ছবি

দিয়ে দিয়েছি । হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

গল্পটা ভালো লেগেছে, শেষ অংশটুকু নিয়ে আপনার নিজের অতৃপ্তি’র কথা মন্তব্যের ঘরে দেখলাম, আরো ভালো লাগলো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। শেষাংশ নিয়ে পরে আবার ভাববো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সত্যিই ভাল লেগেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পড়ার আর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সচল জাহিদ এর ছবি

ভাল লেগেছে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। অনেক দিন হয় তোমার লেখা পাচ্ছি না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

একেবারেই অন্য রকম লাগলো। একটানে পড়ে ফেললাম। চলুক!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যারা হিমু'র লেখার নিয়মিত পাঠক তারা জানেন একটা বিষয়ে হিমু কখনো ঘাটতিতে ছিলনা, নেই। সেটা হচ্ছে নতুন নতুন আইডিয়া - কি কনটেন্টে, কি ফরম্যাটে, কি প্রেজেন্টেশনে, কি ভাষায়। সেখানে হিমু'র কাছে যদি এই গল্প অন্য রকম লাগে তাহলে বুঝতে পারছি আমার প্রচেষ্টা সার্থক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

একটানে পড়া শেষ করলাম। টেনে রাখার মতো একটা গল্প চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ দাদা! এক কথা বলতে আমার তিনটা বাক্য খরচ করতে হয়। আপনার মতো এক বাক্যে বলতে পারলে পাঠকদের আরো কাছাকাছি পৌঁছাতে পারতাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

তবে একটা জায়গা নিয়ে সামান্য খটকা লেগেছে। বশিরের পিছু গিয়ে মুন্না অমন ভয় পায় কেন? অশরীরি কিছু দেখেছিল সে নাকি বশিরকে নিয়ে যাওয়া লোকটাকে দেখে প্রেতাত্মা মনে করেছে? এই জায়গাটা একটু অস্পষ্ট মনে হয়েছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মুন্না ভয় পেয়েছিল নদীর তীরভর্তি অন্ধকারে বিড়ালের মতো চোখওয়ালা মানুষের ভীড় দেখে। এটা তো বুঝতে পারার কথা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুপ্রিয় দেব শান্ত এর ছবি

একটানে পড়ে ফেললাম। ভালো লেগেছে। খুব সুন্দর একটা গল্প।

আপনি আপনার এই অসাধারণ গল্পগুলোকে কেন প্রচেষ্ঠা বলেন?

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভুল জলে নেমে পড়ায় ঘ্যাচাং

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এগুলো এখনো পর্যন্ত প্রচেষ্টা-ই, কখনো এগুলো গল্প হয়ে উঠবে আশা করি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আপনার লেখা গল্পগুলোর মাঝে যে কয়টি পড়বার সুযোগ ঘটেছে তারমধ্যে সম্ভবত এই গল্পটি সেরা।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বস্‌, আপনি যেদিন আমার সবগুলো গল্প পড়ে শেষ করবেন সেই দিন এগুলো নিয়ে লম্বা আলোচনা করার আশা রাখি। শেষ মন্তব্যটা সেদিনের জন্য তুলে রাখুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পথিক পরাণ এর ছবি

শুরুতে ধরা পড়েনি। এমনকি বশির বুড়িগঙ্গার দিকে যাবার সময়ও অস্পষ্ট ছিল। কেবল মুন্না যখন কিছু একটা দেখে ভয় খায়, তখন বিষয়টি আমলে আসে। এই অতিপ্রাকৃত আভাসটুকু গল্পটাকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। ভালো লাগলো অনেক।

---------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। বশীর যখন নদীর পাড়ে নামে তখনই কিন্তু একটা বাক্যে আভাসটা দিয়েছিলাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফি এর ছবি

চমৎকার একটা গল্প

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। আচ্ছা, মোটকুদের কী হলো? সে'কথা কি কোনদিন জানা যাবে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

অন্যরকম একটা গল্প, ভাল লাগল।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ বস্‌। আপনার সাম্প্রতিক ভ্রমণ নিয়ে একটা মুখোমুখি আলোচনার আশা রাখি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দ্রোহী এর ছবি

অনেক দেরিতে পড়লাম।

গল্পটা খুব ভালো লেগেছে। গল্প বলার স্টাইলটা সুন্দর। কলকল করে বয়ে যাওয়া ভাষা।

সমাপ্তিটা অপ্রত্যাশিত ছিল। গল্পের শেষে কী হবে তা পড়তে পড়তে আন্দাজ করছিলাম, কিন্তু শেষ করে দেখি বিরাট ধরা খাইলাম। দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ মেম্বর। আপনাকে যে ধরা খাওয়ানো গেছে তাতে আমি সার্থক! আচ্ছা, আপনি কী আন্দাজ করেছিলেন সেটা একটু শেয়ার করবেন? এখানে বা মেসেজে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দময়ন্তী এর ছবি

ফাটাফাটি গল্প৷ পড়ে বেশ তৃপ্তি পেলাম৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

অন্যরকম তো বটেই, একটু একটু জাদুবাস্তবও লাগছে। সব মিলিয়ে সুন্দর খুব হাসি

অন্যকথাঃ কেনো জানি মনে হলো, সৈয়দ নাজমুদ্দিন হাশেম এর সাথে আপনার বর্ণনাগত সাদৃশ্য আছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একবার এক ঈদসংখ্যায় সৈয়দ নাজমুদ্দিন হাশেমের একটা ভ্রমণকাহিনী ছাড়া উনার কোন লেখা পড়িনি। সুতরাং সাদৃশ্যের কথা কিছু বলতে পারবো না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বন্দনা এর ছবি

এই ধরনের গল্প আমার ব্যাপক ভালো লাগে পাণ্ডবদা। কেমন একটু গা শিরশিরে ভয় ভয় অনুভুতি দেয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

এটা বার বার পড়ি। পুরানো ঢাকা, রহস্য আর দেশই ফল - আমাকে এই তিনটির টান বেশ গাঢ়।
***
আপনার কথায় শহিদুল জহির পড়া শুরু করলাম। এখন আমি নেশাগরসত।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তুমি তো গল্প লেখা ছেড়েই দিয়েছো। 'কাফনখাকী'র মতো লেখা আমরা আর পেলাম কই?

শহীদুল জহির শুধু নেশাগ্রস্থই করেন না, সাথে সাথে পাঠকের প্রকাশভঙ্গীতে একটু একটু করে ঢুকে পড়েন। একই কর্ম করেন নবারুণ ভট্টাচার্য। তবে হনন ক্ষমতায় এনারা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের তুলনায় একটু পিছিয়ে আছেন। ইলিয়াস পাঠককে সিম্পলি জানে মেরে ফেলেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কর্ণজয় এর ছবি

দারুণ। আমার ধারণা আপনি উপন্যঅসে আরো ভাল করবেন। আবরও বললাম মনে হওয়া কথাটা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার আশাবাদ আর আমার স্বপ্ন একই। তবে ক্ষমতাটা অর্জন করতে পারিনি এখনো। যদি নিয়মিত লেখার সুযোগ পেতাম তাহলে হয়তো ক্ষমতাটার কাছাকাছি যেতে পারতাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দীপ্ত এর ছবি

গল্পটা শুরু করে শেষ করার আগে উঠতে পারিনি, আপনি টেনে নিয়ে যেতে পারেন, যেকোনো লেখায় এই গুণটা এত দরকার, আর আপনার সেটা আছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লেখা আপনাদের ভালো লাগলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মেঘ-বৃষ্টি-জল এর ছবি

ভালো লাগলো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ময়মনসিংহ গীতিকা'র "দিনে দিনে বাড়ে কইন্যা চন্দ্রকলাসম" এই লাইনটা কেন মনে হল জানেন?
আমিও দিনে দিনে আপনার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি, চন্দ্রকলার চেয়েও দ্রুত গতিতে হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। তবে অচিরেই হতাশ হবেন - এমন বিবেচনাটা মাথায় রাখবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তিথীডোর এর ছবি

গল্প প্রচেষ্টা সিরিজ রিভাইজ দিচ্ছি। হাসি
এতো অদ্ভুত নিখুঁত ডিটেইলস একেকটা গল্পের, চোখের সামনে ছবি তৈরি যায়...
গুরু গুরু

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

তিথীডোরের রিভাইজ প্রচেষ্টায় গল্পটা আমার চোখে পড়ল। শুরু থেকেই পাঠকের আগ্রহ তাকে শেষ অবধি নিয়ে যায়। দিনের প্রথম পাঠ ভাল হলো আমার।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।