আগন্তুক
হামিদ কবে, কোথা থেকে এই গ্রামে এসেছিল সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। বৈশাখ মাসের শুরুতে বোরো ধান কাটার সময় হয়ে এলে দক্ষিণের চরাঞ্চল থেকে ধানকাটা শ্রমিকের দল বা কামলারা এসে যখন সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার আশায় পাইন্যার হাটে ঢোকার মুখের খোলা জায়গাটাতে এসে জড়ো হয়েছিল, তখন হামিদকেও তাদের দলে দেখা গিয়েছিল। ছোট ছোট দলে আসা কামলাদের সবাই হামিদকে তাদের নিজের দলের বাইরে অন্য কোন দলের লোক ভেবেছিল। কিন্তু পরে দেখা গেলো সে কোন দলেরই না, এমনকি সে বোধহয় চরাঞ্চল থেকে আসা মানুষও না।
হামিদের পরনে আর সবার মতো লুঙি থাকলেও সেটা একরঙা বা চেককাটা নয় – ছোট ছোট ফুল ছাপা। ছাপা লুঙি অল্পবয়সী আরো কয়েকজন কামলাও পরেছিল, তবে সেগুলোর ছাপার সাথে হামিদের লুঙির ছাপার মিল নেই। হামিদের লুঙি দেখলে মনে হয় ছোট বাচ্চা মেয়েদের জামার কাপড় দিয়ে বানানো। তার গায়ে যে টী-শার্ট ছিলো তার বুকে পিঠে বড় বড় হরফে ইংরেজীতে কিছু একটা লেখা ছিলো। অমন লেখা কম-বেশি সবার টী-শার্টেই থাকে। সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। ইংরেজি দূরে থাক বাংলাই যেখানে খুব কম জন পড়তে পারে সেখানে টী-শার্টের লেখা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার কী? আর হামিদের টী-শার্টটা এতো পুরনো আর লেখাগুলো এত অস্পষ্ট ছিলো যে কারো ইংরেজী জানা থাকলেও সে লেখাগুলো পড়তে পারতো কিনা সন্দেহ।
কামলাদের সবার হাতে কাস্তে, দড়ি, বীরা (মাথায় বোঝা নেবার জন্য খড়ের তৈরি গোলাকৃতি সাপোর্ট বিশেষ), মাথাল ছাড়াও সবার পিঠে একটা করে বস্তামতো আছে। সেই বস্তায় বাড়তি দুয়েকটা লুঙি-জামা, একটা কাঁথা, এনামেলের প্লেট, অ্যালুমিনিয়ামের গ্লাস, তেলের শিশি এমন দরকারী সব জিনিস থাকে। কারো কারো হাতে হুক্কা বা বাঁশির মতো সৌখিন জিনিসও আছে। হামিদের হাতে বা পিঠে কিছুই ছিলোনা, শুধু কোমরে একটা পুরনো গামছা বাঁধা ছিলো। কেউ কেউ সহাস্যে জিজ্ঞেস করেছিলো, “কি মিঞা! কাছি (কাস্তে) ছাড়া ধান কাটবা কেমতে? নাহি আত দিয়া টাইন্যা তোলবা”? উত্তরে হামিদ বোকার মতো হেসে বলেছিলো, “একটা বেবস্তা অইয়া যাইবো”।
জোতদার আর ধনী কৃষকেরা ধান কাটার জন্য দরাদরি করে এক একটা দলের কামলাদের যখন নিয়োগ করছিলো, হামিদ তখন খুব চেষ্টা করেছিলো কোন একটা দলে ভীড়ে যেতে। কিন্তু কোন দলই তার মতো অপরিচিত-বাইরের লোককে সাথে নিতে রাজী ছিলো না। এক সময় নিয়োগকর্তারা আর কামলার দল সবাই চলে গেলে হামিদ একা খোলা জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে থাকে। এমন সময় একই রকমের চেককাটা লুঙি আর শার্ট পরা, মাথায় তেল দিয়ে সিঁথিকাটা, হাতে জ্বলন্ত বিড়ি নিয়ে ফিটিফাট বাবুর মতো নূর ইসলাম হাজির হয়। হামিদ তাকে হাট করতে আসা কেউ ভেবেছিলো। নূর ইসলাম সোজা তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- কামলার দল গ্যালো কই?
- সবতে কাম পাইয়া মহাজনগো লগে গ্যাছে গা। খালি আমি একলা আছি।
- ক্যা কাম পাও নাই? তোমার দল কই?
- আমার কোন দল নাই। হের লাইগ্যা কেঐ আমারে নেয় নাই।
- তুমি ত মিয়া ঝাড়া আত-পাও লইয়্যা আইসো। তোমার যন্ত্রপাতি কো?
- দড়ি-কাছি নাই। দড়ি-কাছি দিলে ধান কাইট্টা দিতে পারুম।
- আইচ্ছা হে নাঅয় দিলাম। রোজ কত নিবা?
- আপনে ইনছাপ কইরা দিয়েন। তয় খোরাকি দেওন লাগব।
নূর ইসলাম বুঝলো এই মাল জীবনে ধান কাটতে আসেনি। একে ঠকানো সহজ হবে। দেরি করে হাটে এসে এমন সুবিধার লোক পেয়ে যাবে অমনটা সে ভাবেনি।
- দুই বেলা খোরাকি ত পাইবাই। খ্যাত ছোটঐ, চাইর পাহি (এক পাহি/পাখি = ১,২১৫ বর্গ মিটার)। পুরা খ্যাতের ধান একলা কাইট্যা দিলে দুইশ’ ট্যাকা পাইবা।
নূর ইসলামের প্রস্তাবিত মজুরী বাজার দরের অর্ধেকের চেয়ে কম হলেও হামিদ রাজি হয়ে যায়। আসলে হামিদ এক পাখি জমি কতটুকু সেটা যেমন জানতো না, একজন কামলার রোজ কতো হয় সেটাও তার জানা ছিলো না। এভাবে হামিদ নূর ইসলামের কামলা হয়ে যায়। দিনে দুইবেলা খাবার ছাড়া নূর ইসলামের গোয়াল ঘরের এক কোনে হামিদের রাতে থাকার ঠাঁইও হয়ে যায় ।
নূর ইসলামের আসলে কোন কামলারই দরকার ছিলো না। তার জমি আধা-কটে গোলজারকে দেয়া ছিলো। আধা-কট ব্যবস্থায় জমির মালিককে বীজ-সার-সেচ ইত্যাদি খরচের অর্ধেক বহন করতে হয়। তাতে ফসল আধা-আধি ভাগ হয়। কিন্তু গোলজার ঘাড় ত্যাড়া লোক। ধান পাক ধরতেই বলে বসলো, সে ধান কাটতে পারবে না। ধান যদি তাকে কাটতে হয় তাহলে তেভাগা হিসাব হবে। নূর ইসলাম বলেছিলো, সে তো গোলজারকে জমি বর্গা দেয়নি তাহলে কেন তেভাগা হিসাব হবে? কিন্তু গোলজার সে’কথা মানতে নারাজ। সে জানে যে নূর ইসলাম একটা অকর্মা। তাকে দুইয়ে যতো বেশি আদায় করা যায় ততোই লাভ। কামলা নিয়ে ধান কাটাতে গেলে খরচ নেহাত কম নয়। তাছাড়া কামলাকে নগদে শোধ করতে হলে ধান বেচে টাকা দিতে হবে, আর ধান দিয়ে শোধ করতে গেলে নিজের ভাগ থেকে অনেকটা ধান চলে যাবে। তাই ধান কাটার দায়িত্বটা সে নূর ইসলামের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিলো।
এই গ্রামে চার পাখি জমির মালিকেরা কেউই নিজের জমি বর্গায় বা আধা-কটে কাউকে দেয় না। কারণ, তাতে ফসল তুললে নিজের ঘরে প্রায় কিছুই উঠবে না। নূর ইসলাম এই জীবনে মাজারে মাজারে বা আখড়ায় আখড়ায় ঘুরে গান শোনা, গান গাওয়া আর গাঁজা টানা ছাড়া কিছু করেনি। কৃষকের ছেলে হয়েও ধান কী করে ফলাতে হয় সেটা সে ঠিকমতো জানে না। পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া বসতবাড়ি আর চার পাখি ধানীজমি সে অনেকবারই চেষ্টা করেছে বিক্রি করে দিতে। কিন্তু বউ জমিলার জন্য তার সেই চেষ্টা কখনো সফল হয়নি। জমিলার ভাইয়েরাও নূর ইসলামকে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে, জমি বেচলে সেই টাকা তার ভোগে যাবে না। টাকার পুরোটাই জমিলা পাবে আর নূর ইসলামকে ভাঙা হাত-পা নিয়ে পাইন্যার হাটে ভিক্ষা করতে হবে। শালা-সম্বন্ধীদের দেয়া হুমকি যে নিছক ফাঁকা কথা নয় নূর ইসলাম সেটা জানতো। তারা ক্ষমতাবান মানুষ না হলেও নূর ইসলামকে মারধোর করে তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়া তাদের কাছে কোন ব্যাপার না। এটা নিয়ে নালিশ-সালিশ করেও বিশেষ লাভ হবে না। তাছাড়া যে কোন ঝামেলাকে নূর ইসলাম খুব ভয় পায়।
হামিদকে দিয়ে ধান কাটাতে গিয়ে দেখা গেলো সে ধান কাটার বিশেষ কিছু জানে না। তার হাত থেকে কাস্তে পিছলে যায়, নয়তো আঙুলে কাস্তের পোঁচ বসিয়ে দেয়। নিচে কতটুকু নাড়া (ধানগাছের মূল থেকে উপরে কর্তিত অংশ পর্যন্ত খড়) রেখে কাটতে হবে সেটাও সে জানে না। নূর ইসলাম সুবিধাজনক দামে কেমন দক্ষ কামলা নিয়েছে সেটা নিয়ে জমিলার মনে যথেষ্ট সন্দেহ ছিলো। তাই ধান কাটার দিনে হামিদের কাজ দেখতে সে নিজেই মাঠে হাজির হয়। হামিদের ধান কাটার বহর দেখে জমিলার মুখ ছুটে যায়। একইসাথে সে হামিদ আর তার নিয়োগকর্তা নূর ইসলামের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে থাকে। গালির তোড়ে বিব্রত নূর ইসলাম হামিদকে বলে, “আরে মিয়া খাড়ায়া থাইক্যা কী কর? কাম না পারলে ইট্টু গালি হোননঐ লাগবো। এরচায়া লগের খ্যাতের কামলাগো দ্যাহো কেমতে ধান কাটে”।
দেখা গেলো হামিদের শিখে নেবার দক্ষতা চমৎকার। অল্পসময়ের মধ্যে সে ধানকাটার মূল নিয়মগুলো শিখে ফেললো। দিনশেষে দেখা গেলো মোট কাটা ধানের পরিমাণ নেহাত কম নয়। দিন বেশি লাগলেও ধান ঝরে পড়ার আগেই হামিদের সব ধান কাটা হয়ে যায়। ধান কাটা ছাড়া ধান মাথায় করে নিয়ে আসা, মলন দেয়ার (ধান মাড়াই) কাজও হামিদকে একাই করতে হয়।
ধান মাড়াই শেষ হতে না হতে গোলজার তার ভাগের ধান নিতে হাজির হয়। নূর ইসলাম মিনমিন করে গোলজারকে হামিদের পাওনার ব্যাপারে বললেও গোলজার সেটা পাত্তা দেয় না। কয়াল দিয়ে ধান মাপিয়ে অর্ধেক নিয়ে সে চলে যায়। হামিদ জমিলার সাথে ধান সেদ্ধ করা, রোদে শুকানো, ধান উড়ানোতে হাত লাগায়। কাজ শেষে বছরের খোরাকি ধান রাখা হলে, বাকি ধান বস্তায় ভরে রিক্শা-ভ্যানে তুলে দিয়ে হামিদকে নিয়ে নূর ইসলাম পাইন্যার হাটে বেচতে যায়। ধান বিক্রি হলে নূর ইসলাম হামিদকে বস্তা নিয়ে বাড়ি ফিরতে বলে কোথায় যেন রওনা হয়। এরপর যা হবার তাই হয়। অর্থাৎ ধান বেচা টাকা নিয়ে নূর ইসলাম আর বাড়ি ফেরে না। এমনটা যে হতে পারে জমিলা আগেই আঁচ করেছিল। কিন্তু বদমাশটা যে হামিদকে তার পাওনা দুইশ’ টাকা না দিয়ে ভেগে যাবে সেটা সে ভাবেনি।
এভাবে দুইদিন পার হলে জমিলা নিজের ভাগ্যকে শাপশাপান্ত করে ঘরের কাজে মন দেয়। হামিদের পাওনা যে তার পক্ষে মেটানো সম্ভব নয় সেটা সে স্পষ্ট করেই হামিদকে জানিয়ে দেয়। হামিদ শুধু “আইচ্ছা” বলেই চুপ করে থাকে, কিন্তু এই বাড়ি ছেড়ে যায় না। জমিলা উভয় সঙ্কটে পরে যায়। মজুরীর টাকা না দিয়ে হামিদকে বিদায় করা সম্ভব না। আবার এমন একটা জোয়ান কামলার সাথে এক বাড়িতে একা থাকাও যায় না। হামিদ কিন্তু বসে বসে জমিলার অন্ন ধ্বংস করে না। এমনিতেই তার খাবার পরিমাণ কোন কামলা তো দূরে থাক, নূর ইসলামের মতো ফিটবাবুর চেয়েও কম। তাছাড়া সে গরু দুটো আর বাছুরটার দেখাশোনা করা, বাড়ির শাকসবজির গাছগুলোর পরিচর্যা করা, বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার করা, গোয়ালঘরটার বেড়া ঠিক করা এসব কাজে হাত লাগিয়ে জমিলাকে সাহায্য করার চেষ্টা করতো। সকালে জমিলার দুধ দোয়ানো শেষ হলে সে ঠিকা বাড়িগুলোতে জগে করে দুধ দিয়ে আসতো। এভাবে হামিদ নূর ইসলামের কামলা থেকে জমিলার মুনিসে পরিণত হয়।
নূর ইসলামের অনুপস্থিতি জমিলার জন্য একটা নিয়মিত ঘটনা। ঘরের কাজে হামিদের সাহায্য তার জন্য সুবিধাজনকই হয়েছে। তবু একটা জোয়ান কামলা নিয়ে একা বাড়িতে থাকায় গ্রামের লোকজন এই ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠবে। তারা কবে যে হামিদকে জড়িয়ে বাজে কথা রটাতে শুরু করবে সেই ভয়ে জমিলা অস্থির হয়ে ওঠে।
এক সন্ধ্যায় পুকুরের ঘাটলা থেকে উঠতে গিয়ে জমিলা পিছলে পড়ে যায়। তার “মাগো” চিৎকার শুনে গোয়াল ঘরে ভেজা খড় দিয়ে মশা তাড়ানোর ধোঁয়া দিতে থাকা হামিদ ছুটে আসে। জমিলাকে তুলতে গেলে জমিলা চিৎকার করে ওঠে, “ঐ মিয়া! যাও এইহানথে”! কিন্তু ডান পায়ের গোড়ালী মচকে যাওয়ায় জমিলা আর উঠতে পারে না। হামিদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু জমিলা একা উঠতে পারছে না দেখে দ্বিধা ঝেড়ে তাকে পাঁজাকোলে তুলে নেয়। জমিলাও আর কিছু বলে না। সন্ধ্যার অন্ধকারে উঠানে পায়ে কিছু একটা বেঁধে হামিদ ভারসাম্য হারাতে নিলে জমিলা দুহাতে তার গলা ধরে ফেলে। হামিদ ভারসাম্য না হারিয়ে জমিলাকে ঘরে নিয়ে তোলে। রান্নাঘর থেকে চুণ-হলুদ নিয়ে গরম করে জমিলার পায়ে লাগাতে গেলে জমিলা ধরমর করে উঠতে উঠতে বলে, “অইসে, অহন যাও। চুণ-অলদি আমিই লাগাইতে পারমু”।
এরপর কয়েকটা দিন হামিদ নিজেই কোন রকমে এক বেলা ভাত রান্না করা, দুধ দোয়ানোর কাজ করে। পেয়ারা গাছের একটা মোটা ডাল কেটে জমিলার হাঁটার জন্য একটা লাঠি বানিয়ে দেয়। সপ্তাহখানেকের মধ্যে জমিলা আস্তে আস্তে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যায়।
জমিলার পা মচকানোর পর থেকে পাড়াতো গুঞ্জনটা আস্তে আস্তে শুরু হয়ে যায়। পাড়াবেড়ানি বুড়ি জামালের মা একদিন উঠোনে হাজির হতেই জমিলার বুকের ভেতরটা গুরগুর করে ওঠে। জামালের মা এটা সেটা নানা কথার পর মূল প্রসঙ্গে আসে। তার পরামর্শ - জমিলার উচিত এই মুহূর্তে হামিদকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া। পাওনা টাকার জন্য নূর ইসলাম বাড়ি ফিরলে পরে সে আসতে পারে। জমিলা জামালের মা’কে “আইচ্ছা” বলে বিদায় করে বটে কিন্তু হামিদ মাঠ থেকে বাড়ি ফিরলে কিছুই বলে না।
এর কয়েকদিন পর হামিদ মাঠ থেকে গরু চরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হালটের (ইটের হেরিংবোনে বাঁধানো উঁচু মাটির রাস্তা) উপর উঠতে শাহাবুদ্দিন মেম্বার আর তার সর্বক্ষণের সঙ্গী কাম দেহরক্ষী মঞ্জুরের মুখোমুখি পড়ে যায়। হামিদ “সালামালাইকুম মেম্বর সাব” বলে পাশ কাটাতে গেলে শাহাবুদ্দিন তাকে “ঐ হামিদ্যা, খাড়অ” বলে দাঁড় করায়। শাহাবুদ্দিন বিরক্তমুখে বলে,
- কি রে! ধান কাটা শ্যাষ অইছে হেই কবে। তুই অহনতরি নূর ইসলামের বাইত পইড়া রইসস্ ক্যা?
- হ্যায় আমার রোজের ট্যাকা না দিয়া নিরুদ্দিশ্ অইছে।
- আরে ব্যাটা তুই হের লেইগা হ্যার বাইত পইড়া থাকবি? হ্যার বাইত একলা জুয়ান বউ আছে না! তুই তর বাইত জাগা। পরে নূর ইসলাম ফিরত আইলে ট্যাকা লইয়া যাইস্।
- ট্যাকা ছাড়া আমি যাই কেমতে। আমারথে ত কোন ট্যাকা-পয়সা নাই।
- তয় তুই আমার বাইত মুনিস খাটতে পারস্। দুই বেলা খাইতে পাবি, রাইতে আমার গোয়াইল ঘরেই থাকিস্। মাস শ্যাষে একশ’ ট্যাকা পাবি।
- আইচ্ছা, চিন্তা কইরা দেহি।
- আরে হালার পুত চিন্তার কী আছে? তর ভালার লেইগাই কইলাম। নূর ইসলামের বাইত তর থাকনটা ভালা বিষয় না।
শাহাবুদ্দিনের কথার সুর ধরে মঞ্জুর ধমকে ওঠে,
- হোন্ কাইল-পশ্শুর মইদ্যে তুই মেম্বর সাবের বাইত কামে লাইগ্যা যা। নাইলে কইলাম খুব খারাপ অইব।
হামিদ আবারো “আইচ্ছা” বলে বাড়ির পথ ধরে। এবং বাড়ি ফিরে হামিদ জমিলাকে কিছুই বলে না।
হামিদ নিজেও ঠিক জানে না কেন সে এই বাড়িতে পড়ে আছে। নূর ইসলাম কবে ফিরবে সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই। ধারণা করা যায় ধান বেচা টাকা ফুরুলে সে ফিরবে। অর্থাৎ নূর ইসলাম নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরবে। সুতরাং সে সময় হামিদের পাওনা টাকা আদায় হবার সম্ভাবনা নেই। সবচে’ ভালো হয় আগামী বছর ধান ওঠার সময় এসে পাওনা টাকা আদায় করা। কিন্তু এই দশ-এগারো মাস হামিদ কী করবে? শাহাবুদ্দিন মেম্বরের বাড়িতে মুনিস খাটার প্রস্তাবটা খুব একটা খারাপ না। কিন্তু জমিলাকে একা ফেলে যেতে হামিদের মন সরে না। সকালে জমিলা যখন দুই হাঁটুর মাঝখানে দুধের বালতি চেপে ধরে দুধ দোয়ায়, হামিদ তখন বাছুরের দড়ি ধরে রাখে। সে’সময় জমিলার মুখে এক অপার্থিব আনন্দের আলো খেলা করে। হামিদ অপলক চোখে জমিলার দিকে তাকিয়ে থাকে। ব্যাপারটা জমিলা যে বুঝতে পারে না তা নয়। হয়তো সে ইচ্ছে করেই হামিদকে সামনে থেকে সরিয়ে দেয় না। তবে হামিদের কাছে সকাল বেলা জমিলার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকাটাই সব নয়। একদিন শেষ বিকেলে হামিদ মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফিরে দেখে জমিলার রান্না তখনো হয়নি। জমিলা সাধারণত দিনে একবার রাঁধে - সেটা দুপুর গড়িয়ে যাবার আগেই। সেই রান্না সন্ধ্যায় একপ্রস্থ খাওয়া হয়। বাকিটুকু সকালে খাওয়া হয়। সেদিন কেন যেন জমিলার দেরি হয়ে গিয়েছিল। গরুগুলোকে গোয়ালে পানি খেতে দিয়ে উঠোনে দাঁড়াতে দেখে উঠোনের ঘর লাগোয়া কোনে জমিলা রান্না করছে। খড়ের আগুনে বাতাস লেগে ছাই উড়ে জমিলার চুলে-কপালে-গালের পাশে সাদা সাদা হয়ে লেগে আছে। হামিদের পায়ের শব্দ শুনে জমিলা তার ঘর্মাক্ত মুখটা তুলে চেয়ে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। একটু লাজুক হেসে বলে, “রান্ধন অহনঐ অইয়া যাইবো। তুমি আত-মোখ ধুইয়া আহ”। জমিলার এই সাধারণ কথাটা হামিদের কাছে সঙ্গীতের মতো মনে হয়। তার মুখটা গল্পে শোনা বানেছা পরীর চেয়ে সুন্দর বলে মনে হয়। হামিদ জানে, শাহাবুদ্দিন মেম্বরের বাড়িতে কাজ নিলে জমিলাকে হঠাৎ এমন করে দেখার সুযোগটা আর থাকবে না।
জমিলাই বা কেন হামিদকে তাড়িয়ে দিচ্ছে না - সেটা নিয়ে জমিলা অনেক ভেবেছে। নূর ইসলামের অনুপস্থিতিতে রাতে বাড়ির চালে ঢিল পড়া বা দরজায় ধাক্কা দেয়ার ব্যাপারগুলো হামিদ বাড়িতে থাকায় বন্ধ হয়েছে। এতে জমিলা কিছুটা স্বস্তির মধ্যে আছে। তবে রাতে ঘুমাতে যাবার সময় বা রাতে টাট্টিখানায় যাবার সময় ছোট দা’টা সাথে রাখা সে বন্ধ করেনি। সকালে গোয়াল ঘরে ঢুকলে দেখা যায় হামিদ ছালা (চট দিয়ে বানানো ধানের বস্তা) গায় দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ঘুমালে হামিদকে শিশুর মতো লাগে। তখন তাকে ঘুম থেকে জাগাতে ইচ্ছে করে না। তবু তাকে না জাগিয়ে উপায় নেই। হামিদ না থাকলে রোজ সকালে এই দৃশ্যটা দেখতে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এটা হামিদকে বাড়িতে রাখার জন্য কোন কারণই হতে পারে না। তবু জমিলা হামিদকে চলে যেতে বলতে পারে না।
শাহাবুদ্দিন মেম্বার আর মঞ্জুর হুমকি দেবার কয়েকদিন পরের কথা। গরু নিয়ে বাড়ি ফিরতে হামিদের আবারো তাদের সাথে দেখা হয়ে যায়। এবার শাহাবুদ্দিন তাকে দেখে রাগে ফেটে পড়ে,
- ঐ বান্দির পুত! তরে না কইসিলাম নূর ইসলামের বাইত থেইক্যা যাইতে গা। আমার বাইত কাম করতে কইসিলাম না! তয় অহনো ঐ বাইত রইসস্ ক্যা? নূর ইসলামের বউয়ের লগে তর আশ্নাই অইসে?
- তোবা তোবা! এইসব কী কন মেম্বর সাব। আমি তাগো বাড়ির কামলা মানুষ। আর আমি হ্যারে ভাউজ (বড় ভাইয়ের স্ত্রী) বইলা জানি।
মঞ্জুর তেড়ে এসে বলে,
- রাখ্ তর ভাউজ! তর ভাউজের খ্যাতা পুড়ি। কাউলকার (আগামীকালের) মইদ্যে মেম্বর সাবের বাইত কামে না লাগলে তর খবর আছে।
হামিদ বিব্রত মুখে “আইচ্ছা” বলতেই মঞ্জুর ধুম্ করে তার মুখে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয়,
- বান্দির পুত আবার যুদি “আইচ্ছা” কইসস্ তো তর মোখ ভাইঙ্গা দিমু।
হামিদ কিছু না বলে গামছাটা মুখে চেপে ধরে বাড়ি চলে যায়।
হামিদের ফোলা মুখ জমিলার চোখ এড়ায় না। জমিলা জানে হামিদ মারামারি করার মানুষ না। সুতরাং ঘটনার মূলে যে জমিলার সাথে একা বাড়িতে হামিদের থাকা সেটা বুঝতে তার সময় লাগে না। জমিলা হামিদকে কিছু বলে না, কিন্তু এক অস্ফূট রাগে সে গন্গন করতে থাকে। হামিদ নীরবে গোয়াল ঘরে মশা তাড়াবার ধোঁয়া দিতে থাকে।
রাত একটু গভীর হতে হঠাৎ করে দম্কা হাওয়া দিয়ে ঝড় শুরু হয়ে যায়। সেই সাথে প্রথমে বড় বড় ফোঁটায় পরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় - বছরের প্রথম বৃষ্টি। বৃষ্টির শুরুতে হামিদ ব্যাপারটিকে পাত্তা না দিলেও গোয়াল ঘরের চালের বড় বড় ফুটো দিয়ে পানি পড়ে গোটা মেঝে ভাসিয়ে দিলে তার পক্ষে আর সেখানে থাকা সম্ভব হয় না। হামিদ এক দৌড়ে জমিলার ঘরের বারান্দায় উঠে আসে। বৃষ্টির শব্দ প্রচণ্ড হলেও জমিলা ঠিক বুঝতে পারে হামিদ তার ঘরের বারান্দায় চলে এসেছে। বাতাস আর বৃষ্টির বেগ বাড়তে থাকলে জমিলার মনে হয় বারান্দাটা আর হামিদের জন্য নিরাপদ নয়। কুপিটা জ্বালিয়ে জমিলা ঘরের দরজা একটু ফাঁক করে উঁকি দিয়ে দেখে গোটা বারান্দা পানিতে ভেসে যাচ্ছে, আর তার এক কোনায় হামিদ গুটিশুটি মেরে বসে আছে। জমিলা একটু দ্বিধা নিয়ে বলে, “অই মিয়া, ঘরে আহ। তুমি ত ভিইজ্যা যাইতাছ”। হামিদ জমিলার কোন কথা শুনতে পেয়েছে এমন লক্ষণ দেখালো না। জমিলা এবার একটু বিরক্তির সাথে গলা চড়িয়ে বললো, “অই মিয়া কতা কানঅ যায় না? তোমারে না ঘরে আইতে কইলাম”!
হামিদ হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে গামছাটা কষে বাঁধতে থাকে। বিজলীর আলোয় হামিদের চোখ-মুখ জমিলার কাছে কেমন অচেনা, জান্তব মনে হয়। জমিলা একটু ঘাবড়ে যায়। কিন্তু হামিদ জমিলার দিকে বা ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে যাবার বদলে উঠোনে নেমে পড়ে নির্বিকার ভঙ্গীতে বাড়ির বাইরের দিকে হাঁটা দেয়। এইবার জমিলা সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে যায়। ভয়ার্ত গলায় সে চিৎকার করে ওঠে, “অই মিয়া! তোমার কি মাতা খারাপ অইল? এই বাদ্লার মইদ্যে বাইরায়া কি মরবা নি? যাও কই”? হামিদ জমিলার কথার কোন উত্তর দেয় না, একবার ফিরেও তাকায় না। আস্তে আস্তে সে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
পরদিন থেকে হামিদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। জমিলার পক্ষে হামিদের সন্ধানে বের হওয়া সম্ভব নয়। গ্রামের লোকজনেরও এই ব্যাপারে কোন দায় নেই। তবু কয়েকদিন ধরে তাদের আলোচনায় হামিদের নিখোঁজ হয়ে যাবার বিষয়টা থাকে। কালীগঙ্গা নদীর গুদারার মাঝি গণি সে’দিন রাতে যথারীতি তার কোষা নৌকাটা পাড়ের দিকে উপরে তুলে খুঁটির সাথে শিকল-তালা দিয়ে আটকে রেখেছিল। তার তালের হাল্কা-ছোট ডোঙাটা নৌকার পাশেই দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। ঝড়ের পরদিন সকালে নৌকাটা অক্ষত পাওয়া গেলেও ডোঙাটার কোন হদিস্ পাওয়া যায়নি। কারো কারো ধারণা হামিদ ডোঙাটা নিয়ে কালীগঙ্গা বেয়ে কোথাও চলে গেছে। কিন্তু গণি মাঝি জানে হামিদের মতো আনাড়ি মানুষ দূরে থাক, তার নিজের মতো দক্ষ মাঝির পক্ষেও অমন ঝড়-জলের মধ্যে কালীগঙ্গায় ভারসাম্য রেখে ডোঙা বাওয়া সম্ভব না। তার ধারণা হামিদ হাঁটাপথেই কোথাও চলে গেছে, আর তার চলে যাওয়ার পেছনে মঞ্জুরের ঘুষিটাই কারণ। হামিদকে ঘুষি মারার কথাটা মঞ্জুর নিজেই সবাইকে ফলাও করে বলেছিল। জমিলারও ধারণা হামিদ হেঁটে হেঁটেই এই গ্রামের পর হোগলাকান্দি, দড়িগাঁও, গালিমপুর ছাড়িয়ে আরো দূরে কোথাও চলে গেছে। পথে দুর্ঘটনায় পড়ে সে মারা যেতে পারে এমন অলক্ষুণে কথা জমিলা ভুলেও মনে আনতে চায় না।
হামিদ হাঁটা পথেই যাক আর কালীগঙ্গা নদী বেয়েই যাক এই গ্রামের কেউ তাকে চলে যেতে দেখেনি - যেমন এই গ্রামের কেউ তাকে আসতেও দেখেনি।
মন্তব্য
শুরুর দিকে একটু খটকা লেগেছিল, বাকিটুকু ঝরঝরে। একটানে শেষ করে ফেলেছি। ছোট গলপের মজাই আলাদা
ধন্যবাদ। ভাষা বা বর্ণনার অসাচ্ছন্দ্যের জন্য পাঠক যদি আটকায় তাহলে তার দোষ পুরোপুরিই লেখকের। আমার লেখার এই দোষের কথা আমি জানি। কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসম্ভব সুন্দর।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভালো লাগল।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শেষ বৃ্ষ্টির দৃ্শ্য়ে মেটালিকার হোয়ারেভার আই মে রোম গানটিকে মনে পড়েছে খুব।
.....and the earth becomes my throne
I adapt to the unknown
Under wandering stars I've grown
By myself but not alone
I ask no one
And my ties are severed clean
Less I have the more I gain
Off the beaten path I reign
Rover, wanderer
Nomad, vagabond
Call me what you will....
দুর্বল লেখকের লক্ষণ হচ্ছে, তার চিন্তাভাবনা পুরোপুরি বলার আগেই পাঠক পড়ে ফেলতে পারে। মাথার ভেতর গল্পটা যখন শুরু হয় তখন এই অংশটা দিয়েই শুরু হয়েছিল। দৃশ্যটা মনে মনে যা ভেবেছিলাম তার কণামাত্রও লেখায় ফুটিয়ে তুলতে পারিনি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভালো লাগছে কিন্তু জুত পাইলাম না , কাহিনীটা জমে উটছিল কিন্তু ধুম করে শেষ করে দিলেন।
গল্প জুতের না হলে পাঠক পড়তে জুত পাবে কী করে বলুন! আর এটা তো গল্প প্রচেষ্টা, উপন্যাস নয়। তাই ব্রেক করতে বাধ্য হয়েছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমৎকার গল্প!
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
'বীরা', 'কামলা', 'মুনিস' 'আধা-কট' শব্দগুলোকে ভালই রপ্ত করেছেন! দীর্ঘকাল যাবত গ্রামে যাতায়াতের সুবাদে এ শব্দগুলোর সাথে আমি ভালভবেই পরিচিত। ধান কাটার মৌসুমে আমাদের গ্রামেও এ রকম কৃষি শ্রমিকের দল আসে। স্থানিয়রা তাঁদের 'দক্ষিনে' বলে।
ভাল লাগলো হামিদ মিয়াকে। আর সত্যিই আমি আমার গ্রামের বৈঠকখানায় বসে প্রবল ঝড়-জলের দৃশ্য অবলোকন করলাম।
খুব ভাল অনুভূতি হলো। ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ।
এই পরিভাষা আমাদের পরিচয়ের অংশ। মানুষগুলোকে আর তাদের কর্মকাণ্ড একটু মমতা দিয়ে দেখলেই এই পরিভাষা আয়ত্বে এসে যায়।
কামলা'র দল কোথাও 'দক্ষিণে', কোথাও 'পূব্বা', কোথাও 'মফিজ', কোথাও 'চৌড়া' নামে পরিচিত। তাদের যে নামেই ডাকা হোক তাদের শ্রেণী অবস্থানে আর তাদের প্রতি আমাদের ব্যবহারে কোন পার্থক্য হয় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খুব পরিচিত একটা অসাধারণ মুগ্ধকর আরামদায়ক বর্ণনা। শহিদুল জহির স্যারের কথা মনে পড়ে গেলো কেন যেন।
একটা সার্থক ছোটগল্প বলা যেতে পারে এটাকে।
অ- ট' -- পাখি, বিঘা, পুরা এমনকি কাঠা, জমির এই পরিমাপগুলো একেক এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ জমি নির্দেশ করে।
--------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
ধন্যবাদ। আমি শহীদুল জহিরের মুগ্ধ পাঠক। তবে লেখার সময় তাঁকে বা তাঁর চেয়েও বড় 'ঘাতক' আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে প্রবলভাবে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করি।
জমির পরিমাপ নিয়ে আপনার বক্তব্য সঠিক। এক কানি জমি আমি কোথাও ত্রিশ ডেসিমেল, আবার কোথাও বিশ ডেসিমেল হিসেবে দেখেছি। বাংলাদেশে জমির মাপ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম বলেই সরকার মেট্রিক সিস্টেম চালু করেছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারী কাগজপত্রে পর্যন্ত তার ব্যবহার শুরু হয়নি। সরকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ দেয় কাঠা হিসেবে। ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিলে সাথে জমি মেলে অযুতাংশ হিসেবে। মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেয় বর্গফুট হিসেবে। ফ্ল্যাট বাড়ির উপর ট্যাক্স দিতে হয় বর্গমিটার হিসেবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাণ্ডব দা-- ঐ ঘাতকদের বড় ভালু পাই। তাই না ঠেকাইলেও ক্ষতি নাই।
এদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা গত ১১ মাস ধরে খুব কাছে থেকে দেখছি এবং কাজও করতে হচ্ছে এই নিয়ে। ভূমি ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনা, অসঙ্গতি, আর সাধারণ মানুষের ভোগান্তিগুলো তাই খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ (অথবা দুর্যোগ) ঘটছে আমার। এই নিয়ে হয়ত অন্য কোথাও আরও বিশদ আলোচনা করা যেতে পারে---
আপনার গল্পের শুরুটার মতন একটা প্লট বেশ কিছুদিন ঘুরঘুর করছিল মাথায়। কিন্তু এগুতে পারছিলাম না। আপনি যেন আমায় ভারমুক্ত করলেন। এতো সুন্দর করে পরিনতির দিকে আমি কখনই টেনে নিয়ে যেতে পারতাম না। এইফাকে আপনাকে ঈর্ষা জানায়ে গেলাম---
---------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
ভালো লাগলো গল্প, বিশেষ করে শেষ লাইনটা,"হামিদ হাঁটা পথেই যাক আর কালীগঙ্গা নদী বেয়েই যাক এই গ্রামের কেউ তাকে চলে যেতে দেখেনি - যেমন এই গ্রামের কেউ তাকে আসতেও দেখেনি।"
এভাবে যাওয়া আসার ইচ্ছা আমার বহুদিনের, টমাস সয়ার যেমন দেখতে চেয়েছিল তার মৃত্যু কাউকে কাঁদায় কি না।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
ধন্যবাদ। হামিদের মতো চলে যেতে চাইলে পেছনে কেউ কাঁদলো কিনা সেটা কিন্তু ভাবা যাবে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ একটা গল্প পড়লাম!
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গল্পের পরিণতি কি হতে পারে ভাবতে ভাবতে পড়া শেষ করে দেখলাম একটাও মেলেনি। চমৎকার হয়েছে সমাপ্তিটা। একটা মুভির নাম মনে পড়লো, ম্যান ফ্রম নোহোয়ার!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ। মুভিটি দেখিনি। কার মুভি?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কোরিয়ান মুভি Lee Jeong-beom এর।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ও তো বিশাল মার মার কাট কাট ছবি। এক পিচ্চিকে বাচানোর ঘটনা নিয়ে না?
হ। ঘটনা মিল নাই। নামটা মনে পড়ছে কেবল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
জটিল লাগলো ভাষা এবং লেখনী।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দারুণ লাগল| পড়তে পড়তে বারবারই ভাবছিলাম এ কি শিকড় গাড়বে? শেষটা এত সুন্দর লাগল!
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
কোন কামলা তার মৌসুমী কর্মক্ষেত্রে সাধারণত শেকড় গাড়ে না। তবে যে কামলা মুনিস হয়ে যায় সে শেকড় গাড়ার কথা। হামিদ না পেশাদার কামলা, না পেশাদার মুনিস। তাই বোধহয় এমনটা হলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভাল লাগল।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
থামিয়ে দিলেন যেনো। আরও চলতে চাচ্ছিলো। আমার এমন হয়, লিখতে আলসেমির কারণে থেমে যাই, নয়তো সব বলা শেষ হয়ে যায় কোন ফাঁকে সেটা টের পাই না। আপনারটা কেনো হলো বুঝতে পারছি না। নাকি এটাই চেয়েছেন...
শব্দের অর্থগুলো গল্পের মাঝখানে না দিয়ে শেষে টিপ্পনিতে দিতে পারতেন। এভাবে দিলে কেনো যেনো পড়ার ধ্যানটা একটু হড়কে যায়।
শেষ কথা হলো, অনেক ভালো লাগলো। অনেক।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
১। আমি আসলে এ'টুকুই চেয়েছিলাম। যদিও মাথার ভেতর দৃশ্যগুলো যেমন ছিলো তার কিছুই ফুটিয়ে তুলতে পারলাম না।
আলস্য আমাকেও ভর করে। দেখেন না মাসের পর মাস চলে যায় লেখা শেষ করতে পারি না বলে পোস্টও করতে পারি না।
২। গল্পের মাঝখানে শব্দার্থ দেয়াটা একেবারেই বেঠিক কাজ। শব্দার্থ ফুটনোটে দিলে পাঠকের পড়ার ফ্লো'টা ঠিক থাকে। তবু আমার মনে হয় কি, একটা শব্দের ঠিক মানেটা না জানলে শব্দটা পাঠকের মাথায় কেবল ঘুরপাক খেতে থাকে। এতেও বোধকরি পড়ার ফ্লো নষ্ট হয়। যাই হোক, পরের বার থেকে ফুটনোটেই শব্দার্থ দেবো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাঠক একটা নতুন শব্দ পেলে, সেটার অর্থ খুজতে থাকলে তারও একটা আনন্দ আছে কিন্তু।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
এইবার সব কিলিয়ার। থ্যাঙ্কু।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খুব সুন্দর, ঝরঝরে।
_____________________
Give Her Freedom!
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শেষটা বেশ হয়েছে।
facebook
শেষটা জোর করে এমন করিনি, আপনা থেকেই এমনটা হয়েছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারন লাগলো পাণ্ডব।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনার বলে যাওয়ার পুঙ্খানুপুঙ্খ অথচ নির্বিকার ভঙ্গিটি আমাকে খুব আকর্ষণ করে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন