যে আমলে আমি আর দিশা দিনমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যত্রতত্র বসে বাদাম আর ঘাস চিবোতাম সে আমলে আমাদের বসার একটা প্রিয় জায়গা ছিল পাবলিক লাইব্রেরীর অডিটোরিয়ামে ঢোকার সিঁড়িটা। জায়গাটাতে একটু সকাল সকাল যেতে হতো নয়তো আমাদের মতো ঘাসচিবোনো অন্য কোন যুগল জায়গাটা দখল করে ফেলতো। ওখানে আরাম করে বসা যেতো, তাছাড়া দিনমান ছায়াও থাকতো। ওই জায়গাটার পাশেই অডিটোরিয়ামে ঢোকার মুখের চত্বরটাতে কয়েকজন মানুষ বসবাস করতো। তাদের একজন কবি, একজন গায়ক, একজন বাদক, একজন চিত্রকর।
বয়সে চিত্রকর সবচে’ বড়, তারপর বাদক, তারপর কবি, সবশেষে গায়ক। এই চারজন ছাড়া আরো কয়েকজন আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকতো। তাদের মধ্যে একজন ছিল বয়ষ্ক চিত্রকরের অল্পবয়সী সঙ্গিনী - দেখতে কমবয়সী সালমা হায়েকের মুখটা একটু গোল হলে যেমন হতো তেমন। আরেকজন বৃদ্ধ - সম্ভবত বদ্ধ উন্মাদ। গাঁজা টানার আশায় নানা শ্রেণীর আরো লোকজন আসতো। সাইকেল স্ট্যান্ড থেকে অডিটোরিয়াম পর্যন্ত আড্ডা, গান আর গাঁজার মেলা।
কমবয়সী গায়কের কণ্ঠ খুব সুন্দর ছিল। সে কেবল একটা গানই ঘুরে ফিরে গাইত - “এই মেয়ে - শোন, শোন! ছেলেটার বুক ভাঙলে কেন”!! গানটা বোধকরি তারই লেখা ও সুর করা। কেউ হয়তো কখনো বলেছিল যে, তার কণ্ঠ সুন্দর - গাইলে বড় শিল্পী হবে। তাই হয়তো সঙ্গীত শিক্ষা, সঙ্গীত চর্চ্চা এসব কোন কিছুর মধ্য দিয়ে না গিয়ে নিজে নিজে নামজাদা শিল্পী হতে চেয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঠাঁই হয়েছে পাবলিক লাইব্রেরীর উঠোনে। এর তার কাছ থেকে চেয়েচিন্তে সে ধোঁয়া টানতো - সাদা, নীলচে দুটোই।
মাঝবয়সী বাদকের চুল লম্বা, ছেড়ে দেয়া। হতশ্রী গিটারে কেবল টুংটাং রবই তুলতো, কখনো আস্ত পিস্ বাজাতে শুনিনি। একদিন সকালের দিকে হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামলে বাদক গিটারে ঝংকার তোলার চেষ্টা করে কখনো শুনিনি এমন একটা গান গাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু গানটা বেশি দূর না জানার জন্যই হোক অথবা গায়ক-কাম-বাদকের দম না থাকার জন্যই হোক সেটা অর্ধেকের বেশি আগায়নি।
বয়ষ্ক চিত্রকরের মাথার সামনের দিকে ইন্দ্রলুপ্তির হাতছানি, পেছনে অল্প লম্বা চুলের অবশেষের খোঁপা। তার কাঁধে ঝোলা, সেখান থেকে পাকানো-মলিন ড্রয়িং পেপার উঁকি দেয়। চিত্রকরকে কখনো কিছু আঁকতে দেখিনি। কেবল দেখেছি অন্যদেরকে নানা বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ উপদেশ দিতে - যার কোনোটা তার নিজের জীবনেই খাটেনি। যখন তার সঙ্গিনী হাজির হতো তখন তারা হাঁটতে বা রিক্শা করে ঘুরতে বের হতো। তবে সেই বেড়ানোর দৌড় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। সঙ্গিনী প্রথম প্রথম আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো পরিচ্ছন্নই ছিল। আস্তে আস্তে চিত্রকরের প্রভাবে তার জামাকাপড়চেহারা অপরিচ্ছন্ন-অস্বাভাবিক হতে থাকলো। তারপর একসময় তার কাঁধেও ঝোলা উঠলো। সেই ঝোলা থেকেও পাকানো-মলিন ড্রয়িং পেপার উঁকি দিতো। বলাই বাহুল্য, সঙ্গিনীকেও কোনদিন কিছু আঁকতে দেখিনি।
কবি’র চুলের দৈর্ঘ্য কখনো কমতো, কখনো বাড়তো। মাঝেমধ্যে দেখা যেতো কোত্থেকে যেন সে স্নান করে এসেছে। তার একটা ট্রাভেল ব্যাগ ছিল। সে হয়তো ঘর ছাড়ার সময় এই ব্যাগটা নিয়েই বের হয়েছিল। কবির কণ্ঠও ভালো ছিল। ঘুরেফিরে নিজের লেখা কয়েকটা কবিতা আবৃত্তি করতো। একদিন সে আমাদের সামনে হাজির হয়ে আবদার জানালো যে তার একটা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে আমাদের শোনাবে। যদি কবিতাটি আমাদের ভালো লাগে তবে তাকে “মর্ধাহ্নকালের আহার” করাতে হবে। দু’জন মানুষ যখন একসাথে ঘাস চিবোতে থাকে তখন সেখানে তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি বাঞ্ছনীয় নয়। স্বাভাবিকভাবেই আমি কবিকে হাঁকিয়ে দিয়েছিলাম।
এই সৃজনশীলের দলের লোকদের বহিরঙ্গ যে কোন ভিখিরীর চাইতে খারাপ ছিল। কাপড়চোপর নোংরা-ময়লা। কবি ছাড়া বাকিরা শেষ কবে স্নান করেছে বা হাত-মুখ ধুয়েছে মনে করতে পারবে বলে মনে হয় না। চুল উস্কোখুস্কো জটাপড়া, দাঁত ময়লা - দুর্গন্ধে তাদের কাছে ঘেঁষা দায়। পাবলিক লাইব্রেরী চত্বরই তাদের থাকার জায়গা। অন্নসংস্থানের মূল উপায় ভিক্ষাবৃত্তি, আরো সম্ভাব্য উপায় গাঁজা বিক্রী করা আর ছুটকো-ছাটকা চুরি বা ছিনতাই। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে তারা কোন সৃজনশীল কর্মটি করতে পেরেছে তার কোন খোঁজ কখনো পাইনি। সত্যিকারের সৃজনশীল মানুষদের কাছ থেকে বা একটু দূর থেকে দেখার ঢেড় সুযোগ জীবনে পেয়েছি। সেসব মানুষদের বড় অংশই চালচলন-কথাবার্তা-পোশাকআশাক-আচারব্যবহারে আমাদের মতই মানুষ। কেউ কেউ এমনকি পোশাকে-আচারে খুব ফরমালও হয়। বস্তুত সৃজনশীল হবার জন্য পাবলিক লাইব্রেরী প্রাঙ্গনের ঐ লোকগুলোর মতো এমন ভেক ধরার কোন প্রয়োজন নেই।
এর বেশ কয়েক বছর পরে, যখন আমি আর দিশা মাঠে বসে ঘাস খাওয়ার বদলে ঘরে বসে কোমর বেঁধে ঝগড়া করি তখন একসময় আমি দোকানদারী শেখার জন্য আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত গেলাম। সপ্তাহের তিন-চার দিন শেষ বিকেলে কর্মস্থল থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে দোকানদারীর পাঠ নিতে যেতে হতো। কোন কোন দিন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে তিন-চার জন মিলে ক্যাম্পাসের ভেতর হাঁটতাম, চানাচুর মাখানো বা হটপ্যাটিস-চা খেতাম। খুব খিদে পেলে ক্যান্টিনে রুটি-ডিম খেতাম। অমন একদিনে বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যমঞ্চের প্রাঙ্গনে দেখি এক তেলেভাজাওয়ালা ব্যাঙের ছাতা ভাজছে। হোকনা সেটা ব্যাঙের ছাতা - মশলা মাখিয়ে, বেসনে চুবিয়ে, ডুবোতেলে ভাজা হয় এমন জিনিস না খাবার প্রশ্নই ওঠেনা! আমরা দলবেঁধে দাঁড়িয়ে যাই। এমন সময় দেখি কোথা থেকে পাবলিক লাইব্রেরীর সেই কবি হাজির। খালি গা, পরনে ছেঁড়া লুঙি, হাতে কলাপাতার লম্বা ডগা - বদ্ধ উন্মাদ। সে বিনিপয়সায় “খাদ্য” দাবি করলে তেলেভাজাওয়ালা তাকে গরম হাতা দিতে মারতে উদ্যত হয়। সে তখন “তুমি যেই অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করিয়াছ, সেই হুতাশনেই তুমি অঙ্গারীভূত হইবে” জাতীয় সাধুভাষায় অভিশাপ দেয়া শুরু করল। তেলেভাজাওয়ালার সহকারী তাকে একটা চ্যালাকাঠ নিয়ে তাড়া করলে সে দৌড়ে পগার পার। উপস্থিত একজন জানালেন কবি নাকি এক কালে চারুকলার শিক্ষার্থী ছিল। দিনের পর দিন ক্রমাগত গাঁজা খেতে খেতে সে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে পড়ে। এই সংবাদটিকে আমার কাছে আংশিক সত্য বলে মনে হয়।
অন্তত এক দশক সময় একটু দূর থেকে দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রকে (টিএসসি) ঘিরে একদল মানুষকে সৃজনশীলতার নানা শাখায় গণ্ডার মারার চেষ্টা করতে। সৃজনশীলতায় গণ্ডার মারার জন্য বিশেষ কোন জায়গায় জমায়েত হবার বা দলবাজী করার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা “ঠ্যালার নৌকা শুকনা দিয়ে চালানো”-র চেষ্টা করে তাদের জন্য জায়গাটা, দলটা, ভেকটা এগুলো খুব জরুরী। এভাবে এক সময় দেখা গেলো টিএসসি এলাকাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয় এমন সব আর্ট-কালচার ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ী আর জুয়ারীদের দখলে চলে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন এইসব আবর্জনাদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করলেন তখন ‘সৃজনশীলতার একমাত্র ধারক-বাহক’রা একটু এতিম হয়ে গেলো। একটা দল কাছের আজিজ মার্কেটে ঠাঁই নেবার চেষ্টা করলো আর কেউ কেউ চারুকলার সামনে জড়ো হবার চেষ্টা করলো। এরপর আজিজের করিডোরে, ফাঁকা দোকানে আর সামনের ফুটপাথে তাদের রমরমা কম করে হলেও এক দশক ধরে চলেছে। এই সময়ে আমি কখনো আজিজে গেলে ‘পাঠক সমাবেশ’-এর সামনে ঝালমুড়ি-ছোলাভুনা-চা খেতে খেতে বা বিড়ি টানতে টানতে পাশে জমায়েত সৃজনশীলতার একমাত্র ধারক-বাহকদের কথা শুনে বোঝার চেষ্টা করতাম।
এটা দাবি করবো না যে আমি অনেক লেখাপড়া জানা বা খুব পড়াশোনা করা মানুষ। তবে পরীক্ষায় পাশ করার জন্য পড়ার বাইরে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জসীম উদ দীন-জীবনানন্দ-শরৎচন্দ্র-মানিক-বিভূতিভূষন-শামসুর রাহমানদের মতো সাহিত্যিকদের রচনা একআধটু পড়েছি। বাংলা সাহিত্যে তাঁদের অবস্থান কোন পর্যায়ে সেটাও আমি বুঝতে পারি। আজিজ মার্কেট গরম করে তোলা সৃজনশীলদের কথা শুনলে মনে হতো বাংলাদেশে তো বটেই বর্তমান দুনিয়াতেও তাদের মাপের শিল্পী-সাহিত্যিক খুব একটা নেই। নিজেদের পেয়ারের লোক ছাড়া জগতের তাবৎ মানুষ ও তাদের মেধা-যোগ্যতা-কর্ম সম্পর্কে এদের ছিল সীমাহীন অশ্রদ্ধা। “নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জ-ভৈরবের বাইরে কোন আধুনিক কবি নেই” এমন ধরনের আজব উড়ো কথাও শুনেছি। বইয়ের বাজার থেকে আজিজ মার্কেট তৈরি পোশাকের বাজারে পরিবর্তিত হবার সাথে সাথে এরা আবারও উদ্বাস্তু হতে চলেছে। কনকর্ডের বইয়ের বাজারে কী কারণে যেন তারা জুত করতে পারেনি। তাই সবাই মিলে চারুকলা ইনস্টিটিউটের উল্টোদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাটের চারপাশে জড়ো হয়েছে।
পুতুলদা’ ঢাকায় আসলে তাঁকে পাবলিক লাইব্রেরীতে অপেক্ষা করতে বলি। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে ‘শিখা চিরন্তন’ দেখানোর জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকি। ছবির হাট পেরিয়ে শিখা চিরন্তনে যাবার পথটাতে উঠতে দেখি পাবলিক লাইব্রেরীর সেই কবি। এখনো বদ্ধ উন্মাদ, অথবা উন্মাদের ভেক ধরে আছে। কাকে যেন বঙ্কিমীয় ভাষায় গালাগালি করছে “যথাসময়ে সম্মার্জনী ফেরত না দেয়া” সংক্রান্ত বিষয়ে। ভেক ধরা বা ভান ধরা এইসব সৃজনশীলদের পরিণতি এমনটাই হবার কথা। মস্তকের কোটরে ধুসর পদার্থের ঘাটতি থাকলে, যথাযথ শিক্ষা না থাকলে, নিয়মিত চর্চ্চা না থাকলে কেউ যতোই ভেক ধরুক, কৈবল্যধামে আড্ডা পিটাক আর চাপার জোরে তর্ক জিতুক প্রকৃত সৃজনশীলতা তার অধরাই থেকে যাবে।
মন্তব্য
(গুড়)
facebook
পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দারুন লাগল লেখাটা।
ধন্যবাদ। আপনাদের ভালো লাগলে আমার চেষ্টা সার্থক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চ্রম লিখছেন বস।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ। পোস্টের বিষয় নিতান্ত সাধারণ কথা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মারাত্মক একটা লেখা।
আমি এই অঞ্চলের শিক্ষার্থী না হয়েও ৭/৮ বছর টানা এই অঞ্চলে আড্ডা দিয়েছি। এই অঞ্চলের অসংখ্য কিশোর তরুণ একটা ঘোরের মধ্যে বাস করে। সেই ঘোর থেকে অনেকেই ঠিক সময়ে বের হতে পারে না। এইদের পরিণতি কখনোই ভালো হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। এই জায়গাটার একটা নেশা আছে। এবং সেই নেশাকে 'সুস্থ' রাখা খুব সহজ নয়।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
জায়গাটার নেশা খুব মারাত্মক নয়, কিছু মানুষ অন্যের মধ্যে মারাত্মক নেশাটা তৈরি করে। আমার কেন যেন মনে হয় এটা একটা মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। কিছু মানুষ না বুঝেই প্ল্যানটা বাস্তবায়ন করে চলেছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পড়া আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পড়লাম । অসম্ভব ভালো লাগল লেখাটা ।
যাক আমার ভাবনা তাহলে ভুল নয়।
এরকম লেখা মাঝে মাঝে দুয়েকটা দিয়েন।
তা আপনার ভাবনাটা কী? সেটাই তো জানতে পারলাম না।
এরকম বা অন্য রকম, কোন রকম লেখাই আজকাল আর লিখে উঠতে পারি না। কোন লেখা শেষ করতে পারলে আপনাদের পাতে তুলে দেই। ভালো-মন্দ বিচারের ভার আপনাদের হাতে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভেক শব্দের মূলে ভিক্ষু, আর ভিক্ষুকের মূলেও তাই থাকলে, ভেকধারীর ভিক্ষা মাগায় সংজ্ঞা অক্ষত থাকে। ভেক যদি শ্রমণের পোশাকমাত্রই হয়, তাহলে পোশাকি চরিত্রে অভিনয় করতেও তাকে কিন্তু কিছুটা সৃজনশীলতা অর্জন করতে হয়।
আবার ভেক শব্দের ভান অর্থ করি যদি, তাহলে ভানের মধ্যেও কিছুটা সৃজনশীলতা পাওয়া যায়। 'মিথ্যা কহে শুধু কত কী ভানে'। মিথ্যামাত্রই সৃজনশীল।
ভান আর ভণিতা এই দুই আবার একসঙ্গে বলে কেউ কেউ। ভণিতা কিন্তু কবিতার শেষে নিজনাম যুক্ত করাকেও বলে। যথা: 'লালন কয় জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে'। সুতরাং সৃজনশীলতা বিনা ভণিতারও অস্তিত্ব নাই।
এখন প্রশ্ন ভেক ভান ভণিতা ইত্যাদিতে যে সৃজনশীলতা সংজ্ঞাগত ভাবে যুক্ত, স্রেফ তাতেই আপনি সন্তুষ্ট কি? আমি কিন্তু না। কারণ, রাজনীতিহীন সৃজনশীলতা ভেকমাত্র। ভেক ভান ভণিতার সৃজনশীলত্বের মূল্যায়নে রাজনীতির আমদানি অবশ্যম্ভাবী।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ভিখ পেতে গেলে ভেক ধরতেই হবে। আর ভেক ধরায় সৃজনশীল হলে ভিখ ভালো মিলবে। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালোঃ সৃজনশীলতা > ভালো ভেক > ভালো পরিমাণে ভিক্ষা। এর উল্টোটা কিন্তু সত্য নয়। অর্থাৎ, ভিক্ষা বা ভেকের মাধ্যমে সৃজনশীলতা/সৃষ্টিশীলতার উদ্ভব হয় না।
ভান দুই প্রকার। এক, বৈষয়িক লাভের উদ্দেশ্যে - যা মিথ্যার সমতুল এবং ব্যক্তিবিশেষকে ক্ষতিগ্রস্থ করে; যেমন, প্রতারকের ভান। দুই, সৃজনশীল ভান - যা নির্দোষ অভিনয়ের সমতুল এবং ব্যক্তিবিশেষকে আনন্দ প্রদান করে; যেমন নৃত্যকলার ভান। এখানে দোষযুক্ত ভানকে প্রতারণার একটা কৌশল আর নির্দোষ ভানকে সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশের একটি অংশ বলতে পারি। অর্থাৎ, ভানের সাথে সৃজনশীলতার উদ্ভব সম্পর্কিত নয়।
ভণিতা ভানের সাথে সমোচ্চারিত হতে পারে না, কারণ ভণিতার সাথে মিথ্যার যোগ সরাসরি নয়। ভণিতার মূল উদ্দেশ্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করা মাত্র। ভালো ভণিতার জন্য সৃজনশীলতা থাকা পূর্বশর্ত, কিন্তু সৃজনশীলতার জন্য ভণিতা পূর্বশর্ত নয়।
ভিখ, ভেক, ভান, ভনিতা’র প্রত্যেকটি রাজনীতির সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িত। যে সৃজনশীলতার চালিকা শক্তি রাজনীতি সেটা চিন্তার বদ্ধতা আর পৌনপুনিকতার দোষে দুষ্ট। রাজনীতি যে সৃজনশীল কর্মকে আপন আলোয় ব্যাখ্যা করে তাকে আপন বলে মানে সেটা সার্থক সৃজনশীলতা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দারুণ
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দারুন ভালো লাগলো পাণ্ডবদা।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এক সময়ে তো একদল আজিজের সামনের সিড়িতে বসেই শুকনো মেরে দিতো। আজকাল আর এদের দেখিনা। আমার পরিচিত কয়েকজনও এই দলে ছিলো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
শুকনার সেন্টার সতত পরিবর্তনশীল। তাই কোন জায়গাতেই এর স্থিতি নেই। আর মধু যদি না থাকে ভ্রমর তো আর খামাখা এসে জুটবে না। আজিজের তাই দুর্দিন চলছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আজিজের দোতলায় কী জানি একটা রেস্তোরাঁ আছে, ভয়ানক সেরকম লুচি বানাতো। সেইটা খাওয়ার লোভে ঐখানে যেতাম। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম চে, কিটস, শেক্সপিয়র আর নিয়েৎশে'র ভাটাকতি হুয়ি আত্মারা সব ঐখানে জড়ো হৈছে, আজিজের লুচির মায়া ত্যাগ করে জান হাতে নিয়ে শাহবাগের পূবালী ব্যাংকের সামনে আর ফার্মগেট ওভারব্রিজের নিচের ভ্যানগাড়ির মামুর কাছে ধর্না দিলাম। বাকী সময়টা ঐখানেই পরোটা-ভাজি-ইত্যাদি-হাবিজাবি খেয়ে পার করে দিছি আল্লা চাহে তো।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
রেস্তোরাঁর নাম 'অন্তরে'। সচলরা মাঝেমধ্যে ওখানে খেতে যায়। লুচি-ভাজি-বুটের ডাল-চা খাবার সময় আমাদের কান কাজ করে না। তাই তখন কোন্ মহাজন কী বয়ান করলো তার কিছুই শুনতে পাই না। খাওয়া শেষে বারান্দায় গিয়ে বিড়ি ধরালে আড্ডার মেজাজটাই পালটে যায়। তখন কোন আত্মা-প্রেতাত্মা আর আমাদের কাছে বেইল পায় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দারুণ লাগল।
কিছুটা কনফিউজড - গল্প প্রচেষ্টা, নাকি জীবনে-থেকে-নেয়া।
কাহিনীর উৎসের ব্যাপারে যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলবো এটা জীবন থেকে নেয়া - ১০০%। এটাকে গল্প প্রচেষ্টা বানানোর চেষ্টা করিনি - দরকার নেই বোধ করি।
অটঃ সচলে লেখার বিপদ হচ্ছে এর পাঠককূল অতিশয় বুদ্ধিমান। আঁকশি দিয়ে লেখকের পেটের কথা বের করে ফেলে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দারুণ
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শাহবাগ চারুকলা টিএসসি এলাকাটাই কেমন যেনো। কিছু লোকজনকে দেখলেই মনে হয় কিরকম একটা ঘোরের মধ্যে আটকা পড়ে আছে। এর থেকে বের হতে চাচ্ছে না, বা পারছে না।
আমার ধারণা সব দেশেই এইরকম কিছু জায়গা আছে, এইরকম কিছু মানুষও আছে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
সব প্রতিষ্ঠানেরই একটা মায়াজাল আছে। সেটা কেটে বের হতে না পারলে সামনে আগানো যায় না। উত্তরণের পথে যে কষ্টগুলো আছে সেগুলোর মুখোমুখি হতে যারা ভয় পায় তারাই ঘোরটা থেকে বের হতে চায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দেয়াল খুঁজলে এমন আটকাপড়া একজন মানুষের সন্ধান পাবে। তার নাম বিশ্বজিৎ দেওয়ান। সে কবি, গীতিকার, নাট্যকার, চিত্রকর, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা - কী না!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমার মনে হত কাউকে কাউকে দেখে- একটা প্রেম হলেই বাবরি চুলে আর্মি ছাট
প্রেম কি ক্যাডেট কলেজ নাকি মিলিটারী অ্যাকাডেমী! আমি তো প্রেমে-অপ্রেমে জীবনের প্রথম ত্রিশ বছর আর্মি ছাট। তারপর থেকে চুলকে বিদায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখাটার সময়কাল যে সময়ের, তখন মাঝে মাঝে খুবই কম গুটিকয়েকবার মফস্বলি গাবর আমার আজিজ মার্কেটে যাওয়া হযেছে বিরল কোন বইয়ের খোঁজেই হয়তো। আজিজ তো ঢাকার বাইরের আমাদের কাছে একটা মিথের মতোই ছিলো। ঢাকায় দিনে এসে দিনে ফিরে যাওয়ার স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতে তখন আজিজের সিঁড়িতে, রেলিংয়ে, লনে সেসব সৃজনশীলদের অন্যরকম পোশাক-আশাক-আচরণ আর মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া দুর্বোধ্য সংলাপগুলো শুনতে শুনতে দেখতে দেখতে বুকের ভেতর থেকে একটা গুমোট দীর্ঘশ্বাসই বেরিয়ে আসতো হাহাকার হয়ে- আহা, এ জীবনে কিছুই হওয়া হলো না !
এজীবনে কিছুই না-হওয়ার দীর্ঘশ্বাসটা এখনো আছে। কিন্তু ঢাকাবাসী হওয়ার পর দেখেশুনে সেই ওদের জন্যেও ইদানিং দুঃখ হয় খুব। যদি সত্যিই কোন সৃজনশীলতা থেকে থাকে, এর ভয়ানক অপচয় দেখে।
ঢাকার বাইরে আজিজ মিথটা কিন্তু এখনো বহাল আছে, হয়তো সত্যিকার আজিজকে চেনে না বলে। লেখাটার নস্টালজিক আবহটা সত্যি নাড়া দেয়ার মতো !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আজিজ বা এমন কিছু জায়গার ক্ষেত্রে এমন মীথ তৈরি করার পেছনের কারণটা বিশুদ্ধ বাণিজ্যিক। এসব জায়গা নিয়ে যা কথা ছড়ানো হয়, নাটক-সিনেমায় ইন্ট্রো দেয়া হয়, পত্রিকায় আর্টিকেল লেখা হয়, ওয়ার্ড অভ মাউথে যা ছড়ানো হয় সবই ঐ বাণিজ্যিক কারণেই। একবার কোনভাবে মীথটা চালু করে দিতে পারলে পরে আপনাআপনি তা চলতে থাকে। এটা নিয়ে মনে কোন আফশোস্ রাখবেন না বস্। আর রণদীপম বসু জীবনে কী হয়েছেন সেটা নিজেকে জিজ্ঞেস না করে অন্যদের কাছ থেকে শুনতে পারেন।
সৃজনশীল কিছু করার জন্য কোন ভেক ধরার বা নিজেকে অপচয় করার কোন দরকার আছে কিনা সেটা আপনি বেশ ভালো জানার কথা। একটা মানুষ সপ্তাহে ছয়দিন দশটা-ছয়টা অফিস করেন, একটা সংসার চালান, কর্মক্ষেত্রে বিরাট দায়িত্বশীল পদে কাজ করেন, স্ত্রী-সন্তানকে যথাসাধ্য সময় দেন, শার্ট-প্যান্ট-টীশার্ট-জিনস্-পাজামা-পাঞ্জাবী পরেন, বিশেষ কোন ভেক নেই, বিশেষ কোন ভাব নেই অথচ দু'হাতে ক্রমাগত লিখে যান - উৎবচন, ইয়োগা, নীতিশাস্ত্র, কিশোর গল্প, দর্শন, ধর্ম, রম্য রচনা, কবিতা। যে পারে সে ভেক-ভাব না ধরেই পারে। যে পারে না তার ভেক-ভাবই সার।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই রকম জায়গা- বইপত্রে পড়া- সমস্ত দেশেই নাকি আছে। পরিবেশের মোহ থেকে বের হওয়াটা একটা অধ্যবসায়ের ব্যাপার। আমি ঠিক নিশ্চিত না, শুধু প্রতিভা সম্বল করে অধ্যবসায়হীন একজন সৃজনশীল কতদূর যেতে পারেন।
'র্যাটাটুলি' এনিমেশনের একটা দারুণ সংলাপ মনে পড়ে গেলো। এভরিওয়ান ক্যান নট বিকাম এ গ্রেট আর্টিস্ট, বাট আ গ্রেট আর্টিস্ট ক্যান কাম ফ্রম এনিহোয়ের।
লেখাটা দারুণ লাগলো, পান্ডবদা।
চর্চ্চা, অধ্যবসায়, পাঠ এগুলো ছাড়া একজন মানুষের সৃজনশীলতার কোন বিকাশ হতে পারে না। গুণী চিত্রকরের বিখ্যাত চিত্রকর্ম দেখে আমরা মুগ্ধ হই। আমরা কতজন এই কথাটা ভাবি যে, ঐ একটা বিখ্যাত চিত্রকর্ম নির্মাণের আগে কত বছর তাকে হোমওয়ার্ক করে যেতে হয়েছে!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মাঝে মাঝে মনে হয়, যারা স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশুনা করেন, তারাও এই রকম একটা ভাব ধরে থাকেন। আগে শুধুমাত্র বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এই ভাব ধরা সীমাবদ্ধ ছিল, এখন বেসরকারী ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়ারাও।স্কুল-কলেজে দীর্ঘসময় একই সাথে কাটিয়েছি যে বন্ধুর সাথে, আর্কির হাওয়া-বাতাসে তাকে বদলে যেতে দেখলাম চোখের সামনে। ক্লাস করা, পরীক্ষা দেয়া এবং পরীক্ষায় সময় মত পাস করার উপর মনে হয় অলিখিত কারফিউ আছে। অথবা এইগুলো করলে জাতে ওঠা যায় না।
এই বিষয়টা নিয়ে কোন কথা বললাম না - মার খাবার চান্স আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভালো লেগেছে।
ভেক ধরা সৃজনশীলদের জন্য সবসময়ই
কেউ যদি প্রকৃত সৃজনশীল হন এবং ক্রমাগত সৃষ্টিকর্ম করে যান তাহলে তিনি ভেক ধরলে তাকে 'ঠুয়া' দেবেন কেন? 'ঠুয়া' তাকে দেবার কথা বলতে পারেন যার শুধু ভেকটাই আছে - ভেতরটা ফাঁকা, আর সেই ভেক নিয়ে সবাইকে উত্যক্ত করে বেড়ায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখাটা নস্টালজিক করে দিল। ইউনি জীবনে পাবলিক লাইব্রেরি গেলেই এদের হাতে ধরা খেতে হত। টাকা না দিলে নিস্তার নেই, বদলে একই গান শুনতে হত দিনের পর দিন। অনেক বছর পর এখন সেখানে গেলে দেখি সব ফাঁকা ফাঁকা, কেউ নেই। কেমন যেন অচেনা লাগে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
পাবলিক লাইব্রেরীর অনেক কিছুই এখন বদলে গেছে। এখন আর সারা রাত লাইব্রেরী খোলা থাকে না। কম্পাউন্ডে বিড়ি খাওয়া যায় না। কিছুদিন পর পর একটা করে বইমেলা হয়। সস্তার ক্যান্টিনটা গলাকাটা দামের ক্যান্টিন হয়ে গেছে। সৃজনশীলের দলকে বহু আগে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়েছে। ঘাসচিবোনোর দলও এখন ওখানে বিশেষ যায় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমৎকার লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই মানুষ গুলোর জন্য মায়া হয়। আমার ফুপাত ভাই ভাল নজরুল গীতি গাইতো। কলেজে পড়তো কুমিল্লা শহরে ভইয়ের বাসায় থেকে। সে সময় কোন গুনী গায়কের কাছে তালিম নিয়ে উচ্চাঙ্গ সংগীত শিখে নিজেই ওস্তাদ হয়ে গেল। গলাটা সত্যিই দারুন ছিল। বিটিভিতে কোন প্রগ্রামে গাইল। শুরু হলো শিল্পী জীবন। পড়া, লেখা বাদ দিয়ে গান লেখা সুর করা নিয়েই মেতে রইলেন। কিন্তু নিয়মিত পরিবেশনের সুযোগ পান না। ঢাকায় থাকা দিনে দিনে কঠিন হল। বাড়ি থেকে টাকা পয়সা বন্ধ। আমাদের সাথে দেখা হলেই দুদশ টাকার জন্য হাত পাততে শুরু করলেন। পয়সা দেয়ার ভয়ে এলাকাটা এড়িয়ে চলতাম।
অনেক দিন পরে শুনলাম রিপন ভাইয়ের মাথা খারাপ।
সে দিকে ঝুকে পরার ভয় আমারও ছিল। কোন একটা সিনেমায় তিন সেকেন্ডের সংলাপ দিয়ে হিরো হয়ে গেলাম। পাগলার পপুলার ষ্টুডিওতে অনেকদিন যাতায়ত করলাম। লাভের মাঝে একটা বউ পাইলাম। দায়ীত্ব মাথায় থাকলে ঐ ভেক আর ধরা যায় না। চাপা মেরে অনেক সময় নিজের পেটও চলে যায়, কিন্তু সংসার চলে না।
সৃজনশীলতার কোন মাপকাঠি হয়তো নেই। অনেক রথি মহারথির ছবি মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে শিল্পির হাড্ডি কবের পচে যাওয়ার পরে। সব যে একেবারে অনাস্মৃষ্টি তা হয়তো নয়। কিন্তু একটা সময় পরে যদি হুশ না ফেরে তা হলে মুষ্কিল।
যাদের হুশ ফেরে তারা আবার সবাই স্মৃষ্টির চেষ্টা একেবারে পরিহার করে না। হয়তো সেই চেষ্টা করতে না পারার ব্যর্থতায় ব্লগরব্লগর করি। এখানেও নিরাপদ না। কাম কাইজ ফালায়া কী দেহ! এমন হুমকী ধমকী খাই হরহামেশাই। বাদাইম্যা আমরাই বা কম কী! দাড়ি, কমা, সহ এত খুঁটি নাটি খুঁজে বের করতে কতো মনোযোগ দিয়ে শেরালী পড়েছেন! তাও শুধু এক দুইবার না, চার কী পাঁচবার।
পাব্লিক লাইব্রেরীর সিঁড়ির যেখানে আমি বসে ফোন কানে দিয়ে আপনাকে ঢুকতে দেখলাম, সেটা পাব্লিক লাইব্রেরীর শিশু মিলনায়তনের গেট। অন্তত সেটাই লেখা ছিল। কিন্তু দেখলাম ভেতরে কয়েকটা গাড়ি পার্ক করা।
"শিখা চিরন্তন" জায়গাটা খুব পছন্দ হইসে। তবে শিশু একাডেমীতে যাওয়ার আগে মন্দিরের শ্রেনীটা ভাল লাগে নাই। অল্প জায়গায় অনেক বেশী মন্দির মনে হল। সবটা জায়গা জুড়ে একটা বড় মন্দির হলেই ভাল হতো। তা হলে আবার সব দেবতাকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব হতো না।
শিশুদের বই মেলাটা পছন্দ হইসে। আপনার উপহার দেয়া অনুবাদটাও দুর্দান্ত লাগল। খারাপ লাগল আমার মেয়ের জন্য বর্ণমালা শেখার বই না পেয়ে।
তারপরে একটু হাল্কা হতাশ হলাম আজিজে। ঠিক আড্ডামারার মতো একটা জায়গা নেই সেখানে। আঁতলামী করবে লোকে কোথায় বসে! লুচির সাথে শিমের বিঁচির কচু শাকের বদলে এলো ভাজি। তাও ভাল, কিছু একটা তো হল।
সব কিছু ছাপিয়ে ভাল লেগেছে আপনাদের আন্তরিকতা। কী করে সব মাওলানা যোগার করলেন! এর মধ্যে মাওলান হযরত রণদা, আর মানিক ভাই, নজু ভাই ফোনও করলেন মাহফিলে যোগদানের খবর নিশ্চৎ করে। দায়ীত্ব নেয়ার মানষিকতা না থাকলে এবং সে দায়ীত্বের বাইরে একটু ওভার টাইম করার মানষিকতা না থাকলে স্মৃষ্টশীল হওয়া যায় না। একটু পাওয়া আর কিছু চাওয়া থাকাকেই মনে হয় স্মৃষ্টিশীলতা বলে।
ধান বানতে অনেক খানি শীবের গীত হয়ে গেল মনে হয়। তবে দিনটির জন্য কৃতজ্ঞতা, সেখানে উপস্থিত সব ওলামায়ে কেরাম গনকে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
এখানে মন্তব্য আকারে না দিয়ে একটা আলাদা পোস্টই দিতে পারতেন বস্, মেটাব্লগিং-এর দায়ে পড়তেন না।
এই শহরে শান্তি মতো আড্ডা মারার কোন জায়গাই নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভালো লেগেছে স্মৃতি-মেদুর কাহিনী।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একই যন্ত্রনার ধারক বাহক।
আপনি কখনো চাঁটগা এলে কিংবা আমি কখনো ঢাকা গেলে আপনার সাথে একটা সৃজনশীল আড্ডা দেবার বাসনা পোষন করলাম
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ঐ লোকগুলোর ঐসব ফাঁপা গর্ব ছাড়া আর কিছু নেই। আপনি অনায়াসে তাদের করুণা করতে পারেন।
মাফ চাই বস্! আপনার সাথে আড্ডা দিতে যে কোন সময় আমি রাজী। তবে সৃজনশীল আড্ডাতে আমি নাই। আমি অমন এলেমদার মানুষ নই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আরে আপনার আমার সৃজনশীলতার মধ্যে থাকবে ঝালমুড়ি সিঙ্গাড়া ডালপুরির সাথে মগের তিতকুটে চা। আজিজিয়া সাহিত্যনামায় কেডা যায়
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনার ফোন নাম্বারটা সচল-মেসেজে দিয়ে রাখবেন, আমারটাও দিয়ে রাখবো। ঢাকা হোক আর চাটগাঁ হোক - আড্ডা হতেই হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখা ভালো লাগ্ল ভীষণ রকম।
কণ্ঠ শীলন এ আবৃতির পাঠশালায় এক সৃজনশীল ভাইরে পাইছিলাম, পোশাক হতে শুরু করে ডাইরির মলাত সব গামছা দিয়া বানানো। সমস্যা গামছা ছিলনা ,একদিন বিরতির সময় সে তার বেক্তিগত ডাইরি আমাদের পরতে দিছে, মূল বক্তব্য>
""""""" সে এত সৃজনশীল গান ,ভাওলিন,বাশি , কবিতা সব জানে ,তার উপর সে ডি ইউ তে পড়ে ;কিন্তু তার জন্ম কৃষক পরিবারে।তার মত কেউ এত প্রতিভাবান না,তাই সে অনেক দুঃখী।!!!!""""""
হতশা কিংবা রাগের চেয়েও অই গামছা ভাইয়ের উপর আমার করুনা হয়েছিল সেদিন।
কেন জানি না , নিজে প্রতিভাবান না হওয়ার দুঃখ ঘুচে গিয়েছিল গামছা ভাইয়ের কল্লানে,থাকনা ভাইলত আছি সবার মাঝে প্রতিভাহীন এই আমি।
কণ্ঠশীলনে কিছুদিন যাবার অভিজ্ঞতা আমারও আছে। কণ্ঠশীলনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে "সৃজনশীল"-এর সংখ্যা কম। প্রায় সবাই-ই আবৃত্তি-অভিনয় ভালোবাসেন এমন সাধারণ মানুষ। সৃজনশীলদের সমস্যার একটা দিক আপনি ভালো চিহ্নিত করেছেন, এদের মধ্যে পরিচয়-সঙ্কট আছে। নিজের জন্মপরিচয় নিয়ে লজ্জিত বা সঙ্কুচিত হবার যে কিছু নেই - এই আত্মবিশ্বাস এদের নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখা ও মন্তব্য দুই-ই একে অন্যের পরিপূরক হয়েছে।
একটি কথা অধিক সত্য, দ্বায়দায়িত্ব মাথায় থাকলে এইসব ভেক কি উড়ে চলে যায়।
পোষ্টের জন্য কৃতজ্ঞতা।
দায়িত্ব নেবার মানসিকতা থাকতে হবে, তাহলে অনেক ভেকই উড়ে যাবে। সংসারে বাস করেও যারা হাঁসের মতো গায়ে পানি লাগায় না, ভেক ধরার বিলাসিতা তারাই দেখাতে পারে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পড়লাম...বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে ক্যাম্পাসে কাদের এমন সৃজনশীল ভাবতাম, সেটা বলতে চেয়েছিলাম ...কিন্তু থাক, কথা না বাড়াই..আবার দেখা হলে হয়্ত এ নিয়ে আলাপ করা যাবে।
তুমি কাদের কথা বলতে চেয়েছ সেটা বুঝেছি। থাক্, তাদের নিয়ে আলাপ করে মার খেতে চাই না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মুইতো ভেকের উপ্রেই আছি... তাইলেকি মুইও...
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
সেই বিষয়ে কি কুনো সন্দো আছে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চরম লিখেছেন।
কলকাতায় থাকার সময় এই প্রজাতির কিছু বিচিত্র প্রাণীকে দেখেছি কফি হাউস আর নন্দন চত্বরে।
প্রথম প্রথম ওদের ভয় লাগত, পরে করুণা হত।
এখন আপনার লেখা থেকে জানছি বাংলাদেশেও এদের অস্তিত্ব আছে।
বোধহয় সারা পৃথিবীতেই আছে।
এরা দুনিয়ার সব দেশেই আছে। এদের ভয় পাবার কিছু নেই। কিছু কিছু বিষয়ে এরা বোধ করি করুণাকরও বটে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মন খারাপ হয়ে গেল কেন যেন। কঠিন সত্যটা এমন সহজভাবে, একেবারে চোখের সামনে ফুটে উঠলো বলেই হয়ত।
লেখায় পাঁচতারা।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
সম্ভাবনাময় একজন মানুষকে অকারণে ধ্বংস হতে দেখলে মন তো খারাপ হবেই। যে মমতা দিয়ে আপনি বিষয়টাকে দেখলেন ঐ মানুষগুলো বাকিদের এমন মমতা দিয়ে দেখেন বলে মনে হয় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নস্টালজিক করে দিল তো!!
নস্টালজিক করে দিল তো!!
অন্যরকম একটা ভীষণ ভালো লেখা।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এডিটঃ অছাত্র হইলেও আমরাও ঐ এলাকায় সিজনালি ঘাস চিবাইছি পান্ডবদা খিক্ক। ঘটনা হইল ঘাস চিবাইতে চিবাইতে তখনো ঝগড়া করছি আর এখনো তুমুল উতসাহে সেই চর্চা ঘরেই চালাইতাছি, খালি স্থানটা পরিবর্তন হইছে হেহ হেহ হেহ
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
জায়গা পালটায়, মানুষ বুড়িয়ে যায়। কিন্তু ঝগড়া অমর-অজর-অক্ষয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখাটা দেরীতে পড়া হলো। লেখা এবং মন্তব্যগুলো পড়ে এই মুহুর্তে আমার মনে যা যা আসছে তাই লিখছিঃ
১) আপনার লেখাটি অনেক ভালো লেগেছে। ২০০৯ এ ঢাকা শহরে থিতু হবার পর থেকে আজিজ বিষয়ক মোহ আমার কেটে গেছে, এখন বরং বিরক্তই লাগে, প্রয়োজনীয় বইটা কিনে নিয়ে চলে আসি। ভালো লাগেনা।
২) আমি দোকানদারী শিখতে (গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে ) এদের দেখেছি, তখন মনে হয়েছে, এদের কাছে জীবনের অর্থ কেমন, জিজ্ঞেস করি, করা হয়নি। এরা কী জীবন থেকে পালিয়ে এসেছে, না পালাতে চায় তাও জানা হয়নি। ছবির হাটের মাঝখান দিয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান পার হতে গেলে দমবন্ধ লাগে। পুরো উদ্যানই আমার কাছে গাঁজার কারখানা মনে হয়।
৩) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি, একটি বিশেষ ডিসিপ্লিনের ছেলেমেয়েরা সবসময় নিজেদের আলাদা প্রমান করতে ব্যস্ত। এখানেও দেখি, অনেককেই, নিজেকে আলাদা প্রমান করতে সচেষ্ট।
১। আজিজে ভালো লাগার আর কিছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না।
২। জীবন সম্পর্কে এদের ধারণা খুব গভীর বা সুদূরপ্রসারী বলে মনে হয় না। বেশিরভাগ জনই মোহগ্রস্থ।
৩। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ডিসিপ্লিনের কথা বলছেন সেই ডিসিপ্লিন বাংলাদেশের যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে সেখানেও চিত্রটা একই প্রকার। আমি নিশ্চিত না, তবে এর জন্য দায়টা সম্ভবত বুয়েটের ঘাড়ে চাপে।
পড়া আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন