বিশ্বস্ত
সায়মা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি। সোনা দিয়ে গয়না বানানো ছাড়া চামচও বানানো যেতে পারে এই ব্যাপারটাই সায়মার অজানা, যেমন সোনার চামচদের কাছে সায়মাও অচেনা। সায়মা নূরনগর বস্তিতে গৃহকর্মী সখিনার মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে সেটা নিয়ে নিজের কখনো আফসোস্ হয়নি। খাবারসহ দরকারী আরো হাজারোটা জিনিসের নিত্য অভাব থাকাটা তার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়। স্বচ্ছল বা ধনী মানুষ যে সে কখনো দেখেনি অমনটা নয়। মায়ের শরীর খারাপ থাকলে, কাজে সাহায্য করার জন্য, বেশ কয়েকবার সে ধনী লোকদের বাসায় গেছে। তাদের ঘর ঝাঁট দিতে দিতে বা ফার্নিচার মুছতে মুছতে অনেক কিছুই তার দেখা হয়ে গেছে। সেগুলোর কোন কোনটা পাবার সাধও কখনো কখনো হয়েছে। তবে সেসব না থাকার জন্য খুব একটা মন খারাপ হয়নি। সায়মা বিশ্বাস করে ভবিষ্যতে তার জীবন মায়ের মতো গৃহকর্মীর জীবন হবে না। বরং আরেকটু বড় হলে সে পাশের ঘরের রহিমা আপার মতো নাদিরা গার্মেন্টসে সেলাইয়ের কাজ করবে। মায়ের মতো বেকার-নেশাখোর এক একটা স্বামী তার হবেনা। তার স্বামী হবে একটাই - অটো গ্যারাজের অ্যাপ্রেন্টিস রুবেলের মতো একটা ভালো ছেলে।
একটা এনজিও কিছুদিন নূরনগর বস্তিতে ছোট বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখাতো। সেখানে পড়তে সায়মার ভালোই লাগতো। পড়ার শেষে ওরা বিস্কুট বা মুড়ি খেতে দিতো - সেটাও ভাল লাগতো। প্রজেক্ট শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে বা এনজিওটা আর্থিক অনটনে পড়েছিল বলে স্কুলটা এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। সায়মা অবশ্য এর মধ্যে বানান করে বাংলা পড়া আর ছোটখাটো যোগ-বিয়োগ করা শিখে গিয়েছিল। গরজ করে বা কিছু টাকা খরচ করে প্রভাতী বিদ্যানিকেতন বা দিলু রোড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়েকে পাঠানোর ব্যাপারে সখিনা আগ্রহী ছিল না। বস্তুত ছেলেমেয়েদেরকে টাকা খরচ করে লেখাপড়া করানোর ব্যাপারে তার ইচ্ছে ছিল না।
সায়মারা তিন ভাইবোন। চৌদ্দ বছরের বড় ভাই সাজ্জাদ আর সাত বছরের ছোট ভাই সাকিবের মাঝে দশ বছরের সায়মা। সখিনা যখন চতুর্থ বারের মতো গর্ভবতী, তখন তার সে’সময়কার স্বামী একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়াটা তার কাছে নতুন কিছু না। এর আগেও দুই বার এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই দিন কয়েক লোক মারফত পলাতক স্বামীর খোঁজ নিয়ে এই ব্যাপারে আর মাথা ঘামায়নি। কিন্তু এই দফা তার শরীরটা বড্ড খারাপ হয়ে পড়ে, প্রায়ই খিঁচুনী উঠে অজ্ঞান হয়ে পড়তো। একবার নয়াটোলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আর একবার মগবাজার মোড়ের আদ্ দীন হাসপাতালের বহির্বিভাগেও ডাক্তার দেখিয়েছিল, কিন্তু ঔষধ আর ইনজেকশনের খরচ বহন করার মত অবস্থা ছিল না। অসুস্থ থাকায় দুটো বাড়ির কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছিল, তাতে আয়ও কমে গিয়েছিল। তারপর এক রাতে ব্যথা উঠলে বস্তির দাই অনেকক্ষণ ব্যর্থ চেষ্টা করে। সকাল নাগাদ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সখিনা মারা যায়। সায়মা আর তার দুই ভাই কয়েক দিন খুব কেঁদেছিল। কিন্তু পেটের দায়ে নানা রকম কাজের চেষ্টা করতে গিয়ে মা’র কথা তাদের আর মনে ছিল না।
হাতিরঝিল এলাকার উন্নয়নে সরকার উদ্যোগ নিলে ইস্কাটন-মগবাজার-মালিবাগ-রামপুরা এলাকার অনেক বাড়ি-বস্তির মতো নূরনগর বস্তিও ভাঙা পড়ে। সায়মাদের এবার আর থাকার জায়গা রইল না। নূরনগর বস্তির বেশির ভাগ লোক পাশেই আলাল হাজীর বস্তিতে ঠাঁই নিলেও সেখানে তাদের জায়গা হয়নি। একে তো সেখানে লোক বেশি ঘর কম, তার ওপর ঘর ভাড়াও অনেক বেশি। সায়মারা তিন ভাইবোন ইস্কাটনের মূল রাস্তার উপরের ফরহাদ অটো মার্কেটের সামনের ফুটপাথে ঠাঁই নেয়। সাজ্জাদের কাজ ছিল গাড়ির হেডলাইট সারাই, চাবি বানানো, চাকায় হাওয়া দেয়া, বাম্পার ঝালাই করা এমনসব টুকটাক কাজ করতে আসা গাড়িদেরকে ডেকে রাস্তার পাশে কাজ করা মিস্ত্রীদের কাছে নিয়ে আসা। এছাড়া গাড়ি ধোয়া-মোছা, মিস্ত্রীদের এটাসেটা এগিয়ে দেয়া এসবও করতো। সায়মা আর সাকিব মিলে দোকান কর্মচারীদের চা, পান, ঝালমুড়ি, পানি, সিগারেট এনে দিত; দোকানের সামনেটা ঝাঁট দিয়ে দিত আর রাস্তা থেকে পলিথিন কুড়িয়ে এনে বেচত। রাতে তিন ভাইবোন মার্কেটের সামনে ফুটপাথে ঘুমাতো। রান্নাবান্নার কোন ঝামেলা ছিলনা, যে বেলা পয়সা হতো সেই বেলা সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারের উলটো দিকের ফুটপাথের উচ্ছিষ্ট বিক্রির দোকানে বিয়ে বাড়ির ফেলে দেয়া পোলাও-বিরিয়ানী খেতো।
এই ব্যবস্থাতে সায়মা আর সাকিব সন্তুষ্ট থাকলেও সাজ্জাদের তা একেবারেই ভালো লাগেনি। সে জানতো ফুটপাথের উপর থাকলে মিস্ত্রীরা তাকে গুরুত্ব দেবে কম, তার কোন কাজ শেখা হবে না। তাই একদিন ইস্টার্ন টাওয়ার হাউজিং কমপ্লেক্সের এক ড্রাইভারকে ধরে মেরুল বাড্ডা না যেন মুগদাপাড়া কোথাকার এক গ্যারাজে কাজ করতে চলে যায়। সাজ্জাদ চলে যাওয়াতে সায়মা আর সাকিব বিপদে পড়ে যায়। একে তো এতে আয়-রোজগার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গেলো, তার সাথে রাতের বেলা অজানা লোকজনের উৎপাতও শুরু হয়ে গেলো। রাতে ফুটপাথে তাদের পাশে মশারী খাটিয়ে থাকা আর দিনে চিতই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করা পরিবারের কর্ত্রী বিল্লালের মা তাদেরকে একটু আগলে রাখার চেষ্টা করতো। তারপরও একদিন সকালে দেখা গেলো ঘুমন্ত সাকিবকে কারা যেন চুরি করে নিয়ে গেছে। সায়মা হৈচৈ-কান্নাকাটি শুরু করলে লোকজন মতামত দেয় এটা ছেলেধরাদের কাজ। রাস্তার মাথায় বাংলা মোটর মোড়ে প্রতিদিন সকালে যারা অন্ধ-খোঁড়া-বিকৃত অঙ্গের ডজন খানেক ভিখিরী নিয়ে আসে আবার রাতে নিয়ে যায় তাদের ব্যবসা চালানোর জন্য সাকিবের মতো ছেলের সাপ্লাই নিয়মিতই দরকার হয়। বাংলা মোটরের মতো এই মহানগরের প্রতিটি মোড়ে, মার্কেটের সামনে, ট্রাফিক সিগন্যালে এদেরকে দেখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে উটের জকি হিসেবে, ভিনদেশের রেডলাইট এরিয়ায় বা অঙ্গপ্রতঙ্গ বিক্রি করার ক্লিনিকগুলোতেও এদের আকছার দেখা যায়। এ’সব সবাই জানে - তবু খুব কমজনই এ’সব নিয়ে বলে, আর কেউ কিছু করে না।
সাকিব চুরি যাবার দিন সাতেক পরে এক মধ্যরাতে লোড শেডিং-এর অন্ধকারে কেউ একজন সায়মার মুখ চেপে ধরে জহুরা মার্কেটের পাশের পার্কমত জায়গাটাতে নিয়ে যায়। দুর্বৃত্ত সংখ্যায় একজন ছিল না। সায়মা চিৎকার করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কেউ একজন তার মুখে নোংরা ন্যাকড়া গুঁজে দেয়। তারপর যা শুরু হয় তাতে একটু পরেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ভোর হতে সায়মার জ্ঞান ফিরলে দেখে আশেপাশে কেউ নেই। হাতিরঝিলে নেমে রক্ত পরিষ্কার করে খোঁড়াতে খোঁড়াতে সে বিল্লালের মায়ের কাছে আসে। বিল্লালের মাকে কিছু বলতে হয়নি। সে দেখেছিল কারা সায়মাকে নিয়ে যাচ্ছে। তার কিছু করার বা চিৎকার দেবার উপায় ছিল না। বিল্লালের মা সায়মাকে জিজ্ঞেস করে সে ঋতুমতী হয়েছে কিনা। সায়মা এই ব্যাপারে অজ্ঞতা প্রকাশ করলে সে বলে, “তাইলে চিন্তার কিছু নাই, প্যাট বান্বো না”। বিল্লালের মা এরপর তাকে পুরুষশাসিত পৃথিবীতে নারীর অবধারিত বিপদসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞানদান করে। সায়মার কাছে চারপাশের পৃথিবীটা এক নিমিষে পালটে যায়। পেটের চিন্তার চাইতে কোথায় থাকবে সে চিন্তাটা তাকে বেশি ভাবায়। একটা গোটা দিন আর একটা রাত দিলু রোডে ঢোকার মুখের কংক্রিটের বড় ডাস্টবিনটার ভেতর সে বসে থাকে। ডাস্টবিনের কুকুরগুলো শুরুতে তার উপস্থিতি মেনে নিতে না চাইলেও তার চুপচাপ বসে থাকা দেখে বুঝতে পারে - এ তাদের ক্ষতি করবেনা। কুকুরগুলোকে দেখতে দেখতে সায়মার মাথায় একটা পরিকল্পনা আসে। পরিকল্পনাটা আরেকটু ভেবে নিয়ে লাল-সাদায় মেশানো মর্দা কুকুরটাকে ডাকে, “আয় লালু! কাছে আয়”! লালু কাছে আসলে সায়মা তার গলায়-মাথায়-গায়ে আদরের হাত বুলায়। লালুকে দেখে একটা সাদা মাদী কুকুরও দ্বিধা নিয়ে তাকায়। সায়মা একটু হেসে বলে, “আয় সাদু! তুইও আয়”! সায়মা সাদুকেও আদর করে দেয়। গোটা একটা দিন না খেয়ে থাকায় সায়মার শরীর অবসন্ন হয়ে পড়েছিল। খাবারের আশায় সে বিল্লালের মায়ের পিঠার দোকানের দিকে যায়।
বিল্লালের মা তাকে দেখে বলে, “কাইল কই আছিলি? আমি তো চিন্তা করি মাইয়াটা গেলো কই”!
সায়মা অবসন্ন গলায় বলে, “দিলু রোডের ডাস্বিনের মইদ্দে বইয়া আসিলাম। খালা! অনেক খিদা পাইসে, একটা পিটা দিবা”?
- হেইটা নাহয় তরে দিলাম। লগে তো দেহি আরো দুইটা মেমান লইয়া আইছস্।
- অগো চিন্তা তোমারে করন লাগবো না। অগো খাওন অরাই জুটাইবো।
পিঠা খেয়ে সায়মা বিল্লালের মায়ের কাছেই শুয়ে পড়ে। ঘুমে তার দু’চোখ ভেঙে আনে।
সায়মার ঘুম যখন ভাঙে তখন দুপুর হয়ে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে সে নূরনগর, গাউসনগর, দিলু রোড, শান্তিকুঞ্জ, সবুজ সংঘের গলি, দুই হাজারের গলি সব জায়গায় খুঁজে দেখে - কিন্তু আশ্রয় নেয়া যায় এমন কোন জায়গা তার চোখে পড়ে না। বিকেলে মগবাজার রেল ক্রসিং পার হয়ে সাত রাস্তার দিকে যেতে হাতের ডানদিকে যেখানে হাতির ঝিলের দ্বিতীয় অংশ শুরু হয়েছে সেখানে একটা জায়গা তার পছন্দ হয়। রাস্তার ঢালের বেশ অনেকটা নিচে সুয়ারেজের একটা বড় লাইন চলে গেছে। লাইনটা এতটাই চওড়া যে তাতে অনায়াসে শুয়ে-বসে থাকা তো যায়ই একটা ছোট সংসারও পেতে ফেলা যায়। লাইনটা যেখানে মাটির নিচ থেকে বের হয়ে ঝিলের দিকে গেছে সেখানটা গুল্ম-ঝোপে ভরা তাই রাস্তা থেকে নিচের কিছু দেখা যায় না। সায়মা লালু আর সাদুকে নিয়ে নিচে নেমে যায়। দু’হাতে ডালপালা ভেঙে, আগাছা সরিয়ে কিছুটা জায়গা পরিষ্কার করে। টুকরো-টাকরা পলিথিন আর অয়েলক্লথ দিয়ে একটা ছাউনিমত তৈরি করে। ডেরাতে তিনজন শুয়ে দেখে জায়গা কেমন হয়। দেখা গেল মোটামুটি হাত-পা ছড়িয়েই শোয়া যায়। সুয়ারেজ লাইনটার পাশে একটু উপর দিয়ে তিতাস গ্যাসের চার ইঞ্চি মোটা সাপ্লাই লাইন গেছে সেটাতে মাথা ঠেকিয়ে আরাম করে বসাও যায়। সাপ-বিচ্ছু-পোকার উপদ্রবের ভয়টা থেকে গেলেও মানুষের ভয়টা নেই ভেবে সায়মা স্বস্তি পায়। ঝিল কাছে তাই গোসল করা, ধোয়াধুয়ি বা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার ব্যাপারটারও সুরাহা হয়। সন্ধ্যা হতে মগবাজার চৌরাস্তার হোটেলগুলো থেকে চেয়েচিন্তে দুটো পরোটা আর তিনটে নান রুটি পাওয়া গেলো। তিনজনে সেগুলো ভাগ করে খেয়ে ডেরায় ফিরে গেলো।
খাবার ভিক্ষা করে বা দোকানের ফাইফরমাশ খেটে যে চলা যাবে না সায়মা সেটা জানতো। তাই বিল্লালের মায়ের সহযোগিতায় একটা পানির ড্রাম ভাড়া নিয়ে ফেলে। নীলরঙা প্লাস্টিকের ড্রামটাতে বিশ লিটারের মতো পানি ধরে। ড্রামটা একটা কাঠের পাটাতনে বসানো, আর পাটাতনটাতে চারটা বেয়ারিং লাগানো। এতে পানিভর্তি ড্রামটা সহজে ঠেলে নিয়ে যাওয়া যায়। ড্রামের মাসিক ভাড়া দেড়শ’ টাকা। বিয়ামের গলির মোড়ে যে পাম্পহাউজটা আছে সেখান থেকে পানি ভরে ইস্কাটনের রাস্তার ফুটপাথের উপরের খাবার আর চায়ের দোকানগুলো সাপ্লাই দিতে হয়। প্রতি ড্রাম পানি পাঁচ টাকা। সায়মার পক্ষে দিনে দশ ড্রামের বেশি পানি সাপ্লাই দেয়া সম্ভব হয় না। একে তো পাম্পহাউজের কেয়ারটেকার তাতে দিনে দশ টাকার বদলে বিশ টাকা কমিশন দাবী করে, তাছাড়া এই রাস্তায় পানি সাপ্লাইকরা আরো যারা আছে তারাও ঝামেলা করে। সায়মা আপাতত এতেই সন্তুষ্ট। ড্রামের ভাড়া আর কেয়ারটেকারের কমিশন দিয়ে যা থাকে তাতে তার খাবারটা হয়ে যায়। সমস্যা হচ্ছে এতে শুধু খাবারই হয়, অন্য কোন কিছু কেনা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাছাড়া দোকানদাররা প্রায়ই তার সাথে পানির দাম দেয়া নিয়ে টালবাহানা করে। কেয়ারটেকার লোকটাও মহাবজ্জাত, একবার রাতে তার সাথে থাকতে বলেছিলো। তাতে নাকি এক সপ্তাহের কমিশন না দিলেও চলবে। সায়মা জানোয়ারটাকে গালাগালি করতে পারতো, কিন্তু তাতে পরদিন থেকে তার পানি নেয়া বন্ধ হয়ে যেতো। সে বজ্জাতটাকে এ’কথা সে’কথা বলে পাশ কাটিয়ে গেছে।
সায়মার পরিকল্পনা হচ্ছে আপাতত আরো কয়েকটা দোকানে পানি দেয়ার কাজ নেয়া। তাতে হাতে কিছু টাকা জমবে। এভাবে হাজার দুয়েক টাকা জমলে রহিমা আপা’র সহকর্মী ফরিদা আপা নয়াটোলার যে মেসে থাকে সেখানে কিছু টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে উঠে পড়া যাবে। তারপর মালিবাগ-খিলগাঁও-রামপুরা এলাকার একটা ছোট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে ঢোকার চেষ্টা করতে হবে। প্রথমেই হয়তো অপারেটরের কাজ পাওয়া যাবে না, তবে হেল্পারের কাজ পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই। বড় গার্মেন্টসে যাওয়া যাবে না, সেখানে কাজ পাওয়া যাবে না। সাদা চামড়ার সাহেবেরা নাকি দেশী সাহেবদেরকে মানা করে দিয়েছে সায়মার বয়সী ছেলেমেয়েদের কাজে না নিতে। গার্মেন্টসে কাজ পেলে সায়মা নিজের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবে। তখন একদিন বড় কাউকে নিয়ে সে রমনা থানাতে যাবে। পুলিশের চোখ এড়িয়ে কেউ নাকি পালিয়ে থাকতে পারে না। পুলিশ নিশ্চয়ই সাকিবকে খুঁজে বের করে আনতে পারবে। সাকিবকে খুঁজতে বা আরো কয়েক বছর পরে রুবেলের মতো একজন নিজের মানুষ জোটাতে যে টাকা লাগবে সেটা রোজগার করতে গার্মেন্টসে কাজ করা ছাড়া উপায় কী। সায়মা তাই বিকেল হলে চায়ের দোকানে, ছাপড়া রেস্টুরেন্টে, চটপটি-ফুচকার ভ্যানে ধরণা দেয় তাকে পানি সাপ্লাইয়ের কাজ দেবার জন্য।
হাতিরঝিলের কাজ শুরুতে যেমন দ্রুত গতিতে হচ্ছিলো তাতে মনে হয়েছিল অল্প কয়েক মাসে কাজ শেষ হয়ে যাবে। মাঝখানে সোনারগাঁ হোটেলের কাছে ঝিলের মধ্যখানে তোলা একটা বড় বিল্ডিং আর ঝিলের জন্য ভাঙার তালিকায় পড়া বাড়ির মালিকেরা আইন-আদালত করায় কাজ থেমে পড়ে। এতে সায়মা স্বস্তি পায়। নয়তো কাজ যদি শনৈ শনৈ গতিতে চলতো তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সায়মার আস্তানা উচ্ছেদ হয়ে যেতো। আপাতত হাতির শুঁড়ের মতো দেখতে এক্সক্যাভেটরগুলো ধানক্ষেতে শামুক খেতে থাকা লম্বা গলার জলজ পাখিগুলোর মতো গলা নামিয়ে নিশ্চল হয়ে আছে। উচ্ছেদের ভয় আপাতত কাটলেও সায়মার স্বস্তির আবাস অচিরেই অনিরাপদ হয়ে ওঠে। প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ঝিলের নিচু জমিতে সন্ধ্যার পর থেকে নেশাখোরদের মজমা শুরু হয়। গোল হয়ে বসে গাঁজা টানা, হেরোইন নেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া থেকে শুরু করে হেঁড়ে গলায় গান, খিস্তি-খেউর, হাতাহাতি, মারামারি সবই হয়। একটু দূরে ঝোপের আড়ালের আশ্রয়ে সায়মা আতঙ্কে কাঠ হয়ে থাকে। ভাগ্যিস রাতের অন্ধকারে ঝোপের আড়ালে কী আছে সেটা দেখা যায় না। নয়তো নেশাখোরগুলোর কেউ হয়তো হিংস্র থাবা বাড়িয়ে এগিয়ে আসতো। তবু এক সকালে আগের রাতে ভরপুর নেশা করে পড়ে থাকা এক নেশাখোর ঘুম থেকে উঠে জলার ধারে জলবিয়োগ করতে গিয়ে সায়মার ডেরা আবিষ্কার করে ফেলে।
তার দিন দুই পরে রাতের বেলা সেই নেশাখোর অ্যাডভেঞ্চারের আশায় গুটি গুটি পায়ে সায়মার ডেরার দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তার ধারণাতে ছিল না যে লালু ও সাদু’র মত দুটি পাহারাদার সেখানে আছে। তাদের তাড়া খেয়ে নেশাখোর পালায় ঠিকই কিন্তু আরেকদিন প্রস্তুতি নিয়ে আসার পরিকল্পনাটা মাথায় রেখেই পালায়। সায়মাও জানতো দুর্বৃত্ত শীঘ্রই আঁটঘাট বেঁধেই আসবে। কিন্তু লুকোবার কোন জায়গা না থাকায় তাকে ঝোপের ডেরাতেই রাত কাটাতে হয়। আত্মরক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে সায়মা ছুরি-কাঁচিতে শান দেবার লোকের কাছ থেকে একটা ছুরি জোগাড় করে। ছুরিটা ছোট হলেও পুরু আর দুই দিকে ধারালো। সুয়ারেজ লাইনের পাইপের উপরে ঘষে ঘষে ছুরিটাকে সে চক্চকে করে রাখে।
তারপর এক মধ্যরাতে যখন নেশাখোরের দল হল্লা-চিল্লা শেষ করে যার যার ঠিকানায় চলে গেছে তার কিছুক্ষণ পরে দুর্বৃত্তের দল সায়মার ডেরা হামলা করতে আসে। দলে তারা চারজন, তাদের কারো হাতে মোটা-পাকা লাঠি, কারো হাতে লম্বা রড। কারো কোমরে ছুরিও গোঁজা থাকতে পারে অথবা পিস্তল। মোট কথা লালু-সাদু’র আজ আর তাদের হাত থেকে নিস্তার নেই। লালু-সাদু’র মালকিনও আজ নিস্তার পাবে না। রাস্তার ঢাল বেয়ে ঝোপ মাড়িয়ে যখন তারা কাছে চলে আসে লালু-সাদু তখন তীব্রস্বরে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। তাদের ডাকে সায়মা ঘুম ভেঙে উঠে বসে। বুঝতে পারে কেউ ডেরার কাছে চলে এসেছে। অবস্থা বোঝার জন্য বাইরে একটু গলা বাড়াতে কয়েকজন মানুষের অবয়ব দেখতে পায়। চাপা গলায় কেউ বলে ওঠে, “আউজকা কুত্তার পো, তর রেহাই নাই। দুইটারেঐ পিটায়া ঘিলু বাইর কইরা হালামু। হ্যার পরে মজা-ই-মজা”। বিপদের মাত্রা বুঝতে পেরে সায়মা ছুরিটা শক্ত হাতে বাগিয়ে বসে থাকে। দুর্বৃত্তের দল আরো এগিয়ে আসে, সম্ভাব্য বিপদ বুঝে লালু-সাদুও প্রাণপণে চিৎকার করতে থাকে। হঠাৎ চারদিক তীব্র আলোয় ভরে ওঠে আর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে গোটা এলাকার মাটি কেঁপে ওঠে।
অতরাতে পথ চলতি মানুষ ছাড়া আর কেউ তীব্র আলোটা দেখতে পাবার কথা না, তবে বিস্ফোরণের শব্দে গোটা মগবাজার-নয়াটোলা-দিলু রোডের লোকজন ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছিল। কেউ কেউ বাইরেও বের হয়ে এসেছিল, কিন্তু ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চলে গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় কেউ আর কিছু বুঝতে পারেনি। মগবাজারের র্যাব-৩-এর অফিস আর রমনা থানা থেকে দু’টি গাড়িভর্তি নিরাপত্তাবাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থল খুঁজতে বের হয়ে দেখে শুকিয়ে আসা ঝিলের ধারের গ্যাসের পাইপ লাইনে আগুন জ্বলছে। শেষ রাতে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি এসে আগুন নেভাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ভোরের আলো ফুটলে বিস্ফোরণস্থলে চারটা পোড়া লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ আর অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের ধারণা লোক চারটি গ্যাস লাইনের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। তারা সেই মোতাবেক রিপোর্ট লিখে দেয়, গণমাধ্যমেও অমন খবরই প্রকাশিত হয়।
২০১২ সালের বসন্তকালের রাতে এশিয়ার মেঘহীন আকাশে হঠাৎ করে একটা আলোকময় বস্তুর আনাগোনা বেড়ে যায়। ২১শে মার্চ ব্যাংককের আকাশে, ২৫শে মার্চ নেপালের কাছে হিমালয়ের উপরে, ১লা এপ্রিল হঙকঙের আকাশছোঁয়া বাড়িগুলোর উপরে, ৭ই এপ্রিল সিউলের শহরপ্রান্তে আর ৯ই এপ্রিল ইসফাহানের এক মসজিদের উপর সেটাকে অনেকেই দেখেছে। সে’খবর আমরা পত্রিকা মারফত জেনেছি। তবে ১১ই এপ্রিল রাতে মগবাজার রেলক্রসিং-এর কাছে শুকিয়ে আসা হাতিরঝিলে অমন কিছুকে কেউ নামতে দেখেছে বলে আমরা খবর পাইনি। শুধু ১৩ই এপ্রিলের খবরের কাগজে তার একদিন আগের রাতে মগবাজারে গ্যাসের পাইপলাইন বিস্ফোরিত হয়ে চারজন মারা যাবার খবর আমরা পত্রিকাতে পড়েছি।
এরপর থেকে সায়মার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তাবাহিনী ঐ চার দুর্বৃত্তের লাশ ছাড়া সন্দেহজনক অন্য কোন কিছু খুঁজে পায়নি। শুকিয়ে আসা ঝিলে এরপর থেকে নেশাখোরদের আড্ডা আর বসেনি। শুধু রাত বাড়লে চামড়া ঝলসে যাওয়া দুটো কুকুরকে ঝিলের মাঝখানের নিচু জমিতে বসে আকাশের দিকে মুখ তুলে করুণ স্বরে ডেকে ওঠতে দেখা যায়।
মন্তব্য
কিছু বলার নেই।
ভালো, সুন্দর, চমৎকার এগুলো বলে লেখাটাকে ছোট করতে চাইছি না।
শুধুই মুগ্ধতা।
ধন্যবাদ। গল্প আপনাদের ভালো লাগলেই আমার চেষ্টা সার্থক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই গল্পগুলোতে আপনার নিজস্ব ধীরস্থির, টু-দা-পয়েন্ট, কিন্তু প্রয়োজনিয় তথ্য়সম্ররিদ্ধ বাচনভংগীর দেখা পাই। সায়মাদের পরিবার কিভাবে টুকরোটুকরো হয়ে ঢাকার প্রব্ররিদ্ধির জ্বআলানি হয়, সেটাই কি দেখাতে চেয়েছিলেন?
***
সায়মার সাথে লালু-সাদুর বন্ধুত্ব ও ঝোপে বসবাসের সময়ে মনের পটে মিয়াজাকির প্রিন্সেস মনোনকে'ভেসে উঠেছিল।
***
১১ ই এপ্রিল একটি বিশেষ দিন, কি বলেন? এই দিনে যারা আকাশ থেকে নেমে আসে, তারা সবাই আলোকিত আত্মা। হে হে হে!
একটু লজ্জায় ফেলে দিলে। আমি অতো ভেবে গল্প লিখিনি। নূরনগর বস্তি ভাঙা আর তার আফটারম্যাথ আমার নিজের চোখে দেখা। যেকোন উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেকগুলো মানুষকে, আরো অনেক কিছুকে বলি হতে হয়। ঢাকাও এভাবেই প্রতিদিন বেড়ে উঠছে। ঠিক দু'বছর আগে "উন্নয়নের বলি" নামে একটা লেখা লিখেছিলাম। সেখানে তুমিও বিস্তারিত আলোচনা করেছিলে।
লালু-সাদু'র সাথে সায়মার বন্ধুত্ব আর ঝোপের জীবন নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এইটুকুই পারলাম। প্রিন্সেস মনোনোকে'র কথা মাথায় ছিল না। সায়মার জীবনে আশিতাকা'র মতো কারো উপস্থিতি থাকলে কি আর এমন পরিণতি হয়?
আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিছুদিন হয় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে। তাই বুঝতে পারলাম না ৮ দিন আগে তোমার জন্মদিন গেছে কিনা। ১১ই এপ্রিল তোমার জন্মদিন হোক বা না হোক তোমার জন্য আমার শুভেচ্ছা সব সময়ই আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ডাবল সেলাম
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ধন্যবাদ ফৌজদার!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সায়মার সাথে আগাগোড়া টেনশানে রেখেছেন পাঠককে। কিন্তু বিষ্ফোরণের উৎস কি সায়মার হাতের ছুরিটা? এই জায়গায় একটু মুশকিলে পড়লাম।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
একটা ছোট ছুরি কি গ্যাসের চার ইঞ্চি পাইপ লাইনে অত দ্রুত কোন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে? আমি ঠিক জানি না। পুলিশের রিপোর্টেও তো অমন কিছুর উল্লেখ নেই। বসন্তের রাতে এশিয়ার আকাশে যাদের দেখা গেছে বলে খবর পড়েছি তাদের কোন ভূমিকার কথাও তো পত্রিকা বা পুলিশের রিপোর্টে নেই!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভিনগ্রহের উন্নত প্রাণীর আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
বরাবরের মতো দুর্ধর্ষ।
পান্ডব'দার গল্পের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হল গল্পের গতিময়তা। একটানে পড়ে শেষ করা যায়, অতিরঞ্জিত কোন কথা নেই, বর্ণনার বাহুল্য নেই, ভাষা একেবারেই ঝরঝরে এবং অবশ্যই প্লটগুলি চেনা জীবনের ছক থেকে বাইরে নয়, চেনাজানা।
এই গল্পের শেষ অংশটা নিয়ে একটু ধন্দে পরলাম আমিও। নীড়’দার প্রশ্নটা আমারও।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ। যাদের কল্পনাশক্তি প্রবল নয় তারা নিজের চারপাশে গল্পের প্লট হাতড়াবে এটাই তো স্বাভাবিক।
নীড়দা'কে তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অপূর্ব!
facebook
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
। সায়মাকে যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। অসাধারণ
ধন্যবাদ। সায়মা তো আমাদের ধারেকাছেরই মানুষ। সুতরাং তাকে চিনতে পারাই স্বাভাবিক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভালো লাগলো পাণ্ডবদা। নিজেকে সায়মার জায়গাতে বসিয়ে দেখলাম। শেষ পর্যন্ত লড়াইটা চালিয়ে গেছে মেয়েটা, অতটা বোধহয় পারতাম না। শরীর, সম্ভ্রম এ শব্দগুলো
একটা পরিস্থিতিতে কোনো মানেই বহন করে না, কেবল বেঁচে থাকার জন্যেই সবটা আকুতি।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
সায়মার লড়াইটা আপনি ঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারার কারণ আপনি লেখাটি দরদ দিয়ে পড়েছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের নানা দিকে নানা টান থাকে। তাই আমরা লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিঠটান দেই। কিন্তু সর্বহারাদের তো শৃঙ্খল ছাড়া আর কিছু হারাবার নেই। তাই তারা বিশ্বটাকে জয় করার আশায় শেষ পর্যন্ত লড়াইটা চালিয়ে যায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চরিত্র আর পারিপার্শ্বিকতার ভীষণ বিশ্বস্ত বর্ননায় আপনার মুন্সিয়ানা বরাবরের মতই অসাধারণ। নতুন কিছু বলার নেই।
কেবল একটা মৃদু খটকা-- বস্তির মেয়েটার নাম সায়মা-- ভাইয়ের নাম সাকিব, সাজ্জাদ-- নামগুলোর অর্থনৈতিক পরিচয় একটু কেন যেন বাধো বাধো ঠেকছে---
-----------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
ধন্যবাদ।
সায়মাদের নাম নিয়ে খটকা লাগার কারণ নেই। আপনি যদি সায়মাদের শ্রেণীর মানুষদেরকে একটু কাছ থেকে লক্ষ করেন তাহলে দেখতে পাবেন উঁচুতলা থেকে নাম, টার্ম, মুদ্রাদোষ, আচরণ এমন অনেক কিছুই তারা একটু একটু করে আয়ত্বে এনেছে। টেলিভিশন, সিনেমা, সেলিব্রেটি শো এমন অনেক কিছুর মাধ্যমে তাদের অভ্যাসে আরো কিছু জিনিস ঢুকিয়েও দেয়া হয়েছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পুরো গল্পটা একই গতিতে পড়ে যাচ্ছিলাম। খুবই অনুমিত কাহিনী, খুবই পরিচিত। কেবল কুকুরদ্বয়ের প্রয়োজন বুঝতে পারছিলাম না গল্পে।
শেষের চমকটা তাই দারুণ লাগলো। এক্সেলেন্ট
ট্যুইস্টটা পূর্বপরিকল্পিত নয়। পরিণতিটা এমন করা ছাড়া উপায় পাইনি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বরাবরের মতো খুব সুন্দর। বাস্তবতার সাথে পরাবাস্তবতাকে মিশিয়ে দেয়ার একটা অন্য রকম ঝোঁক আপনার মধ্যে ক্রিয়াশীল। কিছুদিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম-নাম বোধয় 'গাওয়াল', তাতেও এরকম উপাদান ছিল। ধন্যবাদ। আরো লিখুন।
ধন্যবাদ কবি। সম্ভবতঃ একমাত্র মানুষই কল্পনা করতে পারে। মানুষ বাস্তব বলে তার কল্পনা বাস্তবের অংশ। তার ফল কখনো দৃশ্যমান, কখনো দৃশ্যমান নয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বরাবরের মতই ভালো লাগলো। নীড়সন্ধানী ভাইয়ের প্রশ্নটা আমার ভেতরও কাজ করছে।
ধন্যবাদ। নীড়দা'র প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দারুন!
****************************************
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পুরোটাই কঠিন বাস্তব।
কিন্তু শেষটা আমিও ঠিক বুঝিনি।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ। নীড়দা'কে উত্তর দিয়েছি, দেখুন কিছু বোঝা গেলো কিনা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ পাণ্ডব!!!
আচ্ছা, তোমার এই 'প্রচেষ্টা' আর কতোকাল চলবে? এই ট্যাগ বাদ দেওয়া যায়না?! আমি বুঝি এটা তোমার বিনয়। কিন্তু আমার কাছে এগুলোকে মানসন্মত থেকেও কিছুটা বেশি বলেই মনে হয়।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ। 'প্রচেষ্টা'কে আমার ব্রান্ড বলে দাবি করছি না, তবে এর প্রতি আমার একটা মায়া আছে - তাই এই নামটা চালাচ্ছি। বিনয় নয়, আমার সবগুলো গল্প যে গল্প হয়ে ওঠে তা নয়। কিছু কিছু হয়তো পাশমার্ক পাবার মতোও না, তোমরা প্রশ্রয়ের দৃষ্টি দেখো বলে পার পেয়ে যাই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শেষদিকে এসে একটু ধন্দে পড়ে গেলাম। কি জানি বুঝতে না পারাটা বোধহয় আমারই ব্যর্থতা।
তবু সব মিলিয়ে চমৎকার গল্প।
ধন্যবাদ। সাহিত্যে পরম অর্থ বলে কিছু হতে পারে না। তাই গল্প পড়ে আপনি যা বুঝলেন সেটা সঠিক, আমি যা বুঝলাম তাও সঠিক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দূর্দান্ত গতি গল্পটার, কোথাও যেন কোন খাদ নেই যা লাফিয়ে পার হবার জন্য বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়াতে হত। গল্পের শেষাংশটা নিয়ে অনেকের ধন্দ। লেখকের এখানেই হয়ত সৃষ্টিকে শিল্প-কর্ম করার প্রয়াস। গল্পে তো লেখক মৃত, পাঠকই কাহিনি খুঁড়ে যেমন খুশি মানিক বের করে আনবে। ধন্যবাদ পাণ্ডবদা।
অসংখ্য ধন্যবাদ সুমাদ্রী। লেখার ক্ষেত্রে লেখক যেমন স্বাধীন, ইন্টারপ্রেটেশনের ক্ষেত্রে পাঠকও তেমন স্বাধীন। পাঠক নিজের প্রজ্ঞাতে যা বুঝলেন তাতে যদি তিনি সন্তুষ্ট হন তাহলে লেখকের প্রচেষ্টা সার্থক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার গল্পে সবসময়ই একটা চমক থাকে, এটা ও বেশ লাগলো পাণ্ডবদা।
ধন্যবাদ। জোর করে কোন চমক পাঠকের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করি না। গল্পের স্বাভাবিক গতিতে যা আসে সেটাই লেখার চেষ্টা করি। আপনাদের ভালো লাগলে আমি ধন্য।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন