গল্প প্রচেষ্টা-২০

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: শনি, ২৮/০৪/২০১২ - ৫:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মৃতভোজী

শিখাদের বাড়িটা আনন্দবাজার লঞ্চঘাটের কাছে। বাড়ির সামনে পানের বরজ, তার পাশ দিয়ে রিক্‌শা-ভ্যান চলার হালট। হালটে উঠে দাঁড়ালে ঘাটের দোকানগুলোর ফাঁক দিয়ে লঞ্চ থেকে কে উঠছে, কে নামছে দেখতে পাওয়া যায়। ‘লঞ্চঘাট’ বললে যেমনটা বোঝানোর কথা ঘাটটা আসলে তেমন কিছু না। যেমন নামে ‘বাজার’ থাকলেও আনন্দবাজারের বাজারটি পাতে তোলার মতো কিছু না। লঞ্চঘাটটিতে না আছে টার্মিনাল, না আছে কোন পন্টুন। কিছু ইট ফেলে, কিছু কাঠের থাম আর বাঁশ পুঁতে রাখা আছে। সেখানে শ্যালো ইঞ্জিনের নৌকা ছাড়া দিনে দুই বার একটা ছোট লঞ্চ এসে থামে। লঞ্চ যখন ঘাটের কাছে আসে তখন লঞ্চ থেকে একটা মোটা কাছি ছুঁড়ে মারা হয়। পাড় থেকে একজন সেটা ধরে কাঠের থামে বাঁধে। লঞ্চ থেকে সরু কাঠের সিঁড়ি নামিয়ে দিয়ে তার একপাশে একটা বাঁশ ধরে রাখা হয়। যাত্রীরা সেই বাঁশ ধরে, সিঁড়ি বেয়ে লঞ্চে ওঠা-নামা করে। বর্ষাকালে নদীর বুক পাড়ের প্রায় সমতলে চলে এলে লঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে অনেকে পাড়ে নেমে পড়ে। আবার শীতে নদী শুকিয়ে এলে লঞ্চের তলা আটকে যায় বলে লঞ্চ থেকে মাঝ নদীতে নৌকায় করে যাত্রী ওঠা-নামা করানো হয়। এখানকার বাজারটি লঞ্চঘাটেই খান বিশেক দোকানের সমষ্টি মাত্র। দরকারী প্রায় কিছুই সেখানে মেলে না। তাই কারো ঠিকমতো বাজার করার দরকার হলে হাঁটাপথে পশ্চিমের কুচাইপট্টি অথবা জয়ন্তী নদী পেরিয়ে উত্তরের কোদালপুরের হাটে যেতে হয়। লঞ্চ চলে শঙ্করপাশা থেকে হিজলা হয়ে আনন্দবাজার-কোদালপুর-বালুচর-জালালপুর-নতুন বাজার-গরীবের চর হয়ে তারাবুনিয়া পর্যন্ত। সে লঞ্চে যাত্রী না যত ওঠে তারচেয়ে বেশি ওঠে ধান, সব্‌জি, পান বা কাঁচামরিচ।

ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ থেকে ছাড়া দক্ষিণবঙ্গগামী লঞ্চ-স্টীমারগুলোর কোন কোনটা হিজলাতে থামে। যাত্রীদের মধ্যে যাদের এই এলাকার আশেপাশের কোথাও যেতে হয় তারা হিজলা থেকে ছোট লঞ্চ ধরে গন্তব্যে যায়। ঢাকা থেকে আসা পণ্যের সাপ্লাইও এ’ভাবে এ’দিককার ছোট বাজারগুলোতে পৌঁছে। হিজলা থেকে যে লঞ্চটা তারাবুনিয়ার দিকে যাবার জন্য সকাল দশটায় আনন্দবাজারে আসে, বিকেল চারটায় সেটাই আবার তারাবুনিয়া থেকে হিজলার দিকে যাবার জন্য ফিরে আসে। বাড়িতে বা ক্ষেতে যতো কাজ থাকুক না কেন শিখা এই দুই সময় কোন কাজ করে না। এক দৌড়ে হালটে উঠে লঞ্চ থেকে নামা যাত্রীদের খেয়াল করে। যাত্রীদের বেশির ভাগ তার পরিচিতজন, তাই দূর থেকে দেখলেই তাদেরকে চেনা যায়। অচেনা কেউ নামলে ঘাট পেরিয়ে হালট ধরে কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কিছু অপরিচিত যাত্রী আবার ঘাটে নেমেই চা-নাশ্‌তা খাবার জন্য কোন খাবার দোকানে ঢুকে পড়ে, তখন শিখার ভারী রাগ হয়। শিখা তার এগারো বছর বয়স থেকে আজতক প্রতিদিন এই একই কাজ করে যাচ্ছে। তার বয়স এখন তেইশ চলছে। এই বয়সী মেয়ে লঞ্চ থেকে নামা লোক দেখার জন্য রাস্তায় ছোটার কথা না। আগে মা এটা নিয়ে বকাবকি করতেন, এখন আর কিছু বলেন না। পঁচিশ বছর বয়সী বড় বোন সুমি কখনো একটু উষ্মা প্রকাশ করে, শিখা সেসব গায়ে মাখে না।

শিখাদের বাড়িটা বানানো হয়েছিল মিঠাপানের বরজ আর তার পাশের ফরিদপুরী ঝাল মরিচের দোফসলা ক্ষেত পাহারা দেবার জন্য। শ্যালো নৌকায় করে চালান হয়ে যাবার আগে পান বা কাঁচা মরিচ জমিয়ে রাখা, বাছাই করার ব্যবস্থাও বাড়িটাতে আছে। ক্ষেত থেকে মরিচ তোলা, বাছাই করা অথবা বরজে লতা নামানো, পান কাটা, বীড়া বাঁধার কাজ শিখার মা তার দুই মেয়ে নিয়ে করে। তাছাড়া পান-মরিচ দুই ফসলেরই পরিচর্যা, পানি-সার-কীটনাশক দেবার কাজটাও তারা করে। ফসল তোলার পর ঘাটে কাশেম হাওলাদারের গদিতে খবর দিলে কয়ালের সাথে কামলারা চলে আসে - মাথায় করে মরিচ বা পানের বোঝা নিয়ে লঞ্চে তুলে দিয়ে আসে। কত তারিখে ঠিক কী পরিমাণ মাল গেলো সে হিসেব রাখার দায়িত্ব কয়ালের তো বটেই সাথে সাথে মায়েরও। ক্রেতার সাথে মালের দরদাম ঠিক করার বা দাম আদায়পত্রের দায়িত্ব এই দু’জনের না। এই দায়িত্ব ঢাকার শ্যামবাজারে থাকা শিখার বড় মামার - যিনি এই বাড়ি, মরিচ ক্ষেত আর পানের বরজের মালিক। ফসলের চারা, সার, কীটনাশক তিনিই কিনে পাঠান। দুই মাস পর পর তিনি এসে শিখাদের খোঁজ-খবর নেন, ফসলের হিসেব নেন, মা-মেয়েদের শাড়ী-কাপড়-স্যান্ডেল-তেল-সাবান-ঔষধ দেন আর কিছু নগদ টাকা দিয়ে যান। বড় মামা যে টাকা দিয়ে যান তাতে শিখাদের প্রতিদিনের অন্ন জোটার কথা না। এই সত্যটা তিনি নিজেও জানেন, তবু এরচেয়ে বেশি দিতে তিনি অপারগ। বোনকে এরচেয়ে বেশি টাকা দিলে সেটা তার স্ত্রীর কানে পৌঁছাতে পারে। তখন যে প্রলয়কাণ্ড হবে সেটা তিনি ভয় পান। শিখার মা যে সংসার চালানোর জন্য কখনো-সখনো কুচাইপট্টি বা কোদালপুরের হাটগামীদের কাছে পান বা মরিচ বেচে দেন সে খবর তিনি রাখেন। তবে বোনের চুরির সীমা এবং চুরির আবশ্যকতা জানা থাকায় এই ব্যাপারে তিনি উদাসীন থাকেন। বাড়ির আশেপাশে শাকসব্‌জীর চাষ, একটা মেনা গাই আর ডজনখানেক ডেগি মুরগী থাকায় শিখার মা কায়ক্লেশে সংসার চালিয়ে নিতে পারেন। চাল-ডাল-আটা-তেল-শুকনো মশলা-লবন-কেরোসিন ছাড়া খুব কম জিনিস তাদের কেনার দরকার পরে। এর মানে এই না যে বাকি অন্যসব জিনিস অফুরান আছে। আসলে বাকি অন্যসব জিনিসগুলো যে কী সেটা শিখারা অনেকদিন হয় ভুলতে বসেছে।

আনন্দবাজার গ্রামটা লঞ্চঘাট থেকে একটু দূরে। নদী এখানে কিছুটা ভাঙনপ্রবণ বলে সবাই একটু ভেতর দিকে বাড়ি করে। শিখাদের বাড়িটা তাই একটু একলা পড়ে গেছে। পানের বরজ পাহারা দেবার ঘর আরো কয়েকটা আছে, তবে সেগুলো একটু দূরে দূরে। এমন বাড়িতে দু-দুটি সোমত্ত মেয়েকে নিয়ে থাকাটা স্বস্তির ব্যাপার নয়। তবে শিখার বড় মামার শ্বশুরবাড়ি এই এলাকার প্রভাবশালী পরিবার বলে তাদেরকে বড় কোন ঝামেলায় পড়তে হবে না বলে আশা করা যায়। তারমানে এই না যে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা শেয়ালের দল থাবা বসানোর চেষ্টা করে না। রাতে চালের উপর কয়েকটা ঢিল ছোঁড়া, পানের বরজের পাশে শীস্‌ বাজিয়ে চটুল গান গাওয়া, দিনের বেলা পথ-চলতিতে একটু ধাক্কা দিয়ে যাওয়া, কখনো কখনো দু’একটা লাউ-কুমড়া-মুরগী হারিয়ে যাওয়া - এমন আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলোকে সাধারণ, স্বাভাবিক, নিয়মিত বলে মেনে নিতে হয়। এগুলো নিয়ে হৈচৈ-চিৎকার করার বা বিচার-সালিশ ডাকার কিছু নেই। শিখারা তাই চুপচাপ থাকে। দিনের বেলা কাজের নাম করে সাথে লম্বা বগাকাঁচি আর রাতের বেলা বিছানার পাশে খাটো হাতার দা রাখতে হয়। সেগুলো কখনো ব্যবহার করতে হয়নি, তবে তাদের উপস্থিতি অনেক ঝামেলা কমিয়ে দিয়েছে।

আনন্দবাজারে আসার পর প্রথম প্রথম শিখা-সুমির দিন কাটতে চাইতো না। এ কেমন জায়গা! যেখানে লাইট-ফ্যান নেই, টেলিভিশন নেই, গম্‌ গম্‌ করা দোকানপাট নেই, বাঁধানো রাস্তা নেই, গাড়ি-ঘোড়া নেই, পরিচিত মানুষজন নেই! সন্ধ্যা হতে না হতে ভুতুড়ে অন্ধকার। এমন বিরান ভূমিতে নির্বাসিত হয়ে শিখা কয়েকদিন লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছে। সুমিকেও কাঁদতে দেখেছে সে। মাও হয়তো কেঁদেছেন - সেটা তারা দেখতে পায়নি। সবচে’ মন খারাপ হয়েছে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। ধারেকাছে একতা হতশ্রী মাদ্রাসা আছে বটে, কিন্তু সেটা শুধু ছেলেদের জন্য। মেয়েরাও পড়তে পারে এমন স্কুলের মধ্যে সবচে’ কাছেরটা কোদালপুরে। একে তো সেটা দূরের পথ, তার ওপর নদী পারাপারের হ্যাপা আছে। স্কুলের খরচ জোটানো ছাড়া প্রতিদিনকার গুদারা পার হবার খরচটাও আছে। খরচ আর পথের নিরাপত্তার কথা ভেবে মা আর এই ব্যাপারে আগাননি। স্কুলে যাওয়া নিয়ে শিখা দুয়েক দিন একটু অনুযোগ করে তারপর আর কিছু বলেনি। তবু কখনো কোন মেয়েকে বুকে চেপে বা কাঁখে বই নিয়ে যেতে দেখলে শিখার মনটা হু হু করে ওঠে। শিখার তখন আফসানার কথা মনে হয়।

আফসানা তার প্রিয় বান্ধবী ছিলনা, তবে তাদের সম্পর্কটা নেহাত খারাপও ছিলনা। ক্লাসে প্রথম হওয়া নিয়ে আফসানার সাথে তার একটা লড়াই ছিল। স্কুলের স্যার-আপারা সেই লড়াইতে দু’জনকেই তাল দিতেন। ওরা দু’জনও প্রতিযোগিতাটি উপভোগ করতো। আজ এত বছর পর আফসানা কোথায় আছে কে জানে! এতদিনে হয়তো সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। হয়তো লেখাপড়ার পাট শেষ করে, বিয়ে করে সংসার করছে। সুমির তো বটেই, শিখারও বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। এটা নিয়ে মা কয়েকবার বড় মামাকে অনুরোধ করেছিলেন - মামা পাত্তা দেননি। সুমি-শিখার বিয়ে হয়ে গেলে প্রায় বিনে পয়সায় কামলা খাটানোর লোক যে কমে যাবে সেটা দুই পক্ষই বোঝে। সহসা বিয়ে হবার সম্ভাবনা না থাকলেও সুমি আজকাল বিয়ের কথাই বেশি ভাবে। মুখ ফুটে শিখাকে সেটা জানায়ও। শিখা জানে সুমি কেন বিয়ের জন্য উতলা হয়েছে। তারা দু’জনেই জানে একমাত্র বিয়ে ছাড়া এই চারদিক খোলা জেলখানা থেকে বের হবার কোন উপায় নেই।

লেসফিতাওয়ালা তালেব আলী, ছিটকাপড়ওয়ালা রশীদ বা গাওয়াল কামরুল জানে যে শিখারা কিছু কিনবে না। ওদের কিছু কেনার সামর্থ্য নেই। তবু যাবার পথে তারা একবার হাঁক দিয়ে যায়। কেউ কেউ বসে একটু জিরিয়ে যায়, এক গ্লাস পানি খায়। একবার কেবল তালেব আলীর কাছ থেকে দুই বোনের জন্য দুই জোড়া প্লাস্টিকের বালা আর টিনের ক্লিপ কেনা হয়েছিল। তবু তালেব আলী তাদেরকে সব জিনিস খুলে খুলে দেখায়। কখনো ইচ্ছে হলে হাতের এক আঙুলের নখে একটু নেলপলিশ লাগিয়ে দেয়। রশিদের কাছে কয়েকবার ব্লাউজের কাপড়ের দরদাম করা হয়েছে কেবল - কখনো কিছু কেনা হয়নি। তবু রশীদ মায়ের সাথে বসে তার বাড়িঘরের গল্প করে, পীর-ফকিরদের গল্প করে। দূরের কোন এক মাজার থেকে শিরনী এনেও একবার খাইয়েছিল। কামরুলের কাছে আশেপাশের পাঁচ গাঁয়ের তো বটেই দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়েও গল্প শোনা যায়। তার কাছে একটা এক ব্যান্ডের রেডিও আছে। সে আসলে তার কলা, বেল, পানিফল, জাম, কাউ, ডেউয়া, চালতা, জাম্বুরা বা সফেদার কোন কিছু না কেনা হলেও কিছুক্ষণ সিনেমার গান বা বিজ্ঞাপন শোনা যায়। এই লোকগুলো তাদের মতোই হতদরিদ্র, এজন্য এরা সহমর্মী। তারা বোঝে এই তিন নারী আসলে এখানে নির্বাসিত। তারা তাই শিখাদের কাছে বাইরের পৃথিবীকে স্পর্শ করার জানালা হয়ে আসে।

শিখারা তিন বেলাই ভাত খায় - কখনো গরম, কখনো পান্তা। তার সাথে ব্যঞ্জন হিসেবে থাকে বাড়ির চারপাশে ফলানো শাকসব্‌জি। বড় মামা আসলে দোকান থেকে আটা আর ডিম কেনা হয়। ঐ দুইদিন সকালে রুটি, দুপুরে ডিম-আলুর ঝোল খাওয়া হয়। বড় মামা এক-আধবার হাতে করে একটা মুরগী নিয়ে আসেন। তখন মুরগীর মাথা-গলা-পা-ডানা-গিলা-কলিজা-চামড়া খাওয়া হয়, মুরগীর রান আর বুকের মাংস বড় মামার জন্য বরাদ্দ। কোরবানীর ঈদ আসলে গ্রামের পঞ্চায়েত থেকে কেজিখানেক মাংস পাওয়া যায়। এছাড়া সারা বছর সাধারণত কোন আমিষ জোটে না। শীতকালে বুনোহাঁসের ঝাঁক নামলে অনেকে ফাঁদ পেতে বা বিষটোপ দিয়ে পাখি ধরে। ওভাবে ফাঁদ দিয়ে সুমি একবার একটা অচেনা পাখি ধরেছিল। গরম মশলা ছাড়া রান্না করায় অচেনা পাখির মাংসে বিকট গন্ধ পাওয়া গিয়েছিল। এরপর থেকে সুমি সেই চেষ্টা আর করেনি। মেঘনার তীরে বাস করেও শিখারা ছোট-বড় কোন মাছই খায় না। অথচ সকালের দিকে লঞ্চঘাটে গেলে সস্তায় ছোট মাছ তো বটেই, লোকে খেতে চায় না এমন মাছ বিনি পয়সায়ও পাওয়া যায়। তবু শিখারা মাছ কেনে না, খায় না। যেবার জালালপুরের কাছে কেমিক্যাল বোঝাই লঞ্চ ডুবে ছোট-বড় সব মাছ মরে ভেসে উঠেছিল, সেবার সবাই ঠেলাজাল বা ওছা দিয়ে এমনকি খালি হাতে মাছ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তখনও শিখারা সেসব মাছ ধরার কোন চেষ্টা করেনি। মাছ খাওয়া তো দূরে থাক, মাছ দেখলে তাদের তিনজনেরই তীব্র বিবমিষা হয়।

এখন শিখারা মাছ অপছন্দ করলেও এক কালে মাছ তাদের তিন জনেরই খুব প্রিয় ছিল। শিখার পছন্দ ছিল কৈ মাছ, সুমির ইলিশ আর মায়ের বোয়াল মাছ। মটরশুঁটি আর টমেটো দিয়ে মা চমৎকার কই মাছের মাখা মাখা ঝোল করতেন। ইলিশ মাছের ঝোল করতেন আলু-বেগুন দিয়ে আর বোয়াল মাছেরটা আলু-ফুলকপি দিয়ে। আবার সব মাছই কীভাবে যেন পেঁয়াজ-ধনেপাতা-কাঁচামরিচ দিয়ে দোপেঁয়াজা করতে পারতেন। এ’সব সে’সময়ের কথা যখন শিখাদের বাবা কালীর বাজার থেকে তাদের পছন্দের মাছ আনতেন আর তাদের মা কপট রাগ দেখিয়ে সেসব রান্না করতেন। মায়ের রাগের কারণ, বাবার বেশি পছন্দ দেশী মুরগীর ঝাল ঝোল - মাছ নয়। তবু বাবা তাদের পছন্দের কথা ভেবে মাছই আনতেন। আর খাবার সময় গল্প করতেন - কী করে মাছওয়ালার সাথে দরাদরি করে আজ সস্তায় মাছ কিনেছেন। বাবা কাজ করতেন নিতাইগঞ্জে দীপক সাহার পাটের আড়তে। পাটচাষী, পাটের মহাজন আর মোকামগুলো থেকে পাট কিনে মিল গেটে বিক্রি করা তার কাজ। ওরা ভাড়া থাকতো মাসদাইর মাজার রোডে মিন্নত আলী হাজীর বাড়িতে। স্কুল ছিল হাঁটা দূরত্বে, পছন্দের বন্ধুবান্ধবেরাও কাছাকাছি থাকতো। বিকেলে খেলার অবারিত সুযোগ ছিল, রাত ন’টা থেকে টেলিভিশন দেখার অনুমতি ছিল।

শিখা যখন পঞ্চম শ্রেণীতে আরে সুমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে, তখন ফাল্গুন মাসের শুরুর দিকের এক সকালে মতলব-হাইমচর-নীলকমলের পাটচাষীদের দাদন দেবার জন্য বাবা নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে হাইমচর যাবার লঞ্চ ‘এম, ভি, বোগদাদিয়া’য় ওঠেন। ফাল্গুনে নদী অপেক্ষাকৃত শান্ত, ঝড়-বৃষ্টির ভয় নেই। তাই বাবার যাত্রা নিয়ে তাদের মনে কোন শঙ্কা ছিলনা। কিন্তু এম, ভি, বোগদাদিয়া ষাটনলের কাছে পৌঁছালে কীকরে যেন সিমেন্টের ক্লিঙ্কার বোঝাই একটা কার্গো তাকে মাঝ বরাবর ধাক্কা মেরে বসে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই কাঠবডির এম, ভি, বোগদাদিয়া আর অতিরিক্ত ক্লিঙ্কার বোঝাই কার্গো দু’টিই কয়েক মিনিটের মধ্যে মেঘনার গভীরে তলিয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হোক আর বেশি লোকের ভীড়ের কারণে হোক এম, ভি, বোগদাদিয়ার আড়াইশ’ যাত্রীর মধ্যে মাত্র শ’খানেক জন কোনক্রমে তীরে উঠতে পারে। বাকি দেড়শ’ যাত্রীর খোঁজে তাদের পরিবার-পরিজনেরা মেঘনার দুই পাড়ে ভীড় জমায়।

শিখার মা যখন ষাটনল পৌঁছান নারায়নগঞ্জ থেকে আগত উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামজা’ আর ‘রুস্তম’ ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছে। ষাটনলের কাছে নদীর গভীরতা অনেক। অত গভীর থেকে জাহাজ তোলা হামজা আর রুস্তমের জন্য দুরূহ। তাছাড়া উদ্ধারকারী জাহাজ দু’টিই বয়সের ভারে নুব্জ। একসময় লঞ্চ তোলার আশা বাদ দিয়ে ফায়ার সার্ভিস আর নৌবাহিনীর ডুবুরী নামিয়ে লাশ তোলার চেষ্টা শুরু হয়। কিছু লাশ এর মধ্যেই ভেসে উঠ্‌ছিল। ডুবে যাওয়া দুই লঞ্চের মালিক পক্ষ তারও আগে ভাড়াটে ডুবুরী দিয়ে লাশ উদ্ধার শুরু করেছিল। শিখার মা মেয়ে দুটোকে খালি বাড়িতে রেখে পাঁচটি দিন মেঘনার পাড়ে ছিলেন। লাশের সন্ধানে তিনি নদীর পাড় ধরে মোহনপুর, এখলাসপুর, ফরাজিকান্দি, বিষ্ণুপুর, কল্যাণপুর হয়ে চাঁদপুর পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। ভেসে যাওয়া লাশের মাঝে স্বামীর সন্ধান না পেয়ে তিনি আবার ষাটনল ফিরে এসেছিলেন; যদি লঞ্চের কাঠামোতে আটকে থাকা লাশের মধ্যে খোঁজ পাওয়া যায় সেই আশায় - কিন্তু কোন খবরই পাওয়া যায়নি।

ঐ পাঁচটা দিন শিখা আর সুমি কী যে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা, আশা-নিরাশায় কাটিয়েছে সেটা কাউকেই বোঝানো যাবে না। বাড়িওয়ালার ছেলের বউ আদর করে দুইবেলা তাদের ডেকে খাইয়েছে। আরো কিছু প্রতিবেশী নারী-পুরুষ সান্ত্বনা আর অভয় দিয়ে গেছে। এই সুযোগে সুমির পেছনে ঘুরঘুর করা, মাজারের চ্যাংড়া খাদেম আমীর হোসেনও সান্ত্বনা দিতে এসেছিল। সুমি ঝাঁটা হাতে তাকে, “এই জাগাত্থে যা পিছামারা! না গেলে পিছা দিয়া বাইরায়া তরে খ্যাদামু” বল্‌লে আমীর হোসেন আর দাঁড়ানোর সাহস পায়নি। পাঁচদিন পর মা দু’পায়ে হেঁটে ফিরে আসলেও তার দেহে কোন প্রাণ ছিল বলে মনে হয়নি। মাকে দু’হাতে ধরার পর শিখার গলা দিয়ে একটা শব্দও বের হয়নি, নিঃশব্দে সে ঢলে পড়েছিল।

বাবার জন্য শিখা আর কোনদিনই সশব্দে কাঁদেনি। মাসদাইরের বাসা থেকে বড় মামা যেদিন তাদেরকে আনন্দবাজারের এই বিরান বাড়িটিতে এনে তুলেছিলেন সেদিন থেকে শিখা ভাবতে চায় বাবা হয়তো একদিন তাদের খুঁজতে খুঁজতে আনন্দবাজারে এসে হাজির হবেন। তাই সকাল-বিকাল ঘাটে লঞ্চ ভিড়লেই সে ছুটে যায় কারা কারা এসেছে সেটা দেখতে। তার এই ভাবনার যে কোন ভিত্তি নেই সেটা সে জানে। বাবার লাশ পাওয়া না গেলেও বাবা যে জীবিত নেই এই সত্যটা সে বোঝে। তবু লঞ্চের সময় হলে সে ছুটে না গিয়ে পারে না।

পাঁচদিনেও যখন শিখার বাবার লাশ ভেসে ওঠেনি তখন চাঁদপুর থেকে ষাটনল ফেরত শিখার মা নদীর পাড়ে জমায়েত লোকদের কাছে এক বীভৎস গল্প শোনেন। লঞ্চ মালিকদের ভাড়াটে ডুবুরীরা নাকি পানির নিচে ধারালো ছুরি দিয়ে লাশের পেট কেটে নাড়িভুড়ি চিরে দিয়ে আসে। এতে লাশ পঁচে পেটের ভেতর গ্যাস জমতে পারে না, ফলে লাশ আর ফুলে উঠে ভাসতে পারে না। লাশ নদীর গভীরে তলিয়ে যায় - মাছের খাবার হয়। এতে লাশের সংখ্যা কম দেখানোর যায়, অনেককে আর ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। পাঁচদিনেও শিখার বাবার লাশ না পাবার যৌক্তিক ব্যাখ্যা এভাবে মিলে যায়।

নদীতে তলিয়ে যাক আর ভেসেই উঠুক - নদীতে লাশ থাকলে তা মাছের খাবার হবেই। নদীর বুকে ভাসলে তা চেলি-দাঁড়কিনা’র মতো ছোট মাছেও খায়, আর তলিয়ে নদীর গভীরে গেলে গজার-বোয়ালেরাও ছেড়ে কথা কয় না। এ’সব খেয়ে তেল চক্‌চকে হয়ে ওঠা মেঘনার মাছেরা যখন নিউমার্কেট-হাতিরপুল বাজার-কাওরানবাজারে ওঠে, তখন এই মহানগরের মৎস্যরসিকেরা চড়া দামে সেসব মাছ কিনে নেন। নিজেরা খান, বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে খাওয়ান, পাঁচজনের কাছে মাছের পেটি-মুড়োর গল্প করেন। মেঘনার সেই মাছ শিখা-সুমি বা তাদের মা কী করে মুখে তুলবেন!


মন্তব্য

অমি_বন্যা এর ছবি

বেশ মর্মস্পর্শী লেখাটা। ভালো লেগেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনাদের ভালো লাগলে আমার প্রচেষ্টা সার্থক বলে মনে করবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

মন খারাপ

শক্ত গাঁথুনির গল্প, নিষ্ঠুর বাস্তবকে ধারণ করা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্প সাধারণত নিরেট বাস্তবকে ধারণ করার চেষ্টা করে। তবে তার প্রকাশভঙ্গীর ভিন্নতায় কখনো সেটাকে অন্যরকম মনে হতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কীর্তিনাশা এর ছবি

অনেক দিন পর পান্ডু'দার লেখা গল্প পড়লাম। খুব ভালো লাগলো।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি তো তবুও মাঝেমধ্যে হাবিজাবি কিছু লিখি। আপনি তো লেখা আর মন্তব্য করা দুটোই ছাড়তে বসেছেন। একটা আস্ত গল্পের ফ্যাক্টরী বিনা কারণে লে-অফ হয়ে গেল কী করে!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কীর্তিনাশা এর ছবি

তা যা বলেছেন পান্ডু'দা, মডুরাও দেখি ফাঁকিবাজের খাতায় নাম উঠিয়ে দিয়েছে। ওঁয়া ওঁয়া

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পাবলিককে ঠকালে এমনটাই হবে। তাড়াতাড়ি ফ্যাক্টরী খুলে দিন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বাউলিয়ানা এর ছবি

চলুক
আমাদের ছোট্ট এই দেশে কত কোটি কোটি মানুষ। এর মধ্যে থেকে কত মানুষ যে কতভাবে হয়তো হারিয়ে যায়-তার ঠিক ঠিকানা নাই। হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর পেছনে থাকে ভিন্ন ভিন্ন গল্প। সেই গল্পগুলো কখনও আমরা পড়ার চেষ্টা করি, আবার কখনও- কী আর হবে ভেবে ফিরেও তাকাইনা। গল্পগুলো কিন্তু ঠিকই বাতাসে ভেসে বেড়ায় আর হয়তো বাতাস ভারী করে তোলে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ছোট-বড় ঘটনাই এক একটা পূর্ণাঙ্গ গল্প। সহমর্মীতা দিয়ে দেখলে তার কিছু কিছু আমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুমাদ্রী এর ছবি

এককথায় অসাধারণ। কোন সংলাপ নেই। অথচ কথাগুলো মনে বাজে। আপনার গল্পগুলো মন দিয়ে পড়ি। ভাল থাকুন।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সচলায়তনে লেখার এটা একটা বিরাট সুবিধা - আপনাদের মতো মনোযোগী পাঠক পাওয়া। এই গল্পটায় যে কোন সংলাপ নেই সেটা আপনার চোখ এড়ায়নি। অসংখ্য ধন্যবাদ। কখনো কোন ভ্রান্তি বা অসঙ্গতি চোখে পড়লে ধরিয়ে দেবেন নিশ্চয়ই। ভালো থাকবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ইয়াসির এর ছবি

সুন্দর করে লেখা একটি বাস্তব 'গল্প'। পড়ে তীব্র মন খারাপের অনুভুতি হলো। পড়া শেষে হঠাৎ শাহজাহান খানের কথা মনে পড়ে গেল। কত পরিবারের কান্নার জন্য এই লোক ব্যক্তিগত ভাবে দায়ী তার কোন হিসাব নেই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এমন দুর্ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী ব্যক্তির সংখ্যা একজন-দুইজন নয়। আর এমন দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে দশকের পর দশক ধরে। মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে সহস্র মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনার মতো দুর্বৃত্তরা নির্মূল হোক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আপনার দেখবার চোখে খুঁটি নাটি কিছুই এড়িয়ে যেতে পারে না, সে তো জানা কথা। সেই নির্লিপ্ত ভঙ্গি, মাত্র কয়েকটি টানে আঁকা সেই নিখুঁত স্কেচ, বিরস ভঙ্গিমায় অনেক গভীর থেকে আকাংক্ষিত গাঢ়রস তুলে আনা। কতবার যে আপনার গল্প পড়া এড়িয়ে যাবার বৃথা চেষ্টা করেছি, পারলাম কই!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটু লজ্জায় ফেলে দিলেন বস্‌! বারো-চৌদ্দ লাইনে আপনি যে চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারেন, যে গল্প বলতে পারেন আমি আড়াই-তিন হাজার শব্দেও তা প্রকাশ করতে পারি না। নিজের এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমার সঙ্কোচ নেই। আমি চেষ্টা করে যাই, আপনারা স্নেহের চোখে দেখেন বলে পার পেয়ে যাই।

সবিনয়ে বলি, আমি আপনার পদ্য কখনো এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি না। কারণ, সে চেষ্টা বৃথা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বনের রাজা টারজান এর ছবি

লিখতে থাকুন ভাই। আপনার মনে আরে হাতে আছে জাদু। পড়তে পড়তে যেন দেখতে পাচ্ছিলাম সুমি আর শিখাকে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ। লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনারা উৎসাহ যোগান - সেটা আমার চলার রসদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শান্ত এর ছবি

শেষের প্যারা পড়ে স্তব্দ হয়ে রইলাম।

আসলেই কখনো এইভাবে চিন্তা করিনাই।

অসম্ভব অসম্ভব সুন্দর।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণের পেছনে কত নির্মম গল্প লুকিয়ে আছে তার কতোটাই বা আমরা জানি!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনার গল্প পড়তে শুরু করলে পরিণতি নিয়ে মগজের খেলা শুরু হয়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শেষ প্যারা আসার আগ পর্যন্ত পরিণতি অনুমান করা যায় না। এবারও তাই হলো। মাছ না খাওয়ার এই কারণটা অনুমান করা আসলেই অসাধ্য। গল্পে গুল্লি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার গল্পগুলো সরল প্রকৃতির, কোন জোর খাটানোর চেষ্টা করিনা। তাই বেশির ভাগের পরিণতি আপনার মতো পাঠক আগেভাগে ধরে ফেলতে পারার কথা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

অসাধারন! আম্মার কাছে গল্প শুনেছি, ১৯৯১ সালে ঝড়ের পর আম্মারা ইলিশ মাছ খেত না; সমুদ্রে ভেসে যাওয়া মৃত প্রাণিদের কথা ভেবে যে ইলিশ মাছ তো সমুদ্রেরই মাছ। ডিম দিতে নদীতে আসে। জানিনা, আম্মাদের এই যুক্তি বিজ্ঞানসম্মত কিনা। কিন্তু এই গল্পে এত মাছ না খাওয়ার কারন এত অসাধারণভাবে উঠে এসেছে। নামকরন সার্থক।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার শোনা গল্পের মতো গল্প আমিও শুনেছি। ১৯৭২ সালে অনেকেই এমনটা করেছেন। ব্যাপারটার পেছনে জোরালো কোন যুক্তি হয়তো নেই, তবে এটা ব্যক্তিগত রুচির ব্যাপার বলে তর্ক করার উপায় নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পুতুল এর ছবি

হালট, কয়াল, দাদন এমন আরো কিছু শব্দের ব্যাবহার গল্পটি খুব বিস্বাশযোগ্য করেছে।
কিন্তু বর্ণনায়‌

লঞ্চ যখন ঘাটের কাছে আসে তখন লঞ্চ থেকে একটা মোটা কাছি ছুঁড়ে মারা হয়। পাড় থেকে একজন সেটা ধরে কাঠের থামে বাঁধে। লঞ্চ থেকে সরু কাঠের সিঁড়ি নামিয়ে দিয়ে তার একপাশে একটা বাঁশ ধরে রাখা হয়। যাত্রীরা সেই বাঁশ ধরে, সিঁড়ি বেয়ে লঞ্চে ওঠা-নামা করে।

এই ধরণের অংশগুলো একটু কাঠ-কঠিন মনে হচ্ছে। এখানে গল্প খুব বেশী না বাড়িয়েও আরো একটু প্রাণবন্ত করা যেত। সংলাপ আরো একটু বাড়ানো যেত।

“এই জাগাত্থে যা পিছামারা! না গেলে পিছা দিয়া বাইরায়া তরে খ্যাদামু”

এই সংলাপটি
ভাষা এবং শিখাদের সমাজ এতো যুতসই ভাবে উপস্থাপন করেছে, কী বলব শুধুই মুগ্ধতা। কিছু অনাকাংখিত হিতাকাংখী এই ধরণের বিপদে সত্যিই উদয় হয়। ঝাটা ছাড়া তাদের হাত থেকে বাঁচার কোন বিকল্প নেই। আবার লোকলজ্জার ভয়ে এরা ঝাটার বা গলার পর্দা চড়ানো ধমকেই বিদেয়ও হয়।
কোন কিছুই আপনার দৃষ্টি এড়ায়নি!
সবচেয়ে ভাল লেগেছে আপনার সাথে এই লঞ্চ যাত্রাটি। এত নিখুঁত যে মনে হয় সব কিছু যেন দেখতে পাচ্ছি। এভাবে শুরু এবং শেষ হওয়া গল্প অনেক দিন পড়িনি পণ্ডবদা।
এই ফাকে একটা আপ্রসংগিক প্রশ্ন বলে রাখি‌-
গরু, ছাগল সন্তান সম্ভবা করার জন্য সব চাষীরই কোন ষাড় বা পাঠা থাকে না। সময় মতো তাদের গাভী, ছাগল প্রেগনেট করার জন্য নিকটস্থ বাজারে নিয়ে যায়। সেখানে একটা লোকের কাজ শুধু ষাড়, পাঠা পালন করা, আর সময় মতো মূল্যের বিনিময়ে গাভী, ছাগলকে বীর্যদান। এই পাঠা, ষাড় পোষার লোকটার পেশাগত একটা নাম আছে। এই গল্প পড়ে মনে হচ্ছে , ঐ নামটা আপনার জানা থাকতে পারে। অনেক দিন অনেক জায়গায় খুঁজেছি, পাই নি। তাই আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি। অনেক বক্তিমা দিলাম কিছু মনে করবেন না।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। আঞ্চলিক শব্দগুলোকে ব্যাখ্যা ছাড়াই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে কিছু পাঠক হয়তো সামান্য হোঁচট খাবেন। তবে কিছুই তাদের বোধের অগম্য থাকবে না।

২। বর্ণনার কাষ্ঠলতা আমার পুরনো রোগ। পেশাগত জীবনে দিনভর নানা প্রকার নীরস রচনা লিখতে হয়, পড়তে হয়। গল্পে তাই প্রায়ই সেসবের ছাপ পড়ে যায়।

৩। সংলাপ হয়তো আরো বাড়ানো যেতো, অথবা গল্পটা সংলাপের ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারতো। কিন্তু অমনটা করতে ইচ্ছে করেনি। ব্যাপারটাকে গল্পের স্বতঃস্ফূর্ততার বাইরে বলে মনে হচ্ছিল। আপনি মঞ্চের মানুষ, আপনার ভোটটা সংলাপের পক্ষে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

৪। পদ্ধতিটিকে স্থানীয় ভাষায় বলে 'পাল খাওয়ানো'। ষাঁড়/পাঁঠাটিকে 'পালের ষাঁড়'/'পালের ছাগল' বলে। ষাঁড়/পাঁঠার মালিককে কী বলে সেটা আর মনে নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, এ কারনেও একটি পরিবার মাছ খাওয়া ছেড়ে দিতে পারে বটে। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করলেন। অসাধারন একটি ধারনাকে ধারন করে লেখাটিও অসাধারন হয়েছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্প পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

রাজধানির কত নিকটে এই প্রত্যন্ততা। সামাজিক পরিবর্তন (শোসাল মবিলিটি) বলতে আমরা কেবলই উন্নতির মই এর কথা জানি। গ্রাম থেকে মফস্বল, সেখান থেকে শহর। কিছু পরিস্থতিতে যে এই এই সামাজিক পরিবর্তনের মই থেকে পিছলে পড়ে কিছু ভাগ্যহীন মানুষ।

আপনার গল্পগুলো ভাবায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

খোদ রাজধানীর ভেতরেই যে কি অকল্পনীয় প্রত্যন্ততা আছে সেটা জানলে বিস্মিত হতে হয়। মহানগরে বাস করে অথচ নাগরিক সুবিধার কিছুই পায় না এমন মানুষের সংখ্যা মিলিয়ন হিসেবে গুনতে হয়।

সোশ্যাল মবিলিটি আর আরবানাইজেশন পুরোপুরি এক নয়, যদিও আমাদের মতো দেশে আরবানাইজেশনকেই উন্নতি বলে বিবেচনা করা হয়। দুর্যোগের অভিঘাত সহ্য করতে না পেরে যাদের ডিআরবানাইজেশন হয়, বাংলাদেশের মতো দেশে তারা সবচে' হতভাগ্য।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ইয়াসির এর ছবি

আমার এক বন্ধুর বাসায় বোয়াল মাছ খাওয়া হয় না। বছর বিশেক আগে বাজার থেকে কিনে আনা বিশাল এক বোয়াল মাছের পেট কেটে মানুষের হাতের আস্ত একটা কব্জি পাওয়া গিয়েছিল, সেই কারণে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সর্বনাশ! আমার শোনা মাছ সংক্রান্ত কোন গল্পই এতটা ভয়ঙ্কর নয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফি এর ছবি

মন খারাপ

আপনার লেখার বিল্ড আপ খুব চমৎকার হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি কি গল্পকার? গল্পমতো কিছু মাথায় আসলে সারাদিন ধরে অফিসে যেসব হাবিজাবি লিখি সেগুলোর মতো করে কিছু একটা দাঁড় করানোর চেষ্টা করি মাত্র।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পাণ্ডবদা, অনেক কিছু ফেলে দিলেও গল্পটা বুঝতে সমস্যা হইত না। কিন্তু অনেক কিছু বলে ফেলায় যেটা হইল, অতিরিক্ত বাক্যগুলা স্টোরিতে 'হিস্টোরি' যোগ করল। এখন আপনি কি ইতিহাস (সময়ের ভিতর দিয়া সামাজিক ঘাতপ্রতিঘাতের প্রবহমনতা অর্থে, দ্বান্দ্বিক অর্থে, অতীত অর্থে না) বলতে চাইলেন ব্যক্তির গল্পের ভিতর দিয়া? তাইলে সেইটা চমৎকার ভাবে পারলেন। কেউ কেউ স্টোরি বলতে গিয়া হিস্ট্রি বলে ফেলে। কেউ কেউ হিস্ট্রির নামে স্টোরি বলে। ব্যালেন্স দেখলে পাইলে বড় ভাল লাগে। ভাল ব্যালেন্স দেখাইলেন!


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি 'স্টোরি'গুলো এভাবেই বলতে চাই - তাদের পরিপার্শ্ব, কার্যকারণ, কার্যসংঘটন ও পরিণতি সহকারে। এতে যদি 'হিস্টোরি' কিছুটা বলা হয়ে থাকে তাহলে তা-ই সই। ইতিহাস পড়ার জন্য লোকে ঐতিহাসিকের দ্বারস্থই হবে; তবে তাতে 'আইভানহো' না পড়া বা তাতে বিশ্বাস না রাখার কারণ ঘটবে না। এই মীমাংসা দাঁড়িওয়ালা বুড়া অনেক আগেই করে দিয়েছেন।

'ব্যালেন্স' সুস্থিতির পরিচায়ক - এতে শক্তি অপচয়িত হয় না। প্রচেষ্টায় তার কিছুমাত্র অর্জিত হয়ে থাকলে আমি সন্তুষ্ট।

অটঃ পড়াশোনার চাপ অত্যধিক নাকি? তোমার গল্পের দেখা নাই অনেকদিন। তোমার রুমমেটও চুপ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

পাণ্ডব, তোমার সাথে যখন ব্যাক্তিগত পর্যায়ে বন্ধুত্ব হয়নি, তার অনেক আগে থেকেই তোমার লেখার ভক্ত আমি, হয়তো তোমাকে বলেছি নাকি সেভাবে বলা হয়নি, মনে পড়ছে না। আগে বললেও আজ তা আবার বলেই ফেললাম। তোমার এই সংলাপবিহীন গল্পের মাঝ থেকেও যেনো হাজার লাখো মানুষের হাহাকার ভেসে আসছে। এই মাত্র ২,৩২৮ শব্দের গল্পে যেনো তুমি তুলে এনেছো আবহমান বাংলার বিরাট এক চিত্র। যা দিয়ে একটি পুর্নদৈর্ঘ্য ছবি বা বেশ কিছু এপিসোডের নাটক বানানো যায়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ব্যক্তি পর্যায়ের অনুভূতিগুলো ব্যক্তি পর্যায়েই শেয়ার করো - তাতে আমার অস্বস্তি কমে, অন্য পাঠকেরও ভালো লাগবে। তোমার মূল্যায়ণকে আমি গুরুত্ব দেই কারণ তুমি জীবনে সিনেমাটিক রকমের ঘাত-প্রতিঘাত পার হয়ে আসা মানুষ। আমি আমার বোধকে প্রকাশ করার চেষ্টা করি। তোমাদের ভালো লাগলে আমারও ভালো লাগে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অমিত আহমেদ এর ছবি

আপনি সম্ভবত সচলের সবচেয়ে শক্তিমান গল্পকার। দারুণ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। "সম্ভবত সচলের সবচেয়ে শক্তিমান গল্পকার" - এই অভিধা মেনে নেবার কোন কারণই নেই। এটা বিনয় নয়, সত্য।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

চমৎকার! চলুক

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাপস শর্মা এর ছবি

গল্পটা দুদিন ধরে পড়ব পড়ব করে পড়িনি। সময় নিয়ে পড়তে হবে, তাই...... আজ পড়লাম। অসাধারণ বললে কম হবে, এটা বীভৎস বাস্তব।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পথিক পরাণ এর ছবি

পান্ডব দা
প্রকাশের তিনদিন পর আপনার এই গল্পটা পড়ার একটা সুবিধে হল এই যে, খুব চমৎকার কিছু মন্তব্য আর বিশ্লেষণসহ এটি পড়া হয়ে গেলো।

আপনার গল্পের ভেতর বুনে দেয়া কিছু শব্দ শেকড় ধরে নাড়া দেয়।

সংলাপবিহীন গল্পের এই ফর্মটাই আমার যেন কেন বেশি পছন্দ।

--------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সংলাপবিহীন এই ফর্মটা স্বেচ্ছাকৃত নয়। গল্প লিখতে গিয়ে আপনা-আপনি এটা হয়েছে।

গতকাল একজন পাঠক জানালেন সংলাপের স্বল্পতায় এই গল্পটি পড়তে গিয়ে তিনি হোঁচট খেয়েছেন। আমি আপনার মতামত এবং ঐ পাঠকের মতামত দুটোকেই সমান গুরুত্ব দেই। গল্প লেখার পর নিজে নিজে পড়তে গিয়ে যদি সংলাপের প্রয়োজন অনুভব করি তাহলে বর্ণনাকে সংলাপের মাধ্যমে প্রকাশ করবো, অথবা যদি সংলাপকে সংক্ষেপিত করে বর্ণনা আনার প্রয়োজন অনুভব করি তাহলে বর্ণনার আশ্রয় নেবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আসমা খান, অটোয়া এর ছবি

নির্মম বাস্তব এত চমৎকার ভাবে ফুটেছে, লেখাটা আমার খুব ভালো লাগলো। শব্দ-চয়ন, চিত্রকল্প, বর্ণনা ভঙ্গি মনকে ছুঁয়ে যায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনি ভালো আছেন তো। আপনার লেখা মিস্‌ করি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মণিকা রশিদ এর ছবি

এইরকম অসাদারণ গল্পগুলির ট্যাগে ,'গল্পপ্রচেষ্টা' লেখা মানে গল্পগুলির প্রতি অবিচার করা। লেখককে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'গল্প প্রচেষ্টা' সিরিজটার নাম। এই সিরিজের কোন কোনটা হয়তো গল্প হয়েছে, কোন কোনটা কিছুই হয়নি। সচলের পাঠকেরা নিতান্ত ভদ্রলোক, তাই তারা সহজে ক্ষমা করে দেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মণিকা রশিদ এর ছবি

অসাধারণ!( টাইপো)

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

কালো কাক এর ছবি

১৯৭১'এ যুদ্ধের পর থেকে আমার নানি নদীর মাছ খান না। নদীতে ভেসে যাওয়া লাশের সারি আর বাড়ির সামনে ব্রিজের উপর থেকে গুলি করে নদীতে মানুষ ফেলার দৃশ্য দেখে মাছ দেখলেই বমি করতেন তিনি বহুদিন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধে ঐ নৃশংসতা দেখার পরও উনি যে এখনো প্রকৃতিস্থ আছেন এটা আপনাদের ভাগ্য। এভাবে অনেকেই হয়তো অনেক কিছু ছেড়েছেন - আমরা জানতেও পারিনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।