বাংলাদেশে রফতানীমুখী শিল্প বিকাশের অন্তরায়

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: রবি, ০২/০৯/২০১২ - ৫:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে রফতানীমুখী শিল্পের ইতিহাস দেখলে আমরা দেখতে পাই আমাদের প্রধানতম শিল্পগুলো হচ্ছে পাট, চা, টেক্সটাইল। এই শিল্পগুলোর মধ্যে পাট এবং চায়ের কাঁচামাল পুরোটাই স্থানীয় আর টেক্সটাইলের কাঁচামাল প্রায় পুরোটাই আমদানী করা ছিল।

স্থানীয় উৎপাদন নির্ভর হলেও পাটের বড় বাজারটা ছিল দেশের বাইরে। পাটের ব্যবহার সংক্রান্ত গবেষণায় খুব ভালো ফলাফল না পাওয়ায়, পাটের অনেক বিকল্প বাজারে চলে আসায়, বিপুল পরিমাণ চোরাচালান ও লুটপাটের ফলে পাট শিল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। “বাংলাদেশের সোনালী আঁশ” শেষে “কৃষকের গলার ফাঁস”-এ পরিণত হয়। দেশের বাইরে বাজার মার খেলেও পাটের জন্য দেশের ভেতরের বাজারটা খুব ছোট ছিল না। কিন্তু এই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন কেউ বোধ করেছে বলে মনে হয় না। ফলে পাটের বিকল্পগুলো খোদ দেশের ভেতরটাও দখল করে ফেলে। পাট শিল্প অতীত ইতিহাসে পরিণত হয়।

খুব সাম্প্রতিক কালে দেশের উত্তরবঙ্গে কিছু নতুন চায়ের বাগান গড়ে তোলা ছাড়া দেশে চায়ের বাগানের বিস্তার বাড়ার বদলে দিন দিন হ্রাস পেয়েছে। চা গবেষণায় অল্প কিছু সাফল্য আসলেও সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া চায়ের আন্তর্জাতিক বাজার বাড়ানোর জন্য যেসব উদ্যোগ দরকার ছিল সেগুলো না নেয়ায় চা শিল্পে উল্লেখযোগ্য সাফল্য বা প্রবৃদ্ধি ঘটেনি।

অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থা ও লুটপাটের কথা বাদ দিলে পাট এবং চা উভয় শিল্পে বিকাশের প্রধান বাধাগুলো হচ্ছে গবেষণার ঘাটতি, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণে ব্যর্থতা। এই দুটো শিল্পই বৃহৎ শিল্প। সুতরাং এখানে বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ ছাড়া বিকাশ সম্ভব নয়। স্বাধীনতার পর বৃহৎ শিল্পগুলো রাষ্ট্রায়ত্বকরণ করা হলেও দুর্নীতি আর অযোগ্যতার জন্য সে প্রচেষ্টা সাফল্য লাভ করতে পারেনি। পরবর্তীতে সামরিক শাসনামলে বৃহৎ শিল্পগুলো ব্যক্তি মালিকানায় ফিরিয়ে দেবার নামে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে বেশির ভাগ কারখানার যন্ত্রপাতি মণদরে বিক্রি হয়ে যায়। কারখানার জমি, বসত বাড়ি বা মার্কেট হিসেবে বিক্রি হয়ে যায়। চা শিল্প এই প্যাঁচে খুব একটা পড়েনি তাই তার মার খাবার জন্য এই ব্যবস্থা দায়ী নয়। কিন্তু এই ব্যবস্থায় পাট শিল্প একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়।

সত্তরের দশকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল রফতানীতে খুব বেশি এগিয়ে না থাকলেও আশির দশক থেকে এর উন্নতি লক্ষণীয়। পাট শিল্পে মার খাওয়া উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র খুঁজতে থাকেন। এ’সময় টেক্সটাইলেরই একটা খাত তৈরি পোশাক বা রেডিমেড গার্মেন্টস আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে শুরু করে। নব্বইয়ের দশক জুড়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বিকশিত হয়ে স্বতন্ত্র একটা সেক্টরের মর্যাদা লাভ করে। এখনো পর্যন্ত গার্মেন্টসকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রফতানীমুখী শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই বিবেচনায় রেডিমেড গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে কিছু বলবো।

রেডিমেড গার্মেন্টস শিল্পটিতে কীভাবে কাজ করা হয় সে সম্পর্কে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা আছে। তবুও যাদের ধারণা পরিষ্কার নয় তাদের জন্য সংক্ষেপে প্রক্রিয়াটি বলছি। এই শিল্পের সাথে জড়িত পক্ষরা হচ্ছে -

প্রথম পক্ষঃ যারা পোশাকের অর্ডার দেন এবং পোশাক কিনে নেন - ক্রেতা বা বায়ার।

দ্বিতীয় পক্ষঃ যারা ক্রেতার কাছ থেকে অর্ডারটি নেন এবং প্রস্তুতকারীকে পোশাক বানানোর কাজটি দেন - দালাল বা মধ্যস্থতাকারী বা বায়িং হাউস/এজেন্ট। অনেক সময় তৃতীয় পক্ষ নিজেই দ্বিতীয় পক্ষের ভূমিকা নেয়।

তৃতীয় পক্ষঃ যারা অর্ডারের পোশাক বানান - প্রস্তুতকারী বা নির্মাতা বা ফ্যাক্টরী।

চতুর্থ পক্ষঃ যারা নির্মাতাকে পোশাক বানানোর কাঁচামাল সরবরাহ করেন - সরবরাহকারী বা সাপ্লায়ার।

বাংলাদেশে যারা এই ব্যবসায়ের সাথে জড়িত আছেন তারা মূলতঃ প্রস্তুতকারী। ক্রেতারা মূলতঃ ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার। অন্য দেশের ক্রেতাও আছেন, তবে পরিমাণ হিসাবে তারা খুবই কম। সরবরাহকারীরা মুলতঃ দূরপ্রাচ্যের, তবে এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান এবং স্থানীয় সরবরাহকারীও আছেন। তবে স্থানীয় সরবরাহের পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়। একটু বড় ক্রেতা হলে তারা নিজেরাই বাংলাদেশে বায়িং অফিস খুলে বসে বা বিশেষ কাউকে এজেন্সী দেয়। কারো কারো আবার আঞ্চলিক বায়িং অফিস থেকে (যেমন, সিঙ্গাপুর, হঙকঙ বা ব্যাঙ্কক) ক্রয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাংলাদেশী অনেক উদ্যোক্তা স্বাধীন বায়িং এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এর বাইরে নামে-বেনামে চীনা, জাপানী, কোরিয়ান, তাইওয়ানী, থাই, শ্রীলঙ্কান, ভারতীয়, ইউরোপীয়, আমেরিকান স্বাধীন বায়িং এজেন্টরাও বাংলাদেশে কাজ করেন।

ক্রেতা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রস্তুতকারীকে যে কার্যাদেশ দেন তার কাছে সেটিই রপ্তানী ঋণপত্র (Export Letter of Credit)। প্রস্তুতকারী রপ্তানী ঋণপত্রের বিপরীতে সরবরাকারীদের প্রতি ব্যাংকের মাধ্যম যে কার্যাদেশ দেন তার কাছে সেটিই আমদানী ঋণপত্র (Import Letter of Credit)। আমদানী ঋণপত্র রপ্তানী ঋণপত্রের বিপরীতে খোলা হয় বলে একে Back-to-Back Letter of Credit-ও বলা হয়। রপ্তানী ঋণপত্রে অর্ডারকৃত পোশাক জাহাজীকরণের সময়সীমা (মোটামুটি ১২০ দিন বা তার কম) নির্ধারিত বলে আমদানী ঋনপত্রে কাঁচামাল জাহাজীকরণের সময়সীমা তার চেয়ে অনেক কম হতে হয়। আলোচনার সুবিধার্থে যদি রপ্তানীর জন্য মোট সময়সীমা ১২০ দিন ধরি তাহলে আমদানীর জন্য সময়সীমা ৬০ দিনের বেশি না হওয়াই ভালো। কারণ এর চেয়ে বেশি সময় দিলে কাজ শেষ করতে অসুবিধা হয়ে যাবে।

অর্ডার পাবার পর প্রস্তুতকারীকে মোট কাঁচামালের পরিমান নির্ধারণ করে সরবরাহকারীদেরকে কাঁচামালের অর্ডার দিতে হয়। সরবরাহকারীকে আবার ক্রেতা বরাবর সরাসরি বা প্রস্তুতকারী মাধ্যমে কাঁচামালের গুণাগুণ নিশ্চিত করিয়ে নিতে হয়। একটা বড় অংশ সময় চলে যায় এই কাঁচামাল "পাশ" করাতে। এই সময়ের পরিমান যত বাড়বে নির্মাতার কপালে দুর্ভোগ তত বাড়বে। তারপর সরবরাহকারীর কারখানাতে তার উৎপাদন, জাহাজীকরণ, জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছানো, মাল খালাস ইত্যাদিতে চলে যায় কমপক্ষে ৬০ দিন। এতক্ষণে নির্মাতা সবকিছু হাতে পেলেন পোশাক বানানোর জন্য। কোন কোন বায়িং এজেন্ট নিজেই সব কাঁচামাল যোগাড় করে প্রস্তুতকারীকে দেন। তবে তাতেও সব কিছু হাতে পেতে পেতে অমন সময়টাই চলে যায়।

প্রস্তুতকারী কাজ শুরু করলেই যে সবকিছু মসৃণগতিতে চলবে এমনটা নয়। তার সামনে আছে বিদ্যুত না থাকা, শ্রমিক অসন্তোষ, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, কাজের মধ্যে ভুল করা, স্থানীয় পর্যায়ের কাঁচামালে সঠিক যোগান সময়মত না পাওয়া, হরতাল-অবরোধ জাতীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম, সময় মত জাহাজ না পাওয়া ইত্যাদি। এই বাধাগুলোর প্রত্যেকটি প্রস্তুতকারীকে একটু একটু করে আরো বেশি বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।

এখন কোন কারণে নির্মাতা যদি নির্ধারিত সময়ে পোশাক জাহাজীকরণ করতে না পারেন তাহলে কী হবে। তাহলে যা যা হতে পারে সেগুলো হচ্ছেঃ

১. ক্রেতা বলতে পারেন, "আমি এই অর্ডার বাতিল করলাম"। তারমানে, প্রস্তুতকারী ক্রেতার কাছ থেকে কোন টাকা পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে সকল সরবরাহকারী এবং সেবাদানকারীকে প্রস্তুতকারীর নিজের গাঁট থেকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এই মূল্য পরিশোধের পর বেশির ভাগ প্রস্তুতকারী আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেন না।

২. ক্রেতা বলতে পারেন, "ঠিক আছে আমি এই পোষাক নিলাম, কিন্তু মোট মূল্যের এত ভাগ কম পরিশোধ করব"। এতে প্রস্তুতকারীর লাভের গুড় পিঁপড়া খেয়ে যাবে।

৩. ক্রেতা বলতে পারেন, "যেহেতু আপনি যথা সময়ে পণ্য জাহাজে তুলতে পারেননি তাই আপনি পোশাকগুলো জাহাজের পরিবর্তে বিমানে পাঠান"। জাহাজে পাঠানোর ক্ষেত্রে জাহাজ ভাড়া ক্রেতা পরিশোধ করেন, কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া প্রস্তুতকারীকে পরিশোধ করতে হয়। জাহাজের ক্ষেত্রে একটি বিশ ফুট কন্টেইনারে যে পরিমাণ পোশাক আঁটে তার ভাড়া যদি এক হাজার ডলার হয়, তাহলে সম পরিমান পোশাকের বিমান ভাড়া হবে কমপক্ষে চল্লিশ হাজার ডলার। বোঝাই যাচ্ছে এই ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারী লাভ তো লাভ মূলধনেই হাত পড়ে যায়।

বিপদ শুধু এখানেই না, পোশাক ক্রেতার হাতে পৌঁছানোর পর যদি কাঁচামালে বা প্রস্তুতে কোন ত্রুটি দেখতে পায় তাহলেও তিনি প্রস্তুতকারীকে শাস্তি দিতে পারেন। এই শাস্তি বর্তমান অর্ডারের মূল্য হতে কেটে বা পরবর্তী অর্ডারের মূল্য কমিয়ে বা কাজ দেয়া বন্ধ করে দিয়ে হতে পারে। প্রতি ক্ষেত্রেই ঠেলাটা প্রস্তুতকারীকেই হজম করতে হয়।

এর বাইরেও আরো কিছু ফ্যাক্টর আছে যেগুলো প্রস্তুতকারীর লাভের পরিমাণ হ্রাস করে। ক্রেতা আর প্রস্তুতকারীর মধ্যে যদি স্বাধীন বায়িং এজেন্ট থাকে তাহলে তার কমিশন পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া কাঁচামাল কেনার দায়িত্ব পুরোটা বায়িং এজেন্টের হাতে থাকলে প্রস্তুতকারীর ভূমিকা হয় ঠুঁটো জগন্নাথের মতো। অর্থাৎ, তাকে শুধু কাপড় কাটা আর সেলাইয়ের দায়িত্ব নিয়ে সুবিধামতো লাভের হিসেব করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কিছু কিছু বায়িং এজেন্ট বা ক্রেতা প্রস্তুতকারীকে কাঁচামাল কেনার দায়িত্ব দেয় ঠিকই, কিন্তু সাথে সাথে বলে দেয় সেগুলোর কোনটা কার কাছ থেকে কিনতে হবে। ক্রেতা বা বায়িং এজেন্টের নির্ধারিত সরবরাহকারীর কাছ থেকে কাঁচামাল না কিনলে প্রস্তুতকারীর পণ্য ‘কোয়ালিটি টেস্ট’-এ উতরানোর সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। বলাই বাহুল্য, ক্রেতা/বায়িং এজেন্ট কর্তৃক নির্ধারিত সরবরাহকারীর পণ্যের মূল্য সাধারণত একটু বেশি থাকে। হয়রানী এড়ানোর জন্য প্রস্তুতকারীকে ঐ বেশি দাম দেয়াটুকু ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

তাহলে প্রস্তুতকারী লাভটা করেন কীভাবে? কোটা প্রথা উঠে যাওয়ায় প্রস্তুতকারীর লাভের জায়গাটা মূলতঃ কাপড় কাটা আর সেলাইতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে অবধারিতভাবে শ্রমিক শোষণের পথ খুলে গেছে। এর বাইরে অসাধু প্রস্তুতকারীরা ইউটিলিটি বিল ফাঁকি দেয়া, ৫% কাঁচামাল অতিরিক্ত এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়া, ডেলিভারিতে কম দেবার মতো কাজ করে লাভ নিশ্চিত করে। প্রথম সাত বছরের ট্যাক্স হলিডে থাকায় অনেকে সাত বছর পার হবার আগে নতুন নামে লাইসেন্স করে আগের ফ্যাক্টরীর যন্ত্রপাতি-শ্রমিক দিয়েই কাজ চালিয়ে সরকারকে আয়কর ফাঁকি দেয়।

প্রস্তুতকারী তার লাভটা নিশ্চিত করতে পারতো এবং আরো সময় নিয়ে নিজের কাজটা করতে পারতো যদি সে বাংলাদেশ থেকেই নিজের প্রয়োজনীয় সব কাঁচামাল কিনতে পারতো। খারাপ সত্যটা হচ্ছে এই যে, বাংলাদেশে কাঁচামাল সরবরাহের জন্য যথাযথ ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প গড়ে ওঠেনি। গার্মেন্টস্‌ শিল্পে প্রয়োজনীয় প্রায় সকল যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে কাপড়সহ অন্যান্য জিনিস আমদানী করতে হয়। দেশীয় টেক্সটাইল মিল যারা কাপড় বানান তারা হয় স্থানীয় স্পিনিং মিল থেকে সুতা কেনেন বা বাইরে থেকে সুতা আমদানী করেন। স্পিনিং মিলগুলোকে আবার তুলাসহ অন্যান্য কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। সুতা, বোতাম, জিপার, হুক, ভেলক্রোসহ অন্যান্য অ্যাকসেসরিজের কিছু স্থানীয় ফ্যাক্টরী গড়ে উঠেছে সত্য তবে সেখানেও ফাঁকি আছে। এইসব ফ্যাক্টরীর কাঁচামাল অধিকাংশ আমদানী করতে হয়। আবার কিছু ফ্যাক্টরীর মালিক বিদেশীরা যারা লাভের পুরো টাকাটাই বাংলাদেশের বাইরে নিয়ে যায়।

রফতানীর উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকারী যখন কাঁচামাল আমদানী করেন তখন তাকে আমদানী কর দিতে হয় না, রফতানী করও মওকুফ করা হয়। সুতরাং সরকারের রাজস্ব আয় যা হবার কথা তার প্রায় কিছুই হয় না। বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ যখন রফতানী আয়ের হিসেব দেয় তখন তার বিপরীতে আমদানী ব্যয়ের কথা চেপে যান। ফলে দেশের নীট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের হিসেব জানা যায় না। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে গার্মেন্টসের মূল্য সংযোজন ৫০%ও নয়। এই সময় তারা কাঁচামাল আমদানী কালে কর রেয়াত পাবার কথা, আয়কর রেয়াত পাবার কথাও চেপে যান। ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির হিসেবটাও জানা যায় না।

১৯৮৫ সালে মালয়েশিয়া যখন প্রোটন গাড়ি বাজারে নামায় তখন তাতে মালয়েশীয় কাঁচামাল ছিল ২০%-এর কম। আর আজ প্রোটন গাড়ির প্রায় ৮০% কাঁচামাল মালয়েশিয়ার নিজের। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের ইতিহাস তারচেয়ে পুরনো হলেও আমরা মূল্য সংযোজনে মালয়েশিয়ার গাড়ি ব্যবসার তুলনায় যোজন যোজন পেছনে অবস্থান করছি।

গার্মেন্টসের মতো প্রায় একই চিত্র দেখা যায় ইলেকট্রনিকস্‌, সাইকেল ইত্যাদি শিল্পেও। সিকেডি বা কমপ্লিটলি নক্‌ড ডাউন অবস্থায় আনা জিনিস বাংলাদেশে সংযোজন করলে মূল্য সংযোজন ২০%ও হয় না। সকল ক্ষেত্রে সরকারকে আমদানী ও রফতানী শুল্ক, আয়কর ইত্যাদি পরিশোধ করতে হলে গার্মেন্টসসহ এসব শিল্প বহু আগেই বন্ধ হয়ে যেতো। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে সিকেডি পণ্যের সাথে ফিনিশ্‌ড গুডসের মূল্য তুলনা করলে পার্থক্যের যে মার্জিন দেখা যায় তাতে এসব শিল্পের বড় অংশই চালানোর যৌক্তিকতা থাকে না।

তবু বাংলাদেশে এসব শিল্প কেন চলছে আর ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজই কেন গড়ে ওঠে না? বাংলাদেশে এসব শিল্প চলার বড় কারণগুলো হচ্ছে এদেশে শ্রম, ইউটিলিটি ইত্যাদি অত্যন্ত সস্তায় পাওয়া যায়। তাছাড়া সরকারকে চাপ দিয়ে শুল্ক-কর সংক্রান্ত সুবিধাগুলোও পাওয়া যায়। চামড়া, রাবার, প্লাস্টিক, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য জাতীয় শিল্পগুলো গড়ে ওঠার মূল কারণ এখানে পরিবেশ দূষণ করেও ফ্যাক্টরী চালানো যায়। পরিবেশ সচেতন অনেক দেশে এসেব শিল্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে, নব্বইয়ের দশক থেকে দেশে চামড়া শিল্পে ব্যাপক উন্নতি হয়। হাজারীবাগসহ ঢাকার পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে, বুড়িগঙ্গা নদীকে মেরে এখন চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানী হয়। জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, পরিবেশ দূষণ করে যে আয় হয় তাতে দীর্ঘমেয়াদে দেশের নীট লাভ বা ক্ষতির হিসেব করা হয় না।

বাংলাদেশে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প গড়ে না ওঠার বড় কারণ হচ্ছে আমাদের অব্যবসায়িক মনোভাব ও সরকারের দুর্বল নীতি। আমরা চাই যেন তেন প্রকারে দ্রুত অনেক টাকা লাভ করতে। ফলে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে আমাদের আগ্রহ নেই। সরকার ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজের শিল্পগুলোকে ফরওয়ার্ড লিঙ্কের সাথে মিলিয়ে হিসেব না করে স্বতন্ত্র শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে বিধায় সেসব শিল্পে শুল্ক-কর সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে চায় না।

ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প গড়ে ওঠার জন্য আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন, শংকর ধাতু উৎপাদন, রাসায়নিক শিল্পের বিকাশ, পর্যাপ্ত জ্বালানী সরবরাহ, নিরবচ্ছিন্ন ইউটিলিটির সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। এই কাজগুলো মূলত রাষ্ট্রের। এর বাইরে শিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানীর ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দরকার। এসব না থাকায় ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প গড়ে ওঠা হালে পানি পায়নি। যে সব শিল্প ফিনিশড প্রডাক্ট তৈরি করে তাদেরকে কাঁচামাল হিসেবে স্থানীয় পণ্য কেনার বাধ্যবাধকতা আরোপ না করায় ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের পণ্য অবিক্রিত থেকে যায়। অর্থাৎ মূল্য সংযোজনের নূন্যতম সীমা নির্ধারণ না করায় ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পকে উৎসাহিত করার পথ বন্ধ আছে।

নব্বইয়ের দশক থেকে মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে দেশে আমদানীর বাজার অবাধ করায় দেশীয় শিল্পগুলো অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে যায়। এদের বড় অংশ লোকসান গুনে বন্ধ হয়ে যায়। আশির দশক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পগুলো ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ায় এবং রাষ্ট্রের তরফ থেকে শিল্পোদ্যোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৈদেশিক বৃহৎ পুঁজির কাছে স্থানীয় ক্ষুদ্র পুঁজিরা মার খেতে থাকে। ব্যাংকগুলো ভোগ্যপণ্যের জন্য নির্বিচারে ঋণ দিতে থাকায় শিল্পক্ষেত্রে ঋণ দেবার জন্য আর পর্যাপ্ত টাকা থাকে না। তাছাড়া শিল্পে বিনিয়োগে টাকা উঠে আসতে তুলনামূলকভাবে সময় বেশি লাগে বলে তড়িৎ লাভ করতে আগ্রহী ব্যাংকগুলো শিল্প ঋণ পাবার জন্য যেসব শর্ত জুড়তে থাকে তাতে উৎসাহী শিল্পোদ্যোক্তাদের আশার আগুনে জল পড়ে।

এসএমই লোনের নামে কিছু ব্যাংক যে ঋণ দেয় তাতে শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়। বৃহৎ পুঁজি সাপ্লাই চেনের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে বলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পক্ষে ঐ শিল্পকে বা ঐ শিল্প থেকে নিজেদের লাভ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তাই ঐতিহাসিক নিয়মেই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের শিল্প উদ্যোক্তারা অচিরে পুঁজি হারিয়ে ফেলে। জাতীয় পর্যায়ে শিল্পে বিনিয়োগে নিয়ন্ত্রণের নীতিমালা না থাকায় দলে দলে লোক একই শিল্পে বিনিয়োগ করতে থাকে। ফলে ঐসব শিল্প ব্রেক ইভেন পর্যায়ে যাবার আগেই লোকসান দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়।

এ’কথা সত্য যে, বিনিয়োগ করার জন্য রাষ্ট্রের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। কিন্তু বাজার থেকে সেই অর্থ সংগ্রহ করার উপায় আছে। রাষ্ট্র বাজারে আকর্ষনীয় হারে বন্ড ছাড়লে এবং বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে আয়কর রেয়াত দিলে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের অর্থের অধিকাংশ রাষ্ট্রের হাতে আসতো। এতে রাষ্ট্র বৃহৎ শিল্পে সরাসরি বিনিয়োগের জন্য বা শিল্পোদ্যক্তাদের মাধ্যমে বড় উদ্যোগে অর্থায়ণের জন্য যথেষ্ট অর্থ পেতো। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরাও ভোগ্যপণ্য বা অপ্রয়োজনীয় সেবা খাতে নিজেদের সঞ্চয় উড়িয়ে দেবার বদলে তা বাড়াতে পারতো। এছাড়া রাষ্ট্রীয় বড় আকারের শিল্পোদ্যোগে রাষ্ট্র বাজারে সরাসরি শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে। এতে একটি বিশেষ শিল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা কাভার করার মতো লিঙ্কগুলোভিত্তিক শিল্পগ্রাম গড়ে তোলা সম্ভব।

কিন্তু বাস্তবে তা ঘটে না। বাস্তবে সঞ্চয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়। সঞ্চয়ের সুদের হার হ্রাস, করের হার বৃদ্ধি করা হয়। এতে সাধারণ মানুষ বা ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা সঞ্চয়ে লাভ খুঁজে না পেয়ে তা ভোগ্যপণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সেবা খাতে উড়িয়ে দিচ্ছে। বস্তুত কয়েকটা পক্ষ এমনটাই চাচ্ছে। এতে করে দেশে শিল্পোদ্যোগ হ্রাস পাবে, আমদানী বৃদ্ধি পাবে। এরাই সাধারণ মানুষকে শেয়ার বাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। এরা সোজা বাংলায় লুটেরা পক্ষ। এরা দেশী, এরা বিদেশী। এরা সব সরকারে আছে, সব দলে আছে, সব পক্ষে আছে।

রাষ্ট্রের চরিত্র থেকে যদি লুটেরা মানসিকতা উচ্ছেদ না করা যায় তাহলে শিল্পোন্নয়নের সুযোগগুলো সব সময় হাতছাড়া হতে থাকবে আর লুটেরাদের পকেট জনগণের টাকায় ভারী হতে থাকবে।


মন্তব্য

দুর্দান্ত এর ছবি

রপ্তানি-শিল্পের লুঠেরারও ভোগের প্রয়োজন হয়, গোলমাল দেখা দেয় যদি সেই ভোগ্যপণ্য আমদানি রাস্তা হাট করে খোলা থাকে। জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এমনকি ভারতেও আমরা দেখেছি শিল্পোন্নতির গোড়ার দিনগুলোতে তারা এক অভাবনীয় জাতীয় ঐকতানে খাই খাই বন্ধ রাখতে পেরেছিল। ভারত-মালয়শিয়ার সরকারি কর্মচারি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধানকে দেখেছি দেশীয় গাড়ীতে চড়তে। দেশের পুলিশ-সেনাবাহিনীর ব্যাবহৃত গাড়ী দেশে বানানো হয়। আর আমরা দেখেছি গার্মেন্টস আর প্রবাসী শ্রমিকের আয়ের টাক তো বটেই দান-দেনার টাকায় বিদেশ থেকে পাজেরো-পেট্রোল কিনতে।

সেই সুযোগ আমাদের দেবে কোমল-অবকাঠামো। বিচার, শিল্প, ব্যাংকিং আর কাস্টমস এর মত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি কুকুর না বানিয়ে রাষ্ট্রের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করতে দিলে রপ্তানি শিল্পের যেসব প্রতিবন্ধকতার কথা বললেন, সেগুলো বেঁচে থাকতে পারবে না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অবাধে আমদানীর রাস্তা খোলা হয়েছে নব্বইয়ের দশক থেকে। সেটা শুধু বাংলাদেশে নয়, দুনিয়ার অন্য আরো অনেক দেশে। জওয়াহিরলাল নেহেরু-প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশরা ভারতীয় শিল্প বিকাশের জন্য আমদানীর ওপর যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিলেন, নব্বইয়ের দশকে পি ভি নরসীমা রাও-মনমোহন সিং'রা সেটা তুলে দিতে বাধ্য হন। ফলে আমদানী প্রতিস্থাপনমূলক পণ্য উৎপাদনভিত্তিক শিল্পের বদলে অবাধে আমদানীর রাস্তা খুলে যায়। বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, অপেক্ষাকৃত সস্তা শ্রম ইত্যাদি সব বিবেচনায় ভারতে বিদেশী বিনিয়োগ আসতে থাকে। তবে সেখানেও ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ কতটুকু হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়।

জাতীয় ঐকতান বা দেশপ্রেমের কোন বিকল্প নেই। এটা না হলে হাবিজাবি জিনিস আমদানী করে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আরো বাড়তি ঋণ করার সংস্কৃতি বন্ধ হবে না।

শক্তিশালী স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, বিশেষ রাজনৈতিক ও ক্ষুদ্র স্বার্থ সংরক্ষণ বিরোধী স্বাধীন সরকারী সংস্থা, দেশপ্রেমিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বেড়ে উঠতে না পারার বড় কারণ সিস্টেমে নিহিত। সিস্টেমটাকে না বদলাতে পারলে এ'ধরনের উদ্যোগগুলো বার বার মার খাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

নব্বই-এর দশকে পৃথিবীর রাজনীতিতে মেরুপতন ঘটে। সোভিয়েত পতনের পরে বিশেষত এশিয়ার দেশগুলো বুঝে যায় আই-এম-এফ বা বিশ্বব্যাঙ্ক ছাড়া পথ নেই। তাই শর্ত মেনে বাজার খুলে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু এটা অনিবার্য ছিল বলে আমার মনে হয়। আপনি কতদিন নিজের বাজার বন্ধ রেখে অন্যেকে বাজার খুলতে বলতে পারেন? তারাও তো বাজার বন্ধ করে দেবার চাপ দেবে। তাই, এক সময় না এক সময়ে ওই রাস্তায় আসতেই হবে। আসলে বাজার খোলার আগে প্রস্তুতি লাগে, সেটা অনেকেওই ছিল না।

চিন অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে বাজার খোলার, তাই তাদের ততটা সমস্যায় পড়তে হয়নি। জাপানের ক্ষেত্রে ভালই সমস্যা হয়েছে। কোরিয়া, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া এশিয়ান ইকনমিক ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে গেছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি কিন্তু নরসীমা-মনমোহনদের কোন দোষারোপ করিনি, বলেছি তারা করতে বাধ্য হন। বাজার খোলার যে প্রস্তুতির কথা বলছেন সেটা সবচে' ভালো ছিল ভারতের। চীনের দরজা বিশেষ বিশেষ পণ্যের জন্য খোলা, সব পণ্যের জন্য নয় - নিয়মটা অলিখিত। একই কথা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্যও সত্য।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ দেশপ্রেম এবং বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ছাড়া আর কোন উপায় বোধহয় নেই!
অসাধারণ একটি লেখা! কিন্তু এইরকম লেখা পড়লে আমি খুবই অসহায় বোধ করি! হতাশ লাগে!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রু এর ছবি

ডিটো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একেবারে শুরুতেই তো ভুলটা হয়ে গেছে। পাকিস্তানফেরত বা পাকিস্তানপন্থী দক্ষ রাজনীতিবিদ-আমলাদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা স্বল্প দক্ষ রাজনীতিবিদ-আমলাদের দেশ পরিচালনায় আনা দরকার ছিল। এতে শুরুতে ছোটখাট কিছু ভুল হতো, কিন্তু দেশের সর্বনাশ ঠেকানো যেতো। বঙ্গবন্ধুকে বলা ফিদেল কাস্ত্রো'র উক্তিটা আর উল্লেখ করলাম না। সেটা আজো প্রাসঙ্গিক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্যাম এর ছবি

অসাধারন বলা ছাড়া এই লেখায় কমেন্ট করার কিছু নেই- ধন্যবাদ পান্ডব দা সহজ ও সুন্দরভাবে একটি জটিল বিষয় (আমার জন্য) এর বিশ্লেষণ ও সমাধানের ইঙ্গিত দেয়ার জন্য গুরু গুরু

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পথিক পরাণ এর ছবি

অসাধারণ আলোচনা।

আলোচনায় পাট, চা এবং টেক্সটাইল - তিনটি শিল্পের নানাদিক উন্মোচিত হয়েছে। প্রথমে পাট নিয়ে কিছু কথা মনে আসছে।

ক। পাট শিল্পের উপর প্রথম বড় আঘাত আসে আশির দশকে। ১৯৮২-৮৩ সালে বিশ্বব্যাংকের স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (স্যাপ) আওতায় প্রথম ৩৫টি পাটকল বেসরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে জুট সেক্টর এডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (জেস্যাপ) নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। সে কর্মসূচির আওতায় ৯টি পাটকল বন্ধ, ১৭টি বেসরকারিকরণ, আদমজীসহ বড় দুটি মিলের উৎপাদন সংকোচন, ২৫ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই একই কর্মসূচির আওতায় ১৯৯৩-৯৪ সালে ৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়।

খ। ২০০২ সালে বিশ্বব্যাংকের চাপে তৎকালীন সরকার লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আদমজি জুটমিল বন্ধ করে দেয়। আর এসময়ে বিশ্বব্যাংক ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জুট মিলের জন্য ৩০ কোটি ডলার ঋণ দেয়। আমাদের পাট শিল্পের উপর আন্তর্জাতিক প্রভাবটি এখানে স্পষ্ট অনুভব করা যায়।

গ। এখন দেখা যাক দেশের ভেতর চালু পাটকলগুলোর কি অবস্থা। সম্ভবত ৮৫/৮৬ সালের দিকে আদমজি জুট মিলে পাট শিল্পের সমস্যা চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের একজন শিক্ষক ঐ কমিটিতে ছিলেন। তাঁর জবানে স্মৃতি থেকে বলছি- একটা তাঁতে ন্যুনতম মজুরির শ্রমিকরা সরাসরি কাজ করে। তাঁত চললে তাঁর বেতন হবে। নচেৎ নাই। কাজেই সেই মজুরটি সবসময় তাঁতটি চালাতে উদগ্রীব। তাঁত চালাতে গিয়ে মাঝে মধ্যে তাঁর সমস্যা হয়। পাটের আঁশ ভালো না হলে মেশিনের ভেতর তা ছিঁড়ে যায়। তখন ঐ ছেঁড়া অংশ তাঁত থেকে বের করে আবার মেশিন চালু করতে একজন টেকনিশিয়ানের ডাক পড়ে। টেকনিশিয়ান হয়ত তখন দুপুরে খেতে গেছেন। আসতে আসতে বিকাল। ফলে সারাদিন ঐ তাঁতটি বন্ধ। এখন দেখা যাক পাট মেশিনের ভেতর ছিঁড়ে গেলো কেন। পাট কেনার জন্য সরকার বিজেএমসিকে টাকা দেয়। বিজেএমসি আবার মাঠ পর্যায়ে এই টাকায় কৃষকের থেকে পাট কেনে। পাটের যে গ্রেড আছে- কেনার সময় সেই গ্রেডটি যাচাই করা হয় না। অথচ কমদামে নিকৃষ্ট ধরণের পাট কিনে জুট মিলের গেটে সেই পাট মানসম্পন্ন হিসেবে উত্তীর্ণ হয়ে ভেতরে ঢুকে যায় অদৃশ্য কৌশলে। ঐ পাট মেশিনে ঢুকলে মেশিন তো বিগড়াবেই। আবার দেখুন- পাটের মান কি করে ভালো রাখা যায়- কৃষক সেটি জানে না। বিগত কয়েক বছরে পাটের আঁশ ছাড়ানোর জন্য চাষিদের রিবন রেটিং পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আমি প্রায় কোথাও এটি প্রয়োগ হতে দেখিনি। কৃষক পুরনো পন্থায় পানিতে জাগ দিয়ে পচিয়ে পাটের আঁশ ছাড়ায়। ফলে এর মান আপনাতেই নেমে যায়। ফলে কৃষকও ভালো দাম আশা করতে পারেনা।এটি কেবল একটি দিক। এখানে আরও বিষয় আলোচনা হতে পারে।

ঘ। বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও পাট শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। তার প্রমাণ ২০১০-১১ অর্থ বছরে এই খাতটি প্রায় ২০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। তবে এসময় চাষিরা প্রায় মারা পড়তে যাচ্ছে। পাটের দাম কুইন্টাল প্রতি এখন প্রায় ২০০০ টাকায় নেমে এসেছে। কম দামে এগুলো কিনছে ফড়িয়ারা। এরপর হয়ত সুযোগ বুঝে এই পাট চলে যাবে দেশের বাইরে। বিদেশে রপ্তানি করা কাঁচা পাট দিয়ে ঐ দেশ মুনাফা করে নিশ্চয়ই। তা না হলেতো কাঁচা পাট কেউ কিনত না। এখন আমাদের পাট কিনে নিয়ে আমদানি করে নিজেদের কলে ব্যবহার করে কেউ যদি মুনাফা করতে পারে- তবে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে- আমরা কেন নিজেদের পাট দিয়ে এই শিল্পে মুনাফা করতে ব্যার্থ হব?

চা শিল্প নিয়ে আসছি----

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। ধন্যবাদ।

পাট শিল্পের বারোটা বাজা শুরু হয় স্বাধীনতার পর পরই। খুব সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের পাটশিল্পের ঘন্টা বাজিয়ে ভারতের পাটশিল্পের উন্নতি সাধন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এই ক্ষেত্রে খুব দক্ষ ব্যান্ডমাস্টারের কাজ করেছে। তবে আমি বাইরের অপশক্তিকে এক তরফা দোষারোপ করে আত্মতুষ্টি পেতে নারাজ।

সামরিক শাসনামলে বেসরকারী মালিকানায় ছেড়ে দেয়া পাটকলগুলো ঠিকমতো চালালে পাটশিল্প আজও অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস থাকতো। কিন্তু সরকারী, বেসরকারী উভয় আমলে হরিলুট করায় সেটা সম্ভব হয়নি। তফসিলী বা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা দেয়নি, সরকারের কোন প্রণোদনা প্যাকেজও ছিল না। এই দোষগুলো আমাদের।

বাংলাদেশ এখন পাট চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বীজের জন্য প্রায় পুরোপুরি ভারতের উপর নির্ভরশীল। উন্নত জাতের পাটএর ভ্যারাইটি আবিষ্কারের চেষ্টা না করার দায় আমাদেরই। আরো একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে ভারতীয় পাট বীজ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসে না। ভারতের মধ্য-দক্ষিণ-পশ্চিমের রাজ্যগুলো পাট বীজ উৎপাদন করে।

কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ারদের দিয়ে পাট চাষ করিয়ে, নিজেরা পাটের কোষ্ঠা ছাড়িয়ে, পাটের সুতা উৎপাদন করে, পাটজাত পণ্য উৎপাদন করে সাপ্লাই চেইনের পুরোটা আমাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু আমরা সেটা করিনি। এটা আমাদেরই দোষ।

আশি-নব্বইয়ের দশকে যখন পাতলা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে আমাদের নদীবক্ষগুলো ভরাট হচ্ছিল আর পয়প্রণালী বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখন পাতলা চটের ব্যাগ দিয়ে এই দুর্যোগটা ঠেকানো যেত। কিন্তু আমরা সেটাও করিনি। এমন আরো অনেক উদাহরণ দেয়া সম্ভব।

২০০১ সালে আমাদের প্রতিষ্ঠান পাট রফতানীর উদ্যোগ নেয়। আমি একটি বিশেষ দেশের ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করলে এক সপ্তাহের মাথায় ঢাকাস্থ ঐ দেশের দূতাবাসের কমার্শিয়াল কনসুলার খোদ নিজে আমাদের অফিসে হাজির হন। আমাদেরকে উৎসাহ দিয়ে বলেন আমরা যেন রফতানীর প্রচেষ্টাটা অব্যাহত রাখি, এই ব্যাপারে তাদের সরকার আমাদেরকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে। বিনিময়ে আমরা তাদের দেশ থেকে সিমেন্ট ক্লিংকার ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য আমদানী করতে পারি। এই ঘটনায় বাংলাদেশের পাট শিল্পকে ডুবানোর আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সীমা দেখে আমরা হতবাক হয়ে যাই।

চা শিল্প নিয়ে আপনার সংযোজনের অপেক্ষায় আছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, লেখাটি পড়লাম। মন্তব্যগুলোও মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। সমস্যা যা আছে তার সমাধানও আছে কিন্তু করবেটা কে, যাদের করার কথা তারাতো নিজেদের পোটলা নিয়েই ব্যাস্ত।
ধন্যবাদ, প্রয়োজনীয় একটি প্রসঙ্গ তুলে আনার জন্য।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনি বুজুর্গ মানুষ। আপনি কিছু পরামর্শ যোগ করলে ভালো হতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রু এর ছবি

অসাধারণ লেখা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

তাহলে প্রস্তুতকারী লাভটা করেন কীভাবে? কোটা প্রথা উঠে যাওয়ায় প্রস্তুতকারীর লাভের জায়গাটা মূলতঃ কাপড় কাটা আর সেলাইতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে অবধারিতভাবে শ্রমিক শোষণের পথ খুলে গেছে।

এটা পরিষ্কার হলো না। যে প্রতিষ্ঠানের কাজ কাপড় কাটা আর সেলাই, সে তো তা থেকেই লাভ করবে। অন্য লাভের উপায় থাকলে শ্রমিক শোষণ হতো না সেটা কি? প্রাইভেট কোম্পানির পক্ষে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করার সুযোগ থাকলে তা সে নিজের লাভ ক্ষতি আর শ্রমের প্রাপ্যতার বিচারেই তো নির্ধারণ করবে। তাকে তখন যেকোনো অবস্থাতেই শোষণ বলার সুযোগ থাকে।

প্রস্তুতকারী তার লাভটা নিশ্চিত করতে পারতো এবং আরো সময় নিয়ে নিজের কাজটা করতে পারতো যদি সে বাংলাদেশ থেকেই নিজের প্রয়োজনীয় সব কাঁচামাল কিনতে পারতো।

এটা নিয়ে আরেকটু সময় দেয়া দরকার ছিলো। সব কাঁচামাল দেশে উৎপাদন হওয়াটা সবসময়েই কাজের কথা কি? কাঁচামাল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখানে স্বল্প প্রাপ্য জমির সঠিক ব্যবহার হবে কিনা সেটাও বিবেচ্য। দেশে উৎপাদন হলেই যে কাঁচামালের মূল্য আর গুণ বাইরের কাঁচামালের চেয়ে শ্রেয় হবে তা সবসময় নিশ্চয়ই নয়। এগুলো বিচার না করে সরকার পুঁজি জোগাড় করে শিল্পোৎপাদনে নামলে সম্পদের অপচয় আর ধ্বংস সাধনও হতে পারে।

তার মানে যে আমি দেশে উৎপাদনের বিপক্ষে তা নয়। তবে সেটা কাঁচামাল হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমরা যে রিসোর্সের দিক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় ভালো অবস্থানে আছি, সেটাকে এই মুহূর্তে ব্যবহার করতে হবে। ভবিষ্যতে কী কী রিসোর্স উপযোগী হয়ে উঠবে তা গবেষণা করে বের করতে হবে, সেটা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

আগামীতে পণ্য উৎপাদন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সেবা উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এবং এগুলোর একটা বড় বাজার হবে উন্নত বিশ্ব নয়, বরং এশিয়ার বিভিন্ন দেশই। ফলে দেখা যাবে মালয়েশিয়ার উদ্যোক্তারা ভারতীয় উদ্ভাবক আর চীনের কাঁচামাল ব্যবহার করে তাদের পণ্য আর সেবায় বাংলাদেশ সয়লাব করবে। সেই পণ্য বা সেবা দেখা যাবে উদ্ভাবিত, তাই সেটার অনুকরণ করেও তেমন সুবিধা করা যাবে না, আরেকটা নতুন পণ্য কিংবা সেবা হাজির হয়ে যাবে। এর বিপরীতে দেশীয় উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক, নতুন পণ্য কিংবা সেবার ধারণা তৈরিকারীর প্রয়োজন। রাষ্ট্র এখানে গবেষণায় সাহায্য করতে পারে, যেখান থেকে নানা উদ্ভাবনী ধারণার তৈরি হবে। নতুন পণ্য, সেবা আর বাজার ধরার ধারণা তৈরি হবে। আর টাকাওয়ালাদের আরো দূরদর্শী হতে হবে। নাহলে ডিস্ট্রিবিউটর হিসাবে তাদের থাকতে হবে। আর সেটা আর এখনের মতো সবসময় লাভজনক থাকবে না, শ্রমিক আর ভোক্তা "শোষণ" কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।

ফলে যদি আন্তর্জাতিক মুক্ত বাজারের প্রসঙ্গে আমরা বর্তমান থাকি, তাহলে কাঁচামালের শিল্প-উৎপাদনের মান্ধাতার চিন্তার বাইরে হয়তো আসতে হবে। এগুলো diminishing return ওয়ালা ধ্যানধারণা হয়ে আসছে। সামনের বড়সড় লেভারেজটা হলো উন্নয়নশীল দেশের মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের নিত্যনতুন পণ্য ও সেবা প্রদানের প্রধান উদ্যোগী/উদ্ভাবক হওয়াতে। কাঁচামালটা কোথা থেকে আসছে, তাতে উদ্যোগপতির লাভের তেমন ইতরবিশেষ হয়তো অনেকক্ষেত্রে হবে না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটু দৌড়ের ওপর আছি তাই ধাপে ধাপে উত্তর দিচ্ছি।

কোটা প্রথা যখন ছিল তখন কোটার জন্য একটা আলাদা মূল্য আদায় করার একটা ব্যাপার ছিল। বাজার থেকে কোটা কেনার যে ব্যয় সেটা দু-তিন বছরের মধ্যে কাভার হয়ে গেলে পরবর্তী বছরগুলোতে সেটা ছাঁকা লাভ ছিল। কোটা প্রথা উঠে যাওয়ায় সেই লাভটা গেছে। তাছাড়া কোটা প্রথা উঠে যাওয়ায় এখন বাংলাদেশকে কেউ কাজ দিতে বাধ্য না। ফলে আর দশটা দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে কাজ ধরতে গেলে আগের মতো দাম আর পাওয়া যায় না।

দরকারী কাঁচামালগুলো যদি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হতো তাহলে সেই খাতে খরচটা কিছু কম হতো। এতে নির্মাতা কিছুটা বাড়তি লাভ পেতো। কিন্তু সেটা না হওয়ায় নির্মাতাকে লাভের জন্য পুরোপুরি কাটা-সেলাইয়ের খরচ কমানোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

প্রাইভেট কোম্পানির পক্ষে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করার সুযোগ থাকলে তা সে নিজের লাভ ক্ষতি আর শ্রমের প্রাপ্যতার বিচারেই তো নির্ধারণ করবে।

এইখানে একটু ফাঁক আছে। নির্মাতার অন্য খাতগুলো থেকে আরো লাভ করার সুযোগ থাকলে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে একটু কম নিংড়াতো। সেটা না থাকায় নিংড়ানো একটু বেড়েছে। কোটা থাকা না থাকার ট্রানজিশন সময়ে এই সেক্টরে কাজ করেছি - সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

তাকে তখন যেকোনো অবস্থাতেই শোষণ বলার সুযোগ থাকে।

না, আমি অমন কোন যান্ত্রিক সরলীকরণে যাইনি। অমন বলাটা বালখিল্যতা বলে মনে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সব কাঁচামাল দেশে উৎপাদন করা সব সময়ই কাজের কথা নয়। দেশে উৎপাদিত হলে মূল্যে-মানে সব সময় সুবিধা পাওয়া সেটাও ঠিক নয়। এই জন্য কোন শিল্পে আমরা যাবো আর কোনটাতে যাবো না সেটা আগে বুঝতে হবে। গার্মেন্টসে এই সুযোগটা ছিল অনেক বেশি মাত্রায়, কিন্তু আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।

উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায় বিভিন্ন দেশে সম্পন্ন করা, অর্থ-প্রযুক্তি-শ্রম বিভিন্ন দেশ থেকে যোগাড় করা এই ব্যাপারটাও অনেকদিন ধরে চলে আসছে। ইতালী থেকে প্রযুক্তি কিনে, তাইওয়ান-কোরিয়া থেকে কাঁচামাল যোগাড় করে, চীনের কারখানায় বানিয়ে বাংলাদেশে বিক্রি করার অভিজ্ঞতা আমারই আছে। আগামীতে এই ব্যাপারগুলো আরো বাড়বে।

অনুকরণ করে সুবিধা করা যাবে না আর গবেষণায় রাষ্ট্রের সাহায্য লাগবে - এই দুইটা প্রপঞ্চে আমার উত্তর হ্যাঁ এবং না। কেন, সেটা সম্ভব হলে পরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবো। আপাতত ক্ষমা করতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সামনের বড়সড় লেভারেজটা হলো উন্নয়নশীল দেশের মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের নিত্যনতুন পণ্য ও সেবা প্রদানের প্রধান উদ্যোগী/উদ্ভাবক হওয়াতে।

একটু ভিন্নমত। মূল লাভটা করতে হয় বটম অভ দ্য পিরামিড থেকে। কারণ প্রফিট মার্জিন ওখানে বেশি হয়। বিশ্বাস না হয় সামাজিক ব্যবসার পয়গম্বরদের জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। আগামীতেও ঐ সেক্টরের জন্য নিত্যনতুন চাহিদা তৈরি করতে হবে। তাহলে সেখান থেকে ঘি-মাখনের সাপ্লাই বন্ধ হবে না। কিছু কিছু দেশে বিরাট আকারের শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হচ্ছে (যেমন, চীন, ভারত)। সেখানকার জন্য আপনার অবজারভেশন ঠিক আছে। তবে বিজনেস উইদআউট বর্ডার যখন চিন্তা করবেন তখন ঐ নিচুতলাকে প্রথমে ভাবতে হবে।

কাঁচামালটা কোথা থেকে আসছে, তাতে উদ্যোগপতির লাভের তেমন ইতরবিশেষ হয়তো অনেকক্ষেত্রে হবে না।

আমদানী কর, রফতানী কর, ফ্রেইট এই ব্যাপারগুলো যেহেতু সহসা উঠে যাচ্ছে না তাই লাভের হিসেবে কাঁচামালের অরিজিনটা বিবেচনা থেকে বাদ দেবার ব্যাপারটা আরো দেরি আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

চলুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব দি গ্রেট, চমৎকার সব উত্তরের জন্যে আমার অভিবাদন নিন। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য আপনিও আমার শুভেচ্ছা নিন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

লাভ বটম অব দ্য পিরামিড থেকে আসে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে। কিন্তু হাই টেক পণ্য - যেমন ধরুণ স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে লাভ আসে টপ অব দ্য পিরামিড থেকেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উপরের দিক থেকে লাভ আসবে না তাতো বলিনি, তবে মোমেন্টাম হিসেব করলে বড় চাংকটা নিচের থেকেই আসবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

পাণ্ডবের বৈশ্যবুদ্ধিও অতুলনীয়!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পাণ্ডবদের কোন বৈশ্যবুদ্ধি নেই। সেটা দ্বাপর যুগে ছিলনা, কলিতেও নেই। পাণ্ডবরা কেবল অন্যের হয়ে ভেবে দেয়। কখনো সেটা কাজে দেয়, কখনো দেয় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্পর্শ এর ছবি

অনেক কিছু জানতে পারলাম পাণ্ডব দা। এরকম একটা লেখা দাঁড় করাতে কত খানি সময় শ্রম আর ভাবনাচিন্তা ব্যয় করতে হয় ভাবি মাঝে মধ্যে। যারা নীতিনির্ধারক তারা কি এভাবে ভাবে? যদি না ভাবে, তাহলে আমরা এই অল্পকজন এই আলোচনা করে শেষবিচারে কতখানি পরিবর্তন আনতে পারবো?

অনার্য সঙ্গীত এর মত আমিও অসহায় বোধ করি, বানিজ্য শিক্ষা, বিজ্ঞান, রাজনীতি এসব নিয়ে লেখাগুলো পড়ে।

ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে কী বলেছিলো জানতে কৌতূহল হচ্ছে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সের জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে নব্যস্বাধীন বাংলাদেশের জনপ্রশাসন নিয়ে জিজ্ঞেস করায় জানতে পারেন যে বাংলাদেশের প্রশাসনে পাকিস্তানফেরত বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তখন কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে জানান যে, ক্যুবাতে তিনি সেটা হতে দেননি। ক্যুবাতে যারা জনযুদ্ধে অংশ নিয়েছে তাদেরকেই তিনি প্রশাসনে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে, দেশপ্রেমিক লোক অদক্ষ প্রশাসক হলেও দেশের প্রতি তার দায়বদ্ধতা থাকে। তাই সে প্রথম প্রথম সামান্য ভুল করলেও অচিরেই দক্ষ প্রশাসক হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে দেশবিরোধী বা গণবিরোধী লোক দক্ষ প্রশাসক হলেও বিপদজনক হয়। আখেরে সে দেশের ও জনগণের ক্ষতিই করে।

আজ ঊনচল্লিশ বছর পর ক্যুবা আর বাংলাদেশ অথবা কাস্ত্রো আর বঙ্গবন্ধুর দিকে ফিরে তাকালে কাস্ত্রোর উক্তির কঠোর সত্যতাটি টের পাওয়া যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল যুগোস্লোভাকিয়ার টিটোও সেই উপদেশই দিয়েছিলেন। (অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বইতে মনে হ্য় পড়েছিলাম - Making of a Nation)

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমি যদিও বাকশাল আর কিউবা দুয়েরই কঠোর সমালোচক, তবে সেই পথে যদি যাওয়ার দরকারই পরে, তাহলে পাকিস্তানফেরত বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের নিয়ে সেটা করাটা হলো worst combination.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কথা হচ্ছে তো ১৯৭২-১৯৭৩ সালের প্রশাসন নিয়ে, বাকশালের ধারণা তখনো তৈরিই হয়নি। বাকশাল হোক বা না হোক, যে কোন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে পাকিস্তানফেরত আর মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের নিয়ে প্রশাসন পরিচালনা সবচে' খারাপ চয়েস।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

আলোচনায় প্রাসঙ্গিক এই লেখাটা বিডিনিউজ২৪ এসেছে আজকেই। এখানে এম এম আকাশ বলছেন্ঃ

"আমরা আয় করছি ডলারে। ডলারের দাম এখন বেড়েছে। ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকার ওপরে গেছে ডলারের দাম। ডলারের যদি ২০ শতাংশ ডেপ্রিসিয়েশন হয়, তাহলে সবকিছুর দাম ২০ শতাংশ হারে বাড়বে। তাতেও কিন্তু মুনাফার হার ঠিকই থাকবে। মালিকরা এর সুযোগ নিয়ে মুনাফার পরিমাণ বাড়িয়ে নিচ্ছেন কিন্তু এই বাড়তি মুনাফাটা শ্রমিকদের সঙ্গে শেয়ার করছে না। তাতে ক্ষতি হচ্ছে যেটা তা হল, শ্রমিকদের পেটে টান পড়ছে।"

"প্রথমত, এই শিল্পের শ্রমিকদের ব্যাপক ট্রেনিং দিতে হবে। এখন যেভাবে চলছে সেভাবে চলবে না। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতিও লাগবে। আর এ সব আধুনিক যন্ত্র চালাতে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে ট্রেনিংটা খুব জরুরি। ৪৬০ উপজেলার প্রতিটিতে যদি ট্রেনিং সেন্টার করে দেওয়া যায়, তবে সেখান থেকেই আধুনিক মেশিন চালানোর উপযোগী দক্ষ শ্রমশক্তি বেরিয়ে আসবে। আর দরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো। ব্যস, এ দুটো হলেই আমাদের দেশে একটি শিল্প-বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া সম্ভব।"

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শ্রমিকের মজুরী সমন্বয় করা উচিত অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতির ওপর নির্ভর করে। এই ক্ষেত্রে বেতনের একটা দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রাকচার ঠিক রেখে মহার্ঘ্য ভাতা যোগ করা দরকার। এর সাথে নিয়মিত নবায়নযোগ্য আবাসন ভাতা, যাতায়ত ভাতা, দৈনিক ভাতা, ঝুঁকি বীমা, চিকিৎসা ভাতাও যোগ করা দরকার। সরকার এগুলোর হার ঠিক করে দেবে এবং তা প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তা তদারক করবে।

প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য সরকারের উদ্যোগে মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এফিলিয়েশন ও মানবিহীন ট্রেনিং সেন্টারগুলোর নামে প্রতারণা বন্ধ করতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

লেখাটা খুব একটা ফ্যাক্ট-বেসড না। কমেন্টে দেখুন একজন ইতিমধ্যে একটা ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা যতটা নির্মোহ হয় ততটাই ভাল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শিল্প বিপ্লব হবে এমন আশাবাদ থাকাটা ঠিক আছে। কিন্তু অচিরেই শিল্প বিপ্লব ঘটার মতো বৈপ্লবিক পরিস্থিতি আছে কিনা সেটা এস্টাবলিশ করার অমন কোন চেষ্টা তিনি করেননি। আপনি ঠিকই বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মোহমুগ্ধতার স্থান নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দিগন্ত এর ছবি

সঃে জন্যই আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দুর্দান্ত এর ছবি

"নির্মোহ-বানিজ্য" দারুন পান টার জন্য় ধন্য়বাদ।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার এই লেখাটায় প্রথমেই পড়া হয়েছিল, মন্তব্য করা হয়নি।

আসলে মুক্তবাজার অর্থনীতি আর যে কোন প্রকারে ‘কুইক-মানি’ বানানোর এই কম্বিনেশনে প্রাইভেট সেক্টারের খুব স্ট্রাকচারড কিছুর আশা করা যায়না।

এক্ষেত্রে আমি মনে করি সরকারের সঠিক এবং দূরদর্শী নীতি এবং রেগুলেটরী অবকাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (প্রাথমিক পর্যায়ে গার্মেন্ট সেক্টরে প্রণোদনা দেয়ার জন্য যে এক্স,পি,বি –এক্সপোর্ট প্রমোশন বেনিফিট, কিংবা এফডিআইয়ের জন্য ইপিজেডের কনসেপ্ট গুলি ভাল ছিল)।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অর্থনীতির আর আইনের স্ট্রাকচার তৈরির কাজটা তো সরকারের। সরকার দিক নির্দেশনা দিলে প্রাইভেট উদ্যোগগুলো সেই পথে হেঁটে তাতে টেকসই উন্নয়নের রক্ত-মাংস যোগ করতে পারে।

এক্ষেত্রে আমি মনে করি সরকারের সঠিক এবং দূরদর্শী নীতি এবং রেগুলেটরী অবকাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সহমত। তবে আমি এক্সপিবি ও বাংলাদেশে যে কায়দায় ইপিজেড চলে তার ঘোরতর বিরোধী। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ এই দুইটা উদ্যোগ থেকে কাঙ্খিত ফলের চার আনাও লাভ করতে পারেনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

দেরীতে পড়া হলো অসম্ভব প্রয়োজনীয় পোষ্টটি। সময়ের অভাবে বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারছি না এখন।

এই মুহুর্তে কেবল আপনার শেষ লাইনটাকে নিয়েই বলি-

রাষ্ট্রের চরিত্র থেকে যদি লুটেরা মানসিকতা উচ্ছেদ না করা যায় তাহলে শিল্পোন্নয়নের সুযোগগুলো সব সময় হাতছাড়া হতে থাকবে আর লুটেরাদের পকেট জনগণের টাকায় ভারী হতে থাকবে।

দুঃখজনকভাবে রাষ্ট্রের পরিচালকগন লুটেরাদের স্বার্থ রক্ষার্থে আইন প্রণয়ন করেন আর গরীবের পকেট থেকে টাকা বের করার বাজেট পেশ করেন। রাষ্ট্রপরিচালকগন হয় নিজেরা লুটেরা অথবা লুটেরাদের বন্ধুবান্ধব। কাক কাকের মাংস খায় না। আমাদের সর্ষের মধ্যেই ভুত, আমাদের বেড়া ক্ষেত খায়, আমাদের প্রবাদবাক্যগুলো বারবার রাষ্ট্রের মধ্যেই প্রমাণিত হতে দেখি।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পরিবর্তন যা কিছু করতে হবে তার জন্য উপরে বা নিচে তাকালে লাভ হবে না। তাকাতে হবে নিজের দিকে, নিজেদের দিকে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখককে বলছিলাম,
রপ্তানীমুখর বানিজ্য নিয়ে আপনি এমন লেখা যদি আমাদের আরো কিছু দিতেন বড়ই উপকৃত হতাম।

ধুলোমাখা পথ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রফতানীমুখী বিশেষ কোন শিল্প নিয়ে জানতে চাইলে বলুন, আমার জানা থাকলে অবশ্যই লিখবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কুমার এর ছবি

দেরীতে হলেও ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম। অসাধারণ পোষ্ট।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শাব্দিক এর ছবি

খুবই সময়োপযোগী গুছানো উপস্থাপনার সুন্দর পোস্ট। আর এম জি সেক্টরের উৎপাদন এবং রপ্তানি ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো খুব সহজ সুন্দর ভাবে লিখেছেন। মন্তব্য এবং প্রতিমন্তব্য আলোচনা থেকেও অনেক কিছু উঠে এসেছে।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্যাম এর ছবি

আজ আবার পড়লাম - এটা নিয়ে একটা সচলাড্ডা হওয়া উচিত - মানে আরো একটু খোলামেলা আলোচনা - কার ভাবনায় কি আছে - আমিই যেমন বলতে গেলে কিছুটা বেশী বলতে পারি কিন্তু লিখতে গেলে শব্দ সংখ্যা, চিন্তা সংখ্যা কমে যায় মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনি নিজেই সচলাড্ডা আয়োজন করতে পারেন। আর সেটা যদি ঢাকায় হয় তাহলে আমাকে যোগ দেবার সুযোগও দিতে পারেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।