অসহায় কপিরাইট

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/১০/২০১২ - ৪:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টিভি দেখার সুযোগ হবার আগ পর্যন্ত টেলিভিশন চ্যানেল ছিল একটি। ফলে তখন রেডিও’র শ্রোতা সংখ্যা ছিল অনেক। স্যাটেলাইট টিভি আসার পর দুম্‌ করে রেডিও তার শ্রোতার বড় একটা অংশ হারায়। আবার এফ এম রেডিও চালু হবার পর থেকে রেডিওতে যখন নতুন গ্ল্যামার যুক্ত হয়, তখন নতুন শ্রোতা শ্রেণী তৈরি হয়। প্রথম আমলে বাংলাদেশ বেতারে (তখনকার রেডিও বাংলাদেশ) গানের ক্ষেত্রে এক ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক’ ছাড়া বাকী সময় কেবল বাংলাদেশী শিল্পীদের বা বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের গান শোনা যেত।

ওয়ার্ল্ড মিউজিকে বাংলাদেশসহ দুনিয়ার সব দেশের গান শোনার সুযোগ ছিল। তবে সেখানে মূলতঃ ইংরেজী ভাষার গানই শোনা যেত। কালেভদ্রে এক আধটা ভারতীয় হিন্দী বা বাংলা, পাকিস্তানী উর্দু, অথবা অন্য দেশের ফরাসী বা স্পেনিশ ভাষার গান শোনা যেত। নব্বইএর দশকে বাংলাদেশ বেতার মধ্যরাতের অধিবেশন ‘নিশুতি’ চালু করলে সেখানেও বিদেশী গানের মধ্যে এই সমস্ত গানই শোনা যেত। এফ এম রেডিও চালু হবার পর দেখা গেলো এফ এম চ্যানেলগুলোতে বাংলাদেশী গানের পাশাপাশি ভারতীয় বাংলা বা হিন্দী, অথবা যে কোন দেশের ইংরেজী গান সারা দিন ধরেই বাজছে।

রেডিও চ্যানেলগুলো এই গানগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করে? সরকারী রেডিও চ্যানেলগুলো অন্য দেশের সরকারী চ্যানেলগুলোর সাথে বিনিময় বা সহায়তা প্রকল্পের আওতায় কিছু গান হয়তো পায়, কিছু গান তাদের স্টুডিওতে রেকর্ড করা, বাকি সব গান তাদেরকে বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হয়। বেসরকারী রেডিও চ্যানেলগুলোকে সব গানই অন্যদের বা বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশ বেতার বা এফ এম রেডিও চ্যানেলগুলোতে এইসব গান বাজানোর আইনগত অধিকার আছে কিনা। কপিরাইট আইন বলে, বাজার থেকে সংগ্রহ করা এইসব গান বাণিজ্যিক বা অবাণিজ্যিক ভিত্তিতে সম্প্রচার করতে হলে গানের মূল মালিকের পূর্বানুমতি নিতে হবে। তাছাড়া বাণিজ্যিক সম্প্রচারের ক্ষেত্রে গানের মালিককে রয়ালটি প্রদানের বাধ্যবাধকতাটিও আছে। সেক্ষেত্রে বিনিময় বা সহায়তা প্রকল্পের আওতায় পাওয়া ও নিজস্ব স্টুডিওতে রেকর্ড করা গান ছাড়া আর কোন গানের ক্ষেত্রে রেডিও চ্যানেলগুলোর গানের মূল মালিকের পূর্বানুমতি নিয়ে সম্প্রচার করার কথা এবং প্রথম ক্ষেত্রে গানের শিল্পীকে অন্যথায় গানের মূল মালিককে রয়ালটি প্রদান করার কথা। আলোচনার সুবিধার্থে যদি এমনটা ধরে নেই যে, রেডিও চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত বাংলাদেশী গানগুলোর শিল্পী ও গানের মূল মালিকদেরকে নিয়মিত রয়ালটি প্রদান করা হয় তাহলেও প্রশ্ন ওঠে বিদেশী গানগুলোর ক্ষেত্রে তারা আদৌ পূর্বানুমতি নেয় কিনা বা রয়ালটি প্রদান করে কিনা। উত্তরটা হচ্ছে - না। বিদেশী গান দূরে থাক বাংলাদেশী গানের ক্ষেত্রেও সরকারী বেতার রয়ালটি প্রদান করলেও বেসরকারী চ্যানেলগুলো রয়ালটি প্রদান করে না। আর বিদেশী গান সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কেউই পূর্বানিমতি বা রয়ালটির ধার ধারে না। এই বিষয়টি কপিরাইট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আইন বলে, আপনি বাজার থেকে গানের মূল রেকর্ড (যে কোন ফরম্যাটে) কিনে অবাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাজাতে পারবেন। কিন্তু ঐ রেকর্ড থেকে আপনি বাণিজ্যিক বা অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পুনরুৎপাদন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সম্প্রচার করতে পারবেন না। কেবলমাত্র গবেষণা ও পাঠদানের ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিলযোগ্য। অথচ আমরা সবাই গানের দোকান থেকে অর্থের বিনিময়ে ক্যাসেট বা অডিও সিডিতে গান রেকর্ড করে শুনি। আইনের দৃষ্টিতে এই কাজটির পুরোটাই বেআইনী। এর মানে হচ্ছে, আমাদের সবার প্রিয় ‘কবির ভাই’ থেকে শুরু করে যারাই আমাদেরকে নানা রকমের গান রেকর্ড করিয়ে গান শুনতে শিখিয়েছেন তারা আসলে একটি বেআইনী কাজ করেছেন। কোন কোন রেকর্ড কোম্পানী আবার অন্যের রেকর্ড কপি করে তার বাল্ক প্রডাকশন করে বাণিজ্যক ভিত্তিতে বিক্রয় করছে। এটা কপিরাইট আইন ভাঙার খুব বড় একটা উদাহরণ। এমনকি আমরা যারা রেডিও থেকে টেপ রেকর্ডারে গান রেকর্ড করেছি, তারাও আসলে কপিরাইট আইন ভেঙেছি। ব্যক্তিগত বা দলগত ওয়েবসাইটগুলোতে যারা অন্যের রেকর্ড করা গান আপলোড করে দিয়ে মূল্যের বিনিময়ে বা বিনামূল্যে যারা বিতরণ করছেন তারাও কপিরাইট আইন ভঙ্গ করছেন। ‘কপিরাইট আইন ২০০০’-এর ৮২-এর (১) ধারা মোতাবেক প্রথম বারের জন্য এই আইন ভঙ্গকারীর শাস্তি নূন্যতম ছয়মাস ও সর্বোচ্চ চার বছর কারাদণ্ড এবং নূন্যতম পঞ্চাশ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ দুই লক্ষ টাকা দণ্ড। পুনর্বার একই অপরাধ করলে ৮৩ ধারা মোতাবেক তার শাস্তি অনূর্ধব তিন বৎসর কিন্তু অনূন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং অনূর্ধব তিন লক্ষ টাকা কিন্তু অনূন্য এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড।

শিক্ষায়তনগুলোতে বা তার বাইরে স্বাধীনভাবে পরিচালিত ফিল্ম সোসাইটিগুলোতে প্রবেশমূল্যের বিনিময়ে বা কেবলমাত্র সদস্যদের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শণ, বিশেষত বিদেশী চলচ্চিত্র (যেগুলোর জন্য পূর্বানুমতি নেয়া দুরূহ) প্রদর্শণও কপিরাইট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ বিভিন্ন ফিল্ম সোসাইটির নামে বা চলচ্চিত্র উৎসবের নামে দর্শনীর বিনিময়ে বা একটু ঘুরিয়ে সদস্য পদ বিক্রির মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শন চলছে। এ’সব অনুষ্ঠানের অনেকগুলোতে সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বা জনপ্রতিনিধিদেরকে অতিথি হিসেবে প্রদর্শন উদ্বোধন করতে বা বক্তৃতা দিতে দেখা যায়। ব্যক্তিগত বা দলগত ওয়েবসাইটগুলোতে যারা অন্যের নির্মিত চলচ্চিত্র বা তার অংশবিশেষ আপলোড করে দিয়ে যারা মূল্যের বিনিময়ে বা বিনামূল্যে বিতরণ করছেন তারাও কপিরাইট আইন ভঙ্গ করছেন। ‘কপিরাইট আইন ২০০০’-এর ৮২-এর (২) ধারা মোতাবেক এর শাস্তি অনূর্ধ পাঁচ বৎসর কিন্তু অনূন্য এক বৎসর মেয়াদের কারাদণ্ড এবং অনূর্ধ পাঁচ লক্ষ টাকা কিন্তু অনূন্য এক লক্ষ টাকার অর্থদণ্ড।

ধরা যাক আপনি একটা কাজে ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায় গেছেন তখন আপনার দুই পাতার একটা ডকুমেন্ট ফটোকপি করা দরকার। আপনি সেখানে দেখবেন সারি সারি সব ফটোকপির দোকান। কিন্তু ঐসব দোকানের মধ্যে খুব কমজনই আপনার ঐ দুই পাতার ডকুমেন্ট ফটোকপি করতে রাজী হবে। কারণ, ঐসব দোকান মূলত গোটা বই ফটোকপি করতে আগ্রহী। নীলক্ষেত-বাকুশাহ্‌ মার্কেটে তো বটেই ঢাকার আরো অনেক মার্কেটে শুধু ফটোকপি বা স্ক্যান করে প্রিন্ট করে বই বানিয়ে বিক্রি করার অনেক দোকান আছে। এই দোকানগুলো প্রয়োজন থেকেই উদ্ভব হয়েছে। এই দোকানগুলো না থাকলে আমাদের অনেকের পক্ষে গ্রাজুয়েশন করাটা সম্ভব হতো না। কিন্তু এরা যা করছে তার সবটাই বেআইনী এবং কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ব্যক্তিগত বা দলগত ওয়েবসাইটগুলোতে যারা অন্যের প্রকাশিত গ্রন্থের বা পত্রিকার সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ আপলোড করে দিয়ে মূল্যের বিনিময়ে বা বিনামূল্যে যারা বিতরণ করছেন তারাও কপিরাইট আইন ভঙ্গ করছেন। একবার এক ওয়েবসাইটে ‘ছাদের কার্নিশে কাক’ বইটার সফট্কপি দেখে বইটার লেখক সচল আনোয়ার সাদাত শিমুলকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি এই ব্যাপারে অবগত আছেন কিনা। তিনি জানালেন যে, এই ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। শিমুল ব্লগে নিয়মিত একজন লেখক, ফেসবুকেও নিয়মিত। তার সাথে যোগাযোগ করা ও তার পূর্বানুমতি নেয়াটা খুব কঠিন কিছু ছিলোনা। এমনকি ঐ বইটার ভূমিকাতেও তার ঠিকানা ও ই-মেইল অ্যাড্ড্রেস দেয়া আছে। অথচ ঐ সাইটটির অধিকারীরা শিমুলের সাথে যোগাযোগ করার কোন চেষ্টা করেনি। এটাকে কি অজ্ঞতা বলব, নাকি ধৃষ্টতা বলব, নাকি নর্ম বলব? এটাকে যা-ই বলিনা কেন আসলে এটা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন।

আজকাল যেসব বই দুনিয়াজোড়া নাম করছে সেগুলো খুব অল্প ক’দিনের মধ্যেই বাংলায় অনুদিত হয়ে বাজারে চলে আসছে। বিশেষত, কেউ নোবেল প্রাইজ বা ম্যান বুকার প্রাইজ পেলে তার বইয়ের বঙ্গানুবাদ বের হতে সাত দিনও লাগে না। এসব বইয়ের খুব কমই লেখক বা মূল প্রকাশকের অনুমতি নিয়ে বের হয়। বাকি সবই বিনা অনুমতিতে বের হয় যা কপিরাইট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত জনপ্রিয় অনেক বই স্ক্যান করে প্রিন্ট করে বই বানিয়ে বাজারে চলে আসছে। এগুলোও কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কপিরাইট আইন নিয়ে সাধারণের মধ্যে অজ্ঞতা যেমন আছে তার চেয়ে বেশি আছে আইনটি না মানার প্রবণতা। বাংলাদেশে আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য অনেকে আইনটি জানা থাকলেও ভুক্তভোগী হিসাবে আইনের আশ্রয় নেন না। আবার কেউ আইনের আশ্রয় নিলেও আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য কাঙ্খিত সুফল পান না। আদালতে বিচার চলাকালীন সময়ে অপরাধী নকল করে বিপুল পরিমাণ অঙ্ক হাতিয়ে নেয়। ফলে ভুক্তভোগীর কপালে হয়রানী ছাড়া প্রকৃত সুফল প্রায় জোটেই না।

এই অবস্থার অবসানের জন্য কপিরাইট আইনের ব্যাপারে জনসাধারণকে সচেতন করা যেমন জরুরী, তেমনই জরুরী এর সার্থক প্রয়োগের জন্য শক্তিশালী কপিরাইট অফিস ও কপিরাইট আদালত। ভবিষ্যতে এর ব্যাপক প্রসারের কথা বিবেচনা করে অপরাধটি দেওয়ানীর পরিবর্তে ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করা যায় কিনা সেটাও ভাবা দরকার। কিছুদিন আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা গেল কপিরাইট অফিসের চূড়ান্ত দুর্দশা। লোকবল নাই, আধুনিকীকরণ করা হয়নি, বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল। অথচ এই মুহূর্তে মেধাসত্ত্বের ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ট্রেডমার্ক, কপিরাইট ও পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসগুলোকে শক্তিশালী ও সমন্বিত করতে না পারলে আইনের ফাঁক গলে বা আইনকে পাশ কাটিয়ে চলার এই প্রবণতা একটি স্থায়ী সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হবে।


মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

প্রয়োজনীয় লেখা। চলুক
বুকমার্কড।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

জরুরী লেখা পাণ্ডবদা, কিন্তু কাজ হবে?

আসলে এখানে আইন কঠিন না হলে কোনদিনও কিছু হবে না। আমি নিজেই শয়ে স্ক্যান করা বই পড়ি। কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন জেনেই পড়ি। বাংলাদেশে যারা গ্রাজুয়েশান করেছি তাদের পুরা গ্রাজুয়েশানই তো কপিরাইট ল-এর লঙ্ঘন। উইন্ডোজ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা সফটওয়ারও কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন (যারা লিনাক্স ইউজ করেন না)। আইনের সাথে সাথে এগুলার বিকল্প ব্যবস্থাও ভাবতে হবে। বাংলাদেশে বাধ্যতামূলকভাবে সব জায়গায় লিনাক্সের প্রচলন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বইয়ের বাজার ছোট হওয়ায় শুধু বাংলাদেশের জন্যে লো কস্ট ভার্সান করাটাও ঠিক সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ইন্ডিয়ান প্রিন্ট অরিজিনাল বইগুলাও আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধ্যের বাইরে থাকে অনেক ছাত্র-ছাত্রীরই। তাই আইন করার সাথে সাথে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে এসব ক্ষেত্রে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ লেখা পাণ্ডব দা। ভালো থাকবেন। গুরু গুরু

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ লেখা। এই বিষয়টা নিয়ে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। অনেক কিছু জানলাম।
ভালো থাকবেন পাণ্ডব দা। লেখায় গুল্লি

অমি_বন্যা

ফাহিম হাসান এর ছবি

আপনার চিন্তাটুকু ভালো লাগল। পোস্টে চলুক

একটু অন্যভাবে আলোচনা শুরু করি - কপিরাইট আইনের প্রতি (আসলে যে কোন আইনের প্রতি) সবার শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। কিন্তু সেই আইন যদি সমষ্টিগতভাবে সমাজের কল্যাণের কথা চিন্তা না করে তখন?

বইয়ের বা গানের ক্ষেত্রেই ধরি - যারা কপিরাইট আইন করেছেন তারা স্বাভাবিকভাবেই বই ও গানের "অর্থনৈতিক বাজার" বুঝতে ব্যর্থ। গায়ের জোরে গান বা বই শেয়ারকে ঠেকিয়ে রাখতে পারা যাবে না। এজন্য দরকার বিকল্প বাণিজ্যিক মডেল, বিকল্প আইন। বিভিন্ন "অর্থনৈতিক পণ্য" বিভিন্নভাবে উপযোগিতা (ইউটিলিটি) আনে। একই ছাঁটের আইনে কপিরাইটভঙ্গের অপরাধকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।

নোবেল বিজয়ীর অনুবাদকৃত বইয়ে কপিরাইট আইন ভঙ্গ হয় ঠিক। কিন্তু এভাবে অসংখ্য বিদেশী বইয়ের অনুবাদে বাজার ছেয়ে গেছে বলেই কৈশোরে অনেকেই বিখ্যাত সাহিত্যগুলোর স্বাদ নিতে পারছে।

এই যে চেতনার উন্মেষ, সাহিত্যের প্রতি স্পৃহা জাগানোর মূল্য - এর প্রভাব পড়ে সোশাল ওয়েলফেয়ারে।

আর এই সোশাল ওয়েলফেয়ার/ইউটিলিটি > কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েলফেয়ার/ইউটিলিটি

----
এই পয়েন্টে আপনার মতামতটুকু শুনি। তারপর চলেন আস্তে আস্তে আলোচনাটা এগিয়ে নিয়ে যাই হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি শহরের বাইরে আছি। আমার উত্তর দিতে দেরি হবে। ক্ষমা করবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

ইয়া মাবুদ! ক্ষমা চাওয়ার কী হল! আপনি সময় পেলে উত্তর দিয়েন - কোন সমস্যা নাই।

স্যাম এর ছবি

চলুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

কপিরাইট ল ইফেক্টিভলি ইম্প্লিমেন্টেবল না, ঠিক আছে।

এটা ভঙ্গে সোশ্যাল বেনিফিট হয়, সেটাও ঠিক আছে।

তবে

আর এই সোশাল ওয়েলফেয়ার/ইউটিলিটি > কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েলফেয়ার/ইউটিলিটি

এর ভিত্তিতে কপিরাইট ল ভঙ্গের জাস্টিফিকেশন দিতে সঙ্কোচ বোধ করছি। কারণ, তাহলে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্যাশবক্স খুলে নিয়ে যাওয়াকে জাস্টিফাই করার মতো কেইস হাজির করাও হয়তো অসম্ভব হবে না। এটা নিয়ে আরেকটু আলোচনা চলতে পারে।

কপিরাইটের বিরুদ্ধে (লেফ্টঘেঁষা এই) সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারই একমাত্র অভিযোগ কিন্তু নয়। (সেই হিসেবে ডানপন্থী তথা) প্রাইভেট প্রোপার্টিপন্থীদের মধ্যেও কপিরাইটের বিপক্ষে অনেকে অবস্থান নেন। তাদের ভাষ্যে - "ideas are not scarce, do not require rationing, are not diminished by their dissemination, and so cannot really be called property."

আমার মনে হয় হয়তো ব্যাপারটাকে এই দুই ধারণার ভিত্তিতেই যাচাই করলে "সোশাল ওয়েলফেয়ার/ইউটিলিটি > কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েলফেয়ার/ইউটিলিটি" ধারণাটা কেনো কপিরাইটের ক্ষেত্রে খাটলেও প্রাইভেট প্রোপার্টির ক্ষেত্রে খাটে না তা একটু পরিষ্কার হয়।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দেশে কপিরাইটের ব্যাপারে প্রচণ্ড কড়া অবস্থানকারীদের অনেককে আবার প্রোপার্টি রাইট্স নিয়ে তেমন উচ্চ বাচ্য করতে দেখা যায় না। সে ব্যাপারে তাদের অবস্থান সম্ভবত অস্পষ্ট। যে কারণে এদের অনেককে আন্দেলনে গাড়ি ভাঙচুরের পক্ষে সমর্থন দিতেও দেখা গেছে। লজিক্যালি কপিরাইটের প্রতি সোচ্চারদের প্রোপার্টি রাইট্সের ব্যাপারে আরো বেশি সোচ্চার থাকার কথা। মেধাসত্ত্বের ব্যাপারে রাইটিস্ট কিন্তু প্রাইভেট প্রোপার্টির ক্ষেত্রে লেফ্টিস্ট, এ এক অদ্ভুত আচরণ! হাসি

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমার মনে হয় হয়তো ব্যাপারটাকে এই দুই ধারণার ভিত্তিতেই যাচাই করলে "সোশাল ওয়েলফেয়ার/ইউটিলিটি > কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েলফেয়ার/ইউটিলিটি" ধারণাটা কেনো কপিরাইটের ক্ষেত্রে খাটলেও প্রাইভেট প্রোপার্টির ক্ষেত্রে খাটে না তা একটু পরিষ্কার হয়।

মানে মেধাসত্ত্বের ক্ষেত্রে বাণিজি্যক প্রতিষ্ঠানের "অধিকারের" দাবিটাই হাল্কা, ফলে তার বিপরীতে অঢেল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের ব্যাপারটা অগ্রাহ্য করা কঠিন। অন্যদিকে প্রাইভেট বস্তুগত প্রোপার্টির অধিকারের দাবিটা অনেকটা মৌলিক বিধায় তার বিপরীতে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের যুক্তি খাটানো কঠিন। এমনটাই আমার আপাতত ধারণা। অর্থাৎ ইন জেনারেল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার একটা বেসিক রাইট্সকে ওভাররাইড করতে পারে না। বেসিক রাইট্সের সেটাই সংজ্ঞা। ফলে তর্কটা দাঁড়িয়ে যায় কপিরাইট বেসিক রাইট্স, নাকি না।

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

লেখায় সহমত।

কাজি মামুন এর ছবি

তাহলে যে নেট থেকে বই ডাউন-লোড করে পড়ি, তাও কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন? নীলক্ষেত আর বাকু শাহ মার্কেটে অনুদিত বই অনুমোদিত হয় না, তা খুবই সত্য, কিন্তু অরিজিনাল ভাষাতেই তো বইটি প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে প্রকাশের ৭ দিনের মাথায়। আর ফটোকপি বা স্ক্যান করে বই আকারে প্রকাশিত হয় বলেই অনেকের কপালে গ্রাজুয়েশন জুটছে, সে কথা তো অনেকেই বলেছেন। আমার প্রস্তাব হল, কপিরাইট আইন একটি প্রয়োগ সীমা মেনে চলুক, মানে, আনোয়ার সাদাত শিমুলের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য লঙ্ঘন। কিন্তু গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তির সম্বল হিসেবে কাজ করে যে লঙ্ঘন, তাকে দায়মুক্তি দেয়া হোক।
অনেক অনেক দিন আগের কথা। নিউমার্কেটে গিয়েছিলাম পাঠ্যপুস্তক কিনতে। দেখি, একটই বইয়ের দামই হাঁকাচ্ছে ২,০০০/ টাকা। তো আমি জানালাম, আমার সম্বল সর্বসাকুল্যে ৫০০। দোকান মালিক ক্ষেপে গিয়ে বললেন, তাইলে এইখানে আসছেন কেন? চোর-বদমাইশদের (মানে, নীলক্ষেতের দোকান মালিকরা) কাছে যান, এই দামে তিন খানও পাইয়া যাইতে পারেন।
নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানিকে মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম সেদিন, সত্যি তিনি এক খনির সন্ধান দিয়েছিলেন। মাত্র দুইশ টাকাতেই বইটি কিনতে সক্ষম হয়েছিলাম। চোরদের এই খনি পুরো শিক্ষা জীবনেই ভীষণ কাজে লেগেছিল। একটি দেশের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নাম মাত্র মূল্যে মহামূল্যবান সব বইয়ের সরবারহজনিত মহৎ কাজের জন্য তাদের নোবেল শান্তি পুরুষ্কার দেয়া যেতে পারে, অন্তত আমার মতে।
লেখা ভাল্লাগছে, পান্ডবদা!

ফাহিম হাসান এর ছবি

নিউমার্কেটে অরিজিনাল বইয়ের দাম ফটোকপির চেয়ে বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। এতে রাগ হওয়ার কিছু নেই।

আমি একটু কৌতুহলী:

১। আপনি যেই বইটা কিনতে চাচ্ছিলেন তার পুরোটাই কি আপনার দরকার ছিল? বইটার কপি লাইব্রেরিতে ছিল? খোঁজ নিয়েছিলেন?

২। বইয়ের প্রকাশক/লেখকের সাইটে খোঁজ নিয়েছিলেন যে পুরানো এডিশানের সফট কপি পাওয়া যায় কিনা? (অনেক সময় কিন্তু আগের এডিশানগুলো বিনামূল্যে আপ্লোড করা থাকে)

৩। অরিজিনাল বইটা দুই-তিঞ্জন মিলে কেনা যেত কি?

৪। আপনার প্রয়োজন সাপেক্ষে এই বইটার জন্য আপনি মানসিকভাবে কত টাকা দিতে রাজি ছিলেন? (মানে আসল বইতার জন্য আপনার willingness to pay কত ছিল? ঠিক কত টাকা হলে আপনি বইতা কিনতেন?)

কাজি_মামুন এর ছবি

প্রশ্নগুলোর জন্য ধন্যবাদ, ফাহিম ভাই।

১। আপনি যেই বইটা কিনতে চাচ্ছিলেন তার পুরোটাই কি আপনার দরকার ছিল? বইটার কপি লাইব্রেরিতে ছিল? খোঁজ নিয়েছিলেন?

না, অংশবিশেষ দরকার ছিল। আর বইটার লেটেস্ট ভার্সান লাইব্রেরিতে ছিল নয়। প্রথম দিনগুলোতে একটা আলাদা উত্তেজনা কাজ করতো (বেশি সিরিয়াস আর কি! হাসি )। তাই পুরো বই কিনতে আগ্রহী ছিলাম। তবে পুরো বইয়ের একটা সুবিধাও আছে, ধরুন, আপনাকে ৪র্থ চাপ্টারের পরেই আবার ৮ম চাপ্টার পড়তে হবে, সেক্ষেত্রে ৮ম চাপ্টারে মাঝের ৫ম-৭ম চাপ্টারের রেফারেন্স থাকতে পারে, পুরো বই থাকলে মাঝের চাপ্টারের রেফারেন্সজনিত সমস্যাগুলো ফেইস করতে হয় না। এজন্য আমি কিছু কোর্স বাদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরো বই কিনতাম। অবশ্য ফটোকপি করা চোরাই বই।

২। বইয়ের প্রকাশক/লেখকের সাইটে খোঁজ নিয়েছিলেন যে পুরানো এডিশানের সফট কপি পাওয়া যায় কিনা? (অনেক সময় কিন্তু আগের এডিশানগুলো বিনামূল্যে আপ্লোড করা থাকে)

আমাদের সময় ইন্টারনেট এত সুলভ ছিল না। আর বেশি পুরনো এডিশনে আমাদের চলতও না। কারণ ফরম্যাটে অনেক চেঞ্জ থাকত।

৩। অরিজিনাল বইটা দুই-তিঞ্জন মিলে কেনা যেত কি?

অবশ্যই কেনা যেত, কিন্তু তাতে পঠনে কি বিঘ্ন ঘটত না? ধরুন, আমার আজ এই বইটা পড়তে মন চাইছে, কিন্তু তা হয়ত থাকত আমার বন্ধুর হাতে। সবসময় সব বইয়ে মন বসে না, এটা তো মানবেন?

৪। আপনার প্রয়োজন সাপেক্ষে এই বইটার জন্য আপনি মানসিকভাবে কত টাকা দিতে রাজি ছিলেন? (মানে আসল বইতার জন্য আপনার willingness to pay কত ছিল? ঠিক কত টাকা হলে আপনি বইতা কিনতেন?)

আসলে অরিজিনাল বইয়ের দাম নিয়ে আমার কোন আইডিয়া ছিল না। কারন এর আগে এ ধরনের বিদেশি বই কেনার অভিজ্ঞতা ছিল না। প্রচলিত সর্বোচ্চ নোটটি নিয়ে ভেবেছিলাম, নিশ্চয়ই একখানা বই কেনা যাবে। কিন্তু পরে বুঝেছিলাম, ঐ টাকা দিয়ে অরিজিনাল বইয়ের ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না, বরং নীলক্ষেত থেকে চোরাই বই দুটো হলেও কেনা যাবে। আর willingness to pay যদি বলেন, তা অবশ্যই ৫০০ টাকার বেশী নয়। মানে, শুধু চোরাই বইয়ের ক্রেতা হবার আর্থিক বা মানসিক যোগ্যতা ছিল আমাদের। হাসি

শিশিরকণা এর ছবি

বিকল্প ব্যবস্থা না করে কপিরাইট আইন প্রয়োগ করতে গেলে সীমিত আয়ের মানুষের উপর অবিচার হয়ে যাবে, অর্থাভাবের কারণে শিক্ষা ও বিনোদন থেকে কাউকে বঞ্চিত রাখা তো ঠিক না। অনেক ক্ষেত্রে কপিরাইট সহ ব্যাবহারের মূল্য দিতে পারবে না দেখেই অনেকে আর অনুমতি খোঁজার চেষ্টাও করেনা। কিন্তু তাই বলে সবখানে দাতব্য অনুমতি দিয়ে চালানোর চিন্তা করাও ঠিক না। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির দাম সব দেশে একই সংখ্যা কিন্তু স্থানীয় মুদ্রায় ধরলে হয়ত ব্যাপারটা ফিজিবল হতে পারে। গ্রামের হাটে কিন্তু মানুষ ঠিকই দু'টাকা দিয়ে শাহ আলমের কবিতার বই ইত্যাদি কেনে। ১০০টাকায় হ্যারি পটার পেলে আমরা সেটা খরচ করতে রাজি থাকি। কিন্তু সবার আগে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার যে, মূল লেখক বা শিল্পীকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া ও অনুমতি নেয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

দিগন্ত এর ছবি

পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষকে আমি যেমন বোঝাতে পারি না যে দেশের সংখ্যালঘুদের ক্ষতি হলে দীর্ঘমেয়াদে সংখ্যাগুরুর ক্ষতি বেশী, তেমন কপিরাইট আইন প্রযোজ্য না হলে কার্যত দেশের ক্ষতি বেশী, লাভ কম।
প্রথমত, কপিরাইট আইন থাকলে দেশীয় শিল্প স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহ পায় মৌলিক শিল্প-সাহিত্যকর্মে। হ্যারি পটারের লেখা বাজারে কপি করে না বেরোলে দেশের দক্ষিণারঞ্জনেরা আরো ভাল লেখা লিখত, হিন্দি গানের নকল না হলে দেশের গীতিকারের লেখা গান শুনতেন - কারণ তা আপনার অর্থনৈতিক সামর্থ্যের মধ্যে আসত। হয়ত সেটা আপাত লো-কোয়ালিটি হত কিন্তু এখনকার থেকে অনেক ভাল মানের হত। পাঁচজন দক্ষিণারঞ্জনের একজনের লেখা বিদেশে রপ্তানীও হত।
দ্বিতীয়ত, কপিরাইট আইন তেমনভাবে প্রযোজ্য না থাকায় সফটয়ার, আউটসোর্সিং ও প্রকাশনা সহ বিভিন্ন ব্যবসা দেশে খোলা হয় না।
উলটে যা হচ্ছে সেটা হল স্টুডেন্ট অবস্থায় সবাই এই সস্তার নকলীকৃত কন্টেন্ট পড়ে রিডিং হ্যাবিট তৈরী করছে যার ফলে আর পরবর্তীতে দেশীয় কিছুই তারা পড়ছে/দেখছে/শুনছে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফাহিম হাসান এর ছবি

প্রথমত, কপিরাইট আইন থাকলে দেশীয় শিল্প স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহ পায় মৌলিক শিল্প-সাহিত্যকর্মে। হ্যারি পটারের লেখা বাজারে কপি করে না বেরোলে দেশের দক্ষিণারঞ্জনেরা আরো ভাল লেখা লিখত, হিন্দি গানের নকল না হলে দেশের গীতিকারের লেখা গান শুনতেন - কারণ তা আপনার অর্থনৈতিক সামর্থ্যের মধ্যে আসত। হয়ত সেটা আপাত লো-কোয়ালিটি হত কিন্তু এখনকার থেকে অনেক ভাল মানের হত। পাঁচজন দক্ষিণারঞ্জনের একজনের লেখা বিদেশে রপ্তানীও হত।

আপনার কথাটা ঠিক গান, সাহিত্য ইত্যাদি সৃষ্টিশীল/সৃজনশীল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কথাটা সত্যি হত যদি একটা বই আরেকটা বইয়ের পার্ফেক্ট বা কাছাকাছি সাবস্টিটিউট হত।

যে বিদেশি গান শোনে, সে কি দেশি গান শোনে না? অবশ্যই শুনে - মাইকেল জ্যাকসনের শ্রোতা দেশি ব্যান্ডার গানও শুনে। আম‌রা‌ বব ডিলান আর সুমনের গান শুনে একই ভাবে আপ্লুত হই।

হ্যারি পটারের লেখা বাজারে কপি করে না বেরোলে দেশের দক্ষিণারঞ্জনেরা আরো ভাল লেখা লিখত

ঠিক কোন প্রেক্ষিতে কথাটা বললেন বুঝলাম না। কথাটা কেমন জানি শোনাল! ভালো বই না পড়লে ভালো লেখক হবে কিভাবে? হ্যারি পটারের আগে কয়জন ফ্যান্টাসি লেখক হয়েছে বাংলায় - এইভাবে "কী না হলে কী হতে পারত" কোন ভালো যুক্তি হল কী?

এত সহজে cause-effect সম্পর্ক টানলে হয় নাকি ভাই?

-----
কপিরাইট সম্পর্কে আমার নিজের জানার আগ্রহ থেকেই এত কথা। আবার চোর বলে বকা দিয়েন না। যদিও আমি মার্কেজ, পামুক ইত্যাদি বাংলা অনুবাদে পরে ব্যাপক আনন্দ পেয়েছি, আমার ধারণা আরো অনেকেই পেয়েছেন (তাদের মাঝে হয়ত কেউ কেউ ভাল কিছু লেখার তাগিদও পেয়েছেন)

দিগন্ত এর ছবি

"কথাটা সত্যি হত যদি একটা বই আরেকটা বইয়ের পার্ফেক্ট বা কাছাকাছি সাবস্টিটিউট হত।"

- কোনও বইই আরেকটার সাবস্টিটিউট না, কিন্তু ক্রেতার চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে একে অপরের সম্পূরক হতেই পারে। আমার উদাহরণটা লক্ষ্য করুন, আমাদের আগের জেনারেশনের হাতে যখনও তেমনভাবে আমেরিকা-ইউরোপের লেখা এসে পৌঁছয়নি, আমাদের দেশের লোককথা কিন্তু দেশে জনপ্রিয় ছিল।

"আম‌রা‌ বব ডিলান আর সুমনের গান শুনে একই ভাবে আপ্লুত হই।"

- কিন্তু বব ডিলানের গানের জন্য যদি দশ ডলার আর সুমনের গানের জন্য যদি দশ টাকা দিতে হয়, তাহলে আপনি নিশ্চয় সুমনের গান বেশী করে শুনবেন, অর্থাৎ সুমন বা তদ-শ্রেণীয় কলাকৌশলীরা আরো ভাল গাল লেখার-গাওয়ার উৎসাহ পাবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফাহিম হাসান এর ছবি

দিগন্ত ভাই, আপনার যুক্তি অনুসারে -

বিদেশী টেক্সট বইয়ের যে কপিরাইট আইন আছে থাকুক। দাম বেশি হলে যার পোষায় সে কিনবে, আর যার পোষায় না সে দেশি টেক্সট বই পড়বে। এতে করে দেশি অধ্যাপকরা দেশি টেক্সট বই লেখার উৎসাহ পাবে।

এই রিজনিং কি আদৌ বাস্তবায়িত হয় বা হবে? দেশি টেক্সটের জ্ঞান আর বিদেশি টেক্সটের তথ্য, বিষয়বস্তু, বিষয়বস্তুর উপস্থাপনা কি সমান? এটা খুব সহজেই কপিরাইট ভাঙ্গার জন্য ইন্সেন্টিভ দেয়।

আমার প্রস্তাবনা - বিকল্প মডেল: (এগুলো শুধু সম্ভাবনার কথা বলছি, অনেকটা উদাহরণ হিসেবে)

যেমন: হতে পারে প্রোডাক্ট ডিফারেন্সিয়েশান

বিদেশি বইগুলোর একটা সুলভ/পেপারব্যাক সংস্করণ বের করা যেতেই পারে। বা শুধু সীমিত আয়ের দেশগুলোর জন্য একটা এডিশান থাকতে পারে - বা হতে পারে স্বল্প মূল্যের একটা ই-বুক ভার্সন। যাতে করে শেখার পথটুকু অন্তত খোলা থাকে।

গানের ক্ষেত্রে করা যেতে পারে - গান ভিত্তিক বা অ্যালবাম ভিত্তিক বিক্রি না করে সাবস্ক্রিপশান বেইজড। গান পাগল মানুষেরা পছন্দের প্রকাশকদের গ্রাহক হতে পারেন (মাসিক, বাৎসরিক)। বিনিময়ে ঐ প্রকাশনা থেকে যে গান/অ্যালবামগুলো বের হবে তার সিডির কপি পাবে (সাথে বাড়তি ইন্সেন্টিভ থাকুক সই করা টি শার্ট বা পোস্টার)।

আমার মতে ব্যবসা করতে হলে চিন্তাটা এই লাইনে করতে হবে। হাজার খানেক আইন করেও আপনি কপিরাইট টিকিয়ে রাখতে পারবেন না - কারণ এই সমস্যার কোন আইনগত সমাধান নেই। ভোক্তা মাত্রই ইন্সেন্টিভ ড্রিভেন, ঠিক কী ইন্সেন্টিভ দিলে আপনি মার্কেটে টিকে থাকতে পারবেন তা আপনাকে ভোক্তার মনস্তত্ব বিশ্লেষণ করে বের করতে হবে - এই কাজটা আইন দিয়ে হবে না।

ফাহিম হাসান এর ছবি

----
সাথে আরেকটা ব্যাপারও আছে - যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লং টার্মে গুড উইল বা ব্র্যান্ড নেইম বানানোর ব্যাপার আছে। (শর্ট টার্ম প্রফিট ম্যাক্সিমাইজিং নিশ্চয় শেষ কথা নয়)। ধরে নিলাম দেশে চরম কড়াকড়ি করে আপনি কপিরাইটের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন, কিন্তু এই কড়াকড়ির জন্য মূল্যও দিতে হবে বৈকি! যেমন দিচ্ছেন মোস্তফা জব্বার।

দিগন্ত এর ছবি

আমার ধারণা উভয় ব্যবস্থাই বহুল পরিমাণে প্রচলিত। আমেরিকাতেও এখন এলবামের তুলনায় সোলোর বিক্রি বাড়ছে। বইয়ের ভারতীয় এডিশন পড়েই আমি আমার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পেয়েছি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষকে আমি যেমন বোঝাতে পারি না যে দেশের সংখ্যালঘুদের ক্ষতি হলে দীর্ঘমেয়াদে সংখ্যাগুরুর ক্ষতি বেশী

আমি লিবার্টারিয়ান ঘরানার নানা ফ্লেভারের মতের মধ্যে এই মতের সাথে পরিচিত। এ ব্যাপারে আমার অভিযোগ হচ্ছে, এটা ডিডাক্টিভলি সত্য নাও হতে পারে। অন্যদিকে - এই রিজনিংয়ের বিপদ হচ্ছে যে তাহলে কোনো কেইসে বিশেষ কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠির ক্ষতি করে দীর্ঘ মেয়াদেও যদি সংখ্যাগুরুর ক্ষতি বেশি না হয়, সে ক্ষেত্রে সেটা করাকে জাস্টিফাই করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ এটা মূলত সংখ্যাগুরুর লাভ ক্ষতির পয়েন্ট অব ভিউ। প্রাগমাটিক ভিউয়ের এই হলো সমস্যা।

আরেকটা ফ্লেভার হলো বেসিক রাইট্সের পয়েন্ট অব ভিউ। সেখানে সংখ্যালঘুর ক্ষতিতে অন্য কারো ক্ষতি না হলেও তার সেই ক্ষতি করা যাবে না। পিরিয়ড

তেমনি "হ্যারি পটারের লেখা বাজারে কপি করে না বেরোলে দেশের দক্ষিণারঞ্জনেরা আরো ভাল লেখা লিখত" যুক্তিটা কিন্তু "হ্যারি পটারের লেখা বাজারে ব্যান হলে দেশের দক্ষিণারঞ্জনেরা আরো ভাল লেখা লিখত" যুক্তিটাকে নাকচ করতে পারে না, বরং কিছুটা বলবো সমর্থনই করে। তাহলে কপিরাইট কার্যকর করার জাস্টিফিকেশন যদি দেশের দক্ষিণারঞ্জনদের আরো ভাল লেখাই হয়, তাহলে সেই স্বার্থে বাইরের বই ব্যান করাও তো চলে। ব্যাপারটা এখানে কম্প্লিকেটেড হয়ে গেলো। একারণেই হয়তো মানুষকে এই যুক্তি বোঝাতে পারেন নি। চিন্তিত

দিগন্ত এর ছবি

আপনার বেসিক রাইটসের মতের সাথে আমি একমত। কিন্তু আমার মতে এই বিশেষ ক্ষেত্রে অন্তত দুই পক্ষেরই লাভের কিছু থাকে। সফটওয়ারেরে দাম যেমন বাজারের ডায়নামিক্সেই বেড়ে অসীম হয়ে যায় না কারণ ওপেন সোর্স আছে - সেরকমই আপনি ন্যায্য বাজার প্রতিষ্ঠা করলে তার ব্যালান্সিং ফোর্সও নিজের জায়গা করে নেবে। সমাজের কাছে অনেক বেশী চয়েস আসবে ও ইনোভেশন দ্বারা সকলেই লাভবান হবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তারেক অণু এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ, পরিশ্রমী লেখা।

অট- লীলেন দার সাথে সত্বর যোগাযোগ করুন।

ফাহিম হাসান এর ছবি

উত্তরের জন্য ধন্যবাদ হাসি

আরেকটু পরিষ্কার করে বলি - আপনার যুক্তিগুলো কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সৃজনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে নয়।

কিন্তু বব ডিলানের গানের জন্য যদি দশ ডলার আর সুমনের গানের জন্য যদি দশ টাকা দিতে হয়, তাহলে আপনি নিশ্চয় সুমনের গান বেশী করে শুনবেন

আপনি ভুলভাবে অনুমান করে নিচ্ছেন - সে দাম বাড়লে চাহিদা/ চাহিদার পরিমাণ কমবে। এটা আসলে ঠিক না।

শুধুমাত্র দামের কারণে মানুষ কোন লেখকের বই কেনা বাদ দেয় না, প্রিয় শিল্পীর গান শোনা ছেড়ে দেয় না। এজন্য বিভিন্ন স্মৃতিচারণায় দেখবেন - টিফিনের পয়সা জমিয়ে বই কিনে, ধার করে কন্সার্ট দেখতে যায়। আর্ট, কালেক্টিবিলস - এগুলোর মূল্য/ স্টিকার প্রাইস অনেক কিছু নির্ধারণ করে সত্যি, কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়।

দিগন্ত এর ছবি

আপনার অনুমানের উত্তর আপনার বক্তব্যের মধ্যেই আছে।

"আপনি ভুলভাবে অনুমান করে নিচ্ছেন - সে দাম বাড়লে চাহিদা/ চাহিদার পরিমাণ কমবে।"

আর

"শুধুমাত্র দামের কারণে মানুষ কোন লেখকের বই কেনা বাদ দেয় না, প্রিয় শিল্পীর গান শোনা ছেড়ে দেয় না। "

অবশ্যই ঠিক কথা। কিন্তু আপনি যদি পয়সার অভাবে কোনও শিল্পীর গান শুনতেই না পারেন তাহলে তো আপনার প্রিয় শিল্পীর দলে সঃে আসছেই না - তাই না? তাছাড়া আপনি যদি তার গান এতটাই ভালবাসেন, তাহলে তার জন্য দশ ডলার খরচা করতে কুন্ঠাবোধ করবেন না। আশাকরি বোঝাতে পারলাম।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তানিম এহসান এর ছবি

একটা প্রশ্ন: আমাদের কপিরাইট আইন কতসালে বানানো?

লেখায়(Y)

তানিম এহসান এর ছবি

আমার প্রশ্নটায় একটা ভুল ছিলো। প্রথম যে কপিরাইট আইনটি আমরা ব্যবহার করা শুরু করি তা কতসালের? বৃটিশ আমলে করা কি?

পথিক পরাণ এর ছবি

ট্রেড মার্ক, প্রপার্টি মার্ক সংক্রান্ত বিধানগুলোকে যদি কপি রাইট সংক্রান্ত বিধান ধরি, তবে এসংক্রান্ত প্রথম সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা, শাস্তির বিধান রাখা হয় Penal Code, 1860(Act No. XLV of 1860) এ। এই আইনটির ৪৭৮ থেকে ৪৮৯ ই ধারা পর্যন্ত ট্রেড মার্ক প্রপার্টি মার্ক ও অন্যান্য বিষয় বলা হয়েছে। এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে ১৮৮৩ সালের ট্রেড মার্ক এক্ট।

সরাসরি কপি রাইট সংক্রান্ত আইনটি অধ্যাদেশ আকারে The Copyright Ordinance (Ordinance No. XXXIV of 1962) নামে ১৯৬২ সালে পাস হয়। Copyright Act 2000 No. 28 of 2000 (as amended up to 2005) পাশ হবার ফলে পূর্বের অধ্যাদেশটি বাতিল হয়ে যায়।

তানিম এহসান (অফ্লাইন) এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

কাগু যখন অভ্রের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনে মকদ্দমা করলো, তখন তো দেখলাম তড়িৎ গতিতে হাতেনাতে ফল পেয়ে গেলো। অন্যসময় কপিরাইটের কোবিরা কোন জলসায়, কেনো নিরব- সেইটা কে জানে!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অভ্রের সময় কী ঘটেছিল আমি তার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। বোধগম্য কারণেই এখানে তার বিস্তারিত বললাম না। আপনি এই ব্যাপারে জানতে আগ্রহী হলে আমাকে মেইল করতে পারেন, আমি সেখানে জানাবো*।

*এই প্রস্তাবটি সবার জন্য উন্মূক্ত নয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

মেইল কোন্ঠে দিবো গো দাদা? কোনো সিস্টেম তো রাখেননি... মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ক্যান, আমার প্রফাইলেই তো আমার ই-মেইল ঠিকানা দেয়া আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যারা পোস্টটি পড়েছেন এবং যারা পড়ার পর আবার মন্তব্যও করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। মন্তব্যগুলো পড়ে একটা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলো যে, কপিরাইট আইনটার বাস্তবায়ন খুব সহজ নয়। আইনটি যতই সংশোধন করা হোক না কেন টেকনোলজির শনৈ শনৈ অগ্রগতির সাথে তাল মিলাতে নিয়মিত ভিত্তিতে এর সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধণ ও পরিমার্জন করা না হলে আইনটি বস্তুত অকার্যকর থেকে যাবে। আইন প্রনয়ণ করা হয় মানুষের কল্যানের উদ্দেশ্যে, মানুষের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আইনের প্রকাশ যদি নিবর্তনমূলক হয়ে ওঠে তাহলে তার পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে ওঠে। কপিরাইট আইনের ক্ষেত্রে এই কথাটি আরো সত্য।

বই ফটোকপি করা, স্ক্যান করে ছাপানো, গান/মুভি কপি করা, শেয়ার করা, পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার এই বিষয়গুলো রাতারাতি নির্মূল করা যাবে এমন আইন প্রনয়ণ ও প্রয়োগ অসম্ভব। সুতরাং এমন একটা পথ খুঁজতে হবে যা অধিকাংশ মানুষের জন্য কল্যানকর হয়। নিজের প্রয়োজনের জিনিসটা মহার্ঘ হয়ে গেলে লোকে তা পাবার জন্য বাঁকা পথ ধরতেই পারে। সেটা ন্যায় কি অন্যায় সে তর্কে যাবার বদলে কীভাবে সেটা তার নাগালে এনে দেয়া যায় সেই চেষ্টাটাই আগে করা দরকার। প্রণেতা নিজের সৃষ্টের জন্য কাঙ্খিত মূল্য না পেলে তার প্রতি অন্যায় করা হয়, তার পরবর্তী অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। তাই সৃষ্টকে সুলভ করার ভাবনার পাশাপাশি প্রণেতার স্বার্থটার কথাও প্রিরিক্যুইজিট হিসাবে রাখতে হবে।

বই/গান/মুভি ডাউনলোড বা অনলাইনে শেয়ার করার ক্ষেত্রে আইএসপিগুলো যদি ট্র্যাক রেকর্ড ধরে ভোক্তাকে চার্জ করে এবং প্রণেতা আইএসপি’র কাছ থেকে তার রয়ালটি পায় তাহলে কিছুটা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়। এই মুহূর্তে ব্যাপারটি হারকিউলিয়ান জব। তবে এই ব্যাপারে কাজ করলে আরো সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা অসম্ভব নয়। গণহারে বিনামূল্যে শেয়ার করতে দিচ্ছে বা ডাউনলোড করতে দিচ্ছে এমন সাইটগুলোর মূল মালিককে বিপুল পরিমাণে আর্থিক দণ্ড দিতে পারলে এসবের হার হ্রাস পাবে। ব্যাপারটিকে বাস্তবে রূপ দিতে আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক আদালত, আন্তর্জাতিক সাইবার পুলিশের ব্যবস্থা থাকা এখনই জরুরী হয়ে পড়েছে। মেধাসত্ত্বের মূল্য, কপির মূল্য, রয়ালটির হারও আন্তর্জাতিকভাবে ঠিক করা উচিত। স্বাভাবিকভাবেই ফ্রেইট, ভ্যাট, লোকাল ট্যাক্স এর অন্তর্ভূক্ত হবে না।

ছাপার বই, গানের রেকর্ড, মুভি-এসবের সংস্করণ যদি এমন মূল্যে দেয়া যায় যে নকল করলে বিশেষ লাভ হবে না তাহলে এগুলোর নকল করা নিরুৎসাহিত হবে। অবশ্য বই পড়ার জন্য ডিজিটাল ডিভাইসগুলো আরো সুলভ ও উন্নত হলে ছাপার বই নকল করা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাবে। লেখকের মৃত্যুর পরে ষাট বছর ধরে কপিরাইট ধরে রাখার আইনটিতে সময়সীমা আরো কমিয়ে আনা উচিত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টকর্মের গুরুত্ব বিবেচনায় সেগুলোকে মুক্ত করে দেবার দায়িত্ব সরকার নিতে পারে। যেমন, জীবনানন্দ দাশের কবিতার কপিরাইটের মালিক লাবণ্য দাশ - এই ব্যাপারটা আমার পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন। গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১৩ সালের আগেই জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্ম মুক্ত করে দেয়া উচিত ছিল।

রেডিও চ্যানেলগুলোতে যা ঘটছে (যার উল্লেখ আমি মূল পোস্টে করেছি) সেগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার মোটা আর্থিক দণ্ডের ব্যবস্থা করলে ব্যাপারটি নিরুৎসাহিত হবে। অবশ্য সরকারী রেডিও চ্যানেলগুলোও এর জন্য দায়ী। সুতরাং সরকারকে আগে নিজেদের এই বদভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ইন্টারনেট রেডিও’র সম্প্রসারণ বর্তমান আকারের রেডিও চ্যানেলের ভবিষ্যত কোথায় নিয়ে যায় সেটা একটা চিন্তার বিষয়। ভবিষ্যতে ইন্টারনেট রেডিও ডমিনেট করলে বিষয়টা সাইবার পুলিশ দিয়ে সামলাতে হবে। একই কথা বর্তমান টিভি চ্যানেল আর ওয়েব টিভির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত বলে চালিয়ে দেয়া খবর/ছবি/ফিচারের ব্যাপারে প্রেস ট্রাইব্যুনাল স্যু মটো উদ্যোগ নিয়ে মোটা আর্থিক দণ্ডের ব্যবস্থা করলে ব্যাপারটি কিছুটা নিরুৎসাহিত হবে, তবে পুরোপুরি নিরাময় হবে না। ইন্টারনেট ব্যবস্থা আরো সুলভ ও সহজতর হলে ছাপা পত্রিকার ভবিষ্যত কী হবে সেটা বোধগম্য। সুতরাং এই সমস্যাটি সাময়িক হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহারের বিস্তৃতি দিন দিন বাড়ছে। ভবিষ্যতে এই প্রকার সফটওয়্যারই সাধারণে ব্যবহৃত হবে। সেক্ষেত্রে গণহারে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করার বর্তমান চিত্রটি উলটে যাবে। তাই বর্তমানে পাইরেটেড সফটওয়্যারের গণহারে ব্যবহারকে আমি স্বল্পমেয়াদী সমস্যা বলে মনে করছি।

মূল লেখায় শিল্পকর্মের রিপ্রডাকশনের ব্যাপারটি আসেনি। সেটা এখানে বলে নেই। অবাণিজ্যিক শিল্পকর্মকে কপিরাইটমুক্ত ঘোষণা করলে এক্ষেত্রে আর কোন জটিলতা তৈরি হয় না। সেক্ষেত্রে মোনালিসার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কপি করা এবং তার অবাণিজ্যিক ব্যবহার সম্ভবপর হয়। কিন্তু মূল মোনালিসার কোন ফটোগ্রাফ যদি ফাহিম হাসানের তোলা হয় তাহলে পাণ্ডব সেটা ব্যবহার করতে চাইলে আর আগের নিয়ম আর প্রযোজ্য হবে না। সেক্ষেত্রে ফাহিম হাসানের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নেবার বা রয়ালটি প্রদানের ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।

কোন আইন করে বা প্রতিবন্ধকতা দিয়ে চাহিদা আছে এমন কিছুর প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। ভারতে যদি বাংলাদেশের সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটকের চাহিদা যদি থাকে তাহলে সরাসরি আইন করে বা পরোক্ষে আইনে মারপ্যাঁচ দিয়ে সেগুলোর ভারতমুখী প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। একই ভাবে হ্যারি পটারের বাংলাদেশ/ভারতমুখী প্রবাহ যেমন বন্ধ করা যায় না, তেমন ঐপ্রকার অচলায়তন নতুন দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার সৃষ্টি করতে পারে না। বিদেশী আবর্জনা গেলানোর জন্য সরকারের ঢিলেঢালা ভাব বা বিদেশীদেরকে দায়ী করার আগে নিজের অভ্যাসের দিকে নজর দিতে হবে। ভোক্তা নিজে বিদেশী আবর্জনা গেলা বন্ধ করলে সেটার অন্তর্মুখী প্রবাহ একসময় আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

আচ্ছা, চোরের উপর বাটপারিকে কি বলা যাবে? ধরেন বিনানুমতিতে (বা আদৌ অনুমতি দেয়া হয় না) মূল মোনালিসার ফটোগ্রাফ তোলা যদি নিষিদ্ধ হয়, আর সেই মূল মোনালিসার কোন ফটোগ্রাফ যদি ফাহিম হাসান বিনানুমতিতে তুলে প্রকাশ করেন (বা অনুমতি নিলেও সেই অনুমতিপ্রাপ্তির প্রমান প্রদর্শন ছাড়াই) আর ষষ্ঠ পাণ্ডব যদি সেটা ফাহিম হাসানের অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে কি ফাহিম হাসানের কাছে ষষ্ঠ পাণ্ডবের কোন দায় থাকবে?

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পুরাই নিউক্যালিডোনিয়ান প্রশ্ন! হাসি

সেক্ষেত্রে ফাহিম হাসানের কাছে ষষ্ঠ পাণ্ডবের দায়ের কোন আইনগত ভিত্তি নেই। উপরন্তু অননুমোদিত জিনিস ব্যবহারের জন্য ষষ্ঠ পাণ্ডবের এক প্রকার শাস্তি হবে, আর বেআইনি কাজের জন্য ফাহিম হাসানের ভিন্ন প্রকার শাস্তি হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

সরকার তো সবাইরে শাস্তি দিয়ে পিঠা ভাগ করবেই। সেটাই ন্যায্য কিনা সেটা আলাদা প্রশ্ন। দেখতে হবে, এখানে ভিক্টিম কে? কার ঠিক কী রূপ ক্ষতি হচ্ছে? নাকি ভিক্টিমলেস ক্রাইমের জন্যে ক্রিমিনালাইজ করা হচ্ছে?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আদালতে বিচার করা হয় দণ্ডবিধি, সংবিধিবদ্ধ আইন, অধ্যাদেশ, সংবিধান ইত্যাদি অনুসারে সেখানে সাবজেকটিভ জাজমেন্টের সুযোগ নাই। আমি যদি ফাঁকা মাঠে বোমা ফাটাই তাহলে এ'কথা বলে পার পাবো না যে সেখানে কেউ আহত হবার উপায় ছিলো না। সুতরাং ক্রাইমকে ভিক্টিমসহ বা ভিক্টিমলেস হিসাবে ক্যাটাগোরাইজ করার সুযোগ নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ভিক্টিমলেস ক্রাইম বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই, সেটা কিন্তু নয়; এটা একটা চলমান তর্ক

আমি অবশ্য এখানে প্রচলিত আইন নিয়ে কিছু বলছি না। প্রচলিত আইনে কপিরাইট দণ্ডনীয়। সেই অর্থে কপিরাইটের পক্ষে বিপক্ষে তর্ক বিতর্ক করাও অনর্থক বলা যেতো।

একটা ন্যায্য আইনের সূত্রপাত হয় ভিক্টিমকে প্রটেক্ট করতে। অন্যায্য আইনে ভিক্টিম থাকে না, তারপরেও ক্ষমতাবান তার কোনো স্বার্থ চরিতার্থ করতে সেটা জারি করে। অনেক ধর্মীয় বিধিনিষেধ, যেগুলোর কোনো ভিক্টিম নেই (যেমন সমকািমতা), সেগুলোও বহুকাল বহুদেশে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ফলে "ক্রাইমকে ভিক্টিমসহ বা ভিক্টিমলেস হিসাবে ক্যাটাগোরাইজ করার সুযোগ নেই" বলে এই আলোচনা এড়ানোর সুযোগ নেই।

মন মাঝি এর ছবি

নিউক্যালিডোনিয়ান কি চিজ জানি না, তবে এবারে একটা পাক্কা ওল্ডব্যাবিলোনিয়ান প্রশ্ন। হাসি

মেধাস্বত্বভূক্তিযোগ্যতাসম্পন্ন কিন্তু বর্তমানে মেধাস্বত্ব-অতিক্রান্ত বা মেধাস্বত্ব-অবমুক্ত কোন মেধাসম্পদ বা শিল্পকর্মের হুবহু পূণরুৎপাদিত রূপ - ফোটোগ্রাফিক অর আদারওয়াইজ - কি আরেকজনের মেধাস্বত্বভূক্তির যোগ্যতাসম্পন্ন হয়? অর্থাৎ আমার প্রশ্ন হচ্ছে, একজনের মেধার সৃষ্টি বা ফসলের হুবহু প্রতিরূপ বা রিপ্রেজেন্টেশন কি করে আরেকজন তার নিজের মেধাস্বত্বাধিকারভূক্ত বলে ঘোষণা করতে পারেন? এটাও তো আমার কাছে অন্যায্য এপ্রোপ্রিয়েশন বলেই মনে হচ্ছে। ফাহিম হাসান কি 'মূল' তাজমহলের (বা পিরামিড বা অন্য কিছুর) হুবহু রেপ্লিকা তৈরি করে তার মেধাস্বত্ব নিজের বলে দাবি করতে পারবেন? আমার কাছে তো এটা যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে না। ষষ্ঠ পাণ্ডব যদি ফাহিম হাসানের রেপ্লিকা দেখে দেখে তাজমহল বা পিরামিডের আরেকটা রেপ্লিকা বানান - যা কিনা আসলে মূল তাজমহল বা পিরামিডেরই একটা প্রতিরূপ, তাহলে কি ষষ্ঠ পাণ্ডব কোন ভাবে ফাহিম হাসানের মেধাস্বত্ব তছরূপের অপরাধে দায়ী হবেন? তা যদি না হন, তাহলে "মূল মোনালিসার কোন ফটোগ্রাফ যদি ফাহিম হাসানের তোলা হয় তাহলে পাণ্ডব সেটা ব্যবহার করতে চাইলে.....ফাহিম হাসানের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নেবার বা রয়ালটি প্রদানের ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক" - কেন হয়ে যাবে, বা যায় কিনা?

আরেকটি প্রশ্ন হলো, আপনি বলছেন, "অবাণিজ্যিক শিল্পকর্মকে কপিরাইটমুক্ত ঘোষণা করলে এক্ষেত্রে আর কোন জটিলতা তৈরি হয় না। সেক্ষেত্রে মোনালিসার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কপি করা এবং তার অবাণিজ্যিক ব্যবহার সম্ভবপর হয়। কিন্তু মূল মোনালিসার কোন ফটোগ্রাফ যদি ফাহিম হাসানের তোলা হয় তাহলে পাণ্ডব সেটা ব্যবহার করতে চাইলে আর আগের নিয়ম আর প্রযোজ্য হবে না। সেক্ষেত্রে ফাহিম হাসানের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নেবার বা রয়ালটি প্রদানের ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।"

এখানে আমার প্রশ্ন হল, ঐ কপিরাইটমুক্ত অবাণিজ্যিকব্যবহারসম্ভব 'মোনালিসার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কপি'-র সাথে ফাহিম হাসানের তোলা 'মূল মোনালিসার কোন ফটোগ্রাফ'-এর তফাৎটা কি? ফাহিম হাসানের তোলা মূল মোনালিসার ফোটোগ্রাফও কি ঐ কপিরাইটমুক্ত অবাণিজ্যিকব্যবহারসম্ভব মোনালিসার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কপির মতই আরেকটা কপি না? ঐ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কপিও তো আদতে ফাহিম হাসানের মতই কারও না কারও করা মূল মোনালিসার প্রতিরূপায়ন। সুতরাং ঐ ক্ষেত্রে যদি ষষ্ঠ পাণ্ডবের পূর্বানুমতি নেবার বা রয়ালটি প্রদানের ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক না হয়, তাহলে ফাহিম হাসানের বেলাতেই বা কেন হবে?

একটু পরিষ্কার করবেন?

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মেধাস্বত্বভূক্তিযোগ্যতাসম্পন্ন কিন্তু বর্তমানে মেধাস্বত্ব-অতিক্রান্ত বা মেধাস্বত্ব-অবমুক্ত কোন মেধাসম্পদ বা শিল্পকর্মের হুবহু পূণরুৎপাদিত রূপ - ফোটোগ্রাফিক অর আদারওয়াইজ - কি আরেকজনের মেধাস্বত্বভূক্তির যোগ্যতাসম্পন্ন হয়?

- না, হবার কথা না। তবে ‘তাজমহল’-নামক স্থাপনাটির ফটোগ্রাফ বা অয়েলপেইন্টিং যেটি আসলে স্থাপনার রিপ্রডাকশন নয়, বরং নিজেই একটি স্বতন্ত্র শিল্পকর্ম সেটি মেধাস্বত্বভূক্তিযোগ্যতাসম্পন্ন। তাই ফাহিম হাসানের তোলা মোনালিসার ফটোগ্রাফ যেটি মোনালিসা বলে নয়, বরং স্বকীয়তায় ভাস্বর সেটি মেধাস্বত্বভূক্তিযোগ্যতাসম্পন্ন। এবং সেক্ষেত্রে ষষ্ঠ পাণ্ডব কর্তৃক সেটির অননুমোদিত ব্যবহার বেআইনী।

অর্থাৎ আমার প্রশ্ন হচ্ছে, একজনের মেধার সৃষ্টি বা ফসলের হুবহু প্রতিরূপ বা রিপ্রেজেন্টেশন কি করে আরেকজন তার নিজের মেধাস্বত্বাধিকারভূক্ত বলে ঘোষণা করতে পারেন? এটাও তো আমার কাছে অন্যায্য এপ্রোপ্রিয়েশন বলেই মনে হচ্ছে।

- না পারেন না। এটি অবশ্যই অন্যায্য অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন।

ফাহিম হাসান কি 'মূল' তাজমহলের (বা পিরামিড বা অন্য কিছুর) হুবহু রেপ্লিকা তৈরি করে তার মেধাস্বত্ব নিজের বলে দাবি করতে পারবেন? আমার কাছে তো এটা যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে না।

- ফাহিম হাসান তাজমহলের (যেটি একটি স্থাপনা) রেপ্লিকা (যেটি আরেকটি স্থাপনা) তৈরি করে মেধাস্বত্ত্ব দাবি করতে পারেন না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব যদি ফাহিম হাসানের রেপ্লিকা দেখে দেখে তাজমহল বা পিরামিডের আরেকটা রেপ্লিকা বানান - যা কিনা আসলে মূল তাজমহল বা পিরামিডেরই একটা প্রতিরূপ, তাহলে কি ষষ্ঠ পাণ্ডব কোন ভাবে ফাহিম হাসানের মেধাস্বত্ব তছরূপের অপরাধে দায়ী হবেন?

- না, এমনটা করলে ষষ্ঠ পাণ্ডবকে মেধাস্বত্ত্ব তছরূপের অপরাধে অপরাধী করা যাবে না।

তা যদি না হন, তাহলে "মূল মোনালিসার কোন ফটোগ্রাফ যদি ফাহিম হাসানের তোলা হয় তাহলে পাণ্ডব সেটা ব্যবহার করতে চাইলে.....ফাহিম হাসানের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নেবার বা রয়ালটি প্রদানের ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক" - কেন হয়ে যাবে, বা যায় কিনা?

- ফাহিম হাসানের তোলা মোনালিসার ফটোগ্রাফটি স্বকীয়তায় ভাস্বর হলে পূর্বানুমতি নেবার বা রয়ালটি দেবার প্রশ্নটি উঠবে। আমার এই ব্যাখ্যাটিতে ‘স্বকীয়তায় ভাস্বর’ টার্মটি ব্যবহার করে আসলে একটি গ্রে এরিয়া তৈরি করা হলো। আইনের সীমানাগুলো এমনই হয়। তাই অনেক দেওয়ানী মামলা যুগের পর যুগ চলতে থাকে এবং কোন সুরাহা হয় না।

আরেকটি প্রশ্ন হলো, আপনি বলছেন, "অবাণিজ্যিক শিল্পকর্মকে কপিরাইটমুক্ত ঘোষণা করলে এক্ষেত্রে আর কোন জটিলতা তৈরি হয় না। সেক্ষেত্রে মোনালিসার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কপি করা এবং তার অবাণিজ্যিক ব্যবহার সম্ভবপর হয়। কিন্তু মূল মোনালিসার কোন ফটোগ্রাফ যদি ফাহিম হাসানের তোলা হয় তাহলে পাণ্ডব সেটা ব্যবহার করতে চাইলে আর আগের নিয়ম আর প্রযোজ্য হবে না। সেক্ষেত্রে ফাহিম হাসানের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নেবার বা রয়ালটি প্রদানের ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।" এখানে আমার প্রশ্ন হল, ঐ কপিরাইটমুক্ত অবাণিজ্যিকব্যবহারসম্ভব 'মোনালিসার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কপি'-র সাথে ফাহিম হাসানের তোলা 'মূল মোনালিসার কোন ফটোগ্রাফ'-এর তফাৎটা কি? ফাহিম হাসানের তোলা মূল মোনালিসার ফোটোগ্রাফও কি ঐ কপিরাইটমুক্ত অবাণিজ্যিকব্যবহারসম্ভব মোনালিসার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কপির মতই আরেকটা কপি না? ঐ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কপিও তো আদতে ফাহিম হাসানের মতই কারও না কারও করা মূল মোনালিসার প্রতিরূপায়ন। সুতরাং ঐ ক্ষেত্রে যদি ষষ্ঠ পাণ্ডবের পূর্বানুমতি নেবার বা রয়ালটি প্রদানের ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক না হয়, তাহলে ফাহিম হাসানের বেলাতেই বা কেন হবে?
একটু পরিষ্কার করবেন?

- আমার উপরের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।