১.
আমাদের যে সহপাঠীরা দরাজ গলায় গান গাইতে পারতো, যারা অনায়াসে গিটারে কঠিন কঠিন গানের সুর তুলে ফেলতে পারতো, যাদের আঁকা ছবি দেখলে গালে মাছির ঢোকার অবস্থা হতো, খেলার মাঠে যারা চোখ ধাঁধানো নৈপুন্য দেখাতো, যাদের অভিনয় দক্ষতা ছিল, যারা অনায়াসে জটিল সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারতো, যারা চমৎকার কবিতা লিখতে পারতো তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা গর্ব করতাম, এখনো করি। একটু দ্বিধা নিয়ে হলেও আমরা বিশ্বাস করি সুযোগ পেলে আমাদের ইকরাম ফেরদৌস কোর্টনী ওয়ালশ্ বা রিচার্ড হ্যাডলীর মতো ফাস্ট বোলার হতে পারতো, আমাদের অশোক মল্লিক মার্ক নফলার বা ডেভিড গিলমোরের মতো গিটারিস্ট হতে পারতো, আমাদের সাঈদ মুস্তাফিজ সুকান্ত ভট্টাচার্য বা রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্’র মতো কবি হতে পারতো, আমাদের জাভেদ মালিক এই যুগের আলভা এডিসন হতে পারতো। বাস্তব জীবনে তারা অমন কিছু হতে না পারলেও এখনো আমাদের আড্ডায় এই বন্ধুদের কথা উঠলে আমাদের এই বিশ্বাসগুলোর কথা আলোচনা করি। এখনো আমরা তাদের নিয়ে আগের মতোই গর্ব করি।
রিইউনিয়নের দিনে যে বন্ধুটি বাস থেকে নেমে বিদ্যায়তন পর্যন্ত হেঁটে এসে দেখেছে আরেক বন্ধু একটা বিএমডব্লিউ থেকে নামছে তখন প্রথম বন্ধুটি গর্বই অনুভব করেছে, যেমন আমরা বাকিরাও গর্ব অনুভব করেছি। কারণ, বিএমডব্লিউ চালানো আমাদের এই বন্ধুটি সম্পূর্ণ নিজের মেধা, যোগ্যতা, পরিশ্রম আর আন্তরিকতা দিয়ে দেশের কর্পোরেট জগতে এক দুর্লঙ্ঘ্য উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যেতে পেরেছে। একই অনুষ্ঠানে প্রবাসী যে বন্ধুটির আয় মার্কিন ডলারে সাত অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে তার গল্প শুনে তিন বার চেষ্টা করে উত্তর আমেরিকায় যেতে না পারা বন্ধুটিও তাকে নিয়ে গর্ব করেছে। কারণ, আমরা জানি সাত অঙ্কের আয় তার যোগ্যতা আর পরিশ্রমের বলেই হয়েছে। আমাদের যে বন্ধুরা সরকারের বড় কর্মকর্তা হয়েছে বা কর্পোরেট জগতের হর্তাকর্তা হয়েছে, যে বন্ধুরা শানিত লেখা দিয়ে পত্রিকার পাতা ভরিয়ে তোলে, যে বন্ধুরা রূপালী পর্দার শক্তিমান অভিনেতা বা নির্মাতা তাদের সবাইকে নিয়েই আমাদের গর্ব হয়। কারণ, এই মানুষগুলো খাঁটি, তাদের অর্জনগুলো ‘রক্ত-ঘাম-উৎকণ্ঠা’র ফসল।
২.
বাদ্যযন্ত্র বাজানোর শখ আমার বহুদিনের। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখে উঠতে পারিনি। হারমোনিকা শেখার জন্য দুই বন্ধু পঞ্চাশ টাকা দামের দুইটা হারমোনিকা কিনেছিলাম। আমি সাতদিন ধরে প্যাঁ-পোঁ করে বাড়ির লোকজনের মাথা খারাপ করে দিয়ে ক্ষ্যান্ত দেই। অথচ ঐ বন্ধুটি দ্বিতীয় দিনেই ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’র সুর তুলে ফেলেছিল। এই বন্ধুটি অবশ্য কী করে যেন দিন সাতেকের চেষ্টায় হারমোনিয়াম, বাঁশি, গিটার, বেহালার মতো বাদ্যযন্ত্রে সুর তুলে ফেলতে পারতো। তার এই সহজাত প্রতিভা নিয়ে আমার গর্ব হয়নি, বুকের গভীরে ঈর্ষা অনুভব করেছি।
আমাদের বন্ধু ইউসুফকে নিয়ে আমরা কোথাও যেতে চাইতাম না। কারণ, ওকে নিয়ে কোথাও গেলে আমাদের বয়সী মেয়েরা কেবল ওর দিকেই তাকাতো, আমাদের দিকে ফিরেও তাকাতো না। এমনকি আমাদের চেয়ে বয়সে অনেক বড় নারীকেও দেখতাম নানা ছুতোয় ওকে ডেকে কথা বলতে। এমন আপদকে নিয়ে গর্বের কোন কারণ নেই, তার সৌভাগ্যে আমাদের বুক ঈর্ষায় জ্বলে যেতো।
ইউসুফের চেহারা, অ্যাপিয়ারেন্স নায়কোচিত হলেও সে কিন্তু প্লেবয় ছিল না। দেখতে শুনতে ইউসুফের ধারে কাছেও না এমন কিছু বন্ধু আছে যারা পাকা খেলোয়ার। একবার এমন তিন খেলোয়ার তাদের সাবেক বান্ধবীদের নামের তালিকা বানাতে বসেছিল। প্রথম জন নামের তালিকা করতে ইংরেজী বর্ণমালার Q আর X ছাড়া বাকি চব্বিশটা বর্ণই বোধ করি ব্যবহার করে ফেললো। দ্বিতীয় জন A, M, N, P, R, S, T - এই সাত বর্ণ দিয়ে নামের রঙধনু বইয়ে দিলো। তৃতীয় জন এত কিছু না করে শুধুমাত্র SH দিয়ে শুরু করতে হয় এমন ছয়টা নাম লিখে ফেললো। প্রথম ও দ্বিতীয় জনের তৈরি করা তালিকা নিয়ে কিঞ্চিত সন্দেহ থাকলেও তৃতীয় জনের তালিকা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কারণ, ঐ ছয়টি নামের মধ্যে পাঁচটি নামের সাক্ষী খোদ আমি নিজে। এই প্লেবয়গুলোকে নিয়ে আমাদের কখনো কোন গর্ব হয়নি, এদেরকে আমরা নির্জলা ঈর্ষা করি।
এক বন্ধুর সাথে একটা মেলা দেখতে গিয়েছিলাম। মেলাটি একেবারেই বৈশিষ্ট্যহীন, অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পর বাকি বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলো - কী দেখেছি, কী হলো। আমার বর্ণনা মিনিট দেড়েকের মধ্যে খতম। অথচ আমার সঙ্গীটি মেলাটির ওপর ঘন্টাখানেক গল্প বলে গেলো। সেই গল্প শুনে যারা যায়নি তারা তো বটেই আমিসুদ্ধ মুগ্ধ। তার খুঁটিনাটি বর্ণনা আর ইন্টারপ্রেটেশন শুনে আমার মনে হলো, আহা! এসব তো আমিও দেখেছি! এসব ব্যাখ্যা তো আমিও ভেবেছি - তাহলে বলতে পারলাম না কেন? এই বন্ধুটি আমাদের আড্ডায় শোনা কথাগুলো থেকে চমৎকার সব গল্প লিখে ফেলতে পারতো - বাংলা আর ইংরেজী দুই ভাষাতেই। কোন লজ্জা বা দ্বিধা ছাড়াই বলতে পারি, এই বন্ধুটিকে নিয়ে আমার গর্ব হয় না - আমি তার অনায়াস দক্ষতাকে ঈর্ষা করি।
৩.
আমাদের কিছু সহপাঠী আছে যাদেরকে আসলে ঠিক বন্ধু বলা যায় না। তাদের সাথে এক আধটু যোগাযোগ আছে — এ-ই শুধু। এরা উপরের দুই অধ্যায়ে বলা ‘গর্ব’ বা ‘ঈর্ষা’ ক্যাটেগরির কেউ না। বরং তাদের কেউ কেউ লেখাপড়ায় একটু পিছিয়ে থাকার দরুণ এক কালে শিক্ষক নামধারী কুলাঙ্গারদের কাছ থেকে তাদের কপালে যে অমানবিক শাস্তি জুটতো তাতে তাদের প্রতি এক রকম মায়াই হতো।
বড় হবার পর যখন আমাদের সামনে ছাত্র রাজনীতি করার পথ খুলে গেলো তখন এই গ্রুপটি দ্রুত ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। অন্য গ্রুপের সদস্য যাদের কোনভাবে পা হড়কেছিল তারাও এদের সাথে জুটে যায়। ছাত্র রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা আমাদের কারো কারোও আছে। তবে ছাত্র রাজনীতিতে ওদের ভূমিকা বা অভিজ্ঞতা আমাদের আর দশ জনের মতো নয়। ওরা এমন সব লোকজনের সাথে দল বেঁধে থাকতো যাদের দেখলে সাধারণ মানুষ পা চালিয়ে হেঁটে ওদের পাশ কাটাতো। ওদের কোমরে ধাতব কিছু গোঁজা থাকতো। ওদের ব্যাগে বিস্ফোরক ঠাসা কিছু লুকনো থাকতো। ওরা তখনই হোন্ডা এক্সএল চালাতো। ওদের পকেটে নগদ টাকা ঝনঝন করতো। আমাদের মতো মিটিং-মিছিল করা, সভা-সমাবেশ আয়োজন করা, প্রকাশনা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কাজ করা — এসবের কিছুই তারা করতো না। অবশ্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন আসলে এদের তৎপরতা বেড়ে যেতো।
একবার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীর কাছে স্কুল জীবনের এক সহপাঠী যেকোন দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে তার সাথে সাক্ষাত করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমি জানি ঐ সহপাঠীটি উচ্চ মাধ্যমিকের চৌকাঠ কোনদিন ডিঙ্গাতে পারেনি। তবু দলের বদৌলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তার নির্ভীক পদচারণা। সেখানে তার ‘হোল্ড’ অনেক। আর আমি চার বছর ধরে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও সেখানে কোন ‘হোল্ড’ তৈরি করতে পারিনি।
আমরা কর্ম জীবনে ঢোকার পর দেখা গেলো এই গ্রুপের লোকজন (লেখাপড়া শেষ করা এবং শেষ না করা উভয় সাব-গ্রুপ) কোন চাকুরীতে ঢোকার, ব্যবসা করার, চাকুরী করতে বা উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে যাবার কোন চেষ্টাই করছে না। ‘বাসাংসি জীর্ণানি’র মতো আমরা রাজনীতির পথকে পরিহার করলেও তারা রাজনীতির সাথে লেগে থাকলো। এক-আধজন মূল দলে ঠাঁই নিলেও বেশিরভাগ জন সাবেক ছাত্রনেতা পরিচয়েই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলো। জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা কোন পেশা বেছে না নিলেও তাদের জীবনযাত্রার মান আমাদের চেয়ে কোন অংশে কম না, বরং বেশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের খরচের বহর দেখে আমরা বিস্মিত হয়ে যাই। হ্যাঁ, এরা হচ্ছে আমাদের ‘বিস্ময়’ গ্রুপ।
গর্ব নয়, ঈর্ষা নয়, মায়াও নয়-
এদের নিয়ে এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
পাঁচ-সাত বছর বিরতিতে যখন দেশে কোন নতুন সরকার আসে তখন এই বিস্ময় গ্রুপের কেউ কেউ বিদেশে চলে যায়। পরের পাঁচ-সাত বছর তাদের কোন খবর থাকে না। পরে সরকার পাল্টালে তাদের মুখ আবার দেখতে পাওয়া যায়। তখন অবশ্য এতদিন দেশে থাকা অন্য এক দলকে বিদেশ চলে যেতে দেখা যায়। অন্য সব বন্ধুদের মধ্যে যারা বিদেশে থাকে, তাদের কাছে শুনেছি সেখানেও নাকি এই ‘বিস্ময় গ্রুপ’ কোন চাকুরী করে না। কেউ কেউ নাম-কা-ওয়াস্তে কোন স্কুলে ভর্তি হয় বটে, তবে তাদের বেশিরভাগ সেই লেখাপড়া শেষ করে না। তাদের যারা সেখানে ব্যবসা করে বলে দাবি করে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমও সাধারণের চোখে পড়ে না। এর মধ্যে তাদের কেউ কেউ সেখানে বাড়ি, দোকান ইত্যাদি কিনে ফেলে। সেখানে তাদের গাড়ির মডেল দেখে, খরচের বহর দেখে প্রবাসী বন্ধুদের চোখ ট্যারা হয়ে যায়। ঐ সময়টাতে বিস্ময় গ্রুপের যারা দেশে থাকে তাদের গাড়ির মডেল, অ্যাপার্টমেন্টের মাপ, খরচের বহর দেখে আমাদেরও চোখ ট্যারা হয়ে যায়।
বাংলাদেশ থেকে বিস্ময় গ্রুপের পছন্দের দেশগুলোতে যাবার জন্য ভিসার আবেদন করতে বেশ কয়েকটা ভিসা ফর্ম পূরণ করতে হয়, আরো হরেক রকম ডকুমেন্ট দিতে হয়। আমার ধারণা, বিস্ময় গ্রুপ এই কর্ম করতে গেলে ধরা খেয়ে যাবার কথা — অন্তত সেখানে যদি তারা সত্য কথা বলে। সেসবের পরেও ভিসা পাবার পথ যে জটিল তাতেও বিস্ময় গ্রুপের খুব কম জন ভিসা পাবার কথা। অথচ বাস্তবে দেখি তারা অনায়াসে অল্প দিনের নোটিশে বা বিনা নোটিশে এসব দেশে চলে যায়, এবং বছরের পর বছর থেকে যায়। এখানে বিশেষ কোন ব্যাপার আছে কিনা জানি না। তাই তাদের কাজ কারবারে আমরা কেবল বিস্মিত হই।
দেশে বা বিদেশে যে যেখানেই থাকি, আজকের অবস্থানে আসতে আমাদেরকে গত পনের-ষোল বছর যে খাটুনিটা দিতে হয়েছে সেগুলো লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। এখনো সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হলে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ন’টা-দশটা বেজে যায়। বিস্ময় গ্রুপের লোকজন এই খাটাখাটুনির ধারে কাছে যায়নি। এই বয়সে এসে তাদের ঘোষিত পেশা কারো ক্ষেত্রে রাজনীতি, কারো ক্ষেত্রে ব্যবসায়। যারা রাজনীতি করে বলে দাবি করে তাদের মধ্যে খুব কম জন সংশ্লিষ্ট দলের কোন পদে অধিষ্ঠিত। তাদের দলের কর্মসূচীগুলোতেও তাদেরকে বিশেষ দেখা যায় না। অবশ্য অমুক ভাই তমুক ভাইদের সাথে তাদের বেশ দহরম মহরম। ব্যবসায় করে বলে দাবি করাদের কাজকর্মের সাথে প্রকৃত ব্যবসায়ী বন্ধুদের কাজকর্মের কোন মিল নেই। তাদের কাজকর্মও নানা রকমের ভাই কেন্দ্রিক। এই উভয় পক্ষের বৈষয়িক সাফল্য চোখে পড়ার মতো। তাদের এই সাফল্যে আমাদের কোন গর্ব হয় না, বুকের গভীরে আমরা কোন ঈর্ষাও অনুভব করি না — আমরা শুধু বিস্মিত হই।
সম্প্রতি এই গ্রুপের একজন এমনটাও দাবি করে বসেছে যে আমাদের ব্যাচের মধ্যে সে সবার আগে সংসদ সদস্য হয়ে দেখিয়ে দেবে। তার এমন দাবিকে আজকাল আর অসম্ভব বলে মনে হয় না। এসব দেখে, শুনে এখন বিস্ময়ের সাথে সাথে আমাদের মনে একটু আধটু ভয়ও হতে শুরু হয়েছে।
৪.
নিজের জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে লিখতে বা বলতে বললে আমরা কোন দিন জননেতা বা রাজনীতিবিদ হবার কথা বলিনি। ওটা বলা বা ভাবা আমাদের সমাজে পাপের মতো ব্যাপার। তাই কোন এক কালে ভালো ছেলেরা বা ভালো ছাত্ররা রাজনীতি করে থাকলেও আজকের ভালো ছেলে বা ভালো ছাত্রেরা ওসব ‘খারাপ’ ব্যাপার থেকে নিজেদের দূরে রাখে। এক্ষেত্রে যে ব্যতিক্রম দেখা যায় সেটার পরিমাণ অতি সামান্য। কিছু কিছু শিক্ষায়তন গর্বের সাথে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয় “সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান”। রাজনীতি নিয়ে সবাই দিনভর রাজা-উজির মারলেও রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। এমন পতিত জমিতে তাই সহজে আগাছা বেড়ে ওঠে।
শৈশব-কৈশোরে আমরা যা যা হবার কথা ভাবতাম অনেকেই তা হতে পেরেছি। যারা নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ার বা পছন্দের পেশায় কাজ করার সুযোগ পায়নি তারাও নিজের বর্তমান অবস্থান নিয়ে যে খুব অসন্তুষ্ট তাও না। এক আধটা ব্যতিক্রম অবশ্য আছে — তা সেটা থাকবেই।
আমাদের পরিশ্রমী আর মেধাবী বন্ধুরা এমন সাফল্য পেয়েছে যা আমাদেরকে গর্বিত করে। কিন্তু তাদের সেই সাফল্য আমাদের জীবনযাত্রাকে কোন ভাবে প্রভাবিত করে না। এক আধজন বিরল প্রতিভাবানের কর্ম হয়তো ভবিষ্যতে মানব জাতির কোন উপকারে আসবে। তবে সে পথ অনেক দীর্ঘ ও অনিশ্চিত। যে বন্ধুরা আমাদেরকে ঈর্ষার আগুনে পুড়িয়েছে তাদের গুণপনার খুব কমই তার নিজের বা অন্যের কাজে লেগেছে। আর আমাদের মতো প্রতিভাহীনরা শুধু বাচ্চাকাচ্চার জন্ম দিতে পেরেছি। আমাদের অজ্ঞতা, অবহেলা, পলায়নপর মনোবৃত্তি, সাহসের অভাব, দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা, রাজনীতিবিমুখতা আমাদের ভবিষ্যতকে বিস্ময় গ্রুপের হাতে তুলে দিয়েছে।
আমাদের এখন আর বিস্মিত হওয়া উচিত না। বরং আমাদের উচিত গর্ব আর ঈর্ষা গ্রুপের রাঙামুলোদেরকে বাদ দিয়ে বিস্ময় গ্রুপকে নিয়েই গর্ব করা। আগামী দিনে আমরা ভোট দিয়ে এদেরকেই আমাদের হর্তাকর্তা-ভাগ্যনিয়ন্তা বানাবো। এদের কারো সাথে আমাদের কার সম্পর্ক কতো অন্তরঙ্গ সেটা বোঝাতে নিজেদের মধ্যে কোমর বেঁধে ঝগড়া করবো। কাঙালের মতো এদের অনুগ্রহ ভিক্ষা করবো। নিজেদের বাচ্চাদের বলবো তাদের মতো হতে। এমন পরিণতিই আমাদের প্রাপ্য।
মন্তব্য
অসাধারণ একটি লেখা ষষ্ঠ পান্ডবদা।
আপনার এই কথাগুলো আমাদের অনেকেরই বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে হুবহু মিলে যায়।
কিন্তু আপনার মত লেখতে পারিনা তাই আপনাকেও ঈর্ষা হয়।
আমাদের পলায়ন প্রবৃত্তি, আমাদের উন্নাসিকতা, আমাদের ভবিষ্যৎকে এই বিস্ময় গ্রুপের হাতে জিম্মি হয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
আমাকে ঈর্ষা করার কিছু নেই। আপনি অলসতা আর জড়তা কাটিয়ে লিখতে শুরু করলে নিশ্চয়ই আমাদেরকে ভালো কিছু দিতে পারবেন।
সাহসী মানুষদের বেশির ভাগ মনে হয় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। জীবিত বাকি সাহসী মানুষেরা বোধ করি অভিমানে লুকিয়ে আছেন। এর বাইরে অবশিষ্ট সব হয় ভেড়ার দল, নয় বিস্ময় গ্রুপ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শেষ অনুচ্ছেদে এসে থমকে গেলাম।
থমকে না থেকে আসুন ভাবার আর কিছু করার চেষ্টা করি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দাদা, মনটা বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেল। দুঃখ শুধু, আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের "ভবিষ্যৎ" বা মেধা বিস্ময় গ্রুপের হাতে সমর্পণ করে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে। সারা পৃথিবী বদলাবে, শুধু আমার দেশটা বদলাবে না।
এতো হতাশ হচ্ছেন কেন? বুকে আশা বাঁধুন, পরিবর্তনের কথা ভাবুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমৎকার একটা লেখা পান্ডবদা। আই হেইট পলিটিক্স করতে করতে আমাদের আরও পঞ্চাশ বছর কেটে যাবে, আর আমাদের বিস্ময়সূচক বন্ধুরা আমাদের বিস্মিত করেই যাবে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ইতিহাসের টেক্সট বইয়ে মুঘল আমল পড়ানো হলেও স্বাধীনতার পরের চল্লিশ বছরের ইতিহাস প্রায় পড়ানোই হয় না। রাজনীতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কখনোই পড়ানো হয় না। পক্ষান্তরে শিক্ষায়তনের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের অতিথি করে আনা হয় যারা আমাদেরকে "শেক্সপীয়ারের মতো বড় বিজ্ঞানী" হবার পরামর্শ দেয়। ফলে ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে রাজনীতিবিমুখতা তৈরি হয়। এটা একটা সুপরিকল্পিত ব্যাপার। রাজনীতি দুর্বল হলে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়, আগ্রাসন-শোষণ সহজ হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সহমত।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
অসাধারণ একটা লেখা পাণ্ডবদা।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দারুণ। যেই গল্প বললেন সেটা মনে হয় আমদের সবার ক্ষেত্রেই একইরকম প্রায়।
সেটাই তো সমস্যা। ১৯৭১-এ যেমন কয়েকটা প্রজন্ম হাজার বছরের ইতিহাস পালটে দিয়েছিল অমন প্রজন্ম বেড়ে না উঠলে এমনটা চলতেই থাকবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অতি উত্তম লেখা।
অনেক কথা মনে পড়ে গেলো। যারা ক্লাস এর মাঝের বেঞ্চে বসতো(আমাদের ভাল ছেলেরা সবাই ফার্স্ট বেঞ্চে আর ইয়ে মানে ক্রিয়েটিভ পোলাপান সবাই লাস্ট বেঞ্চার ছিলো), যারা এক্সাম হলে বই এর পাতা নিয়ে ঢুকত এসএসসি পাসের পর হঠাৎ করেই তাদেরকে চোখের সামনে কেউকেটা হয়ে উঠতে দেখলাম। আমি জয়নাল হাজারীর এলাকার লোক, বাসাও পাশাপাশি হওয়ায় কারো হোল্ড তেমন দেখতে হয়নি যদিও ........তারপরেও অবাক লাগে। যে ছেলে আমার খাতা কপি করে টেনেটুনে এইচএসসি পর্যন্ত থার্ড ডিভিশনটা পেয়েছিলো অনেক কষ্টে, সে যখন ঈদের দিন নতুন কেনা ইয়ামাহা চড়ে আমার মা কে সালাম করে যায় তখন আমি তো আমি, আমার মা পর্যন্ত অবাক হয়ে যান। তারপর রাতে খেতে বসে জিজ্ঞাসা করেন "অমুক কি করে রে?" আমি সত্যি উত্তর দিতে পারিনা। শুধু বলি- ব্যাবসা। মা হয়তো বোঝেন, কারন এরপরেই সান্তনা দেন আমাদের। আরেকটু কষ্ট করতে বলেন, সাফল্যের জন্য!!!
আপনার মা শিক্ষিত, সৎ ও সংবেদনশীল বলে আপনাদেরকে আরেকটু কষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন। "অমুক পারে আর তুই পারিস না কেন? তোকে কি ছাই খাইয়ে বড় করেছি?" - এমন কথা বলার মতো বাবা-মা'ও আছেন। বিস্ময় গ্রুপে রিক্রুটমেন্ট এমনি এমনি বাড়েনি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এইটা মনে হয় প্রায় অনেকেরই মনের কথা। কি জানি, আমার ক্ষেত্রে এইটা খুব একটা খাটে না। আমার চেনাজানা গর্ব গ্রুপ অনেক ভাল আছে বিস্ময় গ্রুপের থেকে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিগন্ত, ব্যাপারটা নিজে ভালো থাকা, খারাপ থাকার নয়। গর্ব গ্রুপের বেশিরভাগ জন সাধারণত নিজে খুব ভালো থাকে। তবে তাদের এই ভালো থাকার ব্যাপারটিতে অন্যদের ভালো থাকার ব্যাপারটি নেই। বিস্ময় গ্রুপের কর্মকাণ্ড সরাসরি অন্য মানুষদের জীবনে প্রভাব ফেলে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পড়তে পড়তে নিজের জীবনের আনাচে কানাচে ঘুরছিলাম। শেষটায় এসে আর ভাবতে পারলাম না। তবে আশাকরি সময় পাল্টাবে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সময় তো এমনি এমনি পাল্টায় না। সময়কে পাল্টাতে হয়। বাকি তিন গ্রুপের বোধোদয় না হলে, তারা কোন উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যত বিস্ময় গ্রুপের হাতেই চলে যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মাঝে মাঝে কিছু লেখা পড়ে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়, কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাইনা!
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারন পান্ডব দা।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দারুণ ভালো লেখা পান্ডবদা।
আমার দেখায় একটু আলাদা লাগে শুরুর দিকে, কিন্তু পরিণতি একই। গর্ব ও ঈর্ষা গ্রুপ পলায়ন করেছে, বিদেশে বা ভিন রাজ্যে। বিস্ময় গ্রুপ রয়ে গেছে রাজ্য সামলাতে। ক্রমে ক্রমে তাদেরই হাতে যাচ্ছে সব। এখনো পুরোপুরি যায় নি, তবে ভালো ভালো ছেলেপুলেরা একেবারে "অরাজনৈতিক" হয়ে গেলেই বিস্ময় গ্রুপের কেল্লাফতে। তখন এনতার ভাঙা ও পোড়ানো চালাবে, এখনই শুরু করে দিয়েছে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। প্রবাসে যাওয়াটা মন্দ কিছু নয়, তবে পলায়নটা ক্ষতিকর। ভালো ছেলেপিলেরা বাহ্যিক বা মানসিক উভয় প্রকারের পলায়ন করায় জমি খালি হয়ে গেছে। এই পলায়নের পেছনে অজ্ঞতাও আছে। পালিয়ে না গিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ালে যে আরো সুন্দর, আরো ভালো ভবিষ্যত হতে পারে সেই জ্ঞান তাদের নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মন খারাপ করে কী লাভ?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নিজের স্কুলের রিইউনিয়নের কথা মনে পড়ে গেল। সব গল্পগুলো মনে হয় একরমই।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
সব ব্যাচের গল্পগুলো একই রকম বলেই তো সমস্যা। পরিবর্তনের কথা অনেকেই ভাবে, কিন্তু সেই পথে কেউ হাঁটতে চায় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লাফাঙ ঘ্যাঁচাঙ
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
যতদূর বুঝি, রাজনৈতিক দলগুলোতে একটা আধিপত্যপরম্পরা বা hierarchy থাকে। "বিস্ময়" গোত্রের লোকজন উপরের পর্যায়ে থাকলে "গর্ব" গোত্রের লোকজন রাজনীতিতে ঢুকেও বেশিদিন টিকতে পারবে না। রাজনীতিতে পচনপ্রক্রিয়া একটা স্লিপারি স্লোপ - একবার নিচে নামা শুরু করলে উপরে ওঠা কঠিন।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
hierarchy'র বাংলা আধিপত্যপরম্পরা বোধ করি সঠিক হয় না, ক্ষমতাকাঠামো হলে ঠিক হয়। এখন, যদি আধিপত্যপরম্পরা বুঝিয়ে থাকেন তাহলে বিস্ময় গ্রুপ যে রাজনৈতিক দলের উপরের পর্যায়ে থানা গেড়েছে বাকিদের সে রাজনৈতিক দল ত্যাগ করা উচিত। আর যদি ক্ষমতাকাঠামো বুঝিয়ে থাকেন তাহলে বিস্ময়-বহির্ভূতদের উচিত সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল থেকে বিস্ময়দের উৎখাত করা। বর্ণিত দুটো পথের কোনটাই সহজ নয়। সে পথে গর্ব, ঈর্ষা, বেচারা কোন গ্রুপই হাঁটতে না চাইলে অবধারিতভাবে ক্ষমতা বিস্ময় গ্রুপের হাতে যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কমেন্টে এইটাই বলতে চাচ্ছিলাম। অনেক সুন্দরভাবে অনেক সত্য কথা বললেন।
আপনি 'বেচারা' গ্রুপের কথা বলেন নাই।
খেয়াল করলাম, আমার কোন স্পষ্ট গ্রুপ নাই - স্কুলে থাকতে আমি গর্ব গ্রুপে ছিলাম না, এসএসসি দিয়ে স্কুল ছাড়ার পর থেকে স্কুলের গর্ব গ্রুপে ঢুকে যাই। আবার কলেজ শেষ করার সময় বেচারা গ্রুপে পরিনত হই। এরপরে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) গর্ব গ্রুপে এবং একই সাথে বেচারা গ্রুপে ছিলাম। বিদেশে গিয়ে বরাবর বেচারা থাকি।
সঠিক সময়ে পিএইডি হয়ে গেলে এবং কানাডার ইমিগ্রেশন পাবার পরে ঈর্ষা গ্রুপে নাম ওঠে। দেশে ফেরার পরপর 'চরম বেচারা' সাব-গ্রুপে থাকি প্রায় এক বছর। পরে কেমনে কেমনে একটা বড় কোম্পানির গ্রুপ-হেড হই। নিজের ইচ্ছাতে না (কারণ আমি নিজেকে গবেষক ভাবতে পছন্দ করি)। তখন আবার খানিকটা ঈর্ষা গ্রুপে ঢুকে যাই।
যাই হোক লেখাটা অতি চমৎকার হয়েছে!
গ্রুপের নামটা না বললেও 'বেচারা'দের কথা তো এসেছে। এরা গর্বও না, ঈর্ষাও না, বিস্ময়ও না। যারা 'আসল বেচারা' তারা মাঝে মধ্যে 'চরম বেচারা'দের চোখে গর্ব বা ঈর্ষা হয়। তবে সেটা সাময়িক ব্যাপার। অমন আদি ও আসল বেচারার খোঁজ আমার জানা আছে। দেখতে চাইলে নেক্সট টাইম ঢাকা আসলে খবর দেবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
জীবন বাস্তবতার প্রকৃত চিত্র দেখলাম যেন, চমৎকার! ১০ বছর পর ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো অনুরূপ চিত্র খুঁজে পাবো!
বিস্মিত গ্রুপের চোখে অন্যরা কেমন? তারা কীভাবে দেখে পাণ্ডবদা?
_____________________
Give Her Freedom!
ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন। গর্ব গ্রুপকে বিস্ময়রাও গর্ব করে, আর ঈর্ষা গ্রুপকে তারাও ঈর্ষা করে। তবে তারা বেচারা গ্রুপকে ভালু পায়। কারণ, বেচারা গ্রুপের সামনেই তারা কলারটা ঝাঁকাতে পারে, পকেটটা বাজাতে পারে। বেচারা গ্রুপের পালাবার পথ নেই বলে তাদের ঘাড় ভেঙেই বিস্ময়রা করে খায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হতাশার তো শেষ নেই পান্ডবদা।
কিন্তু আশা আছে, অনেকটাই। নিজে কখনো কিছু করিনি, এখন খুব কাছ থেকে কিছু নতুন মানুষের কাজ দেখছি- কদিনের মধ্যে কিছু হয়ে যাবে এমন আশা করি না, কিন্তু নতুন মানুষেরা বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেই, এ প্রজন্মে, নয় পরের প্রজন্মে।
বিস্ময়রা আজীবন থাকবেই। আমার কেন জানি মনে হয় কোন এক সময় হয়ত গর্ব আর ঈর্ষারা এমন শক্তিশালী হবে যে বিস্ময়রা বিস্মিত হবে! আমাদের সৌভাগ্য যে, বিস্ময়রা এখন সেটা টের পাচ্ছে না; যখন পাবে, তখন কিছু করতে পারবে না আর।
বাংলাদেশ বাড়বেই।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আপনার দেয়া লিঙ্কগুলো দেখে একটু ভয় পেলাম। সেখানে কিছু মানুষের ছবি দেখে আরো ভয় পেলাম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি তবুও আশাবাদী হতে চাই। এতটুকু জানিয়ে রাখি, বাঁধাগুলো এড়িয়ে ওরা এগুচ্ছে এখনো।
ওদের প্রতিযোগীতা শেষ হয়েছে। সাড়া দেশ থেকে প্রতিযোগী এসেছে প্রায় তিনশো। ওরা এসে ওদের এলাকার সেরা পণ্য নিয়ে কথা বলেছে। ফজলী আম, নকশী কাঁথা, হাজারী গুড়, শুটকী, বগুরার দই, বাকরখানী, মসলিন।
সেরা পনেরো দলের প্রতিযোগিতার বিচার কাজে এসেছিলেন প্যাটেন্ট বিশেষজ্ঞরা, এসেছিলেন জি আই এক্ট বিশেষজ্ঞরা, এছাড়া নিয়মিত বিচারকরা তো ছিলাম।
আমি ছিলাম দর্শক হয়ে। কী যে ভাল লাগল এই ছাত্র ছাত্রীদের মুখে দেশের এই অতিহ্যবাহী পণ্যগুলো নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা শুনতে। একজনও যদি বেরিয়ে আসে সে কম কী?!
ওদের পুরস্কার বিতরনী হবে কিছুদিন পর, বড় করে হওয়ার কথা।
আশংকা তো কতই আছে, তবু ওদের নিয়ে আশাবাদী হতে ইচ্ছে করে!
কেবলোদের দুইয়েকটা কাজ যদি ঠিকঠাক হয়ে যায় কত মানুষের উপকার হবে!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
অসাধারণ লেখা
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বিস্ময় গ্রুপের কিছু লোকজন এই কিছুদিন হয়, আমাদের অনেক সখের একটা বন্ধুসভাকে হাইজ্য়াক করে নিয়ে গেল। দিনে দুপুরে বেশ ঘটা করেই নিল। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম আর বিস্মিত হলাম।
***
হেন্ডু বন্ধুগুলোর নাম সবসময় যোসেফ/ইউসুফ হয় কেন?
আমরা নিষ্ক্রিয় থাকলে বিস্ময় গ্রুপ আসতে আস্তে সবই হাইজ্যাক করবে।
* * *
আমাদের ইউসুফের ছোট ভাইয়ের নাম ইসহাক। সে আরও লালটু, আরও লাজুক। আবার আমার এক তুতো ভাই ইউসুফ, চেহারা ও ঐসব এলেম দুইটাতেই বেশ পিছিয়ে। সুতরাং সব হেন্ডুই ইউসুফ নয়, এবং সব ইউসুফ হেন্ডু নয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পেছনের স্মৃতি মনে পড়ে গেল! স্বপ্ন দেখি দিন বদলাবে, সবসময় বিশ্বাস করে এসেছি সবকিছু বদলাবে। প্রলোভন এড়িয়ে, নিজের কাছে স্পষ্ট থাকার চেষ্টা করতে করতে এতদূর এসে মাঝে মাঝে আর ভাল লাগে না, চারিদিকে সবাই হতাশ। সুযোগ পেয়েও দেশ ছেড়ে যাইনি, কোনদিন ভাবিনি দেশ ছেড়ে চলে যাব, প্রিয় বন্ধুরা সবাই চলে গেছে, একা পড়ে আছি, বুকে একটাই স্বপ্ন একদিন বাংলাদেশ একদিন আবার বাংলাদেশ হবে, হোক!
জাতিগত ভাবে আমাদের কল্পনাশক্তি আর তার দৃশ্যকল্প তৈরি করে তাতে সর্বস্ব বিশ্বাস নিয়ে স্থিত থাকার প্রত্যয় এত কমে গেছে! অথচ জাতি হিসেবে আমাদের মূল সক্ষমতাটাই ছিল এখানে। লেখাটা পড়েছিলাম মোবাইলে, এখন মন্তব্য করতে এসে আবার পড়লাম। তারপর চুপচাপ।
বেশ কিছুদিন ধরে কেবলই মনে হচ্ছে একটা প্রবল কোন কালবোশেখি আসছে ধেয়ে.... আসুক! একটা কিছু ঘটুক, এইভাবে আর চলতে পারে না।
আপনাকে হতাশ করতে চাই না তবুও বলি, আমাদের ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে। এর মানে এই না যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কেবল হতেই থাকবে। তবে খুব আশাবাদী হবার যৌক্তিক কারণ দেখি না। আমাদের গণমানুষের আচরণ এত দ্রুত পালটায়, এত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এত পরস্পরবিরোধী অবস্থানে এরা দাঁড়ায় যে খুব ভরসা করা যায় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দিন যে বদলাবেই তার শুভ সূচনা তো ২০১৩-তেই দেখা হল। ! গ্রুপকে আকাশে তুলে দেওয়া বিন্দুগুলোকে মুছে ওদের চলার পথে আমরাই যতিচ্ছেদ ঘটাবো।
আশাবাদী হবার সাথে সাথে আশাকে জিইয়ে রাখার জন্য কাজ করতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখা খুব চমৎকার পেলাম পান্ডবদা, কোন ব্যতিক্রম হয় না কখনো
বাংলাদেশের অধিকাংশ "রাজনীতিবিদ" দৃশ্যতঃ কোন অর্থনৈতিক কাজের সাথে জড়িত নন। তবুও তাদের টাকার ভান্ডার গৌরী সেনের মতই অফুরান। অর্থনৈতিক থেকে র্থ বাদ দেয়া পথে অবশ্যই। ফলে সাদা চোখে রাজনীতিকে অস্পৃশ্য মনে হওয়া খুব ভুল সম্ভবতঃ নয়। গর্ব এবং ঈর্ষা গ্রুপের মানুষজন তাই এই পংকিল পরিবেশ থেকে নিজেদের দূরে রেখে ব্যক্তিজীবন সাজিয়ে নিতেই বেশি আগ্রহী। যত সমস্যা সব বেচারাদের। এরা পালাতেও পারে না, বিস্ময় গ্রুপেও ঢুকতে পারে না।
রাজনীতি আসলে চাকুরী বা ব্যবসায়ের মতো ফুলটাইম জব। রাজনৈতিক দলগুলো 'সার্বক্ষণিক কর্মী'দেরকে সৎ, স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপযোগী ভাতা দেবার ব্যবস্থা করলে অনেক রাজনৈতিক কর্মীই (নেতা, কর্মী উভয়ার্থে) হয়তো বেপথু হবেন না। আবার রাজনৈতিক দল কোন দুর্জনের কাছ থেকে আর্থিক বা অন্য কোন সহযোগিতা নিলে তার প্রতি এক ধরনের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়ে যায় যেটা পরিণতিতে বিস্ময় গ্রুপের উত্থান ঘটায়। সুতরাং দুর্জনকে সর্বতোভাবে পরিহার করলে কর্মীদের কলুষিত হবার শঙ্কাকে কমিয়ে আনা যায়। সৎ-যোগ্য নেতার পেছনে বেচারারা দল বেঁধে দাঁড়ালে দুর্জন নেতা পিছু হঠবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ একটি লেখা পান্ডবদা।
আশা রাখি দিন বদলের পালা খুব দূরে না
facebook
শুধু মনে মুখে আশাবাদী হলে তো চলে না, তার জন্য চেষ্টাও থাকতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমাদের অজ্ঞতা, অবহেলা, পলায়নপর মনোবৃত্তি, সাহসের অভাব, দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা, রাজনীতিবিমুখতা আমাদের ভবিষ্যতকে বিস্ময় গ্রুপের হাতে তুলে দিয়েছে
নির্মম সত্যি কথা।
হ্যাঁ, কথাটা আমরা জানি ঐ ইস্তক। এরপর আর কিছু করার কথা ভাবি না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? পুরো সমাজটাই পচে গেছে। যারা নিজের পরিশ্রমে ঈর্ষা করার মত অবস্থানে পৌছান, তাদের হয়তো আর রা্জনীতিতে এসে হাত নোংরা করার অভিলাষ থাকে না। আর রাজনীতি করলেই যে তারা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবেন, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?
স্বপ্নহারা মানব
কাজটা তো একজনের না, সুতরাং ঘন্টা কে বাঁধবে না বলে কারা বাঁধবে বলতে হবে। গর্ব, ঈর্ষা, বেচারা সবাইকে মিলেই উদ্যোগটা নিতে হবে। নয়তো আলাদা করে কোন গ্রুপই টিকতে পারবে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারন। বিষন্ন করে দিলেন, পান্ডব ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
হ্যাঁ, আমাদের কেবল মন খারাপই হয় দিদি। মন খারাপ করার কারণটাকে দূর করার উদ্যোগটা নেবার সাহস করি না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সত্যি কথা
এই গল্প একদিন সবাইকে এইভাবেই বলতে হবে? ... কিন্তু মনে হয় এটা শুধু একটা পরিণতি হতে পারেনা, এটা আমাদের প্রাপ্য নয়
ডাকঘর | ছবিঘর
বিস্মিত আর হই না আজকাল।
মাঝ রাতে ঘুম থেকে জেগে যেই দেশের অগুনতি মানুষ চাঁদে বুজুর্গগণের ছায়া দেখতে পায়- সেই দেশে কেবল বিস্ময়বালকগণই তাদের ভাগ্যনিয়ন্তা হবেন- এতে আর আশ্চর্য কি!!
জীবনে সবসময়ই মিডিওকার ছিলাম। মিডিওকার থাকতেই কেনো জানি ভালো লাগে, মাথায় বেশি চাপ নিতে পারিনা, এটাও কারন। লাইফ লার্নিং প্রসেসে একটা জিনিস শুরু থেকে সবসময়ই জেনে, বুঝে ও মেনে এসেছি যে যেটা নিজের নয়, সেটা জোর করে নেয়া যাবেনা। বড়জোর প্রচেষ্টা চালানো যেতে পারে। যাজ্ঞে, লাইনের পিছনে দাড়িয়ে এবং সবাইকে দৌড়ে সামনে যেতে দেখার মাঝেও আনন্দ আছে। সাব্বে সাত্তা সুখিতা ভবান্তু।
আমার ঈর্ষার লিস্ট আছে, বড়জোর কয়েকজনের নাম আছে সেখানে। আপনি সেখানে আছেন
অটঃ বহুদিন দেখা হয়না, আড্ডা তো আরো পরের ব্যাপার।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন