১. আমি আজকে যেটা নিয়ে লিখছি সেটা নিয়ে লেখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে কী না আমি বুঝতে পারছি না। আমার বুদ্ধি খুব বেশী সেটা কখনই কেউ বলেনি (যাদের বুদ্ধি খুব বেশী তারা যে খুব শান্তিতে থাকে তাও নয়), তবে কিছু একটা লেখালেখি করে আমি সেটা পত্রপত্রিকায় ছাপিয়ে ফেলতে পারি। সে জন্য আমি যেন দায়িত্বহীনের মত কিছু লিখে না ফেলি আমার সবসময় সেটা লক্ষ রাখতে হয়।
এখানে তিনি স্বীকার করছেন যে, দায়িত্বসম্পন্ন অবস্থান থেকে তিনি ‘কিছু একটা’ লিখলেই সেটা পত্রপত্রিকায় ছাপিয়ে ফেলতে পারেন। অর্থাৎ, পত্রিকায় কী ছাপা হবে সেটা শুধু সম্পাদক বা বিভাগীয় সম্পাদকের ব্যাপার নয়। সেই সাথে সেটা কে লিখলেন তাও একটা ব্যাপার। এবং কিছু মানুষ আছেন যারা চাইলেই নিজের লেখা পত্রিকাতে ছাপিয়ে ফেলতে পারেন – অধ্যাপক ইকবাল সেই ক্ষমতাবান শ্রেণীর মানুষ। এখান থেকে এটা ধারণা করা যায় যে, প্রিন্ট মিডিয়ার এই ক্ষমতাবান শ্রেণীর মধ্যে অধ্যাপক ইকবাল বা তাঁর মতো যারা ‘ভালো মানের’ বা ‘দায়িত্বসম্পন্ন’ লেখা লিখতে পারেন তাঁদের বাইরে এমন আরো অনেকের থাকার সম্ভাবনা আছে যারা তাঁদের মতো ‘ভালো মানের’ বা ‘দায়িত্বসম্পন্ন’ লেখা লিখতে পারেন না, কিন্তু যা লেখেন সেটা পত্রিকায় ছাপিয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখেন। এই ‘আরো অনেকের’ দেখা পেতে বাংলাদেশের যে কোন পত্রিকার যে কোন দিনের ইস্যুটি হাতে নিলেই বোঝা যাবে। সেখানে ‘ছাপিয়ে ফেলার’ ক্ষমতাসম্পন্নদের ত্যাগ করা বিষ্ঠার কখনো অভাব হয় না।
আমার চেয়ে অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেও অনেকে তাদের লেখা পত্রপত্রিকায় ছাপাতে পারেন না। তারা মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে আমার কাছে সেই লেখাগুলো পাঠান। আামি পড়ি এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
এই দুই বাক্যে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, অনেকে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখলেও পত্রপত্রিকা তাদের লেখা ছাপায় না। এর কারণ কী? এই প্রশ্নের উত্তর তিনি আগেই দিয়ে রেখেছেন — কারণ, তাদের পত্রিকায় ‘ছাপিয়ে ফেলা’র ক্ষমতা নেই। সুতরাং, আমরা বুঝে যাচ্ছি একটি লেখার মান, কনটেন্ট ইত্যাদি বিষয়গুলো লেখাটির পত্রিকায় ছাপার যোগ্য হবার সাথে সম্পর্কিত নয়। বরং পত্রিকায় লেখা ছাপা হবার সাথে লেখকের ‘ছাপিয়ে ফেলার’ ক্ষমতার সরাসরি যোগ আছে।
পত্রিকায় লেখা ছাপাতে না পারা এই বিপুল সংখ্যক ভালো লেখকদের কেউ কেউ তাঁকে লেখা পাঠালে তিনি তাদের লেখা পড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, কিন্তু কী করে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে, অর্থাৎ ঐ লেখাগুলোও প্রকাশিত হতে পারে সেটা নিয়ে তাঁর কোন বক্তব্য নেই, পরামর্শও নেই। পত্রিকাতে লেখা ছাপানোর জন্য স্বীয় ক্ষমতা খাটাতে অক্ষম এই লোকগুলো যখন তাদের মত প্রকাশের বিকল্প পথ ধরেন তখন সেটা নিয়ে অধ্যাপক ইকবালের বক্তব্য কী?
আজকাল লেখাগুলো শুধু যে কাগজে ছাপা হয় তা নয়, সেগুলো ইন্টারনেটেও প্রকাশ হয়। সেখানে একটা নূতন স্টাইল শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটা লেখার পিছনে লেজের মত করে পাঠকেরা তাদের মন্তব্য লিখতে পারেন। আমি এখন পর্যন্ত কখনোই আমার লেখার পিছনের লেজে লেখা পাঠকদের মন্তব্য পড়িনি, কখনো পড়বনা বলে ঠিক করে রেখেছি।
স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, পত্রিকার অনলাইন ভার্সানে প্রকাশিত লেখায় পাঠকের মন্তব্য করার ব্যাপারটিকে অধ্যাপক ইকবাল সুনজরে দেখছেন না। পত্রিকার পাঠকরা যখন সরাসরি বা ডাক যোগে বা ইমেইল যোগে তাঁর কাছে লেখা পাঠান তিনি তখন সেটা পড়েন এবং পড়ে দীর্ঘশ্বাসও ফেলেন, কিন্তু ঐ পাঠকের অনলাইনে করা মন্তব্য পড়েননি এবং পড়বেনও না বলে ঠিক করেছেন। এটা কি স্ববিরোধীতা নয়?
কেউ হয়তো বলতে পারেন, পত্রিকাতে কোন একটা লেখার নিচে যে সমস্ত মন্তব্য ছাপা হয় সেগুলো মডারেটেড বা পত্রিকাওয়ালাদের মর্জিমাফিক মন্তব্য। সেখানে ঠিক সমালোচনা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই সেগুলো পড়ার দরকার কী? এই কথাটি সত্যি। পত্রিকাওয়ালারা যদি লেখককে আকাশে তুলতে চান তাহলে তারা তেলতেলে মন্তব্যগুলোকে মডারেশনের চৌকাঠ পার করেন। আর কোন কারণে পত্রিকাওয়ালারা লেখকের ওপর চটে থাকলে তার সমালোচনামূলক মন্তব্য থেকে শুরু করে অশ্লীল গালাগালি পর্যন্ত মডারেশনের আঙুলের ফাঁক দিয়ে চলে আসে। মন্তব্যের মডারেশনের এই খেলা বোঝার জন্য কয়েকদিন অনলাইনে পত্রিকা পড়া যথেষ্ট। আর যারা পত্রিকাওয়ালাদের সাথে ঘনিষ্ট তাদের তো এইসব অলিখিত নিয়ম বহু আগে থেকে জানার কথা! অধ্যাপক ইকবাল চাইলেই তাঁর লেখায় পত্রিকাওয়ালাদের দিয়ে গালাগালি আর তেলতেলে মন্তব্য ঠেকিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তাঁর মতো প্রভাবশালী লেখক সেই কাজটি করেননি। কিন্তু কেন?
কারণ, তিনি তাঁর লেখায় পাঠকের প্রতিক্রিয়া চান না। অধ্যাপক ইকবাল তার পাঠকের করা মন্তব্য পাঠে কেন আগ্রহী নন্ সে ব্যাপারে বলছেন,
পৃথিবীর এমন কোন মানুষ নেই যে নিজের সম্পর্কে ভালো কিছু শুনতে চায়না, তাই সেই মন্তব্যগুলো পড়লে আমি হয়তো নিজের অজান্তেই এমনভাবে লিখতে শুরু করব যেন সবাই আমার লেখা পড়ে ভালো ভালো মন্তব্য করে। আমি সেটা চাইনা,
‘মন্তব্য’ মানে কি কেবল ভালো ভালো, সুন্দর সুন্দর, গোল গোল কথা? নূন্যতম জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ জানেন তা কখনোই নয়? মন্তব্য মানে গঠনমূলক সমালোচনাও বটে। মন্তব্য মানে ত্রুটি নির্দেশ, ত্রুটি সংশোধন, ভ্রান্তি অপনোদন। তাহলে অধ্যাপক ইকবালের মতো মানুষ মন্তব্য নিয়ে এমন একটা ভুল কথা বললেন কী করে!
একটা কারণ হতে পারে, পত্রিকাওয়ালারা তার লেখার নিচে যে কেবল তেলতেলে মন্তব্য ছাপাতে আগ্রহী সেই ব্যাপারে তিনি যে বিরক্ত সেটা বোঝাতে চাইছেন। কিন্তু তিনি তো বলেই দিয়েছেন, তিনি কখনোই পাঠকদের মন্তব্য পড়েননি এবং কখনো পড়বেনও না, তাহলে কখনো না পড়ে তিনি কী করে জানলেন যে কেবল তেলতেলে মন্তব্য ছাপা হয়? ধরা যাক, তিনি এসব অন্যদের মুখে শুনেছেন। সেক্ষেত্রে তাঁর কি উচিত ছিলনা এই ব্যাপারে পত্রিকাওয়ালাদের এটা বুঝিয়ে দেয়া যে — এই অযাচিত তৈলমর্দন তাঁর পছন্দ নয়। কিন্তু অধ্যাপক ইকবাল সেসব নিয়ে কিছু বলেননি।
তিনি যে তাঁর লেখাতে কোন মন্তব্যই আশা করেন না এমন ভাবার পক্ষে একটু জোর পাওয়া যায় তাঁর পরবর্তী কথায়।
আমার যেটা লিখতে ইচ্ছা করে আমি সেটা লিখতে চাই। আমার সব কথাই যে সবার জন্যেই সত্যি হবে সেটা তো কেউ বলেনি। আমার কথাটা সবাইকে মেনে নিতে হবে সেটাও আমি বলছি না, শুনতে নিশ্চয়ই সমস্যা নেই!
সবাই নিজের ইচ্ছেমতই লিখতে চান। আমরা সবাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যে গলা ফাটাই তার একটা মানে হচ্ছে এই ইচ্ছেমত লিখতে পারা। আমরা সবাই অধ্যাপক ইকবালের এই নিজের ইচ্ছেমত লিখতে চাওয়ার পক্ষে। পাঠকের মন্তব্য লেখকের লেখার ত্রুটি নির্দেশ করে, ত্রুটি সংশোধন করে, ভ্রান্তি অপনোদন করে, সংযোজন-বিয়োজন বা পরিবর্তন-পরিবর্ধন-পরিমার্জনের পরামর্শ দেয়। ত্রুটি সংশোধন বা ভ্রান্তি অপনোদন একটি আবশ্যিক বিষয়। এটি উপেক্ষা করা লেখকের দুর্বলতাকে নির্দেশ করে। কোন লেখক যখন ফিডব্যাকের এই সুযোগটি গ্রহন করতে অস্বীকার করেন তখন বুঝতে হবে তিনি ফিডব্যাক গ্রহনে বিশ্বাসী নন্। তিনি সোজাসুজি বলে দিচ্ছেন, আমার যা ইচ্ছা আমি তাই বলবো তা তুমি মানো আর না মানো। বোঝাই যাচ্ছে, লেখালেখি নিয়ে তিনি জনবিচ্ছিন্নতা কামনা করেন, উভয়মুখী যোগাযোগে বিশ্বাস করেন না। পাঠকের প্রতিক্রিয়া তিনি বিবেচনা করতে আগ্রহী না।
কোন লেখক তার লেখার পড়ে পাঠকের প্রতিক্রিয়া কী সেটা না জানতে বা উভয়মুখী যোগাযোগে অনীহ হতে পারেন। সেটা তার অধিকার। কিন্তু তিনি পাঠকের প্রতিক্রিয়া প্রদান ও উভয়মুখী যোগাযোগের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলতে পারেন না। এই ব্যাপারটি অনায়াসে উপেক্ষা করা যেতো যদি লেখকটি মুহম্মদ জাফর ইকবাল না হতেন।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল পদার্থ বিজ্ঞানের মানুষ হলেও ইন্টারনেট মিডিয়াতে লেখালেখিতে তাঁকে কখনো দেখা যায়নি। তাঁর নামে চালানো ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি দেখলে বোঝা যায় সেটি অন্য কেউ চালায়। অন্য অনেক লেখকের মতো তাঁর নিজস্ব সাইট বা ব্লগ নেই। তিনি চাইলেই এই কাজগুলো নিজে করতে পারতেন, কিন্তু করেননি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পক্ষে নিয়মিত বলা ও লড়াই করা মানুষটি প্রযুক্তির এই অসম্ভব শক্তিশালী মাধ্যমটিকে উপেক্ষা করছেন কেন? কারণ, এতে তাঁকে বহু সমালোচনা, বহু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। এবং তিনি এই সমালোচনার মুখোমুখি হতে অনীহ।
তাঁর এই মনোভাবের দরুণ তাঁর ছাত্র-ছাত্রী, পাঠক-পাঠিকা, ভক্তদের মধ্যে এমন একটা ধারণা গড়ে উঠতে পারে যে, উভয়মুখী যোগাযোগ অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর জিনিস। ফলে, তাদের কেউ কেউ চোখ-কান বন্ধ রাখার এই নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে সারা জীবন ভুলের সাগরেই ডুবে থাকবেন। এবং তারা এটাও ভাবতে পারেন যে, প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটভিত্তিক মিডিয়া অদরকারী। এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল’ নামটির প্রভাব এবং বাজারমূল্য অনেক। সেই প্রভাব ও বাজারমূল্য সম্পন্ন লেখক যখন মানুষের স্বাধীন চিন্তার প্রকাশ ও মতামত প্রদানকে, প্রিন্ট মিডিয়ায় বিদ্যমান অভিজাততন্ত্রের অর্গল ভাঙাকে, সর্বোপরি আধুনিক প্রযুক্তির শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহারকে পরোক্ষভাবে নিরুৎসাহিত করেন তখন একটু শঙ্কা হয় বটে। ভুল ঠেকানোর জন্য অধ্যাপক ইকবাল যে দরজা বন্ধ করেছেন তার পরিণতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি স্মর্তব্য।
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি।
সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?
এই মনোভাব ধরে রাখার দরুণ অধ্যাপক ইকবালের আদৌ কিছু হবে কি না, সেটা নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। ভাবনাটা কেবল ঐ জায়গায় যে, এই খারাপ উদাহরণটি যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক লেখক/পাঠককে কেবল পিছিয়েই দেবে। সত্যটা অনেক সময় আর আলোর মুখ দেখবে না।
মন্তব্য
অনেক আগে এদের একটা নাম দিয়েছিলাম - কাগুজে বুদ্ধিজীবি। এরা একমুখি যোগাযোগে বিশ্বাস রাখেন। কারণ যোগাযোগ দ্বিমুখি হলে বিভিন্ন প্রশ্ন মোকাবেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে এরা রাজি না। মানসম্মত মন্তব্যের অভাবের কারণে উনি মন্তব্য পড়েন না পড়লে "মানসম্পন্ন" বাজে লেখা যারা ছাপায় তাদের সাথে সেখানে তার লেখা দিতে আপত্তি দেখছি না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
যাক জাফর ইকবাল স্যারের একটা নতুন নাম পাওয়া গেল এই মূল্যবান মন্তব্য থেকে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এইটা জাফর ইকবালের জন্য নাম না। কাগুজে টার্মটা নতুন না। আপনার চোখে পড়ে নাই হয়তো।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ধন্যবাদ ক্লারিফিকেশনের জন্য। কাগুজে টার্মটার সাথে আমি পরিচিত। এখানে এভাবে তার ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছিলো আপনি নেইমকলিং করলেন। বাংলাদেশে যতজন বুদ্ধিজিবী আছেন তাদের মধ্যে "কাগুজে" কথাটা সবচেয়ে কম খাটে জাফর ইকবাল স্যারের উপর।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এই কাগুজে বুদ্ধিজীবিকেই শাহবাগে গিয়ে নিয়মিত তরুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করতে দেখা যেত। শহীদ মিনারে বৃষ্টিতে ভিজে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে আসিফ নজরুল, আনিসুল হক, কিংবা সোহরাব হোসেন টাইপের "বহুমুখী যোগাযোগে বিশ্বাসীরা" প্রতিবাদ করতে যাননি- গিয়েছিলেন এই কাগুজে বুদ্ধিজীবিই। কপাল খারাপ, নাহয় এই আবাল দেশের কতিপয় অর্বাচীন মুক্তবুদ্ধিরচর্চাকারীদের কাছে তাঁর নৈতিকতা শিখতে হতো না।
--সুবীর
আবাল দেশের সবচেয়ে বড় আবাল সুবীর ভাইয়া, জাফর ইকবালের শাহবাগে বা শহীদ মিনারে যাওয়ার সাথে বহুমুখী যোগাযোগের কোনো সম্পর্ক নাই। এটা বুঝতে না পারলে বলদামি করা বাদ দিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে লেখাটা আবার পড়ুন। মুক্তবুদ্ধির ওপর আপনার যে অনেক রাগ, এটা আমরা বুঝতে পেরেছি।
অধ্যাপক ইকবালের এই কথাটা তো "লেখার লেজে" মন্তব্যকারীও বলতে পারেন।
খবরের কাগজের "লেজে" যেসব মন্তব্য ছাপা হয়, সেগুলোর একটা বড় অংশই সরাসরি লেখককে উদ্দেশ করে স্তুতি বা গালি। সেগুলো বাদেও যে আলোচনা হয়, বিকল্প ভাবনা উপস্থাপন হয়, সেটা হয়তো জাফর ইকবালের নজরে আসেনি।
জাফর ইকবালের অনেক লেখায় একটা ব্যাপার উঠে আসে যে তিনি তাঁর ভক্ত-পাঠকদের কাছ থেকে ইমেইল আর চিঠি পান, সেগুলো পড়েও থাকেন। সেগুলো তিনি কেন পড়েন? ওগুলো পড়ে কেন তাঁর মনে হয় না,
জাফর ইকবালের জুতোয় স্ববিরোধিতার কাদা লাগা শুরু করেছে। মাহমুদুর রহমানের মতো দুর্বৃত্তের পক্ষাবলম্বন করায় তিনি প্রথম আলো বর্জন করেছেন, এ কথা একাধিকবার লিখেছেন, কিন্তু সেই প্রথম আলোর সহযোগী প্রকাশনা কিশোর আলোতে তিনি মাসের পর মাস ধরে লিখে যাচ্ছেন, জানি না এর পেছনে কী খোঁড়া অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন। ইউনূস যখন সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গদি হারালেন, মতি অ্যান্ড কোঙের সুরে সুর মিলিয়ে তিনি সরকারকে ভর্ৎসনা করেছেন, কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি বিষয়ে ইউনূসের লজ্জাস্কর নীরবতা এবং এই বিচারের বিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়াতের সাথে ইউনূসের প্রকাশ্য সখ্যতা নিয়ে একটা টুঁ শব্দ করেননি। আজ ওনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যদি অবসরের সময় পার করে আরো দশ বছর গদি আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকতেন, অধ্যাপক ইকবাল ঠিকই কলমে ধোঁয়া ছুটিয়ে সমালোচনা করতেন, কিন্তু ইউনূসের ব্যাপারে উনি কোনো "যুক্তিতর্ক" বোঝেন না।
স্যার, আপনাকে আমরা অনেক ভালোবাসি। বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমতও সেই ভালোবাসার সাথেই পোষণ করি। কিন্তু স্ববিরোধী মানুষকে বেশিদিন ভালোবাসা যায় না। কনসিস্টেন্ট হোন, প্লিজ।
স্মৃতি প্রতারণা করে না থাকলে যদ্দুর মনে পড়ে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধেও একসময় তিনি উচ্চকিত ছিলেন। বিরাজনীতিকরণের এই কথাগুলো তিনি এখন আর বলেন না। কেন বলেন না সেটা একটা রহস্য। তিনি অবস্থান বদলে থাকলে সেইটাও তিনি ক্লারিফাই করেননি কখনো।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সেই সঙ্গে অভক্তদের থেকে হুমকি-ধামকি চিঠি-এসএমএসও পান।
আমারো নজরে আসেনি সম্ভবত ছাগুমন্তব্যের জোয়ারে ভেসেগেছে নজরে আসার আগেই।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
যারা ভক্তদের চিঠি পান তাদের প্রায় সবাই-ই অভক্তদের গালি-হুমকি পান। এটা জনপ্রিয়তার অনেকগুলো হ্যাজার্ডের একটা।
ছাগু মন্তব্য, তেলানো মন্তব্য, গালি, ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং ত্যানা প্যাঁচানি - এই সবগুলো ঐ সাইটের মডারেটর ঠেকিয়ে দিতে পারেন। অধ্যাপক ইকবাল মডারেটরকে একবার অমন অনুরোধ করে দেখলেই পারতেন। সেটা না করে মন্তব্য পাঠই বন্ধ করে দেয়াটা কি ঠিক হলো?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
যে জায়গায় তাঁর লেখার নিচে ছাগুমন্তব্য অনুমোদন করা হয়, সে জায়গায় জাফর ইকবাল লেখেন কেন?
স্যারের লেখা একই সঙ্গে আট-দশটা অনলাইন পোর্টালে ছাপা হয়। গুগল মেরে তার বেশকিছু ঘেটে দেখলাম। এই মুহুর্তে ছাবুমন্তব্য তেমন পাওয়া গেলনা। সম্ভবত পরে মডুরা পরিষ্কার করেছে। লেখা তরতাজা থাকতে বেশি চোখে পড়ে।
তবে যে ধরণের মন্তব্য চোখে পড়লো সেগুলো সংখ্যায় বিপুল কিন্তু প্রচণ্ড ট্রিভিয়াল। "ঠিক বলেছেন", "উত্তম জাঝা" টাইপ, অথবা পাঠকের নিজ ভাষায় লেখার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি। এসব কারণেও না পড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একজন লেখক।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমার মতে, অনলাইন পত্রিকার লেজে ছাপা হওয়া মন্তব্য পড়ে কারো পক্ষে সুস্থ থাকা সম্ভব না।
তাই স্যারের লেখার নিচে ছাপা হওয়া কিছু পাতে তোলার যোগ্য মন্তব্যের স্ক্রিন শট বা লিঙ্ক দেওয়া হলে এই লেখাটা আমার কাছে অর্থবহ হতো।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
মন্তব্য মডারেশনের ব্যাপারে উপরেই ব্যাখ্যা করেছি। পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই।
ব্যাপারটা হচ্ছে যে, মন্তব্য করার অপশন থাকলে সেখানে গঠনমূলক সমালোচনা, পাতে তোলার মতো মন্তব্য, ছাগু মন্তব্য, তেলানো মন্তব্য, গালি, ব্যক্তিগত আক্রমণ, ত্যানা প্যাঁচানি - সবই হবে। তবে কী প্রকাশিত হবে সেটা মডারেটর ঠিক করবেন। যেহেতু, মন্তব্য করার অপশন আছে; সুতরাং সেখানে 'পাতে তোলা'র মতো মতো মন্তব্য করার সুযোগও আছে। তাঁর প্রকাশিত শত শত লেখার কোনটাতে 'পাতে তোলা'র মতো মন্তব্য হয়নি তা তো নয়। সেটার লিঙ্ক বা স্ক্রিনশট দিয়ে প্রমাণ করার দরকার নেই। আমার এই লেখাটা কোন অর্থবহনের ভার নাইবা বইলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মন্তব্য মডারেশনের ব্যাপারে আপনার মত দেখলাম। যেটুকু বুঝলাম, আপনি বলতে চাচ্ছেন, 'মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মডারেটরদের বলুক ছাগু মন্তব্য, অবিবেচকের মত করা মন্তব্য, তেলানো মন্তব্য, গালি, ব্যক্তিগত আক্রমণ, ত্যানা প্যাঁচানি, ট্রিভিয়ালিটি এগুলো মডারেট করতে।' সমস্যা হলো, তেলানো মন্তব্য বা প্রসংশাসূচক মন্তব্য বা স্রেফ ট্রিভিয়াল মন্তব্য মডারেট করার ব্যাপারে কোনো অনলাইন পত্রিকা কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে? কারণ ওই মন্তব্যকারী পাঠক হতাশ হবে এই ভেবে যে, "কী ব্যাপার আমার একটা ভালো, সুচিন্তিত মন্তব্য ছাপা হলো না কেন!" ব্যপারটাতে এক ধরনের পি-আর ডিজাস্টার হবার সম্ভাবনা থাকে। এবং যেকোনো অনলাইন পোর্টাল/পত্রিকাই চায়, তার প্রকাশিত আর্টিকেলের মন্তব্য অংশে পাঠকের বেশি বেশি অংশগ্রহন। খবরের মন্তব্যের ঘর তাই পত্রিকা পাঠকদের মধ্যে মিথোস্ক্রিয়ার/আলোচনার এক ধরনের ফোরাম বৈ কিছু নয়। তাই পত্রিকার তরফ থেকেও ব্যাপারটা দেখার অবকাশ আছে।
আর হাজার হাজার মানুষের নানান কথা শুনবো কিন্তু কোনোভাবেই প্রভাবিত হবো না। সচেতনভাবে এমনটা করা কোনো মানুষ লেখকের পক্ষে সম্ভব নয় (ডেভিড বার্গম্যানদের কথা আলাদা)। তাই প্রত্যেক লেখকেরই পপুলার অপিনিয়ন হতে নিজের স্বকীয়তাকে রক্ষা করার নিজস্ব ডিফেন্স মেকানিজম থাকে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল যেমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এসব মন্তব্য না পড়ার। তাই বলে কি দ্বার রুদ্ধ হলো? তা কিন্তু না। স্যারকে ইমেইল করলে তিনি পড়েন ও রিপ্লাই দেন। এতগুলো পত্রিকার মন্তব্যের সাগর সেচে দুয়েকটা মুক্তো বের করার সময় সবার নাও থাকতে পারে।
আর ‘অর্থবহতার’ ব্যাপারে আমার মন্তব্যটা এই লেখার পাঠক হিসাবে আপনাকে দেওয়া একটা ফিডব্যাক। সেটা আমলে না নেবার অধিকার আপনার আছে। কিন্তু আপনি যেহেতু দাবী করছেন পত্রিকার মন্তব্য অংশে অনেক গঠনমূলক সমালোচনা থ্রেড অলক্ষে থেকে যাচ্ছে ‘দ্বার রুদ্ধ’ করার কারণে। সেহেতু দাবির স্বপক্ষে তেমন কিছু থ্রেডের ফিজিক্যাল ইভিডেন্সের লিঙ্ক থাকলে এই লেখাটা সম্পূর্ণতা পেত। থাকার সম্ভাবনা আছে, অস্বীকার করছি না। কিন্তু বাস্তবে আছে কি না সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আর থাকলেও সেটা কতটা সুলভ বা দুর্লভ সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। (গুগলকে সঙ্গী করে আমি কিছুক্ষণ খোঁজাখুজি করে দেখলাম। ফলাফল পজিটিভ নয়। অবশ্য, ওসব মডুরা গঠনমূলক আলোচনা ডিলিট করে থাকতে পারে।)
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
জাফর ইকবাল কিন্তু কচুঘেঁচু২৪.কম এ লেখা দেন না। তিনি লেখা দেন নামকরা পত্রিকাগুলোতেই, কচুঘেঁচু২৪.কমগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে তার লেখা কপি পেস্ট করে। এই পোস্টের আলোচনায় বারবার চলে আসছে সেইসব কুম্ভীলক কচুঘেঁচুদের কথা। কিন্তু জাফর ইকবাল বলেছেন পত্রিকার কথা, অর্থাৎ যেগুলোতে তিনি লেখা পাঠান, সেগুলোর কথাই। সেসব পত্রিকার ছাপা সংস্করণের বেলায় পরিষ্কার সম্পাদকীয় নীতিমালা আছে, মন্তব্যের বেলায় থাকবে না কেন? পাঠককে ধরে রাখার জন্য কি তার গালাগালি, নিরর্থক ইনপুটকে তোয়াজ করা এতোই জরুরি নাকি? আর জাফর ইকবাল তো সরাসরি পত্রিকার সম্পাদকদের উদ্দেশ করেই লিখতে পারেন, যাতে তারা পাঠকমন্তব্য প্রকাশের ব্যাপারে সচেতন হয়। পত্রিকাগুলো বেশিরভাগই ফেসবুক বা ডিসকাসের মাধ্যমে মন্তব্য নেয়, সেখানে স্প্যামার নিয়ন্ত্রণের মোক্ষম টুল আছে। সেগুলো তারা প্রয়োগ করে না কেন?
তানভীর ভাই,
যতদূর জানি "সাদাসিধে কথা" স্যারের অফিশিয়াল সাইট, কচুঘেঁচু.২৪.কম বাদ দিলেও এখানে অন্তত তিনি দ্বার খোলার সুযোগ নিতে পারেন। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিকৌশলের প্রধান হিসেবে এইটুকু টেকি সক্ষমতা তাঁর অবশ্যই আছে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
লেখাটা পড়লাম। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ধারনা করে নিয়েছেন যে, তাঁর লেখার মন্তব্য কলামে পাঠকেরা সবাই প্রসংশাসূচক বাক্যই লিখবেন। অথবা তিনি যা সঠিক মনে করেন সেটাই শাশ্বত সত্য। সেটার কোন বিরুদ্ধ মত থাকতে পারেনা বা থাকলেও তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করতে রাজী নন।
স্যার, আপনাকে বলতে চাই, এ প্রজন্মের বৃহৎ একটা অংশ আপনাকে শ্রদ্ধা করে, বিশ্বাস করে, ভালবাসে। তাই এখন আর আপনি যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন না। আপনার লেখা সুচিন্তিত হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।
ধন্যবাদ ষষ্ঠ পাণ্ডব, এমন একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য।
একমত। আমার মতে, একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর তাতে পাঠকের একটি অংশীদারিত্ব আপনাআপনি প্রতিষ্ঠিত হয়, পাঠকের মত ঐ লেখাটিরই একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায় তখন!
আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশান নিয়ে এত উত্তেজিত ছিলাম যে, অনলাইন পত্রিকাগুলোতে সংবাদ ভাষ্যের লেজে পড়ে থাকা মন্তব্যগুলি আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। তখন সেখানে যে ভাষায় ম্যাককেইন, হিলারি বা ওবামাকে আক্রমন করা হত, তা খুব বিষ্মিত করত! কি করে আমেরিকানরা এমন অসভ্য ভাষা ব্যবহার করতে পারে! বা, কি করে পত্রিকাগুলি এমন কুৎসিত গালাগাল ছাপতে পারে! আশ্চর্য হল, সবচেয়ে কম গালাগাল পেত ওবামা, আর সবকিছুর পর, এই মন্তব্যগুলি থেকেও ইলেকশানের প্রজেকশান করা যেত, যা অবশ্যই সম্ভব হত না, যদি পত্রিকাগুলি নির্বিচারে মন্তব্য না ছাপত!!
আমার মনে হয়, পান্ডবদা, আপনি স্যারকে খানিক কঠোরভাবেই বিশ্লেষন করেছেন এইখানে! আমি যে আপনার উপরে করা অভিমতের সাথে একমত, তা আগেই বলেছি। তবু, পান্ডবদা, স্যারের কথায়ও কি খানিক যুক্তি নেই? যেমন, পান্ডবদা, আপনি আমার একটি লেখার সমালোচনা করে বললেন যে, এইটা ভাল, এইটা ভাল না। এখন আমি আপনার কাছ থেকে 'ভাল' শোনার আশায় আমার একান্ত নিজস্ব ভাবনার সাথে আপোষ করে লেখা লিখতে পারি না? আমি যদি এমন করি, তাহলে আমি ভাল কাজ করব না, এইটা সত্যি, কিন্তু আমি যে প্রশংসাসূচক কমেন্টের আশায় বিসর্জন দিতে পারি আমার নিজস্বতা, খুব স্বাভাবিক একজন মানুষ বা লেখক হিসেবেই, তা কি অস্বীকার করা যায়?
জাফর স্যার হয়ত সেই বিপদটুকুই আমাদের নজরে আনতে চেয়েছিলেন, এজন্য হয়ত খানিক হাল্কা হয়ে গেছে তার লেখা, হয়ত খেয়াল করে উঠেননি এই লেখাটা খুব বিপদজনক রকমের অন্য একটি বার্তা দিতে পারে, যা আপনি উল্লেখ করেছেন!
জাফর স্যার তাই 'লেখালেখি নিয়ে' 'জনবিচ্ছিন্নতা কামনা করেন,' বা, 'উভয়মুখী যোগাযোগে বিশ্বাস করেন না।' --- এমন অসম্ভব অভিমতটুকু আমি গ্রহণ করতে পারলাম না, পান্ডবদা! আপনাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করি, তবু, আমার দ্বিমত জানিয়ে গেলাম, পান্ডবদা! আর আপনার লেখার মূল সুর মনে হয় আমার দ্বিমত প্রকাশের অধিকারকে বলীয়ানই করে!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
যাঁদের ভক্ত-অনুসারী'র সংখ্যা লাখ লাখ, অথবা যাঁদের বক্তব্য বহু বহু লোককে প্রভাবিত করে তাঁদেরকে নিজের বক্তব্যের কনসিকোয়েন্স চিন্তা করে কথা বলতে হয়। তিনি হয়তো বিশেষ কিছু না ভেবেই একটা কথা বলে ফেললেন, কিন্তু সাধারণ পাঠক-শ্রোতার মধ্যে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে যেতে পারে।
ভিন্নমত প্রকাশ করার সর্বতো অধিকার পাঠকের আছে। পাঠক ভিন্নমত পোষণ করলে সেটা প্রকাশ করলে আখেরে লেখকই উপকৃত হন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
[ এই লেখাটা কি কোনোভাবে স্যারের কাছে পৌঁছানো যায়? যুক্তিসঙ্গত কিছু (সব নয়) প্রেক্ষিতে কিন্তু উনাকে ভুল স্বীকার করে নিজের অবস্থান শোধরাতে দেখেছি। ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
জাফর স্যারের লেখা বের হলে লেজের দিকে ছাগুরা কি হারে ফটোশপ আর লেইম কমেন্ট নিয়ে হাজির হয় সেটা আপনি দেখেছেন । আগ্রহ জিনিসটা তখনি উবে যায়। অনেকটা সামুর 'সকল পোস্ট' এর মত এগুলো পড়া আর না পড়া এক হয়ে দাড়ায়।
নিজস্ব সাইট বা ব্লগ না থাকাটা এই মাধ্যমটাকে নিরুৎসাহিত করে, এই উপসংহার টানা যায় বলে মনে হয় না। উনি ব্যাপারটা নিয়ে আদৌ ভেবে দেখেছেন কিনা সেটাই তো জানা হয় নি।এরকম নতুন কন্সেপ্ট যে স্যারকে আকর্ষণ করে এটা রাগিব ভাইয়ের প্রজেক্টে স্যারের অকুন্ঠ সমর্থন থেকে বোঝা যায়।
যাই হোক সুশীল বুদ্ধি সমাজ থেকে আলাদা হয়ে, আর প্রতিদিনের হুমকি অগ্রাহ্য করে যে প্রিয় মানুষটা লিখে চলেন, তিনি হয়তো এই ব্যাপার গুলো নিয়ে ভাববেন ।
রাজর্ষি
আমি কিন্তু তাঁর লেখা নিয়ে ফেসবুক বা সোশাল মিডিয়াতে যেসব নোংরামি চলে সেগুলোকে কনফ্রন্ট করতে বলিনি। আমি শুধু তাঁর পাঠকের মন্তব্য পাঠ বন্ধের সমালোচনা করেছি। নতুন প্রযুক্তি, নতুন ভাবনা - এসবের ব্যাপারে তাঁর যে ব্যাপক আগ্রহ ও চর্চার চেষ্টা - তার সাথে অনলাইন মিডিয়ার উভয়মুখি কমিউনিকেশনের প্রতি তাঁর অনীহাটা ঠিক যায় না। সমালোচনাটা এজন্যই করা। পত্রিকার পাতা ভরানো আরো ভারি ভারি নামের লোকজনদের কেউ এই কথা বললে আমি সেটা নিয়ে লেখা দূরে থাক, দ্বিতীয় বার চিন্তাও করতাম না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সবার কাছে সমান ভালো হওয়া কিংবা সবার কাছে প্রিয় হওয়ার চেষ্টা করা চরিত্রহীনতার অন্যতম লক্ষন। যেমন ধরুন আপনি সহ মোটামুটি সচলে যারা নিয়মিত লেখে তাঁরা অন্য ব্লগে লেখালেখি করে না (কিছু ব্যাতিক্রম থাকতে পারে) । এর কারণ কি? এর কারণ আপনারা সবাই জানেন আপনারা মোটামুটি কাছাকাছি ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী, সচলে মোটামুটি সবার মাঝেই নীতিগত কিংবা আদর্শগত মিল রয়েছে। এখন হিমু ভাই/মোর্শেদ ভাই/চরম দা/আরফিয়াস ভাই কিংবা অন্য কেউ যদি সামুতে লেখে তাহলে বিষয়টা কেমন হবে। ওখানে সমালোচনার নামে যে প্রতিক্রিয়া হবে সেটি কি মেনে নেওয়া সম্ভব হবে? ওখানকার কতজন কে আপনারা উত্তর দিয়ে, যুক্তি দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারবেন? সম্ভব হবে না বলেই কেউ ওখানে লেখালেখি করেন না। ওখানে লেখতে গেলে হয় আপনার স্বকীয়তা হারাতে হবে আর না হলে সেটা ত্যাগ করতে হবে। নিজস্ব চেতনা কিংবা ভালোলাগার মাধ্যম ছাড়া অন্য মাধ্যমে সমালোচনার নামে বাংলাদেশে যা হয় সেগুলো আসলে হজম করা সম্ভব না, গালাগালি, নানান প্রকার ট্যাগ সহজে খেতে হয় যুক্তিবিমুখ অন্ধ রাজনৈতিক বিশ্বাসী মানুষদের। এখন উনি যদি এমন সবার সব সমালোচনার জবাব দিতে যান, তাহলে সেটা উনার স্বকীয়তাকে নষ্ট করবে। কারণ বাংলাদেশে ব্লগ কিংবা অনলাইন জগত এখনো অন্ধযুক্তিহীন, ধর্মীয় গোঁড়ামিতে ভরা মানুষদের দখলে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এদের কে কি লাইনে আনা যাবে? আমি বিশ্বাস করি যাবে না, এরা ব্রেইনওয়াশ। এদেরকে লাইনে নিয়ে আসার চেষ্টার চেয়ে নতুনদের মাঝে আলোটা ছড়িয়ে দেওয়াই যুক্তিপূর্ণ কাজ। এবং উনি সেটাই করেন। আপনারা-আমরা সবাই ও তাই করি। শুধু সচলেই লেখি, সচলের বাইরে লেখি না।
আমার মনে হয় এই কথাটার একটু কঠিন ব্যাখা আপনি দিয়েছেন। উনি গল্প উপন্যাসের সমালোচনা বলতে এটা বুঝান নি, উনি বোধ আর বিশ্বাসের কথা বলেছেন। উনি পত্রিকায় এগুলো নিয়েই লেখেন। যুক্তি আর প্রমাণের জায়গায় ঠিক থাকলে কেউ তার যে কোন বিশ্বাস থেকে একচুলও নড়ে না। যেমন ধরেন ধর্মীয় বিশ্বাসে আপনি নাস্তিককে সরাতে পারবেন না তার বিশ্বাস থেকে। কারণ তার যুক্তি আর প্রমাণের কাছে আস্তিকতার যুক্তি টিকে না। আবার সাকিবের শাস্তির পক্ষে যারা ছিলো তাদের কে কি কোন কিছু দিয়ে সরানো গেছে তাদের অবস্থান থেকে। যায় নি, কারণ ন্যায় নীতির জায়গা থেকে তাদের অবস্থান সঠিক (আমি মনে করি)। এখন সাকিবের শাস্তির পক্ষে বা নাস্তিকতার পক্ষে পত্রিকা কিংবা ফেবুতে লেখালেখি করলে প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। বেশিভাগ মানুষ আপনার বিপক্ষে চলে যাবে, কেউ কেউ আপনাকে হত্যা করতেও উদ্ধত হবে। সাকিবের শাস্তি ঠিক ছিলো বলে যখন ফেবুতে পোষ্ট দিয়েছি ৯৫% মানুষ ফেসবুকে আমার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে, আমাকে নানান ট্যাগ দিয়েছে এবং অনেকেই উপদেশ দিয়েছে আমি যেন উগ্রতা না দেখাই, এটা নাকি আমার জ্ঞানের প্রথম ধাপের লক্ষন। উল্টোটা ও বলা যায় কোন আস্তিককে আপনি যুক্তি দিয়ে অবিশ্বাসের দলে আনতে পারবেন না। তেমনি জামাত মনাকে যতই যুক্তিদিন সে তার পাপিস্থান মনা থেকে সরে আসবে না। সুতরাং দুই পক্ষকে বুঝিয়ে কোন নিদিষ্ট এক পক্ষে আনা সম্ভব নয়। আর সম্ভব যেহেতু নয় সেক্ষেত্রে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে যার বিশ্বাস নিয়ে লিখে যাবে, ইচ্ছে হলে পড়বেন না হলে না, উনি এটাই বুঝিয়েছেন।
মাসুদ সজীব
১. কারো পক্ষে সবার কাছে ভালো হওয়া সম্ভব নয়। অমন চেষ্টা করাটা বালখিল্যতা। এখানে অধ্যাপক ইকবালের ওপর অমন কোন দায় চাপানোর চেষ্টাও করা হয়নি।
২. সমালোচনা আর গালি, ত্যানা প্যাঁচানি এক জিনিস নয়। এ’দুটোর পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করুন। গালি, ত্যানা প্যাঁচানি, তেলানি – এসবকে যেখানে উপায় আছে সেখানে মডারেট করা আর যেখানে উপায় নেই সেখানে উপেক্ষা করাই উচিত। গালি, ত্যানা প্যাঁচানি, তেলানি ঠেকানোর সাথে সাথে সমালোচনাকেও ঠেকিয়ে দিলে আখেরে লেখকেরই ক্ষতি হবে।
৩. লেখক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে আপনার শিক্ষা, জ্ঞান, বিবেক, বুদ্ধি, ভালোবাসা দিয়ে যা সঠিক বলে মনে করবেন সেটা লিখবেন। সবাইকে লাইনে আনা লেখকের কাজ না। সবাইকে লাইনে আনার চেষ্টা করতে হলে রাজনীতিবিদ, জননেতা, সমাজসংস্কারক, সমাজসেবক, শিক্ষক ইত্যাদির কোন একটা হতে হবে – যারা সরাসরি মাস লেভেলে পাবলিক ইন্টার্যারকশনে যান। শিক্ষক জাফর ইকবাল, অ্যাক্টিভিস্ট জাফর ইকবাল সেই কাজগুলো যথাযথ সেক্টরে করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। লেখক জাফর ইকবালের সেই ভার নেবার দরকার দেখছি না।
৪. অধ্যাপক ইকবালের সব লেখা বোধ আর বিশ্বাস সংক্রান্ত নয়। যেমন, আলোচ্য লেখাটিই একেবারে কঠোর বাস্তব সমস্যা নিয়ে। আস্তিক-নাস্তিক ইত্যাদি বিষয়ে আপনি যা বলেছেন সেটার উত্তর উপরের ৩ নং পয়েন্টে পাবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার ২নং পয়েন্ট অনুসারে মন্তব্য মডারেট করে অর্থাৎ কি ধরণের মন্তব্য আসতে পারে সেটা নির্ধারণ করে দিলে সেটি একসময় দলীয় ট্যাগ পাবে। যেটা আমি প্রথমেই বলেছি, যেমন সচলতায়ন একটি নিদিষ্ট আদর্শ এবং নীতি ধারণ করে, সেই আদর্শ আর নীতি অনুসারেই মন্তব্য কিংবা লেখা ফিল্টার হয়ে আসে। সবার সব লেখা কিংবা মন্তব্য এখানে আসে না। তাই সচলের একটি নিজস্ব পরিচয় আছে, এটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মুক্তমনাদের একটি ব্লগ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক যাদের চুলকানি আছে তাদেরকে এখানে স্থান দেওয়া হয় না। এভাবে প্রতিটি ব্লগের আলাদা একটি পরিচয় আছে। এখন উনাকে যদি অনলাইনে কোন ব্লগে লেখতে হয় তাহলে ও একটা নিদিষ্ট ব্লগে লেখতে হবে। পত্রিকায় যারা কাজ করে তাদের সবার নীতি, বিশ্বাস, আদর্শ এক না। আর পত্রিকার সব পাঠকও এক না। আপনি বলে দিলেন কোন প্রকার গালি কিংবা ত্যানা প্যাঁচানো মন্তব্য মডারেট অতিক্রম করে আসতে পারবে না কিন্তু নানা বিশ্বাসের মানুষের কারনে সেটি করা সম্ভব হবে না। সম্ভব হয় না তার উদাহারণ আমি নিচে দিচ্ছি। সেটি করতে গেলে দিনশেষে ওই পত্রিকা জনপ্রিয়তা হারাবে, একটা ট্যাগ খাবে। এ পথে পত্রিকা যাবে না, গেলেও সেটা সুফল হবে না। তাই পত্রিকার কোন মন্তব্যই জাফর ইকবালের মতো মানুষের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ না।
আর স্যার বলেছেন উনি ইমেইল আর চিঠি পান। সেই চিঠি কিংবা ইমেইল সব যে প্রশংসার হয় এমন না। আমি জীবনে উনাকে একবার চিঠি লেখেছি এবং সেটা সমালোচনা কিংবা বলা যায় বিরোধিতার। উনি প্রথম আলোয় লিখেছিলেন এ যুগের ছেলেরা শুধু ফেসবুক আর অনলাইনে সময় কাটায়, বাস্তব জীবনে কোন প্রতিবাদ কিংবা আন্দোলন করতে পারে না। আমি সেটার বিরোধিতা করে উনাকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম স্যার আপনার এই ধারণা ভুল। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি প্রথম আলোর সেই লেখার নিচে মন্তব্য ঘরে আমার বিরোধিতা ছাপানো হয়নি। অর্থাৎ প্রথম আলোর মডারেট অতিক্রম করেনি। খুব সম্ভব ৭ই মে ২০১৩ তে শাহবাগে উনার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো এবং আমি বলেছিলাম স্যার আপনাকে আমি একটা চিঠি দিয়েছিলাম, আমার সেই কথা আজ কি সত্য হয়েছে। স্যার কিছু বলেননি এবং সেইদনি প্রথম উনি যখন প্রথম গনজাগরণ মঞ্চে উঠেছিলেন তখন তিনি তার সেই ভুল স্বীকার করেছেন।
মাসুদ সজীব
পাণ্ডবদার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, লেখাটি এই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীতে নেয়া হয়েছে কেনো বুঝলাম না। অধ্যাপক জাফর ইকবালের স্পেসিফিক কিছু কথাকে ওভা্র জেনারালাইজ করা হয়েছে। লেখা দেখেই বোঝা যাচ্ছে জাফর ইকবাল কোন কারণে বিশেষ এক শ্রেণির প্রতি যথেষ্ট বিরক্ত, তাদের প্রতি সেটি প্রকাশ করার অধিকার উনার আছে।
পত্রপত্রিকায় লেখা ছাপিয়ে ফেলা - এই কথাটার দুইটা ইন্টারপ্রিটেশন হতে পারে। আমি বিশাল হামবড়া এক লোক, পত্রপত্রিকা তো মামুলি ব্যাপার। ইচ্ছা হলো, দিলাম ছাপায়ে।
আরেকটা হতে পারে, উনি বুঝিয়েছেন বর্তমান সময়ে উনার "গ্রহণযোগ্যতা" কে। এটা ছোট বাচ্চার হাতের মুঠোয় লুকিয়ে রাখা চকলেট না, যে উনার আছে কিন্তু বলবেন না, এখানে ঢাক ঢাক গুড় গুড় করার কিছু নেই। এই সময়টাতে অন্তত তিনি অবশ্যই এমন একজন, যিনি কিছু লেখলে তা পত্র-পত্রিকায় ছাপানো হবে কি হবে না একথা ভাবতে হয়না। সম্পাদক বা বিভাগীয় সম্পাদকের ভূমিকাতে তিনি কোন প্রশ্ন তোলেননি। শুধু নিজের অবস্থানটা ব্যক্ত করেছেন।
অন্য লেখকদের লেখা প্রকাশের উপায় নিয়ে তার কোন বক্তব্য নেই কেনো? কারণ তার লেখার উদ্দেশ্য "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন", সেটির ভূমিকার অবতারণা করতে যতটুকু প্রয়োজন তিনি ততটুকু লিখেছেন।
লেজের মত মন্তব্য - কথাটা শুনতে কোনভাবেই শ্রুতিমধুর লাগে না। তবে এটা আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই বলি, যেকোন একটা অনলাইন লেখা বেছে নিন, সেটার মন্তব্যগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। সেখানে কিছু মানুষ অহেতুক প্রশংসা করছে আর কিছু মানুষ কারণ ছাড়াই অশ্রাব্য গালি দিচ্ছে। গঠনমূলক সমালোচনা ঠিক কতখানি? ৫%? ১০%? ইফ ইউ আর পপুলার এনাফ, দেয়ার উড বি স্প্যাম এনাফ। এ অবস্থায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও নিজের কথা ফিরিয়ে নিতেন।
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেই অসংখ্য মন্তব্য থেকে গঠনমূলক সমালোচনা খুজে বের করে তার জবাব দেবেন এতটা সময় হয়তো তিনি পান না। তাহলে ফুলটাইম একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সময় নষ্ট না করে তার বক্তব্য তুলে ধরার উপায় কি? পত্রিকায় ছাপানো। এটা প্রিন্ট মিডিয়া আর সাইবার মিডিয়ার কোন ক্ল্যাশ বা কম্পিটিশনের বিষয় না, কাকে কোনটা স্যুট করছে অনেকটা সেরকম বিষয়।
তাহলে কি গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার কোন উপায় নেই। অবশ্যই আছে। ব্লগাররা, কিছু ফেসবুক এ্টিভিস্টরা অবশ্যই গঠনমূলক আলোচনা করেন। এখন কোন ফেসবুক এক্টিভিস্ট যদি বলে, ব্লগারদের নাক উঁচু, আমার প্রশ্নের জবাব দেয়নাই। উনি কেন শুধু ব্লগেই লেখে? নাক উঁচু দেখে? ফেসবুক এতো শক্তিশালী একটা মাধ্যম, সবাই থাকে ফেসবুকে, ব্লগ কয়জন পড়ে? উনি সচলে ছাপিয়ে ফেলতে পারে দেখে উনার এতো অহম? উনি ব্লগ বুদ্ধিজীবী!
সবার নিজের পছন্দ-অপছন্দ থাকে। যার যে প্লাটফর্ম পছন্দ সে সেটাই বেছে নেবে। এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা খানিকটা দৃষ্টিকটু। নাহলে জাফর ইকবাল এতোদিন শিশু-কিশোরদের নিয়ে বই না লেখে, সাইন্স ফিকশনের বই না লেখে ব্লগেই লিখতেন, প্রযুক্তি নিশ্চয়ই তিনি ভাল বোঝেন। কিন্তু সেটা বোধহয় খুব সুখকর হতনা। প্রশ্ন উঠতে পারে নিজের একটা ফেসবুক একাউন্ট রেখে তাতে কিছু সময় দেওয়া যে কারো পক্ষেই সম্ভব। হয়তো সম্ভব, কিন্তু হয়তো তাতে তিনি কমফোর্টেবল না। কিছু খেয়ালিপনা তার থাকতে পারে। আমি জানি না ঠিক কি, কিন্তু এটা একান্তই নিজস্ব একটা ব্যাপার।
সাইবার মিডিয়াকে উনি নিরুৎসাহিত করেছেন বলবো না। তিনি কখনো বলেননি ইন্টারনেটভিত্তিক মিডিয়া অদরকারী। তিনি পরোক্ষভাবে শুধু বুঝিয়েছেন কোন লেখার প্রেক্ষিতে তৈলদানকারী এবং আক্রমণকারী অহেতুক মন্তব্যগুলোর জবাব দিতে তিনি আগ্রহী নন। যদি আসলেই পটেনশিয়ালি সিগনিফিক্যান্ট ম্যাসেজ জানাতে হয় তবে মেইল বা পারসনালিই তাকে জানানো যাবে। একজন সম্মানিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এটুকু চাওয়া নিশ্চয়ই খুব বেশি কিছু না। পুরোটাই তার ব্যক্তিগত চাওয়ার ব্যাপার, এটাকে অন্যভাবে নেয়ার কোন কারণ দেখি না।
যা লিখতে ইচ্ছা করে লিখতে চাই - এই বিষয়টাতে প্রকটভাবে ওভার জেনারালাইজ করা হয়েছে। জাফর ইকবাল এটি নিজের সব লেখাকে প্রসঙ্গ করে বলেছেন নাকি এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য যেসব শিক্ষক যাদের কথা তার "আমরা যারা স্বার্থপর" লেখাটির শেষে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন এটা দেখার বিষয়। এখানে পাঠক বোধহয় সেই শিক্ষকদের বুঝিয়েছেন যাদের প্রতিক্রিয়ায় তিনি আগ্রহী নন। নতুবা "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন" নিয়ে কলাম লিখতে বসে তিনি অহেতুক তার আজীবনের সব লেখার পাঠকদের "কুছ পরোয়া নেই" টাইপ ইমো দিবেন বলে মনে হয় না।
আর কিছু কথা বলে যাই, জাফর ইকবাল স্তুতি করে যাচ্ছি নিজের কাছেই এমন লাগছে, কিন্তু না বলেও পারছি না। জাফর ইকবালের প্রথম আলো বর্জন যেমন সমর্থন করি, তেমনি তার কিশোর আলোতে লেখাও যুক্তিগতই মনে হয়। তিনি সারাজীবন কিশোরদের জন্য লিখে গেছেন, তার অনেকখানি বিশ্বাস, কৈশোরে যদি পালে ঠিক হাওয়াটা লাগে জীবনের অনেকটুকু ঠিক পথে যাওয়া হয়ে যাবে। প্রথম আলো আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে ভুল পন্থা অবলম্বন করলেও এটাও ঠিক, দেশের সর্বাধিক পাঠক তথা কিশোর বয়সীদের সাথেও যুক্ত একই প্রথম আলো। কিশোরদের কেন বঞ্চিত করবেন তার লেখনী থেকে? সামটাইমস ব্যালেন্স ওভার স্ট্রিক্টনেস ইজ মোর এফিসিয়েন্ট, হিপোক্রেট তকমা লাগাতে পারেন, বাট হিপোক্রেসি ফর আ গুড পারপোজ।
ডঃ মুহাম্মাদ ইউনুস আর তার জামাত-সখ্যতা প্রসঙ্গে বলতে চাইনা, বাট আই থিঙ্ক, অল জাফর ইকবাল ডিড ইন দিস ম্যাটার ইজ পেয়িং হোমেজ টু আ গ্রেট ইন্টারপ্রেনার হু ব্রট আ নোবেল ফর আওয়ার কান্ট্রি। আমি নিজেই মুহাম্মাদ ইউনুসের জামাত-সখ্যতা মেনে নিতে পারিনা, কিন্তু ইউনুস যেখানে বাইরের অনেকের কাছে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড, প্রকাশ্যে তার পা টানাটানি মেনে নেওয়া আরও কষ্টকর হতো।
হয়তো জাফর ইকবাল স্যারের লেখাটার পরিবেশনায় কিছুটা উদ্ধত ব্যাপার ছিল, কিন্তু নিজ সহকর্মীদেরও বিরুদ্ধে গিয়ে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য কথা বলা তাঁর লেখাটায় এটুকু দরকার ছিল, সব লেখা লো নোটে হয় না, কিছু হাই নোটেও দরকার পড়ে। এটা হয়তো ওরকমই একটা।
তদাপিও, কিছু ভুল বলে থাকলে পাণ্ডবদা নিশ্চয়ই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
- আর্চমাইনর
চমৎকার গোছানো মন্তব্য।
কিছু সংযুক্তি করি। ডঃ ইউনূসকে নিয়ে একটি সাফাই লেখা মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার লিখেছিলেন। কিন্তু সেটা ইউনূসের জামাত-সখ্যতা প্রকাশ হবার আগে। এখন যেহেতু জামাতের প্রতি ইউনুসের সখ্যতা প্রকাশিত হয়েই পড়েছে। এমতাবস্থায়ও জাফর স্যার তাকে নিয়ে লিখতেন কি না সেটা বিবেচনার বিষয়। অবশ্য অতীতের সেই লেখার জন্য তার কাছে কেউ কেউ মুচলেকা দাবি করছে সম্ভবত।
যেমন, উপরে হিমুভাইয়ের মন্তব্যে মনে হয়েছে একটা চেনা-জানা জামাতিকে বুঝি জাফর স্যার সাপোর্ট দিচ্ছেন! স্যারকে শুধু নিজে গিয়ে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মাথায় করে শহীদমিনারে শাহবাগে গেলেই হবে না। আরে কে কে গেলনা, কেন গেলনা, সেইসব নিয়েও তাকে মন্তব্য করতে হবে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
জাফর ইকবালের ইঊনূসভক্ত ছাত্ররা এখনো গভীর তাজিমের সঙ্গে ইউনূসের প্রতি জাফর ইকবালের যুক্তিতর্কাতীত ভক্তির উদাহরণ টানে। ইউনূস প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল এরপর যতোদিন চুপ থাকবেন, ততোদিন পর্যন্ত ইউনূস সম্পর্কে তাঁর শেষ মন্তব্যকেই উল্লেখ করা হবে। শহীদ মিনারের রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে এই প্রসঙ্গ ভিজে যাবে না।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এইটা আমার জানা ছিলো না।
ঠিক আছে, উল্লেখ করা হোক। কথা যেহেতু সঠিক, সেহেতু নিশ্চয়ই যেকোনো প্রসঙ্গে যেকোনো যায়গাতেই উল্লেখ করা যেতে পারে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ঠিক, শহীদ মিনারে রোদ-ঝড়-বৃষ্টির প্রসঙ্গের মতোই ।
প্রিয় আর্চমাইনর, পাঠকের মন্তব্য করা কেন ভালো ব্যাপার আর লেখকের কেনো সেটা পাঠ করা উচিত আপনার এই মন্তব্য তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকলো। সুতরাং পাঠকের মন্তব্য পাঠ বন্ধ করাটা যে ভুল সিদ্ধান্ত সেটা প্রমাণিত হলো।
এবার আপনার মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১. (ক) এই লেখাটি কোন বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লেখা নয়। বরং অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটা লেখার ক্ষুদ্র একটি অংশ (যা মূল লেখাটির বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত নয়) ধরে বিশ্লেষণ মাত্র।
১. (খ) অধ্যাপক ইকবাল যদি কোন শ্রেণীর পাঠকের বালখিল্য বা অশোভন আচরণে বিরক্ত হয়ে থাকেন, সেটা প্রকাশের পূর্ণ অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু বিশেষ কোন শ্রেণীর অপরাধে আম-পাঠক সবাইকে দূরে ঠেলে দিলে সেটা কি ঠিক হয়?
২. ‘ছাপিয়ে ফেলা’ বলতে তিনি হয়তো আপনার বলা ‘গ্রহনযোগ্যতা’কে বুঝিয়েছেন। তবে সেটা তাঁর নাম বা গুণ যেটার কারণেই হোক না কেন সেটা তাঁকে আমার বলা ‘ক্ষমতাবান শ্রেণী’র অন্তর্ভূক্তই করেছে। এখানে ক্ষমতাবান শব্দটাকে ধনাত্মক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন।
৩. “অন্য লেখকদের লেখা প্রকাশের উপায় নিয়ে তার কোন বক্তব্য নেই কেনো? কারণ তার লেখার উদ্দেশ্য "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন", সেটির ভূমিকার অবতারণা করতে যতটুকু প্রয়োজন তিনি ততটুকু লিখেছেন।“ – আপনার এই ব্যাখ্যাটি একেবারেই মানতে পারলাম না। বস্তুত অধ্যাপক ইকবালের লেখার এই ভূমিকাটির মূল লেখার সাথে কোন সম্পর্কই নেই। এই কথাগুলো এখানে বলার কোন প্রয়োজন ছিল না।
৪. ‘লেজের মত’ শব্দবন্ধটিকে আমার লেখায় আমি কোন গুরুত্বই দেইনি। আমার কনসার্ন পাঠকের করা মন্তব্য। তো সেই মন্তব্যের ব্যাপারে অন্য পাঠককে বলা আমার কথার পুনরাবৃত্তি করছি। অনলাইন মাধ্যমের যে সব সাইটে অধ্যাপক ইকবালের লেখা অফিসিয়ালি প্রকাশিত হয় (ফেসবুক শেয়ার আর যাবতীয় ৪২০নিউজ২৪.কম নামক কপি-পেস্ট ছাড়া) সেগুলোর প্রায় সবই মডারেটেড। তার মানে সেখানে আপনি-আমি মন্তব্য করলে সেটা মডারেটরের হাত ঘুরে আসে। অধ্যাপক ইকবাল যদি মডারেটরকে এটা বলে দিতেন যে, তিনি তাঁর লেখায় তেলানো মন্তব্য, গালি, ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং ত্যানা প্যাঁচানি দেখতে চান না - তাহলেই যথেষ্ট ছিল। মডারেটর যদি তাঁর কথা না শুনতো তাহলে ঐখানে কিছুদিন লেখা দেয়া বন্ধ করে দিলেই তারা সুড় সুড় করে সোজা হয়ে যেতো। মানুষ তেল দেয়া আর গালি দেয়া বন্ধ করবে না। কিন্তু সেগুলোকে মডারেট করা যায়। অধ্যাপক ইকবাল সে চেষ্টাটা করে দেখেছেন কি?
৫. অধ্যাপক ইকবাল মন্তব্যের উত্তর দিলেন না কেনো – এমন কোন দাবি কিন্তু আমি করিনি। মন্তব্য পড়লেই তার জবাব দিতে হবে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। বরং মন্তব্য বা সমালোচনা থেকে গ্রহনযোগ্য কিছু থাকলে সেটা নিয়ে পরবর্তী লেখায় তার প্রতিফলন রাখাটাই মন্তব্যের ভালো জবাব হয়। কিন্তু তিনি যদি মন্তব্য বা সমালোচনা পড়াটাই বন্ধ করে দেন তাহলে কি আর ফিডব্যাক পাওয়া যাবে?
৬. দেখুন গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার উপায় যে আছে সেটার পথ কিন্তু আপনিই বাতলে দিলেন। অধ্যাপক ইকবাল যদি আপনার বাতলানো সেই পথে হাঁটতেন বা হাঁটাটাকে সমর্থন জানাতেন তাহলে আমাকে এই লেখাটা লিখতে হতো না। ফেসবুক বনাম ব্লগ বিতর্কের যে কথা আপনি বলেছেন সেটা এড়াতে অধ্যাপক ইকবালের মাপের মানুষরা নিজের ওয়েবসাইট রাখেন। তাতে পাঠক, ভক্ত, শত্রু সবার পক্ষে যার যার বক্তব্য তাঁর কাছে পাঠানোর উপায় থাকে। তিনি নিজেও সেসবের সাধারণ (কমন অর্থে) উত্তর, তাঁর সর্বশেষ লেখা-ছবি সেখানে দিতে পারেন। এতে উভয়মুখি যোগাযোগটা সহজতর হয়।
৭. কারো ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের সীমায় অযাচিত নাক না গলিয়েই আমরা যেটা বলতে পারি তা হচ্ছে, প্রকাশ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোর পার্থক্যের সীমারেখা কিন্তু অনেক ক্ষীণ হয়ে এসেছে। আগে একটা পত্রিকাতে অধ্যাপক ইকবালের একটা লেখা ছাপা হতো। আর এখন ঐ একই লেখা একই দিনে পাঁচটা ছাপানো পত্রিকায়, দশ-বিশটা ব্লগে, ত্রিশ-চল্লিশটা অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। আবার একই লেখা কয়েক হাজার জন সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। সুতরাং, অধ্যাপক ইকবাল চান বা না চান তাঁর লেখা কিন্তু এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেক প্ল্যাটফর্মে চলে যাচ্ছে। অনলাইন মিডিয়ার শক্তি তিনি না বোঝার কোন কারণ নেই। কিন্তু সেটার একাংশকে উপেক্ষা করলে তাঁর নিজের এবং তাঁর পাঠক উভয়ের ক্ষতি হয়। আর অনলাইন মিডিয়াতে প্রকাশিত হলে সে বই ছাপার আকারে প্রকাশিত হতে বাধা কোথায়? এখানে শিশু-কিশোরদের বই বা সায়েন্স ফিকশন লেখা বন্ধ হবার তো কোন কারণ দেখছি না।
৮. মন্তব্যের জবাব দেবার যে কায়দা নিয়ে আপনি বলেছেন সেটা নিয়ে আমার মন্তব্য করার কিছু নেই। কারণ, আমি অধ্যাপক ইকবালের কাছে ঠিক অমন কিছু দাবি করিনি। আমি দাবি করেছি মন্তব্য পাঠের। জবাব তিনি কীভাবে দেবেন সেটা তিনিই ঠিক করবেন। কিন্তু পাঠই যদি না করেন তাহলে জবাব দেবেন কী?
৯. আপনি বললেন আমি “যা লিখতে ইচ্ছা করে লিখতে চাই” এই কথাটিকে প্রকটভাবে ওভার জেনারালাইজড করেছি। পাল্টা বিশ্লেষণে আপনি যা বললেন সেখান থেকে আমরা আদৌ কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলাম কি?
১০. ব্যক্তি জাফর ইকবাল, শিক্ষক জাফর ইকবাল আর অ্যাকটিভিস্ট জাফর ইকবালকে নিয়ে শেষের যে তিনটি অনুচ্ছেদ লিখেছেন সেটা নিয়ে আমি এখানে কিছু বলবো না। কারণ, আমার লেখার আলোচ্য চরিত্র ‘লেখক জাফর ইকবাল’।
সময় করে আমার লেখা পড়ার, এবং সেটা নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য পড়ে লেখক হিসেবে আমার যে উপকার হলো সেই উপকার সব লেখকই লাভ করুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
উত্তর দেবার জন্য ধন্যবাদ, পাণ্ডবদা। আপনার ১০টা পয়েন্টের প্রতিটা পড়লাম। নিজের সাথে কিছু বিষয় ক্ল্যারিফাই করার পর আপনার ব্যাখ্যা যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে। জাফর ইকবাল স্যারের পাঠকের মন্তব্য পাঠের বিষয়টি হয়তো আসলেই ঠিক ছিল না।
তারপরও কিছু বিষয় নিয়ে বলতে চাই,
লেখার প্রথমেই এরূপ কিছুটা আগ্রাসী বক্তব্য দেখে কেউ ভেবে বসতে পারে আপনি হয়তো লেখক জাফর ইকবাল নয়, ব্যক্তি জাফর ইকবালেরই বিরুদ্ধে কথা বলছেন। ধনাত্মক দৃষ্টিকোন থেকেই যদি দেখি, আপনার বর্ণিত ছাপানোর ক্ষমতা ব্যক্তিরই থাকে, লেখকের নয়। লেখকের থাকতে পারে প্রভাবিত করার ক্ষমতা। শেষতক আপনি যদিও আপনার লেখার উদ্দেশ্য পূর্ণরূপেই ব্যক্ত করেছেন, কিন্তু প্রথমটুকুর তিক্ততা শেষতক তাও লঘু হয়না।
পূর্বেই একজন যা বলেছে তার পুনরাবৃত্তি করে বলছি, একটু কঠোরভাবেই হয়ে গেছে বিশ্লেষণটা। লেখক হিসেবে তিনি যা বলেন বা লিখেন সেটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পাঠক হিসেবে আমরা তার কিভাবে মূল্যায়ন করি সেটিও বেশ গুরুত্ব রাখে। একান্তই ব্যক্তিগত মতামত পাণ্ডবদা, ক্ষমা করবেন।
হিমুদা তো বলেছেনই-
জাফর ইকবাল স্যারকে আসলেই সবাই বড্ড ভালবাসি। পাণ্ডবদাকে ধন্যবাদ এ বিষয়ে লেখার জন্য।
- আর্চমাইনর
আপনার যুক্তির ফাঁকটা একটু ধরিয়ে দিতে চাই। দৈনিক পত্রিকা হিসাবে প্রথম আলোর কাটতি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তার সহযোগী প্রকাশনা কিশোর আলোর কাটতি সর্বাধিক নয়, দৈনিক পত্রিকার তুলনায় সেটা হিসাবের মধ্যেই পড়ে না। যদি সর্বাধিক পাঠকের কথা ভেবে জাফর ইকবালকে লিখতে হয়, তাহলে তো আপনার প্রস্তাবিত হিতৈষী-হিপোক্রিসি অনুসারে প্রথম আলো বর্জন করাও তাঁর উচিত হয়নি। আর জাফর ইকবালকে কেন কিশোরদের অবঞ্চিত রাখতে কিশোর আলোতেই লিখতে হবে? দেশে কি কিশোরদের হাতের নাগালে আর কোনো পত্রিকা নেই?
আর যদি কিশোরদের বঞ্চিত রাখতে না-ই হয়, তাহলে জাফর ইকবাল কি একই যুক্তিতে শিবিরের কিশোর সাময়িকী "কিশোর কণ্ঠ"-তেও লেখা ছাপতে দেবেন?
কিশোর আলো পত্রিকাটা চলছেই কিশোর মহলে জাফর ইকবালের খ্যাতি ভাঙিয়ে। প্রথম আলোর এজেন্ডা কিশোরদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই পত্রিকাটি জাফর ইকবালকে স্টেপিং স্টোন হিসেবে ব্যবহার করছে, জাফর ইকবালও সানন্দে ও সাগ্রহে নিজের ঘাড় পেতে দিচ্ছেন। বিনিময়ে তিনি কী পাচ্ছেন আমি জানি না, কিন্তু সেটা নিশ্চয়ই তাঁকে স্ববিরোধী বক্তব্য দিতে আগ্রহী করে তোলার জন্যে যথেষ্ট।
কিশোর আলো- জুলাই সংখ্যায় স্যারের ধারাবাহিক টুনটুনি ও ছোটাচ্চু'র শেষ পর্ব ছাপা হয়েছে। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে আগস্ট সংখ্যার জন্য অপেক্ষা করছি, দেখা যাক।
কিশোরদের বঞ্চিত করার হাত থেকে রক্ষার্থে কিশোর আলোতে লেখা'র কি দরকার বুঝিনা, বই ছাপানোর সময় অন্তত একটা সংস্করন পেপারব্যাকে ছাপালেই হয়।
সর্বাধিক কাটতির প্রথম আলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্যারের উচিত ছিল অসমাপ্ত "টুনটুনি ও ছোটাচ্চু" বই আকারে প্রকাশের সময় তাদের সিস্টার কন্সার্ণ সর্বাধিক প্রচারিত "প্রথমা" প্রকাশনীর শরণাপন্ন হওয়া। কিন্তু বইটি প্রকাশ করেছে পার্ল। এই অদ্ভুত কাজটার মানে আমি আজতক বুঝিনি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আলুপেপারকে সর্বাংশে বর্জনের জন্য যে মনের জোর লাগে, সেটা জাফর ইকবাল স্যারের নাই। ইউনূসের ক্ষেত্রে উনি যেমন বলেছেন, ওনার লেখায় "যুক্তিতর্ক খুঁজে লাভ নাই", তেমনি এই আলুপ্রীতির পেছনেও যুক্তিতর্ক খুঁজে লাভ হবে না। ভক্তের দল হিতৈষী-হিপোক্রিসির অজুহাত দিয়ে ঐসব কার্পেটচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
মতিউর বাচ্চুর সঙ্গে মনোমালিন্য মিটমাট হয়ে গেলে উনি যে ছোটো আলুর পাশাপাশি আবার বড় আলুতে লিখবেন না, তারই বা কী নিশ্চয়তা? বড়র পীরিতি যেমন বালির বাঁধ, বড়র বিবাদও তাই। কখন যে আমে-দুধে মিশে একাকার হয়ে যায়, ঠিক নাই।
কিশোরালুর এই সংখ্যায় স্যারের লেখা নেই,
আগামী সংখ্যায় নতুন ধারাবাহিক আসিতেছে- এই ঘোষণা আছে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দেশে নির্বাচনের সময় টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রি হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা বিক্রিহয়; সেই সাথে স্বার্থান্বেষী শিক্ষকরা অর্থ আর ক্ষমতার লোভে নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছেন বলে প্রায়ই শোনা যায়। একইভাবে সংবাদ ও সাংবাদিক দুটোই বিক্রি হচ্ছে; বিক্রি হচ্ছে আইন-আইনজীবি, সাহিত্য-সাহিত্যিক, রাজনীতি-রাজনীতিবিদ, বুদ্ধি-বুদ্ধিজীবি, ধর্ম-ধার্মিক; সম্ভবত কোনকিছুই আর বিক্রয়-আযোগ্য নাই। সামাজিক মর্যাদাহীন একজন অশিক্ষিত মূর্খ, অথবা তথাকথিত কোন মহান প্রগতিবাদী, কিংবা একজন নোবেল লরিয়েট- নিজ স্বার্থসিদ্ধিতে সবাই কাতারে কাতারে বিক্রি হচ্ছে। অর্থ-ক্ষমতার লিপ্সায় আজ স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠেও ধ্বনিত হচ্ছে রাজাকারের সুর। যে অল্পকিছু মানুষ প্রলোভনের এই প্রবল স্রোতেও সমস্ত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে মাথা উঁচু করে টিকে আছেন (কীসের দায়ে কে জানে), এখনো সুদিনের (দিবা)স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন-দেখিয়ে যাচ্ছেন; (অতি)মুক্তমনারা সামান্য অযুহাতে তাঁদেরও মুন্ডুপাত করতে ছাড়ছে না। যেন এই জাতিকে পথ দেখানোর লোকের অভাব আমাদের কোনকালেই ছিলনা, এদেশ যেন সৎ আর সাহসী নাগরিকে বহুকাল আগে থেকেই পরিপূর্ন।
--সুবীর
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখকসত্ত্বা, শিক্ষকসত্ত্বা আর অ্যাকটিভিস্টসত্ত্বাকে এক করে দেখছেন কেন? এই লেখাতে লেখক জাফর ইকবাল তাঁর পাঠকের মন্তব্য পাঠে অনাগ্রহ প্রকাশ করার সমালোচনা করা হয়েছে মাত্র, অন্য কোন কিছু নয়। অন্তত আপনি আরো যতগুলো উদাহরণ টেনেছেন তার একটার বিষয়েও নয়।
মানুষকে মানুষই থাকতে দেয়া ভালো। মানুষের ওপর অহেতুক দেবত্ব আরোপ করলে তাতে তার কষ্টই শুধু বাড়ে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভাল লেখা কিন্তু একমত হতে পারলাম না। অনলাইনে স্যারের প্রতিটা লেখার নিচের কমেন্ট পড়লেই বোঝা যায় সেইসব কমেন্ট পড়া কতটা অর্থহীন , অধিকাংশ কমেন্ট গালিগালাজ আর আজেবাজে কথায় ভর্তি। ফিডব্যাক পাবার জন্য যতগুলা উপায় আছে, অনলাইন পত্রিকার কমেন্ট তার মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট। কারো যদি সত্যিকার অর্থে ফিডব্যাক দেবার থাকে তাহলে সে মেইল/চিঠি ইত্যাদি উপায় বেছে নিতে পারে।
আর যে কারো কাজ সম্পর্কে সবাইকে কথা বলতে হবে সেটা কোন ভাবেই যুক্তিযুক্ত না। প্রত্যেকেরই নিজস্ব আগ্রহের জায়গা যেমন আছে তেমনি অনাগ্রহের জায়গাও আছে। আমি এই পর্যন্ত স্যারের যত লেখা পড়েছি তাতে কখনও কোন ব্যাক্তির সমালোচনামূলক লেখা পড়ি নি, উনি হয়ত এই ব্যাপারটাতে সছন্দ নন। ব্যাপারটা এমন মনে হচ্ছে যে আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলেন তাহলে কেন গাজাতে যে অবিচার হচ্ছে তা নিয়ে কেন বললেন না? দেশের সব ইস্যু নিয়ে উনাকে কথা বলতে হবে সেটা আশা করা আমার মনে হয় খুব একটা ঠিক হবে না।
ইসরাত
আপনি যে ইস্যুগুলো তুলেছেন তার প্রত্যেকটা নিয়ে উপরে অন্যদের সাথে আলোচনায় আমার উত্তর জানিয়েছি। একটু কষ্ট করে পড়ে দেখবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনি বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর চেয়েছিলাম যেন ব্লগেও লেখেন, তাহলে যাঁকে নিয়ে লিখছেন তাঁর চোখে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আমার মনে হয়েছে ব্লগ, ফেসবুক বা অনলাইন পত্রিকার পাতায় দ্বিমুখী যোগাযোগ মানসম্পন্নভাবে চালানোর জন্য যে পরিমাণ সময়ের প্রয়োজন সেটি বের করা এখনো স্যারের পক্ষে সম্ভব নয় বলে স্যার ও পথে হাঁটেননি। এই তো আর কয়েক বছর পর যখন অবসরে যাবেন তখন হয়তো এগুলো করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে। সমমনা শিক্ষকদের যে আড্ডার কথা প্রায়ই তিনি তাঁর লেখায় বলেন সেখানেও এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে আমি জানি -- সেখানেও বাস্তবতা বিবেচনায় আপাতত বিষয়গুলোতে স্যারকে সরাসরি অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিতই করা হয়েছে। ফেসবুকে বাঁশের কেল্লা পাতার গ্রাহক, সামু বা সোনার বাংলা ব্লগের কথা একটু ভেবে দেখুন।
আমার মনে আছে স্যারের একাধিক সাক্ষাৎকার পড়েছি যখন নতুন কোনো বই বের হয় তখন তিনি উৎকন্ঠিত থাকেন যাদের জন্য বইটা লিখেছেন তারা সেটা কিভাবে গ্রহণ করেছে সেই বিষয়টা নিয়ে। 'কি বই লিখেছেন পড়ে বমি এসে যাচ্ছে' বা 'আপনি আবার বইয়ে প্রেম ঢুকিয়েছেন' -- এ রকম নানা কিসিমের মজার ফিডব্যাক পাওয়া নিয়ে তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় লিখেছেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে যে শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি প্রধানত লিখেন তাদের সিংহভাগই কিন্তু অনলাইনচারী নয় -- বরং তাদের একটা বড় অংশ তাঁর সাথে চিঠিপত্র লিখেই যোগাযোগ করতে ভালোবাসে। এবং আমি এমন মানুষজনকে চিনি যারা ২টা চিঠি লেখে ৩টা উত্তর পেয়েছে। আবার এমন মানুষজনকেও চিনি যারা স্যারের কোনো কলাম নিয়ে বা বাংলাদেশসংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে তাঁর সাথে ইমেইলে তীব্র তর্ক-বিতর্ক করেছে।
একজন মানুষের সময় তো সীমিত -- তার উপর নির্ভর করে তাকে তার প্রায়োরিটিগুলো ঠিক করতে হয়। তারপরও স্যারের অনলাইন পত্রিকার লেখার লেজে করা মন্তব্যগুলো না পড়া পুরোপুরি সমর্থন করতে পারছি না -- কারণ, এতে কোনো একটা বিষয় নিয়ে (যার অবতারণা তিনি করেছেন) তার সাথে যোগাযোগ করার সহজ সুযোগ থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়। আর তিনিও তাঁর লেখা নিয়ে পাঠকের জরুরি ফিডব্যাক সহজে পেতে অনেক সময়ই বঞ্চিত হন।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
আপনি যে পয়েন্টগুলো বলেছেন সেগুলো নিয়ে উপরে অন্যদের সাথে আলোচনায় আমার উত্তর জানিয়েছি। একটু কষ্ট করে পড়ে দেখবেন।
লেখক হিসেবে আপনাদের কমেন্ট পড়ে নিজেকে ঋদ্ধ করার যে সুযোগ অনলাইন মিডিয়া আমাকে এনে দিয়েছে সেটাকে অবহেলা করার কোন সুযোগ কি আমার আছে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
(রাজিব আর আমি দু'জনেই স্যারের ছাত্র। কাজেই আমাদের অভিজ্ঞতা আর দৃষ্টিভঙ্গীতে ৫ বছর ছাত্র থাকার এবং তারপর স্যারের সাথে অব্যাহত যোগাযোগ থাকার প্রভাব থাকতে পারে।)
আমার ধারণা অনলাইনে স্যারের লেখার লেজে যেসব ভাল ভাল প্রশংসা বা সমালোচনা থাকে সেগুলো স্যারের ফলোআপ করতে না পারার কারণ ওনার সময়ের অভাব। উনি গড়পড়তা ১২ ঘন্টা অফিস করেন প্রতিদিন (সকাল আটটার ক্লাশ থেকে সন্ধ্যা ৭টা বা তারও বেশি)। সাধারণত সাস্টে সায়েন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নতুন কোন ডিপার্টমেন্ট খুললে ওনার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়। মনে হয় ভাঙাচোরা ডিপার্টমেন্টকে দাঁড় করানোর এসাইনমেন্ট তিনি উপভোগও করেন। এই মুহুর্তে তিনি তিনটা ডিপার্টমেন্টে কম বেশি পড়াচ্ছেন - ফিজিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স আর ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। তার পাশাপাশি তাকে প্রশাসনিক দায়িত্বও দেয়া হয় অনেক। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন কমিটিতে থাকেন। এর বাইরে তার শখের চাপও আছে - গবেষণা আর বই লেখা। আমার ধারণা অনলাইনে বসে কারো যত্ন করে লেখা সমালোচনা বা প্রশংসার চাইতে বই লেখা তাকে টানে বেশি। অফলাইনের ফিডব্যাক দেয়ার ব্যাপারটি যেহেতু উনি সক্রিয়ভাবে করেন কাজেই এখানে সময়টাই আর মাধ্যমের ব্যাপারে ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপারটিই মনে হয় মূল কারণ।
স্যারের যে অফিসিয়াল পেজ আছে সেটি চালায় ওনার ছাত্ররা। স্যার সেই পেজ দেখেন না। মোটামুটি বিশ্বাসের উপরই চলছে সেটা।
সমালোচনা বা প্রশ্নের ব্যাপারে স্যারকে কখনও অস্বস্তিতে ভুগতে দেখিনি। আমি নিজেই স্যারকে ছাত্র থাকাকালে অনেক উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেছি - যেমন "শুনেছি অমুক টেন্ডারে আপনি টাকা খেয়েছেন, সত্যি নাকি" বা "শুনেছি অমুক টিচারকে আপনি মন্ত্রীর ফোন পেয়ে নিয়েছেন - ঘটনা কি" - এই ধরনের। আমার ইন্টারএকশনের অভিজ্ঞতা বলে স্যার খুব ভাল শ্রোতা।
আমার কাছে মনে হচ্ছে স্যার যেটা ঠিক মত বুঝাতে পারেন নাই তা হল অনলাইনে ফলোআপ করার চেয়ে তার কাছে উপরে যা যা বললাম সেগুলো তাকে বেশি আকর্ষণ করে। যদি এটা আকর্ষণ করত তাহলে উনি ঠিকই শিখে নিয়ে শুরু করে দিতেন।
আরো একটা ব্যাপার। একবার সাস্টের এলামনাই ওয়েবসাইটের ফোরামে আমি আর আমার বন্ধু সুবীন ফার্স্ট কি সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে (২০০২ সালের দিকে) বড় ভাইদের সাথে স্যারের একটি সিদ্ধান্তের পক্ষে ফাইট দিয়েছিলাম। তখন তো আরো ছোট তাই রক্ত গরম। পুরো বাতচিত প্রিন্ট করে স্যারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রায় সতেরো পেইজ দেখে স্যার তো পুরা বেকুব! বলে - "তোমাদের আর কোন কাম কাজ নাই, আমার কোন ব্যাপারে আপত্তি থাকলে আমাকে জানালেই তো পারো। আমার কোন খবর নাই কিন্তু এদিকে তোমরা আমার পক্ষে বিপক্ষে ফাইট দিয়ে যাচ্ছ? আর যারা পাশ করেছে ওরা এসব আজাইরা কাজের সময় পায় ক্যামনে? একটা জিনিস সব সময় মনে রাখবে - অনলাইনে যদি কারো সাথে ঝগড়া কর তাহলে তার সাথে কিন্তু বাস্তব জীবনেও ঝগড়া হয়ে গেল। কাজেই বুঝে শুনে করবা।"।
আরেকবার, তখন মাত্র পাশ করেছি, আমি আর সুবীন ম্যাথ অলিম্পিয়াডের প্রোগ্রামে বগুড়া গেলাম। স্যারকে বললাম, উনি যেন ফিরতি যাত্রায় আমাদের দুইজনের মাঝখানটায় বসেন। ওনার সাথে কিছু বোঝাপড়া আছে। তো আমরা একটা লিস্ট বানিয়ে নিয়েছিলাম। মূলত যেসব শিক্ষকের ব্যাপারে আমাদের আপত্তি ছিল তাদের ব্যাপারে ওনার সাথে কথা বলা ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তো আমরা যখন বললাম, তখন উনি একটু হতাশ হয়ে বললেন, "আমরা যদি ছাত্র অবস্থায় এসব বলতাম তাহলেও তো উনি একই গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন। তাহলে কেন আমরা এত দেরি করেছি? আমাদের কি ওনাকে তখন যথেষ্ট ওপেন মাইন্ডেড বা ট্রান্সপারেন্ট মনে হয় নি?" আমরা তখন আবিষ্কার করলাম আসলেই আমরা আগেই বলতে পারতাম। কিছুটা অভিজ্ঞতার অভাব আর কিছুটা আলসেমির কারণে হয়তো বললে কি হয় এই চিন্তা করেছি। কারণ ছাত্র থাকা অবস্থাতেই স্যারের কাছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম যার জন্য কোন অসুবিধা হয় নি।
উদ্বিগ্ন হব না বিরক্ত - ঠিক বুঝতে পারছি না, কিন্তু গত কয়েক বছরে ব্যাপারটা বেশ প্রকটভাবে সামনে আসছে বলেই ভাবতে হচ্ছে, একই ব্যাপার এই পোস্টে আসাতেই বলা।
আমরা সব কিছুতেই যুক্তিবাদী হতে পারি, সাদা-কালো-ধূসর, সব রং-ই দেখতে পারি, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে একেবারেই অন্ধ হয়ে যাই, জানি না কেন। তখন আর যুক্তি-তর্কের বালাই থাকে না। ইউনুস সাহেবকে নিয়ে দেখেছি, হুমায়ুন আংকেলকে নিয়েও। হালের সাকিব - আশরাফুল, আর জাফর ইকবাল তো আছেনই। কারো ব্যাক্তিত্বের, আচরণের, বা লেখার কোন একটা কিছুর সমালোচনা করলেই হলো, তার সারা জীবনের যত কিছু আছে, সব তুলে নিয়ে আসা হবে, যেন সব কিছুরই সমালোচনা হচ্ছে। কেনরে ভাই, দেবতাদেরও সমালোচনা করা যায়, আর ইনারা তো মানুষ - না কি?
এই ব্যাপারটা নিয়ে কেউ আলোকপাত করবেন কি, ঠিক কেন আমরা এমন আচরণ করি? মানুষকে দেবতা বানিয়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যাই? এইটা কি বাঙালির মাঝেই এত প্রকট?
অফটপিক প্রসংগ তোলায় দুঃখিত, কিন্তু একই আচরণ এখানেও দেখছি, তাই বলা।
মফিজ
মফিজ
প্রসঙ্গটা যেহেতু কেউ কেউ আলোচনায় এনেই ফেলেছেন তাই আপনি তার সমালোচনা করতেই পারেন। একটি জনগোষ্ঠীর এহেন আচরণের কারণ কী - বিষয়টা নিয়ে আপনিই লেখার চেষ্টা করছেন না কেন? তাহলে আপনার পোস্টে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনলাইন মিডিয়ায় অনেক গরু-ছাগলও মাইক্রোফোন পেয়ে যায় এবং এদের মন্তব্যের পাঠ ও প্রতিক্রিয়া দিতে যাওয়া নিঃসন্দেহে সময়ের অপচয়। কিন্তু অনলাইন পত্রিকার মন্তব্যের ঘর পাঠকদের সাথে দ্বিমুখী যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নয়, তাই "লেজের মত করে পাঠকের মন্তব্য" ব্ল্যাকআউট করার কোন যুক্তি নেই।
আমি যখন কোন একটা মাধ্যমে লেখা প্রকাশ করি, আমি একই সাথে আমার পাঠকশ্রেণীকেও নির্বাচন করি। আমি যদি সামুতে লেখার সিদ্ধান্ত নেই তবে আমি এক বিশেষ শ্রেণীর পাঠকদের নির্বাচন করছি, আবার সচলে লিখলে আরেক শ্রেণীর পাঠক নির্বাচন করছি। সচলে লিখলে "তুই একটা বাল" টাইপের বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিক্রিয়া পাওয়ার সম্ভাবনা কম, একারণে আমি সচলে লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে আসলে এক প্রকার পাঠক অভিমতকে সচলের মডারেশনের ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে ফেলছি। আমি যদি একজন ভীষণ জনপ্রিয় লেখক হই এবং সচলের মডারেশনের সাথে যদি আমার কোন কারণে মতবিরোধ হয়, সেক্ষেত্রে সচলায়তন ত্যাগ করে আমি আমার নিজস্ব ব্লগ খুলতে পারি যেখানে আমার পাঠকরা আমার লেখা পড়বে আর আমার বিশ্বাসভাজন মডারেশন প্যানেল(যদি আমার নিজের মডারেশন করার সময় না থাকে, জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে যেটা সত্য) পাঠ্য অভিমতগুলো প্রকাশ করবে।
আমার পয়েন্ট হল - ছাগমন্তব্য এড়াতে চাইলে মিডিয়া পরিবর্তন করাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত, পাঠকদের ব্ল্যাকআউট করাটা নয়। এটা অনেকটা মাথা কেটে মাথাব্যথা বন্ধ করার মত। আমি যেহেতু বিখ্যাত লেখক না, তাই আমার লেখা সবাইকে পড়াইতে চাইলে আমাকে সচলায়তন, বিডিনিউজের মতামত কলাম কিংবা কোন জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক বেছে নিতে হবে। একারণে আমি এই মিডিয়াগুলার মডারেশনের কাছে অনেকটাই বন্দি। কিন্তু জাফর ইকবালের যে পর্বতসম জনপ্রিয়তা, তিনি একটা সাদা-কালো ব্লগস্পট ব্লগে লিখলেও লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়বে। বিদ্যমান মিডিয়াগুলোর মন্তব্যের ঘর যদি উনার রুচিসম্মত না হয়, তবে উনি খুব সহজেই নিজের একটা মিডিয়া আউটলেট খুলে বসতে পারেন। আশা করি তিনি ভবিষ্যতে সেটা করবেন। লেখালেখির কাজটা পাঠকের অভিমত ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না, নয়ত আমরা দেশ ও জাতির সকল সমস্যা নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে সমাধান করে নিজেরাই নিজেদের পিঠ চুলকে দিতাম।
আর পাঠকদের প্রশংসা পড়লে লেখার মধ্যে পাঠকদের খুশি করার প্রবণতা চলে আসবে - এটাও একটা কুযুক্তি। একজন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের কাজ হল মানুষকে নিজের যুক্তি দিয়ে কনভিন্স করা, মানুষ যা শুনতে চায় তা-ই শোনানো না। জাফর ইকবাল একজন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল - এটা আমি জানি, আপনি জানেন, তিনিও জানেন। একজন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের কাছ থেকে মানসিক দৃঢ়তা আশা করতেই পারি।
পরিশেষে - এই লেখার আলোচ্য বিষয় হল অনলাইনে প্রকাশিত লেখার শেষে "লেজের মত পাঠকের মন্তব্য" পড়া উচিত নাকি অনুচিত। এই বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা মানে এই না যে ছাগু পোন্দানো, চমৎকার সব শিশুসাহিত্যের জন্ম দেওয়া, বিজ্ঞান ও গণিতচর্চার প্রসারে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। যাঁর কাছে প্রত্যাশা থাকে, তাঁর সমালোচনাই আমরা করি। আমি অন্তত ফরহাদমজহার-আসিফনজ্রুল-আলমাহমুদ গংয়ের সমালোচনায় সময় নষ্ট করব না। তারা একটা প্রপাগান্ডা ওয়ারের যোদ্ধা, তারা কোন ইন্টার্যাকটিভ মিডিয়ায় লিখলে আমিও মন্তব্যের ঘরে যুদ্ধের নৃশংসতা বিস্ফারণ করব, প্রত্যাশার উর্ধ্বে এসব লোকজনের সাথে আলোচনা-সমালোচনায় একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রয়াস অর্থহীন। এখানে যারা সমালোচনা করছেন, আমার বিশ্বাস তারা সবাই বন্ধু ও শত্রুর মাঝে পার্থক্য করতে পারেন। কিন্তু যারা সমালোচনায় ক্ষেপে যাচ্ছেন, তাদের নর ও নরদেবতার মাঝে পার্থক্য করতে পারাটা জরুরী।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
দুর্দান্ত, পৃথ্বী! পরিপূর্ণ সহমত।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাণ্ডবদা অত্যন্ত যৌক্তিক সমালোচনা করেছেন। এখানে অনেকেই লেখাটার নামকরণের তাৎপর্যই বুঝতে পারেনি। না পেরে অযথা তর্ক জুড়েছে। সত্যি স্যার এই কথাটা ঠিক বলেন নি। তাঁকে কেউ প্রতিমন্তব্য করতে বলে নি। কিন্তু একবারে "লেজে জোড়া মন্তব্য" পড়বেনই না -এমন মনোভাব সাহিত্য শব্দটিরই পরিপন্থী।
সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে এসেছে ইউনুস ও কিশোর আলু প্রসঙ্গ। কেউ কেউ ইউনুস সম্পর্কেও স্যারের পক্ষে যুক্তি দেখাতে চান - সেটা অত্যন্ত হাস্যকর। কারণ তেমন চেষ্টা স্যার নিজেও করেন না। ইউনুস সম্পর্কে অনেক হাস্যকর অতিশয়োক্তি উনি করেছেন। তেমনি আলু বর্জন করে কিশোর আলোতে লেখাটাও খুবই স্ববিরোধী।
সব কিছুর পর জাফর ইকবাল স্যার মানুষই। তাঁকে মানুষ থাকতে দেয়াই শ্রেয়। তাঁর যৌক্তিক সমালোচনা করলেই তাঁর মহিমা ক্ষুণ্ণ হয় না। স্যারের উক্তিটার অত্যন্ত সুন্দর এবং স্যারের চেয়েও অনেক গ্রহণযোগ্যভাবে ব্যাখ্যা করেছেন জনাব শেহাব
ব্যাপারটা হয়তো এমনই, হয়তো নয়। যেটাই হোক উক্তিটা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়, সাহিত্যের মৌলিক অর্থের সঙ্গে সাঙ্ঘর্ষিক এবং অনলাইন পোর্টালে যে ভালো মন্তব্যগুলো হয় সেগুলোর প্রতি (হয়তো স্যারের অজানতেই) অবমাননাকর। এ নিয়ে সাফাই গাইবার কোন প্রয়োজন নেই।
পৃথ্বী শামসের অসামান্য প্রাঞ্জল বিশ্লেষণ আমি অবুঝদের জন্য চোথা হিসেবে ব্যবহার করেছি। পাণ্ডবদাকে ধন্যবাদ কী দেব! আর দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কি ভালো লেখকদের জন্য স্যার কিছু করতে পারেন না- বুদ্ধদেব বসু কিংবা সুধীন দত্তের মতো?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই নিবন্ধে জাফর ইকবালের প্রতি মূল যে অনুযোগ, অর্থাৎ অনলাইন প্রকাশনায় লেজের অংশের প্রতি তাঁর যে অনীহা কিংবা অবজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে হয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়, অর্থাৎ তাঁর অনিচ্ছার বিষয়টি তিনি এভাবে প্রকাশ করতে পারেন না, এতে পাঠক নির্বিশেষে এক ধরনের দুর্বিনয়ের মনোভাব প্রকাশ পায়। পাশাপাশি এটাও না বললেই নয় যে তাঁর যে লেখাগুলো এ যাবতকালে অনলাইনে পড়েছি, সেখানে লেজের অংশে বালখিল্য প্রশংসাবাক্য কিংবা অন্ধ আক্রোশ যুক্ত অশ্লীল বাক্য ছাড়া ভাল কিছু তেমন একটা দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। রবীন্দ্রনাথের সমালোচনায় অন্যান্য রথী মহারথীর সহ স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্রের যা লিখেছেন, সে সবও অনন্য সাহিত্য উপকরণ হিসেবে বিবেচিত, কিন্তু অনলাইন প্রকাশনার লেজে আমজনতার যে নির্বোধ ল্যাদানি, তা দেখে রবীন্দ্রনাথও তাঁর দ্বার কতদিন খোলা রাখতেন সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।
এই পোস্টের সাথে পূর্ণ সমর্থন।
নিজের লেখার পিছনের লেজে লেখা পাঠকদের মন্তব্য জাফর ইকবাল না পড়তেই পারেন, কিন্তু কেন তিনি সেটা করেন সেইটি বলতে গিয়ে যে যুক্তির কথা জানিয়েছেন সমস্যাটা সেখানে। ষষ্ঠ পাণ্ডব সুন্দরভাবে সেই যুক্তির অসারতা এবং জাফর ইকবালের মত অসাধারণ গুণী, কর্মী, লেখক, অনুসরণযোগ্য মানুষের কাছ থেকে সেই যুক্তিটির সপক্ষে বক্তব্য আসার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। আমার নিজের মনে হয়, যেদিন এই অসাধারণ মানুষটি তাঁর "লেখার পিছনের লেজে লেখা পাঠকদের মন্তব্য" পড়ার আগ্রহর কথা জানাবেন, (তাঁর নিজের সময়াভাবের কারণে বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য কর্মীদের দিয়েও কাজটা করিয়ে নিতে পারেন, স্বেচ্ছাসসেবীর ও অভাব না হতে পারে), সেদিন ঐ মন্তব্যের ঘরে ওনার পড়বার উপযুক্ত মন্তব্য আসার সম্ভাবনাও বাড়বে।
অঃ টঃ - পোস্টের পক্ষে-বিপক্ষে সমস্ত মন্তব্য থেকেই জাফর ইকবাল-এর জন্য যে ভালবাসা ঝরে পড়েছে তা অসাধারণ।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সঠিক মডারেশন থাকলে যে স্তুতি বা গালি ছাড়া গঠনমূলক আলোচনাও হয় তার একটা উদাহরন এই পোষ্ট ও তার "লেজের মত পাঠকের মন্তব্য" ।
চিঠি ও মেইল ( স্যারের ভাষ্যমতে যার অধিকাংশই হচ্ছে স্যারকে বিভিন্ন বিষয়ে লিখতে অনুরোধ করা) পড়া ও তার উত্তর দেবার জন্য যদি শত ব্যস্ততার মাঝেও স্যারের সময় থাকতে পারে তবে তার কিঞ্চিৎ "লেজের মত পাঠকের মন্তব্য" এর উত্তর দেবার জন্যেও থাকা উচিত। এখানে সময় স্বল্পতার চেয়ে পছন্দ নয় ব্যপারটাই প্রাধান্য পেয়েছে।
আমি ন্স্যারের লিখার একজন নিয়মিত পাঠক এবং ভক্ত, আমার কিন্তু ইচ্ছে করে আমার মতামত স্যারকে জানাতে, এখন স্যার কি পারেন আমারমত তার অজস্র পাঠক বা ভক্তকে ঢালাওভাবে "লেজের মত পাঠক" হিসেবে আখ্যা দিতে?
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
আধুনিক মানুষের এ সমালোচনা ও মন্তব্য আরাধ্য হঊয়ার কথা ...
অসাধারণ পান্ডব দা।
আমার ছোট্ট একটা সমাধানমূলক প্রস্তাবণা ছিলো। জাফর ইকবাল স্যার ইমেইল-চিঠি পড়েন, কিন্তু বিভিন্ন ওয়েব লিন্ক থেকে আলোচনা, সমালোচনার সমুদ্র ঘেঁটে মুক্তা বের করতে আগ্রহী না। আবার অন্যদিকে, উনার সময়ের অভাবের কথা চিন্তা করে এখানে অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন, ভালো মতামত বের করে স্যারকে দেয়ার জন্য ভলান্টিয়ার নিয়োগ করতে। আমার মতামত হচ্ছে, কারও যদি কোন লেখার লেজের অংশে মূল্যবান অনেক কমেন্ট চোখে পড়ে এবং সেটা স্যারকে পড়ানো অনেক জরুরী মনে হয় তাহলে, নিজে ভলান্টিয়ার হিসাবে ভূমিকা নিয়ে, সেগুলোর একটা কম্পাইলেশান করে স্যারকে পাঠিয়ে দিলেই পারেন।
--
মাগো তুমি রেখো জেনে, এই আমরাই দেব এনে,
আঁধারের বাধা ভেঙে রাঙা ভোর, রোদ্দুর মাখা দিন।
http://www.youtube.com/watch?v=8OB_uPY4i4M
সুমন ভাই,
আপনার, রাজিব ভাই কিংবা শেহাব ভাইয়ের সঙ্গে বোধকরি স্যারের সরাসরি যোগাযোগ আছে। কমেন্টগুলো সমেত এই ব্লগটাই কি কোনভাবে স্যারকে পড়ানো যায়?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কয়েকদিন আগে দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী, "সংবিধান-বিশেষজ্ঞ", কলামিস্ট এবং অকেশনাল টকজীবীর সাথে কথা হচ্ছিল। কোন প্রসঙ্গে সোশাল মিডিয়া / ব্লগ ইত্যাদি প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বললেন - এগুলিকে উনি একেবারেই 'ট্র্যাশ' মনে করেন। উনি ভেবে থৈ পান না কারা এগুলি পড়ে বা পাত্তা দেয়। উনিও নাকি জা-ই-র মত মিডিয়া এ্যাকসেস সম্পন্ন। ইন ফ্যাক্ট, তথাকথিত শীর্ষ দৈনিকটাতে উনি নাকি একদিনের নোটিশে উপসম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় লেখা ছাপাতে পারেন, দরকার হলে কিউ জাম্প করে। উনার মত আর কেউ নাকি পারে না। এতই নাকি উনার খাতির!
আমি বলছিলাম, এইসব কাগজের পত্র-পত্রিকার দিন প্রায় শেষ হয়ে আসতেসে। দুনিয়ার অনেক বড় বড় কাগজের পত্রিকা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ইন্টারনেট এ্যাকসেস বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে এই বাংলাদেশেই অধিকাংশ লোকজন নেটের দ্বারস্থ হবে নিউজ, ভিউজ ও এন্টারটেন্মেন্ট - সবকিছুর জন্যই। উনি বললেন - আরে ন্ন্যাহ্, শীর্ষ পত্রিকাগুলিতে (উনার মত) দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীরা লেখেন। যারা এখানে বা অন্যান্য ভাল জায়গায় চান্স পায় না, সেইসব অপদার্থরাই নেটে গিয়ে ল্যাদায়। পাব্লিক যখন পয়সা খরচ করবে, তখন ল্যাদা কিনবে না, উনাদের মত টাইটানদের লেখাই পড়বে। আর যারা মুফ্তে পায় বলে পড়ে, তারা নিজেরাও আসলে ঐ ক্যাটাগরিরই। ল্যাদার পিছনে সময় নষ্ট করে তারাই, যাদের নিজেদের সময়ের দামই ল্যাদার সমান। *
আমি ভাবতেসি, উনাকে বলবো নাকি সচলায়তনে একটা লেখা দিতে। কিম্বা একটা সাক্ষাৎকার!
====================================================
ডিস্ক্লেমারঃ উনার বক্তব্যটা আমি একটু প্যারাফ্রেজ করেছি। অধিকাংশ অসুশীল শব্দচয়নও আমার। উনি আসলে অনেক শোভন ভাবেই কথাগুলি বলেছিলেন - মূল বক্তব্য এক হলেও। তাছাড়া পরে একটা কথা আমার মনে হয়েছে - ব্লগ ইত্যাদি সম্পর্কে এরকম ঢালাও ধারণা পঞ্চাশোর্ধ বা ষাটোর্ধ প্রজন্মের প্রযুক্তি-অস্বচ্ছন্দ অনেকের মধ্যেই আসলে অনেকটা অজ্ঞতাবশত বিদ্যমান, সবটাই "আসিপ্নজ্রুল্টাইপ" টাউটামিজনিত কারনে নয়। জেনারেশনাল গ্যাপও হতে অনেকটা।
****************************************
একজন টাইটান।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন