বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে অল্প কথা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: সোম, ১৩/০৪/২০১৫ - ১:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলা ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি নিয়ে যেসব আলোচনা শুনতে বা পড়তে পাওয়া যায় সেখানে অবধারিতভাবে যে ইতিহাসটা বলা হয় তা হচ্ছে – ফসল তোলার সময়ের সাথে রাজস্ব আদায়ের সময় সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ১৫৮৪ খ্রীস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবরের নির্দেশে উদ্ভাবক ফতেহ্‌ উল্লাহ্‌ শিরাজী এই ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেন। কেউ কেউ এই ধারণার ক্রেডিটটা আকবরের অর্থমন্ত্রী রাজা টোডর মল আবার কেউ কেউ উজির আবুল ফজলকে দিতে চান। আইডিয়া যারই হোক, এ’কথা সত্য যে, আকবরের সময়ে অন্তত রাজস্ব আদায়ের জন্য একটি সৌরবর্ষীয় ক্যালেন্ডার চালু করা হয় যার শুরুটা চান্দ্রবর্ষীয় ক্যালেন্ডার হিজরীর সাথে সমন্বয় করা হয়েছিল। চান্দ্রবর্ষ আর সৌরবর্ষের পার্থক্যের দরুণ এই লেখার সময় পর্যন্ত আকবরের আমলে প্রচলিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাংলা সন হচ্ছে ১৪২১ আর হিজরী হচ্ছে ১৪৩৬। মুঘল আমলের ইতিহাস পাঠে জানা যায়, রাজস্ব আদায়ের জন্য যে ক্যালেন্ডারই অনুসরণ করা হয়ে থাকুক না কেন দাপ্তরিক কাজের জন্য সে সময় হিজরী ক্যালেন্ডারই অনুসরণ করা হয়েছে। মানে বাংলা সন দাপ্তরিক ব্যবহারের মর্যাদা পায়নি।

সূর্যের পরিক্রমণের সাথে বাংলা সনের এই ক্যালেন্ডারটি যথাযথভাবে সমন্বিত না থাকায় সেটি সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে। ১৯৬৬ খ্রীস্টাব্দে বাংলা একাডেমির তরফ থেকে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ এটি সংশোধন করেন। সংশোধনীতে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাস ৩১ দিনে, আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাস ৩০ দিনে এবং অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে হিসেব করার প্রস্তাব করা হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্যালেন্ডার গ্রহন করে। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য বাংলা একাডেমি’র ক্যালেন্ডার অনুসৃত হয় না। সেখানে একাধিক প্রকার ক্যালেন্ডার চালু আছে যেখানে মাসে দিনের সংখ্যা ২৯ দিন থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত হয়। একই মাস বিভিন্ন ক্যালেন্ডার বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে হিসেব করা হয়।

আকবরের নির্দেশিত বাংলা ক্যালেন্ডার বিষয়ে একটু ভাবলে কিছু অবধারিত প্রশ্নের উদয় হয়। প্রথমত, এই ক্যালেন্ডারের নাম বাংলা ক্যালেন্ডার কেন? কেন এর নাম মুঘল ক্যালেন্ডার বা আকবরী ক্যালেন্ডার বা হিন্দুস্তানী ক্যালেন্ডার নয়?

শুধুমাত্র আকবরের নির্দেশনাকে হিসেব করলে এই ক্যালেন্ডারের নাম বাংলা ক্যালেন্ডার হবার কোন কারণ নেই। কারণ, আকবরের আমলে এর নাম ছিল ‘ফসলী সন’। ধারণা করা যেতে পারে বাংলার লোকজন হিজরীর সাথে পার্থক্য করার জন্য একটাকে হিজরী আর আরেকটাকে বাংলা বলে উল্লেখ করতো। ঐতিহাসিকরা অবশ্য এতো সহজে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে রাজী নন্‌। তাদের এক দলের মতে, আকবরেরও আগে ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলার সুলতান আলা-উদ্‌-দীন হুসাইন শাহের আমলে এই ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হয়। আরেক দলের মতে, আলা-উদ্‌-দীন হুসাইন শাহেরও আগে গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রীস্টাব্দে এই ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন।

ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের ক্রেডিট শশাঙ্ক বা আল-উদ্‌-দীন হুসাইন শাহের ঘরে বা আরো পেছনে গেলে এই ক্যালেন্ডারের নাম বাংলা ক্যালেন্ডার হওয়ার যৌক্তিকতা স্পষ্ট হয়।

দ্বিতীয়ত, এই ক্যালেন্ডারের মাসের নামগুলো ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দেয়া নক্ষত্রদের সংস্কৃত নাম থেকে উদ্ভূত কেন? কেন মাসগুলোর নাম হিজরী ক্যালেন্ডারের অনুরূপ অথবা আরবী/ফার্সী ভাষার নয়? স্মর্তব্য, ঐ সময় দাপ্তরিক ভাষা ছিল ফার্সী।

মুঘল ইতিহাস থেকে জানা যায়, মাসগুলোর নাম শুরুতে ফার্সীতেই ছিল। যথাক্রমে ফারওয়ার্দিন, আর্দি, খুর্দাদ, তীর, মুর্দাদ, শাহ্‌রিয়ার, বিহিসু, আবান, আযার, দেয়ি, বাহ্‌মান ও ইসকান্দার মিয। কিন্তু এই নামগুলো বেশি দিন ব্যবহৃত হয়নি। বরং ৭৮ খ্রীস্টাব্দ থেকে ভারতবর্ষে স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত শক ক্যালেন্ডারের মাসের নাম বৈশাখ (বৈশাখ), জৈষ্ঠ (জৈষ্ঠ), আষাঢ় (আষাঢ়), শ্রাবণ (শ্রাবণ), ভাদ্রপদ (ভাদ্র), আশ্বিন (আশ্বিন), কার্তিক (কার্তিক), মার্গশীষ (অগ্রহায়ণ), পৌষ (পৌষ), মাঘ (মাঘ), ফাল্গুন (ফাল্গুন) ও চৈত্র (চৈত্র) থেকে মাসের নাম গ্রহন করা হয়। কারণ, এই নামগুলো পরিচিত এবং স্থানীয়ভাবে সার্বজনীনভাবে আগে থেকেই ব্যবহৃত।

তৃতীয়ত, এই ক্যালেন্ডারের দিনের নামগুলো সৌরমণ্ডলীর সদস্যদের সংস্কৃত নাম থেকে উদ্ভূত কেন? কেন দিনগুলোর নাম হিজরী ক্যালেন্ডারের অনুরূপ অথবা আরবী/ফার্সী ভাষার নয়?

আকবরের সময়ে মাসের প্রতিটি দিনের আলাদা আলাদা ফার্সী নাম দেয়া হয়েছিল। কিন্তু, একত্রিশটা দিনের একত্রিশটা আলাদা আলাদা নাম মনে রাখা ও দিনের হিসেব রাখা একটা অসম্ভব ব্যাপার, তাও আবার বিদেশী ভাষায়। তাছাড়া, ৭ দিনের সপ্তাহভিত্তিক দিন গণনা ও সেগুলোর নাম আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। তাই সম্রাট শাহ্‌জাহানের আমলে ৭ দিনের সপ্তাহভিত্তিক দিন গণনা ও সপ্তাহের পূর্বপ্রচলিত নামগুলো পুনঃপ্রচলিত হয়।

চতুর্থত, এই ক্যালেন্ডারের আগে বাংলা বা ভারতের মানুষ কোন্‌ ক্যালেন্ডার অনুসরণ করতো?

দেখাই যাচ্ছে খোদ আকবরের সময়ে দাপ্তরিক কাজে হিজরী সন আর স্থানীয়ভাবে ৭৮ খ্রীস্টাব্দ থেকে শকাব্দ চালু ছিল। তাছাড়া শশাঙ্কের অবদানকে ধর্তব্য মনে করলে বঙ্গাব্দের ব্যবহার ষষ্ঠ শতক থেকে। সঠিক নিয়মে দিন-মাস-বছর গণনা করার সৌরবর্ষ পদ্ধতির উৎপত্তি যদি ‘সৌরসিদ্ধান্ত’ থেকে ধরি তাহলে সৌরবর্ষভিত্তিক স্থানীয় ক্যালেন্ডারের শুরু চতুর্থ শতকে অর্থাৎ শশাঙ্কের প্রায় ২০০ বছর আগে, হুসাইন শাহের প্রায় ৮০০ বছর আগে ও আকবরের প্রায় ৯০০ বছর আগে থেকে মোটামুটি এমন ক্যালেন্ডার এই দেশে প্রচলিত আছে। কিন্তু সৌর সিদ্ধান্তও শেষ কথা নয়। কারণ, সৌরসিদ্ধান্ত ভূঁইফোঁড় কিছু নয়, এর উৎপত্তি বৈদিক ক্যালেন্ডার থেকে। বেদ যখন অগ্রন্থিত তখনো যজ্ঞ, হোম ও অন্যান্য আচারের জন্য তিথী, লগ্ন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এইসব তিথী, লগ্ন হিসেব করার জন্য চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রাদির অবস্থান ও গতিপথভিত্তিক নানা প্রকার ক্যালেন্ডারের ব্যবহার তখনই ছিল। অর্থাৎ ব্রোঞ্জ যুগের অন্তিম পর্ব থেকে লৌহ যুগে বৈদিক ক্যালেন্ডারসমূহ প্রচলিত ছিল।

দেউলপোতাসহ রাঢ় অঞ্চলে প্রাপ্ত পুরাতন প্রস্তর যুগের হাতিয়ারকে হিসেবে না নিলেও উয়ারী-বটেশ্বরের ধ্বংসাবশেষকে বাংলার সবচে’ প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ধরলে বাংলায় সভ্যতার বয়স কম করে হলেও ২৫০০ বছরের পুরনো। এরও কমপক্ষে হাজারখানেক বছর আগে বেদ গ্রন্থিত হয়ে গেছে। তার মানে, বৈদিক ক্যালেন্ডারসমূহ ততোদিনে সংহতরূপ পেয়ে গেছে। এই সময়ে বাংলাতে বৈদিক ক্যালেন্ডারের একটি স্থানীয় অভিযোজিতরূপ ব্যবহার একটি অবধারিত ব্যাপার হবার কথা। কিন্তু ব্যাপারটা সম্ভবত এখানেই শেষ নয়। সেটা পরে আবার বিচার করে দেখা যাবে।

বাংলা ক্যালেন্ডারকে পুরোপুরি solar calendar (সৌর) বলা যায় না। একে কিছুটা lunisolar calendar (চান্দ্রসৌর) এবং কিছুটা sidereal solar calendar (নাক্ষত্রিকসৌর) বলা যুক্তিযুক্ত। বৈদিক ক্যালেন্ডার হতে উদ্ভূত অন্যান্য ক্যালেন্ডারও এমন চন্দ্র-সৌর-নাক্ষত্রিক (যেমন, শক, হিন্দু, তামিল, মালইয়ালাম, বিক্রম ইত্যাদি ক্যালেন্ডার)। তাই আকবরের আমলে হিজরীর ন্যায় চান্দ্রবর্ষের সাথে ফসলী সনের মতো সৌরবর্ষকে মিলানোর চেষ্টা ঠিক বৈজ্ঞানিক নয়। এই কারণে ফসলী সন প্রচলনের গোড়া থেকে সঠিক সময় হিসেবে গড়বড় ছিল, যা আজো চলে আসছে।

মোটামুটি ধারণা করা যাচ্ছে, অন্য যে কোন ক্যালেন্ডার আগে থেকে চালু থাকুক না কেন শশাঙ্ক অথবা আলা-উদ্‌-দীন হুসাইন শাহের আমল থেকে বাংলায় একটা নতুন ক্যালেন্ডার চালু করা হয়েছিল। পূর্ব থেকে প্রচলিত স্থানীয় ক্যালেন্ডারকে গ্রহন না করে হিজরী সন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের চেষ্টাটা মুসলিম শাসকদের। সেটা মামলুকদের কাজ হতে পারে অথবা তার পরের কারো কাজ হতে পারে। শুধুমাত্র বাংলার প্রেক্ষিত বিবেচনা করলে এটা সম্ভবত মুঘলদের কাজ। হিজরী সন অনুসারে রাজস্ব আদায়ে যে জটিলতা চলে আসছিল আকবরের সময়ে পুরনো ক্যালেন্ডারকে ভিত্তি করে সেটা নিরসন করার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।

এবার একটু ভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া যাক। বাংলা নববর্ষ একটা বিশুদ্ধ স্থানীয় ও লোক উৎসব। এটা কোনভাবেই মুঘল-পাঠানদের উৎসব নয়। আমদানী করা বা জোর করে চাপিয়ে দেয়া উৎসবও নয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন নামে এই লোক উৎসবটা পালন করে থাকে। যেমনঃ

বাঙালী = নববর্ষ
চাকমা, মুরং = বিজু/বিঝু
ত্রিপুরা = বৈসু/বৈসুক
মারমা, রাখাইন = সাংগ্রাই/সাংগ্রাইং
অসম = বিহু
মণিপুর = চেইরাওবা
ওড়িয়া = মহা বিষ্ণু
তামিল = পুথান্দু
কেরল = বিসু
পাঞ্জাব = বৈশাখী
হিমাচল = বাসোয়া
মৈথিলী = জুড়ি শীতল
নেপাল = নয়া বর্ষ
বার্মা = থিঙইয়ান
শ্রীলঙ্কা = আলুথ আওরুদ্ধা
থাইল্যান্ড = সংকার্ন (সংক্রান্তি!)
কম্বোডিয়া = Chaul Chnam Thmey (বাংলায় উচ্চারণ লিখতে পারলাম না)
লাও = পী মাই/সোংকার্ণ (সংক্রান্তি!)

দেখা যাচ্ছে এপ্রিলের ১৪ তারিখ বা তার দুয়েকদিন আগেপিছে বছরের প্রথম দিন পালনকারী জাতির সংখ্যা বহু। এবং তাদের বড় অংশের সাথে শশাঙ্ক, আলা-উদ্‌-দীন হুসাইন শাহ্‌ বা জালাল-উদ্‌-দীন আকবরের শাসনের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই। বরং মূল ভিত্তি অপরিবর্তিত রেখে এই ক্যালেন্ডার নানা আকারে, নানা রূপে গোটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল এলাকা জুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে কমপক্ষে ২৫০০ বছর ধরে। যেমন, ২০১৫ খ্রীস্টাব্দের ১৪ই এপ্রিল হচ্ছে ২০৭২তম নেপালী বর্ষের প্রথম দিন (১লা বৈশাখ)।

পহেলা বৈশাখে নববর্ষ পালনের সবচে’ পুরনো ইতিহাসটা পাওয়া যায় কৌলিয় সম্রাট অঞ্জন কর্তৃক খ্রীস্টপূর্ব ৬৯১ সালে। মানে, গৌতম বুদ্ধেরও দেড়শ’ বছর আগে বা আজ থেকে ২৭০৬ বছর আগে। এখান থেকে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের সবচে’ পুরনো দাবীটা সম্রাট অঞ্জনের হয়। এতে অবাক হবার কিছু নেই। ইতিহাস একটু ঘাঁটলে বোঝা যায় এদেশের সব কিছু ‘হয় মুঘলদের নয়তো ব্রিটিশদের অবদান’ জাতীয় ভাবনার কোন ভিত্তি নেই।

বাংলা নববর্ষকে ভিত্তি করে কিছু যজ্ঞ-পূজার ব্যাপার পরে প্রচলিত হয়ে থাকলেও শুরু থেকে এই উৎসবটা একেবারেই লৌকিক। বাংলায় এমন বড় মাপের সার্বজনীন সেকুলার উৎসব আর নেই। প্রত্যুষে স্নান, নতুন পোশাক পরা, হলকর্ষণ, প্রাতঃরাশে দই-চিঁড়ে বা দুধ-খই-মুড়কি, দুপুরে মাছ-নিরামিষ খাওয়া, মেলা, জলকেলী, গান এই উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ ছিল। জলকেলী ব্যাপারটা এখন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে লাও-কম্বোডিয়া পর্যন্ত প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশের অন্যত্র ও ভারতের জাতিগুলোর মধ্যে আর অমন করে প্রচলিত নেই। পাকিস্তান আমল থেকে ঢাকার রমনা বটমূলে গানের অনুষ্ঠান আর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর চারুকলা ইনস্টিটিউটের মঙ্গল শোভাযাত্রা এই উৎসবে যুক্ত হয়েছে। এখন সারা দেশ জুড়েই গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। পান্তা-ইলিশ খাবার একটা নাগরিক ইভেন্ট প্রচারণার গুণে নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। ফ্যাশন হাউজরা নববর্ষ উপলক্ষে নতুন পোশাক আনে, পত্রিকারা নববর্ষ সংখ্যা বের করে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে।

চাকুরীজীবীরা এই উপলক্ষে কোন বোনাস না পেলেও একটু একটু করে পয়লা বৈশাখের বোনাসের দাবী উঠছে। তবে বোনাস মিলুক আর নাই মিলুক বাংলাদেশের লোকজন শ্রেণী নির্বিশেষে নিজের সাধ্য অনুযায়ী এই উৎসবটা পালন করা শুরু করেছে। এটা একটা ভালো ব্যাপার। এই উৎসব, এই ক্যালেন্ডার আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রতীক। সার্বজনীনভাবে এর পালন দেশে শুভ’র চর্চ্চা বাড়াবে, অশুভকে নাশ করবে।

তাপস নিশ্বাস বায়ে
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক, যাক

শুভ নববর্ষ!

(তথ্য যাচাইয়ে সহযোগিতা করার জন্য অগ্রজ সচল রণদীপম বসুর প্রতি কৃতজ্ঞতা)


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লেখাটা শেষ করার পর আবিষ্কার করলাম এর মোট শব্দসংখ্যা ঠিক ১৪২২!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

"রাশাদ খলিফা" কে ফোন দ্যান! খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তাইলে তো একটা টাইম মেশিন কেনা লাগবে। আমার কাছে তো অতো টাকা নাই। আপনার টাইম মেশিনটা এক দিন ব্যবহারের জন্য দেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ক্যান? চ্যালা-চামুন্ডা-মুরীদান কেউ নাই? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

স্যাম এর ছবি

হাসি শুভ নববর্ষ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শুভ নববর্ষ!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ঠিক সময়ে আসলে এই লেখা তো আসমানি কিতাবের অংশ হয়ে যাইত দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ক্যাম্নে কী!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আসমানি কিতাবে এরকম নানা অলৌকিক গাণিতিক মিলের কথা বলে লোকে কিতাবকে আসলেই আসমানি কিতাব বলে প্রমাণের চেষ্টা করে - সেই দৃষ্টিকোণ থেকে

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উগ্রতা পরিহার করো!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চমৎকার লেখা, অনেক কিছুই জানতাম না। শুভ নববর্ষ, পাণ্ডব দা হাসি

এখন সারা দেশ জুড়েই গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। পান্তা-ইলিশ খাবার একটা নাগরিক ইভেন্ট প্রচারণার গুণে নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। ফ্যাশন হাউজরা নববর্ষ উপলক্ষে নতুন পোশাক আনে, পত্রিকারা নববর্ষ সংখ্যা বের করে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। চাকুরীজীবীরা এই উপলক্ষে কোন বোনাস না পেলেও একটু একটু করে পয়লা বৈশাখের বোনাসের দাবী উঠছে। তবে বোনাস মিলুক আর নাই মিলুক বাংলাদেশের লোকজন শ্রেণী নির্বিশেষে নিজের সাধ্য অনুযায়ী এই উৎসবটা পালন করা শুরু করেছে। এটা একটা ভালো ব্যাপার।

নিঃসন্দেহে, এটা ভাল ব্যাপার। তবে পান্তা-ইলিশ নামের এই আরোপিত অনুষঙ্গটির সাথে আমি একমত নই। পান্তা এককালে গ্রামবাংলার মানুষ ঠেকায় পরে খেতেন সংরক্ষণযোগ্যতার অভাবে। এখন প্রায় সবাই (এমনকি পূর্বের মঙ্গা পীড়িত অঞ্চলের মানুষেরাও) গরম ভাতই খায়, সেই সুযোগ বেড়েছে অনেক। আর ইলিশের ব্যাপারটা সামাজিক না হয়ে অর্থনৈতিক বলেই সন্দেহ হয়। এই সময় পুলিশ লাগিয়েও অফ সীজনের ইলিশ ধরা বন্ধ করা যায়না। এই হাড়-হাভাতে পনা বন্ধ করলে সম্ভবত ফুল সীজনে ইলিশের যোগান বাড়ত অনেক।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সংস্কৃতি একটা বহতা নদীর মতো। যা কিছু আরোপিত, তা সময়ের সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাবে। এটা ইলিশ মাছের মৌসুম নয়। সুতরাং ব্যবসায়িক বুদ্ধি খাটিয়ে পান্তা-ইলিশ চালু করা হয়েছে এতে সন্দেহ নেই। উপকূলীয় এলাকায় স্রোতযুক্ত গভীর পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশের চাষ সম্ভব বলে আমাদের মৎস্যবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ীর মতো ইলিশের চাষ শুরু হলে নববর্ষে সস্তায় তো বটেই সারা বছরই সস্তায় ইলিশ খাওয়া যাবে বলে আশা করতে পারি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ্যাঁ, বদ্ধপানিতে ইলিশ চাষ সংক্রান্ত খবরটা দেখেছি।
কেবল, সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরার খবরটাই অনুপস্থিত। মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চাঁদপুরে পুকুরে ইলিশ চাষের যে গবেষণাটা চলছিল সেটা তিন বছর চলার পর রেজাল্ট পাওয়া গেলো পুকুরে ইলিশ মাছ বাঁচিয়ে রাখা যায়, কিন্তু স্বাভাবিক প্রজনন ঘটানো সম্ভব না। ফলে এক বছরের মাথায় মাছ মারা যাবে। কিন্তু উপকূলীয় এলাকায় স্রোতযুক্ত গভীর পুকুরের লবনাক্ত পানিতে স্বাভাবিক প্রজনন ঘটানো সম্ভব। আমি জানি না কৃত্রিম প্রজননের চেষ্টা করা হয়েছিল কিনা। সেটাও চেষ্টা করে দেখা দরকার।

তবে যদি কোন দিন হাইব্রীড ইলিশ মাছ বাজারে আসে, আমি ঐ দিন থেকে ইলিশ মাছ খাওয়া ছেড়ে দেবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

সংস্কৃতি একটা বহতা নদীর মতো।

বহতা নদী ঠিক। এই বহতা নদীকে নিজের নিয়ন্ত্রনে আনা যায়। এটা আনা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

না, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সব সময়েই ছিল। সাময়িকভাবে সীমিত জনগোষ্ঠী বা সীমিত জনপদে হয়তো কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যায়, তবে সেটার বজ্রআঁটুনি অচিরে ফস্কাগেরোতে পরিণত হয়। তবে সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করা যায়। এই প্রভাবিত করার ব্যাপারটা লম্বা সময় ধরে একটু একটু করে হয়। যেভাবে নদীর গতিপথও পালটে যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

বিডিনিউজে একটা লেখা এসেছে। বাঙ্গালির আর্কাইভে যেহেতু ভরসা নাই সেহেতু এখানে টুকে রাখলাম।

বর্ষপঞ্জির ইতিহাস: তকিউল্লাহর ভাষ্যে
শান্তা মারিয়া, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2015-04-13 23:33:06.0 BdST Updated: 2015-04-13 23:37:27.0 BdST

আবহমান কাল থেকেই বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণসহ বারো মাস বাঙালির একান্ত নিজস্ব ছিল। বাংলাসহ ভারতীয় ভূখণ্ডে শকাব্দ, লক্ষণাব্দ ইত্যাদি যে বর্ষপঞ্জি প্রচলিত ছিল তাতে এই মাসগুলোই ছিল।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সনগুলো ছিল চান্দ্র-সৌর মিশ্র সন। এর মানে হল, মাস গণনা করা হত চান্দ্র পদ্ধতিতে আর বছর গণনা করা হত সৌর পদ্ধতিতে। ব্যাকরণ অনুযায়ী, অগ্রহায়ণ মানে অগ্র+হায়ণ(বৎসর)। অর্থাৎ বছরের প্রথম।

অগ্রহায়ণ মাসে সে সময় নতুন ফসলও উঠত। এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে প্রাচীন বাংলায় হয়ত বছরের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ।

চান্দ্র মাস আর সৌর বৎসরের মধ্যে সমন্বয় করার জন্য তিন বছর পর পর একটি অতিরিক্ত চান্দ্র মাস গণনার রীতি ছিল। এই অতিরিক্ত মাসটিকে বলা হত মল মাস। মল মাসে পূজাপার্বণ নিষিদ্ধ ছিল।

এদিকে ১২০১ সালে বখতিয়ার খিলজির বাংলাজয়ের পর বিভিন্ন অঞ্চলে হিজরি সনেরও প্রচলন শুরু হয়। বিশেষ করে দরবারের কাজকর্মে।

১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সুবা বাংলা নামে মোগল সাম্রাজ্যের অনর্গত হয়। সে সময় পুরো সুবাতে খাজনা আদায়ের জন্য একটা সমন্বিত বর্ষপঞ্জির প্রয়োজনীতা অনুভূত হতে থাকে।

সম্রাট আকবরের নির্দেশে আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজি মলমাস বাদ দিয়ে সৌর বর্ষের বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করেন। মূলত হিজরি সনকে ফসলী সনে রূপান্তরিত করা হয়। তবে মাসের নামের ক্ষেত্রে বাংলা নামগুলোই রাখা হয়। সে সময় থেকে বৈশাখকে প্রথম মাস হিসেবে গণনা করা হয়। বাংলা সনের জন্ম ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে একথা মোটামুটিভাবে অধিকাংশ পঞ্জিকা বিশারদ মেনে নিয়েছেন।

ইংরেজ আমলে শহরে সরকারি কাজকর্ম চলতো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। কিন্তু বাংলার গ্রামে গঞ্জে জমিদারের খাজনা, পুণ্যাহ, হালখাতা ইত্যাদি চলতো বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী।

বাংলা মাস কখনো ৩০, ৩১ এমনকি ৩২ দিনেও হতো। কালের বিবর্তনে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে বেশ কিছু জটিলতা ও সমস্যা দেখা দিতে থাকে। পঞ্জিকা প্রণেতা ও জ্যোর্তিবিদদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে বাংলা বর্ষপঞ্জি। কবে কোন মাস শুরু হবে, কবে কোন বছর শুরু হবে তা আগে থেকে বলার উপায় হয়ে পড়ে অত্যন্ত জটিল। বাংলা ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করাও প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

এই অবস্থায় ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে সুদক্ষ ও খ্যাতনামা পণ্ডিত ও জ্যোতির্বিদদের সমন্বয়ে একটি বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার উপসংঘ গঠন করে। এই উপসংঘের সদস্য ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম, পণ্ডিত তারাপদ ভট্টাচার্য কাব্য-ব্যাকরণ-পুরাণ স্মৃতিতীর্থ ভাগবত শাস্ত্রী, সাহিত্যোপাধ্যায় স্মৃতি-পুরাণ রতœ জ্যোতিঃ শাস্ত্রী; পণ্ডিত অবিনাশ চন্দ্র কাব্য জ্যোতিস্তীর্থ, পণ্ডিত সতীশচন্দ্র শিরোমণি জ্যোর্তিভূষণ এবং বাংলা একাডেমির তৎকালীন পরিচালক সৈয়দ আলী আহসান।

১৯৬৬ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি কমিটি চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে। অধ্যক্ষ এম এ হামিদ এই সভায় নিয়মিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। স্বাধীন দেশে নতুনভাবে বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়বাহী বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রয়োজন অনুভূত হয়। সেময় ১৯৭২ সাল থেকে বাংলা প্রচলিত বর্ষপঞ্জি সংস্কারের জন্য গবেষণা শুরু করেন। কারণ শহীদুল্লাহ কমিটি প্রণীত বর্ষপঞ্জিতে কিছু কিছু দুর্বলতা ছিল। আর চিরাচরিত বাংলা পঞ্জিকার সবচেয়ে বড় ত্রুটি ছিল যে এর লিপ ইয়ার গণনার পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট ছিল না এবং বর্ষ গণনায় বর্ষমানের পরিমাপের সঙ্গে লিপ ইয়ার গণনা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। চারশ বছর পরে পহেলা বৈশাখ তিনদিন সরে যাওয়ার আশংকাও ছিল।

১৯৮৮-৮৯ সালে ১৩৯৫ বঙ্গাব্দে বাংলাদেশে একটি সমন্বিত বিজ্ঞান সম্মত বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের কথা মুহম্মদ তকিউল্লাহ ও অন্যান্য লেখকরা বিভিন্ন পত্রিকায় লিখতে থাকেন। ফলে বিষয়টি বিবেচনার জন্য বাংলা একাডেমি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। তার এবং অন্যান্যদের দেওয়া প্রস্তাব বিবেচনা করে। পরে তার প্রস্তাব গ্রহণ করে শহীদুল্লাহ কমিটির লিপ ইয়ার সংক্রান্ত প্রস্তাবের সংস্কার করা হয়।

বাংলাদেশ সরকার বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে ১৯৯৬ সালে বঙ্গাব্দ ১৪০২-১৪০৩ বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে। এর নাম দেওয়া হয় শহীদুল্লাহ পঞ্জিকা। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন যে সরকারি বাংলা বর্ষপঞ্জি চালু রয়েছে তা খুবই সহজ। এতে খ্রিস্টীয় সন ও বঙ্গাব্দের মাসগুলোর তারিখ সব সময়ের জন্য স্থির রয়েছে। ফলে প্রতিবছরই ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হবে। একইভাবে অন্যান্য মাসের তারিখও স্থির থাথবে। এই ক্যালেন্ডার ভবিষ্যতেও কোনোদিন পরিবর্তন হবে না।

মুহম্মদ তকিউল্লাহ ১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৩৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্যালেন্ডার তৈরি করেছেন এবং তা বাংলা একাডেমির বিশেষজ্ঞ কমিটিতে পেশ করে দেখিয়েছেন যে এর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। নতুন নিয়মে যে বাংলা পঞ্জিকা চলছে তা ঋতুনিষ্ঠ সায়ন ( ট্রপিকাল) পঞ্জিকা।

পরিচয়: মুহম্মদ তকিউল্লাহর জন্ম ১৯২৬ সালে। তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের আলোকচিত্রগুলো তারই তোলা। তিনি ভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গুড জব। গত কয়েকদিনে পড়া এই সংক্রান্ত লেখাগুলোর মধ্যে এটা ভালো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

nipu এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
একটু খটকা আছে
"১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সুবা বাংলা নামে... ...একটা সমন্বিত বর্ষপঞ্জির প্রয়োজনীতা অনুভূত হতে থাকে।" হলে নতুন বাংলা পঞ্জিকার শুর ১৫৭৬ এর পরে হবার কথা। অথচ "বাংলা সনের জন্ম ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে একথা মোটামুটিভাবে অধিকাংশ পঞ্জিকা বিশারদ মেনে নিয়েছেন।"

ঠিক কত সাল অব্দি অগ্রায়নকে বছর প্রথম হিসেবে পালন করা হত? মানে বখতিয়ার খিলজির পর থেকে অফিসিয়াল হিজরী ক্যালেন্ডারে পাশাপাশি, বাংল ক্যালেন্ডারও তো মানুষ পালন করত। তো সেখানে ঠিক কত সাল হলে বছর প্রথম অগ্রায়ন থেকে বৈশাখে বদল করা হয়েছিল?

আমাদের প্রাচিন ক্যালেন্ডার সম্মন্ধে আরেকটু বিস্তারিত জানার রিসোর্স দিতে পারেন? বই/পত্র/অন্যান্য।
আবারো ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নিপু, নিচে অগেহায়ণ সংক্রান্ত আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। প্রাচীন ক্যালেন্ডার নিয়ে দুই/একটা বইয়ের নাম দিতে আমি অপারগ। কারণ, অন্য সব বিষয়ে ইতিহাসের বই থেকে ঘেঁটে এইসব তথ্য উদ্ধার করতে হয়েছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই টপিকে তকিউল্লাহ সাহেবের বই আছে একটা, আউট অফ প্রিন্ট কিনা জানিনা।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ একটা পোস্ট। অনেক কিছু জানলাম।

আমি জানতাম শশাঙ্কর সময়েই বাংলাসন গণনা শুরু হয়, কিন্তু এখন জানলাম, তারও আগ থেকে।

নববর্ষের অগ্রীম শুভেচ্ছা।

স্বয়ম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শুভ নববর্ষ!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাসুদ সজীব এর ছবি

অনেক কিছু জানা হলো হাসি

সম্রাট শাহ্‌জাহানের আমলে ৭ দিনের সপ্তাহভিত্তিক দিন গণনা ও সপ্তাহের পূর্বপ্রচলিত নামগুলো পুনঃপ্রচলিত হয়।

পূর্বেও কি দিনের নাম এই ইংরেজিতে প্রচলিত ছিলো? দিনের বাংলা নাম হলে বোধহয় খারাপ হতো না

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রবি-সোম-মঙ্গল-বুধ-বৃহস্পতি-শুক্র-শনি এই নামগুলোর মধ্যে কোনটা ইংলিশ? আর এই নামগুলো কী করে বাংলা না?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাসুদ সজীব এর ছবি

পান্ডব দা, দু:খিত প্রশ্নটা বুঝাতে সক্ষম হইনি বলে। লইজ্জা লাগে

আমরা জানি ফ্রাই ডে মানে শুক্রবার..সেটার ডে মানে শনিবার.. অর্থাৎ বাংলানুবাধ, এভাবেই আমাদের কে ছোটবেলায় শেখানো হয়। কিন্তু জানুয়ারির বাংলা কিন্তু বৈশাখ না...ফেব্রুয়ারি জৈষ্ঠ না.. অর্থাৎ ইংরেজির সাথে এর মিল নেই, মাসের নাম গুলো মৌলিক নাম। দিনের নাম এমন মৌলিক হয়নি কেন কিংবা প্রথম থেকেই কি saturday, sunday শনিবার-রবিবার হিসেবে পরিচিতছিলো? (এগুলো নিয়ে পড়াশুনা একেবারেই পড়ালেখা নেই বলে এমন প্রশ্ন করা)

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

সপ্তাহের সাতদিন সাত গ্রহের নামে নির্দিষ্ট। প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতে পৃথিবী এবং মানুষের উপর গ্রহ ও নক্ষত্রের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এরা হচ্ছে- সূর্য, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহষ্পতি, শুক্র এবং শনি।

সূর্য- রবি, চন্দ্র- সোম, মঙ্গল- মঙ্গল, বুধ-বুধ, বৃহষ্পতি-বৃহস্পতি, শুক্র-শুক্র, শনি-শনি, আর আছে রাহু আর কেতু। রাহুর প্রভাবে গ্রহণ হয় বলে ধারণা করা হতো।

স্বয়ম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ স্বয়ম!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

বৃহস্পতি আবার সবার গুরু। নাকি শুক্রাচার্য? যেটা মনে আছে চার্বাক বৃহস্পতি সম্পর্ক।

স্বয়ম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই সব ব্যাপারে নির্দ্বিধায় সচল রণদীপম বসুকে জিজ্ঞেস করুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

লেখাটা শেষ করার পর আবিষ্কার করলাম এর মোট শব্দসংখ্যা ঠিক ১৪২২!

সাধু! সাধু!
বাংলা ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি নিয়ে কিছু বলার মতো জ্ঞান আমার নেই।
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ কতৃক সংশোধিত ক্যালেন্ডারের ব্যবহার শুরু হবার পর থেকে সনাতনধর্মীয়দের মাঝে একধরণের বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে। পশ্চিম বাংলার সনাতনধর্মীয় পঞ্জিকা ও আমাদের বাংলাদেশে বাংলা সনের
দিন-তারিখ গণনায় ব্যত্যয় ঘটছে। বাংলাদেশের সনাতনধর্মাবলম্বীদের একটি বড় অংশ পশ্চিমবাংলায় প্রচলিত পঞ্জিকাই অনুসরন করছেন। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন পালা-পার্বণ অনুষ্ঠানে সার্বজনীন সক্রিয় অংশগ্রহণে দ্বিধা, বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশা করছি বহমান প্রক্রিয়ায় এও একদিন সমন্বিত হয়ে যাবে।
আমার পুরনো লেখার একটি অংশ,

ঢাকা শহরে, বাংলা নতুন বছরের প্রথম ভোরে রমনার বটমূলে 'বর্ষবরণ' অনুষ্ঠান। কিছুকাল পরে এর সাথে যোগ হল, মাটির সানকিতে দুশো বা তিনশো টাকায় পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম। পরবর্তীতে এই ব্যবসায়িক উদ্যোগটিকে বর্জন করা হয়েছে। ইদানিং বিভিন্ন প্রকার মুখোশ পরে, বিভিন্ন সাজে অনেক মানুষের অংশগ্রহনে বছরের প্রথম দিনটিতে আনন্দ মিছিলেরও আয়োজন শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটা আপামর বাঙালীর প্রাণের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ক্যালেন্ডার নিয়ে বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের পার্থক্যটা অনায়াসে মিটিয়ে ফেলা যায়। এই ব্যাপারে সদিচ্ছা আর সামান্য উদ্যোগই যথেষ্ট।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্পর্শ এর ছবি

দুর্দান্ত পোস্ট!

ইতিহাস একটু ঘাঁটলে বোঝা যায় এদেশের সব কিছু ‘হয় মুঘলদের নয়তো ব্রিটিশদের অবদান’ জাতীয় ভাবনার কোন ভিত্তি নেই

এই ধারণাটা বিভিন্ন প্রবন্ধ-গল্প-উপন্যাসের মাধ্যমে জনমনে পুনঃস্থাপিত করা দরকার।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অ্যাস্ট্রনমি, ম্যাথস, মেডিসিনের মতো বিষয়ে প্রাচীন ভারতের অগ্রগতি অসাধারণ ছিল। খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে শুরু করে চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বছর ধরে এখানকার ষোলটি রাষ্ট্রে গণপ্রজাতন্ত্রের চর্চ্চা হয়েছে। এই ব্যাপারে আমরা গ্রীক আর রোমানদের গুণগান গাইতে গাইতে গলা শুকিয়ে ফেলি, আর নিজেদের মহাজনপদগুলির নামও জানি না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

জানিতো, মহাজনপদ নামে ষোলটি গণরাজ্য - কাশী, কোশল, অঙ্গ, মগধ, বজ্জি (বৃজি), মল্ল,
চেদী, বৎস (বংশ), কুরু, পাঞ্চাল, মচ্ছ (মৎস), শূরসেন, অশ্মক, অবন্তী, গান্ধার ও কম্বোজ।
হ্যাঁ, তাহলে কথাটা বলি, অস্মদ্দেশীয় প্রাচীণ পুথি/পুরাণ, বা দর্শনশাস্ত্র ঘাটলে তার ভিতরেও কিছু বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস/বিজ্ঞান/দর্শন পাওয়া যায় যেগুলোর ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক মূল্য অবশ্যই আছে। কিন্তু সে সব কথা লিখলে এক ধরণের নাকউঁচু পাঠক আবার ছাগু বলে চিহ্নিত করতে চায় যে!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনি বুজুর্গ মানুষ, অনেক পড়াশোনা করেছেন তাই জানেন। কিন্তু আমাদের স্কুল-কলেজের ইতিহাস বইগুলোতে হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও মহাজনপদের কথা জানা যাবে না।

প্রাচীন পুঁথি/পুরাণ ঘেঁটে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস, বিজ্ঞান বা দর্শন যা কিছু পাওয়া যায় সেগুলো নিয়ে লিখলে 'ছাগু' বলে চিহ্নিত হবার অবকাশটা কোথায়?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে শুরু করে চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বছর ধরে এখানকার ষোলটি রাষ্ট্রে গণপ্রজাতন্ত্রের চর্চ্চা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আরও জানতে আগ্রহী। ঠিক এই বিষয়ে দুয়েকটি বইয়ের সন্ধান দিতে পারবেন, কিম্বা সচলে একটি বড়সড় লেখা?

****************************************

স্পর্শ এর ছবি

আসলেই দারুণ কৌতূহল বোধ করছি। এই গণপ্রজাতন্ত্রের স্বরুপ কেমন ছিলো? কোথায় এ নিয়ে আরো জানতে পারব?

পাণ্ডবদা একটা গোল্ডমাইন!! হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

খেকশিয়াল এর ছবি

লেখা আসুক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তোমরা তো কইয়াই খালাস! আমি কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করেও লেখাটা আগাতে পারছি না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই বিষয়টা নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি অনেকদিন ধরে। কিন্তু পেরে উঠছি না বইয়ের অভাবে। থান ইটের মতো কয়েক খণ্ডের একটা বই পড়লে সামান্য কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া আরো কিছু সমস্যা আছে। যেমন, ঐ সময়কার যে সামান্য টেক্সট মেলে সেগুলো পক্ষপাতদুষ্ট বা বিশাল বিশাল ব্যাপারে কিছুই বলেনি। মহাজনপদের কনসেপ্টের বিরোধীতাকারী পক্ষগুলো পরবর্তীতে শক্তিশালী হওয়ায় তাদের পাখার নিচে মহাজনপদের কীর্তিগুলো ঢাকা পড়ে গেছে, এমনকি ঐতিহাসিকদের বিবেচনাও।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আয়নামতি এর ছবি

অ্যাস্ট্রনমি, ম্যাথস, মেডিসিনের মতো বিষয়ে প্রাচীন ভারতের অগ্রগতি অসাধারণ ছিল। খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে শুরু করে চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বছর ধরে এখানকার ষোলটি রাষ্ট্রে গণপ্রজাতন্ত্রের চর্চ্চা হয়েছে। এই ব্যাপারে আমরা গ্রীক আর রোমানদের গুণগান গাইতে গাইতে গলা শুকিয়ে ফেলি, আর নিজেদের মহাজনপদগুলির নামও জানি না।

শুধু ওসব ব্যাপারে না ভাইয়া, আরো অনেক ব্যাপারেই ভীনদেশ নিয়ে মাতামাতি করি।
চে'র ফটুক সম্বলিত টীশার্ট, পোস্টারে সয়লাব চারিদিক। তাঁর বিপ্লবকে ছোট করছিনা বিন্দুমাত্র।
কিন্তু কথা হচ্ছে সেভাবে ঘরের ছেলে সূর্যসেন তো বেইল পান না, বা দেয়া হয় না। কেন(আমার এক দুষ্টু বন্ধুর মতে চে'র ফেস ভ্যালু বেশি তাই খাইছে )?
কত্ত পিচ্চি থাকতে জোয়ান অব আর্কের গল্প শুনেছি, অথচ তারামন বিবির বীরত্ব গাঁথা জানলাম মাত্র সেদিন।
মানছি সময়ের বিচারে এগিয়ে ছিলেন তাঁরা; কিন্তু নিজেরটা ফেলে অন্যকে মাথায় তুলে নাচতে আমরা ঐতিহ্যগতভাবেই
যেন বেশি উৎসাহী। সম্পূর্ণ অফ টপিকে বলে ফেললাম। ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন আশা করছি। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বৈশ্যবুদ্ধিতে আমরা বরাবরই পিছিয়ে আছি। তাই বণিকেরা আমাদেরকে যা গেলাতে চায় আমরা সেগুলো না বুঝেই গিলে ফেলি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আয়নামতি এর ছবি

ডুপ্লি ঘ্যাচাং

মন মাঝি এর ছবি

শুভ নববর্ষ! হাসি

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শুভ নববর্ষ!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

তথ্যবহুল... অনেক কিছু জানলাম। শুভ নববর্ষ!

তবে পান্তা-ইলিশ নিয়ে কিছু বলতে চাই। মেঠোপথের গ্রাম্য মানুষগুলোকে পান্তা খেতে হয় পেটের তাড়নায়। আর সে পাতে ইলিশ থাকে বলে আমার জানা নেই, পেঁয়াজ-মরিচই ভরসা। সাথে হয়তোবা একটু ভর্তা। বটতলায় বসে মাটির সানকিতে পান্তা-ইলিশ খাওয়া মানুষগুলোর অনেকেই একমাস পর বাংলা তারিখটি বলতে পারবেন কী না আমি সন্দিহান! অবশ্য তারিখ বলতে পারুন আর না-ই পারুন, তাদের কল্যাণে ইলিশগুলো দামের দিক দিয়ে কোরবানির গরু'র কাতারে চলে যায় বৈকি! আর সীজনের ব্যাপারটা-তো সত্যানন্দদা-ই বললেন। তাই, বাঙ্গালী চেতনা চর্চায় এই পান্তা-ইলিশটা কেন জানি না আমার মনে হয় লোকদেখানো!

আবারো... সবাইকে শুভ নববর্ষ!

- ভোরের বৃশ্চিক।
--------------------
তোমাদের চিৎকারে
কানপাতা বড় দায়।
তোমাদের ঠোক্করে,
লাল বাড়ে পতাকায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পান্তা-ইলিশের মতো কিছু আরোপিত বা লোকদেখানো ব্যাপার সব সময়েই থাকবে। যেটা সাধারণ মানুষ গ্রহন করবে না সময়ের সাথে সাথে সেটা আপনাআপনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

তাহলে কি ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই যে, এখন আমরা যে বাংলা সন দেখছি, তা কোন একটি রুপে এ দেশে আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। আগে থেকে মানে- আকবর, হুসেন শাহ, এমনকি শশাঙ্কের ও আগে থেকে। এটাই যৌক্তিক প্রস্তাবনা। তবে আকবরের কৃতিত্ব বোধ হয় এই যে, এখন বাংলা সনের যে ব্যাপ্তিকাল আমরা দেখছি- যেমন ১৪২২ সাল, এটা তার কারনেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
পশ্চিম বাংলায় এখনও সন তারিখের হিসাব করা হয় প্রাচীন কায়দায়, সুতরাং সে হিসাবের কাজটি করেন কোন সুপ্রসিদ্ধ শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত এবং তাদের গননার ভিত্তিতে পঞ্জিকা ছেপে বাজারে বিক্রয় করা হয়। পন্ডিতগনের গননায় সাম্য নাই, তাই দিন তারিখের ভিন্নতা দেখা যায়। এই গননা পদ্ধতিতে যে ত্রুটি আছে তা দূর করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের ডঃ মেঘনাদ সাহা একটি সংস্কারের প্রস্তাব করেন, তবে পঞ্জিকা ব্যবসায়ীদের বাধার কারনে সে সংস্কার সেখানে কার্যকরী হতে পারে নি। কিন্তু ডঃ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ'র কল্যানে বাংলাদেশে তা ঠিকই কার্যকর হয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে এখন কয়েক রকমের দিন তারিখ।

যদি কোন দিন হাইব্রীড ইলিশ মাছ বাজারে আসে, আমি ঐ দিন থেকে ইলিশ মাছ খাওয়া ছেড়ে দেবো।

ইলিশ মাছ খাওয়া ছেড়ে দিবেন কেন? শুধু হাইব্রীড ইলিশ না খেলেই তো হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আকবরের কৃতিত্ব কতটুকু সেটা মূল লেখাতে ব্যাখ্যা করেছি। পশ্চিমবঙ্গের পণ্ডিতদের ক্যালকুলেশনে ভুল আছে বলে তাঁদের একেক জন একেক প্রকার মত দেন। তাঁরা যদি বৈদিক মতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তাহলে আকবরের অভিষেক কালকে শুরু ধরেন কেন?

ইলিশ হাইব্রীড হওয়া শুরু হলে দেশী ইলিশের দাম আমার নাগালের বাইরে চলে যাবে। তাছাড়া জোচ্চুরিও বাড়বে। তাই অমন নিদান কাল আসলে ইলিশকে বিদায় জানাতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বন্দনা এর ছবি

আমাদের নববর্ষ আর তামিলদের নববর্ষ একি দিনে শুনে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। কারণটা বোঝা গেল এতক্ষনে।আর ফাল্গুন যে অধিবর্ষে এসে একদিন বেড়ে যায় এটা ও জানা ছিলনা। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানবেন পান্ডবদা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শুভ নববর্ষ!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

যদিও সোজাসুজি সম্পর্কিত নয়,তবু বলি থাইল্যান্ড ইত্যাদির সোংক্রান নিঃসন্দেহে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে যাওয়া ‘সংক্রান্তি’।কিন্তু কোন অঞ্চল থেকে? অনেক অঞ্চলেই এটি বর্ষশেষ ধরা হয়,কিন্তু যতদূর জানি ‘সংক্রান্তি’ বলা হয় না।একমাত্র বঙ্গ এবং উড়িষ্যাতে একে চৈত্রসংক্রান্তি বলে।উৎসব হিসাবে হালখাতা বা নববর্ষের থেকে সংক্রান্তি অনেক প্রাচীন,যার রেশ রয়ে গেছে চড়ক কিংবা সংক্রান্তির মেলায়।
আর একটি সংক্রান্তিরও বেজায় খ্যাতি,মকরসংক্রান্তি অর্থাৎ পৌষসংক্রান্তি।এইদিন পুরনো ঢাকায় সাকরাইন উৎসব,ধুমসে ঘুড়ি ওড়ানো হয়।লক্ষণীয়,মকরসংক্রান্তি,যার অপর নাম উত্তরায়ণ,গুজরাটে বিশাল উৎসবের দিন,এবং তার মূল অনুষ্ঠানই হলো ঘুড়ি ওড়ানো।কী করে সুদূর গুজরাটের একটি পর্বদিন ঢাকায় একই নামে ও আচারে পালিত হয়,মনে সে প্রশ্ন অনেকদিন ধরে ছিল।পরলোকগত ঐতিহাসিক অরুণ দাশগুপ্ত,যিনি দক্ষিণ-পূর্বএশিয়া সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ,জানিয়েছিলেন পূর্ববাংলার বৈশ্যসম্প্রদায়,যাঁরা ‘সাহা’ পদবিতে পরিচিত,মূলে ছিলেন গুজরাতি জৈন,আসল পদবি ‘শাহ্’। বাণিজ্যসূত্রে এসে আর ফিরে যাওয়া হয়নি। পরে,বিশেষ করে চৈতন্যদেবের ধর্মান্দোলনে বৈষ্ণব হয়ে বাঙালি সমাজে মিশে যান।সাকরাইন তাঁদেরই বয়ে নিয়ে আসা ঐতিহ্য।
পরে আরও দু’একটি প্রমাণে বুঝেছি অরুণদাই ঠিক।

বুড়া

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

অরুন দা,

একটা বিষয়ে বেশ খানিকটা ধন্ধ রয়ে গেছে, গুজরাটিরা কি এখনও জৈন? কিংবা ভারতবর্ষে কি এখনও জৈন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রয়ে গেছে? যদি থেকে থাকে, তাদের সংখ্যা কত? তারা কারা? মহাত্মা গান্ধী কি জৈন ছিলেন? কিংবা নরেন্দ্র মোদী?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভারতে জৈন ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ও অন্যান্য তথ্যের জন্য উইকি দেখুন।না,গুজরাটে অন্য ধর্মাবলম্বী যথেষ্ট আছেন।জৈনরা মূলত ব্যবসায়ী,অন্য পেশায় এঁদের আগ্রহ কম।
মেঘনাদ সাহা কৃত পঞ্জিকা সংস্কার বিফলে যায়নি,এখনো ভারত সরকার দ্বারা প্রকাশিত পঞ্জিকা ‘রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গ’ঐ নিয়ম মেনেই চলে।পঃবঙ্গে ঐ নিয়ম মেনে প্রকাশিত হয় ‘বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা’ জনপ্রিয়তার শীর্ষে।যদিও পুরাতন নিয়মে চলা ‘গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা’ও আছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

থাইল্যান্ড, লাও বা কম্বোডিয়ার সংকার্ন ভারত থেকে যাওয়া সংক্রান্তিই বটে। তবে সেটা কোন সময়ে এবং কোথা থেকে সেটা বলা মুশকিল। কারো দাবী বৌদ্ধধর্ম পূব মুখে রওনা দেবার সময় ভারতীয় ভাষা ও কৃষ্টি নিয়ে গেছে। কথাটা আংশিক সত্য। থাই ভাষাতে পালির চেয়ে সংস্কৃতের ভাগ বেশি। থাইদের রাজধর্মে বৌদ্ধত্বের সাথে সাথে হিন্দুত্বও আছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়াতে সংস্কৃত, হিন্দুধর্মের প্রভাব সবাই জানেন। সুতরাং এই পূব মুখে যাত্রা খ্রীস্টপূর্ব ৫০০ সালের আগে হওয়াটা অসম্ভব কিছু না। এবং ভৌগলিক কারণে এই যাত্রার সম্ভাব্য উৎপত্তিস্থল বঙ্গ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।

শাকরাইন/পৌষ সংক্রান্তি/মকর সংক্রান্তি/উত্তরায়ণ যা মোটামুটি ১৫ই জানুয়ারির ধারেকাছে পালন করা হয় সেটা বৈদিক ক্যালেন্ডার থেকে প্রাপ্ত। সুতরাং এর আউটরাইট ক্রেডিট গুজরাতকে দিতে অন্তত আমি নারাজ। যদিও এখন আর পৌষ সংক্রান্তি আর মকর সংক্রান্তি একই দিনে হওয়া উচিত না, কিন্তু সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। পূর্ববঙ্গের অনেক ‘সাহা’র সাথে আমি নিবিড়ভাবে মিশেছি। তাঁদের কাউকেই বৈষ্ণব দেখিনি। তাঁদের কেউ কেউ শাহ্‌, শাহ্‌বণিক, শা ইত্যাদি পদবীও ব্যবহার করেন। ঘুড়ি ওড়ানোর ব্যাপারটা শাহ্‌/সাহাদের আমদানী করা কিনা সেটা নিশ্চিত না। তবে এটুকু বলতে পারি, শাকরাইনে নিরামিষ খাওয়া আর ঘুড়ি ওড়ানো কেবল পুরনো ঢাকায় সীমাবদ্ধ ব্যাপার নয়। তবে পূর্ববঙ্গের সর্বত্র এটা শাহ্‌/সাহারা ছড়িয়ে দিয়েছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। শাকরাইনে ঘুড়ি ওড়ানোর সংস্কৃতির উদ্ভবের ক্ষেত্রে শ্রীযুক্ত অরুণ দাশগুপ্তের অনুমানকে তাই অস্বীকার করা যায় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

কত কিছু আছে জানার, কিছুই জানি না ওঁয়া ওঁয়া

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই কথাটা তো দুনিয়ার সব মানুষের জন্য সব সময়েই সত্যি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দিলেন তো প্যাজগি লাগায়া। বেশিরভাগ বাঙালির মতোই দেখি বাংলা সনেরও সাট্টিফিকেটের বয়স থাইকা মূল বয়স বহুত বেশি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হ! কারো কারো জন্মের ষাইট হাজার বছর আগে তার ইতিহাস রচিত হইতে পারলে সাট্টিফিকেটের বয়স আর মূল বয়স নিয়া গ্যাঞ্জাম লাগবই। সেই রকম গ্যাঞ্জাম ক্যালেন্ডারের ক্ষেত্রেও থাকাটা স্বাভাবিক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক । সেদিন অফিসে আমরা দুই ‘সামাজিক বিজ্ঞান’-এর মানুষ বাংলা সাল নিয়ে বেশ একটা বৈজ্ঞানিক সমস্যায় মাথার চুল সব বিসর্জন দিয়েছিলাম আর কী-বাংলা সালে অধিবর্ষের বিষয়টাকে কীভাবে ম্যানেজ করা হয়; আজ উত্তর পেলাম :)। তবে অনেক কিছুই মাথার উপরে দিয়া গেল-আরেকবার পড়লে নিশ্চয়ই মাথার ভিতরে ঢুকে পড়বে। আরেকবার পড়ব শিগগিরই। শুভকামনা।

দেবদ্যুতি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হায়! এতো সহজ করে লেখার চেষ্টা করলাম তাও মাথার উপর দিয়ে গেলো!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

মাথার উপর দিয়ে গেল তো আমার বিদ্যে-বুদ্ধির দৌড় আর ওজনের জন্য। মাথাটা বড় ফাঁকা, পাণ্ডবদা’, এমন ব্যাপারগুলো বুঝতে সময় লাগে। আবার পড়ব, তখন আরেকটু বুঝব তবে পুরোটা বোঝার জ্ঞানবুদ্ধি আদৌ আছে বলে সন্দেহ করি হাসি । লেখাটা তথ্যসমৃদ্ধ আর সহজ তো বটেই-কোনই সন্দেহ নেই তাতে।

দেবদ্যুতি

রণদীপম বসু এর ছবি

তারপরও কিন্তু লেখাটা সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে পাণ্ডব দা !
আমাদের মতো সুবোধ পাঠকের জন্য সৌরপঞ্জিকার সাথে চান্দ্রপঞ্জিকার মৌলিক পার্থক্যটা সম্বন্ধে দু'চার লাইন ব্যয় করা যেতো। চান্দ্রমাস ও বৎসরের কারণে হিজরি সন প্রতি বছর যে সৌর বৎসর থেকে ১১ দিন করে কমে যায়, তাতে কৃষিসভ্যতায় এই হিজরি সন অকার্যকর হওয়ায় সম্রাট আকবর তাঁর 'ইলাহি অব্দ' চালু করার উদ্যোগ নেন এবং পারসিক বর্ষশুরুর নওরোজ উৎসবের মাস থেকে ইলাহি অব্দ চালু করান তাঁর সিংহাসনে আরোহণের বছর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে। তখন ছিলো হিজরি ৯৬৩ অব্দ। কিন্তু খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে শেষে সৌরসিদ্ধান্ত সম্মত সৌরবর্ষ হিসেবে ফসলি সময়কে মাথায় রেখে বাংলা সন হিসেবে সেটিও ৯৬৩ বঙ্গাব্দ। বঙ্গাব্দের সাথে (১৫৫৬-৯৬৩ =) ৫৯৩ বছরের পার্থক্যটা কিন্তু এখনো বহাল আছে (২০১৫-১৪২২=) ৫৯৩ বছরের। কিন্তু সেই থেকে প্রতি বছরে ১১ দিন করে হিজরি সনের পার্থক্য তৈরি হয়ে গেছে ।

সেই থেকে বঙ্গাব্দ পেরিয়েছে (১৪২২-৯৬৩ =) ৪৫৯ বছর। ফলে বঙ্গাব্দের সাথে হিজরির পার্থক্য তৈরি হয়েছে (৪৫৯*১১ দিন =) ৫০৪৯ দিনের। অর্থাৎ প্রায় ১৪ বৎসর। তার মানে বর্তমান হিজরি সন হলো (বঙ্গাব্দ ১৪২২ যোগ ১৪=) ১৪৩৬। অংকের এই হিসাবটা কিন্তু আকবরের সময়ে বঙ্গাব্দ প্রবর্তনের সমর্থনে একটি উল্লেখযোগ্য সাক্ষ্য।

তবে হাঁ, এর আরো বহু বহু আগে থেকে যে অন্যভাবে এই সৌরবৎসর গণনা ছিলো তার সাক্ষ্য আপনার পোস্টেই বিবৃত আছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। নামটা হয়তো বঙ্গাব্দ ছিলো না, অন্যভাবে এই কৃষিসভ্যতার শুরু থেকেই পঞ্জি চালু ছিলো। এই বঙ্গাব্দ নামটা কিভাবে কোত্থেকে এলো, তার সাথে অন্য লিঙ্কগুলো কী সে বিষয়ে আরো গবেষণার অবকাশ রয়ে গেছে এখনো।

এই নতুন বঙ্গাব্দের শুরুতে চমৎকার একটি পোস্ট প্রসব করে আমাদের মস্তিস্কে একটি ইতিবাচক অনুরণন দানের জন্য অভিনন্দন জানাই। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক চলুক

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মন মাঝি এর ছবি

‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই বটে - কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে তাতে নেহাৎই অমহৎ কিন্তু মৌলিক বাচন-মরনের প্রশ্ন লুকিয়ে আছে হে উৎবচনকার! আপনার এই ট্যাগলাইনটা পড়তে গিয়ে নববর্ষটা এই চিন্তারাজি দিয়েই শুরু করতে হল। কি আর করা। তবুও শুভ নববর্ষ!

****************************************

রণদীপম বসু এর ছবি

প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ) মরে গেছেন সেই কবে ! কিন্তু তার উক্তিটি গভীর থেকে গভীরতর হয়ে ছড়িয়ে গেছে সবখানে আজ ! অমরত্বের দাওয়াই যখন নেই, কী আর করা ! শুভ নববর্ষ !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একদম ঠিক কথা! চিন্তারাজিকে উপযুক্ত সময় বুঝে প্রকাশ করতে হয়। নয়তো ভুল সময়ে বেফাঁস মুখ খুললে ঈশপের গল্পের কচ্ছপের দশাও হতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিভিন্ন ক্যালেন্ডারের ভিত্তির পার্থক্যের দরুণ সময় গণনায় যে পার্থক্য হয় তার বিবরণ যে আমি দেবো না সেটা আপনাকে আগেই জানিয়েছিলাম। এই জীবনে বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে যত লেখা পড়েছি তার প্রায় সবগুলোতে হিজরী বনাম বাংলার দিনের পার্থক্যের কথা বলা আছে। এখানে বিভিন্ন পত্রিকাতে প্রকাশিত যে লেখাগুলোর লিঙ্ক হাসিব দিয়েছেন সেখানেও তা দেখতে পাবেন। আমি আসলে শুধু ইতিহাসটুকু লিখতে চেয়েছিলাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রণদীপম বসু এর ছবি

তা ঠিক আছে। আমি আসলে আকবরপূর্ব এই বাংলা সৌরসনের (যদিও তখন বাংলা নামে ছিলো না) ধারবাহিক ইতিহাস খুঁজছি। শিরাজী তো হাওয়া থেকে কিছু এনে বসিয়ে দেয়নি, লোকায়ত বাংলায় তার আগের ধারবাহিকতাটুকু হয়তো প্রাচীন সংস্কৃত পুস্তকগুলোতে রয়ে গেছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। সেইসব সংস্কৃত পণ্ডিতি ভাষা আর পুস্তকের খোঁজই বা কোথায় পাওয়া যাবে ! তবে ডঃ অজয় রায় এটা নিয়ে জটিল একটা কাজ করেছেন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে। কিন্তু ইতিহাসভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও কাজ করতে গেলে তাঁর নির্দেশিত সেইসব রেফারেন্স গ্রন্থ (যার সবই সংস্কৃত প্রাচীন গ্রন্থ)-এর টিকির সন্ধানও পাওয়ার উপায় নেই একালে !
তারপরও একটা গোপন ইচ্ছা আছে, যদি কখনো সময়, সুযোগ ও সামর্থ অর্জন করতে পারি ! এজন্যই আপনাকে খোঁচানো আর কি ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনি যা নিয়ে কাজ করেন তাতে সংস্কৃত খুব ভালোভাবে জানাটা আবশ্যিক। সাথে ফার্সী জানলে আরো সুবিধা হয়। আমি এই দুই ভাষার কিছু শব্দ বানান করে পড়তে পারি, আর কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে পারি - ব্যস, ঐ! বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে আপনার বলা অমন ডিটেইল কাজ করার অভিপ্রায় আমার নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আয়নামতি এর ছবি

উত্তম জাঝা! চলুক চলুক
এত সুন্দর জ্ঞানগর্ভ, পরিশ্রমসাধ্য একটা পোস্ট শুধুমাত্র ব্লগর ব্লগর ট্যাগটা মানাচ্ছে না।
বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে চিন্তাভাবনা, গবেষণা জুড়ে দিলে হয় না?
নববর্ষের শুভেচ্ছা থাকলো ভাইয়া।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'চিন্তাভাবনা' ট্যাগটা হয়তো জুড়ে দেয়া যায় তবে 'গবেষণা' একেবারেই না। দুটো বই পড়ে হাজার দেড়েক শব্দ লিখলে সেটা গবেষণা হয়ে যায় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আয়নামতি এর ছবি

দু'পাতা পড়ে কত্ত গবেষণা হতে দেখেছি পাণ্ডবদা! একাডেমিক গবেষণার কথা বলিনি কিন্তু, আর ওটা শুধু পড়লেই চলে না মাথা-হাত-কলমের কাজকম্মোটা করতে হয়। ব্লগের ক্যাটে তবে গবেষণা কেনু জুড়ে দেয়া হলো ইয়ে, মানে...
অবশ্য ট্যাগ নিয়ে আপনার নিজস্ব কিছু ভাবনা আছে দেখেছি, সে আপনার স্বাধীনতা। আমি কেবল নিজের বুদ্ধিহীন ভাবনাটা বলেছিলেম হাসি

রানা মেহের এর ছবি

কী দুর্দান্ত একটা লেখা পান্ডব দা।
মানুষ এত পড়াশোনা কীভাবে করে?

"আকবরের সময়ে মাসের প্রতিটি দিনের আলাদা আলাদা ফার্সী নাম দেয়া হয়েছিল। "

এই দিনগুলোর নাম জানতে মন চায়।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

---------------------------ঐ---------------------------

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দিনগুলোর নাম জানার চেষ্টা করেছিলাম, পাইনি। ফারসী ভাষা জানলে আরো চেষ্টা করা যেতো। তবে ঐ ভাষাটা শেখার কোন ইচ্ছে নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওডিন এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা! এমনি এমনি কি আর কঞ্চিপার আমরা আপনাকে মাইক্রফট হোমস নাম দিয়েছি নাকি!‍ দেঁতো হাসি (সিধু জ্যাঠা নামটা দিশি হলেও ইট্টু বুড়োতে শোনায় আরকি)

শুনলাম রাশান সাইন্টিসরা নাকি হেড ট্রান্সপ্লান্ট করার পাঁয়তারা কষছেন। আমার মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি এমনিতেই ইট্টু কম। মাথা কেটে নিলে কার টা নিতে হবে সেইটা আমার বিলক্ষণ জানা আছে। শয়তানী হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

পাণ্ডব দা কই ! রিক্সা-টিক্সা থাইকা পইড়া হাড্ডিগুড্ডি ভাঙলেও এই হাঁড়ভাঙা-ডাক্তারের কাছে ভুলেও যাইয়েন না কইলাম ! তলে তলে ছোকরাটার আলামত সুবিধার দেখতেছি না !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ওডিন এর ছবি

হুম। কেন্ডিডেট তো দেখি আরো আছে চিন্তিত

*খসখস শব্দে নোটবুকে কিছু টুকে নেয়া*

খেকশিয়াল এর ছবি

শয়তানী হাসি

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

খেকশিয়াল এর ছবি

ঘ্যাচাং

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

কল্যাণ এর ছবি

লাইনে আসুন, ওই মাথা বহু আগে থেকেই বুকড।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আচ্ছা, মাথাটা যার, শরীরটাও তো তারই হয়ে যায় তাই না? কারণ, গোটা ধড়ে কোন সংকেত ট্রানস্লেট করার, চিন্তা করার বা সংবেদ তৈরির তো কোন ব্যাপার নেই। তাহলে আমার মাথাটা যদি কাটা হয় তাহলে যার ধড়ে লাগানো হবে তার তো আম-ছালা দুই-ই যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

একেবারে মোক্ষম জবাব। হাসি

****************************************

হাসিব এর ছবি

আলু পেপারে এই লেখাটা এসেছে।

বঙ্গাব্দের উত্সবিচার
শিশির ভট্টাচার্য্য | আপডেট: ১২:৫৯, এপ্রিল ১৪, ২০১৫

বঙ্গাব্দের প্রবর্তক কে? শশাঙ্ক, আকবর, নাকি মুর্শিদকুলী খান? শশাঙ্কের মৃত্যুর পরের বছর ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষ পরিভ্রমণে আসা হিউ এন সাঙ বাংলা অঞ্চলে ‘ভাস্করাব্দ’ নামে একটি সন প্রচলিত থাকার কথা লিখেছেন, বঙ্গাব্দের উল্লেখ করেননি। বঙ্গাব্দ প্রচলন করার গৌরব ভারতবর্ষের কোনো শাসককে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক অঞ্চল, যেমন—ব্রহ্মদেশ, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, চীনের ইউনান প্রদেশের দাই বা থাই জাতি-অধ্যুষিত এলাকা, দক্ষিণ ভারতসহ ভারতের নানা এলাকা ও শ্রীলঙ্কায় এপ্রিল মাসের ১৩ / ১৪ / ১৫ তারিখে নতুন বছর শুরু হয়।

কোনো অব্দের প্রথম দিনটি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে অতীতে দুটি বিষয় বিবেচিত হতো: ১. জ্যোতিষশাস্ত্র আর ২. খাজনা আদায়ের সুবিধা। বিভিন্ন নক্ষত্রের মধ্যে কল্পিত রেখা টেনে সিংহ, বৃষ, কর্কট ইত্যাদি ১২টি রাশি কল্পনা করা হয় জ্যোতিষশাস্ত্রে। প্রতি মাসে সূর্য নতুন রাশিতে প্রবেশ করার সময়টিকে বলা হয় ‘সংক্রান্তি’। হেমন্ত আর গ্রীষ্ম ঋতুর সূচনার মধ্যবর্তী সংক্রান্তিগুলো (উত্তরায়ণ বা মকর, মহোদরী বা বিষ্ণুপদী, ষড়শীতি এবং মহাবিষুব) এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নববর্ষের প্রথম দিন নির্বাচিত হয়েছে অর্থনৈতিক কারণে, ফসল তোলার পর খাজনা আদায় সুবিধাজনক বলে। প্রাচীন ভারতে একটি ধর্মবিশ্বাস ছিল এই যে ডিসেম্বর-জানুয়ারির উত্তরায়ণ থেকে পরবর্তী ছয় মাস স্বর্গলোকের দিবাভাগ। (দিনে ভ্রমণ নিরাপদ বলে!) এই পবিত্র সময়কাল স্বর্গে যাওয়ার জন্যে প্রশান্ত। মহাভারতে পিতামহ ভীষ্ম দেহত্যাগের জন্যে শরশয্যায় শুয়ে উত্তরায়ণের অপেক্ষা করেছিলেন।

প্রাচীন ভারতবর্ষে অগ্রহায়ণ মাসে বছর শুরু হতো, কারণ ‘অগ্রহায়ণ’ শব্দে অন্তর্ভুক্ত সংস্কৃত ‘হায়ণ’ শব্দের অর্থ ‘বত্সর’। প্রাচীন ইউরোপে দশ মাসের বছর শেষ হতো উত্তরায়ণ সংক্রান্তির কাছাকাছি সময়ে দশম মাস ডিসেম্বরে। উত্তরায়ণ ও মহোদরী সংক্রান্তির মাঝে পড়ে চীনা নববর্ষ (২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে)। ষড়শীতি (১ চৈত্র) সংক্রান্তিতে কাশ্মীরের নাভ্রে, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের উগাডি, মহারাষ্ট্রের গুড়ি পাড়োয়া, সিন্ধু ছেতি চাঁদ, পশ্চিম ভারতের শকাব্দ (২২ মার্চ) এবং মধ্য এশিয়ার নওরোজ (২০ মার্চ)। মহাবিষুব সংক্রান্তিতে (১৩ / ১৪ / ১৫ এপ্রিল) নববর্ষ হয় শ্রীলঙ্কা, ভারতের মণিপুর, তামিলনাড়ু, কেরালা, ওডিশা, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, (ভারত ও পাকিস্তানের) পাঞ্জাব, বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, চীনের দাইজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলে।

অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত বিস্মৃত অঞ্চলে এক সময় প্রটো-অস্ট্রোলয়েড গোষ্ঠীর মানুষেরা বসবাস করত বলে ধারণা করা হয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মধ্য এপ্রিলে বর্ষ শুরু করার প্রথাটা হয়তো এরাই চালু করেছিল। দক্ষিণ এশিয়ার অনার্য সংস্কৃতির সঙ্গে হিন্দু-বৌদ্ধ তথা আর্য সংস্কৃতির মিশ্রণের ফলশ্রুতি এই সনটি। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সমজাতীয় আবহাওয়াও মধ্য এপ্রিলে বর্ষ শুরুর কারণ হতে পারে। থাই জাতির উদাহরণ এখানে প্রাসঙ্গিক। দক্ষিণ চীন থেকে থাইল্যান্ডে অভিবাসন করা দাই বা থাই জাতি প্রথমে চীনা সৌর-চান্দ্র সন অনুসরণ করত (থাইল্যালের কোথাও কোথাও এখনো চীনা নববর্ষ পালন করা হয়)। কিন্তু পরবর্তী কালে দেখা গেল, মধ্য এপ্রিলে শুরু হলে বর্ষটি থাইল্যান্ডের আবহাওয়ার সঙ্গে অধিকতর সংগতিপূর্ণ হয়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে জাতীয় উৎসব ‘সঙ্করণ’ (‘সংক্রান্তি’’র অপভ্রংশ) উপলক্ষে অফিস-আদালত-স্কুল-কলেজ ছুটি থাকে। (হোলিতে রং বা আবির ছিটানোর মতো) একে অপরের গায়ে জল ছিটিয়ে দেওয়া এই উৎসবের অন্যতম অঙ্গ। এই রং বা জল ছিটানো আর নববর্ষ পালনের প্রথাটি ভারতবর্ষ থেকে বর্হি ভারতে গিয়েছে, নাকি বহিষ্কার থেকে ভারতবর্ষে এসেছে—তা স্থির করা গবেষণাসাপেক্ষ।

বাংলা-আসাম অঞ্চলে একাধিক থাই-বর্মি-চীনা বংশোদ্ভূত নৃগোষ্ঠী মধ্য এপ্রিলে বিহু (বিষুব?) উৎসব পালন করে থাকে। শশাঙ্ক-আকবরের জন্মেরও বহু আগে আদিবাসী-হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান-আস্তিক-নাস্তিক, এমনকি বাঙালি হতে শুরু করারও বহু আগে থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক জাতি-উপজাতি-নৃগোষ্ঠীর মতো আমাদের আদিবাসী-উপজাতি পূর্বপুরুষেরাও মধ্য এপ্রিলে শুরু হওয়া এই সনটিই সম্ভবত ব্যবহার করত তাদের দৈনন্দিন জীবনে, ব্যবসায়ে, কৃষিকাজে।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মধ্য এপ্রিলে শুরু হওয়া সব অব্দের বর্ষসংখ্যা এক নয়। এ বছর ১৪২২ বঙ্গাব্দ হওয়ার কারণ সম্রাট আকবরের একটি সিদ্ধান্ত। তুর্কি, সুলতানি ও মুঘল আমলের প্রথম দিকে হিন্দুস্থান সরকারি কাজকর্মে ব্যবহৃত হতো হিজরি সন। চান্দ্র বর্ষ হওয়ার কারণে হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের পয়লা তারিখটা সব বছর ফসল তোলার সময়ে পড়ত না। চর্মচক্ষে চাঁদ দেখা না গেলে হিজরি মাস শুরু হয় না বলে ৩৫৪ দিনের হিজরি সন ৩৬৫ দিনের সৌর সনের চেয়ে ছোট হয়। আবুল ফজলের মতে, কোনো দেশে যদি চান্দ্র বর্ষ অনুসরণ করে খাজনা আদায় করা হয়, তবে ৩০ সৌরবর্ষ = ৩১ চান্দ্র বর্ষ হওয়ার কারণে প্রতি ৩০ বছরে কৃষককে এক বছরের খাজনা বেশি দিতে হয়।

হিজরি সনের অর্থনৈতিক ও প্রায়োগিক সমস্যা সমাধানকল্পে আকবরের নির্দেশে ৯৯২ হিজরিতে (১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দ) ‘তারিখ-ই-এলাহি’ নামে নতুন একটি ফসলি সন প্রবর্তিত হয়। তবে এলাহি সন গণনা শুরু হয় ৯৬৩ হিজরি বা ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে, কারণ সেই বিশেষ বছরটিতে দুটি ঘটনা ঘটেছিল: ১. পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে আকবর ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করেছিলেন এবং ২. বৈশাখ মাস আর মহররম মাস একসঙ্গে পড়েছিল। এলাহি আর হিজরি সনের বর্ষসংখ্যা এক রাখা হয়েছিল সম্ভবত সাম্রাজ্যের মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মানুভূতিতে আঘাত না দেওয়ার জন্য এবং দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচলিত হিজরি বর্ষ ব্যবহারের অভ্যাস অক্ষুণ্ন রাখার জন্য। ৯৬৩ এলাহি/ হিজরির ৪৫৯ বছর পরে আজ (৯৬৩ + ৪৫৯) ১৪২২ বঙ্গাব্দ, কিন্তু ১৪৩৬ হিজরি হওয়ার কারণ হচ্ছে, সাড়ে চার শতকের মাথায় হিজরি সন (সৌরবর্ষের ৩৬৫ দিন (হিজরি সনের ৩৫৪ দিন = ১১ দিন (৪৫৯ বছর = ৫০৪৯ দিন (হিজরি সনের ৩৫৪ দিন) ১৪ বছর ৯৩ দিন এগিয়ে গেছে। এযাবত্কাল পর্যন্ত হিজরি সন চালু থাকলে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের জনগণকে ১৪ বছর তিন মাসের খাজনা ও আয়কর বেশি দিতে হতো।

এলাহি সনের মাসের নামগুলো ফার্সি (কানওয়াদিন, আর্দি, ভিহিশু, তীর, আমাদাদ, শাহরিয়ার, আমান, আযুর, দাই, বাহাম, ইস্কান্দর ও মিয) রাখা হয়েছিল সম্ভবত মুঘল সাম্রাজ্যের দাপ্তরিক ভাষা ফার্সি ছিল বলে। আকবর কেন মধ্য এশিয়ার নওরোজের পরিবর্তে ১ বৈশাখকে বর্ষ শুরুর দিন নির্বাচন করেছিলেন? ভারতবর্ষের বহু এলাকায় তখনো সম্ভবত ১ বৈশাখেই বর্ষ শুরু হতো (বৈশাখ মাসের সঙ্গে মহররম মাসকে মেলানোর চেষ্টা এর প্রমাণ)। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধযাত্রা থেকে শুরু করে শিবির-স্থাপন, নগর-নির্মাণ ইত্যাদি সব কাজেই মুঘল সম্রাটেরা হিন্দু জ্যোতিষীদের মত নিতেন। রাশিচক্রের প্রথম রাশি মেষ বিধায় এই রাশিতে সূর্য প্রবেশের কালে এবং উত্তরায়ণের মধ্যভাগে মহাবিষুব সংক্রান্তিতে বর্ষ শুরু হওয়া ভারতীয় জ্যোতিষ মতে অতি শুভ।

আরব-পারসিক-ভারতীয় সংস্কৃতির সমন্বয়ের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ তারিখ-ই-এলাহি কোনো অজ্ঞাত কারণে ‘বঙ্গাব্দ’ নামে বাংলা অঞ্চলে এখনো চালু আছে। বাঙালি হিন্দু ও বৌদ্ধদের ধর্মীয় কাজকর্মে এখনো বঙ্গাব্দ অনুসৃত হয়। জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে বঙ্গাব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছে ব্যবসায় ও কৃষিকাজে। বঙ্গাব্দ বৃহৎ ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত এই অর্থে যে বাংলা মাসের নামগুলোর মূলে আছে বিভিন্ন নক্ষত্রের সংস্কৃত নাম ‘বিশাখা’ (বৈশাখ), ‘মঘা’ (মাঘ), পূষা (পৌষ), ‘উত্তর-আষাঢ়া’ (আষাঢ়), ‘শ্রবণা’ (শ্রাবণ), ‘কৃত্তিকা’ (কার্তিক), ‘ফাল্গুনী’ (ফাল্গুন)। এই নামগুলো ভারতবর্ষের আরও কয়েকটি সনে ব্যবহৃত হয়। গত কয়েক দশকে ছায়ানট-পান্তা-ইলিশ-মেলা-শোভাযাত্রার এলাহি আয়োজন নিয়ে বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে পয়লা বৈশাখ। সুতরাং দুই অর্থে বঙ্গাব্দ এখনো ‘এলাহি’: প্রথমত, এত সব প্রাগৈতিহাসিক, ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও করপোরেট প্রেক্ষাপটের সমন্বয় করা মরণশীল মানুষের সাধ্যের অতীত; দ্বিতীয়ত, বঙ্গাব্দ স্বয়ম্ভূ, এর সুনির্দিষ্ট কোনো প্রবর্তক নেই।

এশিয়ার বহু এলাকায় প্রচলিত এই সনটির নাম ‘বঙ্গাব্দ’ কেন? লক্ষ করা যেতে পারে যে বাঙালির দখলে যা কিছু আসে সব ‘বাংলা’ হয়ে যায়। ‘আমাদের’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন ‘ওদের’ বিহু উৎসবে যে দো-চোয়ানি সুরা পান করে থাকেন, সেটাকে আমরা ‘বাংলা’ বলি। ‘ভাত গেঁজিয়ে ধেনো মদ বহু দেশে তৈরি হয়; মোদের চোলাই ‘বাংলা’ শুধু, আর কারওটা নয়! ’ সুতরাং ১৪২২ একটি প্রাগৈতিহাসিক/ঐতিহাসিক দো/তিন চোয়ানি, সুতরাং এটি অবশ্যই ‘বাংলা’। আর পয়লা বৈশাখের পরদিনই যে আমরা ‘বাংলা’ তারিখ ভুলে যাই তার একটি কারণ হচ্ছে, কোনো হুজুগ বা নেশাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

শিশির ভট্টাচার্য্য: অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

একই দিনে বিডিনিউজ আর আলুতে লেখা এই প্রসঙ্গে এবং দুইটা লেখাই এই লেখার তুলনায় মানে এবং কন্টেন্টে লেখাটার সাবসেট বলা যেতে পারে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

কল্যাণ এর ছবি

কথা সত্য।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিশুদ্ধ আলু নিবন্ধ। অসংলগ্ন লেখা, সঠিক তথ্যের সাথে মিশেল দেয়া ভুল তথ্য, স্টান্টবাজি সবই আছে। আফসোস্‌! এই ভদ্রলোকের কাছে কয়েক দিন ফরাসী ভাষা শেখার তালিম নিয়েছিলাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ঋতব্রত এর ছবি

একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা। লেখককে ধন্যবাদ।
ভারত স্বাধীন হবার পরে পদার্থবিদ মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে একটি national almanac commission গঠন করা হয়। এর সুপারিস গুলি শহিদুল্লাহ committee-র অনুরূপ। এর দ্বারা ভারতের রাজ্য গুলি তাদের calender সংস্কার করে। কিন্তু পশ্চিমবাংলা সরকার এটিকে officially গণ্য করলেও সমস্ত ছুটি পুরাতন calender হিসাবে ঘোষণা করতে থাকে। এর ফলে official calender টির অপমৃত্যু ঘটে (পশ্চিমবাংলায়)। এরই ফল দুটি ভিন্ন নববর্ষ দিন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজ ১৪ই এপ্রিল পাঞ্জাবি শিখদের নববর্ষ (এরা বৈশাখী বলে) এবং উত্তর ভারতে অনেক গোষ্ঠীর ই নববর্ষ। তামিল দের ও আজ নববর্ষ (যদিও এদের calender এ প্রথম মাস হল চৈত্র)। এই calender টি মূলত সৌর-চান্দ্র এবং একই সাথে ফসলি callender। বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তন এর নিয়ম মানার জন্য বীজ বপন এর কাজে এটিকে ব্যবহার করা যায়। মুলতঃ এই কারনে, বিশুধ্য চান্দ্র calender এখানে জনপ্রিয় হয় নাই বলে আমার ধারনা।

যতদূর মনে পড়ে; Mesopotamia তেও calender এর দিনগুলির নাম গ্রহদের নামে রাখা ছিল। হাতের কাছে আকর গ্রন্থ কিছু নাই; তাই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। মাস গুলির নাম নক্ষত্রদের নামে রাখা হয়।
আপনি সম্রাট অঞ্জণ এর নাম উল্লেখ করেছেন। এর সম্যন্ধে কিছুই জানি না। কিছু authentic reference দিলে বাধিত হব।
শুভ নববর্ষ।
ঋতব্রত

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ ঋতব্রত! ডঃ মেঘনাদ সাহার সংস্কার প্রস্তাব এই আলোচনাতেই অন্যরা বলেছেন। খোদ পশ্চিমবঙ্গে এই বাঙালী বিজ্ঞানীর সংস্কার প্রস্তাব ঠিকভাবে পালন না করাটা দুঃখজনক। এক্ষেত্রে পঞ্জিকা ব্যবসায়ী আর পণ্ডিতকূলের যোগ আছে কিনা খতিয়ে দেখা দরকার আছে।

মেসোপটেমিয়ান ক্যালেন্ডার চান্দ্রবর্ষ। এর মাসগুলোর প্রত্যেকটির নাম আরাহ্‌ দিয়ে শুরু হয়ে যথাক্রমে - নিসানু, আ'রু, সিমানু, দুমুযু, আবু, উলুলু, তিস্‌রিতুম, সাম্‌না, কিস্‌লিমু, তেবেতুম্‌, সাবাতু, আদ্দারু। ১৯ বছরের সাইকেলে ১৭তম বছরে একটা এক্সট্রা মাস থাকতো তার নাম মাকারুসা। মাসের এই নামগুলো সবই তাদের আরাধ্য দেবতাদের নাম থেকে উদ্ভূত। দিনগুলোর নাম নিয়ে নিশ্চিত না, তাই মন্তব্য করলাম না।

একটা লাইনেজ দেখুনঃ
সম্রাট দেবদহ
> দেবদহের পুত্র সম্রাট অঞ্জন
> অঞ্জনের পুত্রদ্বয় সুপ্পবুদ্ধ ও দণ্ডপাণি এবং কন্যাদ্বয় মায়া ও প্রজাপতি
> সুপ্পবুদ্ধ ও পামিতা’র (সম্রাট শুদ্ধোধনের ভগ্নী) কন্যা ভদ্দকচ্ছ/যশোধারা
> সুপ্পবুদ্ধ ও অমিতা’র পুত্র দেবদত্ত
> দণ্ডপাণি সম্ভবত অকৃতদার ছিলেন
> মায়া সম্রাট শুদ্ধোধনের স্ত্রী
> মায়া ও শুদ্ধোধনের পুত্র গৌতম বুদ্ধ
> যশোধারা গৌতম বুদ্ধের স্ত্রী
> প্রজাপতি বা মহাপ্রজাপতি গৌতমী বৌদ্ধসংঘের শরণ গ্রহনকারিনী প্রথম নারী ও গৌতম বুদ্ধের পালিত মাতা

খ্রীস্টপূর্ব ৬৯১ সালে সম্রাট অঞ্জন যে বর্ষ গণনা শুরু করেন সেটার শুরু হয়েছিল এই দিনে। খ্রীস্টপূর্ব ৫৪৫ সালে সেটাকে অ্যাডজাস্ট করে করা হয় বৌদ্ধ বর্ষ। আর ৭৮ খ্রীস্টাব্দে সেটাকে আবারো অ্যাডজাস্ট করে চালু করা হয় শকাব্দ। এই দফাতে অ্যাডজাস্টমেন্টের দরুণ বছরের শুরুটা পিছিয়ে ২২শে মার্চে চলে আসে (লিপ ইয়ারে ২৩শে মার্চ)। এই বার ইতিহাস খোঁজাটা আপনার জন্য সহজ হবার কথা।

বিভিন্ন জনপদে চান্দ্রবর্ষ আর সৌরবর্ষ'র মধ্যে কোনটা টিকবে সেটা নির্ভর করে তার অর্থনীতি ফসল চাষ নির্ভর নাকি পশুপালন নির্ভর তার ওপর। এই জন্য ভারতে সৌরবর্ষ আর আরবে চান্দ্রবর্ষ। আরাধ্য প্রধান দেবতাও এভাবে চন্দ্র আর সূর্যতে ভাগ হয়ে যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ঋতব্রত এর ছবি

আপনার উত্তরের জন্য ধন্যবাদ ষষ্ঠ পাণ্ডব।

আমি মনে করি না যে; পঞ্জিকা লবি পশ্চিমবাংলায় কখন খুব শক্তিশালি ছিল, যে সরকারকে প্রভাবিত করবে।
৮০ র দশকের কথা বলতে পারব না, কারন আমি খুবই ছোট ছিলাম। তবে ৯০ এর দশকে এই নিয়ে এখানে (পশ্চিমবাংলায়) যথেস্থ আলোচনা হয়। পুরান পঞ্জিকা চালনর একমাত্র কারন রাজনৈতিক বলেই আমার বিশ্বাস। ৯০ এর দশকে বিজেপি র উত্থান এর সময় সরকারি দল (communist রা) এই ইসুতে হিন্দু ভোট হারাতে চায় নি।

এই কাজটি ৮০র দশকে করলে এই চিন্তা করতে হত না বলে আমার অনুমান। অন্ততঃ এই সময় 'জন বিজ্ঞান আন্দোলন' শক্তিশালি ছিল। ধর্ম নিয়ে উৎপাত এই পর্যায় যায় নি।

ঋতব্রত

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঋতব্রত, বাংলার ইতিহাস পাঠ করলে দেখতে পাবেন এখানে ধর্মীয় উগ্রতার স্থান কখনোই জোরালো ছিল না। বিশেষত, সুরমা-মেঘনার পূর্ব তীরে এমনকি জাতিভেদ পর্যন্ত ছিল না, নারীদের দাবিয়ে রাখার ব্যাপারটাও খুব কম ছিল। বহিরাগত শাসকরা আসার সাথে সাথে একটু একটু করে বাংলায় এই আবর্জনা ঢুকেছে। প্রাচীন কালের ইতিহাসে মৌর্য সম্রাট অশোকের সময়ে বৌদ্ধদের দ্বারা আজীবকদের কচুকাটা করে নির্মূল করার ঘটনা ঘটেছে। খিলজী আমলে উত্তরবঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বী ও বৌদ্ধদের ওপর অত্যাচার চলেছে। স্থানীয় শাসকদের মধ্যে সেন যুগে বৌদ্ধদের ওপর অত্যাচার চলেছে। এর বাইরে স্থানীয় শাসকদের দ্বারা ধর্মীয় উগ্রতার ঘটনা বিচ্ছিন্ন। মুঘল আমল থেকে শুরু করে আমাদের পরাধীনতাকাল যখন শুরু হয়েছে তখন থেকে ধর্মীয় উগ্রতা, পারস্পারিক অবিশ্বাস ও বিভেদের বীজ একটু একটু করে রোপন করা হয়েছে। আশা করি সমগ্র বাংলার মানুষ একদিন এই বিষবৃক্ষের মূলসুদ্ধ উপড়ে ফেলতে পারবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

ইত্তেফাকে প্রকাশিত লেখা।

তারিখে বিভ্রান্তির দায় কার?
শামসুজ্জামান খান১৪ এপ্রিল, ২০১৫ ইং
১৯৫২ সালে ভারত সরকার প্রখ্যাত জ্যোতির্পদার্থ বিজ্ঞানী (Astrophysist) ড. মেঘনাদ সাহাকে প্রধান করে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি গঠন করে। প্রফেসর সাহা এ দায়িত্ব করেন এবং সেপ্টেম্বর ১৯৫৪ সালে পঞ্জিকা সংস্কার বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করেন।

ড. সাহা কমিটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনা করে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় পঞ্জিকা শকাব্দের বিজ্ঞানসম্মত সংস্কার সাধন করেন, সেই রিপোর্টে তিনি বাংলা পঞ্জিকারও অনুরূপ সংস্কার প্রস্তাব পেশ করেন। পূর্ববাংলায়ও পঞ্জিকা সংস্কারের লক্ষ্যে ঢাকার বাংলা একাডেমী ১৯৬৩ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি পঞ্জিকা কমিটি গঠন করে। এ কমিটি মূলত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. সাহার সংস্কার প্রস্তাবের মর্মানুযায়ীই বাংলাদেশে বাংলা পঞ্জিকা সংস্কারের প্রস্তাব করে। কারণ পঞ্জিকা মূলতই জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ধারিত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসেবে ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। পঞ্জিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানসম্মত বিন্যাস না হলে সময়ের বিপুল হেরফের হয়ে যেতে পারে। একটি মাত্র উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলায় নববর্ষ ছিল ১০ বা ১১ তারিখে। পঞ্জিকার বিজ্ঞানসম্মত বিন্যাস না হওয়ায় বিগত চারশ’ বছরে তিন বা চারদিনের হেরফের হয়ে গেছে। এখন আমরা নববর্ষ উদযাপন করি রোমান ক্যালেন্ডারের ১৪ তারিখে। পশ্চিমবাংলায় করে ১৪ বা ১৫ তারিখে। পশ্চিম বাংলা সাহা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তার ফলে আমরা যেমন ভারতবর্ষে রাষ্ট্রীয় পঞ্জিকার বিজ্ঞানসম্মত বিন্যাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ১৪ এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিতে পেরেছি পশ্চিমবাংলা তা পারেনি। ফলে তাদের দেশে একশ’ বছরে ২৬টি অধিবর্ষ হবে। আর চারশ’ বছরে হবে ১০৩টি। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মতভাবে হওয়া উচিত ছিল একশ’ বছরে ২৫টি এবং চারশ’ বছরে ১০০টি। শুধু তাই নয়, চারহাজার বছর পরে পশ্চিমবাংলায় পহেলা বৈশাখ হবে জুন মাসে। বিজ্ঞানের পরিবর্তে সংস্কার এবং অপবিজ্ঞানভিত্তিক বাজারী পঞ্জিকার ওপর নির্ভরশীলতার কারণেই পশ্চিমবাংলার দিন-তারিখ নির্ধারণে এমন বিধিকিচ্ছি কাণ্ড ঘটবে। এখনই নববর্ষ, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী আমরা যখন পালন করি পশ্চিমবাংলা করে তার একদিন পরে। অর্থাত্ জোতির্বিজ্ঞানকে অবজ্ঞা করে সংস্কারাচ্ছন্ন পঞ্জিকা নির্ভরতা ইতোমধ্যেই তাদের একদিন পেছনে ফেলে দিয়েছে। এই সমস্যা যে আমাদের এখানে না হয় সেজন্যই ইতোমধ্যেই তাদের একদিন পেছনে ফেলে দিয়েছে। এই সমস্যা যেন আমাদের এখানে না হয় সেজন্যই ১৯৬৩ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পঞ্জিকা সংস্কার প্রস্তাবে যে

সংস্কার করা হয় তা ছিল নিম্নরূপ :

বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাস ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস ৩০ দিনে গণ্য করা হবে এবং যে বছরে লিপ-ইয়ার বা অধিবর্ষ হবে সে বছরে চৈত্র মাস হবে ৩১ দিনে। এরপর আশির দশকে বাংলা একাডেমি কর্তৃক একটি টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বাংলা পঞ্জিকার অধিকতর উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে যে প্রস্তাব করা হয় তাতে বলা হয়, মাসের দিন নির্ধারণের পূর্বোক্ত পদ্ধতি বলবত্ থাকবে। তবে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে যে বাংলা বছরে ফাল্গুন মাস পড়তো সেই বাংলা বছরকে অধিবর্ষ গণ্য করা হবে। অধিবর্ষে চৈত্র মাসের পরিবর্তে ফাল্গুন মাসে ৩১ দিন হবে। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী রাত ১২টায় তারিখ পরিবর্তন হবে। বাংলা একাডেমী প্রবর্তিত বাংলা সনের এ বৈজ্ঞানিক সংস্কার বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করেছে এবং এখন তা সারাদেশে সরকারিভাবে চালু রয়েছে।

ভারতবর্ষে মেঘনাদ সাহা এবং এস.পি পান্ডে সংস্কার করলেও পশ্চিমবঙ্গ তা গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে বাংলা তারিখে একদিনের হেরফের হয়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলা একাডেমী পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে সুবিবেচনার পরিচয় দেয়নি। এবং এর ফলে বাঙলা তারিখ নিয়ে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে তার দায় বাংলাদেশের। এ বক্তব্য এবং যুক্ত যে লবৈজ্ঞানিক, অসত্য এবং দায়িত্ব জ্ঞানহীন আমরা তার ভারতবর্ষের পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞ এবং Indian Joual of History of Science 39.4 (2004) 519-534 সংখ্যার বিস্তৃত তথ্যামূলক প্রবন্ধ থেকে প্রমাণ করবো।

ড. সাহা কমিটির প্রস্তাব যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় ১৯৮৬ সালে ভারত সরকার প্রফেসর এস পি পান্ডের সভাপতিত্বে আরেকটি পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি গঠন করে। এ কমিটি ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে তাদের রিপোর্ট পেশ করে। পান্ডে কমিটি পঞ্জিকা সংস্কারে ভারতবর্ষের ঐতিহ্যগত, ধর্মসম্পৃক্ত নানা বিষয় বিবেচনা করে তাদের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এবং এ কাজে পঞ্জিকার বা জ্যোতিষীদেরও প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়। কমিটি দীর্ঘ যুক্তিতর্ক এবং সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণের পর ড. মেঘনাদ সাহার পঞ্জিকা সংস্কারের সায়ন পদ্ধতি থেকে ঐতিহ্যগত নিরায়ণ পদ্ধতিতে ফিরে আসেন এবং আরো দু’একটি ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন সাধন করেন। তবে তারা মেঘনাদ সাহার মতো পূর্ণ জ্যোতির্বিজ্ঞানভিত্তিক বা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন না করেও একটি সুষ্ঠু ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। ভারত সরকার পান্ডে কমিটির উপর্যুক্ত প্রস্তাব বিচার-বিশ্লেষণে ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে তা গ্রহণ করে।

বর্তমান লেখায় পান্ডে কমিটির বিস্তারিত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেয়ার সুযোগ নেই। তবে আমরা মূল বিষয়গুলো উল্লেখ করেই বোঝাতে পারবো বাংলা পঞ্জিকার সংস্কারে বাংলাদেশের সাহসী পদক্ষেপ ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞদের মতের মোটেই বিরোধী নয় বরং বলা চলে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বাংলা সন সংস্কারের যে নীতি-নির্ধারণ করে দিয়েছে তা-ই বাংলাদেশের পঞ্জিকাবিশেষ এবং পণ্ডিতেরা গ্রহণ করেছেন। এর কারণ হলো, বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় ভারত-বাংলাদেশসহ সব দেশের সিদ্ধান্ত তো একই হবে, হয়েছেও তাই। অথচ না জেনে না বুঝে কিছু কিছু শিক্ষিত লোকও পঞ্জিকা সংস্কার এবং দুই দেশের তারিখের হেরফেরের জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু এই দাবি একেবারেই অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক। এর ফলে ভবিষ্যতে পঞ্জিকা গণনায় যে ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে পশ্চিমবঙ্গ সে পথেই এগুচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্ষেত্রমোহন বসু বলেছেন, ‘হিন্দু পঞ্জিকাকারদের নিরায়ণ বর্ণনা নিতান্তই মান্ধাতা আমলের সেকালের হইয়া দাঁড়াইয়াছে। নিরায়ণ ও গণনা পদ্ধতির ফলে অধিবর্ষের সংখ্যা প্রতি ১০০ ও ৪০০ বছরে যথাক্রমে ২৬ ও ১০০টিতে পৌঁছে যাচ্ছে। বঙ্গদেশের ঋতুচক্রের সঙ্গে তার মাসের চিরন্তন সম্পর্কে ব্যবধান সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কয়েক হাজার বছর পর বৈশাখ মাসের শুরু আর গ্রীষ্মে হবে না, হবে বর্ষায় অর্থাত্ জুন মাসে।’ পশ্চিমবঙ্গের পঞ্জিকাকারেরা প্রকৃত সৌরবর্ষমানকে বাদ দিয়ে অবৈজ্ঞানিক নিরায়ণ করে বলে ধারণা ছিল। অথচ এখন আমরা তো সকলেই জানি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। এই মান্ধাতার আমলের অবৈজ্ঞানিক ধারণার ওপরই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্জিকারেরা তাদের পত্রিকার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে থাকেন। এটা একেবারেই হাস্যকর।

পান্ডে কমিটিতে শুধু পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ছিলেন না, ড. বিভি রমন নামে এক জ্যোতিষী এবং দ্বৈবজ্ঞ পঞ্জিকাকারও ছিলেন। তাদের সুবিবেচিত এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত হলো ‘The year shall start with the month of vaishkha wen the sun enters nirayana mesarasi, which will be 14th april of the Gregorian calendar’ অর্থাত্ ভারতীয় পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি সুস্পষ্টভাবে ১৪ এপ্রিলকে প্রতি বছর বাংলার নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং ভারত সরকার ২০০২ সালে তা গ্রহণ করেছে। এছাড়া ফাল্গুন মাসের ৩১ তারিখ যে অধিবর্ষ হবে তাও তারা নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং এটাও নির্ধারণ করেছেন যে রাত ১২টায় নতুন দিনের সূচনা হবে। বাংলাদেশের পঞ্জিকা সংস্কারেও এ সিদ্ধান্তগুলোই গ্রহণ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের মতোই তা গ্রহণ করেছে এবং তার বাস্তবায়নও করা হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে ৪-৫টি বৃহত্ পঞ্জিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক স্বার্থের কাছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নত স্বীকার করায় পশ্চিমবঙ্গ সংস্কারকৃত পঞ্জিকাটি গৃহীত হতে পারেনি। তারা এখনো মান্ধাতা আমলে আছে এবং দ্বৈবজ্ঞদের রহস্যময় ও গোপন পদ্ধতিতে নির্মিত পঞ্জিকাকেই ব্যবহার করে চলেছে। এ মূঢ়তার ও অবিমৃষ্যকারিতার দায় বাংলাদেশের ওপর কেন বর্তাবে?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই প্রবন্ধটি সুলিখিত ও precise।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুণ দারুণ দারুণ একটা লেখা! মুগ্ধ হইয়া গেলাম। এইবার হাজার বছরের গণতন্ত্র চর্চা নিয়া লেখাটা লেইখা ফেলেন। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আগে পড়াশোনা করে নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দারুণ একটা লেখা। বিভিন্ন সময় লোকমুখে আর পত্র পত্রিকায় পড়া কিছু বিচ্ছিন্ন তথ্য জানা ছিল। আপনার পড়াশোনার বৈচিত্র্য আর গভীরতা দেখে মুগ্ধ হওয়া ছেড়ে দিয়েছি আগেই, সেই কথা আর তাই আর না বাড়াই। এই লেখা থেকে আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করার মতো সেটা হলো, ভালো লেখা হলে আসলে পাঠকের মন্তব্য আসবেই। ফেসবুকের কারণে ব্লগ কিছুটা মার খেলেও মূল আবেদনটা আছে। শুধু ব্লগের লেখকদের ফেসবুকের তারকা ইমেজের লোভটা বাদ দিয়ে ব্লগে নিয়মিত হওয়া জরুরী। এই আলোচনাটা ফেসবুকে হলে কাজের সময় তো আর খুঁজে পাওয়া যেত না।

খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে শুরু করে চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বছর ধরে এখানকার ষোলটি রাষ্ট্রে গণপ্রজাতন্ত্রের চর্চ্চা হয়েছে

- এই বিষয়ে পড়তে চাই, কিছু বইয়ের নাম দিলে বাধিত হব।

শুভ নববর্ষ। আবার সূর্য উঠুক।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লেখকরা ব্লগে নিয়মিত লেখা শুরু করলে পাঠকেরাও সেখানে নিয়মিত আলোচনা করে যাবেন।

মহাজনপদ সংক্রান্ত বইয়ের অভাবে ভুগছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাসুদ সজীব এর ছবি

লেখকরা ব্লগে নিয়মিত লেখা শুরু করলে পাঠকেরাও সেখানে নিয়মিত আলোচনা করে যাবেন।

চলুক পূর্ণ সহমত।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

রণদীপম বসু এর ছবি

প্রতীক প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত এ কে এম শাহনাওয়াজের 'ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস প্রাচীন যুগ' গ্রন্থটিতে 'ষোড়শ মহাজনপদ ও গণরাজ্য' নামে একটি অধ্যায় (সপ্তম অধ্যায়) রয়েছে। তবে তা খুবই সংক্ষিপ্ত পরিচিতিমূলক, অধ্যায়টির পৃষ্ঠা সংখ্যা সাকুল্যে ৯ পৃষ্ঠা।
এই ষোড়শ মহাজনপদ হচ্ছে ১) কাশী (বেনারস ও বারাণসী), ২) কোশল (অযোধ্যা), ৩) অঙ্গ (পূর্ব বিহার), ৪) মগধ (দক্ষিণ বিহার), ৫) বৃজি (উত্তর বিহার), ৬) মল্ল (বিহারের অন্তর্গত গোরখপুর), ৭) চেদি (যমুনা ও নর্মদা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল), ৮) বৎস (এলাহাবাদ), ৯) কুরু (থানেশ্বর, মীরাট ও দিল্লী), ১০) পাঞ্চাল (বেরিলি, ফারুখাবাদ ও বদায়ূন), ১১) মৎস (জয়পুর), ১২) সূরসেন (মথুরা), ১৩) অশ্মক (গোদাবরী উপত্যকা), ১৪) অবন্তি (মালব), ১৫) গান্ধার (পেশোয়ার ও রাওয়ালপিণ্ডি), ১৬) কম্বোজ (কাশ্মীর)।

মূলত প্রাচীন ভারত বিষয়ক গ্রন্থাবলীকে টার্গেট করলে আরো বিস্তারিত তথ্যের সন্ধান নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গত বছর একুশে বইমেলা থেকে যতগুলো ইতিহাসের বই কিনেছি (নাম বললাম না) তার একটা ছাড়া বাকি সবগুলো বিশুদ্ধ ট্র্যাশ। সুতরাং এই জাতীয় বই আর কিনছি না।

কোন ধরনের বই টার্গেট করতে হবে তা জানি। তবে সেসব বইয়ের কয়েকশ' পৃষ্ঠা পড়লে কয়েক লাইন দরকারী জিনিস পাওয়া যায়। আবার বেশিরভাগ বইয়ে ঐ কয়েক লাইনও কমন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

বাংলাভাষায় (গোটা উপমহাদেশেই এই অবস্থা) ইতিহাস গ্রন্থের সবচাইতে বড় সমস্যা হলো রেফারেন্সের অভাব। কেউ রেফারেন্স দিয়ে লিখতে চায় না। হালের ফ্যাশন শুরু হয়েছে ইতিহাস ও ফিকশনের মিশেলে লাবড়া তৈরি করা। এইসব প্রবণতার সমস্যা হলো পরবর্তীতে কেউ কাজ করতে গেলে তাকে গোড়া থেকে আবার পড়াশোনা শুরু করতে হয়। এটা খুব ক্ষতিকর।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই অঞ্চলের ইতিহাস রচনার বড় সমস্যা হচ্ছে আকর গ্রন্থ না পাওয়া। ইতিহাস হিসেবে লিখিত বই (বাংলা/ইংলিশ) যা কিছু পাওয়া যায় সেখানে গোড়া থেকে রেফারেন্স দেবার ঘটনা ঘটেছে কম। ফলে যারা পরে লিখেছেন তারা পূর্ববর্তী জনের রেফারেন্স ছাড়া লেখা বইয়ের রেফারেন্স দিতে পারেন মাত্র। স্যার যদুনাথ সরকার, রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার, নীহাররঞ্জনদের লেখা বইয়ে অনেক বিষয়ে রেফারেন্সের ঘাটতি দেখতে পাবেন। এখনকার কেউ ইতিহাস লিখতে গেলে তাঁদের লেখা বইকে রেফারেন্স হিসেবে ধরলে কিছু ভুল পুরুষানুক্রমে চলে আসতে থাকবে। এইসব শ্রদ্ধাভাজন আবার যাদেরকে রেফারেন্স মেনেছেন যেমন, মিনহায-ফিরিশতা-ইসামী-বারনী-নাথান তাঁদের লেখায় আবার ব্যক্তিগত মত প্রকট। তাহলে আমরা যাই কই?

যাদের কষ্ট করার ইচ্ছা বা সামর্থ্য নেই তারা লাবড়াই রান্না করবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

১৬ মহাজনপদের তেমন কোন ইতিহাস পাওয়া যাবে না। আমি বছর তিনেক আগে একবার খুঁজেছিলাম। এই ষোল মহাজনপদ যখন ৪টাতে গিয়ে থামলো তখন আমাদের অঞ্চলটা মগধ হিসেবে পরিচিত ছিলো। এই মগধের ইতিহাস কোন পুরাণ আর কোনটা ইতিহাস সেটা একটা গবেষণার বিষয় বটে। এই মগধের ৪/৫ শত বছর পরে নন্দ আর গঙ্গারিদ্ধির কথা পাওয়া যায়। গঙ্গারিদ্ধি বিষয়েও খুব বেশি জানা যায় না। তথ্য যা আছে তা খুব লিমিটেড। এর পর থেকে বাংলার ইতিহাস মূলত কে কবে কাকে খুন করে ক্ষমতা দখল করলো সেটার ইতিহাস। সাথে খুব বেশি হলে মনুর বিধান মানা না মানা নিয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মোটামুটি একমত। শিশুনাগ ডায়নাস্টির পঞ্চম পুরুষ বিম্বিসার থেকে অল্পস্বল্প বিবরণ পাওয়া যায়। এর আগের শিশুনাগদের ১৪০ বছর (৬৮৪-৫৪৪ খ্রীস্টপূর্ব), তার আগের প্রদ্যোত ডায়নাস্টির ১১৫ বছর (৭৯৯-৬৮৪ খ্রীস্টপূর্ব), তারও আগে বৃহদ্রথ ডায়নাস্টির ৯০১ (১৭০০-৭৯৯ খ্রীস্টপূর্ব) বছরের ইতিহাস নাই। শিশুনাগ পরবর্তী নন্দদের ১০৩ বছর (৪২৪-৩২১ খ্রীস্টপূর্ব) সম্পর্কে জানার উপায় দেখছি না। এরপরের মৌর্যদের ১৩৯ বছরের ইতিহাসে অশোকের আলোয় বাকি মৌর্যরা যেমন ঢাকা পড়েছে তেমন অশোকের অপকর্মও ঢাকা পড়েছে। মহাজনপদ তথা ভারতবর্ষের আদি গণতন্ত্রের কবর অশোকই রচনা করেছে। মৌর্য পরবর্তী মহামেঘবাহন ডায়নাস্টির ৬৫০ বছর (২৫০ খ্রীস্টপূর্ব- ৪০০ খ্রীস্টাব্দ) ইতিহাস থেকে হাওয়া। প্যারালাল টাইমের সুঙ্গদের ১১২ বছর (১৮৫-৭৩ খ্রীস্টপূর্ব), কাহ্নদের ৩০ বছরও (৭৩-৪৩ খ্রীস্টপূর্ব) নাই। গুপ্ত যুগের দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত (৩৭৫-৪১৫ খ্রীস্টাব্দ) থেকে মোটামুটি ইতিহাস যা পাওয়া যায় ততদিনে মহাজনপদরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সাহিত্য-ধর্মীয় পুস্তকাদি থেকে কখনো দুই/এক কণা সত্য জানা যায়। আবার কখনো কোন সত্যটাকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলো সেটাও বুঝতে পারা যায়। তবে সেতো সমুদ্রমন্থনের মতো কাজ। অত সামর্থ্য আমার নাই।

মহাজনপদ নিয়ে আমি ছাড়া ছাড়া ভাবে গত তিন/চার বছর ধরে জানার চেষ্টা করছি। জানি না কখনো এই ছাড়া ছাড়া জানাগুলো একসাথ করে কিছু একটা দাঁড়াবে কিনা। তবে আমি চেষ্টা করে যাবো। এই চেষ্টাটা আমার ভালো লাগে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণ এর ছবি

অনেকদিন পর আনন্দ নিয়ে একটা লেখা পড়লাম। লেখার বিষয়বস্তুর উপর আলোচনা চালানোর মত বিদ্যা আমার পেটে নাই, তাই নববর্ষের শুভেচ্ছা দিয়ে কেটে পড়লাম পাণ্ডবদা।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

ধৈর্য্য ধরে বসে ছিলাম, বিফলে যায় নি ব্যাপারটা। আশা করেছিলাম কেউ একজন আমার মনের মত একটা কমেন্ট করবে, আর আমি সেটাতে বুড়ো আঙ্গুল উঁচিয়ে বসে থাকব।

কল্যাণকে ধন্যবাদ আর পাণ্ডবদার জন্য কুর্নিশ রেখে গেলাম

কল্যাণ এর ছবি

হেহ হেহ, যত পরিশ্রম সব করলো পাণ্ডবদা, আর ধন্যবাদের ভাগ নিয়ে চলে যাচ্ছি আমি শয়তানী হাসি

নোটঃ বেশ কিছুদিন হল শুধু সচলে এসে হালকা পাতলা পড়েপড়েই কেটে পড়ছিলাম; কিন্তু এই লেখাটা পড়ার পর লগইন করে লেখকের পাওনা ফিডব্যাকটা না দিলে অপরাধ হয়ে যাচ্ছিল।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই থ্রেডে আমার প্রতিমন্তব্য করার আর সুযোগ নাই। তাই আর কিছু বললাম না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

আমারও এই কমেন্টে সহমত,

লেখার বিষয়বস্তুর উপর আলোচনা চালানোর মত বিদ্যা আমার পেটে নাই, তাই নববর্ষের শুভেচ্ছা দিয়ে কেটে পড়লাম পাণ্ডবদা।

শুভ নববর্ষ

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শুভ নববর্ষ!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা এর ছবি

সব কথা বলা হয়ে গেছে হাসি
শুভ নববর্ষ!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ফাঁকিটা না দিলেও পারতেন বস্‌!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা এর ছবি

ফাঁকি কি আর ইচ্ছা করে দিই গো প্রিয়, সময় আমার এই হালই করে ছেড়েছে। এ বিদেশে না আছে বই ঘরে, না আছে সময় বনের (গ্রন্থাগারের) বই শিকারের। শুধু কোন লেখালেখি স্মৃতির সাথে না মিললে সেটা নিয়ে মুখ খুলে দ্বিধা জানাতে পারি। এ লেখায় প্রতিদিন-ই চোখ রাখছি। সব কটি মন্তব্য পড়েছি। কিছু কিছু মন্তব্য অনেকবার পড়েছি। লেখায় আর মন্তব্যে মিলিয়ে বিশেষ সমৃদ্ধ পোস্ট হয়ে উঠেছে। আর কি করতে পারি, আমার জানা নেই।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঐ দ্বিধাটুকুই না হয় জানান। তাহলে আমি বা অন্য কেউ সেটা নিয়ে খোঁজখবর করে ঠিক তথ্যটা বের করে আনতে পারবে। ব্লগের সুবিধা তো এখানে, যেখানে লেখক-পাঠক মিলে সত্যটাকে তুলে ধরতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

এমন অসামান্য গবেষণালব্ধ সম্পূর্ণ লেখা আমি কমই পড়েছি। অনেক কিছু জানলাম, যা নিয়ে আমার ন‌্যূনতম কোন চিন্তারও উদ্রেগ হয় নি। আমার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা স্তর নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। এ ধরণে লেখার প্রত্যাশায় রইলাম।

স্নেহাশীষ রায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্নেহাশীষ রায়, আমি ঠিক নিশ্চিত না আপনি নিয়মিত সচলায়তন পড়েন কিনা। না পড়ে থাকলে একটু নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করুন (পুরনো পোস্টগুলোও পড়তে পারেন), দেখবেন কী অসাধারণ সব লেখকরা এখানে নানা বিষয় নিয়ে লিখে থাকেন। সেসবের তুলনায় এই পোস্ট কিছুই না। আর নিজের ভাবনাগুলো লিখে এখানে পোস্ট করতে পারেন। দেখবেন লেখক-পাঠক মিথষ্ক্রিয়ায় আপনিও এর অংশ হয়ে পড়বেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

nipu এর ছবি

আনুমানিক কত সাল থেকে অগ্রায়নের বদলে বৈশাখ কে বছর প্রথম করা হয়েছে ব্যাপারটা এখনো কেউ বললেন না। আরো একটা খটকা ....

দেখা যাচ্ছে দক্ষিন এশিয়ার অনেক দেশে মধ্য এপ্রিলে নববর্ষ পালন করে। মানে মধ্য এপ্রিলে নববর্ষ অনেক প্রাচিন। আবার বলা হচ্ছে, আগে নববর্ষ হত অগ্রায়নে পরে সেটা বদল করে বৈশাখ করা হয়েছে। ব্যাপারটা মতবিরোধী হয়ে গেলনা?

মানে প্রাচীন কালে যদি নববর্ষ অগ্রায়নেই পালন করা হয় তাহলে অন্তত কিছু দেশে এখোনো মধ্য এপ্রিলের বদলে মধ্য নভেম্বরে নববর্ষ পালন করার কথা (বৈশাখ=এপ্রিল এবং অগ্রায়ন = নভেম্বর)। কিন্তু তা হচ্ছে না।

ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে মনে হয়। ব্যাপারটা এমন নয় যে, এক কালে সবাই মিলে মার্গশীর্ষ/অগ্রহায়ণে নববর্ষ পালিত হতো আর তারপর সবাই মিলে বৈশাখে পালন শুরু হয়েছে। ক্যালেন্ডারটিকে মোটামুটি ঠিক রেখে বিভিন্ন স্থানে নববর্ষ পালনে কিছু হেরফের ছিল। কেউ চৈত্র মাস থেকে বছর শুরু করতেন কেউ নবান্ন থেকে (১লা অগ্রহায়ণ) কেউ মকরসংক্রান্তি থেকে (৩০পৌষ/১লা মাঘ) আর কেউ বৈশাখ থেকে। কালক্রমে বৈশাখে বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী স্থিতি পায়। এটা এক সময়ের ঘটনা নয়। বহু বছর ধরে একটু একটু করে হয়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলবায়ুর সাথে সঙ্গতি রাখতে গেলে বৈশাখে রাজস্ব আদায় সহজ হয় বলে বৈশাখ প্রথম মাস হিসেবে স্থিতি পেয়েছে। লক্ষ করলে দেখবেন খোদ বাংলাদেশে মারমারা মকরসংক্রান্তিতে পূণ্যাহ (রাজস্ব আদায়) পালন করেন, কিন্তু একই সাথে তারা বৈশাখে সাংগ্রাইং পালন করেন। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকলে বা অঞ্চল ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত থাকলে এমন বহুমত ও বহুপথের উপস্থিতি স্বাভাবিক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

nipu এর ছবি

ধন্যবাদ ষষ্ঠ পাণ্ডব।

ব্যাপারটা আমার কাছে এখনো পরিস্কার হলনা। অবশ্যই সামাজিক পরিবর্তন হুট করে হয়ে যায়না। এবং অবশ্যই ছোটখাট এলাকা জুড়ে হালকা বহুমত থাকবে। আমি সামগ্রিক বা সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা বলছি।

মানে, নববর্ষ একটা বড় ব্যাপার। নববর্ষের একদিন আগে ১৪২২ সাল এবং একদিন পরে ১৪২৩ সাল! বিগ ডিল! ক্ষেত্র বিশেষে একদিন আগে পরে হয়তো মেনে নেয়া যাবে, কিন্তু ছয় মাস নয় (অন্তত একই অধিক্ষেত্রের মধ্যে)।

ঠিক আছে আমি আরেকটু নির্দিষ্ট করে বলছি। আমি জানতে চাইছি, ইংরেজী ১১০০ খ্রিষ্টাব্দে (খিলজীর আক্রমনের পুর্বে)। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন নববর্ষ পালন করত কোন মাসে? মাত্র একহাজার বছরের আগের ইতিহাস। দুএকটা অ-বিতর্কিত নথিতো থাকার কথা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মাত্র একহাজার বছরের আগের ইতিহাস। দুএকটা অ-বিতর্কিত নথিতো থাকার কথা।

দুঃখের সাথে জানাচ্ছি,অন্তত আমার জানা মতে নেই। এই সময়কার ইতিহাস যেসব বইয়ে পাওয়া যায় সেগুলোতে ক্যালেন্ডার সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই। উৎসব বলতে সেখানে ব্যক্তিগত উৎসবগুলোকে বোঝানো হয়েছে। সার্বজনীন কোন উৎসবের (এমনকি ধর্মীয়) কোন উল্লেখ পাইনি।

আমরা বরং অন্য ভাবে চেষ্টা করে দেখতে পারি। দ্বাদশ শতকে বাংলায় কারা কারা শাসন করতো সেটা দেখা যাকঃ

১. অন্তত ৬ জন পাল সম্রাট (রামপাল > কুমারপাল > তৃতীয় গোপাল > মদনপাল > গোবিন্দপাল > পালাপাল)। এরা বৌদ্ধ।
২. অন্তত ৩ জন সেন সম্রাট (বিজয়সেন > বল্লালসেন > লক্ষ্মণসেন)। এরা হিন্দু।
৩. অন্তত ২ জন দেব সম্রাট (পুরুষোত্তমদেব > মধুসূদনদেব)। এরা হিন্দু।
৪. অন্তত ৩ জন বর্মণ সম্রাট (হরিবর্মণ > শমলবর্মণ > ভোজবর্মণ) এরা হিন্দু।
৫. অন্তত ২ জন রণক সম্রাট (রণক নন্দ > রণক সমুদ্রাদিত্য)। এরা বৌদ্ধ।
৬. একাদশ দশকের মাঝামাঝি চোলা সম্রাট রাজেন্দ্র চোলা ধর্ম্মপাল কম্বোজকে পরাজিত করে কম্বোজদের উৎখাত করেন ও বাংলার একাংশ দখল করেন। চোলাদের শাসন কবে পর্যন্ত এবং কোন কোন অঞ্চলে চলেছে এই ব্যাপারে কোন কিছুই পাইনি। চোলাদের শাসন দ্বাদশ শতক পর্যন্ত গিয়ে থাকলে তাদেরকেও হিসেবে ধরতে হবে। এরা হিন্দু।

বৌদ্ধ সম্রাট যদি বৌদ্ধ ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকেন সেক্ষেত্রে চৈত্র বা বৈশাখ মাসে বছর শুরু হবে।

হিন্দু সম্রাট যদি শক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকেন সেক্ষেত্রে চৈত্র মাসে বছর শুরু হবে। আর হিন্দু সম্রাট যদি শশাঙ্কের সময় থেকে চলে আসা ক্যালেন্ডার বা বৈদিক ক্যালেন্ডার ভিত্তিক স্থানীয় ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকেন তাহলে বৈশাখ মাসে বছর শুরু হবে।

চোলা সম্রাট যদি তামিল ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকেন তাহলে বৈশাখ মাসে বছর শুরু হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

nipu এর ছবি

ধন্যবাদ।
এই অনুযায়ী সবদিকদিয়েই বছর শুরু হত হয় বৈশাখ, না হয় চৈত্র মাষে। তহালে অগ্রহায়ণ মাসে বছর শুরু হওয়ার ধারনাটা কেন/কোথা থেকে আসছে?

আর হলে সেটা কত সালের দিকে হত?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার লেখাতে দেখবেন আমি কিন্তু অগ্রহায়ণকে বছরের প্রথম মাস বলে দাবী করিনি। এই দাবী যারা করেছেন তারা কিন্তু এই ব্যাপারে কোন রেফারেন্স দেননি। আমিও খুঁজে পাইনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।