আমি বাসায় ফিরে ঘটনা শুনে বাবানকে জিজ্ঞেস করি কী করে, কোথায় পড়ে গিয়েছিল। উত্তর বাবান জানায়, ব্যাপারটা খেলতে খেলতে হয়নি। তাদের ক্লাসের রাশমিন নাসির একটু দুরন্ত স্বভাবের মেয়ে। প্রায়ই সে অকারণে যাকে ইচ্ছা তাকে ধাক্কা মারে, ব্যাগ ফেলে দেয়া, পানির বোতল থেকে পানি ছুঁড়ে মারে, কিল-ঘুষি মারে, সহপাঠীদের হাত মুচড়ে ধরে, জোরে জোরে চীৎকার করে ইত্যাদি। আজ টিফিন ব্রেকের সময় সে হঠাৎই বাবানকে ধাক্কা মারে। বাবান তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়ে ঠোঁট কেটে ফেলে। রাশমিন মেয়েটাকে আমি দেখেছি। ক্লাসের অন্য বাচ্চাগুলোর চেয়ে মাথায় একটু বেশি লম্বা, মোটা নয় তবে স্বাস্থ্য ভালো। আচমকা অমন মেয়ের ধাক্কা খেলে রোগা বাবানের পক্ষে তাল সামলাতে না পারারই কথা। ব্যাপারটা আমরা একেবারেই গায়ে মাখি না, বরং বাবানকে বলি রাশমিনের ব্যাপারে একটু সাবধানে থাকতে।
************************************************************
স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতি ক্লাসের বাচ্চারা এক একটা একাঙ্কিকা করে থাকে। সেই একাঙ্কিকাতে আবার একটু গান, একটু নাচ, একটু আবৃত্তি আর একটু অন্য কিছু থাকে। এই অন্য কিছু মানে কোন ক্লাসের কেউ হয়তো কার্টহুইল করতে পারে, কোন সুযোগে সেটা দেখানো হবে; আবার অন্য কোন ক্লাসের কেউ হুলা হুপ চালাতে পারে সেটাও সুযোগ করে দেখানো হবে ইত্যাদি — উদ্দেশ্য ক্লাসের বেশির ভাগ বাচ্চা যেন স্টেজে কিছু না কিছু পারফর্ম করার সুযোগ পায়। ক্লাসপিছু বরাদ্দ পনের মিনিটে এরচেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব না। একটা ক্লাস যখন পারফর্ম করতে থাকে তখন ঐ ক্লাসের সব বাচ্চাই মঞ্চডানায় ভীড় করে দাঁড়ায়। ঠেলাঠেলি করতে করতে তাদের কেউ কেউ মূল মঞ্চেও ঢুকে পড়ে, কখনো কখনো মাইকে তাদের আলাপচারিতাও চলে আসে। কোন একাঙ্কিকাতে ‘নেপথ্যে কোলাহল’ ধরনের কিছু থাকলে যথাসময়ে ক্লাসের সবাই একত্রে চীৎকার করে ওঠে।
বাবানদের ক্লাস যা পারফর্ম করবে সেখানে একটা রূপকথার গল্পের একাঙ্কিকা আছে, যেখানে বাবান একটা বানরের ভূমিকায় অভিনয় করবে। এছাড়া অপালা আর মিনিতা ভালো নাচে, তারা রাজকন্যার মন ভালো থাকার সময়ে ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ নাচবে; আহ্নাফ নানা নানা রকম পাখির ডাক ডাকতে পারে, রাজকন্যার বাগানে সে তিন রকমের পাখি সেজে ডাকবে। রাশমিনকে অভিনয়ে রাখা হয়েছিল, কিন্তু সে নির্দেশকের কোন নির্দেশই শোনেনি, উলটো এটা সেটা করে রিহার্সাল ভন্ডুল করার চেষ্টা করেছে — তাই তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে রিহার্সালের গল্প শুনতে শুনতে এগুলো আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে। বাবানদের ক্লাস যখন পারফর্ম করতে আসলো তখন ওদের ক্লাসের সব বাচ্চা যথারীতি মঞ্চডানায় ভীড় করে দাঁড়ালো। দেখা গেলো রাশমিন কখনো নাটকের রাজকন্যার মুকুট খুলে নিচ্ছে, কখনো রাজপুত্রের তরবারী ধরে টানছে আবার কখনো বানরের হাত মুচড়ে পিঠের দিকে নিয়ে আসছে। এক পর্যায়ে সে সেনাপতিকে ধাক্কা মেরে মঞ্চে ঢুকিয়ে দিলো, অথচ সেনাপতির তখন দৈত্যের সাথে যুদ্ধে হেরে পালিয়ে থাকার কথা।
************************************************************
ফেসবুকে সবাই সবার ‘ফ্রেন্ড’। ফেসবুকের শত শত ‘ফ্রেন্ড’দের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশও যে বাস্তব জীবনে ‘ফ্রেন্ড’ হয় না সেটা আমাদের জানা আছে। ফেসবুকে না হোক বাস্তব জীবনে আমি আর দিশা খুব চেষ্টা করি বাবানের ফ্রেন্ড হতে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে আমরা প্রায়ই ওর সাথে ওর বন্ধুবান্ধব, তাদের কর্মকাণ্ড, তাদের ভালোমন্দ ইত্যাদি বিষয়ে গল্প করি। নানা বিষয়ে আমাদের সাথে সহজে কথা বলতে উৎসাহিত করি। ইদানীং বাবান উচ্চ মাধ্যমিকে ওঠার পর দিশা প্রায়ই তাকে জিজ্ঞেস করে সে এখনো কেন কোন গার্লফ্রেন্ড যোগাড় করতে পারলো না। আমাদের উদ্দেশ্য সরল — আমাদের বাচ্চাটা যেন আমাদেরকে তার সবচে’ কাছের মানুষ মনে করে, নিজেকে যেন কখনো একা মনে না করে; তাকে যেন কুসঙ্গ, মাদক আর জঙ্গীবাদ থেকে দূরে রাখতে পারি। বাবান মাধ্যমিক পর্যায়ে ওঠার পর একদিন এমন এক আলাপে জানা গেলো রাশমিনকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কারণ, তার এই দুরন্তপনার জন্য বিভিন্ন অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ইত্যাদি। কথাটা শুনে আমাদের মন যতোটা না খারাপ হলো তারচেয়ে ঢেড় বেশি ক্ষোভ মনে জমলো।
এই স্কুলটা তো বটেই, এই রকম আরও অনেকগুলো তথাকথিত নামকরা স্কুল আছে যেখানে শিশু শ্রেণীতে বাচ্চা ভর্তি করানোর সময় বাচ্চা লেখাপড়া কতোটুকু জানে, বাবা-মায়ের শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা, তাদের ট্যাঁকের জোর কতটুকু, রাজনৈতিক পরিচয় কী ইত্যাদি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানা হয়। এখানে এক একটা ক্লাসে বাচ্চার বইখাতার ওজন বাচ্চার ওজনের দ্বিগুণ। এখানে ক্লাসে যতোটা না পড়ানো হয় তারচেয়ে ঢেড় বেশি বাড়ির কাজ দেয়া হয়। ছুটির সময় গাদাগুচ্ছের বাড়ির কাজ দিয়ে ছুটির আনন্দ মাটি করা হয়। পড়ানো হয়নি এমন বিষয়ে ক্লাস টেস্ট বা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হয়। টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার ঠিক আগে দিয়ে সিলেবাস পালটানো হয়। একজন শিক্ষার্থীর সীমাবদ্ধতাগুলো কী কী সেগুলো জেনে শোধরাবার চেষ্টা না করে ওসব নিয়ে বাবা-মা’কে ডেকে ধমকানো হয়। বলা হয়, আপনাদের পছন্দ না হলে আপনাদের বাচ্চাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যান। স্কুলের বার্ষিক ম্যাগাজিনে স্কুলের নামের শেষে ছোট করে ‘লিমিটেড’ লেখা এই কোম্পানিগুলো থেকে বাচ্চাকে নিয়ে চলে আসা যায় বটে, কিন্তু অন্য কোন স্কুলে শিশু শ্রেণী ছাড়া অন্য কোন ক্লাসে বাচ্চাকে ভর্তি করতে পারাটা ‘আইভী লীগ’ কলেজে ভর্তির চেয়ে কঠিন — মেধা থাকলে বরং আইভী লীগ কলেজে ভর্তির হবার আশা করা যায়। যে দেশে প্রতি বছর পঁচিশ লাখের বেশি বাচ্চা জন্মায় সেই দেশে এমন কোম্পানিগুলোর কখনো কাস্টমারের অভাব হবে না। তাই তাদের ঔদ্ধত্য দিনের পর দিনে সীমা ছাড়াতে থাকে।
সন্তানকে শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, নৈতিকতা, ভালোমন্দের পার্থক্য করা ইত্যাদি শেখানো পরিবারের দায়িত্ব বটে, তবে এই ব্যাপারে স্কুলের ভূমিকা একেবারে দায়শূন্য নয়। একটা বাচ্চাকে শৃঙ্খলা শেখানোর দায়িত্ব না নিয়ে তাকে বহিষ্কার করে ঝামেলা এড়ানোর মতো বিবেকশূন্য স্কুল নামের কোম্পানির ওপর আমাদের তীব্র ক্ষোভ হয়, ক্রোধ হয়। আমরা অক্ষম আক্রোশে ফেটে পড়ি, কিন্তু কিছু করতে পারি না।
************************************************************
সময় বয়ে যায়। বাবান মাধ্যমিক পর্যায়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। ক্লাস-কোচিং-মক টেস্টের চাপে তার খেলার সময় তো বটেই বিশ্রামের সময় পর্যন্ত মেলে না। স্কুলে বা কোচিং-এ যেতে আসতে রাস্তার ট্রাফিক জ্যামে বাচ্চাটা গাড়িতে ঘুমিয়ে কাদা হয়ে যায়। কখনো কখনো রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত পরীক্ষা চলে, অফিসফেরত আমি কোচিং সেন্টারের বাইরে অপেক্ষায় থাকি। এমন দিনগুলোতে বাবানের সাথে গল্প করার সময় তার সহপাঠীদের খোঁজ নেই — কে কী বিষয় নিয়েছে, কার প্রস্তুতি কেমন ইত্যাদি। আমার যাদের নাম মনে আছে তাদের নাম ধরে খোঁজ নেই, রাশমিনের কথাও জিজ্ঞেস করি। জানা গেলো রাশমিনের সাথে আজকাল পুরনো বন্ধুদের মোটামুটি কারোই যোগাযোগ নেই। মিনিতাদের বাসা একই রাস্তায় বলে রাশমিনের সাথে তার কালেভদ্রে দেখা হয়। তার কাছে শোনা গেছে রাশমিন প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে পরীক্ষা দেবে। স্কুলের সহপাঠীদের মধ্যে যারা ওর ‘ফেসবুক ফ্রেন্ড’ তাদের কাছে জানা গেছে রাশমিন ফেসবুকে কখনো কখনো তার ছবি পোস্ট করে বটে কিন্তু তাদের পাঠানো মেসেজের বা তাদের করা কমেন্টের উত্তর খুব একটা দেয় না।
একদিন ইন্টারনেটে কী যেন দেখতে দেখতে বাবান হেসে গড়িয়ে পড়ে। ব্যাপার কী জিজ্ঞেস করতে সে দেখালো কোন একটা ভিডিও সাইটে রাশমিন তার একটা নাচের ভিডিও আপলোড করেছে। সেখানে ভীম নিরৌলা’র বহুল আলোচিত ‘সানডে মর্নিং লাভ ইউ’ গানের সাথে সাথে রাশমিন আর তার সমবয়স্কা একটা মেয়ে নাচছে। সেখানে রাশমিন ভীম নিরৌলা সেজে ভুঁড়ি বাগিয়ে নাচছে, আর অন্য মেয়েটা শার্টের ওপর একটা ওড়নাকে শাড়ির মতো করে প্যাঁচিয়ে পরে ভীমের সহযোগী মডেল সেজে নাচছে। আমি মজার ভিডিওটা মিনিটখানেক দেখে নিজের কাজে চলে যাই।
************************************************************
মাধ্যমিক শেষ হতে না হতে উচ্চ মাধ্যমিকের তোরজোর শুরু হয়ে যায়। বাবানের পড়ার চাপ বাড়ে আগের চেয়ে বহুগুণ। উচ্চ মাধ্যমিকে উঠে অনেকে বিষয় পরিবর্তন করায় বাবানের পুরনো অনেক সহপাঠী নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পুরনো বেশিরভাগ জনের সাথে আর বিশেষ যোগাযোগ থাকে না, বরং নতুন নতুন বন্ধু জোটে। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্বের পরীক্ষা যখন ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে অমন এক দিনে আমরা তিনজন একসাথে গল্প করছি। স্বাভাবিকভাবে গল্পের মূল বিষয় আসন্ন পরীক্ষা। বাবানের বন্ধুবান্ধবদের কে কে এই দফাতে কোন কোন বিষয় পরীক্ষা দিচ্ছে সেটা জিজ্ঞেস করায় স্বাভাবিকভাবে এক পর্যায়ে রাশমিনের কথা জিজ্ঞেস করলাম। আমার প্রশ্নে বাবান হঠাৎ চুপ করে মাথা নিচু করে ফেললো। মনে অজানা আশঙ্কা উঁকি দিলো। এরপর বাবান যা জানালো তাতে আমাদের বুক ভেঙে গেলো। কয়েক মাস আগে অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে রাশমিন মারা গেছে! বাবানের বন্ধুদের কারও সাথে রাশমিনের পরিবারের কোন সদস্যের যোগাযোগ না থাকায় খবরটা জানতে দেরি হয়েছে। ঘটনার প্রকৃতি আর আকস্মিকতায় বাবান আর আমাদেরকে আগে জানায়নি। আমি নিজেও নির্বাক হয়ে গেলাম।
পরদিন পুরনো পত্রিকা ঘেঁটে খবরটা বের করলাম। কোন পত্রিকাতে এটাকে আত্মহত্যা আর কোন পত্রিকাতে এটাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলেছে। কোথাও বলেছে বিষপান করে, কোথাও বলেছে মাদক সেবন করে, আবার কোথাও বলেছে ঘুমের মধ্যে মারা গেছে। পত্রিকাতে শুধু রাশমিনের মায়ের বক্তব্য এসেছে। সেখানে তিনি মাদক, বিষ, আত্মহত্যা বা হত্যা কোন ব্যাপারেই কিছু বলেননি। খবরে জানা গেছে রাশমিনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনার দিনের পরের কয়েক দিনের পত্রিকা ঘেঁটে এই খবরের আর কোন ফলোআপ খুঁজে পাইনি।
************************************************************
এই জীবনে এতোসব কুৎসিত, বীভৎস, মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখেছি যে এখন অনেক ঘটনাই আর আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে না। তবুও তার মধ্যে দুয়েকটা ঘটনা আছে যেগুলো আমার ভিত্তিমূল নাড়িয়ে দিয়েছে। রাশমিনের মৃত্যু সংবাদ আমার কাছে অমন একটা ঘটনা। অথচ রাশমিনের সাথে আমার কখনো কোন কথা হয়নি, আমি ওকে কখনো কোলেপিঠে নেইনি, ওকে কখনো কোন খেলনা বা খাবার কিনে দেইনি। হয়তো রাশমিন আমার নিজের সন্তানের সহপাঠী বলে, হয়তো ওকে খুব ছোটবেলা থেকে দেখছি বলে, হয়তো ওর দুরন্তপনার খবর আমার কাছে মজা লাগতো বলে আমি এমন ধাক্কা খেয়েছি। তবে আমি ধাক্কা খাই বা না খাই কোন বিবেচনায়ই মাত্র ১৬ বছরের একটা বাচ্চার এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।
************************************************************
ঘটনার বয়ানে পত্রিকার খবরে যা-ই লিখে থাকুক না কেন, আসলে বাবানের কাছ থেকে যে ভাষ্য পাওয়া গেছে সেটাই সঠিক। জানলাম রাশমিন বেশ কিছুদিন ধরে কুসঙ্গে পড়েছিল এবং সে খুব খারাপভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে এ’ক্ষেত্রে তার পরিবারের ভূমিকা কী ছিল। এই বয়সী একটা বাচ্চা, যার নিজের কোন উপার্জন নেই, সে কী করে প্রতিদিন মাদকের টাকা যোগাড় করতে পারে, যদি না তার বাবা-মা সেটা যোগায়? এই বাবা-মা কতো বড় মূঢ় হলে তারা প্রতিদিন মেয়েকে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে গেছে কিন্তু সেই টাকা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তার খোঁজ রাখেনি?
বছর দশেক আগে এক রিহ্যাবে এই বয়সী একটা মেয়েকে দেখেছিলাম। সে জানিয়েছিল তার মাদকের মাসিক খরচ দেড় লাখ টাকা। শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। ঐ সময়ে গণ্ডাখানেক ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সারা মাসের বেতন একত্রিত করলেও দেড় লাখ টাকা হতো না। এরা কেমন বাবা-মা যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের হাতে প্রতি মাসে এমন বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে দেয় কিন্তু সেই টাকার কী গতি হয়েছে তার খোঁজ রাখেনি! এরা কোন গ্রহের প্রাণী যারা আত্মজ/আত্মজার কোন খোঁজ না রেখে অর্থ-ক্ষমতা-পদ-যশ ইত্যাদির পেছনে ছোটে! এইসব মনুষ্যেতরদের কী অধিকার আছে একটা সন্তানকে পৃথিবীতে আনার!
************************************************************
মাদকদ্রব্য আকাশ থেকে পড়ে না। এগুলোর কিছু ঐ দেশের ভেতরে উৎপাদিত হয় আর বাকিটা ঐ দেশের বাইরে থেকে আসে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী অমুক দেশের তমুক জায়গায় মাদক উৎপাদনের কারখানা ধ্বংস করে দিয়েছে এবং মাদক উৎপাদনের সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতার করেছে এমন খবর খুব কম পড়তে পাওয়া যায়। আপনি বা আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া স্থল-জল-বিমান কোন পথে কোন দেশের সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবো না। অমন চেষ্টা করলে সীমান্তরক্ষী বা অভিবাসন কর্মকর্তারা আমাদেরকে ঠেকিয়ে দেবেন অথবা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেবেন। অথচ প্রায় সব দেশে প্রতিদিন শত কোটি টাকার ইয়াবা-ফেন্সিডিল-হেরোইন-কোকেন-হাশিশ ইত্যাদি মাদক সীমান্ত পার হয়ে ঢুকছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তার কিছু যে ধরা পড়ছে না যে তা নয়, কিন্তু সেটা মোট পরিমাণের অতি ক্ষুদ্র অংশমাত্র। ড্রাগ পেডলারদের কেউ কেউ ধরা পড়ে বটে, কিন্তু আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে এমন ক্ষমতাবানেরা পর্দার আড়ালে নিরাপদ থেকে যাচ্ছে, তাদের কারো ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায় না। রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের প্রতিপক্ষ, দেশ ও জাতির ভবিষ্যত ধ্বংসকারী মাদকচক্রের শীর্ষ নেতাদের নির্মূল করতে কেন সব দেশে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হবে না! কেন ক্ষেতের উপর উপর থেকে আগাছা না কেটে তার মূলসহ উপড়ে ফেলা হবে না!
************************************************************
এখানে সেখানে যখন ভীম নিরৌলা’র সেই কুৎসিত গানটা বাজে — ‘লেডি ইউ আর বিউটিফুল, বিউটিফুল, বিউটিফুল’, তখন আমার মাথায় ঘোরে ‘বেবি ইউ আর বিউটিফুল, বিউটিফুল, বিউটিফুল’। আমার রাশমিনের সেই নাচের কথা মনে হয়। তার মুখটা আমার মনে পড়ে। আমার চীৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। মনে মনে বলি, মা রে! তুই কি কোন কষ্ট নিয়ে চলে গেলি, অথবা কোন অভিমান? এমন একটা মানুষও কি ছিল না যে তোকে ভালোবেসে বুঝিয়ে এই সর্বনাশের পথ থেকে ঠেকাতে পারতো! তোর তো জীবনটা শুরুই হয়নি। এই অবেলায় কেন তোকে চলে যেতে হবে!
মন্তব্য
এই ব্যাপারটা যে কত খানি জরুরি একটা বিষয় অনেকেই বোঝেননা, উপলব্ধিও করেননা। পাল্টে যাওয়া সময়ে বাবা-মায়ের দায়িত্বও যে অনেক খানি বেড়ে গেছে এটা আসলেই বুঝতে হবে।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
আপনি যে প্রসঙ্গটা নির্দেশ করলেন সেটা নিয়ে আমার বিস্তারিত কথা আছে। সময়-সুযোগ হলে আলাদা পোস্ট দিয়ে সেসব বলবো। শুধু এটুকু বলি, দায়িত্ব সব সময়ে ছিল এবং অবহেলাও সব সময়ে ছিল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অবহেলা একটু একটু করে সমস্যার পাহাড় তৈরি করেছে। সেই পাহাড় নিজের ঘাড়ে হুড়মুড় করে ভেঙে না পড়া পর্যন্ত আমাদের হুঁশ হয় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বড় খারাপ লাগল পড়ে।
..................................................................
#Banshibir.
প্রতিদিন, কোন না কোন এক সময়, মেয়েটার মুখ আমার মাথায় ঘাই মারে। কখনো তীব্র ক্রোধ হয়, কখনো অক্ষম আক্রোশে ফেটে পড়তে ইচ্ছে করে, কখনো হতাশায় আচ্ছন্ন হই। এর কোন সমাধান নেই, কোন সান্তনা নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মাদকের মূল উৎপড়ে ফেলা বোধহয় সম্ভব নয় যতক্ষণ তার বাজার থাকবে! গতবছর একটা বই পড়েছিলাম,Chasing the Scream: The First and Last Days of the War on Drugs -Johann Hari এই বইটা মাদকাসক্তি এবং মাদকবিরোধী অভিযান সম্পর্কে আমার চিন্তাধারা বদলে দিয়েছে। এটা নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে ছিলো, জানিনা কখনো সে হয়ে উঠবে কিনা! সময় পেলে বইটা পড়ে দেখবেন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ইরাজ ঘাদেরি'র মুভি 'তারাজ'-এ আফিমের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালানোর পর দেখা গেলো দেশে হেরোইনের প্রকোপ বেড়ে গেছে। বিরক্ত হয়ে অভিযানের নেতা লেফটেন্যান্ট আহ্মাদ বলেন, "এইমাত্র আফিমের ব্যবসা ধ্বংস করলাম, এখন এই হেরোইন এলো কোথা থেকে"? উত্তরে কেন্দ্রীয় চরিত্র জেইনাল বান্দারি বলেন, "হেরোইন আগেও ছিল, আফিম এখনো আছে"।
মাদক যে কখনো পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না সেটা জানি। তবে সব দেশে একযোগে অভিযান চালালে উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন, অর্থায়ণ ইত্যাদি বহু বহু গুণে হ্রাস করা সম্ভব।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
""হেরোইন আগেও ছিল, আফিম এখনো আছে"।" - আরো কি কি যে আসতে পারে, আসবে, আসছে!
"তবে সব দেশে একযোগে অভিযান চালালে উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন, অর্থায়ণ ইত্যাদি বহু বহু গুণে হ্রাস করা সম্ভব।" - হুম্ম্!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
একটা অসমর্থিত তথ্য হচ্ছে, দুনিয়ার সবচে' বড় পাঁচটি ব্যবসা হচ্ছে - যুদ্ধ > যুদ্ধাস্ত্র > শেয়ার বাজার > মাদক > সেক্স। তথ্যটি অসমর্থিত হলেও খুব একটা ভুল বলা যাবে না। দুনিয়ার সবচে' বড় একটা ব্যবসা, সেটাকে সীমায়িত করতে গেলে একটা দেশের একক প্রচেষ্টায় তো কিছু হবে না, সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে। যেভাবে গুটি বসন্ত নির্মূল করা হয়েছে। যেভাবে পোলিও নির্মূল করা হচ্ছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গুটি বসন্ত কি পোলিও ত ব্যবসা ছিল না। আর এই ব্যবসা কোন সাধারণ ব্যবসাও নয়। এই ব্যবসা বরাবর ছিল, আছে, এবং থাকবে। একেক যুগে একেক চেহারা নেবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ঠিক! এই ব্যবসা সময়ের সাথে সাথে চেহারা পালটে টিকে থাকবে, যেমনটা দাস ব্যবসায় তার চেহারা পালটে টিকে আছে। তবে দাস ব্যবসায়ের আগের সেই বীভৎস রূপটা অনেকটা পালটানো গেছে। হয়তো সম্মিলিত চেষ্টায় মাদক ব্যবসায়ের চেহারাও কিছুটা পালটানো যাবে।
সম্মিলিত প্রচেষ্টার উদাহরণ হিসাবে গুটি বসন্ত আর পোলিও'র কথা বলেছিলাম। কিন্তু একথা কি খুব জোর দিয়ে বলা যায় যে সেগুলো কোন পর্যায়ে ব্যবসা ছিল না? আমার কিন্তু সন্দেহ হয়। ভ্যাকসিন কোম্পানিগুলোর কোন কোনটার সাধুসুলভ চেহারা ও কর্মকাণ্ড দেখে সেই সন্দেহ আরও গাঢ়, গভীর হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমার মনে হয়না সব দেশে অভিযান চালিয়ে উৎপাদন বিপনন হ্রাস করা সম্ভব। বলতে চাইছি, সেরকম অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যুদ্ধ, মাদক, অস্ত্র এবং যৌণতার ব্যবসা একসূত্রে গাঁথা বলে, শক্তি প্রয়োগ করে এর একটাকে বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। এই বিশ্বাসটা জন্মানোর বড় কারন চেজিং দ্য স্ক্রিম বইটার কিছু তথ্য এবং ব্যাখ্যা।
অন্যদিকে মাদককে "সহজ"ভাবে নিলে ব্যবসাটা কমে যাবে বহুগুণে। মাদকের মূল্য (এবং সেই কারণে ব্যবসার মুনাফা) আকাশছোঁয়া হওয়ার কারণ হচ্ছে মাদক সহজলভ্য নয়। বাস্তবে মাদক উৎপাদনের খরচ সামান্যই। যুক্তরাষ্ট্রে মদের বাজার বন্ধ হলে সেসময় মদও মাদকের মতো দামী এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলো।
সমাজে কেউ কেউ মাদক নেবেই। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তাদের যদি যুদ্ধে নামতে না হয়, যদি অন্যদেরও জড়াতে না হয়, যদি সপরিবারে ধ্বংস হয়ে যেতে না হয়, তাহলে মাদকের পেছনের ব্যবসাটা বন্ধ হয়ে যায়। যারা অাসক্ত তাদেরকে আইন দিয়ে থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়, কেবল মাদকের সহজ যোগান, চিকিৎসা এবং সামাজিক সহানুভূতি দিয়ে সম্ভব। খানিকটা এরকম পদ্ধতি প্রয়োগ করে মাদক নিয়ন্ত্রণে পর্তুগাল খুবই সফল।
উদাহরণ দেই, ডেনমার্কে নারী পুরুষ সবার জন্য ধূমপান করা খুব সাধারণ বিষয়। অথচ, একশোজনে এখানে গড়ে ১৭ জন পুরুষ ধূমপায়ী (২০১৫ সালের হিসাব)। বাংলাদেশে শুধু পুরুষদের মধ্যেই ৪০ ভাগ ধুমপান করে। সামাজিক কারণে নারীরা প্রায় করেই না, নয়ত এই হারও কাছাকাছি হতো বলে ধারণা করি।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমার দুই বাল্যবন্ধু ড্রাগের কারনে মারা গেছে। একজন সেই স্কুল জীবনেই নেশাসক্ত হয়ে সন্ত্রাস আর গুন্ডামির পথে পা বাড়ায় মাদকের খরচ যোগাতে। সরকারি গ্যাজেটেড অফিসারের সন্তান (সম্ভবত ডেপুটি সেক্রেটারি)। মারা যাওয়ার এগজ্যাক্ট পরিস্থিতিটা জানিনা, শুনেছি বেসামাল হয়ে যাওয়াতে তার পরিবারের লোক একটা উঁচু জায়গায় গ্রিলের সাথে বেঁধে রেখেছিলেন, সেখান থেকে গভীর রাতে বাঁধন আলগা করে পালাতে গিয়ে পড়ে মারা গেছে। এ পড়াশোনায় আগায়নি তেমন এবং অল্প বয়সেই মারা গেল - ১৮ও মনে হয় পার হয়নি। অন্যজন ঠিক উলটো - বুয়েটের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। বুয়েটে এর বেশিরভাগ সহপাঠী এবং আমাদের কমন বন্ধুরা স্টার-লেটার পাওয়া, স্ট্যান্ড করা মেধাবী ছাত্র। বর্তমানে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, কেউ-কেউ স্বনামধন্য। এই বন্ধুটি তাদেরও সবার কাছে তাদের চেয়েও উজ্জ্বলতর ছিল, প্রশংসাধন্য ছিল, প্রিয় ছিল - ব্রাইটেস্ট এমাং দা ব্রাইটেস্ট। তার শার্পনেস সম্পর্কে তার শার্প বন্ধুদের কাছেই বিগলিত মন্তব্য শুনতাম। বন্ধুবাৎসল্য সম্পর্কেও। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই মনে হয় কখন যেন মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটলো। এর পরের কাহিনি বিভীষিকাময় - এবং সব সম্ভাবণার অঙ্কুরেই বিনাশ। বিয়ে, সরকারি চাকুরি, সন্তান - সবই হয়েছিল। কিন্তু অনেকবার রিহ্যাব ইত্যাদি ঘুরে আসার পরও মাদক তাকে ছাড়লো না। সবই ছত্রখান হয়ে গেল। বউ বাচ্চা নিয়ে চলে গিয়েছিল অনেক আগেই। তাকে দেখতাম পথে-পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এর-তার কাছ থেকে ধার নিয়ে মাদকে খরচ চালানোর চেষ্টা করছে। বন্ধুরা অনেকবার সবাই মিলে ফেরানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু আখেরে লাভ হয়নি। তারপরও অনেকদিন বেঁচে ছিল ত্রিভঙ্গমুরারির মত। রাস্তা দিয়ে পাগলের মত হেঁটে যেত, নিজের হাত-পা-অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর পুরো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। ত্যাড়াব্যাকা হয়ে টলতে-টলতে ঝাঁকি খেতে খেতে কঙ্কালসার দেহটা নিয়ে এককালের দারুন সুদর্শন মানুষটা হাঁটাচলা করতো। শেষ পর্যন্ত মারা গেল মধ্য-চল্লিশে এসে। মৃত্যুর সাক্ষাৎ কারন বা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানি না, তবে জানি হেপাটাইটিস-সি হয়েছিল। কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় হেপাটাইটিস-সির দামি ইঞ্জেকশন দেয়া হচ্ছিল। লাভ হয়নি।
****************************************
বছর পাঁচেক চৌধুরীপাড়ায় থাকায় জানি যে সেখানে সকল প্রকার মাদকের বিস্তার কি ভয়াবহ! আপনার দেয়া দ্বিতীয় উদাহরণটার মতো কেস ডজন ডজন আছে, প্রতিটা ব্যাচে আছে। স্নাতক হওয়া, ভালো চাকুরি করা, বিয়ে করে সংসার করা মানুষ - আপাতদৃষ্টিতে যার সবকিছু ঠিকঠাক, সফল একজন মানুষ - সেই মানুষ ভেতরে ভেতরে পুরোপুরি মাদকের দাস। অকালে নানা রোগে ভুগে মারা যাওয়া, আত্মহত্যা করা, দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া - এমন অনেক মৃত্যু দেখেছি যার পেছনের কারণ মাদক। চৌধুরীপাড়ায় মাদকের পাল্লায় পড়ে বদ্ধ উন্মাদ হতে পর্যন্ত দেখেছি। অবশ্য মাদকের এই সমস্যাগুলো কেবল চৌধুরীপাড়াতেই নয়, সকল প্রকার চৌধুরীপাড়া, অচৌধুরীপাড়া সর্বত্র আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খারাপ লাগছে পড়ে, আমার আগের বাসা একটা স্কুলের পার্ক ঘেষা ছিল। সেখানে আসা যাওয়ার পথে দেখতাম , স্কুলের কিছু সদ্য টিনেজারদের কাছে তাদের বয়সে বড় কয়েকটা কালো ছেলে ্লুকিয়ে লুকিয়ে গোপন ভাব নিয়ে কিছু দিচ্ছে আর টাকা নিচ্ছে ! সেটা নিয়ে ঐ টিন এজাররা পার্কের বাথ্রুমে ঢুকে যাচ্ছে। প্রায় এমন চিত্র দেখতে হতো। মনে মনে বলতাম উন্নত দেশ ! এখানেও !
সিল্ক কটন
@সিল্ক কটন, এই সমস্যাটা উন্নত-অনুন্নত সব দেশেই বিদ্যমান। কালো-সাদা-বাদামী-হলুদ সব রঙের মানুষই এই ব্যবসায় আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ড্রাগ-এর অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া - কি ব্যক্তির, কি সমাজের - জানি আশা ছেড়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু আশা রাখার মত ভরসা পাই না।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
একবার এক শিক্ষক বলেছিলেন, "বাবারা! নিজের উন্নতি করার চেষ্টা করো। নিজের উন্নতি হলে সাথে দেশ-জাতির কিছু উন্নতি হবে"। কথাটাকে যান্ত্রিক সরলীকরণের দোষে দুষ্ট মনে হলেও এর তাৎপর্য গভীর। মাদক নিয়ে আমার অমনটা মনে হয় - অন্তত আমি নিজে এর থেকে দূরে থাকি। এভাবে সবাই ভাবলে সমস্যাটা অনেকটাই কমবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাবানের বয়সের সময়টার কথা মনে আছে আমার।
আমার মনে হয়, মাদক-এর ভয়াবহতা ঠিক মতো পৌঁছায় না কিশোর বা তরুণদের কাছে। এটা যে আসলে মৃত্যু নিয়ে আসে, আপনি যদি সম্ভব হয় জিজ্ঞেস করে দেখবেন এই বয়েসীদের, ওরা জানে না সেটা। মাদক-কে ওরা মৃত্যুর চেয়ে অনেক নিরীহ কিছু মনে করে।
আর, যারা আগ্রহী তারা জানে, আমাদের দেশে মাদকদ্রব্য পাওয়া প্রায় সিগারেটের মতই সহজলভ্য। আমি জানি আমার এই কথাটা অনেকে বিশ্বাস করবেন না, তার দরকার নেই। কিন্তু কথাটা সত্যি।
আসলে, আমাদের বাচ্চা কাচ্চাদের এগুলা নিয়ে জানাতে হবে বেশি বেশি, সচেতন করতে হবে আরও অনেক বেশি। তা না হলে আকাশ থেকে জিবরাইল এসে এগুলো বন্ধ করবে না, এটা অন্তত জানি।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
কিশোর/তরুণদের কাছে তো বটেই অনেক প্রাপ্তবয়স্কের কাছেও মাদকের ভয়াবহতা খুব স্পষ্ট নয়। চোখ মেলে তাকালে তারা সবাই মাদকের কারণে মৃত্যু, স্বাস্থ্যহানী, ক্যারিয়ার নষ্ট, সংসার ভাঙা - এগুলোর সবই দেখতে পাবে। তবুও তাদের মধ্যে 'আরে! দুয়েক বার নিলে কিছু হবে না' বা 'ফান করার জন্য মাঝেমধ্যে নেয়া যেতেই পারে' - ধরনের চিন্তা কাজ করে। বাচ্চাদের, বিশেষত টিনএজারদের মধ্যে যে নিয়ম ভাঙার, বিদ্রোহ করার প্রবণতা থাকে সেখান থেকে এবং জীবনাভিজ্ঞতার অভাব থেকে তারা এই ব্যাপারে আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
তাছাড়া হতাশ, ব্যর্থ বাঙালীর আইডল হচ্ছে 'দেবদাস'। সুতরাং জীবনে অমন কোন দুঃসময় আসলে তাদের অনেকের মাথায় চিন্তা আসে 'কিছু একটা' নিয়ে দুঃখ ভুলে থাকার। দেবদাসের পরিণতি তাদের জানা থাকলেও সেই পরিণতিতে যে রোমান্টিসিজমের আবেশ আছে সেটার মোহেও অনেকে পড়ে যায়।
শুধু বাংলাদেশেই গত চল্লিশ বছরে কয়েক ডজন নামকরা শিল্পী-কবি-গায়ক-অভিনেতা ইত্যাদি সেলিব্রিটি মাদকের কারণে অকালে মরেছে বা 'নাই' হয়ে গেছে। এদের কারো কারো মৃত্যুদিবসে তাদেরকে ঘটা করে স্মরণ করা হয়, কিন্তু সেই আলোচনায় মাদকের কারণে তাদের মৃত্যুর ব্যাপারটিকে সযত্নে চেপে যাওয়া হয়। অথচ এই উদাহরণগুলো সামনে আসলে কারো কারো হয়তো হুঁশ হতো। এতে প্রয়াত ব্যক্তিকে অসম্মান করা হয় না, বরং জীবত অনেককে ধ্বংসের হাত থেকে ঠেকানো যায়।
মাদকদ্রব্য সারা দুনিয়াতেই সুলভ, খুবই সুলভ। যারা এটা বিশ্বাস করে না তাদের আসলে দুনিয়াটা দেখা বাকি আছে। তথ্যযোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এটার কেনাবেচা আরও সহজ হয়ে গেছে।
বাচ্চাদের সচেতন করার ব্যাপারে আপনার অবস্থানের সাথে আমি এক মত। যেহেতু এই প্রচেষ্টাটা বিপদ ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট না তাই মাদকের অবাধ উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থাকে নিয়মিত ভিত্তিতে তোপের মুখে রেখে বিপদের সম্ভাবনাকে শূন্যের কাছাকাছি আনতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এইবার আসল কথায় এসেছেন গো দাদা ! যতকাল মানুষের মধ্যে রোমান্টিসিজম কিংবা হতাশার জায়গা থাকবে ততকাল মাদকের জন্যেও ব্যক্তির অন্তর্গত দরজাটা খোলাই থাকবে। অন্তত আমার কাছে তো তা-ই মনে হয় !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নামটা আবার দেখে উৎফুল্ল বোধ করছি!!!
****************************************
অঃ টঃ - মন্তব্যের ডানদিকে আপনার ছবিটা দেখে কি ভাল যে লাগে বলে বোঝানোর নয়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
গত তিন বছরে অল্প কিছু পোস্ট দিয়েছি। সেখানে অল্প কিছু পাঠক মন্তব্য করেছেন। সেসব মন্তব্য পড়ে কখনো আনন্দিত হয়েছি, কখনো চিন্তিত হয়েছি, কখনো হয়তো একটু মন খারাপও করেছি। আজ আপনার মন্তব্য পেয়ে আমি স্রেফ ভেসে গেছি। আপনাকে ধন্যবাদ দেবার ধৃষ্টতা দেখাবো না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খুব খারাপ লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নতুন মন্তব্য করুন