কালক্রমে বাটিচচ্চড়ি ফেলে দেয়া সবজির বদলে ভালো সবজির পদে পরিণত হয়। তাতে পেঁয়াজ-রশুন তো বটেই চিংড়ি মাছ বা কুঁচো মাছও যুক্ত হতে থাকে। কাঠের উনুনের পাট চুকলে বাটিচচ্চড়ি রান্নাতে আস্তে আস্তে বাটির জায়গা ছোট কড়াই, হাড়ি ইত্যাদি দখল করে। আজকের দিনে বাটিচচ্চড়ি একটা রান্নার পদ্ধতির নাম মাত্র। সবকিছু একবারে একসাথে মাখিয়ে মাঝারী থেকে কম আঁচে ঢাকনাবন্ধ অবস্থায় রান্না করা মানে বাটিচচ্চড়ি।
+++++++++++++++++++++++
আমাদের জীবন যত জটিল ও কঠিন হচ্ছে আমাদের জীবন থেকে নিজেকে দেবার মতো সময় সেই সাথে নাই হয়ে যাচ্ছে। জীবন ধারণের জন্য অথবা আনন্দ-উপভোগের অনুসঙ্গ হিসাবে পদ্ধতিগতভাবে রান্নার সময় আমাদের প্রায় নেই — অথচ খাবার ব্যাপারটা একান্ত আমাদের নিজেদের জন্য। প্রতিদিন রেস্তোরাঁর অখাদ্য বা হিমায়িত আবর্জনা মাইক্রোওভেনে গরম করে খেতে আর ইচ্ছে না করলে নিজে রান্না করা ছাড়া গতি নেই। রান্না ব্যাপারটা উপভোগ্য বটে, তবে সবসময় নয়। তাই প্রায়ই বাটিচচ্চড়ি রেঁধে পার করতে হয়। হিসেব করে দেখলাম আজকাল আমি সব রকমের মাংস, কুঁচো মাছ, বিশুদ্ধ শাক বা সবজি, খিচুড়ি বাটিচচ্চড়ি কায়দায় রান্না করি। তেলে ফোঁড়ন দিয়ে, পেঁয়াজ ভেজে, মশলা কষিয়ে রান্না করা, শেষ প্রান্তে কখনো আবার বাগাড় দেয়া — এসব আর কুলিয়ে উঠতে পারি না। একবার বাটিচচ্চড়ি খাওয়া অভ্যাস করতে পারলে বিষয়টা সহজ হয়ে যায়। যারা খাবারে মশলা-তেল ন্যানোগ্রাম-ন্যানোলিটারে মেপে দিতে চান তাদের জন্য বাটিচচ্চড়ি অতি আদর্শ ব্যবস্থা।
প্রাইভেসির দেয়াল ভেঙে দিয়ে, ব্যক্তিগত স্পেস দখল করে নিয়ে, ব্যক্তিগত সময় খেয়ে নিয়ে আমাদের গোটা জীবনটাই কেমন যেন বাটিচচ্চড়ি করে দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ছোট-বড় ভুল করে, অসঙ্গত আচরণও করে। তবে সবচে’ বেশি অন্যায় সে করে বোধকরি খোদ নিজের সাথে। নিজে আসলে যা চায় তা না নিয়ে, নিজে আসলে যা হতে চায় তা না হয়ে, নিজে আসলে যা করতে চায় তা না করে সে এমন সব জিনিস নেয় যা সে চায় না, এমন কিছু হয় যা সে হতে চায় না, এমন কিছু করে যা সে করতে চায় না। নিজের একান্ত ভুবনের বাইরের দুনিয়া তাকে তাদের মাপে, তাদের পছন্দ মতো কিছু বনতে বাধ্য করে, তাদের রঙে রাঙাতে বাধ্য করে। নিজের জীবনটা আর নিজের ইচ্ছে মতো পরতে পরতে বেড়ে না উঠে অন্যদের ইচ্ছেমতো হরেক রকম অকাজের-অপছন্দের জিনিসের বাটিচচ্চড়িতে পরিণত হয়।
+++++++++++++++++++++++
নিদ্রা যাদের নিত্যসঙ্গী নয় তাদের জন্য প্রতিটি নিশি অসহনীয়রকমের দীর্ঘ। যারা কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে বা ভিডিও দেখতে পারেন তারা কিছুটা ভাগ্যবান। সেটা যারা পারেন না তাদের পক্ষে বেড ল্যাম্প জ্বালিয়ে বই পড়া বা নিঃশব্দে নেট গুঁতোগুঁতি করা ছাড়া উপায় নেই। তবে সেটাও সম্ভব হয় যদি শয্যা/কক্ষ সঙ্গী/সঙ্গিনীর অনুমতি থাকে। সেই অনুমতি আবার লর্ড কর্নওয়ালিসের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’র মতো ব্যাপার যেখানে সূর্যাস্ত আইনের মতো প্রতিনিয়ত নবায়নের ধাক্কা আছে, যা করতে না পারলে আবার বন্দোবস্ত বাতিল হয়ে যায়।
আমি কানে হেডফোন লাগানোর দলে না – আমার মাথা ধরে যায়। তবু কখনো কখনো এমন কোন গান বা মুভির দেখা মেলে যে মাথাব্যথা অগ্রাহ্য করে হেডফোন লাগিয়ে তা চালিয়ে যাই। এক রাতে নেটে যখন মোহসেন মাখমালবাফের মুভি ‘সকৌত’ ( سکوت) পেয়ে যাই তখন তা দেখতে দেখতে আমি আর মাথাব্যথা অনুভব করি না। আমি একটু একটু করে খোরশেদ-নদিরাহ্-বিথোফেনের ফিফ্থ সিম্ফনি-রুমীর ভাঙা কাচের পৃথিবীতে ঢুকে পড়তে থাকি।
এর পর অনেক দিন পার হয়ে যায় আমি খোরশেদের বয়ামের ভেতর আটকানো মৌমাছিটির মতো ‘সকৌত’-এ আটকা পড়ে থাকি। আমার মাথার ভেতর ক্রমাগত তহ্মিনেহ্ নরমাতোভা আর নদিরেহ্ আবদেলায়েভার কণ্ঠস্বর, খোরশেদের তারযন্ত্র টিউনিং, হাড়িপেটানোর কারখানার ছেলেদের হাতুড়ির শব্দ, ঘোড়ার গ্যালোপিং-এর শব্দ, তাজিক চারণ কবির হাহাকার, কোফিরনিহানের ঢেউয়ের শব্দ ঘাই মারতে থাকে। চারপাশের নানা শব্দের মধ্যে আমিও খোরশেদের মতো বিথোফেনের সিম্ফনি শুনতে পাই। হঠাৎ হঠাৎ আমিও ডেকে উঠি, ‘নদিরাহ্! নদিরাহ্!!’ অথবা আপন মনে বলে উঠি, ‘ব-ব-ব-বম্!’
+++++++++++++++++++++++
‘সকৌত’-এ কাজে যাবার পথে প্রথমে যে গানটি শুনে খোরশেদ দিক্ভ্রান্ত হয় সেটির সুর আর যন্ত্রানুসঙ্গ আমাকে টেনেছিল — কেন তুমি কখনো পুঁছনি আমায়, কী ছিল আমার মনে। গানের কথা জানি না, গায়কের নাম জানি না। তবে ইন্টারনেটের ভুবনে এগুলো খুব বড় সমস্যা নয়। অচিরেই বের করে ফেলি গায়কের নাম ওলেগ ফেযভ (Олег Фезов)। আরও জেনে যাই মূল গানটি ওলেগের নয়, বরং দলের নযারভের ( Далер Назаров) গাওয়া। এভাবে আমি দলের নযারভের গানের সাথে পরিচিত হই। আস্তে আস্তে আমি ৫৯ বছরের এই তরুণের মায়াময় গানের ভুবনে ডুবতে থাকি। তার গান শুনতে শুনতে খোঁজ পাই অকাল প্রয়াত শিল্পী নরগেস বন্দেশোয়েভার (Наргис Бандишоева) গানের। কয়েক হাজার বছর আগে যে ভূমি ছেড়ে পূর্বপুরুষেরা পারস্য-আরব-ভারত-চীনে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই ভূমির সঙ্গীত আমার রক্তে দোলা দিতে থাকে।
দলেরের পথ ধরে পামির মালভূমির কুহিস্তান-বাদাখ্শান নামের এক আশ্চর্য দেশ আর তার সঙ্গীতের সন্ধান পেয়ে যাই। মূলত পামিরি ভাষার সে গান। ভাষা অবোধ্য, কিন্তু তার সুর একটু একটু করে নিউরন কোষগুলোকে গ্রাস করে নেয়। ইন্টারনেটে দেখা কুহিস্তান-বাদাখ্শানের মালভূমি, বরফচূড়াপাহাড়ঘেরা হ্রদ, সাক্সাউলের ঝোপেভরা মরু, মাঠভরা ধব্ধবে সাদা তুলা আর সোনালী গমের ক্ষেতের সৌন্দর্য আমাকে স্তব্ধ করে দেয়।
+++++++++++++++++++++++
দলের নযারভের ব্যাপারে খোঁজ করতে জানতে পারি ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর তিনি দেশত্যাগ করে কাযাখস্তানের আলমাতিতে ছিলেন। কী এমন ঘটনা ঘটেছিল যে দলের দেশত্যাগ করেছিলেন! আরও খোঁজ নিতে জানতে পারি আমার অজানা ‘তাজিক গৃহযুদ্ধ’র ইতিহাস। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ মানুষ নিহত হন আর প্রায় বারো লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হন যাদের অনেকেই প্রতিবেশি দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন। বাদাখশানী দলের নযারভ ঐ বারো লাখ বাস্তুচ্যুত হতভাগাদের একজন। বারো লাখ মানুষ মানে তাজিকিস্তানের ১৬% মানুষ।
+++++++++++++++++++++++
১৯৯১ সালের অগাস্টে তাজিকিস্তানে রুশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটে, ৯ই সেপ্টেম্বর তাজিকরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে সাবেক কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের মধ্যে খেয়োখেয়ি শুরু হয়। বিশেষত পার্টির সাবেক ফার্স্ট সেক্রেটারি রহমান নবিয়েভ ও তার কাছের মানুষ আকবরশো ইস্কান্দরভ আর সুপ্রিম সোভিয়েতের সাবেক ডেপুটি ইমামোলি রহমানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। ১৯৯২ সালের মে মাসে মূলত খুজান্দ আর কুলোব অঞ্চলের লোকদের নিয়ে গঠিত রহমান নবিয়েভের সরকারের বিপক্ষে রাস্ত উপত্যকার ঘর্ম্ আর কুহিস্তান-বাদাখশানের মানুষ বিদ্রোহ করে বসে। শুরুতে বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিল তহির আবদুজব্বারের ‘রাস্তোখেয’, মাহমাদরুযি ইস্কান্দরভের ‘হিযবি দেমোক্রাতি তাজিকিস্তান’, আতোবেক আমিরকেকভের ‘লালি বাদাখশান’ –এর মতো সংস্কারপন্থী গণতন্ত্রী গ্রুপগুলো। কিন্তু অচিরেই তাদেরকে ঢাল বানিয়ে বিদ্রোহের নেতৃত্ব চলে যায় সাঈদ আবদুল্লাহ্ নুরী’র নেতৃত্বাধীন ইসলামী মৌলবাদী দল ‘হিযবি নাহযাতি ইসলামী তাজিকিস্তান’-এর হাতে। এই সবগুলো দল নিয়ে ইউনাইটেড তাজিক অপজিশন গঠিত হলেও বিদ্রোহ যখন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয় তখন জোটের ক্ষমতা আবদুল্লাহ্ নুরীর হাতে চলে যায়। নুরীর এমন ক্ষমতার পেছনে শক্তি যুগিয়েছিল প্রতিবেশি আফগানিস্তানের তালিবান সরকার, উযবেকিস্তানের সালাফি গ্রুপ ‘আদালত’, আল কায়েদা, তালিবানী গ্রুপগুলো এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট জমিয়ত-ই-ইসলামী।
এমনিতেই খুজান্দ অঞ্চলের রহমান নবিয়েভের নেতৃত্বে কার্যত খুজান্দি কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করায় কুলোব অঞ্চলের ভোল পালটানো কমিউনিস্ট ইমামোলি রহমানের দলবল ক্ষিপ্ত ছিল, তার ওপর ইউনাইটেড তাজিক অপজিশনের আক্রমণে অবস্থা আরও খারাপ হয়। সেপ্টেম্বরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বন্দুকের মুখে রহমান নবিয়েভ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। সেই থেকে গত ২৬ বছর ধরে ইমামোলি রহমান নানা নামে, নানা ঢঙে তাজিকিস্তানের ক্ষমতায় আছেন। তিনি আরও কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন সেটা তিনি অথবা যমদূত জানেন।
সহায়ক বিদেশী শক্তি কেবল বিরোধীদের সাথে ছিল না, ইমামোলি’র সরকারের সাথেও ছিল। রুশ, উযবেক, কাযাখ আর কিরঘিজ সামরিক বাহিনী তাজিক সরকারী বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসাবে যুদ্ধে যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালের মধ্যে সরকারী বাহিনী বিদ্রোহীদের কোনঠাসা করে ফেলে। এর পরে সরকারী বাহিনী শুরু করে জাতিগত গণহত্যা। ঘর্ম্ আর কুহিস্তান-বাদাখশানের জাতিগুলো এই নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয়। আন্তর্জাতিক মহলে এই গণহত্যা মনোযোগ পেতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ রাজধানী দুশানবে’তে শান্তিরক্ষার্থে পর্যবেক্ষক দল (UNMOT) পাঠায়। আনমট ২০০০ সালের মে মাস পর্যন্ত তাজিকিস্তানে কাজ করে।
নানা পক্ষের চেষ্টায় ১৯৯৭ সালের ২৬শে জুন মস্কোতে জাতিসংঘ আর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সরকারের প্রধান ইমামোলি রহমান আর ইউনাইটেড তাজিক অপজিশনের সাঈদ আবদুল্লাহ্ নুরী’র মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তাজিকিস্তানে গৃহযুদ্ধের আপাত অবসান ঘটে।
+++++++++++++++++++++++
আমার নিজের কাছে খুব আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে এই ইতিহাসের কিছুই আমার জানা ছিল না। বাংলাদেশের কোন মিডিয়াতে ঐ সময়ে এই সংক্রান্ত কোন খবর দেখেছি-শুনেছি-পড়েছি বলে মনে পড়ে না। এর কোন কারণ আমি খুঁজে পাই না।
জ্ঞান হবার পর থেকে মিডিয়াতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের যুদ্ধের কথা শুনে আসছি। এর অল্প সময়ের মধ্যে তালিকায় আফগানিস্তান যুক্ত হয়। আফগানিস্তানে যখন মুজাহেদীনদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে, তালিবানীরা গোকুলে বাড়ছে চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্য ঠিক তখন আফগানিস্তানের পাশের দেশ তাজিকিস্তানে সালাফি-তালিবানী-আল কায়েদারা গৃহযুদ্ধের আকারে ড্রেস রিহার্সাল দিয়ে যাচ্ছে। তাজিকিস্তান দেশটা শক্তিশালী না বলে, বা আমাদের যাতায়ত নেই বলে আমাদের মিডিয়া গোটা গৃহযুদ্ধের সময়কালটাতে প্রায় উদাসীন ছিল। আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মূঢ়তার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে বাংলা ভাষায় লেখালেখি হয়নি। অথচ বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদের উত্থানের আওয়াজ দিচ্ছিল এই গৃহযুদ্ধ। ইঙ্গিত দিচ্ছিল জঙ্গীবাদীরা যে কোন রাষ্ট্রকে আক্রমণ করার সামর্থ অর্জন করতে যাচ্ছে।
+++++++++++++++++++++++
সম্ভবত আগামী দিনে ইসলামী মৌলবাদী, জঙ্গীদের স্বর্গভূমি হতে যাচ্ছে যে দেশ সে দেশের প্রধান শহরের রাস্তায় রাস্তায় ইয়েম্বে বাজিয়ে গান গায় এক ইহুদী বালিকা। ইরান থেকে ইসরাইলে যাওয়া পরিবারে জন্মানো এই মেয়ের নাম মিকাল এলিয়া কামাল। তার সাথে কখনো অ্যাকুয়স্টিক গিটার, কখনো আরবী ল্যুট বাজায় তারই জীবনসঙ্গী ফরাসী জুলিয়েন দেমার্ক। তাদের সাথে কখনো সন্তুর, কখনো কালিম্বা, কখনো স্প্যানিশ গিটার বাজায় তুর্কী মেতেহান সিফৎসি। তিন জনের এই ব্যান্ডের নাম ‘লাইট ইন ব্যবিলন’। গান গায় হিব্রু, আরবী, ফার্সী, তুর্কী, ফরাসী ও ইংরেজীতে।
মিকালের যখন একুশে পা, তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। বের হয়ে পড়েন দুনিয়া ঘুরতে। প্রথমে ভারত, তারপর ইউরোপের কিছু দেশ। ভ্রমণের খরচ যোগানোর জন্য শুরু করেন পথের পাশে গান গাওয়া। একই সময়ে প্রকৌশলীর জীবনে বীতশ্রদ্ধ জুলিয়েন ঠিক করেন সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে পূর্ব ইউরোপ ঘুরে ভারতে যাবেন। উলটো পথে আসা মিকালের সাথে জুলিয়েনের দেখা হয়ে যায় বুলগেরিয়াতে। ঐ দফা জুলিয়েনের আর ভারতে যাওয়া হয় না, বরং মিকালের সাথে মিলে ইস্তান্বুল চলে যান। ইস্তান্বুলের ব্যস্ত রাস্তা ‘ইসতিকলাল কাদেসি’ (স্বাধীনতা সরণি)-তে তাদের দেখা হয়ে যায় সন্তুর বাদ্যরত মেতেহানের সাথে। এরপর কিছুটা সময় লাগে এই তিন জনে মিলে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতে। তারা ঠিক করেন ইস্তান্বুলকে ভিত্তি করে তাদের গানের চর্চ্চা চালাবেন। শুরুটা হয় পথের পাশে গান গাওয়া দিয়ে। ‘টাওয়ার অভ বাবেল’-এর মানুষেরা যেমন এক সময় একেক জন একেক ভাষায় কথা বলা শুরু করেন, তেমন এই তিন জন ভিন্ন ভাষাভাষী হওয়ায় তাদের ব্যান্ডের নাম হয় ‘লাইট ইন ব্যবিলন’।
শুরুতে অন্যের গান ‘কাভার’ করা, পরে নিজেদের গান। ইস্তান্বুলকে কেন্দ্র ধরে যদি একটা বৃত্ত আঁকা যায় যার ভেতরে তুরস্ক, আরব, বলকান এলাকাগুলো পড়বে তাহলে এই গোটা বৃত্তের গানের স্টাইলকে এরা ধারণ করার চেষ্টা করছে। আজকের গানের দুনিয়ায় ‘লাইট ইন ব্যবিলন’ মোটেও বড় নাম নয়। তবু তারা গান গায় বিভিন্ন দেশে।
গান শোনার সময় আমি দেখি সেটা সবকিছু ভেদ করে মনে আর মগজে কতোটা ছুঁয়ে গেলো। মিকালের কণ্ঠ, জুলিয়েন আর মেতেহানের বাজনা আমার মনে দোলা দেয়, মগজ স্পর্শ করে। আমি অপার হয়ে শুনে যাই —
"আমার শয্যায় আমি অপেক্ষায় থাকি সপ্তা’র পর সপ্তা জুড়ে
আমার হৃদয় যার তরে তাকে খুঁজে না পাই
খুঁজি তারে আমি শহরের রাস্তায় রাস্তায়
তবু তারে খুঁজে না পাই"
+++++++++++++++++++++++
এই পোস্টটাও এক প্রকার বাটিচচ্চড়ি হলো।
মন্তব্য
সত্যিই। ঘড়ির সময় বা সময়ের ঘড়ি আমাদের নিয়ে যায় এক প্রেক্ষাপট থেকে আরেক প্রেক্ষাপটে। আজকের দিনের অধিকাংশ সময় নিজেকে দেখি অন্যের চোখে, অন্যের ইচ্ছেয়। কখনো সখনো ভাবতে হয়ত দেরি হয়ে যায় কেন ‘আমি’ বিষন্ন, আনন্দিত অথবা পরিতৃপ্ত, কতটা ভালবাসা আছে নিজের জন্য। নিজের মৌলিকত্ব ছাপিয়ে গড়ে ওঠে পারসোনা~ব্যক্তি মুখোশ। চিন্তার আবর্জনাকে জীবনের ছন্দময়তায় ঠাঁই দিয়ে সেই ‘আমি’ আবিষ্ট হয় বর্তমানহীনতায়। তারপর হঠাৎ মনে হয় নিজের চাওয়া আর আমাকে নিয়ে পৃথিবীর চাওয়ায় এক বিশাল দূরত্ব।
বাটিচচ্চরি হলেও পোস্ট টা পড়ে অনেক কিছু জানলাম। মিকালের জীবনের যাত্রা পথে জুলিয়েনের সাথে দেখা, পথ বদলে যাওয়া, ইসতিকলাল কাদেসি তে মেতেহানের দেখা পাওয়া, লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া, পাওলো কোয়েলহো’র সান্টিয়াগোর যাত্রা কথা মনে করিয়ে দিল।
--জে এফ নুশান
একজন সাধারণ মানুষ আর একজন অ-সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্যটা বোধকরি এখানে। সাধারণ মানুষ পৃথিবীর চাওয়ার কাছে নিজের চাওয়াকে সমর্পণ করেন, আর অ-সাধারণ মানুষ নিজের হৃদয়ের কথাটা শোনেন। ফলে সাধারণ মানুষ অতি সাধারণ মানুষে পরিণত হন, আর অ-সাধারণ মানুষ জীবনে অসাধারণ কিছু করে ফেলতে পারেন।
পাওলোকে নিয়ে আমার একটা অদ্ভূত ব্যাপার আছে। আমার সঙ্গিনী পাওলো ভক্ত। তার জন্য এই পর্যন্ত পাওলো'র কমবেশি কুড়িটা বই কিনেছি। বইগুলো শোবার ঘরে চোখের সামনেই রাখা। তবু আমার পাওলো পড়া হয়ে ওঠে না। আশা করি একদিন পাওলো পড়তে পারবো, তার সান্টিয়াগো যাত্রার সঙ্গী হতে পারবো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
যদি এমন হয় তবে বুঁদ হয়ে পড়ি। এই হচ্ছে লেখা!
---মোখলেস হোসেন
যারা ভালো লেখক তাদের লেখাতে পাঠক এমনিতেই বুঁদ হন। আর আমার মতো লেখক প্রচেষ্টায় থাকাদের কোন কোন লেখার কোন একটা কিছু কোন এক পাঠকের মাথায় অনুরণিত হয়। এতে গর্বিত হবার কিছু নেই। তবে একজন পাঠকও পড়ে আনন্দ পেলেন সেটা ভেবে লেখক-প্রচেষ্টকও আনন্দিত হন।
পোস্ট পড়া আর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাটিচচ্চড়ির আইডিয়া ভাল। আমরা একসময় ভুখানাঙ্গা দেশ ছিলাম। এখনো আছি। তবে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা ছোটবেলায় খুদের ভাত খেয়েছি। এখন মনে হয় খুদের ভাত কেউ খায় না। মা খালাদের এখনো ঐ অভাবের সময়ের অভ্যাসমতো কোন কিছুই ফেলা যাবে না - এরকম একটা চর্চা চালু রাখতে দেখি। বাটিচচ্চড়ি সম্ভবত ওরকম কোন কিছু না ফেলার, এবং বাড়ির বিধবা এইসব কোন কিছুর সবচাইতে মূল্যহীন খাবারটা খাবে - এই দুইয়ের মধ্য দিয়ে এসেছে। আর অভাব খাদ্যাভ্যাস তৈরি করে। কোথায় যেন পড়েছি (তথ্য যাচাই করা হয়ে ওঠেনি) তেলাপিয়া মাছ, ঝাল, কচু - এসব অভাবের সময়ে মানুষ খেতে শিখেছে।
আমি নিজে মাঝে ভাত এড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করি। এক পাতিল সবজি রেখে ফেলি বাঙ্গালি কায়দায়। তারপর সেটা বাটিতে করে সুপজ্ঞান করে খাই।
বাংলাদেশের মিডিয়া বিদেশি চটকদার মিডিয়ার চটকখবরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেখানে চটকদার কিছু বলা হলে সেটা অনুদিত হয়ে আমাদের সামনে আসে। তাজিকিস্তান ভূরাজনীতিতে গুরুত্ব রাখে না। এজন্য তারা হেডলাইনও পায়নি। সুতরাং বাংলাদেশি মিডিয়াও তাদের খবর রাখেনি।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বাটিচচ্চড়ি পদ্ধতি অনুসরণ করতে গেলে মনে রাখতে হবে আঁচ খুব কম হতে হবে আর সময় একটু বেশি লাগবে। এমনকি এই যে বাটিচচ্চড়িটা আপনাদের পাতে দিলাম সেটা রান্না হয়ে উঠতেও প্রায় এক বছর লাগলো।
যেদিন থেকে অটোমেটিক রাইস মেশিনে ধান ছিলে চাল বানানো শুরু হলো সেদিন থেকে খুদ, মরা চাল ইত্যাদি নাই হয়ে গেলো। ফলে চাল কিনে বাসায় এনে চালুনি আর কুলা সহযোগে ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজটাও থাকলো না। আর আমাদেরও মাসে এক রবিবার (তখনকার সাপ্তাহিক ছুটির দিন) সকালে তিন/চার রকমের ভর্তা সহযোগে খুদ ভাত খাওয়া্র চল উঠে গেলো।
'কিছু ফেলা যাবে না' তত্ত্বটা আমি সমর্থন করি, যদিও সেটা কার্যকর করা খুব সহজ নয়। আমেরিকাতে এক সময় 'ক্লিন প্লেট' আন্দোলন ছিল। এই ব্যাপারটা সারা দুনিয়ার স্কুল পর্যায়ে শিক্ষা দেয়া উচিত।
একটা ব্যাপার আমি সমর্থন করি না। সেটা হচ্ছে খাবারের মধ্যে ধনী-দরিদ্র, বড়লোক-ছোটলোক বিভাজন। বাংলাদেশের বাইরে তারকাখচিত হোটেলের ব্রেকফাস্ট হলেও দেখেছি থরে থরে কচুর মুখি, লাল আলু সেদ্ধ করে রাখা। ফলের টেবিলে কাউ-ডেউয়া ধরনের ফল, আখ, শাকালু সাজিয়ে রাখা। আমাদের দেশে এটা ভাবাই যায় না। শুঁটকি মাছ, কচুর লতি, কাঁঠালের বিচি, কলার মোচা/থোড়, কলার স্টেম/ভাড়ালি - এসবের কথা শুনলে অনেকেই নাক-মুখ কুঁচকে এমন ভাব করেন যে এসব ছোটলোকী খাবার কি কোন ভদ্রলোকে খায়!
- আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে আমি একমত।
এই দেশে দুর্ভিক্ষ চিরকালই ছিল। তবু এই দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে খুব ধীরে। খাদ্যাখাদ্য বিচারে এতোটা খুঁতখুঁতে না হলে এই দেশের দুর্ভিক্ষগুলোতে মানুষ মরার হার আরও অনেক কম হতো। ভাবতে পারেন এত বড় কোস্টলাইন সমৃদ্ধ একটা দেশে সী-ফুড খাবার প্রচলন প্রায় নেই!
- রান্নার ব্যাপারে একটা ট্র্যাজেডি হচ্ছে একজন মানুষের ২/১ বেলার জন্য একটা পদ রান্না করা যায় না। পরিমাণে বেশি রান্না করা এই পদটার সমাপ্তি বড়ই করুণ। ফলে কখনো ঝোলওয়ালা সবজিকে স্যুপ হিসাবে, কখনো দুই টুকরো পাউরুটির মধ্যে কয়েক পরত ভর্তা দিয়ে স্যান্ডউইচ হিসাবে, কখনো রুটি/পরোটাতে শাকভাজি পেঁচিয়ে ভেজিটেবল রোল হিসাবে খেতে হয়।
আমাদের মিডিয়ার দেউলিয়ায়ত্ব নিয়ে যা বলেছেন সেটা ঠিক। যেমন চিলের দীর্ঘমেয়াদী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আমাদের মিডিয়াতে কখনো কিছু আসেনি।
তাজিকিস্তানের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব কম সেটা সত্যি, তবে ঐ গৃহযুদ্ধটা তার বৈশিষ্ট্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের দেশের যেসব রাজনৈতিক বিশ্লেষক চক্চকে নীল আকাশ দেখে বজ্রসহ বৃষ্টির ভবিষ্যতবানী করতে পারার ক্ষমতা রাখেন বলে দাবি করেন তাজিকিস্তানে ইসলামী জঙ্গীদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে তারা কিছু দেখতে পাননি। যদি কিছু দেখতে পেতেন তাহলে নিশ্চয়ই সেটার বিশ্বব্যাপী পরিণতি নিয়ে লিখতেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সামুদ্রিক পদ আমাদের অনেকের পাতে তেমন একটা না ওঠার বেশ কয়েকটা বড় কারণ আছে কিন্তু। ঝিনুক-আটঠ্যাঙা-কালিমারি এসব উপকূল থেকে দূরে পাঠানো মুশকিল, দ্রুত পচে যাবে। আমাদের উপকূলে সামুদ্রিক শাকও তেমন সুলভ নয়। তাছাড়া পুরো দেশেই মাছ মোটামুটি সুলভ, লোকে মিঠাপানির পদ ছেড়ে নোনাপানির পদ খাবেই বা কেন? সামুদ্রিক ফসল একমাত্র শুঁটকি হয়ে উপকূল থেকে দূরে যেতে পারে এবং গেছে। সামুদ্রিক খাবারের রমরমা যেসব নগরকে ঘিরে (ভেনিস, নিউ ইয়র্ক বা টোকিও), সেগুলোর আর্থরাজনৈতিক দাপট ছিলো/আছে বলে খাবারগুলো আলাদা সামাজিক ব্যঞ্জনা পেয়েছে, চর্চাতেও টিকে গেছে।
আচ্ছা উপকূল থেকে দূরে পাঠানোটা না হয় এক কালে সমস্যা ছিল, কিন্তু উপকূলের মানুষদের কী সমস্যা ছিল? কেউ কেউ হারাম-হালালের প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু এদেশে মুসলিমদের ইতিহাস তো হাজারখানেক বছরের, আর এনাদের বেশির ভাগ আছেন মানুষের জন্মের আগে থেকে। তাছাড়া দেশের সবাই তো আর মুসলিম নন্।
এদেশের মানুষ অল্প কিছু সন্ধিপদী/শক্তখোলসী (Crustacean) খান, আরও অল্প কিছু মানুষ জলজ কম্বোজ (Mollusca) খান। জলজ পঞ্চপদী (Echinoderm) আর জেলিমাছ/গিজগিজিয়া (Ctenophora/Cnidaria) তো কেউ খানই না। মিঠাপানি বা নোনাপানির নিমজ্জিত বা মুক্ত ভাসমান শাক এবং শ্যাওলা খাবার চলও নেই। কক্সবাজারে সী-ফুড রেস্টুরেন্ট হয়েছে এই সেদিন! আর সেখানে পাওয়া যায় খুব অল্প কিছু পদ (তার রান্নার বীভৎস কায়দার কথা বাদ দিলাম)। আমাদের খাদ্য তালিকায় সী-ফুড ঢুকতে পারার সহসা কোন সম্ভাবনা নেই।
চট্টগ্রামের আর্থরাজনৈতিক দাপট ভেনিসের মাপের না হলেও জাপানের বেশিরভাগ উপকূলীয় নগরের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। তবু উপকূলীয় চট্টগ্রামে কেবল শক্ত হাড়ের মাছ (Osteichthyes) আর তাদের শুঁটকিই বেইল পেয়েছে, এমনকি কোমল হাড়ের মাছও (Chondrichthyes) না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হয়তো বড়সড় ঝিনুক (মাসেলস, স্ক্যালোপ, আবালোনি) আমাদের উপকূলে নেই? তাছাড়া এগুলোর খোলস খোলা (শাকিং) এক বিদঘুটে খাটনির কাজ। যদি জাল ফেললেই কোরাল-লইট্যা উঠে আসে, কে হায় ঝিনুক খুলে বেদনা জাগাতে ভালোবাসবে? উপকূলে ঝিনুক থেঁতলে বরং মুরগিকে খাওয়ানো হয়।
কণ্টকচর্ম (একাইনোডার্ম) খাওয়ার সাথে সম্ভবত ডুবুরি পেশার একটা যোগ আছে, তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ পানিতে (অর্থাৎ পাথুরে নদীবিবর্জিত উপকূলে) এটা সম্ভব। আমাদের উপকূল প্রায় পুরোটাই ঘোলা, ডুবুরিদের কাজও সীমিত।
আরেকটা ব্যাপার, আমাদের প্রায় সব পদ মশলা-শাসিত, আর আমরা সবই রাঁধি ভাত (হালে রুটি) দিয়ে খাওয়ার জন্য। সামুদ্রিক পদের মূলসুরটাই হচ্ছে খুব অল্প কিছু বাড়তি এটাসেটা যোগ করা, যাতে "সাগরের স্বাদ"টা ধরা যায়। এটার সাথে আমাদের খাবারের ঝোঁক, মানে মশলা দিয়ে কষিয়ে মেখে ভাত খাওয়াটা মনে হয় যায় না।
প্রথম দুই অনুচ্ছেদে যা বললেন সেটা অন্য আরও অনেক দেশের জন্য সত্য, তবু তারা সেসব খায় - আমরা খাই না। হাঁস-মুরগীকে মূলত শামুক ভেঙে খাওয়ানো হয়। সেটা ডিপ মেইনল্যান্ডেও। গেঁড়ি-গুগলি বলে যে জিনিস কিছু 'ছোটলোকে' খেতো বলে আমরা শুনেছি সেগুলো আসলে মিঠাপানির কম্বোজ। আমরা 'বড়লোক' বলে সেগুলো ছুঁইনি।
মশলা-শাসনের কথা যেটা বললেন সেটা চরম সত্য। উপরে কক্সবাজারের সী-ফুড রান্নার যে বীভৎস কায়দার কথা বলেছি সেটা মশলার কথা ভেবে বলা। এটা ঠিক বলেছেন, আমরা আসলে ভাত বা রুটি খাই। অন্য আর যা কিছু রাঁধি সেটা ভাত/রুটি খাবার জন্য। খালি খালি তরকারী (মাছ/মাংস/সবজি) বা ঝোল (ডাল/টক) খাওয়াটা আমাদের খাদ্যসংস্কৃতির বাইরে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
'বাটিচচ্চড়ি' জিনিসটা কী জানা ছিল না। সেটা জানতে গিয়ে কত্ত কী জানা গেলো! আহা ‘লাইট ইন ব্যবিলন’ কী যে ম্যাজিক জানে! পোস্টে আবার আসতে হবে। আবারও পড়বো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পাণ্ডবদা এরকম উপাদেয় বাটিচচ্চড়ির জন্য।
পামিরি গানগুলোও শুনে দেখেন। ঠকবেন না।
লাইট ইন ব্যবিলন সেই কাজটা করেছে যেটা অনেক মানুষ স্বপ্নে ধারণ করেন কিন্তু বাস্তবে করে ওঠার সাহস করেন না। মিকালের চোখে-মুখে-অভিব্যক্তিতে যে passion আর কণ্ঠে যে দরদ ফুটে ওঠে তার তুলনা নেই। মেতেহান যেমন ধ্যানস্থ হয়ে সন্তুর বাজান অমনটা খুব কম শিল্পীর উপস্থাপনায় দেখা যায়। মিকালের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে জুলিয়েন যেভাবে গিটার বাজান তাতে বোঝা যায় কণ্ঠশিল্পীর প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে কোন টাইম গ্যাপ না দিয়ে কেমন দক্ষতায় তিনি অনুরণন তোলেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আরেক দফা ঘুরে গেলাম পোস্টে। আপনার লেখার একজন সাইলেন্ট পাঠক আছেন, তিনি আমার বড় ভাবী। তাঁর মতামত হলো আপনার লেখার হাত মাইন্ড ব্লোয়িং! আর বাটিচচ্চড়ির আধুনিক সংস্কার হলো স্লোকুকারে রান্না করা খাবার। এটা তিনি প্রায় ব্যবহার করেন। রান্না চড়িয়ে কাজে বেড়িয়ে যান। সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ফিরে গরম গরম খাওয়া খেতে পারেন। আপনার কোনো বই প্রকাশ হয়েছে কিনা সেটা তাঁর জিজ্ঞাসা। আমি যেহেতু জানিনা, তাই বলেছি জেনে বলবো। বেরিয়েছে পাণ্ডবদা আপনার বই? নাম বলবেন প্লিজ।
*
পামিরি গান শোনার আগ্রহ থাকলো। ব্যবিলন ইন লাইটের গান শোনার পাশাপাশি সত্যিই ওদের অভিব্যক্তি মন ছুঁয়ে যায়। ছুটির দিনে কফির চনমনে খুশবুর সাথে নানান ধরনের গানের সাথে প্রায় লাইন ইন ব্যবলন বাজে বাড়িতে। আমার ছোটো ভাইয়ার খুব প্রিয়। ভাইয়ার কাছ থেকেই ওদের হদিশ পাওয়া আমার। 'সকৌত' মুভিটাও দেখার ইচ্ছা থাকলো। ইরানী মুভিগুলোর অধিকাংশই অন্য রকম ভালো লাগা দেয়। আপনি মাজিদ মাজিদির 'বিয়ণ্ড দ্য ক্লাউড' দেখেছেন? মুভিটা দেখে থাকলে আপনার কেমন লেগেছে জানার আগ্রহ হচ্ছে(অন্যায় আগ্রহ মনে হলে ক্ষমা করবেন)। অনেক ভালো থাকবেন। মাঝে মধ্যে আমাদের এমন উপাদেয় বাটিচচ্চড়ি উপহার দেবেন।
একটা একটা করে বলি।
১। শংকরের কিছু লেখায় একটা কুকারের কথা পড়েছিলাম যেখানে ইকমিক কুকারের মতো টিফিন ক্যারিয়ার আকারের কুকারে টিকের আগুনে স্লো কুকিং হতো। গল্প/উপন্যাসের নাম জানতে চাইবেন না, মনে নেই। বছর কুড়ি আগে এমনতরো একটা ইলেকট্রিক কুকারের বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম, কিন্তু বাংলাদেশে বাজার করতে পারেনি। এমন একটা কুকার হলে আমার জন্য খুব সুবিধা হতো, তাহলে ভোরে গরম গরম নাশ্তা খেতে পেতাম।
২। না, বিয়ন্ড দ্য ক্লাউড দেখিনি। তবে মাজিদ মাজিদী'র The Song of Sparrows, Baran, The Colour of Paradise আর Children of Heaven দেখেছি। আমার মনে হয় মাজিদ মাজিদী জাফর পানাহী বা আসঘার ফারহাদীদের মতো প্রকাশ্য বিপ্লবী নন্, কিন্তু যেটা বলতে চান সেটা একটা subtle পদ্ধতিতে বলে যান। এবং মনে হয় to some extent তাঁর কাজ ভারতের মণিরত্মমের কাজের সাথে তুলনীয়।
৩। না, আমার কোন বই প্রকাশিত হয়নি। অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতেও প্রকাশিত হবার কোন সম্ভাবনা নেই। আমার লেখা কারো কাছে মাইন্ড ব্লোয়িং মনে হলে তাঁর প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, দয়া করে সময় নষ্ট না করে সত্যিকারের লেখকদের লেখা পড়ুন। এই সচলেও তারা আছেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হেহেহে...নাহ, গল্প উপন্যাসের নাম জানতে চাইনা। তবে আপনার চাওয়াটা পাওয়া হলে মন্দ হতো না। ভালো মন্দ চাট্টি রান্না করতে পারতেন।
মাজিদির এ পর্যন্ত তৈরি সবগুলো মুভি দেখেছি। যথার্থ বলেছেন, তিনি পানাহী বা আসঘার ফারহাদীর মতো করে প্রকাশ্য বিপ্লবে যান না...তবে মণি রত্নমের চেয়ে মাজিদি যেন সত্য জিৎ রায়ের সাথে বেশি যান। মণি রত্নম যদিও আমি বেশি দেখিনি(তিনখানা মাত্র দেখেছি)। একজন আকাঠ দর্শক হিসেবে মনে হয়েছে আর কী। বিয়ণ্ড দ্য ক্লাউডসে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তার পরিচিত পরিমিতির বৃত্ত ভাঙেননি। চাইলেই মণির রত্নমের মতো 'জিয়া জ্বলে জান জ্বলে ইত্যাদি ইত্যাদি' ধাঁচের একখানা গান জুড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু সে পথে হাঁটেননি।.. সত্যজিৎ যেমন অনেক কিছু সিম্বলিকভাবে দেখানোটা পছন্দ করতেন মাজিদির মধ্যে ঝোঁকটা আছে(আমার মনে হইছে ভাই)। ভদ্রলোক দারুণ ভক্ত সত্যজিৎ রায়ের। এক পথের পাঁচালীই নাকি ৫০ বার দেখেছেন, সেও হয়ত এমনটা মনে হবার কারণ।
আহ্ কী শোনাইলেন! পাঠক হিসেবে শুধু আমার ভাবী নন আমরা অনেকেই মর্মাহত হলেম। আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু বলার সাহস নাই। তিনি এই পোস্ট ঘুরে গেলে নিজেই ঠিক করবেন সময় নষ্ট করবেন কী করবেন না। আমি বলতে গিয়ে বকা খাইতে রাজী নই।
এতটা সময় নিয়ে যত্ন করে মন্তব্যের উত্তর দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ পাণ্ডবদা।
একসাথে তিন/চার পদ রান্না হয় এমন স্লো কুকার খুঁজছি। কায়দা মতো পেলে কিনে ফেলবো।
প্রত্যেকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা এক এক জন শিল্পী। তাদের কেউ সার্থক শিল্পী, আর কেউ ব্যর্থ। এইসব সার্থক শিল্পীদের প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, নিজস্ব ধরন, নিজস্ব দর্শন আছে। আসলে তাদের কেউই একজন আরেকজনের সাথে তুলনীয় নন্। আমরা বরং ছবি দেখার সময় (বা পরে) অমন তুলনা করার চেষ্টা না করি। খামাখা নিজেদের ভালোলাগাগুলো নষ্ট করবো কেন!
বাংলাদেশে ১% লোকে হয়তো বই কেনেন আর সম্ভবত ০.১% বা আরও কম জন বই পড়েন। ফেব্রুয়ারির বইমেলার বাইরে সারা বছর বইয়ের দোকানে খুঁজলে বড়জোর ১০% বাংলাদেশী লেখকের বই পাওয়া যায়। একজন অপ্রতিষ্ঠিত লেখকের বই প্রকাশিত হবার বছর খানেকের মধ্যে ফুটপাথে, পুরনো বইয়ের দোকানে, ঠোঙ্গা বানানোর কারখানায় পৌঁছে যায়। খোদ সচলের অনেকের বই আমি পুরানা পল্টন, নীলক্ষেত, চারুকলার সামনে, বিজয়নগরে ফুটপাথে বিক্রি হতে দেখেছি। সেগুলো কী কায়দায় সেখানে গেলো তা নিয়ে নানা রকম ভাবা যেতে পারে, তবে কাছের মানুষ প্রিয় মানুষদের সৃষ্টিকর্মের এমন পরিণতি আমি হজম করতে পারিনি। আমি বই প্রকাশ করলে যদি তার সব কপি আমি নিজে কিনে না নেই তাহলে ছয় মাসের মধ্যে সেগুলো ঠোঙ্গা বানানোর কারখানায় পৌঁছে যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বিভুতিভূষণ এর গল্পটি পড়েছিলাম, তখন বাটিচচ্চড়ির কনসেপ্টটা ঠিক বুঝতে পারিনি। মানে কিভাবে বানায়। ধন্যবাদ, অনেক কিছু জানতে পারলাম।
পোস্ট পড়া আর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ উম্মে হাসিনা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি দীর্ঘদিন বাটিচচ্চড়ি-স্টাইলে রান্না করে বিস্বাদ খাদ্য খেয়েছি, বিশেষত ইউরোপে আসার পর। পরে ভেবে দেখলাম, এভাবেই যখন বাঁচতে হবে তো ভালোমত একবার চেষ্টা চালাই। শেষ দুয়েকবার ব্যর্থ হয়ে আবিষ্কার করলাম রান্না করাটা সবসময় খুব সময় খরুচে নয়, আর সময় খরুচে হলেও সে আনন্দদায়ক হতে পারে। সেই থেকে বাটিচচ্চড়ি প্রায় রান্নাই করিনা!
আপনার হেডফোন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মনে হয়। একটা সময়ে বেশ হেডফোন-মৌলবাদী হয়ে উঠেছিলাম। সেসময় নানা খোঁজখবর করতে গিয়ে দেখেছি বাজারে হেডফোনের রকম অগুনতি। কান বন্ধ করে ফেলে দমবন্ধ করে ফেলার অনুভূতি দেয়া হেডফোন (এয়ারবাড) সম্ভবত আপনার কাছে বেশি অসহ্য লাগবে। তাই খোলা হেডফোন (এয়ারবাড) ব্যবহার করে দেখতে পারেন। সামসাং এস-৭ এর সঙ্গে যে হেডফোন পাওয়া যেত সেগুলোর একটা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এই হেডফোনটা খোলা, কান বন্ধ করে ফেলেনা। এটার মতো আরো অনেক হেডফোন বাজারে পাওয়া যায়, নানান দামের/মানের। তবে কেমন লাগবে সেটা পরীক্ষা করে দেখার আগে মেলা খরচ করে কিনে না ফেলাই ভালো।
পুনশ্চ, বাটিচচ্চড়ি হলেই যে সে বিস্বাদ হতে হবে তা কিন্তু নয়। সে খাবার হোক বা লেখা।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
পদ্ধতিগতভাবে রান্না করাটা খুব সময়সাপেক্ষ ব্যাপার নয় বটে, তবে সেটা রাঁধুনীর সার্বক্ষণিক উপস্থিতি দাবি করে। যাদের এক টিকিটে অনেক সিনেমার মতো রান্না বসিয়ে দিয়ে আরও দশটা কাজ করতে হয় তাদের জন্য বাটিচচ্চড়ি পদ্ধতি ভরসা। কীসের সাথে কী যায়, আর কী যায় না সেটা জানা থাকলে এবং কোনটার অনুপাত কতটুকু হতে হবে সেটার আন্দাজ হয়ে গেলে বাটিচচ্চড়ি কায়দা আর সনাতনী কায়দার রান্নায় পার্থক্য করা যায় না।
হেডফোন নিয়া এইটা কী কইলা! দুইটার নামই এয়ারবাড হইলে ক্যাম্নে কী! আমি যা বুঝলাম তা হচ্ছে কানে ছোট বীচি গুঁজে দেয়া। এগুলো নাকি আবার কানের উপর দিয়ে ঘুরিয়ে না লাগালে ঠিকঠাক ইফেক্ট আসে না। আর ওটা করতে গেলে কান গরম হয়ে যায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সবই হেডফোন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে বললে কানের ভেতরে গুঁজে দেয়া গেলে সেটা এয়ারবাড, আর কানের উপর চেপে বসে থাকলে সেটা হেডফোন। এই দুটাকেই আবার ইন-এয়ার হেডফোন অথবা অন-এয়ার হেডফোন বলে।
দুই প্রজাতিরই কান-বন্ধ রকম (বেশি প্রচলিত) আর কান-খোলা রকম রয়েছে। বদ্ধ অনুভূতি অসহ্য হলে আপনার দরকার কান-খোলা এয়ারবাড। সামাসাংয়ের এস-৭ ফোনের সঙ্গে এরকম একটা দিত। খুব কমদামে কাজ চালিয়ে নেয়ার মতো জিনিস। ওটা ব্যবহার করে শান্তি পেলে একটা ভালো দেখে খুঁজে নিতে পারেন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
পার্থক্য বোঝা গেলো। বাজারে একটু ঘুরতে হবে। হেডফোন/এয়ারবাডের সমস্যা হচ্ছে এগুলোর আয়ু বেশি হয় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাইরে থেকে কেউ দেশে গেলে একটা আপেল হেডসেট আনায় নেন। আপেল স্টোর থেকে কিনতে বলবেন। অন্যথা নকল জিনিস গছিয়ে দেবে। ২৯ ডলার নেবে। ওটা টেকসই। দাম দিয়ে কিনে পোষায়।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
'বাইরে' মানে কোন দেশ? অন্য যে কোন দেশ, যেখানে আপেলের নিজেদের দোকান আছে? সেটা হলে কাউকে অনুরোধ করার ঝামেলায় যাবো না। নিজে যখন বাইরে যাবো তখন কিনে নেবো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপেলের সমস্যা হচ্ছে মাঝারি মানের জিনিসের দাম অনেক বেশি নেয়। ফোন বা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে তারা দাম তুলনামূলক বেশি নিলেও পণ্য ভালো দেয়। কিন্তু হেডফোনের বাজারে আপেল (এবং বিটস) কেবল বাইরে ঝলকালো বস্তু। মানের দিক থেকে তারা মাঝারি।
সেইজন্য সামসাংয়ের কথা বলছিলাম। এস-৭ যুগেরটা। এটা নিন্ম-মাঝারি মানের। কিন্তু দামও খুব কম। ২৯ ডলারে আপেল না কিনে আর সামান্য বাড়িয়ে খুব ভালো এয়ারবাড কেনা সম্ভব কিন্তু।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
দোটানায় পইড়া গেলাম!
ঢাকায় লোকজন Bose আর JBL-এর কথা বলে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই দুটাই খুব ভালো।
কিন্তু বোস হোক বা জেবিএল, কান-খোলা না হলে কিন্তু আপনার সমস্যা হতে পারে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ব্রান্ডেরও আগে কান খোলা/বন্ধের ব্যাপারটা আমার প্রথমে বিবেচ্য।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
Bose আর JBL তো বিশ্ববিখ্যাত। বোসের স্পিকার হেডফোন দুইটাই পৃথিবীর সেরা ও অভিজাততমগুলির অন্যতম। দামও মাশাল্লা! ৪০০-৫০০ ডলারের নিচে বোসের হেডফোন কিনার মানে হয় না, কারন এর কম দামে অন্য ব্র্যান্ডের আরও ভাল আছে। আমার প্রশ্ন এগুলি ঢাকার ফুটপাথে বিক্রি হয় কিভাবে??? হা হা হা!!!
তবে ইউরোপ-আম্রিকা থেকে বুঝেশুনে আনলে ঠিক আছে।
আমি ঢাকাতে স্বঘোষিত (মেইড ইন চায়না) চাইনিজ মাল ছাড়া আর কোনো কিচ্ছুতে বিশাস করি না। দাম যত কম বা বেশি, দেখতে যত মলিন বা ঝাঁ চকচকেই হোক না কেন। যেই #@%৳(*@-ই বেচুক না কেন!
****************************************
না, ফুটপাথে বিক্রি হওয়াগুলোর কথা বলছি না। হেডফোন বিক্রি হয় এমন সুপারমার্কেটগুলোতে গণচীনে বানানো Bose আর JBL-এর স্পিকার/হেডফোন পাওয়া যায়। আমি জানি না এই দুই কোম্পানি গণচীনে কারখানা খুলেছে কিনা। আমি এই প্রকার Bose-এর স্পিকার আর JBL-এর কানবন্ধ হেডফোনে শুনে দেখেছি; মন্দ না। বিশেষত JBL-এর কানবন্ধ হেডফোনের কোয়ালিটি বেশ ভালো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপেলের ৩০ ডলারের বস্তুটা আসলেই ভাল। ত্রিশ ডলারে এর থেকে ভাল আওয়াজ, টেকসই হেডসেট দেখি নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
একখান আপেলের ইয়ারবাড যোগাড় করেছি। একজন উত্তর আমেরিকা থেকে এনেছিল। আপাতত ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছি। হালকা ও খোলামেলা জিনিস তাও দেখি কান গরম হয়ে যায়। অভ্যাস করতে হবে মনে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কান গরম হবার বিষয়টা একটা সমস্যা। সব সমস্যাই একটা পর্যায় পর্যন্ত অভ্যস্ততার মধ্যে আনা যায়। এর বেশি যায় না। যেমন কানের ভেতর গুজে দেয়া ইনভ্যাসিভ হেডসেটগুলোতে আমি যেমন অভ্যস্ত হতে পারিনি। ওগুলোর একটা অসুবিধার কথা উপরে উল্লেখ করেনি কেউ। সেটা হল এগুলোতে কানে গোজার জন্য যে হাল্কা প্লাস্টিকের বিচি থাকে সেটা কোনপ্রকারে হারিয়ে গেলে পুরো হেডসেট অব্যবহারযোগ্য হয়ে যায়। অল্প কিছু হেডসেট আছে যেগুলোর এক্সট্রা বিচি পাওয়া যায় কিনতে। কিন্তু সেগুলো বাংলাদেশে হাতের নাগালে পাবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
যাদের মাইগ্রেন বা শব্দ ইত্যাদিতে সমস্যা আছে তারা নয়েজ ক্যান্সেলিং হেডসেট ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সেটা গরম দেশে কীরকম ব্যবহার্য সেটার প্রশ্ন তোলা যায়। পুরো কান দুই খোপের মধ্যে ভরে রাখলে একটু পর কান ঘামতে শুরু করার কথা।
আমি খুব বেশি দাম দিয়ে হেডসেট কিনি না। আপেল স্টোর থেকে হেডসেট কিনি। অন্যথা ১০০% সম্ভাবনা আপনাকে নকল আপেল হেডসেট ধরিয়ে দেবে। আর উঁচু ভলিউমে গান শুনতে গেলে স্পিকারে শুনি। স্পিকারে একটা ব্লুটুথ ডল্গল লাগিয়ে নিয়েছি। স্পিকার এক কোনায় চুপটি করে বসে থাকে। বাসায় যখন যেটাতে মন চায় সেই ডিভাইস সেইটা ব্লুটুথ দিয়ে কানেক্ট করে গান শুনি। ব্লুটুথ তারতুরের ঝামেলা বাঁচায় ।
খুব বেশি ইউটিউব ভিজিট করলে গুগল ক্রোমকাস্ট কিনতে পারেন। সোফায় বসে ফোন হাতে ফোনে চলা ভিডিও/গান সরাসরি তারের ব্যবহার ছাড়া টিভিতে স্ট্রিম করতে পারবেন। সে টিভিটা ভাল স্পিকারে কানেক্টেড থাকলে আরও ভাল।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আপনার পরামর্শ প্রায় পুরোটা ফলো করছি। কানে অ্যাপেলের যে ইয়ারবাড লাগাচ্ছি সেটা ঠিক ইনভেসিভ নয়, আর সেটাতে রাবারের ঐ বাড়তি সাপোর্টগুলোও নেই - একটু খোলামেলা। অভ্যাস হতে কিছুটা সময় লাগবে মনে হয়। একটা বোসের অয়্যারলেস স্পিকার যোগাড় করেছি, ব্লুটুথে চলে। ফলে বাড়ির বাকিদের যখন আপত্তি থাকে না তখন মোবাইলে গান ছেড়ে স্পিকারে শোনা যায়। টিভিটা প্রাগৈতিহাসিক আমলের, সেখানে সম্ভবত ক্রোমকাস্ট লাগানোর উপায় নেই। তাছাড়া সেটার সাউন্ড কোয়ালিটি যা তা। আপাতত জুতসই টিভি কেনার সঙ্গতি নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একটা নতুন টিভি কিনে ফেলেন যেটাতে এইচডিএমআই পোর্ট আছে। সেটা দিয়ে কানেক্ট করে ল্যাপটপে নামানো মুভি, সিরিয়াল টিভিস্ক্রিনে দেখবেন। সারাদিন অফিসে পিসির সামনে ঘাড় গুঁজে কাজ করে বাসায় এসে আবার পিসির সামনে বসা স্বাস্থ্যকর না। একটু দূরে টিভি যেটা আপনি সোফার গা এলিয়ে ঘাড়, পিঠ বিশ্রাম দিয়ে দেখবেন। টিভি অবশ্যই বোকাবাক্স। কিন্তু ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে নিজের কাজে লাগানো সম্ভব।
এটুকু লিখে মনে পড়লো আমার নিজেরই টিভি নাই। কাজের চাপ কমলে একটা কিনে ফেলতে হবে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমি আগে কী কইলাম!
আপনি যা বললেন সেটা তো অনেক দিনের স্বপ্ন। সেই উদ্দেশ্যে নির্মাতা ধরে ধরে মুভি যোগাড় করে এক টেরাবাইটের একটা পোর্টেবল ড্রাইভে রেখেছি। আরেকটা পোর্টেবল ড্রাইভে রাজ্যের গান যোগাড় করা আছে। এখন মাসে নির্ধারিত বিলের ইন্টারনেট সুবিধা আছে। সুতরাং অনেক কিছু না নামালেও চলে। গোলাবারুদ রেডি, শুধু কামানটা কেনার পয়সা নেই।
পুনশ্চঃ আমার হিসাবে টিভি দুদিন পর পর কেনার জিনিস না। সুতরাং যখন কিনবো তখন গুণেমানে অমন জিনিসই কিনবো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমিও বড় হলে কিনবো বলে টাকা জমাই
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হেডফোন নিয়ে আমি একটু নাক গলাই? বছর দুই-তিন আগে আমি এই বিষয়টা নিয়ে যৎসামান্য ঘাটাঘাটি করেছিলাম ঢাকার মার্কেটগুলিতে, কাছাকাছি ধরণের প্রব্লেম নিয়ে। হয়তো আমার সমস্যা ও সমাধানগুলি আপনার কাজে আসতেও পারে।
হেডফোনের বাটিচচ্চড়ি
সমস্যা --
আমার সমস্যা ছিল ত্রিবিধ, ফলে হেডফোনও প্রয়োজন ছিল ত্রিবিধঃ--
১। রাতে অতিরিক্ত বজ্রবিদ্যূত সহ দীর্ঘক্ষণ ঝড় হলে আমার ঘুমাতে অসুবিধা হয়। টপ ফ্লোরে থাকি। ফলে আমি চাচ্ছিলাম সাময়িক প্রয়োজনে একটা পুরোপুরি বাইরের শব্দ (বজ্রপাতের আওয়াজ) ব্লক করে দেয় এমন কিছু। তুলা বা ইয়ারপ্লাগ (মাফলার?) জাতীয় জিনিসে ফল পাচ্ছিলাম না।
২। ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ে থাকতে প্রচন্ড বিরক্ত আরে বোরিং লাগে। সেইসাথে চারিদিকের ভয়ঙ্কর কর্কশ হৈ-হট্টগোল কান আর মন দু'টার উপরেই অসহনীয় অত্যাচার চালায়। এক্ষেত্রে আমার একমাত্র সমাধান হচ্ছে, আমি গান ছেড়ে কানে হেডফোন (ইয়ারবাড) লাগিয়ে সীটে হেলান দিয়ে আস্তে করে চোখ বুঁজি! এছাড়াও, বিভিন্ন সময় বন্ধু-বান্ধবদের কিছু পার্টিতে যেতে হয় তাদের টানাটানিতে। এগুলিতে বিশেষ পরিস্থিতে বেশ চড়া সুর ও স্বর উভয়েরই উচ্চাঙ্গের খেলা চলে, যা আমার বেশিক্ষণ ভাল লাগে না, কিন্তু উঠেও আসা যায় না সবসময়। এইসময় টুক করে কানে বিচিটা গুঁজে দিয়ে ঝিমানোর ভাব করতে থাকি। বেশি লোক থাকলে এটা আর কেউ লক্ষ্য করে না তখন। হে হে।
৩। আমি রাতে আর কারও ঘুমের ব্যাঘাত না করে নিজের বিছানায় শুয়ে শুয়ে একাই মুভি / টিভি দেখতে চাচ্ছিলাম। সমাধান হলো হেডফোন। কিন্তু সমস্যা হলো মাথার বালিশ থেকে টিভির দূরত্ব সম্ভবত ১৫ ফুট। এখানে এত লম্বা তারওয়ালা হেডফোন আমি পাইনি। আর বিশাল লম্বা তার লাগিয়ে মাথার উপর দিয়ে ঘুরিয়ে পরা ভারিক্কি হেডফোন বেশিক্ষণ পরে থাকাটাও খুব আনকম্ফোর্টেবল মনে হয়েছে।
সমাধানঃ--
১ ও ২। টিভিতে একবার "নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন"-এর কথা শুনেছিলাম। তো সেটাই খুঁজতে গিয়ে পেলামও কিছু। এগুলির দাম অনেক হতে পারে। সবচেয়ে কমে পেলাম সনি-র একটা নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন -৩০০০/-- টাকায়। এটা কিনলাম এবং ঘুমোবার সময় ট্রাই করলাম মিউজিক দিয়ে। এগুলিতে একটা পিচ্চি বোতামের মতো ব্যাটারিও লাগাতে হয়। এই হেডফোনে বেশ কাজ হচ্ছিল। এগুলি বাইরের নয়েজ (জোরালো বজ্রপাতও) অনেক অনেক কমিয়ে দেয়, কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে (যদি কেউ এটা পরে রাস্তা দিয়ে হাটে, বা জরুরী অন্যকিছু) ১০০% ব্লক করে না। সেটা বলাই থাকে। আমার কাছে খুব একটা দমবন্ধ লাগেনি সাউন্ডের বিচারে। কিন্তু এইসব মাথার উপর দিয়ে ঘুরিয়ে দুকানের উপর চেপে বসা হেডফোন বেশিক্ষণ কম্ফোর্টেবল লাগে না আমার, কিছুটা দমবন্ধও লাগে এক হিসেবে। রাতে ঘুমানোর সময় পরাটাও অস্বস্তিকর। তাই আবার বাজারে গেলাম।
এবার "মাথার উপর দিয়ে ঘুরিয়ে দুকানের উপর বসানো হেডফোনের" বদলে "কানে ছোট বীচি গুঁজে দেয়া হেডফোন" অর্থাৎ যাকে "ইয়ারবাড" (অফিসিয়ালি এগুলিকে "ইন-ইয়ার হেডফোন" বলে) বলে সেগুলির দিকে বেশি নজর দিলাম। উপরে অনার্য সঙ্গীত যেমন বলেছেন - এগুলিরও কান-বন্ধ রকম (বেশি প্রচলিত) আর কান-খোলা রকম রয়েছে। "কান-বন্ধগুলির" বিচিগুলি একটু লম্বাটে হয় আর তার মাথার উপর খুব সফট রাবার জাতীয় কিছুর ক্যাপ পরানো থাকে যা কানের ছিদ্রের সাথে খাপ খাইয়ে বেশ ভিতরে ঢুকে বাইরের বাতাস প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। ফলে বাইরের শব্দ ঢুকতে পারে না। আর "কান-খোলা"-গুলির বিচি অত লম্বাটে হয় না বা ঐ রকম লম্বাটে সফট ক্যাপ পরানো মাথা থাকে না যেগুলি কানের ভিতরে ঢুকতে পারবে। বরং কানের ফুটোর ঠিক বাইরেই আলতো করে বসে থাকে। ফলে বাইরের শব্দ একটু কমলেও আসলে আটকায় না খুব। গান বাজালেও শব্দ শুনতে পাবেন। আর হ্যাঁ, এই ইয়ারবাডগুলির প্যাকেটে আপনার সুবিধার্থে বিভিন্ন সাইজের ফ্রি স্পেয়ার ক্যাপ থাকে যাতে আপনার কানে ঠিকমতো ফিট করে এমন একটা বেছে লাগাতে পারেন বা একটা ক্যাপ নষ্ট হয়ে গেলে আরেকটা দিয়ে রিপ্লেস করতে পারেন।
আমি আমার উপরের ১ ও ২ নং প্রয়োজনে ইয়ারবাডই পছন্দ করলাম শেষ পর্যন্ত। ১ নঙের জন্য কান-বন্ধ আর ২ নং-এর জন্য একটা আমি যাকে বলবো মাল্টি-পারপাজ সেরকম। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু প্রকারভেদ আছে। প্রথমত (ক) তারবিহীণ ব্লু-টুথ, (খ) নাকি তারওলা নন-ব্লুটুথ ইয়ারবাড চান আপনি? (গ) মাথার পিছন দিয়ে ঘুরিয়ে কানের লতির উপর দিয়ে এক পাক দিয়ে ঐখানে নিজেকে ভালোমত আটকে নিয়ে তারপর যেটা নিচে নেমে কানের ফুটোয় ল্যান্ড করে সেগুলি, নাকি (ঘ) যেগুলি মোটামুটি সরাসরি কানের ফুটোর দিকে চলে যায় বা ছোট একটা ক্লিপ দিয়ে লতিতে আটকানো হয়?
এখন আমাদের বাজারে ভাল মানের ইয়ারবাডের মধ্যে ব্লু-টুথই চলে বেশি। তারওলাটা একদম সস্তাগুলি ছাড়া সহজে পাওয়া যায় না মনে হয়। ভাল মানের তারওয়ালা নুন-ব্লুটুথ পেতে হলে খুঁজতে হবে মনে হয়।
সুবিধা-অসুবিধা -
ব্লু-টুথের সুবিধাঃ
১। ভাল মানের তারবিহীণ ব্লু-টুথ ইয়ারবাডের সুবিধা অনস্বীকার্য। তারওয়ালাগুলির তার-ফারে প্রায়ই জট লেগে যায়। সে জট ছুটানো অনেক সময় মহা ঝকমারি। ছিড়েও যায়।
২। তারওয়ালা ইয়ারবাডের তারে যে কোন সময় এ্যাক্সিডেন্টালি হ্যাঁচকা টান লেগে যেতে পারে। যায়ও। বেশি জোরে হলে তো সাথে সাথেই ছিড়ে যাবে। কিন্তু না ছিড়লেও এরকম বারবার বা কয়েকবার হলেই ইয়ারবাড নষ্ট হয়ে যাবে। ব্লু-টুথে এই সমস্যা নাই।
৩। ব্লু-টুথ দিয়ে তারওয়ালাগুলির চেয়ে অনেক বেশি দূরর্ব কাভার করা যায়।
ব্লু-টুথের অসুবিধাঃ
১। ব্লু-টুথের সাউন্ড কোয়ালিটি থেকে তারওয়ালাগুলির সাউন্ড কোয়ালিটি সাধারণত কিছুটা ভালো হয়। তবে সাধারণ ব্যবহারকারী বা লিসেনারের জন্য এই পার্থক্য খুব উল্লেখযোগ্য না, যদি না আপনি মিউজিক ও তার সাউন্ড-কোয়ালিটি সংক্রান্ত তীব্র এনথুসিয়াস্ট/কনোসিওর হন। বেশি এনথুসিয়াস্ট ও কনোসিওর না হলে আপনি বুঝতেই পারবেন না পার্থক্য, আবার হলে তখন সন্তুষ্টি নাও পেতে পারেন। মোদ্দা কথায়, বেশির ভাগ মানুষের জন্য ব্লু-টুথের সাউন্ড গুড-এনাফের চেয়েও অনেক বেশি। আর দামি ব্র্যান্ড হলে তো কথাই নেই।
২। আপনি ব্লু-টুথ ইয়ারবাড মোবাইলের সাথে চালালে মোবাইলের ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, ফলে
তুলনামূলক তাড়াতাড়ি খরচ হয়। রিচার্জের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়বে তখন।
ওয়্যার্ড ইয়ারবাডের সুবিধা অসুবিধা সব আগেই বলে ফেলেছি। সুবিধাগুলি তারপরও -
১। বেটার সাউন্ড কোয়ালিটি
২। মোবাইলের ব্যাটারির উপর ব্লু-টুথের মতো চাপ ফেলে না।
এবারে ইয়ারবাডের আকৃতি ও বাহ্যিক ডিজাইন প্রসঙ্গ '--
অনেক রকম আছে, তবে জেনারেলি এভাবে ক্লাসিফাই করতে পারি হয়তো -
(১) মাথার পিছন দিয়ে ঘুরিয়ে কানের লতির উপর দিয়ে এক পাক দিয়ে ঐখানে নিজেকে ভালোমত আটকে নিয়ে তারপর যেটা নিচে নেমে কানের ফুটোয় ল্যান্ড করে সেগুলি, আর (২) যেগুলি মোটামুটি সরাসরি কানের ফুটোর দিকে চলে যায় বা ছোট একটা ক্লিপ দিয়ে লতিতে আটকানো হয়, ইত্যাদি।
আমার কাছে নির্দ্বিধায় ১ম জাতেরটাই সবচেয়ে কনভিনিয়েন্ট আর কম্ফোর্টেবল লাগে। এটা প্রায় চশমার মতই বসে যায়, কিন্তু আরও অনেক সিকিউর ভাবে। আর ব্লু-টুথ হলে তো কথাই নাই - তারফারের কোনো ঝামেলাই থাকলো না! এগুলি মাথার পিছন দিয়ে ঘুরিয়ে কানের লতির উপর দিয়ে এসে এমন ভাবে আপনার বসে যে একবার ঠিকমতো বসিয়ে নিলে তারপর হাজার মাথা ঝাকাঝাকি করলেও খুলে পড়বে না। আপনার অজ্ঞাতসারে খুলে পড়ে যাবে না। এগুলি এত হাল্কা হয় যে দুয়েকদিন ব্যবহারের পর আর মনেই থাকবে না যে কিছু পরে আছেন। কোনো অস্বস্তি নেই। ৩য়ত, এগুলি কানের ফুটোর উপর খাঁজে বিভিন্ন ভাবে বসানো যায় এবং যেভাবে বসাবেন সেভাবেই থাকবে, সরে যাবে না চট করে। অর্থাৎ এটা যদি নয়েজ-ব্লকিং বিচিওলাও হয়, বিচিটা ফুটোর ভিতরে না ঢুকিয়ে যদি ফূটোর ঠিক বাইরের খাঁজে রেখে দেন, তাহলে সেভাবেই থাকবে। সরে যাবে না, কারন এটা্র নিজের একটা অতি হাল্কা চাপ আছে। ফলে তখন বাইরের আওওয়াজও ঢুকতে পারবে। ফলে নয়েজ-ব্লকিং ইয়ারবাডটাই তখন নয়েজ-নন-ব্লকিং ইয়ারবাড হয়ে গেল! মাল্টিপারপাস হয়ে গেল। এই ডিজাইনের ইয়ারবাডের এই এক বিরাট সুবিধা। এটা পরে আপনি যে কোন জায়গায় চলে যেতে পারবেন, গান শুনতে পারবেন এবং বাইরের আওয়াজ শোনা না শোনাটা সুবিধামতো বিভিন্নভাবে এডজাস্ট করে নিতে পারবেন কানের ফুটোর সাথে বিচির মাথার দূরত্ব এডজাস্ট করে নিয়ে। ইচ্ছা হলে জিনিসটা কান থেকে না খুলে মাথাটা কানের উপর থেকে একেবারেই সরিয়ে রাখতে পারবেন অন্য কারও সাথে ইন্টারএ্যাক্ট করা সময়। এই জিনিস ব্লুটুথ নন-ব্লুটুথ দুভাবেই হয়, কিন্তু ব্লুটুথই সবচেয়ে কনভিনিয়েন্ট তার নেই বলে। তাছাড়া এগুলির কিছু ওয়াটার-রেসিস্ট্যান্ট স্পোর্টস মডেলও হয়, যেগুলি অনেক রোবাস্ট এবং চট করে নষ্ট হয় না।
ঢাকার মার্কেটগুলিতে এ ধরণের ইয়ারবাডের মধ্যে যেগুলি বেশি পাওয়া যায় তার মধ্যে আমি সবচেয়ে ভালো পেয়েছি Remax আর Awei-র ইয়ারবাডগুলি। সবই অবশ্য সস্তায় আনা চাইনিজ মাল, এই দুইটা বোধহয় হংকং-এ হেডাপিস। আমি কিনেছিলাম Awei-র একটা ব্লু-টুথ: https://youtu.be/GInUoQVl6F0 । ১৩০০-১৪০০ টাকায়। আর আরেকটা Remax-এর তার লাগানো ইয়ারবাড ৮০০ টাকায়। দু'টাই বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল। দামের হিসাবে দুইটাই আমার কাছে সবদিক থেকেই দারুন লেগেছে।
সবশেষে আমার ৩য় সমস্যাঃ হেডফোন লাগিয়ে ছবি দেখা। এটা করতে গিয়ে আমি আবিষ্কার করলাম, শুধু হেডফোনে হবে না, ব্লুটুথ হেডফোন লাগবে। না, তাতেও হবে না, আরও লাগবে ওয়্যারলেস ব্লু-টুথ ট্রান্সিভার (ট্রান্সমিটার + রিসিভার) বা ট্রান্সমিটার - আমার টিভি এবং সময় সময় কম্পিউটারে লাগানোর জন্য। এই ট্রান্সিভারটি অডিওকে আমার হেডফোনে ট্রান্সমিট করার জন্য লাগবে। এই ট্রান্সিভার/ট্রান্সমিটারকে আবার হতে হবে ন্যূনতম ব্লুটুথ ৪.০২ ভার্শান (৫ হলে ভালো), এপিটিএক্স এবং লো-ল্যাটেন্সি প্রযুক্তিসম্পন্ন। টিভির ছবি আর নর্মাল ব্লুটুথের অডিও ট্রান্সমিশনের মধ্যে গতির একটা পার্থক্য আছে। কেউ কথা বললে আপনি স্ক্রীনে ঠোঁট নড়তে দেখবেন আগে, তারপর একটু গ্যাপ দিয়ে ব্লুটুথে ডায়ালগ শুনবেন, ততক্ষণে ছবির ব্যক্তি আরও অন্য কিছু বলে ফেলেছে হয়তো। লিপ-সিঙ্ক হবে না। এইজন্য দৃশ্য ও ধ্বণির মধ্যে ৪০ মিলিসেকেন্ডের নিচে পার্থক্যটা রাখতে হবে যাতে করে ব্রেইন এই পার্থক্যটা পার্সিভ করতে না পারে। তখন মনে হবে একইসাথে হচ্ছে। এর জন্য ব্লুটুথের সাথে লাগে লো-ল্যাটেন্সি প্রযুক্তি। ট্রান্সিভার/ট্রান্সমিটারেও লাগবে, হেডফোনেও লাগবে। মুশকিল হলো এটা এখনো বেশির ভাগ ব্লুটুথ যন্ত্র বা হেডফোনে নাই। নর্মাল হেডফোন ইউজ করতে হলে তখন দুইটা ব্লুটুথ এপিটিএক্স লো-ল্যাটেন্সি ট্রান্সিভার বা একটা ট্রান্সমিটার ও একটা রিসিভার লাগবে। টিভি বা কম্পিউটারের জন্য ট্রান্সমিশন আর হেডফোনের জন্য রিসেস্পশন প্রয়োজন। রিসিভার থাকলে রিসিভারের সাথে নর্মাল হেডফোন লাগাতে হবে। কম্পিউটারের সাথে কোনো ইন্টারএক্টিভ কিছু করতে হলে (ভয়েস রেকর্ডিং, স্কাইপ, ইত্যাদি?) দুই এন্ডেই ট্রান্সিভারই লাগবে বা অন্তত একদিকে লো-ল্যাটেন্সি ব্লুটুথ ট্রান্সিভিং ফিচারসম্পন্ন মাইক্রোফোনযুক্ত হেডফোন। বিরাট জটিল জিনিস। কথা হচ্ছে এই লো-ল্যাটেন্সি ট্রান্সিভার বা হেডফোন অনেক খুঁজেও ঢাকায় পাইনি। শুধু আমাজনেই পেয়েছিঃ যেমন এইটা। ফলে এটা এখনও আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে!
****************************************
কানে শোনার যন্ত্র নিয়ে আপনি বরং আলাদা পোস্ট দিতে পারতেন - তাতে মেটাব্লগিং-এর দায়ে পড়তেন বলে মনে হয় না। আপনার গবেষণার ফলাফল আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। আশা করি অন্য অনেককে একইভাবে সাহায্য করবে। ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্যটা যেন খুঁজে পাওয়া যায় এজন্য পোস্টের ক্যাটেগরিতে 'হেডফোন' আর 'ইয়ারবাড' যোগ করে দিচ্ছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
--ঘ্যাচাং--
****************************************
আরে! করছেন কী! এ তো দেখছি বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হয়ে গেল! অবশ্য এই উপকারি কঞ্চির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ না জানিয়ে উপায় নেই।
পেশাদার কুস্তিতে 'বস্টন ক্র্যাব' বলে একটা কৌশল আছে। কোন পোস্টের আলোচনায় কোন বিষয় মনমাঝি'র মনে ধরলে তিনি সেটাকে বস্টন ক্র্যাবের কায়দায় ধরেন। তাতে উনার লাভ হোক বা না হোক সচলের পাঠকদের বিস্তর উপকার হয়। এমন উদাহরণ আরও অনেক পোস্টে দেখতে পাবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ঢাকায় এই ক্র্যাব পাওয়া যায়? গেলে খোঁজ দেন, কায়দায় ধরাধরি বাদ, বরং খেয়ে দেখি - খিদা লাগছে!
****************************************
এক সন্ধ্যায় পগোজ স্কুলের সামনে দেখি ইয়াব্বড় বড় সব কাঁকড়ার ঠ্যাঙগুলো মুড়িয়ে বেঁধে বিক্রি করা হচ্ছে। দেখে পুত্র মহাউৎসাহিত। বিক্রেতা অভয় দিয়ে বললেন, তিনি কেটেকুটে দেবেন। জুতমতো রান্নার কায়দা জানি না বলে আর কেনা হলো না। আপনি কাওরানবাজারে (কারওয়ানবাজারে) একটু ঘুরান্তি দিলে সামূদ্রিক না হোক, পুকর-ধানক্ষেতের কাঁকড়া পেয়ে যাবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ হয়েছে এই মন্তব্য - বাটি চচ্চড়িটা! আমাদের সকলের জন্য।
অ্যামাজনের থে ঐ-টার বড় ভাইটারে (দুইটা স্পীকারে একই সাথে কাজ করে) আনাইছি কয়দিন আগে। আমার পকেটের কুলানিতে এখনও পর্যন্ত আমার শোনা সেরা লো-ল্যাটেন্সি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
"কোয়ালকম এপিটিএক্স এইচডি" লেখা ৮০ ডলারেরটা?
****************************************
ঐটাই - ভিন্ন নামে। [Premium Version] Avantree Oasis Plus aptX HD Long Range Bluetooth Transmitter Receiver for TV Audio, Home Stereo, Optical Digital, AUX & RCA, Wired & Wireless Simultaneously, Dual Link Low Latency - আসল কথা হল, aptX HD-কে মদত করতে পারে। আমার মতলব হচ্ছে আমার শয়ান-কেদারার দুই পাশে দুইখান স্পীকার বসায়া খুব আস্তে কইরা আওয়াজ বানায়া শুনুম। সেই আদিকাল থেকে তার-বেতার নানা হেডফোন ব্যবহার করে করে এখন আইপ্যাডের সাথে যে কানে বীচি-গোঁজা হেডফোনটা এসেছে সেইটাই শুধু ব্যবহার করি। কিন্তু টিভি থেকে শোনবার জন্য ট্রান্সিভার-টা কিনলাম (দরকারে কম্পুকে টিভিতে চালান করাটাও করা যাবে)। আর এইটাকে টিভিটার সাথে লাগানো সাউন্ডবার-টার সাথে জুড়ে নিয়েছি, বাইপাস মোড চালু করে। দুঃখের কথা হইল এখনও দ্বিতীয় নীলদাঁতি স্পীকারটা কেনা হয় নাই। তাই ট্রান্সিভারটার পুরা ক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়া হয় নাই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আমি দৃশ্যটা কল্পনা করলাম। কর্ত্তামশাই পরণের কাপড় হাঁটুর কাছাকাছি তুলে ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ দিয়ে আরামকেদারায় শুয়ে, দুই চোখ মুদে, দুই হাতে তাল ঠুকতে ঠুকতে তদগত হয়ে আছেন। শান্ত্রীর মতো দুই পাশে দুই স্পীকার দাঁড়িয়ে বাজিয়ে চলেছে -
বসিয়া আছ কেন আপন মনে,
স্বার্থনিমগন কী কারণে?
চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি,
ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি
প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে।।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পয়লা পয়লা তেহারি বিরানি পাকানো শিখার পরে বহু পেরেশানি সহকারে রান্না করতাম। রেসিপি অনুসারে গরম মশলা তেজপাতা ইত্যাদি ভেজে, মাংস কষায়ে সরায়ে সেই তেলে আলু হাল্কা ভেজে, তারপর গোলাপজল কিসমিস বাদাম হাবিজাবি সহকারে চাল ভেজে তার উপর ঝোলসহ মাংস দিয়ে কত কাহিনী। এখন তেহারি রান্ধি আপনের চচ্চড়ি স্টাইলে, সমস্ত গরম মশলা তেল ঘি গোলাপজল নন-গোলাপজল লবন চিনি বাদাম কিসমিস মাখায়ে মাংস বসায় দেই, তারপর মাংস সিদ্ধ হইলে সেইটার ঝোলে রাইস কুকারে বসায় দেই। বাটি-বিরানি। খাইতে অত্যন্ত সুমধুর, লেখার মতই। আপিসে বইসা পড়লাম দেখে গান শুনতে পারলাম না, পরে হবেনে।
..................................................................
#Banshibir.
তেহারী/বিরিয়ানী (কাচ্চি/পাক্কি/চাপ/দম)/মাংস-পোলাও রান্নার সহীহ্ ত্বরিকা বলে কিছু নেই। প্রত্যেকের পদ্ধতিই এর এক একটা ভ্যারাইটি। একটা উদাহরণ দেই। গুলশান এলাকার এক রেস্তোরাঁতে একবার জিজ্ঞেস করে জানলাম তেহারী অ্যাভেইলএবল। আমি অর্ডার করলাম। কিছুক্ষণ পর এক থালা সাদা ভাত নিয়ে আসলো যেটা অল্প সয়াবীন তেলে নাড়াচাড়া করে আনা। সেই ভাত ঘেঁটে দেখি ভেতরে আলু বা মাংস কিছু নেই। আমি জিগাই, 'এইডা কী'? তা দেখে একজন চেঁচিয়ে বললেন, 'অই তেহারীর মাংস লয়া আয়'। তখন একজন সামান্য রগ-পর্দা-চর্বিওয়ালা একটা শুকনা হাড়ের টুকরা নিয়ে আসলেন। আমি আবারও জিগাই, 'এইডা কী'? উত্তরে তিনি একগাল হেসে বললেন, 'ভুনা মাংস'। নীলক্ষেতের 'রয়েল বিরিয়ানী'র তেহারী খেয়ে (১২ টাকা হাফ থেকে শুরু করেছি) বড় হওয়া আমি তেহারীর এমন চেহারা-ছুরত দেখে বাক্রুদ্ধ হয়ে গেলাম।
আজকাল অনেক কাজেই বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। বাধ্য হয়ে সেগুলোও বাটিচচ্চড়ি স্টাইলে সেরে ফেলার চেষ্টা করি।
বাসায় ফিরে একটা বাটিচচ্চড়ি রান্না বসিয়ে দিয়ে, মেয়ের সাথে খেলতে খেলতে গানগুলো শুনে ফেলুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মুভিতে গানের সুরটা শুনে আমিও বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল খুব চেনা কোন গান। খোরশেদের সাথে সাথে আমিও পথ হারিয়েছিলাম। এটা বোধহয় ঠিক যে ভারতীয় উপমহাদেশীয় সুরের যে ধারা তার উপর মধ্য এশিয়ার বেশ প্রভাব আছে। মোহসেন মাখমালবাফের মুভি দেখার আগে তাঁর কন্যা সামিরার 'ব্ল্যাকবোর্ড' দেখে ফেলছিলাম। তখন অবশ্য জানতাম না সামিরা তাঁরই কন্যা। মোহসেন মাখমালবাফের কান্দাহার মুভিটা দেখতে চাই। খোঁজ থাকলে জানায়েন। তবে আপনার এই সিনেমার বাটিচচ্চরি আলোচনা সুত্রে তাজিকস্তানের রাজনীতি নিয়ে এবং তার সাথে মৌলবাদী শক্তির উত্থানের সম্পর্কিত তথ্যগুলো জানা হলো। দুনিয়ার সব এলাকার মধ্যে মধ্য এশিয়ার ওই অঞ্চল সম্পর্কে আমার আগ্রহ বরাবরই বেশী। কিন্তু জানার সুত্র খুবই কম। আমাদের মিডিয়া তো কখনোই ওই অঞ্চলে আলো ফেলেনি। কারণ মিডিয়ার মূল অংশের তথ্য যোগানদাতা যেসব পশ্চিমা সংবাদ সংস্থা যাদের নির্দিষ্ট একটা গণ্ডী ফরমূলা আছে যার বাইরে তারা কদাচিত পা ফেলে।
আপনার রান্না বিষয়ক প্রতিভা জেনে চমৎকৃত হলাম। এই বিষয়ে নিজে একেবারে অজ্ঞমূর্খ প্রবলভাবে পরনির্ভরশীল বলে আরো মুগ্ধ হলাম বাটিচচ্চরি রান্নার কায়দা পড়ে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আশির দশকে বিটিভিতে একটা চীনা মুভি দেখেছিলাম (আপনিও হয়তো দেখেছেন) - Palm Flower Embroidery। মুভিটা শিনজিয়াঙ (পূর্ব তুর্কীস্তান/ উইঘ্যুর) প্রদেশের পটভূমিতে নির্মিত। সেই মুভির কিছু গানগুলোর সুর হুবহু ভারতীয় হিন্দী মুভির গানের। আসলে কে যে কারটা মেরেছিলো জানি না। আরও পরে যখন মধ্য এশিয়ার গান শোনার সুযোগ হয়েছে তখন তাদের গানের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের গানের ব্যাপক মিল আবিষ্কার করেছি। এটার কারণ বোধকরি এই গানগুলোর মূল ব্যাকরণ অভিন্ন। তাছাড়া ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রগুলোতেও ব্যাপক মিল আছে।
'কান্দাহার' আমি দেখেছিলাম ডিভিডি কিনে। নেটে ঘুঁটা দিয়ে দেখেন কোন লিঙ্ক পান কিনা। না পেলে যে দুয়েকটা ডিভিডি'র দোকান এখনো ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে তাদের বলে দেখুন।
মধ্য এশিয়া সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে বড় বাধা ভাষা। রুশ বা ফারসী'র একটা যদি পারতাম তাহলে অনেক কিছু জানা যেতো। মধ্য এশিয়ার সাহিত্য সম্পর্কে ইংলিশে যা পড়েছি তাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ!
একদিন সাহস করে হেঁশেলে ঢুকে পড়ুন, দেখবেন ব্যাপারটা মন্দ না। আমার মন যখন খুব বিক্ষিপ্ত থাকে তখন জটিল একটা কিছু রান্না করতে নেই, অথবা এমন একটা কিছু রান্না শুরু করি যেটা শেষে কী দাঁড়াবে সেটা নিজেও জানি না। ব্যাপারটা ভালো কাজে দেয়। এতে অন্যদেরকে বিরক্ত করা হলো না, আবার নিজের কাজও হলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
..................................................................
#Banshibir.
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
..................................................................
#Banshibir.
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
..................................................................
#Banshibir.
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই পোস্টের একটা মজার ব্যাপার হলো এর লিংকটা শুধু হেডফোনের জন্য হলেও সংরক্ষণ করা উচিত। যে কেউ হেডফোন কেনার আগে পোস্টে একবার ঘুরে তারপর মার্কেটে গিয়ে দরদাম করতে পারে। হেডফোন নিয়ে এত বিস্তারিত আলাপ বোধহয় বাংলা ভাষায় আর কখনো কোথাও হয়নি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
একটা বিষয় খেয়াল করলাম বস্। এই পোস্টে আমরা অনেক আলোচনা করলেও ফেসবুক থেকে কেউ এখানে মন্তব্য করেননি। কয়েক জন 'লাইক' চাপলেও কোন মন্তব্য নেই। তার মানে, কেউ ফেসবুকে ব্লগ পোস্ট শেয়ার করলেও হয় লোকে সেখান থেকে আর ব্লগে ঢোকেন না, অথবা ঢুকলেও তাতে মন্তব্য করতে আগ্রহী হন না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাটিচচ্চড়িই বটে। কোথায় বাংলার হতভাগিনী, দুঃখিনী, বিধবা পিসিমা দিদিমাদের রসুই, কোথায় তাজিক মুজাহেদিন, আর কোথায় লাইট ইন ব্যবিলন।
যাইহোক, সেইসব বিধবারা মোটা দাগে আমাদের দুটি উপকার করে গেছেন, তার একটি সার্বজনিন, কিছু জনপ্রিয় বাঙালি নিরামিষ পদের উদ্ভাবন। অন্যটি জাতিগত বাঙালি মুসলমানদের জন্য, সেটি অবশ্য এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। এইসব পিসিমা দিদিমাদের সকলেই যে তাদের রান্নার স্বাদের ব্যাপারে উদাসিনী ছিলেন তা নয়। স্বভাবগুণেই কেউ কেউ আবিষ্কার করে ফেলেছেন সবজি এবং নিরামিষের অসাধারন সব বাঙালি পদ, বাড়ীর অন্য সকলকে খাইয়েছেন। এঁচোড়ের ছেঁচকি বা পটলের দোলমা বা ওল ডাঁটির ঘণ্ট বা উচ্ছে চচ্চড়ি বা শুক্তোর যে প্রবল জনপ্রিয়তা, সেসবের উদ্ভাবনের সাথে এই বাটিচচ্চড়ি কালচারের একটা ওতপ্রোত সম্মন্ধ আছে।
আমাদের খাবারের উপকরণ নিয়ে বরাবরই একটা ক্ষোভ ছিল। নিত্য অভাবের এই দেশে আকাল যেখানে ফি বৎসর বাঁধা, সেখানে খাবার নিয়ে এত ছুৎমার্গ কেন সেটা কিছুতেই ভেবে পাই না। আমাদের চলনবিল অঞ্চলের চিরায়ত বৈশিষ্ট হল বছরের বেশ কিছুটা সময় সেখানে মাছের প্রাচুর্য থাকতো, কিন্তু বছরের একটা সময় মাছ বেশ দুর্মূল্য। হতদরিদ্র মানুষের(অধিকাংশই হতদরিদ্র ছিলেন) পক্ষে তখন মাছ কিনে খাওয়ার সামর্থ থাকতো না। সেই অবস্থায়ও কয়েক প্রকারের মাছ ধরা পড়লে ফেলে দেয়া হত, কেউ খেত না।
সত্যি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর মধ্য এশিয়ার জাতি রাষ্ট্রগুলোয় যে নানা ঘটনা ঘটে চলেছে, আমাদের মিডিয়াগুলো সে ব্যাপারে খুবই অনাগ্রহী। যে কারনেই হোক, তাঁরা নিজেরা যেমন, আমাদেরও তেমনই কূপমণ্ডূক করে রেখে দিতে চান। এই বিষয়ের ভাবনায় আমাদের যুক্ত করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
১। ধরা যাক, গুলিস্তান মোড় থেকে হাঁটা পথে সচিবালয়ের দিকে রওনা দিলাম। তাহলে প্রথমে হাতের ডানে-বায়ে পাতালে যাবার দরজা। তারপর বাঁয়ে ওষুধের দোকান, জুতার দোকান, ফুটপাথে জামাকাপড়সহ আরও একশ' রকমের জিনিস আর ডানে হকি স্টেডিয়াম আর তার সামনে বিভিন্ন প্রকারের গাওয়াল। আরেকটু এগোলে হাতের বাঁয়ে পূর্ণিমার জিলাপী-বান্ আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জটলা আর ডানে ইলেকট্রনিকসের সেকেন্ডারি মার্কেট। এরপর বাঁয়ে হামদর্দকে পেছনে ফেলে বাঁয়ে মোড় নিলে চলে আসবে 'বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র' আর মার্কস-লেনিনের হদ্দমুদ্দ করে ছাড়াদের মৌচাক আর তার ঠিক উলটো দিকে ডানে বায়তুল মোকার্রম আর তার সামনে ইসলামী দ্রব্যসামগ্রীর বাজার। সচিবালয় সবে দৃশ্যমান হলো। দেখলেন, এইটুকু পথ হাঁটতে কত রঙের জিনিস সামনে চলে আসলো! এটা যদি লিখি তাহলে সেটা বাটিচচ্চড়ি হয়ে যাবে না! ব্লগরব্লগর লিখতে গেলে আমার ক্ষেত্রে এমনটা হয়।
২। আমাদের সমাজে বিধবাদের অবদান বহুমুখী। সেটা নিয়ে সাত কাহন রচনা করা সম্ভব। জাতিগত বাঙালি মুসলমানদের জন্য তাঁদের অবদানটা একটু খুলে বলুন তো। বিষয়টা যখন আপনার মনে এসেছে তাহলে একটু আলোচনা নাহয় হলো।
৩। খাবারে ছুঁৎমার্গের প্রসঙ্গে যখন মাছের কথা তুললেনই তখন আমার সামান্য পর্যবেক্ষণের কথা বলি। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া এদেশের মানুষ কুঁচে খায় না, যদিও বাইম, তারাবাইম, গুতুম, কাইক্যা মাছ খায়। ইদানীংকালে কুঁচের যে বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে সেটা রফতানীর লক্ষ্যে, লোকাল কনজাম্পশনের জন্য না। এদেশের মানুষ পুঁটিমাছ খায় কিন্তু তিতপুঁটি, কাশপুঁটি, আউলানি মাছ খেতে চায় না। দীর্ঘদিন ধরে গজার, রাগা/চ্যাং টাকি, কালিবাউশের মতো মাছ খাওয়া হতো না। কাতলা বা মৃগেল বা গ্রাস কার্পের দাম রুই মাছের তুলনায় কম হবার কোন যুক্তি নেই তবু তা হচ্ছে। এদেশের ঘরে ঘরে চিংড়ী খাওয়া হলেও কাঁকড়া খুব কম বাড়িতে ঢুকতে পারে। মাছের এই প্রকার হিসাবের মতো যদি শাকসবজির বা ফলের হিসাব করি তাহলে মাথা চক্কর দেবে। আর এখনকার লোকজন তো খুব লিমিটেড কিছু জিনিস ছাড়া অন্য কিছু খায়ই না। এদের কপালে অপুষ্টি, অস্বাস্থ্য আর অনাহার আছে। পৃথিবীর রঙ-রূপ-রসের অনেক কিছু থেকে এরা নিজ দোষে বঞ্চিত থেকে যাবে।
৪। রুশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসানের পর যে কয়েকগুচ্ছ রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে (বাল্টিক, পূর্ব ইউরোপ, ককেসাস আর তুর্কীস্তান) সেগুলো না অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী, না সামরিক দিক দিয়ে। অনেকগুলো আবার ভূবেষ্টিত, এজন্য সেগুলোর সাথে সরাসরি বাণিজ্যের উপায় নেই। কয়েক বছর উযবেক এয়ার ঢাকা-তাশখন্দ ফ্লাইট চালালেও এখন এই দেশগুলোতে সরাসরি যাবার উপায়ও নেই, ফলে খুব বেশি তেল না থাকলে বাংলাদেশ থেকে কোন পর্যটক যাবার সম্ভাবনাও নেই। মোটের ওপর 'মামার শালার পিসের ভাই'-এর সাথে আমাদের আর কোন সম্পর্ক তৈরি হতে পারেনি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাংলায় হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে হিন্দুদের এই বিধবা কালচারেরও খানিকটা ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী উর্বরা শক্তি বজায় থাকা অবস্থায়ই বিধবা হয়ে পড়তেন, কেউ কেউ তো সন্তান জন্মদানের উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগেই। বাকী জীবনে সমাজ প্রদত্ত নানা বিড়ম্বনা সহ্য করে জীবম্মৃত হয়ে বেঁচে থাকলেও নিজ সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে তাঁরা কোন ভূমিকাই রাখতে পারতেন না।
পক্ষান্তরে তাঁদের প্রতিপক্ষ মুসলিম নারীগন বৈধব্য বরন করলেও প্রায়শঃই পুনরায় বিবাহের সুযোগ গ্রহনের মাধ্যমে যৌবনের শুরু থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত সক্ষমতার একেবারে চূড়ান্ত সদ্ব্যবহার করতে পারতেন। সুতরাং পিসিমা দিদিমা'রা যে শুধু নিজেরাই বৈধব্যের কন্টকজ্বালা নিরবে সহ্য করে গিয়েছেন তাই নয়, নিজ সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা নিম্নগামী রাখতেও বড় ভূমিকা পালন করেছেন।
আপনার পর্যবেক্ষণ আংশিক ঠিক। অল্প বয়স্কা হিন্দু বিধবাদের বহুবিধ পরিণতি ছিল। এক, এভাবেই জীবন পার করা (এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ)। দুই, কাশীবাসী হওয়া (এই বিষয়টা শতকরা হিসাবে খুব অল্প কিছু জনের ক্ষেত্রে হয়েছে)। তিন, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'চোরাবালি' কেসের অনুরূপ বা কাছাকাছি কেস (এটা ব্যাপক আকারে হয়েছে কিন্তু আমাদের ভণ্ড সমাজ সেটা চেপে গেছে)। চার, ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করা (এটার সংখ্যা খুব বেশি নয়, তবে প্রচারণা বেশি ছিল)। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এই ধর্মান্তরের ক্ষেত্রে মুসলিম হবার সংখ্যা বেশি - এর কারণ বোধগম্য। অল্প কিছু জন খ্রীষ্টান হয়েছেন - সেটার কারণও বোধগম্য। কিন্তু কেউ বৌদ্ধ হয়েছিলেন বলে শুনিনি - এটা কেন?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি একটা কমন-সেন্স কারন অনুমানের চেষ্টা করতে পারি।
মুসলিম হবার সংখ্যা বেশি-র কারনের মধ্যেই হয়তো বৌদ্ধ না হবার কারন নিহিত। ধর্মান্তরিত/জাতিচ্যুত/শ্রেণীচ্যুত হয়ে বা ভিন্ন এথনিসিটির কাউকে বিবাহ করা সারা দুনিয়াতেই চিরকালই শক্তিশালী প্যারেন্ট গোষ্ঠী থেকে আগত পার্টনারের গোষ্ঠী বা পরিবারের তরফ থেকে বিভিন্ন মাত্রায় বিপজ্জনক ছিল এবং এখনও অনেক ক্ষেত্রে আছে। এই উপমহাদেশে তো ছিলই!! হিন্দু বিধবা নারী ভিন্ন ধর্মের বা নীচু জাতের কাউকে বিয়ে করতে চাইলে ঐ দম্পতিকে একসময় সম্ভবত পারলে মেরেই ফেলা হতো। এইরকম ক্ষেত্রে আমার মনে হয় নারীদের পক্ষে প্যারেন্ট গোষ্ঠীর তুলনামূলক নিকটতম শক্তি বা প্রভাব-সম্পন্ন সম্প্রদায় থেকে পার্টনার বেছে নেয়াই সবচেয়ে স্বাভাবিক - যার পরিবার বা সম্প্রদায় এই কাপলকে নিরাপত্তা দিতে পারবে। এই দিক থেকে মুসলমানদের নামই বোধহয় সবার আগে আসতো। বৌদ্ধরা হয়তো (আমার ভুলও হতে পারে) এইদিক থেকে পিকচারেই ছিলেন না। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ইন্টার-কাস্ট বিবাহও বোধহয় এইভাবে সম্পন্ন হতো - দুই পক্ষেরই ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় আত্নগোপন করে বা মিশে গিয়ে বা দেশান্তরী হয়ে। আর আমার অনুমান, মুসলমানরাও মনে হয় একবার কেউ ধর্মান্তরিত হলে তাদের প্রোটেকশন দেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট এ্যাগ্রেসিভ ছিল। বৌদ্ধদের মনে হয় সেই শক্তি বা আগ্রহ কোনোটাই ছিল না। আমার অনুমান এই ধরণের বিয়েগুলি বোধহয় অনেকখানিই জুটিগুলির সাম্প্রদায়িক ক্ষমতা ও নিরাপত্তা পার্সেপশনের উপর নির্ভর করতো।
আরও আগেকার আমলে শুনেছি বা পড়েছি কোথাও - এইরকম ইন্টার-রিলিজিওন বা ইন্টারকাস্ট দম্পতিরা পালিয়ে মুসলিম সাধু-সন্ত-পীরফকির-সুফিদরবেশদের কাছে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে আশ্রয় নিতেন। এইসব পীর-দরবেশরা অনেকেই তখন তাদের মুরীদদের নিয়ে দলবদ্ধভাবে থাকতেন এবং ঐ এলাকায় অত্যন্ত শক্তিশালী হতেন। অনেকের দস্তুরমত সৈন্যসামন্তও থাকত মনে হয়। ফলে এদের কাছে আশ্রিতদের ক্ষতি করা সহজ ছিল না। আমার নিজের পরিবারের বেলাতে এমন একটা কাহিনি শুনেছি। এটা আম্মার কাছে শোনা, কিন্তু কতটা নির্ভরযোগ্য জানি না। আব্বার সাথে ভেরিফাই করা হয়নি কখনো আর ফুফুরা কেউ নাকি শোনেননি। ৮-১০ পুরুষ বা ২০০-৩০০ বছর আগে আমার বাবা-দাদাদের পূর্বপুরুষরা নাকি লো-কাস্ট লাঠিয়াল বা ডাকাত টাইপের কোনো একটা গোষ্ঠী ছিলেন। এদেরই কেউ নাকি কোনো এক শক্তিশালী ব্রাম্মণ জমিদার-কন্যাকে হাইজ্যাক কিম্বা ইলোপ করে ধাওয়া খেয়ে এনে সিলেট অঞ্চলের কোনো পীরের কাছে আশ্রয় নেন জান বাঁচাবার জন্য। এরা ধর্মান্তরিত হয়ে যান এবং আমরা নাকি তাঁদেরই বংশধর। এসব কতটা সত্যি জানি না, তবে অন্যত্র এরকম কাহিনি পড়েছি। তবে আরও ইন্টারেস্টিং লাগে যেটা তা হলো - আমার মায়ের পরিবার হযরত শাহজালালের সেনাপতি হযরত নাসিরুদ্দিন সিপাহসালারের উত্তরাধিকার (বংশধরত্ব) দাবী করেন - এখন যার মাজার আছে হবিগঞ্জে। এ ব্যাপারে নাকি তাদের কাছে অনেকদূর পর্যন্ত ডকুমেন্টেশনও আছে (আমি দেখিনি, দেখতেও চাইনি)। এসব কাহিনি যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই বাই এনি চান্স সত্যি হয়, তাহলে বলতে হবে হবে আমার রক্তে ভয়ঙ্কর ডেঞ্জারাস লো-কাস্ট দস্যু-সর্দার (কালীভক্ত ফাঁসুড়ে ঠগী?) আর সাধক পীরের রক্ত এসে এক জায়গায় এসে মিশেছে। তাহলে আমি কি - সাধু না শয়তান??? হা হা হা.... ভাবতেই হাসি পাচ্ছে....
****************************************
মোগলরা যখন উত্তর ভারতে তাদের অবস্থান সুসংহত করে ফেলেছে, পাঠানেরা তখন পশ্চাদপসরন করতে করতে বিপুল সংখ্যায় বাংলায় এসে ঠাঁই নেয়। তাদের জন্য তো আর পর্যাপ্ত মুসলমান কন্যার বন্দোবস্থ ছিল না। বিভিন্নরকম হিন্দু রমণীরাই ছিলেন সহজ শিকার।
আপনার বর্ণিত বংশ ইতিহাসও সঠিক হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। বলতে কি বাঙ্গালী মুসলমানদের অনেকেরই বংশ ইতিহাস এ ধরনেরই কিছু একটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশী।
মুঘল-পাঠান-মামলুক-সিদি কারো কাফেলা বা অভিযানের বাহিনীতে খুব একটা নারী ছিলো না। ফলে ভারতবর্ষে আসার পর তাদের স্থানীয় নারীর (শুধু হিন্দু নয়) পাণিগ্রহন ভিন্ন উপায় ছিলো না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার কমেন্টের প্রসঙ্গ থেকে বেরিয়ে নিজের কাহিনি বলে ফেললাম বলে দুঃখিত!
****************************************
আমি তো এইখানে দুর্গেশনন্দিনী, রাজসিংহটাইপ উপন্যাসের বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। দুই পর্বের উপন্যাসের প্রথম পর্ব অষ্টাদশ শতকের শুরুতে প্রিন্স আযিম-উশ্-শানের আমল থেকে শুরু হবে। প্রতাপগড়, বাহুয়া, জৈন্তা, হাবিলি, সরাইল, লাউড় আর হরিনগরের মধ্যে যে কোন একটা রাজ্যের এক ডেয়ার-ডেভিল-অ্যাংরি হিরোর সাথে তার পার্শ্ববর্তী শত্রুরাজ্যের প্রধানের কন্যা লক্ষ্মীবাঈটাইপ হিরোইনের প্রেম। পালিয়ে তৃতীয় আরেক রাজ্যে এক ফকির মজনু শাহ্ টাইপ ওয়ারলর্ড দরবেশের আশ্রয় নেয়া। রাজ্যে রাজ্যে বহুমাত্রিক যুদ্ধ। শেষে হিরো-হিরোইনের ঢাকা বা চট্টগ্রামে ঘর বাঁধা। দ্বিতীয় পর্ব একবিংশ শতকের শুরুতে। নায়ক হচ্ছেন ঐ হিরো-হিরোইনের অধস্তন নবম/দশম পুরুষ - এক দুর্দান্ত, দুঃসাহসী স্পাই। গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় মিশর, আফগানিস্তানসহ বিপদসংকুল সব দেশে। কোমলে কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর, সুন্দর এক অন্তর। একা। কাছে টানে অনেক নারীকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না।
এইবার উপন্যাস লেখায় হাত দেন। বই বেচা হলে রয়্যালটির ফিপ্টিন পার্সেন্ট আমার অ্যাকাউন্টে জমা করে দেবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
- দারুন লিখসেন!! এক কাজ করেন, উপন্যাসটা আপনেই লিখ্যা ফালান। আমি এত ইতিহাস-পাতিহাস জানি না, বরং আপনেই আমাদের রেসিডেন্ট ইতিহাস-বিশেষজ্ঞ। আর আপনি সময় না পাইলে সচলের আরেক রেসিডেন্ট ইতিহাসভিত্তিক-কাহিনিকার "সত্যপীর"-কে সাবকন্ট্রাক্ট দিতে পারেন। বই বেচা হইলে রয়্যালটির ফিপ্টিন না, এট্টিফাইব পার্সেন্টই আপনে রাইখ্যা দিয়েন বা আপনারা দুইজনে ভাগাভাগি কইরা নিতে পারেন পুরাটাই। তবে মাসুদ রানা আইসা তার কাহিনি চুরি করার জন্য আপনারে দৌড়ানি দিলে - তখন কিন্তু কইলাম আমি কিছু জানি না, আমি তখন কোথাও নাই!!! হা হা হা হা....
****************************************
উপন্যাস লেখা আমার কর্ম না। সেটা পারলে আরও দশ বছর আগে উপন্যাস লেখায় হাত দিতাম। আপনি লিখতে না চাইলে প্রথম পর্ব লেখার জন্য 'সত্যপীর'কে বায়না দিতে পারেন। দ্বিতীয় পর্ব লেখার জন্য কাজী মায়মুর হোসেন, সায়েম সোলায়মান বা ইসমাইল আরমানের মতো প্রতিষ্ঠিত 'মাসুদ রানা' লেখকদের বায়না দিলে রাহাত খানের চ্যালা আর দৌড়ানি দিতে পারবে না।
তবে যাকে বায়নাই দিন না কেন আমার 'ফিপ্টিন পার্সেন্ট' কিন্তু ফিক্সড।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাণ্ডবদা এক্কেরে মারাঠা লিডার। যা ই হৌক না কেন সরদেশমুখি আড়াই আনা উনার। এরপর দেখবেন বই লেখার সময় আবার চৌথ এর দাবী আসব, আরও পঁচিশ পার্সেন্ট, নাইলে এরম হুমকিধামকি। এই মারাঠা ডাকাতি সামলাইতে মোগলপাঠান লাগলে আমারে আওয়াজ দিয়েন মাঝি ভাই।
..................................................................
#Banshibir.
কর/ খাজনা/ সরদেশমুখী/ চৌথ/ প্রটেকশন মানি ইত্যাদি ইত্যাদি যা কিছু বলি সেগুলো কমবেশি একই প্রকার জিনিস। এটা সব আমলে সব দেশে ছিল, আছে, থাকবে। শতকরা হার কেবল একটু এদিক ওদিক হয়। আসল মালিকানা কার সেটা নিয়ে কখনো কখনো গ্যাঞ্জাম হয় বটে তবে শেষে 'যেই লাউ, সেই কদু'। বৌদ্ধিক সম্পদের (Intellectual Property) ব্যাপারটা একটু নতুন। এখানে সিস্টেমটা এখনও ঠিকঠাক দাঁড়ায়নি। সুতরাং এই পর্যায়ে যে যেভাবে পারে সেভাবে যার যার পার্সেন্টেজ ঠিক করার চেষ্টা করছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আংশিক ঠিক, এ বিষয়ে দ্বিমত পোষন করছি। আপনি যে চারটি পরিণতির উদাহরন দিয়েছেন, তার কোনটিতেই হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। বরং চতুর্থ পরিণতির ক্ষেত্রে মুসলমান জনসংখ্যাই বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে দেখুন- একশ জন হিন্দু বিধবা হিন্দু জনসংখ্যায় কোন কিছু তো যোগ করতে পারছেই না, বরং মুসলমান জনসংখ্যায় কিছুটা যোগ করছে। পক্ষান্তরে একশ জন মুসলমান বিধবা সন্তান সন্ততি সহ অন্ততঃপক্ষে তিন চারগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ধর্মান্তরের ক্ষেত্রে দৃশ্যপটে বৌদ্ধরা কেন নেই, তার একটা কারন মন মাঝি উল্লেখ করেছেন। সেটা যৌক্তিক হতে পারতো, যদি তাঁরা মোটামুটি একটা সংখ্যা ধারন করে থাকতে পারতেন। পাল আমলের শেষ দিকেই এ দেশে বৌদ্ধ প্রভাব অনেকাংশে আসে, আর বৈদ্য এবং সেন রাজত্বে তা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে আসে। সুলতানি আমলের মধ্য গগনে এদেশে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠি বলে কিছু আর অবশিষ্ট ছিল কিনা সন্দেহ। যৎসামান্য কিছু থাকলেও হিন্দুর বিধবাকে ভাগিয়ে এনে বিয়ে করার মত সাহস ও শক্তি তাদের ছিল না।
আমার দ্বিমতটা হিন্দু বিধবার পরিণতিসংক্রান্ত ব্যাপারে। আমি কিন্তু উপরের মন্তব্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কিছু বলিনি।
বৌদ্ধরা প্রভাব হারিয়েছে সেনদের আমল থেকে। আর মুসলিম শাসন শুরু হবার পর তারা একেবারে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। অনেকে বলেন, 'হিন্দুর দেশ পূর্ববঙ্গ মুসলমানের দেশ হলো কী করে'? আমি বলি, বৌদ্ধের দেশ পূর্ববঙ্গ ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমানের দেশ হয়েছে। কথাটা একটু স্যুইপিং কমেন্ট, কিন্তু খুব বেশি ভুল না।
বৌদ্ধরা শক্তিশালী গোষ্ঠী না হলেও তাদের পক্ষ থেকে ইলোপের ঘটনা ঘটতে বাধা নেই। কিন্তু যে আমলে বৌদ্ধরা হিন্দুদের সাথে পাল্লা দেবার মতো ছিল সেই আমলেও অমন ঘটনার কথা ঐতিহাসিক বিবরণে, প্রাচীন সাহিত্যে বা লোককথায় পাওয়া যায় না। এর কারণ কি এই যে, হিন্দুরা বৌদ্ধদেরকে তাদের একটা সেক্ট বিবেচনা করে ঘটনাগুলো উপেক্ষা করে গেছে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাল রাজারা হিন্দু ব্রাহ্মণ কন্যাদের বিবাহ করতেন। সূত্র- বাংলাদেশের সত্তার অন্বেষা, আকবর আলি খান।
বাটি হোক কি কড়াই - চচ্চড়ি - আহা চচ্চড়ি!
বাটিচচ্চড়ি - ট্যাগ-এর লিস্টি থেকে শুরু করে হরেকরকম্বা কমেন্টের উপহার - পুরোটাই। স্বাদ ভোলা যাবে না অনেকদিন পর্যন্ত, ভোলবার ইচ্ছেও নেই - ফেভারিট মারলাম; মাঝে মাঝে মন-কেমন-করা মুহুর্তে একটু একটু করে খাব - বারে-বারে।
তুমারে কেউ ভালা কইলে অমন তাড়া মারো ক্যানে - কেউ উফার দিলে তারে একটু হাসি দিলে খেতি কি?
আমার একটা স্বপ্ন আছে - আমি একদিন রুটি-রুজির কাজ থেকে অবসর নেবো। সেই স্বপ্ন সত্যি হলে আমি হাতে কিছু সময় পাবো। সেই সময় ভাঙ্গিয়ে কি কি করব তার তালিকায়- যে নমুনাটুকু শোনা হল, তার ফলে - পামিরি গান শোনাকে যুক্ত করলাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
একটা বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে দশটা জিনিস পড়তে হয় জানতে হয়, দশ জনের সাথে কথা বলতে হয়। সেই খাটুনি দিতে না চাইলে 'বাটিচচ্চড়ি'ই ভরসা।
আমি নিজে যে 'কী' সেটা এতগুলো বছর পার করেও যদি না বুঝতে পারি 'তাইলে ক্যাম্নে কী'!
- থাকেন এক 'গ্রেট' দেশে যেটাকে আবার কিছুদিন পর পর 'আবারও গ্রেট বানানোর' জন্য নানা প্ল্যান-প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়। সেইসব প্ল্যানপ্রোগ্রামের খাইখরচ মেটানোর জন্য কেবলই বুড়া, বেকার আর গরিবদের বোঁচকা ধরে টান দেয়া হয়। এভাবে চলতে থাকলে রিটায়ারমেন্টের সময় একটা ছাতা, একটা জপমালা আর একটা ধর্ম্মপুস্তক ছাড়া বরাতে আর কিছু জুটবে না। পেনশনকালের মায়ায় না থেকে এখনই খাবলা খাবলা সময় বের করে যা যা করতে চান সেগুলো করুন। নয়তো এর মধ্যেই কোন কোন 'মিশা' চিরতরে হারিয়ে যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খাব্লামি ত চালাতেই লাগে। তা না হলে বাঁচব কি করে। কিন্তু খাব্লামি তে ভোগের উঞ্ছবৃত্তি হয়, সুষ্ঠু উপভোগ কঠিন, আর সৃষ্টি-কর্ম - নাঃ সে প্রতিভা নাই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
"সকৌত" দেখে আবিষ্ট হয়ে গেলাম, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেন একটা সুর তাল লয় সাজানো অপূর্ব সঙ্গীত, দৃশ্যের সঙ্গীত, শব্দের সঙ্গীত। দৃষ্টিহীন এক অর্ফিউস সুরের টানে জড়িয়ে যাচ্ছে নানা মায়ায়, আবার ছাড়িয়ে নিচ্ছে। সে খোঁজে তার ইউরিডাইসকে, পাশেই সে আছে, কিন্তু দেখতে তো পায় না !
শেষ দৃশ্যে ওই সারি সারি হাড়ি পাতিলের উপরে তালে তালে হাতুড়ি ঠুকছে কর্মীরা, আর খুর্শিদ এগিয়ে যাচ্ছে মাঝখান দিয়ে দুই হাতে ঠোকার ছন্দ আর তাল বোঝাতে বোঝাতে, আশ্চর্য আলো চুঁইয়ে আসছে উপর থেকে, ছুঁয়ে যাচ্ছে ওকে---এই দৃশ্যটা দেখে "রক্তকরবী" না দেখা দৃশ্যটি মনে পড়ে যায়, যক্ষপুরীর সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে রঞ্জন চলেছে বাজনা বাজাতে বাজাতে আর সবার গাঁইতি পড়ছে তালে তালে। এটা সরাসরি বর্ণনায় ছিল না, সর্দাররা বলাবলি করছিল।
আপনার লেখা মাইন্ড-ব্লোয়িং, সত্যিই। কারণ লেখাগুলোর মধ্যে একইসঙ্গে এত মায়া আর এত নিরাসক্তি অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে আছে ! সাধারণ ব্যক্তিগত সুখদুঃখ তুচ্ছ হয়ে যায় আপনার লেখাগুলো পড়লে, ইতিহাসের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সব।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
'সকৌত' দেখে আমার যা মনে হয়েছিল তার কিছুই আমি লিখে বোঝাতে পারিনি। আপনি তার কিছুটা অসাধারণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তুললেন। অরফিউস আর রঞ্জনের চলার সাথে খোরশেদের চলার মিলের কী অদ্ভূত মিল খুঁজে বের করলেন।
এমনসব পাঠক পেলে কার না লিখতে ইচ্ছে করবে!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনি একদম ফাটিয়ে ফেলেছেন! এই পোস্ট-খরা আর মন্তব্য-খরার যুগে আপনার পোস্টে এই মন্তব্য করা পর্যন্ত এখন ৭০টি মন্তব্য এ্যান্ড কাউন্টিং!! সেই আগের সচলায়তনের "ফিল" ফিরিয়ে এনেছেন। ওয়াও! ব্রাভো! আপনার আরও বেশি বেশি করে লেখা উচিৎ!!!
****************************************
একটা পোস্ট কতজন পাঠক পড়লেন সেটা জানার উপায় থাকলে এই পোস্টের আসল দৌড় বোঝা যেতো। মন্তব্য সংখ্যা ৭০ পার করলেও মন্তব্যকারীর সংখ্যা আমিসহ ১৪ জন। তার মানে এই মন্তব্যকারীদের বেশিরভাগ জন ৪/৫ বার করে প্রতিমন্তব্য চালিয়ে গেছেন। ফেসবুকের দোর্দণ্ড প্রতাপের দিনে তাঁরা ব্লগে বার বার এসে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন এটা অবশ্যই ভালো লাগার মতো একটা বিষয়। এই ফাঁকে আপনিসহ বাকি মন্তব্যকারীদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখছি।
সচলে একটা লেখা দিয়ে ফেসবুকে/টুইটারে সেটা শেয়ার করলে সব কূল টিকে থাকে। এটা বেশিরভাগ জন করতে চান না।
সচলসংশ্লিষ্ট আমাদের প্রত্যেকেরই আরও বেশি বেশি করে লেখা উচিত। তাহলে আপনা থেকে সচলের পুরনো দিনের চেয়েও ভালো কিছু পাওয়া যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাটিচচ্চড়ির ঢাকনা খুলে রীতিমত চমকে গেলাম। ভাবছিলাম আমাদের ভুলে যাওয়া রন্ধনশিল্প নিয়ে কিছু তথ্য পেতে যাচ্ছি। যা পাওয়া গেলো তাতে মনে হলোনা লেখাটা পড়ে ঠকেছি। ভালো লাগলো লেখাটা।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
আমাদের ভুলে যাওয়া রন্ধনশিল্প নিয়ে কিছু লেখার এলেম আমার নাই। তার ওপর ওসব জানতেন এমন মানুষ প্রায় 'নাই' হয়ে গেছেন। আমি চেষ্টা করেও 'জালার জাউ', 'মাছের পানিখোলা', 'লেবুপাতা মাছ', 'রুটির পায়েস', 'আওলান' ধরনের বিলুপ্ত/প্রায় বিলুপ্ত রান্নাগুলোর ঠিকঠাক রেসিপি যোগাড় করতে পারিনি। একেক জন একেক রকম উপকরণ, একেক প্রকার পদ্ধতির কথা বলেন।
আমি হচ্ছি মাধুকর। যা কিছু কুড়িয়ে পাই তার সব কিছু একসাথে চাপিয়ে দিয়ে বাটিচচ্চড়ি রান্না করি। সেটা আপনাদের ভালো লাগলে আমার চেষ্টা সার্থক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বিধবাদের নিয়ে (হিন্দু বিধবা নিশ্চয়ই) বিদ্যাসাগর মশাইয়ের একটা অবজারভেশন ছিল। খানিকটা প্রাসঙ্গিক বিধায় সেটি এখানে লেপন করার লোভ সামলাতে পারলুম না-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সময়ের হিন্দু বিধবারা কী অসহনীয় মর্যাদাহীন জীবন অতিবাহিত করতেন, এটুকু পড়ে নতুন করে টের পেলাম। মানুষ যেন তাঁকে ভুলে না যায়।
হিন্দু বিধবার এই অসহনীয় অমর্যাদাকর জীবনের কথা সবাই জানতেন কিন্তু কেউ কিছু বলতেন না। এই গ্লানির বিষয়টি আমরা সামষ্টিকভাবে করে গেছি কিন্তু তার দায় স্বীকার করি না। আজও যদি কেউ ফিকশন/চলচ্চিত্র/নাটকে এগুলো বিস্তারিত ফুটিয়ে তোলেন তাহলে চাড্ডির দল তার মাথা কাটতে নেবে।
বিদ্যাসাগর মশাইকে না ভোলার কথা বলছেন। অতি বামরা কলকাতায় বিদ্যাসাগরের ভাস্কর্য ভেঙে এক কালে তার আদ্যশ্রাদ্ধ করে ছিল।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হালের বাম সাইনবুডিরাও সরকারি চাকরিতে কোটা গায়েবের আন্দোলনে হাকুল্লা বিপ্লব সাঁটাতে গিয়ে নারী-ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী-প্রতিবন্ধী কোটা হাপিস হওয়ার পর আৎকা সাফল্যের মর্নিংগ্লোরি সামলাতে না পেরে একজন আরেকজনের গাল টিপে দিয়েছেন। সমালোচনার মুখে বিলুপ্তপ্রায় চক্ষুলজ্জায় পড়ে দুয়েকজন তেলচুকচুকে কমরেড স্বচ্ছ ফিনফিনে কুর্তা পরে মিনমিনিয়ে বলেছেন ফেসিবাদ কামডা ভালা করে নাই, তারপর ছাতার বাঁট দাঁতে কামড়ে গুগলম্যাপে বৃষ্টিবহুল সহীহ বিপ্লবী মুরুব্বিস্তান (পড়ুন এনজিওর চান্দাদাতা) খোঁজায় মন দিয়েছেন। ওনারা বরাবরই মোল্লা নাসিরুদ্দিনের মতো, ঘরের অন্ধকারে সুঁই হারানোর পর রাস্তার বাতির নিচে এসে সেটা খোঁজেন।
সে আর বলতে! একটা বহুজাতিক কোম্পানির বা এনজিও'র (সেটাও কোম্পানিই বটে) হেড আপিস বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন দেশে তাদের ব্রাঞ্চ আপিসগুলো যেমন রাতারাতি গণেশ উল্টায় তেমন নব্বইয়ের দশকে আমরা দেখেছি সারা দুনিয়ায় একই কায়দায় 'বাম পলিটিক্যাল কোম্পানি (সংশ্লিষ্ট দেশ) প্রাইভেট লিমিটেড'গুলো রাতারাতি পুঁজিপাটা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ভাগাভাগি করে নিয়ে কেউ আগের নাক সিঁটকানো লুটেরা-সাম্রাজ্যবাদের দালাল-বুর্জোয়াঁ দলগুলোতে সেঁধিয়ে গেছে আর কেউ পলিটিক্যাল কোম্পানির সাইনবোর্ড সামনে রেখে বহুজাতিক এনজিও'র সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ছাতা না থাকলে তারা বড়ই অসহায় বোধ করে। যারা কখনো পাবলিকের কথা শুনতে পায় না, পাবলিকের মনোভাব বোঝে না। যারা সবসময় ট্রেন মিস্ করে তাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক তেল-সাবান-শ্যাম্পু-সিগারেট-কোল্ড ড্রিংক্স-মোবাইল ফোন বেচতে চক্ষু লজ্জা হলে টিনের চাল খুলে নেয়ার আন্তর্জাতিক সংস্থার আশ্রয় নেয়া ছাড়া গতি কী!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আবদুল্লাহ্ ভাই, বিদ্যাসাগর মশাইয়ের প্রবন্ধের এবং গ্রন্থের নামটি যোগ করে দিন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ব্রজবিলাস নামে তিনি যে ব্যাঙ্গাত্মক রচনাটি লিখেছিলেন, তার পঞ্চম উল্লাসে ভাইপো'র বয়ানে তিনি এই উদ্ধৃতিটি দিয়েছেন।
ধন্যবাদ বস্! আগ্রহী পাঠকের জন্য লিঙ্ক। পৃষ্ঠা-৪২ দ্রষ্টব্য।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পার হয়ে গেছে, কি আর করা যাবে! বাকি দিনগুলির জন্য অঢেল ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কী পার হয়ে গেছে তা তো বললেন না! আপনার প্রত্যেকটা দিনের জন্য শুভ কামনা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
http://www.sachalayatan.com/judhishthir/28267
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এবার সত্যি লজ্জায় ফেললেন। এক কালে এই দিনে বয়স বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে একটু দুঃখ হতো। এখন এই দিনে এই ভেবে আনন্দ হয় - যাক মৃত্যুর আরও কাছাকাছি চলে এসেছি!
মনে করে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বানপ্রস্থ টপকে ডাইরেক্ট সন্যাসাশ্রমে চলে যাওয়ার জন্য সংসারে আরেক সন্যাসীকে অভিনন্দন! শুভ সন্যাসপ্রাপ্তি!!!
****************************************
এই পোষ্টটার যে কত দিকে কত কাহিনী!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
****************************************
নতুন মন্তব্য করুন