পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সাস্টে ২২ বছর

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: শনি, ০৯/০৩/২০১৯ - ৪:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ একটি বই পড়ার পর আমার কাছে যা মনে হয় পাঠ প্রতিক্রিয়ায় আমি তা অকপটে লেখার চেষ্টা করি। বইয়ের বেচাবিক্রির কথা বিবেচনা করে বা অতিসংবেদনশীল পাঠকের অনুভূতি বিচার করে ‘বাকিটুকু রূপালী পর্দায় দেখুন’ ধাঁচের প্রতিক্রিয়া লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়; অমন কিছু লেখার ইচ্ছাও নেই। সুতরাং যারা স্পয়লারের ভয়ে রিভিউ পড়তে আগ্রহী নন্‌ তাদের পক্ষে এই পোস্টে না ঢোকাই শ্রেয়।]

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসমীন হক উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ২২ বছরের কর্মজীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন ’22 Years at SUST’ নামে। আমি মূল বইটি পড়তে পাইনি, পড়েছি মুহম্মদ জাফর ইকবালকৃত অনুবাদ ‘সাস্টে ২২ বছর’ ফলে এই পাঠপ্রতিক্রিয়াটি আসলে অনুবাদ বইটির। যেহেতু অনুবাদকর্মটি মুহম্মদ জাফর ইকবাল করেছেন তাই বইটি পড়তে গিয়ে ভাষাগত কারণে প্রায়ই মনে হয়েছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা বই’ পড়ছি। মূল বইটি পড়তে পেলে ইয়াসমীন হকের ভাষা, শব্দচয়ন, উপস্থাপনা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলা যেত। সেটি যখন ঘটেনি তাই বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনাতে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।

ইয়াসমীন হকের পরিচয়ের ব্যাপারে সবচে’ ক্লিশে বাক্যটি হচ্ছে — ইয়াসমীন হক মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী। কথাটি সত্য বটে, এবং বাংলাদেশে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বেশ জনপ্রিয় লেখক, আলোচিত ব্যক্তিত্ব বলে ইয়াসমীন হকের পরিচয় দানের ক্ষেত্রে এই বাক্যটি আসা স্বাভাবিক। কিন্তু একজন মানুষ, যিনি একটি বিশেষ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেছেন, ঐ বিষয়ে বহু বছর ধরে অধ্যাপনা ও গবেষণা করে আসছেন, একজন দক্ষ শিক্ষা প্রশাসক হিসাবে অনেক বছর কাজ করেছেন, শিক্ষা বিষয়ক নানা উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, নানা প্রকার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাঁর পরিচয় কেবল তাঁর বৈবাহিক পরিচয়ে সীমাবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা শুধু আপত্তিকর নয়, তাঁর শিক্ষা-কর্ম-গবেষণা-অবদানকে অস্বীকার করার বা খাটো করার নীচ প্রয়াসও বটে। সুতরাং ‘অধ্যাপক ইয়াসমীন হক’ বা ‘ডঃ ইয়াসমীন হক’ বলে তাঁর পরিচয় দেয়াটা শ্রেয়। স্বীয় অবদানগুণেই তিনি ভাস্বর, অন্য কারো আলোয় নয়।

বাংলাদেশে একটি অপেক্ষাকৃত নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কিছু কীভাবে মোটামুটি শূন্য থেকে নির্মিত হয়, কীভাবে এর এক একটি অন্তঃপ্রতিষ্ঠান তৈরি হয়, কীভাবে তার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য তৈরি হয়, কী করে সেখানে একটু একটু করে নোংরা বিষয়গুলো ঢোকে, দুর্নীতি-অসদাচরণ-নীচতা-মিথ্যাচার-অদক্ষতা-নোংরা রাজনীতি কীভাবে তার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে গ্রাস করে, কীভাবে বিপুল সম্ভাবনার অপমৃত্যু হয়, কীভাবে মরুতে ঘাসফুল ফোটে সে সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা পাবার জন্য এই স্মৃতিচারণমূলক বইটি যথেষ্ট। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জীবন নিয়ে আরও কিছু বাংলাদেশী অধ্যাপকের বিচ্ছিন্ন রচনা পড়ার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু সেগুলো সুশীলতার মিথ্যাভাষণে এতোটা পূর্ণ যে সেগুলো পাঠকের বিশ্বাসযোগ্যতা পায় না। এই বইটি অমন সুশীলতার দোষ মুক্ত।

ব্যক্তিগতভাবে আমার বাংলাদেশের দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়েছে — একটি বিশাল বড়, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়; আর একটি খুবই ছোট, বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। নানা জনের কৃপায় বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে ৬ বছরের পাঠ প্রায় ১১ বছরে সমাপ্ত করা সম্ভব হয়েছিল। প্রায় এক যুগের কাছাকাছি সময় ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ, অবস্থান ও যাতায়তের ফলে এই বিষয়ে যে সম্যক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জিত হয়েছে তাতে বলতে পারি এই বইটি বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির এক সৎ বর্ণনা। যেহেতু বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বা অন্য কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কোন অভিজ্ঞতা আমার নেই তাই এইসমস্ত বিষয়ের কোনরূপ তুলনা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। এখানে কিছু কিছু ঘটনার বা বিষয়ের বর্ণনা পড়তে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতায় থাকা অনুরূপ ঘটনা বা বিষয়ের কথা মনে পড়ে শিউড়ে উঠেছি।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রশাসক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই চার গোষ্ঠীর মানুষ নিয়ে গঠিত। এখানে শিক্ষার্থীরা মুখ্য গোষ্ঠী, কারণ তাদের নিমিত্তে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা হয়েছে এবং তা যথাযথ পরিচালনার জন্য বাকি তিন গোষ্ঠীকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। সম্ভবত এই কারণে শিক্ষার্থীদেরকে বাকি তিন গোষ্ঠীর মানুষ সচরাচর সহৃদয়তার চোখে দেখতে চান না। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধরেই নেন শিক্ষার্থীরা যা কিছু দাবি করবেন তা নির্বিচারে নাকচ করতে হবে। অবশ্যই এই সকল বিষয়ের ব্যতিক্রম আছে, এবং ব্যতিক্রম নিয়মেরই অংশ। তাই ইয়াসমীন হক যখন বলেন,

এটা মনে হয় সত্যি যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাধারণ ভাষা বোঝে না, তাদের সঙ্গে এই ভাষায় কথা বলতে হয়

তখন স্পষ্ট হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বাকিদের সম্পর্কের মাত্রাটি কীরূপ! আমার মতো ভুক্তভোগীরা তো বটেই, কেউ একটি বিশেষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাপ্রবাহ গণমাধ্যমে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেও এই সত্য অনুধাবন করতে পারবেন।

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধাসমূহের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রায়ই অনীহা থাকে। চরম কোন আন্দোলনের পর্যায়ে না গেলে সেসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করতে চান না। ইয়াসমীন হক বলেছেন,

আর বিশেষ করে যখন মেয়েদের নিয়ে কিছু করতে হয় তখন তারা সেটাকে কোনো গুরুত্বই দিতে চায় না।

আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি যেখানে নারী শিক্ষার্থীদেরকে পৃথক শৌচাগারের জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে। নারীদের জন্য যে পৃথক শৌচাগার প্রয়োজন সেটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরুতে বিবেচনা করার উপযুক্ত মনে করেননি। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা উচ্চ শিক্ষিত জনেরা চালান তাদের এহেন আচরণ ইঙ্গিত করে দেশের বাকি জনসাধারণ নারীদের প্রয়োজনসমূহের ব্যাপারে কতোটা উদাসীন হতে পারেন।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হত্যা বা ধর্ষণের শিকার হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া, প্রশাসনের উদাসীনতা এবং বিচার না হবার চিত্রটি এখানে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটি কথা বলি, হত্যা বা ধর্ষণের মতো চরম মাত্রার ফৌজদারী অপরাধ, সেটি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে হোক আর অন্যত্র হোক, সংঘটিত হলে রাষ্ট্র নিজ উদ্যোগে মামলা করে যথাযথ তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করা কাম্য। কিন্তু বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে এমন কিছু হলে খুব কম সময়ে তার বিচার হয়, যথাযথ শাস্তি হয় আরও কম। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার বা চাকুরিচ্যুতি হত্যা বা ধর্ষণের মতো অপরাধের শাস্তি হতে পারে না — কিন্তু বাস্তবে বড় জোর তাই হয়। একারণে, সাত জনকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেও কাউকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হয় না অথবা শতাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে কেক কেটে ‘সেঞ্চুরি’ উদযাপনকারীকে পরবর্তীতে পুনর্বাসন করা হয়।

এই বইয়ে শিক্ষার্থীদের কিছু অদ্ভূত আচরণের কথা এসেছে বিশেষত ২০১১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ‘চ্যাংগের খাল’-এ অনীক ও খায়রুলকে হত্যার প্রসঙ্গে। সহপাঠিনীদেরকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টায় যখন দুই সহপাঠী জীবন দেন তখন বেঁচে যাওয়া সহপাঠিনীরা লোকলজ্জার ভয়ে কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে আত্মত্যাগকারীদেরকে পরিত্যাগ করতে পারে তাতে ইয়াসমীন হক অবাক হন। কিন্তু শত-সহস্র বছর ধরে এদেশের সমাজ নারীদের জন্য যে উন্মুক্ত নরক তৈরি করে রেখেছে সেকথা বিবেচনায় নিলে ইয়াসমীন হক বুঝতেন যে অনীক ও খায়রুলের ঐ সহপাঠিনীদের আচরণ অকল্পনীয় ছিল না।

নিহত অনীক ও খায়রুলের বাকি সহপাঠীরা তাদের সৎকারের জন্য যথাযথ চেষ্টা অথবা অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা না করে অহেতুক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সেনসেশন তৈরি করে তার এক করুণ উদাহরণ এই ঘটনা। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন ঘটনা বার বার ঘটে, সেগুলো নিয়ে নানা জনে নানা মন্তব্য করেন কিন্তু ন্যায় ও মানবতার নির্মোহ অবস্থান থেকে এমন বিশ্লেষণ খুব সুলভ নয়।

সবাই জানেন এমন একটি বিষয়, যা খুব কুণ্ঠার সাথে আমাদের স্বীকার করতে হয়, সেটা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, বিশেষত তার ছাত্র সংগঠনের নৈরাজ্য, অন্যায়, অত্যাচার এবং তাতে শিক্ষকদের একাংশের নির্লজ্জ সক্রিয় সহযোগিতা। এই প্রকারই আরেকটি বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত উপাচার্য ও তার বশংবদ শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কেউ কেউ এসব বিষয় নিয়ে এক-আধটু বলেন বটে তবে প্রায়ই তা দলকানা দোষে দুষ্ট হয়। ইয়াসমীন হক এই ব্যাপারে দলনিরপেক্ষভাবে লিখেছেন — সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে লিখেছেন। তবে ব্যাপারটি এমন নয় যে ইয়াসমীন হকের অবস্থান অরাজনৈতিক, বরং তিনি ঘোরতরভাবে একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে তিনি কট্টরভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। কোন বিবেচনায় তিনি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, জামায়াত-শিবির প্রশ্নে আপোষ করতে রাজি নন্‌। এই ব্যাপারটি অকুণ্ঠচিত্তে অনেকেই স্বীকার করেন, কিন্তু কাজের বেলায় কেউ কেউ প্রতিপক্ষের হুমকিতে পিছিয়ে পড়েন। এই ব্যাপারে ইয়াসমীন হক কথায় ও কাজে অভিন্ন — তাঁর লেখায় বার বার সেটা ফুটে উঠেছে।

বইটি কালানুক্রমে লেখার কিছুটা চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু প্রায়ই সেটা লঙ্ঘিত হয়েছে। পরের ঘটনা আগে বা আগের ঘটনা পরে আসায় কিছু কিছু বিষয়ে পাঠকের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। বিষয়ানুযায়ী অধ্যায় ভাগ করে লিখলে প্রত্যেকটি বিষয় আরেকটু বেশি স্পষ্ট করা যেতো এবং এতে অনেক পুনরাবৃত্তি রোধ করা যেতো।

একজন শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীরা তাঁর সন্তানবৎ, পক্ষান্তরে একজন শিক্ষা প্রশাসকের কাছে তারা অধস্থন মাত্র। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানকে সাম্যাবস্থায় রেখে শাসন ও সোহাগ দুটোই বজায় রাখা এক দুরূহ কাজ। অধ্যাপক ইয়াসমীন হক সেই কঠিন কাজটি সাফল্যের সাথে করতে পেরেছেন বলে তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা হচ্ছে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাণ। শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে পারলে দেখা যায় বয়সে তরুণ বলে সংসারের অনেক কালিমাই তাদের স্পর্শ করতে পারেনি এবং তাদের বেশিরভাগের মন সুন্দরের পূজারী, ভালোবাসায় পূর্ণ। তাই তাদের কাছে দুহাত ভরে ভালোবাসা নিয়ে গেলে তারা ভালোবাসার ডালি নিয়ে হাজির হয়। এই সত্যটি অধ্যাপক ইয়াসমীন হক অনুধাবন করে তদানুরূপ অনুসরণ করায় তিনি নির্দ্বিধায় বলতে পেরেছেন,

আমি আবার বলতে চাই যে আমি সাস্টে যত দিন আছি, আমার সব থেকে সুন্দর সময় কেটেছে একটা কারণে, সেটি হচ্ছে আমি আমার হলের মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারতাম।

একজন পাঠক বইটি যতই অগ্রসর হবেন ততই তাঁর কাছে এটা স্পষ্ট হতে থাকবে যে, আলোচ্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বিপুল সম্ভাবনা নিয়েও আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এক নিঃসীম অন্ধকারের পথে যাত্রা করেছে। ফলে দুই দশকের বেশি সময় ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে, অধ্যাপনা করে, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেও লেখকের কাছে এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়টি তার কাছে আর চেনা ঠেকে না। তিনি বলেন,

এটা দেখতে ঠিক আগের মতনই আছে। কিন্তু তার পর মুহূর্তেই মনে হয় এটি আসলেই কত ভিন্ন একটি ক্যাম্পাস”!

তারপরেও তিনি আশা হারান না। আস্থা রাখেন তাঁর শিক্ষার্থীদের ওপর। শেষে তিনি উচ্চারণ করেন,

ছাত্রদের ওপর আমাদের যে বিশ্বাসটুকু আছে সেই বিশ্বাসটুকু আমাদের পথ চলায় প্রেরণা জোগায়। আমি সব সময়েই অনুভব করেছি যে, এই ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা তার সবকিছু জানে এবং বুঝে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ভবিষ্যতে সাস্টকে মাথা উঁচু করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে”।

অধ্যাপক ইয়াসমীন হকের লেখক জীবন দীর্ঘ হোক।

সাস্টে ২২ বছর (22 Years at SUST)
মূলঃ ইয়াসমীন হক
বাংলা অনুবাদঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রচ্ছদঃ শিবু কুমার শীল
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২১৬
প্রকাশকঃ তাম্রলিপি
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
আই-এস-বি-এনঃ ৯৮৪-৭০০৯৬-০৩৭৭-৮

ছবি: 
16/06/2008 - 4:29অপরাহ্ন

মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

কজন পাঠক বইটি যতই অগ্রসর হবেন ততই তাঁর কাছে এটা স্পষ্ট হতে থাকবে যে, আলোচ্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বিপুল সম্ভাবনা নিয়েও আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এক নিঃসীম অন্ধকারের পথে যাত্রা করেছে।

এই লাইনদুটো আশা করিনি! মন খারাপ হলো!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই বইটা না পড়েও তুমি যদি পত্রিকাতে সাস্ট বিষয়ক খবরগুলো অনুসরণ করো তাহলে দেখতে পাবে শিক্ষার্থীদের ছোট-বড় সাফল্য আর নানা উদ্যোগের বাইরে যেসব খবর আসে, বিশেষত রাজনীতিসংশ্লিষ্ট খবরগুলো বেশিরভাগ সময়ে আশাপ্রদ নয়।

বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে আমরা সাস্ট আর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুরু হতে দেখেছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম নতুন প্রজন্মের এই বিশ্ববিদ্যালয় দুটো শিক্ষা-সংস্কৃতি-গবেষণা-জ্ঞানচর্চ্চায় পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হবে। আমাদের চোখের সামনে কী থেকে কী হয়ে গেল!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাসনীম এর ছবি

বইটা পড়তে আমিও আগ্রহী। জাফর ইকবাল একটা উপন্যাস লিখেছিলেন, নামটা মনে পড়ছে না। পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির একদিন নিয়ে। পাব্লিক ইউনিভার্সিটির এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছিল তাতে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জি.এম.তানিম এর ছবি

মহব্বত আলীর একদিন।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়ে আগ্রহোদ্দীপক একটা উপন্যাস হচ্ছে আহমদ ছফা'র 'গাভী বিত্তান্ত'। আগে পড়ে না থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

"গাভী বিত্তান্ত" নিয়ে আপনি কোনো পর্যালোচনা সচলে লিখলে কিছু পর্যবেক্ষণ যোগ করবো সেখানে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনি কৌশলে আরেকটি পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখার ভার আমার ওপর দেবার চেষ্টা করছেন। দেঁতো হাসি আমাকে তাতে ভোলানো যাবে না। হাতে অনেক বই জমেছে কিন্তু পড়ার ফুরসত হচ্ছে না। আপনি বরং আপনার পর্যবেক্ষণ নিয়ে ছোটখাটো পোস্ট দিয়ে ফেলুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

গাভী বিত্তান্ত তো পড়েই ফেলেছেন, এখন শুধু লেখার ফুরসত লাগবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সেটা পড়েছি এক যুগেরও বেশি আগে। অত আগে পড়ার ওপর ভিত্তি করে কি পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখা যায়? লিখতে গেলে বইটা আবার পড়তে হবে। তারও আগে বইটা কোথায় আছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

আপনার বইয়ের শেলফের নিচের তাকের ডান কোনায় আছে।

****************************************

অবনীল এর ছবি

এটা দেখতে ঠিক আগের মতনই আছে। কিন্তু তার পর মুহূর্তেই মনে হয় এটি আসলেই কত ভিন্ন একটি ক্যাম্পাস”!

লিংকিন পার্কের - ইন দি এন্ড গানের সুপরিচিত লাইনগুলো মনে পড়ে গেলো। যাহোক, সুন্দর পাঠপ্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"I tried so hard
And got so far
But in the end
It doesn't even matter
I had to fall
To lose it all
But in the end
It doesn't even matter"

গানটা আগে শুনিনি। গানটা প্রসঙ্গে আনার জন্য ধন্যবাদ অবনীল।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

সংগ্রহে আছে, কিন্তু নানা ঝামেলায় পড়া হয়ে উঠছে না। এক দিক দিয়ে এটা আমার জন্য একটা তাগাদা হিসেবে কাজ করবে। চমৎকার রিভিউয়ের জন্য ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ। সময় করে পড়ে ফেলুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কনফুসিয়াস এর ছবি

বইটার ২১ নম্বর পাতায় আছি এখন। আপনার সাথে একমত, অনুবাদকের অন্য লেখার মত লাগছে পড়তে।
কিন্তু ইয়াসমিন হক-এর লেখা অনেক সাবলীল, পড়তে ভালো লাগছে।
বই শেষ না করেই আপনার প্রতিক্রিয়া পড়ে ফেললাম, এটাও ভালো হয়েছে।

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। অনুবাদের মোড়ক পেরিয়েও ইয়াসমীন হকের লেখার সাবলীলতা বোঝা যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তিথীডোর এর ছবি

যেহেতু অনুবাদকর্মটি মুহম্মদ জাফর ইকবাল করেছেন তাই বইটি পড়তে গিয়ে ভাষাগত কারণে প্রায়ই মনে হয়েছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা বই’ পড়ছি।

আয়েশা ফয়েজের প্রথম বইটা পড়তে গিয়েও ঠিক এরকম লেগেছিল। মু জা ই স্যার সম্পাদনা করেছিলেন।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বইটির সুখ্যাতির কথা শুনেছিলাম। কিন্তু যথার্থ মানুষের কাছ থেকে সুখ্যাতির স্বীকৃতিটা পেলে বইটা পাঠ করার ইচ্ছেটা পূর্ণতা পায়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সময়-সুযোগ হলে বইটা পড়ে ফেলুন বস্‌!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাহসিন রেজা এর ছবি

বইটি পড়ার তালিকায় রাখলাম

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

নজমুল আলবাব এর ছবি

স্পয়লার টয়লার কিছুতো পেলামনাতো, তবে পড়ার আগ্রহরোধ করছি কিন্তু এমন এক দুরবস্থার মাঝে আছি এখন, পড়ার কোন সুজোগই নেই।

জীবন হালায় ইতর

তারেক অণু এর ছবি

প্রিয় বই, নিজে পড়েছি, একাধিক জনকে উপহারও দিয়েছি। শিবিরের ক্যাডারদের কতৃক ব্যবহৃত (!) কনডম ছিনতাইয়ের ঘটনাটা বেশ হাসিয়েছে। আর দিনের শেষে এই দম্পতি তাদের ছেলেমেয়েদের দূরে রেখেও বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা জেনে পুরো পরিবারের প্রতি সন্মান বৃদ্ধি পেয়েছে আরও বহুগুণ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।