১. বাংলা মাধ্যম
১.১. বাংলা মাধ্যম সাধারণ শিক্ষা (সরকারী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত)
১.২. বাংলা মাধ্যম কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা (কোন প্রকার সরকারী বা বেসরকারী শিক্ষা বোর্ডের সাথে সম্পর্কিত নয়)
২. মাদ্রাসা (সাধারণ ধারণায় এগুলো আরবী মাধ্যম হলেও বাস্তবে এগুলো বাংলা মাধ্যম)
২.১. আলিয়া মাদ্রাসা (সরকারী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত)
২.২. কওমী মাদ্রাসা (বেসরকারী বেফাক্ব কর্তৃক অনুমোদিত)
৩. ইংলিশ মাধ্যম
৩.১. ইংলিশ মাধ্যম সাধারণ শিক্ষা (ইংলিশ ভার্সান নামে পরিচিত - সরকারী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত)
৩.২. ইংলিশ মাধ্যম কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা (কোন প্রকার সরকারী বা বেসরকারী শিক্ষা বোর্ডের সাথে সম্পর্কিত নয়)
৩.৩. এডেক্সেল/কেমব্রিজ বা অনুরূপ বিদেশী শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত ইংলিশ মাধ্যম
৩.৪. আইবিও অনুমোদিত ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালরিয়েট
৪. ভিন্ন ভাষা মাধ্যম
৪.১. ফ্রেঞ্চ মাধ্যম (ফ্রান্সের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত)
এর বাইরে আরও কিছু থাকতে পারে যা আমার জানা নেই। দয়া করে কেউ জানালে সেটা এখানে যোগ করে দেবো। তবে এই তালিকাটা করার উদ্দেশ্য শিক্ষার মাধ্যম সম্পর্কে জানা বা আলোচনা করা নয়। আমার উদ্দেশ্য ভিন্ন যা পরবর্তী আলোচনায় স্পষ্ট হবে।
আমার পর্যবেক্ষণ মতে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এই তালিকার ১.১ ও ২.১-এর শিক্ষার্থীরা ছাড়া বাকি সকল মাধ্যমের শিক্ষার্থীর বাংলা ভাষাজ্ঞান ০% থেকে ৫০%-এর মতো। ভাষাজ্ঞান বলতে আমি –
(ক) শুনে সঠিক অর্থ বুঝতে পারা
(খ) শুদ্ধভাবে বলতে পারা
(গ) সঠিক উচ্চারণে পড়তে পারা
(ঘ) সঠিকভাবে লিখতে পারাকে বোঝাচ্ছি।
প্রশ্ন তুলতে পারেন আমার এইরূপ দাবি করার ভিত্তি কী? এর উত্তরে সবিনয়ে বলতে চাই, হ্যাঁ, আমি এই ব্যাপারে কোনো জরীপ করিনি বা এই প্রকার কোনো জরীপের ফলাফলের ওপর নির্ভর করিনি। আমি নিতান্তই আমার প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতার আলোকে একথা বলছি। আমার ধারণা, যদি এই ব্যাপারে জরীপ চালানো হয় তাহলে আরও ভয়াবহ ফলাফল উঠে আসবে।
উপরের তালিকার ৪.১ ছাড়া আর সকল মাধ্যমে ‘বাংলা’ নামে ভাষা ও সাহিত্যের একটি বিষয় কোথাও অল্প কয়েক বছর আর কোথাও দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা পড়ানোর পরেও তাহলে এইসব মাধ্যমের প্রডাক্টদের বাংলা ভাষাজ্ঞান এতো খারাপ কেনো? এই ব্যাপারে কোনো গবেষণার খবর আমার জানা নেই, আমি আমার কতিপয় পর্যবেক্ষণের কথা বলে যাই –
১. ভুলভাবে শেখানো
মাধ্যম নির্বিশেষে যে কায়দায় বাংলা শেখানো হয় তাতে ভাষা শিক্ষার সঠিক পদ্ধতিটি অনুসৃত হয় না। এখানে শিক্ষার্থী বাংলা কথা শুনে সঠিক বুঝতে পারলো কিনা সেটা যেমন যাচাই করা হয় না তেমন শুনে বোঝার ব্যাপারটিতে কী করে উন্নতি করা যায় সেটিও শেখানো হয় না। ব্যাকরণগত ও উচ্চারণগতভাবে শুদ্ধভাবে পাঠ্যপুস্তকের বাংলা বলার ও পড়ার বিষয়টি যারা শেখাবেন তাদের কতোজন এই দুটো ধাপ সাফল্যের সাথে উৎরাতে পারবেন সেটা আগে পরীক্ষা করে দেখা দরকার বলে মনে করি। তাহলে আরও মূল থেকে সমস্যাটির সমাধান সম্ভব হবে। মাধ্যম নির্বিশেষে স্বাধীনভাবে ও সৃজনশীল বাংলা লেখার সুযোগ প্রায় নেই বলে শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করা ও বার বার অনুশীলন করা উত্তর খাতায় লিখে থাকে। ফলে তারা স্বাধীনভাবে ব্যাকরণগতভাবে সঠিক বাংলা লিখতে শেখে না।
২. চর্চ্চার অভাব
শিক্ষায়তনে বা তার বাইরে শিক্ষার্থীদের সঠিক ও শুদ্ধ বাংলা শোনার, বলার, পড়ার ও লেখার সুযোগ সীমিত। এই সীমিত সুযোগের যারা উদ্যোক্তা তাদের বাংলা ভাষাজ্ঞান কোন পর্যায়ের সেটিও সন্দেহের বাইরে নয়। জাতি হিসাবে আমরা ‘বইপড়ুয়া’ এমন বদনাম বোধকরি কেউ দিতে পারবেন না। ১৭/১৮ কোটি লোকের দেশের প্রধান সংবাদপত্রটি কোনোদিন ১০ লাখ কপি বিক্রয় হয়নি। সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকের লেখা বইয়ের ১০ হাজার কপি বিক্রি করতে বই বিক্রেতার কালো ঘাম বের হয়ে যায়। অদরকারী ইংলিশ শব্দের ব্যবহার ছাড়া এদেশের শিক্ষিত লোকজন একটানা দশটা বাক্যও বলতে পারবেন না।
৩. প্রয়োগের অভাব
একজন মানুষ এই দেশে যে কোন চাকুরি করতে গেলে তার বাংলা ভাষার জ্ঞান যাই হোক না কেন ইংলিশ জানা না থাকলে –
(ক) চাকুরি না হবার সম্ভাবনা বেশি
(খ) চাকুরি হলেও তাতে উন্নতি হবার সম্ভাবনা কম।
সরকারী দপ্তরগুলো ছাড়া বাকি খুব অল্প জায়গায় বাংলা ব্যবহৃত হয়। ১০০% বাঙালী লোকে পূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যার সেবা দাতা ও গ্রহীতারাও বাংলা ভাষাভাষী তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রমও শুধু ইংলিশে হয়। উচ্চতর আদালত বা আইনের অঙ্গনে, চিকিৎসা, প্রকৌশল ইত্যাদি বিশেষায়িত শিক্ষা ও পেশাগত চর্চ্চাতে ইংলিশ ছাড়া গতি নেই। বক্তা এবং শ্রোতা উভয়েই বাঙালী এমন জায়গায় বিনা কারণে পুরো ইংলিশে কার্যক্রম চালানো খুব নিয়মিত দৃশ্য। এই তালিকা আরও লম্বা করা যাবে তবে তার প্রয়োজন নেই।
৪. সম্মানের অভাব
এদেশে একজন মানুষ ইংলিশে একটি গোটা লেখায় একটি বানান ভুল বা একটি ব্যাকরণগত ভুলের জন্য অথবা ইংলিশে দেয়া একটি দীর্ঘ বক্তৃতায় একটিমাত্র ভুল উচ্চারণের জন্য মরমে মরে যান, কিন্তু এদেশে শিক্ষিত লোকজন বাংলা বলায় বা লেখায় হরহামেশা ভুরি ভুরি ভুল করেন কিন্তু তার জন্য লজ্জিত না হয়ে গর্বিত হন। এখানে ‘অমুক খুব ভালো ইংলিশ বলতে/লিখতে পারেন’ – এটি হচ্ছে গর্বের বিষয়; কিন্তু ‘তমুক খুব ভালো বাংলা বলতে/লিখতে পারেন’ – এটি হচ্ছে অদরকারী একটি বিষয়।
আমাদের লোকজন হরহামেশা বাংলা বলায় বা লেখায় –
ই/য়
উ/ও
গ/ঘ
চ/ছ
জ/ঝ/য
প/ফ
ণ/ন
শ/ষ/স
গুলিয়ে ফেলেন এবং এটি যে সংশোধন করা দরকার সেটি ভাবার প্রয়োজন বোধ করেন না। এখানে কেউ কেউ আঞ্চলিকতার দোহাই দিতে পারেন, কিন্তু বছরের পর বছর একজন শিক্ষিত মানুষ ভুল লিখে যাচ্ছেন, ভুল ধরিয়ে দিলেও গা করছেন না – এমন ব্যাপারকে আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে কাটানোর উপায় নেই। এসব ভুল বাংলার প্রতি নিখাদ অশ্রদ্ধাজাত।
৫. বাংলা না শিখে চলতে পারা
আমরা আন্তর্জালে রোমান হরফে হিন্দী লেখার পুরনো ও ব্যাপক চর্চ্চা লক্ষ করেছি। এর একটি কারণ বোধহয় বহু ভাষাভাষী ভারতের বড় অংশ মানুষ দেবনাগরী হরফে লেখা পড়তে না পারা। হিন্দীর ক্ষেত্রে এটি হয়তো মানা যায়, কিন্তু তার মতো করে আন্তর্জালে রোমান হরফে বাংলা লেখার পেছনে কারণ কী? অনেক জায়গায় নতুন কোন সফটওয়্যার বা অ্যাপস ইনস্টলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকে সেসব আইনগত বা কারিগরী সীমাবদ্ধতাগুলোকে বাদ দিলে রোমান হরফে বাংলা লেখার প্রধান কারণ হচ্ছে ফোনেটিক বা অভ্র ধরনের সফটওয়্যার দিয়ে রোমান হরফে টাইপ করলে বাংলা হয় বটে কিন্তু সেই বাংলা টাইপকারক নিজেই পড়তে বা পড়ে বুঝতে অক্ষম। তারচেয়ে রোমান হরফে লিখলে লেখক ও পাঠক উভয়ে মোটামুটি বুঝে নিতে পারে। বাংলিশে বই লেখার জন্য ‘বান্ধobi’ বইয়ের লেখক রাবা খানকে আমি দোষারোপ করতে পারি না, তিনি বাজারের ভাও বুঝে সেভাবে চলেছেন মাত্র। শুধুমাত্র বাংলায় লেখা এমন ফর্ম বা দলিলাদি অপেক্ষাকৃত কম হয়। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যেখানে বাংলা থাকে তার সাথে সাথে ইংলিশটাও দেয়া থাকে। সাইনবোর্ড, বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞপ্তি, নির্দেশিকা ইত্যাদি মূলত ইংলিশেই হয়ে থাকে। ফলে বাংলা না শিখেও এদেশে দিব্যি ভালো চলা যায়, করে কর্মেও খাওয়া যায়।
একটি সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে প্রয়োজন সেটি যে সমস্যা তা স্বীকার করা। তারপরে প্রয়োজন সমস্যাটি আছে তার অস্তিত্ত্ব স্বীকার করা। উপরে বাংলা নিয়ে যে আলোচনা করলাম সেটিকে এদেশের মানুষ আদৌ কোন সমস্যা হিসাবে স্বীকার করেন কিনা তা জানা দরকার। আরও জানা দরকার তারা এটির অস্তিত্ত্ব স্বীকার করেন কিনা। এই দুই প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ-বাচক হয় তাহলে ভাবতে হবে এর সমাধানের উপায় কী। সব সমস্যা সমাধানের দায় একমাত্র সরকারের এমন ভেবে বসে থাকলে এই সমস্যার কোনোদিন সমাধান হবে না। যে সমস্যার সমাধানের মূল ব্যক্তির উদ্যোগ ও চর্চ্চার মধ্যে নিহিত সেখানে সরকারের দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে কাঙ্খিত ফল পাওয়া সম্ভব না।
আর কোনোকিছু না করে এভাবে চললে বাংলা হয়তো একসময় আঞ্চলিক উপভাষার মতো কেবল মুখের ভাষা হয়ে যাবে।
মন্তব্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তুলে ধরেছেন। আরো কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরি।
১. প্রমিত (স্ট্যান্ডার্ডাইজড) বাংলা ভাষায় বাংলাদেশিরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভাব বিনিময় করতে পারেনা।
২. প্রমিত ভাষা সাধারণত একটি ভাষার কোনো একটি আঞ্চলিক রুপের খুব কাছাকাছি আদলে তৈরি করা হয়, বিশেষ করে উচ্চারণের মানদণ্ড নির্ধারণ করতে। পৃথিবীর খুব কম ভাষার মধ্যে বাংলা একটি যার রাষ্ট্রীয় প্রমিত ভাষাটির কাছাকাছি আঞ্চলিক ভাষাটি ওই দেশের সীমানার মাঝে আর নেই এবং বাংলাদেশের কেউই ওই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেনা। এতে করে কিছু স্বাভাবিক সমস্যা তৈরি হয়েছে যা সমাধানে কারোরই তেমন কোনো আগ্রহ নেই। সেগুলো হচ্ছে,
২.১. বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কেউই তাদের স্বাভাবিক জীবনে প্রমিত ভাষার কিছু সঠিক ধ্বনি ব্যবহার করেনা। হাজার বছর ধরেও করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবেনা। যেমন 'ফুল', 'যদি', 'ঢল', ষাঁড়, এই শব্দগুলোর প্রথম ধ্বনিগুলো বা চন্দ্রবিন্দু। বঙ্গবন্ধুর যেকোনো ভাষন মন দিয়ে শুনলে ব্যাপারটা বোঝা যায়। সহজে বললে প্রমিত ভাষার উচ্চারণরীতি গায়ের জোরে বসানো হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ এই উচ্চারণরীতি তার কোনো আঞ্চলিকেই মেলাতে পারেনা।
২.২. নতুন শব্দকে বাংলা প্রমিত ভাষায় স্বীকৃতি দিতে বাংলা একাডেমির উদ্যোগ একেবারেই অপ্রতুল। পরিভাষা তৈরি এবং তাকে জনপ্রিয়করণে কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে।
২.৩. ১৯৮০ এর পরের প্রজন্মের সাথে পশ্চিমবঙ্গের ভাষিক যোগাযোগ ধীরে ধীরে কমেছে। কাজেই ভারতীয় বাংলা ভাষা বনাম বাংলাদেশি বাংলা ভাষার পার্থক্যটা আরো বেড়েছে। এখন যেকোনো ভালো অনলাইন প্লাটফর্মের বাংলা কন্টেন্ট ভারতীয় বাংলা ও বাংলাদেশি বাংলা এই দুই বাংলায় ডাব করা হয়। যেমন হইচই প্ল্যাটফর্মে চঞ্চল চৌধুরীর 'তকদির'। আগে এই ভাষিক যোগাযোগটা ভাষার 'সৌকর্য' রক্ষায় অভিভাবক হিসেবে কাজ করতো। নতুন প্রজন্ম শুধু যে সেটাকে প্রত্যাখানই করেছে তাই নয়, ভারতীয় বাংলারীতি এখন উপহাসের বস্তু হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সুনীল, শীর্ষেন্দু, বুদ্ধদেব, সমরেশের শ্রদ্ধার জায়গায় এখন এসেছে হাসির পাত্র আনন্দবাজার পত্রিকা।
২.৪ একইভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বাক্যরীতির সাথেও প্রমিত ভাষার কোনো মিল নেই। এদেশের বুদ্ধিজীবি, অভিনয় শিল্পী, সংবাদ পড়ুয়ারা আনুষ্ঠানিক বক্তব্যটি সুন্দর মার্জিত ভাষায় সেরে নেওয়ার পরক্ষণেই 'অপরিশীলিত' 'কথ্য' বাংলায় ফিরে যান। এই কথ্য বাংলায় বলার মতন পর্যাপ্ত 'বাংলা' শব্দ প্রমিত ভাষায় নেই। তাই তাঁদের মোবাইলের চার্জার চাইতে হয়, পানি খেতে হয়, সিগারেট খেতে হয়, স্টেশনে ট্রেন ফেল করলে ওয়েট করতে হয়, আফসারাব কথায় খালি খালি হুদাই মেজাজ খারাপ হয়, পেটে গ্যাস হয়, সেক্স করতে হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।
২.৫. শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষের কাছে প্রমিত ভাষা ব্যবহার করা মার্জিত রুচির লক্ষণ নয়। বেশিরভাগ মানুষই এটাকে কৃত্রিম, নাটুকে, আন্তরিকতা বিবর্জিত, ন্যাকামিতে পরিপূর্ণ, অদরকারী, অসহজ এবং ভাঁড়ামো মনে করে এবং বিরক্ত হয়। এদেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রমিত ভাষাকে নতুন প্রজন্মের কাছে আবেদনময় করে তুলতে সম্পুর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। তামিল তেলেগুর মতন চূড়ান্ত দুর্বোধ্য ভাষার চলচ্চিত্রের কাছেও তারা দশ গোলে হেরেছেন। অবশ্য সুখের কথা হচ্ছে অবশেষে তারা 'কথ্য' বাংলাদেশি বাংলায় নতিস্বীকার করছেন এবং ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মে ধীরে ধীরে সেই কন্টেন্ট বাড়ছে। এটা ঠু লিটল ঠু লেইট কিনা সেটা সময় বলবে।
কাজেই প্রমিত ভাষা (বিশেষ করে উচ্চারণ ও বাক্যতত্ত্ব) বাংলাদেশি কোনো আঞ্চলিকের (রাজশাহী, কুষ্টিয়া) কাছাকাছি রেখে সংশোধন না করলে এটি আরো বিবর্জিত হবে। বাংলাদেশের প্রমিত ভাষাটি একটি হরেদরে কৃত্রিম ভাষা যার মূল অংশটি ধীরে ধীরে আরো কমে যাচ্ছে।
পোস্ট পড়ার ও বিস্তারিত মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আহসান। আপনি আসলে একটি ভিন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন। বস্তুত আপনার মন্তব্যটি আর অল্প একটু বাড়িয়ে একটি স্বতন্ত্র পোস্ট হতে পারতো। আমি একটু সময় নিয়ে আপনার উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করব।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রাজশাহী কুষ্টিয়ার ভাষা বুঝি না। নোয়াখালি ভাষা চাই।
'সংশোধন' করে রাজশাহী বা কুষ্টিয়ার কাছাকাছি রাখার প্রস্তাবটি পছন্দ হল না। বৃহত্তর বরিশালের ভাষার মত কিছু করা হলে সেইটা বেশী গ্রহনযোগ্যতা পাবে।
দারুন লাগল আলোচনাটা। এর কিছু কিছু পয়েন্ট আমি নিজেও ভেবেছি আগে। কয়েকটা প্রশ্ন মাথায় আসল -
১। 'ঢল', ষাঁড়, এই শব্দগুলোর প্রথম ধ্বনিগুলোর যে একটা "বেঠিক" উচ্চারণ আছে তাই তো আমি জানতাম না!!! হা হা হা --- সঠিক উচ্চারণটা কি জানতে পারলে খুব ভাল হত!!
২।
এই বাক্য দু'টি বুঝলাম না। অস্পষ্ট লাগছে। আপনি তো এতক্ষণ প্রমিত বনাম অপ্রমিত ভাষার দ্বন্দ্বের কথা বলছিলেন। যদ্দুর জানি কথ্য ভাষা বলতে চলিত ভাষা বোঝায়। চলিত ভাষা তো প্রমিতরই একটা রূপ (সাধুর ভাষার বিপরীতে), এবং এখন যেহেতু সাধু আর তেমন প্রচলিত না সেহেতু চলিতই একমাত্র প্রমিত। সুতরাং চলিত অর্থে ধরলে কথ্য বাংলায় বলার মতন পর্যাপ্ত 'বাংলা' শব্দ প্রমিত ভাষায় নেই হয় কি করে - চলিতই তো প্রমিত! আর যদি কথ্য বাংলা বলতে কোনো অপ্রমিত ডায়ালেক্ট বা সোশিওলেক্টকে বোঝান (যেমন বাংলাদেশে প্রচলিত কোনো আঞ্চলিক ভাষা বা ঢাকার জগাখিচুড়ি ভাষা ইত্যাদি) তাহলে সেই ভাষায় কথিত অনেক শব্দের প্রমিত ইকুইভ্যালেন্ট প্রমিততে নেই? সুতরাং এই তথাকথিত কথ্য বাংলায় কথিত বক্তব্য প্রমিততে পুরোপুরি প্রকাশ করা যায় না?
১মতঃ এই কথাটা আমার কাছে একটু সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। হুবহু কিছু কিছু শব্দ হয়তো নেই। কিন্তু আমার ধারণা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইকুইভ্যালেন্ট শব্দ অবশ্যই আছে যা একই অর্থ বহন করে। যেমন ধরুন "জোস"। এটা "দারুন" বললেও একই অর্থ বোঝায়। হয়তো সাব্জেক্টিভ ভাইব, ফ্লেভার বা সৌন্দর্য্যটা এক হবে না সবসময়, কিন্তু এই সাব্জেক্টিভিটি অভ্যাসের ব্যাপার যা অভ্যাসের সুযোগ দিলেই বদলে যায়।
২য় প্রশ্ন হল - একেবারেই না থাকলে কি এসে গেল?? প্রয়োজন মনে করলে কোনো ছূৎমার্গ না করে প্রমিততে না থাকা কথ্যের ঐ কয়টা শব্দ প্রমিততে অন্তর্ভূক্ত করে নিলেই হয়!! ব্যস, চুকে গেল! অসুবিধা কি? ভাষা তো এভাবেই এগোয়। বিদেশী ভাষা থেকে শব্দ নিতে পারলে নিজেদের ভাষা থেকে নিতে পারব না কেন?
৩য়তঃ আপনি যে উদাহরণগুলি দিয়েছেন তার অধিকাংশই (সব না) কিন্তু আপনার বক্তব্যের (আমি যদি সঠিক বুঝে থাকি)সাথে লাগসই নয়। মোবাইল, চার্জার,সিগারেট, স্টেশন, ট্রেন, ফেল, ওয়েট, গ্যাস, সেক্স - এগুলি কিন্তু "কথ্য" বাংলা না। এগুলি বিদেশী শব্দ। এগুলির যে বহুল প্রচলিত বাংলা নেই সেটা প্রমিত-অপ্রমিত নির্বিশেষে সত্য। তাই এগুলি কোনো 'অমার্জিত' বা 'অপরিশীলনের' লক্ষণ নয় বা প্রমিত বনাম অপ্রমিত প্রসঙ্গে আলোচ্য বা উদাহরণযোগ্য নয়। "পানি" অপ্রমিত না, এটা বাংলাদেশে / পূর্ব বাংলায় / বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে অর্থাৎ সংখ্যাগুরু বাংলাভাষীদের মধ্যে বহুকাল ধরেই প্রমিত হয়ে গেছে। খালি খালি বা হুদাই-এরও প্রমিত ইকুইভ্যালেন্ট আছে। সুতরাং এইদিক থেকে "বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বাক্যরীতির সাথেও প্রমিত ভাষার কোনো মিল নেই" কথাটা আমার সঠিক মনে হয় না। সামান্য কয়েকটা শব্দের জন্য একটা ভাষা আলাদা হয়ে যায় না বা স্বীকৃত প্রমিতকে পরিবর্তন করে নতুন একটা উপভাষা বা ডায়ালেক্টকে প্রমিত হিসেবে গ্রহণ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বরং এ ধরণের পার্থক্যের ক্ষেত্রে সহজ সমাধান হল অপ্রমিতের ইউনিক শব্দগুলি / কয়েনেজগুলি (যদি থাকে) প্রমিতের মধ্যে গ্রহণ করে নেয়া। ইংরেজি ভাষা এবং সম্ভবত অন্যান্য ভাষাও - যেগুলির একাধিক প্রমিত রূপ বা প্রমিতের একাধিক রূপ আছে অঞ্চল ভেদে - সেগুলিও বোধহয় এভাবেই এগিয়েছে, তাই না? আমার ঠিক জানা নেই, কিন্তু ইংরেজি ভাষা আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে কি নতুন কোনো ডায়ালেক্ট বেছে নিয়েছিল সেখান থেকে নাকি তাদের নতুন কয়েনেজগুলি ইনকরপোরেট করা শুরু করেছিল নিজেদের আঞ্চলিক ভাষায়? মোদ্দা কথায়, পায়ের পাতায় ধুলা লাগা ঠেকানোর জন্য সারা পৃথিবী আচ্ছাদিত না করে নিজের পায়ের পাতাটা আচ্ছাদন (জুতা) করলেই তো হয়, তাই না?
৩। আমার কাছে আসলে কোলকাতা ভিত্তিক তথাকথিত প্রমিত বাংলা আর বাংলাদেশের কথিত অপ্রমিত / কথ্য বাংলার মধ্যে মূল পার্থক্য ও সমস্যা মনে হয় - উচ্চারণের পার্থক্য, বিশেষ করে ক্রিয়াপদের উচ্চারণের পার্থক্য, বিশেষ কিছু অক্ষরের উচ্চারণে পার্থক্য, উচ্চারণের পার্থক্যের কারনে বাংলাদেশের বেশির ভাগ লোকের বহু ক্ষেত্রে একইসাথে একই শব্দের দুই রকম উচ্চারণ শেখা- অভ্যাস করা ও বজায় রাখার জটিল দ্বৈততা চর্চা করার ঝামেলা, উচ্চারণের পার্থক্যের কারনে আমাদের উচ্চারণের সাথে কথিত প্রমিত-ভিত্তিক লিখিত বাংলা বানানের অসঙ্গতি, ইত্যাদি। অপ্রমিতের নতুন কয়েনেজ বড় কোনো ঝামেলা মনে হয় না।
৪। উচ্চারণের দ্বৈততার ঝামেলা দূর করতে বাংলাদেশের কোনো সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের (যেমন রাজশাহী, কুষ্টিয়া ইত্যাদি) উপভাষাকে প্রমিত হিসেবে মেনে নিলে সে ঝামেলা দূর হবে বলে মনে হয় না। তখন অন্য জেলার লোকদের আবার নতুন একটা উপভাষা, তাদের উচ্চারণ-পদ্ধতি, শব্দভাণ্ডার, এ্যাক্সেন্ট ইত্যাদি শিখতে হবে। দ্বৈততার ঝামেলাটা থেকেই যাবে। ইন ফ্যাক্ট বাড়বে। তখন ৩টা ডায়ালেক্ট জানতে হবে অনেকদিন ধরে কারন কোলকাতা থেকে রাজশাহী বা চিটাগাং - এ রাতারাতি সুইচ করা যাবে না। ঢাকা থেকে কোলকাতারটাতেই সুইচ করা যায়নি গত আড়াইশ বছরে!! বর্তমান ঢাকাই খিচুড়ি দিয়ে অনেকদিন ধরে ঠেকার কাজ চালাতে হবে ট্রাঞ্জিশন্টা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। সেই ট্রাঞ্জিশন ঠিকঠাক শেষ হতে কত শত বছর বা জেনারেশন লাগবে? তারপরও কিন্তু দ্বৈততার ঝামেলা বা বোঝা থেকেই যাবে। তখনও মানুষকে নিজের আঞ্চলিক ভাষার উপর আবার নতুন করে নতুন একটা নব্যপ্রমিত ভাষা শিখতে হবে, অভ্যাস করতে হবে ও বজায় রাখতে হবে। এই ঝামেলাটা যদি থাকবেই, তাহলে পুরনো প্রমিত বদলানোর দরকারটা কি? নব্যপ্রমিতটা রাজনৈতিক ভাবে একই দেশের অন্তর্ভূক্ত বলে সেটা সহজ হবে বলে মনে হয় না। সিলেট বা চিটাগাঙ বা অন্য অনেক অঞ্চলের লোকের পক্ষে সেটা একই রকম কঠিন হবে ঠিক একই কারনে। যে কারনে বর্তমান প্রমিতটা তাদের জন্য কঠিন - এবং অনেক শেখা সত্বেও যে কারনে তাদের কথায় প্রায়ই নিজস্ব আঞ্চলিক প্রভাবটা বা অক্ষমতা থেকেই যায়, ঠিক একই কারনেই নব্যপ্রমিতটাও কঠিন হতে পারে। কারনটা রাজনৈতিক বা ভৌগলিক না। কারনটা ভাষিক, উচ্চারণরীতিগত, ভোকাল ট্র্যাক্টের আর্টিকুলেটরগুলির মুভমেন্টের অভ্যস্ততা ও সেখানকার মাসল মেমরি, ইত্যাদি। এর চেয়ে পুরনো প্রমিত যেটা তাদের ইতিমধ্যেই পুরোটা না হলেও অনেকটাই বা কিছুটা হলেও শেখা আছে বা অন্তত তার সাথে একটা পরিচিতি আছে সেটা রেখে দেয়াটাই কি অনেক সহজ ও সুবিধাজনক হবে না তাদের জন্য?
৫। দেশের ভিতর কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ডায়ালেক্টকে নব্য প্রমিত বা লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে গ্রহণ করার পথে আরেকটা বিরাট বাধা হচ্ছে - পলিটিকাল। অন্য অঞ্চলের লোক কিছুতেই এটা মেনে নিবে বলে মনে হয় না। দেশজুড়ে বিশাল ঝগড়া লেগে যাবে। কেউ অন্য অঞ্চলের ভাষাকে প্রমিত হিসেবে মেনে নিবে না। এটা একদম গ্যারান্টিড!!! এমনকি এই কমেন্ট সেকশনেই এটা দেখা যাচ্ছে ইতিমধ্যে। এটা করার চেষ্টা করলে দেশের সংহতি বিপর্যস্ত হবে। আসলে খুবই অবাস্তব চিন্তা এটা। তাছাড়া কে এই সিদ্ধান্ত নিবে??? ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপকরা? দেশসুদ্ধ লোকের অট্টহাসি আর গালাগালির চোটেই তারা রকেট ছাড়াই সৌরজগতের বাইরে চলে যাবে। রাজনীতিবিদরা? সরকার? তারা এটা করবেও না, পারবেও না। কেউ তাদের পাত্তাও দিবে না।
৬। আমার জানামতে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই ভাষার প্রমিত রূপটা একটা দেশের সর্বোচ্চ আর্থিক / রাজনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন এলিট শ্রেণীই নির্ধারণ করে থাকেন - বিশেষ করে এই ব্যাপারে তাদের মধ্যে যদি এফেক্টিভ ঐক্যমত্য বা সমরূপতা থাকে। বাংলার ক্ষেত্রে কোলকাতায় বোধহয় সেটাই হয়েছিল। বাংলাদেশের এলিট শ্রেণী কি দেশের পুরনো প্রমিতকে নতুন একটা দিয়ে প্রতিস্থাপন করার মত সমরূপতা, ঐক্যমত্য, ইচ্ছা, আগ্রহ, ক্ষমতা ও সর্বজনীন মান্যতা রাখেন?
৭।
এটা আমি শুনিনি কখনো!!! বরং উল্টোটাই জানি!!! এই প্রজন্মের অনেকের কাছে কৃত্রিম বা নাটুকে হয়তো মনে হতেও পারে, কিন্তু কাউকে প্রমিতকে "অমার্জিত" বলতে শুনিনি কখনো!
৮। বিদ্যমান অফিশিয়াল প্রমিতর চর্চা বা প্রভাব ক্রমশ কমবে বলেই মনে হয়, কিন্তু তার পরিবর্তে কোনো সংহত, সুন্দর নতুন প্রমিত দেখছি না আমি। বরং সারাদেশের সব আঞ্চলিক ভাষা আর ঢাকার রাস্তার ভাষার সংমিশ্রণে একটা কর্ণপটহে চরম চুলকানি উদ্রেককারী, ভাঙাচোরা, জগাখিচুড়ি, উদ্ভট, কিম্ভূতুড়ে একটা পিজিন ভাষাতেই আমাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি!!!
****************************************
প্রমিত ভাষার আতুড় ঘর বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সীমানার বাইরে, এই কারণে তা পরিত্যাজ্য হইলে, 'ধানের উৎপত্তি চীনে' যুক্তি দিয়া ভাত খাওয়া বন্ধ করি চলেন।
নদীয়া জেলার শান্তিপুরের ভাষা যে এখন আর নদীয়া জেলার শান্তিপুরের একার না, এইটা শিক্ষিত লোকজন এখনও বুইঝা সারে নাই দেইখা মজা পাইলাম।
সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশই এর বড় দাবিদার, পশ্চিম বংগ আসাম ত্রিপুরা না। মুখে সারাক্ষণ বলি না? সেইটা আমার ইচ্ছা। কলমে সারাক্ষণ লেখি না? সেইটাও আমার ইচ্ছা। একই ঘটনা ঘটে পশ্চিম বংগ আসাম ত্রিপুরাতেও। ঐখানে লোকে চব্বিশ ঘন্টা প্রমিত বাংলায় কথা বলে, তা তো না।
এখন কেউ যদি বলে, যে প্রমিত বাংলা পারে না, তার কি হবে? এই কথা প্রমিত বাংলা পাল্টাইলেও সত্য থাকবে। নদীয়া জেলার শান্তিপুরের জায়গায় কুষ্টিয়ার খোকসার ভাষা ফিট করলে বিক্রমপুর আর ফেনীর লোক তখন ঐ কথা জিগাবে।
ধানচাষের শুরু চীনে, একারণে যদি আপনাকে দাওয়াত করে শুধু জেসমিন চালের পোলাও খাওয়ানো হয় এবং আপনি কাটারিভোগ চালের ভক্ত হলে সেটাকে নিচু চোখে দেখা হয় আর আপনাকে অমার্জিত হিসেবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় তাহলে আপনার তুলনাটা ঠিক আছে। বাদবাকি আলাপটা আমি জেসমিন চাল খাই তাই বাকিদেরও খেতে হবে, এতে আবার অবাক হবার কি আছে, জেসমিন চাল কি শুধু পূর্ব এশিয়ার নাকি, বাংলাদেশেরও বটে গোছের হয়েছে।
ভাইসাহেব আপনে প্রমিতকরণ বা স্টেন্ডার্ডাইজেশন জিনিশটা ঠিকমত বুঝেন কিনা, এই প্রশ্ন লইয়া আবার আইলাম। প্রমিতকরণ এইটাই, জায়গা বুইঝা সবাই জেসমিন চাউল খাওয়া। আপনে জেসমিন বাদ দিয়া কাটারিভোগরে স্টেন্ডার্ড বানাইলে যেই লোক নাজিরশাইলের ভক্ত সেও আপনার বাদবাকি কথায় জেসমিনের জায়গায় কাটারিভোগ বসাইয়া কইব।
আপনারে যেই লোক নিচু চোখে দেখে, অমার্জিত কয়, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, সেই লোকের সমস্যা কাটারিভোগ চাউলে না, তার সমস্যা আপনারে লইয়া।
সংশোধনীঃ
ফেল, ওয়েট, সেক্সের আছে।
এখানে "আঞ্চলিকের" স্থলে আসলে "বিদ্যমান চর্চিত ভাষা" ভাষা বুঝিয়েছি।
এটা হবে = ...তখনও মানুষকে নিজের আঞ্চলিক ভাষা আর বিদ্যমান আন-অফিশিয়াল ঢাকাই জগাখিচুড়ি পিজিন (Pidgin) ভাষার উপর আবার নতুন করে নতুন একটা নব্যপ্রমিত ভাষা শিখতে হবে, অভ্যাস করতে হবে ও বজায় রাখতে হবে..
এটা হবে = ...ভোকাল ট্র্যাক্টের আর্টিকুলেটরগুলির মুভমেন্টের অনভ্যস্ততা...
****************************************
ব্লগোস্ফিয়ার এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বাংলার প্রমিত ভাষা নিয়ে একটি প্নিঃশেষ বিতর্ক আছে। আমি সে সম্পর্কে সচেতন বলে আমার পোস্টে সতর্ক থাকার চেষ্টা করেছি এই বিষয়টি যেন চলে না আসে। কারণ প্রমিত ভাষার বিষয়টি আসলে আমার লেখার মূল আলোচ্য বিষয় যেটি সেটি চাপা পড়ে যেতে পারে। দেখা যাচ্ছে আমার আশঙ্কা অমূলক নয়।
আমি এক দফা ভেবেছিলাম আহসানের উত্থাপিত প্রমিত ভাষা বিতর্ক যেখানে মন মাঝি, কাইয়ুম, তমালিকা ও মাজহার ইতোমধ্যে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন সেখানে অংশ নেবো কিনা। পরে নিজেকে সংবরণ করেছি যেন নিজেই নিজের লেখার ফোকাসটি অন্য দিকে সরিয়ে না দেই।
প্রমিত ভাষা নিয়ে চলমান বিতর্কটিকে আমি নিরুৎসাহিত করছি না, তবে সবাইকে অনুরোধ করবো তাঁরা যেন পোস্টের মূল বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমার মন্তব্যে আপনার পোস্টের মূল উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হলে আমি খুবই দুঃখিত। সম্পর্ক্যযুক্ত ভেবেই আমি মন্তব্যটি করেছিলাম, অর্থাৎ কেন বাংলাদেশে (প্রমিত, আপনি আশা করি আঞ্চলিক বাংলা বোঝাননি) বাংলা ভাষা বলতে, লিখতে, বা শুনে বুঝতে গণমানুষ অপারগতা/অসহযোগিতা প্রদর্শন করে তার আরো কিছু কারণ/বিশ্লেষণ খুঁজতে কিছু পয়েন্ট লিখেছিলাম। আপনার যদি মনে হয় যে এতে আপনার বক্তব্যের মূল স্রোত ভিন্ন দিকে যাচ্ছে তাহলে আর প্রতিমন্তব্যে যাবোনা।
মন মাঝি তার সুচিন্তিত মন্তব্যে কিছু ভালো কথা তুলে ধরেছেন। সময় নিয়ে কিছু সেখানে বলা যেতো। আপাতত থাক।
ধন্যবাদ আপনাদের দুজনকেই।
আমার মন্তব্যে আমি স্পষ্টতই বলেছি -
"প্রমিত ভাষা নিয়ে চলমান বিতর্কটিকে আমি নিরুৎসাহিত করছি না, তবে সবাইকে অনুরোধ করবো তাঁরা যেন পোস্টের মূল বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন"
এখানে কী বলা হয়েছে সেটি না বুঝতে পারার কোনো কারণ তো আমি দেখতে পাচ্ছি না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ অংশ নিন!!!! আপনার কনসার্নটা তো ইতিমধ্যেই মেট হয়েছে। আমি সহ আরও অনেকেই ইতিমধ্যে আপনার ফোকাসের উপর ফোকাস ফেলেছি। এবার প্রমিত ভাষা ইস্যুতেও একটু আলোকপাত করুন। এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত জানতে খুবই আগ্রহ বোধ করছি।
****************************************
স্কুল জীবনে এক শিক্ষকের কাছে একটা গল্প শুনেছিলাম যার সত্যাসত্য জানি না। গল্পটি এমন।
জামাতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসল্লিকে ক্বেরাত পড়তে হবে নাকি কেবল ইমাম সাহেব পড়লেই চলবে এমন এক বিতর্ক বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। ইমাম আবু হানিফা 'কেবল ইমাম সাহেব পড়েলেই চলবে' মতের পক্ষ নিলেন। প্রতিপক্ষ দলবল নিয়ে এসে তাঁকে কৈফিয়ত তলব করলেন। তিনি বিনীতভাবে তাঁদেরকে বললেন, আমার একার পক্ষে আপনাদের সবার কথা শোনা এবং সবাইকে উত্তর দেয়া তো সম্ভব না অতএব আপনাদের মধ্য একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত করুন যাঁর সাথে আমি বিষয়টি আলোচনা করতে পারি এবং আমার অবস্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে পারি। প্রতিপক্ষ রাজী হলেন এবং তাঁরা তাঁদের মধ্য থেকে একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত করলেন। প্রতিনিধি নির্বাচিত হবার পর ইমাম আবু হানিফা বললেন,
- আচ্ছা, আপনাদের এই প্রতিনিধির সাথে আলাপ করাই কি যথেষ্ট হবে?
প্রতিপক্ষের উত্তর
- হ্যাঁ, হবে।
- তিনি যা বলবেন সেটা কি আপনাদের সবার মত বলে গণ্য করব?
- হ্যাঁ, তাই করবেন।
- আমার মনে হয় আপনারা নিজেরাই আমার অবস্থানের পক্ষের যুক্তিটি প্রমাণ করে দিয়েছেন।
প্রমিত ভাষার ক্ষেত্রে আমার অবস্থানটি উপরের গল্পে ইমাম আবু হানিফার মতো।
আমি বরং মনে করার চেষ্টা করি এই পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক পড়াশোনায় আমি কোন্ ভাষায় লেখা বই পড়েছি, পরীক্ষার খাতায় কোন ভাষায় লিখেছি, আমার শিক্ষকেরা আমাকে কোন ভাষায় শিক্ষা দিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় মাধ্যমগুলো, আনুষ্ঠানিক আচারাদি ও ঘোষণাগুলোতে কোন ভাষা ব্যবহৃত হয়, কোন ভাষার সাহিত্য পড়ে সমৃদ্ধ হলাম, কোন ভাষার আলোচনা শুনে মানুষ হবার পথে আগালাম, ……… ইত্যাদি প্রভৃতি। টাওয়ার অব বাবেল বানানোর সময় ভাষাগত যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল পরিস্থিতি অমন বানালে কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভাষা, চিন্তার প্রকাশ। আমরা যে ভাষায় চিন্তা করি, সে ভাষার দৈন্যতা-
ভাষার প্রতি অমনোযোগ শুধু নয় চিন্তার দৈন্যতার কথাও বলে।
বাংলাদেশে ভাষার একটা দৈন্য দশা চলছে মনে হয়-
আমরা যা বলছি, যে কথা বলছি
তা চিন্তা আর হৃদয় থেকে নয়
তাৎক্ষনিক মুহূর্তের প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন থেকে
জিহ্বা দিয়ে গড়িয়ে পড়ে শব্দরা।
যে শব্দ আমরা উচ্চারণ করি
তার ওপর কোন অধিকার যেন থাকে না।
শব্দের ভেতরে অর্থের যে অসীম সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে
তাও আর ধরা যায় না। শব্দরা অর্থ হারায়।
গত দুই দশকে আমরা লেখার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে
সিনেমায় বুঁদ হয়েছি
কিন্তু এই যে আমরা একটি সিনেমার নামও বলতে পারবো না
যা সবাই মিলে দেখা যায়, আবার দেখি বলে সেই সিনেমাটায় ডুব দেয়া যায়।
কেন এমনটা হচ্ছে? আমার মনে হয়
এর কারণ খুব ছোট্ট।
আমরা গল্প দেখতে পারছি না। আমরা গল্পটাকে ধরতে পারছি না।
আর সবতো ভালই হয়েছে, নিত্য নতুন ক্যামেরা বেরিয়েছে- ছবি তুললেই ঝকঝকে গভীরতা
সব আছে, নেই শুধু গল্পটা। কেন হচ্ছে এমন?
গল্প কি নেই জীবনে?
জীবন থাকলে গল্পতো জন্মায় প্রতি মুহূর্তে। তারপরও গল্পের অভাব কেন?
আমার মনে হয় এর সাথে যোগ আছে ভাষার।
আমরা চিন্তাকে সরিয়ে দিয়েছি জীবন থেকে
দূরে সরে গেছি অনুভূতির গভীর অনুভব থেকে।
হয়তোবা জীবন থেকেই-
আর তাই হারিয়ে ফেলেছি ভাষা।
পবিত্র বাইবেলে জন এর আখ্যানটুকুর শুরুর বাক্যটা
আমার খুব অদ্ভুত লাগে পড়তে।
the beginning was the Word, and the Word was with God, and the Word was God.
বারবার পড়ি শব্দকটি- মনে হয়
“নিজের ভেতর যদি ঈশ্বর থাকেন
যা আসল আমি
সেও প্রকাশিত হয় শব্দেই।
আমরা ভাষাকে হারিয়ে ফেলি মানে
আমাদের নিজের ভেতরের ঈশ্বরকে হারিয়ে ফেলি
আসলে হারিয়ে ফেলি নিজেকেই।
আসলে আমার ভাষাই আমি।
এই কথাটি ভাবছিলাম ক’দিন আগেই,
সূজন চৌধুরী- আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের একটা পোর্ট্রেট করেছিল।
ওর ফেসবুকের পোস্টে ছবিটার সাথে সেখানে একটা কথা ছিল, অনেকটা এরকম (ভাবটা)
ভাষাটা ছিল তার চামড়া।
কথাটা খুব স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। শুধু আথতারুজ্জামান ইলিয়াস নন
আমাদের চামড়াও ভাষার তৈরি।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস জানতেন।
আমরা জানি না। তাই চামড়া ক্ষতবিক্ষত করে ফেলি।
কিন্তু অনুভূতিটা মরে গেছে বলে
টের পাই না।
বুঝতে পারি না
আমাদের সবার নিজের ব্যক্তিত্বটুকু হারিয়ে
কথাবলা পুতুল হয়ে উঠছি
যার কাজ শুধু বলাই।
লেখাটি সুন্দর। বাস্তবতার ভাবনা তৈরি করে।।।
আর পড়তে গিয়ে যে ভাবনাটা হলো তা হয়তো বিষয়ের বাইরে চলে গেল।
কিন্তু আমি ভাবছিলাম, বাংলা ভাষার ব্যবহারটা এত খারাপ কেন?- এই প্রশ্নটা নিয়ে।
আর ভাবতে গিয়ে, এইসব ভাবছিলাম-
চিন্তার বিস্তারিত প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ কর্ণজয়।
কোনোপ্রকার কূটতর্ক শুরু করার মানসে নয়, স্রেফ আপনার মন্তব্যটা পড়তে পড়তে আমার মনে যা প্রতিক্রিয়া হলো তা যদি লিখি –
চিন্তার দীনতার ছাপ কি ভাষাতেও পড়ে? আমার তা মনে হয় না। দীন চিন্তার মানুষের প্রকাশের ভাষাও শক্তিশালী হতে পারে। আমরা কি ইতিহাসে দেখিনি অনেক দূরাচারই মিষ্টভাষী বা বাগ্মী ছিলেন। মগজের নিউরন থেকে জীভ বা আঙুলে অনুবাদ পরিচলনের যে প্রক্রিয়া সেখানে সীমাবদ্ধতা থাকলে সুগঠিত চিন্তার প্রকাশও দীন হতে বাধ্য।
বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো উত্তরাধুনিক নয়, তাই উচ্চারিত শব্দের দায় ঘোরতরভাবে উচ্চারণকারীকে বহন করতে হয়। শব্দ তো হননও করতে পারে তাই শব্দ নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্রও বটে, এখানে দায় এড়ানোর উপায় নেই।
শব্দরা কখনো অর্থ হারায় না। যোগ্য জনের হাতে পড়লে শব্দ নতুন নতুন অর্থে ভূষিত হয়।
গত দুই দশকে এমন সিনেমা দেখেছি যাতে আমি চুলের ডগা পর্যন্ত ডুবে গেছি। আমি তার জ্যোতিবলয় থেকে বের হতে পারিনি। যেমন মোহসেন মাখমালবাফের ‘সকৌত’, কিম কি-দুকের ‘বিন-জিপ’ বা প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’। তালিকাটা আরও লম্বা করা যাবে।
বেশিরভাগ চলচ্চিত্র নির্মাতার লক্ষ্য থাকে দর্শককে ‘হাইকোর্ট’ দেখানো। এভাবে কেউ অর্থ কামাতে চান, কেউ যশ। এ’কারণে কেউ পাঁচ মিনিটের গল্পকে আড়াই ঘন্টা ধরে টানতে থাকেন, আবার কেউ দশটা গল্পের খাবলা খাবলা নিয়ে চানাচুর বানাতে চেষ্টা করেন। শিক্ষা, সাধনা, পরিশ্রম, একাগ্রতা, পেশাদারীত্ব সর্বোপরি শিল্পজ্ঞান ছাড়া কি চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়া যায়। এখানে দেখি কেউ কেউ গুরুমুখী বিদ্যার মতো দুটো সিনেমাতে সহকারী হিসাবে কাজ করে নির্মাতা হয়ে যান। আবার কেউ কেউ জিপিএ-৫দের মতো দুটো ছোট কর্মশালা করেই নির্মাতা হয়ে যান। এদের সিনেমায় শুধু গল্প কেনো আরও অনেক কিছু নেই।
“আমরা চিন্তাকে সরিয়ে দিয়েছি জীবন থেকে। দূরে সরে গেছি অনুভূতির গভীর অনুভব থেকে। হয়তোবা জীবন থেকেই – আর তাই হারিয়ে ফেলেছি ভাষা”। আপনার এই অনুধাবনের সাথে একমত।
শব্দব্রহ্ম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, অভিমত, বিতর্ক আছে। ঐ পথে আর পা না বাড়াই।
আমার একটা কথা মনে হয়। আমাদের আসলে ধৈর্য্য কমে গেছে, তাই আমরা অন্যের কথা শুনি না, সেসব বোঝার চেষ্টা করি না। আমরা কেবল আপনাতে মগ্ন থাকি। আমরা সবাই একযোগে কথা বলতে থাকি। সব শব্দ তাই একসাথে জট পাকিয়ে আমাদের মাথা ভার করে তোলে। একারণে আমরা কোনো গল্প খুঁজে পাই না, নিজেও যে এক একটা গল্পের চরিত্র সেটাও বুঝতে পারি না। আমাদের অবস্থা ‘ছোট্ট রাজকুমার’-এর ঐ ছোট গ্রহাণুর রাজাটার মতো যার কোনো প্রজা নেই, রাজ্যভার নেই, শাসন নেই – তবু সে রাজা!
অনুভূতিহীন, সহমর্মিতাহীন, প্রেমহীন, করুণাকর একটা যুগ!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি আসলে কথা বলছিলাম
বাংলাদেশের সীমানায় বসে-
বাংলাদেশের বাইরে যে পশ্চিমবঙ্গও বাংলার একটি কেন্দ্র
তাকে খানিকটা দূরে রেখেই।
সিনেমার উদাহরণটা ঐজন্যই এসেছে।
বাংলাদেশেই সিনেমাটা হয় না, আমরা সিনেমাটা বানাতে পারিনি-
বিশ্বতো নয়ই, এমনকি পশ্চিমবঙ্গও হিসেবের মধ্যে ছিল না।
পশ্চিমবঙ্গে অনেক বাংলা ছবি হচ্ছে, অনেক ধরণের বাংলা ছবি হচ্ছে
যার মধ্যে সমাজটা উঠে আসে, ইতিহাস উঠে আসে, সকালীনতা উঠে আসে, সম্পর্কটা উঠে আসে।
ভাষাটা জন্ম নেয় ‘তোমাকে বলতে চাওয়া আমার কথা থেকে’
এই কথাটা উঠে আসে ভেতরের চিন্তা থেকে
চিন্তা কারও গভীর হতে পারে, অগভীরও হতে পারে
কিন্তু কথার স্বচ্ছতা গভীর আর অগভীরতার ওপর নির্ভর করে না
তা নির্ভর করে আমি যা বলতে চাইছি
সেই বোধ থেকে।
এদিক থেকে আপনি যে শব্দটি বললেন
সচেতনতা- তা গুরুত্বপূর্ণ।
আমি যা বলছি, তা দায়িত্ব নিয়ে বলছি কি না
সেই বোধ থেকে।
সেখানে ‘আমি’র সমান গুরুত্বপূর্ণ ‘তুমি বা আপনি’-
তাকে যখন আমি সন্মান করবো, গুরুত্ব দেবো
তাকে বলা কথা তখন সুন্দর হয়ে উঠবে-
কিন্তু তা যদি না হয়
আপনি যা বলছিলেন
আমরা আর কারও কথা শুনি না
তখন কাকে বলছি তিনিও মুছে যেতে থাকেন
আর আমিও তার সামনে মুছে যেতে থাকি
আর প্রত্যেকে হয়ে উঠি একেকজন সেই ‘ছোট্ট রাজকুমার।’
আপনি খুব সুন্দরভাবে আমাদের মৌলিক বাস্তবতার কথা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন।
আমাদের সমাজ নেই।
আমরা সবাই রাজা- আমাদেরই রাজার রাজত্বে
গানটার মূলভাব মুছে দিয়ে
রাজত্বটাকে একলার পৃথিবী ভেবে নিয়েছি।
শব্দরা কখনো অর্থ হারায় না। যোগ্য জনের হাতে পড়লে শব্দ নতুন নতুন অর্থে ভূষিত হয়-
আসলেই তাই।
এই যোগ্যজন আসলে অনুভূতিশীল সচেতন মানুষ।
ভাল মন্দের সাথে সম্পর্ক নেই তার, সেকথা বলবো না
কারণ, ঐ যে লালন গেয়েছিলেন
‘পাপ-পূণ্যের কথা আমি কারে বা শুধাই’-
গানটিতো আমরা বুঝিই।
কিন্তু না কি বুঝি বলে ভাবি?
লালনের শিক্ষায় এই গানটির অর্থ পুরোপুরি বোঝা যাবে না
যদি না ঐ গানটি আমরা ভুলে যাই-
‘এমন মানব জনম আর কি হবে।
মন যা কর ত্বরায় কর এই ভবে।।
অনন্ত রূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই
শুনি মানবরূপের উত্তম কিছুই নাই।
দেব দেবতাগণ করে আরাধন
জন্ম নিতে মানবে।।’
বাউল সাধকদের কাছে একটি প্রশ্ন শুনেছি
: তুমি কি তোমাকে নিজের চোখে দেখতে পাও? পাওনাতো।। তো কাকে দেখতে পাও?।।। অন্যকে। তাহলে তুমি তোমাকে দেখবে কোথায়? ।।। অন্যর চোখে। অন্যর চোখে তাকালে তুমি তোমাকে দেখতে পাবে। তার দিকে তাকালে তুমি তোমাকে দেখবে।
বিষয়টা আপনি যা বলেছেন, তাই। আমরা আমার মধ্যে আটকে গেছি।
নিজের নিজের গ্রহাণুতে আটকে যাওয়া
আমরা সবাই সেই ছোট্ট রাজকুমার।।।
“আমাদের অবস্থা ‘ছোট্ট রাজকুমার’-এর ঐ ছোট গ্রহাণুর রাজাটার মতো যার কোনো প্রজা নেই, রাজ্যভার নেই, শাসন নেই – তবু সে রাজা!”
এক লহমায় যা মনে হলো লিখে গেলাম।
(বিষয়ের বাইরে গিয়ে আপনার অনুমতি কল্পনায় নিয়ে নিয়ে
সচলায়তনে ‘এক লহমা’ নামে যিনি লেখেন তাকে একটি জানিয়ে রাখি
আপনার নামটি আমায় আটকে দেয়, কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখে, নামটা দেখি-)
তবে আমি আশাহত নই। ইতিহাসে তো আপনার কথারই প্রতিধ্বনি দেখি-
“শব্দরা কখনো অর্থ হারায় না।
যোগ্য জনের হাতে পড়লে শব্দ নতুন নতুন অর্থে ভূষিত হয়।”
আর ইতিহাস সমকালীনতা পেরিয়ে আগামীতেও বিরাজমান।
পোস্ট এবং আলোচনা দুটোই উপভোগ করেছি। প্রমিত উচ্চারণের বিষয়ে আলাদা পোস্ট হলে ভালো হতো। সংক্ষেপে নিজের পয়েন্টগুলো দিলাম:
১. আপনার শেষ প্রশ্নের যে উত্তরটা আমার জানা সেটার কথা বলি। আপনি যেটাকে সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, আমার পর্যবেক্ষণে সেটাকে কেউ সমস্যা বলে মনে করে না। আঠারো কোটির কথা জানা নেই। কিন্তু আমার এই বয়সে যে কয়েক হাজার লোকের সাথে আলাপ পরিচয় হয়েছে তার ভিত্তিতে বলছি। যেহেতু এটাকে কেউ সমস্যা বলে মনে করছে না, এটার সমাধানের কোন তাগিদ নেই।
২. শিশুদের মুখে একটা অভিযোগ প্রায়ই শুনি, ওদের অনেক শিক্ষক শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে না। কোচিং এবং বিদ্যালয় দুই জায়গাতেই। সুতরাং এটা খুব স্পষ্ট যে আমাদের গোড়াতেই বড় ধরণের গলদ রয়ে গেছে। যারা শেখাবে, তাদেরকে আগে শিক্ষিত করতে হবে।
৩. আমাদের বাসায় অনুর্ধ পনেরো বাচ্চারা একটা খেলা খেলে, পাঁচ মিনিট কোন ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু মিনিটের মধ্যে ফেল করে সবাই। আমার ধারণা বড়রা আরো আগেই ফেল করবে।
৪. এটা একটা জাতীয় মানসগত সমস্যা। জিপিএ-৫ যখন আপনার মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় তখন কে আর বাংলা উচ্চারণ শেখার জন্য সময় নষ্ট করবে? জিপিএ-৫ পেতে তো ভালো বাংলা জানার দরকার হয় না।
আমার ধারণা এই বিষয়ে সরকারের যেমন দায় আছে, আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত দায় কম না। জাতি তো আমাদের নিয়েই গঠিত।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ১, ২ ও ৪-এ আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে আমি একমত।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমরা কে? আমরা কি চাই? আমরা দেশ / জাতি হিসাবে আমাদের কালেক্টিভ ভবিষ্যতে নিজেদের ঠিক কোথায় দেখতে চাই? এ বিষয়ে আমাদের কালেক্টিভ ভিশন কি? এই যে "আমরা" বললাম, এরকম কোনো একক বা একচ্ছত্র "আমরা" কি সত্যি বাস্তবে আছে এই ভুখণ্ডে???
আপনার লেখাটা পড়ার পর বিদ্যমান বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে (বা না মিলিয়েও শুধু আপনার লেখা পড়েই) প্রথমেই এই প্রশ্নগুলি মাথায় আসে। নিছক ভাষা-সমস্যা বা ভাষাশিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা বা প্রশ্নের চেয়ে এগুলি অনেক অনেক বড় ও মৌলিক প্রশ্ন এই দেশের জন্য। কেউ কেউ বলবেন এইসব প্রশ্নের সমাধান হয়েই গেছে চূড়ান্তভাবে অনেক আগেই। আমি বলব - না, হয়নি! হলে আপনি এই লেখাটা ঠিক এভাবে লিখতেন না বা লিখতে পারতেন না। সমাধান যে হয়নি, আপনার লেখাটাই তার প্রমাণ।
কিন্তু, আপনি সমস্যাটা অনেক বেশি বড় ফ্রেমে ধরে ফেলেছেন, ফলে এটা এখন আর নিছক ভাষা বা ভাষা-শিক্ষাতে সীমাবদ্ধ নাই, বরং আমাদের একদম মৌলিক জাতীয় প্রশ্ন / সমস্যাগুলি উঠে আসে এখানে যেগুলির সমাধান না করা পর্যন্ত আপনি যেভাবে ভাষা সমস্যাটা উপস্থাপণ করেছেন সেটা সমাধান করা সম্ভব না। এভাবে দেখলে আপনার লেখাটা আসলে ভাষা নিয়েই না!! সুতরাং আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কি নিয়ে লিখতে চান - মৌলিক জাতীয় সমস্যা / প্রশ্ন নিয়ে নাকি ভাষা-শিক্ষা নিয়ে। ভাষা নিয়ে লিখতে চাইলে পুরো বিষয়টাকে ছোট ছোট যথাসম্ভব স্বাধীন অংশে ব্রেকডাউন / কম্পার্টমেন্টালাইজ করতে হবে। তারপর ভাষা বা ভাষা-শিক্ষার কম্পার্টমেন্টটার উপর ফোকাস করে সেটা নিয়েই লিখতে হবে, সমাধানের সন্ধান শুরু করতে হবে। প্রয়োজনমত একটু-একটু করে আলোচনা বা প্রব্লেম স্টেটমেন্টের পরিধি বাড়ানো যেতে পারে। নয়তো শুরুর আগেই সব প্যারালাইজড বা দিশেহারা হয়ে যাবে। আবার উলটো প্রান্ত থেকে, অর্থাৎ "বিগ-পিকচার" দিয়েও শুরু করা যায়। আমি শুরুতে যেভাবে বলেছি। তবে সেক্ষেত্রে বিগ-পিকচারকে বিগ-পিকচারের মতই ট্রিট করতে হবে - বিগ লেভেলে তার সাথে সংশ্লিষ্ট বা সম্পর্কিত সবগুলি বিষয়বস্তু আগে আলোচনা করতে ও সমাধান খুঁজতে হবে। সরাসরি, দ্ব্যর্থহীণ পরিষ্কার ভাষায়।
এবং এই বিগ-পিকচারের বিগ-সমস্যার সমাধান আগে না পেলে আপনি যেভাবে "ভাষা-সমস্যাটা" সন্নিবেশ ও উপস্থাপণ করেছেন তাতে করে একে কেউ "সমস্যা" হিসাবে চিহ্নিত করা দূরে থাকুক, এমনকি এর "অস্তিত্ত্বই" স্বীকার করবে না। সুতরাং ভাষা-সমস্যা না, আগে আপনি যেসব বিগ-পিকচার সমস্যাগুলি আপনার নিজের লেখাতেই ইমপ্লিসিটলি উত্থাপণ করেছেন সেসবের সমাধানই আগে বের করতে হবে (যদি এগুলির অস্তিত্ব আপনি নিজেই স্বীকার করেন আরকি) ভাষা-সমস্যার আগে। ভাষা-শিক্ষা সমস্যা এইসব বড় প্রশ্নের তুলনায় একেবারেই সেকেন্ডারি।
****************************************
একটি বিকশিত পুঁজিবাদী বিশ্বে অথবা একটা উত্তরাধুনিক জগতে ‘কালেক্টিভ ভিশন’, ‘কালেক্টিভ ফিউচার’, ‘কালেক্টিভ গোল/ডেস্টিনেশন’, ‘উই’ – এই টার্মগুলো কি আর বিশেষ অর্থ বহন করে? অথবা এগুলো কি আর বাস্তবোচিত আছে? এভাবে জটিল করে যদি না ভাবি, যেদিন থেকে মানুষ পশু, ফসলের জমি, বাগান, বন, জলা, যৌনসঙ্গী, সন্তান নিজের আর অন্যের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিল সেদিন থেকেই কি ‘যৌথ’ বিষয়টার সমাপ্তি ঘটেনি! যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো টিকে আছে সেটা কিছুটা সার্বিকভাবে মনুষ্যসমাজের টিকে থাকার একটা তাগিদে, কিছুটা শোষণকে ফেসিলিটেট করার জন্য। এই টিকে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোই আমাদের সামনে একটা বিভ্রম তৈরি করে। আমরা বিভ্রান্ত হই – ভাবি তাহলে ‘আমরা’ কি এখনো টিকে আছে?
ভাষার ব্যবধান বা পার্থক্যগুলো তৈরিই করা হয় শোষণকে কায়েম রাখার জন্য। একারণে ফার্সী বা ইংলিশ না জানা ভারতীয়দের দাপ্তরিক ভাষা হাজার বছরেও ঐগুলোই থেকে যায়। একই প্রকার কারণে সাধারণের বোধের অগম্য দেবভাষা সৃষ্টি করা হয় পুরোহিততন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য।
বিদ্যমান সভ্যতায় মূক থাকার কোনো উপায় নেই, তাই ভাষা, ভাষা শিক্ষা বিষয়গুলোকে জীবনের আর দশটা বিষয় থেকে আলাদা করার উপায় নেই। মানুষের জীবনের যে কোন বিষয়ের আলোচনায় ceteris paribus কথাটাই অর্থহীন। তবু আলোচনার সুবিধার্থে আমরা একটি সমস্যাকে single out করার চেষ্টা করি। আমার চেষ্টাটা ঐ রকমই।
একটি ভাষাকে আমরা মাতৃভাষা বলে স্বীকার করলাম, তাকে কাগজে-কলমে দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দিলাম, অন্য কোনো ভাষা বিশেষ শিখলাম না – এর পরে দেখা গেলো ঐ মাতৃভাষাটাও আসলে আমরা ঠিকমতো পারি না।
কেন পারি না? কেন শেখানো হলো না? কাদের পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র? – হ্যাঁ, আমি এই আলোচনাগুলোতে যাইনি। এগুলো নিয়ে আলোচনা না করলে এবং এগুলো নিরাময় না করলে সমস্যাটির সমাধান হবে না।
আমি আসলে এই পরিসরে ঐ বিষয়গুলোর আলোচনাটাকেও উসকে দিতে চাইনি। আমি শুধু চেয়েছি আমরা যে আসলে বাংলা ভাষা পারি না – এই কথাটা স্বীকার করাতে, এবং এটি যে একটি সমস্যা সেকথা স্বীকার করাতে।
এই ব্যাপারটি আখেরে কার্যকারণগুলোর দিকেও মনোযোগ ফেরাবে।
আমি মনে করি প্রতিষ্ঠানসমূহ ও তাদের পরিচালকদের লুটেরা চরিত্রটি না পাল্টালে, বিদ্যমান নব্য-ঔপনিবেশিক, আধা-সামন্তবাদী, মধ্যসত্ত্বভোগী ব্যবস্থাটি উপড়ে না ফেললে গণতান্ত্রিক বিকাশ সম্ভব না। ব্যক্তি মানসের উন্নতি, টেকসই উন্নয়ন, এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থসংরক্ষণের জন্য যে কৌশলগত যুথবদ্ধতা ও মানবতার চর্চ্চা হয় সেটি সম্ভব হবে না।
ওসব সম্ভব হলে ভাষার সমস্যাটির সমাধান যথানিয়মে হয়ে যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
টিকটক ছাড়া ইংরেজি শব্দ বা হালের হিন্দি বাক্যগঠনের অনুকরণে বাংলা পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমি ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরের কথা বলতে পারবো। এখানে ইংরেজি চলে। বাংলা নয়। সব চুক্তিপত্র ইংরেজি, সব লিখিত যোগাযোগ ইংরেজি। এখানে একটা আলোচনা না হওয়া সমস্যা হলো এতো ইংরেজি চুষেও কর্মকর্তারা ইংরেজির জাহাজ একথা বলা যাবে না। অধিকাংশ একটা মেইল ঠিকমতো শুদ্ধ করে লিখতে পারেন না। বিনিয়োগ প্রস্তাব, বিনিয়োগ যাচাই এগুলোও শুদ্ধভাবে ইংরেজিতে লিখতে পারবেন এরকম লোকবলের অভাব রয়েছে। এই জিনিসগুলো বাংলায় হলে অন্তত সংশ্লিষ্টরা সেগুলো পড়ে তুলনামূলকভাবে ভালো বুঝতে পারতেন এবং সেইমতো যোগাযোগ করতে পারতেন। এগুলো যেহেতু হচ্ছে না সেহেতু এই অদক্ষতার প্রভাব পড়ছে উৎপাদনে।
এখানে দুটো নোক্তা রাখি। দেশে কয়েক বছর ধরে র আর ড়-য়ের মহামারি চলছে। নতুন উৎপাত হিন্দির অনুকরণে এখন সবাই সব কিছু "করে"। যেমন কেউ এখন খেলে না, খেলা করে। এভাবে লোকে এখন খায় না, খাওয়া করে, ভোট করে, হাসি করে, কান্না করে। এগুলো নিয়ে কিছু বলতে গেলে আক্রমণের শিকার হতে হয়।
অবস্থা এরকম যে এক পাতা শুদ্ধ করে যেকোন ভাষায় লিখতে বা বলতে পারবে এরকম কাউকে চোখে পড়ে না। অবস্থার পরিবর্তনের জন্য উপদেশ চাইতে আসা বাঙালিদের আমি এই দুটো ক্ষেত্রে উন্নতি করতে বলি। যে মানুষ সুন্দর করে কথা বলতে পারা এবং লিখতে পারার মতো বিরল গুনের অধিকারী, তাকে কেউ আটকাতে পারবে না।
সমস্যা হলো এই উপদেশ কেউ শোনে না। তারা এটা না শুনে অন্য কিছু শুনছে এরকমটাও না। আসলে কোন কিছুর পেছনে মনোসংযোগ করে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে কিছু শেখা -- এই জিনিসই নেই। এই কারণে দুই বার পড়া যায় এরকম বই খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন রেওয়াজ করা গায়ক, বা প্রতিদিন নিয়ম করে বাদ্যযন্ত্র সাধক পাওয়া কঠিন। সারাজীবন নিজের খামতিগুলোর উন্নতি করে কাটিয়ে দেয়া যায় -- এই উপলদ্ধি ছাড়া কোন কিছুতেই ভালো করা এবং সেই ভালোটার অগ্রগতি ধরে রাখা সম্ভব না। এটা শুধু ভাষা নয়, পেশাগত দক্ষতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অদরকারী বিদেশী শব্দের ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে হয়তো মানা যায়, কিন্তু ভীন ভাষার অনুকরণে বাক্যগঠন, ক্রিয়াপদ পরিবর্তন খুব আশঙ্কার বিষয়। এটি এই পর্যায়ে রাশ টেনে ধরা না গেলে ভবিষ্যতে কপালে যথেষ্ট খারাবী আছে।
হ্যাঁ, বাংলায় কাজ করে এমন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান মনে হয় পাওয়া যাবে না। খুব কম সফটওয়্যার বা অ্যাপ পাওয়া যাবে যেখানে বাংলায় ১, ২, ৩, ৪ …. ইত্যাদি লিখে হিসেব করা যাবে।
প্রায় সব বিশেষায়িত শিক্ষা এবং পেশাগত চর্চ্চা ইংলিশে হয়। এগুলো পরিবর্তন করার জন্য রাষ্ট্রীয় মহাউদ্যোগ লাগবে। তারও আগে, এগুলো যে পরিবর্তন করতে হবে সেই কথাটা মানতে হবে।
সত্য কথাটা হচ্ছে এই যে, এতো করেও দেশে ইংলিশ জানা মানুষের সংখ্যা খুব কম। ইংলিশ যত জন ‘লিখিতে পারেন’ তার চেয়ে কম জন ‘পড়িতে পারেন’। তারও চেয়ে ঢেড় কম জন ‘বলিতে পারেন’। এবং তারও চেয়ে ঢেড় ঢেড় কম জন ‘শুনিয়া পুরোপুরি বুঝিতে পারেন’। আমাদের বাংলা শিক্ষায় যে সব গলদ আছে, ইংলিশ আরবী ইত্যাদি ভাষা শিক্ষায়ও সেসব গলদ আছে।
এটা এখন ঘোরতর বাস্তব, এবং এই বাস্তবতাটা আমাদের আলোচনায় নেই। অচিরে এটা যে কি ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে সেটা কেউ বুঝতে চাইছেন না।
সুন্দর করে কথা বলতে পারা যে একটি গুণ সেটা বড় অংশ মানুষ মানেন না (শিক্ষিত জনেরাসহ)। ফলে তারা সুন্দর করে কথা বলা মানুষকে ভাণসর্বস্ব মনে করেন। তার বক্তব্যকে কৃত্রিম মনে করেন।
এটা একটা বাঁধিয়ে রাখার মতো কথা বলেছেন। এখন সবাই রাতারাতি তারকা হতে চান। এক লাফে মগডালে উঠে যেতে চান। পরিশ্রম, সাধনা, একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা, নিয়মিত চর্চ্চা, নিয়মিত শিক্ষণ এগুলোর ব্যাপারে কারো আগ্রহ নেই। ফলে ভালো কিছু পেতে গেলে সব সেক্টরেই পেশাদার ও গুণী মানুষের যে চাহিদা আছে সেটা মেটানোর জন্য বাইরে হাত পাততে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন