ঘরের মানুষের খোঁজখবর

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: শনি, ১৯/১১/২০২২ - ৪:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের ‘বাঙালী’ ভিন্ন অন্য জাতির মানুষদের ব্যাপারে একটু খোঁজ করার চেষ্টা করলাম। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী তাঁদের সংখ্যা ১,৬৫০,১৫৯ জন (৮২৪,৭৫১ জন পুরুষ ও ৮২৫,৪০৮ জন নারী) । বেসরকারি দাবি অনুযায়ী সংখ্যাটি ৩,০০০,০০০-এর অধিক, কিন্তু এই দাবির সপক্ষে কোন শুমারির সন্ধান পাইনি। ২০২১ সালের গেজেট অনুসারে তাঁদের জাতির সংখ্যা ৫০, যদিও সরকার ‘জাতি’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে। আমি তাঁদেরকে ‘জাতি’ হিসাবে চিহ্নিত করাকে যৌক্তিক মনে করি এবং তাঁদেরকে ‘উপজাতি’/’জনজাতি’/’আদিবাসী’ হিসাবে চিহ্নিত করার বিপক্ষে। যেহেতু এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত, এখানে কারো একমত হবার দায় নেই।

আমি সরকারি হিসাবের বাইরেও যেসব জাতির মানুষ আছেন তাঁদের জাতির নামও উল্লেখ করলাম। সরকারি হিসাবে তাঁরা হয়তো অন্য কোন কোন জাতির অন্তর্ভুক্ত হিসাবে গণ্য হয়ে গেছেন। সে ব্যাপারে আমার অনুমিতি নোট হিসাবে দিলাম। আমি জাতির নাম, তাঁদের ভাষা, ভাষাটি কোন পরিবারের তার নাম, এবং ঐ জাতির অধিকাংশ জনের অনুসৃত ধর্মের নামের একটি তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করেছি। ওয়েবে টেবিল বানানোর কায়দা আমার জানা নেই, তাই এস এম মাহবুব মুর্শেদের নির্দেশনা অনুসরণ করে কিছু একটা বানিয়ে তালিকাটি দিলাম। নিঃসন্দেহে এই তালিকায় অনেক ভুল তথ্য আছে, বানান ভুল আছে, এবং অনেক তথ্য নেই। তালিকাটি সংশোধন ও তাতে অনুল্লেখিত তথ্য সংযোজনে সাহায্য করার জন্য সবাইকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

জাতি বা ভাষার নামের ব্যাপারে একটি ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন বোধ করছি। কিছু জাতি আছে যারা একাধিক নামে পরিচিত, একইভাবে কিছু ভাষা আছে যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। স্বাভাবিকভাবে প্রায় প্রত্যেকটি ভাষার অনেকগুলো করে ডায়ালেক্ট আছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। সকল ক্ষেত্রে আমি কেবল প্রতিনিধিত্বমূলক একটি নাম নিয়েছি। এটি শুধুমাত্র এই লেখার সুবিধার্থে করা।

অনেক জাতির নিজস্ব ভাষা ছিল, কিন্তু এখন তাঁদের কেউ আর সেই ভাষা জানেন না, অথবা হাতেগোনা কয়েক জন অল্পস্বল্প সেটা পারেন কিন্তু তার চর্চ্চা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের ভাষা ‘বাংলা’ হয়ে গেছে।

বেশিরভাগ জাতির নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল। সেসবের কোন কোনটা হিন্দু/সনাতন ধর্ম বা তার কোন স্কুলের সাথে মিশে গেছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। এর ভালো উদাহরণ হচ্ছে, মণিপুরীদের ধর্ম বিশ্বাস। আমি এই প্রকার গ্রুপকে ‘হিন্দু’ হিসাবে দেখিয়েছি। অনেক জাতির অধিকাংশ মানুষ নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস ছেড়ে খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছেন। আমি এই প্রকার গ্রুপকে ‘খ্রীস্ট ধর্মের অনুসারী’ হিসাবে দেখিয়েছি। এই ব্যাপারগুলো অতি সরলীকরণ হল, বিশেষত হিন্দু ধর্মের ব্যাপারটি। বৈবাহিক কারণে বা ব্যক্তিগত পছন্দে তাঁদের কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছেন বটে, তবে সেটা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা মাত্র। এসকল জাতির অনেকের ক্ষেত্রে গণহারে খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি ভিন্ন আলোচনার দাবি রাখে।

এই লেখায় যা কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে সেসব আমার অজ্ঞতার ফল। কোন তথ্য বা বর্ণনা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তিত বা বিকৃত করা হয়নি। আমার অজ্ঞতাজনিত ত্রুটির জন্য সকলের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

ক্রমিক ভাষা পরিবার ভাষা জাতি ধর্ম ২০২১-গেজেটে অন্তর্ভুক্তি নোট
01. অস্ট্রো-এশীয় ওয়ার-জৈন্তা ওয়ার-খাসি খ্রীস্ট না (১)
02. অস্ট্রো-এশীয় খাসি খাসি খ্রীস্ট হ্যাঁ (১)
03. অস্ট্রো-এশীয় প্নার জৈন্তা নিজস্ব না (১)
04. অস্ট্রো-এশীয় লিঙ্গাম লিঙ্গাম খ্রীস্ট না (১)
05. অস্ট্রো-এশীয় কোড়া কোড়া নিজস্ব হ্যাঁ --
06. অস্ট্রো-এশীয় কোল কোল হিন্দু হ্যাঁ --
07. অস্ট্রো-এশীয় খাড়িয়া খাড়িয়া হিন্দু হ্যাঁ --
08. অস্ট্রো-এশীয় মুন্ডারি খারওয়ার হিন্দু হ্যাঁ --
09. অস্ট্রো-এশীয় মুন্ডারি ভূমিজ হিন্দু হ্যাঁ --
10. অস্ট্রো-এশীয় মাহালী মাহালী খ্রীস্ট হ্যাঁ --
11. অস্ট্রো-এশীয় মুন্ডারি মুন্ডা খ্রীস্ট হ্যাঁ --
12. অস্ট্রো-এশীয় সাঁওতালী সাঁওতাল খ্রীস্ট হ্যাঁ --
13. অস্ট্রো-এশীয় হো হো খ্রীস্ট হ্যাঁ --
14. ইন্দো-ইউরোপীয় অহমীয়া অহমীয়া হিন্দু না (২)
15. ইন্দো-ইউরোপীয় বিহারী বিহারী ইসলাম না (২)
16. ইন্দো-ইউরোপীয় রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা ইসলাম না (২)
17. ইন্দো-ইউরোপীয় বিষ্ণুপ্রিয়া/ ইমার ঠার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী হিন্দু হ্যাঁ (৩)
18. ইন্দো-ইউরোপীয় রাজবংশী রাজবংশী খ্রীস্ট না (৪)
19. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা সূর্যবংশী হিন্দু না (৫)
20. ইন্দো-ইউরোপীয় কন্দফারসি কন্দ হিন্দু হ্যাঁ --
21. ইন্দো-ইউরোপীয় সাদরি গঞ্জু হিন্দু হ্যাঁ --
22. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা গড়াইত হিন্দু হ্যাঁ --
23. ইন্দো-ইউরোপীয় নেপালী গুর্খা হিন্দু হ্যাঁ --
24. ইন্দো-ইউরোপীয় চাকমা/ চাঙমা চাকমা/চাঙমা বৌদ্ধ হ্যাঁ --
25. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা ডালু হিন্দু হ্যাঁ --
26. ইন্দো-ইউরোপীয় তঞ্চ্যঙ্গা তঞ্চ্যঙ্গা বৌদ্ধ হ্যাঁ --
27. ইন্দো-ইউরোপীয় তুরি তুরি হিন্দু হ্যাঁ --
28. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা তেলী হিন্দু হ্যাঁ --
29. ইন্দো-ইউরোপীয় লালেং ঠার পাত্র হিন্দু হ্যাঁ --
30. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা বড়াইক হিন্দু হ্যাঁ --
31. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা বাগদী হিন্দু হ্যাঁ --
32. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা বানাই হিন্দু হ্যাঁ --
33. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা বেদিয়া হিন্দু হ্যাঁ --
34. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা ভীল হিন্দু হ্যাঁ --
35. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা ভূঁইমালী হিন্দু হ্যাঁ --
36. ইন্দো-ইউরোপীয় মালপাহাড়ি মালপাহাড়ি হিন্দু হ্যাঁ --
37. ইন্দো-ইউরোপীয় সাদরি মালো খ্রীস্ট হ্যাঁ --
38. ইন্দো-ইউরোপীয় কুড়মালি মাহাতো হিন্দু হ্যাঁ --
39. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা মুসহর হিন্দু হ্যাঁ --
40. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা রাজোয়ার হিন্দু হ্যাঁ --
41. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা লোহার হিন্দু হ্যাঁ --
42. ইন্দো-ইউরোপীয় লোধি শবর হিন্দু হ্যাঁ --
43. ইন্দো-ইউরোপীয় হাজঙ হাজঙ খ্রীস্ট হ্যাঁ --
44. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা হুদি হিন্দু হ্যাঁ --
45. চীনা-তিব্বতী বর্মী বর্মী বৌদ্ধ না (২)
46. চীনা-তিব্বতী মৈতৈ পাঙ্গাল মণিপুরী ইসলাম হ্যাঁ (৩)
47. চীনা-তিব্বতী মৈতৈ মৈতৈ মণিপুরী হিন্দু হ্যাঁ (৩)
48. চীনা-তিব্বতী আ'তঙ কোচ খ্রীস্ট হ্যাঁ (৪)
49. চীনা-তিব্বতী কুকি কুকি খ্রীস্ট না (৬)
50. চীনা-তিব্বতী দারলং দারলং খ্রীস্ট না (৬)
51. চীনা-তিব্বতী ফালাম চিন্‌ ফালাম খ্রীস্ট না (৬)
52. চীনা-তিব্বতী শেন্দু মারা খ্রীস্ট না (৬)
53. চীনা-তিব্বতী মিজো লুসাই খ্রীস্ট হ্যাঁ (৬)
54. চীনা-তিব্বতী হাকা চিন্‌ হাকা চিন্‌ খ্রীস্ট না (৬)
55. চীনা-তিব্বতী কোচ কোচ খ্রীস্ট না (৪)
56. চীনা-তিব্বতী মান্দি/আচিক গারো/মান্দি খ্রীস্ট হ্যাঁ (৭)
57. চীনা-তিব্বতী ককবরক ত্রিপুরা হিন্দু হ্যাঁ (৮)
58. চীনা-তিব্বতী রিয়াং রিয়াং হিন্দু না (৮)
59. চীনা-তিব্বতী আসো চিন্‌ খিয়াং খ্রীস্ট হ্যাঁ --
60. চীনা-তিব্বতী খুমি চিন্‌ খুমি নিজস্ব হ্যাঁ --
61. চীনা-তিব্বতী মেগাম গারো খ্রীস্ট হ্যাঁ --
62. চীনা-তিব্বতী চাক চাক বৌদ্ধ হ্যাঁ --
63. চীনা-তিব্বতী পাঙ্খো পাঙ্খো বৌদ্ধ হ্যাঁ --
64. চীনা-তিব্বতী বম চিন্‌ বম্‌ খ্রীস্ট হ্যাঁ --
65. চীনা-তিব্বতী ডিমাসা বর্মণ হিন্দু হ্যাঁ --
66. চীনা-তিব্বতী মার্মা মার্মা বৌদ্ধ হ্যাঁ --
67. চীনা-তিব্বতী ম্রো ম্রো নিজস্ব হ্যাঁ --
68. চীনা-তিব্বতী রাখাইন রাখাইন বৌদ্ধ হ্যাঁ --
69. দ্রাবিড় কুরুখ ওঁরাও খ্রীস্ট হ্যাঁ --
70. অজ্ঞাত অজ্ঞাত পালিয়া হিন্দু না (৯)
71. অজ্ঞাত অজ্ঞাত লাওরা ইসলাম না (৯)

নোটঃ

(১) = সম্ভবতঃ খাসি জাতিতে অন্তর্ভুক্ত।
(২) = এরা মূলত বিদেশী।
(৩) = সম্ভবতঃ মণিপুরী জাতিতে অন্তর্ভুক্ত।
(৪) = সম্ভবতঃ কোচ জাতিতে অন্তর্ভুক্ত।
(৫) = অতি ক্ষুদ্র জনগোঠী। কেবলমাত্র টাঙ্গাইল জেলার মহানন্দপুর এবং দন্দোনিয়া নামে পাশাপাশি দুইটি গ্রামের বসবাস করেন।
(৬) = সম্ভবতঃ লুসাই জাতিতে অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা অন্যত্র কুকি/চিন/মিজো নামে পরিচিত।
(৭) = সম্ভবতঃ গারো জাতিতে অন্তর্ভুক্ত।
(৮) = সম্ভবতঃ ত্রিপুরা জাতিতে অন্তর্ভুক্ত।
(৯) = যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নাই।

এই পোস্টটি পাঠকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের আশায় দেয়া তাই কোন বিষয়ে আলোচনা করলাম না। আশা করি যারা জানেন তাঁরা এই ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন। কোন তথ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে, অর্থাৎ কেবল অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কোন কিছু না বলার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।


মন্তব্য

সচল জাহিদ এর ছবি

প্রয়োজনীয় একটা পোষ্ট!


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কঠিন নমস্য একটা কাজ করেছেন। এতগুলো জাতিগোষ্ঠির অর্ধেকের নামও জানি না আমি। এদের মধ্যে কতটি টিকে আছে কে জানে? তবে এই তালিকায় আরো দুটো জাতিগোষ্ঠির নাম অন্তর্ভুক্ত করা যায় হাওলং এবং সাইলু। শেন্দুদের মতো এরাও কুকি বা লুসাই নামে পরিচিত ছিল। এরা মূলত মিজোরামের অধিবাসী। আমি জানি না এই জাতিগোষ্ঠিগুলো বর্তমানে টিকে আছে কিনা। থমাস হারবার্ট লুইনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কুকি নামে আলাদা কোন জাতিগোষ্ঠি নেই। এটা বাঙালীদের দেয়া নাম। শেন্দু, হাওলং, সাইলু এই স্বাধীন জাতিগুলোকে সাধারণভাবে কুকি বলে ডাকা হতো। অবশ্য এই বিষয়ে আরো গবেষণা করার অবকাশ আছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কাজটা খুব কঠিন না, তবে তথ্য পাওয়া কঠিন। প্রাপ্ত 'তথ্য' যাচাই-বাছাই করা আরও কঠিন। আমার প্রদত্ত তালিকার লোকজন এখনো টিকে আছেন। এর বাইরের অনেকে হারিয়ে গেছেন। তাঁদের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব।

হাওলং আর সাইলুদের ব্যাপারে আমি কোন কিছু খুঁজে পাইনি। আপনার জানা থাকলে তাঁদের ভাষার নাম, অবস্থান, ধর্ম ইত্যাদি ব্যাপারে আমাদেরকে আরও জানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমার খোঁজ করতে সুবিধা হবে।

লুসাই/মিজো/কুকি/চিন্‌/দারলং/ফালাম/শেন্দু/হাকা এঁদের মধ্যে কাদেরকে আলাদা জাতি হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে সেটা অবশ্যই গবেষণার বিষয়। আজকাল বাংলাদেশে 'কুকি-চিন্‌' নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনও গড়ে উঠেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

হাওলং আর সাইলুদের ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য জানা নেই। পেলে জানাবো নিশ্চয়ই। আপনার দিক থেকে যদি কোন সূত্র মেলে সেটাও জানতে চাই। আমি হারবার্ট লুইনের ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত 'ফ্লাই অন দ্য হুইল' পড়তে গিয়ে লুসাই যুদ্ধের বিবরণে এই জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে পড়েছিলাম। উনিশ শতকের লুসাই যুদ্ধে ওরা ছিল বৃটিশদের প্রধান প্রতিপক্ষ। আসামের কাছাড় জেলা থেকে দক্ষিণের আরাকানী সীমান্ত পর্যন্ত ওদের বিচরণ ছিল। তাদেরকে দমন করার জন্যই লুসাই যুদ্ধের আয়োজন করা হয়েছিল। লুইন প্রাথমিক পর্যায়ে তাদেরকে বর্বর জাতি হিসেবে চিহ্নিত করেও পরবর্তীকালে তাদের সাথে আপোষ হবার পর মেলামেশা করে তাঁর ধারণা পাল্টে গিয়েছিল। তিনি তাদেরকে সমগ্র পাহাড়ী জাতিগোষ্ঠির মধ্যে উন্নত সংস্কৃতির মানুষ বলে অভিমত দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে চলে যান। আর কিছু জানা যায়নি। বর্তমান মিজোরামে তাদের অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা নিশ্চিত নই। এই বিষয়ে ভারতীয় গবেষকদের কাছে তথ্য থাকার কথা। কিন্তু ওদিকে আমার সেরকম কারো সাথে জানাশোনা নেই।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মন মাঝি এর ছবি

কিছু প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। আপনার জানা থাকলে এবং আমার ধন্দটা দূর করতে পারলে খুব খুশী হতামঃ

১। রাজবংশী ঠিক কারা এবং এটা কোন ভাষা? এটা কি বাংলার একটা ডায়ালেক্ট নাকি আলাদা ভাষা? রাজবংশী, রংপুরি, আসামের গোলপারিয়ার ভাষা কি এক নাকি ভিন্ন ভিন্ন? এই প্রসঙ্গে আমার বেশ খানিকটা কনফিউশান আছে, তাই জানতে চাইছিলাম। কৌতুহলটা শুরু হয়েছিল ইউটিউবে কোক স্টুডিও ইন্ডিয়ার চ্যানেলে "সুন্দরী কমলা" গানটা নিয়ে কমেন্ট সেকশনে ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক-ঝগড়াঝাটি দেখে। গানের ডেস্ক্রিপশনে এবং অনেকে এটাকে "বাংলা" গান বলে উল্লেখ করায় তর্কের সূত্রপাত হয় কারন ব্যাপক সংখ্যক অহমীয়রা এসে প্রতিবাদ করে বলতে থাকেন এটা আসলে আসামের গোলপারিয়ার ভাষা, বাংলা না। বলাই বাহুল্য, বাঙালীরাও এই দাবী প্রত্যাখ্যান করে তর্ক করতে থাকেন। তাদের অনেকের মতে এটা মৈমনসিংহ অঞ্চলের গান। বাংলাই। আমি যতটুকু বুঝেছি, এটা অরিজিনালি বোধহয় রাজবংশী ভাষার / ডায়ালেক্টের / কমিউনিটির গান - যার সাথে বাংলার ব্যাপক মিল আছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এর সাথে বাংলা, বাংলাদেশের রংপুরি ডায়ালেক্ট, অহমীয়া বা গোলপারিয়া ভাষার সাথে কি কোন সম্পর্ক আছে - এবং থাকলে কতটুকু? ইংরেজি উইকিপিডিয়াতে রাজবংশী লিখে সার্চ দিলে "Rangpuri language" শীর্ষক আর্টিকেলে রিডিরেক্ট করে। কিন্তু সেখান থেকেও আমার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হচ্ছে না। আপনার জানা থাকলে একটু ক্লিয়ার করতে পারবেন?
২। "সুন্দরী কমলা" আসলে কোন ভাষার / ডায়ালেক্টের গান বলে আপনার ধারণা?
৩। আপনার তালিকায় থাকা "মার্মা" শব্দটা মার্মাদের নিজেদের উচ্চারণে বোধহয় "ম্রাইমড়্যা" বা এর কাছাকাছি কিছু হবে। আমার মার্মা বন্ধু এরকমই বলেছিল - যদিও তার উচ্চারণটা আমি পুরোপুরি ধরতে পারিনি।

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পোস্টে ঢোকা হয়নি বলে আপনার মন্তব্য দেখা হয়নি, তাই দেরিতে উত্তর দিচ্ছি। দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

১. প্রথমে বোঝার চেষ্টা করি রাজবংশী কারা? বাংলাদেশ সরকা্রের ২০২১ সালের গেজেটে রাজবংশীদেরকে আলাদা হিসাবে দেখানো হয়নি। আমার ধারণা সরকার তাঁদেরকে ‘কোচ’ জাতিভুক্ত বলে ধরেছে। ত্রয়োদশ শতকের গোড়ার দিকে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজী বাংলা থেকে তিব্বতে ব্যর্থ অভিযান চালানোর প্রাক্কালে হিমালয়ের দক্ষিণ দিকের পাদদেশে কোচ, মেচ ও থারু জাতিকে সাক্ষাত করেন। এর মধ্যে মেচরা তাঁকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়। আদিতে কোচরা ক্ষত্রিয় ছিলেন বলে কিংবদন্তি আছে, সাথে তাঁদের স্বতন্ত্র লোকাচারের কথাও জানা যায়। পরে সমতলের দিকে চলে আসার সময় তাঁরা বহুধা বিভক্ত হন, ভাষা-আচার ইত্যাদি পাল্টাতে থাকে। এক পক্ষের ধারণা এই সময়ে তাঁদের যেসব অফশুট বের হয় রাজবংশীরা তাঁদের অন্যতম। বর্তমানে রাজবংশীদের মধ্যে হিন্দু, মুসলিম, খ্রীস্টান – সব ধর্মের মানুষই পাওয়া যাবে, আদি লোকাচারগুলো মোটামুটি বিলুপ্ত। নৃতাত্ত্বিক দিক দিয়ে কোচরা সিনো-টিবেটান, তাঁদের ভাষা আ’তঙও তাই।

রাজবংশীরা আদিতে নৃতাত্ত্বিকভাবে সিনো-টিবেটানই ছিলেন। সমস্যা হচ্ছে রাজবংশী ভাষা মোটেও সিনো-টিবেটান নয়, বরং ঘোরতর ইন্দো-ইউরোপীয়ান > ইন্দো-ইরানিয়ান। রংপুরী (পুর্ব্ববঙ্গ), কামতাপুরী (উত্তরবঙ্গ), তাজপুরী (নেপাল), রাজবংশী (ঊত্তর ও পূর্ব্ববঙ্গ), গোয়ালপাড়িয়া (আসাম) – এগুলোর কোনটা আসলে মূল ভাষা নয়, বরং উপভাষা বা ডায়ালেক্ট। এই ডায়ালেক্টগুলো তাদের চর্চ্চার অঞ্চল সংলগ্ন মূল ভাষার সাথে অধিক অন্বয়যুক্ত। ফলে গোয়ালপাড়িয়াতে অহমীয়ার, তাজপুরীতে নেপালী ভাষার এবং রংপুরীতে বাংলা ভাষার প্রভাব বেশি। রাজবংশী নামে পরিচিত জনগোষ্ঠী তাঁদের অবস্থান সাপেক্ষে এই ডায়ালেক্টগুলো ব্যবহার করে আসছেন, তাই একটা আমব্রেলা টার্ম হিসাবে রাজবংশী ভাষা টার্মটা ব্যবহার হতো। বাস্তবে আমরা বুঝতে পারি রংপুরী (অম্মপুরীয়া) আর গোয়ালপাড়িয়া অভিন্ন উপভাষা নয়। এই বিতর্কটা আমার কাছে কিছুটা চর্যাপদ কার উত্তরাধিকার সেই রকম লাগে যেখানে অসমীয়া, বাংলা ও ওড়িয়া পক্ষ নিজ নিজ দাবিতে অটল।

একটা মজার ব্যাপার বলি। ফেরদৌসী রহমান বা নাদিরা বেগমের গাওয়া ভাওয়াইয়া গানের ‘গাড়িয়াল ভাই’ প্রতিমা বরুয়ার গাওয়া গোয়ালপাড়িয়া গানে ‘মাহুত বন্ধু’ অভিন্ন জিনিস। গানগুলোর মর্মার্থ, উপস্থাপনা, মিনতি – সবই অভিন্ন।

২. ‘সুন্দরী কমলা’ আপনি যে ডায়ালেক্টে গাইবেন সেটা সেই ভাষার গান হবে। মূল গানটি আসলে কার বলা মুশকিল, তবে ভোট দেবার ব্যবস্থা থাকলে আমি গোয়ালপাড়িয়াতে ভোট দিতাম। এর কারণ এই প্রকারের গোয়ালপাড়িয়া গানের মেজাজের সাথে এই গানটির অ্যালাইনমেন্ট বেশি বলে মনে করি। আমার সাথে কারো এক মত হবার প্রয়োজন নেই।

৩. আমরা ছোটবেলায় বলতাম ‘মগ’। পুরনো সব লেখাতে ‘মগ’ই পাওয়া যাবে। আশির দশক থেকে ‘মার্মা’ শব্দটা ব্যবহৃত হতে দেখছি। সঠিক উচ্চারণটি আসলে তাঁদের কাছ থেকে জেনে রাষ্ট্রীয়ভাবে চর্চ্চা করা গেলে ভালো হয়। যেমন, চাকমা, মুরং – এই নামগুলোও ভুল।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

আপনার উত্তরটা দারুন লাগল। বিষয়টা অনেকখানি পরিষ্কার হল। আরেকটা প্রশ্ন। চাটগাঁইয়া আর সিলেটি ভাষাকে কি বাংলা বা বাংলার ডায়ালেক্ট বলবেন? নাকি ভিন্ন স্বতন্ত্র ভাষা। অনেক চাটিগাঁইয়া এবং কিছু কিছু ছিলটিরা কিন্তু সেরকমই দাবি করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে সব "ভাষা"-কেই আম্ব্রেলা বা বাকেট / ঝুড়ি টার্ম মনে করি এবং এর ডায়ালেক্টগুলিকে এর কল্পিত অধিনস্থ "উপ-ভাষা" নয়, বরং পরস্পর সমমর্যাদা সম্পন্ন "সহ-ভাষা" এবং ঐ আম্ব্রেলা টার্মেরই বিভিন্ন ইকুয়াল ভেরিয়েন্ট মনে করি। এই ভেরিয়েন্টগুলির মধ্যে কোনোটা যদি "স্ট্যান্ডার্ড" ভাষা বা ডায়ালেক্ট হিসেবে পরিচিতি পায় তাহলে সেটা আমি স্ট্যান্ডার্ড / মান / প্রমিত ইত্যাদি না বলে স্রেফ লিঙ্গুয়া-ফ্রাংকা (ঐ ভেরিএন্টগুলির মধ্যে) বলার পক্ষপাতী। লিঙ্গুয়া-ফ্রাংকার বাংলা কি হবে জানি না। বাংলা উইকিপিডিয়াতে একে "বাহক" ভাষা বলা হচ্ছে দেখলাম। তবে আমি হলে বাংলায় "ঘটক ভাষা" (বিয়ের ঘটকের মত) টার্মটা কয়েন করতাম এর জন্য। যাইহোক, এখানে একটা সমস্যা হল, কোন ভেরিয়েন্টগুলিকে "একই ভাষার" বা একই আমব্রেলা টার্মের অন্তর্ভূক্ত ভেরিয়েন্ট বা সহ-ভাষা বলা যায় এবং কোথায় গিয়ে এই সহ-ভাষা পরিবারের সীমানা টানতে হয় সে নিয়ে আমার ধন্দ যাচ্ছে না। কোথায় গিয়ে বলতে হয় - দিস ফার এন্ড নো ফার্দার?? কোথায় গিয়ে বলতে হয় এই সীমানার ওপারের ভাষাগুলি "ভিন্ন ভাষা"?? আমি ডায়ালেক্ট কন্টিনিয়ামের কথা জানি। কিন্তু কোথায় গিয়ে বলতে হয় এই কন্টিনিয়ামের এখানেই শেষ? কিভাবে বোঝা যাবে সেটা? সিলেটি ও চাটগাঁইয়া কি বাংলার এই কন্টিনিয়ামের বাইরে পড়ে গেছে? আপনার কি মত? একটু ছেঞ্ছিটিব প্রশ্ন হয়তো, তবে আশা করি আপনি উত্তর দিতে পারবেন!

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চাটগাঁইয়া এবং সিলেটী অবশ্যই দুটো স্বতন্ত্র ভাষা।

চাটগাঁইয়ার নিজস্ব লিপি নেই বলে এক প্রকার hegemony’র জোরে এটিকে বাংলার উপভাষা (dialect) বলে গণ্য করা হয়। অথচ চাটগাঁইয়া ভাষা নিজেরই কয়েকটি উপভাষা আছে। লক্ষ করলে দেখা যায় একই ক্রিয়াপদ চট্টগ্রামের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন রূপ পাচ্ছে। যথাঃ করা => করদ্দে, করর্‌। চাটগাঁইয়া ভাষা রোহিঙ্গ্যা ভাষার সাথে mutually intelligible, কিন্তু বাংলার সাথে নয়। তার মানে বাংলার সাথে তার সম্পর্ক একই উৎসজাত প্রতিবেশী ভাষার অনুরূপ।

সিলেটী ভাষার নিজস্ব লিপি (সিলেটী নাগরী) আছে। এর শব্দ প্রকরণ, পদ প্রকরণ বাক্য প্রকরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলার সাথে সিলেটীর সম্পর্ক একই উৎসজাত প্রতিবেশী ভাষার অনুরূপ। এখানেও এক প্রকার hegemony’র জোরে এটিকে বাংলার উপভাষা বলে গণ্য করা হয়।

ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে সব "ভাষা"-কেই আম্ব্রেলা বা বাকেট / ঝুড়ি টার্ম মনে করি এবং এর ডায়ালেক্টগুলিকে এর কল্পিত অধিনস্থ "উপ-ভাষা" নয়, বরং পরস্পর সমমর্যাদা সম্পন্ন "সহ-ভাষা" এবং ঐ আম্ব্রেলা টার্মেরই বিভিন্ন ইকুয়াল ভেরিয়েন্ট মনে করি।

আপনার সাথে মোটামুটি একমত। ঐ যে hegemony’র কথা বললাম তার জোরে ভাষার মধ্যে রাজা, উজির, নাজির, কোটাল, প্রজা ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

এই ভেরিয়েন্টগুলির মধ্যে কোনোটা যদি "স্ট্যান্ডার্ড" ভাষা বা ডায়ালেক্ট হিসেবে পরিচিতি পায় তাহলে সেটা আমি স্ট্যান্ডার্ড / মান / প্রমিত ইত্যাদি না বলে স্রেফ লিঙ্গুয়া-ফ্রাংকা (ঐ ভেরিএন্টগুলির মধ্যে) বলার পক্ষপাতী।

এটা এক প্রকারের লিঙ্গুয়া-ফ্রাংকা বটে, তবে লিঙ্গুয়া ফ্রাংকার স্বীকৃত সংজ্ঞার সাথে এর পার্থক্য আছে। এর জন্য আসলে ভিন্ন নাম প্রয়োজন।

এখানে একটা সমস্যা হল, কোন ভেরিয়েন্টগুলিকে "একই ভাষার" বা একই আমব্রেলা টার্মের অন্তর্ভূক্ত ভেরিয়েন্ট বা সহ-ভাষা বলা যায় এবং কোথায় গিয়ে এই সহ-ভাষা পরিবারের সীমানা টানতে হয় সে নিয়ে আমার ধন্দ যাচ্ছে না। কোথায় গিয়ে বলতে হয় - দিস ফার এন্ড নো ফার্দার?? কোথায় গিয়ে বলতে হয় এই সীমানার ওপারের ভাষাগুলি "ভিন্ন ভাষা"??

“রাজনীতিতে পলিটিকস ঢুকে” সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। যেমন, মৈথিলী, মঘাই, ভোজপুরী, অঙ্গিকা, বোতে মাঝি, দারাই, দানওয়ার, কুমহালি, সাদানিক, থারু – এই ভাষাগুলোকে একত্রে ‘বিহারী’ ভাষা বলে গণ্য করা হয়; আবার বিহারীকে হিন্দীর উপভাষা বলে চালানোর জোর কোশিশ আছে। বাস্তবে মৈথিলী এখন স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত, আর স্বতন্ত্র মিথিলা রাজ্যের বহু পুরনো দাবিটি পূরণ হলে এটি রাজ্য ভাষার মর্যাদাও পেয়ে যাবে। ভোজপুরীর মতো সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ভাষাকে এখনো হিন্দীর উপভাষা বলে গণ্য করা হয়। স্বতন্ত্র ভোজপুর রাজ্যের দাবিটি পূরণ হলে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। বাকি বিহারী ভাষাগুলোকে অন্য কারো, বিশেষত হিন্দীর উপভাষার মর্যাদা নিয়ে দিন কাটাতে হবে কারণ, মিথিলা আর ভোজপুর ছাড়া এই অঞ্চলে অন্য কোন নতুন রাজ্য গঠনের সম্ভাবনা নেই।

একবার কিশোরগঞ্জের উপভাষায় করা একটা নাটক দেখছিলাম। সেখানে একটি চরিত্রের ভাষা একটু অন্য রকম। আমার স্ত্রী বললেন, এটি হচ্ছে কিশোরগঞ্জের মানুষ ‘শুদ্ধ বাংলা’ বলতে নিলে যে ভাষা হয় সেই ভাষা। তার মানে, গল্পের আভান্তির ‘খরগোশের স্যুপ’-এ শেষ হচ্ছে না, স্যুপের স্যুপ, তারও স্যুপেও গিয়ে ঠেকতে পারে। এখানে সীমানা টানার চেষ্টাটাই অনুচিত হবে।

এখনকার দুনিয়ায় এক জায়গার বা এক ভাষার মানুষ সারা দুনিয়ায় এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছেন যে ‘দিস ফার এন্ড নো ফারদার’ কথাটি ভৌগলিকভাবে অথবা ব্যাকরণগতভাবে বলা কঠিন হয়ে পড়ছে। আগামী দিনে ভিন্ন কোনো এক দেশে বাসকারী বাঙালী ও বাঙালী বংশোদ্ভূতদের মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাষার সাথে বাংলার একটি উপভাষা মিলে যে একটা ‘creole’ তৈরি করবে না তা কি কেউ বলতে পারবেন?

ভাষার pedigree তৈরি করার সময় রাজনীতিতে পলিটিকস ঢুকবেই। তাই বিতর্কটি অনিঃশেষ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।