১
আমার রান্না-বান্না করতে খুব খুব ভালো লাগে। আর তারপর পরিষ্কার করতে ততোই অসহ্য লাগে। দেশে কী আরামেই থাকতাম, তাই না? এখানে ধোয়া-মোছা, কাটা-বাছা, সব কিছু নিজেকেই করতে হয়। এখন ঐসব কথা ভাবি, আর চোখের পানি ফেলি।
জীবনে প্রথম একা একা রান্না করি সোওয়াজিল্যান্ডে। ক্লাস ১১ এ পড়ি। আমাদের টিউটর এলেনের বাসায় দাওয়াত ছিল। ঐ স্কুলে সব শিক্ষার্থীদের কোনো না কোনো শিক্ষকের আওতায় সঁপে দেয়া হত। আবাসিক স্কুল বিধায় ঐ শিক্ষক অভিভাবকের দায়িত্ব নিতেন। একেক শিক্ষকের গ্রুপে ১২ থেকে ১৫ জন ছাত্র থাকতো। সপ্তাহে একবার নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের মিটিং হত আর টার্মে একবার ‘ডিনার’, হয় কোনো রেস্টুরেন্টে যাওয়া কিংবা টিউটরের বাসায় খাওয়া। সেই বার ঠিক হল আমরা নিজেরা রাঁধবো। একেক জন একেক ডিশের জন্য নাম দেয়। অন্যরা সেইবার কী রেঁধেছিল আমার মনে নাই। আমি বললাম পায়েস রাঁধবো। রুমে ফেরত এসেই আম্মুকে ফোন। আম্মুর কাছ থেকে রেসিপি শুনে, আম্মুকে ফোনে রেখে ডিনারের আগের দিন পায়েস রাঁধলাম (সেই বার ফোনের বিল বেশি ছিল)। অন্যরা এলেনের বাসাতেই রাঁধবে, আমি আর ওই ঝুঁকি নেই নাই। না জানি হবে কী না। পরের দিন দাওয়াতে আমার পায়েস ভালোই বলেছে সবাই, সব শেষও হয়ে গেল।
এতে আমার আত্মবিশ্বাস বেশ বেড়ে গেল। এইটা-ওইটা রাঁধি। অখাদ্য-কুখাদ্য রাঁধতে রাঁধতে খাদ্যও মাঝে মাঝে রেঁধে ফেলি। দেশি খাবার রান্নায় আমার পারদর্শিতা বেশ কম। দাওয়াতের আইটেম ভাল রাঁধি, কিন্তু দৈনন্দিন রান্নার অবস্থা অত ভালো না। প্রত্যেক বার দেশে গেলে ভাবি এইবার শিখে আসব, কিন্তু করা হয় না আলসেমির জন্য।
২
লেফটওভার খাবার নিয়ে আমি সব সময় বেশ ঝামেলায় থাকি। খেতে ইচ্ছা করে না, এক রান্না কয় বার খাওয়া যায়? ফেলেও দিতে মন খচখচ করে, খামাখা টাকা নষ্ট। ভ্যাঙ্কুভারে আসার পর নিজের রান্না নিজের করতে হয়। বাইরে খেতে গেলে গলা কাটা দাম, আর ঘরের খাবার স্বাদই আলাদা। আমার সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস, ৩ ঘন্টা করে। আসা-যাওয়া করতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কাজ করতে করতে মোটামুটি সারাদিন লেগে যায়। বাসায় এসে রান্না করার শক্তি কিংবা ইচ্ছা থাকে না। আমি সপ্তাহে দুই কি বড় জোর ৩ দিন রাঁধি। তারপর সারা সপ্তাহে ওই একই খাবার গরম করে খাই। ২-৩ দিন বেলা খাওয়ার পর ঐ খাবার আর গলা দিয়ে নামতে চায় না। তখন নিত্য-নতুন রূপে ঐ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি। আজকে একটা রেসিপি দিচ্ছি নিত্য-নতুন রূপের। যাঁরা আমার মত প্রবাসী, তাঁদের জন্য, কিংবা যাঁদের হাতে সময় কম তাঁদের জন্য।
ডাল রুটি
উপকরণঃ
২ কাপ ময়দা
১ কাপ লেফটওভার ডাল (আমার ফ্রীজে গত সপ্তাহের রান্না করা ঘন ডাল ছিল।তবে যেকোন ডাল চলবে)
লবণ
তেল (ভাজার জন্য)
প্রণালীঃ
১। ফ্রীজের থেকে ডাল বের করে ফ্রাইং প্যানে অল্প গরম করে নিতে হবে। আমি গরম করার সময় পাঁচফোড়ণ দিয়ে ছিলাম, না দিলেও চলবে। কুঁচি করা ধনে পাতা, আস্ত জিরা দেয়া যেতে পারে।
২। গরম করার পর ডাল আর ময়দা এক সাথে মিশিয়ে কাই বানাতে হবে। মেশানোর সময় একটু লবণ আর অন্যান্য সিজনিং মিশিয়ে নিতে হবে।
৩। ভাল মতো মেশানো হলে কাই এর ছোট ছোট বল (ছোট কাবাবের সাইজ) করে বেলতে হবে। বেলার আগে বেলার জায়গায় আর বেলনিতে একটু ময়দা মাখিয়ে নিতে হবে। যেকোন সমান জায়গায় বেলা যাবে, আমি আমার চপিং বোর্ড ব্যবহার করেছিলাম। আমার বেলন নাই, তাই সয়া সসের বোতল দিয়ে বেলেছি।
৪। পুড়ির সাইজ মতন হলে, খুবই অল্প তেলে অল্প আঁচে ভাজবে হবে। ডোবা তেলে ভাজলে লুচির মত ফুলে উঠবে, তবে রুটি বেশ পাতলা করে বেলতে হবে।
৫। আচারের কিংবা সসের সাথে পরিবেশন করুন গরম গরম!
৬।লেফটওভার কাই ফ্রীজে তুলে রাখুন আরেকদিনের জন্য!
মন্তব্য
লেখাটা পড়ে কেন জানি খুব ভাল লাগল।
আমার একটা ছোটবোন তোমার মত একা একা বাইরে থেকে পড়াশোনা করে। ফোনে কথা হলেই খাওয়া দাওয়া নিয়ে হাজারটা অভিযোগ করবেই। ওর কথা মনে পড়ে হঠাৎ খারাপ লাগছে।
ভালো থেকো।
---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।
---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।
ভাল লাগলো জেনে খুশি হলাম। বেশি মন খারাপ করেন না। আমরা ভালই থাকি, ভালো থাকতে হয়।
_______________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
বাহ, ভালো তো। চেষ্টা করা যাবে, দেখতে তো খুবই ভালো লাগছে। নিজে না বানিয়ে প্রবাসিনীর হাতের রান্নাটা খেতে পারলেই বেশি ভালো লাগত
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
চলে আসেন একদিন। লেফটওভার খাওয়াবো না
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
@তিথি,
রান্নাটা হচ্ছে কবে তাহলে? আমার তো এক্ষুণি খিদে পেয়ে গেল!
@প্রবাসিনী,
রুটির চেহারা মাশাল্লাহ খোলতাই হয়েছে।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
থাঙ্কু
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
হুম, খাইতে হবে ১দিন, তাইলেই আর লেফ্ট-ওভার হবে না।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
একদম ঠিক!
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
ভালো পরামর্শ।
ধন্যবাদ।
দলছুট।
======বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
আচ্ছা, তুমিতো ভালোই রান্না বান্না পারো। এমন কিছু রেসিপি আরো চাই। আমি অনেকদিন ধরে রেজালা রাধতে চাচ্ছি।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
থাঙ্কু আপু। চেষ্টা করি এই আর কি।
রেজালার যদি রাঁধি রেসিপি দিয়ে দিব নে।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
নিজে খেয়ে পরীক্ষা না করতে পারলে কিছুতেই বিশ্বাস করবো না আপনি রাঁধতে পারেন!!!
আর এতগুলো গরীব দুঃখী প্রবাসী ছাত্র সচলে আছে জেনেও খাবার দাবারের পোস্ট (বিশেষ করে ছবি) দেন কি মনে করে?
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
বাহ! আমি নতুন টুকিটাকি রাধি, তোমার টা ট্রায় করে দেখতে হবে মজার আইডিয়াতো
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
জানাবেন কেমন হলো খেতে।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
রান্না পারি না, তবে শেখার শখ আছে। আলসেমির কারণে হয়ে ওঠে না। নিজে রেঁধে খেতে হবে এই ভয়েই মনে হয় এখনো প্রবাসে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছেটা ঠিকমতো বেড়ে উঠছে না। বাবা মা এর হোটেল জিন্দাবাদ!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
আসলেই। এত ভালো হোটেল কোথাও নাই।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
আমারও রাঁধতে ভালো লাগে। আমি প্রায়ই রাঁধি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
রেসিপি দিয়ে দিবেন কিন্তু
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
মন কেমন করা লেখা... নিজে রাধতে যথেষ্টই ভালোবাসি, কিন্তু উৎসব ছাড়া মা রান্নাঘরে প্রায় ঢুকতেই দেয়না। আম্মুকে নিয়ে আমার আধাখেচড়া একটা লেখা ছিলো... যদি কখনও পোস্টাই তবে জানবেন মা কেমন লেফটওভার দিয়ে অসাধারন ডিশ বানাতে পারেন... [কীবোর্ড এর শিফট কাজ করছেনা তাই চন্দ্রবিন্দুগুলোকে আকাশে চড়ানো গেলনা...]
----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
এটা আমাকে আমার এক কোলকাতার বন্ধু খাইয়েছে "ডাল কচুরি"। আমার বিশেষ একটা সুবিধার লাগে নাই। আমি ক্ষেত পাবলিক, আমি ডাল পুরীতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
**************************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নতুন মন্তব্য করুন