১
(গত সপ্তাহে লেখা)
এই সপ্তাহের মত হুটাপুটি শেষ। আজকে ক্লাস শেষে বাসায় এসে ঘর পরিষ্কার করে, বাথরুম ধুঁয়ে, আগামী সপ্তাহের রান্না-বান্না শেষ করে এই এসে বসলাম। গত সপ্তাহে রান্না করা হয় নাই, সারা সপ্তাহ বাইরে বাইরে খেলাম। ঘর গুছাতে গিয়ে দেখলাম যে আমার গাছটা মারা যাচ্ছে। ছোট একটা গাছ রাখা ছিল সাইড টেবিলে। পানি-টানি ঠিক মতই দেই, কিন্তু সব পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে, ঝরে পড়ছে। আবার গাদা খানিক পানি ঢেলে দিলাম, দেখি কতদিন বাঁচিয়ে রাখা যায়?
এই সপ্তাহের একটা নতুন অভিজ্ঞতার কথা বলিঃ বাজার না করলে বাসায় খাবার থাকবে না। এর আগে অনেক দিন একা একা থাকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের “মিল প্লান”এ এনরোল্ড ছিলাম। শখের বসে অনেক রান্না বান্না করেছি কিন্তু বাইরে বাইরে বেশি খেতাম (আমার সাইজই সেই খানাপিনার প্রমান)। ডাইনিং হলে যাইতাম, কার্ড সইয়াপ করতাম, আর সামনে খাবার থাকত। আর এখন কি অবস্থাঃ বাজার করা, রান্না করা বিশাল ঝামেলা। একা মানুষের জন্য রান্না করা খুব বিরক্তিকর। এক পিস মুরগির রান দিয়ে তো আর মুরগির ঝোল হয় না। রাঁধবো যখন বেশি করেই রাঁধি। তারপর হয় আরেক ঝামেলা, এক তরকারি কয় দিন খাইতে ভাল লাগে?
২
ঢাকায় সবার সাথে প্রত্যেক দিনই কথা হয় স্কাইপের কল্যাণে। আজকে সকালে খবর পেলাম আমাদের কাজের মেয়েটা বাসা থেকে পালায় গেছে। আর যাওয়ার সম্য় আমার আলমারি খালি করে চলে গেছে। ঢাকায় অনেক কাপড়-চোপর রেখে এসেছিলাম, এখন দেখি আর কি কি বাকি আসে?
(২ দিন পরের আপডেট)
ওই মেয়েকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তাকে তার বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আমার কাপড়ের হদিস নাই।
৩
গত সপ্তাহে স্টুডেন্ট অফ কালার গ্যাদারিঙ্গে গিয়েছিলাম। আমার প্রফেসর শহর থেকে অনেক অনেক দূরে থাকে। স্কাই ট্রেন ধরে, সী বাস চড়ে আরেক সহপাঠির সাথে (ইরাকে মেয়ে, আমার সাথেই এমএস করছে) আধা ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে গেলাম প্রফেসরের বাসায়। পাহাড়ের ভাজে ভাজে মাটি কেটে জংগলের মাঝে বেশ সুন্দর কয়েকটা বাংলো টাইপের বাড়ি। ওর বাসা কি সুন্দর, আমি তো বাড়ি দেখে রীতিমত টাসকি খেলাম। কাঠের বাড়ি, বিশাল বড় বড় জানালা বাড়ির ২ দিকে। পিছনে বিশাল প্যাটিও। সেই প্যাটিও ভিউও মারাত্মক। পাহাড়ের বাকে যেন মনে হয় গাছের ঢল নেমেছে। ফলের (fall season) পাতাগুলো নানা রঙের, হলুদ, লাল, কমলা। মনে হয় যেন গাছগুলোতে আগুন লেগেছে। রাতে আবার ওই প্যাটিওতে গেলাম। কি সুন্দর, কি সুনশান নীরবতা। আর আকাশে কত কত তারা। আকাশে কোন মেঘ ছিলো না আর ওই দিবে দূষনও নাই বললেই চলে। এতো পরিষ্কার আকাশ আর এতো তারা কোন দিনও দেখিনি। একটা তারা খসেও পড়লো আমার চোখের সামনে (সাথে সাথে একটা wish করে ফেললাম)।
ওই গ্যাদারিঙ্গে স্টুডেন্ট বলতে গেলে খালি আমি আর আমার ইরানি সহপাঠি ছিলাম। আরও ১০-১২ জন এসেছিলো। মোটামুটি সবাই আশে পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। কয়েকজন আইনজীবিও ছিল আর কয়েক জন সাংবাদিক। খুব মজার একটা ফেমিনিস্ট ক্রাউড। শিরিন রাজ্জাকের সাথেও পরিচয় হলো, কি অমায়িক মানুষ। এতো জনপ্রিয়, কানাডার লিডিং ক্রিটিকাল থীওরিস্ট, কিন্তু কি ভাল ব্যবহার। খোঁজ নিচ্ছেন কার কি ড্রিংক লাগবে?ওইখানে গিয়ে আমার বেশ ভালো লেগেছে।মনে হচ্চে যা পড়ছি তা কাজে লাগবে কোন না কোন ভাবেই।
৪
(২৮।১০।২০০৯)
কালকে ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে বেশ ঘুরলাম। ২ ভাইয়া-আপুর বাসায় গেলাম, দেশি স্টাইলে নাস্তা-পানি খেলাম, চা খেলাম। দেশি স্টাইলে আড্ডা দিলাম। বেশ মজা-টজা করে বাসায় আসতে আসতে রাত সাড়ে ১০টা বেজে গেল। অন লাইনে গিয়ে দেখি কেউ নাই, আম্মু আর পাপা “away” আর পাখি “busy”। ঠোঁট ফুলায়ে, মুখ কালো করে টিভি কাউচে শুয়ে টিভি দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে গেলাম টের পাইনি। ঘুম ভাংলো ফোনের আওয়াজে, নাম্বার চিনলাম না, রাত সাড়ে ১১ টা বাজে। ফোন ধরে দেখি পাখি। এখন তো ওর অফিস, ফোন করার কথা না। বলে যে, এইখানে হামলা হয়েছে--আমি যেন চিন্তা না করি।শুনে আমার ঘুম-টুম তো পুরো উধাও, তড়াক করে উঠে বসলাম।“কি হয়েছে? কখন? কই? তুমি ঠিক আছো তো? তখন কই ছিলে? এখন কি করবা? ” তিন চার বার একই ঘটনা শুনে, ভাল মত বুঝে আমার তো হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা দেখে কি হলো বোঝার চেস্টা করি। মানুষ কেন এ রকম করে? ওদের কি কোন মায়া নাই?
এই সব সাত-পাঁচ চিন্তা করতে করতে, পাখির কি হবে সেই ভেবে আর খবর পড়তে পড়তে ঘুম উধাও। টার্মের শুরুতে একটা সিনেমা দেখেছিলাম “Battle of Algeirs” (১৯৬৬)। আলজেরিয়ান যুদ্ধের সময়কার ঘটনা নিয়ে (১৯৫৪-৬২)। সিনেমাটায় কিছু আলজেরিয়ান মহিলারা কী ভাবে আর কেন সুউসাইড বোম্বিং এ অংশ নিয়েছিল তা দেখায়। কিন্তু do the ends ever justify the means? What would you do when no one is listening to you?
কালকে এই সব কথা ভাবতে ভাবতে, পাখিকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে রাত পার করলাম। কি রকম বিশ্বে আমরা থাকি? Where and how do we find “world peace”? Does that even exist?
মন্তব্য
সহজ চমৎকার দিনলিপি।
একটা অনুযোগ:
ঠিক এভাবে না লিখলেও হয়। "কাজের-মেয়ে" ট্যাগটাও অপ্রয়োজনীয়।
দুঃখীত, যখন লিখেছিলাম তখন খুব মন মেজাজ খারাপ ছিল।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
পাখি কি পাকিস্তানে থাকে?
নাহ।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
পড়লাম।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
সত্যি?
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
সত্যি
সত্যি
তিন সত্যি
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
প্রবাসিনী, শিরিন রাজ্জাকের নামের ইংরেজী বানানটা একটু বলবেন? বানানের বিভিন্ন পারমুটেশন কম্বিনেশন করেও গুগলে কিছু পেলাম না কেন যেন।
ওনার লেখাটেখার কোন লিঙ্ক দিলে আরও ভালো হয়। ধন্যবাদ জানিয়ে রাখলাম।
sherene razack হল ওনার নামের বানান। লেখা আমি কিছু অন-লাইনে দেখলাম না।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
প্রবাসিনীর ব্লগে পাখি বিষয়ক কিছু তো পেলাম না। ট্যাগ দেখে বিভ্রান্তি বাড়ল। দিনলিপি পড়তে ভালোই লাগলো। নিজেও দিনলিপি লেখা শুরু করব কিনা ভাবছি, হা হা হা ..
আপনি কি আসলেই বোঝেননি যে পাখি কী বা কে? নাকি ফাজলামো করলেন?
ঐ প্যারাটা আবারো পড়লাম। পাখি সম্ভবত কেউ হবে যার সাথে ফোনে কথা বলা যায়, এবং যিনি এমন কোথাও থাকেন যেখানে বোমা-টোমা পড়ছে-- সেটা তো বুঝলাম। পাখি ট্যাগ দেখে ভেবেছিলাম পাখি (Bird) নিয়ে কিছু হয়তো কিছু থাকবে
আরে সেটাই তো বলতে চাচ্ছি - প্রবাসিনীর ট্যাগে পাখি থাকলে আমি বুঝেই নেই যে এটা পাখি=(আগের) ছন্নছাড়া=(এখন) তাহসিন, যিনি এখন আফগানিস্তানে আছেন
আমি একটু পিছিয়ে আছি, প্রবাসিনীর সব লেখা পড়া হয়নি
এইটা হচ্ছে পাখি ... কি পাখি সেটা কোথাও বলা হয় নাই, তাই আমি ধরে নিলাম মুরগী
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
এহহহ - ফোগলা দাঁতের আর বাতের ব্যথায় আজকাল বেশ ভুলে টুলেও যাচ্ছি, নামটা গোলমাল করে ফেল্লাম ....
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
প্রকৃতিপ্রেমিক বলেই কি পাখি নিয়ে এত আগ্রহ?
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
প্রকৃতির অনেককিছু নিয়েই আগ্রহ আছে, তবে পাখি নিয়ে একটু বেশী।
তোমার লেখা ভাল লাগলো প্রবাসিনী।
--------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
লেখা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
লেখার হাত দিনকে দিন সুন্দর থেকে সুন্দরতর হচ্ছে, খুব ভালো লাগল, বেচারা পাখির কথা ভেবে উৎকন্ঠিত হলাম। লিখে যাও মনের কথা, ভাগ করে যাও সব সুখ দু:খ, সুখ না দিলেও চলবে, দু:খ কষ্টটা ধরে রেখ না, সচলে সবাই পরিবার বিধায় বললাম। ভালো থেকো, আরো লেখা চাই।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
থাঙ্কস ভাইয়া। অনেক দিন আপনার লেখা দেখি না।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
আপনার ও পাখীর জন্য রইল শুভকামনা। মা-বাবার জন্য এধরনের দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছি অনেক বছর, সহমর্মীতা জানাই।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
ধন্যবাদ
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
...পাখি নিয়ে আলুচোনায় মজাইলাম!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আমিও
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
পাখি নিরাপদে আছেন তো?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হুমম
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
ভিনদেশী জীবন!!!
কষ্ট বিষণ।
আপনার লেখাটি ভাল লাগল।
____________
সৈয়দ আফসার
আসলেই অনেক কষ্ট।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
পাখি'র জন্য শুভকামান থাকলো।
আপনার আরো ভালো লেখা পড়ার প্রত্যাশায় রইলাম।
___________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
নতুন মন্তব্য করুন