১.
বিটলু হঠাৎ করে আমার রুমে ঢুকল তার স্কুল প্যান্ট হাতে নিয়ে। সাথে সাথে মুখ শক্ত করে ব্যস্ত ভাব আনলাম। "এটা কী তোর কাজ?", সে গজগজ করছে।আমি আকাশ থেকে পড়ার ভান করলাম। "পাগল নাকি? ক্লাশের কোন মেয়ে তোর প্রেমে পড়েছে খোঁজ নিয়ে দেখ।", নিরীহ ভঙ্গীতে জওয়াব দিলাম। গত তিনমাস থেকে ওকে ভীষণ ব্যস্ত রেখেছি। আম্মু এখন আর ওকে স্কুলে আনা নেয়া করতে পারে না বলে বাসার পাশের একটা স্কুলে আমরা ট্রান্সফার করে এনেছি। কলেজে যাওয়ার সময় ওকে স্কুলে দিয়ে যাই। বয়েজ স্কুল থেকে কো-এডুকেশনে চলে আসায় এখনও ক্লাশের মেয়েদের সামনে খুব লজ্জা পায়। একটু যন্ত্রণা দেয়ার জন্য
প্যান্টের পাছায় লিপস্টিকের দাগ দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু পরে স্কুলে যাওয়ার আগেই ধরা খেয়ে গেছি।
২.
আব্বু রাতে অফিসে ছিল। পত্রিকা ছাপা শেষ হওয়ার পরে বাসায় এসেছে। আজকে রাতে জন্মদিন। যেভাবেই হোক তার অফিসে যাওয়া ঠেকাতে হবে। একটা কেক কিনে আনব। কিন্তু আরেকটা নকল কেক শেভিং ক্রিমের উপর চকলেট চিপস বসিয়ে বানাবো। ওটা কাটার সময় যখন ফেটে সব মুখে ছড়িয়ে যাবে ছবি তুলে রাখব। হাসপাতাল থেকে ফিরে সেটা দেখলে আম্মু হাসতে হাসতে ফিট হয়ে যাবে।
৩.
তিথি কে বলেছি কলেজ থেকে আসার আগে যদি এ.বি.সি.ডি. লিখে রাখে আর ছবিগুলো এঁকে রাখে তাহলে ওকে কালকে নভোথিয়েটারে নিয়ে যাবো। যেটা বলিনি তা হল কালকে ওকে চুড়ি ও কিনে দিব। ও ভীষণ চুড়ির পাগল।
(পরদিন)
৪.
স্নেহা খালা বাসায় এসেছে।
- "কোথায় যাচ্ছিস তোরা?", খালা জিজ্ঞেস করল।
- "একটু ওদের ঘুরিয়ে আনছি"।
- "বাড়িতে এই অবস্থায় তোরা বেড়াতে যাস বাইরে? মায়ের কথা ভাবিস না? ঘুরার চিন্তা তোদের মাথায় আসে কি করে?"।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বকা দেয়ার জন্য না। খালা আসার পর থেকেই কোন না কোন উসিলায় বাসার সবাইকে আম্মুর অসুখের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তিথি বা বিটলুর সামনে উনি গেলেই আমি তাকে কোন একটা কাজে সরিয়ে দিচ্ছি। খালা উপদেশ দিতে ভাল বাসে তাই তাকে আমার বিভিন্ন বন্ধুর নামে বানিয়ে বানিয়ে সমস্যা তৈরি করে পরামর্শ চাচ্ছি।
৫.
আমার বাথরুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখে অবাক হলাম। এখানে কারও আসার কথা না! কয়েকবার বাড়ি দিতে বিটলু দরজা খুলল। বকা দিতে গিয়ে দেখলাম চোখ ফোলা ফোলা। ওকে ধরে বিছানায় বসালাম।
- "কী হয়েছে? কাঁদিস কেন?"।
- "দিদি, মা কী মরে যাবে?"।
আমি ওকে হালকা চড় দিলাম। "এসব কী বলছিস? মরবে কেন?"।
- "তাহলে মা হাসপাতালে কেন?"।
- "ওমা, জ্বর হলে ডাক্তার দেখাতে হবে না?"।
- "মা ফিরে আসবে?"।
- "উল্লুক, তোর যে এইবার জ্বর হল, তুই কি মরে গিয়েছিলি? খালি বাথরুমে বেশি দৌড়াদৌড়ি করসিস! মারও কিচ্ছু হবে না। যা ভাগ!"।
বিটলু মুখে হাসি এনে চলে গেল। একটু আগে সামনের রুমে খালাকে দেখেছি ওকে কিছু একটা বুঝাতে। কী যে করেনা, খালা! ছোটদের এসব বলার দরকার কী!
৬.
আজকে বাসায় অর্ণবকে আসতে বলেছি। বাসায় আসলেই বিশাল আড্ডা বসে। খালা যে হারে ঘ্যান ঘ্যান শুরু করেছে তাতে একটা ব্যালেন্স করা দরকার।
৭.
- "কিরে তোর মায়ের ব্যাগ গুছিয়েছিস?" । খালা দেখি আবার রুমে।
শান্তি নাই। "হুমম।"।
- "সুতির ম্যাক্সি কয়টা দিয়েছিস? লাল বাক্সটাও স্যুটকেসে ভরে দিস।"
...
...
পুরো আধা ঘন্টা লাগল খালা বিদায় হতে।
৮.
অর্ণব গিটার নিয়ে এসেছে। তারমানে আজকে গানও হবে। অবশ্য তিথি এই মুহুর্তে ওর ঘাড়ে চড়ে বসে আছে।
৯.
খালা আমাকে টেনে রুমে নিয়ে আসল।
- "ছেলেটা কে?"।
- "আমার ক্লাশের। আব্বু চিনে।"।
- "তোর আব্বু তোর ক্লাশের ছেলেদের বাসায় ঢুকতে দেয়?", খালার গলায় চাপা বিস্ফোরণ।
- "কেন সমস্যা কি?"।
একটু দম নিল সে। "আমার মনে হয় তোদের সবার সাথে আমার একটু কথা বলা দরকার। আমি আসার পর থেকে দেখলাম তুই একটা বার্থডে পার্টি করলি মাঝরাতে, তিথিকে নিয়ে মার্কেটে ঘুরাঘুরি করিস, বিটলুর সাথে সারাক্ষণ হইহল্লা! এসব কী! এখন আবার গান-বাজনা! কে বলবে এই বাড়ির একজনের ক্যান্সার হয়েছে? তোদের দেখে মনে হচ্ছে ঈদ চলছে"।
এবার মনে হল একটু শক্ত হওয়া দরকার।
- "খালা দেখ আমি এসব ইচ্ছা করেই করছি। শুধু আজকে কালকে না। আম্মুর বায়োপসি রিপোর্ট আসার পর থেকেই করছি।"।
এবার খালার হাত ধরলাম। "দেখ, আমি কোনভাবেই আমার ছোট ভাইবোনদের টের পেতে দিতে চাইনা আম্মুর একটা খুব খারাপ অসুখ হয়েছে। তাই তাদের অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখছি। ওরা দুজনেই খুব চাপা। বুঝে ফেললেও সহজে স্বীকার করবে না। আমি সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি এই বুঝি টের পেয়ে গেল। আর আব্বুর জন্মদিন আমি সবসময়ই এভাবেই করি। তুমি দেখ না অফিস আর হাসপাতাল করে করে আব্বু কেমন শুকিয়ে গেছে। তাই আমি এইবার একটু বেশি গোলমাল করেছি আর কি।"
খালার হাত শক্ত করে চেপে বললাম, "আর মাত্র একদিন। কালকেই তো বাবা মা আর ওদের নিয়ে ইন্ডিয়া যাচ্ছে। যতক্ষণ পারি ওদের ভুলিয়ে রাখি?"।
খালার চোখে পানি।
১০.
অর্ণব এখন আমার রুমে। একটু অস্বস্তি লাগছে। অবশ্য রুমের দরজা খোলা রেখেছি। খালা বা আব্বু চাইলেই আমাদের দেখতে পারবে।
- "তুই যাবি না আন্টির সাথে?"।
- "নাহ! পরীক্ষা আছে।"।
- "পরীক্ষা তো আরো ছয়দিন আছে বাকি। তুই ২/৩ দিন থেকে চলে আয়।"।
- "তুই বাবাকে বলেছিস পরীক্ষা আরো ছয়দিন বাকি আছে?"।
- "নাহ! কেন?"।
- "খবরদার! বাবা কিন্তু জানে পরীক্ষা পরশু থেকে শুরু!"।
- "মানে!"।
- "কালকে বাবারা যাওয়ার সময় আমাকে সীমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাবে। এই সপ্তাহ ওখানে থাকব। তারপর পরীক্ষার আগের দিন হলে চলে যাব।"।
- "এইসব প্যাঁচের দরকার কী?"।
- "আছে, দরকার আছে। আর শোন তোর তো হাইট বেশি না, তাই ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করছিনা। তিথি তো তোর সাথে গলা মিলাতে গিয়ে টায়ার্ড হয়ে ঘুমিয়ে গেল।"।
- "সীমার বাসায় কি করবি এ কয়দিন?"।
- "বাদ দে না। পরে আমি সব বলব।"।
- "আচ্ছা!"।
(তার পরদিন)
১১.
আমি আম্মুর হাত ধরে বসে আছি। এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে খালুর গাড়ি। ফ্লাইট পাঁচটায়। সীমার বাসা ডিওএইচএস। তারমানে পুরোটা পথ আম্মুর সাথে থাকছিনা। আরো আগে আলাদা হয়ে যাব। সীমার বোনের রুমটা খালি। এর আগেও ওখানে থেকেছি। রুমের জানালার ওপাশে একটা পড়ে থাকা জমিতে অনেক মানকচু। বিশাল বিশাল কচুপাতায় নিশ্চয় এখন অনেক বৃষ্টির পানি জমে আছে। আমার মধ্যে তো তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি কান্না জমে আছে। গত তিনমাসের কান্না। তিথি আর বিটলু বুঝে ফেলবে এই ভয়ে কাঁদিনি, সেই কান্না। আব্বুর কাছ থেকেও লুকিয়ে রাখা এই কান্না। আমি আজকে অনেক কাঁদব। আমার এতদিনের জমানো কান্না!
শেহাব
চট্টগ্রাম
মন্তব্য
চরিত্রগুলো ঠিক মতো পরিচিত করা হয়নি পাঠকের সাথে। বর্ণনা গুলো ইনকোহেরেন্ট। সেকশন গুলোতে কে কথা বলছে বা কার জবানীতে লেখা হচ্ছে গল্পটা সেটা বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে বক্তা বদলাচ্ছে প্রায় প্রতি সেকশনে। সব মিলিয়ে দূর্বল প্রচেষ্টা।
তবে ভুল গুলো শুধরে নিলে ভালো করতে পারবেন।
শেহাব ভাই,
ভালো লেগেছে। লিখতে থাকেন। লেখা যেন বন্ধ না হয়
আলোকিত-মন
ভাল লেগেছে।
আমারো কিন্তু বেশ ভাল লাগল।
সুবর্ণনন্দিনী
ভালোই লেগেছে। ছোট ছোট মূহুর্ত, টুকরো ছবি, পাজলের মত হঠাৎ সব খাপে মিলে গেল।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ভালোই লাগলো । লেখা চলুক
জীবন!
ভালো লেগেছে।
তবে চরিত্রগুলো আরেকটু ক্লিয়ার করলে আরো বেশি ভালো হতো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ভালো লিখেছেন তবে কেন জানি খুব দ্রুত পট পরিবর্তন হচ্ছিল তাই মেলাতে কষ্ট হয়েছে। তবে থিম বেশ ভালো আর লেখাও বেশ প্রাঞ্জল।লেখা চালিয়ে জান যান থামবেন না ।
লেখা ভালো লেগেছে শেহাব।
লেখালেখি চলুক।
নতুন মন্তব্য করুন