নির্বাচন দই না যে এটিকে জমতে হবে!!!

শেহাব এর ছবি
লিখেছেন শেহাব (তারিখ: রবি, ১৫/১২/২০১৩ - ১:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নির্বাচন জমছে না বলে ফেসবুকের অলিগলিতে হাহাকার শোনা যাচ্ছে। একতরফা এই নির্বাচন হওয়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে ত্রয়োদশ সংশোধনী নামক জাদুর কাঠিটি ভেঙে ফেলাকে। বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে এই কাজটি করিয়েছেন। আদালতও নাকি বলেছে ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে আরো অন্তত: দুইবার নির্বাচন করা যেতে পারে।

এ ধরণের একটি ধারণা নিয়ে আমি ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত আপিলের রায় পড়া শুরু করলাম। তারপর দেখলাম আমার শোনা কথা গুলো পুরোপুরি মিলছে না। তখন ঠিক করলাম এই রায় নিয়ে কিছু লেখা যায় কিনা। এর অংশ হিসেবে আমি কিছু প্রশ্ন দাঁড় করিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত ধারণা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভাল একটি ধারণায় উপনীত হওয়ার জন্য এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আবশ্যক। দুর্ভাগ্যক্রমে সব প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেই জানি না।

১. ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হয়েছে যে মামলায় সে মামলার বাদী কে? তার সাথে সরকারের সম্পর্ক কি? সরকারের প্রভাবের প্রক্রিয়াটি কি ছিল?

২. ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হয়েছে যে মামলায় সেটির আপিলে সরকারের প্রতিনিধি এটর্নী জেনারেলের বক্তব্য কি ছিল?

৩. কি কারণে ত্রয়োদশ সংশোধনী রাষ্ট্রের গণপ্রজাতন্ত্রী চরিত্র ধ্বংস করে?

৪. নির্বাচিত সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে রাষ্ট্রপতি কি প্রক্রিয়ায় জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন?

৫. ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন গুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনটিকে পরাজিত দল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে মেনে নিয়েছে?

৬. ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে গঠিত কততম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অভ্যূত্থানের চেষ্টাকালে সেনাবাহিনীর প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছিল?

৭. ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে গঠিত কততম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগের আগেই সচিবদের বদলী করে ছিলেন?

৮. কোন সরকার ত্রয়োদশ সংশোধনীর সুযোগ নেবার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়েছিলেন?

৯. কোন সরকার ত্রয়োদশ সংশোধনীর সুযোগ নেবার জন্য বিচারপতি জ্যেষ্ঠতা লংঘন করিয়েছিলেন?

১০. ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে গঠিত কততম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরী অবস্থা জারি করতে হয়েছিল?

১১. ত্রয়োদশ সংশোধনীর কোন অংশটির বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে? সেই শংকা কি সত্যি হয়েছে?

১২. ধরা যাক ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হল। এখন নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে একজন হাইকোর্টে এই মর্মে স্থগিতাদেশ পেল যে জনপ্রতিনিধি দ্বারা গঠিত না হওয়ায় সরকার কর আরোপ ও পূর্বে আদায়কৃত কর থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। তখন নির্বাচনের ব্যয় কি ভাবে মেটানো হবে?

১৩. ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায়ে পরের দু মেয়াদ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে বলা হয়েছে তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার ব্যাপারে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত শর্তটি কি? কি যুক্তিতে আদালত এই শর্ত দিয়েছিল?

১৪. ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায়ে পরের দু মেয়াদ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে বলা হয়েছে তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার ব্যাপারে সংসদ সদস্য সংক্রান্ত শর্তটি কি? কি যুক্তিতে আদালত এই শর্ত দিয়েছিল?

১৫. ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায়ে পরের দু মেয়াদ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে বলা হয়েছে তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার ব্যাপারে অনির্বাচিত ব্যক্তি সংক্রান্ত শর্তটি কি? কি যুক্তিতে আদালত এই শর্ত দিয়েছিল?

১৬. ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজের মত জানানোর জন্য বিরোধীদল হিসেবে বি.এন.পি. 'র দায়িত্ব কি ছিল? আদালতে বি.এন.পি. 'র কি বক্তব্য ছিল? এ ব্যাপারে বি.এন.পি. সংসদে যে মুলতবী প্রস্তাব দিয়ে ছিল তার বর্তমান অবস্থা কি এবং কেন?

১৭. ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজের মত জানানোর জন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব কি ছিল? এ ব্যাপারে সংসদের কার্যবিধির ১০০ ধারার যে পিটিশনের সুযোগ সেটি কোন কোন নাগরিক নিয়েছিল?

১৮. ধরুন আপনি মনে করেন শেখ হাসিনা সরকার প্রধান না হলে এই সমস্যা মিটে যাবে। তো সেক্ষেত্র একটি সুনির্দিষ্ট নাম প্রস্তাব করুণ যে প্রধান হবে, যাকে বি.এন.পি. মেনে নিবে, এবং যার ব্যাপারে গ্যারান্টি থাকবে যে সে শেখ হাসিনার অন্যায় দাবী মেনে নিবে না।

১৯. বি.এন.পি. বাহাত্তরের সংবিধানের চারটি মূলনীতি সমর্থন করে না। এমতাঅবস্থায় শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করানোর জন্য নির্বাচনে বি.এন.পি. 'র অংশগ্রহণ দাবী করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

২০. শেখ হাসিনার খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য কোনটি জরুরী? প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে খারাপ কাজ করা ব্যয়বহুল করে তোলা নাকি একইরকম খারাপ কাজ করতে পারঙ্গম আরেকজনকে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে খারাপ বনাম খারাপ দ্বন্ধযুদ্ধু শুরু করে দেয়া?

২১. আর.পি.ও. 'র কোন কোন ধারা সংশোধন করলে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী রেখেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব?

২২. সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতার ভারসাম্যের বর্তমান অবস্থাটি কি?

২৩. সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদে কি পরিবর্তন আনলে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী রেখে দুই বড় দল থেকে অর্ধেক করে সংসদ সদস্যকে মন্ত্রীসভায় রাখলে তারা নির্বাচন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর অন্যায় সিদ্ধান্ত রুখে দিতে পারবে?

২৪. গত কয়েকবছরে আপনার প্রিয় পত্রিকার উপসম্পাদকীয়তে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কোনটিকে মূল শর্ত হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে? ত্রয়োদশ সংশোধনী? সংশোধিত আরপিও? ৫৫ অনুচ্ছেদের সংশোধন? আপনার পত্রিকার দেয়া প্রাধান্যের সাথে আপনার হিসেব মিলে যায়?

২৫. আপনার প্রিয় পত্রিকা কি কখনও জানিয়েছে সংসদের কার্যবিধির ১০০ ধারা অনুযায়ী আপনার নিজেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল?

এখন একটি যৌক্তিক প্রশ্ন হল এই যে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলের সমর্থিত দেড়শর মত প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় জিতে গেল এটি কি খুশির খবর? ঢালাও ভাবে একদমই না। স্পেসিফিকেলি যারা আসলেই ভাল ও যোগ্য প্রার্থী তাদের নির্বাচিত হওয়াটা অবশ্যই খুশির খবর। সেটি প্রতিদ্বন্ধিতায় হোক আর বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায়ই হোক। কিন্তু এই দেড়শ' প্রার্থীর মধ্যে সবাই কি সবসময় আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি মেনে চলেন? নিচের দিকে গেলে তো অনেক উদাহরণই দেয়া যাবে। কিন্তু আমরা একদম শীর্ষপদে তাকাই। শেখ হাসিনা এবার ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর যখন মন্ত্রীরা তাদের সম্পদের হিসেব দিলেন এবং তিনি সেটি প্রকাশে অস্বীকৃতি জানালেন সেটি কি আমাদের সেই মূলনীতিগুলোর লংঘন নয়? এর মানে হল কেইস বাই কেইস যাদের হাতে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয় বা অপেক্ষাকৃত কম নিরাপদ তাদের সংসদ সদস্য হওয়া কোন আনন্দের বিষয় নয় - সেটি প্রতিদ্বন্ধীতা করেই হোক আর না করেই হোক। এখন এর সুরাহা কি? এর সুরাহা হল এই লোকগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। চ্যালেঞ্জটা করবে কে? একজন একই রকম বা কাছাকাছি খারাপ লোক যে সমশক্তিসম্পন্ন বিপরীত দলের সদস্য হওয়ার কারণে সহজে নির্বাচনে জয়ের আশা রাখে? সেই লোক যদি জয়ী হয় তাহলে আমাদের মূল সমস্যার সমাধান হবে? প্রশ্নই উঠে না। মনে করিয়ে দেই মূল সমস্যা হল আমরা এমন ব্যক্তি পাচ্ছি না যার হাতে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ। আমাদের মূল সমস্যা কিন্তু এটি না যে একজন খারাপ লোক সহজে জিতে যাচ্ছে। তাহলে বিপরীত দল থেকে একজন লোক চ্যালেঞ্জ করলেই কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বরং দুই খারাপ লোক যখন দেখবে ময়দান শুধুমাত্র খারাপ লোকদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তারা তাদের গড় মান আরো নিচে নামিয়ে আনবে। তাহলে কি করতে হবে? যাকে দিয়ে আমাদের কাজ হবে এবং যে আগ্রহী্ তাকে মাঠে নামাতে হবে। অবশ্যই এটি তুলনামূলকভাবে কঠিন। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। খারাপ কে আরেকটি খারাপ দিয়ে পরাজিত করা য়ায় না। ভাল দিয়ে পরাজিত করতে হয়। এবং এটি করতে প্রচুর পরিশ্রম ও ধৈর্যের দরকার হয়।

একটি জিনিস মনে রাখতে হবে নির্বাচন দই না যে এটিকে জমাতে হবে। নির্বাচন সাংবাদিকদের মনোরঞ্জনের উৎস নয়। নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য হল সংসদ সদস্য হিসেবে যে সবচেয়ে উপযুক্ত তাকে উঠে আসার সুযোগ করে দেয়া। নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য আপনি যাকে অপছন্দ করেন তার পরাজয় তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা নয়। নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য হল আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকে জিতে আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য পরিশ্রম করা। আর যদি তেমন কাউকে না চিনে থাকেন কষ্ট করে খোঁজখবর করে তাকে চিনে নেয়া। তার যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে সেটি তৈরি করে দেয়া যাতে সে নির্বাচনে আসতে পারে।

আপনি যখন নির্বাচন জমলে উপভোগ করবেন সেই আশায় বসে থাকেন তাহলে আপনি আসলে নিজের ভবিষ্যতকে বিক্রি করে সেই টাকায় দুর্বৃত্তদের মল্লযুদ্ধ উপভোগ করার টিকেট কিনেন। আপনি এতটাই বোকা! নির্বাচন দই না যে এটিকে জমতে হবে!!!

আমি এখন একটু একটু করে প্রশ্নগুলোর উত্তর যোগ করা শুরু করছি।

প্রথম প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হয়েছে যে মামলায় সে মামলার বাদী কে? তার সাথে সরকারের সম্পর্ক কি? সরকারের প্রভাবের প্রক্রিয়াটি কি ছিল?

উত্তর:

এই মামলার বাদীরা সবাই এসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক এন্ড কন্সটিটিউশনাল এডভান্সমেন্ট অফ বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের সদস্য । রায়ের সময় আপিলের বাদী ছিলেন আব্দুল মান্নান খান। তার আইনজীবি ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট এম আই ফারুকী। এই মামলাটি ১৯৯৯ সালে সলিমউল্লাহ খান নামে একজন আইনজীবি দায়ের করেন। তিনি ২০০৮ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর পর একই সংগঠনের অন্য সদস্য মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস এর বাদী হন। তিনি যখন ২০১০ সালে বিচারপতি নিযুক্ত হন তখন একই সংগঠনের আরেক সদস্য আব্দুল মান্নান খান এর বাদী হন। প্রশ্ন হল যেহেতু সমস্যার জন্য সবার আগে শেখ হাসিনাকে দায়ী করা হচ্ছে তাহলে ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনার সাথে এদের ঠিক কি ষড়যন্ত্র হয়েছিল?

গুগল করলে এনাদের পিছনের ইতিহাস একটু একটু জানা যায়। এম আই ফারুকী কর্নেল তাহেরের ফাঁসীকে অসাংবিধানিক ঘোষণার যে রীট তাতে একজন অ্যামিকাস কিউরি ছিলেন। এছাড়া এম আই ফারুকী বার কাউন্সিলের ভোটার তালিকা সংক্রান্ত একটি রীটেরও আইনজীবি ছিলেন। কালের কণ্ঠ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ফতোয়া নিষিদ্ধ করে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেও তিনি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছিলেন। এম আই ফারুকীর ওয়েব সাইট থেকে আরো কিছু তথ্য জানলাম। মৃত্যুদণ্ড সাংবিধানিক কিনা এটি বিচারের জন্য বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর দায়ের করা একটি রীটে তিনি আইনজীবি ছিলেন। তাছাড়া মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসকারী উর্দুভাষী যাদের জন্ম বাংলাদেশে তাদের ভোটাধিকার সংক্রান্ত একটি মামলায়ও তিনি আইনজীবি ছিলেন।

প্রশ্ন হল শেখ হাসিনা আর তিনি ষড়যন্ত্র করে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করিয়েছেন এই প্রমাণটি কোথায়।

দ্বিতীয় প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হয়েছে যে মামলায় সেটির আপিলে সরকারের প্রতিনিধি এটর্নী জেনারেলের বক্তব্য কি ছিল?

উত্তর:

আপিলে দেয়া এটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য আছে রায়ের ২২-২৪ পৃষ্ঠায়। স্ক্রিনশট নিচে দেয়া হল।





তৃতীয় প্রশ্ন:

কি কারণে ত্রয়োদশ সংশোধনী রাষ্ট্রের গণপ্রজাতন্ত্রী চরিত্র ধ্বংস করে?

উত্তর:

প্রথমে সহজ কথায় বলে দিচ্ছি কেন ত্রয়োদশ সংশোধনী রাষ্ট্রের গণপ্রজাতন্ত্রী চরিত্র ধ্বংস করে। আমার কাছে ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত আপিলের রায়ের সাড়ে সাতশ' পৃষ্ঠার মধ্যে সবচেয়ে চমৎকার বাক্য হল, "জনগণের কাছে দাযবদ্ধতাই সকল ক্ষমতার উৎস"। কি অদ্ভুৎ সুন্দর বাক্য, তাই না? আমরা সবসময়ই শুনে এসেছি, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। কিন্তু তার চাইতে কি আগেরটি অনেক অনেক সুন্দর ও অর্থবাহী। এই কথাটির অর্থ হল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কোন পদে আসীন ব্যক্তির উপর অর্পিত যে ক্ষমতা সেটির উৎস হল জনগণের প্রতি সেই ব্যক্তির দায় বদ্ধতা।

ধরুন লক্ষ্মীপুর জেলার পুলিশ সুপার - তিনি কি করে লক্ষ্মীপুরের জনগণের কাছে দায় বদ্ধ? এই দায়বদ্ধতা হল বহুমাত্রিক। এই লিংকটি দেখুন। এটি হল লক্ষ্মীপুর জেলার আইন শৃংখলা কমিটির এক মাসের কার্যক্রমের বিস্তারিত বর্ণনা। দেখুন কমিটিতে কারা আছে। তাদের একটি অংশ হলেন বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যারা ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এই লোকগুলো নির্বাচনের সময় মানুষের মুখোমুখি হতে হয়েছে এবং তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। সামনে যদি তারা আবার ভো্টের মুখোমুখি হন তাদের আগের মেয়াদের কাজের ব্যাখ্যা দিতে হবে। এভাবেই দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি প্রশ্ন অবশ্যই উঠতে পারে যে, ভোট কেনাবেচার যে সংস্কৃতি সেটি কি করে দায়ব্ধতা প্রতিষ্ঠিত করে? এখানে যেটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল ভোটারদের সাথে প্রার্থীদের যোগাযোগের কোন স্থায়ী রাস্তা আছে কিনা। এই মুহুর্তে হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সড়কের এক পাশ দিয়ে টাকা গেলে আরেক পাশ দিয়ে ভোট যায় কিন্তু সব সময় এরকম থাকবে না। যত আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উত্তরণ হবে ততই এটি আরো বেশি ফলপ্রসূ হবে। তখন এই রাস্তার এক পাশ দিয়ে দায়বদ্ধতা ও নিষ্ঠা গেলে অন্য পাশ দিয়ে ভোট আসবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল প্রার্থীদের কাছে ভোটারদের ভোট বিক্রি করার সুযোগ আছে কিনা। এটিই হল দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার মানসিক অবকাঠামো। এর বাইরে পুলিশ সুপার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরী করেন কাজেই সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ। মন্ত্রী নিজে সংসদ সদস্যদের কাছে দায়বদ্ধ যারা আবার প্রতি ৫ বছর পর পর জনগণের মুখোমুখি হতে বাধ্য হন। এভাবেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

একদম শীর্ষ পর্যায়ে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অন্তবর্তী ধাপগুলো আরো কম। একজন প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্য হওয়ায় তিনি সাংসদদের কাছে দায়বদ্ধ যারা আবার জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। এনারা খুব ভাল করেই জানেন উল্টাপাল্টা করলে জনগণ তাদের সাইজ করে দিবে। তাহলে রাষ্ট্রপতির ব্যাপারটি কি? রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে দেশের কোন আদালত অভিযোগ গ্রহণ করতে পারেন না কিন্তু সাংসদরা তাকে অভিশংসিত করতে পারেন। এর বাইরে উচ্চতর আদালতের বিচারপতিরা রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ যিনি আবার সরাসরি ভোটের দ্বারা নির্বাচিত সাংসদদের মাধ্যমে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ।

তাহলে দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, আইনবিভাগ ও বিচারবিভাগ, এর প্রত্যেকটিই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ সাংসদদের প্রতি। অর্থাৎ জনগণের হাত অনেক লম্বা। গণতন্ত্রের বয়স কম বলে এই হাত দুর্বল হতে পারে কিন্তু হাত যে লম্বা তাতে কিন্তু কোন ভুল নেই। [এই প্যারার বাকি অংশ লেকচারের মত, রাগের মাথায় লিখে ফেলেছি। মুছলাম না, কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তরের সাথে সম্পর্ক নেই! এই লোকগুলোকেই আমরা ৫ বছর পর পর সংসদে পাঠাই। নির্বাচনের দিন আমরা যখন আঙ্গুলে কালি লাগিয়ে বুথ থেকে বের হই তখন আমাদের মনের মধ্যে হয়তো কাজ করে ধানের শীষ বা নৌকায় ভোট দেয়ার অনুভূতি - কিন্তু কাগজে কলমে এবং বাস্তবে আপনি একজন ব্যক্তিকে ভোট দেন যে কিনা ঘটনাচক্রে সেই মার্কাটি পেয়েছে। পরের ৫ বছর দেশ কিভাবে চলবে সেটি ঠিক করার দায়িত্ব আপনি আপনার ভোটের মাধ্যমে সেই ব্যক্তিকে দিয়েছেন, দলকে নয়। আপনার মত বাকি সবাইও আর কিছু ব্যক্তিকে দেয় আর এরকম ৩০০ জন ব্যক্তি মিলে যখন খারাপ ভাবে দেশ চালায় তখন আমরা দলগুলোর উপর খেপে যাই আর যখন ভাল ভাবে চালায় আমরা খুশি হই (কখনও কখনও তাও হই না, বলি আঁতাত আছে!)। দল কিন্তু ব্যক্তিদের তৈরি করে না, ব্যক্তিরাই মিলে দল গঠন করে। এরা সেই ব্যক্তি যারা আপনার ভোট না পেলে সংসদে যেতে পারত না। কিন্তু তারা যখন খারাপ ভাবে দেশ চালায় আপনি কখনও নিজের উপর রাগ করেন না। বরং তাদের সাইজ করার জন্য এবার অন্য দলের খারাপ ব্যক্তিকে সংসদে পাঠান। এ ভাবে বছরের পর বছর চালাতে থাকেন। আপনি কী বোকা তাই না? কী হতভাগা, অসহায় তাই না (আসলে বাজে কথা, আমাদের একটি বড় অংশ অলস। আমরা একটু কষ্ট করে সময় নিয়ে শ্রম দিয়ে সেই লোককে খুঁজে বের করতে রাজী না যে কিনা আগ্রহী এবং সৎ কিন্তু নতুন বলে শুরু করতে পারছে না।)? ]

তাহলে ব্যাপারটি দাঁড়াল যে রাষ্ট্রের যে কোন অংশের সাথে আপনার যোগসূত্র হল সাংসদরা, যাদের সরাসরি সাইজ করার ক্ষমতা আপনার আছে। হয়তো সেটি এখনও নিখুঁতভাবে চর্চা করতে পারেন না কিন্তু ব্যবস্থা আছে এবং একদিন সেটি নিখুঁত হবে সেই আশাও আছে। এখন দেখা যাক ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী যখন অনির্বাচিত উপদেষ্টাদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় তখন আপনার এই সাইজ করার ক্ষমতার কি অবস্থা হয়। উপদেষ্টারা দায়বদ্ধ থাকেন রাষ্ট্রপতির কাছে। কোন সমস্যা নেই আগেও অনেক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন। আর রাষ্ট্রপতি দায়বদ্ধ থাকেন সাংসদদের ... দাঁড়ান, দাঁড়ান ... হায় হায় ... একী অবস্থা! সংসদ তো ভেঙে গেছে! সাংসদরা তো আর নেই! তাহলে ব্যাপারটি কি দাঁড়াল? কখনও যদি কোন বিচারপতি, রাষ্ট্রপতি, উপদেষ্টা, সচিবের উপর আপনার মেজাজ বিগড়ে যায় আপনি কি করবেন? আপনার হাত কিন্তু এখন আর লম্বা না, ছোটও না। আপনার হাতই নেই। তার মানে হল কিছু লোক দেশ চালাচ্ছে যাদেরকে কোন কাজের জন্য জবাব চাওয়ার কোন ব্যবস্থাই কাগজে কলমে নেই। কোন কিছু কাগজে কলমে থাকলে পরে সেটি খারাপ না ভাল সে প্রশ্ন উঠে। খারাপ হলে সেটি ভাল করার উপায় খোঁজা হয়, চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নাই যদি থাকে তাহলে কি করে হবে। আপনি দেশের নাগরিক কিন্তু আইনগত ভাবেই আপনার সাইজ করার কোন ব্যবস্থা ত্রয়োদশ সংশোধনীতে রাখা হয় নি। তার মানে ব্যাপারটি কি দাঁড়াল? ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী যতদিন সরকার ছিল এবং থাকত এর একদিনও গণতন্ত্র ছিল না, থাকত না। অর্থাৎ সে কয়দিন এই দেশ সত্যিকার অর্থে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ছিল না এবং থাকত না। কারণ এটি তখন গণপ্রজাদের তন্ত্রে চালিত হওয়ার কোন আইনগত কাঠামো থাকে না।

চতুর্থ প্রশ্ন:

নির্বাচিত সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে রাষ্ট্রপতি কি প্রক্রিয়ায় জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন?

উত্তর:

যেহেতু ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে গঠিত সরকারে কোন জনপ্রতিনিধি থাকে না কাজেই জনগণের প্রতি সরকারের কোন জবাবদিহিতা থাকে না। তারা দায়বদ্ধ থাকেন রাষ্ট্রপতির প্রতি। রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার ক্ষমতা থাকে কেবল মাত্র সাংসদদের। ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে যেহেতু কোন সংসদ থাকে না কাজেই রাষ্ট্রপ্রতিকে অভিশংসনের ক্ষমতা কারো থাকে না। উল্লেখ্য রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা যায় না।

পঞ্চম প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন গুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনটিকে পরাজিত দল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে মেনে নিয়েছে?

উত্তর:

ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে গঠিত তত্ত্ববধায়ক সরকার দ্বারা অনুষ্ঠিত কোন নির্বাচনেই এখন পর্যন্ত পরাজিত দল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলে মেনে নেয়নি। প্রত্যেকটি নির্বাচনের পরেই সুক্ষ্ম ও স্থূল কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।

ষষ্ঠ প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে গঠিত কততম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অভ্যূত্থানের চেষ্টাকালে সেনাবাহিনীর প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছিল?

উত্তর:

প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অভ‌্যূত্থানের চেষ্টার অভিযোগে জেনারেল নাসিমকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এসময় প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান।

সপ্তম প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে গঠিত কততম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগের আগেই সচিবদের বদলী করে ছিলেন?

উত্তর:

দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান দায়িত্বগ্রহণের পর অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগের পূর্বেই ১৩ জন সচিব বদলী করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

অষ্টম প্রশ্ন:

কোন সরকার ত্রয়োদশ সংশোধনীর সুযোগ নেবার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়েছিলেন?

উত্তর:

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার।

নবম প্রশ্ন:

কোন সরকার ত্রয়োদশ সংশোধনীর সুযোগ নেবার জন্য বিচারপতি জ্যেষ্ঠতা লংঘন করিয়েছিলেন?

উত্তর:

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই সরকারের আমলেই জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে বিচারপতি নিয়োগের উদাহরণ আছে। কাগজে কলমে কখনই প্রমাণ করা যায় না তাদের উদ্দেশ্য ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে পছন্দের মানুষ বসানো কিন্তু অভিযোগ উঠেছেই।

দশম প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে গঠিত কততম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরী অবস্থা জারি করতে হয়েছিল?

উত্তর:

তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যা ওয়ান-ইলেভেন নামে কুখ্যাত।

এগার নম্বর প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনীর কোন অংশটির বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে? সেই শংকা কি সত্যি হয়েছে?

উত্তর:

ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য অগ্রাধিকার পাবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকরা। বিতর্কিত যে হওয়া সম্ভব ও হয়েছে সেটি অষ্টম ও নবম প্রশ্নের উত্তর থেকে বুঝাই যাচ্ছে। এছাড়া ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের ৩১১ পৃষ্ঠায় করা বিচারকের এই মন্তব্যটি উল্লেখযোগ্য - "এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। ১১-১-২০০১ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগের জনৈক বিচারপতির আপীল বিভাগে নিয়োগ উপলক্ষে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে জাজেস লাউঞ্জে এ হালকা আপ্যায়ন চলিতেছিল। এক সময়ে মনে হইল যে অনেকটা সময় অতিবাহিত হইয়াছে কিন্তু আমরা বিচারকগণ কেহই নিজ নিজ চেম্বারে ফিরিয়া যাইতেছি না এবং আদালতের কাজও বন্ধ হইয়া রহিয়াছে। তখন জানা গেল যে জাজেস লাউঞ্জে এর সম্মুখে করিডরে একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক আ্ইনজীবি মহোদয়গণের একাংশ শয়নরত থাকিয়া সংশ্লিষ্ট বিচারপতির আপীল বিভাগে নিয়োগে বিক্ষোভ প্রকাশ করিতেছেন। বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হইবার পর তদানীন্তন প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করা হইল যে তিনি নিজে শয়নরত আইনজীবি মহোদয়গণকে অনুরোধ করিলে সম্ভবত: তাহারা পথ ছাড়িয়া দিতে পারেন, কিন্তু তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি তেমন অনুরোধ করিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তৎপর কয়েকজন প্রবীণ আইনজীবি মহোদয়গণের হস্তক্ষেপে সুপ্রীম কোর্টের প্রায় ৫০ জন বিচারক দুই ঘন্টার উর্ধকাল আটক অবস্থা হইতে মুক্তি পায়। পৃথিবীর সুপ্রীম কোর্টের ইতিহাসে এইরুপ নজির আর নাই। তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি পরবর্তীকালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান। তখন দুই ঘন্টার অধিক সময় সুপ্রীম কোর্টের উভয় বিভাগের সকল আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে, কিন্তু প্রধান বিচারপতি সময়োপযোগী দৃঢ় পদক্ষেপ লইতে তখন কেন ব্যর্থ হইলেন। তাঁহার অবচেতন মনে প্রধান উপদেষ্টা হইবার আকাঙ্খাই কি তাঁহাকে প্রয়োজনীয় দৃঢ় পদক্ষেপ লইতে বাধা সৃষ্টি করিয়াছিল?"।

বারো নম্বর প্রশ্নের উত্তর:

ধরা যাক ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হল। এখন নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে একজন হাইকোর্টে এই মর্মে স্থগিতাদেশ পেল যে জনপ্রতিনিধি দ্বারা গঠিত না হওয়ায় সরকার কর আরোপ ও পূর্বে আদায়কৃত কর থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। তখন নির্বাচনের ব্যয় কি ভাবে মেটানো হবে?

উত্তর:

তখন আসলে সরকারী কোষাগার থেকে অর্থ নিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কারণ সরকারী কোষাগারের অর্থের মালিক জনগণ এবং এটি ব্যয় করতে পারে শুধুমাত্র জনপ্রতিনিধিরা। ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে জনপ্রতিনিধির কোন ধারণাই থাকে না কাজেই সরকারী কোষাগারের অর্থ ব্যয়ের কোন নৈতিক অধিকার কারো থাকে না। সরকারী কোষাগারের অর্থ ব্যয় করা হলে সেটি নিরীক্ষার দায়িত্ব অডিটর এন্ড কম্পট্রোলার জেনারেলের অফিসের। তাদের সেই রিপোর্ট আবার সংসদে পাশ করতে হয় (যদিও এটিতে এখনও হেলাফেলা করা হচ্ছে)। যেহেতু ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে কোন সংসদ থাকে না কাজেই অডিটর ও কম্প্রটোলার জেনারেলের রিপোর্টও পাশ করার কোন গণতান্ত্রিক উপায় থাকে না। কাজেই জনগণের পক্ষে কোন ভাবেই অর্থব্যয়ের কর্তৃত্ব বা নিরীক্ষা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ কারণেই কারো সেই অর্থ ব্যবহারের কোন নৈতিক অধিকার থাকে না।

তেরো নম্বর প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায়ে পরের দু মেয়াদ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে বলা হয়েছে তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার ব্যাপারে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত শর্তটি কি? কি যুক্তিতে আদালত এই শর্ত দিয়েছিল?

উত্তর:

শর্তটি হল কোনভাবেই বিচারপতিদের উপদেষ্টা বানানো যাবে না। এর পিছনে যে যুক্তি সেটি এগার নম্বর প্রশ্নের উত্তরে দেয়া আছে।

চৌদ্দ নম্বর প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায়ে পরের দু মেয়াদ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে বলা হয়েছে তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার ব্যাপারে সংসদ সদস্য সংক্রান্ত শর্তটি কি? কি যুক্তিতে আদালত এই শর্ত দিয়েছিল?

উত্তর:

মূল শর্ত হচ্ছে এনারা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

পনেরো নম্বর প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায়ে পরের দু মেয়াদ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে বলা হয়েছে তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার ব্যাপারে অনির্বাচিত ব্যক্তি সংক্রান্ত শর্তটি কি? কি যুক্তিতে আদালত এই শর্ত দিয়েছিল?

উত্তর:

ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের আপিলের রায়ের ৩৩৯ পৃষ্ঠায় খুব স্পষ্ট করে বলা হয়েছে কোনভাবেই অনির্বাচিত ব্যক্তিরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্য হতে পারবেন না।

ষোল নম্বর প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজের মত জানানোর জন্য বিরোধীদল হিসেবে বি.এন.পি. 'র দায়িত্ব কি ছিল? আদালতে বি.এন.পি. 'র কি বক্তব্য ছিল? এ ব্যাপারে বি.এন.পি. সংসদে যে মুলতবী প্রস্তাব দিয়ে ছিল তার বর্তমান অবস্থা কি এবং কেন?

উত্তর:

যেহেতু বিএনপি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, ২০০০ সালের এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখ বিএনপিকে এই মামলায় একটি প্রতিবাদী পক্ষ করা হয়েছিল। এর বাইরে বিএনপি'র ভাইস চেয়ারপার্সন টি. এইচ. খান অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছিলেন। টি. এইচ. খান বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ৫০ বছর বলবৎ থাকা উচিৎ। এর বাইরে প্রতিবাদী পক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে এফিডেভিট দাখিল করলেও বিএনপি পক্ষে বা বিপক্ষে কোন বক্তব্য দেয়নি। এক দশকেরও বেশি সময় পরে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় তখন বিএনপি এটি নিয়ে আলোচনার জন্য ২০১৩ সালের ২২শে মে সংসদে মুলতুবী প্রস্তাব জমা দেয়। তারপর কার্যউপদেষ্টা কমিটিতে এটি নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। তখন বিএনপি নিজে থেকে তেসরা জুন সেই প্রস্তাব তুলে নেয়।

সতের নম্বর প্রশ্ন:

ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজের মত জানানোর জন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব কি ছিল? এ ব্যাপারে সংসদের কার্যবিধির ১০০ ধারার যে পিটিশনের সুযোগ সেটি কোন কোন নাগরিক নিয়েছিল?

উত্তর:

সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার পরও যখন কোন নাগরিক একতরফাভাবে এটি বাতিল হওয়ার জন্য সরকারকে দোষারোপ করেন (অর্থাৎ তারা যখন বেআইনী হওয়া সত্ত্বেও এটি আবার ফিরে পেতে চান) তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এর জন্য তারা কোন চেষ্টা করেছেন নাকি কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করেছেন? সাধারণ ভাবে আমাদের সংবিধান যেকোন নাগরিককে সংসদে পিটিশন করার অধিকার দেয়। পিটিশন ব্যাপারটি হল এরকম - আপনি নাগরিক হিসেবে কোন একটি আবেদন সংসদে জানাতে চান। এখন আপনি যদি ৩৫০ জন এমপির মধ্যে একজনেরও সই জোগাড় করতে পারেন আইন অনুযায়ী সংসদ সেটি সবার সামনে পড়ে শোনাতে বাধ্য। এখন আপনি প্রতিবাদ করেছেন মানেই এই নয় যে, আপনি ইচ্ছা করে এই পিটিশনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নেননি কাজেই আপনি একজন হিপোক্রেট! কারণ হয়তো আপনার ব্যাপারটি জানাই নেই। অথবা আপনি জানলেও হয়তো ঢাকায় থাকেন না বা ঢাকায় থাকলেও এটির জন‌্য ঘোরাঘুরিতে যা খরচ হবে তা আপনি দিতে পারবেন না। কিন্তু একাধিক আইনের অধ্যাপক, সাংবাদিক, সাবেক আমলা, এনজিও কর্মী, সুশীল বুদ্ধিসমাজ সদস্য তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিপক্ষে কথা বলেছেন। সমাজের এই সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণী থেকে কেউ কি পিটিশন করেছেন? করেন নি। তাদের অনেকেই কিন্তু এমপিদের সাথে নিয়মিত উঠাবসা করেন। সেই সময়ের এমপিদের মধ্যে আর কেউ না হলেও খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই পিটিশনের জন্য সই করত!


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

৬।
প্রথম, (১৯৯৬) )লেঃ জেঃ নাসিম

০৮।
অষ্টম সংসদ (২০০১-০৬) এর পক্ষে ততকালীন আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ

নির্বাচন সাংবাদিকদের মনোরঞ্জনের উৎস নয়। নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য হল সংসদ সদস্য হিসেবে যে সবচেয়ে উপযুক্ত তাকে উঠে আসার সুযোগ করে দেয়া। নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য আপনি যাকে অপছন্দ করেন তার পরাজয় তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা নয়। নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য হল আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকে জিতে আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য পরিশ্রম করা। আর যদি তেমন কাউকে না চিনে থাকেন কষ্ট করে খোঁজখবর করে তাকে চিনে নেয়া। তার যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে সেটি তৈরি করে দেয়া যাতে সে নির্বাচনে আসতে পারে।

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সজীব এর ছবি

শেহাব দোস্ত, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত আপিলের রায়ের ব্যাপারে তোর বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য নিয়ে পোস্ট আশা করছিলাম। এতগুলো প্রশ্ন দেখে সে আশা পুরোপুরি পূরন হলো না অবশ্য। এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে উত্তর আসবে আশা করি।
ভাল ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করার কাজটা আমরা সাধারণ জনগণ করতে গেলে কেমন দাড়াবে ব্যাপারটা? পছন্দের প্রার্থীকে সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র দাড়াতে হবে, তাই তো। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য কোন দলই পাবলিকের মতামত নিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করে না। নাকি এমন কোন ব্যবস্হা চাচ্ছিস যে, পছন্দের দল থেকে পছন্দের প্রার্থী বাছাই করার ক্ষেত্রেও আমরা ভূমিকা রাখতে পারবো এমন কিছু।

শেহাব এর ছবি

দোস্ত, উত্তর লেখা শুরু করেছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে তিনটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

১) জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে জনগনের মতামতের প্রতিফলন ঘটছে কিনা?

২) একটি রাজনৈতিক দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে সে তৃণমূলে কাজ করছে এমন নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহনযোগ্য কিনা?

৩) এক সংসদ সদস্য একজন আইন প্রণেতা। আইন বুঝার এবং বিশ্লেষণ করার জন্য ন্যূনতম যে শিক্ষা দরকার সেটা একজন সংসদ সদস্যের থাকা উচিত।

বাংলাদেশে আমরা যে গণতন্ত্রের চর্চা করি তাতে যেভাবেই হোক প্রথম শর্ত পূরণ হয়, কিন্তু শেষ দুটো পূরণ হয়না। এবার বিএনপির একগুয়েমির জন্য প্রথম শর্তও পূরণ হবেনা, সরকারী দলও কমবেশি রেস্পন্সিবল। ইলেকশন যখন সিলেকশন হয়, তখন সেটা আর টেকসই গণতন্ত্র থাকেনা। দেখার বিষয় সিলেকশন হয়ে আসা আইন প্রণেতারা কতদিন টিকে থাকে?

আর হ্যা, ৭১ এর চেতনা ধারণ করে এমন কোন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি তৈরী হয়নি, তাই যা হচ্ছে তাকে বেটার অপশন মনে করে ঘুমুতে পারি।

শব্দ পথিক

অনার্য তাপস এর ছবি

এত্তগুলা প্রশ্ন!!! বুঝতেই তো হিমশিম খাইতেছি।

নির্বাচন দই না যে একে জমতে হবে!!

শেহাব এর ছবি

আমি প্রথম প্রশ্নের আংশিক উত্তর যোগ করেছি।

শেহাব এর ছবি

দ্বিতীয় প্রশ্নটির আংশিক উত্তর যোগ করেছি।

শেহাব এর ছবি

তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি।

শেহাব এর ছবি

৫ - ১০ নম্বর প্রশ্নগুলোর উত্তর যোগ করেছি।

শেহাব এর ছবি

এগার নম্বর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।

শেহাব এর ছবি

বার নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি।

শেহাব এর ছবি

তেরো নম্বর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।

শেহাব এর ছবি

চৌদ্দ নম্বর প্রশ্নের উত্তর যোগ করেছি।

শেহাব এর ছবি

পনেরো নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করলাম। প্রশ্নটি ছিল: "ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায়ে পরের দু মেয়াদ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে বলা হয়েছে তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার ব্যাপারে অনির্বাচিত ব্যক্তি সংক্রান্ত শর্তটি কি? কি যুক্তিতে আদালত এই শর্ত দিয়েছিল?"

শেহাব এর ছবি

ষোল নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন: ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজের মত জানানোর জন্য বিরোধীদল হিসেবে বি.এন.পি. 'র দায়িত্ব কি ছিল? আদালতে বি.এন.পি. 'র কি বক্তব্য ছিল? এ ব্যাপারে বি.এন.পি. সংসদে যে মুলতবী প্রস্তাব দিয়ে ছিল তার বর্তমান অবস্থা কি এবং কেন?

উত্তর: যেহেতু বিএনপি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, ২০০০ সালের এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখ বিএনপিকে এই মামলায় একটি প্রতিবাদী পক্ষ করা হয়েছিল। এর বাইরে বিএনপি'র ভাইস চেয়ারপার্সন টি. এইচ. খান অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছিলেন। টি. এইচ. খান বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ৫০ বছর বলবৎ থাকা উচিৎ। এর বাইরে প্রতিবাদী পক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে এফিডেভিট দাখিল করলেও বিএনপি পক্ষে বা বিপক্ষে কোন বক্তব্য দেয়নি। এক দশকেরও বেশি সময় পরে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় তখন বিএনপি এটি নিয়ে আলোচনার জন্য ২০১৩ সালের ২২শে মে সংসদে মুলতুবী প্রস্তাব জমা দেয়। তারপর কার্যউপদেষ্টা কমিটিতে এটি নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। তখন বিএনপি নিজে থেকে তেসরা জুন সেই প্রস্তাব তুলে নেয়।

শেহাব এর ছবি

সতের নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন: ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজের মত জানানোর জন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব কি ছিল? এ ব্যাপারে সংসদের কার্যবিধির ১০০ ধারার যে পিটিশনের সুযোগ সেটি কোন কোন নাগরিক নিয়েছিল?

উত্তর: সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার পরও যখন কোন নাগরিক একতরফাভাবে এটি বাতিল হওয়ার জন্য সরকারকে দোষারোপ করেন (অর্থাৎ তারা যখন বেআইনী হওয়া সত্ত্বেও এটি আবার ফিরে পেতে চান) তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এর জন্য তারা কোন চেষ্টা করেছেন নাকি কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করেছেন? সাধারণ ভাবে আমাদের সংবিধান যেকোন নাগরিককে সংসদে পিটিশন করার অধিকার দেয়। পিটিশন ব্যাপারটি হল এরকম - আপনি নাগরিক হিসেবে কোন একটি আবেদন সংসদে জানাতে চান। এখন আপনি যদি ৩৫০ জন এমপির মধ্যে একজনেরও সই জোগাড় করতে পারেন আইন অনুযায়ী সংসদ সেটি সবার সামনে পড়ে শোনাতে বাধ্য। এখন আপনি প্রতিবাদ করেছেন মানেই এই নয় যে, আপনি ইচ্ছা করে এই পিটিশনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নেননি কাজেই আপনি একজন হিপোক্রেট! কারণ হয়তো আপনার ব্যাপারটি জানাই নেই। অথবা আপনি জানলেও হয়তো ঢাকায় থাকেন না বা ঢাকায় থাকলেও এটির জন‌্য ঘোরাঘুরিতে যা খরচ হবে তা আপনি দিতে পারবেন না। কিন্তু একাধিক আইনের অধ্যাপক, সাংবাদিক, সাবেক আমলা, এনজিও কর্মী, সুশীল বুদ্ধিসমাজ সদস্য তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিপক্ষে কথা বলেছেন। সমাজের এই সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণী থেকে কেউ কি পিটিশন করেছেন? করেন নি। তাদের অনেকেই কিন্তু এমপিদের সাথে নিয়মিত উঠাবসা করেন। সেই সময়ের এমপিদের মধ্যে আর কেউ না হলেও খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই পিটিশনের জন্য সই করত!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।