আওয়ামী বিদ্বেষের মনস্তত্ব

শেহাব এর ছবি
লিখেছেন শেহাব (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/১২/২০১৩ - ৪:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(এটি যতটি না লেখা তার চেয়ে বেশি হল এলোমেলো করে জট পাকানো চিন্তার সুতা। সে হিসেবে এটির জায়গা হওয়া উচিৎ ফেসবুক নোটে। সচলায়তন যেহেতু লেখকদের মঞ্চ এখানে কিছুটা কুণ্ঠাভরে দিচ্ছি। আমার মূল প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে কি আসলেই "আওয়ামী বিদ্বেষ" বলে অনন্য কোন অনুভূতি আছে? নাকি গড়পরতা যেকোন রাজনৈতিক দল সাংগঠনিকভাবে এবং তার সদস্য ও সমর্থকরা ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদ্বন্ধী রাজনৈতিক দলের প্রতি যে হতাশা, ক্রোধ ও প্রতিশোধ নেওয়ার মানসিকতা সংরক্ষণ করেন তারই একটি রুপ "আওয়ামী বিদ্বেষ"? যদি "আওয়ামী বিদ্বেষ" আসলেই অনন্য ও বিশেষ হয় তাহলে আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থকরা তাদের প্রতিদ্বন্ধী দলগুলোর প্রতি যে ক্রোধ ও প্রতিশোধ নেওয়ার মানসিকতা সংরক্ষণ করেন, প্রতিদ্বন্ধী রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকরা আওয়ামী লীগ দলটির প্রতি পরিমাণ ও মানে তার চেয়ে ভিন্ন ক্রোধ ও প্রতিশোধ নেওয়ার মানসিকতা সংরক্ষণ করেন। আমার অপেশাদার পর্যবেক্ষণ হল এটি আছে। যদি এটি আসলেই সত্য হয় তাহলে তার পিছনের মনস্তত্বটি কি?)

নি:সন্দেহে আমাদের দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হয় তাতেও তারা দেশময় পপুলার ভোটে এগিয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় আসন না পেলেও ভোটসংখ্যার অনুপাতে তারা সবসময় এগিয়ে থাকে। এখন বলুন তো বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘৃণিত দল কোনটি? উত্তর হল আওয়ামী লীগ। যারা জামাত বলে ফেলেছেন তাদের উত্তর ভুল হয়েছে কারণ জামাত কোন রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সন্ত্রাসী দল যারা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আগ্রহে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পেয়েছে ঘটনা চক্রে। তারপর ধর্মের মলম আর হাজমোলা বিক্রি করেছে কয়েক দশক এবং এখন শাহবাগের ঠেলায় তাদের ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলে গেছে।

তাহলে কেন আওয়ামী লীগ সবচেয়ে ঘৃণিত দল? কারণ বাংলাদেশে এমন রাজনৈতিক আছে যাদের আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত মতাদর্শই হল আওয়মী লীগকে ঠেকানো! আওয়ামী লীগ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গৌরবজনক ফসল বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে একমত (একদম নিঁখুতভাবে না হলেও, কাগজে কলমে এবং বেশিরভাগ সময় চর্চায়)। এই আদর্শিক অবস্থানকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে, না কোন আত্মিক বা আদর্শিক বা নৈতিক কারণে নয়, শুধুমাত্র শুধুমাত্র শুধুমাত্র এই আদর্শিক অবস্থানকে ঘায়েল করার জন্যই আস্ত একটি রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে যারা ধর্মের মলম বিক্রি করবে ধর্মভীরু মানুষদের কাছে পরিকল্পিত ভাবে ভুলভাল তথ্য পৌঁছে দিয়ে। আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন কোন দলকে ঘায়েল করা কি করে আরেকটি রাজনৈতিক দলের আদর্শ হতে পারে বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতার মত একটি চমৎকার জিনিসকে ঘায়েল করা কি করে রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে? কেন এটি হতে পারে সেটি আমি জানতাম যদি সেই আদর্শ আমি প্রস্তাব করতাম। তবে এটির সুবিধা বুঝা যায়। নিজে একটি আরো ভাল বিকল্প আদর্শ প্রস্তাব করে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করতে হলে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের মতই দশকের পর দশক খেটে খেটে মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছাতে হবে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন কিংবা মতিয়া চৌধুরীর মত নেতৃত্ব বিকশিত হবে। কে অত কষ্ট করে? তার চেয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসের কারণে রেগে থাকা মানুষের আক্রোশের উপর ভর করে যদি কোনমতে টেনেটুনে পাশ করা যায় ক্ষতি কি? কোন দলের খারাপ কাজের নিন্দার মধ্যে আপত্তির কিছু নেই। আওয়ামী লীগ নিয়মিতই নিন্দার যোগ্য কাজ করে থাকে। আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না, আওয়ামী লীগের ভাল কাজের নিন্দাও একটি দল আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মতাদর্শের অংশ হিসেবে নিয়ে নিয়েছে। বিএনপি 'র ওয়েবসাইটে তাদের আইডিওলজী কি আছে নিচে দেখুন!

যাই হোক এই লেখা বিএনপি'র জন্য না। এই লেখা বাংলাদেশের 'সবচেয়ে নন্দিত ও নিন্দিত' দল আওয়ামী লীগের জন্য। মূলত: নিন্দাগুলোই এ লেখার মূল বিষয়।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করি। এ বছরের গোড়ার দিকেও ধূলা ছাড়া আমার একটাই অ্যালার্জী ছিল - নাম শেখ হাসিনা। পড়াশোনার অভ্যাস কিছুটা বাড়ার কারণে ইদানীং আমি অ্যালার্জীর ব্যাপারটি লজিক দিয়ে প্রতিস্থাপন করা চেষ্টা করছি।

তো আওয়ামী লীগের প্রতি নিন্দার মেকানিজম কি? একটি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ। নিচে যেসব মেকানিজম বলা হবে সেগুলোর অনেকগুলোই কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বিচ্ছিন্নভাবে অন্য দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে করেছে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এটি তাদের মূল ট্রেইট না। আমি দুটিকে সমান পাল্লায় দেখতে রাজি না। কারণ আওয়ামী লীগকেই তার বিরোধী দলগুলো তাদের নিজেদের মাণদন্ডে বিচার করে না। আওয়ামী লীগের জন্য তাদের স্পেশাল ট্রিটমেন্ট। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় দলটি তো রীতিমত মতাদর্শই রচনা করেছে আওয়ামী লীগকে ঘিরে। আওয়ামী লীগের প্রতি এই মনস্তত্ত্ব বিকশিত ও প্রচারিত হয়েছে খুবই অর্গানাইজড ও সিস্টেমেটিক উপায়ে, রীতিমত টার্গেট করে পয়সা খরচ করে।

জাসদ দিয়েই শুরু করি। বাল্টিমোরে আমাদের একজন পরিচিত আছেন। আমরা মামা বলে ডাকি, তিনি আবার প্রাক্তন জাসদের বিপ্লবী। ঘরোয়া আড্ডাতেই একদিন শেখ কামালের বিরুদ্ধে ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ উঠায় তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম এটির কাহিনী কি। তিনি বললেন, "এটি আমরাই ছড়িয়েছিলাম আর কে?" কি অদ্ভুৎ তাই না? চাইলেই তো আওয়ামী লীগের আসলেই যেসব ভুল সেগুলো ধরে ধরে সমালোচনা, প্রতিবাদ, নিন্দা এবং সেগুলোর পথে আইনী বাধাও সৃষ্টি করা যেত। তা না করে এই শর্টকাট পথে যাওয়ার কারণ কি? মিথ্যা বলে কি শেষ মেশ জাসদ ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল? এটা কি ধরণের মনস্তত্ব যেটি মানুষকে দেখতে দেয় না যে সে যে বুদ্ধি বের করেছে সেটি সময়ের পরীক্ষায় টিকবে না?

এরপর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের কথা বলা যাক। বঙ্গবন্ধুকে কিন্তু তার প্রতিদ্বন্ধী রাজনীতিকরা হত্যা করেন নি। করেছেন কিছু জুনিয়র অফিসার। একটা লোকের অপরাধ কি এমন হতে পারে যে তার জন্য তার বাচ্চা ছেলেকেও মেরে ফেলতে হয়? এ করে কি তারা শেখ পরিবারকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে পেরেছে? যে এ ধরণের কাজ করে তার চিন্তাপ্রক্রিয়াটা কি?

তারপর ধরা যাক জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট যখন শোকবাণীতে তাকে 'স্বাধীনতার ঘোষক' উপাধি দিলেন। তিনি ধরেই নিলেন বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের কোন একটি সিল লাগাতে হবে। সেটি কিন্তু জিয়াউর রহমানের ছিলও, তিনি একসময় সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তাহলে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠককে ঘোষক বলে দুই নম্বুরী করতে হল কেন? শেখ মুজিবের হিমালয়সম ব্যক্তিত্বের বিপরীতে দাঁড় করানোর জন্য এই হাইহিল অলা জুতা আসলেই কি দরকার ছিল? তার চেয়ে শেখ মুজিবের মত দশকের পর দশক বাংলার মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করাটা বেশি টেকসই হত না? শেষমেশ কি হল? এখন তো ঠিকই সবাই আসল ব্যাপার জেনে গেছে। তাহলে কি সেই অসুস্থ মনোবৃত্তি যেটি মানুষকে ভুলিয়ে দেয় যে সে যা করতে যাচ্ছে সেটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না?

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথাই ধরি। তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি এই দুর্ভিক্ষে যে অবদান রেখেছিল সেটির উপর ভিত্তি করে সেই সময়ের মানুষেরা আন্দোলন গড়ে তুললে কোন সমস্যা থাকা উচিত নয়। কিন্তু আফতাব আহমেদ নামের যে আলোকচিত্রী বাসন্তী নামে একটি মেয়েকে জাল পড়িয়ে ছবি তুলে সেটি দুর্ভিক্ষের ছবি হিসেবে চালিয়েছিল সে সেই কাজটি করার নৈতিক ভিত্তিটি পেল কি করে? ধরলাম সে পরিবারের কাছে গোপন রেখেছিল কিন্তু সহকর্মীরা নিশ্চয় জানত। তারা নিজেদের মধ্যে নৈতিক বোঝাপড়া নিশ্চয়ই করেছিল। কিছু একটা তাদের নিশ্চয়ই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যাতে তারা এই ঐতিহাসিক সত্য ভুলে গিয়েছিল যে প্রত্যেক মিথ্যাই কোন না কোন সময় ধরা পড়ে যায়।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ ঘনঘন তোলা হয় সেটি হল আওয়ামী লীগ ইসলামের শত্রু। এনিয়ে একবার নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার ভবিষ্যদ্বানীও ছিল যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। আরেকটি হল পুরোনো অভিযোগ যে ভারতের কাছে আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে। দেশ বিক্রি করা যে ঠিক কি সেটি কেউ কখনও পরিষ্কার করে বলে নি। এটুকু বোঝা যায় যে বাংলাদেশের ভূখন্ড দখল করা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথ্যা নেই। তারা যদি বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে ভূখন্ড দখল করার দরকারই নেই। অর্থনীতির দিক দিয়ে চিন্তা করলে দেশবিক্রির অভিযোগটি ঠিক না। কারণ আমাদের মোট আমদানীর যে অংশ ভারত থেকে আসে তার অনুপাত দিন দিন কমছে, বাড়ছে না। আমার এক বড়ভাইয়ের এই ব্যাপারে মূল্যায়নটি খুব ইন্টারেসটিং। ওনার বক্তব্য হল আওয়ামী লীগ যে ইসলাম বিরোধী দল নয় বা তারা যে নিজেদের স্বার্থেই ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করবে না এই কথাগুলো যারা অভিযোগগুলো করে তারাও জানে। তারা যখন কোন লেখায় এই দুটি ব্যাপার উল্লেখ করে এগুলো সেই লেখার মূল বক্তব্য থাকে না। এই অভিযোগগুলো দিয়ে আগে তারা পাঠকের মুড সেট করে নেয় তারপর আসল কথা ছাড়ে। প্রশ্ন হল আপনার যদি উদ্দেশ্য থাকে আওয়ামী লীগ যে খারাপ কাজটি করেছে তা রেকটিফাই করা বা তারা যদি সেটি সংশোধন করতে রাজী না হয় তাহলে শাস্তি দেয়া তার কোনোটির জন্যই তো মিথ্যা কথা বলার দরকার পড়ে না। তাহলে যারা এই কাজটি করে তাদের চিন্তাপ্রক্রিয়া কি করে কাজ করে?

২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা ধরা যাক। এই ব্যাপারটি তো খুবই অদ্ভুৎ যে আপনি আপনার বিপক্ষের লোকদের পছন্দ করেননা বলে তাদের নেত্রীকে মেরে ফেলবেন। এরকম তো না যে তাদের কোন ভুল নেই, দোষ নেই, অন্যায় নেই। সেগুলো ধরে ধরে যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করা যায় তার উদাহরণ তো আছেই। তাহলে শর্টকাটে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার বুদ্ধিটি কেন আসবে? এটা কেমন বিদ্বেষ যেটি আপনার বিবেচনাশক্তিকে অন্ধ করে দেয়? তারপরও যে কিছু মানুষ এই দলকে সমর্থন করে সেটি কি জন্য? এটি কি সেই দলের প্রতি সমর্থন নাকি আওয়ামী লীগের প্রতি রাগ থেকে আসা প্রতিক্রিয়া? সেই রাগের মনস্তত্ব কি? শুধুই বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত নেতা কর্মীদের দৌরাত্ম্য নাকি তার পাশাপাশি মিথ্যা গালগল্প ছড়ানোর ফলেও যাদের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব না তাদের মেজাজ বিগড়ে যাওয়া?

আমার এক বন্ধু একসময় বিতর্কিত মানবাধিকার সংগঠন অধিকারে কাজ করেছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আদিলুর রহমান শুভ্র যখন হেফাজতের জন্য একটি দুই নম্বর তালিকা তৈরি করেছিল সেটি নিয়ে সংগঠনের কর্মীদের মাঝে নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা কি করে তৈরি হয়েছিল। তার মতে আদিলুর রহমানের ব্যাখ্যা ছিল 'যেহেতু এই মুহুর্তে যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে হবে কাজেই তার জন্য যদি আরেকটি কম খারাপ সংগঠনের সাথে মিলে দুই নম্বুরী করে হলেও কাজটি করা যায় তাহলে সেটি তুলনামূলকভাবে নৈতিক"! এরকম অদ্ভুৎ চিন্তা আসে কেন? আর সেটি তার সহকর্মীরা হজম করেন কেন? তাদের চিন্তা প্রক্রিয়াটি কি?

আনু মুহম্মদ যখন ভারতে কয়লাখনি পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশি হেনস্তার স্বীকার হলেন তখন আমি এক ভারতীয় বামপন্থী কর্মীর (শ্যাম কে মন্ডল) কাছে জানলাম তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে কয়লাখনি এলাকায় ঢুকে গিয়েছিলেন। এটি নিয়ে কল্লোল মুস্তফা যখন লিখলেন তার টোন ছিল সাম্রাজ্যবাদী ভারত আর তাদের স্বার্থের দোসর আওয়ামী লীগের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাবে এই ভয়ে এই হয়রানী। ট্যুরিস্ট যখন কি পয়েন্ট ইনস্টলেশনে ঢুকে ছবি তুলবে তাকে বাধা দেয়া পুলিশের চাকরীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাহলে এই ব্যাপারটিকে এরকম মিথ্যার মোড়কে উপস্থাপন করা কেন? পরিবেশ আন্দোলনের মত একটি চমৎকার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলার আদৌ কি দরকার আছে? এটা ছাড়া কি আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা যেত না? আওয়ামী লীগের আমলে তো পরিবেশ মন্ত্রণালয় একদম নিখুঁতভাবে চলছে না। তাদের কাজে কর্মে ত্রুটি ধরতে চাইলে তো এমনিই ধরা যেত। এর জন্য মিথ্যা কথা বলার দরকারটি কি? এই মানসিকতার উৎপত্তি কোথায়?

(এরকম লেখা জীবনে লিখি নাই। চিন্তার সূতার জট এখন চিন্তার উলের বান্ডিলে পরিণত হয়েছে!!!)

আওয়ামী বিদ্বেষের কিছু সুনির্দিষ্ট কেন্দ্র আছ: যেমন অনলাইনে বাঁশের কেল্লা, অফলাইনে সংগ্রাম, আমারদেশ ইত্যাদি। আমার পর্যবেক্ষণ বলে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরণের কোন সুনির্দিষ্ট কেন্দ সৃষ্টি করেনি। তাদের প্রচারণার মূল কৌশল মানুষের মনে সন্দেহ বা দ্বিধাদ্বন্ধ ঢুকিয়ে দেয়া নয়। তারা যেটি করে সেটি হল আত্মসমালোচনার ধারে কাছে না গিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের ভাল কাজের ঢোল পিটিয়ে যায়। ঢোল পিটানো অনৈতিক নয় কিন্তু আত্মসমালোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একারণে আমার কাছে মনে হয় "আওয়ামী বিদ্বেষ", "বিএনপি বিদ্বেষ" (আদৌ যদি সেটি থেকে থাকে) এর চেয়ে আলাদা। একজন ভাল মনস্তত্ববিদ বলতে পারবেন আদৌ আমার অনুমান সঠিক কিনা।

কিছুদিন আগে আমি প্রথম আলোর সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মিজানুর রহমান খানকে বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ছাপা হওয়া তার একটি লেখার প্রতিক্রিয়ায় নিচের ইমেইলটি লিখেছিলাম:

মিজান সাহেব,

আপনার আজকের লেখার নিচের কথাগুলিতে আমি যুক্তির অসারতা খুঁজে পাচ্ছি।

"সেনাছাউনিতে জন্ম নেওয়া এরশাদের সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী জাতীয় পার্টির কাছে বঙ্গবন্ধু, ভাসানী, সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী লীগকে খাটো করা হয়েছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি কতটা নিচে নামালেন শেখ হাসিনা!"

সেনাছাউনিতে জন্ম নেওয়া খালেদা জিয়ার সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী বি.এন.পি. যদি এই সরকারে অংশগ্রহণ করত তাহলে কিন্তু ঠিকই এই সরকার হয়ে যেত আদর্শ সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার। তখন কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা আর মৌলবাদ কোন সমস্যা হত না! একজন সাংবাদিক হিসেবে যুক্তির ব্যাপারে আপনার সৎ হতে হবে। আপনার যদি নির্বাচলীনকালীন সরকারে সাম্প্রদায়িক দলের ব্যাপারে আপত্তি থাকে তাহলে প্রথমেই বি.এন.পি. বাদ পড়ে যায়। কিন্তু আপনি চান বি.এন.পি. আসুক। তাহলে মুখে বললেও সাম্প্রদায়িকতা আসলে আপনার জন্য সমস্যা না যদি সেটি বি.এন.পি. করে, তাই না?

আপনার সমালোচনার মূল লক্ষ্য যদি শাসনব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার না হয়ে ব্যক্তি শেখ হাসিনা হয় তাহলে কিন্তু আপনি অবচেতন মনে আপনার উপর তার নৈতিক ও সারস্বত শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিচ্ছেন!

শেহাব

একই ভাবে একটি দল বা তার কর্মী-সমর্থকদের রাজনীতি চর্চার মূল ধারা যদি নিজের আদর্শ ও কাজ প্রচার না হয়ে প্রতিদ্বন্ধী দলের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনে বক্তব্যের আড়ালে আড়ালে মিথ্যা সন্দেহ ঢুকিয়ে দেওয়া তাহলে তারা এর মাধ্যমে নিজেদের উপর প্রতিদ্বন্ধী দলটির নৈতিক, আদর্শিক ও সারস্বত শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেয়। কল্লোল মুস্তফা বা খালেদা জিয়া কি সেটি বুঝতে পারেন?

আপডেট: এর পরে কাছাকাছি শিরোনামে আরেকটি লেখা লিখেছিলাম: আওয়ামী বিদ্বেষের নাকতত্ত্ব


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১। মিজান সাহেব কি উত্তর দিয়েছিলেন? চিন্তিত

২। আমার বহুদিনের হাইপথিসিস ছিল বিএনপির মূল ম্যানপাওয়ার সাপ্লাই জাসদের, যেকারনে জাসদ ২ বছরের মাথায় পুরো সাইনবোর্ড-সর্বস্ব হয়ে যায়... ইদানীং মনে হচ্ছে বিএনপির মূলনীতি টাও জাসদের কপিপেস্ট ইয়ে, মানে... নাকি দুটো আসলে পরিপূরক? আমিও জট পাকায় ফেললাম...

৩। বহুদলীয় গণতন্ত্র ইজ ডেড (সিন্স ১৯৭৭), লং লিভ বহুদলীয় গণতন্ত্র হাসি

আওয়ামী বিদ্বেষের কিছু সুনির্দিষ্ট কেন্দ্র আছ: যেমন অনলাইনে বাঁশের কেল্লা, অফলাইনে সংগ্রাম, আমারদেশ ইত্যাদি। আমার পর্যবেক্ষণ বলে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরণের কোন সুনির্দিষ্ট কেন্দ সৃষ্টি করেনি। তাদের প্রচারণার মূল কৌশল মানুষের মনে সন্দেহ বা দ্বিধাদ্বন্ধ ঢুকিয়ে দেয়া নয়। তারা যেটি করে সেটি হল আত্মসমালোচনার ধারে কাছে না গিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের ভাল কাজের ঢোল পিটিয়ে যায়। ঢোল পিটানো অনৈতিক নয় কিন্তু আত্মসমালোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চলুক চলুক চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুরঞ্জনা এর ছবি

আপনার চিন্তার জট অত্যন্ত গোছানো, পড়ে চমৎকৃত হলাম।

আপনার ভাবনায় আসা প্রশ্নগুলো অতি-সরলীকরণে দাঁড়ায় এরকম - আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপযোগী অনেক অকাট্য সত্য কারণ থাকা স্বত্বেও, কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে বিরোধী-পক্ষ সবসময় বানোয়াট প্রোপাগান্ডার ওপর বেশি নির্ভর করে?

আমার নিজস্ব মতামত হচ্ছে, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে যারা সরব, তারা আমাদের দেশের মানুষকে অত্যন্ত নির্বোধ মনে করেন। এই নির্বুদ্ধিতার উপর সওয়ার হয়ে তারা দেশে ক্ষমতায় আসীন হতে চান।

আর দশটা ভণ্ড পীর, পকেটমার, জোচ্চোরের মত এরাও ভাবেন, সাধারণ মানুষ বোকা। নানারকম মিথ্যা বলে, লোক ঠকিয়ে নিজেরা খুব ভালো থাকা যায়। যদি তাদের বুদ্ধিমত্তা একটু ধারালো হতো, তবে বুঝতে পারতেন মিথ্যা বলে আসলে খুব বেশিদূর যাওয়া যায় না, মিথ্যার আশ্রয় ধোপে টিকবে না। মিথ্যা হাস্যকর রকমের দুর্বল বর্ম। হাসি

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

তানিম এহসান এর ছবি

আমার নিজস্ব মতামত হচ্ছে, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে যারা সরব, তারা আমাদের দেশের মানুষকে অত্যন্ত নির্বোধ মনে করেন। আসলেই নির্বোধ (অকালপক্ব বহু মানুষ-ও এদের অংশ হতে পারে মনে হয়!) এবং আত্মপরিচয় নিয়ে সংকটে ভোগা একটা বৃহৎ শ্রেণী আছে বাংলাদেশে, সব দেশেই মনে হয় আছে। এই প্রতিপক্ষ যারা তারা সবাই যুগ যুগ ধরে এই কাজগুলো করে এসেছে এবং এদের বেশিরভাগই কিন্তু বঙ্গবন্ধু’র কাছ থেকে নানা সময় সুবিধা নিয়েছে, আকাশের মত বিশাল হৃদয়ের অধিকারী একজন মানুষের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার তালিকা যদি তৈরি করা হয় তাহলে এই লোকগুলো’র মুখোশ খুলে আসবে। আমরা শুধু দুইটা নাম চিন্তা করি: ১) মওদুদ আহমেদ ২) আসম রব। তারা যাদের উত্তরসূরি তাদের নামগুলো কিন্তু প্রাপ্য কুখ্যাতি বুঝে পায়নি এখনো, ১) মশিউর রহমান যাদু মিয়া ২) খান-এ-সবুর... এমনকি এই দুইজনের কবর হয়েছে সংসদ ভবন সংলগ্ন এলাকায়, ভাবা যায়? নিজস্ব অপরাধের কারণে একটা কমপ্লেক্স কাজ করে মানুষের ভেতর, শিক্ষিত শ্রেণীর বেলায় সেটা ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এক মওদুদ আহমেদ সবসময় ক্ষমতার পাশাপাশি নিজেকে ‘মওজুদ’ রাখার চেষ্টা করবেই কারণ তার লুকোনোর বহু কিছু আছে। অপরাধ মনস্তত্ব এইবিষয়টিতে কিভাবে আলোকপাত করে জানার খুব আগ্রহ হচ্ছে।

নিচে হিমু ভাইয়ের একটা মন্তব্য আছে বিত্তশালী লোকদের অবস্থান সম্পর্কে। পাশাপাশি, মুসলিম লীগ বলে একটা বৃহৎ সংগঠিত দল মুক্তিযুদ্ধের পর রাজনীতির প্রকাশ্য মাঠ থেকে উধাও হয়ে গেলেও মানুষগুলো উধাও হয়ে যায়নি, তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি-ও কমেনি খুব একটা, সামাজিক যে সংকট তৈরি হয়েছিলো সেটাকে ঠিক করে ফেলার মত যথেষ্ট সামর্থ্য তাদের ছিলো; তারুণ্য নির্ভর আওয়ামী লীগ’কে তারা কোনদিন মেনে নিতে পারেনি, পাশাপাশি এই তরুণদের একটা বড় অংশ তৎকালীন ‘আজরফ’ পরিবারগুলো থেকে আসেননি, তারা মাঠের মানুষ কিংবা তথাকথিত নিম্নশ্রেণীর মানুষ। মাত্র দশমাস আগে প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী এইসব জোতদার, ধনিক শ্রেণী সব সামাজিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে নপুংসক হয়ে বসে থাকেনি, বরং তাদের মানসিক পঙ্গুত্বের বিষয়টা একটা কৌশল হিসেবে কাজে লাগিয়ে গেছে, মানসিক একটা যুদ্ধ চালিয়ে গেছে চারদিকে, তারা বরং তাদের উপর নির্ভরশীল মানুষগুলো’কে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে ধীরে ধীরে। এর সাথে যোগ হয়েছে জাসদের সশস্ত্র আন্দোলন দমনে রক্ষীবাহিনী’র ভূমিকা নিয়ে প্রচুর কাহিনী --- এই বিষয়টি নিয়ে এখনো বহু কাজ করা বাকি আছে।

যে কারণে প্রতিমন্তব্য করা। একটা দল নির্বোধ না একদম-ই, কোনদিন-ও নয়, বরং সতর্ক শয়তান। যারা সরাসরি কিংবা কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি, পালিয়ে থেকেছে কিংবা কোনদিন যুদ্ধে যাবে-না বলে মুক্তিবাহিনীর কাছে-ও ভাল থেকেছে আবার শান্তি-কমিটি’র কাছে-ও ভাল থেকেছে --- এমন কেউ ছিলো-ই না এটা হতে পারে না। জাহাঙ্গীরনগরে প্রথম একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছিলো নিজের ভেতর, শাহবাগ আন্দোলনের পর থেকে এই বিষয়টা এখন আমি মানি, প্রচুর মানুষ কোনদিন কোন যুদ্ধে যাবে-না বলে শৈশবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। এরা মুক্তিযুদ্ধের পর আরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা সাজার চেষ্টা করেছে, ক্ষতি করেছে তার-চাইতেও বেশি, পাশাপাশি যারা পারেনি তারা ল্যাজ জুটিয়েছে। এই দল’টা সবচাইতে ভয়ংকর, এবং এই দলে তৎকালীন সুশীল জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ ছিলো, ছিলো হিমু ভাইয়ের বলা বিত্তশালী’দের একটা দল --- এরা একটা ‘ব্রিজিং’ গ্রুপ, দুইটা পক্ষের মধ্যে সংযোগ সেতু হিসেবে কাজ করে-- আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে যারা ঘোষণা দিয়ে বিরোধিতা করে এই পক্ষ আর যারা নির্বোধ কিংবা অকালপক্ব তাদের মাঝখানে এই সতর্ক শয়তান গ্রুপটি কৌশলে কাজ করে যায়। এরা নির্বোধ নয়।

আজকের বাংলাদেশে-ও এইরকম একটা আপাত সুবোধ কিন্তু নিজস্ব রণকৌশলে সুবিধা আদায় করে নিয়ে যাওয়া একটা গ্রুপ কিন্তু আমরা দেখতে পাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

১। কয়েকদিন আগে এক টকশোতে বিম্পির সাবেক এক এম্পি বললো আমরা আওয়ামিলীগকে সব সময় অনুসরন করি। ওরা যা করে আমরা তাই করি। তারা জামাতের সাথে প্রথম জোট করে আন্দোলন করেছিলো তাই আমরা ও জামাতকে সাথে নিয়ে এখন আন্দোলন করছি, তারা প্রথম বাসে গান পাউডার মেরে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছিলো ( পরে আমরা জেনেছি এটা জজমিয়ার মতো আরেকটি নাটক ছিলো) । তারা করলে দোষ না আর আমরা করলে দোষ? বিপক্ষ দলের ভুলকেও যারা আদর্শ হিসাবে মেনে নেয় তাদের কাছে আদর্শ আশা করা মানে বোকার সাগরে বাস করা।।

২। আওয়ামি আর বিম্পির সাপোর্টারদের সাথে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। বেশিভাগ বিম্পি ভক্তরা বইমুখী না, তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান হলো তাদের নেতাদের মুখ থেকে শুনা বুলি। নিজেরা যাচাই বাচাই করার জ্ঞান আর ইচ্ছে কোনটাই তাদের বেশিভাগ সাপোর্টারদের নেই। বাশের কেল্লা, আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, থেকে তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জিত হয়। আমার আশে পাশে যত বিম্পি সাপোর্টার আমি এই জীবনে দেখেছি তাদের সবাই এই ক্যাটাগরিতে পড়ে, দেশভাগ তো দূরের কথা তারা মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্কেই জ্ঞান রাখে না। আমি তাদেরকে যদি বলি ভাই একটু ইতিহাস সম্পর্কে পড়ে আসেন তখন বলবে কার বই, ওগুলোতে আওয়ামিলীগের লেখা? এর মানে এরা এমন ভাবে ব্রেইনওয়াশ হয়েছে যে বইকেও অবিশ্বাস করে, তাদের কাছে একমাত্র সত্যের বাণী ছড়ায় মিথ্যা ফখরুল,ম্যাড়াম গোলাপি, বাশের কেল্লা আর আমার দেশ।

৩। আওয়ামি সাপোর্টার রা কিছুটা হলেও ইতিহাস সম্পরেক জ্ঞান রাখে, তারা ব্যাক্তি জীবনে ন্যায় নীতি আদর্শ আর মুক্তিযুদ্ধকে নিজের মাঝে ধারন করতে চেষ্টা করে (এটা আমার একান্ত নিজস্ব মতামত আর অভিজ্ঞতা)। তাই আওয়ামিলীগ যখন ভুল করে তখন তারাই হয় আওয়ামিলীগের সবচেয়ে বড় সমালোচক হয়। কিন্তু বিম্পির কাউকে দেখবেন না যে বিম্পির সমালোচনা করছে, অনন্ত আমি দেখিনি। এখন শাহবাগের আন্দোলনের পরে দুই একজন নিজে ছাগু না সেটা প্রমান করতে গিয়ে বিম্পির সমালোচনা করে তবে সেটা হয় এমন

আমি শেখ মুজিব আর জিয়াকে সম্মান করি কিন্তু খালেদা হাসিনা দুটোই ঘৃনা করি


আর বেশিভাগ সাপোর্টারা এমনভাবে ব্রেইন ওয়াশ হয়েছে যে বিম্পির পক্ষের লোক ছাড়া তাদের কাছে আর কারো কথা বিশ্বাসযোগ্য না, ওগুলো আওয়ামিলীগের ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দেয়। মিথ্যাচার যে শিল্পের পর্যায়ে যেতে পারে এবং মিথ্যে প্রচার করতে করতে একদিন যে তা সত্যের মতো প্রতিষ্ঠিত করে ফেলা যায় তার উৎকৃষ্ট সব প্রমাণ বিম্পি-জামাত অসংখ্য বার দেখিয়েছে। এই জায়গাতে এসে আওয়ামিলীগ, বিম্পির কাছে রাজনৈতিক ভাবে পিছিয়ে গেছে। কারন বাঙালি গুজব প্রিয় জাতি, একবার গুজব ছড়িয়ে দিতে পারলে সেটা মিথ্যে বলে প্রমাণ করার আগ পর্যন্ত বেশিভাগ মানুষের মনে গেঁথে যায়, পরে যতই মিথ্যে প্রমাণ হোক বেশিভাগ মানুষ সেই গুজব থেকে সরে আসে না। দু:খজনক হলেও সত্যি এই দেশের বেশিভাগ মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত আর যারা শিক্ষিত তাদের মাঝেও সুশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা খুবি নগন্য।

মাসুদ সজীব

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

ফাইয়াজ জামাল এর ছবি

চমত্কার লেখা। আওয়ামী বিরোধিতার স্বরূপ উন্মোচন করা অত্যন্ত কঠিন। বিভিন্ন গ্রুপ বিভিন্ন কারণে আওয়ামী বিরোধিতা করেছে, করছে। তবে mass level এ আওয়ামী বিরোধিতার মূল কারণ আসলে আওয়ামী বিরোধী প্রচার, যা ১৯৭৪ থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত চলছে। আর এই প্রচারে ইন্ধন যোগানোর জন্য একটি শক্তিশালী সংখ্যালঘু (ধর্মীয় নয়) গ্রুপ ১৯৭০ সাল থেকেই ছিল।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার প্রায় ৭৫% ভোট পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। বাকি ২৫% ভোটের পরিপূর্ণ হিসাব অনলাইনে না থাকলেও দেখলাম জামাতে ইসলামী পেয়েছিল ৬% ভোট, আর মুসলিম লীগ, পি ডি পি সহ ডানপন্থী দলগুলো আরো ৫-৬% ভোট পেয়েছিল। ১৯৭১ এর পর এই দলগুলো নিষিদ্ধ হলেও ৭৩ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট কিন্তু সেই ৭৫%ই রয়ে যায়। মস্কোপন্থী ন্যাপ পায় প্রায় ৮% ভোট, জাসদ ৬% এবং চীনপন্থী ন্যাপ (ভাসানী) প্রায় ৫% ভোট। এর মধ্যে মস্কোপন্থী ন্যাপ আওয়ামী ঘেষা হিসেবে পরিচিত হলেও প্রায় ১৫% ভোট কিন্তু আওয়ামী বিরোধী দলগুলো পেয়েছিল বিজয়ের দেড় বছরের মাথায়ই। পাকিস্তানপন্থী দল গুলোর নির্বাচনে অনুপস্থিতির কারণে পাকিস্তানপন্থী ভোটাররা অনেকাংশেই ভোট দানে নির্বৃত্ত থাকার কথা। যদি এই ভোট না দেয়া গ্রুপকে আমলে নেয়া হয়, তাহলে আওয়ামী বিরোধী ভোটারের সংখ্যা ১৯৭৩ সালেই প্রায় ১৮-১৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল বলে ধারণা করি।

এই ১৮ শতাংশই পরবর্তিতে আওয়ামী বিরোধী প্রচারণার মূল উত্স ও গ্রাহক হিসেবে ছিল। দেশ চালানোতে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা তো ছিলই: প্রত্যন্ত অঞ্চলে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে লুটপাট ও সন্ত্রাস, এমনকি খোদ ঢাকা শহরে গাজী গোলাম মোস্তফার মত আওয়ামী নেতাদের যথেচ্ছাচার সামাল দিতে ব্যর্থতা, ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামী বিরোধী চেতনাকে শক্তিশালী করে। এই ব্যর্থতাকে পুঁজি করার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ, বিপক্ষ নির্বিশেষে আওয়ামী বিরোধী গ্রুপগুলো একাট্টা ছিল। একদিকে পাকিস্তান ফেরত অফিসারদের সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্রে যোগদান, অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের পদোন্নতি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি প্রশাসনিক শৃঙ্খলাকে ব্যাহত করে। এই বিশৃঙ্খলা আওয়ামী বিরোধী গুজবগুলো, সত্য মিথ্যা যাই হোক, জনমনে প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৭৪ এ ঢাকায় বসবাসরত প্রায় সকল শিক্ষিত মানুষই শেখ কামালের ব্যাঙ্ক ডাকাতির কথা বিশ্বাস করেন। নারী অপহরণ সহ বহু অভিযোগে শেখ কামালকে অভিযুক্ত করেন যার দায় আসলে শেখ কামালের ছিল না। এই অপপ্রচার মোকাবেলার কোনো চেষ্টা আওয়ামী লীগের তত্কালীন নেতৃবৃন্দের ছিল বলে মনে হয় না, যার কারণে অপপ্রচারের শেকড় আরো দৃঢ় হয়। এত অপপ্রচার সত্বেও আওয়ামী বিরোধী গ্রুপ দেশের জনমনে বিশাল কোনো প্রভাব ফেলতে পেরেছিলেন বলে মনে হয়না, কারণ তা হলে শেখ মুজিবকে হত্যা করা জরুরি হয়ে পড়ত না। কিন্তু শিক্ষিত শ্রেনীর বড় একটা অংশ যে ক্রমশ আওয়ামী বিরোধী হয়ে উঠছিল, সেটা মনে হয় সকলেই স্বীকার করেন।

তবে একটা বিষয় সব সময়ই ছিল, তা হলো ভারত বিরোধিতা। ১৯৭১ এর যুদ্ধে সহায়তা দানের পরেও এই বিরোধিতা যে খুব একটা কমেনি, তার প্রমান দেখা যায় ১৯৭১ এর ডিসেম্বরেই মুক্তিযোদ্ধা দের সাথে ভারতীয় বাহিনীর বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য থেকেই। খালেদ মোশাররফের অভ্যুথানের পর কিন্তু দেশে ভারত বিরোধী জুজু ছড়িয়েই সিপাহী বিদ্রোহ ঘটানো হয়েছিল, যে প্রচারণার মূলে ছিল বামপন্থী জাসদ। ভারত এবং আওয়ামী লীগকে সমার্থক করে তোলার প্রচারনাও কিন্তু প্রথমত ভাসানী ন্যাপ ও জাসদেরই তৈরী। মুজিব হত্যার পর আওয়ামী লীগেরই নেতাদের ক্ষমতাসীন হওয়া এবং মুজিব বিরোধী প্রচারে সামিল হওয়া, সরকারী প্রচারনা যন্ত্র মুজিব চরিত্রে কালিমা লেপনে নিয়োজিত হওয়া এবং একজন শীর্ষস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও এ প্রচার আরো শক্তিশালী হওয়া, সব মিলিয়ে দেশের মানুষের একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে আওয়ামী বিরোধী করে তুলতে সম্ভব করে। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে অসংগঠিত আওয়ামী লীগ প্রায় ২৬% ভোট পায়, যদিও নির্বাচন যথেষ্টই বিতর্কিত ছিল। সামরিক শাসনের ফলে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন কিছুটা হলেও জিয়াকে জনপ্রিয় করে। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আওয়ামী লীগের হৃত জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিলেও জিয়া হত্যা ও পরবর্তিতে এরশাদের ক্ষমতা দখল আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা থমকে দেয়। জিয়াকে হত্যা করা না হলে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের প্রকৃত সমর্থন কত হত, সেটা speculate করা কঠিন, কিন্তু অন্তত ৪০-৪৫ শতাংশ মানুষ তখন আওয়ামী লীগকে ভোট দিত বলে আমার ধারণা।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বি এন পির সক্রিয় অংশগ্রহন বি এন পির জনপ্রিয়তা বাড়ায়। এ সময়ে আওয়ামী লীগের একটি ভুলই মূলত আওয়ামী লীগকে বি এন পি থেকে পিছিয়ে দেয়। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রথমে তীব্র বিরোধিতার পর অংশগ্রহন করে। টেকনিক্যালি চিন্তা করলে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬র নির্বাচনের কোনো পার্থক্য ছিল না, উভয় নির্বাচনই সামরিক শাসককে বৈধতা দিতে করা। দুটি নির্বাচনের সুষ্ঠু না হওয়া নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথা না, কারণ কিংস পার্টি হিসেবে ১৯৭৯ তে বি এন পি এবং ১৯৮৬ তে জাতীয় পার্টির উপস্থিতি। কিন্তু নির্বাচনমুখী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য উভয় নির্বাচনে অংশগ্রহনের যৌক্তিকতা ছিল। অন্যদিকে অসংগঠিত ও সুবিধাবাদী সমাহারে গঠিত বি এন পির জন্য ১৯৮৬র নির্বাচনে জেতার আশা করাও ছিল কঠিন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের প্রথমে নির্বাচনবিরোধী অবস্থান গ্রহণ কতটুকু যৌক্তিক ছিল, সে প্রশ্ন রয়েই যায়। আর নির্বাচনবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে ফেলার পর হঠাত করেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অংশগ্রহন করে দেশের মানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের বিরাগভাজন হয় আওয়ামি লীগ। যার খেসারত দিতে হয়ে ১৯৯১ এর নির্বাচনে।

১৯৮৬ এর নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে আওয়ামী লীগের ভোটের কিছুটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এই নির্বাচনের শুরু দিকে ফলাফলে আওয়ামী লীগ একচেটিয়া জিততে থাকে। তখন ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করে মিডিয়া ক্যু এর মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে বিজয়ী করা হয়। ভোট প্রদানের হার দেখানো হয় ৬৬%, যার মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৬% . প্রকৃতপক্ষে ভোট কত শতাংশ পড়েছে, সেটা বোঝা কঠিন, তবে পূর্বের ও পরের নির্বাচন গুলোর ভোট প্রদানের হার বিবেচনা করলে তা ৫০% এর বেশি হবার কথা না। অর্থাত প্রায় ১৫-২০% অতিরিক্ত ভোট দেখানো হয় জাতীয় পার্টিকে জেতানোর জন্য। এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে প্রকৃত ভোটের প্রায় ৫০% আওয়ামী লীগ পেয়েছিল, যদিও এই হিসাব অনেক assumption এর ভিত্তিতে করা।

১৯৯১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ ভাবে প্রায় ৩৩% ভোট পায়। আর বি এন পি একক ভাবে পায় ৩০%, যদিও জামাতের সাথে অলিখিত সমঝোতার কারণে জামাতের ১২% ভোটের একটি বড় অংশ আসলে বি এন পি পন্থী ভোট ছিল। ১৮ বছরের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রায় ৪০% কমে আসে। ১৯৯১ পরবর্তী নির্বাচনে মূলত ক্ষমতাসীন দলের কুকর্ম বিরোধিতাই ছিল মূল ফ্যাক্টর, আদর্শিক অবস্থানের চেয়েও।

১৯৭৫ পরবর্তী রেডিও টিভি, পাঠ্যপুস্তকে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের নামে ক্রমাগত বিষেদাগার চালানো এবং ৮৬র নির্বাচনে আওয়ামী অংশগ্রহন: এই ২ কারণে ৪০% ভোট হারায় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ১৯৭৩ পরবর্তী সময়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হলে বা বাকশাল সফল হতে দেয়ার সময় দেয়া হলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এত নামত বলে মনে হয়না। তবে একটা জিনিস স্পষ্ট, স্বাধীন বাংলাদেশে ভারত বিরোধী, কট্টরপন্থী এবং ডানপন্থী মানসিকতার গ্রাহক প্রথম থেকেই ছিল। ইসলামী ভাবধারার জনগোষ্ঠী মুজিব আমলেও সক্রিয় ছিল, তা তত্কালীন বিভিন্ন ঘটনা থেকে বোঝা যায়। ১৯৭০ এর নির্বাচনে এবং এর পূর্বে পাঞ্জাবি বিরোধী চেতনা থেকে এদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলেও স্বাধীন বাংলাদেশে আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে একাত্ম হওয়াটা এদের জন্য ছিল কঠিন। দেশ শাসনে আওয়ামী ব্যর্থতা (যে কারণেই হোক না কেন) এদের বিকল্প খোঁজার অজুহাত দিয়েছিল। জিয়া এই মানসিকতাকে অনুভব করতে পেরেছিলেন বলেই বি এন পি কে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের একটা বড় অংশের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী বিরোধী চীনপন্থী ও পাকিস্তানপন্থীদের সমর্থন জিয়াকে এই কাজে সফল হতে সহায়তা করে। ভারত বিরোধিতা এদের মূল পুঁজি, কেউ ধর্মের নামে ছড়ায়, কেউ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার নামে। সরকারী প্রচারযন্ত্র ও পাঠ্যপুস্তক ব্যবহৃত হয় মানুষকে ব্রেন ওয়াশ করতে। আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্ত ও একগুয়েমি ব্যবহৃত হয় নিরপেক্ষ মানসকে প্রভাবিত করতে। কেবল সুশাসনই পারত ধীরে ধীরে এই আওয়ামী বিরোধী মানসকে neutralize করতে, যার সুযোগ নিতে ২০০৯ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

শেহাব এর ছবি

লেখার চাইতে তো কমেন্টের মান ভাল হয়ে গেল। আমরা কি এই সচল পোস্ট চেয়েছিলাম?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চমৎকার, ফাইয়াজ ভাই!

উইকি বলছে ভোট কাস্ট হবার হার ৬৩% অর্থাৎ এই ৬৩% এরই প্রায় ৭০~৭৫% পায় আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ, মোট ভোটারের ৪৭% এর মত। তারমানে ৭০ সালেও সর্বোচ্চ ৫৩% মানুষের আওয়ামী বিরোধী হবার সুযোগ ছিল। ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

ঐতিহাসিক কমেন্ট, ফাইয়াজ গুরু গুরু

তানিম এহসান এর ছবি

তবে একটা জিনিস স্পষ্ট, স্বাধীন বাংলাদেশে ভারত বিরোধী, কট্টরপন্থী এবং ডানপন্থী মানসিকতার গ্রাহক প্রথম থেকেই ছিল। ইসলামী ভাবধারার জনগোষ্ঠী মুজিব আমলেও সক্রিয় ছিল, তা তত্কালীন বিভিন্ন ঘটনা থেকে বোঝা যায়। ১৯৭০ এর নির্বাচনে এবং এর পূর্বে পাঞ্জাবি বিরোধী চেতনা থেকে এদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলেও স্বাধীন বাংলাদেশে আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে একাত্ম হওয়াটা এদের জন্য ছিল কঠিন। এই জনগোষ্ঠী এখন-ও একাত্ম হতে পারেনি, আওয়ামী বিদ্বেষের মনস্তত্ব ঠিক এইখানে শুরু এবং চলমান।

মন্তব্যে উত্তম জাঝা!

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

গুরু গুরু
খুব চমৎকার এবং গোছান কমেন্ট ফাইয়াজ ভাই।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

শব্দ পথিক এর ছবি

বঙ্গবন্ধুর সময়ে আওয়ামী বিরোধী যেসব দল ছিল তার অধিকাংশ দলের শীর্ষ নেতাদের সহিজ্জিয়া তার দলে ভেড়াতে সক্ষম হন, এখানে আওয়ামী বিরোধিতার সুর স্পষ্ট। মুসলিম লীগ করা, চীনপন্থী বামদলগুলোর নেতাদের একটা বড় অংশ বিএনপিতে ঠিকানা করে নেয় ওই সময়টাতে। আর স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করে আওয়ামী লীগবিরোধী একটা বৃহৎ শিবির তৈরী করার ইচ্ছাতো ছিলোই সহিজ্জিয়ার মনে, এর ফলস্বরূপ উপজেলা-জেলা পর্যায়ে নন-জামাতি যতো শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান, সদস্য ছিল তার প্রায় সবাই বিএনপিতে আশ্রয় নেয়। ১৯৭৯ এর সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিজয়ী প্রার্থীদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

এরপর স্বৈরাচারী এরশাদ তার ৯ বছরের শাসনামলে ১২৪ জনকে মন্ত্রী করেছিলেন, যার ১০৯ জন এখন বিএনপিতে (বেশ কিছুদিন পূর্বে কোন এক দৈনিকে দেখেছিলাম এই পরিসংখ্যান)। সুবিধাবাদী এসব নেতার বেশিরভাগই বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লিগে নেতা হিসেবে স্থান পাননি।

একপাল স্বাধীনতাবিরোধী এবং একগপাল সুবিধাবাদী-এর সমষ্ঠি হলো বিএনপি, এবং এদের রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার একমাত্র মন্ত্র আওয়ামী বিরোধীতা, ভারত জুজুর ভয় দেখানো এবং রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে আনা।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

সাইদ এর ছবি

বাঙালিকে দেখায়ো না আঙুল, হয়ে যাবে নিজেই ভন্ডুল

হিমু এর ছবি

আমার আরেকটা পর্যবেক্ষণ আছে। গোর ভিদাল বলেছিলেন, It is not enough to succeed. Others must fail. আইয়ুবের বুটের নিচের পাকিস্তান আমাদের এক শ্রেণীর বিত্তবানকে এই শর্তপূরণের সুযোগ দিয়েছিলো। পাকিস্তান আমলে আরাম আয়েশে থাকা বাঙালি সমাজের একটা অংশ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আয়েশ অনেকটা হারিয়েছে। তারচেয়েও বড় কথা, তারা টের পেয়েছে, সমাজের একটা বড় অংশের কাছে অনেক সুযোগ সময়ের সাথে পৌঁছানো শুরু করবে, যা আগে আইয়ুবের আমলে সম্ভব ছিলো না। এই অংশটা নিজেদের আয়েশ হ্রাস আর অন্যের কাছে আয়েশ পৌঁছানোর দূরবর্তী সম্ভাবনাকে শেখ মুজিবের সঙ্গে সমীকৃত করে। পরবর্তীতে যখন তাই মুজিব নিহত হয় এবং উর্দিধারী জিয়া ক্ষমতায় আসে, তারা আবার আইয়ুবের ছায়া জিয়ার অবয়বে দেখতে পেয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে। জিয়ার মৃত্যুতে এদের খুব বেশি সমস্যা হয়নি কারণ আইয়ুবের ছায়া নিয়ে আবার এরশাদ ক্ষমতায় এসেছে।

এই মোটামুটি বিত্তশালীদের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত কট্টর আওয়ামীবিরোধী। এরা একই সঙ্গে দেখবেন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলবে, এরশাদের আমলটা অনেক ভালো ছিলো। আসল কথা হচ্ছে এরা জিয়ার আমলটা চোখে দেখেনি, তাই বাপমা দাদানানাদের কাছ থেকে পাওয়া আইয়ূবপ্রেমকে এরা এরশাদের ওপর ট্র্যান্সলেট করে আওয়ামীবিরোধিতাকে করোবোরেট করার চেষ্টা করে। এরা হচ্ছে সেই গোষ্ঠী, যারা শুধু নিজে আরামেই থাকতে চায় না, সেই সাথে চায় অন্যে কষ্টে থাকুক। আমার মনে আছে, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ টার্মে কোনো এক সময় সাইফুর রহমান বলেছিলেন, এতো উন্নতি উন্নতি করবেন না, বিদেশী সাহায্য আনতে সমস্যা হবে। এটা হচ্ছে এই আইয়ূবপ্রেমী আওয়ামীবিরোধীদের রাজনীতির প্রত্যাশার জায়গাটা, যারা বাংলাদেশে নিজেরা সুখে থাকতে চায়, কিন্তু বাকি দেশটুকুকে দেখতে চায় সাহায্যপ্রত্যাশী দুর্বল হিসাবে। আদারস মাস্ট ফেইল।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পাকিস্তান আমলে আরাম আয়েশে থাকা বাঙালি সমাজের একটা অংশ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আয়েশ অনেকটা হারিয়েছে। তারচেয়েও বড় কথা, তারা টের পেয়েছে, সমাজের একটা বড় অংশের কাছে অনেক সুযোগ সময়ের সাথে পৌঁছানো শুরু করবে, যা আগে আইয়ুবের আমলে সম্ভব ছিলো না। এই অংশটা নিজেদের আয়েশ হ্রাস আর অন্যের কাছে আয়েশ পৌঁছানোর দূরবর্তী সম্ভাবনাকে শেখ মুজিবের সঙ্গে সমীকৃত করে।

হিমু ভাই, হুবহু এই কথাগুলোই মনে হচ্ছিল একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী সাহেবের স্মৃতিকথা পড়তে গিয়ে। পোস্টের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিধায় কোট না করে পারলাম না। গাফফার সাহেব সেখানে আওয়ামী বিরোধী ঘরানার একজনের বক্তব্য কোট করেছেনঃ

শেখ মুজিব তাঁর দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছেন, কিন্তু এলিট ক্লাশের আসল সমর্থন পাননি। এই এলিট ক্লাসের মধ্যে দু'ধরনের কোলাবরেটর ছিল। একদল পাসিভ, একদল একটিভ। একটিভ কোলাবরেটরদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তারা এখন আপাততঃ একঘরে। কিন্তু পাসিভ কোলাবরেটরের দল এখন সক্রিয় হয়ে সামনে চলে এসেছে। তাদের কেউ কেউ বন্ধু ও শুভাকাঙ্খী সেজে সেখ মুজিবের আশেপাশেও গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

একই ব্যাক্তির জবানীতে লেখক আরও উদ্ধৃত করেছেনঃ

আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য, পাকিস্তানীরা বাংলাদেশে এতবড় জেনোসাইড ঘটানোর পরেও বাঙ্গালি এলিট ক্লাসে তাঁর কোলাবরেটর তোইরি করতে পেরেছে। আর আওয়ামী লীগ পাকিস্তানে তো দূরে থাক, বৃটেন-আমেরিকা এমনকি মিত্র ভারতেও এলিট ক্লাসে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ও দক্ষ সাংবাদিক-কলামিস্টদের মধ্যে একজন সমর্থকও জোগাড় করতে পারেননি। শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরেও আজ 'ডিফেন্সলেস'। তোমরা বাংলায় শেখ মুজিবের দিস্তা দিস্তা প্রশস্তি লিখেও তাকে রক্ষা করতে পারবে না। এটা পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীর সাথে যুদ্ধ নয়। তাদের চাইতে লক্ষগুণ শক্তিশালী একটি আন্তর্জাতিক লবীর সাথে যুদ্ধ। হিন্দু মিথলজির দশানন রাবনের মত এই লবীর দশ মুখ। অসীম তাঁর 'প্রোপাগান্ডার' শক্তি। এই 'প্রোপাগান্ডার' যুদ্ধে হেরে গেলে আওয়ামী লীগ একাত্তরের যুদ্ধে জিতেও বেশীদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেনা।

কথাগুলো কি আজকের প্রেক্ষাপটেও স্বমহিমায় বর্তমান নয়? ইয়ে, মানে...

জিয়ার মৃত্যুতে এদের খুব বেশি সমস্যা হয়নি কারণ আইয়ুবের ছায়া নিয়ে আবার এরশাদ ক্ষমতায় এসেছে।

বটমলাইন চলুক চলুক চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক চলুক

তানিম এহসান এর ছবি

দারুণ গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। বাংলাদেশের প্রচুর মানুষের আওয়ামী বিদ্বেষ তাদের জামাত ঘৃণার চাইতে প্রবল, সেই বিদ্বেষের ক্ষেত্রে বহু মানুষ’কে দেখেছি কোন কারণ ছাড়া বিদ্বেষে ভুগতে, এইটা কারও কারও বেলায় মানসিক রোগের পর্যায়ে পড়ে।

বর্তমান সময়ে এই পোস্ট’টাকে আরও কিছুদিন নীড়পাতায় রাখা যায় কিনা তা সচলের মডারেটর’রা ভেবে দেখতে পারেন।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক চলুক

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

দীনহিন এর ছবি

আসল কথা হচ্ছে এরা জিয়ার আমলটা চোখে দেখেনি, তাই বাপমা দাদানানাদের কাছ থেকে পাওয়া আইয়ূবপ্রেমকে এরা এরশাদের ওপর ট্র্যান্সলেট করে আওয়ামীবিরোধিতাকে করোবোরেট করার চেষ্টা করে।

একমত, হিমু ভাই!
মাঝে মাঝে ভাবি, দেশের তথাকথিত এলিট সমাজের একটা অংশ, যারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, যারা ওয়েস্টার্ণ কালচারে অভ্যস্ত, কি করের বিএনপি-জামাত জোটকে সমর্থন করতে পারে! এই এদেরকেই দেখেছি এমনকি হেফাজতের ১৩ দফাকে আ'ওয়ামী বিদ্বেষ দিয়ে জাস্টিফাই করতে। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, হেফাজতের দাবীগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে এরা বলবে, হুজুররা তো এমন বলবেই, নইলে তারা হুজুর কেন? এরা হেফাজতের দফাগুলোর ঠিক উল্টো পথেই নিজেদের জীবন পরিচালিত করে, তবু এরা হেফাজত এবং তাদের দাবীগুলোকে খুব শ্রদ্ধা করে, কারণ শ্রদ্ধা না করলে অমুসলিম হয়ে যেতে হয়। তাদের কাছে হেফাজত একটি আলাদা শ্রেণী, যাদের নীতিগুলোকে শ্রদ্ধা করা যায়, কিন্তু না মানলেও চলে! কি অদ্ভুত মনস্তত্ব এদের!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

সাইদ এর ছবি

ব্যাপারটা যদিও স্থূল তাও মন্তব্য করছি। হাসিনা ইসলামিক ভাবে পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করেন, খালেদা করেন না, তারপরও আমাদের তথাকথিত ইসলামী মূল্যবোধের ধ্বজাধারীরা কেন খালেদা কে হাসিনা থেকে বেশি ইসলামপ্রিয় ভাবেন

অতিথি লেখক এর ছবি

আওয়ামিলীগ ধোয়া তুলসি পাতা না, তারা নিজেদের প্রয়োজনে অসংখ্য বার নীতি আর আদর্শের সংজ্ঞা বদলে ফেলেছে। নিজেদের স্বার্থেই তারা জামায়েতের সাথে জোট করে আন্দোলন করেছে, ফতোয়াকে বৈধতা দিবে খেলাফত মজলিশের সাথে সেই চুক্তিও গত আমলে করে ফেলেছিলো। জিয়াকে স্বৈরাচার বলে গালি দিয়ে নিজেরা স্বৈরাচার এরশাদকে নিয়ে মহাজোট করেছে।

আর এবার এরশাদকে নিয়ে যে নোংরা নাটক করলো সেটা রীতিমতো লজ্জার। জোর করে নির্বাচনে আনার জন্যে কত না নাটক জাতিকে দেখালো। তারেক আর হাওয়া ভবন দুর্নিতির স্বর্গ রাজ্য করেছিলো বাংলাদেশকে সেটা আবাল বৃদ্ধ সবাই জানে কিন্তু তারেককে আদালত নিষ্পাপ রায় দিলো, দারুন সমযোঝতা হয়েছে এটা ও মানুষ বুঝে। আবুল হোসেনকে বাচাঁতে শেখ হাসিনা পর্যন্ত যে মিথ্যাচার করেছে সেটা ও চোখে লেগেছে, শেয়ারবাজার কলেংকেরি ও আওয়ামিলীগ কোন ব্যবস্থা করেনি।

যারা একচোখা আওয়ামিলীগ তারা শুধু ছাগুদের দোষ খোঁজে বেড়ায় নিজের দলকে দেখে না। সরকার যে নিজেরা গাড়ি বন্ধ করে নতুন অবরোধ দেখাচ্ছে সেটা নিয়ে সচলে কোন লেখা নেই, আমরা যারা দেশে থাকি তারা জানি বিম্পির ২৯ তারিখ সমাবেশ নিয়ে সরকার কি পরিমান হয়রানি মানুষকে করছে। ট্রেন বন্ধ, বাস বন্ধ। এটা কোন ধরনের কথা? দেশের নিরাপত্তার কথা বলে যারা এটাকে বন্ধ করার পক্ষে আছেন তাদেরকে শুধু বলতে হয় ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। এখন যে অজুহাতে সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না ঠিক একি অজুহাতে বিম্পি ক্ষমতায় এলে কোন সমাবেশ করতে দিবে না। সমাবেশ করতে না দেওয়া কোন গনতান্ত্রিক সরকারের চর্চা হতে পারে না। আপনি বলবেন হেফাজতকে দিয়ে একটা ভুল করেছিলো তাই সেই ভুল সরকার আর করবে না। কিন্তু হেফাজত আর বিম্পি এক না, বিম্পি একটা রাজনৈতিক দল, তাদের সভা সমাবেশ করার অধিকার আছে, আর তারা হেফাজতের মত তান্ডব করার কথা না। কারন তাদেরকে ভোট চাইতে হবে জনগনের কাছে যেটা হেফাজতকে চাইতে হতো না। আর গত পাঁচবছরে কোন সমাবেশে বিম্পি বোধহয় অরাজকতা করেনি । তাই সমাবেশ করতে দেওয়া উচিত ছিলো, কিন্তু সেটাকে রুখতে গিয়ে মানুষকে যে হয়রানি করছে সেটা মানুষ ভুলবে না। শেখ হাসিনা এখন যে অশ্লীন ভাষায় কথা বলেন সেটা কোন রুচির পর্যায়ে পড়েনা। আজকেও তিনি খালেদা জিয়াকে যে আক্রামনাত্নক ভাষায় কথা বলেছেন সেটা আওয়ামিলীগের জন্য শুভকর নয়।

একদল খারাপ হবে তাই আমাকেও মন্দের ভালো আদর্শ গ্রহন করতে হবে সেটা হতে পারে না। আওয়ামিলীগ সবকিছু নিজের প্রয়োজনে দারুন ব্যাখা করে এটাও মানুষ এখন জানে। দেশে যে আওয়ামিলীগ করে তারাই কেবল সু-শিক্ষত বিষয়টা এমন নয়। আওয়ামিলীগ এখন ব্যাখা দেয় ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। এই ব্যাখা শুধু আওয়ামিলীগের পক্ষেই সম্ভব। নিজেদের কে মুসলমান প্রমাণ করতে আওয়ামিলীগ তাদের মূলনীতিকে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে।১৫ তম সংশোধনী তার প্রমাণ, মানুষের ধর্মানুভূতিকে ভালোই আইওয়াশ করেছে তারা। ভোট আসলে শেখ হাসিনা মাথায় হিজাব আর হাতে তবজি দেখে মানুষ বুঝে এটা কতটা লোক দেখানো।

হুম এটা ঠিক আওয়ামিলীগ এইবার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে দেশে, তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো হাজার বাধা বিপত্তির পরও তারা রাজাকারের বিচার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে তারাও আর্দশের শুধু মুখোশটি পড়ে আছে ভিতরে সেই সব লুটপাট করে খাওয়া। সবগুলো এম্পি মন্ত্রির সম্পত্তির ৫বছর আগে পরের হিসেবটা করলে বুঝা যাবে।

হিমু এর ছবি

সরকারের অবরোধে অনেক কষ্ট। বিম্পিজামাতের অবরোধে দেশটা ফুরফুরা থাকে।

ফাইয়াজ জামাল এর ছবি

একদলীয় নির্বাচন আয়োজন করে আওয়ামী লীগ একটা বড় ভুল করতে যাচ্ছে। ১৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ এর নির্বাচনে বি এন পির যত ক্ষতি হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারী ২০১৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরো বড় ক্ষতি হবে। কারণ দেশের মানুষ বি এন পি র বড় ভুলকে ক্ষমা করে দেয়, কিন্তু আওয়ামী লীগের ছোটখাটো দোষকেও ছাড় দেয় না। সংবিধান অনুযায়ীই এখনো সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব, আমার মনে হয় বি এন পিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থাকবে না যদি শেখ হাসিনা সরে গিয়ে আওয়ামী লীগেরই অন্য কোনো নেতার অধীনে সর্বদলীয় সরকার গঠন করেন। মতিয়া চৌধুরী একটা ভালো অপশন হতে পারেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিম্পি তত্ত্বাবোধ সরাকারের দাবিতে অটল থাকবে না এমন কিছু কি বলেছে? দলের প্রধান বলেছে কি যে শেখ হাসিনা সরে গেলেই নির্বাচনে যাবে তারা? বিম্পি থেকে এমন সুস্পষ্ট একটাই প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তারা বলেছে শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে এবং সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবোধক সরকার দিতে হবে। তাই আপনার-আমার কি মনে হয় সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আর বাস্তবসম্মত হলো কি হচ্ছে। আর যেটা হচ্ছে সেটা হলো বিম্পি তত্বাবোধক ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। বিশেষ করে জামাতকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না।

মাসুদ সজীব

হিমু এর ছবি

ভাই, শব্দটা তত্ত্বাবধায়ক।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

নাম-নাই পরিচয় নাই, আইছে ল্যাদারাম সর্দার... শুরু তো কর্লেন

আওয়ামিলীগ ধোয়া তুলসি পাতা না

এই কথা দিয়ে, তো ভাইজান পোস্টটা কি পইড়া দেখছেন যে পষ্ট লেখা আছে

কোন দলের খারাপ কাজের নিন্দার মধ্যে আপত্তির কিছু নেই। আওয়ামী লীগ নিয়মিতই নিন্দার যোগ্য কাজ করে থাকে।

চোখের সমস্যা নিয়ে যদি চর্মরোগ-বিশেষজ্ঞের চেম্বারে যান তাইলে তো সমস্যা। আর, হাগতে ইচ্ছে হল, আর রাস্তাঘাটে পুৎ করে হেগে দিলুম- এমন মনোভাব হইলে তো মহাসমিস্যা বাহে, ক্যাথেটার দিয়ে হাগলে কিন্তু এইরকমই হবে

কিন্তু হেফাজত আর বিম্পি এক না, বিম্পি একটা রাজনৈতিক দল, তাদের সভা সমাবেশ করার অধিকার আছে, আর তারা হেফাজতের মত তান্ডব করার কথা না। কারন তাদেরকে ভোট চাইতে হবে জনগনের কাছে যেটা হেফাজতকে চাইতে হতো না।

সেটা যে আপনি ভাবার চেষ্টা করছেন তা কি হেফাজতী নেতৃবৃন্দ জানেন? নইলে আপনার পারমিশন ছাড়া হেফাজতের নেতারা পার্থিব ভুট চান ক্যা??

আর গত পাঁচবছরে কোন সমাবেশে বিম্পি বোধহয় অরাজকতা করেনি

আইসসালা, বেশি আগের কথা তো আপনার মনে থাকবে না, তাই গত পরশুদিন রাজশাহীর পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ এই দুঃখেই বুঝি আত্মহত্যা করেছেন

আওয়ামিলীগ এখন ব্যাখা দেয় ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়

জ্বিনা, ৪ নভেম্বর ১৯৭৪ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু নিজেই এই সংজ্ঞা দিয়ে গিয়েছিলেন

এটা ঠিক আওয়ামিলীগ এইবার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে দেশে, তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো হাজার বাধা বিপত্তির পরও তারা রাজাকারের বিচার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু

কিন্তু... হুমম... সুজন্দা আপ্নেরে নিয়া পুরা কমিক্সট্রিপ বানায়া ফালাইছে জানেন?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুরঞ্জনা এর ছবি

সাক্ষী সত্যানন্দ, ওনার বক্তব্যের সাথে আপনি দ্বিমত হতেই পারেন, কিন্তু শুরুতেই এমন ভাষায় কথা বলা ভালো লাগলো না। উনি কোনো গালাগাল করেন নি, আপনার অপছন্দ আপনি টয়লেট হিউমার বাদ দিয়েও করতে পারতেন।
আপনার যা বলার আছে, এই কথাগুলোর কারণেই সেটার গুরুত্ব কমে গেল।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আমি দুঃখিত মন খারাপ
এই জাতের মানুষ ফেস-টু-ফেস দেখতে দেখতে টলারেন্স নষ্ট হয়ে গেছে।

এখন মন্তব্যাটি সম্পাদনা করা কি শোভন হবে? ঐ অংশটুকু মুছে দিতে চাই।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

শেহাব এর ছবি

আপনি একটু পোস্টটা আরেকবার পড়ে দেখবেন?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শেহাব ভাই,
আপনি কি নিশ্চিত যে কথাটা "আরেকবার" হবে, নাকি "অন্তত একবার"? হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুরঞ্জনা এর ছবি

আপনি আওয়ামী লীগের প্রচুর দোষ ধরলেন। তাদের দোষ আছেও, এই পোস্টে ওমর শেহাব কোথাও বলেননি আওয়ামী লীগ ধোয়া তুলসী পাতা। বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিপক্ষের দল সবসময়ই ভয়ংকর রকমের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা মানুষের মাঝে ছড়িয়েই আওয়ামী লীগের মোকাবেলা করে আসছে। সেই বিদ্বেষ ছড়ানোর দরকার পড়লো কেন?

সরকার গাড়ি বন্ধ করে দেশের মানুষকে হেনস্থা করছে সেটা আপনার কাছে এত বড় সমস্যা মনে হচ্ছে আর জামাত বিএনপি দিনের পর দিন রেল লাইন উপড়ে ফেলে, বাসে আগুন ধরিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে সেটা আপনার চোখে পড়ছে কি? কোন সমস্যাটা থামানো আগে দরকার মনে করেন? মানুষের মৃত্যু নাকি মৃত্যু যাতে না ঘটে সেটার জন্য সরকারের পদক্ষেপ?

আওয়ামী লীগের যে সব ত্রুটির উল্লেখ করলেন, সেসবের পাশে বিএনপির শাহবাগ পরবর্তী অবস্থান বসিয়ে রেখে দেখে বলুন তো কার ত্রুটি বেশি চোখে পড়ে?

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

দীনহিন এর ছবি

কিন্তু হেফাজত আর বিম্পি এক না, বিম্পি একটা রাজনৈতিক দল, তাদের সভা সমাবেশ করার অধিকার আছে, আর তারা হেফাজতের মত তান্ডব করার কথা না।

মানে, শুধু রাজনৈতিক দলেরই সভা সমাবেশ করার অধিকার থাকে?
আর, বিএনপি কবে এমন কথা দিয়েছে যে, তারা হেফাজতের মত তাণ্ডব করবে না?
বিএনপিকে ভালবাসতে গিয়ে মনে হয় ভুলেই গেছেন যে, হেফাজতের মঞ্চে বসে হেফাজতের আন্দোলনকে সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছিল বিএনপি, কথিত ৫ ই মে রাতে হেফাজতের পাশে থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদের হুকুম দিয়েছিলেন বিরোধী নেত্রী, হেফাজতের সবচেয়ে হেফাজত-কারীর দায়িত্ব ইতিমধ্যেই মাথায় তুলে নিয়েছে বিএনপি। সুতরাং, এতসব প্রামাণিক মাখামাখির পরও আপনি যে দল দুটিকে 'এক না' বলছেন, তা কিন্তু ভারি অন্যায় হচ্ছে! বলতে কি, বিএনপি নামক ভাল দলটিই কিন্তু আপনার কথায় মারাত্মক মাইন্ড করবে!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আমার মন্তব্যে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে এসেছি কিন্তু সচলের মূল ইস্যুকে বাদ দিয়ে দুইএকটা কে কোট করে মন্তব্য করা শুরু করলো সবাই । আর সাক্ষী সত্যানন্দ যে ভাষায় লেখেছেন সেটা তা নিয়ে মন্তব্য করতে মন চাইছে না, শুধু বলবো সবাইকে ছাগু বলার দরকার নেই, আওয়ামিলীগের নিন্দা করাই যদি ছাগু বিচারের মানদন্ড হয় তাহলে দেশের বেশিভাগ মানুষি ছাগু হয়ে যায়, এমনকি অসংখ্য আওয়ামি সাপোর্টার রা ও। তাই পয়েন্ট আকারে আলোচনা করেন।
১। জামাতের সাথে আওয়ামিলীগের জোট
২। এরশাদের সাথে জোট এবং এইবার এরশাদকে নিয়ে যে জঘন্য নাটক করলো তা
৩। ১৫ তম সংশোধনী
৪। সরকার থাকা অবস্থায় নিজেরা গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া
৫। খেলাফত মজলিশের সাথে চুক্তি
৬। দুর্নিতি ( আবুল হোসেনকে নিয়ে সরকারের সীমাহীন মিথ্যাচার ও শেয়ারবাজার)
৭। শেখ হাসিনার অসলগ্ন আর বিদ্বেষী আক্রামনাত্নক ভাষায় বিপক্ষকে কটাক্ষ করা।

একটু খেয়াল করে দেখুন আমি ফেলানী নিয়ে ত্যানা প্যাঁচাই নি, বিশ্বজিত কে নিয়ে ও নয়। এমন ঘটনা সব সরকারের সময়ে হয়। হেফাজতের সমাবেশের উপর ও যে হত্যাজজ্ঞ চালিয়েছে বলে গুজব জন্ম দিয়েছিলো সেটা ও আওয়ামিলীগের নিন্দা হিসাবে দেখিনি অথচ এগুলো নিয়ে আওয়ামিলীগ সবচেয়ে বেশি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। তারপরও আমি ছাগু হলে আর কিছু বলার থাকে না।

শেহাব ভাই আওয়ামিলীগ অনেক নিন্দার কাজ করে এই এককথা বলে দিলেই আওয়ামিলীগের সমালোচনা করলেন এটা প্রমাণ হয় না।

হিমু ভাই একটা অপরাধকে আপনি আরেকটা অপরাধ দিয়ে ডেকে দিতে পারেন না। http://bit.ly/19RHdgq এই খবরটি পড়েন, আপনি দেশে থাকেন না। তাই গত দুইদিনের দেশে কি পরিমান গন গ্রেফতার চলছে তা অকল্পনীয়। ট্রেন থেকে মাইকিং করে নামিয়ে গ্রেফতার কে আপনি কি দিয়ে ব্যাখা করবেন। বিম্পি জামাত অবরোধ দিয়ে মানুষ মারছে সেটা জঘন্য নিন্দনীয় যেমন ঠিক তেমনি এমন অবরোধ দিয়ে নিরাপরাধ মানুষের গন গ্রেফতারও অপরাধ এবং ভুল।

সাক্ষী ভাই ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ কি? রাষ্ট্রের কোন ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না, রাষ্ট্র সকল ধর্মের,সকল ধর্মের সমান অধিকার থাকবে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার নাম দিয়ে বিসমি্ল্লাহ রাখবেন এটা কেমন কথা? এটা ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগানোর পায়তারা। যেটা শেখ মুজিবের ৭২ এর সংবিধানে ছিলো না কিন্তু ১৫ তম সংশোধনীতে রাখা হয়েছে আওয়ামিলীগ মুসলমানের দল প্রমাণ করার জন্যে।

হিমু এর ছবি

রেল যোগাযোগের ওপর বিম্পি-জামাতের লোকজন যে অকল্পনীয় রকমের নাশকতা করেছে, সেটার কাউন্টারমেজারও অকল্পনীয় রকমেরই হওয়ার কথা।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হিমু ভাই, এখানে "নাশকতা" শব্দটা কি রেটোরিক? হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

১। আওয়ামী লীগ জামাতের সাথে কোন জোট করেছিল নাকি? কবে? আপনি হয়তো ৯৬এ বিএনপি'র ১৫ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনের বিরুদ্ধে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে জামাতকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টিকে জোট হিসেবে অভিহিত করতে চাইছেন, তাই তো? ঘটনাক্রমে জামাতও তখন ১৫ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন বয়কট করেছিল, আওয়ামী লীগ জামাতের সেই অবস্থানকে ব্যবহার করেছিল মাত্র। জামাতের সাথে আওয়ামী লীগ কোন আদর্শিক বা নির্বাচনী জোট করে নি, জামাত সম্পর্কে তাদের মূল অবস্থানেরও কোন পরিবর্তন ঘটায় নি।
২। এরশাদের জাপার সাথে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী জোট করেছে ২০০৮এ, কারন এর আগেই বিএনপি জামাতের সাথে নির্বাচনী জোট করে ২০০১ এর নির্বাচন বৈতরনী পার হয়েছে এবং জাতীয় পার্টীকেও জোটবদ্ধ করার জন্য সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করে এনেছিল। জামাতের সাথে নির্বাচনী জোট করা এক কথায় অগ্রহনযোগ্য, কারন তাদের একাত্তরের ভূমিকা এবং এখনও সেই মনোভাব থেকে বিচ্যূত না হওয়া। পক্ষান্তরে এরশাদের জাপা এবং জিয়ার বিএনপি মূলতঃ একই মাল, একটি যে কারনে নিন্দনীয়, অন্যটিও একই কারনে দোষনীয়। একটিকে যে কারনে সহ্য করতে হয়, অন্যটিও সেই কারনেই অস্পৃশ্য নয়। আর এবারে এরশাদকে নিয়ে যে জঘন্য(?) নাটক, সেটা হল শঠে শঠ্যাং।
৩। পঞ্চদশ সংশোধনী ঠিক কি কারনে আপনি গ্রহনযোগ্য বা অগ্রহনযোগ্য মনে করছেন, তা না জেনে মন্তব্য করা মুশকিল।
৪। বিএনপি'র আল্টিমেট উদ্দেশ্য হলো বড় আকারের একটি জমায়েত করে একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি করা এবং তার মাধ্যমে তাহরীর স্কোয়ার ষ্টাইলে সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করা। সরকারে থাকা অবস্থায় গাড়ী বন্ধ করে দেয়ার কারন অতি পরিস্কার, সরকার প্রমান করতে চায় বিএনপি'র এই উদ্দেশ্যের প্রতি জনসমর্থন নাই। যদি সত্যি সত্যি সার্বিক জন সমর্থন বিএনপি'র প্রতি থেকে থাকে, তাহলে এতদসত্বেও রাজপথে জনতার ঢল নামবে এবং সরকারের পতন ঘটবে। দেখা যাক জনগণ কি চায়।
৫। খেলাফত মজলিশের সাথে চুক্তি কি আপনার কাছে দোষনীয় মনে হয়? কেন?
৬। দুর্নীতি বহুদিন থেকে ক্রমে ক্রমে এদেশের প্রতিটি সেক্টরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইসতেহারে গুরুত্বপূর্ন অঙ্গীকার সত্বেও সরকার এ বিষয়ে সন্তোষজনক কিছু করতে পারে নাই। তবে কিছুই যে পারে নাই এটা বোধ হয় ঠিক নয়, কারন টিআইবি'র ধারনা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি ঘটেছে। আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে যতদূর জানি কানাডার পুলিশ এখনও কোন অভিযোগ পত্র গঠন করতে পারে নাই। তবে শেয়ারবাজারের বিপর্যয় এ সরকারের সত্যিকারের ব্যর্থতা।
৭। প্রিয়জনের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে সেটা সহ্য করা মুশকিল, তার উপর শেখ হাসিনার মত কোন মুখরা রমনীর মুখনিসৃত হলে সেটা আরও অসহ্য।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১।
আপনি লেখার মূল আলোচনার ইস্যুকে আড়াল করে অন্য দিকে না হাঁটলে আমরাও তথাকথিত একটা-দুইটা লাইনকে কে কোট করে উত্তর দিতাম না। ইয়ে, মানে...

২।
আমার মন্তব্যে নাম-পরিচয়হীন আপনাকে একবারও ছাগু বলেছি কি? আমি যেখানে ঠাকুরঘরের আশপাশেও যাইনি, সেখানে আগেই কদলীভক্ষনের দায় নিচ্ছেন কেন? চিন্তিত

৩।
তাছাড়া শুধুমাত্র যেখানে যেখানে "অসত্য তথ্য" পেয়েছি সেটুকুই কোট করেছি, তাতে রেগে গিয়ে নিজেকেই ছাগু-টাগু বলে গাল দিয়ে যাচ্ছেন কেন? এরপরে রাগ হলে আগে দু'বেলা মাটিতে ভাত খাবেন, রাগ পরে যাবে (কপিরাইটঃ হিম্ভাই) তারপর ঠান্ডা মাথায় আসতে পারেন হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি আমাকে সরাসরি ছাগু বলেননি সত্য কিন্তু সুজনদার যে লেখার কথা উল্লেখ করেছেন সেটা কি ছাগুময় নয়? আপনার মন্তব্য আমাকে হতাশ করেছে, আমি যা বলেছি তাই যে চির সঠিক এমনতো নয়, আমার চিন্তায় ভুল হলে আমি শুধরে নিবো, কিন্তু আমাকেতো সেই সুযোগ দিতে হবে। আমি আপনার বিজ্ঞান লেখা যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে পড়ি, সাধারনত মন্তব্য করিনা। যাইহোক আপনারা সবাই মস্ত জ্ঞানী গুনী মানুষ, এই যুগের জ্ঞানীগুনীরা আমাদের মতো কম জানা লোকদের গালাগালি করে জ্ঞান দিবে এটাই নিয়ম বোধহয়। এই নিয়ম আমার জানা ছিলো না। ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দুঃখিত, সেদিন আমারই মাথা গরম ছিল মনে হয়। ওপরে সুরঞ্জনাপু ও আব্দুল্লাহ ভাই আর এই কমেন্টের ঠিক নিচে ফাইয়াজ ভাই অনেক ধৈর্য সমেত আপনার প্রস্নের উত্তর দিয়েছেন, তাই নতুন আর কিছু বললাম না। আমি অতি নগন্য মানুষ, জ্ঞানী-গুনী কেউ নই। আমার অর্বাচীনসুলভ রাগারাগির ক্ষোভ সবার ওপরে ছড়িয়ে দেয়াটা অনুচিত। ওটা আমার ওপরই থাকুক। ভালো থাকবেন।

অফটপিকঃ স্বনামে মন্তব্য করলে আলোচনা আরো স্বস্তিকর হত হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ফাইয়াজ জামাল এর ছবি

আপনার এক নম্বর পয়েন্টের উত্তর দেই: জামাতের সাথে আওয়ামী লীগ কখনই জোট করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ৯৫-৯৬ তে আওয়ামী লীগের দাবিতে জামাত সমর্থন দিয়েছিল, ঠিক যেমনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও বি এন পির দাবি ও কর্মসূচিতে জামাত সমর্থন দিয়েছিল। আজকেও সি পি বি বা বাসদ বি এন পি না আসে নির্বাচনে যাচ্ছে না, কিন্তু তা বলে তো এটা বলতে পারবেন না যে বাসদ বা সি পি বি বিএনপি জোটের অংশ। পক্ষান্তরে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বি এন পি ১৪০-১৪৫ টা আসনে জয়ী হয়, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৫১ টি আসন তাদের ছিল না। এ সময় ১৮ টি আসন ধারী জামাত তাদের সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেয়, বিনিময়ে সংরক্ষিত ২ টি মহিলা আসন জামাতকে ছেড়ে দেয় বি এন পি। বি এন পি ক্ষমতায় আসার পরেই জামাত গোলাম আজমকে অফিসিয়ালি আমির করার সাহস দেখায়। ইতিহাস সম্পর্কে বলতে হলে কিছুটা জেনে বলা উচিত।

Emran  এর ছবি

১৯৭৫ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশকে যে হারে ইস্লামিকরন করা হয়েছে, সেটা আপনি এড়িয়ে গেলেন। জিয়া এবং এরশাদ যে খৎনা করে প্রথমে সংবিধান এবং পড়ে পুরো জাতিকেই সাচ্চা মুসলমান, সেটা নিয়েও আপনি কোন কথা বললেন না। আওয়ামী লীগ যে সংবিধানে "বিসমিল্লাহ" রাখতে বাধ্য হয়েছে, তার মূলে কিন্তু আছে এই আগ্রাসী ইস্লামিকরন। আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে "বিসমিল্লাহ" তুলে দিলে আপনিই বলতেন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ছেঞ্ছেতিব ধরমানুভুতিতে আওয়ামী লীগ এত বড় আঘাত না দিলেও পারতো! আওয়ামী লীগ যাবে কোথায়?!

হিমু এর ছবি

শেখ হাসিনার ভাষার অনেক বদনাম আছে বাজারে। এইবার এইটা শোনেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছ মানুষের কথা শুনলে মনে হয় তারা আগে কখনো এমন বাংলাদেশ দেখেনি. নাম না জানা ভাইটিও সেই দলের মনে হচ্ছে। আগে বাংলাদেশ ছিলো স্বর্গ, রাজনৈতিক সম্প্রীতি আর ভালোবাসায় ভরপুর ছিলো সরকারী দল আর বিরোধী দলের সম্পর্ক. সরকার বিরোধী দলের উপর কোন নির্যাতর্ন তো দূরের কথা রাজপথে নামলে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানত. তাই হঠাৎ করে বর্তমানে এই সরকারের এমন রুঢ় আচরনে তারা হতাশ, বিস্মিত আর ভীষন ক্ষুদ্ধ. কিন্তু আসল ঘটনা এমন না, ২০০১-০৬ ছিলো বাংলাদেশের সবচেয়ে কালো অধ্যায়, দুর্ণীতি, র্জঙ্গি উত্থান, বোমা বাজি, ধর্ষনের মহা উৎসব, হিন্দুদের উপর পাশবিক নির্যাতন, লেখালেখির জন্যে মানুষ হত্যা কি ছিলো না..?

আর রাজনীতি? সেটাতো আরো বিভৎস. আওয়ামিলীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, কিবরিয়কে হত্যা, আহসান উল্লাহ মাষ্টার হত্যা সহ অসংখ্য কেন্দ্রীয় নেতাকে হত্যা যা বাংলাদেশের মানুষ কখনো দেখেনি. আর রাজপথে পুলিশের লাঠিকাঘাতে রক্তাত্ত হয়েছেন আওয়ামিলীগের সব কেন্দ্রীয় নেতা, গন গ্রেফতার চালিয়েছিলো ভয়াবহ. শুধু আওয়ামিলীগের লংমার্চের আগে ২০০৬ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিলো ৮০০০ নেতা কর্মী. সেই সময়টা স্বর্গ ছিলো আর এখন নরকে আছেন? অপারেশন ক্লিন হার্ট নামে অকারনে সেনাবাহিনী নামিয়ে কতগুলো মানুষ কে খুন করা হলো? বাংলা ভাইয়ের কথা ভুলে গেছেন? লেখালেখির জন্যে হুমায়ূন আযাদ কে যে কোপানো হলো সেটা ও ভুলে গেলেন? কি করে এততাড়াতাড়ি সব ভুলে গেলেন? আপনাদের স্মৃতিশক্তি এত দুর্বল?

কিন্তু আওয়ামিলীগ নেতার দুর্ণীতি করে, চুরি করে, সন্ত্রাসীও করে কিন্তু তাদের সাপোর্টার রা সেটাকে সমালোচনা করে, আওয়ামিলীগের সাপোর্টাররা ছাগুদের দল নয়, অশিক্ষিত আর গুজবে মেতে থাকা মানুষেরা আওয়ামিলীগ খুব একটা করে না. তাদেরকে একটা আষাঢ়ের গল্প বানিয়ে খেতে দিবেন আর তারা ছাগলের মতো সব খেয়ে ফেলবে এমন নয়..! তাই হঠাৎ দেশপ্রেম দেখাতে এসে নিজের অজ্ঞতাকে সামনে নিয়ে আসার প্রয়োজন নেই, আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম বলে ফেসবুক/ব্লগে মায়া কান্নায় ভাসানোর কোন দরকার নেই, সেটার জন্যে বাশের কেল্লা যথেষ্ট. আবার দুইজনকে সমান দোষী করে নিরপেক্ষ সাজার ও দরকার নেই, দুই দল কিংবা দুই নেত্রী কখনো সমান নয়, দুই জন মানুষ ঝগড়া করলে দুজনি কখনো সমান দোষী হয় না. সুতরাং পড়ালেখা করে আসুন, জেনে আসুন ইতিহাস, আর নিজের স্মৃতিশক্তিটাকে ঠিক রাখার জন্যে কাঠাল পাতা না খেয়ে (বিম্পি+জামাতের মিথ্যাচার) বই পড়ুন. বই আপনাকে বলে দিবে সত্য মিথ্যে কোনটা. যেহেতু আপনাদের স্মৃতি বড়ই ঘুমকাতুরে, তাই আপনাদের ঘুমন্ত স্মৃতিকে জাগ্রত করতে এই ছবিগুলো নিবেদন...

অতিথি লেখক এর ছবি

মাসুদ সজীব

দীনহিন এর ছবি

একটু খেয়াল করে দেখুন আমি ফেলানী নিয়ে ত্যানা প্যাঁচাই নি, বিশ্বজিত কে নিয়ে ও নয়। এমন ঘটনা সব সরকারের সময়ে হয়।

'ত্যানা প্যাঁচাইনি' মানে কি? আপনি কি "নিন্দা হিসেবে" দেখেননি এ ঘটনা দুটোকে? আর এ ঘটনাগুলো খুব সাধারণ ঘটনা, যেহেতু সব সরকারের সময়ে হয়??

কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার নাম দিয়ে বিসমি্ল্লাহ রাখবেন এটা কেমন কথা?

আসলে আপনি কি চাইছেন, পরিষ্কার করবেন? আপনি কি ধর্মনিরপেক্ষতা চাইছেন? নাকি বিসমিল্লাহ্‌ চাইছেন? নাকি যেকোন একটি থাকলে আপনার আপত্তি থাকবে না? শুধু সংমিশ্রনকেই আপনি পছন্দ করতে পারছেন না?
ধরে নেয়া যাক, আপনি ধর্মনিরপেক্ষতা চান। সেক্ষেত্রে যারা ধর্মনিরেপেক্ষতার বুকে ছুরে মেরেছে, তাদের এক পশলা সমালোচনা করে নিয়ে তারপর সংমিশ্রণকারীদের সমালোচনা করলে ভাল হত না? সেক্ষেত্রে আপনার পয়েন্টগুলো আরো শক্তিশালী হতো না?

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম না জানা মহান এই জ্ঞানীর সুশিক্ষার বাণী পড়লাম সীমাহীন ধৈর্য্য নিয়ে , শেষ কবে এত ধৈর্য্য ধরে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এত লম্বা আদর্শের ঝুলি পড়েছি মনে পড়ছে না। যাইহোক মূল বিষয়ে আসি, আপনার মন্তব্য শুনে যেটা বুঝলাম আপনি চরম শান্তির মানুষ, শান্তি আর শান্তিই আপনার একমাত্র প্রার্থনা। কেউ আপনাকে গুলি করলে আপনি পাল্টা গুলি না করে বলবেন না ভাই তুমি ভীষন ভুল করছো। সে না আপনার কথা না শুনলেও আপনি গুলি খেয়ে আদর্শকে ঠিক রাখবেন। কিন্তু বাস্তবে এটি সম্ভব না, বাস্তবে আপনাকে কেউ কিল ঘুষি দিলে আপনি তাকেও কিল ঘুষি দিবেন, সবাই দিবে। আঘাতের পাল্টাআঘাত না করে চুপ করে থাকা আদর্শের সংজ্ঞা না। আঘাতের পাল্টা আঘাত করা কৌশল। আপনি আদর্শ আর কৌশলকে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছেন। সংগ্রাম/যুদ্ধ কখনো দুধ কলা খাইয়ে আর মুখে আদর্শের বুলি উড়িয়ে হয়না। যুদ্ধ জিততে কিংবা সমাজ পরিবর্তন করতে কৌশল লাগে।

আপনি একদলের সবকিছুকে খারাপ বলে উড়িয়ে দিয়ে আরেকদলের কাছে সব নীতি আর আদর্শ আশা করবেন এটা কেমন কথা? ফুটবল খেলা বুঝেনতো? ফুটবল খেলায় কি হয়? প্রতিপক্ষ দল যেমন হয় তার উপর নির্ভর করে আপনি আপনার খেলার কৌশল ঠিক করবেন, ফুটবল কোচেরা তাই করে। আপনার দল যদি রিয়াল মাদ্রিদ হয় বার্সার সাথে খেলা সময় আপনার দলের কৌশল আর ভ্যালেন্সিয়ার সাথে খেলার কৌশল এক হবে না। এত ত্যানা প্যাঁচিয়ে উদাহারন দিলাম শুধু একটি বিষয় বুঝাতে যে রাজনীতিক কৌশল ধর্মের মত নয় যে সেটা বদলানো যাবে না(ধর্মীয় বিষয়ও বদলায়, সেগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করছি না), এটা বিজ্ঞানের মতো সময়ের সাথে নিজেকে বদলে নেয়।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

আওয়ামী বিদ্বেষ ব্যাপারটা এদেশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটা এমন একটা চেইন যেটা বিভিন্ন মহল থেকে একটার সাথে আরেকটা অত্যন্ত সুচতুর ভাবে জুড়ে দেয়া হচ্ছে। সেই স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় পুরোটা সময় এই চক্র নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে করে চলেছে এই বিদ্বেষ জন্মানোর কাজটা। এক্ষেত্রে তাদের সবচাইতে বড় হাতিয়ার হল মিথ্যার আশ্রয়, নানা জুজুর ভঁয়, সেই সাথে কিছু দেশী বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিশাল বিনিয়োগ। এ সবই করা হয়েছে এবং হচ্ছে আওয়ামীলীগের প্রতি সাধারণ মানুষের একটা স্থায়ী বিদ্বেষের জন্ম দিতে। কিছু কিছু সময় এই প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তাদের কাজে ব্যাপক সফলতাও দেখিয়েছে। যার ফলে ৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসতে দুই দশকেরও বেশী সময় ব্যয় করতে হয়েছে। আওয়ামী বিদ্বেষ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বাকী সব দলই কমবেশি অবধান রেখে চলেছে যেটাকে প্রত্যেক দলই তাদের রুটিন ওয়ার্ক মনে করে। আওয়ামীলীগের সব চাইতে বড় প্রতিপক্ষ বি এন পি এটা করে তাদের ক্ষমতায় যাবার পথ সুগম করার জন্য। কিন্তু জামাতের মতো সংগঠন আওয়ামী বিদ্বেষ ছড়ায় তাদের অস্থিত্তের খাতিরে। আর এই বিদ্বেষ ছড়ানোর পেছনে সব চাইতে বেশী বিনিয়োগও এই জামাতের। এরাই সব চাইতে সুশৃঙ্খল ভাবে তাদের এই বিষ বিষ বৃক্ষ রোপণ করে চলেছে। এরা এরা আওয়ামী বিদ্বেষ ছড়ানোটাকে পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। সারা দেশে জামাত নিয়ন্ত্রিত কয়েক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই আছে যেখানে প্রতিদিন লাখ লাখ কোমলমতি শিশুর মগজে প্রকাশ্যে পুতে দেয়া হচ্ছে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে হাজারো অপপ্রচারের বিষবৃক্ষ। প্রতিদিন এই অপপ্রচারের মাত্রা বেড়েই চলেছে যার কোন পাল্টা প্রচার আওয়ামীলীগ থেকে হচ্ছে বলে মনে হয় নি। যেখানে জামাতের লাখ লাখ কর্মী প্রতিদিন রুটিন করে তাদের এই কাজ করে থাকে সেখানে আওয়ামীলীগ তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কাজ কিছু করে বলে মনেই হয় না। এটাই আওয়ামীলীগের সব চাইতে বড় দুর্বলতা। আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যেন টাকার পেছনেই দৌড়ানোটাকে বেশী গুরুত্ব দেয়। তাছাড়া প্রগতিশীল কোন সংগঠনেরই ভালো নেতৃত্ব আসছে না। আসবেই বা কি করে ? কত বছর হল বড় কোন বিশ্ববিদ্ধালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি ? অন্যদিকে সেই প্রতিক্রিয়াশীল চক্র প্রতিদিন শান দিচ্ছে তাদের নানা হাতিয়ার। সুতরাং আওয়ামী বিদ্বেষ ছড়ানোর এই প্রক্রিয়াটা আগেও ছিল এখনও আছে। এখন সময় হল সেটা দেখার যে, আওয়ামীলীগ এই অপপ্রচার খণ্ডনের ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়। - জেগে উঠার দিন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আওয়ামী বিদ্বেষী মনস্তত্ব ? কেন এবং কাদের? একটু পর্যবেক্ষন করছি আমার পারিবারিক আবহ থেকে। কেন পরিবার কে টেনে আনতে হচ্ছে সেটাও একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। কারন রাজনীতি সচেতন হবার চেষ্টাটা পরিবার থেকেই হয়েছিল।আমার মা ৬৯ এ আওয়ামী লিগ এর জন্য ব্যানার লিখেছেন। ৭০ এর নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। তারপরেও যুদ্ধের কয়েক বছর পরেই তিনি আওয়ামী বিদ্বেষি হয়ে গেলেন। এসব তার মুখেই শোনা। তিনি বলেছিলেন যেই আওয়ামী লিগ কে তারা ভোট দিয়ে জয় জুক্ত করেছিলেন তাকে আর পরবর্তিতে পান নি। বরং আওামী লিগ এর প্রতি ঘৃনা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সব সরকার দেখেছেন। তিনি সরকারি চাকুরে ছিলেন। আর আমার বাবা ছিলেন খুব বিশ্বাস প্রবন একজন মানুষ। তিনি এত ভুল থাকা সত্বেও আওয়ামী পন্থি রয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন প্রচন্ড আওয়ামী পন্থি। আমরা মেয়েরা বাবার অনুভুতি কে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলাম। তাই আওয়ামী লিগ কেই সমর্থন করতাম । একটা বয়স পর্যন্ত আওয়ামী পন্থি থাকার সরল ব্যাখ্যা টা এরকম থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু সেটা একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত। তাই ১৮ পুর্ণ হবার পরও যখন আওামী লিগ কেই সমর্থন করতাম তখন তার পিছনে কারন হিসেবে বাবার পদাঙ্ক অনুসরন এর সেই সরল ব্যাখ্যা আর কাজে লাগবার কথা না। কারন ভোট দেবার সময় আমি এবং আমার অন্যান্য বোনেরা আওয়ামী লিগ কে ভোট দিতাম। অন্তত আমি দুবার দেবার সু্যোগ পেয়েছিলাম। বিদেশে আসার আগে। কারন হিসেবে বলব আমার মা আওামী লিগ এর বিরুদ্ধে যে কথা গুলো বলতেন সেগুলো খুব শক্ত যুক্তির মোড়কে বাধান ছিল না। অন্য দিকে আওয়ামী বিরোধী যে দল গুলো এসেছিল এবং আছে তাদের কে রাজনীতি মনস্ক মনে হয়নি কখনো আমার কাছে । মনে হয়েছে ক্ষমতার জন্য উড়ে এসে জুরে বসা কতগুলো পরগাছা যেগুলোর জন্ম হবারি কথা না যদি না বাংলাদেশে সত্যকারের রাজনীতি চর্চা হত।আওয়ামী লিগ যদি কিছু রাজনৈতিক ভুল না করত তাহলে হয়ত আওয়ামী বিদ্বেষির সংখ্যা টা দিন দিন এত লম্বা হত না।
গবেষক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই ধরনের পোস্ট বেশি বেশি দরকার। মানুষ চিন্তা করলে প্রোপাগান্ডার স্রোত ঠেকানো সম্ভব।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেগুলো 'যুক্তি', সেগুলোর অধিকাংশই আসলে প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে স্ট্যাবলিশড মিথ্যা। একটা ছোট উদাহরণ, গণতন্ত্রকে একদলীয় শাসন থেকে মুক্ত করার জন্যই শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিলো! চিন্তাটা আরেকটু অগ্রসর হলেই দেখা যায়, শেখ মুজিবকে হত্যার পরে দেশে গণতন্ত্র আসে নাই, সামরিকতন্ত্র এসেছিলো। সুতরাং গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে শেখ মুজিবের হত্যাকে জাস্টিফাই করার 'যুক্তি' একটা মিথ্যা কথা, যেটাকে প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে স্ট্যাবলিশ করা হয়েছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

শেহাবের লেখা সর্বদাই চমৎকার।
ছেলেটা বেশ চিন্তা ভাবনা করেই লেখে। ভালো লাগে।
জনৈক অতিথির মন্তব্য এবং তার পাল্টা জবাবগুলো প্রাসঙ্গিক হলেও; সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, শেহাবের লেখার মূল যে প্রেক্ষাপট তা মন্তব্যকারীদের অংশগ্রহনে আরো বলিষ্ঠ, বিতর্কলব্ধ ও বিস্তৃত হতে পারত। শুধু শুধু একজন অতিথির মন্তব্য এসে দলীয় বিদ্বেষের কারন বিশ্লেষনের প্রেক্ষাপটকে ঘোলা করে দিল।

শেহাব ভাই, আবারো লিখুন। এই বিষয়ে লিখুন। এই বিষয়ে ভাবনার ও ভাবনা শেয়ার এবং যুক্তি-তর্ক অবতারনার মাধ্যমে পরিষ্কার চিত্র এই দেশের প্রয়োজন। অাজ এবং ভবিষ্যতের জন্যেও।

এম আর নাইন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।