প্রথমেই সতর্কতাবাণীর ঝামেলাটুকু সেরে নেই। এটি কোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নয়। কেন নয়? কারণ যেকোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই আমাকে বলে দিতে হবে যে পদ্ধতিতে আমি পরীক্ষাটি করছি সেটি রিগোরাস। অর্থাৎ আমাকে দেখাতে হবে যে আমার পদ্ধতিটি আসলেই কাজ করে। আমি কিন্তু সেরকম কিছু দেখাচ্ছি না। বরং যে পদ্ধতিতে কাজ করছি তার কিছু ফাঁকফোকর ধরিয়ে দিব। আরেকটি দরকারী বিষয় হল পরীক্ষার ফলাফলে ভুলের মাত্রা কতটুকু সেটি হিসেব করে দেয়া। আমি কিন্তু সেটিও করছি না। তার মানে হল এই লেখায় দেয়া তথ্য এবং তার ভিত্তিতে যে মন্তব্যগুলো করা হবে সেগুলো নিয়ে আপনি কোথাও শক্ত গলায় কিছু দাবী করতে পারবেন না।
তাহলে এই লেখার উদ্দেশ্য কি? আমার নিজস্ব কিছু অনুমান ও সন্দেহ আছে। আমি চাই পন্ডিতরা এটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করুক। আমার সেই সন্দেহ আর অনুমানগুলোর প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে আমি এই পর্যবেক্ষণগুলো দিব। দেখি, পন্ডিতদের রাজি করানো যায় কিনা।
তো, আমার সন্দেহটি কি?
আমার অনুমান, চলমান নির্বাচনী জটিলতা নিয়ে মানুষের মনে একটি ধারণা হল, শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করিয়েছেন। যদি ত্রয়োদশ সংশোধণী বাতিল করা না হত তাহলে নির্বাচন নিয়ে এত ঝামেলা হত না। মানুষের মনে এই ধারণা কি করে তৈরি হল? আমার অনুমান এই ব্যাপারে গণমাধ্যমের একটি বড় অবদান আছে। বাংলাদেশে বেশির ভাগ লোক যেহেতু প্রথম আলো পড়ে কাজেই গণমাধ্যমের যে অবদান তার মধ্যে প্রথম আলোর ভাগ সবচেয়ে বেশি। প্রথম আলোর বিভিন্ন লেখা পড়ে খটকা লাগায় আমি সরাসরি ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায়টি পড়া শুরু করি। এক পর্যায়ে এটি নিয়ে ২৫টি প্রশ্নসহ একটি আধাখেচড়া লেখাও দাঁড় করিয়ে ফেলি। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হল নির্বাচন নিয়ে জটিলতার মাঠে যারা যারা খেলোয়াড় ছিল (শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতি, সংসদ, বিচারবিভাগ, জনগণ, সাংবাদিক, সুশীল বুদ্ধি সমাজ) তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিবেচকের মত আচরণ করেছেন শেখ হাসিনা। আরেকটু পরিষ্কার করি। আমি নিজে পড়ি 'জনগণ' ক্যাটেগরিতে। তার মানে আমার দাবী হল শেখ হাসিনা এই ব্যাপারে আমার চেয়েও বেশি বিবেচকের মত আচরণ করেছেন। কেন আমার এরকম মনে হল? কারণ আদালত যে যুক্তিগুলোতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছেন সেই যুক্তিগুলো অকাট্য। যে কারণে নির্বাচন নিয়ে দোষারোপের খেলার যেসব উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলোতে আদালত রায়ে যেসব খুঁটিনাটি যুক্তি দিয়েছেন সেগুলো খন্ডনের চেষ্টা করা হয় না। কারণ সেই সব লেখকেরা জানেন তারা খন্ডন করতে পারবেন না। কাজেই এই বেআইনী বিধানে নির্বাচন হওয়া নৈতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য না। এখন শেখ হাসিনার কাজ হল আদালতের যে আদেশ সেটি বাস্তবায়ন করা। নির্বাচনকালীন সরকারে আদালত শর্ত দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য ছাড়া আর কাউকে রাখা যাবে না। উনি বিভিন্ন দল থেকে সংসদ সদস্যদেরই রেখেছেন। কেউ যদি দাবী করে শেখ হাসিনাই এটি বাতিল করিয়েছেন তাকে দেখাতে হবে মামলাকারীর (মরহুম এম সালিম উল্লাহ) ও শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রের যোগাযোগটি কোথায়? তার সাথে তাকে এও দেখাতে হবে আদালতের রায়ে স্ববিরোধিতা কিংবা দুর্বলতা কিংবা আইনের লংঘন হয়েছে। যদি কেউ এই ব্যাপারগুলো দেখাতে না পারে তাহলে তার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কেউ খাবে না। মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার জন্য এম সালিম উল্লাহ সাহেবের বদলে শেখ হাসিনাকে বকাঝকা করে কেন? কারণ পত্রপত্রিকাগুলো এই সংশোধনী বাতিলের মামলার ইতিহাসটুকু চেপে গেছে।
আরেকটি ব্যাপার হল জটিলতার মূল সমস্যা কিন্তু ত্রয়োদশ সংশোধনী নয়। মূল সমস্যা হল সংবিধানের ৫৫ ও ৫৮ অনুচ্ছেদ যেখানে মন্ত্রীসভার সদস্যদের (নির্বাচনকালীন সময়েরও) নিয়োগ ও বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী একক ভাবে নিতে পারেন। এর মানে হল শেখ হাসিনা যদি এখন কোন খারাপ কাজ করতে যান এবং মন্ত্রীসভার বাকি সব সদস্যও যদি দ্বিমত পোষণ করেন তারপরও তাকে ঠেকানো যাবে না। মন্ত্রীসভার সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার বন্টনের এই ভারসাম্যহীনতার কারণে আদালত যে বলেছে নির্বাচন কালীন সরকারে সব দলের সাংসদরা মিলে থাকতে পারবেন সেটি থাকলেও কিছু ঝামেলা থেকে যাবে। যদি ৬০ জনের মন্ত্রীসভা হয় যেখানে আওয়ামী লীগের ৩০ জন আর বিএনপির ৩০ জন, শেখ হাসিনা (বা যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন) চাইলে সবার মত অগ্রাহ্য করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। যদি আমাদের ৫৫ আর ৫৮ অনুচ্ছেদে এরকম বলা থাকত যে মন্ত্রী সভার যেকোন সিদ্ধান্ত দুই তৃতীয়াংশ মন্ত্রীর অনুমোদনে পাশ হতে হবে তাহলে কি হত? ধরুণ প্রধানমন্ত্রী ঠিক করলেন নির্বাচন কমিশনের সাথে মিলে কিছু সিদ্ধান্ত নিবেন যা কার্যকর করলে মাঠ পর্যায়ে কারচুপি করা সহজ হবে। তাকে নিজের দলের ৩০ জনের পাশাপাশি বিএনপিরও ১০ মন্ত্রীকে রাজী করাতে হবে। ত্রয়োদশ সংশোধণী যদি বাতিল না করা হত তাহলে কিন্তু এই সমস্যাটি থেকেই যেত। তার উপর সব উপদেষ্টা আর রাষ্ট্রপতি যদি উল্টা পাল্টা কাজ শুরু করেন তাহলে আমাদের কিছু করার নেই কারণ এমনিতে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা যায় না আবার এই সময়টুকুতে তাকে অভিশংসিত করার ক্ষমতাও আমাদের থাকে না। আর উল্টা পাল্টা কাজ প্রত্যেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ই কিছু না কিছু হয়েছে। তাহলে মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যেমন হাহাকার করে ৫৫ এবং ৫৮ অনুচ্ছেদ নিয়ে তেমনটি করে না কেন? কারণ পত্রিকাগুলো আসল সমস্যা যে সংবিধানের এই দুইটি অনুচ্ছেদ, বেআইনী ত্রয়োদশ সংশোধনী নয় এই ব্যাপারটি চেপে গেছে।
নির্বাচন নিয়ে এখন যে লেখাগুলো সাধারণত উপসম্পাদকীয়তে আসে সেটি মূলত: দোষারোপের খেলা। সবাই ইনিয়ে বিনিয়ে বলেন, এত ঝামেলা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের জন্য। কে বাতিল করেছে? একগুঁয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বাতিলের পর ২০১৩ সালের জুন মাসে বিএনপি সংসদে এই বাতিল নিয়ে আলোচনার জন্য একটি মুলতুবী প্রস্তাব দিয়ে আবার সাথে সাথে সেটি তুলে নেয়। সেটি যদি থাকত এবং সংসদে যদি আলোচনা হত আওয়ামী লীগ আর বিএনপি'র দূরত্ব এখনকার চেয়ে নিশ্চয়ই কিছুটা কম হত। তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে আবার সংসদের মাধ্যমে পুর্নবহাল হল না তার জন্য কেউ বিএনপিকে বকাঝকা করে না কেন? কারণ পত্রপত্রিকায় যতবারই এ নিয়ে লেখা ছাপানো হয়েছে এই ব্যাপারটি সবসময় চেপে যাওয়া হয়েছে।
বিএনপি যখন মুলতুবী প্রস্তাব কোন রকম আলোচনার চেষ্টা না করে ফিরিয়ে নেয় তখনও কিন্তু ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল নিয়ে সংসদে আলোচনা করার সুযোগ ছিল। আপনি যদি আসলেই চান যে এটি বহাল হোক তাহলে আপনাকে আলোচনা করার সব চেষ্টাই করতে হবে। তো এই শেষ সুযোগটি কি? সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১০০ ধারার অধীনে কোন নাগরিক যদি চান তাহলে কোন বিষয় নিয়ে যেন সংসদে আলোচনা হয় সেই পিটিশন দাখিলের চেষ্টা করতে পারতেন। কাগজপত্র যদি ঠিক থাকে আর যদি ৩৫০ জন এমপি 'র মধ্যে একজনের সইও জোগাড় করতে পারেন তাহলে এটি নিয়ে আলোচনা হতে বাধ্য। অন্তত খালেদা জিয়ার সই তো পাওয়ার কথা! এটি ঠিক যে বেশিরভাগ মানুষ এই নিয়মটি জানেন না। আমি নিজেই জেনেছি অল্প কিছুদিন আগে। কিন্তু প্রথম আলোর উপসম্পাদকীয় তো আইনের অধ্যাপকরাও লিখে থাকেন। তারা এই ব্যাপারটি লেখায় তুলে ধরলেন না কেন?
আপনি বার বার নির্বাচন আর ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে যাবেন কিন্তু প্রত্যেকবারই কিছু তথ্য চেপে যাবেন, ঘটনাটা কী?
এই হল আমার সন্দেহ। অনেক লম্বা হয়ে গেছে। কথা দিচ্ছি পরের বার আরো কম কথায় বলার চেষ্টা করব। এখন এর পক্ষে কি আমার অকাট্য কোন যুক্তি বা উপাত্ত আছে? না নেই। যে কারণে আমি এই লেখাটির মাধ্যমে চেষ্টা করছি বিশেষজ্ঞদের নজর কাড়ার জন্য। তাহলে আমার কি আছে? কিছু জোড়াতালি দেয়া পর্যবেক্ষণ। আমাকে হাঁটুপানির জলদস্যু অন্য একটি প্রসংগে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় প্রথম আলোতে লিখেন এরকম আট জন ব্যক্তির নাম দিয়েছিলেন। এনারা হলেন,
১. আসিফ নজরুল
২. ফারুক ওয়াসিফ
৩. সোহরাব হাসান
৪. মিজানুর রহমান খান
৫. আনিসুল হক
৬. মুহম্মদ জাহাঙ্গীর
৭. হাসান ফেরদৌস
৮. সৈয়দ আবুল মকসুদ
আমি নিজেও একমত যে এনারা নির্বাচনী জটিলতা নিয়ে প্রথম আলোর উপসম্পাদকীয়গুলোর একটি বড় অংশ লিখেছেন। তাই আমি আমার গুঁতাগুঁতি এই আটজনের লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি। যেমন ধরুন আমি দেখতে চাই মিজানুর রহমান খান তার কতটি লেখায় ত্রয়োদশ সংশোধনীর কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি জানার জন্য প্রথম আলো আর্কাইভ ও গুগোল অ্যাডভান্স সার্চের মাধ্যমে দেখেছি 'মিজানুর রহমান খান ত্রয়োদশ সংশোধনী' দিয়ে সার্চ দিলে কতটি ফলাফল আসে। আমি শুরুতে বলেছি এটি আসলে নিখুঁত নয়। কেন নিখুঁত নয়? কারণ পত্রিকার আর্কাইভের সার্চ পদ্ধতি কাজ করে লিখে দেয়া শব্দগুলোর মধ্যে কত বেশি মিলল সেটির ভিত্তিতে। কাজেই সার্চ রেজাল্টে এমন লেখা চলে আসতে পারে যেখানে মিজানুর রহমান খান সপ্তম সংশোধনী নিয়ে আলাপ করেছেন। অথবা দেখা গেল ফারুক ওয়াসিফের একটি লেখায় মিজানুর রহমান নামে একজন পাঠক ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে আলাপ করেছেন এমন পেইজ চলে এসেছে সার্চ রেজাল্টে। অর্থাৎ খুঁজতে দেয়া শব্দগুলোর বেশিরভাগ মিলে গেলে এমন রেজাল্ট চলে আসতে পারে যেগুলো ফলস পজিটিভ। কাজেই আসল সংখ্যা আরো অনেক কম হবে।
তাহলে এত দুর্বল তথ্য দিয়ে আমরা কি করব? আসলেই শুধু এর ভিত্তিতে কিছু দাবী করা যাবে না। কিন্তু আমার কাছে আপাতদৃষ্টিতে কিছু প্যাটার্ন চোখে পড়ছে। একটি আশাপ্রদ পর্যবেক্ষণ হল কোন একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য একটি সার্চ রেজাল্ট যদি প্রথম আলো আর্কাইভে তুলনামূলকভাবে ছোট আসে তাহলে গুগোলেও সেটি তুলনামূলকভাবে ছোট আসে। তার মানে হল দুইটি সার্চ পদ্ধতির মধ্যে কোন কোন জায়গায় মিল আছে। তাছাড়া এই বিষয়গুলো নিয়ে মিজানুর রহমান খানই সবচেয়ে বেশি লিখে থাকেন। আমাদের সার্চ রেজাল্টও তাই বলছে। আনিসুল হক যেহেতু দুইটি সমান্তরাল কলাম লিখে থাকেন খুব সম্ভবত: সেকারণে তার রেজাল্টও অনেকের চেয়ে বেশি এসেছে। আমি বেশ কিছু লেখা দিয়ে সার্চ দিয়েছি। এখন যদি গুগোল আর প্রথম আলো আর্কাইভ দুটোতেই যদি আমরা দেখি 'আসিফ নজরুল সংসদীয় কার্যবিধি ১০০ ধারা' এর সার্চ রেজাল্ট 'আসিফ নজরুল তত্ত্বাবধায়ক সরকার' এর সার্চ রেজাল্টের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক অনেক কম তাহলে আমরা কি সন্দেহ করব? আমরা কি তাহলে সন্দেহ করতে পারি যে আসিফ নজরুল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রচুর ঘ্যান ঘ্যান করলেও কার্যবিধির ১০০ অনুচ্ছেদের অধীনে যে, যে কেউ এটি নিয়ে সংসদে আলোচনা আনার সুযোগ আছে এটি চেপে গেছেন? যদি সন্দেহ করা যায় তাহলে এর পরের ধাপ হল ডেটা মাইনিং বা ওপিনিয়ন মাইনিংয়ের যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সেটি ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া। আমরা যদি আবিষ্কার করি ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলাটি যিনি দায়ের করেছিলেন, মরহুম এম সালিম উল্লাহ সেটি এই আট জন পন্ডিতের মধ্যে কেউ কখনও উল্লেখ করেননি তাহলে কি আমরা সন্দেহ করতে পারি যে শেখ হাসিনার উপর সব দোষ ফেলার জন্য এনারা এই মামলার ইতিহাস চেপে গেছেন? আবারও, এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। আমাদের ডেটা / ওপিনিয়ন মাইনিংয়ের যে স্বীকৃত পদ্ধতি সেটি অনুসরণ করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি এর কিছুই জানি না।
এরকম ভাবলে ভুল হবে যে কোন এক কালো রাতে এই আট জন প্রথম আলোর কনফারেন্স রুমে মুখোশ পড়ে বাতি নিবিয়ে ষড়যন্ত্র করে এক যোগে এরকম লেখা ছেপে গেছেন। যেটি হতে পারে এটি হল প্রথম আলোর সম্পাদকীয় নীতিমালার দুর্বলতার কারণে এই সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই লেখা গুলো পার পেয়ে গেছে। যদিও প্রথম আলো বলে সব দায় দায়িত্ব এনাদের কিন্তু একটি জিনিস মনে রাখতে হবে তাদের নিজস্ব নীতিমালার বাইরে হলে তারা লেখা ছাপেন না। যে কারণে তারা ফরহাদ মাজহার কিংবা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা ছাপেন না।
এই আটজনের প্রত্যেকের জন্যই আমি প্রথম আলো আর্কাইভ আর গুগোল অ্যাডভান্সড সার্চে নয়টি করে সার্চ করেছি। যেমন, সৈয়দ আবুল মকসুদের জন্য সার্চগুলি হল -
১. সৈয়দ আবুল মকসুদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার
২. সৈয়দ আবুল মকসুদ ত্রয়োদশ সংশোধনী
৩. সৈয়দ আবুল মকসুদ মুলতুবী প্রস্তাব
৪. সৈয়দ আবুল মকসুদ মুলতুবি প্রস্তাব
৫. সৈয়দ আবুল মকসুদ সংসদীয় কার্যবিধি ১০০ ধারা
৬. সৈয়দ আবুল মকসুদ সংসদে পিটিশন
৭. সৈয়দ আবুল মকসুদ সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদ
৮. সৈয়দ আবুল মকসুদ সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ
৯. সৈয়দ আবুল মকসুদ এম সালিম উল্লাহ
তাহলে আট জন লোকের প্রত্যেকের জন্য করা হল নয়টি সার্চ এবং প্রত্যেকটি আবার দুইটি করে সার্চ টুল ব্যবহার করে। তাহলে মোট ১৪৪টি সার্চ রেজাল্ট এখানে আছে। আমি একে একে প্রত্যেকেরটি দিয়ে দিলাম। প্রত্যেকটি সারণীর প্রথম লাইন হল কি কি শব্দ দিয়ে সার্চ করেছি সেটি, দ্বিতীয় লাইন হল প্রথম আলো আর্কাইভ আর গুগোল অ্যাডভান্সড সার্চ আলাদা করার শিরোনাম। আর শেষ লাইন হল পরিসংখ্যান।
১. আসিফ নজরুল
২. ফারুক ওয়াসিফ
৩. সোহরাব হাসান
৪. মিজানুর রহমান খান
৫. আনিসুল হক
৬. মুহম্মদ জাহাঙ্গীর
৭. হাসান ফেরদৌস
৮. সৈয়দ আবুল মকসুদ
তো, এই হল আমার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ। আমি আমার ডেটা মাইনার বন্ধু অমৃতাকে রাজিও করেছি তার মাথা ধার দেয়ার জন্য। যদি আসলেই সন্দেহগুলো ঠিক হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সাংবাদিকতার ইতিহাসে প্রথম আলোর এই সম্পাদকীয় চর্চা একটি কলংকতিলক হয়ে থাকবে।
বি. দ্র. হাঁটুপানির জলদস্যুর পরামর্শে চার্ট যোগ করে দিলাম।
মন্তব্য
সালিম উল্লাহ সাহেবকে নিয়ে আলুপট্টিতে হিরণ্ময় নিস্তব্ধতা দেখি।
মিজানুর রহমান খান তো হিসাববিজ্ঞানে লেখাপড়া করা লোক। এমনও তো হতে পারে যে সে আইনের এই সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো আদৌ ভালোমতো বোঝে না? তার বস মতির চিনিয়ে দেয়া টার্গেটকেই কেবল কামড়াতে থাকে?
খাইছে! এইবার খবর আছে! মিডিয়া আর টকোস্ফেয়ারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্বঘোষিত আইনপণ্ডিতের বিরুদ্ধে এত্তবড় ব্লাসফেমি! সহ্য হবে না। হয় গদা হাতে তেড়ে আসবে, নয়তো সচলায়তনের বিরুদ্ধে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে মাইনাচ ৫০ হাজার কোটি ডলারের মানহানি মামলা করবে। আর তাও যদি না পারে, তাহলে তার রাগের ঠ্যালায় কারুনবাজারে রিখটার স্কেলে ২৫ মাত্রার একটা ভূমিকম্প হয়ে আলুভবনসমেত মাটির তলায় ধ্বসে যাবে। তবু তাকে নিয়ে আপনাকে আর মজা করতে দিবে না!
****************************************
মিজান নিজেই তো নিজের প্রোফাইলে এই তথ্য দিয়ে রেখেছে।
যেহেতু মিজান আলুপট্টিতে কাজ করে, কখন আবার প্রোফাইল পাল্টে ফেলে তার ঠিক নাই, তাই স্ক্রিনশটও নিয়ে রাখলুম।
সংযোজন: প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ "মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড"-এর ফ্ল্যাপেও দেখছি মিজান নিজের হিসাববিজ্ঞান শিক্ষার কথা অকপটে স্বীকার করেছে। (সূত্র)
প্রথম আলোর চিন্তাকোষ সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান সাহেব যদি আজ আমাদের মাঝে না থাকেন (ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে), তাহলেও কি মিজান আইন কানুন নিয়ে একই রকম পাণ্ডিত্য বজায় রাখতে পারবে?
কে জানি একবার বলছিল ওমর শেহাব লোকটা কচ্ছপের মতো , যেইটা ধরে সেইটার ছাড়াছাড়ি নাই। আপনেই তো সেই শেহাব, নাকি??
এইবার ধরেন এক্কেবারে ছাই হাতে নিয়ে, লাইনে এসে আমরাও যোগ দিতেছি। ইতিহাস সাক্ষী থাকুক, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দলিল থাকুক কোনটা বুদ্ধিজীবী আর কোনটা বুদ্ধিবেশ্যা।
আমার সামান্য পর্যবেক্ষণে মনে হয় সত্য আর মিথ্যার মধ্যে তফাৎ করা খুব সহজ। যেইটা এক কথায় সরাসরি বলা যায় সেটা সত্য। আর যেইটা বলার জন্য দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ করতে হয়, কঠিন কঠিন শব্দ জুড়তে হয় সেইটা মিথ্যা।
আগেই কেউ দিয়ে দিসে নাকি জানি না, তবে আমি বেশ অনেক দিন ধরেই ওনাকে কাঁকড়া, কাছিম, ইত্যাকার প্রাণির সাথে তুলনা করি।
facebook
মাসুদ সজীব
লেখায়
আপনার গবেষনা চলুক, প্রমাণ হোক সত্যের বুলি উড়ানো মিথ্যে কথার মানুষদের মুখোশ। অপেক্ষায় থাকলাম সেই সময়ের।
মাসুদ সজীব
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
দারুন
আপনার বন্ধুর পরিসংখ্যানের অপেক্ষায় রইলাম।
সত্য উন্মোচিত হোক।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
শতভাগ সহমত চরম উস্তাদ!
অসাধারণ শেহাব ভাই
"যদি আসলেই সন্দেহগুলো ঠিক হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সাংবাদিকতার ইতিহাসে প্রথম আলোর এই সম্পাদকীয় চর্চা একটি কলংকতিলক হয়ে থাকবে।"
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
দিন দিন ওমর শেহাব লোকটার ফ্যান হয়ে যাচ্ছি
দারুণ কাজ হয়েছে
আলু পেপারের আর্কাইভ হঠাত অফলাইন হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিচ্ছু নাই।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কি করলেন ভাই এইটা!
-অন্যকেউ
কোন কাজে হেল্প লাগলে আমাকে নির্দ্বিধায় নক দিয়েন শেহাব ভাই।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
প্রথমে তো কর্পাসটি তৈরি করতে হবে। রিন-বিডি ওয়েবসাইটে মনে হয় এখনও হোমপেজ ছাড়া বাকি পেজগুলো কাজ করছে না। ওইটা ঠিক হলে একটা প্রজেক্ট শুরু করা যেতে পারে।
দুর্দান্ত
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পোস্টে
'বিজ্ঞ' জনেরা টক-শো কপচাতে পছন্দ করেন, বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেও বেশি কথা বলে, টিভিচ্যানেলগুলায় অর্ধেকের বেশিই শুধু মোবাইল অপারেটরদের নানান স্কিমের বিজ্ঞাপন থেকেও তা প্রমাণিত হয়। তাছাড়া যে কোন সময়ে টিভি ছাড়লেও চলে, 'লেখালেখি' করতে খাটাখাটনি করতে হয়, 'পড়তে' হয় আবার তার জন্যে। ঐগুলো করতে গেলে টকশোর পয়সা আর লাইম লাইট মিস হয়ে যাবে।
বাকিজনদেরকে নিয়া অত ভাবনা নাই, তবে আসিফ নজরুল কে নিয়া আমার একটু ভাবনা ছিলো, আগামী কোন লেখায় ওনার নাম এলে বলবো ভেবেছিলাম। এই লোক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কিন্তু প্রতিরাতে যেইভাবে কচকচ করে, ওনার পরদিনের ক্লাসে প্রেপারেশন কখন নেন এইটাই আমার চিন্তা। হতে পারে বছরের পর বছর ধরে একই কোর্স নিচ্ছেন তাই কোন এক আদি আমলের চোথা থেকেই পড়ায়ে যেতে পারেন। টক-শো তে যেভাবে লিমনের সাথেই মানবাধিকার প্রশ্নে যুদ্ধাপরাধীদেরকেও এনে ফেলেন, তাতে চোথা নিয়ে সন্দেহ দৃঢ় হয়। যাউকগা, আমি ক্ষুদ্র মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের শিক্ষকতার কী বুঝি! তবে পরিচিত শিক্ষকদের যাদেরকে বেতনের টাকাটা হালাল করে নিতে দেখি তারা মনে হয় না টক-শো করার সময় পাবেন, তাও আবার সপ্তাহের প্রায় প্রতিটা রাতেই, মাঝরাতে, যদি পরদিন সকালে নিজের কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়, ক্লাস নিতে হয়, আর সারা সন্ধ্যা গিয়ে থাকে তার প্রেপারেশনে, নিজের পড়ালেখায়, পরীক্ষার খাতা দেখায়, ইত্যাদি!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
একদম ঠিক জায়গাতেই ধরছেন। গবেষণা ফলাফলে কোন ভুল নাই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
দুর্দান্ত লেখা।
সুবোধ অবোধ
স্লো-পয়েজনিং ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
____________________________
খুব ভালো এই যে, দেরিতে হলেও মানুষ প্রথম আলোর এই বুদ্ধিবেশ্যাবৃত্তি সম্পর্কে আস্তে আস্তে জানতে পারছে। বাইরের কান্ট্রিগুলোর যেসব দেশে অ্যানোনিমাস মুভমেন্ট হয় সেখানে একটা কথা প্রায় বলা হয় "Fuck Television". প্রথম প্রথম ব্যাপারটা বুঝতাম না। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কথাটা শুধু আক্ষরিক অর্থে বলে নি, সমগ্র মিডিয়া যারা হলুদ সাংবাদিকতাকে প্রমোট করেছে, করছে এবং ভবিষ্যতে করে যাবে তাদের উদ্দেশ্য করেই বলেছে। শক্তিশালী প্রচারযন্ত্র হিসেবে যেখানে এই পত্রিকার গ্রহণযোগ্যতা এক সময় শীর্ষে ছিলো, কিছু ছ্যাঁচড়ামির কারণে তা হারাবে এই মতি আলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ শেহাব ভাইকে প্রথম আলোর এই ধূর্ততাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য!
ফাক প্রথম আলো!
-অ্যানোনিমাস নেমেসিস | ফেসবুক
ধরে নেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্খেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্খমতা রদ করে মন্ত্রীসভার মাঝেও কিছু পরিমাণে ক্খ্মতা বণ্টন করা হল। সেক্ষেত্রে বিরোধী দলের মন্ত্রীরা প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে অচলাবস্থা সৃষ্টি করলে করণীয় কী হবে? বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে তো এটা অবশ্যম্ভাবী।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
আমার ধারণা ৫৫, ৫৮ আর ৭০ অনুচ্ছেদ একসাথে পরিবর্তন করতে হবে। কোন এমপি যদি দেখে ভিন্নমত প্রকাশের জন্য তার মন্ত্রীত্ব বা সংসদসদস্য পদ যাওয়ার ভয় নেই তাহলে শুধু বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতার সংস্কৃতি আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে।
শাবাশ শীহাব ভাই। আপনার কাছে এইরকম কিছুই চাচ্ছিলাম। চালিয়ে যান।
অসাধারণ লিখেছেন। সময় এসেছে প্রথমালুর মুখোশ খুলে দেওয়ার, বর্জন করার।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
বি. দ্র. হাঁটুপানির জলদস্যুর পরামর্শে চার্ট যোগ করে দিলাম।
এখন অনেক সহজে বোঝা যাচ্ছে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দুর্দান্ত
কড়িকাঠুরে
নতুন মন্তব্য করুন