বন্ধু মোস্তাফিজ আমাকে আহমদ ছফার এই লেখার খোঁজ দিয়েছে। দুর্দান্ত লেখা! ছফা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রত্যেকটি দিক নিয়ে মনে হয় আলাদা আলাদা লেখা দেয়া যাবে। এই মুহুর্তে আমার মনে ধরেছে নিচের অংশটুকু।
তিনি বিলক্ষন জানতেন, পান্ডিত্যাভিমানী শিক্ষিত সমাজের মানুষ তাঁকে অন্তর থেকে অবজ্গা করেন। এই শ্রেণীটির চরিত্রের খাঁজগুলো সম্বন্ধে পুরোপুরি অবহিত ছিলেন। উনিশ শ’ উনসত্তর সালের পূর্ব পর্যন্ত এই শ্রেনীর লোকেরা তাঁকে বাগাড়ম্বর সর্বস্ব অমার্জিত হামবগ ছাড়া কিছু মনে করতেন না, তা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়। বিভিন্ন বিবৃতি, বক্তৃতা, ঘরোয়া বৈঠক এবং আলাপ-আলোচনায় এঁদের প্রতি প্রচ্ছন্ন ঘৃণা এবং বিরক্তি তিনি কুন্ঠাহীনভাবে ব্যক্ত করেছেন। তা সত্তে্ও উচ্চশিক্ষিত আমলা, লেখক-সাহিত্যিক এবং শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষক এবং সম্ভ্রন্ত সমাজের একাংশ তাঁকে বংগবন্ধু বলে যে সম্বোধন কেন করতেন শেখ মুজিব তা বুঝতেন এবং তা তাঁর ক্ষমতার স্বাভাবিক প্রাপ্য হিসাবেই গ্রহণ করতেন। তাছাড়া বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি বলে কথিত শ্রেণীটির হীনমন্যতাবোধ এবং চারিত্রিক দাসত্ব অনেকটা প্রবাদের সামিল। যে-কোন নতুন শাসক এলেই সকলে মিলে তাঁর গুণপনা বাখান করা এখানকার বহুদিনের একটা প্রচলিত প্রথা। কচিত কদাচিত ব্যতিক্রমী কন্ঠ শোনা যায়। এর কারণ নিশ্চয়ই বাংলাদেশের সমাজ শরীরের মধ্যে সংগুপ্ত আছে।শক্তিদর্পী মানুষেরাও যে শেষ পর্যন্ত একেকটা দিকে কাঙাল থেকে যান শেখ মুজিবের মধ্যেও তার পরিচয় পাওয়া যায়। যে বস্তুটি সহজভাবে পাওয়া যায় না তাকে ভেঙে ফেলার জন্য এঁদের অনেক সময় নিয়মমত খাওয়া-শোয়ার ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। তাঁর আসন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমনের ঘটনাটিকেও এ পর্যায়ে ফেলা যায়। যদিও তিনি দেশের একচ্ছত্র অধিপতি তথাপি তাঁর কানের কাছে অনেক উচ্চকন্ঠ চিৎকার করেছে, বাচাল ও অর্বাচীনেরা অনেক বৃথা লিখেছে, কিন্তু পন্ডিতরা বরাবর নিশ্চুপ থেকেছেন। এই অর্থবোধক নিশ্চয়তা তাঁর বুকে শেলের মত বেজেছে। সেজন্যই তাঁর অত ঘটা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা। যে লোকেরা সহজভাবে তাঁকে স্বীকার করে নেয়নি, তাঁদেরকে তাঁর মহিমা বুঝিয়ে দেয়ার জন্যই বিশ্ববিদ্যলয়ে আসছেন। নইলে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে শেখ মুজিব সকাল-সন্ধে ভাঙা কাপে চা খেয়েছেন, সেখানে আাসার জন্য সাড়ে সাত লক্ষ টাকা ব্যয় করার কি প্রয়োজন থাকতে পারে? বিশষত বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠেও এক-তৃতীয়াংশ ছাত্রের পয়সার অভাবে সকাল বেলার টিফিন জোটে না।
এই লেখার কিছু কিছু ব্যাপার আমার কাছে অস্পষ্ট রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর সাথে পান্ডিত্যাভিমানী শিক্ষিত সমাজের মানুষের দূরত্ব বলতে ঠিক কি বুঝানো হচ্ছে? আমরা যারা আশির দশকে জন্মেছি তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে মনে হয় গড়পরতা ধারণা এরকম - ছাত্রজীবনের রাজনীতি সচেতন মুজিব অবিশ্বাস্য সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে সত্তরে এসে হিমালয়সম বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন। তারপর স্বাধীন দেশে দুর্বল একনায়ক প্রশাসক হিসেবে বিদেশীসাহায্যপুষ্ট বিপথগামী সেনাসদস্যদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন। সোজা কথায়, খুব সম্ভবত: আমাদের বয়সী বেশিরভাগ মানুষের কাছে একাত্তরের আগের বঙ্গবন্ধু হলেন মহানায়ক আর এর পরের বঙ্গবন্ধু অনেকটাই মাটির কাছাকাছি।
তাহলে ছফা কেন বললেন,
তিনি বিলক্ষন জানতেন, পান্ডিত্যাভিমানী শিক্ষিত সমাজের মানুষ তাঁকে অন্তর থেকে অবজ্গা করেন। এই শ্রেণীটির চরিত্রের খাঁজগুলো সম্বন্ধে পুরোপুরি অবহিত ছিলেন। উনিশ শ’ উনসত্তর সালের পূর্ব পর্যন্ত এই শ্রেনীর লোকেরা তাঁকে বাগাড়ম্বর সর্বস্ব অমার্জিত হামবগ ছাড়া কিছু মনে করতেন না, তা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়।
তার মানে সত্তরের আগের বঙ্গবন্ধু আমাদের বয়সীদের কাছে মহানায়ক হলেও সব বাঙ্গালীর কাছে ছিলেন না! এই ব্যাপারটি আমার কাছে একদম অপরিচিত না। আমার মামা একজন সিএসপি অফিসার, ষাটের দশকে ঢাবি থেকে প্রথম শ্রেণী নিয়ে অর্থনীতি বিভাগ থেকে পাশ করেছিলেন। তার মতে, মুজিব লাঠি নিয়ে পোলাপান সহ মারামারি করত। আমি ব্যাপারটিকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন ভেবেছিলাম। কারণ, আমি শুনেছিলাম, সেই ষাটের দশকেই রেহমান সোবহান ছয় দফার তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে কাজ করেছিলেন, ড. কামাল হোসেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনজীবি হয়েছিলেন। তারা কেউ আমার মামার তুলনায় কম পণ্ডিত বলে মনে হয় নি।
তাহলে কি পণ্ডিতদের মধ্যে কোন একটি নির্দিষ্ট বয়সীরা বঙ্গবন্ধুর ভক্ত ছিলেন অন্য বয়সের যারা তারা তাকে অতটা বিশ্বাস করতেন না কিংবা সিএসপি অফিসার হতে পারেননি বা প্রথম শ্রেণী পাননি বলে নাক সিঁটকাতেন? নাকি পাণ্ডিত্যের ঠেলায় উঁচু তাদের নাকের কারণে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী রাজনৈতিক আন্দোলন - ছয় দফা, এগার দফা, সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণকার্যে দুর্বলতার প্রতিবাদ এসব তাদের চোখে পড়েনি? এদিকে আবার সত্তরের নির্বাচনে তো বঙ্গবন্ধু তো ঠিকই জিতেছিলেন। তাহলে কি তারা তার ব্যাপারে খুব উছ্ছসিত না হলেও ঠিকই ভোট দিতেন নাকি বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে আগ্রহী হতে তাদের ১৯৭০ এর নির্বাচন পর্যন্ত সময় লেগে গিয়েছিল? এনাদের গড় বয়স কি বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বেশি ছিল যে তাকে চ্যাংড়া পোলা ভাবতেন? নাকি তারা সমবয়সী ছিলেন যাতে করে সমবয়সী একজনের উচ্চতা হিমালয়সম হচ্ছে এটিতে তারা অভ্যস্ত ছিলেন না।
এসবের বাইরেও কারণ থাকতে পারে। বেশির ভাগ পান্ডিত্যাভিমানী শিক্ষিত সমাজের মানুষের মাঠ পর্যায়ের রাজনীতির অভিজ্ঞতা থাকার কথা না। এ কারণে কি বঙ্গবন্ধুকে যেসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সেগুলো তারা ঠিক বুঝতে পারছিলেন না? রাজনীতিতে তো মারপিট, হাঙ্গামা, জেল, হুলিয়া সবকিছুর মধ্য দিয়েই মুজিব বঙ্গবন্ধুু হয়েছিলেন। কেউ যখন রাজনীতি করে তখন সেই এলাকার রাজনীতি যে ভাষায় কথা বলে বেশিরভাগ লোক সে ভাষাতেই কথা বলে। এই ব্যাপারগুলোর কারণেই কি তারা নাক সিঁটকাতেন? এটি কি কেবল সৎ সাংস্কৃতিক দূরত্ব?
আমি জানিনা এই পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে আছে কিনা। এখন তো আর বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু আওয়ামী লীগ আছে। বাংলাদেশে কি এমন পান্ডিত্যাভিমানী শিক্ষিত সমাজের মানুষ আছে যারা বিএনপি জামাতের সমর্থক না কিন্তু আওয়ামী লীগকে একই কারণে অবজ্ঞা করেন? কারণ কিন্তু আমি জানি না, তাই উপরে কোটিখানেক প্রশ্ন রেখে এসেছি - তবে আহমদ ছফা মনে হয় আওয়ামী লীগের খারাপ কাজগুলোর কারণে অপছন্দ করার কথা বলেন নি, পান্ডিত্যাভিমানের কারণে অবজ্ঞা করার কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের ভাল দিকগুলো খুব চমৎকার (যেমন: ধর্ম নিরপেক্ষতা) কিন্তু খারাপ দিকগুলো কিন্তু কম ভয়াবহ নয় (দুর্নীতিবাজ সাংসদ, ছাত্রলীগের চাপাতিবাজি ইত্যাদি)। কিন্তু সত্তরের আগের বঙ্গবন্ধুর উপর তাদের অবজ্ঞার কারণ যা, সেই একই কারণে কি কিছু মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে নাক সিঁটকান? খারাপ কাজের কারণে অপছন্দ করা নয় কিন্তুু। খারাপ কাজের কারণে অপছন্দ করার জন্য শিক্ষিত ও পাণ্ডিত্যাভিমানী হওয়া লাগে না।
গত ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে আল জাজিরাতে জিয়া হাসানের এই লেখাটি পড়েছিলাম। এরকম অদ্ভুৎ আবর্জনা অনেকদিন পড়িনি। রীতিমত শিরোনামসহ অনুচ্ছেদ ভাগ করে করে লেখা। প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদ আবার পৃথক পৃথকভাবে ছোট ছোট আবর্জনা। প্রথম অনুচ্ছেদ টি হল শাহবাগের আন্দোলন ছিনতাই হওয়া নিয়ে। লেখক দাবী করেছেন এখন আর শাহবাগে কেউ যায় না। কিন্তু লেখা ছাপার দশ দিন আগেই গণজাগরণ মঞ্চের আহবানে প্রায় তিন লাখ লোক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সংগীত কিসের টানে গেয়ে আসল সেটির কোন ব্যাখ্যা নেই। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে এক জায়গায় তিনি দাবী করেছেন সরকার বুঝে শুনে নির্বাচনের সাথে সময় মিলিয়ে ফাঁসির দিন ফেলেছে। মামলার শুনানি নিয়ে পত্রিকার যত রিপোর্ট হয়েছে তার কোথাও পেলাম না সরকার কোন কারণে শুনানি আটকে রেখেছে। যারা বলে রায় না লিখে বিচারক বসে আছে তাদের কাউকে বলতে দেখলাম না সাড়ে সাতশ পাতার একটি রায় লিখতে ঠিক কতদিন লাগা উচিৎ। তাদের নিজেদের কোন সাড়ে সাতশ পাতার বই থাকলে সেটি কতদিনে লেখা হয়েছে সেটি দেখতে পারলেও হত। ঠিক কত তারিখে ফাঁসির তারিখ ফেললে সেটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হত সেটি আজ পর্যন্ত শুনতে পেলাম না। কিন্তু অভিযোগ করার সময় কেউ পিছিয়ে নেই! তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে বিচার প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল। কিন্তু গত চার বছর ধরে যারা একই বাদ্য বাজিয়ে যাচ্ছেন তাদের কেউ বলতে পারলেন না ত্রুটি টি কোথায় - আইনে, কার্যবিধিতে, শুনানিতে, রায়ে? কোথায়? কোন রকম তথ্য, যুক্তি বা বিশ্লেষণ ছাড়া এরকম দাবী করা হচ্ছে - মানুষ কিভাবে পারে? কাদের মোল্লার ফাসির আগের দুই দিন যা কাণ্ড হলে এর পরেও আতাঁত তত্ত্ব? আমরা কি এতটাই বোকা? ইংরেজী আরেকটু খারাপ হলে লেখকের নামে শেষের হাসান কেটে শুরুতে খালেদা বসিয়ে দিলে কেউ কি ধরতে পারত?
লেখাটি পড়ে আমার এক বন্ধুকে ফোনে নিচের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াটি জানিয়েছিলাম,
বাংলাদেশে কিছু শিক্ষিত ইংরেজী জানা মানুষ আছে যাদের নাক উঁচু হতে হতে এতটাই উঁচু হয়েছে যে মাঝে মাঝে সেটি গুঁতা দিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রের গতি পাল্টে দিতে চায়।
আমি জানি প্রতিক্রিয়াটি অনেক রুঢ় (তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী), হয়তো তার আরো অনেক চমৎকার লেখা আছে। তবে বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগকে অভিমানী কিছু পন্ডিতের অবজ্ঞা নিয়ে আমার অনেক অনেক প্রশ্ন, সন্দেহ আর দ্বন্ধ থাকলেও কিন্তুু এই নির্দিষ্ট লেখাটি যে আবর্জনা তাতে কোন সন্দেহ নেই।
কাছাকাছি শিরোনামে এর আগে আরেকটি লেখা লিখেছিলাম: আওয়ামী বিদ্বেষের মনস্তত্ব
মন্তব্য
রাজনীতির ময়দানে মুজিব বিদ্বেষে নাকের একটা ভূমিকা তখন ছিল বৈকি। কারও নাক উঁচু ছিল রইস খান্দানীর কারনে, কারও ছিল বিদ্যাদিগগজ পরিচিতির কারনে। দুটি ক্ষেত্রেই মুজিব স্পষ্টতঃই অনেকের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। উচ্চমার্গীয় বদরুদ্দিন উমর প্রথম দর্শনেই অমার্জিত বাচন ও অসংযত আচরণের কারনে তরুন মুজিবকে অপছন্দ করে বসেন। অলি আহাদের মতো ঋদ্ধ তরুন নেতারা বোধ হয় মুজিবের প্রভাবকে অগ্রাহ্য করতে পারতেন না, কিন্তু সেই প্রভাবকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনেও নিতে পারতেন না। আর ছিল বাম ঘরানা, যেখানে গন্ডায় গন্ডায় মেধাবী তরুনের পদচারনা ছিল। কিন্তু মার্কসীয় দর্শন, লেনিনবাদী কর্মপদ্ধতি কিংবা মাও সে তুং এর চিন্তাধারার বাইরে তাদের আর কোন জগত ছিল বলে মনে হয় না।
তখনকার রাজনীতির অন্যতম প্রধান অঙ্গন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও একই রকম ভাবনার উপস্থিতি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু জাতীয়তাবাদী স্বাধীকারের ভাবনাও তখন কিছু প্রাগ্রসর শিক্ষাবিদের মাথায় ছিল, এবং তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন প্রধান ভরসা। যতদূর জানি, ছয় দফার অন্যতম প্রধান রুপকার ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, যিনি স্বয়ং আহমদ ছফারও গুরু।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ঠিক কিভাবে জানলেন ছয় দফার রূপকার অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক? ছফার লেখনী থেকে নাকি অন্য কোন উৎস থেকে? যদি সেই সূত্রটা দিতেন তাহলে নতুুন করে ইতিহাসটা আবার জানতাম।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
আহমেদ ছফা তাঁর "যদ্যপি আমার গুরু" বইটিতে এরকমই বলেছেন। বিচ্ছিন্নভাবে আরও বিভিন্ন জনের লেখায়ও এরকম দেখেছি, যদিও এ বিষয়ে ভিন্নমতও আছে। তবে যে ব্যক্তিটি পাকিস্তান আমলের সুদীর্ঘ পরিসরে লেকচারারের গন্ডি পার হতে পারেন নি, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু কর্তৃক তাঁকে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা দানের ঘটনা থেকে এটা অন্তত বোঝা যায় যে তাঁর প্রতি বঙ্গবন্ধুর একটি ইতিবাচক ও সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গী ছিল।
ইশ! এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমার পড়াশোনা আরেকটু বেশি হলে শূন্য বলা যেত!
চ্রম সইত্য। আজকের অনেক বুদ্ধিজীবি তো চারিত্রিক দাসত্বের উন্নতি ঘটিয়ে পরিপূর্ণ বুদ্ধিবেশ্যায় রূপান্তরিত হয়েছেন!
ঠিক বুঝলাম না। 'মাটির কাছাকাছি' বলতে কি বোঝাতে চাইলেন?
এই লাইনটাও ঠিক বুঝলাম না।
যাই হোক, আপনার বিশ্লেষন-প্রচেষ্টা কিন্তু প্রশংসনীয়। এভাবেই চিন্তাকে খেলিয়ে অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর নিজ থেকেই বের করা যায় এক সময়, আপাত ধোয়াশাপূর্ণ বিষয় থেকে আবিষ্কার করা যায় যোগসূত্র। আজকের অনেক তরুনই কিন্তু এভাবে চিন্তা করে না। এবং সেই কারণেই থাকে মহাবিভ্রান্ত।
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
১. মাটির কাছাকাছি বলতে নেতা যখন প্রশাসক হলেন তখন সম্ভত: আমরা তার ব্যাপারগুলো আরো বেশি ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে দেখা শুরু করেছি। যেমন ধরেন আমরা তখন চিন্তা করছি তাজউদ্দীনকে কেন তিনি দূরে ঠেলে দিলেন, বাকশাল করতে গিয়ে সংবাদপত্র চারটিতে সীমাবদ্ধ রাখা কতটুকু দরকার ছিল ইত্যাদি। তখনকার যে অবস্থা তাতে বঙ্গবন্ধু নিশ্চিতভাবে একক ভাবে দায়ী ছিলেন না। কিন্তু আমরা তার সীমাবদ্ধতাগুলো দেখার চেষ্টা করি। আর তাছাড়া তখনকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া রাষ্ট্রীয় দলিলে লিপিবদ্ধ কাজেই বিস্তারিত জানার সুযোগ ছিল। কিন্তু সত্তর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো অতটা লিপিবদ্ধ না বলে খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো অতটা জানা যায় না।
২. "কেউ যখন রাজনীতি করে তখন সেই এলাকার রাজনীতি যে ভাষায় কথা বলে বেশিরভাগ লোক সে ভাষাতেই কথা বলে।" - আমি দাবী আদায়ের ভাষা বলতে চেয়েছি। যেমন হরতাল, পিকেটিং ইত্যাদি। আমি আশা করি না হুট করেই আওয়ামী লীগ বা বিএনপি রিপাবলিকান বনাম ডেমোক্রেট পার্টির মত মারামারিবিহীন রাজনীতি শুরু করে দিবে। এটা আসলে অর্গানিক্যালি হবে। রাজনৈতিক দলগুলো ঠেকে ঠেকে শিখবে।
শেহাব ভাই, আরও একটু যোগ করিঃ
ঐসময়ের (৭০ দশকের শেষাংশ) সিএসপি+আর্মী অফিসারদের একটা বড় অংশ "গোঁয়ার" বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চাপে চাকরিতে সুযোগ পেয়েছিলেন। নাহলে বাঙ্গালী রেশিও আরও কম থাকত। যদিও সুবিধাভোগীদের অধিকাংশই এই কথাটা পরে আমলাসুলভ গাম্ভীর্য সমেত বেমালুম চেপে যেতেন। এই শ্রেনীর মাঝে "ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স" বা অনুরূপ মনবৈজ্ঞানিক কারনে বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রাথমিক ভাবে গোস্বা করা ও চূড়ান্তে তিক্ততা পোষণ করা আসম্ভব কিছু না। (তথ্যসুত্রঃ আপাতত আব্বা'র ব্যাক্তিগত স্মৃতি। ওই সময়ের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখি, এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য পেলে জানাব)
আর, লাঠি হাতে মারামারির কথা বঙ্গবন্ধু'র "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে, প্রেক্ষাপট সহ।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আত্মজীবনী পড়েছি। ওনাকে আমার কাছে ঠিক গুণ্ডা মনে হয়নি। এর একটি কারণ হতে পারে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতা আছে। কারো যদি অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে অনেক ইউটোপিয়ান প্রত্যাশা থাকতে পারে।
গুণ্ডা বলিনি মোটেই... বলতে চেয়েছিলাম, কেউ ওনাকে লাঠালাঠির কথা তুলে ত্যানা প্যাচাতে চাইলে বেশ করে ওই বইটা ধরিয়ে দেয়া চলে
একদম একমত
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
যথার্থ বলেছেন।
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
চমৎকার লেখা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
মুজিববিরোধীরা মুজিবের যেসব বৈশিষ্ট্যকে অপছন্দ করতেন আর এখনও করেন, সেসব বৈশিষ্ট্য মুজিববিরোধীদের পালের গোদাদের মাঝে শতগুণে বেশি প্রস্ফূটিত থাকে কীভাবে? মুজিব কি খালেদা বা তারেকের চেয়েও বেশি স্বৈর বা দুর্নীতিবাজ ছিলেন?
শেখ মুজিবের সবচে বড় দোষ হৈলো বহুত সভ্রান্ত রাজনৈতিক বংশের লোকজনরে সে খেলায় নেয় নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সম্ভ্রান্ত বংশের লোকজন কি আসলেই খেলতে চেয়েছিল? নাকি তাদের পছন্দের জায়গা ছিল মুসলিম লীগ আর মুজিব সেই পার্টির হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছিল?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মুজিববিরোধীরা তাই মনে করেন। বেশিরভাগ মুজিববিরোধীই কট্রর বিএনপি সমর্থক, এমনকি বামাতি মুজিববিরোধীদের অন্তরেও খালেদা বা তারেক বাজিয়ে যান গণতন্ত্রের শিস!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
আমার মতে, মুজিবের ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সুশীলদের তাকে অপছন্দ করার কারণ ছিলো না। মূল কারণ, "চুপ বেয়াদব" ধমকের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন। সুশীলরা অভ্যস্ত জনগণের মুখে স্যার, স্যার শুনে। জনগণের ওপর নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিয়ে। এই সিস্টেমটা সামরিক শাসনে চলে, গণতন্ত্রে গেলেই সমস্যা। তখন সুশীলেরও এক ভোট, পাবলিকেরও এক ভোট। মুজিব ছিলো জাস্ট এই জনগণের প্রতিনিধি। এজন্যই সে সুশীলদের কোঁপে পড়েছিলো। মুজিব ফেরেশতার মতো গুণাবলীসম্পন্ন হলেও এর ভিন্নতা হতো না।
বর্তমানের মাইনাস টু সুশীলরাও একই ফর্ম্যাটে কাজ করে যাচ্ছে। এখন কোঁপটা হাসিনার ওপর।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সুশীলরা কেন ধরে নিবে তাদের সবাই স্যার স্যার করবে?
তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের কারণে তারা এরকম ব্যবহার পেতে অভ্যস্ত। অভ্যস্ততা অধিকাংশ সময়ই অনভ্যস্ত জগতকে 'অযৌক্তিক' ভাবতে শেখায়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
গাধা না হলে কেউ এভাবে ভাবে?
ভাবে। আমার এক সেকেন্ড কাজিন আছে বাংলাদেশের খুবই রিচ ফ্যামিলির। কানাডা থেকে পড়াশুনা করে আসছে। কিন্তু তার মতে দেশের লিডারশিপ এরিস্টোক্রেটিক ফ্যামিলির লোকজনের হাতে থাকা দরকার কারন তারা জন্মই নেয় লিডার হিসাবে। এন্টি-লীগ কয়েক জেনারেশনের বড়লোক ফ্যামিলির উত্তরসুরিদের মনমানসিকতা খুবই বোরিং এবং হাস্যকর।
ওয়াইফাই ক্যানসার
উনি বোকার মত ভাবেন।
মাসুদ সজীব
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
যুদ্ধে সহায়তাকারী সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি মুখ ফিরিয়ে আমেরিকার মন জয়ের চিন্তা কূটনীতিক দিক থেকে ভাল কিন্তু আদর্শচ্যুত ছিল। কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে কি বিপদেই না ফেলেছিল। দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধের পর মুজিববাহিনী (বা তার নাম ব্যাবহার করা দুর্বৃত্ত) দের সীমাহীন লুটপাট, ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে আসা জাসদের জন্ম, শেখ মনি, বাকশালের ব্যারথতা, তাজউদ্দীনের সাথে দুরত্ব এগুলা মুজিব বিদ্বেষের কারণ হতে পারে।
তাজউদ্দীন, লোকটার প্রতি মুজিব ও জিয়ার থেকেও বেশি শ্রদ্ধা রাখি।
ইউক্লিড
নতুন মন্তব্য করুন