পিজির ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে শাহবাগ থানায় গোলাম আজম মামলা দায়ের করতে এসেছেন। ওসি কিছুটা বিরক্ত। দুপুরের খাওয়ার পর তিনি পিস্তল পরিষ্কার করছিলেন। এই সময় তিনি উটকো ঝামেলা পছন্দ করেন না।
- আপনি কোন ধারায় মামলা করতে চান?
- আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায়।
- আপনার বাড়ি মগবাজারে। আপনি ওখানে মামলা করেন।
- আমি তো এখন পিজিতে প্রিজন কেবিনে আছি। তার উপর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে শাহবাগ থানা এলাকায়।
- আচ্ছা বলেন কি অপরাধ?
ওসি একটি নোটবুক টেনে নেন।
- একটি তরুণী আমার ধর্মানুভূতিতে আঘাত হেনেছে।
ঠাশ করে পিস্তল থেকে গুলি বের হয়ে ছাদে গেঁথে গেল। গোলাম আজমের ধর্মানুভূতি! ওসি সাহেব নড়েচড়ে বসলেন।
- কি! এই সব ব্রিটিশ আমলের জিনিস নিয়ে আসছেন? আপনি জানেন না ২০১৩ সালের মাঝামাঝির পর থেকে আর কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার খবর পাওয়া যায় নাই?
- ওসি সাহেব, পুরোনো অপরাধ নতুন করে ফিরে এসেছে।
- ঠিক আছে আমি লোক পাঠিয়ে দিব বিকেলে। ওরা দেখে আসবে।
- আপনি আসবেন না?
- সেটি দেখা যাবে।
বিকেলে গোলাম আজমের কেবিনে। ওসি এক চক্কর চোখ বুলালো।
- তরুণী কই?
- অপেক্ষা করেন। ঠিক বিকাল ৫ টায়।
- বিকেল ৫টায় কি?
- ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে।
- মানে?
গোলাম আজম প্রশ্নটিকে পাত্তা না দিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে কি যেন খুঁজছে?
- আবার কি হল? কি খুঁজছেন?
- আমার স্পঞ্জের স্যান্ডেলটা...
- স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরলেই কেবল ধর্মানুভূতিতে আঘাতটি আসে। আপনাকে হাতে নাতে ধরতে হবে না!
- আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
- চলুন!
- কোথায়?
গোলাম আজম ওসিকে নিয়ে পা টিপে টিপে বের হয়। তারপর করিডর দিয়ে একটু এগিয়ে ছেলেদের বাথরুমে ঢুকে।
- আমার বাথরুম পায় নি (ওসির মেজাজ সপ্তমে)।
- আমাদের কারও পায় নি আর এত জোরে কথা বলবেন না। তাহলে আঘাতের সময় হাতে নাতে ধরতে পারবেন না।
- একি! দরজার পিছনে কেন?
- চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। একটু পরে মেয়েটি আসবে। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখুন।
- কোন মেয়ে?
- যে আমার ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিচ্ছে। নতুন নার্স হিসেবে এসেছে। ভারি বেয়াদপ।
একটু পরে গোলাম আজম হাতঘড়িতে দেখে নিল ঠিক পাঁচটা বেজেছে। ওসি সাহেব হিলের ঠক ঠক শব্দ শুনতে পেল। তারপর দরজার ফাক দিয়ে দেখল একটি ছিপছিপে গড়নের মেয়ে হেঁটে চলে গেল।
- কই! আঘাত তো পেলাম না।
- ধ্যাত্তেরি! আপনাকে পুলিশে ঢুকাল কে?
- মেয়েটি অনেক সফিস্টিকেটেড ক্রিমিনাল। খুব সূক্ষ্মভাবে আঘাত করে। আমার পিছনে পিছনে আসেন।
- কোথায়?
- আরে বাবা, একটু পরে সে ধর্মানুভূতিতে আঘাত করবে। আপনি তাকে ধরবেন হাতে নাতে।
গোলাম আজম ওসির হাত ধরে টেনে বের করে পা টিপে টিপে ছেলেদের বাথরুম থেকে বের হয়ে পাশেই মেয়েদের বাথরুমে উঁকি দিল। মেয়েটি মাত্র তার কার্ডিগান খুলল। পরনে নার্সদের সাদা ড্রেস। পিছন দিক থেকে একদম সুচিত্রা সেনের মত লাগছে। গরম টুপিটা খুলতেই মাথা থেকে এক রাশ ঘন কালো চুল ঝলমল করে হাঁটু পর্যন্ত নেমে ছড়িয়ে গেল। ঠিক যেন হঠাৎ করে পাথর ফেটে ঝর্ণা জন্ম নিয়েছে - নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ! কালো চুলে হালকা হালকা ঢেউ খেলে যাচ্ছে। মেয়েটি নার্সের টুপি ঠিক করছে।
ওদিকে গোলাম আজমের মনে হল সে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেই চুলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে সে দূর থেকে মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছে। হঠাৎ তার সম্বিত ফিরে এল।
- লাগছে না? আঘাত লাগছে না? যান, যান এরেস্ট করেন বেয়াদপ মেয়েটাকে।
ওসি কেন জবাব দিচ্ছে না দেখে গোলাম আজম পিছন ফিরে দেখে ওসি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে অদ্ভুৎ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মন্তব্য
হুম
facebook
মুখাফোড়দার এই লেখাটার কথা মনে পড়ে গেল।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী আর ঠুনকো অনুভূতি বলে কথা
মাসুদ সজীব
গোয়ার ধর্মানু*ভূতি
---------------------------------
ভালো মেয়ে
অফটপিক এক্সটেনশন:
ওসি সাহেবকে গোলাম আজম: সচলায়তন মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করতেছে?
ওসি সাহেব: কিভাবে?
গোলাম আজম: পূর্ণ সচল/ হাচল না হয়ে সচলে মন্তব্য করতে বসছেন শিগগীর? এত কঠিন কঠিন ক্যাপচা দেয় যে কেউ পারে না।
ভাই, এইটা বেশী উচাম হইছে। মজা পাইলাম সেরাম !!!
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
হা হা হা ভাি , অস্থির ।
এই বাঞ্চুতের নামটা দেখলেইতো ঘেন্নায় গা রি রি করে। এরে নিয়া লেখার দরকার কি?
--------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
হার্টের রোগিরা যেনো না পড়ে, গৌতুক লেখার সময়ে ওপরে দয়া কইরা এইটা লেইখা দিবেন
সলিটারি সাইলেন্স
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অসাধারণ
নতুন মন্তব্য করুন