ইশতেহার: যুদ্ধাপরাধের বিচার ২.০

শেহাব এর ছবি
লিখেছেন শেহাব (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/০৩/২০১৪ - ৭:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে যারা ব্যক্তি হিসেবে বা কোন সংগঠনের সদস্য হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা গত ডিসেম্বরের ১২ তারিখে তাদের পরিশ্রমের প্রথম ফলটি পেয়েছেন। এটি হল কাদের মোল্লার ফাঁসী, ১৬ কোটি মানুষের বহুআকাংখিত ন্যায়বিচার। ১৯৭১ সালে যারা এই দেশে শতাব্দীর সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যার একটি চালিয়েছিল, যারা অনেক অত্যাচার নির্যাতন করেছিল তাদের ভিকটিমদের যে প্রাপ্য ন্যায়বিচার এটি কিন্তু একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ। সেটি আশরাফুজ্জামান খানকে প্রত্যাপর্নের মাধ্যমে দেশে বিচারের মুখোমুখি করাই হোক কিংবা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পাদনের খরচ তাদের কাছ থেকে আদায় করাই হোক। এর বিভিন্ন আঙ্গিক আছে। এই কাজের জন্য দরকারী আইনী বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ কিংবা সবকিছু করদাতাদের ঠিক মত জানানোর জন্য দক্ষ জনসংযোগ কর্মকর্তার নিয়োগ পর্যন্ত সবকিছুই বেশ জটিল। এটি কিন্তু শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, মানবাধিকার লংঘনের বিচারের ইতিহাসেই সকল দেশের জন্যই একটি অনন্য ও নতুন অভিজ্ঞতা। কাজেই আমরা বাংলাদেশে যদি এটি ঠিকঠাক মত করতে পারি পৃথিবীর অন্যান্য দেশ আমাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই ক্ষেত্রটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এর জন্য প্রশাসন ও বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে যারা (প্রথম বাক্যে যাদের কথা বলেছি) কাজ করছেন তাদের অবদান ইতিমধ্যে ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী ভাবে লেখা হয়ে গেছে। কিন্তু সমস্যা হল ইতিহাস বইয়ের পরের পাতাগুলো এখনও খালি আছে। বাকি পাতাগুলোতেও যেন লেখা ঠিক মত হয় তার জন্য আমাদের কাজ সমন্বয়ের মাধ্যমে আরেকটু সুসংহত করলে মন্দ হয় না। যেকোন বড় প্রজেক্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল স্বপ্ন ও প্রত্যাশা ব্যবস্থাপনা। এই বিচার নিয়ে আমাদের যেমন স্বপ্ন আছে ঠিক তেমনি বিচার ও তা নিয়ে সবাইকে সচেতন করার জন্য যারা কাজ করছেন তাদের একে অপরের কাছে প্রত্যাশাও আছে। আমাদের সব কিছু ঠিক ঠাক মত হচ্ছে? আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন ব্যক্তি বা সংগঠন আছে যার কিছু কাজ আমাদের মনে হয় অন্য কোন ভাবে করলে ভাল হত? আমাদের নিজেদের এমন কোন কাজ আছে যেটি অন্য কোন ব্যক্তি বা সংগঠনকে হতাশ করেছিল? আমাদের উদ্দেশ্য যে সৎ তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনের নিজস্ব কাজের পদ্ধতি আছে এবং পরিচিতি ও যোগাযোগের বলয় আছে। এমন ও হতে পারে কোন ব্যক্তি বা সংগঠন তার কাজ এক ভাবনা থেকে করেছেন কিন্তু যোগাযোগের দুর্বলতার কারণে আমরা সেটি অন্যভাবে মূল্যায়ন করছি এবং কখনও কখনও এর কারণে বোঝার ফাঁক তৈরি হচ্ছে।

এসব যোগাযোগহীনতা যে হচ্ছে তার প্রমাণ আমরা গত কিছুদিন ধরে পাচ্ছি। এক কাজ করলে কেমন হয়? আমরা দুই দিনের একটি কনফারেন্স করি। সময় ও খরচ বাঁচানোর জন্য এটি আমরা অনলাইনে করব। গুগল হ্যাংআউট করলাম। এটিতে অনেকে হয়তো অভ্যস্ত না কিন্তু একবার ধরে ফেললে আর সমস্যা হয় না। প্রথম দিন আমরা বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা থেকে শুরু করব। এক ঘন্টা করে করে দুপুর বারটা পর্যন্ত ৩টি সেশন হবে। এক ঘন্টার বিরতি থাকবে দুপুরের খাবারের জন্য। আবার দুপুর একটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চারটি সেশন। তাহলে দুই দিনে মোট ১৪টি সেশন হবে। এক একটি সেশন এক একটি সংগঠনের জন্য বরাদ্দ থাকবে। গণজাগরণ মঞ্চের জন্য যে সেশন তাতে তারা তাদের গত এক বছরের কাজ নিয়ে বলবে। যাদের যাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে মঞ্চের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে দ্বিমত আছে তারা তা জানাবে। মঞ্চ তার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিবে। যে স্লটে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কথা বলবে তাতে অন্যরা তাদের জিজ্ঞেস করবে নির্মূল কমিটির কোন কাজের ব্যাপারে যদি তাদের অস্পষ্টতা থাকে। একই ভাবে আইসিএসএফের কোন ব্যাপারে যদি কারও আপত্তি থাকে সে সেটি আইসিএসএফের জন্য বরাদ্দকৃত স্লটে জানাবে। শহীদ রুমী স্কোয়াডের স্লটে তাদের ব্যাপারে অন্যরা প্রশ্ন করবে। আর অবশ্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য আমরা দুইটি সেশন বরাদ্দ রাখতে পারি যেখানে তারা বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে এতদিন পর্যন্ত গৃহীত সিদ্ধান্ত ও সেগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বোঝানোর কাজ আরো ভালভাবে কি করে করা যায় সে নিয়ে আলাপ করবেন।

আমি এই লেখার আগে কোন সংগঠনের সাথে কথা বলিনি। আগে মনে হয় নিশ্চিত হওয়া দরকার এটি আসলেই ভাল বুদ্ধি কিনা!

এই কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য হবে:

১. সবার প্রত্যাশা আর স্বপ্নের একটি সামগ্রিক বাতাবরণ তৈরি করা।
২. এক সংগঠনের সাথে আরেক সংগঠনের যোগাযোগের পরিসর আর মাধ্যমের বিস্তৃতি ঘটানো।
৩. পারস্পরিক হতাশা আর দূরত্বের জায়গাগুলো কমানো।

সোজা কথায় আমরা সামনে কি করব সেই আলোচনার দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করার জন্য আমরা এই কনফারেন্সে আলাপ করব মূলত এতদিন আমরা কি করেছি।

কী বলেন আপনারা, করা যাবে না এরকম কিছু একটা?


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সমস্যা হল ইতিহাস বইয়ের পরের পাতাগুলো এখনও খালি আছে।

-খালি পাতাগুলো ভরার জন্য একটা ভালো উদ‌্যোগ এটা।

কী বলেন আপনারা, করা যাবে না এরকম কিছু একটা?

-অবশ্যই।

শুভকামনা ও শুভেচ্ছা হাসি

আয়নামতি এর ছবি

কোলাকুলি
অসম্ভব পছন্দ হলো আপনার প্রস্তাবগুলো। হোক আয়োজন চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অবশ্যই মিজান, পিষে ফ্যালো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
তানিম এহসান এর ছবি

হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চলুক

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।