নিচের ছবিটি দেখুন! এটি নেয়া হয়েছে গুগোল আর বিশ্বব্যাংকের পাবলিক ডেটা থেকে।
এখানে চীন, ভারত আর বাংলাদেশের গিনি সূচকের তুুলনা করা হয়েছে। আমার অপেশাদার জ্ঞান বলে গিনি সূচক হল ধনী আর দরিদ্রের মাঝে আয়ের বৈষম্যের মাত্রা নির্ধারণের সূচক।
আমার আগ্রহ ২০০৫ সালকে নিয়ে। আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি বা সমাজে তার আগে কী হয়েছিল যে ২০০৫ সাল থেকে ভারত আর চীনের তুলনায় আমাদের গিনি সূচক ভালোর দিকে যাওয়া শুরু করেছে?
মন্তব্য
এইখানে ধরে নেওয়া হচ্ছে গিনি সূচক কমতে থাকা মানে ভালো এবং অন্য দেশের তুলনায় কম গিনি সূচক একটা ভালো জিনিস। সবসময় নয় কিন্তু। চীন ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করছে কিনা গত দশকে আমার জানা নাই, হতে পারে। তবে সেই সিদ্ধান্তে গিনি সূচক দেখে উপনীত হওয়া মনে হয় ঠিক না।
ধরি গিনি নামতে নামতে (অর্থাৎ "ভালো হতে হতে") একবারে শুন্যে নেমে আসল। তার মানে কি? তার মানে দেশে রকেট সায়েন্টিস্ট আর মুদি দোকানদারের একই ইনকাম। এইটা কি ভালো? ভালো না। এইটার মানে সম্ভবত দেশে সবাই মুদি আর কোন রকেট সায়েন্টিস্ট নাই। অন্য কিছুও হতে পারে। আবার ধরি গিনি উঠতে উঠতে একবারে এক হয়ে গেল। তার মানে কি? তারমানে রকেট সায়েন্টিস্ট সব টাকা ইনকাম করে আর মুদি না খায়া মরে। এইটা কি ভালো?
কোনটাই ভালো না। এইটাই হইল কথা। গিনি সূচক দিয়ে দুইটা দেশের ভালো খারাপ মাপা ঠিক হয়না। একটা দেশের গিনি সূচক মাঝামাঝি রেঞ্জে থাকলে তারা ঠিক আছে। এক্সট্রিম রেঞ্জে না হইলেই হইল। চীন ভারতের ইকোনমি আমাদের থেকে বড়, তাদের মাঝে বেশী ইনকাম করা লোক বেশী থাকবে বাংলাদেশের তুলনায় সেইটাও স্বাভাবিক।
মনে কইরেন না আমি বলছি বাংলাদেশ গত দশকে উন্নতি করে নাই বা "ভালো"র দিকে যায় নাই। যেতে পারে, আমি জানিনা। তবে গিনি সূচক স্ন্যাপশট দেখে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় না।
..................................................................
#Banshibir.
এখানে একটা সূচক নিয়ে কথা হচ্ছে। সেটার উপরে সব কিছু নির্ভর করে এরকমটা বলা হচ্ছে না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হুমম, আমার ডোমেইন নলেজ আরেকটু বেশি হলে শূন্য বলা যেত।
ড্যাটাতে ২০০৫ সাল থেকে পরিবর্তন দেখা যাবার কারণ হলো সেই বছর একটা সার্ভে থেকে ড্যাটা পাওয়া গেছে। এর আগের ড্যাটা ২০০০ সালের। পরেরটা ২০১০ সালের। আমার চোখের রিডিং হলো ২০০৫ সালে না। ১৯৯৫ সাল থেকেই এই জিনিস কমছে। এবং ২০০৫এ এসে সেটা ভারতকে ডিঙিয়ে গেছে।
এই ড্যাটা নিয়ে খুব গুরুতর ডিসিশনে আসার আগে কয়েকটা তথ্য দেই। এই সার্ভেতে খুব বেশি ধনী বা হতদরিদ্রদের পাবেন না। খুব বেশি ধনীদের সংখ্যা খুব বেশি বেড়ে যাওয়া ও খুব দরিদ্রদের সংখ্যাও যদি বেড়ে যায় তাহলে থিওরেটিকালি গিনিতে সেটার প্রভাব পড়বে। কিন্তু ধরেন এই দুই গ্রুপ যদি ড্যাটাতে না থাকে তাহলে যেই মেজারমেন্ট আপনি পাবেন তাতে অবস্থা উন্নত দেখতে পাবেন এটাতে কোন ভুল নেই। বাংলাদেশে আসলেই নিন্মবিত্তের আর্থিক অবস্থা আগের থেকে ভালো হয়েছে। মধ্যবিত্তের অবস্থা হয়তো নেমে ব্যবধান কমে এসেছে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ও ও!
১. হাসিবের মন্তব্য অনুযায়ী যদি দুই এক্সট্রিম গ্রুপকে যদি আসলেই সার্ভেতে অন্তর্ভূক্ত করা না হয়ে থাকে তাহলে এই ধরনের স্টাডি কি আদৌ কোন কাজের? অথবা এটা আসলেই কি কোন কিছুকে রিপ্রেজেন্ট করে?
২. পাঁচ বছরের গ্যাপে ডাটা নিয়ে গ্রাফ আঁকলে সেটা তো 'সুন্দর গোল গোল' গ্রাফ হবে। সেখানে মাঝখানে কী উঠানামা হলো সেটা তো আর বোঝা যাবে না।
৩. বাস্তবে গণচীনে বৈষম্যের পরিমাণ সত্তরের দশক থেকে বাড়ছে। নব্বইয়ের দশক থেকে সেটা শনৈ শনৈ গতিতে বাড়ছে।
ভারতে বৈষম্যের পরিমাণ বাড়ছে নব্বইয়ের দশক থেকে তবে সেটা গণচীনের মতো অতোটা শার্পলি না। তবে এখন 'আচ্ছে দিন' এসে গেছে তো, তাই এখন আশা করা যায় বৈষম্য বৃদ্ধির হার গণচীনকে ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তদের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। ভোগ্যপণ্যের বাজার বিস্তৃত করতে গেলে নিম্নবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হয়। নিম্নবিত্ত যদি দুই হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল ফোন কেনার সামর্থ অর্জন না করে তাহলে প্রতি মাসে পাঁচশ' টাকার কথা কী করে বলবে! অথবা সপ্তাহে একবার যদি দুইশ' টাকা কেজি দরে ফার্মের মুরগী খেতে না পারে তাহলে বিষাক্ত পোলট্রি ফিড থেকে রোগাক্রান্ত হয়ে প্রতি মাসে পাঁচশ টাকার ওষুধ কী করে কিনবে! মধ্যবিত্তদের কথাটা আর বললাম না। সেটা বলতে গেলে ঘরে কেরোসিনের অভাব হতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
যদ্দুর মনে পড়ে শেষ সার্ভেটা ছিলো ১২০০০ লোকের ওপর। এই ১২ হাজারের মধ্যে আপনাকে মূল জনসংখ্যার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। এখন হাজার কোটি টাকার মালিকের সংখ্যায় এতো কম যে তারা আসলে পপুলেশন প্রোপোরশন স্যাম্পলে আনলে সেটা হয়তো একটা পুর্নসংখ্যাও হয় না।
এসব সার্ভেতে সমস্যা আছে। এটাই যেহেতু একমাত্র সোর্স সেহেতু এটাকে বাদ দিয়ে আগানোর সুযোগ নাই। এটাকেই উন্নত করে নিতে হবে সময়ের সাথে সাথে।
উদাহরণ দেই দুইটা। স্যাম্পল ড্যাটার ডেসাইলগুলো ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায় ১০%এর মতো লোক ট্যাপের পানির সংযোগের সাথে যুক্ত। স্যানিটারি টয়লেট সম্ভবত ১৭-১৮%। দেশের পপুলেশনের চিত্র এতোটা খারাপ না। অতএব এই সার্ভেতে তুলনামূলকভাবে বেশি করে গরীব লোকের ইন্টারভিউ নেয়া হয়। মধ্যবিত্তের সংখ্যাটা আরেকটু বাড়ানো উচিত বলে মনে হয়।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আপনার লেখাটা পড়ে কৌতুহলী হয়ে উঠে একটু গুগ্লানোর ফলে এইসবগুলি মনে হল।
(১) হয়ত ঐ সময় অসাম্য কমিয়ে আনার জন্য দেশের সরকার কিছু সফল উদ্যোগ নিয়েছিল এবং সেই কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে। (এই সূত্র থেকে কিছু পাওয়া যেতে পারে?
http://www.imf.org/external/pubs/ft/scr/2005/cr05410.pdf)
(২) উন্নত দেশগুলি থেকে নিম্ন-আয়ের কিছু কাজ উন্নয়নশীল দেশের শ্রমিকদের দিয়ে আরো সস্তায় করান যাবে এই ধরণের বাস্তবতায় কিছু কাজ (যেমন বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকদের কাজ) আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এসে হাজির হয় এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
(৩) মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা সামষ্টিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির বৃদ্ধি যেই খাতগুলিতে ঘটেছে সেটা ২০০৫ ও তার পরবর্ত্তী বছরগুলিতে দেশের চরম ধনী অংশের থেকেও চরম দরিদ্র অংশের আয়-এর সাথে বেশী সংপৃক্ত। অর্থাৎ নিম্ন আয়ের মানুষদের নিম্ন-মধ্যবিত্তে উত্তরণের জন্য সফল কর্মক্ষেত্রের বিকাশ ঘটেছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এটা 'জিনী ইনডেক্স' হবে, গিনি নয়.
আচ্ছা ঠিক আছে।
নতুন মন্তব্য করুন