[এই লেখাটি প্রথমে আমি বিডিনিউজ২৪.কমের জন্য লিখি প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের তৃতীয় লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর পর। কিন্তু পর দিনই নুরুল ইসলাম নাহিদের লেখাটি আসায় পরিস্থিতি পাল্টে যায় (আমার লেখাটি কিছুটা প্রাসংগিকতা হারায়)। কিছুদিন পরে আমি আবার ঘষামাজা করি কিন্তু দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে তদন্ত কমিটি আর শিক্ষাবিদদের সাথে মন্ত্রণালয়ের সভা হয় এবং পরিস্থিতি ঘন ঘন পাল্টাচ্ছে। আমি তাই লেখাটি প্রকাশ হওয়ার আগেই উইথড্র করে ব্লগে রেখে দিচ্ছি। আমার মূল ফোকাস হল কাঁধের বয়সী বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে যারা প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে তাদের কাজ যেন সবাই জানতে পারে। ওরা ছোট কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে...]
আমার সরাসরি শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই নোংরা ব্যাপারটির প্রতিবাদে ইতিমধ্যে পাঁচবার লিখেছেন। তিনি বার বার তার লেখায় এই মুহুর্তে যারা বিভিন্ন পর্যায়ে পড়াশোনা করছে সেই সব তরুণ-তরুণীদের হতাশা, ক্ষোভ আর প্রতিবাদের কথা বলেছেন। আমার এই লেখা শুধু তাদেরই জন্য। একটি ব্যাপার শুরুতেই পরিষ্কার করে নেয়া দরকার। কেউ যদি দাবী করে থাকে চোখের সামনে ফেসবুকের টাইমলাইনে প্রশ্ন এসে নাচতে থাকলে চোখ না বুলিয়ে পারা যায়না তারা মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'ভাঙা রেকর্ড' লেখাটিতে বলা সেই সৎ কিশোরীর কথা মনে করে দেখতে পারেন। সবাই যখন ‘ফাঁস হওয়া প্রশ্ন যেহেতু সবাই পাচ্ছে কাজেই দেখার মধ্যে পাপ নেই’ ভেবে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে, সেই মেয়েটি সময় আর স্রোতের বিপরীতে দাড়িয়ে ছিল পরীক্ষার হলে ঢুকার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। সে হয়তো কয়েক পয়েন্ট জিপিএ কম পাবে কিন্তু যারা প্রশ্ন দেখে জিপিএ ফাইভ পেল তারা কোনদিন আয়নায় নিজের চোখে চোখ রাখলে সেই ফলের জন্য কোন গর্ব অনুভব করবে না। খুব উঁচুদরের মিথ্যাবাদী ও নির্লজ্জ না হলে "ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বাড়ির দরজায় এসে নক করছিল তাই দরজা না খুলে পারলুম না" - এ ধরণের আজগুবি যুক্তি দেয়া সম্ভব নয়।
আমার শিক্ষকের প্রথম লেখাটি ছিল মূলত আসলেই যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেটি প্রমাণ করা [১]। সবাই তখন আশা করেছিল এসব অকাট্য প্রমাণ পাওয়ার পর যেসব দুর্বৃত্ত অভিভাবক ও তাদের সন্তানেরা টাকাপয়সা খরচ করে এই প্রশ্ন জোগাড় করে পরীক্ষা উৎরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের আটকানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য দপ্তরগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু সেটি হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা যে একটি অত্যন্ত নৃশংস অপরাধ এই বোধটুকু শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আছে কিনা। এই প্রসংগে তিনি দ্বিতীয় লেখাটি লিখেছেন [২]। এর মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণ অনুসন্ধানের জন্য কারা দায়ী সেটি বের করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হল। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত [৪] কমিটি বের করতে পারেনি কারা ফাঁস করেছে। যেহেতু সবসময়ই কিছু না কিছু লোক প্রশ্নপত্র পাওয়ার জন্য টাকা দিতে রাজী আছে কাজেই দুর্বৃত্তরা যে সব সময়ই প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা করবে সেটি স্বাভাবিক। তাহলে এ ব্যাপারে সরকারের কাজটি কি? সরকারের কাজটি হল এই প্রশ্নপত্র গোপন রাখার পদ্ধতিটি যতটুকু সম্ভব দুর্ভেদ্য করা এবং যদি এর পরও কোন কারণে ফাঁস হয়ে যায় তাহলে সাথে সাথে পরীক্ষা স্থগিত করা অথবা বিকল্প ফাঁস না হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া যাতে করে ফাঁসকারী দুর্বৃত্তদের মতলব আর ব্যবসা ভন্ডুল হয়ে যায়। এতে দুর্বৃত্ত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা একটু আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কিন্তু তাতে ভাল মানুষদের কোন আপত্তি থাকার কথা না।
প্রশ্ন হল, সরকার যথেষ্ট পরিমাণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল কি? আমার কাছে এই মুহুর্তে বিজিপ্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই কাজেই আমি নিশ্চিত নই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল কিনা।কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা ঠিক সময়ে পেয়েছিলেন কিনা আর যদি পেয়ে থাকেন তাহলে পরীক্ষা স্থগিত করেছিলেন কিনা এই ব্যাপারগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। মুহম্মদ জাফর ইকবাল যেমন পত্রিকায় কলাম লিখে এই ব্যাপারটির সুরাহা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তেমনি অনলাইনে আরেকদল মানুষ যুদ্ধ করে যাচ্ছে এর পরের ধাপটির জন্য। সেই ধাপটি কি? প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণগুলো সংগ্রহ করা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো যাতে করে তারা পরীক্ষা স্থগিত করার পিছনে কোন ফালতু অজুহাত না দিতে পারে।
তেমন একজন হল প্রশান্ত আচার্য। এই বাচ্চা ছেলে বুয়েটে পড়ে আর এই মুহুর্তে আরো অনেক মানুষের মত সে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা যখন রাত জেগে মেইলের পর মেইল করেও শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের টনক নড়াতে পারে না তখন খুবই হতাশ হয়ে যান। তাদের চেষ্টার কথা জানা দেশের সবার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে কয়েকটি লাভ হবে। আমি তো একজনের কথা জানি কারণ সে আমার পরিচিতির বলয়ের মধ্যে। কিন্তু এরকম অজানা অচেনা আরো অনেকে আছেন যারা কোথাও কোন প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে নিজের পরীক্ষার্থী আত্মীয়ের জন্য সংগ্রহ না করে বোর্ডের কাছে প্রমাণ পাঠান আর পুলিশের কাছে ফাঁস বা বিতরণকারীর তথ্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আমার খুব ইচ্ছা এই মানুষগুলোর চেষ্টার কথা সবাই জানুক, বাকিরাও তাদের মত করে ভাবুক। তাছাড়া কোন অপরাধ সাংবাদিক যদি এ নিয়ে আরো অনুসন্ধান করতে চান তাহলে তাদের যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য থেকে পেশাগত ভাবে উপকৃত হবেন। এছাড়া কোন আইনজীবি যদি রীট করে এই ব্যাপারটি জানতে চান যে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল কিনা সেক্ষেত্রে প্রশান্তদের এসব যোগাযোগের তথ্য তাদের জন্য ভীষণ দরকারী হয়ে উঠবে। তারা জানতে পারবেন আসলেই কোন কোন সরকারী কর্মকর্তা প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর অকাট্য প্রমাণ সহ পেয়েছিলেন। তখন তারা রীটে এও জিজ্ঞেস করতে পারবেন ওই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার তার দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেছিলেন কিনা। নাগরিক হিসেবে সরকারকে এভাবে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
প্রশান্ত প্রথম ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে যোগাযোগ করে ২৬শে এপ্রিল রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে। সে পরের দিন পদার্থ বিদ্যা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন হিসেবে যেটি পাওয়া যাচ্ছিল সেটি ঢাকা বোর্ডের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য প্রশান্তর ইমেইল এড্রেসটি মুছে দিয়ে আমি তার বার্তাটি হুবহু দিয়ে দিলাম:
বলাই বাহুল্য পরীক্ষাটি বাতিল হয়নি।প্রশান্ত কিন্তু বোর্ডের পিছনে লেগে ছিল। ঘন্টাখানেকের মধ্যে সে আরেকটি ইমেইল পাঠায় যাতে সে ব্যাখ্যা করে যেহেতু একই সূত্র থেকে ফাঁস হওয়া অন্য প্রশ্নগুলো মিলে গেছে কাজেই এ বারের ভয়টি একেবারে অমূলক নয়। সেই সূত্রটিও ইমেইলে দিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেই মেইলটিও এখানে দিয়ে দিলাম।
এত কিছু করার পরও যখন পরীক্ষা বাতিল হয়নি তখন আমার বন্ধুটি ভীষণ হতাশ হয়ে যায়। আমি অনেক অনুরোধ করে তার ইমেইলের কপিগুলো প্রকাশের অনুমতি পাই। এর মধ্যে আবার নতুন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়া শুরু করল। আনন্দের সাথে আবিষ্কার করলাম আমার বন্ধুটি নিজেকে সামলে নিয়েছে এবং আবার বোর্ডের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে। তার প্রমাণ হল ২৪শে মের পাঠানো ইমেইল যেখানে সে গণিত প্রথম পত্রের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হিসেবে যেটি পাওয়া যাচ্ছে সেটির কপি পাঠিয়েছে। তার আশা আগের মতই, যদি মিলে যায় তাহলে বোর্ড যেন পরীক্ষা স্থগিত করে। ইমেইলটি আমি এখানে দিয়ে দিলাম।
কয়েকদিনের মধ্যে অত্যন্ত আনন্দের সাথে আবিষ্কার করলাম প্রশান্ত'র মত আরো শত শত তরুণ তরুণী আদাজল খেয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানোর জন্য নেমে পড়েছে। ইতিমধ্যে ফেসবুকে এ নিয়ে কয়েক হাজার লোকের একটি ইভেন্ট শুরু হয়েছে [৫]। যারা ফেসবুকের ইভেন্টের উপর ভরসা করেন না তাদের কষ্ট করে জামায়াতে ইসলামীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসতে পারেন গত বছর ৫ই ফেব্রুয়ারী শাহবাগ আন্দোলনের ফেসবুক ইভেন্টটির প্রভাব কি ছিল। গণিত দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন যখন ফাঁস হল এই সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব প্রমাণ সহ তার আগেই ২৭ শে মে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড অফিসে চলে যায়। তারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে সব প্রমাণ (ফাঁস হওয়া সম্ভাব্য প্রশ্ন, ফাঁসের সাথে জড়িত ফেসবুক পেইজের ও ব্যক্তির প্রোফাইলের লিংক ইত্যাদি) জমা দিয়ে আসে এবং গণিত দ্বিতীয় পত্রের ফাঁস হওয়া প্রশ্নের কপি যে বোর্ডের কাছে আছে তার প্রমাণ হিসেবে, আরেকটি কপিতে বোর্ডের সীল ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সই নিয়ে আসে।
এত কিছুর করার পর কি আর বোর্ড চুপচাপ বসে থাকতে পারে? এই বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল যখন দেখল ঢাকা বোর্ডের গণিত দ্বিতীয় পত্র প্রশ্নের সাথে সেই “১০০% নিশ্চিত সেটের” কোন মিল নেই। আরও যে দুই সেট সম্ভাব্য প্রশ্ন ছিল তার সাথে মিলিয়েও তারা বোর্ড প্রশ্নের সাথে উল্লেখযোগ্য মিল পায়নি।
এর মধ্যে ৮ই মে আমার শিক্ষকের তৃতীয় লেখাটি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি এই সংস্কৃতির আরেকটি দু:খজনক দিক তুলে ধরেন। আমাদের গণমাধ্যমগুলোর এখন পর্যন্ত আচরণ দেখে মনে হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস তেমন কোন বড় সমস্যা নয়। কোন এক রহস্যময় কারণে তারা কখনও বুঝতে পারেনি যে এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ। ব্যাপারটি অনেকটা গণমাধ্যমে চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন লেখার কার্পণ্যের মত। বেশিরভাগ গণমাধ্যমে চলমান মামলাগুলোর প্রতিবেদন বলতে দুই-এক কলাম ইঞ্চিতে কে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল (সমকালের তরুণ সাংবাদিক আকরামুল শামীমের ‘ট্রাইব্যুনাল আপডেট’ ওয়েবসাইটটি একটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম) আর কে অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু সেই মামলার স্বাক্ষীদের জবানবন্দী আসলে নিতান্তই ব্যক্তিগত ইতিহাস নয়। সেই গল্পগুলো আসলে জাতি হিসেবে আমাদের জন্মবেদনার পংক্তিমালা। এগুলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অস্তিত্বের সংজ্ঞানির্ধারণী বিষয় যার জন্য সপ্তাহে দুই-তিনবার দুই কলাম ইঞ্চি যথেষ্ট নয়। ঠিক তেমন আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াটিকে আমরা জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করে যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছি কিনা। স্পষ্টতই বিক্রি হওয়ার মত যথেষ্ট 'গরম' না হওয়ায় বেশিরভাগ সম্পাদক হেডলাইনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারটি দেন নি। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার তাদের দৃষ্টিতে দেশে সেদিন ঘটেছিল। স্যারের আরেকটি দাবী ছিল তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া বিশেষ করে যারা ফাস করছে ও ছড়াচ্ছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা। কিন্তু তখনও বাজারে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হিসেবে অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছিল এবং কেউ তার জন্য গ্রেফতার হচ্ছিল না। একটা জিনিস পরিষ্কারভাবে বুঝাটা জরুরী। আসল প্রশ্নের সাথে মিলুক আর না মিলুক কেউ যদি ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হিসেবে কিছু প্রচার করে বা বিক্রি করার চেষ্টা করে তাহলেই তাকে আপ্যায়নের জন্য জেলখানায় নিয়ে যেতে হবে। পুলিশ যদি সবাইকে গ্রেফতার করতে না পারে আমরা বুঝতে রাজী আছি যে ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় সামর্থ্যের অভাবে সবকিছু করা যায় না। কিন্তু সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে যদি একজনও গ্রেফতার না হয় আর যে কিনা ফাঁস হওয়া বন্ধের জন্য জিডি করতে যায় (মনে আছে সেই হতাশ ক্ষুব্ধ কিশোরের কথা?) তাকে পাগল বলে থানা থেকে বের করে দেয়া হয় তাহলে সরকারের মধ্যে কিছু মানুষের যে সদিচ্ছার অভাব আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। নিজের ইনবক্সে টনের পর টন ফাঁস হওয়া প্রশ্নের ইলেক্টনিক কপি প্রমাণ হিসেবে জমে থাকার পরও যদি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মন্ত্রীকে এই বলে আশ্বাস দেন যে সব গুজব আর মন্ত্রী সেটি বিশ্বাস করে বসে থাকেন তাহলে তো আসলেই চিন্তার বিষয়!
তরুণ ছাত্রছাত্রীদের বিচ্ছিন্ন কিছু সাফল্যের পরও যখন ফাঁস হওয়া (গুজব হোক বা সত্যি হোক) বন্ধ হচ্ছিল না তখন ২৮শে মে মুহম্মদ জাফর ইকবাল শহীদ মিনারে তার একক প্রতিবাদের সিদ্ধান্তটি নিলেন।এতে করে আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীরা নতুন করে আশার আলো দেখল। প্রত্যাশিত ভাবেই সেই আলোটি আসল আমাদের জাতির এই মুহুর্তের একটাই যে বাতিঘর তাঁর কাছ থেকে। তারা শহীদ মিনারে স্যারের সাথে দেখা করল আর নতুন উদ্যমে তাদের সংগ্রাম শুরু করল। এবার তাদের লক্ষ্য আরো দূরে। এই মুহুর্তে তারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নের নামে বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাওয়া বিভিন্ন কাগজ-পত্র সংগ্রহ করছে। কাগজগুলোর লেখা বা ছাপার ধরণ, বিতরণের জাল আর বিতরণকারীদের যোগাযোগের ধরণ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করে তাদের অবস্থান ও পরিচয় যতটুকু সম্ভব ব্যবহার করে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া [৬]।
স্যারের শেষ লেখাটিতে তিনি একটি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। শহীদ মিনারে তিনি যে ফেস্টুন নিয়ে বসে ছিলেন কারা কম্পিউটারে তার দাবীর ভাষা আংশিক পরিবর্তন করে অনলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। স্যার অবাক হলেও আমরা খুব একটা অবাক হইনি। আমাদের প্রজন্ম শাহবাগ আন্দোলনের সময় এসব অসংখ্য দেখেছে। দাবী আদায়ের জন্য সত্যের মধ্যে এক-আধটু মিথ্যা না মিশালে কেন যেন অনেকের মনে হয় আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না (অধিকারের সেই তালিকার কথা বলছি)। আপনাদের অনেকের হয়তো গতবছরের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আন্দোলনের সময়কার সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে যাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রতিবাদ করার সময় অধ্যাপক আনু মুহম্মদ আর তার সহকর্মীরা যখন ভারতে গিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছবি তুলে নিয়ে আসলেন [৭] তখন সেখানকার পুলিশি হয়রানীকে গণআন্দোলনের উপর সাম্রাজ্যবাদের আক্রমণ হিসেবে দেখানো হয় [৮]। পরবর্তীতে যদিও ভারতের বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী শ্যাম কে মন্ডলের কাছে থেকে জানা গেল তারা ট্যুরিস্ট ভিসাতে ভারতে গিয়ে কয়লাখনিতে ঢুকে গিয়ে ছিলেন তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে আমাদের দেশের কি-পয়েন্ট ইনস্টলেশনগুলোতে যদি বিদেশী পর্যটকরা এসে ঘোরাঘুরি করে ছবি তুলে আর আমাদের পুলিশ যদি বসে থাকে সেটি আমাদের ভাল লাগবে? এ নিয়ে যখন তাদের বক্তব্য সরাসরি জানতে চাওয়া হল তখন কল্লোল মুস্তফারা লাপাত্তা হয়ে গেলেন [৯]। পরিবেশ আন্দোলনের মত একটি চমৎকার ব্যাপারে কেন এই সব খুচরো মিথ্যে ঢুকানোর প্রয়োজন কি আসলেই আছে? আমার শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ঠিক এই রহস্যটির সমাধান করতে পারছেন না, পরীক্ষা ফাঁসের দাবীর এই চমৎকার আন্দোলনে একটি আংশিক সত্য বক্তব্যকে তাঁর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কেন? ২০১৩ সালের গণআন্দোলনগুলোর পরে যেটি পরিষ্কার তা হল আমাদের গণআন্দোলনগুলোতে স্বচ্ছতা আর সততা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক আন্দোলনেই অল্প কিছু মানুষ থাকে যারা নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন ব্যবহার করতে বা জিইয়ে রাখতে চায় কিন্তু সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে চান না। অল্প কিছু মিথ্যা দিয়ে যদি বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করা যায় তাহলে রাগারাগি বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে আর দুই পক্ষের গলাবাজির টানাপোড়েনে যাদের জন্য আন্দোলন তারা দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যায়। আমার বিশ্বাস যে প্রজন্ম গণআন্দোলনের পাঠ নিয়েছে ২০১৩ সালে শাহবাগে দাঁড়িয়ে তারা এই পার্থক্যগুলো বুঝে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবে।
শতশত ছেলেমেয়ে (একদম হিসেব করে বললে কমপক্ষে পাঁচ হাজার) নিয়মিত সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়মিত কি ফাঁস হচ্ছে, কারা ফাঁস করছে, কারা ছড়িয়ে দিচ্ছে, কারা কিনে নিচ্ছে এই তথ্যগুলো যতদূর সম্ভব দিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রতি আমার করজোড়ে অনুরোধ, "আপনারা হতাশ হবেন না, বিচলিত হবেন না, আপনাদের কাজের ফল নিশ্চয়ই আপনারা পাবেন। যে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন আপনারা দেখেন সেটি কখনও বৃথা যাবে না। আপনাদের সাথে আমরা আছি, সবাই আছি!"
এই যোগাযোগগুলি আমাদের কি করে সাহায্য করবে? আমরা যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস স্থায়ী ভাবে বন্ধ করতে চাই তাহলে আমাদের জানতে হয়ে গাফিলতি কোন কোন পর্যায়ে হয়েছিল। এখানে দেয়া তথ্যগুলি থেকে আমরা জানতে পারছি ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে ফাঁস হওয়ার ব্যাপারটি জানানো হয়েছিল। কাজেই পরবর্তী প্রশ্ন হল তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়েছিলেন কিনা, অধস্তনদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলেন কিনা এবং তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করেছিলেন কিনা। কারা এই ব্যাপারটি খুঁজে বের করবে? সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি কিংবা অপরাধ সাংবাদিক অথবা আইনজীবিরা যদি রীট করেন তবে তার জন্য আদালতের দেয়া আদেশে গঠিত তদন্ত কমিটি। তবে আমি মোটেই অবাক হব না যদি এ নিয়ে গণতদন্ত শুরু হয়ে যায়। ফেসবুকভিত্তিক ছেলেমেয়েদের দলটি ইতিমধ্যে তা শুরু করেছে যা উপরে বলেছি।
আমার শিক্ষক এখনও আশা ছাড়েননি। গত জুনের ১১ তারিখে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে উনি এবং আরো যারা জ্যেষ্ঠ শিক্ষাবিদ আছেন তারা একত্রে বসেছেন। পত্রিকার খবর অনুযায়ী [১০] শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন। এর পরের ধাপ হল হতাশ ছাত্রছাত্রীদের মন ভাল করে দেয়া আর এই অন্যায়ের বিচার করা। আশার ব্যাপার হল তারা এসব ব্যাপার নিয়ে কথা বলেছেন। এবারের প্রশ্নফাঁসে সোশ্যাল মিডিয়ার অভিনব ব্যবহারের ব্যাপারটিও এসেছে এবং ওনারা ঠিক করেছেন প্রযুক্তি অপব্যবহারের জবাব প্রযুক্তি দিয়েই দিবেন। এসব কথা কখন কাজে পরিণত হবে তা দেখার জন্য আমরা অনেক আশা নিয়ে বসে আছি। তবে খুশির খবর হল পত্রিকায় এসব কথা আশার কারণে মানুষ একটু একটু করে আশা ফিরে পাচ্ছে। আমি অন্তত একজন প্রযুক্তিবিদের কথা জানি যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের গোড়ায় হাত দিয়ে সেটি বন্ধ করা যায় সেটি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। সরকারের জন্য যেটি শেখার বিষয় এখানে সেটি হল যখন সর্বোচ্চ পদধারী তার দায়িত্ব ও প্রতিজ্ঞার কথা গণমাধ্যমে জানান তখন সেটি নেতৃত্বের চিহ্ন হিসেবে নাগরিকদের মনে আশার সঞ্চার করে। কেউ কেউ তখন উৎসাহিত হয়ে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে তার কিছু কিছু দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেয়। সৃজনশীল পেশাজীবিদের সরকার আশা করি ঠিকমত কাজে লাগাবে। আর 'প্রশ্নপত্র ফাঁসঃ মানি না, মানবো না' দলটির ছেলেমেয়েরা তো তো রাতের পর রাত জেগে আছে শুধুমাত্র শেষ মুহুর্তের প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ সংগ্রহ আর সেগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য। এ যুগের বাতিঘর মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর ভবিষ্যতের বাতিঘর ওরা সবাইই যেহেতু উঠে পড়ে লেগেছে আমার বিশ্বাস কিছু একটা হবেই। চলুন সবাই মিলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের শেষ দেখে ছাড়ি!
তথ্যসূত্র:
১. কেউ কি আমাকে বলবেন?, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিডিনিউজ২৪.কম, এপ্রিল ২৮, ২০১৪
২. প্রশ্নপত্র ফাঁস কি অপরাধ নয়, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিডিনিউজ২৪.কম, মে ৮, ২০১৪
৩. মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিডিনিউজ২৪.কম, মে ২৩, ২০১৪
৪. প্রতি বোর্ডে আলাদা প্রশ্ন, দিনে দুটি পরীক্ষার সুপারিশ আসছে, শহীদুল ইসলাম, বিডিনিউজ২৪.কম, মে ২২, ২০১৪
৫. ফেসবুক পেজ - প্রশ্নপত্র ফাঁসঃ মানি না, মানবো না - http://on.fb.me/1niGQ4g
৬. প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ - ফেসবুকের ছবির এলবাম, http://on.fb.me/1lpE08w
৭. ভারতে কয়লা খনিতে ঢুকতে আনু মুহাম্মদদের ‘বাধা’, শামীমা বিনতে রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, অক্টোবর ২৯, ২০১৩, http://bit.ly/1y6g6t2
৮. অধ্যাপক আনু মুহম্মদের ভারত ভ্রমণ নিয়ে প্রকৌশলী কল্লোল মুস্তফার ফেসবুক স্ট্যাটাস, http://on.fb.me/1uwlst1
৯. ভারতে পুলিশের হয়রানী সাম্রাজ্যবাদের আক্রমণ নাকি বিজনেস ভিসার কাজ ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে করতে যাওয়ার কারিগরী ভুলের ফল এই প্রশ্নের জবাব কল্লোল মুস্তফা কখনই দেননি, ফেসবুক আলাপচারিতার লিংক: http://on.fb.me/1sh30sm
১০. প্রশ্ন ফাঁস রোধে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকম, জুন ১১, ২০১৪, http://bit.ly/SZHFDL
মন্তব্য
এইসব তরুণদের চেষ্টার কথা বিস্তারিত জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ শেহাব ভাই। সবাই মিলে প্রশ্ন ফাঁসের শেষ অবশ্যই দেখে ছাড়ব।
গোঁসাইবাবু
দেখেশুনে যা মনে হয়েছে তদন্ত কমিটি ও রিপোর্ট হল জাস্ট ঠেলা খেয়ে গা বাঁচানো, সাথে বোর্ড গুলির নিদ্রারসে ভরা চেয়ারে যারা বসে আছেন তাদের দায়িত্বহীনতাকে মলম দিয়ে ঢেকে দিতে অনেক কষ্ট করতে হল। সে রিপুট নাকি আবার একশো ছাব্বিশ পৃষ্ঠা! প্রজাতন্ত্রের অর্থের কি নিদারুণ অপচয়। তার উপরে এই আন্দোলনকারী আর হাউ কাউ পার্টির উপরে সূক্ষ্মভাবে ঝাল মেটানোর জন্য মন্ত্রি সাহেব এখন বলছেন হিমালয়াকৃতি এইচ এস সি সিলেবাসের পরীক্ষা কোন বন্ধ ছাড়াই দিতে হবে আরো ভয়ংকর ব্যাপার হল এই ফাস হওয়া প্রশ্নেও সৎ থেকে যারা এক্সাম দিয়েছে , এবং জিপিএ টাও এরা কিছুটা কম পাবে। তাদের কোন ফেয়ার চান্স দেয়ার কোন চান্স নেই । যথারীতি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ এর উপরে একশো মার্ক বরাদ্দ। যা তোরা চুলোয় যা !
ঢাবি বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো তাই করবে। নেহারুল চকচকে তালুতে নিদ্রাকুসুম তেল দেবেন।
রাজর্ষি
একটি বিষয় আমাকে খুব বিস্মিত করেছে। প্রশান্তের মত অখ্যাত হুজুগে তরুণদের কথা না হয় বাদই দিলাম, মোহাম্মাদ জাফর ইকবালের মত দিকপাল মানুষও যখন শহীদ মিনারে প্রতিবাদ অবস্থান গ্রহণ করলেন, তখন এই বিশাল জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা শহরের একশ মানুষও তাঁর সাথে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যোগ দিলেন না। সারা দেশের কোটি কোটি ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকদের মধ্য থেকে একশ মানুষও তাঁর উদ্যোগের সাথে সহমর্মিতা জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না। দায়টা কি তাহলে শুধুই জনাকয়েক প্রশান্ত আচার্য্য এবং একজন মোহাম্মদ জাফর ইকবালের?
ইমিডিয়েটলি হয়তো সবাই ব্যাপারটি বুঝতে পারছে না, কিন্তু দিনশেষে এটাকে সবার সাথে কম্যুনিকেট করতে হবেই। এটা জাতীয় দুর্যোগ।
জিনিসটা নিয়ে অনেক ভাববার, কাজ করবার দরকার আছে। এরকম চলতে থাকলে বাচ্চারা পড়বে কেন?
আমার এইস এস সি পরিক্ষার সময় বাংলা প্রথম পত্র পরিক্ষার দিন সকাল বেলা সংবাদপত্র খুলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর দেখি। সেবছর মোট সাতটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। কিছু কিছু বিষয়ের চারটি সেট প্রশ্নপত্রই ফাঁস হয়ে যায়। রসায়ন প্রথম পত্র পরিক্ষার প্রশ্নপত্র তো পত্রিকায় ছাপিয়েই দেয়া হয়। সেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া হয়ত আমাকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে নাই কিন্তু ১৭ বছরের সেই মেয়েটির কাছে সেই দিনগুলো মোটামুটি বিভীষিকাময় দিন ছিল। সময় বয়ে যাচ্ছে কিন্তু বদলায়নি। আজো না জানি কত শত শত ছাত্রছাত্রীর কাছে তার সমস্ত কষ্ট বৃথা মনে হচ্ছে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায়।
ফাহিমা দিলশাদ
শিক্ষাই জাতীর মেরুদণ্ড তাই সেই মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়ার জন্য ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মির নির্দেশে বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ জন বুদ্ধিজীবীকে - যাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী - ধরে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে কিন্তু এবার হয়ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে আমরা নিজেরাই নিজেদের মেরুদণ্ড ভাঙ্গার কাজে অংশগ্রহণ করছি।
ফাহিমা দিলশাদ
সাথে আছি
শেহাব ভাই,
নজরুল ভাইয়ের "শুধু আমার সন্তান থাকে যেন দুধে ভাতে" লেখাটির কথা মনে পড়ছে... যে সকল অভিভাবক "এই বারের মত হৈ চৈ কইরো না, আমার পুলা/মাইয়া আগে পার হইয়া যাক" এই নীতিতে আছেন (বিপুল সঙ্খ্যায়) তাদের স্থায়ী ভাবে চটকানা মারার একটা ব্যাবস্থাও করা উচিত।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
"দুর্বৃত্তরা যে সব সময়ই প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা করবে সেটি স্বাভাবিক।" বিপদ হচ্ছে, এই দুর্বৃত্তরা নানা ছদ্মবেশে সাধারণের মধ্যে মিশে থাকে, নীচতলা থেকে উপরতলা পর্যন্ত।
যাঁরা এই ভয়াবহ রকম নোংরা খেলা বন্ধ করার জন্য লড়ে যাচ্ছেন তাদের সকলকে অজস্র অভিবাদন।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
সুন্দর উপস্হাপনা! লেখক কে ধন্যবাদ!
শরিফুল_93
নতুন মন্তব্য করুন