আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই অব্যবহৃত ইতিহাসের স্বর্ণখনির সন্ধান পেয়েছি। এটি রাখা আছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব সার্ভারে। এতে কি আছে? ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে আমার সূত্র মতে ২০০২ সাল পর্যন্ত বেশিরভাগ পত্রিকার সবগুলো পাতার স্ক্যান করা কপি।
আপনি কি জানেন ১৯৭৫ সালের ১৬ই আগস্ট অবজারভারের উপসম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল প্রথম পাতায়? এর শিরোনাম ছিল - "হিস্টরিক নেসেসিটি"। একই দিন দৈনিক বাংলায় মুশতাকের মন্ত্রীসভার শপথগ্রহণের ছবিও ছাপা হয়েছিল। সেখানে যাদের ছবি ছিল তারা হলেন - বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, ইউসুফ আলী, ফণী মজুমদার, মনোরঞ্জন ধর, আব্দুল মোমিন, আসাদুজ্জামান, এ আর মল্লিক, মোজাফ্ফর আহমেদ, আব্দুল মান্নান, সোহরাব হোসেন।
আপনারা কি জানেন ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ সরকারী ভাবে "নৈতিকতা সপ্তাহ" পালন করা হয়েছিল? বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচার জেনারেল জিয়ার পাপেট রাষ্ট্রপতি সায়েমের বাণী আপনি খুজে পাবেন সেই সময়ের পত্রিকা ঘাঁটলে। কি করে ঘাঁটবেন? সেটি সম্ভব হবে যদি এই আর্কাইভে আপনি ঢুকতে পারেন।
১৯৮০ তে আমরা আদিবাসীদের কি করে সাইজ করেছিলাম? এপ্রিলের ২ তারিখ একটি পত্রিকায় নাকি খবর এসেছে একজন আর্মী অফিসার কয়েকদিন আগে স্থানীয় কাউখালী বাজারে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা সভার আহবান করেন। আদিবাসীরা যখন সেখানে উপস্থিত হন তখন বেশকিছু সেনাসদস্য সেখানে এসে গুলি করে তাদের মেরে ফেলেন।
১৯৮০ সালের ২৩শে মে তারিখে খন্দকার মুশতাকের জনসভায় যে বোমা ফাটানো হয়েছিল জানতেন? সেদিনের পত্রিকায় এই তথ্যগুলো আছেন। আপনি জানতে হলে আর্কাইভে সেটি দেখতে হবে।
বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেছিলেন ১৯৭২ থেকেই। ১৯৭৫ সালের শেষ দিনে জেনারেল জিয়া আর তার পাপেট প্রেসিডেন্ট এই প্রক্রিয়ার আইনী ভিত্তি দালাল আইন বাতিল করেন। আমাদের ইতিহাসের এই কলংকতিলকের খবর সংবাদপত্রে সেদিন এসেছিল।
এই বিশাল তথ্য ভান্ডার ইন্ডাস্ট্রিগ্রেড স্ক্যানার দিয়ে বেশ কয়েকবছর আগে তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের একটি প্রকল্পের অধীনে তৈরি করেছে খুব সম্ভবত: তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিসের গবেষণার কাজে। আইনত: এই তথ্যগুলোর মালিক কি সরকার না পত্রিকাগুলো সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণা নেই। তবে, করদাতাদের অর্থব্যয়ে তৈরি এই তথ্যভান্ডার অব্যবহৃত থেকে গেলে বা দেশীয় গবেষকদের কাজে না আসলে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে না।
তথ্যমন্ত্রণালয়ের এই আর্কাইভ যদি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় তাহলে আমাদের গবেষকদের ইতিহাস চর্চায় একটি বড় প্যারাডাইম শিফট হবে। পাশাপাশি এখনকার যারা সিনিয়র রাজনীতিবিদ ও সুশীল তাদের তরুণ বয়সের আমলনামাও দেখার সুযোগ আমাদের সবার জন্য তৈরি হবে। তথ্য মন্ত্রণালয় যদি এই ব্যাপারে একটু খাটাখাটনি করে তাহলে দারুণ হয়।
এই কাজ কয়েকভাবে করা যেতে পারে।
ক. বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে: এ পদ্ধতিতে সরকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলকে এই তথ্যভান্ডারে প্রবেশের সুযোগ দিবে। প্রত্যেকটি দল স্বাধীনভাবে এই তথ্যগুলোকে কি করে সাধারণ মানুষ ও পেশাদার গবেষকদের ব্যবহারোপযোগী করা যায় সেটি বের করবে।
খ. বেসিসের মাধ্যমে: এ পদ্ধতিতে সরকার বেসিসের সহায়তায় বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানীকে দিবে। বাকিটা 'ক' দ্রষ্টব্য।
গ. তথ্যমন্ত্রণালয়ের নিজস্ব গবেষকদলের মাধ্যমে: এটি তুলনামূলকভাবে হয়তো ধীর হতে পারে কিন্তু একেবারে খারাপ কিছু না।
টেকনিক্যাল তথ্য (আমার সূত্রমতে, তথ্যমন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে যাচাই করা হয়নি)
মোট ইমেজ ফাইল সংখ্যা: সোয়া দুই লক্ষের কিছু বেশি
ডেটা সাইজ: প্রায় দুইশ' সত্তর গিগাবাইট
ফাইল ফরমেট: জেপিজি
উদাহরণ হিসেবে একটি ফাইলের বিস্তারিত তথ্য দিলাম।
রেজ্যুলশন: ২৭১৭ বাই ১৯২৫ পিক্সেল, ৮৫ পিক্সেল পার ইঞ্চি
প্রিন্ট সাইজ: ৩২" বাই ২২.৫"
গ্রেস্কেল
মন্তব্য
দারুণ তো! কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয় আদৌ এই আর্কাইভের কথা প্রকাশ করেছে কি? শুধুমাত্র শেখ হাসিনার অফিসের জন্য তৈরি হয়ে থাকলে ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এই আর্কাইভ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আশংকা হচ্ছে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
"তথ্য আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার"। এই শ্লোগান তথ্য মন্ত্রনালয়ের। সুতরাং আমরা চাইলে তথ্য মন্ত্রনালয়কে বাধ্য করতে পারি তথ্যগুলো উন্মুক্ত করে দিতে। তাদের আইনেই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অসাধারন তথ্য জ্ঞাপন, কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো ভেবে পাচ্ছি না। আপনি এই আর্কাইভের কোন কন্টেন্ট দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছেন?
তথ্য মন্ত্রক যদি ছবিগুলোকে ক্লাউডে তুলে দিতো, তাহলে আমরা অনেকেই উপকৃত হতাম।
facebook
আমরা কি এ জীবনে দেখতে পারব?
এমন দারুণ একটা তথ্য জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
এখনতো অনেক ইতিহাসই বিকৃত!যার অনেকগুলোর বিকৃতির পিছনে সরকারেরই হাত আছে। সরকার কি চাইবে সেই ইতিহাসের পূনর্বিবেচনা করা হোক?
এইরকম দুই চারটা ইতিহাস বিকৃতির উদাহরণ দেন না ভাইয়া।
যেমন??
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
অতিথি লেখকের বেশে নিজের নাম না দিয়ে এমন আজাইরা আলেগেশন করবেন, কিন্তু কোন উদহারন দিবেন না, ক্যামনে কি, ব্রাদার?
- ইয়ামেন
কোন সেই সরকার যারা ইতিহাস বিকৃত করেছে??? সুনির্দিষ্ট করে বলুন??
অতিথি লেখকের নামে এমন আলটপকা মন্তব্য দেখলে তো সন্দেহ জাগে।
দারুন!
জেপিজি ফাইলের image compression ratio জানা যাবে কি ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
সাধারণ জনগণ দেখার সৌভাগ্য কি হবে?
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
জানি না, কি নিয়ে এই গবেষনা, তবে ইতিহাস বিকৃতি রোধই যদি হয় উদ্দেশ্য, তাহলে তরুণদের অ্যাকসেস দিলে অনেক অনেক বেশী কার্যকর হবে; বঙ্গবন্ধু যে রাজাকারদের ক্ষমা করেনি, সেই সত্যটা বা এরকম আরও অনেক ঐতিহাসিক সত্য বিভ্রান্ত তরুণদের সামনে তখন জ্বলজ্বল করে উঠবে!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
এই ডাটা এভাবে করে ছাড়লে বিশাল কাজে লাগতো।
আরে, আরে, আপনি কে? কোত্থেকে? এভাবে চুপেচাপে এসে চলে গেলে চলবে?
****************************************
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ঘুমের ঘোরে হাঁটাহাটির অভ্যেস আছে মনে হয় শুভাশীষদার! ঘোর কেটে গেলেই ভুলে যাবেন সচলের এত এত পাঠকদের। যারা তার লেখালেখি মিসায়
বিশাল সব গ্যাঞ্জামে আছি। নাইলে লেইখা ফাডায়ালাতাম।
সরকার এই আর্কাইভে ঢুকার সুযোগ দেবে কি না যেহেতু নিশ্চিত না, অনৈতিক ভাবে হলেও এর একটা কপি সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করে রাখা দরকার। সরকার বদল হলে ভাবমূর্তির খাতিরে আর্কাইভ হারিয়ে যাওয়া অনেকের জন্য লাভজনক হবে।
বাঙ্গালির ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তির জন্য এইরকম আর্কাইভ অশেষ দরকারী।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
মরুদ্যান ভাইয়ের প্রশ্নের সাথে সহমত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এই আর্কাইভে এক্সেস করার উপায় কী?
____________________________
বাহ, শেহাব ভাই এটা তো একটা চমৎকার জিনিসের খোঁজ দিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে, এই আর্কাইভ যদি উম্মুক্ত করা হত তাহলে মহিউদ্দিন আহমদ থেকে শুরু করে এ কে খোন্দকার অনেক নতুন নতুন 'ইতিহাসবিদ' এরই মুখ বন্ধ করে দেয়া যেত কিছুটা ক্রসরেফারেন্স চেক করে। আমার তিনটা প্রশ্ন আপনার জন্যঃ
১) আপনার বন্ধু কি নিজে তথ্য মন্ত্রনালয়ে কাজ করেন, উনি কিভাবে এই আর্কাইভের খবর পেলেন?
২) এটা কি তাহলে অ্যাক্সেস করার কোন উপায়ই নেই জনসাধারনের জন্য?
৩) তথ্য মন্ত্রনালয়ের কাছে পেটিশন করার কোন উপায় আছে কি? তাহলে আমরা কেউ একজন পেটিশন শুরু করে মন্ত্রনলায়ের পাঠানোর প্রয়াস করতে পারি।
- ইয়ামেন
আমার বন্ধুর সাথে এক সময় প্রাক্তন এক সচিবের যোগাযোগ হয়েছিল। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েসসাইটে গিয়ে দেখলাম তথ্য অধিকার আইনের আওতায় কিছু জানতে চাইলে নিচের লিংকে থাকা মানুষটির সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
http://www.moi.gov.bd/Designated_Officer_RTI_for_MOI.pdf
তারমানে সেরকম সুযোগ সুবিধা নিয়ে অনেকেই এই আর্কাইভে ঢুকেছেন!
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট
সংরক্ষণের খাতিরেই এই তথ্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।
সিডি/ডিভিডি আকারেও সরকারী ভাবে প্রকাশ করা যায় কি?
পুরো একটা আর্কাইভ আমার টেবিলে- ভাবলেই তো গা শিউরে ওঠে!
ঢাবি'র ছাত্রত্ব শেষ হবার পর সবচেয়ে অসহায় লেগেছিল যখন বুঝলাম লাইব্রেরীতে আর আগের মত চাইলেই ঢুকতে পারব না। ওখানেও ভাল সংগ্রহ ছিল। এই আর্কাইভের এক্সেস পেলে সে দুঃখ কেটে যেত।
[তথ্য অধিকার আইন পড়ে দেখেছিলুম এককালে।
সে আইনে এই তথ্যের এক্সেস চাইলে ফেরানোর উপায় দেখছিনা]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
এই তথ্যভান্ডার উন্মুক্ত করা প্রয়োজন, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে আমাদের বহুরূপী মানুষগুলোর আসল চেহারা উন্মোচন করার স্বার্থে হলেও
~~ মেঠুসেলাহ
আপডেট: সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ সরকারের কাছ থেকে এই ডেটার একটি লাইসেন্সড কপি জোগাড় করেছে।
জেপিজি ফাইলগুলোর তালিকা এখানে পাওয়া যাবে।
নতুন মন্তব্য করুন