আমি অনেকদিন ধরে আমাদের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের বেল কার্ভগুলো দেখতে আগ্রহী। বেল কার্ভ দেখতে এরকম।
সাধারণত: কোন পরীক্ষায় যদি ঠিকমত পড়ানো হয় আর ঠিকভাবে খাতা কাটা হয় তাহলে বেল কার্ভের চূড়া থাকবে মাঝামাঝি। অর্থাৎ, গড় মানের ছাত্রছাত্রীরা থাকবে সংখ্যায় বেশি আর খুব ভাল বা খারাপ মানের ছাত্রছাত্রী থাকবে সংখ্যায় কম। যেমন, নিচে একটি আইকিউ স্কোরের বেল কার্ভ দেয়া হল। আপনারা দেখবেন এখানে বেশিরভাগ লোকের আইকিউ মাঝারি আর খুব কম লোকের আইকিউ খুব কম বা বেশি।
কোন পরীক্ষার ফলাফলের বেল কার্ভ যদি স্ক্যুড হয় অর্থাৎ চূড়া যদি একদিকে বেশি সরে যায় তাহলে এর অর্থ হল শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ খুব খারাপ বা খুব ভাল করছে। আমি যেহেতু পেশাদার নই এর মানে হল ক্লাশে খুব ভালো বা খারাপ পড়ানো হচ্ছে নাকি পরীক্ষার খাতায় কিপটার মতো বা ঢেলে নাম্বার দেয়া হচ্ছে কিনা তা জানি না। যেমন নিচের ছবিতে তিনটি বেল কার্ভ আছে। তার মধ্যে সবুজ আর নীল এই দুইটি বেল কার্ভ স্ক্যুড।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেল কার্ভের স্ক্যুনেস নিয়ে শিক্ষাবিদদের কাজ করার কথা আর সাংবাদিকদের আগ্রহী হওয়ার কথা। যেহেতু তেমন কিছু আমার চোখে পড়ে নি নিজেরই সেগুলো তৈরি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এই বেল কার্ভ দিয়ে কি হবে? আমি এর বেশি কিছু হয়তো পারব না কিন্তু আমি আশা করব শিক্ষাবিদ, শিক্ষা নিয়ে আগ্রহী সাংবাদিক আর যারা শিক্ষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করেন তারা এখানে একটু নজর দিবেন আর দেখবেন এই তথ্যগুলো কোনো কাজে আসে কিনা। এখানে ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১০ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের বেল কার্ভ দিয়ে দিলাম।
২০০৪
২০০৫
২০০৬
২০০৭
২০০৮
২০০৯
২০১০
২০১১
২০১২
২০১৩
২০১৪
আমি এই সব ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নই তবে তিনটি ব্যাপার ইন্টারেসটিং মনে হয়েছে। প্রথমত: কখনই এই ফলাফলের ডিস্ট্রিবিউশন আদর্শ বেল কার্ভ ছিল না। দ্বিতীয়ত: ২০০৪ সালের বেল কার্ভ আর ২০১৪ সালের বেল কার্ভ একটি আরেকটার প্রায় বিপরীত - আয়নার সামনে ধরলে যেমন উল্টে যায় তেমন। তৃতীয়ত:, ২০০৮ সালে বেল কার্ভের দুইটি চূড়া ছিল। ওই বছর আসলে কী হয়েছিল? এবার আমরা আরেকটি কাজ করি - সব বছরের বেল কার্ভ একসাথে করে দেখি।
দেখা যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে বেল কার্ভের চূড়া খারাপ থেকে ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে চূড়াটি কখনই মাঝখানে ছিল না। কেমন যেন লাফ দিয়ে খারাপ থেকে ভালোর দিকে চলে গেছে। শিক্ষাগবেষক, সাংবাদিক ও পরিসংখ্যানবিদরা এই ব্যাপারটি নিয়ে একটু ভালো করে ভেবে দেখবেন?
বি.দ্র. ডেটাগুলো ব্যানবেইস থেকে নেয়া।
মন্তব্য
খুবই কৌতুহলদ্দীপক বিষয়। এইভাবে শিক্ষা মন্ত্রনালয় চিন্তা করে কি না জানি না। তবে হয়ত উদ্যোগ ছিল কার্ভকে জাগামতন আনা ( কার্ভ ধরে চিন্তা নআ করে থাকলেও ফলাফলের সমতা আনা হয়ত উদ্দেশ্য ছিল) তবে বাঙালিদের স্বভাবজাত ভাবে যে কোন কিছুকেই বেশি বেশি করা হয়, ফলে একবারে ডান থেকে বামে হেলে পড়েছে।
তবে রেখাচিত্রের পরিবর্তনের পিছে একাধিক কারণ আছে, খুবই জটিলে হিসাব।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ভাল কাজ। শুধু আনুভূমিক অক্ষের মানগুলো ছোট থেকে বড় করে দিলে স্বাভাবিক হতো। এমনিতেই বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা কিন্তু এক নজরের শুধু কার্ভ দেখে কেউ ভাবতে পারে ভালো থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু অক্ষের দিকে দেখলে সেই ভুল ভাংবে।
বেল কার্ভ দিয়ে বোঝা যাচ্ছে বেশীরভাগ ছেলে মেয়েরা ভাল করছে। এটা আসলেই ভাল করছে নাকি নাম্বার বেশী দিয়ে ভালো করানো হচ্ছে সেটা কার্ভ বলতে পারবেনা।
আমি শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করি না, তাই বলতে পারছিনা কারণটা কি। অধিকতর জিপিএ ৫-ধারীর সংখ্যাা বৃদ্ধির কারণটা রাজনৈতিক হতে পারে কিংবা হতে পারে প্রকৃত উন্নয়ন। তবে প্রকৃত উন্নয়ন কিনা সেটার যাচাইয়ের একটা পদ্ধতি হতে পারে বিদেশের মতো এপটিটিউড টেস্ট।
আরেকটা উপায় হতে পারে আন্ডারগ্র্যাড লেভেলে এসব ছাত্র-ছাত্রী কেমন করে সেটা দিয়ে বিচার করে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হুমম, ঠিক, ঠিক।
জানা যায় -> জানা যায় না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কিনা জানা না থাকলেও, এই উল্লম্ফন যে শিক্ষা আন্দোলনের সাথে যুক্তদের নজরে এসেছে তা মোটামোটি নিশ্চিত। দারুণ একটা কাজ হলো। কেউ যদি বিষয়টিতে আরো গভীরভাবে কাজ করতে চায় তাহলে এটি বেশ কাজে দেবে।
প্রকৃতিপ্রেমিক যেমনটা বলেছেন প্রকৃত উন্নয়ন নির্ধারণের জন্য একটা পদ্ধতি বের করতে হবে। কারণ এই উন্নয়ন প্রদর্শন নাকি প্রকৃত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
স্বয়ম
জিপিএ পদ্ধতি চালু হবার আগের ডাটা এখানে তুলনার করলে ভাল হ্ত।
বেলকার্ভে প্রাপ্ত নাম্বারের শতকরা হিসাব করা হয়ে থাকে, কিন্তু আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রাপ্ত নাম্বারের উপরই গ্রেড দেওয়া হয় ৷ তাই বেলকার্ভ এখানে মনে হয় পুরোপুরি প্রযোজ্য হবে না ৷
চমত্কার একটি গবেষণা - ধরে নিচ্ছি এটি সূচনা মাত্র, পরবর্তীতে একে আরো সুঁচালো করে তুলবেন ৷
মরুচারী
পরীক্ষার ফলের ডিস্ট্রিবিউশন দেখলে দুটি চূড়া দেখা যাচ্ছে। স্ট্যাটিসটিকসের পরিভাষায় এই ধরনের ডিস্ট্রিবিউশনকে বাইমোডাল, বা দ্বি-চূড়ক ডিস্ট্রিবিউশন বলে। স্ট্যাটিসটিসিয়ানদের সাধারণ ঐক্যমত্য হল দ্বি-চূড়ক ডিস্ট্রিবিউশন আসলে দুটি পপুলেশন ডিস্ট্রিবিউশনের সমাহার। এক্ষেত্রে, একটি পপুলেশন হল যে ছাত্রদের প্রস্তুতি ভাল হয় নি, অন্যটি হল যাদের প্রস্তুতি ভাল হয়েছে। বাঁ দিকের চূড়াটি প্রথম পপুলেশনের জন্য, ডান দিকেরটি দ্বিতীয় পপুলেশনের জন্য।
আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে একটা প্রশ্ন মাথায় এসেছিলো- একটু ব্যস্ত থাকায় মন্তব্য করা হয়ে উঠেনি।
দেশের বাইরে পড়তে এসে দেখেছি শিক্ষকেরা মোটামুটি সবাই "কার্ভ" করে গ্রেড, মানে চেষ্টা করে বেল কার্ভের কাছাকাছি ফিটিং করতে। যখন একজন শিক্ষকই সব খাতা দেখে, তখন বেলকার্ভের ফিটিং এর কাছাকাছি থাকাটা খুব কঠিন মনে হয় না। কিন্তু আমি ভাবছিলাম, এসএসসি কিংবা এইচএসসির মতো বিশাল পরীক্ষাগুলির কথা, যেখানে লাখ লাখ ছাত্র পরীক্ষা দেয়, এবং হাজার হাজার শিক্ষক খাতা দেখেন। যতোদূর জানি, খাতা দেখার ব্যাপারে কিছু স্পষ্ট নির্দেশনা আছে- কোন প্রশ্নের কতোটুকু উত্তরের জন্য কতোটা নম্বর এমন আর কী। সেই গাইডলাইন মেনে চললে, আইডিয়ালি সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি সেটা আসলে কতোটা সম্ভব? এটা একটা বিশাল ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেম, যেইখানে সেন্ট্রাল কোঅর্ডিনেশন যথেষ্ট বলে মনে হয় না (শিক্ষকদের খামখেয়ালির কথা বাদই দিলাম)- সেক্ষেত্রে আমরা কি আসলেই নর্মাল ডিস্ট্রিবিউশন কিংবা কাছাকাছি কিছু আশা করতে পারি?
জানি না আমার চিন্তাটা টেকনিক্যালি কতোটা ঠিক। পরিসংখ্যান যতোটুকু বুঝি, তাতে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং।
লেখা ভালো লেগেছে-
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনার প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।
নতুন মন্তব্য করুন