কিছুদিন আগে ফেসবুকের নিউজফিডে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দেয়া ফতোয়ার কথা শুনেছিলাম। আজকে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেটি দেখলাম (লিংক)। বিষয় চেয়ারে বসে নামাজ পড়া নিয়ে।
আমার কাছে এই চর্চাটি বেশ কনফিউজিং মনে হল। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমি জানি দেশের আইন প্রবর্তনের একমাত্র অধিকার সংসদের। আমার তাতে সমস্যা নেই কারণ সেখানে আমার এলাকার এমপি আছে যে আমার কাছে দায়বদ্ধ। এর বাইরে আদালত মাঝে মধ্যে ডিক্রী বা রুলিং জারী করে। সেখানেও আমার কোন সমস্যা নেই কারণ আদালত নিজে প্রধান বিচারপতির কাছে দায়বদ্ধ যাকে আমাদের সাংসদদের অভিশংসিত করার ক্ষমতা আছে। এর বাইরে সরকারী দপ্তরগুলো বিধিমালা জারী করে। এই সব দপ্তর যার যার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির কাছে দায়বদ্ধ। এখন ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে ফতোয়া দিচ্ছে সেগুলোও কি এই মেকানিজমের মধ্যে পড়ে?
চেয়ারে বসে নামাজ পড়া যাবে কিনা এটি খুব মোলায়েম প্রশ্ন। কিন্তু যদি আজকে সমকামীদের মধ্যে (আমার এখনকার আইনে সমকাম নিষিদ্ধ। এই মধ্যযুগীয় বর্বর আইন থাকা এখনও অন্যায় এবং যেহেতু আইন সংসদ প্রণয়ন করে ভোটার হিসেবে আমাদেরও দায় আছে) যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তারা যদি মসজিদে যেতে চায় আর ইসলামিক ফাউন্ডেশন যদি ফতোয়া দিতে চায় যে তারা মসজিদে ঢুকতে পারবে না বা কোন কাজী তাদের বিয়ে পড়াতে পারবে না তাহলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কি সেই অধিকার আছে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে ফতোয়া দেয় তা কি সব মুসলমান মানতে বাধ্য? যদি মানতে বাধ্য না হয় এই ফতোয়া কি আদৌ কোন কার্যকর জিনিস? যদি কার্যকর জিনিস না হয় তাহলে জনগণের করের টাকায় মুফতি রাখার কি কোন দরকার আছে?
আমার বন্ধুদের মধ্যে কোন মুফতী নেই। যারা মুফতী তারা নিজেদের বা সহকর্মী মুফতিদের দেয়া ফতোয়া নিয়ে কি ভাবেন? ধরেন, আমি বললাম আমি একজন মুসলমান কিন্তু আপনার ফতোয়া মানব না তখন কি আমাকে শাস্তি দেয়ার কোন অধিকার তাদের আছে? কিংবা রাষ্ট্র কি তাদের হয়ে আমাকে শাস্তি দিবে? যদি না দেয় তাহলে বাংলাদেশে মুফতী হওয়ার অর্থ কি? পাঠকদের মধ্যে যদি কোন মুফতী থাকেন তাহলে তিনি যদি মন্তব্য করেন তাহলে ভাল হয়।
মন্তব্য
একটা অপারেশনের পর আমি অর্ধেক মানুষ, মেঝেতে হাঁটু ভাঁজ করে বসা তো দূরের কথা ঝুঁকতেও কষ্ট। আমার কি হবে! চেয়ার ছাড়া গতি নাই। আমার মা আর্থাইটিসের রোগী তার কি হবে! নাকি এই আইন মসজিদের নামাজীদের জন্য প্রযোজ্য? আমিও জানতে চাই।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
যদ্দুর জানি ফতোয়া অর্থ "মতামত" - যার সর্বজনীন বাধ্যবাধকতা নেই। এটা রাষ্ট্রীয় আইন না।
****************************************
ধর্মব্যবস্যায়ীদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে নতুনত্বে পাছে মাতব্বরি শেষ হয়ে যায় । যে বা যারা ইতিহাস ঘেটে বের করেছে অসুস্থ ব্যাক্তিদের জন্য শরীয়ত সম্মত নামাজ আদায়ের পন্থা তাদের এটা জানা দর্কার ছিলো শরীয়ত সৃষ্টির সময় বর্তমান চেয়ারের অস্তিত্ব ছিলো না থাকলে চেয়ার শরীয়তের মধ্যে অনুপ্রবেশ করতো তাতে সন্দেহ নাই কারণ শরীয়তের ইতিহাস অনুযায়ি একসময় পাচ ওয়াক্তের বেশি ছিলো যা ছিলো বিড়ম্বনা এবং কষ্টকর পরে সংশোধিত হয়ে পাচ ওয়াক্ত হয়েছে । পয়েন্ট হচ্ছে কষ্ট লাঘব । চেয়ার সম্পর্কিত ফতোয়া প্রদান অন্য কিছু না এইটা বাচ্চা কাচ্চা বা বুড়োদের মতো মনোযোগ আকর্ষণ এর অন্যতম পন্থা ।
মোস্তফা কামাল
বর্তমান চেয়ার কত সালে আবিস্কার হইসে? "বর্তমান" চেয়ার প্লাস্টিক এর আর অতীতের চেয়ার কাঠের- এই ছাড়া চেয়ারের আর কি বিবর্তন হইসে?
ইসলামিক ফাউনেডশন ম্যাগি নুডুলসে হালাল নুডুলস হিসেবে সার্টিফিকেট দিয়েছে, কিভাবে দেয়? হুট করে একটা নড়াচড়া খেয়াল করা যাচ্ছে, বিষয়টা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না। দেখা যাক।
শরীয়ত অনুযায়ী ফতোয়া বৈধ এবং প্রয়োজনীয়। ফতোয়া হল একটি আরবী শব্দ। যা কুরআন সুন্নাহ তথা ইসলামী শরীয়তের একটি পরিভাষা। দ্বীন-ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসার পর একজন দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে প্রাজ্ঞ মুফতী কুরআন-হাদীস ও ইসলামী আইন শাস্ত্র অনুযায়ী যেই সমাধান দেন তাই “ফতোয়া”। ইসলামী বিধান বর্ণনাকারীকে বলে “মুফতী” আর যে সকল প্রতিষ্ঠান এই দায়িত্ব পালন করেন তাকে বলে “দারুল ইফতা”। ইসলামী বিধি বিধান সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নন, এমন যে কেউ মুফতিগনের কাছে ফতোয়া চাইতে পারেন। তবে উল্লেখ্য যে, ইসলামী শরীয়তে বিচার ব্যবস্থা ও ফতোয়া দু’টি এক জিনিস নয়। সমাধান জানানো মুফতির কাজ, কিন্তু তা প্রয়োগ করার কোন অধিকার তার নেই।
আর বাংলাদেশের বর্তমান আইন অনুযায়ী ও ফতোয়া বৈধ। ২০০১ সালে ফতোয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট এক রায় দেয়, এর বিরুদ্ধে আপীল হলে দীর্ঘদিন পর ২০১১ সালে এক সংক্ষিপ্ত আদেশে সুপ্রিম কোর্ট সে আদেশ বহাল রাখে, কিন্তু ২০১৫ সালে ২৫শে জানুয়ারী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খাইরুল হকের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ সে আদেশ থেকে সরে এসে ১৩৮ পৃষ্ঠার লিখিত রায়ে ফতোয়াকে বৈধতা প্রদান করেছেন। সেই রায়ের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হল-
১. ধর্মীয় বিষয়াদিতে শুধু সঠিক শিক্ষিত ব্যক্তিরা ফতোয়া দিতে পারবেন, যা শুধু স্বেচ্ছায় গ্রহণযোগ্য। কিন্তু যে কোনো ধরনের বল প্রয়োগ বা অনুচিত প্রভাব প্রয়োগ করা যাবে না।
২. কোনো ব্যক্তির অধিকার, মর্যাদা বা সম্মান (যা দেশের আইনের গণ্ডির আওতায় আসে) বিনষ্ট করে এমন ফতোয়া দেয়া যাবে না।
৩. ফতোয়ার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেয়া যাবে না।
সুতরাং এটা পরিস্কার যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দেয়া প্রাথমিক ফতোয়া মানাটা কারো জন্য বাধ্যতামুলক নয়।
কিন্তু এসব তো গেল শরিয়তি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনের বিষয়। ইসলামি ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব ও শরীয়তী বিধি বিধানের বিষয়ে প্রায় শুরু থেকেই তো নানা জনের নানা মত। সময়ের আবর্তে সে জটিলতা বেড়েছে বৈ কমেনি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ক'দিন পর এদেশের ম্যাগীতেও যদি হালাল সীসা পাওয়া যায় তখন কি ফাউন্ডেশন পূর্বপ্রদত্ত সনদের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এমন ফরমান জারি করে সবাইকে সেটা গেলাবে?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন