আগাম সতর্কতা: আমার আইনের উপর কোন আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ বা পেশাগত অভিজ্ঞতা নেই।
কিছুদিন আগে অপেশাদার কৌতুহল থেকে আমি আমাদের তিনটি আইনের কথাগুলো পড়ছিলাম। আইনগুলো হল:
১. পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ২১ নম্বর অধ্যায়ের বর্ণিত - মানহানির প্রতিকার আইন
২. পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ১৫ নম্বর অধ্যায়ের বর্ণিত - ধর্মপালনে বাধার প্রতিকার সংক্রান্ত আইন
৩. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর ৫৭ ধারা
এই তিনটি আইনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছি কারণ আমার মনে হয়েছে ধর্মানুভূতি, বাকস্বাধীনতা এসব সংক্রান্ত অপরাধের প্রতিকারের সাথে এই আইনগুলির ব্যবহার জড়িত। আবার এসব বিষয় সংক্রান্ত রাষ্ট্রিয় অন্যায়ের ক্ষেত্রেও এই আইনগুলোর অপব্যবহার জড়িত। আমি একটি একটি করে আইন ধরে আগাই।
১. পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ২১ নম্বর অধ্যায়ের বর্ণিত - মানহানির প্রতিকার আইন
এই অধ্যায়ের অধীনে ৪৯৯ থেকে ৫০২ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে অপরাধ ও তার প্রতিকার বলা আছে। তবে যে জিনিসটি আমার কাছে সবচেয়ে ইন্টারেসটিং মনে হয়েছে তা হল প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উদাহরণ দিয়ে বুঝানো হয়েছে আইনটির প্রয়োগের ক্ষেত্র কি হবে এবং কোন কোন ব্যতিক্রমে আইনটি প্রয়োগ করা যাবে না। এখানে প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদের স্ক্রিনশট দিলাম।
২. পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ১৫ নম্বর অধ্যায়ের বর্ণিত - ধর্মপালনে বাধার প্রতিকার সংক্রান্ত আইন
এই অধ্যায়ের অধীনে ২৯৫ থেকে ২৯৮ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে অপরাধ ও তার প্রতিকার বলা আছে। এর মধ্যে ২৯৮ নম্বর অনুচ্ছেদ সরাসরি ধর্মানুভূতিতে (আমি অবশ্য এই অনুভূতির কোন সংজ্ঞা জানি না) আঘাত দেয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে যে জিনিসটি আমার কাছে সবচেয়ে ইন্টারেসটিং মনে হয়েছে তা হল আইনটির প্রয়োগের ক্ষেত্র কি হবে এবং কোন কোন ব্যতিক্রমে আইনটি প্রয়োগ করা যাবে না এ ব্যাপারে একটি উদাহরণও দেয়া হয় নি।। এখানে প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদের স্ক্রিনশট দিলাম।
৩. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর ৫৭ ধারা
যেহেতু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধারার প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি হয়েছে তাই এটির খবর সবাই জানে। ২০১৩ সালের সংশোধনীতে ৫৭ ধারার অপরাধগুলোকে অজামিনযোগ্য করা হয়েছে। যথারীতি এই ধারাটিতেও কোন প্রয়োগ বা ব্যতিক্রমের উদাহরণ দেয়া হয়নি।
আমার প্রশ্নগুলো:
১. মানহানির প্রতিকার সংক্রান্ত আইনে যেমন প্রয়োগ ও ব্যতিক্রমের উদাহরণ দেয়া হয়েছে সেটি ধর্মপালনে বাধা বা আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার ক্ষেত্রে দেয়া হয়নি কেন? ব্রিটিশ আমলের আইনপ্রণেতারা কেন একটি আইনে এই ক্ল্যারিটি রাখলেন আর অন্য একটি আইনে ক্ল্যারিটি রাখলেন না, ব্যাপারটি কি? বাংলাদেশ আমলের ৫৭ ধারার ক্ষেত্রে এই ক্ল্যারিটি রাখা হল না কেন? আমাদের তো সময়ের সাথে এগুনোর কথা!
২. এই ক্ল্যারিটির অভাবটি কি আইন নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন তাদের নজরে আছে?
৩. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে ব্লগারদের গ্রেফতার করা হল তাদের ৫৭ ধারাতে কেন গ্রেফতার করা হল আগের আইনগুলোতে গ্রেফতার না করে? ধারাটি জামিন অযোগ্য বলে?
মন্তব্য
এ সংক্রান্ত আমার একটি লেখার লিংক দিয়ে যাই।
ধন্যবাদ!
১ ও ২ নং প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে নিয়ে বসলাম। ৩ নং এর উত্তর সম্ভবতঃ হ্যাঁ!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
"ক্ল্যারিটি"র জায়গায় "প্রাঞ্জলতা" লিখলে কেমন হতো?
প্রাঞ্জলতা শুনলে ঠিক ক্ল্যারিটি কথাটি ফিল করছি না। তবে এটি আমার সমস্যা নাকি শব্দের সমস্যা জানি না।
১। আমিও 'প্রাঞ্জলতা' শুনলে ঠিক 'ক্ল্যারিটি' অনুভব করছি না।
২। অভিধান জানাচ্ছে অর্থগতভাবে "প্রাঞ্জলতা" যথার্থ শব্দ!
৩। স্কুলে বঙ্কিমের "রচনার শিল্পগুণ" পাঠ্য ছিল। সেজন্য বোধহয়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ব্রিটিশ আমলের আইন কেন এখনো আমাদের মেনে চলতে হয় সেটাই তো বুঝিনা বাবা!
আমরা অলস কিনা তাই। সাদা চামড়ার সাহেবরা আইন লিখে রেখে গিয়েছেন, আমাদের আর কষ্ট করে ঠিকঠাক করার কি দরকার বাপু?
রায়হান রশিদ ভাই ফেসবুকে এই মন্তব্যটি করেছেন।
১) পেনাল কোডের ধারা ২৯৫-২৯৮ এর মধ্যে শুধু ২৯৫ক এই ব্লগের মূল বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিক যেখানে ধর্মানুভুতির কথা বলা হয়েছে। বাকি ধারাগুলো - ক) self-explanatory, খ) উল্লেখিত টার্মগুলোর ব্যাখ্যার উপর যথেষ্ট কেস'ল রয়েছে।
২) ধারা ২৯৫ক (ধর্মানুভুতি) মূল পেনাল কেড প্রণীত হওয়ার ৬৭ বছর পর সংযোজন করা হয়েছে। সে সময়কার রাজনৈতিক পটভূমিতে কিছু উত্তর পাওয়া যেতে পারে।
৩) ২৯৫ক-তে কোনো উদাহরণ দেয়া হয়নি তার কারণ সম্ভবত - কোনো উদাহরণ দেয়া সম্ভব না, কিংবা তাতে আরও বিভ্রান্তি বাড়ার সুযোগ। এই পুরো বিষয়টাই এতো সাবজেক্টিভ হওয়ার কারণে এই জাতীয় আইনের বিধান দেশে দেশে বাতিল করা হয়েছে। ভারতবর্ষের পেনাল কোড প্রণেতা ব্রিটেন নিজেও এই জাতীয় বিধান বাতিল করেছে।
@ শেহাব, আমি রায়হান ভাইয়ের পর্যবেক্ষণের সাথে একমত। আরেকটা বিষয় হল, পেনাল কোড একটা সাধারণ আইন। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন একটা বিশেষ আইন, যেটা শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সংঘটিত অপরাধের বিচার করবে। বিশেষ আইন থাকলে সেক্ষেত্রে সাধারণ আইনের উপর বিশেষ আইন প্রাধান্য পাবে । এই জন্য ব্লগারদের বিচার সাধারণ আইনে না হয়ে বিশেষ আইনে হচ্ছে। আর পেনাল কোডে দুই ধরণের ধারা আছে - অপরাধের বর্ণনা বা ডেফিনেসান, আরেকটা হল সেই অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি। ফলে, আপনি সংজ্ঞার যে উদাহরণগুলি দেখেছেন সেটা প্রায় সব অপরাধের বর্ণনা অংশে আছে, সে অপরাধের প্রকৃতি বুজানোর জন্য ।
@ আয়নামতি, এই আইন ব্রিটিশ আমলে প্রণয়ন করা এটা ঠিক। কিন্তু এখনকার সময়ে সংঘটিত অপরাধের প্রকৃতি ও আওতা বিবেচনায় উক্ত আইন দ্বারা বিচার করা সম্ভব হচ্ছে বলে সেটা আমরা মানছি। তবে নতুন নতুন অপরাধ বিবেচনায় শুধু পেনাল কোডে আমাদের দেশের দণ্ডমূলক আইন সীমাবদ্ধ নয়। নতুন নতুন অনেক বিশেষ আইনও প্রণয়ন হয়েছে। শেহাব ভাইয়ের আলোচিত আইসিটি আইনও সেরকম একটা বিশেষ আইন।
সিদ্ধার্থ মাঝি।
নতুন মন্তব্য করুন