আমার আলমা ম্যাটার শাবিপ্রবিতে গত তিরিশে অগাস্ট ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা উপাচার্যের প্রশ্রয়ে আমার প্রিয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপর যে শারীরিক হামলা করা হয় তাতে আমি ভয়াবহ ক্ষুব্ধ। আমার ক্ষোভের কারণ দুইটি - প্রথমত: এটি একটি ভয়ংকর অন্যায় যেটি হওয়ারই কথা ছিল না। দ্বিতীয়ত: এরকম ঘটনা শাবিপ্রবিতে এই প্রথম ঘটেনি। নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা এই পরিবেশটি অব্যাহত রাখছে বছরের পর বছর।
ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন সেই হামলার কথা, কিছু সদস্য চিহ্নিত হওয়ার কথা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আলাদা আলাদা ভাবে কিছু সন্ত্রাসী ছাত্রকে বহিষ্কারের কথা। এগুলো আর বলতে চাই না। আমি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের ব্যর্থতা নিয়ে অল্প একটু বলব। তবে যেহেতু প্রসংগ এসেছে আগে ছাত্রলীগের পাওনা ঝালটা ঝেড়ে নেই।
আমার কাছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত মূল্যহীন। কেন এমনটি ভাবছি? কারণ ছাত্রলীগ এই প্রথম কাউকে বহিষ্কার করছে না। তাদের এই বহিষ্কার ও তারপর পূর্নবাসন প্রক্রিয়া কতটুকু স্বচ্ছ? আমাদের কি সহজভাবে জানার কোন উপায় আছে আজ পর্যন্ত ছাত্রলীগ থেকে কতজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে? দশ বছর আগে যাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে তারা দশ বছর পর আজকে কি আরো ভাল মানুষ হয়েছে নাকি আগের মতই খারাপ মানুষ রয়ে গেছে? নাকি তাদের পরে গোপনে ছাত্রলীগে আরো ভাল পদ দেয়া হয়েছে? এই ব্যাপারগুলো কি ছাত্রলীগে স্বচ্ছতার সাথে করা হয়? এ সংক্রান্ত নথিগুলো প্রকাশ করা হয়? যদি না করা হয় এই বহিষ্কার করা বা না করায় কিছু আসে যায়? শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগ কি এটি ভেবে দেখবে যে বহিষ্কার করার মত একজন ছাত্রসন্ত্রাসী কি করে বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের নেতৃত্বে উঠে আসে?
আমার ক্ষোভের প্রথম ধাক্কা গেল ছাত্রলীগের উপর দিয়ে। এবার আসি সাংবাদিকদের কথায়। এই ঘটনা ঘটেছে আজ পাঁচ দিন হল কোন গণমাধ্যমেই দেখা গেল না বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিতে। এমন সব মানুষের প্রতিক্রিয়া নেয়া হয়েছে যাদের কোন আইনানুগ ক্ষমতা নেই এই ভিসিকে প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তির মুখোমুখি করতে পারে। এটি একমাত্র পারে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে আছেন প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর, কোষাধ্যক্ষ, দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, একজন ডীন, একজন প্রোভোষ্ট, সিনেট মনোনীত সদস্য, অধিভুক্ত কলেজের দু'জন অধ্যক্ষ, চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত দুইজন ব্যক্তি, একজন অতিরিক্ত সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষার মহাপরিচালক ইত্যাদি। এরা হচ্ছে সেই মানুষ যারা চাইলে কোন দুর্বৃত্ত উপাচার্যের নেয়া যেকোন সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিতে পারেন। শাবিপ্রবির উপাচার্য যে অন্যায় করছেন সেটি তিনি করতে পারছেন কারণ যাদের তাকে এজন্য শাস্তি দেয়ার কথা সেই সিন্ডিকেট তাদের কাজটি করছে না। গত দুইদিনে কোন গণমাধ্যমের কোন সাংবাদিকেরই কি এই সিন্ডিকেটের কোন সদস্যকে প্রশ্ন করার ইচ্ছে করল না? আমাদের দেশে যখনই কোন সমস্যা হয় সব দোষ দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং শাবিপ্রবির উপাচার্যের মধ্যখানে অনেক স্তর বিশিষ্ট একটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বাস্তুতন্ত্র আছে। কেউ যদি আসলেই সমস্যার সমাধান করতে চায় তাকে দোষ দেয়ার সময় এই ব্যাপারটি স্পষ্ট করতে হবে যে কোন স্তরে দোষের ভাগ কতটুকু।
আমার শেষ ক্ষোভটিও গণমাধ্যমকর্মীদের উপর তাই আবারও ক্ষমাপ্রার্থী। ঘটনার দিন ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসী সদস্য কাকতালীয় ভাবে সেখানে উপস্থিত হয়নি। তাদেরকে নিশ্চয়ই আগের দিন জানানো হয়েছিল এবং গুছিয়ে নেয়ার সময়ও দেয়া হয়েছিল। এই জানানো এবং ঠিক কোন সময়ে আক্রমণটি করতে হবে এগুলো নিশ্চয়ই উপাচার্য সরাসরি নির্দেশ দেননি। তার আশেপাশে যে চাটুকার ও দুর্বৃত্ত শিক্ষকদের বলয় আছে (নিশ্চয়ই উপাচার্যের সাথে তারাও কোন না কোন প্রশাসনিক দায়িত্বে আছে) তারাও এই পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার অভিজ্ঞতা সেই ইঙ্গিতই দেয়। শুধু তাই নয়, খুব সম্ভবত: চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই বেশিরভাগ গণমাধ্যমের ক্যাম্পাস সংবাদদাতারা নিশ্চয়ই জেনে গেছে আগের রাতে উপাচার্যের ধামাধরা কোন শিক্ষক ছাত্রলীগের কোন গ্রুপের নেতাকে ফোনে পরদিন সকালে আসার কথা বলেছিল। তাহলে এসব তথ্য গণমাধ্যমে আসছে না কেন? আমি এই লেখায় দায়িত্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললাম।
যারা মুহম্মদ জাফর ইকবালের মন খারাপ করে বসে থাকার ছবি দেখে ভাবছেন তিনি হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন তারা ব্যক্তি মুহম্মদ জাফর ইকবালকে চিনেন না। আমরা যারা ওনার সরাসরি ছাত্র-ছাত্রী তারা স্যারের এই চেহারার সাথে পরিচিত। আমরাও এও জানি তখন তার ভিতরে কি চলছিল। আমাদের এই অসাধারণ শিক্ষকটির মন খুব নরম কিন্তু তিনি মানুষ মোটেই নরম নন (আমাদের চেয়ে ভাল আর কে জানবে?)। কাজেই আমি মানসিকভাবে আহত হলেও মোটেই বিচলিত নই। আমি খুব ভাল করে জানি এতে মুহম্মদ জাফর ইকবালের নৈতিক দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্বে, চিন্তা ও কাজের পদ্ধতিতে বিন্দুমাত্র চিড় ধরবে না।
গত পনের বছর ধরে তাইই দেখে আসছি।
মন্তব্য
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা তিন পদের।
একটু মাথা খাটিয়ে বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে দুই একটা প্রশ্ন, কোন ইস্যুর ফলোআপ এগুলো ছোট বড় কোন মিডিয়া হাউসই রপ্ত করতে পারেনি।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের কিছু নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, যেগুলো শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশিত হয়েছিলো [সূত্র]। এই অভিযোগগুলো নিয়ে কোনো সাংবাদিক এই ঘটনার পর উপাচার্যকে কোনো প্রশ্ন করেছেন বলে চোখে পড়ে নি।
শাবির সাম্প্রতিক ঘটনার পর আমি কয়েকটা পত্রিকা খুঁজে দেখতে চাইলাম ভিসির বিরুদ্ধে আসলে অভিযোগগুলো কী। কোথাও পেলাম না। হিমু যেই লিংক দিয়েছে ওপরে সেটায় খুব বেশি ব্যাখ্যা নেই। পরে শ্বেতপত্র পেলাম ফেইসবুকে। একটা ভালো রিপোর্ট নেই কোথাও।
অট - ঢাকা ট্রিবিউনের উরিসা ইসলামের রিপোর্ট ভালো লাগে। পরিশ্রম করে লেখেন।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
শেহাব ভাই, মন দিয়ে পড়লাম।
ছাত্রলীগে সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বহিষ্কারাদেশ খুব কম ক্ষেত্রেই কার্যকর হতে দেখেছি। আমাদের ক্যাম্পাসে এক বহিষ্কৃত নেতা সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন। কারণ বলা হয়েছিল ২ বছরেও তার বহিস্কারাদেশে মহানগরের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি সই করেন নি! এরপর এক সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে তহবিল তসরুফ, গ্রুপিং এর চেষ্টা ও লাম্পট্যের সুস্পষ্ট অভিযোগ এনে ৫১ সদস্যের ৩৮ জন পদত্যাগপত্র দিয়েছিল। তবু ওই সাংগঠনিক সম্পাদক গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কৃত হওয়া দূরে থাকুক, পরবর্তী কাউন্সিলে সভাপতি পদে "সিলেক্টেড" হয়েছিল আঞ্চলিকতার মানদণ্ডে! বস্তুত, ছাত্রলীগের সর্বনাশ করেছে এই ব্যাপারগুলোঃ
১। নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়া এবং কাউন্সিল হলে যোগ্য ও মেধাবী নেতাদের বাতিল করা
২। এই নেতাদের টাকা খেয়ে শিবিরের ছেলেদের পার্টিতে ঢোকানো
৩। দোষীদের বহিষ্কারাদেশ কার্যকর না করা।
এগুলো বিবেকবান কোন কর্মীই চায় না। এবং বিপরীতিক্রমে এসব দেখে ভালো ছাত্ররা রাজনীতিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
দোষীদের কল-লিস্ট থেকে খুব সহজেই বের করা সম্ভব ঘটনার আগে কোন কোন শিক্ষক তাদের প্ররোচনা দিয়েছিলেন।
অবাক হয়েছি, প্রধান পত্রিকাগুলোকে সেদিনের ঘটনা নিয়ে 'মুন্নী সাহা'র কাছাকাছি ভূমিকায়ও দেখা গেল না। নীল-সাদা-গোলাপী এসব প্যানেলের জটিল স্ববিরোধী রাজনীতি আছে ভিসির ওই ভূমিকার পেছনে। সাংবাদিকরা চাইলে ওসব নিয়ে লেখাজোকা, ফলোআপ করতে পারতেন। এখনো তেমন কিছু চোখে পড়েনি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ভিসির বিরুদ্ধে আসলে অভিযোগটি কি, সেটা বুঝতেই গলদঘর্ম হতে হয়েছে। বাসায় উনি জিজ্ঞেস করলেন- ভিসির সমস্যা কি? সমস্যা বলতে না পারার জন্য ঝাড়ি খেতে হয়েছে। যাই হোক, অনেক ব্যান্ডউইথ খরচ করে যা বুঝলাম, অভিযোগ যদি সত্য হয়, ভিসি সাহেব তাহলে একজন ছ্যাচড়া টাইপের দুর্নীতি পরায়ণ, খুব বড় সড় দুর্নীতি তিনি এখনও করে উঠতে পারেন নি।
সম্প্রতি যুগান্তরে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।
হামলার আগে ভিসি-ক্যাডারদের গোপন বৈঠক!
নতুন মন্তব্য করুন