কিছুদিন আগে আমি ২০০৯ সালের খসড়া শিক্ষানীতি (যেটি বিশেষজ্ঞরা তৈরি করেছিলেন) আর ২০১০ সালের আনুষ্ঠানিক শিক্ষানীতির (আমলাদের ঘষামাজার পর যেটি দাঁড়িয়েছে) শুরুতে দেয়া লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে পার্থক্যগুলো দেখিয়েছিলাম। আমাদের শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ধাপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলাদা করে আবার বিস্তারিত বলা হয়েছে। এই লেখায় আমি খসড়া ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষানীতির সেই অংশগুলো তুলনা করব। প্রত্যেকটি ছবিতে বাম পাশে চূড়ান্ত খসড়া আর ডান পাশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষানীতি থেকে নেয়া টেক্সট রাখা হয়েছে। কারো যদি ছবির লেখা পড়তে খুব সমস্যা হয় তাহলে রাইট ক্লিক করে মূল ছবিতে গেলে আরো বড় করে দেখা যাবে।
আমি এখনই এই পরিবর্তনগুলোকে বিশেষজ্ঞ বনাম আমলা দড়ি টানাটানি হিসেবে দেখতে প্রস্তুত নই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনগুলো দেখে আমি বেশ অবাক হয়েছি আর অন্য কিছু ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে পরিবর্তনের ফলে কিছু ক্ল্যারিটি বেড়েছে।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা
টেক্সটে কিছু পার্থক্য থাকলেও মনে হয় না শিক্ষানীতির দর্শনে এই অংশে কোন কিছু পরিবর্তিত হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা
খসড়া নীতির শেষ বুলেট পয়েন্টটি আমলারা কেন বাদ দিলেন বুঝতে পারছি না।
বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
এখানে কোন পরিবর্তন দেখলাম না।
মাধ্যমিক শিক্ষা
আমলারা কেন যেন ধারার ব্যাপারে যে ক্ল্যারিফিকেশন ছিল সেটি বাদ দিয়েছেন।
বৃত্তিমূলক ও কারিগরী শিক্ষা
টেক্সটে কিছু পার্থক্য থাকলেও মনে হয় না শিক্ষানীতির দর্শনে এই অংশে কোন কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। তবে জনশক্তি রপ্তানির ব্যাপারটি একটু অদ্ভুৎ। মানুষ তো আসলে ঠিক পণ্য না যে একটি নির্দিষ্ট স্কিল হলেই প্যাকেট করে বাইরে পাঠিয়ে দিব।
মাদ্রাসা শিক্ষা
'জাগতিক কাজকর্ম', 'ঢেলে সাজানো', 'আচার সর্বস্ব নয়' এই কথাগুলি কি আমলাদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে? না হলে তারা বাদ দিলেন কেন? আনুষ্ঠানিক নীতিতে ইসলামের প্রচারের জন্য জনশক্তি তৈরি করার যে কথা বলা হয়েছে সেটি অনেকটা বৃত্তিমূলক হয়ে গেল না? মাদ্রাসা থেকে একটি ছেলে বা মেয়ে পড়ে বড় হয়ে ইমাম হবে, নাকি সিনেমা বানাবে নাকি বিজ্ঞানী হবে সেটি তো একান্তই তার ব্যাপার। তার তো ইসলাম প্রচার করতে নাও ইচ্ছে করতে পারে। বাচ্চাদের উপর আমলারা একটু বেশি চাপ দিয়ে দিলেন না?
উচ্চশিক্ষা
টেক্সটে কিছু পার্থক্য থাকলেও মনে হয় না শিক্ষানীতির দর্শনে এই অংশে কোন কিছু পরিবর্তিত হয়েছে।
আমার খুব ইচ্ছে নিচের তিন ধরণের মানুষ এই ব্যাপারটি আরো ভালভাবে খোঁজখবর করতে আগ্রহী হবেন।
১। বিভিন্ন দৈনিকের শিক্ষাপাতার সাথে জড়িত সাংবাদিকরা।
২। শিক্ষা নিয়ে কাজ করা এনজিওকর্মীরা।
৩। যারা নিজেদের শিক্ষাগবেষক হিসেবে পরিচয় দেন।
মন্তব্য
শিক্ষানীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটে পাঠ্যবইগুলোতে।
ইসলাম ধর্ম শিক্ষার বইগুলোতে আরবি শেখার জন্য আলাদা অধ্যায় আছে। আমি ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের কোন শ্রেণির ধর্ম বইতে সংস্কৃত অথবা পালি দেখি নাই। তার মানে সরকার হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ পড়ার শিক্ষা প্রদান করছে না। আমাদের গীতা বেদ শেখানো হত বাংস্কৃত ভাষায়। মানে বাংলায় লেখা সংস্কৃত। যেভাবে আজকাল আমরা ইংরেজিতে বাংলা লিখি আর কি!
এখন প্রশ্ন হতে পারে এই ভাষাদুটো পড়াবে কারা? অনেকেই জানে না বাংলাদেশে সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ড আছে (শহীদ বুদ্ধিজীবী প্রফেসর জি সি দেব এই শিক্ষাবোর্ডের সেক্রেটারি ছিলেন)। প্রতিষ্ঠানটা স্বায়ত্বশাসিত। এই বোর্ডটাকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মত সরকারী করার জন্য হিন্দু আর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন দূর্বলভাবে দাবি জানিয়ে আসছিল। সেটা অবশ্য আলাদা ইস্যু। বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ড থেকে যারা পাশ করে তারা কিন্তু এই দুটো ভাষা পড়াতে পারে। কেন যে ধর্ম বইতে সংস্কৃত অথবা পালি নাই সেটা এক রহস্য। আমার এখনো মনে হয় স্কুলের একগাদা ধর্ম বইগুলো যদি আমাকে সংস্কৃত ভাষায় শেখানো হত!! বড় হয়ে অন্তত কালিদাস তো পড়তে পারতাম।
___________________
সৌমিত্র পালিত
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার কিছুই বলার নাই।কেনিনা এইটা ঋতুর মত।ঋতু যখন পরিবর্তন হয়,আমাদেরও তখন সেই ঋতুর মত করে চলতে হয়।সত্যিই দু:খ জনক।
-----------
চন্দ্র
নতুন মন্তব্য করুন