বেসরকারী চাকুরীজীবনের অনিশ্চয়তা

শেখ জলিল এর ছবি
লিখেছেন শেখ জলিল (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৫/১১/২০০৭ - ৭:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেসরকারী চাকুরীজীবনের অনিশ্চয়তা/ শেখ জলিল

প্রায়শই এমনটা ঘটছে আজকাল। আমরা যারা বেসরকারী চাকুরীজীবি তাদের অনিশ্চয়তা সবচেয়ে বেশি। অনেকে আবার বেসরকারী চাকুরীকে জীবনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তরতর করে উঠে যাচ্ছেন উপরে- যা সরকারী চাকুরীক্ষেত্রে অনেকটা অসম্ভব। কিন্তু যারা অসম্ভবের পায়ে পরায় দড়ি তাঁদের সংখ্যা নিতান্ত অপ্রতুল। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে চাকরীজীবিদের জীবনে অনিশ্চয়তা বেশি। স্বল্প আয়ের সংসার যখন বড় হয়ে যায় তখন এর মাত্রা যায় আরও বেড়ে। সারা মাসের বাজার খরচ, কাপড়চোপড়, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ আর সামাজিকতায় প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এর সাথে যোগ হয়েছে দ্রব্য মূল্যের লাগামহীন উর্ধগতি। অথচ কী সরকারী, কী বেসরকারী কোনো ক্ষেত্রেই বেতন বাড়েনি তেমন। এই হলো বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন।

নব্বই দশকের প্রথম ভাগ থেকে আমি ঢাকা শহরে আছি। ভাড়া করা বাড়িতে বেশ ক'বার বদলিয়েছি বর্তমান ঠিকানা। যতোবার বাসা বদল হয়েছে ততোবারই গুণতে হয়েছে বেশি বেশি বাড়ী ভাড়ার টাকা। তাছাড়া বছর বছর বাড়ীভাড়ার মিটার তো উঠছেই। ধীরে ধীরে সংসার বড় হয়েছে আমারও। ছেলেমেয়েদের দিতে হয়েছে স্কুলে। আর দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে এখন গুনতে হচ্ছে ১০০-২০০ ভাগ বেশি টাকা। অথচ হিসেবের খাতায় আমার বেতন বেড়েছে মাত্র ৩-৪ গুণ। যদিও এটা আমার কষ্টের বা সংগ্রামের ফসল। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে কিন্তু তাও হয়নি। তাই দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ে অনেককেই ঢাকা শহর ছাড়তে দেখেছি। দেখেছি অনেকেরই মানবেতর জীবন। এর সাথে বর্তমানে বেসরকারী খাতে বৈদেশিক সাহায্যের অপ্রতুলতা, দেশীয় মূলধনের অভাব এবং সর্বস্তরে দুর্নীতি আরও অসহনীয় করে তুলেছে আমাদের মতো চাকুরেদের জীবন।

বলছিলাম আমার বেসরকারী চাকুরীজীবনের কথা। যখনই যে সংস্থায় একটা ভালো পজিশনে গিয়েছি, সুন্দর করে সাজিয়েছি নানান কর্মসূচি- তখনই সে সংস্থায় ঘটেছে বিপর্যয়। শীর্ঘস্থানীয় এনজিওগুলোর প্রধানরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে বা রাজনৈতিক সরকারের কোপানলে পড়লে তাতে নিয়োজিত হাজার হাজার কর্মীও বেকার হয়ে যায়। প্রতিটি কর্মীর চাকরীর সাথে জড়িত থাকে যে ৮-১০টি মুখ তাদের জীবনেও নেমে আসে অনিশ্চয়তা। বুঝিবা এর থেকে পরিত্রাণের কোনোই উপায় নেই আর! এমনটিই ঘটেছে আমার ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য আরও অনেকের ক্ষেত্রে । পেশাগত জীবনে তাই আফসোস জাগে- কেন সরকারী চাকরী হলো না? কিন্তু সরকারী সেখানেও ঘুষখোর আর দুর্নীতিবাজরাই একমাত্র সম্পদের পাহাড় গড়ছে। ঢাকা শহরের নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তদের জীবন তাই সব সময়ই অনিশ্চয়তার। যেমন অনেক আগেও ছিলো, এখনও তেমনি আছে। আর বেসরকারী চাকুরীজীবি হলে সেটা কতোটা মারাত্মক এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি সেটা।
১৩.১১.০৭


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমারও কিন্তু চাকরি যায়
আমাকে একটা কংগ্রেচুলেশন বলেন...

শেখ জলিল এর ছবি

হাহাহা! কনগ্রেচুলেশনস! মাহবুব লীলেন।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

নজমুল আলবাব এর ছবি

ঠিক জলিল ভাই। তবে কথাগুলো শুধু ঢাকার জন্য নয়। মফস্বলের জন্যও খাটে। আপনি কি জানেন এখন আমার চাকরি নাই। আমার যে ঠিকানা ছিল আপনার কাছে সেই অফিসটা বন্ধ হয়ে গেছে দু'মাস আগে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মন খারাপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।