কবির জ্বালা, কবিতা লেখার জ্বালা/ শেখ জলিল
ভাবছি, কবিতা লেখা ছেড়ে দেবো। লিখবো না আর কবিতা কিংবা গান! হালের গদ্যলেখকদের এতো কদর আর কবিদের প্রতি অবহেলা মনটা বিষিয়ে তুলছে। ঘরে জমে আছে বেশ ক'টি কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি। প্রকাশ করা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। অথচ দেদারছে প্রকাশ হচ্ছে গদ্য নামের চটিবই- যা কিনা ফুটপাতের দোকানে শোভা পাচ্ছে শেষ পর্যন্ত।
প্রকাশকদের সাফ কথা- কবিতার বইয়ের বিক্রি নেই। (অ)উপন্যাস নামের অখাদ্য বইও পাঠকরা নাকি গিলে থাকেন নিয়মিত। কথা ঠিক- পদ্যের চেয়ে গদ্য সাহিত্যের নতুন মাধ্যম। মানুষ নতুনের দিকে ঝুঁকবেই। তবে তা শিল্পসাহিত্যের বিচারে কতোটুকু পাঠযোগ্য তারও তো বিচার করা চাই। আধুনিক যুগে বাংলাদেশে অলৌকিক ঘটনা, কল্পকাহিনী, কুসংস্কার, ঝাড়ফুঁক, জ্বীনপরী, তাবিজকবজ, পর্ণো নিয়ে লিখে নামকরা কথাসহিত্যিকগণ প্রচুর টাকা কামাচ্ছেন, করছেন বাড়িগাড়ি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবিদেরও দিনাতিপাত কঠিন হয়ে যাচ্ছে আজকাল। এই অবস্থার দায় কী একমাত্র কবিদেরই? প্রকাশক, সমালোচক, পাঠকদের কী একটুও দায়বদ্ধতা নেই?
কবিতা লেখার জ্বালা অনেক। কবির ঘরে জ্বালা, বাইরে জ্বালা, অন্তরেও জ্বালা লেগে থাকে সবসময়। এ জ্বালার যেন শেষ নেই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত! একবার শব্দপরী যাকে ছুঁয়ে যায়, কবিতার ঘূণপোকা তার শরীরের বাসা বাঁধে, কুরে কুরে খায় তাকে। সমাজ, সংসার, রাষ্ট্র কারও কাছে কবিরা সঠিক মূল্যায়ণ পেয়েছে বলে শুনিনি কোনোকালে। উপর্যিপুরি নানান তিক্ত কথা, অপমান সইতে হয় কবিদের সমাজ, সংসারের কাছ থেকে। মা-বাবার কাছে একজন ছেলে বা মেয়ের কবিতা লেখা মানে বখে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া- সে ছেলে বা মেয়েটি যেন আর মানুষ হবার নয়। আসলে সমাজের কাছে কাছে কবি আর মানুষ যেন দু'টি ভিন্ন প্রজাতি হয়ে যাচ্ছে আজকাল!
কবিতা লেখার শুরু থেকে শুনে আসছি- বাংলাদেশে কবি ও কাকের সংখ্যা নাকি সমান। একজন কবি মানেই গাঁজাখোর, বেশ্যালয়ে গমনকারী বলে আখ্যায়িত করতে শুনেছি অনেক শিক্ষিত লোক বা অধুনা প্রকাশকদেরও। এই যদি হয় কবিদের বর্তমান সামাজিক অবস্থান তখন কবিতা লেখায় নিরুৎসাহিত হতে পারেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে গদ্যলেখকদের হয়তো মর্যাদা বাড়বে আরও, তবে সুকোমল হৃদয়বৃত্তির চর্চা, দ্রোহ, প্রেম, ভালোবাসা আমাদের সমাজ থেকে কতোটুকু উবে যাবে সুশীল পাঠকগণ বুঝবেন আশা করি।
বলছিলাম কবি ও কবিতা লেখার কথা। কবির বিরুদ্ধে এই যে বিষোদ্ গার- সেখানে একজন কবি সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে কতোটুকু প্রয়োজনীয় একটু পিছন ফিরে দেখি। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে বিশ্বকবির গান, বিদ্রোহী কবির কবিতা বা মুকুন্দ-দ্বিজেন্দ্রগীতি কতোটুকু উন্মাদনা তুলেছিলো তা নতুন করে কাউকে বলে দেবার প্রয়োজন নেই। আমাদের ভাষা আন্দোলনে, স্বাধীনতাযুদ্ধে উপরোক্ত কবিদের গান-কবিতা ছাড়াও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে সিকান্দার আবু জাফর, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহসহ অনেক কবির কবিতা ও গান। সবচেয়ে বড়ো গর্বের বিষয় হলো বাংলা সহিত্যে একমাত্র নোবেল বিজয়ী কিন্তু একজন কবিই। সাতচল্লিশ, বায়ান্ন, একাত্তর, নব্বই সব আন্দোলনের সাংস্কৃতিক জোয়ারে অবদান কিন্তু প্রথমে কবিদেরই প্রাপ্য।
এবার আসি কবিতা লেখার অবদানকে খাটো করার প্রয়াস নিয়ে যে কথাগুলো বলা হয় তার দিকে। অনেক শিক্ষিত লোককে বলতে দেখেছি- আধুনিক কবিতা মানে একটি গল্প বা প্রবন্ধের দুই দিকে ছেঁটে দিলেই হলো। ব্যস, হয়ে গেলো একটি গদ্যকবিতা। আগের যুগেও কবির ভাবনাকে তুচ্ছ করতে দেখেছি- আষাঢ় মাস/গরু খায় ঘাস - এরকম লইন আওরিয়ে। আসলে কবিতা লেখা কী এতোই সোজা? কবিকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। তাঁকে প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নিতে হয় তার মূল আস্বাদনটুকু। তবেই না একজন কবির কবিতা হয়ে ওঠে কাব্যময়- স্থান প্রায় সমাজ ও মানুষের অন্তরে।
আজকালকার তথাকথিত অধুনা গদ্যলেখক যারা কবিদের দিকে নাক ছিটকান তারা একটু খেয়াল করলেই দেখবেন- রবীন্দ্র যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত কোনো নামকরা কবির গদ্যরচনা অপাংক্তেয় হয়েছে কি? বরং গদ্যরচনায় সবাই মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। রবীন্দ্র-নজরুলের গল্প, উপন্যাস, নাটক আমদের কাছে অমৃতস্বরূপ। আধুনিককালে এপার বাংলার কবি আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, আবুল মান্নান সৈয়দ-এর গদ্য বা ওপার বাংলার কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গদ্য অনেক অনেক সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। (..অসম্পূর্ণ)
০৬.০১.২০০৮
মন্তব্য
ভাইজান অতো ক্ষেপে যাওয়ার কারণ নাই
চামে চামে একটা কথা বলি
পৃথিবীতে যে যাই করুক না কেন
রাজকবি সভাকবি বিদ্রোহীকবি জাতীয় কবি
এইসব শব্দ শুধু কবিদের জন্যই কিন্তু
রাজগদ্যকার রাজগল্পকার জাতীয় গল্পকার নামে পৃথিবীতে কোনো বস্তু নেই
এমন কি যে বাঙালি শোনে রবীন্দ্রনাথের গান
কিন্তু বলার সময় বলে কবি রবীন্দ্রনাথ
যত যাই পরিচয় থাকুক না কেন পুলিশ পর্যন্ত কিন্তু কবি নামের আলাদা সমাদর করে
এজন্য দেখেন না সৈয়দ হক কিংবা হুমায়ুন আজাদও শেষ পর্যন্ত কবি নামের জন্য কেমন কামড়াকামড়ি করেন
অথচ তাদের নামের মূল প্রতিনিধিত্ব অন্য জায়গায়
কবিতায় নয়
থাকেন ভাইজান
কবিতায়ই থাকেন
কবি একখান খাসা নাম
হোক তা গালি দেবার জন্য আর হোক তা বক্তৃতা দেবার জন্য
মাহবুব লীলেন ভাই ,
জব্বর বলেছেন ।আমি আপনার ১১০% একমত।
বিনীত
নুরুজ্জামান মানিক
মাহবুব লীলেনের মন্তব্যে বিপ্লব। এরপর আর বলার কিছু থাকে না। অতএব জলিল সাহেব, থাকুন কবি হয়েই, মাথা উঁচু করে।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
কবি হবার যে সুবিধা আছে তার কথা আছে আমার লেখা কবি ও রাজনীতি এবং মাহবুব লেনীনের উপরোক্ত মন্তব্যে ।
কবি হলে পাবেন সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমন, আইউব খানের ট্রেন জার্নি/জিয়ার নৌবিহার /এরশাদের কবিকেন্দ্রের পদধুলি । সি আই এ আর্থিক সাহায্যপুষ্ট পেন এর সদস্যবদ, ফেলোশিপ, সরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের (যথা ,বাংলা একাডেমী) প্রধান পদ , নানা কমিশন এর চেয়ারম্যানশিপ, সরকারের উপদেষ্টা (জিয়া /এরশাদ আমল ) ,নানা অজুহাতে নগদ অর্থপ্রাপ্তি, প্রভাব প্রতিপত্তি,রাজনৈতিক দলের উপদেস্টার সম্মানিত পদ, আর কত কি।
বদলেয়ার নাকি কোন এক কবিকে বলেছিল ‘ তিনি হলেন অর্ধেক দালাল আর অর্ধেক পতিতা’।
নুরুজ্জামান মানিক
প্রেম এবং প্রেমিকা কিন্তু কবিদের জন্মসূত্র অধিকার
গল্পকার বা অন্য কারো কপালে এসব জোটে না
(অবশ্য মেয়েরা কবির সাথে প্রেম করে কিন্তু বিয়ে করে গল্পকারকে)
আমি তাকে ছাড়ি ,সে আমাকে ছাড়েনা
----------------------------------------
সঙ্গ প্রিয় করি,সংঘে অবিশ্বাস
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কবিতা সবার জন্য নয়,কবিতা শুধু তাদের জন্যই এতে না জেনেই নিমজ্জিত হয়েছে আর ডুবন্ত খড়কুটোর মতোই হাতড়ে হাতড়ে সাঁতার কেটে কোনো এক নাম না জানা গন্তব্যের দিকে বয়ে চলেছে। কোনো "কিছু" পাবার জন্য কবিতা নয়,কবিতা সকলেরই কোনো না কোনো সময়কার আশ্রয়,নির্ভরতা আর বিশ্বাসের নাম। বিশ্বাস হারিয়েও কবিতার কাছেই ফিরে যাওয়া,বিশ্বাস স্থাপনের কালেও কবিতার পংক্তিতেই গমন - কেউ না পড়লেও যেমন কিছু আসে যায় না,কেউ না বুঝলেও,কবিতা,খুব গোপন নিষিদ্ধ সুখের মতো সকল কবির রিট্রিট -
Two roads diverged in a wood, and I-
I took the the one less traveled by
And, that has made all the diference.
এই স্পর্ধিত অথচ বেদনাবহ উচ্চারণ কবি ছাড়া আর কেউ ই করতে পারেন না।
বেঁচে থাকুক কবিতা, বেঁচে থাকুক সকল পংক্তিমালা, অবিনশ্বর।
জলিল ভাই,
জীবনে কোনও না কোনও পর্যায়ে প্রত্যেকটা মানুষই (আমার মতে), টুকটাক কবিতা লিখেছে। সেগুলো সব হয়তো সাহিত্যের বিচারে মানোত্তীর্ণ নয়। কিন্তু কবিতার প্রতি নির্ভরতাটুকু কিন্তু সেখানে স্পষ্ট।
আপনি খেই হারাবেন না। কবিতার জন্য আশীর্বাদ করছি না, কারণ সেটার দরকার নেই। আপনাকে শুভকামনা করছি। আমাদের আরোও আরোও কবিতা উপহার দিন!
কাকের সংখ্যা কেন?
কবির সংখ্যা পিঁপড়ার সমান হলেও অসুবিধা কোথায়?
উল্টা-পাল্টা চিন্তা বাদ দ্যান!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
পোয়েট লরিয়েট আছেন, প্রোজ লরিয়েট আছেন কি ?
হা--- হা --- হা-----
== ফকির ইলিয়াস
কোনো চান্স নাই
লালন নিজের নামের সাথে ফকির শব্দটা কায়দা করে না জুড়ে দিলে কিন্তু তাকেও আমরা বলতাম কবি লালন
সুতরাং যে যতকিছুই করুক না কেন
কবি শব্দটা একেবারে ব্রান্ড আইটেম
এবং সব জায়গায়ই এর বিশেষ অধিকার ও সুযোগ সুবিধা সংরক্ষিত
শুধু কবিতার জন্য এ জন্ম, শুধু কবিতার জন্য একাকী বেঁচে থাকা...
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
সুখের সময়ের কথা জানিনা...
কিন্তু বিষাদে কবিতার চেয়ে বড় আশ্রয় আর হয়না ।
কাজেই অভিমান ভুলে আমাদের জন্যই লিখতে থাকুন....
.......................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শুভ জন্মদিন জলিল ভাই।।
====================
অবিরাম ছুটে চলায় হঠাৎ থমকে যাওয়া
'
=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা
জ্ঞানগর্ভ, সুচিন্তিত মতামতের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
মৃন্ময়-কে ধন্যবাদ জন্মদিনটা মনে করার জন্য।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
সুমন চট্টোপাধ্যায়ের 'ঘুমোও বাউন্ডুলে' গানটা মনে পড়লো...
কে বেশী পাগল, কবি না কবিতা
দরকার নেই সেই হিসেব দেবার
ঘুমোও বাউন্ডুলে ঘুমোও এবার..
কে বেশী মাতাল, কবি না কবিতা
মহুয়ার দায় নেই খবর দেবার
ঘুমোও বাউন্ডুলে ঘুমোও এবার..
কে বেশী ক্লান্ত, কবি না কবিতা
কবিতার ক্লাস এবারের মতো
কে বেশী বুঝাবে, কবি না কবিতা
বাউন্ডুলেটা কোন ছন্দে বুঝাবো
কে বেশী অবুঝ, কবি না কবিতা
পদ্যের দায় নেই হিসেব দেবার
ঘুমোও বাউন্ডুলে ঘুমোও এবার..
====================
অবিরাম ছুটে চলায় হঠাৎ থমকে যাওয়া
'
=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা
আমি কবিতা লিিখ। আমাকে কবিতা লেখার কোনো সাইট জানান।
নতুন মন্তব্য করুন