অজানাকে জানার আগ্রহ শিশুদের মধ্যে প্রবল। শিশুরা শেখে তার চারপাশ থেকে। মাবাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন থেকে। যখন শিশু কথা শেখে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে আশেপাশের সবাইকে অস্থির করে তোলে। কারণ শিশুদের ঔৎসুক্য প্রবল। সবকিছুতে আবার অনুকরণপ্রিয়ও। বড়োদের কথাবার্তা, চালচলন দেখে অনেক কিছু শেখে তারা। শিশুদের দৃষ্টিশক্তিও কিন্তু বেশ প্রখর। নিজের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রতঙ্গই শিশুরা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে চায়। এমন কি সমবয়সী অন্য শিশুদেরও।
আমার ছেলেটি বড়ো হবার সাথে সাথে এ বিষয়গুলো খেয়াল করেছি আমি। প্রথমদিকে কি, কেন, কিভাবে প্রশ্ন করে সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত করে রাখতো। ধৈর্যের সাথে উত্তর দিতে হতো সেসব প্রশ্নের। সাথে সাথে খেয়াল রাখতে হতো ওর মানসিক অবস্থারও। তবে এ বিষয়ে ওর মা অনেক ধৈর্যশীলা। বুঝিবা সে কারণেই মা-ই এখনও ওর 'বেস্ট ফ্রেন্ড'।
বেশ কিছুদিন যাবৎ বিষয়টা আমি খেয়াল করছি। স্কুল থেকে ফেরার পথে ছেলে মাঝেমাঝেই বলে- বাবা, তাড়াতাড়ি বাসায় চলো, টয়লেটে যাবো।
আমি বলি- তোমার স্কুলেই তো টয়লেট ছিলো বাপ, সেখানে যাওনি কেন?
ও বলে- স্কুলের টয়লেট পচা। আমি ওখানে যাবো না।
আমি আর কিছু বলি না। এর অন্তর্নিহিত কারণ চিন্তা করি। ছেলেকে তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে আসি। পৌঁছেই দৌড়ে টয়লেটে যায় সে। আমি ছেলের অগোচারে তার মাকে ডাকি। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করি। বলি- দ্যাখো তো, কী কারণে ও স্কুলের টয়লেটে যায় না। চেপে রাখতে গিয়ে আবার না কোন্ অঘটন ঘটিয়ে ফেলে!
ছেলে ধানমণ্ডির বেশ ভালো স্কুলে পড়ে। তবে বিষয়টা হলো কোএডুকেশন। আমার ছেলে যে ফ্লোরে পড়ে সেখানেই ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের ক্লাস। কমন টয়লেট, ছেলেমেয়েরা সেখানে যায়। আমার ছেলেও প্রথমদিকে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছে সেখানেই। কিন্তু আজকাল মনে হচ্ছে ও একটু বদলে গিয়েছে। বয়স দশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে, সামনের নভেম্বরে এগারো হবে। ছেলের মা তার কাছে সহজ বন্ধু। সব কথা সে মাকে খুলে বলে। তার মা পটিয়ে পটিয়ে কথা বের করে আনে। শুনলাম টয়লেটে নাকি পচা কথা লিখে রাখে কারা। যেমন- আমার....খুব লম্বা, রুবার....দুটো চুষবো, আরিফার....তে চুমু দেবো এরকম কথা। কথা শেষে ছেলে বলে- মা, এগুলো কেন লিখে রাখে টয়লেটে? আমি আর স্কুলের টয়লেটে যাবো না।
কথাগুলো শুনে আমি ঝিম মেরে বসে থাকি। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের বয়স কতোই বা হবে? স্কুল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে কি এর বিহিত করতে পারবে? বাথরুম টয়লেটের দেয়াল বারবার মুছলেও তো নতুন করে ভরে যাবে সব! সবই বয়ঃসন্ধিক্ষণের প্রভাব! শারীরিক কিছু পরিবর্তনের কারণ। তাছাড়া যুগের পরিবর্তনে অনেক কিছু হচ্ছে। ঘরে ঘরে ক্যাবল টিভি, সিডি, ডিভিডি। সময়ের একটু আগেই সবকিছু জেনে যাচ্ছে ছেলেমেয়েরা! অথচ এখনও শহরের অনেক পরিবারে, গ্রামে ছেলেমেয়েদের শারীরিক, মানসিক এ ধরনের পরিবর্তন কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি আসে না। আমাদের সময়ে বোধ হয় পরিবর্তনটা আসতো আরও দেরিতে। তখনকার দিনের শোনা একটি গল্প ছিলো এরকম-
বালি নিয়ে খেলছে দুই পিচ্চি। ভাঁপা পিঠা বানানো খেলা। স্তুপাকারে বালি সাজিয়ে তার উপর শৈল্পিকভাবে হিসি করে দিচ্ছে। খেল খতম! হিসি করা পানিতে শক্ত হয়ে যাচ্ছে বালি। আর পিচ্চিদের হাতে উঠে আসছে বালির ভাঁপা পিঠা। তো, যতোবারই ছেলে পিচ্চিটা পিঠা বানাচ্ছে সুন্দরভাবে পারছে কাজটা। কিন্তু মেয়েটা ঠিকমতো পারছে না। পিঠা প্রতিবারই ঝুরঝুরিয়ে ভেঙে যাচ্ছে।
খেলার সাথী ছেলেটা তো রাগে টং। কেন সে পারছে না পিঠা বানাতে! বললো- ঠিকাছে। অহন তুই পিঠা বানা, আমি দেহি। এবার স্তুপাকারে বালি জড়ো করলো শুধু মেয়েটা। তারপর হিসি করার পালা। গভীর মনোযোগের সাথে হিসির স্রোত দেখছে ছেলেটা। টার্গেট মোতাবেক বালিতে পড়ছে কিনা। নাহ্, পড়ে নাই জায়গা মতো। গুরুগম্ভীর কণ্ঠে ছেলেটা বললো- ও বুচছি, গোয়া দিয়া মুতো, ভাগ্যেসেনা পিঠা অয় না!
২০.০৩.২০০৮
মন্তব্য
হায়রে আজকালকার শিশু! অল্পবয়সেই সব যায় পেকে।
লেখাটা একেবারেই সময়উপযোগী
টয়লেটে এইসব আজেবাজে কথা লেখাটা বিচ্ছিরি কিন্তু বোধহয় খুব কমন ব্যাপার। আমরাও স্কুললাইফ থেকে দেখে আসছি। কোন সমাধান নেই এর?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বিষয় বাস্তব এবং আলোচনা উপযোগী।
- পাশ্চাত্যের ধারা প্রাচ্যমুখীতার প্রভাব! একদিন বাসে দেখেছিলাম স্কুল ইউনিফর্ম পরা দশ বছরেরও কম একটা ছেলে তার বন্ধুকে হাতের মধ্যমা তুলে দেখাচ্ছে। বলাই যায়, সামনের দিনগুলো হবে আরও ভয়াবহ।
ভাপা পিঠা বানানোর প্রেক্ষিতে আরেকটা গল্প মনে পড়লো। খেলার এক পর্যায়ে ছেলেটা মেয়েটাকে বলেছিলো, "নিজেরটাতো ভাঙছো, এখন আমারটাও ভাঙতে চাও!"
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সবাইকে ধন্যবাদ।
(অফটপিক: সত্যকথার গল্প জমে কম!)
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
- মামু, ঘটনা খুব সাংঘাতিক। কলেজের বাথরুমের দেয়ালে বিশাল বিশাল সব চিত্রকর্ম ঠাঁই পেতো। আমরা অবশ্য চোখ মুখ নিচু করে বাড়ি গিয়ে কাজ সারার পক্ষপাতি ছিলাম না। বিমূর্ত চিত্রকলা কিংবা দুয়েক ছত্র ছন্দের যাদুতে মজে ছন্দময় গতিতে ত্যাগে প্রকৃত সুখ খুঁজতাম।
একবার অবশ্য আমার দোস্ত তাঁর ভালো আঁকিয়ের হাত প্রমান দিলো টয়লেটে সেইরকম একটা ফটুক চিত্রন করে। আমি তার মেধায় রীতিমতো পাংখা!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন