নিজেকে নায়ক ভাবতে কার না ভালো লাগে? কম-বেশি সবার মনেই থাকে আমার আমিত্বকে বড় করে দেখানোর বাসনা। ছোটবেলায় মা-বাবার কোলে শুয়ে রূপকথার গল্প শুনেছি অনেক। শুনতে শুনতে হয়ে গেছি দাতা হাতেম তাই বা ডালিম কুমার। বড় হয়ে বই পড়া শিখে গল্প বা উপন্যাস পড়তে গিয়েও একই অবস্থা। আরও একটু বড় হয়ে সিনেমা দেখে সকল সিনেমার নায়ক ভাবতাম নিজেকে। নাটক-সিনেমা দেখে নিজেকে নায়ক এখনও ভাবি, তবে একটু পরিমিতবোধে, আড়ালে অগোচরে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি- যার গল্প শোনাবো আপনাদের, সে কাহিনীর নায়ক হবো নিজেই। মানে, আমার লেখা এ গল্প জগতের একচ্ছত্র নায়ক আমি। বাদ বাকি সবাই হবে পার্শ্বচরিত্র।
গল্পের নায়ক মানে এই আমি একটু বাউন্ডুলে স্বভাবের। পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগ নেই। বয়স হবে আঠারো বা বিশ। মা-বাবা অনেক আশা নিয়ে দূরের শহরে উচ্চশিক্ষায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু পড়াশোনায় আকর্ষণ নেই আমার। মনে শুধু কবি কবি ভাব, সাংস্কৃতিক জগতের তুখোড় কর্মী হয়ে ওঠার বাসনা। ফলাফল উচ্চশিক্ষার ফাইনাল পরীক্ষায় নির্ঘাত ফেল, জীবন থেকে ঝরে যায় বেশ ক'টি অমূল্য বছর। এ ঝরে যাওয়া অমূল্য শিক্ষাজীবনের একরত্তি মূল্যও নেই আমার কাছে। কারণ আমি তখন নামকরা কবি, সংস্কৃতিসেবী, শহরের প্রিয়মুখ।
প্রেম না করলেও আমার এ কবি মনের মানসপটে একজন নায়িকা ঠিকই আছে। যেমন প্রিয়কবি জীবনানন্দ দাশের ছিলো, আমারও আছে। প্রিয়কবির ভাষায় আমার নায়িকার চোখ হবে পাখির নীড়ের মতো, টানা টানা, গভীর সমুদ্রের আহ্বান থাকবে তাতে। মনে মনে বহু বছর ধরে এরকম একজনকে পাবার আশা পুষে রেখেছি বুকে। ব্যস্ত শহরে মানুষের ভীড়ে, সাংস্কৃতিক মিছিলে, অনুষ্ঠানের ফাঁকে সেরকম চোখ খুঁজি। কখনও কবিতা পড়ার ফাঁকে, কখনও অনুষ্ঠান উপস্থাপনার অবসরে দর্শকদের মাঝে তন্ন তন্ন করে খুঁজি সে স্বপ্নের নায়িকাকে। আর অপেক্ষায় থাকি সেই মধুক্ষণের, মহামলিনের।
তার সাথে প্রথম দেখার দিনক্ষণ মনে আছে এখনও। ১৯৮৫ সালের একুশের রাতে, প্রভাত ফেরীতে। তার বড় ভাই ছিলেন সাংস্কুতিক জগতের বন্ধু। বন্ধু মানে কবিতায় আমার সিনিয়র সহযাত্রী। আমার এক বন্ধুর ভাগ্নীর বর ছিলেন তার খুব কাছের বন্ধু। সেজন্য আমি তাকে মামু ডাকতাম। উনিও আমাকে মামু ডাকতেন একইভাবে। মনে পড়ে সেই মামু বন্ধু তার ছোট দু'বোনকে নিয়ে প্রভাতফেরীতে এলেন। একটু পড়ে শুরু হবে প্রভাতফেরী। প্রেসকাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। মামু বন্ধুর ছোট দু'বোন সারাহ ও ফারাহ রিক্সায় বসে। মাইক রেডি, মিছিল রেডি। সমবেত মিছিল এবং দু'বোনের কণ্ঠ গেয়ে উঠলো- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?
সমবেত মিছিলের সাথে আমিও গাই। সারাহ, ফারাহ দু'বোনের কণ্ঠ ভেসে আসে কানে। ওদের কণ্ঠসৃত সুর মর্ম ভেদ করে হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে আমার। আড়চোখে ওদের দেখার চেষ্টা করি। ওরা রিক্সায় বসে হারমোনিয়াম কোলে রেখে গান গায়। আর তাদের পাশে পাশে থাকার চেষ্টায় মিছিল ঠেলে সামনে আগাই আমি। সারাহ-ফারাহ দু'জনারই চোখ সুন্দর, টানা টানা। যাকে বলে ডাগর কালো হরিণী নয়ন। তবে বয়সে ছোট ফারাহকে বেশি ভালো লাগে। প্রিয় কবির কবিতার উপমায় পাখির নীড়ের তুলনা খুঁজে পাই তার চোখে। আমার ঈপ্সিত কিছু একটা খোঁজার চেষ্টায় থাকি সে কালো চোখে। মিছিল এগিয়ে যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে।
শহীদ মিনারের বেদীমূলে সবাই ফুল দেয়। আমিও দেই, ফারাহও দেয়। তবে আমার এ ফুলদানের একমাত্র উপলক্ষ্য আজ ফারাহ। যার চোখে আমি সাগরের গভীরতা দেখি। সবার অলক্ষ্যে ওর দিকে তাই বারবার তাকাই। মিছিল শেষে সবার সাথে আলাপ পরিচয় হয়। সারাহ ফারাহর চেয়ে দু'বছরের বড়। সারাহ পড়ে ক্লাস নাইনে আর ফারাহ ক্লাস সেভেনে। ওদের বড় ভাই আমাকে শহরের নামকরা কবি বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। শুনে ফারাহ ফিক করে হেসে ওঠে। আমার একটু লজ্জা লাগে, আবার খুব ভালোও লাগে। বুকের মাঝে হদয়টাতে একটু ধাক্কা অনুভব করি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই সারাহ-ফারাহদের বাড়িতে যাবো। যে করেই হোক ওদের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে হবে আমাকে।
মন্তব্য
ভালো লাগছে এত তারাতারি পর্ব শেষ করে দিলেন কেন এরপর কি হল জানতে ইচ্ছে করছে । Continue করেন
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
শুভ লক্ষ্মণ। শুভ লক্ষ্মণ
গুল্লি মেয়েরা সব সময়ই প্রেম করার ক্ষেত্রে পছন্দ করে কবি আর বিয়ে করার ক্ষেত্রে কবিরাজ
(৯৯% কবিই জীবনে অন্তত একবার ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার- আর্মি অফিসার না হোক নিদেন পক্ষে ঠিকাদার না হওয়ার জন্য আফসোস করে...)
তবে কবিতা লেখেন আর নাই লেখেন; কবির চেহারায় একটু ভুজুং ভাজুং থাকতে হয়। জীবনানন্দের মতো ম্যাড়ম্যাড়ে চেহারার কবিদের ভাত নাই
তারপরে কি হলো ?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কিছুটা অপূর্ণতার কারণে মনে হয় ভালো লাগাটা একটু বেশিই হল।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
তাপ্পর!! তাপ্পর কি হল?
-------------------
কালবেলা
শুরু হলো যখন , চলতে থাকুক ।
পড়ছি ।
সব ফুল শহীদ বেদীতে দিয়ে দেয়া তো ঠিক হলো না কবি! একটা গোলাপ অন্তত বাঁচাতে পারতেন ফারাহ-এর জন্য। এই ভুলের জন্য, আপনার গল্পের পরিণতি বিয়োগান্তকও হয়ে যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
পড়া শুরু করেছি।
গতবার উপন্যাসের খসড়া অসমাপ্ত রেখে জলিল ভাই পাঠকদের বঞ্চিত করেছেন।
এবার নিশ্চয় সেরকম হবে না!
নতুন মন্তব্য করুন