ফারাহর বড় ভাই মুজিব মাহমুদ। মফস্বল শহরের নামকরা ব্যবসায়ী। শখের বশে কবিতা লেখেন। আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা প্রকাশিত হয় তাঁর। আমার সাথে বন্ধুত্ব কবিতার সূত্রে। তাছাড়া সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও জড়িত আছি আমরা। বয়সে বড় হলেও অন্তরের দূরত্ব একেবারেই কম। দু'জনেই কবি জীবনানন্দের ভক্ত আবার। একবার তো আমার এক কবিতা পড়ে বলেই ফেললেন- কী মামু, কবিতার অবয়বে জীবনবাবু ফিরে ফিরে আসে কেন ?
ফারাহর সাথে দেখা হবার পর কবি মুজিব মাহমুদ-এর আরও ভক্ত হয়ে যাই আমি। রাতারাতি তার ভক্ত হবার উদ্দেশ্য একটাই। যে করেই হোক ফারাহর সাথে দেখা করা। আর তা হতে পারে একমাত্র মুজিব মাহমুদের কল্যাণেই। আমি মুজিব মাহমুদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যাই। তাঁর মন জোগানোর চেষ্টা করি। তাঁর কবিতা আবৃত্তি করি বারবার। মানে অকারণে তাঁর কবিতার স্তুতি করি। মুজিব মাহমুদও সরল প্রাণ। আমার স্তুতিতে গলে যান। আর আমি মনে মনে ফাঁক খুঁজি ফারাহদের বাড়ীতে যাবার। অবশেষে মিলে যায় দিন- সেই মধুক্ষণ। সারাহ-ফারাহর দর্শন মিলবে এবার। প্লান-প্রোগ্রাম সব ঠিক। আগামী শুক্রবার শুনবো সারাহ- ফারাহর গান আর মামীর হাতের খাবো যে চা-পান!
শুক্রবার ছুটির দিন, ক্লাস বন্ধ। সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। প্রথমে ক্লিনসেভ তারপর কোল্ড সাওয়ার। অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশী সময় নিয়েই গোসল করি। চুলে শ্যাম্পু, গায়ে সুগন্ধি সাবান মাখি। ইস্ত্রি করা কাপড়-চোপড় আগেই রেডি ছিলো। তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে সকাল ৯টার মধ্যেই বেরিয়ে পড়ি। গন্তব্য কলেজ রোড- রেল লাইন পাড়। প্রাণে আমার দারুণ ফুর্তি। অতিরিক্ত রিক্সা ভাড়া কোন সমস্যা নয় আজ। কারণ আমি শুনতে যাচ্ছি সারাহ-ফারাহর গান। আকণ্ঠ গানের সুধা করবো পান। সেই সাথে প্রাণভরে দেখবো ফারাহর রূপ, ডাগর ডাগর চোখ।
যাচ্ছি বাগমারা থেকে কলেজ রোডের দিকে। পরিপাটি পোশাকে, সতেজ ফুরফুরে মনে। আমার একমাত্র সঙ্গী রিক্সাওয়ালা। চারদিকে বিনা কারণে তাকাই। দালানঘাট দেখি, খেলার মাঠ দেখি, গাছপালা দেখি। মফস্বল এ শহরটাকে কেন জানি বেশি সুন্দর লাগে আজ। অন্যদিন ড্রেনের ময়লা গন্ধ, রাস্তায় মানুষের জট যে বিরক্তির উদ্রেক করতো আজ তা নেই। আর থাকবেই বা কেন? কোনোদিকেই খেয়াল নেই আমার। প্রাণে এক দারুণ উচ্ছাস। গুনগুন করে রবি ঠাকুরের গান গাই - আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, তাই হেরি তাই সকল খানে।
ফারাহদের বাসা কলেজ রোডের শেষ মাথায়। রেললাইনের ঠিক পশ্চিম পাশে। গাছপালায় ঘেরা বাড়িটি দোতলা বিল্ডিং এর । গেটে কড়া নাড়তেই খুলে দিলেন যে মহিলা উনার পরিচয় পেলাম একটু পরে।
কাকে চাচ্ছেন ?
মুজিদ মাহমুদ সাহেব কে।
কোত্থেকে এসেছেন ?
বাগমারা থেকে।
আপনার নাম ?
আকাশ আহমেদ।
ও, মাহমুদের কাছে আপনার নাম অনেক শুনেছি। আপনি খুব ভাল কবিতা লেখেন। আসুন মামু, ভেতরে আসুন।
আলাপ পরিচয়ে বুঝলাম উনি মাহমুদ সাহেবের স্ত্রী। ভেতরে গিয়ে সোফায় বসলাম। পাশের রুম থেকে ভেসে আসছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সুর- পিয়া ঘরমে আয় এ। মাঝে মাঝে পুরুষ কন্ঠ এবং ঠিক পরেই নারী কন্ঠের সুর শুনলাম। কোনো ওস্তাদ হয়তো তালিম দিচ্ছেন সারাহ-ফারাহকে। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কখন আসবেন কবি মুজিব মাহমুদ সাহেব।
কী মামু, কী খবর ?
আমার গান শুনে মুগ্ধতার ধ্যান ভাঙে। চোখ বুঁজে চিন্তা করছিলাম আর শুনছিলাম সঙ্গীতের রাগ। মুজিব মাহমুদ এলেন। পাশ ঘেঁষে বসলেন।
তারপর কেমন আছেন ?
ভালো, মামু।
কেমন চলছে কাব্যচর্চা।
এই, মোটামুটি।
মামুর বেটা, আপনি তো খুব খাসা কবিতা লেখেন।
আরে যা বলেন। যখন যা মনে আসে লেখি। তবে মামু আজকে কিন্তু আমার লেখালেখি নিয়ে কোনো আলোচনা করবো না।
আপনার খবর বলেন।
এই চলছে, এক রকম।
আমি জানি কবি মুজিব মাহমুদের এক রকম মানে ব্যবসার ভালো অবস্থা। ধনদৌলতের আরামআয়েশ,তার উপর শখের বসে কবি। পাশের ঘরে তাঁর দু'বোনের সঙ্গীত চর্চা আমাকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে ফারাহর কন্ঠস্বরে যেন মধু ঝরে। মনে মনে ভাবি, এই বুঝি প্রেমে পড়ার নমুনা। যাকে ভালো লাগে তার সব ভালো মনে হয়। প্রেমে পড়লে প্রেমিকার কোনো খুঁত চোখে পড়ে না কারও।
একটু পরে ঘরে ঢোকে সারাহ-ফারাহ। ওস্তাদজীকে বিদায় দিতে পিছু পিছু গেষ্ট রুমে ঢোকে তারা। কবি মুজিব মাহমুদ ওস্তাদজীকে এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত যান। সারাহ-ফারাহ দাঁড়িয়ে থাকে রুমে। আমাকে বসা দেখে চেনার চেষ্টা করে তারা। আমি তাদের দু'বোনের ডাগর-কালো নয়ন দেখি। বিশেষ করে ফারাহর। কীভাবে যে আলাপ শুরু করবো বুঝে উঠতে পারিনা। এরই মধ্যে এসে পড়ে আমার মামু-বন্ধু কবি মুজিব মাহমুদ।
কী মামুর সাথে কথা হয়েছে তোদের ? চিনতে পারিসনি ? ঐ যে একুশে ফেব্রুয়ারীর রাতে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
ও সেই কবি মামু ? একযোগে বলে ওঠে সারাহ-ফারাহ দুই বোন। আমি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ি।
যা তোর ভাবীকে চা-নাস্তা করতে বল। আজ মামুর সাথে আড্ডা হবে। আর তোরাও রেডি হয়ে যা। আমার কবি মামুকে গান শোনাতে হবে। কথাগুলো শেষ করে কবি মুজিব মাহমুদ আমার দিকে ফেরে।
তারপর, গান লেখার কথা বলেছিলেন। শুরু করেছেন ?
না করিনি! তবে তাড়াতাড়িই হয়তো লিখা শুরু হয়ে যাবে।
বেশ ভালো হবে। আমাকে কিছু গান দিয়েন তো মামু।
আচ্ছা দেবো!
কবি মুজিব মাহমুদ স্ত্রী অর্থাৎ মামী ঘরে প্রবেশ করলেন ট্রে হাতে। সামনে চা-নাস্তা রাখলেন। আমার মাথায় চুল দেখে বলে উঠলেন-মামুর মাথা দেখি একেবারে স্টেডিয়াম! বুঝলাম মামী আমার খুব রসিক। অল্প বয়সে টাক পড়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও ফুটবল মাঠ হয়ে যায়নি। সবই উচ্চশিক্ষার ফসল। তার উপর আবার কাব্যচর্চা।
কবি মুজিব মাহমুদ এবার সারাহ-ফারাহকে ডাকলেন। ভেতর থেকে ছুটে এলো দু'বোন। মামু বললেন- যা হারমোনিয়াম, তবলা নিয়ে আয়। সারাহ-ফারাহ দু'বোন একজন হারমোনিয়াম, একজন তবলা-ডুগি হাতে ঘরে ঢুকলো । শুরু হলো গানের আসরের আয়োজন। এরপর কে কার আগে গাইবে সেজন্য শুরু হলো দরকষাকষি। গান গাওয়া নিয়ে ভাই-বোন-ভাবীর খুনসুটিতে ব্যস্ত সবাই। এদিকে আমি ফারাহর চাঁদমুখের দিকে চুপিচুপি তাকাই। বুঝতে চেষ্টা করি ওর মনের ভেতরের অবস্থা।
বাইরের বাতাস ঝড় বইয়ে দিতে যাচ্ছে ভেতরের বাড়িতে- ফারাহ কি বোঝে তা ?
মন্তব্য
আররে!
এটাই কি আগের খসড়াটা!!!
থ্যাঙ্কু জলিল ভাই, এইবার টান দেন।
ধন্যবাদ।
...মনে তো টান দেবার ইচ্ছে প্রচুর, কিন্তু আলসে শরীর তো টানে না!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
বোঝার ত কোন নমুনা দেখলাম না!মনে হয় বোঝে না।
-নিরিবিলি
বোঝার ভাষার পরিণতি এখনো অজানা!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
জলিল ভাই এর বাড়ির কি রাজশাহী??
তারিক স্বপন
চলুক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমিও চাচ্ছি..
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
কঠিন প্রেম মনে হচ্ছে।
জ্বি স্যার, হালকার উপর কঠিন!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
- সারাহ ফারাহ'র সঙ্গে আগে একবার পরিচয় হয়েছিলো তো!
এবার জমবে ঝড়ের মুখে মজা। মামু, আছি সাথে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
- ডাবল হওয়াতে এটা সাইজ করে দিলাম।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঠিকাছে মামু।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
জমছে......কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে প্রেমটা হবে না.........।
কালবেলা
হয়তো হা হয়তো না!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
বান্দরবানেও একটা বাগমারা আছে।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
তবে বান্দরবানে বান্দর থাকলেও দুই জায়গার কোথাও বাঘ নেই!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
মুজিব মাহমুদ কি ইচ্ছাকৃত ভাবে মুজিব মেহদী হয়ে গেলো স্যার?
০২
আপনি তো এক কবির ভক্ত হয়েছেন তার বোনের কাছে যাওয়ার জন্য
মহামতি কার্ল মার্ক্স্ নাকি স্টুডেন্ট অবস্থায় এক পুঁজিবাদী লর্ড এর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তার মেয়ের সাথে ইটিশ পিটিশ করার জন্য
এবং তিনি সেই লর্ড এর সামনে বসে অবিরতভাবে পুঁজিবাদের গুণগান গাইতেন লর্ডকে খুশি করার জন্য
আহারে পিরিতি
স্বয়ং কার্ল মার্ক্সকেও মার্ক্সবাদী থাকতে দেয় না...
জ্বি স্যার, ব্লগে কবি মুজিব মেহেদীর কবিতার ভক্ত বলে টাইপো এসে ভর করেছে এখানেও!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
- কথা হলো, কবি মুজিব মেহদী'র কি সারাহ-ফারাহ্'র মতো বোন টোন আছে কীনা! থাকলে ব্যাপারটা কেমন কেমন লাগে। মামু আমার এই বয়সে! আয় হায়...
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মনের কথা জানাতে কতক্ষন লাগবে আপনার?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হয়তো একদিন. তবে বেশিদূরে না!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
নতুন মন্তব্য করুন