১.
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো...। বৈশাখের আগমন মনে করিয়ে দিচ্ছে যেন কাল-বৈশাখী। সারাদেশে বয়ে যাবে কাল-বৈশাখী ঝড়। চারদিকে ধ্বনি উঠবে- ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখীর ঝড়। তবে রুদ্র বৈশাখে এ অবস্থা সাময়িক। এক-আধ ঘন্টা ঝড়-বৃষ্টি স্থায়ী হলেও থামাতে পারবে না পহেলা বৈশাখের উৎসব। কারণ বাঙালির এ উৎসব প্রাণের গভীরের, একেবারে শেকড়ের কাছাকাছি। সর্বজনবিদিত এ উৎসব সামাজিক উৎসবে পরিনত হয়েছে অনেক আগে থেকেই।
বাংলা সনের ইতিহাস অতি প্রাচীন। মুঘল আমলে সম্রাট আকবরের সময় এর প্রবর্তন হয়। ফতেহ উল্লাহ সিরাজি নামের একজন নামকরা বোদ্ধা ও জ্যোতির্বিদ বাংলা সনের প্রবর্তক। মার্চ মাসের ১০/১১ তারিখে তিনিই প্রথম ফসলী বা কৃষি সন চালু করেন ১৫৮৬ সালে। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে চান্দ্র বছর ও সৌর বছরের সমন্বয়ে বাংলা সনের প্রবর্তন হয়। কিন্তু সন গণনা শুরু হয় ১৫৫৬ সাল থেকেই। প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে সম্রাট আকবর এর অনুমোদন দেন।
সম্রাট আকবরের সময় চৈত্রের শেষ দিনে সমস্ত খাজনা, কর পরিশোধ করা হতো। পরের দিন পহেলা বৈশাখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জমিদারদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্পায়ন করা হতো। ধীরে ধীরে এর প্রবর্তন ঘটে গৃহস্থালি ও সামাজিক জীবনের আনন্দ ও উচ্ছাস এর বহি:প্রকাশ হিসেবে।
পহেলা বৈশাখের মূল কাজ ছিল হালখাতা খোলা। যদিও এটা পুরোপুরি ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ ছিল যা এখনও গ্রাম-গঞ্জে-শহরের ব্যবসায়ী মহলে প্রচলিত আছে আজও। তবে বাঙালির এ দিবস উদযাপন আজ পুরোপুরি সামাজিক মিলনমেলায় রূপান্তরিত হয়েছে। বৈশাখী মেলা, বাউলগান, শোভাযাত্রা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান আজ আমাদের সৌহার্দ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক।
২.
পহেলা বৈশাখ এলেই মনে পড়ে বৈশাখী মেলার কথা। গ্রামের হাট-বাজারে বসতো এ মেলা। নাগরদোলায় চড়া, লাঠিখেলা দেখা, বায়োস্কোপ দেখা, মেলা থেকে মুড়ি-মুড়কি-বাতাসা-সন্দেশ-মিষ্টি কিনে খাওয়া আমার শৈশববেলার স্মৃতি। বাবা-মা, বড়ো ভাই-বোনদের হাত ধরে মেলায় যেতাম। তারা কিনে দিতেন বাঁশি, চরকী, বেলুনসহ আরও কতো কী! সাপুড়েদের সাপ খেলা, বানরের খেলা আর ষাঁড়ের লড়াই দেখতাম সে সময়। সত্যিকারে আশেপাশের কয়েক গ্রামের মিলনকেন্দ্র ছিলো আমাদের বৈশাখী মেলা। হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলে আনন্দ-উল্লাস করে বৈশাখের প্রথম কয়েকটা দিন কেটে যেতো।
এসএসসি পাস করে ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হই। ঢাকা কলেজে পড়াকালীন সময় থেকেই আমার নগরকেন্দ্রিক পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু। দীর্ঘ আঠাশ বছরে রমনার বটমূল ছাড়িয়ে এ অনুষ্ঠান ঢাকার অনেক জায়গায় বিস্তৃত হয়েছে। অনেকবার গিয়েছি বটমূলে, টিএসসিতে কিংবা চারুকলায়। বর্তমানে ঘোরাঘুরিতে নতুন সংযোজন হয়েছে ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ এবং পাশের খেলার মাঠের মেলা। বছরের নতুন দিনে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ ঘোরাঘুরি নিয়মিত নেশায় পরিনত হয়েছে আজ।
৩.
এতো গেলো নিজের বৈশাখ উদ্ যাপনের কথা। সারাদেশের মানুষ কতোটুকু প্রাণ ঢেলে এ উৎসব পালন করবে সন্দেহ আছে। কারণ দেশজুড়ে খাদ্যের প্রকট অভাব। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঊর্ধগতিতে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। কায়মনে কামনা করবো তাদের দুঃখকষ্ট ভাগাভাগি করে বছরের প্রথমদিন কাটুক সবার। আমাদের উৎসব যেন শুধু পান্তাভাত, ইলিশ খাবার ফ্যাশনে পরিনত না হয় এ আশাই করবো এবার।
এবার আসা যাক সচলায়তনের কথায়। এখানকার প্রতিটি বন্ধুও থাকবেন নববর্ষের আনন্দে উদ্বেল। পহেলা বৈশাখের আগমনে থাকবে বেশ সুন্দর সুন্দর শুভেচ্ছা বার্তা, সচলায়তনেরও থাকবে বাড়তি সাজ-সজ্জা। বেশ কিছু চমকপ্রদ লেখা, গল্প-কবিতার আশায় অধীর আগ্রহে বসে আছি। কান পেতে আছি পহেলা বৈশাখের আগমনী গান শুনতে। যুক্ত হতে চাচ্ছি সবার আনন্দে, দুঃখকষ্টে এবং বলতে ইচ্ছে করছে কবিগুরুর কথায়- যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ।
১৩.০৪.২০০৮
মন্তব্য
অস্থির সময়ের মাঝে - মনকাড়া লেখা।
সুখপাঠ্য ।
নববর্ষের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
খুব ভালো লাগলো পড়ে। ছেলেবেলা, বড়বেলা এবং সাম্প্রতিক সময়- সবকিছুই একটু একটু করে উঠে এসেছে।
অভিজ্ঞতা মানুষকে অনেক সুন্দর করে। অনেকদিনের জানাশোনায় প্রতিটি দিনই কত কিই না যুক্ত হয় অভিজ্ঞতার ঝুলিতে। আপনার মত মানুষেরা নিজেদের ঝুলি খুলে আমাদের আরো পড়তে দিন।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
নববর্ষের শুভেচ্ছা।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
আমারো খুবই ভালো লাগল, অনেক কিছু জানতে পারলাম।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
আমারো খুবই ভালো লাগল, অনেক কিছু জানতে পারলাম।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
শুভ নববর্ষ ১৪১৫।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
ভাল-লাগলো। শুভেচ্ছা ...
নববর্ষের শুভেচ্ছা পাঠাবার জায়গা করে দেবার জন্য ধন্যবাদ ... ।
....................................
বনের বেঞ্চিতে ওম শান্তি!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
ধন্যবাদ।
আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
নতুন মন্তব্য করুন