কী সুন্দর ক'রে বলতে পারে 'ও'। সমম্মোহনের ছুরি অনায়াসেই বুকে বেঁধে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। প্রথম যেদিন চোখ দু'টি আকাশ ক'রে দেখেছিলাম- মনে হয়েছিলো অজস্র তারা ফুটেছে ওখানে। 'ও' যেন ছুটছে চন্দ্রযানে আর চন্দ্রভুক অন্ধকারে কেবলই জ্যোৎস্না হাতরাচ্ছি আমি। এরকম ক'রেই হঠাৎ। তারপর প্রতিশ্রুতি। আগামীকাল ঠিক দু'টোয়। ওকে, অল রাইট।
আমার সব সময়ই একরকম। কিন্তু আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঘুম থেকে উঠেই এসে দাঁড়ালাম আয়নার সামনে। প্রতিবিম্বে দু'চোখ প্রশ্নবোধক চিহ্ন তুলে চেয়ে রইলো। কী যেন হয়নি। ও ঠিক তাইতো! দাঁড়িগুলো কেমন সূচালো দাঁড়িয়ে আছে। একদম বেমানান। সব ঠিক- আগে সেভ। তারাপর টয়লেট- টয়লেট থেকে বাথরুম। ঠাণ্ডা জলের ধারায় ভিজতে ভিজতে বেঢপ কণ্ঠে বেজে উঠলো গান। কোনোটার এক লাইন বা কোনোটার আধা লাইন, আবার কোনোটার শুরুতেই শেষ। বাথরুম সিংগিংটা আজ যেন বেশিই হ'য়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শাওয়ার থেকে পানি ঢালার পরিমাণও।
না, আজ আর নাস্তা নয়। দু'ঘন্টা পরে তো লাঞ্চই খেতে হবে। টাই-স্যুট-প্যান্ট পরতেই তো এক ঘন্টা। তারপর রিক্সা ঠিক। ওহ্ কী ঝামেলা! ম্যাগডোনালস তো আজকের পথ না। পুরো দশ টাকা রিক্সা ভাড়া এই দূর মতিঝিল থেকে। এ মন্দা বাজারে রিক্সা ভাড়ার রেট ঠিক সুস্বাস্থেই আছে। স্বাধীনতার পর টাকার মানের ঠিক বিপরীতে। মানিব্যাগটা আবার পরখ ক'রে নিলাম। প্রয়োজনীয় আছে কিনা! আরে, যাবে তো যাক। যতোদিন বাঁচো বাছা বাপের পকেট থেকে বেকার ভাতায় চালিয়ে যাও, কেমন!
একবার ভাবলাম নিকুচি করি রিক্সার। না মতিঝিল থেকে কলাবাগান যেতে তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। আর যাবোই বা কিসে? বাপের তো শালিমার আর ডাটসান নেই। চলছি ঠিকই তবে মনে হচ্ছে দেরি ক'রে ফেলেছি। বারবার তাগাদা দিচ্ছি রিক্সাওয়ালাকে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি- না এখনও আধ ঘন্টা বাকী। দুর শালা! ঘড়ির কাঁটাও কী ঠিক ঘুরছে না? শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরী ঘুরে অবশেষে কলাবাগান। নির্দিষ্ট টাইমের আগেই হাজির। এসে দেখি কাক্সিক্ষত জন অনুপস্থিত। আর আসবেই বা কেন? সবাই কী আর আমার মতো অমূল্য সময়ের মূল্য দিতে ওস্তাদ!
এক্সাক্টলি, আই থট দ্যাট!
চমকে উঠলাম। ঠিক পেছনেই কোকিল কণ্ঠ। আমার 'ও' এসে গেছে। ম্যাচিং করা স্যালোয়ার-কামিচে দারুণ মানিয়েছে বেশ। হাওয়ায় উড়ে যাওয়া ওড়নায় কোনো দিগন্তের মেঘের পালক যেন ব'য়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে 'ও' ।
ও.কে, চলো ভেতরে বসি।
ওর পছন্দ রাইচ এণ্ড চিকেন ফ্রাই। আমার শালা একদম না পছন্দ। যাক, ওর মুখ রাখতেই না হয় খেলাম আজকে। চটপট শুরু করলাম।
আরে, কী করছেন?
আমি বললাম- রিমেম্বার দ্য প্রোগাম!
ও আঁতকে উঠলো- হ্যাঁ, তাইতো, ঠিক তিনটায়।
শ্যামলী আর কতো দূরই বা। মনে মনে ভাবলাম। একটু দূরে হ'লে বাবা কী ক্ষতি হতো! অন্ততঃ ওর সাথে রিক্সায় একোম্পানিটা আরও দীর্ঘতর হতো।
ও.কে বাবা, হারি!
বামপাশে ধানমণ্ডি মাঠকে ফেলে রিক্সা চললো সামনে। আমার পাশে 'ও'। ওর পাশে আমি। এই প্রথম কোনো রমণীর ছোঁয়াচ, কাঁধে কাঁধ। দূরন্ত হাওয়ায় ওর উড়ন্ত চুল আমার নাকে-মুখে বিঁধতে লাগলো শরের মতো।
এক সময় 'ও' বললো, আচ্ছা, এমন যদি হয় আপনাকে হঠাৎ ডাকলাম আমার কাছে চলে আসতে! আসবেন?
আমি বললাম, অফ কোর্স!
'ও' যেন আরও কী বলতে চাচ্ছে। ঠিক তখনি হঠাৎ ওর ওড়না আটকে গেলো রিক্সার চাকায়। ধরতে গিয়েও পারলো না ও। সমস্তটুকু পেচিয়ে গেলো চাকায়। তাড়াতাড়ি রিক্সা থামিয়ে যেটুকু উদ্ধার করলো রিক্সাওয়ালা তাতে আর পরার জো রইলো না।
ওকে অস্বস্তি বোধ করতে দেখা গেলো না। যেন আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। বললো- চালাও।
'ও' আবারও বললো, হ্যাঁ, যা বলছিলাম। সেদিন অনেক ক'রে ভেবেছি একটা কথা আপনাকে বলবো। আর সে জন্যই এতোদূর।
এমন সময় ওর ডান উরুর ধাক্কা আমার শরীরে বিদ্যুৎ বইয়ে দিলো। সেই সাথে নজরে এলো ওড়নাহীন ওর বুকের তীর্থভূমি। আধ ঢাকা ও দু'টো যেন 'দেখবো এবার জগৎটাকে' ব'লে আমার দৃষ্টির শীর্ষভাগ ছুঁয়ে গেলো। একটু দূরে ঠোঁট দু'টোকে বড়ো কষ্টে সম্বরণ করলাম। আমার খুব কাছে মুখ এনে 'ও' বললো, সেই কথাটা..।
ততোক্ষণে পৌঁছে গেছি শ্যামলী। টিকেট অগ্রিমই ছিলো। আমার হাতে ওর হাত। তাড়াতাড়ি উঠে এলাম সিঁড়িতে। ততোক্ষণে সিনেমা শুরু হয়ে গেছে। হয়তো বা একটু পরে 'ও' আমাকে বলবে সেই কথাটা। তখনও থাকবে কাঁধে কাঁধ, উরুর পাশে উরু, হাতের উপর হাত। না, কোনো শক্ত প্রেমের বাঁধন নেই ওর সাথে। পরিচয়ের প্রথম থেকেই 'ও' আমাকে মামা ব'লে ডাকে।
১৫.১০.১৯৮৬
মন্তব্য
ইহা একখান মামায়ণ হইলো
ডাকনাম হিসেবে মামা খুবই মাল্টি ডাইমেনশনাল এবং মাল্টি পারপাস
এটাকে যে কোনো দিকে টুইস্ট করা যায়
জলিল ভাই বেশ ঝানু ইঞ্জিনিয়ার....
০২
কলাবাগান- শ্যামলি এইসব জায়গায় কোথায় কী করেন বলেন তো
এইসব জায়গার প্রায় প্রতি ইঞ্চি আমার পরিচিত
তবে ভয়ের কিছু নেই
আমি এলাকায় খু্বই ভালো মানুষ
০১.
০২.
কৈশোর থেকে প্রৌঢ়..কলাবাগান যে আমার নাড়ির টান!
...হাহাহা! বেশি ভালো মানুষকে কি সবসময়ই বিশ্বাস করতে হয়?
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
ডাক্তারদের মধ্যে রস এবং শিল্প দুটোরই অভাব বড়ো বেশি
এই জন্যই ইঞ্জিনিয়ার..
মাহবুব লীলেন দেখি 'বিকল্প' খ্যাত স্বনামধন্য দন্ত চিকিৎসকের কথা ভুলে গেছেন।...শিল্প, রসবোধ আর বলে কাকে?
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
"ডাকনাম হিসেবে মামা খুবই মাল্টি ডাইমেনশনাল এবং মাল্টি পারপাস এটাকে যে কোনো দিকে টুইস্ট করা যায়" কমেন্টে জাঝা
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
গল্পের নামটি "মামা ডাক রহস্য" হওয়ায় সমাপ্তি আন্দাজ করা দুঃসাধ্য হয়নি। নাম ভিন্ন হলে রহস্যটি জমতো ভালো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি একগামী পুরুষ। একমাত্র নারীদের ভালোবাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ধন্যবাদ সংসারে এক সন্ন্যাসী।
..নামকরণ নিয়ে ওভাবে ভাবিনি। সেজন্যই বোধ হয় আমার গল্পে রহস্য কম!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
জলিল ভাইয়ের গল্পের শব্দগুলো বদলে যাচ্ছে মনে হয়। আগে একটা জড়তা মাঝেসাঝে দেখা যেত। সেটা আর পাচ্ছিনা এখন। কবিতার মতো গল্পেও সাবলিল হয়ে উঠুন জলিল ভাই।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
সুন্দর মন্তব্য।
গল্পটি কিন্তু বেশ আগের লেখা। আগে যাবো না পেছনে?
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
এই লাইনটা ছাড়া সবটাই অসাধারন।
কিংবা, এই লাইনটা ছাড়া বাকিটা আমি বুঝেছি।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
মন্তব্য গঠনমূলক। ধন্যবাদ।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
রচনাকালঃ ১৫.১০.১৯৮৬ ।
মনে হলো - গতকাল-আজ-কিংবা আগামীকালএর এ লেখা ।
ধন্যবাদ।
ভালো গদ্যলেখকরা যখন এরকম মন্তব্য করে তখন মনে সাহস আসে- আবার গদ্য লেখি!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
- মামু, ব্যাপারনা। পড়ে খুবই আরাম বোধ করলাম।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হ, মামু।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
একবার এক নাটকের শুটিংয়ে নায়িকা দেখি ফোনে একজনের সাথে কথা বললো অনেকক্ষন... ফোনে বার বার বাবা বাবা করতেছিলো বলে কিছু বললাম না... ভাবলাম থাক... বাবার সাথে কথা বলে কথা...
কিন্তু বাবার সাথে কথা বলাটা বেশ ঘণঘণ হইতে লাগলো বলে বিরক্ত হইলাম... এবং খেয়াল করলাম কথাগুলা বাবা মেয়ে সুলভ না... তারপর জানলাম... সেই নায়িকা তার সব রসিক প্রেমিকরেই বাবা বলে... সেই বাবা ডাকটাও বেশ মোহনীয়... ঠোঁট চোখা কইরা...
এখন আর ডাকাডাকিতে কোনও সমস্যা হয় না...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বেশ ইন্টারেস্টিং!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
রসভঙ্গ হলো মামা ডাকে ... আহ্ , কী কষ্ট!
....................................
বনের বেঞ্চিতে ওম শান্তি!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
তাই!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
আহারে !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বোঝেনি কিছু, মামা ডাকে কাহারে?
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
মনে হল বিশাল কবিতা পড়লাম--------মামা শুনতে একটু কেমন যেন লাগল-----
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
কবিতার ভাষা, আকার যদি এই হয়
তাহলে তো আমি মহাকবি।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
জলিল ভাই জোশ জোশ !
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ধন্যবাদ খেকশিয়াল।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
জটিল ব্যাপার!!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
হুম! ব্যাপারটা সেরকমই। ধন্যবাদ জ্বিনের বাদশা।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
নতুন মন্তব্য করুন