শিখছিলাম কোন খানে? ঠেকছিলাম যেখানে। কথাটা ছোটোকাল থেকেই গুরুজনের মুখে মুখে শুনে এসেছি। এখনও শুনি অনেকের মুখে। শিখার ব্যাপারে ঠেকাতেও নাকি অনেক লাভ! নিজের জ্ঞানভান্ডার বাড়াতে যুগে যুগে বুদ্ধিমানরা হার মানেন, বোকারা তর্কে মাতেন। অন্যের কাছে নিজের অজ্ঞতা ঢাকতে ছলচাতুরির আশ্রয় নেয় অনেকে। এভাবে ঠকতে না চাইলে অন্যের কাছে কীভাবে হেয় হতে হয় তার দুএকটা গল্প বলবো আজ।
১. শোনা গল্প
বাংলার শিক্ষক পড়াচ্ছেন। মাঝে মাঝে কবিতার উদ্ধৃতি দিচ্ছেন। কবিতার লাইনটি এরকম-
কপোল ভিজিয়া গেলো নয়নের জলে..
ছাত্র: স্যার, কপোল মানে কী?
শিক্ষক: সব গাধা! কপোল মানে জানে না! কপোল অর্থ হলো কপাল
ছাত্র: স্যার, তাহলে নয়নের জলে কপোল ভেজে কী করে?
শিক্ষক ভাবছেন। পড়েছেন বেকায়দায়। আসলে তিনি কপোলের অর্থ জানেন না। তবে তাৎক্ষণিক বুদ্ধিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। কিছুটা মাথা চুলকালেন। কাব্যভাবনা খেলে গেলো মাথায়। সহসাই বলে উঠলেন।
শিক্ষক: আগে বলতে দিবে তো পরের লাইন। তারপর না পুরো অর্থ বুঝবে কবিতার।
ছাত্র: বলুন স্যার
শিক্ষক: পরের লাইন হলো-
পা দু'টো বাঁধা ছিলো তমালের ডালে।
ছাত্ররা কবিতার অর্থ বুঝলো। পা উপরে বাঁধা থাকলে কপাল তো ভিজবেই। সমস্বরে তারা আওরাতে লাগলো-
কপোল ভিজিয়া গেলো নয়নের জলে
পা দু'টো বাঁধা ছিলো তমালের ডালে
পাঠক, শোনা গল্প শুনলেন। অনেকে হয়তো আগেও শুনেছেন। অল্পবিদ্যা কতোটা ভয়ংকরী শিক্ষাক্ষেত্রে তার নমুনাও দেখলেন।
২. বাস্তব গল্প
যাচ্ছিলাম সাতক্ষীরায়। মেঝো ভায়রার বাড়িতে থাকবো। পরদিন শ্যামনগর হয়ে সুন্দরবন দেখবো। সাথে বড়ো ভায়রা, বউয়ের বড়ো বোন, তাঁদের ছেলেমেয়ে। আরও রয়েছে খালাতো জেঠাশ (যদিও আমার বয়সে ছোটো) এবং আমার বউ-ছেলে। রিজার্ভ মাইক্রো নিয়েছি। গাড়ি পদ্মার পাকশী পেরিয়ে ছুটছে যশোরের দিকে। গাড়িতে হিন্দি গান বাজছে। পড়ন্ত বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামলো বলে। ড্রাইভার একটু পরপর বাজাচ্ছে- শাম হে ধুয়া ধুয়া। আমি হিন্দি বুঝি না একেবারেই। মনোযোগ দিয়ে শুনছে সবাই আর সিটে ঝিমাচ্ছে ।
আমি শুধু গানের তালে তাল মিলাচ্ছি শুধু। অর্থের লেজমাথা কিচ্ছুই বুঝছি না। ছেলে আমার কোলে, পাশে বড়ো ভায়রার ১০/১২ বছরের মেয়ে। ভাগ্নির প্রশ্ন- খালু , শাম হে ধুয়া ধুয়া-র অর্থ কী? একবার-দু্'বার এড়িয়ে গেলাম কথাটা। কিন্তু মেয়ে নাছোড়বান্দা। আবার জিজ্ঞেস করছে। শেষে না পেরে একটা আজগুবি অর্থ বললাম- শামকে ধুয়ে মুছে ফেলছে, এই আর কী। পেছনের সিট থেকে আমার বয়সী খালাতো জেঠাশ হেসে খুন- জলিল ভাই, কী বললেন এটা? আমার চোখ তো ছানাবড়া। পিচ্ছি মেয়েকে বোঝানোর জন্যে যা-তা বলে দিয়েছিলাম। এবার বুঝি মান-ইজ্জত গেলো। সাথে সাথে ভুল স্বীকার করে বললাম- আমি আসলে হিন্দি বুঝি না। জেঠাশ আবার রাবি-র ইংরেজিতে মাস্টার্স। সেদিন ভুল স্বীকার করে ঐ গানের হিন্দি অর্থ বুঝে নিলাম। ভাগ্নি আমার দেখা হলে এখনও বলে- খালু, শাম হে ধুয়া ধুয়া। সবার মাঝে হাসির হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায় তখন।
মন্তব্য
বিয়ের পরে নেপাল গেছি।আমার হিন্দি জ্ঞান তথৈবচ।পোখারার ফেওয়া লেকে বোটিং করছি।নৌকা চালাচ্ছে ১০/১২ বছরের এক ছেলে।আমার ছবি উঠানোর খায়েশ হলো।আমি ছেলেকে বললাম-এই থুরা রওনা পরেগা।২/৩ বার বলার পর দেখি বউ হাসতে হাসতে কুটি কুটি।পরে বউয়ের হিন্দি জ্ঞান কল্যাণে মাঝলেকে নৌকা দাঁড় করিয়ে ছবি উঠানো হয়েছিলো।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
জলিল ভাই'র লেখা, রশীদ ভাই'র কমেন্ট দুইটাই মজার হইছে। হাম এক্কেবারে সাচ বাত বলতা হায়।
--------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এক বন্ধু কলকাতায় গেছে... কি এক কারনে মেজাজ খারাপ... টাঙ্গায় চড়ছে...
টাঙ্গাওয়ালা মাড়োয়ারী... হিন্দীতে জিগাইছে কোনদিকে যাবে... তা শুনিয়া বন্ধু হুট কইরা দ্বিধান্বিত... জবাব কি বাংলায় দিবে না হিন্দিতে দিবে? সোজা যাইতে বলবে না সিধা যাইতে বলবে? এদিকে চৌরাস্তা নিকটে... টাঙ্গাওয়ালা চাহিয়া আছে... বন্ধুটির মুখ ফসকিয়া বাইর হয়া গেলো সোদা... সোজা আর সিধা মিলায়ে ঝিলায়ে একাকার... কিন্তু তা হইলেও শান্তি ছিলো... সোদার 'স'টা অনেকটা 'চ'বর্গীয় শোনাইলো... টাঙ্গাওয়ালা টাঙ্গা থামায়া চাহিয়া রহিল...
আমার হিন্দিজ্ঞান হাস্যকরের চেয়েও একটু বেশি খারাপ... আমার আশপাশের লোকজন এই নিয়া মহা বিরক্ত...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মে আর কিয়া বলেগা ! পোষ্ট কে লিয়ে জলিল ভাইকে ধন্যবাদ দিয়েগা । টুটুল ভাই আর নজু ভাইকো কমেন্ট বহুত খাতারনাক হোগা ! ("হোগা" এখানে হিন্দি শব্দ বলিয়া বিবেচিত হইবে )
বেশ মজা করে লিখলেন। প্রথম কাহিনীটি জানা, এখনো বলে বেড়াই!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
দারুন লাগলো। প্রথম ঘটনাটি আগে জানা ছিল না।
আমি নিজে এক অক্ষরও হিন্দি বুঝিনা। কোনদিন বুঝতেও চাইনা। এত সুন্দর ভাষার মালিক আমরা সেইটাও ঠিক মতো জানা হলো না।
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
হিন্দি জ্ঞান বিষয়ে আপনার সঙ্গে তো বটেই, এবং নজরুল ইসলাম আর রায়হান আবীরের সঙ্গেও, আমার একটা জমজমাট প্রতিযোগিতা হতে পারে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
একদম আমার মনের কথা।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
আমি এই ভাষার ক্ষেত্রে গাধা পর্যায়ের চেয়েও নিম্নের অবস্থানে আছি। এই অবস্থায় একবার শারারা শারারা মে হ্যুয়্যা শারারা টাইপ একটা জোশ গানে বাজার সয়লাব। কলেজে গেলেই পুলাপাইনে এই গানের (আসলে নাচের) প্রশংসায় দংশমুখ(পঞ্চমুখের চেয়ে উঁচু মাপের প্রশংসা)। না পাইরা আমিও দেখতে বসলাম। বেশ মজাদার লাগছিল।
এরপর আর হিন্দি চর্চ্চা আগায় নাই। কালেভদ্রে সিনেমা দেখতে বসি, আন্দাজে যতটা বুঝা যায় ততটা বুঝি। কিন্তু গত বছর থেকে ঘটে গেল ধুন্দুমার কান্ড। মুন্না ভাই নামক জনৈক পুরুষ আমার পুত্রের মন হরণ করে নিলেন। সেই হরণের পর সারাদিন ঘরে মুন্না ভাইয়ের তেলেসমাতি চলে! ছেলে আমাকে টেনে এনে বসায়, বাবা মুন্নাভাই দেখ। আমিও দেখি। বুঝে না বুঝে দেখে যাই। এখন মোটামুটি সিনেমাটা আমার মুখস্থ। ফাঁকে ফাঁকে কয়েকটা হিন্দি সিনেমাও দেখা হয়ে গেছে। কিন্তু ভাষার জ্ঞান সেই শুন্যের কোঠায়ই রয়ে গেছে।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
যাক, আমার দলেও অনেক লোক আছে। সত্যি সত্যিই হিন্দি তেমন বুঝি না। আর শেখার ব্যাপারে আগ্রহও কম!
হিন্দিতে শুধু চুল বললে আমি বুঝি। আর একটা শব্দও বুঝি না
হিন্দি সিনেমা দেখি ইংলিশ সাবটাইটেল পড়ে পড়ে
০২
পটং পটং করে বুঝে না বুঝে ইংলিশ বলার যুগে একজনকে ডিপ্রেস্ড বলতে গিয়ে বলে ফেলেছিলাম পারভারটেড
তারপর ষোলো বছর ধরেও তাকে বোঝাতে পারিনি যে আমি তাকে বিকৃত বলিনি বলতে চেয়েছিলাম বিষণ্ন...
০৩
গ্রামের এক স্কুলে এক টিচারকে ইংলিশ পড়াতে দেখেছিলাম
দিস ইজ এ ফ্লাই- ইহা একটি উড়িতেছে
০৪
এক ইউএনওর মুখ থেকে শুনেছিলাম। নতুন ট্রান্সফার হয়ে এক উপজেলায় যাবার পরে একদিন বিকেলে এলাকার এক মোড়ল তার অফিসে ঢুকে বলল- ইউএনও সাব। আপনার বাসায় গেছিলাম। কিন্তু আপনাকে না পেয়ে ভাবী সাবের সাথে ইন্টরকোর্স (ইন্ট্রোডিউস) করে চা টা খেয়ে আসলাম...
০৫
ইন্ডিয়াতে গেলে আমি হাত পা নেড়ে সোজা সিলেটি ভাষা চালাই
কেউ বাড়ি জিজ্ঞেস করলে বলি শিলচর। আসাম
কারণ শিলচরের ভাষা সিলেটিই
ইন্টরকোর্স?
খাইসে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হা হা হা ! কেহই তো আমার থেকে বেশি জানে না দেখছি !
খুব মনোযোগ দিয়ে সেদিন সচলের কচলানো দেখছিলাম। ক্লাশ টু পড়ুয়া ছেলে আমার সেদিন টিভিতে হিন্দি সিনেমা দেখার মাঝামাঝি হঠাৎ আমার রুমে এসে সরাসরি প্রশ্ন, 'বাপি, পাসিনে মানে কী ?' এইটুকুন পুঁচকে ছেলের সবজান্তা পিতা হিসেবে এতোকালে সুনাম রক্ষায় তার কাছে তো আর পারসোনালিটি পাঙ্কচার করা যায় না ! খুব গম্ভীর ভাব নিয়ে বুঝিয়ে বললাম, যোগাসন দেখো নি ? পা-কে সিনার উপর তুলে আনা মানেই পাসিনে। সিনেমায় দেখোনি নায়কেরা কীভাবে ভিলেনের বুকের উপর পা তুলে ঢিসুম দিয়ে বিশ হাত দূরে ছুঁড়ে ফেলে !
ছেলে কী বুঝলো জানি না। চলে যাবার পর ভাবছি কাজটা কি ঠিক করলাম ! সচল তখন মাথায় উঠেছে। হিন্দি ভাষার ওয়েবসাইট খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। হঠাৎ দেখি পুঁচকে ছেলে আবার দরজায়। এবার সত্যি সত্যি ঘেমে উঠেছি। ঘর্মাক্ত আমার ঘাম দেখিয়ে ছেলে বলছে-
ড্যাড, ইয়ে পাসিনে কিঁউ ?
তবে কি ছেলে আমার কটাক্ষ করছে ? আমি আর উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখন ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আরে হিন্দু ভাষা খুবই সহজ। একটা শব্দের লগে "কেলিয়ে" লাগাইলেই সারা। যেমন, খানা+কেলিয়ে, এমনি হাত, দিল, আঁখি, সচলায়তন, হিমু, বসু, শেখ জলিল, মাহবুব মোর্শেদ, অরূপ, কনফুসিয়াস, নজরুল, কীর্তি, লীলেন, সচলের সবার নামের পরে "কেলিয়ে" যোগ কইরা দেন সব+কেলিয়ে সবকেলিয়ে বলতে সবার জন্য। এমন কয়েক মিলিয়ন উদাহরণ দিতে পারি। কিন্ত...
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
জুলিয়ান সিদ্দিকী কেলিয়ে তোফা!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
বেশ লাগলো লেখাটা।
আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে হিন্দি শিখেছিলাম "ত্রিশ দিনে হিন্দি শিক্ষা" ও অন্যান্য বই দেখে।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
ধন্যবাদ অমিত আহমেদ। তারপর, আছেন কেমন?
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
মজার পোস্ট আর সবার মজার কমেন্ট পড়ে আরো মজা পেলাম।
সবাই কী সুন্দর অন্য ভাষা পারে, ম্যায় তো কিসসু পারি না।
আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
পড়ার জন্য সৌরভকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
নতুন মন্তব্য করুন