অল্প বিদ্যা(ছবি তোলা পর্ব)

শেখ জলিল এর ছবি
লিখেছেন শেখ জলিল (তারিখ: বুধ, ০৯/০৭/২০০৮ - ৭:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১. শোনা ঘটনা
সবেমাত্র প্রশিকায় জয়েন করেছি। ১৯৯৫ সালের ঘটনা। আমার পোস্টিং তখন মাদারীপুর। অফিসের একাউন্টেন্ট পল্টু ভাই মাঝে মাঝে কাজের জন্য ঢাকা হেড অফিসে আসতেন। আর ফিরেই হেড অফিসের মজার মজার গল্প শোনাতেন। আমরা পল্টু ভাইয়ের ফেরার পর গল্প শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতাম। তার মুখ থেকে শোনা গল্পটি এরকম-

প্রশিকার কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মানিকগঞ্জের কৈট্টায় বিরাট অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন প্রশিকার নির্বাহী পরিচালক ড. কাজী ফারুক আহমেদ। চারদিকে সাজ সাজ রব। সংস্থার প্রধান বলে কথা! কৈট্টায় জড়ো হয়েছেন সব কর্মকর্তারা। ঢাকা অফিস থেকে ভিডিও-ফোটোগ্রাফি সেকশনের একটি দলও তাঁর সাথে আছেন। উদ্দেশ্য- এ স্মরণীয় মুহূর্তকে ক্যামেরায় ফিতায় ধরে রাখা। চলছে উদ্বোধন অনুষ্ঠান। খটখট ক্যামেরার সাটারের শব্দ। জ্বলে উঠছে ফ্লাস লাইট। ঝটপট স্টিল ছবি তুলছেন ক্যামেরাম্যান, হচ্ছে অনুষ্ঠানের ভিডিও। সব চলছে ঠিকঠাক।

দুদিন পর ক্যামেরাম্যানের কাছে স্টিল ছবি চাওয়া হলো। প্রচারের জন্য পত্রপত্রিকায় দিতে হবে। কিন্তু ক্যামেরাম্যান অপারগ। বললেন আসল ঘটনা। ঐদিন তার ক্যামেরায় নাকি কোনা ফিল্ম লোড করা ছিলো না। অথচ টপাটপ ফ্লাস লাইটে তুলেছিলেন অনেক ছবি। আর সেদিনকার ক্যামেরাম্যান ছিলেন রঙের মানুষ, ভবের হাট খ্যাত চিত্র ও নাট্য পরিচালক সালাহ উদ্দিন লাভলু। এই হলো বড়ো মানুষদের অল্প ভুলের কথা। সালাহ উদ্দিন লাভলু হয়তো কোনো সৃষ্টিশীল চিন্তায় মিস করেছিলেন সেই দিনকার ছবি তোলা। অবশ্য আমি যখন প্রশিকায় কাজ শুরু করি তখন আর তিনি সেখানে নেই। তাই তার মুখ থেকে শোনা হয়নি আসল ঘটনা।

২. বাস্তব ঘটনা
১৯৮৫ সালের ঘটনা। চার বন্ধু মিলে সিলেট বেড়াতে গেছি। একজন মেডিক্যালের, একজন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর দুইজন পলিটেকনিকের। আমার সেই পলিটেকনিকের বন্ধুর বন্ধুটির নাম এখন আর মনে পড়ছে না। ধরা যাক তার নাম শহীদ। বেড়ানোর শুরুতে শর্ত ছিলো- যাই খরচ হোক সবাই মিলে শেয়ার করবো। শর্ত মোতাবেক আমি একটি ফিল্ম ও একজোড়া ব্যাটারি কিনলাম শহীদ-এর ক্যামেরার জন্য। সবার মনে আশা- ছবি তুলে আমাদের ভ্রমণকে রঙিন ফ্রেমে বেঁধে রাখবো। শুরু থেকেই সকল দর্শনীয় স্থানের ছবি তুলতে থাকলাম ক্যামেরায়। একে একে সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান, শাহ জালাল, শাহ পরানের মাজার, জাফলং চা বাগান, পাথুরে নদী, খাসিয়া পল্লী কতো ছবি যে তুললাম ইয়ত্ত্বা নেই। খাসিয়া পল্লীতে বিনা অনুমতিতে মেয়েদের ছবি তুলতে গিয়ে শহীদ তো একবার খাসিয়াদের দা হাতের তাড়া খেয়ে দৌড়ে আমাদের কাছে ছুটে এলো। পরে অবশ্য কলেজ পড়ুয়া এক খাসিয়া ছেলের সাহায্যে সেটা মীমাংসা করা গেলো। ছোট্ট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কিছু ছবিও তুললাম তাদের আঙিনায়।

সে যাই হোক, ঘোরাঘুরি শেষে ফিরে এসেছি সিলেটে। রাত্রিযাপন করলাম সিলেট পলিটেকনিক ছাত্রাবাসে। সকালে ক্যামেরা নিয়ে শহীদ উধাও। দেদারছে ছবি তুলছে পলিটেকনিক বন্ধুদের সাথে। এদিকে ফিল্মও প্রায় শেষ। আমার মন খচখচ করতে লাগলো। শহীদ রুমে ফিরে এলে বললাম ক্যামেরাটা আমাকে দিতে। সে তার নিজের ক্যামেরা অন্যের হাতে দেবে না। বললাম- ফিল্ম কিনলাম আমি, এবার নিজেরও একা কিছু ছবি তুলবো। কিন্তু সে কিছুতেই দিতে রাজি নয়। তখন বললাম- তাহলে আমার ফিল্ম ফিরিয়ে দেয়া হোক। সে আবার বলে- দেয়া যাবে না। আমার খুব রাগ হলো। গো ধরলাম আমাকে দিতেই হবে। রাগে সে ঘোঁতঘোঁত করতে লাগলো। এক পর্যায়ে ক্যামেরা থেকে ফিল্ম টেনে বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।

খোলা ফিল্ম হাতে নিয়ে আমি রুমে ফিরে এলাম। আমার অন্য বন্ধুরা বললো- কী করেছিস এটা! সব ছবিই তো নষ্ট হয়ে গেছে। আমি বোকা বনে গেলাম। আসলে ছবি তোলা, ফিল্ম ওয়াশ করা সম্বন্ধে তখন কিছুই জানতাম না। মনকে প্রবোধ দেয়ার জন্য পলিটেকনিক চত্বরের কাছ থেকেই ঝটপট নৌকায় সুরমা পাড়ি দিয়ে চলে গেলাম স্টুডিওতে। সেখানে দেখানোর পর তারা বললেন- উন্মুক্ত আলোতে সব ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। আমার মন এতো যে খারাপ হলো বুঝানো যাবে না। ফোটোগ্রাফি সম্বন্ধে অল্প জ্ঞানের জন্য নিজেকে খুব ধিক্কার দিতে লাগলাম। ফিরতি পথে অবশ্য শহীদের সাথে আর একটি কথাও বলিনি। ময়মনসিংহ ফিরেই ঢাকা থেকে এক বন্ধুর মাধ্যমে আনালাম ইয়াসিকা-এমএফ২। সেটাই আমার জীবনের প্রথম ক্যামেরা। সেই থেকে শুরু হলো সৌখিন ফোটোগ্রাফি। বর্তমানে ঘরে আছে এসএলআর ক্যামেরা- নাইকন এফএম১০। আর ঘরে যে সমস্ত ছবি বাঁধাই করা আছে- বাচ্চাদের ছোটোবেলার ছবি, বউয়ের ছবি সবই এই অধমের নিজের হাতে তোলা।


মন্তব্য

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হি হি হি খাইছে আমারো ছবিতোলা রোগ আছে, কিছু একটা হলেই সেই মুহুর্ত ধরে রাখার জন্য ছবি তুলতে হবে, সেটা যত ছোট ব্যপারই হোক। আমি প্রচুর ছবি তুলি আর ডিজিটাল ক্যামেরা হওয়াতে উলটা পালটা ছবি ওঠা নিয়ে চিন্তা করতে হয়না। হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

শেখ জলিল এর ছবি

ধন্যবাদ মুশফিকা মুমু।
আমি এখনও ম্যানুয়ালেই আছি। ডিজিটাল কেনার সাধ অনেক দিনের।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ফিল্ম ইস্কুলে আমাদের এক সহপাঠীকে আমরা ডাকতাম অডিও ক্যামেরাম্যান
তিনি নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে ভিডিও ক্যামরা নিয়ে ডকুমেন্টারি বানাতে গেছে চলনবিলে

পুরা দিন চলন বিল ঘুরে। গাড়ি কাদায় মাদায় ডুবিয়ে বইয়ে পড়া বিদ্যা দিয়ে ক্যামেরায় ক্যারিকেচার করে শুট করে ঢাকায় ফিরে প্যানেলে ঢুকিয়ে দেখেন পুরা ক্যাসেট জুড়ে খালি সা সা শব্দ আর পাখিটাখির ডাক

একটা ফ্রেমও ছবি নেই
পরে জানা গেলো উনি ক্যারিকেচার করতে করতে ক্যামেরার ভিডিও রেকর্ডিং অপশনটাই নষ্ট করে ফেলেছিলেন

০২

একবার এক এনজিও খোয়াড়ে তিন সপ্তা ছিলাম বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার আরো ২০টা গরু রাখালের সাথে

সেখানে মেয়ে ১২টা। আর আছে একজন আজাদ
কারো সাথেই কারো পরিচয় নেই। কিন্তু প্রথম দিন সকালেই আজাদ গিয়ে মেয়েদের রুমে হাজির- মেয়েরা টাই পরিয়ে না দিলে সে ঠিকমতো টাই পরতে পারে না...

আজাদের সাথে সব সময় একটা ক্যামেরা। চাস্ন পেলেই পুটুশ পুটুশ করে খালি মেয়েদের ছবি তোলে আর মেয়েদের পাশে বসে ছবি তুলতে চায়
একদিন গেলাম পিকনিকে। সেদিন আজাদ নিয়ে গেলো চার সেট পোশাক। একেকবার চেঞ্জ করে আর মেয়েদের সাথে গিয়ে ঠুসঠাস ছবি তোলে

মেয়েদের সাথে ১০০০ টাকার চুক্তি করলাম আজাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য
আজাদের রুমমেটকে ৫০০ টাকা দিয়ে ওর সবগুলো রিল টেনে বের করে আবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে রাখলাম

পরে আজাদ ঘটনাটা জেনে আমাকে খুন করার জন্য খুঁজছিল বহুদিন

শেখ জলিল এর ছবি

পোস্টের সাথে এরকম মন্তব্য উৎসাহ দেয়। ধন্যবাদ কবি।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

কীর্তিনাশা এর ছবি

কিছু ছবি পোস্ট দেন না জলিল ভাই!

---------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

শেখ জলিল এর ছবি

সময় করে দেবো। সচলে ছবির জন্য স্পেস খুব কম!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

নিরিবিলি এর ছবি

ছবি তোলা আমার ধাচের কাজ না। কিন্তু মামা, খালার বিয়েতে ক্যামেরা আমার হাতেই ঘুরে ফিরে। আবার ছবি বাজে হলে বকাও ফ্রি মিলে। যাই হোক,ছবি দেন কয়েকটা দেখি।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার প্রথম ক্যামেরা ছিল নাইকন এফএম১০। আর কেউ ম্যানুয়াল ক্যামেরা ব্যবহার করে না, তাই শুধু নিজেই যা তোলার তুলতাম ছবি। একবার ফ্লোরিডা যাবার পথে ট্রাইপডে দাঁড় করালাম। বাতাসে ফেলে ভেঙে দিল। সেই দুঃখ ভুলতে পারি না আজও। এরপর অনেক দাম দিয়ে আরেকটা এসএলআর কিনেও সেই প্রথম ক্যামেরার সুখ পাইনি। অতঃপর পয়েন্ট-অ্যান্ড-শুটে ঠুশঠাশ শুটিং, আর ফোসফাস দীর্ঘশ্বাস।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমারও প্রথম ক্যামেরা নাইকন এফএম১০। এতই প্রিয় ছিলো যে ডিজিটাল যুগ আসনের পরে বহুদিন ছবি তোলাই বন্ধ রাখছিলাম।
সেদিন অফিস ঘেঁটে পাওয়া গেলো আমার তোলা এক বাক্স ছবি... আহ্...

তার বহু আগে আমারে বাংলাদেশ স্কাউট প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড দিলো... বালক বয়সে সেইটাই বড় কৃতিত্ব... আমার চেয়ে আমার মেজো ভাইয়ের আনন্দ বেশি। আমি তো জাম্বুরিতে গিয়া বইসা আছি... অনুষ্ঠানের দিন দুপুরে সে রিজার্ভ বেবিট্যাক্সি নিয়া গাজীপুরে হাজির... আমার এই বিরাট কৃতিত্বের ছবি তুইলা রাখবো... তুললোও... কিন্তু পরে দেখা গেলো অধিক উত্তেজনায় ফিল্ম ঠিকমতো লোড করে নাই বইলা ছবি ওঠে নাই একটাও...

সেই মেজোভাই এখন আমার জন্য এসএলআর কিনছে... নিউইয়র্ক থেকা ঢাকায় আসতে যা দেরী।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।