জায়গীরনামা- নয়

শেখ জলিল এর ছবি
লিখেছেন শেখ জলিল (তারিখ: শুক্র, ০১/০৮/২০০৮ - ১০:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাত নম্বর বিল্ডিং-এর জায়গীর জীবনের সুখ বেশিদিন সইলো না। নতুন পরিবেশে নিজেকে যখন খাপ খাইয়ে নিয়েছি তখনই বিপর্যয় নেমে এলো। আমার মনটা কেমন উড়ু উড়ু হয়ে গেলো। এ যেন সুখে থাকতে ভূতে কিলোনোর মতো অবস্থা। নাহলে স্টাফ কোয়ার্টারের কিউটপ বাসাটাও আমাকে ছাড়তে হলো! রক্তের সম্পর্ক না থেকেও এমন মামা-মামীর সংস্পর্শ একদিন আমাকে ছেড়ে আসতে হলো। জয়নূলকে পড়ানো বা অন্যদেরও কিছুটা দেখানো তেমন কষ্টকর ছিলো না আমার কাছে। এ যেন সেই ভাগ্যের লিখন পারিনি খণ্ডাতে যারে শত চেষ্টায়!

সামছু ভাই ছিলেন পাশের কিউআর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। সিনিয়র এই ভাইয়ের সাথে বেশ সখ্যতা হয়েছিলো পাশাপাশি বসবাসের কারণে। মাঝে মাঝে আমাদের ঐ বাসায় আসতেন। আমাকে লোভ দেখাতেন এর চেয়ে আরও ভালো জায়গীরের। এদিকে ফজলু মামার সংসারের অবস্থাও ভালো না। সাবলেট হালিম ভাই চলে গেছেন অন্যত্র। সংসারে টানাপোড়েন লেগেই আছেন। ফজিলা, ফিরু বড়ো হচ্ছে। পড়াশোনার খরচ বাড়ছে। তাছাড়া বড়ো ছেলে জয়নূলের স্বভাব হয়ে যাচ্ছে বাউণ্ডুলের মতো। পড়াশোনায় মনোযোগ নেই তার। সংসারের খরচ সামালানোর জন্য পূনরায় এক রুম সাবলেট দিলেন। এবার এলেন চাকরিজীবি দুইজন- আসাদ ভাই ও ফিরোজ ভাই।

আসাদ ভাই ব্যাংকে চাকরি করেন। অবিবাহিত মানুষ। সারাদিন চাকরি শেষে সন্ধ্যাবেলা ফ্রি থাকেন। মামী-মামীর সাথে নানান গল্প করেন। ধীরে ধীরে আসাদ ভাই মামা-মামীর প্রিয় পাত্র হয়ে গেলেন। ফজিলা-ফিরুকে এখন আসাদ ভাই পড়ান। আমার আর পড়ানোর প্রয়োজন থাকলো না। শুধু জয়নূল এবং একেবারে ছোটো ক'টিকে একটু দেখালেই হতো। ওদিকে জয়নূল আবার সারাদিন ঘোরাঘুরিতেই ব্যস্ত। তার সময়ের সাথে টিউশনি শেষে আমার সময় মিলানো কষ্টকরকর হয়ে গেলো। জয়নূলের পড়াশোনার এমন অবস্থায় মামা-মামী আমার প্রতি কিংবা জয়নূল কারো উপরই সন্তুষ্ট থাকতে পারলেন না। এমতাবস্থায় বাসায় আসাদ ভাইয়ের কদর গেলো বেড়ে।

এদিকে আমারও বন্ধুবান্ধবদের সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকা কলেজ পড়ুয়া একদল ছেলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেলো। বাসার নিচ থেকে তারা আমার নাম ধরে জোরে জোরে ডাকে। প্রায় প্রতিদিন ঘর থেকে বেরিয়ে যাই আমি। মামা-মামী ভালো মানুষ- কিছুই বলেন না তারা। আমার এ উন্নতি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেন। বন্ধুদের সাথে আমি আড্ডা দেই, একযোগে ফুটবল খেলি। মাঝে মাঝে চলে যাই ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে। সবাই মিলে চুটিয়ে গল্প করি। লেকের পানিতে সাঁতার কাটি, গোসল করি। সারা বিকেলের রোমান্টিক ভাবনা শেষে সন্ধ্যেবেলা বাসায় ফিরে পড়াতে বা পড়তে বসি। কোনো কোনোদিন ফেরার পথে সবাই মিলে 'ঐ রাত ডাকে ঐ চাঁদ ডাকে, হায় তুমি কোথায়' গানটিকে প্যারোডি করে গাই- 'ঐ আজমুল ডাকে ঐ পল্টু ডাকে, হায় সালমা কোথায়'। স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় সালমা নামের মেয়েটির বহুমুখী প্রেম খুব মুখরোচক গল্প ছিলো বন্ধুদের মাঝে। তবে আড্ডার ভালো ফলও এসেছিলো আমাদের মাঝ থেকে। বাংলাদেশ হ্যান্ডেলিং সোসাইটি বা বিএইচএস নামক হাসিঠাট্টার শব্দভাবনার মাঝ থেকেই আমাদের দলটি স্টাফ কোয়ার্টারে প্রতিষ্ঠিত করে 'কল্পতরু সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ'। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে আমরা ১৯৮৩ সালে প্রথম একুশের অনুষ্ঠান করি এবং সংকলন বের করি। 'পত্রমুকল' নামক সে সংকলনেই বের হয় ছাপার অরে আমার প্রথম কবিতা 'পূর্ণতা দাও'।

ফজলু মামার মেয়েগুলো যে বড়ো হচ্ছে তা বন্ধুদের চোখও এড়ায় না। তারা ফজিলা-ফিরু সম্পর্কে আমার কাছে জিজ্ঞেস করে। কেউ কেউ বলে- ওদের কাউকে আমার ভালো লাগে কিনা? ফজিলার কথা উঠলে চুপ করে থাকি। হ্যাঁ কিংবা না কোনোকিছুই বলি না। কিন্তু ফিরুর কথা উঠলে বলি ওদের খালাতো ভাই সেলিমের কথা। এ ব্যাপারটা দেখি আমার আগে বন্ধুবান্ধবরাই জানে বেশি। সেলিম ভাই, ফিরুর মেলামেশার ব্যাপারটা স্টাফ কোয়ার্টারে বেশ রটেছিলো তখন। এদিকে এসব আলোচনায় যেটা তি হলো আমি বোধ হয় ফজিলার প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লাম।

আমার ছাত্রী লিমার ব্যাপারটা জেনে ফেলার পর এমনিতেই মনটা অনেক ফাঁকা ছিলো। সবসময় মন চাইতো সে শূন্যস্থান পূরণ করতে। তাই ঘরে ফিরে ফজিলাকে এক নজর ভালো করে না দেখলে মনটা কেমন যেন ছটফট করতো। অকারণে ওর সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করতো। কিন্তু সত্যিকারেই শান্ত, ভদ্র, ভালো মেয়ে ছিলো ফজিলা। খুব বেশিদূর এগুনো হলো না আর। এদিকে আমার এ অস্বাভাবিক আচরণ মামা-মামীর নজরে এসেছিলো কিনা কে জানে! তবে আগের চেয়ে সৌহার্দ্য ভাবটা কমে এলো বাসার পরিবেশে। যখন তখন আমার নাম ধরে মামা-মামীর ডাকাডাকি গেলো কমে ।

ফজলু মামার বাসায় খাবারের কষ্ট এবং অতিরিক্ত চাপ তো ছিলোই। তদুপরি বাসায় কিছুটা গুমোট ভাব। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না মামা-মামী আমাকে জায়গীর রাখতে চান কিনা? এ ব্যাপারটা আমার বন্ধুবান্ধরাও জেনে গেলো। বিশেষ করে ক্লাসমেট লুৎফর ও ইশতিয়াক আমাকে খুব খেয়াল করতো। টাকা-পয়সার সমস্যায় পড়লে লুৎফরের কাছে কতো যে ধার নিয়েছি সে হিসেব বলতে পারবো না! কোনোদিন ভুলেও সে টাকা ফেরত চায়নি। আর খাবারদাবারের কষ্ট দেখে ইশতিয়াক বাসায় ডেকে নিয়ে খাওয়াতো। ওর আম্মা পাশে বসে বেশ যত্ন করে করে খাওয়াতেন। আমার সব কুশল, বাড়িতে বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেন। মাঝে মাঝে ইশতিয়াকের ছোটো বোন লতা দূর থেকে উঁকিঝুঁকি মারতো। ওদিকে খেয়াল করতে গিয়ে অনেক সময় আমি বিষম খেতাম। ইশতিয়াকের আম্মা পানির গ্লাস এগিয়ে দিতো তাড়াতাড়ি- পানি খাও বাবা, পানি!

ওদিকে পাশের বাসার সামছু ভাই তো আমার পিছনে লেগেই ছিলো। নানান মিষ্টিকথায় লোভ দেখাতে লাগলো সে নতুন জায়গীরের। সেখানে তেমন পড়াতে হবে না, খাওয়া-দাওয়াও বেশ ভালো। এসব শুনতে শুনতে আমার মন বোধ হয় কিছুটা নরম হয়েছিলো। হঠাৎ একদিন মামা-মামীকে অবাক করে দিয়ে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানালাম। শুনে মামা-মামী আমার মুখের দিকে অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইলেন। আবার না-ও করলেন না। আমি চলে গেলাম নতুন জায়গীর জীবনে। একই কোয়ার্টারের বারো নম্বর বিল্ডিং-এর ভি নম্বর বাসায়।

গ্রীনরোড স্টাফ কোয়ার্টারে আমার দ্বিতীয় জায়গীরজীবন শুরু হলো। জায়গীরদাতা সাখাওয়াত সাহেবের বাড়ি সাতক্ষীরায়। সচিবালয়ে চাকরি করেন, মোটামুটি ভালো আয়। নিয়মিত নামাজ পড়েন, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ পীর সাহেবের ভক্ত। ভদ্রলোকের পাঁচ মেয়ে, দুই ছেলে। ছোটো ছেলে বকুল আমার সমবয়সী। ঐ বাসায় পড়াতে হতো বকুলের ছোটো দু'বোন লাকি এবং আঁখিকে। লাকির বয়স তেরো-চৌদ্দ, পড়ে ক্লাস নাইনে। দেখতে যেমন কালো তেমন মোটাসোটা। প্রথম দর্শনেই বলতে ইচ্ছে করছিলো- কোন্ দোকানের চাল খাও বাবা? আঁখি হালকা-পাতলা, গায়ের রং ফর্সা, সুশ্রী। পড়ে ক্লাস ফাইভে। আঁখির আঁখি দুটি সত্যিই খুব সুন্দর ছিলো!

এইচএসসি পরীক্ষার ঠিক আট-নয় মাস আগে ঐ বাসায় জায়গীর যাই। নিজের পড়াশোনা এবং লাকি-আঁখিকে পড়ানোর চাপে আমার কাহিল অবস্থা। তাছাড়া পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য টিউশনিতো আছেই। বারান্দার যে রুমটাতে আমি ও বকুল থাকি সে রুমটাতে ভীষণ গরম। সাত নম্বর বিল্ডিং-এর মতো এ বাসাটা অতো খোলামেলা না। সামনের বছর মে মাসেই এইচএসসি পরীক্ষা। রাত জেগে পড়াশোনা ছাড়া আমার কোনো উপায় রইলো না। কান্তিতে মাঝে মাঝে পড়াশোনায় অবহেলা করি। এ ব্যাপারে বকুল ছিলো খুব সজাগ। নিজে তেমন না পড়লেও সে আমাকে পড়াশোনায় বেশ তাগাদা ও উৎসাহ দিতো। কোনো কোনো সময় বলতো- এরকম পড়লে কিন্তু ফার্স্ট ডিভিশন কপালে জুটবে না।

আমার কপালই বোধ হয় খারাপ ছিলো। যে বাসায়ই জায়গীর যাই সেখানেই জনস্রোত লেগেই থাকে। স্টাফ কোয়ার্টারের দু'রুমের এ ছোট্ট বাসায় আর কতোজনই বা থাকা যায়! হঠাৎ করে হাজির হলো বকুলদের এক মামাতো বোনের স্বামী। তিনি ঢাকাতে থেকে পড়ালেখা করবেন। ভর্তি হলেন ঢাকা কলেজে বিকম-এ। বকুলের আম্মার নিজের ভাইয়ের মেয়েজামাই বলে তার উপর আলাদা টান ছিলো। তাছাড়া বকুলের মামাতো বোনের বিয়েটাও হয়েছিলো তাকে পড়াশোনায় সহযোগিতা করবে বলে। সুতরাং আমি পড়লাম বেকায়দায়। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। আমাকে না-ও করতে পারছেন না। আবার বকুলের মা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণও করতে পারছেন না। সব কিছু চোখ বুঁজে সহ্য করে চালাতে লাগলাম পরীক্ষার পড়াশোনা।

কয়েকদিনের মধ্যে বকুলদের নতুন আত্মীয়ের সাথে আমার বেশ ভাব জমে গেলো। আমার নামে নাম ছিলো বলে তাকে মিতা বলে ডাকতে লাগলাম। মোদ্দা কথা আমরা দুজন ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। একসাথে ঘুরতে যাই, আড্ডা দেই, গল্প করি। তখনকার দিনে স্টাফ কোয়ার্টারের ঘরে ঘরে সাদাকালো টেলিভিশনও তেমন ছিলো না। আমরা দুজন বুধবার হলেই টারজান সিরিজ দেখার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে যাই। হেঁটে হেঁটে চলে যাই ধানমণ্ডি তিন নম্বর রোডে মিতার পরিচিত এক বাসায়। ধানমণ্ডির গাছপালা, ছায়াঘেরা নিটোল পরিবেশে বড়লোকদের সেই বিশাল একতলা বাড়িগুলো এখনও ছবির মতোন স্মৃতিপটে ভাসে আমার।

ওদিকে সাত নম্বর বিল্ডিং-এর পুরনো জায়গীরদাতা ফজলু মামার বাসায় অনেকদিন যাওয়া হয় না। পড়াশানোর ও পড়ানোর চাপে এমিনতেই চ্যাপ্টা হয়ে আছি। সামনে পরীক্ষা, কার খবর কে রাখে? হঠাৎ করেই একদিন খবর পেলাম- আজ ফজিলার বিয়ে। মনটা অস্থির হয়ে উঠলো। ওদের বাসায় যাবো বলে মনস্থির করে দাঁড়িয়ে আছি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে। ভাবছি কার সাথে বিয়ে? এমন সময় বন্ধু, কাসমেট ইশতিয়াক এসে বললো- ওদের বাসার সাবলেট আসাদ ভাইয়ের সাথে। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো আমার কাছে। কেন আসাদ ভাই ফজিলাকে যত্ন করে পড়ানো শুরু করেছিলো। কেনই বা মামীর দরদটা আসাদ ভাইয়ের উপর একটু বেড়ে গিয়েছিলো।

সন্ধ্যার সময় ফজিলাদের ওখানে যখন ঢুকলাম তখন লোকে লোকারণ্য সমস্ত বাসা। খালাতো, মামাতো, চাচাতো সম্পর্কের সবাই দেখি এসে হাজির। এতো কিছু আর আমি কিছুই জানি না! ফজিলার চাচাতো বোন সালমার নাচানাচি দেখে একটু অবাকই হলাম। ছোটোবোনের বিয়ে হচ্ছে অথচ ওকে দেখে মনে হচ্ছে বরের শালীস্থানীয় কেউ হবে হয়তো। সরাসরি চলে গেলাম ফজিলাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেই ঘরে। খুব সেজেগুজে বসে আছে ফজিলা। পাশে সায়মা, আসমা ও স্টাফ কোয়ার্টারের কিছু ছোটো ছোটো মেয়েরা হাসাহাসি করছে। আমি ফজিলার দিকে এমন দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে রইলাম যে চমকে উঠে চোখ সরিয়ে নিলো ও। পাশ থেকে আসমা আমাকে বসতে বললো। আমি বললাম- না যাই, শুধু ফজিলাকে দেখতে এসেছিলাম। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবলাম- আহা! প্রেম কতো না মধুর, কতো না বেদনাবিধূর!

যখন বিপদ আসে তখন লাইন ধরেই বোধ হয় আসে! ফজিলার বিয়ের কিছুদিন পরের ঘটনা। বারো নম্বরের জায়গীরজীবনে আমি দারুণ পরিশ্রম করছি। সামনে এইচএসসি পরীক্ষায় যে করেই হোক আমাকে ভালো করতে হবে। এর মধ্যে হঠাৎ করে খবর ভূতের গলি থেকে ফজলু মামার বড়ো ভাই সবুর সাহেব আমাকে ডেকেছেন। এর আগে আমার পিঠাপিঠি বড়ো ভাইকে ওদের বাসায় জায়গীর করে নিয়েছিলো ওরা। ঐ ভাই তখন আমাদের পাশের গ্রামের শিক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সাহেবের 'সাপ্তাহিক মানচিত্র' পত্রিকায় কাজ করেন। খন্দকার মাকসুদুর রহমান স্যার আজিমপুরের অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ফজলু মামার বাসায় থাকাকালীন ওরা অনুরোধ করেই ভাইটিকে জায়গীর করে নিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য- সালমা এবং সায়মাকে পড়ানো। আমি প্রথমেই না-ই করেছিলাম। কারণ ঐ ভাই জায়গীর জীবনে অতোটা অভ্যস্ত ছিলো না। একদিকে সালমার সবসময় প্রেমে পড়ি পড়ি ভাব আর আমার ভাইয়ের মজনু স্বভাবে কিছুটা আতঙ্কিত ছিলামও বৈকি!

সারা রাস্তায় যেসব চিন্তা করতে করতে ভূতের গলি সবুর সাহেবের বাসায় ঢুকলাম- বাস্তবেও পেলাম ঠিক তাই। ঢুকেই দেখি রীতিমত সালিশ বসেছে বাসায়। পাশের বাসার ইঞ্জিনিয়ার হাশেম সাহেব এসেছেন। এক পাশে ঘরের কোণে আমার ভাইটি বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমাকে দেখে সবাই শশব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
ইঞ্জিনিয়ার হাশেম সাহেব গলা চড়িয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠলেন -হারামজাদার এতো বড়ো সাহস, আমার ভাতিঝির দিকে হাত বাড়ায়? ছোটোলোক কোথাকার, বামন হইয়া চাঁদের পানে হাত বাড়াও!
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- যাও, তোমার ভাইকে এখ্খনি নিয়ে যাও। আর কোনোদিন যদি এ বাড়ির দিকে পা বাড়ায় মেরে লাশ বানিয়ে দেবো।
আমি সবুর সাহেব এবং তার স্ত্রীর দিকে তাকালাম। সালমাকে কোথাও দেখা গেলো না। ওদের চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝলাম তাদের সম্মতিতেই এসব হচ্ছে। আর কোনো কথা না বলে ভাইকে নিয়ে রওনা হলাম স্টাফ কোয়ার্টারের বারো নম্বর বিল্ডিং-এর দিকে।

সদর রাস্তায় এসে দেখলাম ভাইয়ের চোখমুখ ফোলা। আমার হাতে ধরে হাঁটছে আর কাঁদছে। মনে হয় কিলঘুঁষিও জুটেছে কপালে। আমার মনে তখন দারুণ ক্রোধ। রাগ হচ্ছে বড়ো ভাইটির উপর। আবার তাকে জিজ্ঞেস করলে ঘটনার সে সে কিছুই বলছে না আমার কাছে। ঐদিনই তাকে পাঠিয়ে দিলাম মানচিত্র পত্রিকা অফিসে। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম- সুযোগ এলে সালমার বাবা-মাকে এর দাঁতভাঙা জবাব আমি নিজেই দেবো একদিন!

০১.০৮.২০০৮

জায়গীরনামা- এক
জায়গীরনামা- দুই
জায়গীরনামা- তিন
জায়গীরনামা- চার
জায়গীরনামা- পাঁচ
জায়গীরনামা- ছয়
জায়গীরনামা- সাত
জায়গীরনামা- আট


মন্তব্য

সৈয়দ আবু তাহের মুহম্মদ মনিরুজ্জামান মুনির (জজ মিয়া) এর ছবি

আপনি সালমাকে উচ্চ মাত্রার যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে করে তার মা-বাবাকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে পারতেন। খুব চমৎকার লিখেছেন। কিপ ইট আপ।

শেখ জলিল(লগ অফ) এর ছবি

তা যা বললেন আর কি!
বি.দ্র. যৌতুকের বিরোধিতা করি বলেই ছাত্রাবস্থায় এতো কষ্টের মধ্যেও বিয়ে করিনি।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- অগ্রনী স্কুলের কথায় পুরানো একটা ক্ষতে হালকা খোঁচা পড়লো মামু।
জায়গীরনামায় ভক্ত হয়ে গেছি আগেই। বলা হয়ে ওঠে না।
চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

দাদা রে, আমি তো এই সিরিজের পরতে পরতে খোঁচা খেয়ে যাচ্ছি! খাইছে


রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍এই সিরিজটি সানন্দেই পড়ি। ভালোও লাগে, সে-কথা বলেছি একাধিকবার। এবার বলি আমার একটি খারাপ-লাগা বা আপত্তির কথা।

প্রচলিত দৃষ্টিতে কম সুন্দরী বা অসুন্দরী মেয়েদের চেহারার বর্ণনার সময় ভাষা ব্যবহারে আপনি কিছুটা অসংযত। গত এক পর্বে পড়লাম, কোনও এক মেয়ের সাদা হাতে "ভেড়ার মতো লোম"। আজকের পর্বে "দেখতে যেমন কালো তেমন মোটাসোটা"। আমার কাছে এগুলো আপত্তিকর মনে হয়েছে বলে জানিয়ে রাখলাম।

আমার মন্তব্যে আপনি ক্ষুণ্ণ হলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। বক্তব্যটি নেহাতই আমার।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

শেখ জলিল(লগ অফ) এর ছবি

আসলে সমস্ত জায়গীরনামার ভাষা ঋজু, সরল এবং সত্যনিষ্ঠ রাখার চেষ্টা করেছি। সেক্ষেত্রে উপস্থাপকের ভালোলাগা না লাগাটাও এসেছে সরাসরি। কোনো পর্বেই কোনোরকম ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কিছু বলা হয়নি।

গত এক পর্বে পড়লাম, কোনও এক মেয়ের সাদা হাতে "ভেড়ার মতো লোম"।

..এখানে কন্যাটিকে রূপবতী, কেশবতী হিসেবে দেখানোর পর তাকে কেন উপস্থাপকের ভালো লাগেনি কারণ দর্শানোর জন্য এসেছে 'ভেড়ার মতো লোম'। লেখকের কোনো দায়বদ্ধতা রাখা হয়নি।
পরবর্তী পর্বে
দেখতে যেমন কালো তেমন মোটাসোটা"।

..কথাটিকে শৈল্পিক উপায়ে প্রদর্শন করা যেতো।
জায়গীরনামায় দেখবেন গল্প বা উপন্যাসের কোনো শৈল্পিক রীতিই অনুসরণ করা হয়নি। সেজন্য কোনো বর্ণনায় এরকম অসংযত, সরাসরি বক্তব্য পাবেন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত।
সংসারে এক সন্ন্যাসীর মতো বিদগ্ধ পাঠক ও সুলেখকের মন্তব্য আমার লেখা আরও শানিত করবে বলে আশা রাখি। পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশের সময় এ বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল থাকবে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সহজ ভাষায় লেখা এই সিরিজটা ভাল লাগছে খুব। পড়লে মনে হয় যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে অনেক অদেখা-অজানা ঘটনাবলী।

তবে সন্ন্যাসীদার উল্লেখ করা বিষয় সম্পর্কে আমি পুরো একমত। মোটামুটি কম সুন্দর মেয়েদের বর্ণনায় আরেকটু যত্নবান হলে মনে হয় ভালো হতো।

পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ...

আলমগীর এর ছবি

ফাডায়া হালান।

আকতার আহমেদ এর ছবি

পড়ছি.. চলুক

রাফি এর ছবি

আপনি কী জানেন কত সহজ ভাষায় জীবনের কঠিন সত্য কথাগুলো আপনি তুলে আনছেন?
যতই পড়ছি মুগ্ধ হচ্ছি।।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
ইঞ্জিনিয়ার হাশেম সাহেব গলা চড়িয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠলেন -হারামজাদার এতো বড়ো সাহস, আমার ভাতিঝির দিকে হাত বাড়ায়? ছোটোলোক কোথাকার, বামন হইয়া চাঁদের পানে হাত বাড়াও!

সব মুরুব্বীরাই ভাবেন যে, তাদের কন্যা রত্নটি চাঁদের মতই মাহার্ঘ্য। এ তেমন দোষের নয়। তবে কেউ যখন দোকানের কর্মচারির সঙ্গে ভেগে যায় তখন কিছুটা ধারণা পাল্টায়।
*******
আমার বেয়াইন সম্পর্কের এক বালিকাকে একবার বলেছিলাম- তুই রাজি থাকলে তরে বিয়া কইরাই সংসার পাতি!
বালিকা বেয়াইনটি বলেছিলো- আপনের কাছে বিয়া দেওয়ার লাইগ্যাই আমারে আমার বাপ-মায় পালতাসে না!

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

স্নিগ্ধা এর ছবি

এত মন্তব্য করি, তারপরও অনেক পছন্দের লেখায় দেখি করে ওঠা হয় নি! বিশেষ করে তা যদি হয় পর্বে বিভক্ত, এক পর্বের মন্তব্যে কি লিখবো ভাবতে ভাবতেই পরের পর্বে মশগুল হয়ে যাই হাসি

আপনার এই সোজাসুজি ভাবে বলা কথাগুলো পড়িয়ের কোথায় গিয়ে জমা হয়ে থাকে, আশা করি এতদিনে আপনার কাছে তা খুব পরিস্কার? আপনার লড়াই, হারজিত, ত্যাগ, প্রাপ্তি, এবং সেগুলোর বর্ণনা - সবই চমৎকার!

কিন্তু এত কিছুর পরও একটা অভিযোগ না করে পারছি না। আমাদের (উপমহা)দেশে রূপ নিয়ে, বিশেষত মেয়েদের রূপবিচার নিয়ে কিছু পক্ষপাতদুষ্টতা আছে। এ লেখাও তার ব্যতিক্রম নয়। লাকি/আঁখি দুটি চরিত্র, তাদের পড়ানো হবে। কিন্তু লাকির চেহারা সম্পর্কে অমন পরুষ বর্ণনা কেন? লাকির বুদ্ধির স্বল্পতা বা ব্যবহারের রূঢ়তা নিয়ে কোন বক্তব্য থাকলে সেটা অন্য কথা, কিন্তু রূপের এই আপাত অভাব নিয়ে যে প্রশ্নটা লিখিয়ের মনে জেগেছিলো, তা লেখার আদৌ কি কোন দরকার ছিলো? খামোখা পড়িয়েদের মনে মেয়েটার সম্বন্ধে একটা নেতিবাচক মনোভাব তৈরী করা হলো। যত ঋজু আলেখ্যই হোক না কেন, এটুকু লেখকসুলভ দায়বদ্ধতা কিন্তু থেকেই যায় হাসি

এই সমালোচনাটুকু, ব্যক্তি আপনাকে উদ্দেশ্য করে একেবারেই নয়, 'জায়গীরনামা'র লিখিয়েকে পাঠপ্রতিক্রিয়া জানানোটাই এখানে মূখ্য। আশা করি কিছু মনে করেন নি?

শেখ জলিল এর ছবি

ধন্যবাদ স্নিগ্ধা। পাঠকের মন্তব্য সব সময়ই উৎসাহের। আপনার অভিযোগের ব্যাপারে স্পষ্ট মন্তব্য এর আগে দিয়েছি।
উদ্ধৃতি
সংসারে এক সন্ন্যাসীর মতো বিদগ্ধ পাঠক ও সুলেখকের মন্তব্য আমার লেখা আরও শানিত করবে বলে আশা রাখি। পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশের সময় এ বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল থাকবে।

..তারপরও মন্তব্যের পৌণপুনিকতা ও অনুরণন আশ্চর্য করে বৈকি!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমার মন্তব্য ঠিক কিভাবে সন্ন্যাসীর মন্তব্যের অনুরণন হলো, বুঝতে পারলাম না! সন্ন্যাসী আপনার রূপবর্ণনার ভাষার ক্ষেত্রে আরেকটু সংযম আশা করেছেন, আর আমি বলেছি এখানে রূপবর্ণনার ভাষা ছাড়াও মেয়েটির রূপের প্রসঙ্গটিই অপ্রয়োজনীয়।

বই প্রকাশের সময় এ ব্যাপারগুলোতে আপনি যত্নবান হবেন বলেছেন বলেই, পাঠপ্রতিক্রিয়ার আরেকটি দিক তুলে ধরেছিলাম।

একাধিক প্রশংসাময় মন্তব্য বিঘ্ন ঘটায় না, কিন্তু দ্বিতীয়বার উচ্চারিত ছোট্ট সমালোচনাও যে বিরক্তির উদ্রেক করে, এ ব্যাপারটি বিস্ময়কর বৈকি!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

স্নিগ্ধা আপু, আপনার অনুভূতির সাথে সম্পূর্ণ একমত। তবে, একটা বয়স পর্যন্ত এরকম চিন্তা আমিও করেছি। পাশাপাশি দু'টি মেয়ে থাকলে সুন্দরীর দিকেই চোখ আগে গেছে (এই অপরাধের শাস্তি হাতেনাতে পেয়েছি শেষাবধি)।

কোন পুরুষ যদি দাবি করে থাকেন যে তিনি এরকমটি করেননি, তাহলে সেটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। এই দোষে আমিও দুষ্ট। না লিখলেও এই সত্য মুছে যায় না। বরং লেখা হয় দেখেই এই চিন্তাগুলোর ফেরত এসে আমাদের ভাবায়, অপরাধবোধে ভোগায়। নীচ চিন্তাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয় দেখেই আমি আমার উঠতি বয়সের ছোট ভাইগুলোকে ডেকে বলি তারা যেন এভাবে না ভাবে। সংশোধনের প্রক্রিয়াটা এরকমই তো।

একারণেই আমার কাছে লেখকের অকপট স্বীকারোক্তি যথার্থ মনে হয়েছে। লেখাটি যেমন আছে, তেমনি ভাবেই প্রকাশের পক্ষে আমি। ধর্ষন বা ব্যভিচার বা কন্যা সন্তান বিসর্জন দেওয়ার মত ব্যাপারগুলোর কথা যেমন সাহিত্যে থাকা দরকার, তেমনি এগুলোও থাকা উচিত। ভেবে দেখুন, সতিদাহের কথা যদি সে-যুগের লেখালেখিতে না থাকতো, তাহলে কি সেই লেখাগুলো সত্যিকার অর্থে কালের সাক্ষী থাকতো?


রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!

স্নিগ্ধা এর ছবি

একমত হবার জন্য ধন্যবাদ ইশতিয়াক। সুন্দর মেয়ের দিকে বা মেয়েদের ক্ষেত্রে সুন্দর ছেলেদের দিকে চোখ যাবে, মনোযোগ যাবে সেটা তো বটেই। কিন্তু আমার আপত্তি সে ব্যাপারে ছিলো না। ধরুন যদি লাকি আর আঁখির ক্ষেত্রে

লাকির বয়স তেরো-চৌদ্দ, পড়ে ক্লাস নাইনে। দেখতে যেমন কালো তেমন মোটাসোটা। প্রথম দর্শনেই বলতে ইচ্ছে করছিলো- কোন্ দোকানের চাল খাও বাবা? আঁখি হালকা-পাতলা, গায়ের রং ফর্সা, সুশ্রী। পড়ে ক্লাস ফাইভে। আঁখির আঁখি দুটি সত্যিই খুব সুন্দর ছিলো!

এটা না বলে যদি বলা হতো -

"লাকির বয়স তেরো-চৌদ্দ, পড়ে ক্লাস নাইনে। আঁখি হালকা-পাতলা, গায়ের রং ফর্সা, সুশ্রী। পড়ে ক্লাস ফাইভে। আঁখির আঁখি দুটি সত্যিই খুব সুন্দর ছিলো!"

তাহলেই কি বোঝা যেতো না যে লাকি অনুল্লেখ্য, অথবা লেখকের কাছে অগুরুত্বপূর্ণ (তা সে যে কারণেই হোক) আর আঁখি দেখতে সুশ্রী, তার চোখদুটো সত্যিই সুন্দর? এই বর্ণনাই তো বলে দেয় যে লেখক কিছুটা মুগ্ধ? সুশ্রী মানুষ শুধু তার সুশ্রীতার কারণেই নাহয় গুরুত্ব পাক, তাতে তো আপত্তির কিছুই নেই, কিন্তু আমার খারাপ লাগে যখন কারুর শারীরিক সৌন্দর্য্যের অভাবটা প্রকট করে তোলা হয় - বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে, যেহেতু মেয়েদের বেলায় সৌন্দর্য্যটাই সাধারণত প্রথমে দেখা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটাই হয় তাদের গুণবিচারের মাপকাঠি। যেটা আপনিও বললেন, যে একটা একটা বয়স পর্য্যন্ত এটাই স্বাভাবিক এবং না লিখলেই তা মিথ্যে হয়ে যাবে না।

আমিও মনে করি নগ্ন, নিষ্ঠুর সত্য সাহিত্যে উঠে আসা উচিত, আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই উচিত। কিন্তু কিছু কিছু জিনিষ সচেতনভাবে না বদলালে তা চলতেই থাকে আর আমাদের অবচেতনেই আমাদের মানসিকতায় প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। সেটাই ছিলো আমার মন্তব্যের উদ্দেশ্য।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আপু, আপনার কথাগুলোর সাথে আবারো একমত। তবে এই সিরিজের আলোকে আমার মনে হয় যেমনটা আছে তেমনটাই চলতে পারে। যদি এটি কোন উপন্যাসে প্রথম পুরুষে লেখা কিছু অংশ হত, তাহলে আমিও আপনার দেখানো পথ অনুযায়ী লেখারই পক্ষপাতী হতাম।

তবে, এটি একটি অকপট আত্মজীবনী। আত্মজীবনীতে সবাই নিজেকে সাধুপুরুষ হিসেবে দেখাতে ভালবাসেন। লেখক সেটা করেননি। তাঁকে সমালোচনা করবার একটা দরজা খোলা রেখেছেন। ব্যাপারটা চেপে গেলে এই সিরিজের অকপটতা আগের মত থাকতো না।

তাছাড়া, এই সিরিজিটি একজন মানুষের সংগ্রাম করা এবং পরিশীলিত হয়ে ওঠার কাহিণী। সেই বয়সের প্রথম চিন্তা আর এই বয়সের প্রথম চিন্তার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। দু'টিই যদি খোলামেলা ভাবে বলে দেওয়া না হয়, তাহলে পাঠককে সেভাবে আঘাত করা যেত না হয়তো।

একটা অপ্রাসঙ্গিক উদাহরণ দেই। আমার বাবা আমাকে উঠতি বয়সে বলেছিলেন, "সিগারেট খাবে না কখনো"। এটুকুই বলতে পারতো আব্বু। কিন্তু সাথে আরেকটু অংশ ছিল। নিজের এক সময়কার সিগারেট খাওয়ার অভ্যাসের কথা উল্লেখ করে বলেছিল, "আমি গ্রামের যেই পরিবেশ থেকে উঠে এসেছি, তাতে আমাকে সঙ্গদোষেই অল্প বয়সে বিড়ি-সিগারেট ধরতে হয়েছে। তোমার তেমনটা হওয়ার কোন কারণ নেই।" অকপট ভাবে পরের অংশটুকু না বললে আমার মনে ব্যাপারটা গেঁথে যেত না মনে হয়।

আপনি, আমি, লেখক, আমরা সবাই মানছি যে এই ধরণের আচরণ খারাপ, এই ধরণের স্থূল চিন্তা অরুচিকর। একেকজন একেক ভাবে এর প্রতিকার করার চেষ্টা করছি আর কি। লেখাটি আত্মজীবনী না হয়ে স্রেফ উপন্যাস হলে আমি অবশ্যই আরো পরিশীলিত ভাবে লেখার পক্ষপাতী হতাম। ঠিক যেমন নাটকে ফারুকীয় বাংলার বিপক্ষে আমি (কবে যে লোকে ফারুকীর নাটকের নাখাস্তা বাংলার প্রভাব শফিক রেহমানীয় বাংলার চেয়েও খারাপ, এই সত্য উপলব্ধি করবে!)।


রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!

স্নিগ্ধা এর ছবি

ইশতিয়াক, এত সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ হাসি

রিসার্চ চলছে কেমন? ফল ব্রেক টেক হলে একবার বেড়িয়ে যান এশবার্ণ থেকে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অত্র এলাকার সব ভেড়েন্ডা ভেজে শেষ করে ফেলেছি এই ছুটিতে। একেবারেই কিছু আগায়নি কাজ। একবার ভেবেছিলাম ডিসেম্বরে গ্র্যাজুয়েট করার চেষ্টা করবো, তখন কাজ এগিয়েছিল কিছু। এখন ঠিক করেছি মে মাসে যা করার করবো। ভাবার সাথে সাথেই থিসিসের কাজ কই যেন মিলিয়ে গেল!

সমূহ সম্ভাবনা আছে আগামী সপ্তাহে ডিসি যাওয়ার। ফেসবুকে মেসেজ দেবো নে। দুই বন্ধু যাবে কানাডার ভিসা নিতে। আপনি ফ্রি থাকেন তো ফেরার পথে ঢুঁ মারি একটা।


রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!

স্নিগ্ধা এর ছবি

অবশ্যই! বলবেন কখন আসার কথা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।