তাঁকে ছুঁয়ে দেখা হলো না আমার।
একজন ভার্চুয়াল অভিভাবককে হারালাম আমি।
কবিতা লেখার দীর্ঘ সময়ে অনেক অভিভাবকের উষ্ণ সান্নিধ্য পেয়েছি, পেয়েছি অনুমোদনও তাঁদের।
কিন্তু গদ্যলেখায় মন্তব্য ও অনুমোদন যিনি দিয়েছিলেন, জুগিয়েছিলেন সাহস সেই অভিভাবককে হারিয়ে ফেললাম হঠাত্।
বেশ ক'দিন ধরে নেটে অনুপস্থিত আমি। সেপ্টেম্বর ২৫ তারিখ সকালে এক সচলের ফোনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। আমাদের প্রিয় জুবায়ের ভাই আর নেই!
নেটে লেখালেখির সুবাদে যাঁর তুখোড় গদ্যের সাথে পরিচয় সেই জুবায়ের ভাই হারিয়ে গেলেন চিরতরে! না, এ মেনে নেয়া যায় না।
যিনি ছিলেন সম্ভাবনাময় লেখকদের অনুপ্রেরণা সেই শক্তিশালী গদ্যলেখকের মন্তব্য আর কোনোদিন পাবো না-মেনে নেয়া যায় না!
সচলায়তনের অণুগল্প সংকলন 'দিয়াশলাই'-এ একটি লেখায় তাঁর মন্তব্য আমাকে কতোখানি উদ্বুদ্ধ করেছিলো বলতো পারবো না।
শেখ জলিলের ক্লিনিক্যাল ডেথ গল্পটি আরেকটু বিস্তার অবশ্যই দাবি করে। পড়তে পড়তে মনে হয়, লেখাটা যেন লাফিয়ে লাফিয়ে সামনে-পেছনে যাওয়া-আসা করছে। শেখ জলিল মূলত কবি হলেও গদ্য লেখার সময় তিনি বিশুদ্ধ গদ্যই লেখেন, কবিতাক্রান্ত গদ্যরচনা করেন না। এখানেই গদ্যলেখক হিসেবে তাঁর শক্তির পরিচয়। তৃতীয় প্যারায় ‘ঘুমের মধ্যে মা স্ট্রোক করেছেন’ বাক্যটিতে আপত্তি জানিয়ে রাখি। রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, রোগী স্ট্রোক করে না।
প্রিয় গদ্যলেখক হিসেবে তাঁর সমালোচনা ভালো লাগতো সবচেয়ে বেশি। জুবায়ের ভাই অসুস্থ না হলে, বেঁচে থাকলে অণুগল্প সংকলনের মতো সচলায়তনের ছোটগল্প সংকলনেরও পূর্ণ সমালোচনা পেতাম আমরা। আমাদের লেখার ধারকে পরখ করে নিতে পারতাম তাঁর হিসাবের নিক্তিতে, উদ্বুদ্ধকরণে। তাঁর এ স্থান কখনো পূর্ণ হবার নয়।
সচলায়তনের বর্ষপূতি উপলক্ষ্যে এক লেখায় বলেছিলাম-
মুহম্মদ জুবায়ের ও তীরন্দাজ: চিরতারুণ্যের এই দুটি মানুষের সাথে দেখা না হয়ে আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতাম- এতো ভালো তারা কেমনে লেখেন? একবার বুকে বুক মেলালে হয়তো কিছুটা আমারও হতো। মুহম্মদ জুবায়ের-এর অসাধারণ গদ্যের পাশাপাশি সমালোচনা ভালো লাগে। আর তীরন্দাজ তো সব্যসাচী লেখক। তার লেখা অনুবাদ, গল্পের পাশাপাশি কবিতাও অসাধারণ।
আমার এ আশা অপূর্ণ থেকেই গেলো। সামনাসামনি দাঁড়ানো হলো না তাঁর। ছুঁয়ে দেখা হলো না তাঁকে। তিনি শুয়ে রইলেন আটলান্টিকের ওপারে।
নাহ্, জুবায়ের ভাই এর কোনো মানে হয় না!
মন্তব্য
সত্যিই এর কোন মানে হয় না !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
অনেক কিছুরই কোনো মানে হয় না।
তারপরও মেনে নিতে হয়।
মেনে নিয়েই আমরা বেঁচে থাকি।
তা যত কষ্টেরই হোক।
তারপর আমরাও একদিন হারিয়ে যাব..........
যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
জলিল ভাই, আপনার সাথে দেখা হবে আমার অচিরেই।
তার আগে কিছুতেই মরবোনা বলে কথা দিলাম...??
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
শুনে খুশি হলাম তীরন্দাজ ভাই।
..এবার দেখা হতেই হবে।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
নতুন মন্তব্য করুন